বিষয়টি গুরুতর সন্দেহ নেই। বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের কী সম্পর্ক? বৈজ্ঞানিক তথ্য-তত্ত্বের কি দার্শনিক তাৎপর্য আছে? বিজ্ঞানের দর্শন (Philosophy of Science) কি সম্ভব? এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করেছেন অনেক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। এখানে আমরা মূলত বিজ্ঞানের জ্ঞানতাত্ত্বিক (epistemological) সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব।
দর্শন ও বিজ্ঞান হাত ধরাধরি করে চলেছে – অন্তত প্রাথমিক যুগে। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখি এ দুটো সম্পূর্ণ পৃথক পদ্ধতি (methodology) মেনে চলে। দার্শনিক পদ্ধতি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অভিন্ন নয়। হয়ত নীতিগতভাবে এদের মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্য থাকার কথা ছিল না। কারণ প্রাচীনকালে সভ্যতার ঊষালগ্নে আমরা বিজ্ঞানকে দার্শনিক বিষয়বস্তু হিসেবেই আলোচিত হতে দেখি। বলা হতো, Natural Philosophy বা ভৌত দর্শন। নিউটনের ‘ন্যাচারালিস ফিলোসফিয়া প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’ এর প্রমাণ। পদার্থবিজ্ঞানে যুক্তির প্রয়োগ, আরোহী-অবরোহী পদ্ধতির প্রয়োগ – এসবই দার্শনিক ভাবপ্রসূত। কিন্তু ক্রমশ গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান শাস্ত্রীয় দর্শন থেকে আলাদা হয়ে বর্তমান বিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছে। মনে হয়, সপ্তদশ শতকের দর্শন থেকে বিজ্ঞানের ধারণাসমূহের সৃষ্টি। আর সপ্তদশ শতকের দর্শন বুঝতে হলে গ্রিক উপলদ্ধি করতে হবে। গ্রিক দর্শনের দুই মহারথী প্লেটো-অ্যারিস্টটলের দর্শন আমাদের বুঝতে হবে। গ্রিক দর্শনের সবচেয়ে বড়ো গুণ হলো এটি একেবারে মৌলিক যেকোনো প্রতিভাস ব্যাখ্যা করতে প্রয়োজনীয় দার্শনিক ধারণা গ্রিক দার্শনিকরা নিজেরাই তৈরি করেছেন। এই ভাবধারা দুহাজার বছরের পুরনো ভাবধারা; কাজেই বলা চলে এই মতবাদগুলো বর্তমানকালে উপযোগরিক্ত। তবু এ দর্শনের পদ্ধতি, প্রশ্ন করার ক্ষমতা, অনুধাবনের তীক্ষèতা প্রশংসনীয়। ঐতিহাসিকভাবে গ্রিক দর্শন “বিজ্ঞানের সূতিকাগার” এবং
ইউরোপীয় রেনেসাঁ আধুনিক বিজ্ঞানের সূত্রপাত করে।
দুর্ভাগ্যক্রমে, প্রাচ্যের দর্শনগুলোর বাহ্য বাস্তবতার প্রতি অনীহা বিজ্ঞান সৃষ্টিতে সহায়ক হয়নি। এরা শুধু শব্দের ধুম্রজালই তৈরি করেছে।
বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোচনায় বিজ্ঞান বলতে আমরা গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বুঝব। কারণ, ভৌত বাস্তবতা এবং তার দার্শনিক সমস্যা আধুনিক ভৌত বিজ্ঞানই সৃষ্টি করেছে। অবশ্য জীববিজ্ঞানের বংশগতিবিজ্ঞানে জিন-প্রযুক্তি অতি সম্প্রতি অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আজকাল নিখুঁত মানুষ তৈরির কথা শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, জিন প্রযুক্তির বদৌলতে রোগমুক্তি বংশ পরম্পরায় সম্ভব হবে। এমনকি ‘অমরত্বের’ সম্ভাবনাও অনেকে করছেন। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি যথেষ্ট দার্শনিক তাৎপর্যময় হয়ে উঠবে। অতি সম্প্রতি মানবমস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা বেশ দার্শনিক তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। মানবমস্তিষ্কের মৌলিক কার্যকারিতা এখনো অজানা। তবে এ কথা ঠিক, মানুষের মনুষ্যত্বের জন্য দায়ী যে চেতনা (consciousness) তা মস্তিষ্কের এক অতি উচ্চতর পর্যায়ের সমন¦য় ক্রিয়ার ফল। প্রশ্ন হচ্ছে, মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশটি চেতনার জন্য দায়ী। মস্তিষ্কের একটি সাধারণ পরিচয় আমাদের জানা থাকা দরকার। মস্তিষ্কের পেছনদিকে নিচে ডানে-বামে দুটো বাটির মতো অংশ আছে- এরা cerebellum এবং মস্তিষ্কের ওপরের বিশাল অংশটি cerebrum। সেরেব্রাম ডান ও বাম অর্ধে দ্বিধাবিভক্ত। সেরেব্রাম হলো গুরুমস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের এ দুটো অংশই প্রধান। আরেকটি ব্যাপার, সাধারণত মস্তিষ্কের বামার্ধে থাকে ব্রোকা ও র্ভেনিকের অঞ্চল (Broca’s and Wernicke’s area) – এ দু’টো অঞ্চল কথা বলা ও উপলব্ধি করার জন্য দায়ী। মনে হয়, লঘুমস্তিষ্ক (cerebellum) স্বয়ংক্রিয় কাযকর্মেও জন্য দায়ি। অন্যদিকে, গুরুমস্তিষ্ক চিন্তাশীল কাযকর্মের জন্য দায়ী। অর্থাৎ যে সমস্ত কায স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় (যেমন হাঁটার সময়ে বিভিন্ন মাংসপেশীর সংকোচন-প্রসারণ) সেগুলো লঘুমস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু হাঁটার সিদ্ধান্ত গ্রহণ মূলত গুরুমস্তিষ্কই নেয়। অনেকের মতে মস্তিষ্ককান্ডের উর্ধ্বভাগ (upper brain-stem, থ্যালামাস ও মধ্যমস্তিষ্কসহ) চেতনার পীঠস্থান। অবশ্য এর সাথে গুরুমস্তিষ্কের ক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রকৃতপক্ষে এ সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন অংশকে চেতনার জন্য দায়ী করেন। অনেক সময়ে এমন দেখা গেছে, যদি কোনো কারণে মস্তিষ্কের ডান ও বাম অর্ধের মধ্যের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় (upper brain-stem) এবং যদি ডানচোখে পেন্সিল ও বামচোখে কলম দেখানো হয়, তবে রোগী পেন্সিলকেই সনাক্ত করবে (এর কারণ মস্তিষ্কের বাম অংশ দেহের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং উপলব্ধি ও কথা বলার উদ্দীপক অংশ এই বাম অংশেই প্রধানত থাকে); তাই মনে হয়, মস্তিষ্কের বামার্ধই চেতনা সৃষ্টি করে। আসলে দেখা যায় যে, জ্যামিতিক (বা ত্রিমাত্রিক) চিন্তাভাবনা, সঙ্গীত – এগুলো মস্তিষ্কের ডান অর্ধাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, অন্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করে গাণিতিক ক্রিয়াকর্ম। তাহলে কি আমাদের মধ্যে চেতনার দুইটি সত্তা আছে? অনেক সময়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত দীর্ঘকাল পর ডান অর্ধাংশও বাম অর্ধাংশের মতো সচেতন হয়ে ওঠে। মানবমস্তিষ্ক নিয়ে এসব পরীক্ষা দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলছে। তাছাড়া অনেকে বলেন, মস্তিষ্কক্রিয়া আসলে এক জটিল অ্যালগরিদম (সমস্যা সমাধান প্রণালী); কিন্তু সচেতনতা মনে হয় না কোনো অ্যালগরিদমিক পদ্ধতি তা সে যতো জটিলই হোক না কেন। আমরা প্রত্যেকেই দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ কোনো নতুন আইডিয়া পেয়ে থাকি। এই আইডিয়াগুলো মাথায় একেবারে হঠাৎ করেই আসে। এগুলো যদি অ্যালগোরিদমিকই হতো তবে এগুলো এ রকম হঠাৎ আবির্ভূত হয় কেন? কেন প্রণালীবদ্ধভাবে যথোচিত সময়ে আবির্ভূত হয় না?
বিগত কয়েকশ বছরে বিজ্ঞানের বিকাশের ফলে জীবন ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে একটি সংগতিপূর্ণ চিত্ররূপ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে এবং “এর চেয়ে সুন্দরতর ছবি আমাদের জানা নেই”; এই ছবি গণিতের ভাষায় রচিত এবং বিজ্ঞানের ছাত্র না হলে এটা বোধগম্য হওয়া সুকঠিন। প্রকাশের এই সমস্যা নিয়ে ভিট্গেনস্টাইন তাঁর ভাষা-দর্শনে আলোচনা করেছেন,
যা বলা যায় তা সুস্পষ্ট [বিজ্ঞানের বিশুদ্ধ ভাষায়] বলা যায়। আর যে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা যায় না, সে বিষয়ে চুপ করে থাকাই শ্রেয়।
বিজ্ঞানীদেরও একই সমস্যা আছে। বিজ্ঞান তার নিজস্ব গাণিতিক ভাষা তৈরি করে নেয়। এ ভাষার সৌন্দর্য উপলব্ধি না করলে বিজ্ঞান ও নান্দনিকতার দ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবী। আকাশের অনন্ত নক্ষত্রবীথি অবশ্যই সুন্দর; কিন্তু তাদের আয়নিত গ্যাসের গোলক ধরে নিলে আর কাব্যিকতা চলে না। তাই বলা হয় “বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ”; কেন এই দ্বন্দ্ব? আবিষ্কৃত ভৌত আইনগুলোর অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য এই সমস্যার সুন্দর সমাধান দেয়- “পৃথিবীর সকল ভাষার সকল কবিতার চেয়ে তা সুন্দরতম।” কারণ এক সময়ে অনেকেই মনে করতেন : “ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন সুন্দর গণিতের ভিত্তিতে”।
বলা হয়ে থাকে, বিজ্ঞান হচ্ছে সাধারণ অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা, আর বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা হলো দর্শন। দর্শন হলো সমন্বিত (Comprehensive) জ্ঞান। বিজ্ঞানের অনুমান-তত্ত্ব-তথ্যের সমালোচনা করে দর্শন। বিজ্ঞান সত্যের অনুসন্ধান করে কিন্তু (পন্টিয়াস পিলেটের বিখ্যাত প্রশ্ন) “সত্য কী” এর উত্তর দেয় না। বিজ্ঞান এখন মডেল-র্নিভর বাস্তবতা ও সত্যের কথা বলে। মানুষ তাঁর পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাস্তবতার স্বাদ গ্রহণ করত। পঞ্চেন্দ্রিয়ের বাইরে বাস্তবতার যে সূক্ষ্মরূপ বিরাজমান, সেটা জানতে শক্তিশালী তত্ত্ব নির্মাণ করতে হয়। সেই তত্ত্বকে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এই নির্মিত মডেল সত্য ও বাস্তবতা সম্পর্কে যা বলবে, সেটাই বাস্তব। এর বাইরের কিছুকে বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেবে না। যেমন, ইদানিং যে স্ট্রিং তত্ত্বের কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা ১০^৫০০ সংখ্যক বিশ্বের কথা বলে। অর্থাৎ, মহাবিশ্ব একটি নয়, একাধিক। এইসব একাধিক বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞান এবং ভৌত রাশিসমূহ অন্যরকম হতে পারে। ফলে সেইসব বিশ্বে বাস্তবতা আমাদের থেকে ভিন্ন। এই মডেল-নির্ভর বাস্তবতাই বিজ্ঞানীর বাস্তবতা, এটা দার্শনিকের বাস্তবতা থেকে ভিন্ন। বলা ভালো, সত্য কী – এর উত্তরে বিজ্ঞানের দ্বিধা আছে, কারণ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সত্য আপেক্ষিক এবং তা একাধিক হতে পারে, তবে গাণিতিক সত্যের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। গণিতে আজকাল উচ্চতর সেট ও দলতত্ত্বের (গ্রুপ থিওরি) ব্যবহার হচ্ছে, এসবের ভিত্তিতে নানা উপপাদ্য রয়েছে, আছে হাইপার-জ্যামিতি, অন-ইউক্লিডিয় জ্যামিতি। এগুলোর (গাণিতিক) সত্যতা অনস্বীকার্য। একথা সত্য যে সত্য কী, ভালো-মন্দ কী, ঈশ্বর কে, সুন্দর কী, এসবের মূল্যই বা কী (axiology) এসব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের আওতা বহির্ভূত (অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আংশিক সমাধান আছে); কিন্তু ভৌত বাস্তবতা সম্পর্কে বিজ্ঞানের বক্তব্য সুস্পষ্ট এবং তা অবশ্যই জানা প্রয়োজন। আমাদের জানতে এবং বুঝতে হবে বিজ্ঞান কী পেয়েছে। দেকার্তে বলেছিলেন
All philosophy is like a tree. The roots are Metaphysics, the trunk is physics and the branches are all the other sciences.
চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান (নিউটনীয় বিজ্ঞান, চিরায়ত ক্ষেত্রতত্ত্ব, ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎ-চৌম্বকতত্ত্ব) বা ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্স দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। গ্যালিলেওর পর্যবেক্ষণের নিবিড় প্রভাব দেখা যায় দেকার্তে বা স্পিনোজার লেখনিতে। নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞান ইমানুয়েল কান্টের বদৌলতে উনবিংশ শতকের দর্শনের ভিত্তিভূমি রচনা করে। কান্ট ডেভিড হিউমের “সব জ্ঞান অভিজ্ঞতা থেকে আসে” – এই ধারণার বিরোধী ছিলেন। প্রশ্ন করা যায়, আগামীকাল যে সূর্য উঠবে তা জানা যায় কীভাবে? এর উত্তর হলো, যেহেতু অনাদিকাল থেকে এ রকমই ঘটে তাই কালকেও সূর্য উঠবে। কিন্তুঅতীতে ঘটলেই যে ভবিষ্যতে ঘটবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? আসলে অতীতের ঘটনা দিয়ে ভবিষ্যত বিচার করার কোনো যৌক্তিক উপায় নেই। কার্ল পপার এই হিউমীয় সমস্যাকে আরো এগিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন “অভিজ্ঞতা সম্ভব হয় কেন”? কান্ট হিউমের এই সমস্যাকে সমাধান করতে কিছু পূর্বশর্ত (a priori) ধরে নিলেন অভিজ্ঞতাকে সম্ভব করতে হলে এসব পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে। তাই বলা যায়, সময় না থাকলে অভিজ্ঞতাও থাকে না। কাজেই সকল তত্ত্বে সময়ের অবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি পূর্বশর্তরূপে মেনে নিতে হবে। যাহোক, কান্টের দর্শন আমাদের আলোচ্য নয়। আসলে চিরায়ত বিজ্ঞান বাস্তবতার একটি নিশ্চয়তাভিত্তিক (deterministic) সংজ্ঞা দেয়। এখানে দর্শক বা মনের (চেতনার) কোনো দরকার নেই। এই তত্ত্বে পর্যবেক্ষণের উপর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না (কান্টের দর্শনেও দর্শকের কোন স্থান নেই); সময় এখানে পরম (সম্মানীয়) রাশি। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের আরো একটি প্রভাব লক্ষ করা যায় যৌক্তিক দৃষ্টবাদে (logical positivism)। এখানে প্রত্যক্ষই পরম। এর বাইরে কিছুই সম্ভব নয় (অতএব অধিবিদ্যা বা metaphysics সম্ভব নয়); এর সাথে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের মতের ঐক্য আছে। ভিয়েনা কেন্দ্রিক এই যৌক্তিক দৃষ্টবাদের মুখ্যপুরুষ ছিলেন আর্নেস্ট মাখ।
আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রণেতা আইনস্টাইন প্রথম সময়কে তার ধ্রুপদী স্থান থেকে সরিয়ে দেন। সময় আসলে পরম কিছু নয়, গতি নির্ভর রাশি মাত্র। রিম্যানের জ্যামিতি ব্যবহার করে আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সুবিশাল (গাণিতিক) সৌধ গড়ে তোলেন এবং এভাবেই কান্টের ইউক্লিডিয় জ্যামিতি ভিত্তিক দর্শনকে খন্ডিত করেন। কান্ট বলেছিলেন বিশ্ব সসীম না অসীম তা কোনোদিন জানা যাবে না। কিন্তু আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বে (কসমোলজি) এর সুস্পষ্ট গাণিতিক এবং অধুনা পর্যবেক্ষণলব্ধ সমাধান আছে।
চিরায়ত জগৎ নিশ্চয়তা ভিত্তিক থাকা সত্ত্বেও তা ছিল অর্ধসত্য। কারণ (পরমাণু-স্কেলে) বাস্তবতার স্বরূপ এটি সম্পূর্ণ দিতে পারে না। অতিক্ষুদ্রের জগতে চিরায়ত বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূচনা করে। কোয়ান্টাম তত্ত্বে মাপন-ক্রিয়া এবং এ প্রক্রিয়ায় দর্শকের উপস্থিতি প্রয়োজনীয়। “কীভাবে পরীক্ষণ করতে হবে তা তত্ত্বই নির্ধারণ করবে”; এ সম্পর্কে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি স্মর্তব্য। আসলে বস্তুকণার পরিবর্তে স্থানিক তরঙ্গ-প্যাকেট ধরে নেয়ার জন্যই এই অনিশ্চয়তা। কিন্তু এছাড়া কোন উপায়ও নেই। কারণ, চিরায়ত জগতে যা বস্তুর গতি, অন্যত্র তা তরঙ্গ-গুচ্ছের গুচ্ছবেগ। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি মূলনীতি অনুযায়ী যেকোনো বস্তুকণা (বা বস্তুকে) একটি তরঙ্গ-অপেক্ষক (বা ওয়েভ ফাংশন) হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে যা একটি অন্তরকলন সমীকরণকে (শ্রোডিংগারের সমীকরণ) সিদ্ধ করবে। গণিতের নিয়মানুযায়ী এই তরঙ্গ-অপেক্ষকের একাধিক (মূলত অসীম সংখ্যার) সমাধান সম্ভব যারা প্রত্যেকে পৃথক পৃথক সম্ভাব্য অবস্থার নির্দেশ করে। এখন এই তরঙ্গ-অপেক্ষকের লঘুকরণ বা চুপসে যাওয়া (collapse or reduction of wave function) দর্শকের চেতনায় ঘটে। এ সম্পর্কে ‘শ্রোডিংগারের বিড়াল’ নামক মানস পরীক্ষাটি স্মর্তব্য। একটি বাক্সে একটি বিড়াল আছে। প্রথমাবস্থায় এটি জীবিত। এই বাক্সের মধ্যে এমনভাবে বিষ রাখা আছে যা নির্দিষ্ট সময় পর কোনো কৌশলের মাধ্যমে ক্রিয়া শুরু করবে। এখন বাক্সের বাইরে অবস্থিত কোনো দর্শকের কাছে বিড়ালটির একটি সম্ভাবনাময় অস্তিত্ব থাকে। বাক্সটি খুললেই নিশ্চিত করে তা জানা যায়। বাক্স না খোলা পর্যন্ত বাইরের দর্শকের কাছে বিড়ালটি ‘না জীবিত না মৃত’ – এরকম একটি জীবন্মৃত অবস্থায় থাকে। একে কোয়ান্টাম রৈখিক উপরিপাতন বলে linear superposition)। এভাবে বিড়ালটির অবস্থান বর্ণনায় কোনো দর্শকের উপস্থিতি একান্ত কাম্য। কাজেই দর্শকের দেখার উপরই (বা চেতনার উপর) বিড়ালের জীবিত বা মৃত থাকা নির্ভর করছে। এরকম আরো একটি পরীক্ষণের কথা বলা যায়। চিরায়ত বিজ্ঞানের সুবিখ্যাত ইয়ঙের দ্বি-স্লিট পরীক্ষা (double slit experiment)। একটি উৎস হতে আলোক তরঙ্গ নির্গত হয়ে দুটি কাছাকাছি স্লিটের (ছোট ছিদ্র) উপর পড়বে। এবার দুই স্লিটই (গৌণ) উৎস হিসেবে আলোক তরঙ্গ বিকিরণ করবে। এখন দূরবর্তী একটি পর্দার উপর যখন এই দুই তরঙ্গের স্রোতধারা মিলিত হবে তখন ঘটবে ব্যতিচার (Interference)। এর ফলে পর্যায়ক্রমে উজ্জ্বল ও অন্ধকার রেখা গঠিত হবে। তার কারণ – যদি দুই তরঙ্গের শীর্ষ পরস্পরের সাথে মিলিত হয় তবে উজ্জ্বল রেখা গঠিত হবে, কিন্তু একটির শীর্ষ অন্যটির খাদ মিলিত হলে তখন অনুজ্জ্বল রেখা হবে। ইয়ঙের এই দ্বি-স্লিট পরীক্ষা বহুবার পরীক্ষাগারে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
সমস্যা হবে তখনই যখন আলোর কণারূপ আমরা বিবেচনা করব। ধরা যাক, উৎস থেকে একটি ফোটন নির্গত হলো। এবার যা হবার কথা তা হলো এই ফোটন অর্ধেক হয়ে দুই স্লিট দিয়ে প্রবেশ করবে। কিন্তু তা হতে পারে না। কারণ বস্তুকণা এরকম দ্বিধাবিভক্ত হতে পারবে না। কোয়ান্টাম বর্ণনানুযায়ী, আসলে ফোটন তরঙ্গ হিসেবে দুই স্লিটের উপর পড়ে এবং তারপর নিজেই নিজের সাথে ব্যতিচার করে উজ্জ্বল-অনুজ্জ্বল রেখা গঠন করবে। এবার একটি ডিটেক্টর ব্যবহার করা যাক, যাতে আমরা জানতে পারি আসলে কোন স্লিট দিয়ে ফোটনটি গেল (অর্থাৎ ফোটনকে কণা ধার্য করে); মজার ব্যাপার, ডিটেক্টর ব্যবহার করা মাত্রই পর্দায় যে উজ্জ্বল-অনুজ্জ্বল রেখার পারম্পর্য ছিল তা অদৃশ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ কোনো ব্যতিচার হয় না। এর তাৎপর্য হলো এই যে, যদি আমরা ব্যতিচার ঘটাতে চাই তাহলে জানা চলবে না কোন স্লিট দিয়ে ফোটনটি গেল। আর যদি তা জানতেই চাই তাহলে আর ব্যতিচার হবে না। প্রকৃতি কখনোই জানতে দেবে না ঠিক কোন স্লিট দিয়ে ফোটনটি গেল। এই রহস্যময়তাই দার্শনিক ভাবনার উৎস। এভাবে ভৌত ঘটনার জগতে মানসিক প্রক্রিয়ার অনুপ্রবেশ ঘটে। নীল্স্ বোরের ভাষায়:
অস্তিত্বের মহান নাটকে আমরা দর্শক ও অভিনেতা দুটোই
কোয়ান্টাম বাস্তবতা আসলে সম্ভাবনাভিত্তিক (probabilistic) একে ‘কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা’ বলে। এটাই আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞানতাত্ত্বিক সমস্যা। বোরের মতে,
কোয়ান্টাম জগৎ বলে কিছু নেই। শুধু আছে একটা বিমূর্ত কোয়ান্টাম বর্ণনা। এখানে বলা ভুল যে পদার্থবিজ্ঞানের কাজ প্রকৃতি কেমন তা নির্ধারণ করা। প্রকৃতি সম্বন্ধে কী বলতে পারি তা-ই পদার্থবিজ্ঞান।
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এই ব্যাখ্যা সরাসরি বিরোধিতা করতেন আইনস্টাইন ও শ্রোডিংগার। আইনস্টাইন বলতেন,
ঈশ্বর পাশা খেলেন না;
ওঁরা একে অসম্পূর্ণ মনে করতেন এবং এ সম্পর্কে আইনস্টাইন-বোর বিতর্ক সর্বজনবিদিত। এ সম্বন্ধে ই.পি.আর. সমীক্ষা স্মর্তব্য। সেখানে বলা হয়েছে : ধরা যাক, এমন একটি বিক্রিয়া যাতে একটি শূন্য স্পিনের কণা ভেঙে দুটি কণিকা তৈরি হয় যার একটির স্পিন +১/২, অন্যটির -১/২; অন্যান্য কেয়ান্টাম সংখ্যা সংরক্ষিত থাকে। এখন এ দুটোকে পৃথক করে যথাসম্ভব দূরে নিয়ে যাওয়া যাক। এখন যেকোনো একটি কণিকাকে পরীক্ষা করলে যদি জানা যায় যে সেটির স্পিন +১/২, তাহলে অন্যটির স্পিন পরীক্ষা না করেও বলে দেওয়া সম্ভব (-১/২)। কেন এরকম হবে? এদের মধ্যে পরে তো কোনো মিথস্ক্রিয়া ঘটেনি? এরাতো পৃথক দুটি স্থানে রয়েছে। যদি দুটি বস্তুর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটার পর পরস্পরের প্রভাবমুক্ত করে পৃথক করা হয়, তাহলে একটির অবস্থা অন্যটির ওপর কোনো ক্রিয়া ঘটানো হচ্ছে কি-না – তার উপর নির্ভর করবে না। কারণ এরা অবস্থানগত ভাবে পৃথক। এটাই পৃথকীকরণের নীতি যা আইনস্টাইন-পডোলস্কি-রোজেনে’র (ই.পি.আর.) মানস পরীক্ষাটিতে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, এ নীতির সুনির্দিষ্ট অর্থ দিতে হলে তা কোয়ান্টাম তত্ত্বের বিরুদ্ধে যায়। কারণ “দুটো রাশির অবিনিময়ী কারক দিয়ে বর্ণনা করলে একটির সঠিক জ্ঞান অন্যটিকে অনির্দিষ্ট করে দেয়।” ফলে উভয়ের যুগপৎ বাস্তবতা অসম্ভব। এজন্য ধারণা করা হতো (যেমন ডেভিড বম মনে করেন) তত্ত্বে লুকনো চলরাশি (hidden variable) আছে। কিন্তু জে.এস.বেল প্রমাণ করেছেন “কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথে সংগতিপূর্ণ এমন কোনো লুকনো চলরাশির তত্ত্ব স্বষ্টি করা যায় না যা পৃথকীকরণের নীতি মেনে চলে”। বেলের গাণিতিক অসমতাগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তা কখনো কোয়ান্টাম তত্ত্বের বিপক্ষে যায়নি।
তাছাড়া কণা পদার্থবিদরা যে কোয়ার্ক নকশা তৈরি করেছেন তাতে ৬টি কোয়ার্ক থাকার কথা। এরাই বস্তুজগতের মৌলিক উপাদান। কিন্তু কিছু তাত্ত্বিক বাধ্যতামূলক শর্তের জন্য এদের কোনোদিনই ‘দেখা’ যাবে না অর্থাৎ সরাসরি পরীক্ষণে প্রমাণিত হবে না। এরা কেবল অপ্রত্যক্ষ প্রমাণেই ধরা দেবে। এই ৬টি কোয়ার্কই এখন পর্যবেক্ষণে পাওয়া গেছে, তাদের ভরও নির্ণীত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন করা যায় বাস্তবতা কী? এর স্বরূপ কী? আমাদের চেতনার সাথে এর সম্পর্ক কী? গাণিতিক সৌন্দর্যের তাৎপর্যই বা কী? এটা সাবজেক্টিভ না অবজেক্টিভ? হাইজেনবার্গের মতে :
বস্তুকণার বিষয়মুখী বাস্তবতার অবসান ঘটেছে এবং সেখানে এসেছে গণিতের পরিস্কার স্বচ্ছতা। এই গণিত বস্তুকণার ব্যবহার ব্যাখ্যা করে না, বরং তাদের ব্যবহার সম্পর্কে এটাই আমাদের জ্ঞান।
দেখা যাচ্ছে, বাস্তবতার সম্ভাবনাভিত্তিক ব্যাখ্যা মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। মনে হয়, জগৎ সম্পর্কে আমাদের অনুধাবনে একটা বিপ্লবী তত্ত্বের দরকার (অন্তত রজার পেনরোজ তাই মনে করেন); হয়ত বোরের কথাই ঠিক – চিরায়ত জগতের এক পর্যায়ের নিচে আর কোনো বাস্তবতা নেই। এই ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ অবস্থান থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায়ও জানা নেই। মনে হয়, ঘুরে ফিরে প্লেটোর সেই গুহাবন্দী মানুষের দশাতেই আমরা রয়ে গেছি। রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার মতো :
We dance ’round in a ring and suppose
But the Secret sits in the middle and knows
এই জ্ঞানতাত্ত্বিক সমস্যার সমাধান কি দর্শন দিতে পারবে? হালের স্টিফেন হকিং মনে করেন
দর্শন মৃত।
তার কারণ, আগের মত চিন্তার সুগভীর চ্যালেঞ্জ নেয়ার কোনো তত্ত্বীয় ক্ষমতাই দর্শনের আর অবশিষ্ট নেই। যেহেতু বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও পর্যবেক্ষণীয় আবিষ্কারসমূহ রিয়ালিটি বা বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের এমন অনেক তথ্য দিচ্ছে, যা অনেক সময়েই কা-জ্ঞানের বিপরীত, এবং যেহেতু দার্শনিক চিন্তার মাধ্যমে সেসবের সমাধান ইহজীবনে সম্ভব নয় – তাই আধুনিক বিজ্ঞানীরা ক্লাসিকাল দর্শনের এখতিয়ার নিয়ে শংকিত, এবং তার ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে ভাবিত। বিশুদ্ধ চিন্তা দিয়ে কি অভিকর্ষজ ত্বরণ মাপা সম্ভব? মনে হয়, ভাষা-দার্শনিক ভিট্গেনস্টাইনের উপদেশ মতো ‘চুপ’ করে যাওয়াই শ্রেয়।
তথ্যপঞ্জি:
১. বিজ্ঞান ও দর্শন – এ.এম. হারুন-অর রশীদ।
২. সংস্কৃতি : সংঘর্ষ ও নির্মাণ – প্রবীর ঘোষ।
৩. মাধ্যমিক বিজ্ঞান – ১ম খণ্ড।
৪. বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান – ড. এ. এম. হারুন-অর রশীদ।
৫. শ্রডিংগারের বেড়াল এবং তারপর – পথিক গুহ, দেশ, ৫ই অক্টোবর, ১৯৯৬|
৬. Introduction to Philosophy– J.N. Sinha.
৭. Physics and Philosophy– C.F. Von Weizsacker.
৮. Emperor’s New Mind– R. Penrose.
৯. The Grand Design – Stephen Hawking and Leonard Mlodinow
অবৈজ্ঞানিক, অযাচাইযোগ্য মানেই কি অপ্রয়োজনীয়?
মহাবিশ্ব বা বস্তু-শক্তি, স্হান-কাল অর্থাৎ যা কিছুর অস্তিত্ব আছে তা যদি চিরকালই না থাকে বা এটি অস্তিত্বশীল হয় তাহলে তার পেছনে কোন পরম কারণ থাকতে হবে–এই যে বিশ্বাস সেটির পেছনের অনুমানটি হল বিশুদ্ধ দর্শনজাত কার্য-কারণসূত্র অর্থাৎ যে কোন প্রপঞ্চের পেছনে কারণ থাকবে। সমস্যা হল, এটি যেই ইনফাইনাইট রিগ্রেশান তৈরী করে–“সমস্তকিছুই” অস্তিত্বশীল হল–এই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণটির সাথে সেটি সাংঘর্ষিক হয়। এর সমাধান দর্শন দিতে অক্ষম। বিজ্ঞান দিয়েছে। বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়নও তাই একটি স্বত:স্ফূর্ত কাজ। কারণ যার নিজের সুসংজ্ঞা নেই, যার সমাধানগুলো কখনই একক হয় না তদুপরি মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ হয় এবং যার সীমাবদ্ধতা–যাকে সে সংজ্ঞায়িত করতে উদ্যোগী হয় তার থেকে অসীম পরিমাণ বেশী–সে আসলে কিভাবে বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করবে। আমি যদি বলি–আমি একটি সমস্যায় আছি–সমাধান চাই। সমস্যা হল আমার অমুক অসুখ করেছে—তাহলে দার্শনিকেরা আমাকে পানিপড়া থেকে শুরু করে দুনিয়ার সমস্ত “চিকিৎসাই” প্রিস্ক্রাইব করবে। নিশ্চয়ই তারা আমার সমস্যা নিয়ে ডিল করেচে-সন্দেহ নাই। এ নিয়েতো আমার কোন অভিযোগ থাকতে পারেনা। এরপর, বিজ্ঞানী বা চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা করবে একটি বা দুইটি। ধরুন, আমি বহুর ভেতরে কনফিউজ হয়ে একটি বা দু’টিকেই গ্রহণ করলুম আর ভালোও হয়ে গেলুম। এখন দার্শনিকেরা এর কৃতিত্ব দাবী করে বলবে–ঔষধটি তারাই আগে প্রিস্ক্রাইব করেছে। সমস্যা হল অনেক রোগের চিকিৎসার ঔষধ দুনিয়ার যাবতীয় দার্শনিক ডিসকোর্স দিয়েও বের করা সম্ভব হয়নি, হচ্ছে না, হবেও না।যদিও বিজ্ঞান সেটি বের করেছে, করছে, করবে। এখানেই দর্শনের মৃত্যু।পরীক্ষণ আর পর্যবেক্ষণ বাদই দিলুম। বিজ্ঞানের আরেকটি পার্ট আছে–তাত্ত্বিক (ইনফ্যাক্ট, আইনস্টাইন থেকে শুরু করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম পদার্থবিদেরাই তাত্ত্বিক)। সেই তাত্ত্বিক অনুসন্ধান থেকে যে সমাধান বের করা সম্ভব–সেটি দুনিয়ার যাবতীয় দার্শনিক ডিসকোর্স করতে অক্ষম। তারা সেই ঔষধ সম্পর্কে এমনকি ধারণাও করতে পারবেনা। এখন আপনি যদি বলেন–আসলে বিজ্ঞানীরা যখন কোন “দার্শনিক” প্রশ্নের অনুসন্ধান করেন বা বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করেন তখন সেটি কিন্ত দার্শনিক কর্মই হয়। আমার বক্তব্য হল: বিজ্ঞানীরা যখন কোন দার্শনিক প্রশ্নকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের যোগ্য মনে করেন তখন সাধারণত: দর্শনচর্চাকারী দার্শনিকগণ সেটি নিয়ে চিন্তা করা বাদ দেন–প্রশ্নটি আর দার্শনিক থাকেনা। আর বিজ্ঞান যখন তার সংজ্ঞাটি বেছে নেয় তখনও সেটি আর দার্শনিক কর্ম থাকেনা–কারণ দার্শনিক কর্মের মাধ্যমে কখনই এককভাবে কোন কিছু বেছে নেওয়ার ক্ষমতা নেই–দৃষ্টিভঙ্গি বিবিধ এবং সাবজেক্টিভ। আর এই সাবজেক্টিভিটিও ইনডিপেন্ডেন্টলি কালেক্টিভ নয় যেটি বৈজ্ঞানিক অবজেক্টিভিটি তৈরী করে।
লেখাটায় ঠিক দাঁত বসাতে পারলাম না।
@রূপম(ধ্রুব),
কিন্তু এই সীমা নির্ধারণ যে দার্শনিক কর্ম, সেটাই তো অনেকে মানছেন না। আমার মনে হচ্ছে সেটা আপনি নিজেও মানতে গিয়ে মানছেন না।
আমার বক্তব্য হল দর্শন এই সীমাটি নির্ধারণ করতে পারে না। দর্শন যা পারে তা হল এই সীমার
“একাধিক” দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন বা প্রস্তাব করা যার জন্য খুব বেশী কৃতিত্ব তাকে দেওয়া যায় না। বিজ্ঞান এর ভেতর থেকে গ্রহণ বা বর্জন করে। মহাবিশ্বের শুরু আছে নাকি এটি চিরকালই ছিল এই প্রশ্নটির উত্তর দর্শন কিভাবে দিয়েছিল/দিতে পারত? মহাবিশ্বের শুরু আছে এবং মহাবিশ্ব চিরকালই ছিল–দু’টিই দার্শনিকভাবে গ্রহণযোগ্য উত্তর। এর অর্থ হল দর্শনের আসলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন কার্যকারিতা নাই। সেই অর্থে সে মৃত। এর কার্যকারিতা শুণ্যের কোঠায়। আমি দর্শনের কার্যকারিতা শুণ্য বলিনি-সেটি আমার আগের বক্তব্যটি থেকেই পরিষ্কার। আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে দ্বিমত তেমন নেই। থাকলেও কোন সমস্যা নেই। আপনার আলোচনা থেকে অনেক কিছুই শিখেছি।
আসুন এই প্রশ্নটার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। ডিমার্কেশনের তথা বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়নের সমস্যাটা নিয়ে ডিল করাটা কি দার্শনিক কর্ম নাকি বৈজ্ঞানিক কর্ম? যদি বলেন যে এটা দার্শনিক কর্ম, এবং এর সমাধান খুব দুর্বল মানের, আমি তেমন আপত্তি করবো না। তবে, এটা মৃত মানতে নারাজ আছি।
ধরুন, আমি যদি বলি এটি একটি ধর্মতাত্ত্বিক কর্ম? এর কারণ হল ধর্মও অনেক প্রশ্ন নিয়ে ডিল করে যেসকল প্রশ্নের কোন সমাধান সে করতে পারেনা। সার্বজনীনতা দাবী করে ধর্ম–দর্শনের মতই। তাই এর সমাধান দুর্বল নয়–সেগুলো কোন সমাধানই নয়। ইলেকট্রনের চার্জ আছে কি নেই–এর উত্তরের দার্শনিক রূপ হবে: আছে, নেই এবং একই সাথে আছে আর নেই। ধর্মের উত্তর হয়ত: এটি ঈশ্বরের ইচ্ছানির্ভর। তাই দর্শনের ্যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকু ব্যবহার করে আমি নির্ধারণ করব-আজ রাতে ডিনারে কি খাব আর বিজ্ঞানীগণ দর্শন না পড়েও তাঁদের কাজ চালিয়ে যাবেন। আর দর্শনশাস্ত্র চর্চাকারী দার্শনিকেরা আমাদের সিদ্ধান্তসমূহের সমস্ত কৃতিত্ব দাবীসহ ইনকনক্লুসিভ ডিসকোর্স চালিয়ে যাবেন।
দর্শন-বিজ্ঞান এসব নিয়ে বিতর্ক করতে করতে কত শত শ্রম/চিন্তাঘন্টা যে ব্যয় করেছি!!
এখন একটা সমাধান বের করেছি এই সমস্যার। কেউ কোনো গভীর দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন করলে তাকে প্রথমে উলটো প্রশ্ন করি, “আচ্ছা আমি যদি আপনাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেই, সেটা সঠিক না ভুল তা আপনি কীভাবে ভেরিফাই করবেন? বা আমার উত্তরটা আপনি কোন কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে গ্রহন বা বাতিল করবেন?”। এর গ্রহনযোগ্য উত্তর পেলে, তখন তার উথ্বাপিত সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে বসি। নইলে অনেক সময় নষ্ট হয়।
জনস্বার্থে এই পদ্ধতি এখানে বলে গেলাম। কারো যদি কাজে লাগে। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
আমি বহুদিন এই লাইনেই আছি। বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের সুবিধা হলো সেটা পর্যবেক্ষণ দ্বারা ভেরিফাইসাধ্য। অধিকাংশ মানুষ পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আস্থাশীল। বিপদে পড়েছিলাম, যেদিন সলিমুল শিহাব প্রশ্ন করেছিলো, পর্যবেক্ষণের এই মনোপলি মেনে নেয়ার কারণ কী? এই প্রশ্নটা আবার বৈজ্ঞানিক নয়। বিজ্ঞানের মানদণ্ড পর্যবেক্ষণ। পর্যবেক্ষণকে হালাল করার আবার আরেকটা কোনো মানদণ্ড নেই, যৌক্তিক ডিসকোর্স ছাড়া। ফলে তোমার পলিসি অনুযায়ী ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। সমস্যাটা খেয়াল করো, বিজ্ঞানের যেকোনো ডিমেনশনের গভীরে গেলেই এই অবৈজ্ঞানিক, অযাচাইযোগ্য প্রশ্নগুলো উঠে আসে। মনমতো উত্তর করতে হয়তো পারে না, কিন্তু দর্শন মৃত কোথায়? দর্শন তো অন্ধকারের মতো জীবিত!
@রূপম (ধ্রুব),
এই ব্যক্তি কে আমি জানি না তবে আমার দৃষ্টিতে তার প্রশ্নটা অগ্রহনযোগ্যরকম ইনফ্লামেটোরি। আপনি কি তাকে আমার পক্ষ হতে তার প্রশ্নের একটা উত্তর কনেভেয়ে করে দিতে পারেন? উত্তরটা হবে নিন্মরুপ-
পর্যবেক্ষণের এই মনোপলি মেনে নেওয়ার কারণ হচ্ছে এইটা জীবন বাঁচায়, এইটা জীবনের গুনগত মানকে উন্নত করে, এইটা মানুষের দুঃখ এবং দুর্দশা লাঘব করে। পর্যবেক্ষণের মনোপলি মানুষ মেনে নেয় এই অল্পকিছুদিন আগে ষোড়শ শতকের ইউরোপে যখন কিনা নিকোলাস কোপার্নিকাস প্রকাশ করেন তার ‘অন দি রিভলিউশনস’ এবং এর সাড়ে চারশো বছরের মধ্যে মানুষ সক্ষম হয় শনির উপগ্রহে প্রোব এবং ল্যান্ডার প্রেরণ করতে। মানুষ পৃথিবীতে টিকে আছে বিগত পঞ্চাশ হাজার বছর, এর মধ্যে সাড়ে উনপঞ্চাশ হাজার বছরেও কিন্তু মানুষ কিচ্ছু করতে পারেনাই, কলেরায় মরেছে একটা মামুলী ইনফেকশনে-ইনফ্লেমড এপেন্ডিক্স ফেটে মরেছে। অথচ পর্যবেক্ষণের মনোপলি মেনে নেওয়ার সাড়ে চারশো বছরের মধ্যে মানুষ বানাতে সক্ষম হয়েছে এমন একটি যন্ত্র যা দুই বিলিয়ন মাইল ভ্রমন করে ভিন্ন জগতের একটি জোত্যিষ্কের মাটিতে অবতরণ করবে, আমি বলছি নাসা-ইসার সম্মিলিত ক্যাসিনি-হৈগান্স মিশনের কথা।
এইটা বোধহয় খানিকটা দুঃখজনকই ২০১২ সালে বসে কাউকে যদি বোঝানো লাগে কেনো মানুষ পর্যবেক্ষণের আনকোয়েশ্চেনেবল একনায়কত্ব মানে।।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার কাছাকাছি, তবে আরো কম জ্বালাময়ী, একটা উত্তর আমি আগেই দিয়েছিলাম, জেনারেল অডিয়েন্সের জন্য, আমার “যে জ্ঞান কাজের: অধিবিদ্যা বনাম বিজ্ঞান” লেখায়।
তবে প্রশ্ন যতোই ইনফ্লেমেটরি হোক, উত্তর করার ব্যর্থতা তার চেয়ে বেশি ইনফ্লেমেটরি নয় কি? উত্তর করতে না পারা আরো বেশি অগ্রহণযোগ্য। ফলে কোনো প্রশ্নকেই ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস অগ্রহণযোগ্য ভাবার প্রয়োজন নেই। সেটা অনেকসময় উত্তর না করার, উত্তর না ভাবার অজুহাত। প্রশ্নকে বরণ করতে হবে। সবচেয়ে গৎবাঁধা প্রশ্নটিকেও। একমাত্র মোক্ষম উত্তরই নিশ্চয়ই প্রশ্নকে কাবু করতে পারে, অগ্রহণযোগ্য তকমা নিশ্চয়ই না।
আর লক্ষ্য করুন, পর্যবেক্ষণের একচেটিয়াকে ডিসকোর্স কিংবা পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞানের রিকার্সিভ রেফারেন্স ছাড়া হালাল করা গেলো কি? আপনার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ হলো পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পর্যবেক্ষণসাধ্য জগত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্নটা তো ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস ওটা নিয়েই। ওটার উত্তরে আবার পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফলকে ব্যবহার করলে কি হবে?
@রূপম (ধ্রুব),
না প্রশ্ন করাটা ইটসেলফ একটা সমস্যা এইটা আমি অবশ্যই বলছি না এস লং এস প্রশ্নটা গুড ফেইথে করা হয়েছে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি খুবই খুবই ট্রিভিয়াল প্রশ্নগুলো সাধারণত এই উদ্দেশ্যে করা হয়না যে- একটা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন করে দেখি এইটা থেকে কিছু বেরিয়ে আসে কিনা; এই প্রকারের প্রশ্নগুল বরং করা হয় আগে থেকেই মনের ভিতর প্রশ্নটির একটি পছন্দনীয় উত্তর প্রিমিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়ে। ফলশ্রুতিতে প্রশ্ন করার আচরণটাই হয়ে দাঁড়ায় একটা ফ্যালাসি, বেগিং দা কোয়েশ্চেন।
পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপুর্ণ কেননা পর্যবেক্ষণ ও এতদসংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া (সায়েন্টিফিক মেথডের প্রয়োগ) আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে। প্রশ্নটা যদি হয়ে থাকে কেনো পর্যবেক্ষণকে গুরুত্বের সাথে নিবো, তাহলে এই উক্তিটি আমি মনে করি প্রশ্নটির মোটামুটি গ্রহনযোগ্য একটি উত্তর।।
@রূপম (ধ্রুব),
পর্যবেক্ষণ ছাড়া আছে টা কি?
@রৌরব,
ব্যক্তির কল্পনা আছে। 🙂
বিষয়টাকে আমি এভাবে দেখি। যেকোনো যৌক্তিক সিস্টেমের আওতাতেই আপনি ভেরিফাই করতে পারবেন (পর্যবেক্ষণসাধ্য জগতে সেই সিস্টেমের ভেরিফাইড সিদ্ধান্ত কাজের নাও হতে পারে)। যৌক্তিক সিস্টেমের কিছু axiom থাকবে, যেগুলো আর্বিট্রারি। axiom পরিবর্তন করলে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ভিন্ন আসবে। বিজ্ঞানও আমার কাছে একধরনের যৌক্তিক সিস্টেম, তবে এর axiom পর্যবেক্ষণে প্রোথিত।
এখন কেউ দাবি করতে পারে, axiom কে পর্যবেক্ষণে প্রোথিত করাও তো আর্বিট্রারি। এর উত্তরে আমার অধিবিদ্যা বনাম বিজ্ঞান লেখাটা গছিয়ে দেয়া যেতে পারে। কিংবা আল্লাচালাইনা থেকে ধার করে বলা যেতে পারে – “পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপুর্ণ কেননা পর্যবেক্ষণ ও এতদসংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া (সায়েন্টিফিক মেথডের প্রয়োগ) আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে।” কিন্তু এগুলোও কিঞ্চিৎ সেল্ফ রেফারেন্সের দোষে দুষ্ট, রক সলিড লজিক নয়। যেমন, আল্লাচালাইনা উপরে “পর্যবেক্ষণসাধ্য” স্বার্থের কথাই বলছেন। এবং যে কেউ যে কোনো অবস্থায় তার ব্যক্তিক অপর্যবেক্ষণসাধ্য বা মেইড আপ স্বার্থের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে উপরের ক্লেইমকে রিফিউট করে দিতে পারে। বা অন্তত অস্বীকার করে ভিন্ন ক্লেইম করতে পারে। আপনি এর উত্তরে বলতে পারেন, তার ক্লেইম পর্যবেক্ষণ দ্বারা সিদ্ধ না। কিন্তু তখন সে যদি বলে যে আপনি এমন মানদণ্ড দিয়ে তাকে রিফিউট করছেন, যেটাতে উভয়পক্ষ এখনও একমতই হয় নি, তাহলে সে ভুল বলবে না।
ব্যক্তি কেনো তার অন্যান্য আর্বিট্রারি axiom কে ফেলে পর্যবেক্ষণকে বেশি গুরুত্ব দেবে, সেটা যেই উপায়তেই আপনি বোঝাতে যাবেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে সেই যুক্তি বিজ্ঞানবহির্ভূত এবং অনেক সময় সেল্ফ রেফারেনশিয়াল। পর্যবেক্ষণ কেনো গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রশ্ন আমাদের কাছে অবান্তর, অনর্থক, কিন্তু উত্তর খুঁজতে গেলে খুব রক সলিড, ডিফেন্সিবল লজিক পাওয়া যাচ্ছে না।
@রূপম (ধ্রুব),
হুঁ, কারণ “লজিক” তো এক্সিওম ছাড়া সম্ভব না। কাজেই, এক্সিওম বিহীন লজিক পাচ্ছি না কেন, এই দাবিটাই একটু অদ্ভুত নয় কি?
“অপর্যবেক্ষণসাধ্য” স্বার্থ বলে কিছু আছে কি? বিভিন্ন লোকের পর্যবেক্ষণ ভিন্ন হতে পারে, আর বিভিন্ন লোকের উদ্দেশ্য পরস্পরবিরোধী হতে পারে অবশ্য।
হ্যাঁ, কিন্তু আমার মনে হয় এটা যেকোন কিছুই বহির্ভূত, শুধু বিজ্ঞান নয়। অর্থাৎ এমন নয় যে ধর্ম বা দর্শন এর একটা জবাব দিয়ে ফেলেছে।
পয়েন্ট হল, আপনার সাথে আমার যেকোন কমিউনিকেশনের সম্ভাবনা মানেই আমাদের কিছু-না-কিছু আছে, যা কমন। দুজনেই কানে শুনতে পাই, দুজনেই চোখে দেখতে পাই, দুজনেরই খিদে পেলে ভাল লাগে না ইত্যাদি। কিছুই কমন না থাকলে (অর্থাৎ এক্সিওম ভিন্ন হলে) যোগাযোগ, তর্ক-বিতর্ক অসম্ভব।
@রৌরব,
হুমম, আবার অন্য দুইজন আছে যারা খোদার নৈকট্য ‘অনুভব’ করে। ফলে তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে আবার যোগাযোগ করতে পারে। তাদের সেই ‘অনুভব’ আর আপনার আমার চোখে দেখতে পাওয়ার মধ্যে কিছু গুণগত পার্থক্য আছে। সেটা তো তারাও বলছে। আপনি আমি যেমন তাদের সেই খোদায়ী অ্যাক্সিওম নির্ভর প্রপঞ্চের প্রোডাক্ট দেখে মুগ্ধ হতে পারছি না, তারাও পারছে না বিজ্ঞানের রকেট বানানোর ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হতে। অনেকে এই দুয়ের মধ্যে উত্তম অধম দেখতে পান। যে আপনার আমার মতো চোখে দেখে না, কানে শুনে না, তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারাটাকে আমার উৎকর্ষ? তার ব্যর্থতা? নাকি কেবলই অ্যাক্সিওম ভিন্নতা অ্যান্ড দ্যাট্স ইট?
@রূপম (ধ্রুব),
possibly। কিন্তু যেহেতু অন্যের তো দূরের কথা, নিজের হৃদয়ই আমরা ঠিক জানিনা, কাজেই আলোচনাটা চলতে থাকে। মানুষের মত যেহেতু পরিবর্তন হয়, কাজেই নিশ্চয়ই নিজের দুটো জিনিস ঘটে —
১. নিজের অ্যাক্সিওমকে পরিত্যাগ করা
২. চিন্তা ও আলোচনার মাধ্যমে নিজের অ্যাক্সিওম গুলি আবিষ্কার করা ও পরিচ্ছন্নতর ভাবে দেখতে পারা, ফলে মত পরিবর্তন
কিন্তু এই ফলিত পর্যবেক্ষণ থেকে এমন সিদ্ধান্তের কোন কারণ নেই যে কোন transcendental অর্থে একটি অবজেকটিভ অ্যাক্সিওম রাজি কোথাও বিরাজ করছে।
@রৌরব,
বিজ্ঞানবহির্ভূত এমন কোনো বিষয়ই কি আছে, ধর্ম বা দর্শন যার কোনো জবাব দিয়ে ফেলতে কখনো পেরেছে? আমার তো মনে হয় না আপনি মনে করেন যে এমন কিছু আছে যেটা বিজ্ঞান বহির্ভূত কিন্তু যেকোনো কিছু বহির্ভূত নয়। থাকলে সেই তালিকায় অন্তত উপরেরটা থাকা উচিত।
আমি কিন্তু বারবারই বলছি যে বিজ্ঞান বা পর্যবেক্ষণ নিয়ে মেটা আলোচনা মেটাফিজিকাল বিধায়ই এটা বিজ্ঞানের (পর্যবোক্ষণঘনিষ্ঠ অ্যাক্সিওমের) যৌক্তিক সিস্টেম বহির্ভূত। কিন্তু সেটা মেটাফিজিক্সকে ডিল করতে পারে এমন যৌক্তিক সিস্টেম বহির্ভূত তো নয়। এবং মেটাফিজিক্সকে নিয়ে দর্শন ডিল করে। এই ডিল করার মধ্যে জবাব করতে পারা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে জড়িত নয়। তবে একটা অ্যাক্সিওমেটিক সিস্টেমে আপনি একটা জবাবে উপনীত হতে পারেন জরুর। ফলে নানা ইন্টারেস্টিং অ্যাক্সিওমেটিক সিস্টেমে এই মেটাফিজিক্যাল প্রশ্নটাকে আপনি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করতে পারেন। একেকটা সিস্টেম একেকটা জবাব দিবে। বলতে পারেন, এগুলোর একটাও জবাবই হয় নি। কিন্তু এতে প্রকারান্তরে আপনি একজন লজিকাল পজিটিভিস্ট বনছেন, বলছেন যে মেটাফিজিকাল প্রশ্ন মাত্রই অবান্তর।
@রূপম (ধ্রুব),
কিন্তু প্রশ্নটি কি আসলে? মেটাফিজিকাল প্রশ্নটি বা প্রশ্নগুলি?
একটা লেবেল দেয়াই তো বড় কথা নয়, “ডিল” করাও তো বড় কথা নয় — যদি পুরো প্রজেকটটি vacuous হয়। প্রজেকটটির তো একটা bite থাকতে হবে।
আমার তো ঠাহর হয় বিজ্ঞান নিয়ে মেটা আলোচনা আসলে সমাজবিজ্ঞান, বা ফলিত ভাষাবিদ্যা বা এমনকি রাজনীতির আলোচনা।
@রৌরব,
সম্ভবত এগুলো –
কোনটা বিজ্ঞান আর কোনটা নয়?
পর্যবেক্ষণের মনোপলি মেনে নেবার কারণ কী?
পর্যবেক্ষণটাই কি প্রকৃত বাস্তবতা?
বিজ্ঞান কি অবিজ্ঞানের চেয়ে উত্তম?
@রূপম (ধ্রুব),
সেটা বিজ্ঞানের সংজ্ঞারই বলে দেয়ার কথা।
কারণ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা সেটা দাবী করছে। সেটা না মেনে নিলে সেটা অমৃত লাভ হতে পারে, বিজ্ঞান লাভ হবে না।
এটাই আসল প্রশ্ন সম্ভবত, অর্থাৎ বিজ্ঞানকে “মানব” কেন। এক্ষেত্রে আগে যেটা indicate করেছি, মৌলিক মতবিরোধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সে পর্যায়ে আলোচনার কিছু নেই, অগ্রাহ্য না করা গেলে যুদ্ধ।
এ বিষয়ে যেকোন আলোচনা “আমি কি চাই” এর উপরে শেষ বিচারে নির্ভরশীল। in practice, যেহেতু মানুষের চাহিদা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে কিয়ৎপরিমাণে overlap রয়েছে, অতএব একধরণের quasi-objective আলোচনা সম্ভবপর হয়। কিন্তু এই আলোচনা কে আমার ঠিক অন্য কোন “স্তরের” মনে হয় না — রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান বা ভাষাতত্বের কথা আগেই বলেছি — এমনকি এ প্রশ্নকে বৈজ্ঞানিক ভাবেই ফ্রেম করা যায় — যেমন, প্রযুক্তির উন্নয়নের হার বিজ্ঞানে বিশ্বাসের হারকে কিভাবে প্রেডিক্ট করে?
এ প্রশ্নের অর্থ? সরল ভাবেই জিজ্ঞাসা করছি।
@রৌরব,
মানে বিজ্ঞান যে পর্যবেক্ষণের কথা বলে, নাড়াচাড়া করে, সেটাই প্রকৃত বাস্তবতা কিনা, এই আরকি।
@রূপম (ধ্রুব),
এমন হতে পারে “যৌক্তিক সিস্টেম” সম্বন্ধে আমার শ্রদ্ধাটা মাত্রাছাড়া কম। যুক্তি, as such, আমার কাছে প্রায় অবান্তর। যুক্তি একটি approximation system যা আমাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের অভাব মেটায়।
@রূপম (ধ্রুব),
আমি এও ভাবতে চাই যে সেলফ রেফারেন্সিয়াল সিস্টেমের ব্যাপারে কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে আপনি আরেকটু ক্ষমাশীল হবেন। হলই সেলফ রেফারেন্সিয়াল।
দার্শনিক ও ধ্রুপদী বিজ্ঞানের আলাপে (মূল প্রবন্ধেও এর উদাহরণ আছে) hierarchy খুঁজে বেড়াবার একটা প্রবণতা আছে (প্রথমে দর্শন, তার পর গণিত, তার পর ভৌত বিজ্ঞান, তার পর ফলিত বিজ্ঞান ইত্যাদি) যা ক্রমশ আমাকে হতাশ করে। পুরো প্রজেকটটি অবান্তর কিনা, এটা চিন্তার দরকার আছে।
@রৌরব,
বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন ও পর্যবেক্ষণসাধ্য পুনরুৎপাদনযোগ্য প্রকল্পের যাচাই।
দিলাম বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়নকে মেটাফিজিক্সের হাত থেকে বাঁচিয়ে। :-s
বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন বৈজ্ঞানিক কর্ম নয়, দার্শনিক কর্ম, এটা মেনে নিতে সমস্যা দেখি না। এটাই সহজ স্বাভাবিক লাগছে, এটাকে সেল্ফ রেফারেন্স দিয়ে বৈজ্ঞানিক দেখানোটা, বা পর্যবেক্ষণ ভালো কারণ পর্যবেক্ষণ ভালো এই লাইনের যুক্তিগুলো মেইড আপ লাগছে। এখানে রিকার্শন আর্গুমেন্ট জিততে নয়, হারতে সাহায্য করছে। বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন দার্শনিক কর্ম এমনটা মেনে নেয়ার পর কেউ যদি বলে সো হোয়াট, তাহলে এই পর্যায়ে কথা আরো আগানো যায় (বা টাটা নেয়া যায়)।
@রূপম (ধ্রুব),
বাক্যের প্রথমাংশে আমার সমস্যা নেই। দ্বিতীয়াংশে আছে। আমি বলব, বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন একটি সাংস্কৃতিক কর্ম। এটি কিভাবে ঘটেছে তা সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, মনস্তত্বের জটিল প্রশ্ন। কোন কোন সময় একটি সংজ্ঞা practice থেকে পরে উঠে আসে। সেক্ষেত্রে সেটাকে “দার্শনিক কর্ম” বলাটা ahistorical এবং অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। যেমন একার্ট-মচলি কম্পিউটার বানানোর পরে নয়মান তার একটা “সংজ্ঞা” দিলেন (ফন নয়মান আর্কিটেকচার)। আমার মনে হয় না এমন বলা যাবে যে কম্পিউটার আর্কিটেকচারের সংজ্ঞা দেয়াটা “গাণিতিক কর্ম”। হায়রার্কি তৈরির প্রয়োজন দেখি না।
@রৌরব,
তাইলে এর হকিংসিদ্ধ প্রত্যুত্তর হইলো
😀
@রৌরব,
অন্যভাবে বললে, আমার আপত্তি সার্কুলার রিজনিং নিয়ে।
@রৌরব,
আপনার পুরনো একটা কথা এখানে থাক
@রৌরব,
পর্যবেক্ষণঅঘনিষ্ঠ স্বার্থের কথা চিন্তা করতে পারেন। যেমন যে ব্যক্তি খোদার নৈকট্য ‘অনুভব’ করছেন বলে দাবি করছেন, তার সেই অনুভবে বহাল থাকার স্বার্থ। এই ক্ষেত্রে আল্লাচালাইনার দাবীকৃত বিজ্ঞানের নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফলসমূহ তার স্বার্থের বিপরীতে চলে যেতে পারে আরকি। :-s
@রূপম (ধ্রুব),
right। ওটা আমি অন্যভাবে বর্ণনা করেছি পর্যবেক্ষণের subjectivity-র কথা বলে। ওই অনুভবই তার পর্যবেক্ষণ। এখন অনুভব অভিভবে বিভোর হয়ে এ লোক যদি বাসে চড়তে না চায় বা ওষুধ খেতে না চায়, ফাইন। কিন্তু আমাকে বাসে চড়তে নিষেধ করলে সমস্যা। এক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে unresolvable পার্থক্য থাকার সম্ভাবনা আমি উড়িয়ে দেব না। অর্থাৎ, একটি অবজেকটিভ দৃষ্টিভঙ্গি স্রেফ আবিষ্কৃত হওয়ার আশায় বসে আছে, এরকম সন্দেহের কোন কারণ দেখি না। এবং সেক্ষেত্রে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী।
@রূপম (ধ্রুব),
বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নিয়ে অন্যরা বলেছেন। পর্যবেক্ষণ অসম্ভব বৈজ্ঞানিক বা গাণিতিক প্রশ্ন থাকতে পারে। ধরেন আমরা এক রকম জগৎ করে নিলাম যেখানে ইনভার্স স্কয়ারল টা অন্যরকম। এখন এই জগৎ এর নানান বিষয় নিয়ে প্রশ্ন আলোচনা, থিওরেম করোলারি ডিরাইভ করা যেতে পারে। এবং সেগুলো পর্যবেক্ষণের আয়তাধীন না হলেও যৌক্তিক উপায়ে খণ্ডন বা প্রমাণ করা যায়। আমার ঐ সময়কার অক্সিয়মগুলোর ভিত্তিতে। ভৌত জগতে কোনো কাজে না লাগলেও স্রেফ ইন্টেলেকচুয়াল কিউরিওসিটি থেকে সেই প্রশ্ন নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে।
শুধু বিজ্ঞান নয়, সাহিত্য চিত্রকলা নিয়েও আলাপ হতে পারে। কিন্তু প্রশ্নকারীকে একটা “ওয়েল ফরমুলেটেড” প্রশ্ন করতে পারতে হবে। কেউ যদি বলতে না পারে আমার উত্তরটাকে কিসের ভিত্তিতে সে যাচাই করবে (পর্যবেক্ষন, ডিডাকশন, বা স্রেফ শুনতে ভালো লাগলো কি না, রক্ত গরম হয়ে উঠলো কি না ইত্যাদি ইত্যাদি) তাহলেও সেই প্রশ্নটা এক রকম “আনসারেবল”। কিন্তু অনেকেই হুঠ করে প্রশ্ন করে বসে যেটার উত্তর আসলে সে চায় না। স্রেফ তেনা পেচাইতে চায়। যেমন “জীবনের উদ্দেশ্য কী?” এইটা এমন এক প্রশ্ন।
যদিও এইটা একটা গভীরতম প্রশ্ন কিন্তু বেশিরভাগ সময় যে ব্যক্তি প্রশ্নটা করে তাকে যদি বলি, “আমি জীবনের উদ্দেশ্য বলে দিলে সেটা আপনি কিভাবে যাচাই করবেন?” অমনি ধরা খেয়ে যাবে। কিন্তু কেউ কেউ ধরা খাবে না। তারা আমাকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে কনভিন্স করতে পারবে। সে ধরনের মানুষের সাথে সাথে দর্শন বিজ্ঞান শিল্পকলা এসব নিয়ে (এমনকি দীর্ঘ সময়) আলোচনা করতে খারাপ লাগবে না। হয়তো ফলপ্রসু সিদ্ধান্তেও আসা যাবে।
@তানভীরুল ইসলাম,
উত্তরটা পছন্দ হয়েছে।
কিছু সমস্যার কথা বলি। যতক্ষণ পর্যন্ত বক্তব্য (পর্যবেক্ষণসিদ্ধ হোক না হোক) একটা কন্সিস্টেন্ট যৌক্তিক কাঠামোতে থাকছে, ততোক্ষণ যদি সেটা ইন্টারেস্টিং হয়, তাহলে ইন্টারেস্টিং বক্তব্যের সমাহার বিশাল। একসেট আর্বিট্রারি axiom এর উপর ভিত্তি করে বানানো গোডেলের ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণও ইন্টারেস্টিং। এর উপর ভিত্তি করে আমার বন্ধু মোহাম্মদের ডিরাইভ করা নৈতিক জিঘাংসামূলক যুক্তিও ইন্টারেস্টিং। গাজ্জালি যে ইসলামি (প্রায়) যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে থেকে বিজ্ঞানঘনিষ্ঠ মুতাজিলাদের অবস্থানকে ধ্বংস করেছিলেন, সেটাও ইন্টারেস্টিং। অন্তত শেষেরটা সত্যিই ইন্টারেস্টিং। কারণ আমার মতে গাজ্জালি যৌক্তিকভাবে ঠিক ছিলেন। মুতাজিলারা ইসলামের যে কাঠামোর মধ্যে থেকে বিজ্ঞান সাধনা করছিলেন, সেখানে কন্ট্রাডিকশন উৎপন্ন হয়। মুতাজিলারা সেই কন্ট্রাডিকশন রিজলভ না করায় গাজ্জালি সেটা ধরিয়ে দিয়ে তাদের ধ্বসিয়ে দেন। মুতাজিলাদের টিকে থাকার জন্যে যেটা করতে হতো, সেটা হলো ইসলামের রিফর্ম। সেটা না করে তেল আর জল একসাথে মিশানোর ফল গাজ্জালি তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে।
এক অর্থে এগুলো কোনোটাই সমস্যা না। একটা কন্সিস্টেন্ট সিস্টেমে কথা আগানো যায়, এটাই তো একটা বড় প্রাপ্তি। সিস্টেমটার axiom গুলো মানি নাকি মানি না, সেটা আলাদা কথা।
(Y)
কথাটা খুব আনাড়ির মতো হয়ে গেলো। যে আইডিয়াটা হঠাৎ পান বলে মনে করেন, সেটা কেনো হঠাৎ এসেছে বলে “বোধ” হয় আমাদের কাছে? কারণ “সচেতনতায়” আইডিয়াটা সেই মুহূর্তে ধরা দেয়। কিন্তু আইডিয়াটা বের হবার প্রক্রিয়াটা আপনার অবচেতনে প্রণালীবদ্ধভাবে যথোচিত সময়ে গণনা হয়েছে তেমনটা ভাবছেন না কেনো? অবচেতন তার সব গণনা তো আপনার সচেতনতাকে জানান দিয়ে করার কথা নয়। তেমনটা হয়ও না।
বিজ্ঞান লেখার এতো গোড়ায় এই অসতর্ক ভাববাদের অবলম্বন হতাশাজনক।
প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই পড়েছি। চমৎকার লেখা। আজ মন্তব্য করতে বসলাম।
দর্শন ও বিজ্ঞান নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা ভাবনা আছে। দার্শনিক কে? আমার মতে দার্শনিক হচ্ছে যিনি জ্ঞান প্রেমী। এখন জ্ঞানের শুরুই হয় প্রশ্ন থেকে। দর্শন এই প্রশ্নগুলো উথ্বাপন করে। ইন ফ্যাক্ট খেয়াল করলে দেখবো, দর্শন কখনো প্রশ্নের উত্তর দেয় না। সে উপায় তার নেই। তাই দর্শনের বিবর্তন অনেকাংশে বিজ্ঞান নির্ভর। কোয়ান্টাম ডুয়ালিটি আবিষ্কারের পরে, বা বিবর্তন আবিষ্কারের পরে দর্শনের প্রশ্নমালাকে তাই বদলাতে হয়। কারণ আগের অনেক প্রশ্নই হয়ত সেটেল হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হলো, দর্শনের প্রশ্নগুলো ইনহেরেন্টলিই অনুত্তর যোগ্য। মানে একেবারে “সঠিক উত্তর” দেবার উপায় নেই। কারণ কেউ যদি বলে তার উত্তরটা সঠিক, তখন “সঠিক” বলতে কি বোঝাচ্ছে, সেটা নিয়েও দার্শনিক আলোচনা শুরু হয়ে যেতে পারে। এসব চক্র থেকে বিজ্ঞান বা গণিত আমাদের মুক্তি দেয় কিছু অনুমিতি, কিছু স্বীকার্য এসব এনে। দর্শন এই অনুমিতিকেও প্রশ্ন করতে পারে। যেখানে বিজ্ঞান যতক্ষণ দেখে, তার হাতে থাকা অনুমিতি গুলোর সাহায্যে প্রেডক্টিভ একটা তত্ব দাড়া করাণো যাচ্ছে, সেটা সকল ধরনের অবজার্ভেশনকে ব্যখ্যা করতে পারে, ততক্ষণ অক্কামের ক্ষুর খাটিয়ে, বাড়তি স্বীকার্য, বা বিকল্প স্বীকার্যনিয়েও মাথা খাটায় না। দর্শন হয়তো প্রশ্ন করতে পারে “অক্কামের ক্ষুর” ধারনাটাকে নিয়েই। তাই আমার মতে দর্শনের কাজ হলো প্রশ্ন খুঁজে বের করা। বিজ্ঞানের কাজ হলো উত্তর খুঁজে বের করা। এছাড়া দার্শনিক আলোচনার এক রকম আনন্দ আছে। আমাদের লব্ধজ্ঞান, আর অজানা প্রশ্নগুলোকে উপভোগ করতে দার্শন চর্চা আমরা কম বেশি করিই।
বারট্রান্ড রাসেলের “দ্য ভ্যালু অফ ফিলসফি” এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন।
@তানভীরুল ইসলাম,
আপনার বক্তব্যের সাথে আমি অনেকাংশেই একমত। ফারসীম ভাইয়ের লেখাটিতে ফেসবুকে ট্যাগ করবার পর এনিয়ে আমার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাটি সেখানে কমেন্ট আকারে দিই (যেটি এখানেও দিয়েছি) এবং একটি আলাদা প্রবন্ধ লিখি। সেই অনুপ্রেরণার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। যাই হোক, আমার মনে হয় প্রশ্ন করাটা শুধুমাত্র দার্শনিকদের ক্ষে্ত্রের আওতাধীণ বিষয়টি মনে হয় সেরকম না।বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং পদ্ধতির প্রথম ধাপটি (প্রকৃতপক্ষে সবচাইতে মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিনতম) হল একটি ভালো অর্থাৎ “বৈজ্ঞানিকভাবে” অর্থপূর্ণ প্রশ্ন করা। প্রশ্নটি অনেকসময়ই নির্ভর করে পূর্ববর্তী বৈজ্ঞানিক ফলাফল এবং তথ্য-উপাত্তের ওপর। এর সাথে নিজস্ব অভিজ্ঞতার সম্মিলনও সম্ভব। মনে রাখতে হবে, সব প্রশ্নই বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থপূর্ণ নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থপূর্ণ নয় অর্থ হল নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে প্রশ্নের যাচাইযোগ্য কোন উত্তর সম্ভবপর নয়। এটি ঠিক যৌক্তিকভাবে অর্থপূর্ণ প্রশ্নের সমতুল্য নয় বিশেষ করে সেই যুক্তি যদি কান্ডজ্ঞান নির্ভর হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেকট্রন একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে কোন নির্দিষ্ট অবস্থানে কিভাবে পৌঁছে? এই প্রশ্নটি বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থহীণ নয়। কারণ ইলেকট্রনটির অবিভাজিত অবস্থাতে একইসাথে দুইটি ভিন্ন পথ পরিক্রমা একটি বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহিত সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাটির সত্যাসত্য নির্ভর করে এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের জগতের তত্ত্বটির যাচাইযোগ্যতার ওপর এবং সেটি সম্ভব। আমরা জানি প্রশ্নটির পেছনের অনুমানটি (ইলেকট্রনের সুনির্দিষ্ট গমণপথ) ভুল এবং সিদ্ধান্তটি কিন্ত চিরায়ত যুক্তিবিদ্যার নিরিখে মোটেও স্পষ্টত: প্রতীয়মান নয়। এখন আমরা যদি “সকল বিজ্ঞানীই দার্শনিক কিন্ত সকল দার্শনিক বিজ্ঞানী নয়” এই বক্তব্যটিকে আপাতত: দুরে সরিয়ে দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীর প্রচলিত সংজ্ঞাকে মেনে নিয়ে আগাই তাহলে দেখব–বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করবার জন্য যেই যোগ্যতা এবং প্রশিক্ষণ প্রয়োজণ তা সাধারণভাবে জ্ঞানপ্রেমী দার্শনিকদের নেই। বিজ্ঞানের যতই সীমাবদ্ধতা থাকুক না কেন বাস্তবতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য জ্ঞানার্জনের সেটিই শ্রেষ্ঠ পথ–এ বিষয়ে হয়ত আমরা একমত হতে পারি। আর সেজন্য জীবনের বা মহাবিশ্বের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কি? অথবা আপনাকে দেখবার পর আগামীকাল আমি ঠিক কি প্রতিক্রিয়া দেখাব? বা বাজার থেকে আলু নাকি মুড়ি কিনব?–সেগুলো বৈজ্ঞানিক শুধু নয় বিজ্ঞানমনস্ক মননের কাছে অবান্তর এবং গুরুত্বহীণ প্রশ্ন—হিংসার বর্ণ কি?–সেটি যেরকমটি। তবে দার্শনিকদের কাছে হয়ত সেগুলো গুরুত্বহীণ নয়। দর্শন বা গণিতের মূল্য বিজ্ঞানের কাছে-বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে এদের উপযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। এজন্য বিজ্ঞানীরাই নির্ধারণ করেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির (যা নিয়ে হয়ত বিজ্ঞানের দর্শনের দার্শনিকেরা লিখে গেছেন) কোনটি কোনটি তাঁরা গ্রহণ করবেন আর কোনগুলো তাঁদের কাছে গুরুত্বহীণ–এমনকি তাঁদের যে বিজ্ঞানের দর্শনের দার্শনিকদের কাজগুলো কনসাল্ট করে প্রতি পদে এগোতে হয় তাও হয়ত সার্বিকভাবে সত্য নয়। গণিতের বিষয়টি ঠিক এমনটি না হলেও এক রকম সমান্তরাল বিষয় সেক্ষেত্রেও দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে একটি মজার কথা বলি। বিখ্যাত পদার্থবিদ গেলম্যান ( যিনি কোয়ার্কের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত) তাঁর অষ্টাঙ্গিক মার্গে কণিকাসমূহকে দলবদ্ধ করতে গিয়ে গণিতের সমাহারতত্ত্বের নিয়মাবলী স্ক্র্যাচ থেকে প্রতিপাদন করে প্রয়োগ করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি জানতে পারলেন এটি গণিতবিদেরা বহুবছর আগেই করে রেখেছেন (এর প্রয়োগ বা প্রয়োজণীয়তা নিয়ে অবশ্য তাঁদের মাথা ঘামাতে হয়নি)।
লেখক এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দিয়ে দিলে বাধিত হই
[১] জীবনের উদ্দেশ্যে কি? আমাদের প্রায় প্রতিটা কাজ এই উদ্দেশ্যের সাথে সরাসরি বা অপ্রত্যক্ষ্য ভাবে জড়িত। ফলে রাজনীতি এবং সমাজবিজ্ঞান, আইন সবটাই এই প্রশ্নের সাথে জড়িয়ে আছে। এই প্রশ্নের সমাধান বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান চালিত দর্শন ( Naturalist Philosophy) দিয়ে লেখক কিভাবে দেবেন?
[২] একই বাস্তবতার প্রকাশ একটি মাত্র সত্য দিয়ে হয় না। একটি বাস্তবতাকে অসংখ্যভাবে প্রকাশ করা যায়- কোন কোন ক্ষেত্রে তার কিছু সীমাবদ্ধ প্রকাশ বিজ্ঞান করে থাকে এবং অবশ্যই ত্রুটি কমিয়ে। তাহলে বিজ্ঞান দিয়ে বাস্তবতার পূর্নাঙ্গ সত্য কি ভাবে উদ্ঘাটন করা সম্ভব? আজ থেকে ১০০ বছর ভবিষয়তে লোকে একই বাস্তবতার অনেক কিছুই আরো গভীরে গিয়ে জানবে এবং এই জন্যেই বাস্তবতার প্রকাশ চিরঅসম্পূর্ন থাকতে বাধ্য। তাহলে বাস্তবতা এবং সত্যের মধ্যে এই যে সতত ব্যবধানটা রয়ে যাবে, এটা কি করে বিজ্ঞান পূরণ করবে? বিজ্ঞান এবং দর্শনের ইতিহাস পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, এই ব্যাবধানটা দর্শন পূরণ করে এবং যখন সেখানে বিজ্ঞান চলে আসে, সেখানে দর্শন স্থলাভিষিক্তি হয়। তার মানে দর্শন মৃত হয় না। দর্শন মৃত এই ঘোষনা গত ৩০০০ বছরে অনেক রথী মহারথীরাই দিয়েছেন। হকিংস সাহেব প্রথম এই হুঙ্কার ছাড়েন নি। এবং তার দার্শনিক অজ্ঞতা নিয়ে মুক্তমনাতেই অনেক বিতর্ক হয়েছে-এই লিংকে আছে
[৩] গণিত বিজ্ঞানের “একটি” ভাষা যা বাস্তবতার “প্যারামেট্রিক” উপস্থাপনা করতে সাহায্য করে। শুধু মাত্র এই উপস্থাপনা দিয়ে বাস্তবতার কতটা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি? যারা কমপ্লেক্স সিস্টেমে কাজ করেন, তারা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হন প্রতিদিন। ভবিষয়তে আরো উন্নত উপস্থাপনা আসতে বাধ্য, তখন হয়ত গণিতের বদলে সত্যটাকে অন্যভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হবে, যাতে বাস্তবতার সাথে সত্যের পার্থক্য আরো কমে আসে। এটা ২ নাম্বার পয়েন্টেরই আরো একট উপপাদ্য। কিন্ত সেটা যদি হয় [ হবেই বা হচ্ছেই] , সেটার জন্যেও ত বাস্তবতার ভাষার দার্শনিক ভিত্তি দরকার।
@বিপ্লব পাল,
।
এটাতে টাইপো আছে-হবে
যখন সেখানে বিজ্ঞান চলে আসে, সেখানে বিজ্ঞান দর্শনের স্থলাভিষিক্তি হয়।
@বিপ্লব পাল,
আপনার প্রশ্ন যথার্থ এবং গভীর। আমার নিজস্ব পাঠ অনুযায়ী আমার উত্তরগুলি হবে নিম্নরূপঃ
[১] জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নাই, এটা পয়েন্টলেস। আপনি-আমি কীভাবে জীবন গড়ব সেটা আপনার-আমার মস্তিষ্কের গঠন ও পারিবেশিক প্রভাবের উপর নির্ভর করবে। কোন একদল জীব কীভাবে তার দৈনন্দিন ক্ষুন্নিবৃত্তি করবে সেটা বিজ্ঞান সমীকরণ দিয়ে বলে দেবে না। সেটা জৈবিক কান্ডজ্ঞানের উপর বেশি নির্ভর করবে।
[২] মডেল-নির্ভর বাস্তবতার সংজ্ঞানুযায়ী বাস্তবতার কোনো একক বা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেই। ‘পূর্ণাঙ্গ বাস্তবতার’ একটা রূপের কল্পনা প্লেটোনিক রিয়ালিটি জাতীয় তত্ত্বে দেখা যায়। বাস্তবতাকে এ-প্রিয়রি ছাপে ফেলে তারপর তাকে খোঁজার চেয়ে মডেল আমাকে কীভাবে বাস্তবতা দেখাবে সেটাই বেশি বিশ্বাসযোগ্য। কাঁচের পাত্রে রাখা গোল্ডফিশ বাস্তবতাকে কীভাবে দেখে আর কাঁচের বাইরের বাস্তবতা কীরকম সেটা ভাবা যেতে পারে। গোল্ডফিশ যদি খুব বুদ্ধিমান হয়, তাহলে হয়ত সে কাঁচের প্রতিসরণ ধর্ম বের করতে পারবে এবং তদনুযায়ী মডেল তৈরি করবে, সেই মডেল তাকে যট্টুকু বলবে সেটাই তার জন্য ‘বাস্তব’, এর বাইরে আর কিছু নেই।
[৩] গণিত শুধু ‘ বাস্তবতার “প্যারামেট্রিক” উপস্থাপনা’ করে না, তারও বেশী করে। গণিতকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যক্ষের বাইরেও মডেল নির্মাণ সম্ভব। যেমন কোয়ার্ক মডেল – এই মডেলে এমন কিছু ভৌত ব্যাপার আছে যার জন্য আপনি আপনার বিশ্বে কখনোই মুক্ত কোয়ার্ক ‘দেখতে’ পাবেন না। কিন্তু তারপরও কোয়ার্ক আবিষ্কৃত হয়েছে তার অপ্রত্যক্ষ সিগনেচার থেকে।
দর্শনের যে সীমাবদ্ধতাটা খুব প্রকট, সেটা হল বিশুদ্ধ চিন্তার সাহায্যে এইসব গভীর বিষয়ের সুরাহা করার চেষ্টা করা। এরিস্টটল বলতেন ভারি বস্তু পালকের তুলনায় আগে পড়ে, কিন্তু কখনো পরীক্ষা করে দেখেন নি ঘটনা আসলে কী? গ্যালিলেও পরীক্ষা করে দেখালেন, সকল মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর ত্বরণ একই। এটাই সমস্যা। কেবল চিন্তা দিয়ে এগুলোর সমাধান সম্ভব নয়।
@ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
আপনার কথা যদি সত্য হয়
[১] একই পরিবারে জন্মানো দুই ভাই এর জীবনের উদ্দেশ্য এক হওয়ার কথা। সেরকম আমরা দেখি কি? দু ভাই দুই আলাদা পার্টি করে এ ত আকছার আমরা দেখি।
[২] বা ধরুন, বাজারে গিয়ে কোন লোক কি কিনবে, সেটার প্রেডিকশন সম্ভব-যেটা ফেনোমেনোলজিক্যাল রিয়ালিটি । কিন্ত তার কি কেনা উচিত-সেটা কি করে বিজ্ঞান বলে দেবে?
কে কি জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে তার ফেনোমেনোলজিক্যাল মডেলিং কিছুটা সম্ভব-কিন্ত সেই প্রশ্ন করি নি। আমার প্রশ্ন ছিল- সেই উদ্দেশ্য সঠিক না বেঠিক-এটা কি করে ঠিক করবে বিজ্ঞান? ধরুন যে বি এন পিকে সমর্থন করে, সে সঠিক না বেঠিক এটা বিজ্ঞান দিয়ে কি করে মীমাংসা করবেন?
তাহলে হাইপোথিসিস বিজ্ঞানের বাইরে না ভেতরে? তাহলে হাইপোথিসিসে বাস্তবতার এপ্রায়রি রুপ নেওয়া হয় কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দিলেই বুঝতে পারবেন বিজ্ঞানের পরিধি সর্বদাই সীমিত থাকবে। হাইপোথিসিসে এমন কিছু নেওয়া হয় না, যা বিজ্ঞানের পরিপন্থী। দর্শনেও তাই। সেখানেও যদি এমন কিছু নেওয়া হয় যা বিজ্ঞানের পরিপন্থি তাহলে তা জ্ঞানের স্থলাভিষিক্ত হবে না ( জ্ঞানের সংজ্ঞা দেখে নিতে পারেন।)।
তাহবে বিশ্বাস।
এই জন্যে ধর্ম গ্রন্থের জ্ঞান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্ঞান না-বিশ্বাস। কিন্ত এই কোনটা কিভাবে
জ্ঞান, বিশ্বাস বা বিজ্ঞান-এই যে ইনফর্মেশন বা স্ট্রাকচার ডোমেন-সেটাত বিজ্ঞানের ডোমেনে আসে না-কারন বিজ্ঞান নিজেই একটা সাবডোমেন। এই চর্চাটা সম্পূর্ন ভাবেই দর্শনের অন্তভূক্ত।
আমার প্রশ্ন তা ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে “আজকের” গণিত দিয়ে একটা ফেনোমেনোলজিক্যাল মডেল বা বাস্তবতার একটা রূপ আপনি পেলেন। “কালকের” গণিত দিয়ে সেই একই বাস্তবতাকে আরো গভীরে গিয়ে চিনবেন। এটাই বিজ্ঞানের ইতিহাস। এবং এর শেষ হবে না কোনদিন ও। সুতরাং আজকের বাস্তবতার মধ্যেই আমার চিন্তাকে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, এমন দাবী করা ভিত্তিহীন।
আপনি আমার দর্শিত লেখাটা পড়েন নি-যেখানে এই প্রশ্নের পরিস্কার উত্তর ছিল।
দর্শনকে দুই ভাগে ভাঙা যায়- [১] ন্যাচারালিস্টিক-যেখানে বলা হয়, বিজ্ঞানের সাহায্যে সব “জ্ঞান” এবং প্রশ্নের মীমাংসা করা হবে [২] নন-ন্যাচারালিস্টিক- যেখানে “কিছুকে” লেমা ধরে, ডিডিউস করা হবে। যেমন ধরুন, জীবনের উদ্দেশ্য কি-এই প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক সমাধান নেই। তখন একটা এডহক লেমা ধরতে হবে। যেমন কেও ধরল –“ছেলেপুলেকে ঠিক ভাবে মানুষ করা” । এইবার তারওপর যে কেও ন্যাচারালিস্টি দর্শন দিয়ে তখন বার করতে পারে, তাহলে তার কি কি করা উচিত। এমন অনেক প্রশ্ন আছে যা বিজ্ঞানের “ডোমেনের” বাইরে এবং তার সমাধানের জন্যে কিছু লেমার সাহায্য নিতেই হয়।
এমন একটা উদাহরন হচ্ছে ধরুন কোন একটা মেয়ে আপনাকে প্রপোজাল দিল-আপনি আপনার স্ত্রঈ সংসার থেকে দূরে আছেন। তাহলে কি সুযোগ নেবেন? বিজ্ঞান দিয়ে যদি উত্তর খোজেন তাহলে দেখবেন, বৌ এর বিশ্বাস ভঙ্গ করলে, এক্ষেত্রে কিছুই যায় আসে না। কিন্ত এই ধরনের বিশ্বাস ভঙ্গ আনএথিক্যাল বা অনৈতিক কাজ । এই ধরনের “জীবনে কি করা উচিত” এই গোত্রের প্রশ্নগুলির অনেকটাই বিজ্ঞানের ডোমেনের বাইরেই থাকবে।
@ পালবাবু,
আপনার প্রথম প্রশ্নগুচ্ছ খুব সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক ছিল বিধায় আমি উত্তর দিতে প্রাণিত বোধ করেছি। কিন্তু উপরে আপনি যা বললেন, কিছু মনে করবেন না, খুবই পানসে ডিসকোর্স মনে হল। আপনার কাছ থেকে এইটা কিছুটা অপ্রত্যাশিত। আপনি বেশ কিছু জিনিস গুলিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু সেইটা করার ব্যক্তি-অধিকার আছে। কাউকে ভালোবাসার সম্পূর্ণ অধিকার আপনার আছে, সেখানে বিজ্ঞান কি দর্শোন কি ধর্ম – কারওই কিছু বলার নাই। 😉
আপনি বেশ কয়েকবার আপনার লেখাটির লিঙ্কের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, আমি দেখেছি ঐ লেখার কমেন্টগুলোতেই আপনার উত্তর আছে, কাজেই এখানে আর নতুন কিছু বলার নাই।
আপনি মানতে না চাইতে পারেন, কিন্তু ব্যাপারটা এরকমই। আপনি দর্শনের সমঝদার এবং একনিষ্ঠ ভক্ত, কিন্তু তাতে বিজ্ঞানের পজিশন বদলাবে না। বাকিটা আপনার ব্যক্তিগত অভিরুচি।
যাহোক, আমার বক্তব্য আমি দিয়েছি, এর বেশি আমি কিছু বলতে উৎসাহ পাচ্ছিনা, সাধারণত পোস্টের মন্তব্য আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তবে কথোপকথনে উৎসাহ পাইনা, এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত অনীহা। আপনি অতিপ্রজ লেখক, তাই গাদাগাদা বাক্য লিখতে আপনার আনন্দ হয় হয়ত, আমি বোর হই। :-Y
‘কহিবার কথা যাহা কহিনু তোমায়
ধর বা বিরক্ত হও যাহা ইচ্ছা হয়’। :rotfl:
@ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
দর্শন শেখার সব থেকে উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে প্রশ্ন করে,বিতর্ক তোলা এবং তার সমাধান খোঁজা। বই পড়ে শুধু দর্শন শেখা যায় না- প্রশ্ন তুলেই, সংশয় তুলে, উদাহরন তৈরী করেই শিখতে হয়। প্লেটোর ” রিপাবলিক” থেকে হিন্দুদের গীতা হয়ে পপারের দর্শনের সব কিছুই প্রায় “ডায়ালোগের” ওপর তৈরী। চিন্তার ভিত্তিই হচ্ছে প্রশ্ন, প্রতিপ্রশ্ন এবং সমাধান। আপনি যা লিখেছেন, তা হচ্ছে দর্শন মৃতর ওপর একগুচ্ছ আগের চিন্তা যার অধিকাংশই অজ্ঞানতা প্রসূত। এবং এই অজ্ঞানতার কারন ও হচ্ছে, আপনি যেগুলো পড়েছেন, সেগগুলোর ওপর কে কি প্রশ্ন করেছে, ক্রিটিক্যাল রিভিও দিয়েছে সেগুলো দেখেন নি।
সব ইনফর্মেশনকেই জ্ঞান এবং বিশ্বাসে ভাঙা যায়। জ্ঞান এর একটি বিশিষ্ট ভাগ হচ্ছে বিজ্ঞান। কিন্ত কেও যদি বলে বসে সব জ্ঞানই বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের “ডোমেনের” বাইরে যে জ্ঞান সে জ্ঞান অর্থহীন, তাহলে তা কেন হাস্যকর শোনাবে, তার জন্যেই আমি উপোরক্ত প্রশ্ন গুলো করেছিলাম। প্রশ্নের উত্তরের বাইরে জ্ঞান, বিজ্ঞান বা দর্শন কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।
@বিপ্লব পাল,
এইসব পাতি-লেকচার দিয়ে তাহলে আপনি বোঝাচ্ছেন যে, আপনার সো-কলড জ্ঞানী প্রশ্নোত্তর এবং ‘ক্রিটিক্যাল রিভিও’ সম্বলিত ব্লগীয় ফলগুধারা জ্ঞানের একমাত্র উৎস? যাব্বাবা …
@ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
দেখুন আমি প্রথাগত দার্শনিক না- পেশাগত ভাবে প্রযুক্তি বা ফলিত বিজ্ঞানই আমার পেশা। তাই বি এস সি কোর্সের বিজ্ঞানদ্বারা যদি দর্শন শাস্ত্রকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে যান, সেটাকে আমি শিশুসুলভ চেষ্টা বলেই ধরব। কারন আমি বিজ্ঞানের সীমানা প্রতিদিনই দেখতে পায়। এর মানে এই নয় যে বিজ্ঞান সেখানে থেমে থাকে। সে তার নতুন সীমানা আরো বাড়াবে-কিন্ত বাস্তব এটাই বিজ্ঞান দিয়ে শুধু পপারিয়ান ডোমেন বা যেখানে ফলসিফিকেশন সম্ভব, সেই জগতেরই শুধু জ্ঞান বৃদ্ধি সম্ভব। বিজ্ঞানের দর্শন খুব প্রাথমিক ভাবে পড়া থাকলেও পপারিয়ান ডিমার্কেশনটা আপনি জানতেন। আমি শুধু প্রশ্ন তুলে সেটা আপনাকে বোঝানোর চেষ্টআ করছিলাম-তার বদলে আপনার শিশুসুলভ আচরনটাই পেলাম 😛
এই যে শুরুটা করেছিলেন-এখানে বিরাট ভুল ছিল
প্রথমত ন্যাচারিলিস্টি ফিলোসফি মানে দর্শন শাস্ত্রকে বিজ্ঞানের ভিত্তিতে চালানো-অর্থাৎ সব দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের মাধ্যমে দেওয়াকে বা দেওয়া উচিত বলে যারা মনে করেন, তাদের বলে ন্যাচারালিস্টিক ফিলোসফার। এদের সাথে বিজ্ঞানের কোন সংঘর্ষ নেই।
http://plato.stanford.edu/entries/naturalism/
এবং এটি দর্শনের একটি আধুনিক ও ফার্টাইল শাখা।
সুতরাং আপনার প্রথম মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, দর্শনে ভাল জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও এখান ওখান থেকে টুকে প্রবন্ধটি নামিয়েছেন। বিজ্ঞান এখান ওখান থেকে টুকে নামানো সম্ভব-দর্শনের ওপর লিখতে গেলে “ডায়ালোগ” এবং “তর্ক” শিখতেই হবে। প্রশ্ন, উদাহরন এবং প্রতিপ্রশ্ন-এর বাইরে কোন দর্শন নেই।
@বিপ্লব পাল,
সেটাই। কারও না জানা থাকতেই পারে। এমন কি স্টিফেন হকিংয়েরও অসতর্ক মন্তব্য অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যৌক্তিক তর্কে না গিয়ে কীভাবে বক্তব্য ডিফেন্ড করা সম্ভব?
@বিপ্লব পাল,
” পেশাগত ভাবে প্রযুক্তি বা ফলিত বিজ্ঞানই আমার পেশা। তাই বি এস সি কোর্সের বিজ্ঞানদ্বারা যদি দর্শন শাস্ত্রকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে যান, সেটাকে আমি শিশুসুলভ চেষ্টা বলেই ধরব। কারন আমি বিজ্ঞানের সীমানা প্রতিদিনই দেখতে পায়।”
আপনি কি মনে করেন আপনি একাই প্রযুক্তির পেশায় আছেন? আমি কী কী কোর্স করেছি সেটার সঠিক ধারণাও দেখি আপনার নাই।
নিজেই বলেছেন, আপনি ‘প্রথাগত দার্শনিক’ নন, তাইলে আপনার ‘মৌলিক’ দর্শনচর্চা এবং তজ্জনিত সিদ্ধান্তে আমাকে ঈমান আনতে হবে কেন?
@ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
দেখুন কিছু বুঝতে ঘটে কিছু লাগে। আমি ইমান আনতে কোথাও লিখি নি। আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম-যাতে আপনি ডিমার্কেশনটা বুঝতে পারেন। একটা প্রশ্নের ও ঠিক ঠাক উত্তর দিতে পারেন নি। প্রশ্নগুলো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেই বিজ্ঞানের দর্শনের সীমাবদ্ধতা পরিস্কার হত। এর থেকে পরিস্কার আপনি এখান ওখান থেকে টুকে লিখে দিয়েছেন উপলদ্ধি ছাড়াই। এই ধরনের প্রবন্ধ যথেষ্ঠ উপলদ্ধি এবং ক্রিটিক্যাল রিয়ালাইজেশন ছাড়া লিখলে, তা ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য। যেটা এখানে হয়েছে। প্রবন্ধের শুরুটাই হয়েছে একটা বিরাট ভুল থেকে যে দর্শন এবং বিজ্ঞানের পদ্ধতি আলাদা হয়ে গেছে! দর্শনের অনেক ভাগ-আমি লিংক দিয়ে দেখালাম যে ন্যাচারলিস্টিক দর্শন বা ন্যাচারালিজমে বিশ্বাসী দার্শনিকরা সম্পূর্ন ভাবে বিজ্ঞানের দর্শন, ফলাফল এবং বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই দর্শন শাস্ত্র গড়ে তোলার পক্ষপাতি। তাদের বিরুদ্ধ গ্রুপ ও আছে এবং তার কারন ও আছে। একটা স্কুলের বাচ্চাও বুঝবে এই সাধারন তথ্যটা ছারা যদি কেও এই প্রবন্ধটা লেখে, সেটা কি পরিমান মিসলিডিং, তথ্যবিভ্রাট এবং অন্যান্য পাঠকদের জন্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
আপনি সেই থেকে ল্যাজে পাড়া দিয়ে বাহাস করেই যাচ্ছেন। আপনার উত্তর আমি দিয়েছি, এবং বলেছি আমার পাঠ অনুযায়ী এই উত্তরগুলো হবে এমন। আপনি সেই থেকেই অনর্থক একই প্যাচাল পেড়ে যাচ্ছেন, ত আমি কী করব? পশ্চাদ্দেশ দিয়ে দেয়াল ঠেলছেন একচেটিয়া আর সো-কলড ‘ক্রিটিকাল রিয়ালাইজেশনের’ দোহাই দিয়ে প্রমাণ করছেন, দেয়াল নড়ছে। দেয়াল যে নড়ছে না, সেইটা বোঝার মানসিকতা আপনার নাই। দেয়াল নড়ে কি নড়ে না, সেইটা চোখ দিয়ে দেখা লাগে, সেরকম কোনো সচ্চিন্তা আপনার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। কথার পিঠে অনর্থক কথা বলতে আপনার দেখি জুড়ি নাই। আপনি ব্লগেই বিজ্ঞান সাধনা করে অভ্যস্ত, ল্যাবে নয়।
আমি আমার ‘নিজস্ব পাঠ’ দিয়েছি এবং রেফারেন্স (যার দোহাই দিয়ে বারবার বলছেন টোকাটুকির কথা) উল্লেখ করে দিয়েছি। আপনি পারলে আপনার পাঠ দেন, কিন্তু আমার উপর সেটা চাপিয়ে দেয়া ত অভদ্রতা! আমার পাঠ আর আরেকজনের পাঠ আলাদা হবেই, এইটা বোঝার ক্ষমতা দেখি আপনার নাই। আপনি নিজেই বলছেন, “দেখুন কিছু বুঝতে ঘটে কিছু লাগে।” কাজেই নিজেই ভাবুন!
@বিপ্লব পাল ও ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
ভাইরে, দুইজনকেই বলছি। যে-ই আগে শুরু করেন, প্লিজ ব্যক্তি আক্রমণ কইরেন না। আপনার দুইজনেরই ক্রেডেনশিয়াল আর অতীত লেখালেখি বোঝাবুঝির ইতিহাস যা জানি, তাতে কারোই জ্ঞান, যোগ্যতা আর দক্ষতা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। একটা তর্কে আগপিছ হয়ে গেলেই কেউ রাতারাতি বোকা প্রমাণ হয়ে যায় না। দিনশেষে আপনি আমি কেউ না। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও দর্শনের বৃহত্তর কল্যাণের খাতিরে আসুন আমরা কেবল বিষয়ে তর্ক করি, অথবা না করি। (U)
@ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
বিপ্লব ভাই প্রশ্নগুলোর আরো গভীরে গেছেন, সেটাই কাম্য। আপনি দ্রুত উঠে এসেছেন। আপনার বক্তব্যগুলো তাতে খুব ডিফেন্ড করা হলো না।
বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন দর্শনের কাজ। বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন বিজ্ঞান দ্বারা করা অবান্তর। যেমন, আমরা এখন বলি যে বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণসাধ্য, পুনরুৎপাদনযোগ্য পূর্বাভাসকারী প্রকল্পকে যাচাই করে। বিজ্ঞানের দর্শনে এই সংজ্ঞায় আসা হয়েছে দার্শনিক ডিসকোর্সের মাধ্যমে। সবাই এই সংজ্ঞা মানে না। অনেকে সকল (এমন কি যা পর্যবেক্ষণঅসাধ্য) গণিতকে বিজ্ঞানের অংশ মনে করে। এই যে পার্থক্যগুলো, এই যে তর্ক, এগুলো দর্শনের অংশ। লজিকাল পজিটিভিজমে মেটাফিজিক্সের প্রাদুর্ভাব মিনিমাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে বড় আইরনি হলো লজিকাল পজিটিভিজমের হাইপোথিসিসটা ইটসেল্ফ মেটাফিজিকাল, বৈজ্ঞানিক নয়। আপনি বিজ্ঞানকে মেটাফিজিক্সের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচাতে চাচ্ছেন, এটা সাধুবাদযোগ্য। সেটাই করা উচিত বলে আমি মনে করি। কিন্তু তার জন্যে দর্শনকে মৃত ভাবার স্বপ্ন কল্পনা করাটা কাজের না, কারণ কথা সত্য নয়। দর্শন আর মেটাফিজিক্সের প্রাদুর্ভাবের অস্তিত্বকে মেনে নিয়েই বিজ্ঞানকে সেটা থেকে যতোটা সম্ভব আলাদা করে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনি যদি অর্থনীতি কি সেটা জানতে চান অবশ্যই আপনি সেটা জানতে চাবেন একজন অর্থনীতিবিদের কাছ থেকেই, আপনি যদি ফুটবল খেলা কি সেটা জানতে চান অবশ্যই আপনি সেটা জানতে চাইবেন একজন ফুটবলারের কাছ থেকে। অবশ্যই এর মানে এই নয় যে একজন ফুটবলারের অর্থনীতির সংজ্ঞা জানার কোন সুযোগ ও ঔচিত্য নেই- এর মানে হচ্ছে বরং আপনি যদি সবচেয়ে রিলায়েবল সংজ্ঞাটা জানতে চান আপনি সেটা একজন প্রফেশনালের কাছ থেকেই জানতে চাবেন। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে যদি দর্শনের প্রয়োজন হয় তাহলে দর্শনের সংজ্ঞাটা দিবে কে?
@আল্লাচালাইনা,
আমি বলি নি যে কোনো প্রপঞ্চকেই সেই প্রপঞ্চের ভেতর সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। কারণ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা বলছে এটা “পর্যবেক্ষণসাধ্য, পুনরুৎপাদনযোগ্য পূর্বাভাসকারী প্রকল্পকে যাচাই করে”। এখন এই সংজ্ঞা ইটসেল্ফ কি পর্যবেক্ষণসাধ্য, পুনরুৎপাদনযোগ্যভাবে যাচাইযোগ্য? নাহ। তার মানে এই সংজ্ঞাটা মেটাফিজিকাল, দর্শনের বিষয়। খুব স্পষ্ট আর সুনির্দিষ্টভাবে দেখালাম। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা ইটসেল্ফ যে মেটাফিজিকাল, এটা এই তর্কের মূল টার্নিং পয়েন্ট। আমার বক্তব্যে আপনার দ্বিমত বা একমতের স্টার্টিং পয়েন্ট এটা হলে ভালো হয়। মানে আপনি যদি না মানেন যে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা মেটাফিজিকাল, তাহলে দেখান কীভাবে এই সংজ্ঞা ইটসেল্ফ পর্যবেক্ষণসাধ্য যাচাইয়ের আওতাভুক্ত।
বিজ্ঞানের সংজ্ঞা বিজ্ঞানী দিতেই পারেন, কিন্তু সেটা দার্শনিক কর্ম, বৈজ্ঞানিক কর্ম নয়, কারণ সেই জায়গায় পর্যবেক্ষণের যাচাই করা হচ্ছে না। একজন বিজ্ঞানী তো নিরেট বিজ্ঞানীই কেবল নন। তিনি যখন প্রশ্ন দিয়ে ভাবনা শুরু করেন, দার্শনিক অঞ্চলেই অধিকাংশে বিরাজ করতে থাকেন। সেই প্রশ্নের পর্যবেক্ষণসাধ্য উত্তর দেয়ার মাধ্যমে তিনি সেটার বৈজ্ঞানিকীকরণ করেন। (প্রশ্ন করায় আর তার বৈজ্ঞানিকীকরণ করায় যখন সিদ্ধহস্ত হন, তখন তিনি হন Doctor of Philosophy 😉 )
@রূপম (ধ্রুব),
আর, সব দার্শনিক প্রশ্নের বৈজ্ঞানিকীকরণ হয় না। লজিকাল পজিটিভিজম সেগুলোকে বলছে অবান্তর। আমি এই অবস্থানের ভক্ত। সমস্যা হলো এই যুক্তিতে তাহলে লজিকাল পজিভিজম নিজেও অবান্তর।
@রূপম (ধ্রুব), আমি নিশ্চিত নই আমি আপনার ইস্যুটি বুঝতে পেরেছি কিনা। লজিকাল পজিটিভিজম কোন বৈজ্ঞানিক ধারণা নয় সম্ভবত, বেশীরভাগ বৈজ্ঞানিক এবং বিজ্ঞান ছাত্র লজিকাল পজিটিভিজম কি সেটা জিজ্ঞেস করলে বলতেও হয়তো পারবে না; ফলশ্রুতিতে এটা অবান্তর প্রমানিত/অপ্রমানিত হলে বিজ্ঞানের কিছু যায়ও না কিছু আসেও না।
আমার যতোটুকু মনে হয় বিজ্ঞানের সংজ্ঞা কখনই কোন বিজ্ঞানী দেওয়ার চেষ্টা করে না। এর কারণ হচ্ছে একবাক্যে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দেওয়াটা খুবই কঠিন একটি কাজ, যেমন কিনা কঠিন কাজ এক বাক্যে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দেওয়া। বিজ্ঞান কিংবা রাষ্ট্রের মতো ব্যাপক একটি স্বত্বাকে একবাক্যে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা না করে আমার মতে ভালো হয় যদি এর বিভিন্ন ডায়াগ্নস্টিক চরিত্রগুলোকে জানার চেষ্টা করা হয়। যেমন আপনি বললেন বিজ্ঞান স্টাডিয়েবল, বিজ্ঞান এভিডেন্স বেইসড এবং বিজ্ঞান রিপ্রডিউসিবল- এরা প্রত্যেকেই বিজ্ঞানের একও একটি চরিত্র, বিজ্ঞান (কিগ্নবা রাষ্ট্রের)এইরকম ডজনখানেক ডায়াগ্নস্টিক চরিত্র হয়তো লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানের সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ও গুরুত্বপুর্ণ ডায়াগ্নস্টিক চরিত্র হচ্ছে এটা জীবন বাঁচায়, এটা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করে। ওয়েল, এই কথাটা সম্পুর্ণ সত্য না- কেননা সর্বাধিক দক্ষতার সাথে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ হত্যা করতে চাইলে কেউ, তাকেও নিতে হবে এই বিজ্ঞানেরই সাহায্য- তাই আমি বলবো বিজ্ঞানের সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় চরিত্র হচ্ছে এইটা মানুষের উদ্দেশ্য সাধন করে, মানুষের জন্য উপযোগ উতপাদন করে। ইন লাইট অফ দিস আর্গুমেন্ট বিজ্ঞানকে ক্যারেক্টারাইস করার জন্য দর্শনের দরকারটা ঠিক কোথায়?
দর্শন মৃত আমি মনে করিনা, রাজনৈতিক ও নৈতিক দর্শনের স্থান অবশ্যই রয়েছে- তবে হ্যা নিশ্চিতভাবেই মৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক দর্শন বা ন্যাচ্রাল ফিলোসফি কেননা আশ্চর্যজনক সফলতার সাথে এইটার স্থান দখল করে নিয়েছে ন্যাচ্রাল সায়েন্স। গণিত, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার বিদ্যা হয়তো ন্যাচ্রাল সায়েন্স নয়, তবে এরা কিন্তু ন্যাচ্রাল সায়েন্সের ব্যাবহার্য অত্যাবশ্যকীয় এক একটি টুল, যাদের অনুপস্থিতিতে আমাদের বাস্তবতাকে বোঝার সংগ্রাম হবে সম্পুর্ণই ব্যার্থ। ভাষাও বিজ্ঞানের একটি অত্যবশ্যকীয় টুল কেননা এইটা একজন মানুষ হতে আরেকজন মানুষে বৈজ্ঞানিক সত্যকে কমিউনিকেটেড হতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে জীবন বাঁচানোর কাজে এদের ইম্প্যাক্ট অবশ্যই শ্রদ্ধার দাবীদার।
বিজ্ঞানকে ক্যারেক্টারাইস করতে দর্শনকে ইনভোক করাতে এইখানেই ঠিক আমার সমস্যা। দর্শন হচ্ছে এমন একটা কিছু যেটার ইম্প্যাক্ট কিনা প্র্যাক্টিকালি খুবই নগন্য বিজ্ঞান কিংবা গণিত কিংবা অর্থনীতি কিংবা ব্যাবসাবিদ্যার তুলনায়। ফলশ্রুতিতে এদের মতো অভাবনীয় ইম্প্যাক্ট সম্পন্ন কর্মকান্ডগুলোকে ক্যারেক্টাইস করতে দর্শনকে ইনভোক করাটাকে আমি অভিহিত করবো খুবই অনুপাতবোধ বিবর্জিত একটি একশন হিসেবেই। আমার মনে হয় এটাই হচ্ছে ‘দর্শন মৃত’ এই উক্তিটি বের হবার পেছনকার কারণ স্টিফেন হকিং এর মুখ দিয়ে কিংবা দর্শন বিষয়ক আরও অনেক মজার মজার উক্তি বের হবার পেছনকার কারণ মহান রিচার্ড ফাইনম্যানের মুখ দিয়ে। লজিকাল পজিটিভিজম বলেন কিংবা যাই-ই বলেন বিজ্ঞানের দর্শনের গুরুত্বপুর্ণ ধারণা এরা হয়ে থাকোতে পারে, কিন্তু কোন বৈজ্ঞানিক সত্যের উদঘাটনে এদের অবদান একেবারেই শুণ্য।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার উত্তর বেশ গ্রহণযোগ্যই লাগছে।
এগুলো নির্মম সত্য কথার মতোই লাগছে। 🙂
তবে ক্রিয়েশনিজম যে বিজ্ঞান নয়, সেটা প্রমাণ করতে কিন্তু কোর্টকেও বিজ্ঞানের দর্শনেরই দ্বারস্থ হতে হয়।
নির্মম! :))
মানুষের মন তথা মস্তিষ্ক, সচেতনতা ও বুদ্ধিমত্তাকে বোঝা নিয়ে আপনার কী মত? ওটাও কি দর্শনের সাহায্য ছাড়াই ন্যাচারাল সায়েন্স দিয়ে হয়ে যাবার মতো অবস্থায় আছে? আমার মনে হয় ওই জ্ঞান এতোটা প্রিমিটিভ অবস্থায় আছে যে এখানে দর্শনের এখনো সুযোগ আছে বিজ্ঞানের পথকে ডিরেক্ট করার।
@রূপম (ধ্রুব),
বিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানের দর্শন কোনটিরই সাফল্য কিংবা ব্যার্থতা এটি নয় যে- ক্রিয়েশনিজম বিজ্ঞান কি না এই ডিস্পুট নরাময় করতে মানুষকে বিচারালয়ে যেতে হয়েছে। এইটা হচ্ছে বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ সমুন্নতকারী একদল মানুষের বিগট্রির সাফল্য। তবে হ্যা, অবশ্যই ক্রিয়েশনিজম যে ষাঁড়ের নাদা বিচারালয়ে এইটা প্রমান করতে অবদান রেখেছে বিজ্ঞানের দর্শন এই কথাটি উচ্চারণ করে যে- ক্রিয়েশনিজমের কোন প্রেডিক্টিভ পাওয়ার নেই। কোনই দ্বিমত নেই এই বিষয়ে।
না এখনও নেই। অনেক কিছুই নেই মানুষের, যেমন ভাবুন কম্পিউটেশনাল রসায়নের কথা, মনোপজিটিভ ডাইএটোমিক হাইড্রোজেন আয়ন ছাড়া পৃথিবীর একটা অনুরও তরঙ্গসমীকরণ নির্ধারণের ক্ষমতা মানুষের নেই হার্ট্রি-ফক ও পোস্ট হার্ট্রি-ফক পার্টার্বেশন তত্বের সাহায্য ব্যতীত। ম্যাক্রোমলিকুলের ক্ষেত্রে এমনকি হার্ট্রি-ফকও করা যাচ্ছে না কেননা মানুষের কম্পিউটারের যথেষ্ট প্রসেসিং পাওয়ার নেই। তথাপিও মানুষ বসে নেই, মানুষ ডিভেলপ করেছে ডেন্সিটি ফাঙ্কশনাল থিয়োরি যেটা কিনা ম্যাক্রোমলিকুল এমনকি ছোট/মাঝারি আকারের প্রোটিনও ডীল করতে পারে এমনকি। সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য।
সচেতনতা ও বুদ্ধিমত্তাকে মানুষ এখনও বুঝতে পারেনি কারণ একটি মাত্র নিউরনের পেছন থেকে বের হওয়া হাজার হাজার এক্সন টার্মিনাল সংযোগ স্থাপন করে অন্যান্য একাধিক নিউরণের মাথার হাজার হাজার ডেনড্রাইটের সাথে। টার্মিনালের সংখ্যাই মস্তিষ্কে বিলিয়ন বিলিয়ন। প্রত্যেকটা নিউরণ আবার তার মাথার হাজার হাজার ডেনড্রাইট হতে প্রাপ্ত হাজার হাজার সিগনাল ইন্টিগ্রেট করে। এই ইন্টিগ্রেশনের ফলাফল হয় গিয়ে হয় নিউরণটি ফায়ার করে নতুবা ফায়ার করে না। ফায়ারিং সুচিত হয় এক্সন হিলকে। কি যুক্তির ভিত্তিতে সে হাজার হাজার সিগনাল সেল বডিতে ইন্টিগ্রেট করে এই ফায়ার করা বা না করার বাইনারি সিদ্ধান্তে পৌছুচ্ছে এইটাও মানুষ জানে না। এইসব কারণেই মানুষ সচেতনতা, বুদ্ধিমত্তার মতো ব্যাপারগুলো নিয়ে ডীল করতে অপারগ। তবে এইখানে লক্ষ্যণীয় লিমিটিং ফ্যাক্টর কিন্তু হচ্ছে পরীক্ষণাধীন নমুনার বিশালাকার। একই সমস্যায় মানুষ পড়েছিলো জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে গিয়েও। সমস্যার সমাধান হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলো অটোমেশন এবং রোবোটিক্স। এখন তিনটি রোশ ৪৫৪ মেশিন ২৪ ঘন্টায় সিকয়েন্স করতে পারে মানুষের জিনোম। একই কথা প্রযোজ্য প্রোটিন এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফির ক্ষেত্রেও। প্রোটিন ক্রিস্টালাইস করতে মানুষের বছরের পর বছর লাগে, কিন্তু বর্তমানে একই কাজ সম্পন্ন করে রোবট দিন থেকে সপ্তাহ স্কেল সময়ে। আমি মনে করি অটোমেশন ও রোবোটিক্স একইভাবে আমাদের আলোচ্য সমস্যাগুলোর সমাধানও করতে যাচ্ছে। এইখানে উল্লেখ্য সরল নিউরাল গমনপথ যেমন- সেরোটোনিন ও ডোপামিন পাথওয়ের একটি উল্লেখযোগ্য ডিটেইলস কিন্তু মানুষ ইতিমধ্যেই উদঘাটন করে ফেলেছে, ফলশ্রুতিতে ড্রাগ ডিসাইন করা সম্ভব হচ্ছে। সচেতনতাকে বোঝার মতো অবস্থানে না থাকলেও মানুষ কিন্তু বেয়াদপ বাচ্চা ভদ্র করে ফেলার ড্রাগ মেথিলফেনিডেইট ঠিকই ডিভেলপ করে ফেলেছে। ভবিষ্যত নিঃসন্দেহে সম্ভাবনাময়।
থার্মোডায়নামিক্সের কথা ভাবুন, যেটা কিনা খুবই দার্শনিক ইম্পলিকেশন সম্বৃদ্ধ একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়। ক্লাসিকাল ও স্ট্যাটিস্টিকাল মেকানিক্স, গ্যাস ফেইস কেমিস্ট্রি ইত্যাদির বিকাশের আগে থার্মোডায়নামিক্স বিকশিত হবার কোন সম্ভাবনাই ছিলো না। তথাপিও আমার কাছে মনে হয় জুল-কেলভিন, বল্টজমান-এরেনফেস্ট, ডিবাই-আইনস্টাইনের চৌদ্দ পুরুষের জন্মেরও পুর্বে প্রাচীন কোন হান্টার-গ্যাদারার গোত্রের কোন সদস্য এইটা ফিগার আউট করেছিলো যে তাপ সর্বদাই উচ্চ থেকে নিন্ম তাপমাত্রা সম্বৃদ্ধ স্যাম্পলে প্রবাহিত হয় কিংবা কোন হট সোর্স থেকে কোল্ড সিঙ্গে তাপ ডিসিপেট না করে কোন কার্মচক্র সম্পন্ন করা সম্ভব না। বৈজ্ঞানিক থার্মোডায়নামিক্সের বিকাশের পুর্বকালে এই দার্শনিক এপ্রক্সিমেশন হয়তো ছিলো মন্দের ভালো কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাস্তবতা খুবই খুবই হারামী। দার্শনিক তত্ব দাড়া করিয়ে একজন ব্যক্তি হয়তো মানসিক আনন্দ পেতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতার কাছ থেকে সমাজের জন্য উপকারী কোন আবিষ্কার আদায় করে নিতে প্রিসিশন তত্ব লাগে। দার্শনিক এপ্রক্সিমেশন কখনই আপনাকে একফোঁটা সাহায্য করবে না একই কার্নো চক্র নির্ভর ইঞ্জিন বানাতে, ইঞ্জিন বানাতে আপনার হলে আপনার তত্বকে হতে হবে অনেক অনেক নিখুঁত। এখন ‘মহাবিশ্বে বিশৃঙ্খলা সর্বত্র বাড়ছে’ আর ‘কার্নচক্রই হচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে এফিশিয়েন্ট কর্মচক্র’ এই দুইটা উক্তিই ১০০% সমার্থক এবং ১০০% সত্য- উভয়েই হচ্ছে থার্মডায়নামিক্সের দ্বিতীয় আইনের একও কথায় প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই উপসঙ্ঘারে আপনি পৌছলেন কি প্রক্রিয়ায়। আমি বলতে চাচ্ছি যে- এভিডেন্স বেইসড বৈজ্ঞানিক পন্থায় না পৌছে যদি ইন্ডাক্টিভ রিজনিং এবং কনজেকচার নির্ভর দার্শনিক পন্থায় আপনি এই উপসঙ্ঘারে পৌছেন তাহলে এই উপসংহার আপনাকে ইঞ্জিন বানাতে কোন সহায়তা করবে না, সহায়তা করার ক্ষমতাই এর নেই। আমি বলতে চাচ্ছি বিজ্ঞানের কোন কিছু নিয়ে ডীল করতে পারার অক্ষমতাকে পুঁজি করে আপনি একটি দার্শনিক তত্ব সাজিয়ে মানসিক আনন্দ লাভ করবেন হয়তো কোন একটা কিছু মডেল করতে পারার, কিন্তু এই মডেলের কোন ইম্প্যাক্ট থাকবে না।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার কমেন্টগুলো খুবই যথাযথ লাগল আমার কাছে। আপনার প্রোফাইলে দেখলাম, আপনি লেখার চেয়ে কমেন্টই করেছেন প্রচুর। আশা করব, এই বিষয়টি নিয়ে আপনি আরেকটি সুন্দর এবং আরো যথাযথভাবে একটি পোস্ট লিখবেন। আপনার পোস্ট থেকে অনেক কিছু শেখাও যাবে। :clap
বিসাইডস, আপনার সম্পর্কে আরো কিছু জানতে পারলে ভাল লাগত, এই যেমন ঢাকায় থাকেন কিনা, কোথায় পড়াশোনা, এখন কী নিয়ে পড়াপড়ি করছেন – এইসব।
ব্লগের কিছু ভালো জিনিসের মধ্যে একটি হল আপনার মত ব্লগার খুঁজে পাওয়া।
@রূপম (ধ্রুব),
পর্যবেক্ষণসাধ্য সংজ্ঞা বলতে কি কিছু আছে? ধরুন আমি ঘোড়ার ডিমের সংজ্ঞা দিলুম। সেই সংজ্ঞাটি কি পর্যবেক্ষণসাধ্য ? ধরলাম, সংজ্ঞাটি পর্যবেক্ষণসাধ্য অথবা নয়। তাহলে সংজ্ঞারোপের ভিত্তিতে অধিবিদ্যা
কিভাবে বিজ্ঞান এবং ঘোড়ার ডিমের মধ্যে পার্থক্য করবে?
@তানভীর হানিফ,
আপনি প্রশ্নের পাশাপাশি আপনার নিজের মতামতগুলোও দিলে ভালো হতো। সেটা করতে গেলে আমার ধারণা আপনি উপলব্ধি করতেন যে বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়ন দার্শনিক কর্ম নাকি বৈজ্ঞানিক।
আমরা সংজ্ঞায়নের স্বরূপ নিয়ে তর্ক করতে পারি। কিন্তু সেটা না করেও বলা যায় যে বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞানকে অবিজ্ঞান হতে পার্থক্য করা। এটাকে ডিমার্কেশন সমস্যা বলে। প্রশ্ন হচ্ছে, ডিমার্কেশন সমস্যাটা কি বৈজ্ঞানিক ক্যাটাগরির নাকি দার্শনিক ক্যাটাগরির? কোনো বিশেষ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দিয়ে কি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব? নাকি উপায় কেবল যুক্তি ও ডিসকোর্স? আপনার কী মতামত?
পর্যবেক্ষণনির্ভর বৈজ্ঞানিক সমাধানের গুণ যে ডিসকোর্সনির্ভর দার্শনিক সমাধানের চেয়ে বহুগুণে শ্রেয়, তা নিয়ে আমি তেমন দ্বিমত করবো না। কিন্তু বিজ্ঞান সকল প্রশ্ন নিয়ে ডিলও করতে পারে না, ফলে দর্শনও মৃত না। তার সমাধানের গুণ কম না বেশি সেটা আলাদা তর্ক।
@রূপম (ধ্রুব),
কোন সংজ্ঞাকেই যাচাই করা যায় না–যাচাই করা যায় যাকে সংজ্ঞায়িত করা হল তার বাস্তব অস্তিত্বকে (ঘোড়ার ডিম আর কলা)। সংজ্ঞার বিষয়বস্তুটি যদি ধারণামূলক হয় তাহলে তার অস্তিত্ব সবসময়ই থাকে–যাচাই করা হয় তার উপযোগিতাকে (বিজ্ঞান আর অবিজ্ঞান)। গণিতশাস্ত্রেতো সংজ্ঞা দিয়েই শুরু করা হয়। সেই সংজ্ঞা কেন–যাকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে তার বাস্তব অস্তিত্বকেই অনেকসময়ই যাচাই করা যায় না। যেমন, গ্রাসমান সংখ্যা। তবে এর উপযোগিতাকে অবশ্যই যাচাই করা যায়। আপনি বলেছেন কোন কোন প্রপঞ্চকে সেই প্রপঞ্চের ভেতর সংজ্ঞায়িত করা যায় কিন্ত বিজ্ঞান তার ভেতর পড়েনা, দর্শন বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করে। প্রথমত: কি সেই প্রপঞ্চ যার বিজ্ঞানের ওপর সেই এ্যাডভান্টেজ আছে? এখন আবারও সংজ্ঞার বিষয়ে আসা যাক। দর্শন বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করে অথচ সেই সংজ্ঞাকে সে যাচাই করতে অক্ষম। দর্শন আবার অবিজ্ঞানকেও সংজ্ঞায়িত করে। কিন্ত সেই সংজ্ঞাকেও সে যাচাই করতে অক্ষম। তাহলেতো দর্শন এই সংজ্ঞায়নের মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ বিজ্ঞানকে অবিজ্ঞান হতে পার্থক্য করতেই অক্ষম। এটি একটি সমস্যা–যার সমাধান দর্শনও করতে পারেনা। আর এর সমাধানটি বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বহীণ যেমন গুরুত্বহীণ ভৌত বাস্তবতার কোন পরম অস্তিত্ব আছে কিনা সেটি–কারণ তারা জানে এগুলোর কোন সমাধান নাই আর এগুলো সমাধান করে ক্যান্সারের ঔষধ বা সুপারসনিক বিমানও বানানো যাবেনা। অবিজ্ঞান কি সেটি বুঝতে বিজ্ঞানীদের কোন দার্শনিক ডিসকোর্সের প্রয়োজণ পড়েনা। আসলে দর্শন কোন সমস্যারই সমাধান করতে অক্ষম। কারণ এর সমাধান হিসেবে দার্শনিকেরা বড়জোড় যা দিতে সক্ষম হবেন তা হল “একাধিক” অযাচাইযোগ্য প্রকল্প। কাজেই আসলে তারা ধর্মতাত্ত্বিকদের চাইতে খুব বেশী এফেক্টিভলি কোন সমস্যা নিয়ে ডিল করেনা। একসময় তারা মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়েও ডিল করেছিল–কিছুই করতে পারেনি। কাজেই এই ব্যর্থভাবে ডিল করাটাই আসলে দর্শনের মৃত্যু। বিজ্ঞান যেসকল প্রশ্ন নিয়ে ডিল করতে পারেনা বা পারবেনা সেগুলো অবান্তর প্রশ্ন। অবান্তর কারণ এদের একাধিক উত্তর সম্ভব এবং কোনটির সম্পর্কেই এমনকি সম্ভাবনার ভিত্তিতেও কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। বিজ্ঞান যে পর্যবেক্ষণসাধ্য, পুনরুৎপাদনযোগ্য পূর্বাভাসকারী প্রকল্পকে যাচাই করে–সেটিও পর্যবেক্ষণসাধ্য যাচাইয়ের আওতাভুক্ত। কারণ পর্যবেক্ষণসাধ্য, পুনরুৎপাদনযোগ্য পূর্বাভাসকারী প্রকল্পের শুধু বাস্তব অস্তিত্ব না বাস্তব প্রয়োগ বা উপযোগিতা যদি না থাকত তাহলে বিজ্ঞানের কোন ভ্যালুই থাকত না। এই ভ্যালুটা আসছে আমাদের পর্যবেক্ষণ থেকেই। এর অস্তিত্ব আমাদের যৌক্তিক অভিজ্ঞতাসঞ্জাত এবং এর উপযোগিতার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাহলে কি অপর্যবেক্ষণসাধ্য, অপুনরুৎপাদনযোগ্য, অপূর্বাভাসকারী অবৈজ্ঞানিক প্রকল্পের বাস্তব অস্তিত্ব নাই? ধারণা হিসেবে অবশ্যই আছে–তবে এর সাহায্যে আমরা কম্পিউটার বা সেল-ফোন বা পারমাণবিক বোমা, ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল বা জি পি এস সিস্টেম বানাতে পারিনা বা হ্যালির ধূমকেতুর সূক্ষ্ম ভবিষ্যদ্বানীও করতে পারিনা।
@তানভীর হানিফ,
আপনার উত্তরের অধিকাংশ অংশই ভালো লেগেছে। কিছু কিছু জায়গায় রিজার্ভেশন আছে।
বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন পর্যবেক্ষণ দ্বারা যাচাইযোগ্য, কিন্তু এই যে পর্যবেক্ষণকে যাচাইয়ের মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, দার্শনিক ডিসকোর্সের বাইরে সেটাতে আসা সম্ভব না। এক অর্থে এটা আর্বিট্রারি, নয়তো সেল্ফ রেফারেন্শিয়াল লজিক উদ্ভূত। পর্যবেক্ষণের ইউনিকত্ব একটা axiomatic প্রস্তাব। বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ নিয়ে কাজ করে, কিন্তু বিজ্ঞানের এই সীমা নির্ধারণটা দার্শনিক কর্ম। এটা নিয়ে বৈজ্ঞানিকদের মাথা ব্যথা না থাকতে পারে, যেমনটা আপনি উপরে বলেছেন। কিন্তু এই সীমা নির্ধারণ যে দার্শনিক কর্ম, সেটাই তো অনেকে মানছেন না। আমার মনে হচ্ছে সেটা আপনি নিজেও মানতে গিয়ে মানছেন না।
আমরা এই তর্কের মোটামুটি সমাপ্তিতে চলে এসেছি। আসুন এই প্রশ্নটার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। ডিমার্কেশনের তথা বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়নের সমস্যাটা নিয়ে ডিল করাটা কি দার্শনিক কর্ম নাকি বৈজ্ঞানিক কর্ম? যদি বলেন যে এটা দার্শনিক কর্ম, এবং এর সমাধান খুব দুর্বল মানের, আমি তেমন আপত্তি করবো না। তবে, এটা মৃত মানতে নারাজ আছি। বিজ্ঞানের ফলসিফিকেশন একটা দার্শনিক ক্রাইটেরিয়া, এবং এর এই সংজ্ঞাকে কোর্ট পর্যন্ত ব্যবহার করছে ক্রিয়েশনিজম যে বিজ্ঞান নয় সেটা নির্ধারণ করতে। ছদ্ম বিজ্ঞান যখন বিজ্ঞান নয় দেখাতে যাবেন, তখন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা তথা বিজ্ঞানের দর্শনের দ্বারস্থ হতে হবে। যার থেকে উপকার নেবেন, তাকে মৃত বলে তার খুব সুবিচার হবে না, আমাদের ব্যবহার করা যুক্তিও তাতে খুব সুকঠিন থাকবে না।
@রূপম (ধ্রুব),
সংজ্ঞাটা তো জলজ্যান্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারছি মুক্তমনার পাতায়, কয়েক রিফ্রেশ করে পুনরুৎপাদনও করলাম। আর কি যাচাই করতে চান? :-s
@রূপম (ধ্রুব),
পালবাবু আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন, তার উত্তর কী হওয়া উচিত সেটা আমি দিয়েছি। সেসব উনার ভালো লাগে নাই, উনি আগে থেকেই একটা পজিশোন নিয়া আছেন, সেটা উনি বদলাবেন না, বরঞ্চ লাগাতার প্যানপ্যানানির মাধ্যমে উনি জানাচ্ছেন যে উনার জ্ঞানতাত্ত্বিক ব্লগ গুলাতে এসবের উত্তর আছে। আপনি উনার ঐ লিঙ্কে গিয়ে কমেন্টগুলা দেখলেই বুঝবেন উনার একতরফা কথাবার্তার কোনো মানে হয় না।
মূল প্রবন্ধে যা লিখেছি সেগুলোর ডিফেন্ড করার কোনো প্রশন নাই, এগুলা যেকোনো বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ ছাত্র এগ্রি করবে – যারা বিজ্ঞান গবেষোণা করেছেন, পড়াশোনা করেছেন তারাই এই কথা বলবে।কাজেই এগুলা সহজাত।
“আপনি দ্রুত উঠে এসেছেন” – দ্রুত আসতে পারাটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়।
@ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী,
ওনার ওই লেখার কমেন্টে আমারও দেখবেন বিস্তর বক্তব্য আছে। আমার সেখানেও অবস্থান বিপ্লব ভাইয়ের কাছাকাছি ছিলো। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো এটা যে সেখানে ভিন্ন অবস্থানগুলোর সাথে যৌক্তিক ডিসকোর্স হয়েছে, একতরফা মনে হয় নি। সেটার সুযোগ এখানেও অবারিত আছে।
বিজ্ঞান এমন অ্যাপিল টু অথোরিটি দিয়ে কাজ করে বলে আমার মনে হয় নি, বরং যে পড়াশোনা করছে গবেষণা করছে তাকেও তার বক্তব্য ডিফেন্ডই করতে হয়। যদি খুব প্রতিষ্ঠিত বক্তব্য হয়, তাহলে তাকে জানতে হয় কেনো সেই বক্তব্য ডিফেন্সিবল। প্রতিষ্ঠিত বক্তব্য, বা যেকোনো গবেষক দ্বারা সমর্থিত বক্তব্য বলে কখনো পার পাওয়া যায় নি। আর তাছাড়া, শিরোনাম বলছে এটা আপনার নিজস্ব পাঠ। তবে এতে আমার তেমন আসে যায় না। প্রতিষ্ঠিত বক্তব্য হোক আর ব্যক্তিগত দর্শন হোক, বক্তা তার প্রচারিত বক্তব্যের পর্যাপ্ত ডিফেন্স রাখবেন, এটা একটা স্বাভাবিক আশা, গুরুতর লেখায় সেটা প্রায়শই কাম্য। সেটা আপনি নিশ্চয়ই অগ্রাহ্য করতে পারেন। কিন্তু তাতে বক্তব্য অরক্ষিত রয়ে যায়। 🙂
বটমলাইন, উঠে আসা সবসময় দোষের অবশ্যই নয়। তবে বিপ্লব ভাই ওনার আর্গুমেন্টের মাধ্যমে যে ডিমার্কেশনের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করছেন, সেটা মোটেও একতরফা নয়, বরং বিজ্ঞানের দর্শনের গুরুতর বিষয় বলে জানি এবং আপনার লেখার উপসংহারের চেয়ে সেটা বেশ খানিকটা ভিন্ন অবস্থান। আপনার উত্তরগুলো এই ভিন্ন অবস্থানটাকে যথার্থভাবে অ্যাড্রেস করতে পারে নি বলে মনে হয়েছে। সেখানে উঠে আসাটা তর্কটার প্রতি সুবিচার করে কি?
প্রথম মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ……প্রায়ই এই ধরণের প্রশ্ন শুনি ‘কেন প্রকৃতি পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো অনুসরণ করে?‘ চিরায়ত দর্শন আশ্রিত প্রশ্ন এটি। কিন্তু বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যাপারটা হচ্ছে “পদার্থবিজ্ঞানের(অথবা বৈজ্ঞানিক) নিয়মগুলোই হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম, স্বভাব বা আচরণ” যেখানে ও ধরণের প্রশ্ন করাটা হবে অনেক অর্থেই অবান্তর।
এবার মূল লেখা প্রসঙ্গে আসা যাক। লেখাটিতে বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার অনুসন্ধান(বিশুদ্ধতার ভিত্তিতে) আর ক্রম বিকাশ যেভাবে হাইলাইটেড হয়েছে প্রকৃত ‘দর্শন’ নিয়ে তেমনটা হয়নি। অস্তিত্বর ব্যাখ্যা, প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা আর সেই সম্পর্কিত চিরন্তন প্রশ্ন গুলোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উদ্ভব হয়ে ছিল দর্শনের। সেখানে গণিত আর বিজ্ঞানের উৎপত্তি বিভিন্ন প্রায়োগিক কৌশল উদ্ভাবনে পেছনে সময় দিতে গিয়ে। কিন্তু কালক্রমে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান দখল করে নিয়েছে দর্শনের মূলে থাকা আলোচ্য বিষয় গুলোকে। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা নির্ভর যৌক্তিক পদ্ধতি বলে এ ধরণের দখল স্থানান্তরটাই স্বাভাবিক। এ জন্যে স্টিফেন হকিং’ হয়তো বলেছেন ‘দর্শন মৃত’।
তবে এখন দর্শন বলেতে যা ধর্তব্য সেটা হচ্ছে ‘দৃষ্টিভঙ্গি’র চর্চা। এটি ছিল আদি গ্রিক দর্শনের দ্বিতীয় স্তর। যেমন যুদ্ধ থামাতে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবো না শান্তি চুক্তির আশ্রয় নিবো সেটা আমার ক্ষেত্রে একান্তই আমার বাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলার বিষয়টি ছাড়া দর্শনের উপযোগিতা অতীতের ন্যায় ব্যাপক আকারে নিষ্প্রয়োজন।
যুক্তিশাস্ত্রের অধ্যয়ন দর্শনের অন্তর্ভূক্ত হলেও এর (দর্শনশাস্ত্রের) ক্ষেত্র এবং সীমানাকে পদার্থবিজ্ঞান একেবারেই সীমীত করে দিয়েছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তি, প্রকৃতি বা এর পরিণতি, কার্যকারণ তত্ত্ব, পর্যবেক্ষণের সুনির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার অস্তিত্ব ইত্যাদি আজ আর দর্শনের আওতাভূক্ত নয়। হকিং এর ভাষ্যে উইটগেনস্টাইন বলেচেন এই সীমাবদ্ধতার কথা (দর্শনের একমাত্র অবশিষ্ট ক্ষেত্র হল ভাষাবিশ্লেষণ)। আমি নিশ্চিৎ নই উইটগেনস্টাইন আসলেই কথাটি বলেচেন কিনা (কারণ উনার বেশীরভাগ বই আমি পড়েছি এবং আমি এটি স্বরণ করতে পারছি না)। তবে কথাটি যদি তিনি বলেও থাকেন–তাহলে খুব ভুল বলেছেন বলে মনে হয়না। দর্শনশাস্ত্র যুক্তির পদ্ধতিসমূহ বা বিজ্ঞান কোন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে সেটি নিয়ে আলোচনা করলেও সেগুলোই এর একমাত্র আলোচনার ক্ষেত্র নয়।
এখন গণিতশাস্ত্রের কথা একটি বলি। আমি মনে করি গণিতশাস্ত্র আসলে যুক্তির এই পদ্ধতিগুলোকে ফরমালাইজ করেচে–যেটি পদার্থবিজ্ঞান এর ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে থেকে। গণিতকে বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত করা হলেও সেটি সঠিক নয়–যদিও গণিত ছাড়া বিজ্ঞান অসম্ভব। গণিতের কোন প্রকল্পের সত্যাসত্য ভৌত-পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণ দ্বারা যাচাইকৃত হবার বাধ্যবাধকতামুক্ত। আমরা একটি ভুল হাইপোথেসিস থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ যুক্তি (বা বিশুদ্ধ গণিত) ব্যবহার করে একটি ভুল ফলাফল পেতেই পারি।কাজেই, ইমপিরিক্যাল এভিডেন্স পদার্থবিজ্ঞানের একটি অপরিহার্য অংশ –গণিত বা দর্শনশাস্ত্রের নয়। গণিতশাস্ত্র এমন সংখ্যা নিয়েও আলোচনা করতে পারে যেগুলোকে ভিন্নক্রমে গুণণ করে যোগ করলে আমরা শুণ্য পাব। এখন এধরণের সংখ্যার অস্তিত্ব নিয়ে কিন্ত গণিতবিদদের মাথাব্যাথা নেই। তবে ভৌতবাস্তবতায় এ ধরণের সংখ্যার কোন ধরণের উপযোগিতা আছে কি নেই সেসম্পর্কে দার্শনিকেরা বড়জোড় স্পেকুলেশন করতে পারবেন মাত্র–সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব একমাত্র বিজ্ঞানীদের পক্ষেই–আবারও বলচি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব একমাত্র বিজ্ঞানীদের পক্ষেই।
কেন? এই প্রশ্নটি আসলে একটি অবান্তর প্রশ্ন। বিজ্ঞান কখনই প্রশ্ন করেনা কেন এই বিশ্বজগৎ অস্তিত্বলাভ করল বা এর উদ্দেশ্য কি? কেন প্রকৃতি পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো অনুসরণ করে? বিজ্ঞান প্রশ্ন করে “কিভাবে”? আর এই কিভাবের উত্তরটি একমাত্র বিজ্ঞানই দিতে সক্ষম (যদি কখনও পুরোপুরিভাবে সেটি সম্ভব হয়)। অন্যদিকে দর্শন অদ্যবধি এই অবান্তর প্রশ্নটি (কেন?) করে চলেছে এবং না দার্শনিকেরা এ বিষয়ে কোন ঐক্যমতে পৌঁছতে পারবে– না তাঁদের আছে তাঁদের স্পেকুলেশানগুলোকে যাচাই করবার কোন সুসংবদ্ধ পদ্ধতি। আবারও বলছি-পদ্ধতি হিসেবে বিজ্ঞানে যুক্তির উপযোগিতা আছে এর একমাত্র কারণ হল গাণিতিক যুক্তি ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা সিদ্ধান্ত সম্ভব আর পরীক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণজাত এভিডেন্সের সাথে এই সকল ব্যাখ্যা বা সিদ্ধান্ত বা ভবিষ্যদ্বানীর সাফল্যজনক উপরিপাতনই এই উপযোগিতাকে প্রতিষ্ঠিত করে। একইভাবে, বিজ্ঞানের দর্শন বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উপযোগিতাও ঠিক এইখানে। দার্শনিকেরা কি বলে গিয়েছেন–সেটি বড় কথা নয়। সাইন্টিফিক কমিুনিটিই নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা কি বা উপযোগী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসমূহ কি?
@তানভীর হানিফ,
আপনার এই মন্তব্যটা মিস হয়ে গিয়েছিলো। ভালো লাগলো কথাগুলো।