১৯৬৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী-দ্বয়ের নাম স্যার অ্যালান হডজকিন এবং স্যার এন্ড্রু হাক্সলি, যাদের অসাধারণ বৈজ্ঞানিক গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫২ সালে জার্নাল অফ ফিজিওলজিতে। তারাই মানুষের সামনে প্রথমবারের মত উপস্থাপন করেছিল অ্যাকশন পটেনশিয়ালের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা, নিউরনে অনুরণনের পিছনের ঘটনা, “কিভাবে ঘটে? কেন ঘটে?, কখন ঘটে?”। মানুষের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সমগ্র মানব সভ্যতা মুগ্ধ হয়ে থাকলেও ১৯৫২ সালের আগ পর্যন্ত মানুষের জানা ছিল না, কোন মৌলিক নিয়ম অনুসরণ করে কাজ করে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র। ব্যাপারটা অনেকটা এমন, মানুষ বুদ্ধিমান, মানুষ এটা পারে, ওটা পারে, কিন্তু কিভাবে পারে তা মানুষ জানতো না। আজও আমরা জানিনা এমন অনেক কিছুই, তবে যে কটা ঘটনা জানতে পেরেছি, তাদের মধ্যে অন্যতম এই একটি, অ্যাকশন পটেনশিয়ালের ব্যাখ্যা, নার্ভের ইলেক্টিকাল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। ১৯৫২ সালে প্রকাশিত সেই বিখ্যাত গবেষণা পত্রে বিজ্ঞানী কোল-মারমন্ট উদ্ভাবিত ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প পদ্ধতিতে পরীক্ষণ থেকে প্রাপ্ত মেমব্রেনের ইলেকট্রিকাল বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে হডজকিন-হাক্সলি উপস্থাপন করেছিলেন নিউরন বা স্নায়ুকোষের গাণিতিক মডেল, যে মডেলটি দিয়ে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রথম সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারার শুরু। মস্তিষ্ক- প্রাণীর মাথার খুলির মধ্যে বসে থাকা নরম তুলতুলে হালকা গোলাপি রঙের সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িডে ভেসে থাকা কোষ পিন্ড নয় কেবল, এর প্রত্যেকটি কোষ একেকটি কার্যক্ষম ইলেকট্রিকাল ইউনিট, পুরো মস্তিষ্কটা আসলে একটি বিশাল সার্কিট, তথ্য সঞ্চালনকারী কোষসমূহের নেটওয়ার্ক!
এই ব্লগটির উদ্দেশ্য নিউরন নামের সংবেদনশীল কোষটির আড়ালে লুকিয়ে থাকা মৌলিক ইলেকট্রিকাল ইউনিটের কাঠামোটির প্রতি আলোকপাত করা, যা অনুধাবন করতে মানুষের লেগে গেছে ১৭৯ বছর! এর আগে কয়েকটি পর্বে দেখিয়েছি নিউরন কিভাবে কাজ করে? এবং গাণিতিক ভাবে নিউরনের কাজ বা অ্যাকশন পটেনশিয়ালের ব্যাখ্যা দানকারীদের হাত ধরে নিউরাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্মকথা । ঐ লেখাগুলোতে উল্লেখ করেছিলাম, মেমব্রেন পটেনশিয়াল সৃষ্টিতে মেমব্রেনে বিভিন্ন আয়নের প্রবেশযোগ্যতার ভূমিকার কথা। সেখানেই উল্লেখ করেছিলাম ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প টেকনিকের কথা, যা অ্যাকশন পটেনশিয়াল সৃষ্টির মেকানিজম ব্যাখ্যায় কাজে লেগেছিল। এই পর্বে দেখাব, কিভাবে ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প টেকনিক ব্যবহার করে হডজকিন হাক্সলি নিউরনের গাণিতিক মডেল এবং এর কাজ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিল। আসুন সংক্ষেপে দেখে নিই নিউরনের কোষপর্দার ইলেকট্রিকাল বৈশিষ্ট্য কেমন? এই ছবিটি সরাসরি হডজকিন –হাক্সলির মূল গবেষণাপত্র থেকেই তুলে দিলাম।
চিত্রঃ নিউরন মেমব্রেনের হডজকিন-হাক্সলি প্রদত্ত গাণিতিক মডেল
কোষ পর্দার এই ইলেকট্রিকাল ইকুইভ্যালেন্ট মডেলের দিকে তাকালে বোঝা যায়, নিউরনের কোষ পর্দার মূলত দুই ধরণের ইলেকট্রিকাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
১. পরিবাহকত্ব বা কন্ডাকটেন্স
২. ধারকত্ব বা ক্যাপাসিটেন্স
বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান এবং পদার্থ বিজ্ঞান থেকে কিছু বেসিক কনসেপ্ট মাথার মধ্যে একবার ঝালিয়ে নিই। আমরা পড়েছিলাম, কোষপর্দার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল হল লিপিড বাইলেয়ার মডেল, যাতে স্যান্ডউইচের মত মাঝখানে দুটি লিপিড লেয়ার, আর তার বাইরের দিকে থাকে হাইড্রোফিলিক বা পানি-গ্রাহী পদার্থের আস্তরণ। লিপিডকে বলা হল হাইড্রোফোবিক পদার্থ, যা অর্থ হল, লিপিড পানি এবং সকল প্রকার আয়নকে বিকর্ষণ করে। অর্থাৎ পানি এবং সকল প্রকার আয়ন লিপিড লেয়ারকে ভেদ করে কোষের বাইরে বা ভিতরে যেতে পারে না। এই অভেদ্য লিপিডের লেয়ারটিই কোষপর্দার ভিতরে এবং বাহিরে বিদ্যমান আয়নকে (চার্জকে) পৃথক করে রেখেছে, যা বৈদ্যুতিক ধারকের বা ক্যাপাসিটরের অনুরূপ কাজ করে। এখন আমরা উচ্চমাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞান বই থেকে ক্যাপাসিটেন্সের ধারণাটা একটু মনে করে নিই। ক্যাপাসিটেন্সের কাজ হল একটি ডাইইলেক্ট্রিক বা অপরিবাহী পদার্থ দ্বারা অপরিবাহকের দুইপাশে কিছু চার্জকে পৃথক করে জমিয়ে রাখা। কি অদ্ভুত মিল, তাই না? কোষপর্দার লিপিড লেয়ারও তো কোষের ভিতরে এবং বাহিরে কিছু আয়ন বা চার্জকেই পৃথক করে ধারণ করে। তাহলে বলা চলে, কোষপর্দা একটা ক্যাপাসিটরের মত কাজ করে।
প্রশ্ন হল, লিপিড বাইলেয়ার ভেদ করে যদি পানি এবং আয়ন চলাচল করতে নাই পারে, তাহলে কোষীয় পর্যায়ে খাবার, লবণ এবং পানির আদান প্রদান হয় কি করে? এগুলো তো কোষের ভিতরে ঢুকতে বা বের হতে হবে! এজন্য ক্যাপাসিটরের মাঝে মাঝে কিছু প্রোটিন নির্মিত আয়ন চ্যানেল আছে, ঐ চ্যানেলগুলো যখন খোলা থাকে তখন কোষপর্দা ভেদ করে আয়ন এপাশ থেকে ওপাশে চলাচল করতে পারে। আচ্ছা, পরিবাহকের মধ্য দিয়েও তো ধনাত্মক বা ঋণাত্মক আধান চলাচল করতে পারে, তাই না? তাহলে কোষপর্দায় উপস্থিত এই আয়ন চ্যানেল গুলো খোলা অবস্থায় আসলে কাজ করে পরিবাহকের মত! তারমানে, কোষপর্দাটি মূলত ক্যাপাসিটর হলেও এতে জায়গায় জায়গায় আয়ন পরিবহনের জন্য পরিবাহকও আছে। আর পরিবাহক যখন আছে, তখন কোষপর্দার বা মেমব্রেনের পরিবাহকত্ব বা কন্ডাক্টেন্সও আছে।
হডজকিন এবং হাক্সলি যখন তাদের গবেষণা করেছেন, তখন এই লিপিড বাইলেয়ার মডেলের কথা, জানা ছিল না ভালো ভাবে। তবে জানা ছিল কোষপর্দার কন্ডাক্টিভ এবং ক্যাপাসিটিভ বৈশিষ্ট্যের কথা। এটা জানায় কিন্তু একক কৃতিত্ব হডজকিন এবং হাক্সলির নয়। বরং কোষপর্দার লিপিড বাইলেয়ার মডেলের কথা না জানলেও ১৯০২ সালে বার্নেস্টাইন প্রদত্ত অনুকল্পেই তিনি উল্লেখ করেছিলেন কোষ পর্দার পটাসিয়াম(আয়নের) প্রবেশযোগ্যতার কথা, যাকে ইলেকট্রিকাল কন্ডাক্টেন্সের অনুরূপ চিন্তা করা যায়। পরবর্তী সময়ে মেমব্রেন পটেনশিয়াল পরিবর্তনের গ্রাফ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারে, কোষপর্দার কেবল পরিবাহকত্ব নয়, ধারকত্বও আছে, যা স্পষ্টভাবে প্রভাব ফেলে মেমব্রেন পটেনশিয়াল কার্ভে। কোষপর্দার পরিবাহকত্ব এবং ধারকত্ব নিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পরীক্ষণ চালিয়েছেন বিজ্ঞানী কোল এবং কার্টিস, যা প্রকাশিত হয়েছে ১৯৩৯ সালে। জার্নাল অফ সেল বায়োলজিতে প্রকাশিত কেনেথ এস. কোল এবং হোয়ার্ড জে. কার্টিসের গবেষণা পত্রে দেখান হয়, অ্যাকশন পটেনশিয়াল ঘটাকালে নার্ভ মেমব্রেনের ক্যাপাসিটেন্সের পরিবর্তন ঘটে মাত্র ২% যেখানে রোধকত্বের পরিবর্তন লক্ষণীয় পরিমাণে বেশী, ১০০০ ওহম/বর্গ সেমি. থেকে মাত্র ২৫ ওহম/বর্গ সেমি. তে নেমে আসে, অর্থাৎ ৯৭.৫% কমে যায়। এখান থেকে অনুধাবন করা যায়, অ্যাকশন পটেনশিয়াল ঘটাকালে মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের মুখ্য অংশ আয়নিক কারেন্ট, ক্যাপাসিটিভ নয়। এই গবেষণার পূর্বে স্থিতিশীল অবস্থায় কোষপর্দার রোধকত্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন হডজকিন এবং কোল, তাদের দুজনের যৌথ প্রচেষ্টায় জানা সম্ভব হয়েছিল, নিষ্ক্রিয় অবস্থায় কোষপর্দায় থাকে ১০০০ ওহম/বর্গ সেমি রোধক।
কোষ পর্দার মধ্য দিয়ে যেরকম কারেন্টই প্রবাহিত হোক না কেন, তা ঘটে আয়নের এপার ওপার পারাপারের জন্যই। হডজকিন-হাক্সলি আয়নের প্রবেশযোগ্যতার উপর মেমব্রেন পটেনশিয়ালের প্রভাবকে সংক্ষিপ্ত ভাবে উপস্থাপন করেছেন এভাবে,
“প্রথমত, ডিপোলারাইজেশনের কারণে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কোষপর্দায় সোডিয়াম প্রবেশযোগ্যতা বেড়ে যায় বহুগুণে এবং পটাসিয়ামের জন্য বাড়ে একটু ধীর গতিতে। দ্বিতীয়ত, এই পরিবর্তন ঘটে পর্যায়ক্রমে এবং মেমব্রেনের রিপোলারাইজেশনের মাধ্যমে এটা ফিরে যেতে পারে আগের অবস্থায়। কোষপর্দায় আয়নের প্রবেশযোগ্যতার এই পরিবর্তন অ্যাকশন পটেনশিয়াল এবং তার পরবর্তী নিস্ক্রিয়াবস্থা ঘটানোর জন্য উপযুক্ত কিনা, সে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মেমব্রেন ভোল্টেজ এবং সময় নির্ভরশীল পরি-বহনযোগ্যতা বুঝে ওঠা প্রয়োজন”।
মানুষ হডজকিন-হাক্সলির আগে থেকেই মেমব্রেনের কন্ডাক্টেন্স, ক্যাপাসিটেন্স সম্পর্কে জানলেও এগুলো পরিমাপ যোগ্য হতে হবে, তা না হলে জানা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার এটি অন্যতম একটি মূল শর্ত, পরিমাপযোগ্যতা। এই পরিমাপযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প পরীক্ষণের মাধ্যমে। কিভাবে তা জানতে শুরুতেই বোঝা প্রয়োজন, ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প টেকনিক বলতে আসলে কি বোঝায়?
ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প টেকনিকটির নামের সাথেই তার অর্থ বলে দেয়া আছে, এর কাজ হল, সেল মেমব্রেনের ভোল্টেজকে একটি নির্দিষ্ট মানে স্থির রাখা। অর্থাৎ, বাইরে থেকে আসা কোন স্টিমুলেশনের কারণে যখন মেমব্রেন পটেনশিয়ালের মান পরিবর্তিত হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন একটি নেগেটিভ ফিডব্যাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেমব্রেন পটেনশিয়ালের পরিবর্তন রোধ করে। একটি অ্যাকশন পটেনশিয়ালের ডিপোলারাইজেশন এবং রিপোলারাইজেশন প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে চক্রটি সমাপ্ত হতে সময় লাগে মাত্র ৫ মিলি সেকেন্ড। এতো অল্প সময়ের মধ্যে এটি একাধারে স্থান এবং সময়ের উভয়ের সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয়। অ্যাকশন পটেনশিয়াল অ্যাক্সনের মেমব্রেনের দৈর্ঘ্য বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে, প্রবাহিত হচ্ছে একটি নিউরন থেকে আরেকটি নিউরনে। একই সাথে এটি পরিবর্তিত হচ্ছে সময়ের সাথে সাথেও। যখন একটি নার্ভ মেমব্রেনের পটেনশিয়াল (Vm) নামক একটি নির্ভরশীল চলক (Dependent variable) একই সাথে দুটি স্বাধীন চলকের (Independent variable), মেমব্রেনের দৈর্ঘ্য(L) এবং সময় ( t ) এর উপর নির্ভর করে, তখন কেবলমাত্র মেমব্রেন পটেনশিয়াল, Vm পরিমাপের মাধ্যমে কোনভাবেই অ্যাকশন পটেনশিয়ালে আসলে কি কি ঘটছে তা অনুধাবন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প টেকনিক নিয়ে আসে এই অসাধ্যকেই সাধ্যের সীমানায়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা অ্যাক্সনের মেমব্রেনের একটি ক্ষুদ্র ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট এলাকার বিভবকে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য করে পরিণত করে সম-বিভব বিশিষ্ট অঞ্চলে। আর ভোল্টেজ ক্যাম্প এই কাজটি করে ছোট্ট একটি ইলেক্ট্রনিক ফিডব্যাক সার্কিটের মাধ্যমে। এই ইলেক্ট্রনিক ফিডব্যাক সার্কিটটি যখনই ভোল্টেজ পরিবর্তনের উপক্রম হয়, তখনই কিছু পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ ঘটিয়ে বা শোষণ করে, ভোল্টেজকে ফিরিয়ে আনে আগের জায়গায়।
চিত্রঃ ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প পদ্ধতি (মূল উৎসঃ Cole, KS(1968), Membranes, Ions, Impulses: A Chapter of Classical Biophysics.)
ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প টেকনিকে প্রথমে স্কুইডের ১ মিলিমিটার ব্যাসের প্রশস্ত অ্যাক্সনের একটা খণ্ডাংশ নিয়ে তার কোষস্থ তরলে একটি ইলেক্ট্রোড এবং আরেকটি ইলেক্ট্রোড কোষের বহিস্থ তরলে স্থাপন করা হয়, যা পরীক্ষার সুবিধার্থে সামুদ্রিক পানি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এই দুটি ইলেক্ট্রোড (রেকর্ডিং ইলেক্ট্রোড এবং রেফারেন্স ইলেক্ট্রোড) অ্যাক্সনের মেমব্রেন পটেনশিয়াল, অর্থাৎ কোষের বহিস্থ তরলের সাথে কোষস্থ তরলের বিভব পার্থক্য, Vm নির্ণয় করে। ভোল্টেজ ক্ল্যাম্পের কাজ যেহেতু মেমব্রেন ভোল্টেজকে কোন একটি নির্ধারিত মানে স্থির করে রাখা। ধরে নিলাম, সেই নির্ধারিত মানটি হচ্ছে Vc। এটি মেমব্রেন পটেনশিয়ালকে (Vm) এরপর কমান্ড ভোল্টেজের (Vc) সাথে তুলনা করা হয়। যদি মেমব্রেন ভোল্টেজ আর কমান্ড ভোল্টেজের মধ্যে পার্থক্য থাকে তাহলে, বিপরীত দিক থেকে একটি কারেন্ট পাসিং ইলেক্ট্রোড দিয়ে কোষের অন্তস্থ তরলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে, যা কমান্ড ভোল্টেজের সাথে মেমব্রেন ভোল্টেজের পার্থক্য শূন্যকরণ করবে। কিন্তু কত টুকু কারেন্ট পাস করবে? কিভাবে বিভব পার্থক্য শূন্যে নিয়ে আসে?
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মত করে ধরে নিলাম, t1 মুহূর্তে মেমব্রেন ভোল্টেজ Vm1=Vc, অর্থাৎ মেমব্রেন পটেনশিয়াল কমান্ড ভোল্টেজের সমান। কিন্তু Vm1 রেস্টিং পটেনশিয়াল নয়। মেমব্রেন ভোল্টেজ যখনই রেস্টিং পটেনশিয়াল ছাড়া অন্য কোন মানে থাকে তখন মেমব্রেনের প্রবণতা থাকে কিছু আয়ন ভিতরে-বাহিরে আদানপ্রদান করে মেমব্রেন পটেনশিয়ালের মান রেস্টিং পটেনশিয়ালে ফিরিয়ে আনা। সুতরাং, Vm1ভোল্টেজে মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে কিছু তড়িৎ প্রবাহ ঘটবে। যার ফলে ধরি I পরিমাণ বিদ্যুৎ তথা +q (=Im x t) পরিমাণ চার্জ মেমব্রেন অতিক্রম করে কোষস্থ তরলে প্রবেশ করেছে। ফলে, t2 মুহূর্তে দেখা গেল, মেমব্রেন ভোল্টেজ Vm2 হয়ে গেছে, যা Vc এর সমান নয়। এদের বিভব পার্থক্য ΔV= Vc-Vm2, যা ক্ল্যাম্প অ্যামপ্লিফায়ারকে নির্দেশ দিল, Im পরিমাণ কারেন্ট আরেকটি ইলেক্ট্রোডের মধ্য দিয়ে কোষের মধ্যে প্রবেশ করাতে। যেহেতু I পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহের কারণে মেমব্রেন পটেনশিয়ালের পরিবর্তন ঘটেছে, তাই একে যদি কমান্ড ভোল্টেজে ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে অবশ্যই কোষস্থ তরলে I এর বিপরীত এবং সমান পরিমাণ কারেন্ট Im সরবারহ করতে হবে যা পূর্ববর্তী পরিবর্তনের প্রভাবকে শুন্যকরণ করতে পারবে । সুতরাং,
Im=- I.
ফলশ্রুতিতে কোষের মধ্যে প্রবেশ করা -q (=-Im x t) পরিমাণ চার্জের প্রভাবে মেমব্রেন ভোল্টেজ Vm1 এ ফিরে যাবে। এই প্রক্রিয়ায়, ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প সর্বদা, মেমব্রেন ভোল্টেজকে কমান্ড ভোল্টেজের সমান রাখতে পারে।
ভোল্টেজ ক্ল্যাম্পের মাধ্যমে জানা গেল, Vm1 এর দরুন মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে I=-Im পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, কোষের দুই পাশের তরলের মধ্যে আয়নের আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘটেছে। ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প পরীক্ষণকালে মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট ক্যাপাসিটিভ কারেন্ট না আয়নিক কারেন্ট তা অনুধাবন করা সম্ভব সময়ের সাপেক্ষে কারেন্টের গ্রাফ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, যেখানে দেখা যায়, যে মুহূর্তে পটেনশিয়াল পরিবর্তিত হচ্ছে, ঠিক সেই মূহুর্তে সম্পূর্ণ কারেন্টই ক্যাপাসিটিভ কারেন্ট, যা খুবই ক্ষণ স্থায়ী, এরপর আস্তে আস্তে আয়নিক কারেন্টের পরিমাণ বাড়তে থাকে আর ক্যাপাসিটিভ কারেন্ট শূন্য হয়ে যায়, অর্থাৎ ক্ষণস্থায়ী ক্যাপাসিটিভ কারেন্ট পরিবর্তিত হয়ে আয়নিক কারেন্টে পরিণত হয়।
ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প প্রক্রিয়া পরিমাপকৃত কারেন্ট I থেকে নির্ণয় করা যায় প্রবাহিত চার্জের পরিমাণ, q (=I x t). নির্ণয় করা হয়েছে ΔV= Vc-Vm2, যেখান থেকে নির্ণয় করা হয় মেমব্রেনের ক্যাপাসিটেন্স, C=q/ΔV. নীচের ছবিটি থেকে আরও ভালো ভাবে বোঝা যাবে, যে ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প প্রক্রিয়ায়, ক্যাপাসিটিভ কারেন্ট, আয়নিক কারেন্ট নির্ণয় করা সম্ভব।
চিত্রঃ ক) অ্যাকশন পটেনশিয়াল ঘটাকালে প্রবাহিত ক্যাপাসিটিভ ও আয়নিক কারেন্ট। খ) পটাশিয়াম জনিত আয়নিক কারেন্ট। গ) সোডিয়াম জনিত আয়নিক কারেন্ট।
ভোল্টেজ ক্ল্যাম্প পদ্ধতি ব্যবহার করে, একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজে মেমব্রেনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত আয়নিক কারেন্টের পরিমাণ, ক্যাপাসিটিভ কারেন্টের পরিমাণ, মেমব্রেনের ক্যাপাসিটেন্স জানা সম্ভব। উপরের ছবিটাতে পরিষ্কার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে, খুব স্বল্প সময়ের (০.০২ মিলি সেকেন্ড- যে সময়টুকুর মধ্যে পটেনশিয়ালের পরিবর্তিত হয়ে যায়) জন্য উপস্থিত ক্যাপাসিটিভ কারেন্টের স্পাইকের পরই তা রূপান্তরিত হয়েছে আয়নিক কারেন্টে, অর্থাৎ প্রথম ০.০২ মিলি সেকেন্ডের পরে সম্পূর্ণ কারেন্টই আয়নিক কারেন্ট। আয়নগুলোর মধ্যে সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম আয়নের প্রাধান্য থাকায় এই আয়নিক কারেন্টকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়, অন্য নগণ্য পরিমাণ আয়নকে উপেক্ষা করে।
I= INa1+Ik1
এখন যদি, পটাসিয়াম আয়নের দরুন সৃষ্ট কারেন্টে কোনভাবে বন্ধ করা যায়, তাহলে প্রবাহিত কারেন্ট হবে কেবল সোডিয়াম আয়নের প্রবাহের জন্য সৃষ্ট কারেন্ট। বিপরীত ভাবে সোডিয়াম আয়নের দরুন সৃষ্ট কারেন্টকে যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে আমরা কেবল মাত্র পটাশিয়াম আয়নের জন্য ঘটিত কারেন্টটা পাব। অর্থাৎ একটি আয়নের চলাচল বন্ধ করে দিলে অপর আয়ন ঘটিত কারেন্টটি পাওয়া যায়। হডজকিন -হাক্সলি, পরীক্ষণের সময়, কোষের বহিস্থ তরল সামুদ্রিক পানি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছিলেন, শুধু তাই নয়, সামুদ্রিক পানিতে বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে লবনাক্ততার পরিমাণ কমিয়েও পরীক্ষা করেছিলেন। কেবল মাত্র পটাশিয়াম আয়ন ঘটিত কারেন্ট সনাক্ত করার জন্য তাদের হাতে উপায় ছিল বহিস্থ তরলে সোডিয়ামের পরিমাণ শূন্য করে ফেলা (০% সামুদ্রিক পানি) অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ পানি বহিস্থ তরল হিসেবে ব্যবহার করা, যাতে কোন সোডিয়াম আয়নের উপস্থিতি না থাকে। যখন বহিস্থ তরল থেকে সোডিয়াম অপসারণ করে নেয়া হয়, তখন কেবল মাত্র পটাশিয়াম আয়নের দরুন সৃষ্ট আয়নিক কারেন্ট পাওয়া যায়, উপরের ছবির দ্বিতীয় কার্ভটি তাই নির্দেশ করছে। তার নীচের কার্ভটিতে দেখানো হয়েছে সোডিয়াম জনিত আয়নিক কারেন্ট, যা পাওয়া গেছে মোট কারেন্ট থেকে পটাসিয়াম কারেন্টকে বিয়োগ করে। বর্তমান সময়ে একটি আয়নিক কারেন্টের পরিমাণ জানতে হলে অপর আয়নের চ্যানেল বন্ধ করে দিতে ব্যবহার করা হয় কিছু রাসায়নিক পদার্থ; সোডিয়াম চ্যানেল গুলো ব্লক করার কাজে ব্যবহার করা হয় টেট্রোডক্সিন আর টেট্রামিথাইল অ্যামোনিয়ামকে ব্যবহার করা হয় পটাসিয়াম চ্যানেল ব্লক করার কাজে। একটি পরীক্ষণের এই দুটি আয়ন চ্যানেলের যে কোন একটি ব্লক করলেই কাজ চলে যায়।
কোষপর্দার ইলেকট্রিকাল মডেলে আরেকবার চোখ বুলিয়ে দেখি, সার্কিটে কিছু ব্যাটারির অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে, সেগুলো এলো কি করে? কোষের ভিতরে বা বাহিরে জমা থাকে প্রচুর আয়ন, প্রধানত সোডিয়াম আয়ন এবং এবং পটাসিয়াম আয়ন। কোষের ভিতরে পটাসিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেশী থাকে আর বাইরে সোডিয়াম আয়নের ঘনত্ব বেশী থাকে। তাই সুযোগ পেলেই পটাসিয়াম আয়ন কোষের ভিতর থেকে বাইরের দিকে যেতে চায় আর সোডিয়াম আয়ন কোষের বাইরে থেকে ভিতরে চলে আসতে চায়। এই যে কোষপর্দা দিয়ে সোডিয়াম আয়নের প্রবাহ বা পটাসিয়াম আয়নের প্রবাহ বা আয়নিক কারেন্ট, তা ঘটছে তাদের রাসায়নিক ঘনত্বের ভিন্নতার কারণে। এই রাসায়নিক ঘনত্বের ভিন্নতা কোষপর্দার দুইপাশে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করে বলে সেই বিভবকে ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল ফোর্স হিসেবে বিবেচনা করা যায়, আর যে বিভবে গেলে আয়নগুলোর প্রবাহ সাম্যাবস্থায় থাকবে, সেই বিভবকে ব্যাটারি আকারে দেখানো হয় ইলেকট্রিকাল মডেলে, কারণ সেই বিভবটিই হল আয়নগুলোর চালক-শক্তি। এইসব ব্যাটারিকে বলা হয় ইকুইলিব্রিয়াম পটেনশিয়াল বা রিভার্সাল পটেনশিয়াল। সোডিয়ামের রিভার্সাল পটেনশিয়াল ENa হল সেই পটেনশিয়াল যে পটেনশিয়ালে সোডিয়াম আয়নের জন্য যে পটেনশিয়ালে সোডিয়ামের রাসায়নিক ঘনত্ব এবং ইলেক্ট্রোমোটিভ ফোর্স উভয়ই পরস্পরের সাথে সাম্যাবস্থায় থাকে, একে অধিকাংশ সময় সোডিয়ামের নার্নেস্ট পটেনশিয়াল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নার্নেস্ট সমীকরণ ব্যবহার করে খুব সহজেই নির্ণয় করা যায় একটি বিশেষ আয়নের রিভার্সাল পটেনশিয়াল।
ভোল্টেজ ক্ল্যাম্পের মাধ্যমে আয়নিক কারেন্টের পরিমাণ জানার মাধ্যমে প্রত্যেকটি আয়নের জন্য আলাদা আলাদা করে জানা যায় কোষ পর্দার পরিবাহকত্বের পরিমাণও। তবে মনে রাখতে হবে এরা ভোল্টেজ এবং সময় নির্ভর, মূলত একেকটি ফাংশন (ভোল্টেজ, সময়)। নীচে আয়নিক কারেন্ট থেকে পরিবাহকত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতি দেখানো হল।
INa= gNa(Vm-ENa)
উপরের সমীকরণ থেকে আমরা পাচ্ছি নার্ভ মেমব্রেনে সোডিয়াম আয়নের পরিবাহকত্ব, gNa.
gNa= INa/(Vm-ENa)
ঠিক অনুরূপ ভাবে নির্ণয় করা যায় gk
তাহলে দেখা যাচ্ছে, INa, Ik, gNa, gk , C, ENa, Ek সবই নির্ণয় করা যায়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে হডজকিন-হাক্সলির নিউরন মেমব্রেনের মডেলটি আক্ষরিক অর্থে সম্পূর্ণ পরিমাপযোগ্য, যা নিউরোসায়েন্সকে অন্তর্ভুক্ত করে পরিমাপযোগ্য বিজ্ঞানের তালিকায়। এভাবেই কনডাক্টেন্সের সাথে সিরিজে একটি করে ব্যাটারি, আর এদের প্যারালালে ক্যাপাসিটর বসিয়ে হডজকিন হাক্সলি উপস্থাপন করেছিলেন মেমব্রেনের ইলেকট্রিকাল বৈশিষ্ট্য, যেখানে মেমব্রেনের দুইপাশের বিভব পার্থক্যই হল মেমব্রেন পটেনশিয়াল। যখন কোষ স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে, তখন কোষের পরিবাহকত্বও স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু কোন কারণে কোষের দুইপাশের জমা আয়নে অস্থিতিশীলতা চলে এলেই মেমব্রেন পটেনশিয়াল বদলে যায়, আর কোষের পরিবাহকত্বও পরিবর্তনশীল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় অ্যাকশন পটেনশিয়াল। তাদের লব্ধ এই সব জ্ঞানকে তারা নিউরনের কোষপর্দার ইলেকট্রিকাল মডেল রূপে উপস্থাপন করিয়েই সমগ্র বিশ্বকে অনুধাবন করিয়েছিলেন, নিউরন আসলে কি? স্নায়ুতন্ত্রের ফাংশনাল ইউনিটের কর্মপ্রক্রিয়ার স্বরূপ।
——————————————————————————–
[বেশ কয়েক পর্বে নিউরন এবং এর কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করার কারণটি ছিল ছিল নিউরাল মেকানিজমকে ভালভাবে জানা, যার উপর ভিত্তি করে বুঝতে হবে পুরো স্নায়ুতন্ত্রকে, এর কাজকে। এই পর্যন্ত এসে বুঝতে পারছি, নিউরন এবং অ্যাকশন পটেনশিয়াল নিয়ে লিখে যেতে থাকলে হয়ত শেষ করতে পারব না। তবে আশার কথা হচ্ছে, অভিজিৎ দার মস্তিষ্কের আনইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে লেখাটায় দেখলাম, ভাইয়া অ্যাকশন পটেনশিয়াল সঞ্চালন, কেবল থিওরি (তথ্য চুইয়ে পড়া) নিয়ে লিখবেন, আমি নিশ্চিন্ত মনে আপাতত নিউরন নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করছি। নিউরনকে বুঝতে গেলে শুধু বায়োলজির জ্ঞান দিয়ে আর বেশী দূর টেনে নেয় সম্ভব নয়, এইবার দরকার গণিতের জ্ঞান। হডজকিন- হাক্সলির মূল প্রবন্ধে যত গাণিতিক সমীকরণ আছে, সেগুলো যেদিন নিজে বুঝতে এবং অন্যকে বোঝাতে সমর্থ হব, সেদিন না হয় আবার শুরু করব নিউরন নিয়ে আলোচনা-যজ্ঞ। সামগ্রিক অর্থে এতো বিশাল, এতো নিখুঁত, এতো শ্রম সাপেক্ষ কাজ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য আমার মত একজন শিক্ষানবিশকে যথেষ্টই সাধনা করতে হবে।
নিউরন নিয়ে আমার সব লেখালেখি সেই সব তরুণদের উদ্দেশ্যে, যারা জানতে চায় মস্তিষ্কের রহস্যকে। একটা অবিশ্বাস্য ধরণের কৌতূহল উদ্দীপক জ্ঞানের চারণভূমি পড়ে আছে, যার অধিকাংশ রহস্যই এখনো উন্মোচিত হয়নি, একদিন হয়ত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম হাত লাগাবে সেই রহস্য উন্মোচনে। আমি আশাবাদী।]
———————————————————————————-
তথ্যসূত্রঃ
1. Hodgkin, A.L. & Huxley, A.F. A quantitative description of membrane current and its application to conduction and excitation in nerve. The Journal of Physiology 117, 500-544 (1952).
2. Cole, K.S. & Curtis, H.J. ELECTRIC IMPEDANCE OF THE SQUID GIANT AXON DURING ACTIVITY. The Journal of general physiology 22, 649-670 (1939).
3. Hodgkin, A.L., Huxley, A.F. & Katz, B. Measurement of current-voltage relations in the membrane of the giant axon of Loligo. Journal of Physiology 116, 424-448 (1952).
4. Huxley, A.F. Hodgkin and the action potential 1935–1952. The Journal of Physiology 538, 2 (2002).
5. The Nerve Impulse.
6. Hodgkin-Huxley Experiments
7. Active Behavior of the Cell Membrane
নিউরোন তো আসলে এক ধরনের কোষ , যদিও একটু জটিল প্রকৃতির। প্রোটিন সংশ্লেষণের সাধারণ নিয়ম আর দশটা কোষের মত নিউরোনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ১৯৬৩ সালে জীব বিজ্ঞানের বসবাস ছিল বর্তমানের তুলনায় আতুর ঘরে। ডি এন এ কাঠামো সবেমাত্র তখন আবিস্কৃত হয়েছে এবং নিউরনের কার্যক্রমে জিন এক্সপ্রেশন তো দূরের কথা , জিন এক্সপ্রেশন সম্পর্কে ধারণার বিকাশই তখন ঘটেনি। সেই দূ্র্বলতার ছাপ হজকিন-হাক্সলীর গবেষণার উপরেও তখন পড়েছে। উনাদের মডেল একটা যুগান্তকারী আবিস্কার সন্দেহ নেই , তবে এর দূ্র্বলতাগুলো পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। এমনকি হাক্সলী ১৯৬৩ সালে নিজেই তার নিজের নোবেল বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন যে আনবিক পর্যায়ে ‘পারমাবিলিটির’ কার্যক্রমের মধ্যে যে তারতম্য পরিলক্ষিত হয় :
“I would not like to leave you with the impression that the particular
equations we produced in 1952 are definitive …
Hodgkin and I felt that these equations should be regarded as a first approximation which needs to be refined and extended in many ways in the search for the actual mechanisms of the permeability changes on the molecular scale.”
বক্তব্যটা যে অনেকখানিই অতিরঞ্জিত, সেটার সপক্ষে ভুঁড়ি ভুঁড়ি প্রমাণ বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেয়া যাবে । নিচে হাক্সলীর নিজের মডেল থেকেই একটা তুলে দিলাম যেখানে তিনি স্কুইডের বিরাটকায় এক্সনের পরিমাপকৃত আচরনের সাথে ( এ্যাকশন পটেনশিয়াল) পর্যবেক্ষনের ধারণকৃত ফলাফলের অসামঞ্জস্যতা দেখিয়েছেন :
[img]http://i48.tinypic.com/29ggc37.jpg [/img]
নিউরোসাইন্স ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের একটা সম্ভাবনাময় শাখা হয়ে উঠতে পারে , তবে সেজন্য এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।
@সংশপ্তক,
প্রবেশযোগ্যতার কোন আনবিক ভিত্তি যে তাদের কাজের সময় ছিল না, তা তারা নিজেরাই রেফারেন্স ১ এ লিখেছেন, সোডিয়ামের পারমিয়েবিলিটি বেড়ে যাওয়া কে তারা বলছিলেন মেমব্রেনের অ্যাফিনিটি, যেটা ভুল ছিল, আয়ন চ্যানেলের কার্যক্রম, কিভাবে সোডিয়ামের পারমিয়েবিলিটি বাড়ে, সেই ব্যাখ্যাগুলো জানা গেছে পরে, তাদের কাজের সময়ে নয়। ১৯৫২ এর কাজকে ২০০২/২০১২ এর সাথে তুলনা করলে তো হবে না, ঐটাকে দেখতে হবে সেই সময়ের রেসপেক্টে। যাই হোক, আমি আপনার দেয়া ছবিটার রেফারেন্সের লিঙ্কটা চাচ্ছি, সাথে আপনার বক্তব্যটাও পরিষ্কার করে শুনতে চাই, আপনি যেখানে মার্ক করে দেখাচ্ছেন, সেটা আন্ডারশুট রিজিওন, যেটা আমার আগ্রহের অনেকটা কেন্দ্রবিন্দু এই মুহুর্তে, এখনও আমি কোন রিসার্চ পেপার পাইনি, যেটা আন্ডারশুট রিজিওনকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পেরেছে। হতে পারে সেটা আমার খোঁজার সীমাবদ্ধতা, কিন্তু আন্ডারশুট থেকে কোন গাণিতিক নিয়মে রেস্টিং পটেনশিয়ালে ফেরত যায়, এর সময়, সময় সংকোচন এইসব নিয়ে পরিষ্কার কোন ধারণা পাবার মত রিসার্চ পেপার আমার নজরে পড়েনি। এমনকি, স্টিমুলেশন ইনটেনসিটি- ফ্রিকোয়েন্সি অফ অ্যাকশন পটেনশিয়াল রিলেশনশিপ, এই নিউরাল এনকোডিং এর গাণিতিক সমীকরণ আসলেই আছে কিনা আমার জানা দরকার, যা মূলত নির্ভর করে আন্ডারশুট রিজিওনের উপরে।
দেখুন, আনবিক ভিত্তি যে বিজ্ঞানের অন্যতম মূল ভিত্তি, সেটা আমি একবাক্যে স্বীকার করি, যেকোন কিছু ভালোভাবে বুঝতে গেলে আমাদের আনবিক ভিত্তি দিয়েই বুঝতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ তা অর্জন করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না, তাকে আপনি বিজ্ঞানের তালিকা থেকে ছুড়ে ফেলতে পারেন না, পারলে তাহলে আপনাকে, মলিকুলার বায়োলজিকেও ছুড়েই ফেলতে হবে, পদার্থবিজ্ঞানকেও। কারণ, কোনটাই এখনও সম্পূর্ণরুপে জানা হয়ে ওঠেনি। মলিকুলার নিউরোসায়েন্স আমার ফিল্ড না, কিন্তু মলিকুলার নিউরসায়েন্স যে এক্কেবারে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তাও না। তারা কাজ করছে নিউরোসায়েন্সে আনবিক ভিত্তি বুঝে ওঠার জন্য। বিজ্ঞান কোন আলাদিনের যাদুর চেরাগও না, ঈশ্বরের রূপকথার গল্পও না, যে হও বললেই হয়ে যাবে। আমি জানি, একদিন জানা যাবে। ৫০ বছর বেচে থাকে আমি নিজেই ২০১২ এ তাকিয়ে বলব তখন আমরা কিছুই জানতাম না, এখন অনেককিছুই জানি। আমি আসলে যেটা পয়েন্ট আউট করতে চাচ্ছি, সেটা হল আপনার মলিকুলার বায়োলজী ছাড়া বাকি সবকটা ফিল্ডের উপর নেতিবাচক–> ঐটা বিজ্ঞান নাকি এই ধরণের ধারণাটা যে আসলে ভুল সেটাকে। নিরপেক্ষ হন। শান্তি বর্ষিত হোক। 🙂
দয়া করে রেফারেন্স সমেত বক্তব্যটা জানালে খুশি হব।
@নীল রোদ্দুর,
রেফারেন্সটা আসলে হজকিন-হাক্সলীর মূল গবেষণাপত্র A QUANTITATIVE DESCRIPTION OF MEMBRANE CURRENT AND ITS APPLICATION TO CONDUCTION AND EXCITATION IN NERVE। যেটা হয়তো আপনার কাছেই আছে। আমার দেয়া চিত্রটা ঐ গবেষণাপত্রের চিত্র -১২ এর উপর ভিত্তি করে আঁকা এবং হলুদ মার্কিংটা ইগনোর করুন।। পৃ: ৫৪২ এ ফলাফল অধ্যায়ে দেখুন :
(3) There is a small hump in the lower part of the falling phase. (4) The ending
of the falling phase is too sharp. The extent to which these differences are the
result of known shortcomings in our formulation will be discussed on pp. 542-3.
এবার পৃ: ৫৪২-৩ এ দেখুন Differences between calculated and observed behaviour অংশটুকু।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ, এটা আমি আগেই দেখেছি। শুধু এই পেপারটা না, হাক্সলির আরেকটা পেপার আছে ৫০ বছর পূর্তিতে, সেখানেও আমি দেখেছি সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি এটাকে। একটা মডেল যতকিছুই হোক না কেন, সেটা একটা মডেল, সীমাবদ্ধতা থাকবেই। প্রশ্নটা হল সীমাবদ্ধতা কতটা? তার উপর ভিত্তি করে বিচার করা হয় এর গ্রহণযোগ্যতা।
আরেকটা ব্যাপার হল, তাদের এক্সপেরিমেন্টে এক্সট্রাসেলুলার ফ্লুইডকে সামদ্রুকিক পানি দিয়ে রিপ্লেস করেছিল, যেটা প্রকৃত কোষীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু তারপরও আমি বলব, তারা যেটা করেছেন সেটা অনেকটা কোডব্রেকিং এর মত, একটা ফেনোমেমন দেখা যাচ্ছে, অথচ এর সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছিল না, তার সেটা পেরেছিল।
আন্ডারশুট রিজিওওন নিয়ে ইফেক্টিভ কোন পেপার পেলে আমাকে এখানে লিঙ্ক দিয়েন। আমার বুঝতে সুবিধা হবে, আগেই বলেছি, পরিষ্কার কোন ব্যাখ্যা আমি এখনো খুঁজে পাইনি।
মুক্তমনা ব্লগার রৌরবের অনুরোধে মুক্তমনায় লেটেক ইনস্টল করেছিলাম অনেক আগে,গাণিতিক সমীকরণ লিখতে লেটেক ব্যবহার করতে পারেন। লেটেক লেখার সিনট্যাক্স জানতে এখানে দেখুন। সুপারস্ক্রিপ্ট,সাবস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি লেটেক ব্যবহার করলে ভালোমত বোঝা যাবে,যেমন:
[latex]a^{2}+2ab+b^{2}[/latex]
[latex]e^{\i \pi} + 1 = 0[/latex]
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ধন্যবাদ রামগড়ুড়ের ছানা, ভাবছিলাম জিজ্ঞেস করব। লেটেক সিনট্যাক্স এখনো ব্যবহার করা হয়নি আমার। ওর্য়ার্ডে যখন করেছিলাম তখন ঠিক মতই করেছিলাম, মুক্তমনায় পেস্ট করে দেখি সুপারস্ক্রিপ্ট সাবস্ক্রিপ্ট হাওয়া। আমি এখনো পেপার লেখালেখির কাজ ওয়ার্ড দিয়ে চালাই, পুরান জামানায় পড়ে আছি, ঠেকায় না পড়লে শিখি না।:( যাই হোক, শিখে নেব।:)
রৌরবকে অনেকদিন মুক্তমনার পাতায় দেখিনা। গেলেন কোথায়! উনার লেখাগুলোও মিস করি।
আমি যে কোটেশনের কথা বলেছিলাম হডজকিন হাক্সলির পেপারের ভাবানুবাদ সেটা
“প্রথমত, ডিপোলারাইজেশনের কারণে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কোষপর্দায় সোডিয়াম প্রবেশযোগ্যতা বেড়ে যায় বহুগুণে এবং পটাসিয়ামের জন্য বাড়ে একটু ধীর গতিতে। দ্বিতীয়ত, এই পরিবর্তন ঘটে পর্যায়ক্রমে এবং মেমব্রেনের রিপোলারাইজেশনের মাধ্যমে এটা ফিরে যেতে পারে আগের অবস্থায়। কোষপর্দায় আয়নের প্রবেশযোগ্যতার এই পরিবর্তন অ্যাকশন পটেনশিয়াল এবং তার পরবর্তী নিস্ক্রিয়াবস্থা ঘটানোর জন্য উপযুক্ত কিনা, সে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মেমব্রেন ভোল্টেজ এবং সময় নির্ভরশীল পরি-বহনযোগ্যতা বুঝে ওঠা প্রয়োজন”।
এটা। 🙂
কোল-কার্টিজও প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী। আপনি তাদের স্টাইলটাকে ভুল ভাবতেই পারেন। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
আগে আরো দুইটা মন্তব্য করলেও এই মন্তব্যটা এইমাত্র চোখে পড়লো। দেখুন, আপনার লেখা বুঝতে আমার কোনই সমস্যা হয়নি, কেবল এককগুলোর জায়গা ছাড়া। আমি সেটা উল্লেখও করেছি ১ম মন্তব্যে। সম্ভবতঃ এ পোস্টে এটাই আমার শেষ মন্তব্য।
ভাল থাকবেন এবং আরো লিখবেন।
@নীল রোদ্দুর,
আপনার লেখা আমার অনুর্বর মস্তিস্কের উপর দিয়ে উড়ে গেল 🙁 আসলে রাস্ট্র বিজ্ঞান এর ছাত্রী হিলাম কিনা(এক দম ফালতু বিষয়)।
তবে একটা কথা না বলে পারছিনা- আপনার লেখার ভেতরে একটা সাহিত্যের ভাব আছে। এইটা একান্ত আমার মনের ধারণা- আমার ধারণা ভুল কম হয়। আমি না বুঝলেও বিজ্ঞানমনস্কদের জন্য
অত্যন্ত মানসম্মত লেখা অবশ্যই- 🙂
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ আপনাকে, এখন আমি সাহিত্যের কাছে ধারেও যেতে পারিনা… কবিতা পড়া আমার অনেকটা নেশার মত, বাংলাদেশ থেকে আসবার আগ পর্যন্ত একেকজন কবির বই নিয়ে পাতার পর পাতা আবৃত্তি করতে করতে উলটে যেতে থাকতাম, যতক্ষণ খেয়াল না ছুটে। খুব মিস করি আমার বইগুলোকে। ইন্টারনেটে তৃপ্তি হয় না। সাহিত্য বলতে যা বোঝায়, তা পড়ারই সময় পাই না এখন, সৃষ্টি করা তো নেহায়েত দূরের কথা।
কোন বিষয় ফালতু না আপু, সবই মুক্তোফলা, নির্যাসটুকু ধরতে পারলে 🙂
বেশ টেকনিক্যাল ব্লগ! তবে, আমার মতো উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ ও জীববিজ্ঞান জানা মানুষরাও সহজভাবে বুঝতে পেরেছে। কিছু জিনিস পরিষ্কার করার জন্য জিজ্ঞেস করছি – হডজকিন ও হাক্সলির মডেলে IC, INa আর Ik ছাড়াও IL বলে আরেকটা অংশ আছে, যেটাকে চিত্রের নিচে ‘ধ্রুবক’ বলা আছে। এটা কি প্রথম তিনটা অংশ ছাড়া বাকি অংশকে বুঝাচ্ছে, যেখানে রোধ খুব বেশি এবং ফলশ্রুতিতে যার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের পরিমাণ (IL) নেগলিজিবল? এ অংশের রোধ RL এর পরিমাণই কি প্রতি বর্গসেমি-তে ১০০০ ওহম? (IL) নেগলিজিবল বলেই কি ১ম গ্রাফে মোট বিদ্যুতের পরিমাণ, Im = INa + IK + (IC + IL) বলার পরেও, কেবল INa=0 করেই বাকি বিদ্যুতকে অর্থাৎ Im কে IK ধরা হয়েছে?
এছাড়া এককগুলো ঠিকমতো ধরতে পারছি না।
আমি যতটুকু জানি, পরিবাহকত্ব (Conductance) এর একক সিমেন্স (S) অথবা (ohm-1), কারণ, G = 1/R. এখানে কি আসলে রোধ কমে আসার কথা বলেছেন? অন্যভাবে বললে, পরিবাহকত্ব বাড়ার কথা বলতে চেয়েছেন? এছাড়া রোধের একক ওহম (ওহম-বর্গ সেমি নয়)। ১০০০ ওহম-বর্গ সেমি বলতে কি প্রতি বর্গ সেমি তে ১০০০ ওহম রোধের কথা বুঝিয়েছেন? সেক্ষেত্রে মনে হয়, ওহম/বর্গ সেমি হবে।
ভুল-ভাল কিংবা বোকার মতো কিছু বলে থাকলে শুধরে দিবেন।
কারেকশনঃ
ohm-1 নয়, ohm^-1. মন্তব্যে <sub> ও <sup> ট্যাগগুলো কাজ করছে না। দুঃখিত।
@প্রতিফলন,
আরেকটু পরিষ্কার করে বলি, গবেষণা পত্রে শব্দটা কন্ডাক্টেন্স ব্যবহার করা হলেও ইউনিট সবসময় রেজিস্টেন্সের ব্যবহার করা হয়েছে… এখনও অনেকে আয়ন চ্যানেলের রোধকত্ব ব্যবহার না করে পরিবাহকত্ব ব্যবহার করে, এবং ইউনিট ওহম ব্যবহার করে।
@নীল রোদ্দুর,
একজন নোবেলপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী Conductance এর মতো প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক টার্মের একক হিসেবে Resistance এর একক ব্যবহার করেছেন শুনে অবাক হয়েছিলাম, তাই আপনার দেয়া ৩ নম্বর রেফারেন্সটাতে ঢুকেছিলাম। সেখানে পরিবাহকত্বের একক হিসেবে mho লিখা আছে, ohm নয়, ohm এর উল্টো ক্রমে লেখা, যা ohm^-1 কে প্রকাশ করার আরেকটি পদ্ধতি।
@প্রতিফলন,
From measurements made during the passage of the impulse and appropriate analysis, it was found that the membrane phase angle was unchanged, the membrane capacity decreased about 2 per cent, while the membrane conductance fell from a resting value of 1000 ohm cm.2 to an average of 25 ohm cm.2
from reference 2, Abstract. by K. S. Cole and H. J. Curtis.
উনারা দুইজন নোবেল বিজয়ী না হলেও তাদের অবদান ছাড়া হডজকিন-হাক্সলির ১৯৫২ এর গবেষণা পত্র এতো দ্রুত আসতো কিনা কে জানে? আর এই নিয়ে কাজ হডজকিনের আগে কোলই শুরু করেছিলেন।
@নীল রোদ্দুর,
আপনার বক্তব্যের সাথে একমত না হয়ে রেফারেন্স উল্লেখ করে আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত দিয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। তবে আঘাত দেয়া নয়, বরং পরিষ্কার করতে চাই বলেই ব্যাপারটা এসেছে। আপনি সম্ভবতঃ ২ নম্বর রেফারেন্সের এবস্ট্রাক্ট থেকে কোট করেছেন। কিন্তু ফুল টেক্সটে গেলে দেখবেন, সেখানে এবস্ট্রাক্ট বলে কিছু নেই-ই। সম্ভবতঃ পরে কেউ এই এবস্ট্রাক্ট লিখেছেন এবং ভুল করেছেন। মূল টেক্সট হতে বুঝা যায়, কোল এবং কার্টিস ঠিকমতোই একক লিখেছিলেন। আমি কিছু কোট করছি –
page-649 (in the pdf file, page-1)
Permeability may be ultimately converted into coulombs per second for a square centimeter and a potential difference of 1 vold, which is the conductance, in reciprocal ohms, for a square centimeter.
page-650 (in the pdf file, page-2)
the membrane conductance increased increased to about 200 times its resting value.
page-660 (in the pdf file, page-13)
[img]https://lh6.googleusercontent.com/-u9ePxYBzFGA/T78vqm144yI/AAAAAAAAABM/6oPuN2Oz1nE/s628/mho.png[/img]
page-666 (in the pdf file, page-20)
Consequently we must assume that there is a change of the membrane resistance which falls from a resting value of 1000 ohm cm.2 to a minimum value which is probably 10 percent.
প্রতিটা জায়গাতেই Conductance ও Resistance এর সঠিক একক ব্যবহার করা হয়েছে। স্পষ্ট করেই বলেছেন – Conductance বাড়ে ও Resistance কমে। বিজ্ঞানের লেখায় বুঝার সুবিধার্থে এক টার্মের জায়গায় অন্য টার্মের একক ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত নয় বলেই মনে হয় আমার, এতে বুঝার পরিবর্তে সমস্যা তৈরি হয় (যেমনটা হয়েছে আমার ক্ষেত্রে)। আশা করি, আমার বক্তব্য ধরতে পেরেছেন।
@প্রতিফলন,
দুঃখিত, এইমাত্র চোখে পড়ল, কোল এবং কার্টিসও সবার শেষে page-669 (in the pdf file, page-21)-এ Summary তে এসে ভুল একক ব্যবহার করেছেন,
the membrane conductance fell from a resting value of 1000 ohm cm. 2 to an average of 25 ohm।
তবে এটাকে আমি ভুল হিসাবেই দেখি।
@প্রতিফলন,
অনেক কষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
আমার কাছে মনে হয় যতক্ষণ আইডিয়াটা ট্রান্সফার করতে কোন ভুল হচ্ছে না, ততক্ষণ আমি তুচ্ছ একটা একটা ব্যাপারকে হাইলাইট করে গবেষণা পত্রের বক্তব্যকে ভুল বলব না। আমি পরিষ্কার ভাবেই জানি, বক্তব্যটা কি। হডজকিন-হাক্সলি-কোল-কার্টিজ এরা নোবেল বিজয়ী হোক আর যাই হোক, মানুষই, ঈশ্বর না, ঈশ্বর প্রেরিত নবীও না, আবার কোন কোড করা প্রোগ্রামও না। এইটুকু হতেই পারে। আমার মনোযোগ ছিল বক্তব্যে, কোথায় কমা, কোথায় সেমিকোলন দেই নাই বা কোথায় কন্ডাক্টেন্স লিখেছে রেজিস্টেন্সের বদলে, সেগুলো নিয়ে না। তবে আপনার বুঝতে সমস্যা হয়েছে বলে ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আরেকটু সতর্ক হবার চেষ্টা করব।
তবে ব্যক্তিগত ভাবে, আমি খুশি হব যদি কোনদিন পারি তাদের মত বিশাল কাজ করে ঐটুকু ভুল করতে। 🙂
@প্রতিফলন,
IL হচ্ছে লিকেজ কারেন্ট যেটাকে উপেক্ষা করা যায়, খুবই সামান্য, আর তাছাড়া অন্যান্য কিছু আয়নের জন্যও বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, খুব সামান্য পরিমাণ। আসলে INa, Ik, Ic এদের তুলনায় এতো নগণ্য যে সিমপ্লিফিকেশনের জন্য তা উপেক্ষা করা যায়।
আর এই কারণেই INa=0 ধরে Ik=Im ধরা যায়। এইখানে উল্লেখ্য, প্রথম ০.০২ মিলিসেকেন্ডের পরে Ic ও শুণ্য। তাহলে আসলে, যখন Ik=Im বলা হয়েছে, তখন Ic=0, INa=0, IL–>নেগলিজিবল।
IL যেহেতু খুবই কম, উপেক্ষা করা হয়, তাই এর রোধ বেশি কি কম, এটা চিন্তার বিষয় না। লিকেজ কারেন্ট তো এক্সপেক্টেড কারেন্ট না।
পরিবাহকত্ব আর রোধকত্ব ইন্টারচেঞ্জবলি ব্যবহার করা যায়, যে নামেই ডাকি না কেন, কাজ আয়ন পরিবহ করা। ঐ কোটেশন টা মূল গবেষণা পত্রের একটা অংশের ভাবানুবাদ। সেখানে হডজকিন-হাক্সলিও রেজিস্টেন্সের বদলে কন্ডাকটেন্স ব্যবহার করেছেন, কারণ তারা মূল আইডিয়াটা বোঝাতে চেয়েছেন।
ইউনিট ওহম/বর্গ সেমি। আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি বেখেয়ালে ঠিক করিনি, এখন করে দিচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
বাংলায় “নিউরন” বিজ্ঞ্যানের উপর অতি উন্নত স্তরের লেখা।ফিজিওলজী ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বিশেষ কাজে আসবে।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
কারোর যদি কিছু মাত্র আগ্রহ জাগে, কিছুমাত্র কাজে লাগে, তাহলেই আমি খুশি। 🙂
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
আপনি যে সমস্ত জটিল বিষয় নিয়ে ব্লগে লেখা শুরু করেছেন, সেধরণের লেখা বাংলা ব্লগে আছে কিনা আমার জানা নেই। নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখছেন।
কেন কেন? আপনি যখন লিখছেনই তখন আমি ভাবছি আমার না লিখলেও চলবে। 🙂 সত্যি আমার লেখায় এত সমীকরণ আর বৈজ্ঞানিক টার্ম থাকে না। আপনার লেখা পড়ার পর আমারগুলো আদপে ‘লেখা’ কিনা সেটাতেই এখন সন্দেহে হচ্ছে আমার …
লেখা চালিয়ে যাবেন আশা রাখছি।
@অভিজিৎ,
ভাইয়া, আমি মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের দেখেছি, তারা নিউরোলজিস্ট/ নিউরোসার্জন হবার সাহস করে না সহজে… কি এক অজানা ভিতী! ইঞ্জিয়ারিং এর কোন স্টুডেন্ট মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করার কথা চিন্তা করে কিনা, আমার সন্দেহ আছে… জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কথা জানি না, তবে আমার ধারণা সেখানেও সেই ভিতী আছে… কিন্তু দুনিয়া জুড়ে যারা স্নায়ুতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে, তারাও আমাদের মত মানুষই, ভিন গ্রহের প্রাণী না। তারা যদি পারে, আমরা(বাঙ্গালীরা) কেন নয়? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখি, আমরা এই সম্পর্কে কিচ্ছু জানিনা দেখেই আমাদের এই মনোভাব। আমার এইসব সমীকরণ সমেত কঠিন কঠিন ব্লগ কেউ পড়ে কিনা জানিনা… তবে আমি নিউরোসায়েন্স দূর্বোধ্য কঠিন এই ধারণা ভাঙ্গতে চেষ্টা করছি। সাথে বাংলায় নিউরোসায়েন্সের একটা আর্কাইভ হচ্ছে।
ভাইয়া আপনি আপনার মত করে লিখেন, আমার লেখা দরকার হলে আমি আমার মত করে লিখবো। আমি যেভাবে লিখি, সমীকরণ সমেত, তাতে অনেকের জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। আপনার লেখা মনে গেঁথে যায় সহজে, পাঠক বুঝতে পারে ভালো করে… এই গুনটা তো সবার থাকে না। 🙂
লেখা চলবেই… নো চিন্তা… 🙂
(Y) (F)
@ফরিদ আহমেদ, ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂