ক’দিন ধরেই শুনছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি নাকি অনেক বাড়ানো হয়েছে। কত বাড়ানো হয়েছে কি বৃত্তান্ত কিছুই জানতাম না। একদিন রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটবোন লাকি আক্তার একটা মেসেজ পাঠালো, বললো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিয়ে আমি যেন কিছু লিখি। ওকে বললাম, ঠিক আছে, আমি পুরো ব্যাপারটা আগে ভালভাবে একটু জেনে নিই, আইনের ধারাগুলোতে কি আছে, আন্দোলনটা যৌক্তিক আন্দোলন কিনা তা বুঝে কাল লিখবো। তো আমিও এদিক সেদিক ফোন করা শুরু করলাম, ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম যে ঘটনাটা আসলে কি। এবং দেখতে পেলাম, এটা পুরোপুরি যৌক্তিক আন্দোলন, এবং এই আন্দোলন সফল না হলে জগন্নাথের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিপন্ন হবে। বিরোধী দলগুলোও এই আন্দোলনে সহায়তা করবে না, কারণ মূর্খ জনগোষ্ঠী সরকারী ও বিরোধী দল উভয়ের জন্যেই লোভনীয় পন্য, তাদেরকে ব্যবহার করে, তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গেই রাজনৈতিক নেতাদের উদরপুর্তি হবে। তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো চালাতে প্রয়োজন কিছু টেন্ডারবাজ সন্ত্রাসী-গুন্ডাপান্ডা। তারা নির্বাচনে জেতার জন্য চায় মগজহীন বুদ্ধিহীন দলীয় চাটুকার জাতির পিতা বা জাতির ঘোষকের নামে মাথা ঝাকানো প্রজন্ম। তাই তারা সাধারণ নিম্নবিত্ত ছাত্রদের এই আন্দোলনে কোনভাবেই শরীক হবে না। আর ব্লগ-ফেসবুকেও আওয়ামী জামাত শিবির বেশ সংখ্যাগুরু, তাদের একদল মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে মুখে ফেনা তুলবে, সরকারের অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনকে শিবির ট্যাগ দেবে, অন্যদিকে জামাত-বিএনপি এই আন্দোলনকে পুঁজি করে তাদের বাপদাদাদের রক্ষা করার চেষ্টা করবে। ফলাফল হিসেবে দেখা যাবে, আন্দোলনটা কোন এক পক্ষে ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। তাই আমাদেরই কিছু করতে হবে, নতুবা এই ছাত্রগুলো কাল ইসলামী মৌলবাদী জামাত শিবির বা ছাত্রলীগের গুন্ডায় পরিণত হলে তারা আমাদের গলাতেই ছুরি ধরবে।
এর পরদিন ব্লগার বন্ধু এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন একটিভিস্ট ফোরামের আরেকজন স্বমন্বয়ক পারভেজ আলম ফোন দিয়ে বললো, সেও একটা লেখা দিচ্ছে, আমি কখন দেবো সে জানতে চাইলো। আমি জানালাম এই কিছুক্ষণ পরেই দিচ্ছি। অফিসে এসে দেখলাম প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। বাল্যবন্ধু মাহবুব রশিদ, যে আমার অফিসেই চাকরি করতো, তাকে বললাম, “আমি মুখে বলতেছি কি লিখতে হবে, তুই একটু টাইপ কইরা দে। আমি মনিটরের দিকে তাকাইতে পারতেছি না।” বিড়ি খাওয়ানোর শর্তে বেটা রাজি হলো। ওকে দিয়ে কয়েক প্যারা লিখানোর পরে নিজেই টাইপ করতে বসলাম। মাথা ব্যাথা ছিল, মনিটরের সামনে বসতে পারতেছিলাম না, কষ্ট হচ্ছিল। ৪০ মিনিটে কোনরকমে লিখে পোস্ট করলাম কয়েকটা ব্লগে। ৩০ তারিখ শাহবাগের মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত বেতন আইনের(২৭/৪ ধারা) বিরুদ্ধে আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে সমাবেশের ডাক দিয়ে একটি লেখা পোস্ট করি, লেখাটি হচ্ছে, প্রসঙ্গ- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ। কিভাবে জানি আমার লেখাটা বিপুল সংখ্যকবার শেয়ার হলো, এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপেও সেটা কেউ একজন শেয়ার দিলো।
এরপরে পারভেজ আলমও লিখে ফেললো। পারভেজের লেখা দুই তিনটা ব্লগে স্টিকিও করা হলো। আমার লেখা সাধারণত স্টিকি করা হয় না, আমি তা চাইও না। কারণ আমার লেখা স্টিকি করলেই একদল ছাগু-ধর্মগাধা জিহাদী জোশ নিয়ে সবসময় ঝাঁপিয়ে পরে। বিভিন্ন ব্লগের মডারেটররা এই কারণে স্টিকি করার জন্য কোন ক্লিন ইমেজের ব্লগার চায়, যারা সবার কাছে-সব পক্ষের কাছে গ্রহনযোগ্য। কারো সাথেই যাদের খুব একটা ঝামেলা নাই, সবার ব্লগে গিয়েই যারা কথাবার্তা বলে এমন ব্লগার মডারেটরদের সবসময় প্রিয়। আমি আসলে খুব কম মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য, আর সামহোয়্যার যেইরকম ছাগু অধ্যুষিত, তাতে সেইখানে ক্লিন ইমেজ রাখা তো আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। যাইহোক, আমি এই জায়গায় শুরুতেই বাদ পরে যাই। এছাড়াও কোন ব্লগের মডারেটররাই আমাকে ঠিক পছন্দ করে না, এটাই একটা বড় কারণ।
আমরা জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন একটিভিস্ট ফোরামের সকল সদস্য আলোচনা করে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলাম এবং একটি সংহতি সমাবেশের ডাক দিলাম। সেই অনুসারে শাহবাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে সংহতি জানিয়ে একটা জনসভার আয়োজন শুরু করলাম প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সাথে।
২৮ তারিখ পোস্ট দিলাম, এরপরে আন্দোলন শুরুর পোস্ট, ৩০ তারিখে জনসভার আহবান করলাম। আয়োজনে আমাদের সাথে ছিল প্রগতিশীল ছাত্রজোট, কথা ছিল আমরা তাদের জনসভায় গিয়ে তাদের এবং জগন্নাথের ছাত্রদের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করবো। ২৯ তারিখে রাত ১১ টার দিকে আমার এক বাল্যবন্ধুকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেল। ডিবি পুলিশের কাছে আমার মোবাইলের কল রেকর্ড ছিল, তারা দীর্ঘদিন ধরেই আমার মোবাইল ট্রাক করে। তারা এর আগের মাসের শেষ কলটা ট্রাক করে, যেই কলে আমি আমার ঐ বন্ধুটিকে ফোন করেছিলাম, এবং আমার সেই বন্ধুকে মিন্টুরোডে তাদের অফিসে তুলে নিয়ে গেল। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তারা আমার নানান এঙ্গেল থেকে ছবি দেখালো, যেই ছবি গুলো তারা বিভিন্ন সময়ে গোপনে তুলেছে। তারা এটাও জানালো যে, অনলাইনে, ফেসবুক এবং ব্লগে সরকারের অর্থায়নে কিছু বিখ্যাত ব্লগার রয়েছেন, তারা নিয়মিত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী এবং সরকারের সমালোচনাকারী বিভিন্ন ব্লগারের তথ্য ডিজিএফআই ও ডিবিকে সরবরাহ করে, যার বিনিময়ে তারা মোটা অংকের টাকা নেয়। সেই সকল বিখ্যাত ব্লগার কোন চাকরি বাকরি করে না, ব্লগে ফেসবুকে সরকারের পক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অপকর্মের সাফাই গাওয়াই তাদের জীবন ধারণের উৎস। তারা আমার সেই বন্ধুকে এটাও বললো যে, ঐ সকল ব্লগার-ফেসবুক একটিভিস্ট আমার বেশ ঘনিষ্ঠ লোক, তারাই আমার বিরুদ্ধে সরকারকে তথ্য দিচ্ছে।
তারা সেই রাতে আমার সেই বন্ধুটিকে নিয়ে ১২ টার দিকে আমার বাসা এবং ৩ টার দিকে আমার অফিসে হানা দিল, কিন্তু আমার অফিসটি তারা খুঁজে পেল না। আমি রাতে অফিস করি বলে বাসাতেও তারা আমাকে পেল না। তারা সেই রাত থেকে ৩-৪ দফায় আমার বাসায় আসে, আমার পরিবারের সদস্যদের জেরা করে এবং আমাকে না পাওয়ায় তারা বেশ ক্ষিপ্ত হয়। তারা অতিস্বত্ত্বর তার পরেরদিনই আমাকে তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলে, নতুবা আমার বিরুদ্ধে মামলা দেবার হুমকি দেয়।
সেদিন সকালে আমি অফিস থেকে সরাসরি বোনের বাসায় চলে যাই, কারণ বোনের বাসা শাহবাগের থেকে খুব কাছে। যেহেতু আমাকে সকালেই জনসভায় যোগ দিতে হবে, সারারাত অফিস করে দুই তিন ঘন্টা ঘুমানোটাও জরুরী ছিল। তাই বোনের বাসাতেই গেলাম। সকালেও আমার বাসায় ডিবির একটা টিম আবারো হানা দেয়, এবং আমার বোনের বাসাতেও বারবার ফোন আসে। আমি তখন জনসভা নিয়ে চিন্তিত, ডিবি পুলিশ কেন আমাকে খোঁজে সেটা আমি একেবারেই বুঝে উঠতে পারি নি। তাই ঘুমাবার সময় আমার বোন বারবার আমাকে এই নিয়ে জিজ্ঞেস করার পরেও আমি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেই নি।
৩০ তারিখ ২:৩০ টায় শাহবাগে গিয়ে দেখলাম পুলিশ ইতিমধ্যে এখানে আসা ৩০ জন ছাত্রকে বিনাকারণে গ্রেফতার করে ফেলেছে। এই ছাত্রগুলো আমাদের জনসভাতে যোগ দিতেই এসেছিল, এবং পুরো এলাকা পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে। আমাদেরও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমরা পিছনের রাস্তা দিয়ে আজিজ মার্কেটে জমা হলাম, এবং বাকি বিল্লাহ ভাই, ফিরোজ ভাই, ফারুক ওয়াসিফ, সবুজ বাঘ, পারভেজ আলম, কল্লোল মুস্তফা, সজিব, মাহবুব রশিদ সহ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, গ্রেফতার হলেও আমাদের জনসভা সফল করতে হবে। গ্রেফতারের ভয়ে আমরা ফিরে যাবো না। আমরা পিছু হটা মানে জগন্নাথের ছাত্রদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া, এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে আমরা সকলেই গ্রেফতার হবো।
আমার ভাগিনাও সে সময়ে আমার সাথে ছিল। আমি ভাগিনাকে বললাম, “তুমি দূরে দাড়ায়ে থাকবা, আমরা গ্রেফতার হলে বা পুলিশ লাঠিচার্জ করলেই দৌড় দিবা, এবং বাসায় খবর দিবা। হাসপাতালে থাকলে বা থানায় নিয়ে গেলে ঘাবড়ানোর কিছু নাই, পিটা খাইলে দুই চারদিন বিছানায় থাকা লাগবে। কোন ব্যাপার না।”
এরপরে শাহবাগে পুলিশের বুহ্য ভেদ করে ঢুকে পরলাম, এবং ঢুকেই ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।
দাড়িয়েই আমরা একে একে শুরু করে দিলাম আগুন গরম বক্তব্য। আমরা আতংকে ছিলাম, পুলিশও বেশ মারমুখী ছিল। কিন্তু আমরা দাঁড়িয়ে যাবার সাথে সাথেই সাংবাদিকরা আমাদের ঘিরে ফেললো। তখন দেখলাম পুলিশও আর কিছু বলছে না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে। আমার মত অধমকেও বক্তব্য দিতে বলা হলো, আমি বক্তব্য দিতে একেবারেই পারি না। তাও দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হাতপা ছুড়ে চেঁচামেচি করলাম, এবং দেখালাম বেশ হাততালিও দেয়া হচ্ছে। তখন নিজেকে আসলেই নেতা নেতা মনে হচ্ছিল। এই জোশে আরো কিছু বয়ান দিয়ে ফেললাম।
এরপরে সভা শেষে আমরা শাহবাগ থানায় গেলাম আমাদের ৩০ জন ছাত্রকে মুক্ত করতে। সেখানে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করলাম, এবং পুলিশের সাথে বেশ খানিকক্ষণ বাদানুবাদ হলো। পুলিশ আমাদের দাবীর প্রেক্ষিতে জানালো, সন্ধ্যা হলেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। আমার মোবাইলে তখন ফোনের পরে ফোন আসছে, আমার কয়েকজন বোন ফোন দিয়েই যাচ্ছে, জানতে চাচ্ছে ঘটনা কি।
আমি বড়বোনের বাসায় ফিরে আসলাম। আসার পরে পুরো ঘটনা শুনলাম, যে আমার বাসায় পুলিশের অস্ত্রসহ একটা টিম ৩-৪ বার হানা দিয়েছে। তারা একটা মোবাইল নম্বরও রেখে গেছে, সেই নম্বরে ফোন দিলাম। ফোন ধরলেন এসপি রফিকুল ইসলাম। তিনি জানালেন, আগামীকাল আমাকে ডিবির মিন্টু রোডে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে হবে, অন্যথায় তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার? তারা কোন কথাই বলতে রাজি হলো না, আমি তাদের জানালাম ঠিক আছে, আগামী কাল আমি ডিবি অফিসে যাবো।
তারপরের দিন বড়বোনকে সাথে নিয়ে ডিবি অফিসে গেলাম, আগের রাতে বেশ কয়েকজনকে জানিয়ে রেখেছিলাম যে আমি ডিবি অফিসে যাচ্ছি। কোন ঝামেলা হতে পারে। কি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানি না। সন্ধ্যা ৭ টায় তাদের কার্যালয়ে গেলাম, তারা আমাকে নানা ধরণের ছবি দেখালো, নানা পোস্টের প্রিন্ট আউট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো এগুলো আমার লেখা কিনা। আমি বললাম হ্যা।
তারা আমাকে জানালো, আমার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক লেখাটি নাকি সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের নজরে এসেছে এবং তাদের কাছে লেখাটি জনস্বার্থ বিরোধী, জনগনের জানমাল নিরাপত্তার জন্য হুমকীস্বরুপ বলে মনে হয়েছে। এবং লেখাটি খুব সহজেই তরুন ছাত্র সমাজকে উষ্কানী দিয়ে যে কোন নাশকতামূলক কাজ করিয়ে নিতে সমর্থ বলেও তারা মনে করছেন। এই সুত্রে গোয়েন্দা বিভাগে একটি প্রতিবেদন পেশ হয়, যতদুর মনে পরে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনটা ছিল এরকমঃ
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে যার সদস্য সংখ্যা ৩৪৭ জন, সামহোয়্যারইনব্লগ সাইটের একটি ব্লগ পোস্ট দেখা যাচ্ছে, যে পোস্টটি ছেপেছেন জনৈক আসিফ মহিউদ্দীন, ফোনঃ *****, ই-মেইলঃ****, ঠিকানাঃ যাত্রাবাড়ী।
লেখাটিতে পুলিশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, ঐ আন্দোলনকে বেগবান করার মত যথেষ্ট উপকরণ লেখাটিতে রয়েছে। লেখাটি উত্তেজক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে লেখাটি বিভিন্ন ধরণের নাশকতামূলককাজে উষ্কে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনগনের জানমাল নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরুপ উক্ত লেখাটির লেখককে তদন্তের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, এবং উক্ত লেখক কি স্বার্থে কোন কোন মহলের হয়ে সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এধরণের লেখা লিখছেন, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।”
তখন লক্ষ্য করলাম রফিকুল ইসলাম সাহেবের এই পিসিতে বাংলা ফন্ট নেই, আমি তাকে বললাম আমি ফন্ট ইন্সটল করে দিতে পারি। সে তার চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল, আমি দীর্ঘক্ষণ তার চেয়ারে বসে ফন্ট ইন্সটল করে দিলাম। উল্লেখ্য, তার নেটের স্পীড খুব ভাল ছিল।
তারা আমার ব্লগে ঢুকলো, আমার ফেসবুকের ওয়াল চেক করতে লাগলো। চেক করতে করতে নানা স্ট্যাটাসের প্রিন্টআউট নেয়া শুরু হলো, এবং আমার ব্লগ পোস্টের প্রিন্ট আউট নিয়ে বিভিন্ন কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করা শুরু হলো।
তখন বুঝে গেছি, মূল বিষয় হচ্ছে জগন্নাথের ছাত্র আন্দোলন। তারা বিশেষভাবে এই পোস্টটাই নিয়েই বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। জগন্নাথের ছাত্ররা তার ক’দিন আগে এক এমপির গাড়ি আটকেছিল, তাই সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশ এসেছে, যারাই এই আন্দোলনের মূলে আছে, তাদের ধরে চালান করতে, তাদের টাইট দিতে। এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম সাহেব আমার বেশ কয়েকটা নাস্তিক্যবাদী পোস্ট পড়া শুরু করে দিলেন, এবং আমাকে নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন।
আমার কয়েকটা পোস্ট দেখে চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞেস করলেন,
-আপনি নামাজ পড়েন?
-জ্বীনা, আমি নামাজ পড়ি না।
-নামাজ রোজা কিছুই করেন না?
-জ্বীনা, ঐসব কিছুই করি না।
-আপনি কি নাস্তিক?
-জ্বী, আমি একজন নাস্তিক।
-আপনি নাস্তিক কেন?
-আমি ধর্মে বিশ্বাসী নই, এবং ঈশ্বর আছে এমন কোন প্রমাণও পাই নি। এই কারনে।
-কিন্তু আপনি নাস্তিক ভাল কথা, সেগুলো আপনি প্রচার করছেন কেন?
-একজন ধার্মিকের যদি অধিকার থাকে তার ধর্মের প্রচারের, তার বিশ্বাসের প্রচারের, একজন নাস্তিকেরও অধিকার থাকা উচিত তার অবিশ্বাসের প্রচারের। এবং ধর্মের যুক্তিহীনতা তুলে ধরার।
-কিন্তু এটা কি আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না?
-আমাদের রাষ্ট্র তো কোন ধর্মের অনুসারী না, তাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিভাবে যাচ্ছে?
-কিন্তু আপনি তো সংখ্যাগুরু মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দিতে পারেন না।
-সংখ্যাগুরু মানুষ যদি বিশ্বাস করে “জন্মনিয়ন্ত্রন খুব খারাপ কাজ” এবং এই বিশ্বাসে যদি তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমার অধিকার আছে তাদের বিশ্বাসে আঘাত করে তাদের সামনে আমার যুক্তি তুলে ধরবার। সংখ্যাগুরু হলেই কারো কথা সত্য হবে এমন না, গ্যালিলিওর সময়ে সংখ্যাগুরু মানুষ যা ভাবতো, সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইতিহাসে এমন নজির প্রচুর। সর্বত্রই যুক্তির জয় হয়েছে।
-কিন্তু জীবন তো যুক্তি দিয়ে চলে না।
-তাহলে কি জীবন ধর্ম বা বিশ্বাস দিয়ে চলে? আপনি সুরা কালাম পরে চোর ধরতে পারবেন?
-দেখেন আপনার সাথে আমি তর্ক করতে চাচ্ছি না, কিন্তু আপনাদের এই নাস্তিকতা সমাজের জন্য কি সুফল এনে দেবে?
-মানুষ যত যুক্তিবাদী হবে, তত কম ঠকবে। রাজনৈতিক দলগুলো মানুষকে অশিক্ষিত করে রাখতে চায়, আজীবন তাদের ব্যবসা চালাবার জন্য। ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষকে অন্ধকারে রাখতে চায়, তাদের লুটবার জন্য। আমরা সকল মানূষের সমান অধিকারের কথা বলি, মানবতার কথা বলি। এটাই সুফল। এটা একদিনে আসবে না, তবে সংগ্রাম করতে হবে।
-আপনাদের এই নাস্তিকতার সাথে ব্লগে কে কে জড়িত আছে?
-নাস্তিক্যবাদী মুক্তমনা ব্লগিং এর সাথে বহু মানুষ জড়িত আছে। নাস্তিকের ধর্মকথা, অভিজিৎ রায়, আমি আসিফ মহিউদ্দীন, এরা হচ্ছি এই দিকে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও শত শত মুক্তমনা ইতিমধ্যে কাজ করছেন, এবং আমরা সকল ধর্মীয় প্রপাগান্ডার জবাব দিয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি।
– কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কি কি যুদ্ধ করেছেন এই পর্যন্ত শুনি?
– নানা ধরণের যুদ্ধ হয়েছে। যেমন ধরুন নীল আর্মস্ট্রং মুসলিম হয়েছেন বলে একটা প্রপাগান্ডা আছে, আবার চাঁদে আজান শোনা গেছে বলে দাবী করা হয়। চাঁদ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে বলেও দাবী করা হয়। আমরা দেখিয়েছি এসবই মিথ্যা। আবার ধরেন মাঝে মাঝে মাংশের ভেতরে আল্লাহু লেখা পাওয়া যায়, আমরা বলছি এগুলো ধাপ্পাবাজি। ধর্মব্যবসা।
– আপনি প্রমাণ করতে পারবেন এগুলো মিথ্যা?
-অবশ্যই পারবো। (এরপরে আমি দীর্ঘ সময় নিয়ে চাঁদে আজান শোনার অপযুক্তিগুলো তাকে বোঝালাম, সেগুলো কেন ভুল তা ব্যাখ্যা করলাম।)
– ঠিক আছে, কিন্তু আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত হলেন কেন? আপনি তো ওখানকার ছাত্র না।
– কোন যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে জড়িত হতে হলে তার ছাত্র হতে হয় না। এই আন্দোলনের সুফল সবাই পাবে।
– কিন্তু আপনি যে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত হয়ে গেছেন সেটা বুঝতে পারছেন?
– এটা খুব বেশি হলে সরকার বিরোধী কাজ, কোনভাবেই রাষ্ট্রবিরোধী নয়।
-আপনি আমাকে কোনটা রাষ্ট্রবিরোধী কোনটা সরকার বিরোধী এই জ্ঞান দেবেন?
– আপনাকে জ্ঞান দিচ্ছি না, তবে এটা আপনার জানা থাকার কথা।
– আপনাদের এই আন্দোলন যৌক্তিক, আমি নিজেও জানি ছাত্রদের বেতন এত বাড়ালে ছাত্ররা পড়তে পারবে না। তবে রাষ্ট্র কিন্তু দেখবে না আপনি যৌক্তিক আন্দোলন করছেন নাকি অযৌক্তিক। রাষ্ট্র দেখবে আপনি তার পক্ষে নাকি বিপক্ষে। পক্ষে থাকার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
– সেরকম হলে আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই থাকবো।
-আপনি জানেন আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেয়া সম্ভব?
– সেটা দিতে চাইলে দিতেই পারেন, কিন্তু আগেও বলেছি আবারো বলছি, সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরোধীতা আর রাষ্ট্র বিরোধীতা এক নয়।
এই সময়ে আমার বড় বোন সেই অফিসারের কাছে কাকুতি মিনতি শুরু করে, এবং বলতে শুরু করে আমি যা করেছি ভুল করেছি। আমি আর এই ধরনের কোন কাজ করবো না। সেই অফিসার আমার বোনকে বলে, এই কথাগুলো লিখিতভাবে দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেবে, নতুবা আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেয়া হবে। সেই মামলায় আমার নাস্তিক্যবাদী পোস্টগুলো এড করে আমাকে নাজেহাল করা হবে।
আমি তখন আমার বোনকে বললাম, আমার কোন কাজই অযৌক্তিক ছিল না, কোন অপরাধ ছিল না। পুলিশ যা করার করতে পারে, তারা তাদের মত চলুক। তাদের নির্দেশে আমি কখনই আমার লেখা বন্ধ করবো না।
তখন পুলিশ আমার কাছ থেকে একটা মুচলেকা নেবার চেষ্টা করে, আমাকে বলে যে আমি আর কোনদিন ব্লগে ফেসবুক লিখবো না, এইটা লিখে দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দেবে। নতুবা জামিন অযোগ্য রাষ্ট্রবিরোধী মামলার ভয় দেখানো শুরু করে, এবং আমাকে ওদের রিমান্ড রুমের পাশে বসিয়ে রাখে। রিমান্ড রুমের পাশে বসে একটা কাজ সেড়ে ফেলেছিলাম, বাকি ভাই, মাহবুব রশিদ, পারভেজ আলম সহ কয়েকজনকে মেসেজ দিয়ে দিয়েছিলাম। তারা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতেই থাকে, এবং আমারো একটু ঘাড় তেড়া টাইপ স্বভাবের কারণে আমি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি এবং জানাই, আমার বাকস্বাধীনতা রয়েছে যে কোন বিষয়ে স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশের।তখন আমার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আমাকে “বাস্তবতা না বুঝে নীতি নৈতিকতার দুনিয়ার বাস করি” বলে ভৎসনা করে।
রিমান্ড রুমে এক এক জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, এবং সে বের হচ্ছিল অজ্ঞান হয়ে। ভিতরে প্রচন্ড মারধোরের চিৎকার। আমার বোনকে তখন চলে যেতে বলা হয়েছে। দুলাভাই এসে আমার বোনকে নিয়ে গেছে। পরে দেখলাম আমার বোন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের রুমের পাশে বসে আছে, তার কাছে তদবির করতে গেছে। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের নির্দেশেই আমার উপরে এই নির্যাতনগুলো হচ্ছিল বলেই মনে হলো। তখন রফিকুল ইসলাম আমার বোনকে ধমক দিয়ে ডিবি অফিস থেকে চলে যেতে বাধ্য করলেন। এরপরে আবারো শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ, তবে তখন রফিকুল ইসলামের চেহারা পুরাই পালটে গেছে। এতক্ষণ সে আপনি করেই বলছিল, আমার বোন যাবার পরেই সে তুমি বলা শুরু করলো এবং কথায় কথায় আমাকে শাসানো শুরু করেছিল।
এরপরে আমাকে চোঁখ বেধে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হলো। রফিকুল ইসলাম তখন বাসায় চলে যাবেন, তিনি দায়িত্ব দিয়ে গেলেন ঐ অফিসে আসা ডিজিএফআই সদস্যদের, যাদের একজনার নাম পরে জেনেছিলাম, সে ছিল ডিবি ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন। তাদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন এইভাবেঃ
“এই যে আপনাদের আসিফ মহিউদ্দীন, জগন্নাথের আন্দোলনকারী এবং জনসভার আয়োজকদের একজন। আর ইনি একজন স্বঘোষিত নাস্তিক, সুতরাং সেইভাবেই আদর আপ্যায়ন করবেন”
ডিজিএফ আই সদস্যরা আমার চোখ বাধলো। এবং ভিডিও ক্যামেরা এনে পুরো জিজ্ঞাসাবাদ ভিডিও করলো। চোখ বাধা অবস্থায় আমি ভাবছিলাম মারধোর করবে, তাই শক্ত হয়েই বসে ছিলাম। সেখানে বসে বসে মনে নানা ভাবের উভয় হচ্ছিল। আহারে, এখন পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে ভালকরে প্রেম করতে পারলাম না। ভাবছিলাম মেরে টেরে ফেললে কি হবে, কে কে কান্নাকাটি করবে? ব্লগে ফেসবুকে বা অন্যান্য বন্ধুরা জানবে তো? জানলেও তারা কয়দিন মনে রাখবে? আমার মৃত্যু সংবাদে কয়জন এসে লাইক দিয়ে একটু পরে ভুলে যাবে। জগন্নাথের ছাত্ররা জানবে তো? জানলেও ক’দিন মনে রাখবে? কয়েকদিন একটু হৈচৈ হবে, এরপরে সবাই ভুলে যাবে। খুব হতাশ লাগছিল। নিজের গ্যাটের পয়সা খরচ করে, সারারাত অফিসে করে রক্ত পানি করা টাকা দিয়ে ব্যানার বানাও, জনসভা করো, আন্দোলন করো, আবার পুলিশের হাতে মার খাও। এরপরে তারা মেরে লাশ গুম করে দিলে কে খুঁজে বের করবে?
ডিজিএফআই এর সদস্যরা আমাকে দেড়-দুই ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের জিজ্ঞাসা ছিল প্রধানত বিভিন্ন আন্দোলনে আমি ঘরের খেয়ে বনের মোষ কেন তাড়াচ্ছি, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও কেন তাদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিজের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছি, এই রাষ্ট্রবিরোধী কাজের জন্য আমি অর্থনৈতিক ভাবে কিভাবে লাভবান হয়েছি, এত বড় এবং লম্বা লেখা আমি কোন ধরণের আর্থিক সুবিধা ছাড়া কেন লিখলাম সেটা, পত্রিকায় লিখলে টাকা পাওয়া যায়-ব্লগে বিনাপয়সায় মানুষ এত কঠিন কঠিন লেখা কেন লিখবে সেটা নিয়ে তাদের বেশ আশ্চর্য বলে মনে হচ্ছিল। এছাড়াও আমি নাস্তিক কিনা, আমি শুকর খাই কিনা, নামাজ রোজা কেন করি না, ধর্মবিরোধী লেখা কেন লিখি, ইত্যাদি।
আমি নাস্তিক কিভাবে হলাম, মদ খাই কিনা, নাস্তিক হয়ে আমি কি সুফল পাচ্ছি, জগন্নাথের ছাত্রদের আমি কিভাবে চিনি। তাদের নাম কি? আন্দোলনের সাথে কারা কারা জড়িত? অনলাইনে সরকারের হয়ে দালালী করা বিখ্যাত ব্লগারদের(নাম বলছি না) সম্পর্কে আমার মতামত কি? তাদের সাথে আমি কেন যোগ দিচ্ছি না?
এরপরে তারা দীর্ঘ সময় নিয়ে আমার ভিডিও করলো। তখন আমার অবস্থা আসলেই খারাপ ছিল, আমি ভয় পাচ্ছিলাম। আমি বললাম, আমি নিজেও ছাত্রজীবনে অনেক কষ্ট করেছি। সেমিস্টার ফি না দিতে পারা, এবং সেই নিয়ে তৈরি হওয়া হতাশা যে কতটা কষ্ট দেয়, আমি সেটা জানি। এবং জানি বলেই এই আন্দোলন আমারো সংগ্রাম। এই আন্দোলন সফল হলে মনে হবে নিজেই জিতে গেছি।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা আমাকে পাশের চেয়ারে বসে থাকতে বললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এবারে কি বাসায় যেতে পারি? তখন রাত ৩ টার মত বাজে হয়তো। তারা আমাকে বললেন, এখন তো বাসায় যাবেই না, কখনই যাবে কিনা সেটা আমরা সকালে সিদ্ধান্ত নেবো। আর তোমাকে কি কি আপ্যায়ন করা হবে সেটাও ঠিক করবো।
এরপরে আমাকে হ্যান্ডক্রাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাকে যে নিয়ে গেল, তাকে নির্দেশ দেয়া হলো, সারারাত যেন আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়, এবং আমি যেন আমার চোখের পাতা এক করতে না পারি। এছাড়াও কোন খাবার বা পানিও যেন দেয়া না হয়।
আমাকে হাজতের পাশের রুমে নিয়ে গেল, সেখানে কোন চেয়ার খালি ছিল না। আমাকে বসানো হলো আলমারীর পাশে একটা ছালার উপরে। সেই ছালায় এতই দুর্গন্ধ ছিল যে, আমার বমি চলে আসছিল। আমি তখন বললাম, আমাকে তো চেয়ারে বসাতে বলা হয়েছিল, এইখানে আমি বসবো কেন? আমি তো পলিটিক্যালী আটক, পলিটিক্যাল আটকের নিয়মানুসারে আমাকে তো আপনারা এইভাবে নোংরা ছালার উপরে বসাতে পারেন না।
তারা আমাকে বেশ গালাগালি করলো, এবং বললো, তোর জন্য কি রাজ সিংহাসন আনা লাগবে নাকি?
আমি আর কোন উপায় না দেখে সেখানেই বসলাম। আমার পাশেই শুয়ে ছিল খুব সম্ভবত একজন সামাজিক প্রতিবন্ধী, যিনি তার পা দুট খুব অশ্লীলভাবে রেখে শুয়েছিলেন। তার গা থেকে বিকট গন্ধও আসছিল।
সেই সময়টা সময় যেন থমকে গিয়েছিল। আমি একটু হেলান দিতে পারছিলাম না, একটু চোখ বন্ধ করতে পারছিলাম না। সিগারেট খাবার জন্য বুকটা খা খা করছে, বিকট গন্ধে বমি আসছে। খুবই বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। সময় যেন আগাচ্ছে না, মোবাইলটাও জব্দ করা হয়েছে। মোবাইলটা থাকলেও একটু ফেসবুকে ঢুকে সময় পার করা যেত। কিন্তু এক একটা সেকেন্ডই তখন এক এক বছর মনে হচ্ছে। ঘড়িতে সময় আর আগায় না। কখন সকাল হবে, কখন সকাল হবে, সেই প্রতীক্ষা।
এর মধ্যে এক মামাকে ভাও করার চেষ্টায় ছিলাম,তাকে অনুরোধ জানালাম একটা সিগারেট খাবার ব্যবস্থা করে দিতে। সে ৫০ টাকা চাইলো। আমি প্রথমে ভাবলাম এই ধরণের দুর্নীতি করা ঠিক হবে না, পরে আর নিজেকে দমাতে পারছিলাম না, ৫০ টাকা দিলাম তাকে। সে আমার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে পাশের রুমে নিয়ে গেল, সেখানে লুকিয়ে লুকিয়ে একটা বিড়ি টানলাম।
এরপরে আবার প্রতীক্ষার পালা, রাত শেষ হয় না শেষ হয় না। সেটাই ছিল আমার জীবনের সবচাইতে বড় রাত। ৪-৫-৬-৭-৮টা বাজলো, তখন আমাকে একটু খিচুরী দাওয়া হলো।
আমি বসে ছিলাম হাজতের একদম পাশেই, হাজতের ঠিক বাইরে। হাজতের কয়েকজনার সাথে ইশারায় কথাবার্তাও বললাম। সকাল ৯ টার দিকে হাজতের ভিতরে শুরু হলো ইসলামী অনুষ্ঠান, একজন ধর্ষন মামলার আসামী সুললীত কন্ঠে ইসলামী জলসা এবং আলোচনা সভা শুরু করলেন। আমি এই সময়টুকু বেশ মজা পেতে শুরু করলাম, কারণ ইসলামী বক্তা একদম সাইদীর মতই কথা বলছিল। একবার কর্তব্যরত পুলিশ এসে ধমক দেবার চেষ্টা করে, কিন্তু সব কয়েদী তখন চিল্লাপাল্লা শুরু করে, তারা বলে এটা তো ধর্মীয় আলোচনা, এই আলোচনায় কেন পুলিশ বাধা দিচ্ছে। পরে দেখলাম দুইজন পুলিশও বসে আলোচনা শোনা শুরু করলো। মনে মনে ভাবছিলাম, আমাকে হাজতে ঢুকতে দিলে এতক্ষণে ফাটাইয়া ইসলামী বয়ান দিতে পারতাম।
এরকিছুক্ষণ পরে আমাকে হাজতের বাথরুমে যেতে দেয়া হলো। সেখানে এক কয়েদী আমাকে জানালো, কোন সমস্যা হলে তাকে জানাতে। তার হাতে নাকি ভাল উকিল আছে। আমি আবারো আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম।
১০ টার দিকে আমাকে হাজতে ঢোকানো হলো। হাজতে বেশ কয়েকজনার সাথে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা হলো, তাদের ভেতরে একজন ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী আমাকে জানালো যে, সে দুইদিন আগে আমাকে শাহবাগে ভাষণ দিতে দেখেছে। আমাকে তারা বেশ বড় কোন নেতাই মনে হয় ভেবে নিয়েছিল, এবং আমাকে সিগারেটও খাওয়ালো বাথরুমে নিয়ে। বেশ একটা পরিবার পরিবার ভাব। আমার সেই সময়টুকু বেশ ভালই লাগছিল। কয়েদী কয়েদী ভাই ভাই, একজন খুনী একজন ধর্ষক একজন ইয়াবা ফেন্সী ব্যবসায়ী, সকলেই কেমন ঘনিষ্ট বন্ধুর মত।
সেই সময় দেখলাম একজন লোক এসে আসিফ নামে কাউকে খুঁজছে। আমি হাজতের শিকের সামনে আসলাম, দেখি সে মিটিমিটি হাসছে। সে আমাকে বললো, তাকে অনুলেখা নামের একজন পাঠিয়েছে, এটা দেখতে যে আমি আসলেই হাজতে আছি নাকি। পরে জেনেছিলাম এই ছেলেটাকে অমি রহমান পিয়াল মামা এবং সুশান্ত দা পাঠিয়েছিল খবর নিতে। সেই সময়ে এই রকম কাউকে দেখাটাও একটু বাড়তি সাহস জুগিয়েছিল।
ছেলেটা জানালো, ঐদিক থেকে কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ এই আটক বেশ উপর মহলের নির্দেশেই হয়েছে। মামলা দিলে বা আইনগতভাবে গ্রেফতার করলে বা কোর্টে চালান করে দিলে একটা ব্যবস্থা হবে হয়তো। কিন্তু ডিবি পুলিশ নাকি স্বীকারই করছে না যে আমি হাজতে আছি। এইটা খুবই রিস্কি ব্যাপার, কারণ আমাকে মেরে লাশ গুম করে দিলেও কোন প্রমাণ থাকবে না।
দুপুর ১টার দিকে পুনরায় আমাকে ডিবির অফিসে নিয়ে আসা হলো। রফিকুল ইসলামের সাথে দীর্ঘ বাহাস শুরু হলো। তার কম্পিউটারে কি কি সমস্যা ছিল, তার অনুরোধে সেগুলোও ঠিক করে দিলাম। বিনিময়ে সে আমাকে একগ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়ালো। তখন সে আমাকে নানা ধরণের উপদেশ দেয়া শুরু করেছিল। যেমন এই সব বিপ্লবী কাজ কাম ছেড়ে আমি যেন বিয়ে শাদী করি, ঘর সংসার করি। এই সব বিপ্লব করে কিছুই হয় না, তারাও নাকি এক সময় খুব বিপ্লব করেছে। এখন বুঝতে পেরেছে নিজে বাঁচলেই হয়, ফকিন্নীর বাচ্চারা মরলেই কি আর বাচলেই কি। আমি যথারীতি তার উপদেশ প্রত্যাখ্যান করতে লাগলাম, এবং বললাম, আমার জীবন দর্শন ভিন্ন রকম।
এরপরে আমার বোনকে ফোন করে আসতে বলা হলো। আমার বোন গেটের কাছেই সকাল থেকে বসে ছিল, আমার অন্যান্য বোনরাও সারারাত ঘুমায় নাই। তখন রফিকুল ইসলাম সাহেব চলে গেলেন, এবং অন্য একজন লোককে দাআয়িত্ব দিয়ে গেলেন। সে এসে আবার আগের মতই আমার লিখালিখি বন্ধের মুচলেখার জন্য চাপাচাপি শুরু করলেন। আমি আবারো তা প্রত্যাখ্যান করলাম। এবং বুঝতে পারলাম, আজকে রাতেও হাজতেই থাকা লাগবে। আমার পকেটে তখন ২৩০ টাকা।
তখন আমার বোন এসে কান্নাকাটি শুরু করে, এবং আমাকে মুচলেকা দেয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। সে নানা কথা বলে আমাকে ইমোশন্যাল ব্লাকমেইল করতে থাকে, তখন বাধ্য হই একটা মুচলেকা দেবার। মুচলেকাটা অবশ্য একটু কৌশলে লিখলাম; লিখলাম যে, আমি আর ফেসবুক স্ট্যাটাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত বেতনের বিরুদ্ধে জনসভা ডাকবো না। (মনে মনে ভাবলাম, স্ট্যাটাসে না ডাকলেও ব্লগে ডাকা বিষয়ে মুচলেকায় কিছু বলা নেই, বা ফেসবুক নোটের মাধ্যমেও জনসভা আহবান করতে বাধা নেই।)
ডিবি অফিস থেকে বাইরে বের হয়েই বাধন স্বপ্নকথকের ফোন, একটু পরেই জানার ফোন পেলাম। তাদের জানালাম ঠিক আছি। এরপরে পারভেজ আলম, মাহবুব রশিদকে জানালাম, তারপরে বাকী ভাইকেও জানালাম। তখন শুনলাম আমার মুক্তির জন্য নাকি শাহবাগে জনসভার আয়োজন হয়েছে, সেখানে আনু মুহাম্মদ স্যার সহ নানান গুরুত্বপুর্ণ ব্যাক্তি আসবেন। আমিও সেখানে যাবো কিনা জিজ্ঞেস করলো। আমার শরীর তখন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, আমি জানালাম আমি যেতে পারছি না।
বোনের গাড়িতে উঠেই বললাম আমাকে এক জায়গায় নামিয়ে দাও, আমার বিড়ি খাওয়া লাগবে। বোনরা অনুমতি দিল, তখন বোনদের সামনেই ধুমাইয়া বিড়ি টানা স্টার্ট করলাম।
বাসায় আসলাম, ফোনের পর ফোন, পিঠে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, শাহবাগে জনসভা চলছে, ফারুক ওয়াসিফ ভাই সেখানে জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছেন।
বিবিসি-প্রথম আলো সহ অনেক পত্রিকা থেকে লাগাতার ফোন আসতে লাগলো। প্রথম আলো যথারীতি মেজাজ খারাপ করলো, তাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল তারা আমার ইন্টারভিউ নিয়ে আমার চোদ্দ গুষ্ঠী উদ্ধা করছেন। তাদের ফোন রেখে দিলাম। এরপরে আরিফুর রহমান ফোন করলেন। আরিফুর রহমান, সামহোয়্যারে যার ব্যান তুলে নেয়ার জন্য দিনের পর দিন তদবির করেছি, তিনি ফোন দিয়েই বলতে শুরু করলেন, আমি কেন এইসব মিথ্যা কথাবার্তা ছড়াচ্ছি।
আমি তো আশ্চর্য, আমি বললাম, আমি মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছি কিভাবে?
সে বললো, তোমারে আসলে কোন পুলিশেই ধরে নাই, আজাইরা চাপা পিটাইয়ো না। সত্যি কথা বলো, কই পলাইয়া ছিলা?
আমি বললাম, পলাইয়া থাকবো মানে? পলাইয়া থেকে আমার কি লাভ?
সে বললো, তুমি সরকারের বিরুদ্ধে লেখা লেখি করতেছো, এই নিয়া গ্রেফতারের চাপাবাজি কইরা নিজে হিরো হবার ধান্ধায় আছো।
-আপনি যদি তা মনে করেন, তাইলে কিছু করার নাই। আপনের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস দিয়া আমার কিছুই যায় আসে না।
– সবাইরে রাইখা তোমারেই কেন ধরবে? তুমি এমন কি নেতা হইছো?
-আমারে কেন ধরলো, এই প্রশ্নের উত্তর তো পুলিশ দিতে পারবে, আমি কিভাবে দেবো?
– সরকারের বিরুদ্ধে লিখবা, আর পুলিশে হাড্ডি ভাংবো না, এইটা কিভাবে আশা করো? পুলিশ ঠিকই করছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার দরকার টা কি? এখন আওয়ামী লীগরে সাপোর্ট দেয়া উচিত।
-আওয়ামী লীগ অন্যায় করলেও সাপর্ট দিতে হবে?
-তুমি তো ছাগুদের মত কথা বলতেছো, ত্রিভুজরাও এই কথা বলে।
-ত্রিভুজ না বালভুজ এই কথা বলুক, তা দিয়া আমার কি?সরকার বিনা কারণে গ্রেফতার করবে, তার বিরুদ্ধে কথা বললেই বলবেন ত্রিভুজের মত কথা বলতেছি।
-তুমি ছাগুদের ভাষায় কথা বইলো না আসিফ, এই সরকারের বিরুদ্ধে একমাত্র ছাগুরাই চেতা।
-দেখেন, আপনার দৃষ্টিতে আমি কি তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। আপনি আমারে ছাগু বলেন না কি বলেন, সেইটার কোন গুরুত্ব আমার কাছে নাই।
পরে বেশ বিরক্ত হয়ে তার ফোন রেখে দিলাম। এই লোকটার বিরুদ্ধে যখনই সামহয়্যারে লেখালেখি হয়েছে, তাকে উদ্ধারের জন্য নিজের আইডি বাজি রেখে লড়াই করেছি, তার পক্ষে কথা বলেছি। কিন্তু লোকটা টিপিক্যাল আওয়ামী চামচামী থেকে বের হতে পারলো না। এরপর থেকে এই লোক সম্পর্কে আর কোন আগ্রহ অবশিষ্ট রইলো না।
সেইদিন রাতে মাহবুব বোনের বাসার সামনে আসলো, সেখানে একসাথে চা বিড়ি খেলাম আর আড্ডা দিলাম। কয়েকদিন খুবই ভয়ে ভয়ে ছিলাম, বিডিনিউজ২৪ এ আমার সাক্ষাৎকার] ছাপা হবার পরে এবং ডয়েচ ভেলে রেডিওতে আমার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হবার পরে ঐ পুলিশ অফিসার বেশ কয়েকবার হুমকিও দিয়েছিল। যাইহোক, এই হচ্ছে সেই সময়ের ঘটনা।
এই পুরো ঘটনার অনলাইনে একটা বিশাল নাড়া পরে গিয়েছিল তা পরে টের পেয়েছিলাম। আমি কৃতজ্ঞ সেই সব মানুষদের কাছে, যারা বিভিন্ন ভাবে আমার পাশে ছিলেন। ব্লগ-ফেসবুকের কিছু চিহ্নিত ছাগু ছাড়া সকলেই সেই সময় আমার পক্ষে ব্যাপক লড়াই করেছেন, সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তাদের এই ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা আমার নাই। তারপরেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
কারো নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না, কারণ কারো নাম উল্লেখ করা হলে যারা অন্যভাবে বা পরিচয় গোপন করে সমর্থন দিয়েছেন, তাদের গৌন করা হবে। কিন্তু আমি সকল অনলাইন একটিভিস্টের কাছেই কৃতজ্ঞ, তাদের সারারাতের বিপ্লবই আমাকে বাইরে বের করে নিয়ে এসেছে।
তাই এটাই শেষ নয়, এখনই বিয়ে করে ঘর সংসার করে পরিবর্তনের ইচ্ছাকে কবর দিচ্ছি না, লড়াই চলবেই। হয়তো আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের ক্ষুদ্র লড়াইতে কোন পরিবর্তনই হবে না, তবে আমাকে দেখে আরো কয়েকজন লড়াই শুরু করবে, এভাবেই পাহাড়ে একটা নুড়িও ধ্বস নামাতে পারে।
আমার জন্য একটি পোস্টার বানানো হয়েছিলঃ
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। মানুষের জয় হোক।
প্রাসঙ্গিক পোস্ট সমুহঃ
■ আসিফ মহিউদ্দীনের আটকঃ বাক-স্বাধীনতার পক্ষে গনজোয়ার।
■ একটি খবরঃ এনএসআই কর্মকর্তাদের প্রহারে গুরুতর আহত ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা
বিঃদ্রঃ দীর্ঘ লেখা ক্লান্তিকর, এরপরে আবার কিছু মনে পরলে এডিট করে যোগ করে দেবো। এই লেখাটা মুক্তমনায় দেবো বলে কথা দিয়েছিলাম, কথা রাখলাম। প্রচুর বানান ভুল দেখতে পাচ্ছি, এখন আর সেগুলো ঠিক করার মত ধৈর্য নেই। পরে সময় বের করে সব বানান ঠিক করবো। চোখের উপরে অত্যাচার চালাবার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
পাঠকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগে পোস্টটি নীড়পাতা হতে সরিয়ে নেয়া হলো। এছাড়া মন্তব্য অংশেও ব্যক্তিগত কলহ পরিহার করার জন্য মন্তব্যের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলো।
মুক্তমনা নীতিমালা:
লেখাটার বিভাগ মানবতাবাদী কর্মকাণ্ড দেখে পড়া শুরু করলাম কিন্তু পুরোটা পড়ে হতাশ হলাম । আমি কেবল মুক্তমনাতেই ঢুকি এবং মুক্তমনায় আমি এরকম ব্যাক্তিগত ঘটনা জানার আশায় আসিনা । মুক্তমনায় আপনার আগের লেখাটা ভালো ছিল , এই লেখাটা পছন্দ হলনা । আর কমেন্টে ব্যাক্তিগত কাদা ছোঁড়াছুড়ি দেখতে খুব দৃষ্টিকটু লাগছে । আশা করি পরবর্তীতে আবার ভালো কোন লেখা দিবেন । 🙂
প্রতিবাদ করার অধিকার সবার ই আছে। পুলিশ ই হোক আর ঠোলা ই হোক কেউ ই এইভাবে বাধা দিতে পারে না। সহমর্মিতা জানালাম। তবে পোস্ট টা তে ব্যাক্তিগত গুনগান একটু বেশি এ হয়ে গেছে। নজর রাখবেন। (C)
এধরণের পোস্টে সাধারণত কোন গঠণমূলক ও শিক্ষণীয় আলোচনা হয় না, হয় ইগোর লড়াই আর লেগ পুলিং; আর সাক্ষ্যপ্রমাণের অনুপস্থিতিতে পোস্টের দাবিগুলা যাচাই করারও কোন অবকাশ নেই। মানুষের অহমের দানবীয় ক্ষুধাকে পরিতুষ্ঠ করার জন্য ফেসবুকের মত অনন্যসাধারণ মাধ্যম থাকতে এই পোস্ট মুক্তমনার নীড়পাতায় ঝুলে থাকার কোন কারণ দেখি না। মডারেটরদেরকে পোস্টটি লেখকের ব্যক্তিগত ব্লগে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
সমর্থন জানিয়ে গেলাম। (Y)
ব্যাপারটাকে কি আরেকটু সরলভাবেও দেখা যেতে পারেনা? একজন অন্যায়ভাবে জেলে গিয়ে রাত পার করে আসলো, নির্যাতনের শিকার হলো; অতপর মুক্ত হয়ে দুর্ভাগ্যবশত তার মনে যদি এমন একটা খায়েশ জেগেও যায় যে আমার অভিজ্ঞতার গল্প আমি মানুষকে বলি, অভিজ্ঞতাটা ভাগাভাগি করি- কি এমন কবিরা উনাহ হয়ে যায় তাতে, আমি ভেবে বের করতে অপারগ। আমি মনে করি ব্যাপারটাকে মানুষের অহমের দানবীয় ক্ষুধাকে পরিতুষ্ঠ করার প্রয়াসের চেয়ে নিছকই একটা গল্প বলার প্রয়াস হিসেবে দেখাটাই বেশী সমিচীন।
আর সামান্য শিক্ষণীয় কিছু জিনিষও কিন্তু রয়েছে :-)। ভবিষ্যতে কারও যদি প্রটাগ্নিস্ট হবার ইচ্ছা থাকে সে জানতে পারবে জেলে রাত পার করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। সায়েন্স নিয়ে কিছু লিখলে ফারুকের মতো গোবরঠাঁসা গরু-ছাগলেরা তাদের লেগে পুল খেয়ে যায়; মানুষের এইসব সিলি পেটি লেগপুলিং কি এতোটাই ধর্তব্য?
@আল্লাচালাইনা, পোস্টে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে আলোচনা থাকলে বুঝতাম, কিন্তু
এগুলা আনভেরিফায়েবল স্টেটমেন্ট। তার চেয়েও বড় কথা, এই অংশগুলা আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সময় কোন ব্লগপোস্টেই পাই নাই, এগুলা সাম্প্রতিক কালে লেখকের সাথে উক্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত গোলযোগের সূত্র ধরে উনার বর্তমান স্মৃতিচারণে ঢুকে পড়েছে। আরিফুর রহমানের সাথে আসিফ মহিউদ্দিনের ফোনে কি আলাপ হয়েছে, এটা একমাত্র এই দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই জানেন না, basically it’s just one’s words against the other।
আমরা ফারুক সাহেবদের পা ধরে টানাটানি করার জন্য বিবর্তন নিয়ে লিখি না, ফারুক সাহেবদের দ্বারা যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হতে পারে সেজন্য লিখি; এছাড়া মানুষের কৌতূহল মেটানোর নিস্পাপ উদ্যোগটা তো আছেই 🙂 অন্যদিকে “অমুক ফোন করে জানাইছে গোপন সূত্রে জানা গেছে তমুক সারাদিন কাজকাম না কইরা সরকারের টাকা খাইয়া ব্লগে ক্যামপেইনিংয়ে নামছে” জাতীয় কথাবার্তা সাবজেকটিভ এবং ইঙ্গিতময়ী। বিভিন্ন ব্লগে ঘোরাঘুরি করার কারণে ব্লগীয় রাজনীতির নোংরামি আর বালখিল্যতা সম্পর্কে ভালই জানা আছে। মুক্তমনায় এসব টেনে আনার কোন কারণ দেখি না। মুক্তমনায় আলোচনাগুলা ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে বিষয়কেন্দ্রিক হোক।
আর প্রোটাগনিস্টদের নিজেদের প্রচার করার কোন দরকার নাই, ইতিহাস প্রোটাগনিস্টদের ঠিকই খুজে বের করবে। তাছাড়া প্রোটাগনিস্ট হইতে চাওয়াটা কোন ভাল কথা না, “হওয়া” এর চেয়ে “করা”টা অনেক বেশি উত্তম। পোলাপাইন বিশেষণের পেছনে না ছুটে না হয় ক্রিয়ার পেছনেই ছুটুক, কি বলেন? 🙂
@পৃথ্বী,
সারাংশ বলে দিয়েছেন। ধন্যবাদ।
@আল্লাচালাইনা,
আমার যতটুকু বোধ, আাপনি ঘটনার সময় পুরোটা দেখেছেন কি না, জানি না। আসিফের মুখের বয়ান শুনে তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে থাকলে অবশ্য সেটা ভিন্ন আলাপ।
হিজবুতের নেতা মহিউদ্দিনের পুত্র হিসেবে ভুল করে তাকে খোঁজা হচ্ছিলো বলে একাংশের মত। তবে ঘটনা যতটুকু, তাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ‘জেলে যাওয়া নির্যাতিত ব্লগার’ বানিয়ে ফেলার যে সঙ্ঘবদ্ধতা আমরা সেদিন দেখেছি, সিস্টেমেটিক্যালি থানায় নিজে গিয়ে হাজিরা দেয়া যেভাবে ফেঁপে গ্রেফতারে পরিনত হয়েছে, এবং কালান্তরে জেলে যাওয়া হয়ে গিয়েছে, সেই অসত্যের দিকেই আমাদের আঙুলি নির্দেশ।
সুমহান হবার জন্য আমাদের মহাজন মশায় এতো পরিমান নোঙরামির আশ্রয় নিয়েছে যার কিছু প্রমাণ আজকের আলোচনাতেও বিদ্যমান।
সে যাদের সাথে কাজ করতো, স্কিৎসোফ্রেণিক আচরনের জন্য একজন দু’জন ছাড়া আর কেউই তার সাথে নেই।
আমি বেশ বুঝতি পারছি আপনি আসিফের সব দাবিকে ফেস ভ্যালুতে নিচ্ছেন, আপনার সেই নেওয়া ঠেকানোও আমার উদ্দেশ্য নয়, তবে অনুরোধ করবো, আসিফের কর্মকান্ড অবসার্ভ করুন। পুরনো স্ট্যাটাসগুলি ঘেঁটে দেখুন।
একটা সম্ভাবনাময় চরিত্র খ্যাতির মোহে কিভাবে পতিত হয়, উজ্জল নমুনা দেখতে পাবেন।
এটা ঠিক যে মুক্তমনার কপালে এমন পোস্ট মানায় না। আসিফ মহাজনের নিজের আমিত্ব জাহির করবার নির্লজ্জ্ব আরেকটা চেষ্টা দেখলাম আমরা। :clap
@পৃথ্বী,
আমার ফেসবুক প্রফাইল এবং ব্লগ প্রফাইল ঘাটলেই দেখতে পাবেন, ঐ আটকের আগে এই আরিফুর রীতিমত আমার প্রতিটি পোস্টে এসে বাহাবা দিতো। কিন্তু ঐ ঘটোনার পরেই আমি তাকে ইগনোর করা শুরু করি, এবং আমাদের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। এমনকি সামুতে আরিফুর ভিন্ন একটি নিক দিয়ে( ওঙ্গকার) আমার বিরুদ্ধে রীতিমত পোস্ট ও কমেন্টও দেয়া শুরু করে।
শুধু তাই নয়, সেই সময় পারভেজ আলমের সাথেও আরিফুরের কথা হয়, পারভেজ আলমকেও সে একই ধরণের কথাবার্তা বলেছিল, যেগুলো আমি লিখেছি। যার সত্যতা পারভেজ আলমকে জিজ্ঞেস করলেই বের হবে। সুতরাং এগুলো আনভেরিফায়েবল স্টেটমেন্ট নয়। প্রয়োজনে আমাকে ফেসবুকে নক করুন, আমি পারভেজের ফোন নম্বর আপনাকে দিচ্ছি।
আরিফুর রহমানের সাথে কথপোকথনটা আমার কাছে পুরা পোস্টের সাথে একদমই অপ্রাসংগিক মনে হইল। যাই হোক, আপনাকে আটক করাটা ঐসময় পুরো ব্লগ-কমিউনিটিকেই নাড়া দিছিলো ও নিন্দা জানাইছিল। জগন্নাথ ইসুতে আপনার শক্ত অবস্থানকে সম্মান জানাই।
লেখাটা পড়লাম। রায়হান আবীর আর বিপ্লব রহমানের ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিউত্তর ও ডিফেন্ডারের ভূমিকায় দেখে মুগ্ধও হলাম। ভালো। পুরো লেখাটা এত বড় করে না লিখে, এক বাক্যে লিখলেই হোতো। “আমি একজন বিরাট জনপ্রিয় ব্যাক্তি”। এতটুকু হলেই চলত। বাকিটা আমরা বুঝে নিতাম।
-আমি খুব রাগী/আমার অনেক রাগ
-আমি খুব ত্যাড়া/ আমি শর্ট টেম্পার্ড
-ফেসবুকে কয়টা লাইক পড়বে
-ফেসবুকে একটু সময় কাটানো যেতো
-ফেসবুকের স্ট্যাটাস
-আমি জনপ্রিয়
-আমিই আন্দোলোন করেছি
-আমিই সেরা
-আমি-ই সেরা ব্লগার
-আমিই নাস্তিকতার ইজারাদার
-আমিই মারহাবা
-আমিই সেই লোক
-আমি হ্যান
-আমি ত্যান
এই ফেসবুক সর্বস্ব ইম্ম্যাচিউর ছেলেটা এত বেশী বিরক্তির উৎপাদন করে, মাঝে মধ্যে ব্যাপারটা অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়।
@মৌসুম দাস, ইম্ম্যাচিউরড ছেলেটির দীর্ঘ পোস্টটি কষ্ট করে পড়ে আবার লম্বা লম্বা মন্তব্য দেয়াটাও কিন্তু খুব ম্যাচিউরিটির লক্ষণ হলো না। ভাল লাগে না, ইগনোর করেন। অনেককেই দেখি পড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পরে, দীর্ঘ পোস্ট মন দিয়ে পড়ে, পড়ার পরে গালাগালি করে যায়। আমার তাতে একটুও মন খারাপ হয় না। সব পক্ষের মন জুগিয়ে লেখার দায় আমার নেই।
উপরে যেই কয়টি কথা বলেছেন, সবই আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া। আমার ফেসবুকে আমি নিজের সম্পর্কেই বেশি বলবো, সেটাই স্বাভাবিক। আপনার বা অন্য কারো সম্পর্কে কেন আমি বলবো? নিজের কথা বলার জন্যেই ফেসবুক চালাই। সেখানে আমি রাগি না বদরাগী, আমি কতক্ষণ ঘুমাই আর কি বই পড়ি, সবই আমি বলি। আপনার অপছন্দ হতেই পারে, ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে রিমুভ করুন বা ব্লক করুন। ইম্ম্যচিউরড ছেলেটির পোস্ট পড়ারই কোন প্রয়োজন দেখছি না।
এটি একটি আত্ন-প্রচারণামূলক পোস্ট।
প্রচারেই প্রসার…
তাই পোস্টের সাফল্য কামনা করি।
আপনার এই একটা ভাল তৎপরতার সাথে আমি আছি, আমরা সবাই আছি। আপনি কখনো একা না। দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার লোক অনেক কমে গেছে, কমে যাচ্ছে। অনেকেই আছে যার কোন না কোন ধান্দা নিয়ে প্রতিবাদ করে। আপনার নিরপেক্ষ এবং ন্যায়ের পক্ষে স্বার্থহীন অবস্থান আমাদের আরো অনুপ্রানিত করে। এই লেখাটা পড়লাম এবং অবাক হলাম- আপনার সৎসাহস প্রশংসার দাবী রাখে। আপনার কর্মকান্ড সম্পর্কে অনেক জানি ফেসবুক ও ব্লগের মাধ্যমে। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক।
@শাখা নির্ভানা, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। (Y)
বাহ! দুর্ধর্ষ লড়াই লড়তে হলো তো! গণতন্ত্রের গ-ও নেই দেখছি দেশে! এতো আমাদের দেশে হতো জরুরি অবস্থার সময়ে!
@সুশান্ত কর, কন্ঠরোধকারী গনতন্ত্র চাই না। ধন্যবাদ আপনাকে।
কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নুইয়ে গেলো… :lotpot:
আসিফ মহাজন তাঁর বয়ানে আমার জন্য অনেক ক’টি লাইন বরাদ্দ করেছেন, শুধু তাই নয় অন্য কারো সাথে বাতচিতের ট্রান্সক্রিপ্ট তাঁর ‘স্মরণে’ না থাকলেও আমার টি তিনি ঠিকই লাইন বাই লাইন মনে রেখেছেন!
কি সৌভাগ্যি আমার, এ্যাঁ!
যাহৌক, পতিত আসিফের মিথ্যেয় ভরপূর পোস্ট সম্পর্কে কিছু না বলে আমার সাথে কথপোকথনটি সম্পর্কে বলতে পারি, এটি সর্বৈব মিথ্যে। তাকে ফোন করেছি তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেবার জন্য এবং এটা নিশ্চিত হবার জন্য যে কোনো চার্জ (আনুষ্ঠাণিক অভিযোগ) আনা হয়েছে কি না। সেই কথপোকথন বেমালুম এখন আওয়ামী নাস্তিকের ঝাড়ি হয়ে গেলো!! বাহ্, বেশ.. :lotpot:
একটা সময় ছিলো যখন চিল্লাপাল্লা করতাম আমরা কিছু লোক, তখন এতো ব্লগ ছিলো না, ফেসবুক ছিলো না। সামুতে এ-টীমের সাথে সাধারন জনগনের অংশ হয়ে ছাগু পোন্দানি ও সমান্তরালে তাদের ছাগুত্বের উৎস ধর্মপোন্দানী চলতো। অন্য অনেক প্রতিবাদীর মতোই আরিফুর রহমান নিকটা প্রায়শই ব্যান হয়া বসে থাকতো।
যা হৌক, আমরা যখন মোটামুটি কনফার্ম হলাম ছাগু পালের আছর আছে সত্যিই সামুর ঘাড়ে, তার কিছুদিন পরেই কোথা থেকে জানি উদয় হইলো আসিফ মহিউদ্দিন নামের এক বালক। আমরা মনে করলাম যুদ্ধে নতুন সোলজার পাইলাম বুঝি। বাস্তবে তার কর্মকান্ড দেখে এখন বুঝি স্বার্থপরের মতো নিজের পিঠ চাপড়ানোই তার চরিত্র।
যা হোক, এর মাঝেই আসিফকে ব্যান করলো সামু, সকলের সাথে আমিও সামু মডারেশন বরাবরে তদবির পাঠাইলাম, পরের দিন আরিল মেইল করলো, আমার অনুরোধে নাকি আসিফের নিক ছাড়া হইসে। বাকি তদবিরকারীরাও এইরকম মেইল পাইসে কি না, জানা নাই।
এর পরে আমরা দেখলাম পারভেজ আলম জাতীয় ইশ্বরের ধারনা লালনকারী অথচ মুক্তমনাদের সাথে বিচরনকারী কয়েকটি চরিত্রের উত্থান। শরৎ নামের একজন সামুর মডারেশনে আছে যে বর্তমান নব্য নাস্তিক আন্দোলনের বিরোধী।
ইন্টারেস্টিং ব্যপার হলো আসিফকে আমরা নব্য নাস্তিকতার যোদ্ধা মনে করলেও আসলে সে বামপন্থী ছাত্র গ্রুপগুলির কোনো একটার ঝান্ডা বহন কারী। দুঃখজনকভাবে যাদের ইদানীং আমরা দেখছি ধর্মভিত্তিক দলগুলির সাথে পরোক্ষে আঁতাত করতে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে আসিফ নজরুল নামক তথাকথিত সুশীল (যে কিনা জামাতীদের প্রচারিত ডকুমেন্টারীতে অংশ নিয়েছে) তাকে বাঁচাতে গিয়ে বিরক্ত পাবলিকের হাতে আসিফের নিগৃহীত হওয়ার দৃশ্যাবলীও আমাদের কাছে খুব বেশি পুরনো নয়।
আজকের এই পোস্ট, তাতে মিথ্যের নহর দেখে আমাদের মনে ধারনা আরো পরিষ্কার হলো, আসিফ ফুরিয়ে আসছে। মিথ্যে, আত্মভরিতা, সর্বোপরি মুক্তমনা আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে তাকে পলিটিক্যাল স্বার্থে ব্যবহার না করবার অনুরোধ তাকে অনেকবারই জানানো হয়েছে। কিন্তু, তার চরিত্রের ওই কালো দিকটি তাকে আজ ত্রিভুজের মতো একটা হাস্যকর চরিত্রে পরিনত করেছে।
বাংলাদেশে সিংহভাগ ধর্মপরায়ন লোকজন এক ধরনের অথরেটারিয়ান সাইকোলজিতে আটকে থাকে। ফলে তাদের জন্য মোল্লাদের শ্রুতি-বয়ান গুরুত্বপূর্ণ। শহরে জাকির নায়েক, গ্রামে ওয়াজ মাহফিল, উদাহরণস্বরূপ।
বাংলাদেশে মোল্লা বয়ান টাইপ গুরুনির্ভর মুক্তমনা কার্যক্রম আদৌ ইফেক্টিভ কি না, সেটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে, কিন্তু আসিফ মহাজন নিজেকে, খেয়াল করুন, ‘নিজেই নিজেকে’ অভিজিৎ’দার সাথে তুলনা করে যে হাস্যকর দৃশ্যের অবতাড়না করেছে তাতে আমাদের, মানে আম-পাবলিকের গড়াগড়ি দিয়ে হাসা ছাড়া আমরা আর কি বা করতে পারি?
ফেসবুকে ব্লক করে রেখেছি তাকে কারন শোনা যাচ্ছিলো তার একাউন্টটি ছাগ-সংশ্লিষ্ট বামধর্মী একটি মহলের হাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাকে অলমোস্ট ২৪ ঘন্টাই একটিভ দেখা যায়, যেটা শেয়ার’ড নিক না হলে সম্ভব না। একজন মানুষকে ইমপারসোনেট করা, অথবা এটা হতে দেওয়া আমার খাতায় অনৈতিক।
দু’মাস আগে বাংলাভাষায় বিনোদন সাইট ধর্মকারী ব্যন করবার জন্য আদালতে রীট এবং ফলশ্রুতিতে বিটিআরসি কর্তৃক দেশীয় ব্লক হলে, মুক্তমনা মহাজন হবার দাবিদার আসিফ (বা তার নিকের পেছনের বর্তমান ড্রাইভারদের) সাথে জানতে চাওয়া হলো এটা নিয়ে কি করা যায়, আমরা স্তম্ভিত হয়ে দেখলাম আদালতের বিষয় আদালতে সুরাহা করবার বদলে একে নিয়ে সরকার বিরোধী গন আন্দোলন গড়ে তুলবার চেষ্টা করা হয়েছে। গন আন্দোলনে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু আদালতে একটা পাল্টা রীট করে বাক-স্বাধীনতা রক্ষা করবার যে আগ্রহ সেটা তার বা তাদের মাঝে দেখা গেলো না।
উল্টো, ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত সেকুলার ফেসবুক পেজগুলিতে গিয়ে তাকে বাংলাদেশ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গেলো।
নতুন বিশ্বের কাছে জেলে যাওয়া ব্লগার বাকি সবার কাছ থেকে আলাদা। অভিযোগ গঠন হয় নি, বিচারের কাঠগড়াতেও উঠতে হয় নি, এমনকি গ্রেফতার পর্যন্ত হয় নি, কিন্তু আসিফ এবং তার মুরীদ কূল জেলে গিয়ে তাদের পীর কতোটা কষ্ট স্বীকার করেছেন, কেন তাকে বিশিষ্ট ব্লগারের মর্যাদা দিয়ে তাঁর মোমের মূর্তি মাদাম তুঁ’সো তে বসানো হবে না, এ নিয়ে নানা কীর্তন করতে দেখা যায়।
বক্তব্যের চেয়ে বক্তৃতাবাজী আজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে পরিনত। আমরা বলছি এই পথ ভ্রান্ত পথ। নিজের আখের গোছানো লোকের দ্বারা কোনোদিন মানুষের জন্য কিছু করা যায় নি।
বাংলাদেশে আমাদের, মানে মুক্তমনাদের ওপর বার বার আঘাত আসছে। যেখানে জাতিসংঘে সকল সভ্য রাষ্ট্র সন্মত হয়েছে ব্লাসফেমী করা মানবের বাক-অধিকারের অংশ সেখানে সেকুলার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারতাম ব্লাসফেমী জাতীয় অপ-আইনগুলি রদ করবার জন্য ব্যবস্থা নিতে।
সম্প্রতি আমরা দেখছি শতবর্ষাধিক পুরনো বিশেষ বিবাহ আইন রদ করবার বিপুল তোড়জোড় চলছে। মুক্তমনা হিসেবে টিকে থাকবার সবগুলি দড়জা একে একে বন্ধ হতে চলেছে।
এসব ক্ষেত্রে একাত্ম হয়ে সন্মিলিত শক্তিতে কিছু কাজ করা যেতো। আমাদের একজন প্রতিশ্রূতিশীল এসবের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের আখের গোছানোতে বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
এ ই কি বাঙালীর চরিত্র? এজন্যেই আমরা এখনো বাঙালী মুসলমান হয়েই আছি? কবে আমরা শুধু ‘মানুষ’ পরিচিত হতে পারবো? ব্যক্তি-লোভের উর্ধ্বে উঠে কবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে ধর্মজনিত কুপমন্ডুকতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারবো?
@আরিফুর রহমান,
বামপন্থী ছাত্র গ্রুপ করলে কি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হারাম হয় যায়? এই এক বাক্যেই আপনার চিন্তার অসারতা বেরিয়ে পড়ে।
@অনায়ক,
বাকিটাও বললেন না কেন?
এই সুবিধাবাদী বাক্য চয়নেই আপনার কাহিনী বেরিয়ে পড়ে।
@আরিফুর রহমান,
পুরো ঘটনাটি সত্য না মিথ্যা, তা জানেন শুধুমাত্র ঐ পুলিশ অফিসার, আমি, আমার বোন, এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজন। আপনি লন্ডনে বসে কিভাবে জানলেন এই পুরো ঘটনা মিথ্যা? যদি আপনার কথা সত্য হয়, তাহলে আপনি ঐ পুলিশ অফিসারের ঘনিষ্ঠ মানুষ, আপনি তার থেকে সত্যটি জেনেছেন। আর তা না হলে আপনি এখানে মিথ্যা বলছেন।
হয় আপনি ডিজিএফআই এর গোপন ইনফরমার, যিনি এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অবগত, অথবা আপনি মিথ্যাবাদী। কোনটা আপনিই ভাল বলতে পারবেন।
আরিফ, সে সময়ে কমপক্ষে ৩০ জন আমার আইডি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেছেন। আপনিও একটা মেইল করেছেন, এই জন্য বহুবার বহুভাবে আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। এখনও আমি সেই জন্য কৃতজ্ঞ, তবে আপনার মেইলেই আরিল আমাকে আনব্যান করেছে সেটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কারণ সামুতে আপনি নিজেই ব্যান, এবং আপনার ইমেজ আরিল জানা কারো কাছেই ভাল নয়। আপনার হাজার মেইলেও সামু কর্তৃপক্ষ একটা সুতাও কাটবে না। কিন্তু সেই মেইলের ঢোল আপনি এখনও বাজিয়েই যাচ্ছেন। হাস্যকর!!!
মুক্তমনাদের কোন গুরু নেই, এমনকি অভিজিৎ দাও আমাদের গুরু নয়। আমি নিজেও অভিজিৎ দার সমালোচনা করতে পারি, একই সাথে সকলেই আমারো সমালচনা করতে পারে। আমি বলেছি পাঠকপ্রিয়তার কথা, এখানে গুরুশিষ্যের কথা আসছে কোথা থেকে?
একজন মানুষ নাস্তিক হলে জনগনের অধিকার আদায়, শিক্ষার অধিকার আদায়ের লড়াই করতে পারে না বুঝি? শুধু লন্ডনে বসে এসি রুমের হাওয়া খেয়ে বড় বড় কথা বলাই যৌক্তিক, কোন কিছু নিয়ে লড়াই করলেই সে ছাগু, তাই না? আপনার সীমাবদ্ধতা আছে, আপনি নিজের পরিচয়, ছবি, গোপন করে ভয়ে ভয়ে ব্লগিং করেন। তাও দেশে এসে বলার সামর্থ্য নেই আপনি আরিফ। আমি সেই সাহস দেখালে আপনার শত্রুতে পরিণত হবো?
সেখানে আপনাকে ইতিমধ্যে উত্তর দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাধ্যমে গিয়ে আপনার সাথে কুস্তাকুস্তির কোন ইচ্ছাই আমার নাই। বাঙলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন, এখানে মৌলবাদীদের উষ্কানী আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রকাশ করে মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর সাথে এই নিয়ে আলাপ করার মধ্যে আমি কোন কুরুচি দেখি না। আপনি দেখলে আপনি ভিন্নভাবে কাজ করেন। আমার কাজে বাধা দেবেন কেন?
ধর্মকারী ব্যানের পরে আমি এই নিয়ে আন্দোলন করতে চেয়েছিলাম, আপনাদের বক্তব্য ছিল আমাকে বের করে দিয়ে আপনারা হাইকোর্টে রিট করবেন। এরপরে আমি আপনাদের গ্রুপ থেকে বেড়িয়ে এসেছি। এখন দেখতে চাচ্ছি আপনারা রিট করে কি করতে পারলেন। আমাকে অনুগ্রহ করে আপনাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করুন। সকলেই জানুক, আমাকে বের করে দিয়ে আপনারা কতদুর কি করলেন।
এসব বড় বড় গালভর্তি কথা না বলে কিছু কাজ করে দেখালে সবার জন্যেই ভাল আরিফ। আশা করি ভেবে দেখবেন।
আমি যে উপরে আপনার সাথে কথোপকথোনের বিবরণ দিয়েছি, তা যে পুরোপুরি সত্য, তা আপনি নিজেই প্রমাণ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার আর কোন মন্তব্যের উত্তর দেবার ইচ্ছে নেই। ধন্যবাদ এবং ভাল থাকুন।
… :rotfl: আমার চাক্রি হইসে, হইসে.. ইআআআ হু… :rotfl:
প্যারানয়া থেকে বের হয়ে আসার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হলে আমাদের বলবেন আসিফ। আপনার জন্য দরকার হলে আমরা চাঁদা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
একদম সত্যি কথা। কিছুদিন আগে ওপারের অনলাইনপত্র গুরুচন্ডালি ডটকম-এর ফেবু গ্রুপে এক তালেবর বাংলাদেশ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য লেখার দায়ে এই গ্রুপটিকে ৭২ ঘন্টার সময় দিয়ে হুমকি দেন যে, তিনি এর বিরুদ্ধে মামলা করবেন! এ নিয়ে ব্যপক হাসাহাসি শুরু হয়।
ওই হাসাহাসিতে আমিও যোগ দেওয়ায় তিনি কোনো এক সুহৃদ (?) জনের কাছ থেকে আমার মোবাইল ফোন নম্বর যোগাড় করে আমাকে টেলিফোন করে বসেন। নিজ পরিচয় ও বয়ান পেশ করেন এভাবে, আমি অমুক তালেবর হই। বঙ্গভবন থেকে বলছি। আপনি কী আমার সঙ্গে চা পানে সময় দিতে ইচ্ছুক– ইত্যাদি। আমি সঙ্গে ফোন লাইনটি কেটে দেই। পরে তিনি একের পর এক এসএমএস পাঠাতে থাকেন। এতে তিনি আমার কিছু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও টানেন। বাধ্য হয়ে তালেবরকে কঠিন একটি ধমক দিয়ে তার নম্বরটি ব্লক করে দেই।
পরে গুরুচণ্ডালির ফেবু গ্রুপের একজন সঞ্চালক ও লেখক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যও ফেবুতে জানান, তালেবর তাকে একের পর এক হুমকি ধামকি দিয়ে এসএমএস পাঠাচ্ছেন! বুঝুন অবস্থা!!
এরা নিজেদের কী মনে করেন? ইত্যাদি ভবনটবনের পরিচয় দিলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা হেগেমুতে তলাতল করবে? :lotpot:
—
[img]http://unmochon.net/sites/default/files/styles/large/public/_MG_9563.jpg[/img]
অনলাইন/অফলাইনের শক্তি এইসব আওয়ামী অন্ধরা এখনো বোধহয় তেমন কিছুই টের পায়নি।
সহব্লগার আসিফ মহীউদ্দিনকে সাধুবাদ জানাই দৃঢ় নৈতিক অবস্থানের জন্য। সরকারি হেনস্থার কাহিনী আগেই বিভিন্ন ব্লগ পাতায় ও গুরুচন্ডালিতে পড়েছি। তবে এই লেখাটি আরো বিস্তারিত।
জয় হোক! (Y)
পুনশ্চ: আসিফ মহিউদ্দীন হেনস্থা বিষয়ে আমার লেখা একটি ব্লগ পোস্ট — জাগো বাহে, কুনঠে সবায়! (আপডেট)
ওপরের ছবিসূত্র সেখানে বলা আছে।
@বিপ্লব রহমান, আপনিও অনেক সাহস জুগিয়েছেন, অনলাইনে এই নিয়ে লিখেছেন। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই বিপ্লব ভাই।
জগন্নাথের আন্দোলনে আপনার গ্রেফতারিতে একটা মজার বিষয় ঘটছিলো প্রথমবারের মতো, সেটা হলো ছাগুরাও সেইসময় আপনার পক্ষে অনেক ভালু ভালু কথা বলছে 😀
=))
:))
@রায়হান আবীর, আপনে মিয়া আমার অনেক গুপন কথা জানেন। চুপচাপ থাকেন, দেখা হইলে কাচ্চি খাওয়ামু নে। 😉
আপনের বৈদেশ ভ্রমণ সুন্দর হোক।
:guli: :guli:
আগে ব্লগের লেখা আমার কেন জানি তেমন পড়া হত না। অলসতার কারণেই বলা যায়। তবে এখন আগের চেয়ে বেশি পড়া হয়। আপনার লেখাও এখন নিয়মিত পড়া হয়। তবে আমি আসলে ঐ সময়ে খুব অবাক হয়েছিলাম যখন জানতে পারি একজন ব্লগারকেও সরকার থেকে এভাবে গ্রেপ্তার করা হতে পারে! আপনার লেখা তখন আমার পড়া না হলেও আপনার সম্পর্কে জানতাম। আমাদের রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটা অন্যতম মারাত্মক প্রকাশ এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়। আমরা যে আসলে কতটা “স্বাধীন” আছি সেটা উপলব্ধি করা গেছে। তবে তাও অনেক ভাল যে অন্তত আপনাকে সত্যি গুম করা হয় নি!
গণমানুষের গণআন্দোলনের জয় হোক। মুক্ত বুদ্ধির জয় হোক। শুভ কামনা রইল আপনার প্রতি।
@মঈন কাদির, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ওই সময়টা আসলেই বেশ অদ্ভুত ছিল। যেদিন আপনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সংবাদ পেলাম, সেদিন জগন্নাথসহ শাহাবাগ এলাকায় আমি অনেকগুলো গ্রুপের সাথে কথা বলছিলাম আপনার বিষয়টি নিয়ে। আমি আপনাকে চিনতাম না, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন প্রাক্তন জগন্নাথ ছাত্র হিসেবে আপনার লেখটা পড়ে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। এছাড়াও আমরা ধর্ম সংক্রান্ত ভাবনার জায়গাতেও আমার ভালো লাগে। আমি নিজেও নাস্তিক্যতাবাদে বিশ্বাসী।
হয়তো সামনে বড় আন্দোলনে দেখা হবে। ভালো থাকবেন।
@কল্লোল কর্মকার, অবশ্যই একদিন দেখা হবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনে একজন সাইকো পেশেন্ট আপনার বর্তমান অবস্থায় আপনাকে সিজোফ্রেনিক পেশেন্ট মনে হচ্ছে। দয়া করে ভালো সাইকেট্রিষ্ট এর পরামর্শ নিন
@kader,
আপনার ঠিকানাটাই দিয়া যান। বসেন কই?
@kader,
ইয়ে…আপ্নে আবার কুন ভবনের ভাই? ল্যাঞ্জা স্পষ্ট দেখা যাইতেছে তো! 😛
@kader, ধন্যবাদ। কিন্তু সাইকো পেশেন্টের লেখা না পড়লে কি ঘুম আসে না নাকি?
সোহেল রহমান ভাই এর কথা টার সাথে আমিও একমত।আসিফ ভাই আশাকরি ভেবে দেখবেন!
@মামুন আব্দুল্লাহ, ভেবে দেখবো। ধন্যবাদ।
যৌবনযাত্রায় যখন লিখতেন, তখন থেকে আপনার লেখা ফলো করি। পছন্দ করি। কিন্তু আপনার কি মনে হয় না সাম্প্রতিককালে আপনার লেখাগুলাতে – বিশেষ করে ফেসবুকে – খুব বেশী ‘আমিত্ব’ দেখা যাচ্ছে (আমি কিন্তু বর্তমান লেখার কথা বলছি না)? অবশ্য এটা আপনার অধিকার। আপনি বলতেই পারেন আমার নিজের লেখায় আমিত্ব থাকলে সমস্যা কি? আমার মতামত দেওয়ার সময় ‘আমি’ তো আসতেই পারে। একমত। কিন্তু এও তো সত্য যে আমিত্ব জাহির না করেও নিজের মত প্রকাশ করা যায়। আপনার আগেকার লেখায় আমিত্ব অনেক কম ছিল। আমার পর্যবেক্ষন বলে আপনার এই পরিবর্তন এসেছে বেশ কিছু ভক্ত ও অনুসারী জোটার পর থেকে। ভক্ত পরিবেষ্টিত থাকলে গুরু গুরু ভাব আসতে পারে। ভক্তরা কিন্তু গুরুকে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। দুঃখের বিষয় আপনার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটছে। ক্রমশ আপনার পা মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এক ধরণের স্টারডম ভর করেছে আপনার উপরে। অথচ আপনাকে মাটির কাছাকাছি দেখতেই ভালো লাগে।
আপনি আগে সমালোচনা গ্রহন করতে পারতেন। সেই কারনেই কথাগুলো বললাম। এখন কেমনভাবে নিবেন, জানি না।
@সোহেল রহমান, দেখেন, ফেসবুক হচ্ছে আমিত্বের জায়গা। তাই ফেসবুকে আমার ব্যক্তিগত কথা বার্তা থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার ফেসবুক একাউন্ট জনগনের জন্য নয়, কোন পেইজও নয়। আর তাছাড়া আমি মুক্তমনাদের রিপ্রেসেন্টও করি না, যে সকল মুক্তমনার হয়ে আমি কথা বলবো।
বেশ কয়েকবার দেখেছি, আমি মুতমনাদের হয়ে কোন বক্তব্য দিতে গেছি, সেখানে অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। তার এখন শুধু নিজের বক্তব্য দেই, এবং নিজের বক্তব্যের জন্য নিজেই দায়ী থাকি। অন্যের দায় আমি আর মাথায় নিই না, অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হয়।
আর অন্যদিকে ব্লগ হচ্ছে জনগনের জায়গা। এইখানে সবার হয়ে কথা বলি।
তারপরেও আপনার পরামর্শ মনে থাকবে। ধন্যবাদ।
রসিয়ে উপভোগ করলাম এই পর্দার পেছনের রগরগে কাহিনী।
এদের দুইজনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম অন্তরের অন্তস্থল থেকে, আরও অনেক এগেই। অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর মতো ঘটনা হয়তো খুব বেশী একটা ঘটেনি বাংলা ব্লগে, কিন্তু এটি ছিলো সত্যিকারের সেইরকমই একটি ঘটনা।
অনুপ্রেরণাদায়ী পোস্ট পরে ভালো লাগলো।
@আল্লাচালাইনা, অনেক লম্বা লিখে ফেলছি ভাই, এত কষ্ট দেবার জন্য দুঃখিত। 🙂
আপনার অনন্য সাহসীকতার জন্য শ্রদ্ধা জানাই।
@বেঙ্গলেনসিস, এইটা অন্যকারো ক্ষেত্রে হলেও একই ঘটনা ঘটতো হয়তো। তারপরেও অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আসিফ ভাই সেইদিনের ঘটনা টা বিস্তারিত জানার ইচ্ছে ছিল,বাধন সপ্নকথকের স্টাটাস থেকেই এই ঘটনা টা প্রথম জানতে পারি তখন যদিও ফেসবুকে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে আমি ছিলাম না তবে আপনাদের সেই আন্দোলনে মানসিক ভাবে একাত্ব ছিলাম, ঢাকায় ছিলাম না তাই হয়তো শারিরীক ভাবে আসতে পারিনি।ন্যায় ও মানবতার পক্ষে যে কোন আন্দোলনে সাথে আছি ।
@মামুন আব্দুল্লাহ ভাই, অনেক ধন্যবাদ সেই সময় সমর্থন দেবার জন্য।