ভূমিকা
মানব মস্তিষ্ক এবং এর বিবর্তন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু লিখব ঠিক করেছি। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই লেখা। এটা সিরিজের প্রথম পর্ব বলা যেতে পারে। কিন্তু ব্লগ জগতে একটা কথা প্রচলিত আছে – কয়েক পর্বে সিরিজ লেখার চিন্তা করলে সেই সিরিজের নাকি অকালমৃত্যু ঘটে। তাই সেই ভয়ে এটাকে ‘প্রথম পর্ব’ কিংবা লেখার পরে ‘চলবে’ জাতীয় কথাগুলো বলা থেকে বিরত থাকলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে এ নিয়ে লেখার হাল্কা হলেও এক ধরণের পরিকল্পনা থাকায় কিছু অংশ সবিস্তারে লিখতে পারিনি। সেজন্য কিছু কিছু অংশ ছন্নছাড়া মনে হলেও হতে পারে। সেরকম কিছু মনে হলে অগ্রিম ক্ষমা চাইছি। সবিস্তারে না লেখার কথা বলছি বটে কিন্তু লেখাটা শেষ করে এর দিকে তাকিয়ে নিজেরই ভয় লাগছে। লেখাটা রীতিমত হাতী সাইজে রূপ নিয়েছে দেখছি। এ ধরণের হাতী সাইজের লেখা আমার নিজেরই পড়া হয়ে উঠে না। পাঠকদের ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনাটুকু থেকে যাচ্ছে। তারপরেও লেখাটাকে আরো ছোট ভাগে ভাগ না করে পুরোটুকু একসাথেই দিলাম।
:line:
মানব মস্তিষ্কের আনইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন
১
মানব মস্তিষ্ক নিয়ে আমার কৌতূহল আসলে বহুদিনের। শুধু কৌতূহল বললে ভুল হবে, মস্তিষ্ককে ঘিরে আমার ছোটবেলা থেকেই ছিলো এক বিনম্র এক রহস্যময় অনুভূতি। তাই ২০০২ সালে আমার পিএচডি কাজের সময় যখন আমার সুযোগ আসলো মানব মস্তিষ্কের মডেলিং নিয়ে কাজ করার, সে সুযোগ আমি সাথে সাথে লুফে নিয়েছিলাম। একে তো এ ছিলো আমার জন্য এক দারুণ সুযোগ, তার উপর মানুষের জটিলতম অঙ্গ – মস্তিষ্কের মডেলিং নিয়ে কাজ। অভিভূত হবার মতোই ব্যাপার। কিন্তু অভিভূত হবার পাশাপাশি আমার মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল ভয়ের এক শীতল শিহরণও। ভয় পাওয়ার তো কথাই। শুধু আমি কেন, মানব মস্তিষ্কের গঠন, রকম সকম, আকৃতি, প্রকৃতি, জটিলতায় বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত হাবুডুবু খান। মস্তিষ্ককে হর-হামেশাই তুলনা করা হয় সুপার কম্পিউটারের সাথে, বলা হয় সেটা পৃথিবীর ‘শ্রেষ্ঠ সুপার কম্পিউটারেরও বাপ’, কেউ বা বলেন ‘শ্রেষ্ঠতম বায়োলজিক্যাল প্রত্যঙ্গ’, কেউ বা তুলনা করেন মহাবিশ্বের জটিলতার সাথে, যার রহস্যভেদ কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়। মানব মস্তিষ্ককে এ পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ দেখে স্রষ্টার ‘পারফেক্ট ডিজাইন’ হিসেবে। শুধু ধার্মিকেরা নন, যারা নিয়মানুগ বিজ্ঞানের চর্চা করেন, যারা বিজ্ঞানের সাথে ধর্মকে খুব একটা মেশাতে পছন্দ করেননা, তারাও মানব মস্তিষ্কের কাছে গিয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলেন, হয়ে যান হতবিহবল। সবার কাছেই মানব মস্তিষ্ক নান্দনিক, জটিল এবং সর্বোপরি নিখুঁত। এর মধ্যে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। কিন্তু তাইকি হবার কথা? আমরা জানি বিবর্তনের ফলে উদ্ভূত জীবদেহ কিংবা তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচরাচর নিখুঁত হয় না। বিবর্তন কিভাবে কাজ করে সেটা জানা থাকলে এর কারণ বোঝাটা কিন্তু কঠিন নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন যেহেতু কেবল বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়, তাই যুক্তি সঙ্গত কারণেই জীবদেহে অনেক ত্রুটিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের সবার চোখেই একটি জায়গা আছে যাকে আমরা অন্ধবিন্দু বা ‘ ব্লাইণ্ড স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করি। আমাদের প্রত্যেকের চোখেই এক মিলিমিটারের মত জায়গা জুড়ে এই অন্ধবিন্দুটি রয়েছে, আমরা আপাতভাবে বুঝতে না পারলেও ওই স্পটটিতে আসলে আমাদের দৃষ্টি সাদা হয়ে যায়। এছাড়া আছে পুরুষের স্তনবৃন্তের মতো বিলুপ্তপ্রায় নিষ্ক্রিয় অঙ্গ। এগুলো দেহের তেমন কোন কাজে লাগে না। মহিলাদের জননতন্ত্র প্রাকৃতিক-ভাবে এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে অনেকসময়ই নিষিক্ত স্পার্ম ইউটেরাসের বদলে অবাঞ্ছিতভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউব, সার্ভিক্স বা ওভারিতে গর্ভসঞ্চার ঘটায়। এ ব্যাপারটিকে বলে ‘একটোপিক প্রেগন্যান্সি’। ওভারী এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অতিরিক্ত একটি গহ্বর থাকার ফলে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডিস্ট্রফিন জিন আছে যেগুলো শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, সময় সময় মানবদেহে ক্ষতিকর মিউটেশন ঘটায়। আমাদের দেহে ত্রিশ বছর গড়াতে না গড়াতেই হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়, যার ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়, একটা সময় অস্টিওপরোসিসের মত রোগের উদ্ভব হয়। বিবর্তনীয় পথে উদ্ভূত জীবদের ‘ডিজাইন’ নিখুঁত নয় বলেই এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়।
গতবছর একটা বই লিখেছিলাম ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে। বইটার এক অধ্যায়ে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বাকযন্ত্রের স্নায়ুকে (recurrent Laryngeal nerve) উদাহরণ হিসেবে হাজির করা হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হল, এই স্নায়ুটি সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে বাকযন্ত্রে যাওয়ার সোজা এক ফুট রাস্তা সে গ্রহণ করেনি। মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে এটি প্রথমে চলে যায় বুক পর্যন্ত। সেখানে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দের প্রধান ধমনী এবং ধমনী থেকে বের হওয়া লিগামেন্টকে পেঁচিয়ে আবার অনাবশ্যক-ভাবে উপরে উঠতে থাকে। উপরে উঠে তারপর সে যাত্রাপথে ফেলে আসা বাকযন্ত্রের (larynx) সাথে যোগ দেয়। হাত মাথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে ভাত খাওয়ার ব্যাপারের মতো এই যাত্রাপথে স্নায়ুটি এক ফুটের জায়গায় তিন-ফুটের চেয়েও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে। জিরাফের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার আমরা দেখতে পাই। সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো ভয়ঙ্কর। মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে সে লম্বা গলা পেরিয়ে বুকের মধ্যে ঘোরাঘুরি শেষে আবার লম্বা গলা পেরিয়ে উপরে উঠে বাকযন্ত্রে সংযুক্ত হয়। একজন ভাল ডিজাইনার সরাসরি সংযুক্ত করে দিলে যে দূরত্ব তাকে অতিক্রম করতে হতো,তার থেকে প্রায় পনের ফুট বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন এবং অন্ধ প্রাকৃতিক নির্বাচনের কেরমতি মেনে নিয়ে। আরো একটা বিষয় বোঝা গেছে এই উদাহরণ থেকে। আমরা যে একসময় মৎস-জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে স্তন্যপায়ী জীবে পরিণত হয়েছি, এর একটি উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য কিন্তু এটি। এ নিয়ে অধ্যাপক জেরি কোয়েন তার ‘Why Evolution is True’ গ্রন্থে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। রিচার্ড ডকিন্সের Greatest Show on Earth বইটিতেও এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে। এর বাইরে অধ্যাপক নীল সুবিনের লেখা ‘Your Inner Fish’ বইটিতেও প্রাসঙ্গিক বহু তথ্য পাওয়া যাবে।
চিত্র – বাকযন্ত্রের স্নায়ুর ‘ডিজাইন’ সাক্ষ্য দেয় যে আমরা মৎস-জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে স্তন্যপায়ী জীবে পরিণত হয়েছি।
বলা-বাহুল্য, বাকযন্ত্রের স্নায়ুর এই আবর্তিত পথ শুধু মাত্র খুব বাজে ডিজাইনই নয় এটি ক্ষেত্র বিশেষে ভয়ংকরও। স্নায়ুটির এই অতিরিক্ত দৈর্ঘ্যের কারণে এর আঘাত পাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ আপনাকে বুকে আঘাত করলে আমাদের গলার স্বর বন্ধ হয়ে আসে সেজন্যই। বুকে ছুরিকাহত হলে কথাবলার ক্ষমতা নষ্টের পাশাপাশি খাবার হজম করার ক্ষমতাও ধ্বংস হয়ে যায়। বুঝা যায় কোনো বুদ্ধিদীপ্ত মহাপরিকল্পক এই স্নায়ুটির ডিজাইন করেননি, এই অতিরিক্ত ভ্রমণ এবং ‘ব্যাড ডিজাইন’ সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বিবর্তনের কারণেই।
দেহের নানা জায়গায় ত্রুটি বিচ্যুতির নানা কারণ এবং ব্যাখ্যা আমাদের জানা থাকলেও অবধারিত ভাবে মস্তিষ্কের কাছে এসে আমরা থেমে যেতাম। যেন মনে করতাম মস্তিষ্ক ব্যাপারটা বিবর্তনের পথ ধরে যেন উদ্ভূত হয়নি, এক অশরীরী সত্ত্বার নিপুণ হাতে তৈরি বলেই এটি এত উন্নত, নিপুণ, নিপাট, নিখুঁত সুন্দর। এর ডিজাইনে কোন ফাঁক নেই, নেই কোন অপূর্ণতা। কিন্তু সত্যই কি তাই? আজকের এই প্রবন্ধে আমরা বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মস্তিষ্ককে বিশ্লেষণ করে দেখব এই দাবীর পক্ষে সত্যতা কতটুকু।
২
আগেই বলেছিলাম মস্তিষ্ক নিয়ে আমার ছিলো অদম্য কৌতূহল। সেই কৌতুহলের খেসারত হিসেবে আমার গবেষণার জন্য প্রায় তেতাল্লিশটি কাঠামো (প্রত্যঙ্গ) সনাক্ত করে মডেলিং করতে হয়েছিলো। সেগুলোর ছিল বিদঘুটে সমস্ত নাম – কর্টেক্স, কর্পাস ক্যালোসাম, ফরনিক্স, হিপোক্যাম্পাস, থ্যালমাস, হাইপোথ্যালামাস, ইনসুলা, গাইরাস, কডেট নিউক্লিয়াস, পুটামেন, থ্যালামাস, সাবস্ট্যানশিয়া নাইয়াগ্রা, ভেন্ট্রিকুলাস, ব্রেইনস্টেম ইত্যাদি। আমার আগের দু একটি লেখায় আমার মডেলিং এর কিছু ছবি দিয়েছিলাম। এখানেও দেয়া যাক –
চিত্র- মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সনাক্ত করে ত্রি-মাত্রিক মডেলিং; বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা, কর্মমান্ড, চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিষ্কের এই সমস্ত প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকাণ্ডের এবং তাদের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল।
মানব মস্তিষ্ককে মডেলিং করা হয় কিভাবে? একেক জন একেকভাবে করেন। একজন মেডিক্যালের ছাত্র হয়তো মডেলিং করতে চাইবেন ব্রেন-অ্যানাটমিকে সামনে রেখে। একজন নিউরোসার্জনের কাছে হয়তো প্রাধান্য পাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কাজের মডেল। একজন আণবিক জীববিজ্ঞানী হয়তো আণবিক স্কেলে ব্যাপারটার সুরাহা করতে চাইবেন। আবার এক মনোবিজ্ঞানী হয়তো দেখতে চাইবেন সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের আচরণ। আমি আমার বুয়েটের ছাত্রজীবনে আর তারপরের চাকুরী জীবনে ছিলাম মূলতঃ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। তাই পিএইচডিতে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এ গবেষণা করতে গিয়ে ব্রেনের মডেলিং করলেও আমার সে মডেলিং ছিলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যন্ত্রকৌশলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধার করা। ফাইনাইট এলিমেন্ট মডেলিং করে স্ট্রেস স্ট্রেইন এনালাইসিস ইত্যাদি। মস্তিষ্কের টিস্যুকে হাইপারভিস্কোইলাস্টিক পদার্থ হিসেবে নিয়ে অরৈখিক জালিকা (non-linear mesh) তৈরি করে মডেলিং করেছিলাম। আর প্রোগ্রাম করে একটা ডিসপ্লে ইঞ্জিন বানিয়েছিলাম যেটাতে সিমুলেশনগুলো দেখা যায়।
যাকগে, মস্তিষ্কের মডেলিং নিয়ে এত প্যাঁচালে কাজ নাই। এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্যও মডেলিং বোঝা নয়, বরং সার্বিকভাবে মস্তিষ্ককে বোঝার প্রচেষ্টা হিসেবে ধরে নেই বরং। তবে যেটা বলার জন্য এই আয়োজন সেটা বলে ফেলি। মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অদ্ভুত একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিলাম সে সময়। ব্যাপারটা হল – আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে, মস্তিষ্ককে সাধারণভাবে যতটা নিখুঁত এবং চৌকস ভাবা হয় আসলে তা মোটেই নয়। বাকযন্ত্রের স্নায়ুর মতই কিছু প্রত্যঙ্গ মস্তিষ্কেও আছে যাদের কাজ করতে হলে অনেক অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে করতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় তার ‘ডিজাইন’ হাস্যকর রকমের দুর্বল এবং খেলো। এর টিস্যু দুর্বল, নিউরনের গঠন আর কর্মক্ষমতা দুর্বল, এক্সনগুলো এতোটাই খারাপ পরিবাহী যে মাঝে মধ্যেই তথ্য চুইয়ে বাইরে হারিয়ে যায়, একটা সাধারণ কম্পিউটারের প্রসেসিং এর সাথে তুলনা করলে ব্রেনের প্রসেসিং দক্ষতা আসলে চোখে পড়ার মতোই অদক্ষ। এমনকি স্মৃতিসংরক্ষণেও নানা ঝামেলা হয় বলেই দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হলে প্রায়শই স্মৃতি আমাদের সাথে প্রতারণা করতে শুরু করে। আর সামান্য কিছু কাজ করতে গেলেই তার দরকার হয় বিশাল এক ‘নেটওয়ার্কিং’-এর। তার উপর আমাদের মস্তিষ্ক যেন শক্তিখেকো এক দানব – দেহের সিংহভাগ শক্তিই আসলে খরচ হয় আমাদের এই মস্তিষ্ককে সচল রাখতে।
এ ব্যাপারগুলো আমার চোখে পড়েছিলো অনেক আগেই। কিন্তু এ নিয়ে তখন খুব একটা উচ্চবাচ্য করার সাহস বা সুযোগ কোনটাই পাইনি। আর তা ছাড়া বড় বড় ঝানু-মাথা বিশেষজ্ঞরা যেভাবে ‘সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমির মত’ মস্তিষ্কের স্তব করায় ব্যস্ত ছিলেন, আর মানব মস্তিষ্ককে একেবারে পূজার বেদীতে তুলে যেভাবে ফুল-বেলপাতা সহযোগে অর্ঘ্য পরিবেশন করে যাচ্ছিলেন, আমি ভেবে নিয়েছিলাম হয়তো আমারই নিশ্চয় কোথাও না কোথাও ভুল হচ্ছে। এর মধ্যে কেটে গেল বেশ কিছু বছর। এর মাঝে চাকুরী জীবনে ভিন্ন ধরণের কাজে জড়িয়ে পড়লেও আমার পূর্বতন একাডেমিক কাজের যোগসূত্রের কারণেই হোক, কিংবা বিবর্তন নিয়ে মুক্তমনায় সাম্প্রতিক লেখালিখির কারণেই হোক মানব মস্তিষ্ক ব্যাপারটা সবসময়ই রয়ে গিয়েছিলো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। সেজন্যই এ সংক্রান্ত খোঁজখবর আর কিছুটা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। আর তা করতে গিয়েই দেখলাম – আমার সে সময়কার ধারণায় ভুল কিছু ছিলো না। হ্যাঁ, মানব মস্তিষ্ক যে অভিনব বা নিখুঁত কোন জিনিস নয়, বরং বহু জায়গায় রয়ে গেছে বেশ ভ্রান্ত ডিজাইনের আলামত – তা মানব মস্তিষ্ক নিয়ে বড় বড় বিজ্ঞানীদের অতি সাম্প্রতিক কিছু কাজ থেকে আবারো খুব ভালমতো বুঝতে পারলাম। এর মধ্যে কিছু ভাল বইও লেখা হয়েছে সেইসব ধারণাগুলোকে সন্নিবদ্ধ করে। এর মধ্যে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড লিণ্ডেনের লেখা ‘অ্যাক্সিডেন্টাল মাইণ্ড’ (The Accidental Mind: How Brain Evolution Has Given Us Love, Memory, Dreams, and God) এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যারি মার্কসের লেখা ‘ক্লুজ’ (Kluge: The Haphazard Evolution of the Human Mind) বইদুটো খুবই উল্লেখযোগ্য। তবে সেখানে যাবার আগে আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ে সামান্য কিছু ব্যাপার জেনে নেয়া প্রয়োজন।
৩
খুব সাধারণ ভাবে শুরু করি। হিউম্যান ব্রেন বা মানব মস্তিষ্ক আসলে কি? মানব মস্তিষ্ক হচ্ছে তিন পাউন্ডের ঘন টিস্যুর দলা। কিন্তু টিস্যুর দলা বললেও এমন নয় যে টিস্যুর সব জায়গা একই রকমের। কোন জায়গা ঘন, কোন জায়গা পাতলা, কোন জায়গায় জালির মত খাঁজ, কোন জায়গা হয়ত খাঁজ-বিহীন সরল, সোজাসাপ্টা। কিন্তু বুঝব কি করে মস্তিষ্কের টিস্যুর কোথায় কি আছে? আসলে মস্তিষ্কের কোন স্তরে কি আছে, সেটা জানতে হলে মস্তিষ্ককে পলাশী বাজারের মুশফিক কসাইয়ের মতো ব্যবচ্ছেদ করতে হবে।
মস্তিষ্ককে কিভাবে ব্যবচ্ছেদ করা যায়? সোজা কথায় আপনাকে ব্রেন নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে হবে। তবে যেনতেন ভাবে কাটাকাটি করলে হবে না, কাটার নিয়ম আছে কিছু। আপনার কাছে আসলে তিনটে পথ খোলা। আপনি মস্তিষ্ককে কাটতে পারেন আড়াআড়ি, যেটাকে বলে করোনাল সেকশন, কিংবা কাটা যায় উপর থেকে নীচ বরাবর – যেটাকে বলে এক্সিয়াল সেকশন, কিংবা কাটা যায় পাশ বরাবর। মস্তিষ্ককে এই তিন দিক থেকে কাটলে এর ক্রস-সেকশন তিন রকমের দেখাবে। আমার কথা শুনে ভজকট লেগে যাবার আগেই আমি পাঠকদের জন্য একটা ছবি দিচ্ছি যাতে ব্যাপারটা পরিষ্কার থাকে-
আমি এর মধ্যে পাশ বরাবর কাটা ‘স্যাজিটাল ক্রস-সেকশন’টাই বেছে নিচ্ছি, সুবিধার জন্য। এভাবে মাঝ বরাবর পাশ থেকে কেটে ফেললে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের হদিস পাব আমরা । তবে সবগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাম ঠিকুজি আমাদের এই মুহূর্তে জানার দরকার নাই, যেগুলো এই প্রবন্ধে উঠে আসবে, তার কয়েকটি এখানে দেয়া গেল-
চিত্র – মস্তিষ্কের স্যাজিটাল ব্যবচ্ছেদে পাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ।
এর মধ্যে আবার কর্টেক্স, কর্পাস কলোসাম, থ্যালামাস, সেরেবেলাম, ব্রেন স্টেম, হাইপোথ্যালামাস আর সেরেব্রাম নামের অংশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিদঘুটে নামগুলো না হয় জানা গেল, কিন্তু এগুলো ঠিক কি কাজ করে সেটা বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। আর তা ছাড়া আমার লেখার যে হাত, তাতে সেটা হয়ে উঠবে শুকনো পাউরুটির মতোই ম্যাড়মেড়ে নিরস। কর্টেক্স কি করে, ব্রেনস্টেম কি করে, সেরেবেলামেরই বা কী কাজ, এগুলো ফেনিয়ে ফেনিয়ে বলার ইচ্ছেও আমার নেই, সাধ্যও সীমিত। কেউ বিভিন্ন অঙ্গের কাজ জানতে চাইলে বাজারে ব্রেনের অ্যানাটমি নিয়ে সহজ ভাষায় বহু বই আছে, সেগুলো দেখতে অনুরোধ করব। এর মধ্যে এই মুহূর্তে আমার হাতের সামনে আছে অধ্যাপক আম্মার আল চালাবি, মার্টিন আর.টার্নার এবং শেন ডেলামন্ট-এর লেখা ‘The Brain’ বইটি। এর বাইরে রিটা কার্টার, সুসান এল্ড্রিজ, মার্টিন পেজ, স্টিভ পার্কার প্রমুখের লেখা ‘The Human Brain Book’ বইটিও চমৎকার। এ ছাড়া মুক্তমনা ব্লগেও এ নিয়ে ভাল কিছু লেখা আছে, যেমন মস্তিষ্কে, অনুরণন সংগোপনে – নিউরোএনাটমি লেখাটির কথা বলা যায়। পাঠকদের সরাসরি সেই লেখাটিতে চলে যেতে পরামর্শ দিচ্ছি, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কাজ কারবার নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানবার থাকলে।
আমি এ প্রবন্ধের জন্য যা করব তা হল, মস্তিষ্ককে বড় সড় তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলা – ক) উপরিভাগ বা ফোরব্রেন, খ) মধ্যভাগ বা মিড ব্রেন আর গ) নিম্নভাগ বা হিন্ড ব্রেন। মাথার একদম উপরের দিকে যে প্রত্যঙ্গগুলো যেমন কর্টেক্স, সেরেব্রাম (ছবি দেখুন) প্রভৃতি – সেগুলো মস্তিষ্কের মানবীয় অনুভূতির সর্বোচ্চ স্তর ধারণ করে বলা যায়। এই যে সচেতনতা, আবেগ অনুভূতি, পরিবার পরিজনদের প্রতি দায়িত্ববোধ, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সহ মানবীয় কাজগুলোর কথা আমরা জানি, সেগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় কিন্তু এই স্তরেই। কোন কারণে মস্তিষ্কের এই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষের ব্যক্তিত্বের বড় সড় পরিবর্তন ঘটে। যেমনি ঘটেছিলো এক হতভাগ্য রেলকর্মী ফিনিয়াস গেজ এর ক্ষেত্রে। ১৮৪৮ সালের দিকে ভার্মন্টের রেলপথ বানানোর কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। এই কর্মী বিরাট মোটা সোটা লোহার একটি দণ্ড হাতে নিয়ে, যেটাকে বলে টেম্পিং রড, ঝুঁকে পড়ে বিস্ফোরকে আগুন দিচ্ছিলেন। রেলরোড বানানোর সময় জমি সমান করার জন্য এই কাজটির দায়িত্ব কোন না কোন শ্রমিককে নিতেই হত। ফিনিয়াস গেজ এ ব্যাপারে দক্ষ একজন শ্রমিক, বহুবার তিনি এ কাজ করেছেন। সেদিনও তিনি কিন্তু ফিনিয়াস গেজের ক্ষেত্রে সেদিন যা হয়েছিলো তা হলিউডের ভৌতিক ছবিকেও যেন হার মানায়। কোন এক কারণে বিস্ফোরণে একটু উনিশ বিশ হয়ে যাওয়ায় গেজের হাতে ধরা টেম্পিং রড সোজা তার বাম চোয়াল আর চোখ ভেদ করে মাথার উপরের খুলির কিছু অংশ উপরে নিয়ে চলে যায়।
চিত্র – টেম্পিং রড যেভাবে ফিনিয়াস গেজের চোয়াল, চোখ আর মগজের কিয়দংশ ভেদ করে চলে গিয়েছিলো।
সবাই ভেবে নিয়েছিলো মারাই গেছেন গেজ। কিন্তু হাসপাতালে নেবার পর খুব অদ্ভুতভাবেই গেজ জ্ঞান ফিরে পান, এবং দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন । হাসপাতালের পুরো সময়টা গেজের পরিবার পরিজন সহকর্মীরা ধরে নিয়েছিলেন যে কোন দিনই গেজ মারা যেতে পারেন, এবং তার জন্য কফিনেরও ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিলো। তাদের অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ নেই। এরকম খুলি চৌচির হওয়া, চোখ চোয়াল হারানো মগজ ভেদ করা রোগী বাঁচে নাকি?
কিন্তু গেজ মরলেন না। বাঁচলেন। কিভাবে বেঁচে গেলেন তা বলা মুশকিল। আসলে বিস্ফোরণাহত গেজের চেহারা সুরত দেখে ভয়ঙ্কর মনে হলেও খুব ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে – টেম্পিং রড চোখ আর চোয়াল বিধ্বস্ত করার সময় কেবল মগজের উপরিভাগ – অর্থাৎ ফ্রন্টাল কর্টেক্সের কিছু অংশ উপরে নেয়া ছাড়া মগজের খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। খুব অবিশ্বাস্য ভাবে ঢাউস আকারের লৌহদণ্ডটি খুলি আর মগজের ফাঁক ফোকর খুঁজে বের হয়ে গিয়েছিলো। ফলে প্রচণ্ড আঘাত পেলেও মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন গেজ।
পেজ অবশেষে কাজে ফিরলেন। কিন্তু ফিরলে কি হবে তার সহকর্মীরা লক্ষ্য করলেন ফিনিয়াস গেজ আর সেই আগের গেজ নেই। দুর্ঘটনার আগে গেজ ছিলেন হাসিখুশি, উদার, সহকর্মীদের প্রতি সংবেদনশীল এবং কাজকর্মের দায়িত্ববান একজন ব্যক্তি। কিন্তু দুর্ঘটনা সামলিয়ে কাজে ফেরার পর দেখা গেল তিনি হয়ে উঠেছেন খিটমিটে, ঝগড়ুটে, একদর্শী এবং স্বার্থপর। যে দায়িত্ব-সচেতনতা আর সহকর্মীদের সাথে ভাল ব্যবহারের কারণে সকলের পছন্দের মানুষ ছিলেন ফিনিয়াস গেজ, সেই গেজকেই তারা এড়িয়ে চলতে শুরু করলেন সবার সাথে তার গায়ে পড়ে ঝগড়া করার বাতিক আর দায়িত্ব-হীনতার কারণে। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মনে করেন দুর্ঘটনায় গেজের ফ্রন্টাল কর্টেক্স পরিবর্তিত হবার কারণেই গেজের ব্যক্তিত্বের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। সবার পছন্দের মানুষটি হয়ে উঠেছেন সবার চক্ষুশূল। ফ্রন্টাল কর্টেক্স – যা মানবীয় আবেগ অনুভূতি আর ব্যক্তিত্বের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে সেটা ক্ষতিগ্রন্থ হওয়াতেই এমন অবস্থা হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। কিন্তু মস্তিষ্কের বাকি অংশগুলো – যেমন মিডব্রেন এবং হিন্ডব্রেনের কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গে কোন আঘাত না লাগায় তার মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকায় কিংবা শরীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনায় কোন সমস্যা হয়নি।
মস্তিষ্কের উপরিভাগ বা ফোরব্রেনের কথা কিছুটা জানলাম। এবারে অন্য দুভাগ কি করে সেগুলোতে না হয় একটু যাওয়া যাক। মস্তিষ্কের মধ্যভাগ (মধ্যমস্তিষ্ক) বা মিডব্রেনের জায়গাগুলো বিবর্তনীয় যাত্রাপথের আরেকটু আদিম অঙ্গ। আর হিন্ডব্রেন একেবারে আদিমতম অঙ্গের সমাহার বলা যায়, প্রায় অর্ধ-বিলিয়ন বছর আগের প্রত্যঙ্গ এগুলো। মিডব্রেন বা মধ্যমস্তিষ্ক আমাদের ঠিকমত দেখা আর শোনার কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আর হিন্ড ব্রেনের অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের চলাচল, ভারসাম্য, শ্বাসপ্রশ্বাস, সতর্কতা ইত্যাদি। বোঝাই যাচ্ছে এ অঙ্গগুলো কর্টেক্সের তুলনায় প্রাচীন, প্রায় সব প্রাণীর মধ্যেই এগুলো বিদ্যমান। সবাইকেই তো বেঁচে থাকার চলাচল করতে হয়, দেখে শুনে চলতে হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হয়। তাই এ সব অঙ্গে বড় সড় আঘাত পেলে বেঁচে থাকা সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। বেঁচে গেলেও হয়তো মানুষটি থাকবে পক্ষাঘাত-গ্রন্থ হয়ে, অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে।
চিত্র – সেফালাইজেশন প্রক্রিয়ায় প্রাচীন অঙ্গের উপর মানব মস্তিষ্কের নবীনতম অঙ্গগুলো স্তূপীকৃত হয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে মানব মস্তিষ্ক একদম শূন্য থেকে হুট করে তৈরি হয়নি। এর মধ্যে রয়ে গেছে বিবর্তনের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমার কালিক ছাপ। প্রাচীন এবং প্রিমিটিভ কাজ করার জন্য যে অঙ্গগুলো অত্যাবশ্যক, সেগুলো তৈরি হয়েছিলো একদম প্রথমে, এর উপরে স্তূপীকৃত হয়ে বসেছে অপেক্ষাকৃত নবীনতর অঙ্গগুলো। আর সবচেয়ে উপরে মানে সবচেয়ে পরে স্তূপীকৃত হয়েছে ফ্রন্টাল কর্টেক্সের মতো নবীনতম অংশগুলো, যেগুলো মানবীয় অনুভূতি আর ব্যক্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই একজন জীববিজ্ঞানী কিংবা বিবর্তন জানা স্নায়ুবিজ্ঞানী যখন ইঁদুরের মস্তিষ্ক দেখেন তখন তিনি জানেন যে, ওটা সরীসৃপের মস্তিষ্ক এবং সেই সাথে কিছু বাড়তি অংশের সমাবেশ। ঠিক একইভাবে তারা যখন আবার মানব মস্তিষ্কের দিকে তাকান, তখন তারা দেখেই বোঝেন যে এটা ইঁদুরের মস্তিষ্ক এবং সেই সাথে পরবর্তীতে যোগ হওয়া নতুন বাড়তি কিছু অংশের সমাহার। সেজন্যই অধ্যাপক লিন্ডেন তার বইয়ে বলেছেন –
When we compare human brain to that of other vertebrates it becomes clear that that the human brain has mostly developed through agglomeration. The difference between the lizard brain and the mouse brain does not involve a whole scale redesign. Rather, the mouse brain is basically the lizard brain with some extra stuff thrown on top. Likewise, the humans brain is basically the mouse brain with still more stuff piled on top. That’s how we wind up with two visual systems and two auditory systems ( one ancient and one modern) jammed into our heads. The brain is built like an icecream cone with new scoops piled on at each stage of our lineage.
লিন্ডেন যথার্থই বলেছেন। আমাদের মস্তিষ্ককে আমার পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া উপাদানের উপর ভর করে গড়ে উঠতে হয়েছে বলেই তাদের সেই সীমাবদ্ধতাকে সাথে নিয়েই তার বেড়ে উঠতে হয়েছে। আমাদের ব্রেন কোন নিখুঁত ডিজাইনে তৈরি হয়নি। আপনি আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে কখনো কোন্-আইসক্রিম চেখে দেখেছেন? দেখেছেন তো নিশ্চয়। এক স্কুপ ভ্যানিলা নেবার পর হঠাৎ আপনার মনে হল আরেক স্কুপ স্ট্রবেরি আইসক্রিম নিলে কেমন হয়? এক স্কুপের উপরে যোগ হল আরেক স্কুপ। পয়সা দেয়ার সময় ভাবলেন, ওটার উপরে চকলেটের আরেকটা স্কুপ চাপিয়ে দেই। তিন-স্কুপ কোন আইসক্রিম হাতে নিয়ে মজাসে চাখতে চাখতে বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু তা না হয় হল। কিন্তু এই আইসক্রিম কোনের সাথে মানুষের মস্তিষ্কের সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে। অধ্যাপক লিন্ডেনের মতে, মস্তিষ্কের বিকাশ আর বিবর্ধন হয়েছে অনেকটা আইসক্রিম কোনের মতো করে, প্রতিবারই নতুন নতুন স্কুপ যোগ হয়েছে বিবর্তনীয় ধারার যাত্রাপথে। জীববিজ্ঞানে এর একটা গালভরা নাম আছে সেফালাইজেশন।
চিত্র – বিজ্ঞানীরা বলেন আমাদের ব্রেইন গড়ে উঠেছে অনেকটা আইসক্রিম কোনের মতো করে প্রাচীন অঙ্গের উপর নবীনতর অঙ্গগুলো ক্রমশ: স্তূপীকৃত হয়ে।
লিন্ডেন তার বইয়ে এই আইস্ক্রিমকোনের স্কুপের উপমা ব্যবহার করেছেন অসংখ্যবার, তার চোখে ব্রেন সেজন্যই হয়ে উঠেছে নিখুঁত নয় বরং ‘তালগোল পাকানো এক জোড়াতালির ব্যবস্থা’ (cobbled together mess)। তবে এটাও তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, মানব-মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতাগুলোকে বিবর্তনের দৃষ্টি থেকেই অনুধাবন করা যায় ভালভাবে, কোন নিখুঁত স্রষ্টার ম্যাজিক দিয়ে নয়। অধ্যাপক লিন্ডেন যে ব্যাপারটিকে ‘জোড়াতালি’ বলেছেন গ্যারি মার্কস তার বইয়ে এ ব্যাপারটিকে অভিহিত করেছেন ক্লুজ হিসেবে। যারা প্রকৌশলবিদ্যার সাথে জড়িত, বিশেষত – পুরকৌশল কিংবা যন্ত্রকৌশল – তাদের অনেকেই হয়তো ‘ক্লুজ’ শব্দটির সাথে পরিচিত। তারপরেও আমার ধারণা অধিকাংশ পাঠকদের কাছেই হয়তো শব্দটি অজানা। তাই এ নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের অবকাশ আছে।
৪
ক্লুজ মানে হচ্ছে কোন একটা বড় সমস্যার খুব জোড়াতালি দেওয়া কদাকার (clumsy) সমাধান, কিন্তু কাজ কর্ম চালাতে সমস্যা হয় না। ইংরেজি অভিধানে ক্লুজ শব্দটির সংজ্ঞায়ন এরকমের –
kluge (klooj) n. Slang
A clumsy or inelegant solution to a problem.
ব্যাপারটা বোঝার জন্য ১৯৭০ সালের অ্যাপোলো ১৩ র সেই বিখ্যাত ঘটনার কথা স্মরণ করা যাক। অ্যাপোলো ১৩ চাঁদে যাওয়ার জন্য মহাকাশ যাত্রা শুরু করেছিলো সে বছর। এটি ছিলো আমেরিকার সপ্তম যাত্রা। কিন্তু চাঁদে যেতে গিয়ে মাঝপথে মহা বিপাকে পড়লেন এর মহাকাশযাত্রীরা। যাত্রার দু দিনের মধ্যে রকেটের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে যা হল তা রীতিমত ভয়ানক। মহাকাশযানের মধ্যে কার্বনডাইঅক্সাইডের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলছিলো। ক্রুরা বুঝলেন, এই কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা খুব তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে অচিরেই ভবলীলা সাঙ্গ হবার সম্ভাবনা। তারা হাতের সামনে যা পেলেন – মোজা, কার্ডবোর্ডের বাক্স, প্লাস্টিক ব্যাগ আর ডাক্টটেপ – সব জড় করে তা দিয়েই কিম্ভুতকিমাকার সব ফিলটার বানিয়ে ফেললেন। এই কদাকার ফিল্টারগুলোই তাদের প্রাণ বাঁচিয়ে দিলো, তারা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। মাটিতে নেমে অ্যাপোলো মহাকাশযাত্রার অধিনায়ক জিম লোভেল মন্তব্য করেছিলেন –‘ হ্যাঁ আমাদের এই ফিল্টার সমাধান দেখতে কোন আকর্ষণীয় কিছু ছিলো না, কিন্তু বিপদের সময় ভালই কাজে দিয়েছিলো’। অ্যাপোলো ক্রুদের এই সমাধান আসলে ক্লুজের একটি ভাল উদাহরণ। হাতের সামনেই যা পাওয়া যায় তা দিয়ে কাজ চালানোর মতো সমাধান পেয়ে বিপদ উত্তরণের চেষ্টা।
আশির দশকের শেষভাগে বিটিভিতে ম্যাকগাইভার নামে একটা সিরিজ শুরু হয়েছিল অনেকেরই মনে আছে। বাংলাদেশে সেই সময়টাতে যারা ছিলেন তারা জানেন আজকের জামানার মতো হাজারটা হিন্দি চ্যানেল ছিলো না। এরশাদের জামানায় সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স বিটিভিই ছিলো সবে ধন নীলমণি। সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিটিভির গৎ বাঁধা তোষামোদি নানা অনুষ্ঠান আর অপ-অনুষ্ঠানের ভিড়েও এই একটি সিরিয়ালের জন্য বিটিভির কাছে চিরকৃতজ্ঞ ছিলাম সে সময়। আমেরিকান এই সিরিয়ালটা নিয়ে এসে দেশে দেখানোর ব্যবস্থা করা। বলা বাহুল্য, আমাদের মত কিশোরদের জন্য খুব প্রিয় একটা সিরিজ ছিলো সেটা। আমেরিকার এই সিক্রেট এজেন্ট বিভিন্ন মিশনে গিয়ে নানা রকম ভয়ঙ্কর বিপদ আপদের মধ্যে পড়ে যেত, আর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে হাতের সামনে যা উপকরণ খোলা ছিলো তা দিয়েই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করতো। ম্যাকগাইভারের সমাধানগুলো ছিল অনেকটাই ক্লুজ!
বিবর্তনের কাজও অনেকটা সেরকমই, সেজন্য বিবর্তনের ফলে তৈরি হয় নানা ধরণের ক্লুজ জাতীয় দ্রব্য। বারে বারেই আমরা বলেছি যে, বিবর্তনকে যেহেতু পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া বিদ্যমান উপকরণ নিয়ে কাজ করতে হয় এর মধ্যে নানা ধরণের ডিজাইনগত ত্রুটি দেখা যেতে পারে। আমাদের মেরুদণ্ডের কথাই ধরুন। আমাদের এতবড় মাথা আর দেহের ওজনকে ধরে রাখার জন্য এক কলামের এই মেরুদণ্ড খুবই অনাকর্ষনীয় সমাধান। সেজন্যই দেখা যায় আমাদের দেহের ওজনকে বহন করতে গিয়ে প্রায়ই আমাদের পিঠব্যাথা বা ব্যাক পেইন হয়। যারা কম্পিউটারের সামনে বেশি ঝুঁকে কাজ করেন, কিংবা যারা ভারী বোঝা বয়ে নেওয়ার কাজ করেন, তারা অনেকেই এটা হাড়ে হাড়ে বোঝেন। কিন্তু এক কলামের জায়গায় তিন-কলাম বিশিষ্ট মেরুদণ্ড আমাদের থাকলে কিন্তু আমরা সহজেই এই অযাচিত পিঠ ব্যথা এড়াতে পারতাম। সত্যি বলতে কি কোন ইঞ্জিনিয়ারকে এ ধরণের যন্ত্র ডিজাইন করার দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি কখনই মাথা আর দেহের এত ভারী ওজন এক কলামের উপর চাপিয়ে দিতেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিবর্তন তা করতে পারেনি, তাকে নির্ভর করতে হয়েছে আমাদের মৎস-জাতীয় পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া একটিমাত্র মেরুদণ্ডের কাঠামোর ওপর। তাকে যতদূর পারে বদলে টদলে মানুষের উপযোগী করে বানাতে হয়েছে। তাই মাছেদের জন্য সেটা পিঠব্যাথার কোন কারণ না হলেও মানুষের জন্য হয়। এটা প্রাকৃতিক ক্লুজ ছাড়া আর কিছু নয়। আর ক্লুজ জাতীয় সমাধান কখনোই নিখুঁত ডিজাইনের গ্যারান্টি দেয় না।
আসলে কোন কিছু নিখুঁত কিংবা ‘এলিগেন্ট’ করে বানানোর মিশন নিয়ে বিবর্তন মাঠে নামেনি, যদি জোড়াতালির ফলে সেটা টিকে থাকে বা সমস্যা না করে, তাইলে সেই বৈশিষ্ট্য সে ধারণ করে আর ছড়িয়ে পড়ে। আর যদি জোড়াতালিতে সমস্যা হয়, তাহলে সেটা প্রাকৃতিক নির্বাচনের করাতে কাটা পড়ে যায়। জিন মিউটেশন, ক্রোমোজম মিউটেশন; জেনেটিক রিকম্বিনেশন, জেনেটিক ড্রিফট সহ জিন নিয়ে প্রকৃতির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় থেকে যদি সফল ফলাফল বেরিয়ে আসে তবে সেটা বৈশিষ্ট্য হিসেবে জনপুঞ্জে বাহিত হতে পারে, আর পরীক্ষার ফলাফলে গড়বড় হলে তা জনপুঞ্জ থেকে হারিয়ে যাবে। বিবর্তনের এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মাঝে সাঝে নান্দনিক কোন কিছু যে বেরিয়ে আসে না তা নয়, কিন্তু মনে রাখতে হবে নান্দনিক কোন কিছু বানানোর তরিকা নিয়ে মাঠে নামেনি, বরং বিবর্তনের সমাধানগুলো বহুক্ষেত্রেই ত্রুটির উর্ধ্বে নয়, বরং নানাভাবেই সীমাবদ্ধ। আমাদের মস্তিষ্কও এর ব্যতিক্রম নয়।
মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গেলে নিউরনের কথাই আসবে সবার আগে। ৬০ কোটি বছর আগে Cnidaria নামের একধরণের জেলিফিশের মধ্যে প্রথম নিউরনের অস্তিত্ব দেখা গিয়েছিলো বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে মিলিয়ন বছর পরের মানব প্রজাতি এসেও কিন্তু নিউরনের গঠনগত কোন পরিবর্তন হয়নি। এমন নয় যে, জেলিফিশের নিউরনগুলো মানব প্রজাতিতে এসে কোন ‘সুপার নিউরন’ টাইপের কিছু হয়ে উঠেছিল। বরং, সত্যি কথা বলতে কি – জেলিফিশের একেবারে আদিম নিউরনগুলোকেই অপরিবর্তনীয়ভাবে ব্যবহার করতে হচ্ছে মানব মস্তিষ্ক চালাতেও। আদিম জিনিসপত্র ব্যবহার করে আধুনিক যন্ত্র বানাতে গেলে যা হয় আর কি – ক্রমশ জবড়জং সিস্টেম তৈরি হয়ে যায়। দৈনন্দিন জীবন থেকে একটা উদাহরণ দেই। যারা অনেক পুরনো বাসায় – মানে অন্তত: বিশ পচিশ বছর আগে তৈরি কোন বাসায় থাকেন তারা একটি অসুবিধাতে প্রায়ই ভোগেন। কোন কিছু মেরামত করতে গিয়ে দেখেন পুরনো পার্টস আর পাওয়া যায় না, কারণ এ কয় বছরে প্রযুক্তিই গেছে বদলে। বিদ্যুতের লাইন টানার পদ্ধতি, প্লাগ, সকেট, বাথরুমের শাওয়ারের ডিজাইন থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আর পুরনো পদ্ধতি দিয়ে হয় না। ছোট জিনিসের ক্ষেত্রে যেমন পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ার ফেলে দিয়ে আপনি আইফোন বা আইপড কিনে নিতে পারেন, কিন্তু পুরো বাড়ি তো আর সেভাবে ফেলে দেয়া যায় না। ফলে যেটা আমাদের মেনে নিতে হয় – তা হল জোড়াতালি। এই জোড়াতালি দিতে গিয়ে যেটা সবচেয়ে ভালভাবে কাজ চলবে বলে মনে করি – সেই সমাধানই আমরা গ্রহণ করি। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও হয়েছে ঠিক তাই। আদিম রদ্দিকালের জেলিফিশের নিউরন ব্যবহার করতে হয়েছে তাকে। লিন্ডেনের ভাষায় নিউরনগুলো খুবই অদক্ষ – ‘slow, leaky and unreliable’। নিউরনগুলো সংযুক্ত থাকে এক্সন (Axon) নামে জৈবপরিবাহী দিয়ে। আমাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে তামার তারগুলো যেভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত বয়ে নিয়ে যায়, মানব মস্তিষ্কের এক্সনগুলো ঠিক সেই কাজগুলোই করে। কিন্তু করে অনেক ধীর গতিতে, অদক্ষভাবে। একটা তামার তারের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রায় আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে প্রবাহিত হতে পারে, খুব নিখুঁতভাবে বললে – ঘণ্টায় প্রায় ৬৬৯ মিলিয়ন মাইল বেগে। সে-তুলনায় এক্সনের মধ্য দিয়ে সংকেত যায় অনেকটাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, বড়োজোর আড়াইশো মাইল বেগে। তার মানে সিগনালের সংকেত পরিবাহিতার ক্ষেত্রে এক্সনগুলো তামার পরিবাহীর তুলনায় প্রায় ২.৫ মিলিয়ন গুণ ধীর। তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘার মতো সিগন্যালগুলো পরিবাহী চুইয়ে বাইরে চলে যায় মাঝে সাঝেই। এর অবশ্য কারণ আছে। আমাদের মস্তিষ্ক ভেসে থাকে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড নামের এক ধরণের লবণাক্ত তরলের মধ্যে। লবণাক্ত তরলের মধ্য দিয়ে কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তথ্য পরিবাহিত হয়, তখন তথ্যের অপচয় হয়। সেই লর্ড কেলভিনের সময় (১৮২৪ -১৯০৭) থেকেই বিজ্ঞানীদের তা জানা। কেলভিন সাহেব আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্য দিয়ে টেলিগ্রাফিক তথ্য আদান প্রদানের একটা হিসেব করতে গিয়ে দেখেছিলেন যে, স্রেফ তার টেনে আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্য দিয়ে কয়েক হাজার মাইল দূরের জায়গায় তথ্য স্থানান্তর সম্ভব নয়। লবণাক্ত জলে তথ্য চুইয়ে বাইরে চলে যাবে (সেজন্যই সাবমেরিন-কেবলগুলোতে কিছুদূর পর পর এক ধরণের বুস্টার এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয়, সিগনালকে জোরদার করার জন্য)। একই ধরণের ঘটনা ঘটে মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও। এক্সন দিয়ে তথ্য যেতে গিয়ে অনেক সময়ই তথ্য চুইয়ে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের লবণাক্ত তরলে তথ্য হারিয়ে যায়, সিগন্যাল হয়ে যায় দুর্বল। এই দুর্বলতাকে সামাল দিতে গিয়ে মস্তিষ্ককেও এমপ্লিফায়ারের মতো কিছু একটা কোন একভাবে তৈরি করতে হয়েছে। পরের কোন পর্বে এ নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। আপাতত: এ পর্বে আরো কিছু সীমাবদ্ধতার দিকে তাকাই।
আমরা হরহামেশাই খুব বড় গলায় কম্পিউটারের সাথে ব্রেনের তুলনা করি, অথচ একটা সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রোসেসিং ইউনিট প্রতি সেকেন্ডে ১০ বিলিয়ন অপারেশন সম্পন্ন করতে পারে। সেখানে একটা নিউরনের সংকেতের সীমা প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৪০০ স্পাইক থেকে ১২০০ স্পাইক। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলো পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে এগুলো খুব অদক্ষ ‘প্রোবাবিলিস্টিক ডিভাইস’, তার লক্ষ্যের দিকে তাক করতে সমর্থ হয় মাত্র ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে সফলভাবে। বাকি সময় সেগুলো যেন হারিয়েই যায় বিস্মৃতির অন্তরালে। এহেন অদক্ষতার নমুনা দেখে অধ্যাপক গ্যারি লিঞ্চ এবং রিচার্ড গ্র্যাঙ্গার তাদের ‘বিগ ব্রেন’ বইয়ে মজা করে বলেছেন – ‘ইন্টেলের কোন ডিজাইনার যদি এভাবে প্রসেসর চিপের ডিজাইন করতেন, তাহলে সাথে সাথে তাকে কোম্পানি থেকে ফায়ার করা হতো! ‘। সেজন্যই সার্বিকভাবে বলা যায় যে, বৈদ্যুতিক যন্ত্র হিসেবে মস্তিষ্ক খুব বেশি পদের কিছু নয়।
কিন্তু ‘পদের কিছু নয়’ বলে চলে গেলেই তো হবে না, আমাদের বলতে হবে এই অদক্ষ যন্ত্রটা এত চমৎকারভাবে কাজ করে কীভাবে? শুধু তো কাজ করছেই না রীতিমত ঘোল খাইয়ে ছাড়ছে আমাদের সবাইকে। নিশ্চয় এর পেছনে কোন ব্যাখ্যা আছে তাই না? আসলে নিউরনগুলো খুব অদক্ষ বলেই এরা কম সংখ্যায় থাকলে এদের থেকে কোন বড়-কিছু আমরা আশা করতে পারি না। কিন্তু মস্তিষ্ক সে সমস্যার সমাধান কর ফেলেছে একটু ঘুরপথে। নিজেদেরকে বিপুলভাবে সংখ্যায় বাড়িয়ে। সেই যে ছোটবেলায় যে আমাদের শেখানো হয়েছিলো মিলেমিশে কাজ করতে, সেটা আমরা না শিখলেও নিউরনেরা কিন্তু ঠিকই শিখে গেছে। সেই ‘দশে মিলি করি কাজ’ –এর মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলতে পারে এরা। হ্যাঁ, জেলিফিশের নিউরনের সাথে মানুষের নিউরনের গঠনগত পার্থক্য না থাকলেও সংখ্যাগত পার্থক্য অনেক। জেলিফিশে শ খানেকের বেশি নিউরন নেই, কেঁচোর মত একটু জটিল প্রাণীতে আছে মাত্র তিনশটির মতো নিউরন। আর মানুষের মাথায়? প্রায় একশ বিলিয়ন নিউরন। সেই একশ বিলিয়নের প্রতিটি নিউরনে আছে ৫০০০টির মতো জংশন, যেগুলোকে আমরা সিন্যাপ্সিস নামে অভিহিত করি। তাহলে একশ বিলিয়ন নিউরনে কয়টি সিন্যাপ্সিস জংশনের অন্তর্জাল তৈরি হবে? ১০০ বিলিয়নের সাথে ৫০০০ গুন করে যা পাই তা হল – ৫০০, ০০০, ০০০, ০০০, ০০০ বা পাঁচশ ট্রিলিয়ন । আপনি যদি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে গোনা শুরু করেন, তাহলে সবগুলো গোনা শেষ করতে করতে আপনার দেড় কোটি বছর পার হয়ে যাবে।
বুঝতে পারছেন নিশ্চয় কি বিশাল যজ্ঞ তৈরি করতে হয়েছে মানব মস্তিষ্ককে ঠিক মত কাজ করাতে গিয়ে। গোটা দশেক, কিংবা হাজার খানেক নয়, একেবারে একশ বিলিয়ন নিউরন আর পাঁচশ ট্রিলিয়ন সিন্যাপ্সিসের পসরা সাজাতে হয়েছে অবস্থা সামলাতে গিয়ে। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক হয়ে গেছে অনাবশ্যক রকমের বড়। মস্তিষ্ককে চালাতে শরীরের সবচেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় হয়, দেহের শতকরা বিশভাগ শক্তিই চলে যায় আমাদের এই ‘কুমড়ো-পটাশ’ মোটা মাথাকে চালাতে গিয়ে । মস্তিষ্ক শুধু শক্তি-খেকোই নয়, পাশাপাশি আবার রীতিমত জিন-খেকোও বটে। আমাদের দেহের সবচেয়ে বেশি জিনের পরিস্ফুটন ঘটে এই মাথাতেই। আমাদের দেহে জিনের সংখ্যা তেইশ হাজারের মত, একটা বোধ বুদ্ধিহীন কেঁচোর চেয়ে খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু পার্থক্য আছে জিনের পরিস্ফুটন বা এক্সপ্রেশনে। প্রায় সত্তুরভাগ জিনের পরিস্ফুটন ঘটে এই মাথাতেই, যা আবার প্রকারান্তরে নিয়ন্ত্রণ করে পাঁচশ ট্রিলিয়ন সার্কিটের অবিশ্বাস্য বড় এক নেটওয়ার্ক। অনেকটা মশা মারতে কামান দাগার মতোই ব্যাপার স্যাপার। এগুলো হয়তো কিছুই লাগতো না, যদি নিউরনগুলো এককভাবে এতোটা অদক্ষ না হতো।
বড় মাথার সমস্যা কেবল বড় নেটওয়ার্ক তৈরিতেই হয়নি, সেই সাথে শরীরবৃত্তীয় সমস্যাও তৈরি করেছে। বড়-মাথাওয়ালা সন্তান জন্মদানের জন্য সম্ভবত: মেয়েদের শরীর সেভাবে প্রস্তুত ছিলো না। মানব প্রজাতিতে একটা সময় অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে মস্তিষ্কের বিবর্তন আর বিবর্ধন ঘটেছিল, তার সাথে মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ – যেমন জরায়ু, যোনিপথ প্রভৃতি সেভাবে বিবর্ধিত হতে পারেনি। তাই ইতিহাসের পথপরিক্রমনায় বহু নারীকে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। আসলে সিজারিয়ান-অপারেশন সহ শল্যচিকিৎসার বিভিন্ন আধুনিক রক্ষাকবচগুলো আবিষ্কারের আগে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়েদের মৃত্যুহার ছিলো আশঙ্কাজনক-ভাবেই বেশি। জীবজগতের আর কোন প্রজাতির কোন সদস্যকে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যেতে হয়নি, হয় না। নিঃসন্দেহে এটা শরীরের বিরাট বড় একটি ‘ডিজাইন-গত ত্রুটি’। একজন নিখুঁত ডিজাইনার সবকিছু দেখে শুনে ডিজাইন এবং পরিকল্পনা করে বানাননি বলেই এগুলো নিখুঁতভাবে তৈরি হয়নি, এতে রয়ে গেছে ক্লুজ, তথা বিবর্তনগত জোড়াতালির নানা ছাপ।
তবে বৃহৎ মস্তিষ্কের কিছু সুবিধা তো আছেই। মানুষের মস্তিষ্ক বড় আর এত ট্রিলিয়ন নিউরনের সমাহার বলেই এটি একসাথে সমান্তরাল পথে কাজ করে যেতে পারে। এটা নিঃসন্দেহে একটা বড়গুণ যা কম্পিউটার থেকে মানব মস্তিষ্ককে আলাদা করে দিয়েছে। আজকের দিনের যে কোন কম্পিউটারে থাকে একটিমাত্র ‘সেন্ট্রাল প্রোসেসিং ইউনিট’, যাকে আমরা বলি সিপিইউ, অন্যদিকে মস্তিষ্ক যেন অজস্র প্রসেসরের বিস্তীর্ণ সমাহার। সমান্তরালভাবে সবাই মিলে কাজ করে সে ছাড়িয়ে যেতে পারে আমাদের চিরচেনা কম্পিউটারের সকল সীমাবদ্ধতা। হ্যাঁ – বড় বড় যোগ, বিয়োগ, গুণ ভাগ করায় কিংবা একঘেয়ে ধরণের সিমুলেশন করে ফলাফল বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের মস্তিষ্ক মেশিনের সাথে পাল্লা দিতে পারে না, কিন্তু আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা, সৃজনশীলতা, সৃষ্টি নৈপুণ্যে সে সহজেই ছাড়িয়ে যেতে পারে যে কোন কম্পিউটারকে এক নিমেষেই। কম্পিউটার গণনায় যত দক্ষই হোক না কেন, চেহারা সনাক্তকরণ এবং ‘ভিজুয়াল রিকগনিশন’-এ মানব মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। আমরা যখন মোনালিসার ছবির দিকে তাকাই, আমাদের মস্তিষ্ক-কোষগুলোতে শুরু হয়ে যায় একই সাথে অজস্র নিউরনের নিরন্তর উদ্দীপনা; নিমেষ-মধ্যে আমরা বুঝে ফেলি এটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সেই বিখ্যাত শিল্পকর্ম – রহস্যময়ী মোনালিসা। শুধু চেনা জানা চিত্রকর্ম নয়, পরিচিত-জনের চেহারা, গোলাপ ফুল, চেয়ার থেকে শুরু করে আমাদের পোষা কুকুরের সামান্য অংশ দৃষ্টিগোচর হলেই তাকে চিনে ফেলার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আমাদের মস্তিষ্কের আছে, অথচ এগুলো করতে কম্পিউটারের সময় লাগে অনেক। আসলে কম্পিউটারের সাথে হরহামেশা তুলনা করা হলেও মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটারের কাজের পার্থক্য আছে। বড় একটা জায়গায় পার্থক্য হল – ‘শেখা বনাম প্রোগ্রামিং’ এর দ্বন্দ্ব। আমরা ছোটবেলা থেকে প্রতি মুহূর্তে শিখে শিখে বড় হই, অতীতের ভুল থেকে ভবিষ্যতের গন্তব্য নির্ধারণ করতে পারি খুব সফলভাবে। কম্পিউটার কিন্তু কিছু শেখে না। কম্পিউটার নির্ভর করে প্রোগ্রামিং এর উপর, অর্থাৎ এর ভিতর আগে থেকেই পুরে দেয়া তথ্যের উপর। তাই প্রতিবার কম্পিউটার অন করলে সেটা একইভাবে একই চেহারা নিয়ে আপনার কাছে হাজির হবে, মানব মস্তিষ্ক তা নয়।
সেজন্যই বলা যায় মানব মস্তিষ্ক কম্পিউটারের তুলনায় অনেক নমনীয় (flexible)। এই নমনীয়তা আমাদেরকে অনেক-বেশী সৃজনশীল করে গড়ে তুলেছে। তবে এজন্য এতো উল্লসিত হবার কিছু নেই; সেটা আবার আমাদের জন্য এক ধরণের শাঁখের করাত হিসেবেই হাজির হয়েছে যেন। নির্বোধ কম্পিউটারকে আমরা যত গালিই দেই না কেন, আমরা জানি কম্পিউটারের ‘মেমোরি’ নিখুঁত। আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি সে তুলনায় ততটাই ভঙ্গুর। আমরা অনেকেই অফিস যাবার সময় গাড়ীর চাবি খুঁজে পাইনা, প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ খুঁজে পাইনা, চশমাটাও হারিয়ে ফেলি প্রায়শই। কাজের সময় বন্ধুর ফোন নম্বর মনে করতে পারিনা, প্রিয়জনের জন্মদিন বেমালুম ভুলে বসে থাকি। আমি একবার আটলান্টা সাউথ টার্মিনালে গাড়ী পার্ক করে তিন দিনের জন্য কাজে চলে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে আর মনে করতে পারছিলাম না আমি কি গাড়ি সাউথ টার্মিনালে পার্ক করেছিলাম নাকি নর্থ টার্মিনালে। রীতিমত ঘন্টাখানেক সময় লেগেছিল গাড়ি খুঁজে পেতে। নিউজ উইকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে মানুষেরা নাকি দিনে গড়পরতা প্রায় ৫৫ মিনিট সময় ব্যয় করে জানা জিনিস খুঁজে পেতে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ৬ ভাগ ক্ষেত্রে স্কাইডাইভারেরা মৃত্যুবরণ করে প্যারাসুটের রিপকর্ড খুলতে ভুলে গিয়ে।
তার চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হল – স্মৃতি আমাদের সাথে প্রতারণা করে। খুব স্পষ্ট ঘটনা – যেটা আমরা কখনোই ভুলে যাব না বলে মনে করি – সময়ের সাথে সাথে তার উপর জমতে থাকে যেন ধুলোর পুরু স্তর। বছর-খানেক পরে আমরা যখন ঘটনাটিকে মনে করতে চেষ্টা করি অনেক সময়ই তালগোল পাকিয়ে যায়, পুরো ঘটনা বিকৃত অবস্থায় আমাদের সামনে উঠে আসে। ঘটনার সূত্র যায় হারিয়ে পার্শ্বচরিত্রগুলো হয়তো বদলে যায়, ইত্যাদি। এলিজাবেথ লোফটাস (Elizabeth Loftus), ইরা হাইমেন (Ira Hyman), এল্ক গেরার্টস (Elke Geraerts) এর মত বিজ্ঞানীরা ‘ফলস মেমোরি’ (মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে কনফাবুলেশন) নিয়ে তাদের নানা গবেষণায় দেখিয়েছেন কীভাবে মানুষ স্মৃতি প্রতারণা আর স্মৃতিবিভ্রমের শিকার হয়ে ভুল ঘটনাকেই সত্য বলে মনে করে অনেক সময়। এমনকি না ঘটা কোন ব্যাপারও আমরা অনেক সময় সত্য বলে মনে করি, নিজেদের ‘উদ্ভাবনী শক্তি’ আর ‘সৃজনশীলতার’ বলি হয়ে। সেজন্যই আমরা যখন স্মৃতি রোমন্থন করি সেগুলো কোন ধরণের ‘রিপ্লে’ বাটন চেপে রিপ্লে করা হয় না, করতে হয় এক ধরণের ‘রিকন্সট্রাকশন’ বা পুনর্গঠন। এই পুনর্গঠন করতে গিয়ে প্রায়শই স্মৃতি এলোমেলো হয়ে যায়। কম্পিউটারে কিন্তু তা হয় না। যখন কোন ডকুমেন্ট কম্পিউটারে সংগ্রহ করে রাখা হয়, আপনি কম্পিউটারের বোতাম টিপে সেটি খুললে প্রতিবারই সেই একই ডকুমেন্টই খুলবে, কোন ধরনের ভুলচুক হবে না, কিংবা করবে না আপনার সাথে কোন ধরণের প্রতারণা। প্রতিবার ‘রিপ্লে’তে একই ফল আপনি আশা করবেন, এবং সেই রিপ্লে হয় প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই নিখুঁত।
আরেকটা বড় সমস্যা হল, আমাদের মস্তিষ্ক যখন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে, তা প্রায়ই আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী জায়গাগুলোর সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মস্তিষ্কের যে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাহায্যে আমরা বাইরের জগত থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করি – যেমন – ঐক্ষিক কর্টেক্স, শ্রাবনিক কর্টেক্স, থ্যালামাস, অ্যামেগডালা – প্রভৃতি প্রত্যঙ্গগুলো – সেগুলো আবার মস্তিষ্কে ভয় ভীতি, রোমাঞ্চ, আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রণেরও বড় উৎস। একটা সময় মানুষ যখন বনে জঙ্গলে ছিলো তখন সাপ কিংবা এ ধরণের বিষধর জীব বা কীটপতঙ্গ দেখলে ভয় পেয়ে পালাতে কিংবা আত্মরক্ষায় সচেষ্ট হত। এই ভীতির চাহিদা তৈরি করতে অ্যামিগডালা, ভিজুয়াল কর্টেক্স সহ নানা জায়গা উদ্দীপ্ত হত। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন আধুনিক যুগে কম্পিউটারের প্রবন্ধ পড়ে কিংবা ভিডিও দেখে তথ্য সংগ্রহ করার সময়ও কিন্তু সেই আদিম অঙ্গের ভিন্ন ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল থাকি। এর কিছুটা ভাল দিক আছে, আবার আছে কিছু মন্দ দিকও। চিন্তা করে দেখুন – আমরা চাবি কিংবা চশমা হারিয়ে ফেললেও, কিংবা বন্ধুর ফোন নম্বর, ঠিকানা কিংবা গতকাল কি দিয়ে প্রাতঃভোজন সেরেছি সেটা মনে করতে না পারলেও, আবেগময় ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত অনেককিছু খুব ভালভাবে মনে রাখতে পারি। আমার ঠাকুমা যেদিন মারা গেলেন সেদিনের প্রতিটি ঘটনা আমি এখনো মনে করতে পারি। আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে করতে পারি আমার বাবার যেদিন বাইপাস অপারেশন হয়েছিলো, সেদিনকার প্রতিটি ঘটনাও। সকালে কি দিয়ে নাস্তা করেছিলাম থেকে শুরু করে, কিভাবে ট্যাক্সি করে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো থেকে শুরু করে, অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে বাবা কী বলেছিলেন –সবকিছু। সে প্রায় আজ থেকে বিশ বছর আগেকার একটি দিন, কিন্তু সে দিনের কথা মনে করতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। এর কারণ আমার আবেগের সাথে এর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এ ব্যাপারটা শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয় অনেক বড় পরিসরেও প্রযোজ্য। আমি আমার আমেরিকান সহকর্মীদের সাথে কথা বলে দেখেছি – তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখটিকে খুব ভালভাবে স্মরণে রেখেছেন। তারা সেই স্মরণীয় দিনটির কথা ছবির মতো মনে করতে পারেন, সে সময় তারা কোথায় ছিলেন, কিভাবে টুইনটাওয়ার ভেঙ্গে পড়ার খবর শুনেছিলেন , কিভাবে অফিসের সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন, নিজেদের এবং পরিবারের নিরাপত্তায় উৎকণ্ঠিত হয়েছিলেন – সে সবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তারা দিতে পারেন কেউ জিজ্ঞাসা করলেই। আমাদের স্মৃতিগুলো কম্পিউটারের মেমোরির মতো আবেগ-মুক্ত নয়, বরং আবেগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।
চিত্র: তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত ঐক্ষিক কর্টেক্স, শ্রাবনিক কর্টেক্স, থ্যালামাস, অ্যামেগডালা – প্রভৃতি প্রত্যঙ্গ – সেগুলো আবার ভয় ভীতি, রোমাঞ্চ, আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রণেরও বড় উৎস।
আর স্মৃতি আবেগাপ্লুত হবার কিছু তো সমস্যা আছেই। আবেগকে যুক্তির সাথে আলাদা করতে সমস্যা হয়। মানুষকে ‘সৃষ্টির সেরা জীব’, ‘বুদ্ধিমান প্রজাতি’ প্রভৃতি হিসেবে গন্য করা হলেও অধিকাংশ মানুষই ধর্ম, কুসংস্কার, মিথ্যা বিশ্বাস থেকে নিজের যুক্তিকে আলাদা করতে পারে না, বরং নানা ধরণের মিথ্যা বিশ্বাস, অপবিশ্বাস আর কাল্টের কাছে আত্মসমর্পণ করে। কেউ বা হয়ে উঠে মাদকাসক্ত। আমরা অনেক সময়ই আমাদের আবেগী মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণের বশ হয়ে থাকি বলেই এমনটি ঘটে। শুধু ধর্মে বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেই যে এটি ঘটে তা নয়। ধার্মিক, অধার্মিক, নিধার্মিক, আধাধার্মিক, গোঁড়া, প্রগতিশীল সবার ক্ষেত্রেই এটি ঘটতে পারে। রাজনৈতিক ধ্যানধারণার ক্ষেত্রে সেটা আরো ভালভাবে বোঝা যায়। যিনি আওয়ামীলীগকে সমর্থন করেন, তাকে আওয়ামীলীগের হাজারটা দোষ দেখালেও বলবেন, আফটার অল বিএনপির চেয়ে ভাল। যিনি বিএনপির সমর্থন করেন, তিনি আবার বলবেন, দেশটাকে ভারতের লেজুড় হওয়া থেকে বাঁচাতে চাইলে বিএনপিই একমাত্র ভরসা। বিএনপি জামাত ওয়ালারা ‘নয়া-দিগন্ত’, ‘সংগ্রাম’ প্রভৃতি সংবাদপত্রের খবরকে প্রাধান্য দিলে আওয়ামিলীগপন্থিরা হয়তো চোখ বুজে প্রাধান্য দেয় জনকণ্ঠের মত পত্রিকাকে। আমেরিকায়ও দেখা যায় লিবারেলরা সিএনএন আর এনবিসি দেখলে রক্ষণশীলদের প্রিয় হচ্ছে ফক্স নিউজ চ্যানেল। যিনি সিগারেট খেতে পছন্দ করেন, তাকে সিগারেট পানের অপকারিতা সম্বন্ধে হাজার বার বলা হলেও তার মাথায় ঢুকবে না, বরং বলবেন ‘আরে একটা দুটো সিগারেট খেলে কিছু হয় না!’ যিনি জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস করেন, তিনি কেবল সেই দিনের রাশিফলের সেই ঘটনাগুলোই মনে রাখবেন, যেগুলো তিনি মনে করেন ‘মিলে গেছে’, আর যেগুলো মেলেনি সেগুলো তৎক্ষণাৎ ভুলে যাবেন। গ্যারি মার্কস তার বইয়ে দেখিয়েছেন, আমাদের মস্তিষ্ক যেভাবে বিবর্তিত হয়েছে তাতে ‘কনফার্মেশন বায়াস’ বা স্বীকৃতিগত পক্ষপাতদুষ্টতা’র উপকরণগুলো ‘ক্লুজ’ হিসেবে রয়ে গেছে। সেজন্যই দেখা যায়, কেউ আমাদের কাউকে পছন্দের তালিকায় থাকলে সচরাচর তার দোষত্রুটি খুব বেশি দেখতে পাই না, খুব বেশি তার আদর্শের সমালোচনা করি না। হ্যা, স্বজনপ্রীতির মতো শোনাচ্ছে – মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘halo effect’, আবার উল্টোদিকে কেউ আমাদের অপছন্দনীয় হলে কিংবা কারো আদর্শ নিজ আদর্শের সাথে না মিললে তার চোদ্দগুষ্টি নাশ করে ফেলি। এটাকে বলে ‘pitchfork effect’। খুব বেশি দূরে যাবার দরকার নেই, আমাদের ব্লগগুলোর দিকে তাকালেই এ ধরণের বিভিন্ন ইফেক্টের সত্যতা খুঁজে পাবেন পাঠকেরা।
তাহলে এ প্রবন্ধের উপসংহার কি দাঁড়ালো? দাঁড়ালো যে, মানব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্কও বিবর্তনেরই উপজাত, তাই এর প্রত্যঙ্গগুলোও ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, বরং এক ধরণের ক্লুজ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মানব মস্তিষ্ক পুরনো কাঠামো ভেঙ্গে রিডিজাইন করে তৈরি করা হয়নি বলেই প্রাচীন অঙ্গের উপর আধুনিক উপকরণ স্তূপীকৃত হয়ে বসেছে। সেজন্য আমাদের মস্তিষ্কে দু ধরণের ঐক্ষিক ব্যবস্থা দেখা যায় – একটি নতুন আরেকটি পুরাতন। আদিম জেলিফিশের নিউরন একইভাবে ব্যবহার করায় সেগুলো অদক্ষ, সেগুলোকে সঠিকভাবে কর্মক্ষম করে তুলার জন্য বিশাল আয়তনের নেটওয়ার্ক লাগে। এই বিশাল আয়তনের নেটওয়ার্ককে ধারণ করতে গিয়ে আমাদের মস্তিষ্ককে হতে হয়েছে আশাতীত বড়, সেটা আবার হয়েছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়েদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। আমাদের স্মৃতি নিখুঁত নয়, বহুলাংশেই ভঙ্গুর। স্মৃতি আমাদের প্রতারণা করে, আমরা মিথ্যা বিশ্বাসে আক্রান্ত হই, আক্রান্ত হই ‘কনফার্মেশন বায়াস’ দিয়ে কিংবা স্বজনপ্রীতি কিংবা ‘হ্যালো ইফেক্ট’ দিয়ে। আমরা শরীরের জন্য ক্ষতিকর জেনেও ধূমপান করি, কেউবা ড্রাগে আসক্ত হয়ে উঠি। এমনকি ড্রাগ ফাগ বাদ দিলেও, তেল চর্বি জাতীয় খাবারের প্রতি লালসাগ্রস্থ থাকি, সেগুলো দেহের জন্য খারাপ জেনেও। আমরা আমাদের জিনগত কোন উপকার না পেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভির সামনে বসে থাকি, অর্থহীন কমেডি দেখি, কিংবা কেউ হয়ে উঠে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। ক্লুজ, ক্লুজ, ক্লুজ! মস্তিষ্ক নিখুঁত ডিজাইনে তৈরি নয় বরং বিবর্তনেরই লক্ষ্যহীন ‘ক্লুজিয়’ ফসল। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী François Jacob সেজন্যই বলেছেন –
দৃশ্যমান জীবজগত আসলে ঐতিহাসিক কাঠামো – আক্ষরিকভাবেই এরা সব ইতিহাসের সৃষ্টি। তারা প্রকৌশলগত কোন নিখুঁত সামগ্রী নয়, বরং একধরণের জোড়াতালি (patchwork), যা তৈরি হয়েছে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অপদ্রব্যের সদ্ব্যবহারে।
পরের পর্বগুলোতে মস্তিষ্কের বিবর্তন নিয়ে বলার ইচ্ছে রইলো।
তথ্য সূত্র –
১) David J. Linden, The Accidental Mind: How Brain Evolution Has Given Us Love, Memory, Dreams, and God, Belknap Press, 2007
২) Gary Marcus, Kluge: The Haphazard Evolution of the Human Mind, Mariner Books;2009
৩) Gary Lynchand Richard Granger, Big Brain: The Origins and Future of Human Intelligence, Palgrave Macmillan, 2008
৪) Ammar al-Chalabi, Shane R. Delamont and Martin Turner , The Brain: A Beginner’s Guide, Oneworld; 2008
৫) Jerry A. Coyne, Why Evolution Is True, Penguin, Reprint edition, 2010
৬) Richard Dawkins, The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution, Free Press, 2009
৭) Neil Shubin, Your Inner Fish: A Journey into the 3.5-Billion-Year History of the Human Body, Vintage, 2009
দাদা আপনি ছিলেন আমার প্রিয় লেখক।আপনার লেখা ”অবিশ্বাসের দর্শন” পড়েই আমি সত্যের নাগাল পাই।
আপনি ছিলেন এক অসাধারন মেধা।
যতই আপনাকে হত্যা করা হোক আপনি আজীবন আপনার কাজের মাঝেই বেচে থাকবেন।
“”ঈগলের ডানা কেটে নিলেও
তার চোখ ঠিকই আকাশে ওড়ে””
আপনাকে অকালে হারালাম দাদা।আপনার লেখা পড়লে যেন আপনার দেখাই পাই।।।
আত্মায় অবিশ্বাস করা আপনিই আমায় শিখিয়েছেন।তাই আপনার আত্মার মঙ্গল কামনা আমি করি না।কারন আত্মা বলেই কিছু নেই।
দাদা আপনি ছিলেন আলো হাতে চলা এক আধারের যাত্রী যার জন্ম শূন্যে;এববগ অব:শেষে শুন্যেই আবার মিলিয়ে গেলেন।আর আমার মতন পাঠকদের জন্যে রেখে গেলেন অবারিত কষ্ট।আপিনাকে হারাবার কষ্ট যে এতো সহজে ভোলার নয়।
দাদা আপনাকে যে আপনার পাঠকেরা অন্তত ভুলবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন।
কোন কিছুই নিঁখুত নই দেখি।
দেখুন স্যার, বিবর্তন বলেন আর যাই বলেন, যেখানে অর্গানাইজেশন সেখানে অরগানাইজার থাকেই। এ মহাবিশ্বের সর্বত্র অর্গানাইজড একটা ব্যাপার লক্ষ্য করি। তাছাড়া আমরা নিজের সাথে পরিচিত হই ৩/৪ বছর বয়স থেকে আবার ৮০/৮৫ তে আবার অনেকে নিজেকে চিনেনা। কাজেই আমরা অনেক জানি আবার কিছুই জানিনা। তবে আমি যেখানেই থাকি/বা না থাকি বিশ্বভ্রম্মান্ডের অর্গানাইজেশন ঠিকই চলে। বস্তুজগত আর কালের ধারনার উর্ধ্বে এক সত্তা অবশ্যই আছে। কিন্তু তার পরিচয় যারা পায় তারা অনেক সময় পাগল বলে পরিগণিত হয়। কেননা সেই পরিচিতির পর এই জগতের সব ধারনা তার কাছে হাসি তামাশা মনে হয়। যাই হোক আমি একথা বলছিনা পাগলরা সব ফানফিল্লাহ জগতের লোক। তবে যে বিষয়ের যার জ্ঞান নাই সে বিষয়ে তার মন্তব্য সাধারণতঃ ভুল হয়।
আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, ভবিষ্যতে কি মানুষের মস্তিষ্কের কোডগুলো কি কোনো ভাবে সংরক্ষণ করা যাবে?
আপনাকে কে সৃষ্টি করেছেন?স্রষ্টা প্রদত্ত জ্ঞান দিয়ে তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন?ছিঃ ছিঃ.!
লেখাটা খুব মনযোগ দিয়ে পড়লাম। ভালই লেগেছে
বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন করা অত্যন্ত দুর্লভ এক প্রতিভা। আপনার প্রবন্ধ পড়ার সময় ভুলে যাই যে “জটিল” বিষয়ের আলোচনা হচ্ছে। বুঝতে কোনই অসুবিধা হয় না। (F) (F)
মন্তব্য নিস্প্রয়োজন , এক কথায় অসাধারন (F)
তবে একটা প্রশ্ন ছিল বিবর্তনের ধারায় DNA এর মত এত জটিল একটা জিনিস কি করে সৃষ্টি হল ?
অধির আগ্রহ নিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম । ধন্যবাদ
@আস্তরিন,
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ডিএনএর মত জটিল অনু কেমন করে তৈরি হল সেটা নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। সবকিছু যে আমরা জানে গেছি তাও নয়। এটা আসলে এবায়োজেনেসিস বা অজৈবজনি সংক্রান্ত গবেষণার সজীব বিষয়।
ধারনা করা হয় – ডিএনএ তৈরি বা বিবর্তিত হয়েছে এর আগের কোন সরল রেপ্লিকেটর থেকে। বহু বিজ্ঞানী আরএনএ কে যোগ্য ক্যান্ডিডেট মনে করেন (RNA world অনুপল্প)। আরএনএরও আবার সরল পূর্বসূরী থাকতে পারে যেমন – পেপটাইড নিউক্লিয়িক এসিড (PNA) বা থ্রেওস নিউক্লিইয়িক এসিড(TNA)। সেখান থেকে বিভিন্ন ধাপে সেলফরেপ্লিকেটিং অণু তৈরি হয়েছিলো, তারপর তা চলে গিয়েছিলো আরএনএ জগতে, আর শেষমেষ বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে পদার্পন করেছিলো ডিএনএ প্রোটিন ওয়ার্ল্ডে (JL Bada র এই পেপারটিতে সারমর্ম পাবেন)।
কীভাবে এগুলো হয়েছিলো তার পেছনে ধাপগুলো এক কথায় বর্ণনা করা এখানে কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। সবগুলো ধাপ সম্বন্ধে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। এর বাইরে প্যানস্পারমিয়ার একটা অনুকল্পও আছে। আমি আর ফরিদ ভাই ২০০৭ সালে একটা বই লিখেছিলাম মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে , পড়ে দেখতে পাড়েন – সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম বাঙালি পাঠকদের জন্য।
সমগ্র প্রানী কুলের প্রতিনিধিত্ব কারী মানব জাতি। আর মানুষের সব কিছুর নিয়ন্ত্রক তার সবচাইতে রহস্যময় এবং সবচাইতে জটিল অঙ্গ মস্তিস্ক। সম্ভবতঃ মস্তিস্কের অনেক অংসের কাজ এখনো বিজ্ঞানীদের নিকট অজ্ঞাত। আবার FRONTAL GYRUS এর একটা বিরাট অংস নাকি এখনো সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। বিজ্ঞিনীদের ধারনা বিবর্তন ধারার প্রয়োজনের সময় প্রয়োজন অনুসারে এটা কার্যকরী হয়ে উঠতে থাকবে,ঠিক যেমনটা রিজার্ভ ফান্ড বা রিজার্ভ গোলা বারুদ প্রোয়জনের সময়ের জন্য জমা রাখা হয় এবং প্রয়োজনের সময় তা ব্যবহার করা হয়।
এহেন সবচাইতে রহস্যময় অংগটি লয়ে লিখতে নামা বিরাট সাহসিকতার ব্যাপার বটে!!
ধন্যবাদ আপনার সাহসের। অপেক্ষায় থাকিলাম এহেন রহস্যময় অংগ সম্পর্কে আপনার সাবলীল ভাষায় বর্নণা পাওয়ার জন্য। আপনার দেওয়া উপমা,উদাহরন ও ছবি গুলী অত্যন্ত সুন্দর বিশ্লেষক বা বুঝাইতে সহায়ক।
ধন্যবাদ।
(Y) ‘মোটা’ মাথাকে জানার হাতেখড়ি ভালই হল। এক্টা ওয়ারলেস নারভাস সিস্টেমের অভাব বোধ করছি – ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বলে দোষ দিবেন না কেউ :))
তাইলে এইটাই মাথামোটার কারণ ! হায় হায়, মস্তিষ্ক নামের এই মহান হিরোর উপর থেকে এতোকালের ভক্তি-শ্রদ্ধা সব নষ্ট করে দিলেন তো !! এখন তো সত্যি সত্যি নিজেকে মাথামোটাই মনে হচ্ছে !! হা হা হা !!
খুবই আকর্ষণীয়, সাবলীল ও চমৎকার লেখা হয়েছে !
আপনি বলছিলেন কোন কারণে মস্তিষ্কের এই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষের ব্যক্তিত্বের বড় সড় পরিবর্তন ঘটে।
আমার চাকরী সুবাদে বেশ কিছু ট্রম্যাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরীর কেইস দেখতে হয়।
যদিও এটি নির্ভর করে আঘাতের স্থানের ওপর তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় শরীর বৃত্তীয় কাজ গুলো ছাড়াও ভুক্তভোগীদের অরগানাইসেশনাল স্কিল আগের মত কাজ করে না,কাজের সিকুয়েন্সে গুলো এলোমেলো হয়ে যায়, স্পীচ ক্লেয়ারিটি নষ্ট হয় এমন কি হাতের লেখায়ও পরিবর্তন আসে। ট্রম্যাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরীর ঘটনা গুলো ঘটে সাধারনত ড্রাইভিং এবং ডাইভিং এর দু্র্ঘটনার কারনে।পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রতি বছর আমেরিকায় ১.৪ মিলিয়ন ব্যাক্তি মস্তিষ্কের আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছেন এবং এর দীর্ঘকালীন প্রভাব নিয়ে জীবন যাপন করছেন প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন , এগুলো ২০০৯ এর পরিসংখ্যান , নিশ্চিত এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেখুন ফ্লোরিডা statute 381 কি সুচারু ভাবে ট্রম্যাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরী কে ব্যাখা করছে ” An insult to the skull, brain or it’s covering , resulting from external trauma which produces an altered state of consciouness or anatomic , motor, sensory, cognitive or behavioral deficit.”
আপনার সুলেখন অনেকের মত আমাকেও আকর্ষন করে । মন্তব্য করবার ইচ্ছে হোল কেননা যা নিয়ে লিখছেন তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমার হয়।
@কেয়া রোজারিও,
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন বলে তা আরো হৃদয়গ্রাহী হয়েছে। মুক্তমনায় লেখা দিচ্ছেন না কিন্তু অনেকদিন ধরে …।
বিরিঞ্চিবাবায় আইস্যা পড়ছে! ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’! কলা খাইয়া বিরিঞ্চিবাবায় প্রমাণ করিল উনিই আদি অকৃত্রিম বিরিঞ্চিবাবা।
হ, হের লাইগ্যাই বাকযন্ত্রের স্নায়ুর এক ফুটের রাস্তা যাইতে গিয়া প্যাচায় ঘুচায় উইঠা নাইমা তিনফুট রাস্তা কভার করা লাগে, পুরুষদের বুকে নিপল সাপ্লাই করা লাগে, চোখে ব্লাইন্ড স্পট দেওন লাগে, ব্যাক পেইন দেওনের লাইগা এক কলামের মেরুদণ্ড লাগে, আর অপারেশন কইরা ফালায় দেওনের লাইগা এপেন্ডিক্স লাগে, জেনেটিক রোগ সৃষ্টিকরন লাগে, অটিস্টিক বেবি পৃথিবীতে পাঠানো লাগে, ডিজাইন কইরা সুনামি ভুমিকম্প আর বন্যায় হাজার হাজার মানুষ মাইরা ফেলানো লাগে। নিঃসন্দেহে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন। তবে এতো প্যাচালে গিয়া কাম নাই – আমি স্বীকার করতেছি, এই বিরিঞ্চিবাবার মতোন জীব যে সৃষ্টিকর্তা পয়দা কর্ছে সেইটা নিঃসন্দেহে মারাত্মক ইন্টেলিজেন্টই হইব, মাশাল্লাহ – ‘দেখুন এবং ভাবুন’।
বিরিঞ্চিবাবারে ক্যামনে বুঝাই ডেভিড লিন্ডেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক। গ্যারি মার্কস নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। এদের গবেষণাগুলা পড়লে আর ব্রেনের বিবর্তন নিয়া বিজ্ঞানীদের রিসেন্ট কাজগুলা জানলেই বুঝা যাইতো কেন আনইন্টেলিজেন্ট বলা হইতাছে; আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার না হোমিওপ্যাথির পুরিয়া সাপ্লায়ার সেই চিন্তা আপাততঃ বিবিঞ্চিবাবার না করলেও চলব। আর উনার ভানা ধান উনি নিজের পশ্চাতদেশে গুঁজিয়া রাখিতে রাখিতে উনি উনার মহান সৃষ্টিকর্তার তারিফ করিতে পারেন, আমার কোন সমস্যা নাই।
@অভিজিৎ, :hahahee: :hahahee:
@অভিজিৎ, আপনার বক্তব্য ভালো লাগলো। আমি বরাবরই অশিক্ষিত এবং অজ্ঞানের বালখিল্য যুক্তির কাউন্টার হিসেবে বিজ্ঞানের মতো সফিস্টিকেইটেড একটি বিষইয়কে ইনভোক করার ঘোরতর বিরোধী। বস্তুত এইধরনের পাগলছাগলদের সাথে ব্যঙ্গ এবং বিদ্রুপের চেয়ে তিলমাত্র বেশী সফিস্টিকেইটেড কিছু ইনভোক করা হয়ে থাকলে আমি সেটারই বিরোধী। কিংবা সেটাও এমনকি করা সম্ভব না হলে ইগ্নোর করাটাই সমীচিন। ফারুক তার মতো বিছমিল্লা বলে বলে ভিডিও লেদিয়ে যেতে থাকুক; সেদিকে কর্ণপাত না করাটাই উচিত।
এই তত্বের সত্যতা নিরুপনের জন্য একটি এক্সপেরিমেন্ট ডিসাইন করেছি আমি। সেটা হোচ্ছে- ফারুককে দিয়ে ধান ভানানোর চেষ্টা করা হোক। চেষ্টা যদি সফল হয়ে থাকে তাহলে উপরোক্ত তথ্য ১০০% নিশ্চয়তা সহকারে মিথ্যা প্রমানিত হয়ে যাবে :lotpot: :lotpot: :lotpot:
পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায় , এ কথাটা মাথায় রেখে এই পোস্টটিতে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলাম। কিন্ত অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করি গুরু ও তার অন্ধ স্তাবকদের , যাদের ভাবার কথা বল্লেই মাথায় আগুন উঠে যায় , প্রশংসা শুনতে শুনতে লিবিডো যার মাথায় উঠে গেছে , তার চ্যালেন্জ গ্রহণ না করলে বাবুর পা হয়তো আর কোনদিন মাটিতে পড়বে না এবং ভাবুক পাঠকদের জন্য হলেও কিছু বলা দরকার।
হ্যডমের নিদর্শন যদি হয় – ‘ভিডিও বিরিঞ্চিবাবা’ নামকরন’ এবং কিছু মূর্খকে গালি দিতে লেলিয়ে দেয়া , তাহলে আপনি সফল। আশা করেছিলাম – নিজেদের লোক হাসানো বক্তব্যের জন্য আপনারা ভুল স্বীকার করবেন বা ভিডিওর বক্তব্য কেন ভুল , সেটার ব্যাখ্যা দেবেন। কিন্তু সেটা দুরাশা হয়েই রইল।
মেক্যানিকাল ইন্জিনিয়ার যদি জীবের ডিজাইনের ভুল ধরতে আসে , তবে এর থেকে ভাল পোস্ট আর পাওয়া যাবে না। মানুষের ডিজাইন করা যন্ত্র , যেমন রেডিও টেলিভিশন কাজ শুরু করে পুরোটা এসেম্বল করার পরেই। কিন্তু জীব নামক যন্ত্রটির কাজ শুরু হয় ডিম্বকোষকে স্পার্ম যেদিন নিষিক্ত করে জাইগোট হয় , সেদিন থেকে। মানব যন্ত্রটিকে এক কোষী জাইগোট থেকে পূর্নাঙ্গ মানুষে পরিনত হতে বিভিন্ন স্টেজ ও ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এক স্টেজের প্রয়োজনীয় কোন অরগানের ভূমিকা শেষ হয়ে গেলে , পরবর্তি স্টেজে সেটা রিডানডেন্ট হয়ে যায় । উদাহরন স্বরুপ থাইমাস বা এপেনডিক্সের কথা বলা যায়। রিডানডেন্টগুলো মেক্যানিকাল ইন্জিনিয়ারের চোখে আনইন্টেলিজেন্টই মনে হবে , কারন উনি তো শধু মাত্র ফিনিশ্ড প্রডাক্টের ডিজাইন করেন। উনি যদি জানতেন থাইমাস না থাকলে মানুষের শরীরে ইম্যুনিটি গড়ে উঠত না বা জীবণের প্রথম ভাগে এপেনডিক্স নিঃসৃত হরমোন না থাকলে এই মানব যন্ত্রটিরই আর কোন অ্স্তিত্ব থাকত না তাহলে আনইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বলার জন্য ভাটুই গাছে গলায় দড়ি দিতেন।
বাকযন্ত্রের স্নায়ুর বা ব্রেণের ডিজাইন ডেভেলপমেন্টাল দৃষ্টি কোন থেকে দেখলে , এর থেকে ভাল বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন চিন্তাও করা যায় না। এত মডেল যখন দেখালেন , তখন ব্রেণের একটি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন করে আমাদের সামনে পেশ করুন , আমরা দেখি ও তারিফ করি!!
আমাদের দেশে একটা কথা আছে , ছাগল দিয়ে ধান ভানা যায় না। মেক্যানিকাল ইন্জিনিয়ার যদি মানুষের ব্রেণের ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন করে , তাহলে ছাগল দিয়ে ধান ভানার মতোই হবে।
@ফারুক,
তথ্যটি কতটুকু সঠিক সে দিকে না গিয়ে আপনার কথা ধরেই বলি, কারো ঘিলুর অভাব না থাকলে এমুন ডিজাইন করবেন না যা পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আজ সকাল থেকে পড়ছি শুধু বিবর্তন নিয়ে, সচল আর মুক্তমনাই ভরসা। এতদিন কিছু কিছু সন্দেহ থাকলেও আজকে অনেক কিছু পরিস্কার!
অসম্ভব চমৎকার একটা লেখা। পরেরটার সাথে থাকব আশা করছি।
এতো চমৎকার এবং ‘বড়’ একটা লেখা পইড়া সবাই কি ভালু ভালু মন্তব্য করলেও আমার মাথায় আসলো একটাই প্রশ্নঃ অভিদা কি আল্লাত্তে বেশি বুঝে? :))
কিছুই বলার নাই। বাংলা ব্লগে বিজ্ঞান লেখায় অভিজিৎ’দার প্রতিদ্বন্দী উনি নিজেই। :guru: :guru: মাঝে মাঝে উনার লেখা পড়ে প্রচন্ড হিংসা হয়!(বিবর্তনের উপজাত হিসেবে হিংসাটা বেশ ভালোভাবেই রয়ে গেছে আমার মধ্যে!কয়দিন আগে ‘ভালোবাসা কারে কয়’ শেষ করলাম,সেই থেকে শুধু এইসব ঘুরছে মাথায়! 😛 )
@নিটোল,
আমি কিন্তু আপনার দুর্দান্ত লেখাগুলো দারুনভাবে মিস করি। আপনার লেখা অনেকদিন ধরেই দেখছি না। লিখুন আমাদের জন্য …
@নিটোল আপনার জাফর ইকবাল স্যারকে নিয়ে লেখাটা খুব ভাল লেগেছিল। লেখা বন্ধ করবেন না। আপনি খুব গুছিয়ে বলতে পারেন।
জানার ক্ষুধা মিটলো না। পরের পর্ব কবে আসবে? হাতির সাইজের লেখা এক শ্বাষে পড়ে ফেললাম; মনে হলো ইঁদুর সাইজ; আরও বেশী লিখলে ভালো হতো।
শুভ কামনায়…
মস্তিষ্কের নক্সার মত ‘ভয়ঙ্কর’ একটা বিষয় নিয়ে লেখা শুরুর জন্য বাহবা আপনার পাওনা। এত ধৈর্যসহকারে যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য লেখা যিনি লিখতে পারেন তার হাত থেকে সংগ্রহে রাখার মত লেখা আশা করায় কোন অন্যায় নেই।
প্রথমেই যেটা পাঠকদের জানিয়ে ভালো করেছেন যে, মস্তিষ্কের নক্সা বহুরূপী। কে কোন প্রকারের মস্তিষ্কের নক্সা অঙ্কন করবেন সেটা সম্পূর্ন নির্ভর করবে নক্সাকারের উদ্দেশ্যের উপর। মস্তিষ্কের চিত্রায়ণ প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের আঞ্চলিক-উপ আঞ্চলিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে নক্সা করতে হয় নিউরোবিজ্ঞানের চাহিদার কথা মাথায় রেখে , আবার আণবিক জীববিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের আণবিক গঠন কিংবা অনু গুলির রাসায়নিক কাঠামো এবং অবস্থানের নক্সা নিয়ে কাজ করতে হয়। প্রশ্ন এবং একই সাথে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যে মস্তিষ্কের বিবর্তনীয় নক্সা নিয়ে যখন আলোচনা হবে তখন আমরা কোন নক্সাকে সামনে নিয়ে আসবো ?
অভিযোজন বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।অভিযোজন ব্যতীত মানুষের মত একটা বহুকোষী স্তন্যপায়ী প্রানী হয়তো অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। সে কারণে একটি প্রাণীর ভৌত বৈশিষ্টে কিংবা আচরণে পরম ‘স্বাভাবিক’ কিংবা ‘অস্বাভাবিক’ অথবা ‘ভূল-সঠিক’ জাতীয় মানদন্ডের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে।
মানব দেহের কিছু জিন শুধুমাত্র স্নায়ুতন্ত্রে কাজ করে থাকে , মস্তিষ্কে এদের সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০। এসব জিন তুলনায় আকারে অনেক বড় হয় – প্রায় ৫ কিলো বেইজ যা অ-মস্তিষ্ক টিস্যর এম আরএনএ-র দ্বিগুন। এছাড়াও আছে সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মত আয়স চ্যানেল। এদের সকলেরই আছে মস্তিষ্ক পরিচালনায় নিজ নিজ ভুমিকা , বিবর্তনীয় ইতিহাস – যার কিছু আমরা জানি , কিছু এখনও জানিনা।
মস্তিষ্ক নিয়ে আপনার এই লেখাটায় আগামীতেও নিয়মিত সঙ্গী হবার আশা ব্যক্ত করছি। ঈর্ষণীয় লেখনী ক্ষমতার জন্য আবারো অভিনন্দন। 🙂
@সংশপ্তক,
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য সবসময়ই আমি গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করি। এটাও ব্যতিক্রম হল না। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় জানা হল, যেটা আমার পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য কাজে লাগবে।
অবশ্যই। আপনি কি এখানে ‘আয়ন’ চ্যানেল বলতে চেয়েছেন? ব্রেনের নিউরনগুলো যে একধরণের সোডিয়াম পটাসিয়াম কন্সেন্ট্রেশন ব্যাটারির মত কাজ করে তা মোটামুটি জানি। কিভাবে সোডিয়াম কনসেন্ট্রেশনের কারণে ভিতর থেকে বাইরে যায় আর পটাসিয়াম বাইরে থেকে ভিতরে – এবং কী করে সিনেপ্টিক ক্লেফট এলাকায় ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল কেমিক্যাল সিগন্যালে রূপ নেয় তারপর আবার ইলেকট্রিকাল সিগন্যালে রূপ নিয়ে ডেন্ট্রাইটের মাধ্যমে কোষদেহে পৌঁছায় – সেটা নিয়ে লিখার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু এই পর্বে আর হয়ে উঠলো না। হয়তো পরের পর্বে আসবে।
পরের পর্বে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিবর্তন এর বেসিকগুলো নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। কাঠামোগত দিকগুলো সমস্যা না করলেও আনবিক জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলো যেহেতু আমার অঞ্চলের বিষয় ছিলো না, সেগুলোর ব্যাপারে হয়তো আপনার সাহায্য লাগবে। বিশেষ করে আনবিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে মস্তিষ্কের বিবর্তন নিয়ে ভাল বই এবং গবেষণাপত্রের সন্ধান পেলে জানাতে পারেন। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে এখনই প্রশ্ন করছি। 🙂
লিন্ডেনের Accidental Mind বইয়ে মানুষের মস্তিষ্ক একটা সময় হঠাৎ বিবর্ধনের পেছেন ASPM জিনের ভুমিকা থাকার একটা জোরালো অনুমান করেছিলেন। এ নিয়ে সাম্প্রতিক কোন কাজের হদিস কি আপনার জানা আছে?
মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@অভিজিৎ,
এটা তো বেশ আগেই ফলসিফাইড হয়ে গেছে , মানে হাইপোথিসিসটা আসলে মাঠে মারা গেছে বললে ভাল শোনায়।
No evidence that polymorphisms of brain regulator genes Microcephalin and ASPMare associated with general mental ability, head circumference or altruism .
গবেষণার লিঙ্কটা এখানে :))
@সংশপ্তক,
থ্যাংকস। ভাল করসেন এটা ক্লিয়ার করে। বাকি আলোচনা ইমেইলে হবে নে। 🙂
অনেক অনেক দিন পর আদি ও অকৃত্রিম অভিজিৎদাকে ফিরে পাওয়া গেল। বিজ্ঞানকে জলবৎ করে সুরের ঢেউ তুলতে পারে যে ভাষা, যে ভাষা পেয়েছিলাম ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রীতে’, তাই যেন ফিরে এলো এ লেখাতে!
আমরা এমন শুকনো পাউরুটি আরো বেশী করে চাই, দরকার নেই আমাদের ফ্রেস রুটির! 🙂
কিভাবে দেহের সিংহভাগ শক্তি খরচ হয়ে যায় মস্তিষ্কের পেছনে, তা আর একটু বিস্তারিত যদি আগামীতে জানান, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।
বটে! আশরাফুল মখলুকাতের এই দশা!
:hahahee: :hahahee: সুতরাং, এমন কিছু ঘটলে আপনি কিন্তু মাপ করে দেবেন, কারণ এটা তো মাথার বিবর্তনীয় ত্রুটি, মানুষের কিছুই করার ছিল না!
@কাজি মামুন,
অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
তাইলে আর কি! বেশি করে রুটি খান, ভাতের উপর চাপ কমান । 🙂
সহজ করে বলি। আপনার শরীরের কোষগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য শক্তি দরকার। আমরা যে খাবার খাই তা সেই শক্তি কোষে সরবরাহ করে। খাবারগুলো কোষে রাসায়নিক শক্রির যোগান দেয়, ঠিক যেমন গাড়ীর পেট্রোল যোগান দেয় গাড়ীর চালানোর জন্য শক্তির। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন দেহের অন্যান্য কোষের তুলনায় মস্তিষ্ক কোষকে সচল রাখার জন্য দ্বিগুন শক্তির দরকার হয়। এর কারণ হচ্ছে নিউরোনগুলোর মধ্যে সবসময়ই এক ধরণের ‘মেটাবলিক এক্টিভিটি’ বজায় থাকে, এমনকি আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও। আর তাছারা মস্তিষ্ক কোষগুলো দেহের অন্যন্য কোষের মত ‘রিজেনেরেশন’ হয় হায় না। ফলে সব মিলিয়ে এর জন্য ‘খাদ্য’ অনেক বেশি লাগে।
আমি মাপ করলেও এই ব্লগের বিবর্তন জানা পণ্ডিতেরা মাপ করবেন না নিঃসন্দেহে। বিবর্তনীয়ভাবে কোন কিছু ব্যাখ্যাকরার মানে কিন্তু কারো আচরণ কিরকম হওয়া ‘উচিৎ’ তা নয়। আরো পরিস্কার করে বললে বিবর্তন কোন অথোরিটি দাবী করে না। কাজেই বিবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কেউ ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা সমাজে প্রয়োগ করার ঔচিত্যের আহ্বান জানালে সেটা নিঃসন্দেহে একটি ভ্রান্তি বা হেত্বাভাস হবে (“Is” vs. “Ought” fallacy)। বিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে সিংহ কেন অন্য গোত্র দখল করে বাচ্চা কাচ্চা মেরে খেয়ে ফেলে তার মানে এই নয় যে আমরা বলছি সমাজ সেরকম হওয়া উচিৎ, কিংবা সেটা সমর্থনযোগ্য 🙂
লেখা একখান। বাপরে বাপ!! (F)
আমার নিজের মস্তিষ্ক যে আনইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনারের হাতে করা এতে আর কোনো সন্দেহ নেই আমার। 🙁
ভিডিও আক্রমণ এখনও শুরু হয় নি দেখে বেশ অবাকই আমি। আক্রমণ হলে সে না বোঝা যেতো অভির হ্যাডম কতটুকু আছে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
হেঃ হেঃ ভিডিও বিরিঞ্চিবাবারা কেন এখনো নাই সেইটা অবশ্য আমারো প্রশ্ন। তবে আসলে দেখা যাবে নে কি করা যায়। আর আমার হ্যাডম না থাকলেও এই ব্লগে আল্লাচালাইনার মতো অনেকেরই হ্যাডম আছে ‘দেখুন এবং ভাবুন’ বিরিঞ্চিবাবাদের লিবিডো শান্ত রাখার, কি কন! 🙂
চমৎকার ! খুব কঠিন একটি বিষয়কে যথা সম্ভব সহজভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
এটি পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম… আমাদের চারপাশের কথা, ব্রেনের সর্বনিম্ন ব্যবহার কারী মানুষজন কি অদ্ভুতভাবে ঈশ্বর/আল্লাহ/ভগবান ইত্যাদি বিশ্বাস করে আর ব্রেনের তথা মানবশরীরের গঠনপ্রনালী নিয়ে—ছুবাহান্নালাহ ছুবাহান্নালাহ করে! 🙂
আগে খালি শোনতাম – মানুষের শরীরের কোন কিছুই মহান স্রষ্টা অপ্রয়োজনে তৈরি করেন নি ,বেশ কবছর আগে সেই জায়গায় প্রথম খটকা লাগে যখন আমার এক আত্মীয়র ‘এপেন্ডিক্স অপারেশন’ করা হয় । ওইসময় জানতে পারি এপেন্ডিক্স মানে অতিরিক্ত অংশ- যা কোন কাজেই লাগে না উল্টো ব্যাথা উঠলে এটা কেটে ফেলে দিতে হয়! -সেই সময় কয়েকজনকে মহান স্রষ্টা কেন এপেনডিক্স দিলেন মানুষের শরীরে?- এই প্রশ্ন করলেও তারা কোন সদুত্তর দিতে পারতেন না ।
আপনার ব্রেন নিয়ে সিরিজ আশা করি ফলো করব । মানুষ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসবে – এই আশাবাদ সবসময়ের।
মানুষের ব্রেইনের বিষয়টা খুবই কঠিন, তবে এত সহজভাবে লেখার জন্যে তা মনেই হয় না। একটা প্রশ্ন আসছে মনে- তবে কি মানুষের মস্তিস্ক সময়ের সাথে সাথে আয়াতনে বাড়তে থাকবে, স্কুপ ত্বত্ত্ব অনুসারে? ধরা যাক, দুই লক্ষ বছর পর মাথার আকার তাহলে কেমন হতে পারে? আপনার লেখা পড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির আগে ভয়াবহ সংখ্যায় প্রসুতি মৃত্যুর কারন সম্পর্কে জানতে পারলাম।
অনেক ধন্যবাদ। :thanks:
@শাখা নির্ভানা,
সেটা হবে কিনা তা হলফ করে বলার কোন উপায় এই মূহুর্তে নেই। আমরা মানব প্রজাতির ভবিষ্যত নিয়ে হয়তো ধারণা করতে পারি, কিন্তু সে ধারণা মোতাবেকই সবকিছু হবে কীনা তা বলা যায় না। বিবর্তন ভবিষ্যদ্বানী কিছু করলেও, বিবর্তন অনেকটাই ইতিহাস আশ্রয়ী বিজ্ঞান। ইতিহাস থেকে স্বার্থকভাবে ব্যাখ্যা হয়তো করা যায়, কিন্তু ইতিহাসের নিরিখে ভবিষ্যতের কোন কিছু ঘটবে বললে সেটা যে ঘটবেই তা হলফ করে বলা যায় না। আসলে এর পেছনে ভ্যারিয়েবল থাকে প্রচুর। তাই আমরা কেবল প্যাটার্ন অনুসন্ধান করতে পারি, জ্যোতিষীদের মত ভবিষ্যদ্বানী নয়। জেরি কোয়েনের ভাষায় বিবর্তনে আমরা যেটা করি সেটা প্রেডিকশন নয়, রেট্রোডিকশন।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ডঃ অভিজিৎ রায়ের নতুন ক্লাসিক – মস্তিষ্কের গঠন। মেডিকেল ফিজিক্স পড়ার সময় বাধ্যতামূলক ভাবে এনাটমি ও ফিজিওলজি পড়তে হয়েছিল। তখন আমার যে এনাটমি টিচার ছিল – ইচ্ছে হচ্ছে তাকে এই লেখাটা পড়তে দিই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যাটা বাংলা জানে না। কী কারণে যে তারা ল্যাটিন নামগুলো মনে রাখার ওপরই এত জোর দেয়। এ প্রবন্ধ থেকে আমি যতটুকু মস্তিষ্কের কাজ ও গঠন শিখলাম – এনাটমি ফিজিওলজির ব্রেন চ্যাপ্টার থেকেও তা শিখতে পারিনি।
– যুক্তিবাদীদের কাছে একটা অনুরোধ আমি সবসময় করি তা হলো ঠাট্টা করে হলেও ‘অলৌকিক’ কারণ জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার না করার জন্য। এসমস্ত ভিত্তিহীন শব্দগুলোকে নিয়ে পরে অনেকে অহেতুক টানাহ্যাঁচড়া করেন।
টাইপোগুলো বেছে দিলামঃ মৎসজাতীয়, আনবিক, ধারনায়, নীচ, বেঁছে, সেরেবেল্লাম,কড়াতে, জৈবপিরিবাহী, পরিবাবাহিত, আমদের,
@প্রদীপ দেব,
খুবই একমত। আপাতত ব্যাখ্যা করতে মানুষ অসক্ষম এমন কোন ঘটনার উল্লেখের বেলায় যুক্তিবাদীদের সচেতনভাবে এইটাও উল্লেখ করা উচিত যে- এই ব্যাখ্যা করার অসক্ষমতা কোনভাবেই অবৈজ্ঞানিক কোন মতাদর্শ যেমন- ক্রিয়েশনিজম বা অল্টার্নেটিভ মেডিসিনিজমের কোন দাবীর সমর্থনকারী কোন এভিডেন্স নোয় কোনভাবেই। ফিনিয়াস গেইজের ঘটনাটি আমি আগে লিখেছিলাম আমারব্লগে। এইটা লিখতে গিয়েই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন ত্যানাপ্যাচাপেচির অবকাশ আমি রাখতে যাচ্ছি না 🙂
অভিজিত রায়ের আরও একটি চমতকার প্রবন্ধ; আকৃতিতে বড়ো ঠেকলেও এক শ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। বস্তুত স্কইইডের নিউরন এবং অন্যান্য প্রাণীর নিউরণের গঠন ও কাজ এতোটাই একইরকম যে- নিউরনের কাজই মানুষ জেনেছিলো জায়ান্ট স্কুইড এক্সনকে নিউরাল ট্রান্সডাকশন অধ্যনের মডেল হিসেবে। এর কারণ হচ্ছে জায়ান্ট এক্সন ডায়ামিটারে প্রায় ১ মিলিমিটার! এর বিশাল আকৃতিরর জন্য এটাতে প্যাচ ক্লাম্প করা খুবই সহজ। এই গবেষণাটির জন্য নোবেল জিতেছিলেন স্যার এলান হযকিনা ও স্যার এন্ড্রু হাক্সলি। তবে জায়ান্ট স্কুইড এক্সন মাইলিনেটেড ছিলো না যেটার কারণে এটার মধ্য দিয়ে একশন পটেনশিয়ালের গতিবেগ ছিলো অনেক কম (তথ্য চুইয়ে পড়ার কারণে as said 🙂 )। অপরপক্ষে পরবর্তীতে বিকশিত অন্যান্য জীবেদের এক্সন আমরা দেখি মাইলিনেটেড। যেটি কিনা নির্দেশক করে মাইলিন বিবর্তিত হয় এক্সনের বিবর্তনের পর। ইন্টেলিজেন্টলি ডিজাইনড হলে তো আর এইটার মধ্যে পরবর্তীতে মাইলিন বা অন্য কোন ফার্দার এনহান্সমেন্টের প্রয়োজন হতো না।
@আল্লাচালাইনা,
জোশ! (Y)
আপনি যে কেন এত কম মন্তব্য করেন হেইটাই বুঝি না! আপনের সক্রিয় অংশগ্রহণ সবসময় কামনা করি।
@প্রদীপ দেব,
অনেক ধন্যবাদ প্রদীপ। আসলে নীচের লাইনেই প্রায় অবিশ্বাস্য শব্দটি ব্যবহার করেছি। তাই অলৌকিক শব্দটি ব্যবহার করতে হয়েছিলো দ্বিরুক্তি আর একঘেয়েমি এড়াতে। উচিৎ হয়নি মনে হচ্ছে। আপনার এবং আল্লাচালাইনার পরামর্শ মোতাবেক অলৌকিক শব্দটা উঠিয়ে দিলাম। ‘খুব অদ্ভুতভাবে’ ব্যবহার করলাম।
চমৎকার। ঠিক করছি একটু পরেই। কিন্তু নীচ শব্দটার বানান তো ঠিকই আছে জানতাম। 😕
ভাল লাগলো। ইঞ্জিনেয়ারিং দৃষ্টিতে মগজের এভলুশান পড়ে।
অনেক অজানা তথ্য জানলাম। একবার পরে মনে রাখা কঠিন তাই আরো কয়েকবার পড়তে হবে….
‘জীবজগতের আর কোন প্রজাতির কোন সদস্যকে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যেতে হয়নি, হয় না। নিঃসন্দেহে এটা শরীরের বিরাট বড় একটি ‘ডিজাইন-গত ত্রুটি’। একজন নিখুঁত ডিজাইনার সবকিছু দেখে শুনে ডিজাইন এবং পরিকল্পনা করে বানাননি বলেই এগুলো নিখুঁতভাবে তৈরি হয়নি, এতে রয়ে গেছে ক্লুজ, তথা বিবর্তনগত জোড়াতালির নানা ছাপ।”
একদম দারুন। লেখাটি ভীষণ উপভোগ করেছি।
অভিজিৎ দা, এক নি:শ্বাসে পড়ে শেষ করলাম, অত্যন্ত সাবলীল।
কিছু প্রশ্ন ছিল। প্রশ্নগুলো আমার কাছে হাস্যকর মনে হলেও সাহস করে করেই ফেললাম।
১. যতটুকু আমার মনে হয়েছে, নিউরনের সংখ্যা বুদ্ধিমত্তার লেভেল পরিমাপের একটি ফাংশন। (যদিও এটা মনে হয় যে, নিউরনই একমাত্র ভেরিয়েবল নয়) তবে মানুষের চেয়ে বড় মাথা যেসব প্রাণীর আছে, বিশেষ করে হাতি বা তিমির কথাই বলি, তাদের বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে কম হবার ব্যপারে ব্যাখ্যা টা কি হতে পারে ?
— এমন কি হতে পারে যে, তিমি মাছের ব্রেইনের সাইজ বড় সেকথা ঠিক আছে, কিন্তু ব্রেইনটা শুধু নিউরন নয়, আরও অন্য কোন উপাদানের আধিক্য আছে যা নিউরনের অধিক সংখ্যার সুবিধা টিকে cancel out করে দিচ্ছে ?
২. অথবা তিমি মাছ হয়ত সত্যই বুদ্ধিমত্তায় মানুষের কাছাকাছি তবুও হাতের আংগুল এবং কব্জির ব্যবহারের কারণেই মানুষই একমাত্র পৃথিবীতে dominate করছে ? তিমি তার বিশাল এবং inflexible দৈহিক আকৃতির কারণেই সম্মিলিত effort দিতে পারে না এবং যার কারণে dominating হওয়ার পথেও এগোতে পারে না।
** সম্মিলিত effort দিতে পারে না বলতে যেটা বুঝাতে চাইলাম তা হচ্ছে, ধরি আফ্রিকার বা আমাজনের গভীর জঙ্গলে কিছু নরখাদক উপজাতি গোত্র আছে যাদের জীবন অন্যান্য প্রাণীদের জীবনের মতই, তাদের বায়োলজিক্যাল বুদ্ধিমত্তা সভ্য সমাজের একজন মানুষের বায়োলজিক্যাল বুদ্ধিমত্তা থেকে কম হবার কোন কারণ নেই, কিন্তু সভ্য সমাজে একটি শিশু জন্মের পর তাকে সভ্যতা শেখানো হয়, জ্ঞান দেয়া হয়, গণিত শেখানো হয়, বিজ্ঞান শেখানো হয়… এরপর শিখে শিখে শিশুটি বড় হয়, এখানে খেয়াল করি, শিশুটিকে বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে যে গণিত, বিজ্ঞান, সভ্যতা এসব শেখানো হল, এই বিজ্ঞান কিন্তু শত বছর আগে কোন বিজ্ঞানী তার সারা জীবন ব্যয় করে আবিষ্কার করেছিল। সেই বিজ্ঞানীর দেয়া জ্ঞান টি শিশুটিকে ছোট হতেই দেয়া হল। যেমন আমরা এখন সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করি, শুধু ভাবি যে, আর্কেমিডিস যদি আজকের যুগের একটা সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর পেত, তাহলে না জানি কি হত। যাইহোক, আমি যেটা বুঝাতে চাইছিলাম তা হচ্ছে, মানুষ সভ্যতায় একজনের চিন্তালদ্ধ টেকনিক টি আরেকজনের মাঝে শেয়ার করতে পারছে, communicate করতে পারছে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়ে উন্নতির শিখরে পৌছে যাচ্ছে, যেই ব্যপার টা ঐ আমাজনের নরখাদক গোত্র টি সেভাবে পাচ্ছে না, তারা সভ্য সমাজের শিক্ষা পাচ্ছে না, তাই তারা বুদ্ধিমত্তায় মানুষ হলেও পশুদের মতই তাদের জীবন পদ্ধতি। হ্যা, এটা ঠিক যে, তারা তীর ধনুক ইত্যাদি অস্ত্র তৈরি, ছোট খাট ঘর তৈরি করা তাদের পূর্ব পুরুষ থেকে শিখে নিচ্ছে, ভাষা শিখে নিচ্ছে, কিন্তু এরপরে আর আগাচ্ছেই না।
আমি বলতে চাইছি, তিমির ক্ষেত্রে এমনটি হবার সম্ভাবনা আছে কিনা। মানে তারা বুদ্ধিমত্তায় অনেক উন্নত হলেও physical inflexibility এর কারণে collective effort এর সুবিধা নিতে পারছে না, আর সে কারণে dominating প্রাণীর কাছাকাছি কখনই আসতে পারছে না !!
@এমরান এইচ,
আকর্ষনীয় মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দীর্ঘ পরিসরে আলোচনা করতে হবে। আমার লেহার আগামী কিছু পর্বে এগুলো হয়তো এমনিতেই আসবে। তারপরেও চেষ্টা করব সময় করে আপনার কিছু পয়েন্টের উত্তর দিতে। আপাতত একটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করে যাই –
বড় ব্রেনকে বুদ্ধিমত্তার নিয়ামক হিসেবে স্বতঃসিদ্ধভাবে ধরে নেয়ার যে প্রবণতা অনেকের আছে সেটা সন্দেহের উর্ধে নয়। যদিও অনেক বিজ্ঞানী – যেমন গ্যারি লিঞ্চ প্রমুখ (তাদের লেখা Big brain দ্রঃ) বিগ ব্রেনের সাথে ইন্টেলিজেন্সের সম্পর্ক আছে মনে করেছেন, এবং আমাদের বৃহৎ মস্তিষ্ক হওয়াটা এডাপ্টেশন (পজিটিভ সিলেকশন) বলে মত দিয়েছেন, সেটার সপক্ষে প্রমাণ খুব একটা জোরালো নয় বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি।
হ্যা, হাতীর ব্রেন মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বড়, কিন্তু ব্রেন-টু-বডি ম্যাস রেশো (Brain-to-body mass ratio) হিসেব করলে তা মানুষের চেয়ে ছোট। তবে ব্রেন-টু-বডি ম্যাস রেশো বেশি হলেই বুদ্ধিমত্তা বেশি হবে তাও হলফ করে বলা যায় না। বহু পাখি আছে যারা ব্রেন-টু-বডি ম্যাস রেশোর নিরিখে মানুষকে ছাপিয়ে যায়। কিন্তু সেসব পাখির বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে বড় বলা যাবে না।
আর আরেকটা মজার ইনফরমেশন আপনাকে দেই – আইনস্টাইনের ব্রেন কিন্তু গড়পরতা মানুষের ব্রেনের চেয়ে আকারে ছোট ছিল। তন্ততঃ লিন্ডেনের বইতে তাই লেখা আছে। 🙂
আসলে বুদ্ধিমত্তা বহুকিছুর উপর নির্ভর করে। ব্রেন কিরকম জটিলতা ধারণ করতে পারে সেটা একটা ফ্যাকটর হতে পারে। তবে জটিলতা পরিমাপও সমস্যার ব্যাপার। কিভাবে বোঝা যাবে কার ব্রেন কত জটিল? একটা উপায় হতে পারে কর্টেক্সে ভাঁজের পরিমাপ । দেখা গেছে মানুষ ছাড়াও তিমি এবং ডলফিনের ব্রেনে কর্টেক্সে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভাঁজ পাওয়া গেছে। এবং এদেরকে বুদ্ধিমান প্রজাতি হিসেবেই ধরা হয়। তবে এটাই একমাত্র নিয়ামক নয়, এর সাথে বহু ফ্যাকটর জড়িত।
আপনার বাকি পয়েন্টগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করার আশা রাখি।
অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎ দা, আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আমার কাছে ভালো লেগেছে পড়তে। সাবলীল। বিজ্ঞান নিয়ে না পড়লেও বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি। ধন্যবাদ আপনাকে, এত সুন্দর করে লেখার জন্য।
@ফরিদ আহমেদ,
হ আমিও ভাবছিলাম খান্ডারিনী স্নিগ্ধা আমারে হঠাৎ ‘আপনি’ করে বলতেসে ক্যান, মাথাটা আবার বিগড়ালো নাকি! পরে দেখি উনি আমগো খাণ্ডারিনী নকল স্নিগ্ধা নন। 🙂
@স্নিগ্ধা, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
হায় হায় !
এখন তাহলে উপায়? আমার পোষাকি নাম তো বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেত্রীর নামে যা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে সবাই আমার সাথে হাস্যরস করে, তাইতো আমার মায়ের রাখা এই ছোট্ট নামে লিখলাম।
“ছোট স্নিগ্ধা” লিখব? কিন্তু আমি তো মুক্তমনায় নিবন্ধন করার নিয়ম ভুলে গিয়েছি। একই ইমেইল ঠিকানায় নতুন নাম কি গ্রহন করা যাবে?
@ফরিদ আহমেদ, ‘খান্ডারিনী’ শব্দটার মধ্যে ভীষণভাবে একটা ‘সেক্সিস্ট’ গন্ধ পাই…
বেশ খটমট লেখা। আগে চিকিৎসাবিজ্ঞান অথবা নিউরলজিতে ডিগ্রি করা দরকার।
যাই হোক, দ্রুত পড়ে নিলাম। কিছু বুঝলাম, বেশীরভাগই আঁধারে থাকলাম।
তা, এই বিকলাঙ্গ মস্তিষ্কের উন্নতি করার কোন পন্থা আছি কি?
মানে কোন তড়িৎ সার্কিট, অথবা ন্যানো টেকনলজির কিছু মাথায় বসিয়ে কি কম্পুটারের মত করা যাবে? এই ধরণের কিছু সম্ভব হ’লে আমিই হ’ব প্রথম ব্যক্তি যে তার মস্তিষ্কের উন্নতির জন্যে এগিয়ে আসবে।
@আবুল কাশেম,
কাশেম ভাই, দ্রুত নয়, একটু ধীরে পড়ুন। আপনি ছাড়া আর প্রায় কেউই খটমটে লাগার কথা বলেনি। আমার মনে হয় অতি দ্রুত পড়াতেই লেখাটা খটমটে লেগেছে, কিংবা ভাবছেন চিকিৎসাবিজ্ঞান অথবা নিউরলজিতে ডিগ্রি লাগবে। আসলে কিছুই লাগার কথা নয় কিন্তু। লেখাটা আরেকবার ধীরে ধীরে পড়ুন, এবং তাও পরিষ্কার না হলে দয়া করে আমাকে জানান কোন কোন জায়গা এখনো খটমটে বা অস্পষ্ট আছে। সেগুলো স্পষ্ট করা লেখক হিসেবে দায়িত্ব মনে করি।
মস্টিষ্ক যেহেতু বিবর্তনীয় ‘ক্লুজ’ তাই এর তো সীমাবদ্ধতা থাকবেই। তবে, এটার দুটো অংশ। এক হচ্ছে মস্টিষ্কের ব্যবহার বা আচরণগত সীমাবদ্ধতা, আর অন্যটি অ্যানাটমিকাল। আচরণগত সীমাবদ্ধতার যে ব্যাপারগুলো আমার লেখায় এসেছে – যেমন, আমরা মিথ্যা বিশ্বাসে আক্রান্ত হওয়া, কনফার্মেশন বায়াস’ দিয়ে কিংবা স্বজনপ্রীতি কিংবা হ্যালো ইফেক্ট দিয়ে প্রভাবিত হওয়া – সেগুলো নিজেকে সচেতন করে সমাধান করা যায়। গ্যারি মার্কস তার ক্লুজ বইয়ের শেষ অধ্যায়ে একগাদা পরামর্শ দিয়েছেন – যেমন জিনিসকে ক্রিটিকালি দেখা, কোরিলেশন থেকে কসেশনে না চলে যাওয়া, কোন কিছুর গন্তব্য সেটের পাশাপাশি কনটিনজনেন্সি প্ল্যান করা, বিরিঞ্চিবাবাদের দেয়া ‘এনেকডোটাল’ এভিডেন্স প্রামান্য হিসেবে গ্রহণ না করা ইত্যাদি। আমরা মুক্তমনাতেই আমরা এ ধরণের অনেক কিছুর চর্চা করি যা আমাদের ক্লুজিয় সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সহায়তা করে।
আর এনাটমিকামি বললে, ব্রেনের উপর মেমোরিচিপ, ব্রেনগেট প্রভৃতি বসানোর গবেষণা শুরু হয়েছে। বহুক্ষেত্রে সফলতাও পাওয়া গেছে। দেখুন এখানে। ব্যাপারগুলো Brain–computer interface এর চলমান রিসার্চের অংশ। এর মধ্যেই এই প্রক্রিয়ায় জন্মান্ধ ব্যক্তিকে দেখতে সহায়তা করা, প্যারালাইসিস কিংবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কথা বলা বা চলাফেরায় সাহায্য করা সহ (যাদের ব্রেন-বডি সংযোগ ঠিকমত কাজ করছিলো না) অনেকভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর আরো সুফল আমরা পাব নিঃসন্দেহে, এনাটমিকাল বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে। হয়তো আমরা কম্পিউটারের মতোই আমাদের মেমোরিচপ আপগ্রেড করে নিতে পারব। সেই দিন বেশি দূরে নয়।
@অভিজিৎ,
না, না অভিজিৎ –তোমার লেখা খুবই ভাল হয়েছে। বিজ্ঞানের জটিল ব্যাপারগুলো সরলভাবে ব্যাখ্যা করায় তোমার জুড়ি নাই। আসলে সমস্যটা আমার ‘মস্তিষ্কের’। তুমিই ত লিখলে আমাদের মস্তিষ্ক নিখুঁত নয়। তাও আবার আমার মস্তিষ্ক!
তোমার পরামর্শ মত আবার, ধীরে ধীরে পড়লাম। এইবার অনেক কিছু পরিষ্কার হ’ল।
খুবই আশার কথা শোনালে।
চিন্তা করছি ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ কী অবস্থা হবে–এই সব গবেষণা সফল হ’লে!
মস্তিষ্ক নিয়ে আগ্রহ সব সময় ছিল, কিন্তু এর খটমটে ব্যপারগুলোর জন্য পড়তে ভয় পেতাম। অনেকটা নিরস লাগত। আপনার লেখা সাবলীল হওয়ায় এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম, অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি বলেছেন-মস্তিষ্কের পুরনো জিনিসের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে অনেক নতুন জিনিস যুক্ত হয়ে মস্তিষ্কের আকার বড় হয়ে প্রকারান্তরে মাথার সাইজ বড় করে ফেলেছে। কিন্তু কথা হলো- মাথার সাইজ এরকম না হলে মানুষের শারিরিক সৌন্দর্য কি থাকত ? একটা দেহের ওপর ডাইনোসরদের মত ছোট্ট একটা মাথা থাকলে দৈহিক সৌন্দর্য কি থাকত ? তাছাড়া আবেগের কথাই ধরুন। আবেগ আছে বলেই কিন্তু মানুষ মানুষ হতে পেরেছে। অংক কষে হিসাব করে যদি প্রতিটি পদক্ষেপ আমরা নিতাম তাহলে মানব জীবনের আসল মজাটাই নষ্ট হয়ে যেত। আমরা হয়ে পড়তাম নিরস যন্ত্র। কোন এক রাতে গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধু বান্ধব সহকারে আড্ডা মারাতে আংকিক হিসাবে কোন লাভ নেই , কিন্তু সুখ পাওয়াতে তা অনন্য। মানুষ বেঁচে থাকে কি কারনে ? এভাবে সুখ পেতেই মানুষ বেঁচে থাকে ও দীর্ঘদিন বাঁচতে চায়। আংকিক হিসাবে জীবন চললে মানুষ আর মানুষ থাকবে না, হয়ে পড়বে যন্ত্র। সে হিসাবে মানুষের মাথাটা যথার্থ সাইজে আছে বলেই মনে হয়।
@ভবঘুরে,
যদিও সৌন্দর্য ব্যাপারটা আপেক্ষিক তারপরেও বলা যায় মস্তিষ্ক যদি ছোট হয়েই বিবর্তিত হত তাহলে আমাদের কাছে ঐ আকারটাই সুন্দর মনে হত। মানে এটা আমার ধারনা।
@অভিদা,
আমার ছোট বোন জন্মানোর দিন থেকেই খুব কান্নাকাটি করত। কোন এক আল্লাভীরুর কথা শুনে আব্বা মা ওকে নিয়ে গিয়েছিল এক ইমামের কাছে। সেটা ওর জন্মানোর পরের দিন না হলে তার পরের দিন। কিন্তু ব্যাপার হল এই ঘটনা নাকি আমার বোনের মনে আছে! এমন অলৌকিক মেমরীর ব্যাখ্যাটা এত দিন জানতাম। কিন্তু নামটা এখন জানলাম।
একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতেছিল পড়ার সময় থেকেই। এখন ভুইল্যা গেলাম। মনে পড়লে জিজ্ঞেস করব নে। :))
@সাইফুল ইসলাম,
গুড, এ থেকে বোঝা যায় আপনি ডারউইনীয় পথে চিন্তা করতে পারছেন। 🙂 সৌন্দর্যের উপলব্ধি কোন বিমূর্ত ব্যাপার নয়, বরং সেটা বিবর্তনীয় পথেই উদ্ভুত। যদি আমাদের মাথা আরেকটু ছোট হত তাহলে সেটাকেই আমাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হত। তখন সেটাকেই সুন্দর ভাবতাম।
এক বিবর্তনবিরোধী ইন্টেলিজেন্ট ডিজানারের ধামাধারী এক এপলোজিস্টকে একবার আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম – পুরুষদের নিপল তো কোন কাজে লাগে না, তাহলে কেন পুরুষদের নিপল ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার ডিজাইন করে তৈরি করলেন। উনার অভিমত ছিলো – নিপল না থাকলে দেখতে সুন্দর লাগবে না! উনাকে আমি কি করে বোঝাই যে ব্যাপারটা উল্টা দিক থেকে দেখতে হবে। ওটা আছে বলেই সৌন্দর্যের উপলব্ধি ওরকম, কারণ ওটাকে সুন্দর ভাবতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের পেছনে লেজ থাকলে সেটাকেও সুন্দর মনে করতাম, কিংবা দুই হাতের জায়গায় তিনহাত থাকলে!
হাঃ হাঃ আসলে কনফাবুলেশন-এর ব্যাপারটা ছোটদের মধ্যে অনেক বেশি। ছোট বাচ্চারা বহু সময়ই নিজেদের মত করে ঘটনা সাজাতে পছন্দ করে, আর সেটাকেই সত্যি মনে করে। এটা নিয়ে যে কত স্টাডি আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। একটা স্টাডিতে পড়েছিলাম এক টাকমাথা লোক এক স্কুলে নার্সারি ক্লাসে গিয়ে বাচ্চাদের ক্লাস নিতে গিয়েছিলো। এরপরদিন বাচ্চাদের প্রশ্ন করেছিল- আচ্ছা বলতো কালকে যে লোকটা তোমাদের সুন্দর সুন্দর গল্প বলেছিল, তার চুলের রঙ কি ছিল? দেখা গেল, বাচ্চারা তাদের কল্পনাশক্তি মিশিয়ে নানা উত্তর দিচ্ছে – কেউ বা বলছে চুলের রঙ ছিল কালো, কেউ বলছে বাদামী, কেউ বা বলছে একটু লালচে রঙের। এমনকি এমন শিশুও পাওয়া গিয়েছিল যে বলছে চুলে নাকি বাবড়ি ছিলো, আর একদিক সুন্দর করে ডাই করা ইত্যাদি।
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমরা নিজেরাই ছোটবেলায় কত রূপকথা পছন্দ করতাম, কল্পনার চরিত্রগুলোকে সত্য বলে মনে করতাম বড় একটা বয়স পর্যন্ত। এমনকি এখনো আমার ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান এর মুভি গুলো দারুণ লাগে। এই তো এভেঞ্জার মুভিটা (যেটা কতকগুলো পরিচিত কমিকের চরিত্র নিয়ে করা হয়েছে) – এখন আমাদের এখানে হলে চলছে – শিশু কিশোর বৃদ্ধ সবার কাছেই এটা সুপারহিট!
🙂
ভালো লাগলো,আমিও মেশিন লার্নিং এর কথা বলবো ভেবেছিলাম,বিপ্লব পাল বলে ফেলেছেন আগেই।
কিছু কিছু মানুষ খুব বড় বড় গুন-ভাগ ইত্যাদি মাথায় করে ফেলতে পারে,যখন কম্পিউটার ছিলোনা তাদের মানব কম্পিউটার হিসাবে ব্যবহার করা হতো যদিও তারা গণিতবিদ হিসাবে ভালো ছিলোনা। আবার প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন মানুষও পাওয়া যায় যারা বিশাল বিশাল বই মুখস্থ করে ফেলতে পারে। এগুলোর ব্যাখ্যা জানতে ইচ্ছা করছে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এই টেড টকটা দেখতে পারো
http://www.ted.com/talks/joshua_foer_feats_of_memory_anyone_can_do.html
@রামগড়ুড়ের ছানা,
সরি তোমার প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু বিস্তৃতভাবে বলব ভাবছিলাম, কিন্তু তানভীরুল এর মধ্যেই একটা চমৎকার টেড-টক এর ভিডিও দিয়ে দিয়েছে যেখানে এই ‘মেমোরি চ্যাম্পিয়ন’দের কৌশলের সারমর্ম বলে দেয়া আছে। একজন সাধারণ সাংবাদিক থেকে যাত্রা শুরু করে কেবল চেষ্টায় আমেরিকান মেমোরি চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব অর্জন প্রমাণ করে মানুষ চেষ্টা করলে ‘তাক লাগিয়ে দেবার মতো’ স্মৃতি অর্জন করতে পারে, এবং সেটা করতে হয় চেষ্টা এবং কৌশলের সাহায্যে। আমি আমার লেখায় ইঙ্গিত দিয়েছি যে মানুষের স্মৃতিগুলো স্মৃতিগুলো কম্পিউটারের মেমোরির মতো আবেগ-মুক্ত নয়, বরং আবেগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেই আবেগের জায়গাগুলোকে উদ্দীপ্ত করেই তারা মেমোরি সংরক্ষণ করেন। যারা খুব সফলভাবে করতে পারেন, তাদের বলা হয় ‘Mnemonist‘।
এই Mnemonist রা একটি বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যেটিকে বলা হয় ‘World Memory Championships‘। যারা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, এবং শিরোপা জেতেন, তাদের সবাই স্বীকার করেছেন যে তাদের কারোরই তথাকথিত ‘ফটোগ্রাফিক মেমোরি’ নেই, বরং তারা ‘method of loci’ সহ বিভিন্ন ধরণের স্ট্র্যাটিজি অনুসরণ করেন জিনিসপত্র মনে রাখার জন্য, যে স্ট্র্যাটিজিগুলো একসময় আবিষ্কার করেছিলেন প্রাচীন যুগের গ্রীক কবি সাহিত্যিকেরা বড় বড় সাহিত্যকর্ম মনে রাখার প্রয়োজনে।
এখন কথা হচ্ছে কেন কারো কারো স্মৃতিশক্তি বেশি, কারো কম? এর কারণ, আমার মতে জেনেটিক প্রকরণ। ঠিক যে কারণে আমাদের কেউ লম্বা, কেউ বেটে, কেউ মাঝারি, কিংবা তোমার ক্লাসে কেউ কেউ সাবলীলভাবে প্রোগ্রামিং করে যেতে পারে, কেউ বা একটা কোড লিখতে গেলেই কিবোর্ড ভেঙ্গে ফেলে – সেরকম প্রকরণ তো মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও হতে পারে তাইনা? হয়তো হিপোক্যাম্পাস সহ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গগুলো স্মৃতি সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে তারা সফলভাবে ব্যবহার করতে পারে। তবে প্রকরণ যাই হোক না কেন, বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে যে স্মৃতি সংরক্ষণকে বাড়ানো সম্ভব তানভীরুলের দেয়া জশুয়ার ভিডিওটাই একটা বড় প্রমাণ।
এর বাইরে Asperger’s syndrome বলে এক ধরনের জেনেটিক রোগ আছে, যার কারণেও এ ধরণের ব্যাপার হয় বলে চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এদের আই কিউ একটু বেশি হলেও সামাজিকভাবে একটু খাপছাড়া হয়ে থাকেন। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিতে অনেক সময়ই এগিয়ে থাকেন, এবং কোন বিশেষ ব্যাপারে – যেটা তাদের কাছে আগ্রহোদ্দীপক বলে মনে হয়, সেটা নিয়েই পড়ে থাকেন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটা কিছুটা হলেও ছিলো বলে গবেষকেরা ধারণা করেন। বিখ্যাত শিল্পী মোৎজার্ট এবং চিত্রশিল্পী Monet এরও এডিটিক মেমরি ছিলো বলে বলা হয়। এ নিয়ে নানা গবেষণা আছে।
আহ! বড় একটা লেখা পড়ে শেষ করার পর নিজেরই কেমন শান্তি শান্তি লাগে। 🙂
কম্পিউটার আর মানুষের ব্রেইন প্রসংগে বলি, এখনকার কম্পিউটার যথেষ্ট এগিয়ে গেলেও, মানব মস্তিস্কের সৃষ্টিশীলতার সাথে পাল্লা দিতে নতুন ধরনের আর্কিটেকচার লাগবে। এই রিসক বা ভন-নয়ম্যান আর্কিটেককার দিয়ে মানব মস্তিস্কের ক্রিয়েটিভিটি রেপ্লিকেট করা প্রায় অসম্ভব।
@তানভীরুল ইসলাম,
বুলস আই অন ভন-নয়ম্যান আর্কিটেকচার। আসলে যারা মানব মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটারের তুলনা করেন তাদের ভন নয়ম্যানের আর্কিটেচচার – যার উপর ভিত্তি করে পুরো সিপিউ বেসড কম্পিউটার সিস্টেম দাঁড়িয়ে আছে, তার সীমাবদ্ধতাগুলো আগে বুঝতে হবে। এ জিনিসটা আমি হাল্কা ভাবে লেখায় উল্লেখ করেছি। আমাদের ব্রেন ভিন্নভাবে কাজ করে বলেই আমরা সহজেই মোনালিসার ছবি দেখে চিনতে পারি, একটা সামান্য কুকুরের পেছন বা পাশ থেকে দেখেই বুঝে যাই ‘এটা টমের কুত্তাটা না’? কম্পিউটার এভাবে চিনতে পারে না। এর আর্কিটেকচার ভিন্ন। এই চ্যানেল্ড থিঙ্কিং থেকে বেরুতে হবে এগুতে হলে।
আপনার মন্তব্য পড়ে আমিও শান্তি পাইলাম।
আপনার হাতী টাইপের লেখাও পড়তে গেলে কেমনে জানি পিপড়া টাইপের হয়ে যায়।
ধন্যবাদ অভিজিৎদা চমৎকার একটা লেখার জন্য।
// আমরা আমদের জিনগত কোন উপকার না পেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভির সামনে বসে থাকি, অর্থহীন কমেডি দেখি, কিংবা কেউ হয়ে উঠে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।//
আচ্ছা এগুলোর বিবর্তনীয় ব্যাখা কি?
আর এমন ক্রিকেটমোদিও আছে যাদের সারাদিন টিভিতে ক্রিকেট দেখতেও কোন আপত্তি নেই। (আমারতো আধঘন্টাও একনাগাড়ে এই খেলাটা দেখতে বিরক্তি লাগে)।
এই টারই বা বিবর্তনীয় ব্যাখা কি?
@রনবীর সরকার,
আমার পুরো প্রবন্ধটাই তো এটার উত্তর। 🙂
মানব মস্তিষ্ক আসলে ক্লুজ। তাই সবকিছু ‘বিবর্তনীয় উপযোগিতার’ নিরিখে চিন্তা করে লাভ নেই। চিন্তা করতে হবে এটা একধরণের ‘হ্যাপাজার্ড কন্সট্রাকশন’ বা জোড়াতালি ব্যবস্থা হিসেবে। আমরা ঘণ্টার পর ঘন্টা টিভি দেখি, গান শুনি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি – হয়তো এগুলোর কোনটারই বিবর্তনীয় উপযোগিতা নেই। আমরা আনন্দের জন্য করি। আনন্দের ব্যাপারগুলো অনেকটাই ‘shortsighted’, শরীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুফল বা কুফল নিয়ে সে চিন্তা করে না। সেজন্য শরীরের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্ত্রিয়া থাকা সত্ত্বেও আমরা তেল চর্বি জাতীয় খাবারে আসক্ত হই, কিংবা কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে উঠে। কেবল তাৎক্ষিনিক আওন্দের জন্যই। কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা নিখুঁত ডিজাইন করে একে তৈরি করা হয়নি বলেই আমরা ফাঁদে পা দেই। আর অবশ্যই একেকজনের আনন্দ একেক রকমের। কেউ হয়তো ক্রিকেট খেলা দেখে আনন্দ পায়, কেউ হয়তো গান শুনে, কেউবা হয়তো ব্লগে ছাগু তাড়িয়ে। 🙂
আর সবকিছুর বিবর্তনীয় উপযোগিতা থাকতেই হবে তা কিন্তু নয়। ঠিক যেমন ইউরোপিয়ানদের নীল চোখের কথা বলা যায়। এর কোন ‘বিবর্তনীয় উপকারিতা’ পাওয়া যায়নি। এটা হয়তো মানব প্রজাতিতে টিকে গেছে অনেকটা ময়ূরের পেখমের মতো সেক্সুয়াল সিলেকশনের ফলশ্রুতিতে, কিংবা এটা হতে পারে স্টিফেন জে গুল্ড কথিত ‘বিবর্তনীয় স্প্যান্ড্রেল‘, যার কোন বিবর্তনীয় উপযোগিতা নাই, তৈরি হয়েছে অন্য কিছুর উপজাত হিসেবে।
@অভিজিৎ,
আপনাদের দেয়া লিংকে গিয়ে বিবর্তনীয় স্প্যান্ড্রেল বিষয়ে পড়লাম কিন্তু কিছুই বুঝি নাই। নীল চোখের কারণ উদ্ধার করতে একটা আর্টিকল ডেইলি মেইলে পড়ে মনে হলো কিছুটা বুঝেছি। বেশ কিছু যুক্তিসঙ্গত সম্ভাব্য কারণ দেখানো হয়েছে।
বিপ্লব দার মেশিন লার্নিং Artificial Intelligence এর কথা প্রথমে বিশ্বাসই হয় নাই। আল্লাহর উপর মানুষ, মানুষের উপরে মেশিন? আগে জানতাম আল্লার সেট আপ করা হুকুম ছাড়া মানুষ লড়েনা, মানুষের প্রোগ্রাম করা হুকুম ছাড়া মেশিন লড়েনা, এখন দেখি সব উলটাপালটা লাগে। ডাক্তার শিক্ষক উকিল সাধারন ইঞ্জিনিয়ার-কিছুরই দরকার থাকবে না ৫০-১০০ বছর বাদে? বই-পত্র, কাগজ-কলম সব দুনিয়া থেকে উঠে যাবে? ইশ, সেই দিন দেখে যেতে পারবোনা বলে আক্ষেপ হয়। এটা তো আরেকটা বিরাট ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার মনে হয়। বিস্তারিত জানার আশা রইলো।
ভালো লাগলো অভিজিত্ দা, অজানা অনেক কিছুই জানলাম ,আরো জানার অপেক্ষায় রইলাম।সুন্দর লেখাটার জন্য ধন্যবাদ
অসাধারণ লাগলো। একটু অংশে খটকা ছিলো, সেইটা উপরের মন্তব্যে বিপ্লব পাল বলে দিয়েছেন। আমি নিজেও মস্তিষ্কের ক্ষমতার প্রতি অন্ধভাবেই বিশ্বাসী ছিলাম এবং বিবর্তনের আরো অনেক কিছুর মতোই এইটাও যে “আনইন্টিলিজেন্ট” ডিজাইন, এই জিনিস মাথাতেও আসেনি।
অনেক ধন্যবাদ চমৎকার এই লেখাটার জন্য। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
@সবজান্তা,
আপনাকে মুক্তমনায় দেখে ভাল লাগল। নিয়মিত আলোচনায় অংশ নিলে আরো খুশি হই।
এটা তথ্যগত ভুল। মেশিন লার্নিং এলগোরিদমের কাজ শেখা। মেশিনকে ভাষা শেখানো-কবিতা শেখানো-আবেগ শেখানো সব কিছুই যায়। এবং সে নিজে নিজে এলগোরিদম ও সিন্থেসাইজ করতে সক্ষম। এসব নিয়েই কাজ হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে। মোটামুটিভে নিউনাল নেটোউআর্ক, সাপোর্ট ভেক্টর মেশিন, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ইত্যাদি মেশিন লার্নিং এর কাজই হল মানুষের মতন বা তার থেকে বেশী শেখা ট্রেনিং ডাটা থেকে।
এতদিন এই ধরনের কাজে খুব বেশী সাফল্য আসত না কারন কম্পুটিং পাওয়ার এবং ডাটাবেসের সাইজের লিমিটেশন ছিল। বর্তমানে ক্লাউড কম্পিউটিং এবং হাডুপের জন্যে লাখে লাখে প্যারালাল প্রসেসিং করা সম্ভব। কম্পিউটার অনেকদিন থেকেই কবিতা লেখা, অনুবাদ করে, ছবি আঁকে। কিন্ত ইদানিং ক্লাউড ইত্যাদির জন্যে সে হেঁসে খেলে সব ফিল্ডেই মানুষকে হারিয়ে দেবে। এবং এটাও আসছে সেই বিগ আনস্ট্রাকচারড ডেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে।
এই যে তুমি প্রবন্ধটা লিখলে, এটা লিখতে বর্তমান প্রোস রাইটিং প্রগ্রামগুলোর অসুবিধা হওয়ার কথা না। তুমি যতগুলো প্রবন্ধ পড়েছে সেগুলো প্রোগ্রামকে পড়ালে এবং তারপরে তোমার প্রবন্ধের অবজেক্টিভ সেটা করে দিলে, আজকাল প্রবন্ধ কম্পিউটারে ভালোই লেখে। অনুবাদ করার ক্ষেত্রে মেশিন লার্নিং এর আস্তে আস্তে বিপ্লব আসছে।
তবে সব থেকে বড়কথা হল, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে যাবতীয় মানব সিদ্ধান্ত যা মানুষের ব্রেইন নিয়ে থাকে, তার দিন খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে-খুব বেশী হলে আর ১০ বছর বা ২০ বছর।। আস্তে আস্তে মানুষের ব্রেইন না, এই সব বিগডাটার মেশিন লার্নিং সফটোয়ার গুলিই সিদ্ধান্ত নেবে।
১০ বছর আগেও ক্যাসপারভ বনাম ডিপ ব্লু বড় খবর ছিল। আজকাল সাধারন ভাল প্রোগ্রাম গুলোর এলো রেটিং ৩৩০০ এর কাছে, যেখানে ক্যামনিক বা আনন্দের রেটিং ২৮০০ এর আশে পাশে।
আশ্চর্য্য হলেও সত্যি মানুষের মস্তিস্কের ছুটির দিন এগিয়ে আসছে। আমি একটা সফটওয়ারের সাথে যুক্ত, যেটার মধ্যে একটা স্টাটিস্টিক্যাল এক্সপার্ট সিস্টেম আছে। এটার দাবি, এই সফটোওয়ারের মেশিং লার্নিং সব সংখ্যাবিদদের ছুটি করে দেবে কারন এটা ডাটা দেখেই বুঝে যায়, কি সংখ্যাতাত্বিক মডেল লাগবে এবং সে একজন এক্সপার্ট পরিসংখ্যানবিদের আধিত বিদ্যার সব কিছুই তার বিশ্লেষনে রাখে। সংখ্যাতত্ত্ববিদরা সেটা মানতে চাই না-কিন্ত আমি রেজাল্টে দেখেছি একজন বিরাট সংখ্যাতত্ত্ববিদ তার আধিতবিদ্যা কাজে লাগিয়ে যে রেজাল্ট আনে ৩-৬ মাসের গবেষণার পর, এই সফটোয়ারটা মাত্র ১-২ দিনে ট্রেনিং এই সেটা করে ফেলে। কেও এটা বিশ্বাস না করলে, আমার কাছে চাইতে পারে-আমি ইভাল কপি পাঠিয়ে দেব।
এটাত নিজের চোখে দেখছি। শধু কি তাই। আমাদের নেটোয়ার্ক ডিজাইন ফিল্ডে আগে ভাবা হত এত কন্সট্রেইন্ড, শিক্ষা লাগে, এগুলো করতে মানুষ লাগে। বিধি বাম। সেখানেও সম্প্রতি আরেকটা সফটোয়ার টেস্ট করছিলাম, যাতে মেশিন লার্নিং আছে। আমি গত ১০ বছরে যা শিখেছি, এটা মাত্র কয়েকদিনেই তা শেখার ক্ষমতা রাখে।
এই ভাবে আরো অনেক ফিল্ডেই মেশিন লার্নিং আসছে। সার্জারিতে বিরাট ভাবে আসছে-তবে প্রাথমিক ভাবে তারা ডাক্তারকে গাইড করবে। আমি নিশ্চিত সেখানেও তারা এক সপ্তাহের মধ্যে একজন সেরা সার্জনের সব শেখা বিদ্যা শিখে নেবে।
সুতরাং অভিজিতের বেসিক বক্তব্যের সাথে আমার মতপার্থক্য নেই। তবে বক্তব্য একটাই মেশিনের সাথে মাথার তুলনার দিন শেষ-মেশিন সব দিক দিয়েই অনেক এগিয়ে গেছে। এতটাই এখন আর তুলনাই চলে না। আমার মতন পি এই চডি ওলা +১২ বছরের অভিজ্ঞতা সে ২-৩ দিনেই রপ্ত করে নিচ্ছে! বাকীদের অবস্থাও আসলে সেটাই হবে বা হতে চলেছে-তারা হয়ত টের পাচ্ছে না।
@বিপ্লব পাল,
না এটা ভুল নয়। আমি কেবল ট্র্যাডিশনাল কম্পিউটারের এর কথা বলেছি ব্রেনের সাথে সাধারণ তুলনা করতে। ইচ্ছে করেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং এর জটিলতায় ঢুকি নি।ওগুলো বললে অনেক কথা বলতে হবে। আমি নিজেই asimo সহ অনেক লার্নিং রবোটের কথা জানি (যদিও গবেষণা এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে, তাদের কাজ আমার কাছে এখনো অটিস্টিক বেবির মতো মনে হয় 🙂 )। এই সেদিনও সিএনবিসিতে এ নিয়ে প্রোগ্রাম দেখছিলাম। তবে আমিও তোমার মত মনে করি মেশিনের সাথে মাথার তুলনার দিন শেষ, যদিও মেশিন সব দিক দিয়েই অনেক এগিয়ে যায়নি, তবে সামনে অবশ্যই যাবে।
চমৎকার ফিডব্যাকের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
লেখাটার আদ্যপান্ত চোখ বুলিয়ে গেলাম। হতাশ হয়ে গেলাম, বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম না তাই নিজকে একটা
গর্দভ শ্রেনীর মনে হল- তবে একদম বুঝলাম না বললে অন্যায় হবে নিজের উপরে।
প্রথমেই দৃষ্টি আটকে আপনার এই কথায়
একদম ১০০ ভাগ সঠিক। নিজে বিড়ম্বনা বলে একটা সিরিজ চালু করে এখন অব্দি চালু রাখতে পারছি কই। এই মর্মে আসলেই ঠিক কথা (Y)
@অভিজিৎ দা,
আমার মনে হয় মেশিন লার্নিং এর কথা ১-২ লাইন হলেও উল্লেখ করলে ভালো হয়। মুক্তমনার সমালোচকের অভাব নাই,তারা এটাকে ভুল ধরে তাদের সাইটে প্রচার করতে পারে।
@অভিজিৎ,
কদিন আগে রূপম (ধ্রুব) এর জিন্দা লাশ: কোয়ালিয়ার থট এক্সপেরিমেন্টে মন্তব্য করেছিলাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং এর ব্যাপারে। কারণটা ছিলো; যথারীতি, আশঙ্কা। এ আই মানুষের বুদ্ধিমত্তায় কত তাড়াতাড়ি কত বড় হুমকি হতে পারবে সেটাই ধারণা করতে চেয়েছিলাম। বিজ্ঞানী Prof Hugo De Garis, এই হুমকির সমর্থনে বেশ কথাবার্তা বলেছে। ইউ টিউব লিঙ্ক দিলামঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=jnKbwwEOwwc
সফল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কি আমাদের মানে মানুষের নিজের বুদ্ধি বর্ধন করার সুযোগ স্বার্থপর ভাবে থাকা উচিৎ নয়? কি ভাবে আর কে বা কারা নিয়ন্ত্রন করবে সেসব?
@কাজী রহমান,
এইটা আসল প্রশ্ন। হতে পারে কেবল সরকারি লোকেরা আর তার বাছাই করা লোকেরা সেই সুবিধা পাবে। তবে বাজার মুক্ত থাকলে আশা করতে পারেন সেই বস্তু কম্পিউটারের মতো সস্তা পণ্য হয়ে আমাদের সবার কাছে চলে আসবে। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
সত্যি বলছেন? এটার লেখক অভিজিৎ প্রশ্নটা দেখেছে বলেই তো মনে হচ্ছে না।
মুক্ত বাজার কি আসলেই মুক্ত? এমন কিছু কি সত্যিই আছে বা থাকবে? ক্ষমতাবান, ধনী, লোভী, স্বার্থপর আর শাসক যারা তারা কি মুক্ত বাজার নামক জিনিষটা এম্নি এম্নিই মুক্ত করে দেবে?
আশার কথা শুনতে মন্দ লাগেনা কিন্তু 🙂
@কাজী রহমান,
আপনি দেখি আসল প্রশ্নের রাজা! লোভী ও শাসকেরা সত্যিই দেয় না। সেটা সমস্যা। এই দেখুন বাংলাদেশের অনলাইন গণমাধ্যমের বাজার এতোদিন বলা যায় মুক্ত ছিলো। অক্টোবরে সেই বাজার সরকারি লাইসেন্সিং, ফি, রেগুলেশনের আওতায় পড়তে যাচ্ছে। অনলাইন গণমাধ্যমের লোভী ব্যবসায়ী খালিদী মুক্ত বাজারের ফেয়ারনেসকে অবরুদ্ধ করার জন্যে অনেকদিন ধরে নীতিমালা নীতিমালা করে যাচ্ছিলেন। এই একটা ব্যবসা ছিলো, স্বল্প মূলধনধারীও তার পরিশ্রম ও উদ্যোগ দিয়ে শুরু করতে পারতো। এখন দেখুন, ৫ লাখ টাকা এককালীন ও ৫০ হাজার টাকা বাৎসরিক ফি ধার্য করে মার্কেটকে আগেই ধনী, লোভী, স্বার্থপরদের কুক্ষিগত করে ফেলছে। লোভীরা লোভীদের স্বার্থ দেখে। তারপর রেগুলেটরি কমিটি করার মাধ্যমে সুযোগ হবে রাজনৈতিক ও আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার। আপনি রেগুলেটরি কমিটির মামা চাচাকে চেনেন না, আপনি ফেয়ার ব্যবসা কীভাবে করবেন তখন? একবার এটা হয়ে গেলে অক্টোবরে, এরপর যদি বলেন যে এটা তুলে দেয়া হোক, তখন দেখবেন অ্যাপোলজিস্টরা বলবে আপনি খালি ডিরেগুলেশন ডিরেগুলেশন করেন। আরে বাজার তো মুক্তই ছিলো ইন দা ফার্স্ট প্লেইস! শয়ে শয়ে অনলাইন খবরের কাগজ আছে। কী দুর্ভোগ হচ্ছিলো এই মুক্ত মার্কেটে? নীতিমালাটা একবার হোক, অন্যান্য বাজারের অনিয়ম আর দুর্ভোগ একে তখন ঘিরে ধরবে।
তবে লোভী ও শাসকেরা যে মুক্ত হতে দেয় না, তার চেয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরাই চাই না। আমরাই যদি ভাবি যে কিছু বাছাই করা লোকের ঐশ্বরিক এখতিয়ার থাকা উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণের, তাহলে আমরাই তো লোভী ও শাসকদের জাস্টিফিকেশন দিয়ে বসে থাকছি। ওরা বাজার বদ্ধ করবে। আপনারা কয়েকজন এর বিরুদ্ধে বলবেন। তার চেয়েও বেশি মানুষ দেখবেন বলবে যে বাজার অমুক্ত থাকার দরকার আছে।
@রূপম (ধ্রুব),
আসলে কয়েকজনই বলে। মরেও কয়েকজন। বলে মরে বাঁচিয়ে দিয়ে যায় অনেক-জন। সুকান্তের দেশলাইয়ের কাঠির মত বিক্ষিপ্ত ভাবে ওই কয়েকটা মানুষ বেঁচে থাকে একসাথে জ্বলে উঠবার দূর্বার আকাঙ্খায়। ওই কয়েকটা মানুষই “আলোধরা”, বাতিঘর এর ইট বোনায় সারাক্ষন ব্যস্ত।
পাল্টে চলে সভ্যতার সংজ্ঞা;
অসভ্য সভ্যতা অসভ্য রেখে।
তবু বাঁচে কয়েকটা আলোধরা;
একাগ্র কৌতূহল দিয়ে উপহার।
আমাদের শক্তি তুমি আমি
চলো বাতিঘর বুনি যতনে।
@রূপম (ধ্রুব),
ভয়ংকর খবর দিলেন একটা? “অনলাইন গণমাধ্যম” জিনিসটা কি? মুক্তমনা কি অনলাইন গণমাধ্যম?
@রৌরব,
বিডিনিউজ২৪ সম্পূর্ণ অনলাইন গণমাধ্যম। যারা খবর সংগ্রহ, কেনাবেচা, খবরের ব্যবসা করে আর কি। সাংবাদিক পরিচয় ধারণ এবং গণমাধ্যম পরিচয়ের সাথে এই জাতীয় যেসব লিগ্যাল ব্যাপার স্যাপার জড়িত, সেসব ক্ষেত্রের জন্যে মনে হয়। এতোদিন একটা সার্বিক কর্তৃপক্ষের নীতিমালার বাইরে এই পেগানরা ব্যবসা করছিলো? ছ্যা ছ্যা। কী হেরাটিক ব্যাপার স্যাপার!
@রূপম (ধ্রুব),
অবিশ্বাস্য। একটা ব্যবসা শুরু করার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি হওয়া উচিত ৫০০ টাকা। লাভের উপর বাৎসরিক ট্যাক্স। ৫০ হাজার টাকা এমনি এমনি কেন? “বাঞ্ছারামপুর স্থানীয় সংবাদ” ওয়েবসাইটটা চলবে কিভাবে?
@রৌরব,
রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০ টাকা হলে অনলাইন গণমাধ্যম রেগুলেটরি কমিটির লোকজন ভাত খাবে কী দিয়ে? আপনার দিলে মায়া হয় না? বড়লোকের মাস্তান পালাটা একটা কেন্দ্রীয় গঠনতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে বলা চলে।
@কাজী রহমান,
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারের মুক্ততাকে বাইনারিভাবে না দেখে এর অনেক মাত্রা আছে এভাবে দেখতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কম কম্পিউটারের দাম কমে আসাটা হয়তো একশোভাগ খাঁটি মুক্ত বাজারে ঘটে নি, তবে বাজারের মুক্ত কম্পোনেন্টগুলোর অবদানে তো হয়েছে বটেই। বন্ধ মার্কেটে সেটা হবার চিন্তা তো এখন বামপন্থীরাও করে না। তারাও জানে যে মানুষের জন্যে অ্যাফোর্ডেবল উৎপাদনের জন্যে একটা পুঁজিবাদী বাজার লাগবেই। চীনেরও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সারা পৃথিবীকে স্বল্পমূল্যে পণ্য এনে দেওয়ার সামর্থ্য, তাদের বাজার খুলে দেওয়ার মাত্রার সাথে কোরিলেটেড।
@রূপম (ধ্রুব), (Y)
@বিপ্লব পাল,
ভবিষ্যতের পৃথিবী কি তাহলে মেশিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে চলেছে। যদি মেশিন দ্বারাই ভবিষ্যতে সবকিছু হয় তাহলেতো একজন মেধাবীর কোন কিছু করার নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন কিছু শেখার প্রবনতা কমে যেতে পারে।
সেই পৃথিবী কি আদৌ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হতে চলেছে।
আমারো একি প্রশ্ন , মানুষের তাহলে ভবিষ্যতে কি কাজ থাকবে? @ বিপ্লব পাল, @অভিজিৎ
@রনবীর সরকার,
না মানুষের কাজ থাকবে। সেকোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অবজেক্টিভ ফাংশনের ভূমিকার সাথে জীবনের উদ্দেশ্যের যোগসূত্র থাকে। সেই সিদ্ধান্তটা মানুষকেই নিতে হবে। আর এই মেশিন লার্নিং ও এলগদিরম। এগুলো বানাতে কিছু দিন লোক লাগবে। কিন্ত এটা মেনে নিতেই হবে, যত অটোমেশন আসছে-মানুষের মাথার কাজের ডিমান্ড আস্তে আস্তে কমবে। এমনকি শিক্ষক রাও রিপ্লেস হলো বলে। ডাক্তার শিক্ষক উকিল সাধারন ইঞ্জিনিয়ার-কিছুরই প্রায় দরকার থাকবে না ৫০-১০০ বছর বাদেই।
@বিপ্লব পাল,
অবিশ্বাস থেকে নয়, বরং আগ্রহ থেকে জানতে চাচ্ছি, কোন্ সফ্ট্ওয়্যারের কথা বলছেন?
@প্রতিফলন,
এর নাম soft10.
এটা সবে পরীক্ষামূলক ভাবে বাজারে আনা হয়েছে। আমরা শুধু কিছু কিছু নির্বাচিত অধ্যাপক এবং বিজনেস এনালিস্টদের এখন পরীক্ষা করার জন্যে দিচ্ছি। কেও কোন গবেষণার ফল এটা দিয়ে করতে চাইলে অবশ্যই দেব।
বিপ্লব দা ও অভিজিত দা কে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য. অনেক কিছুর হিসাব মেলানো এখন সম্ভব হচ্ছে., বিপ্লব দাদা আমি এ বিষয়ে খুব আগ্রহী. আমি কিছুদিন পরেই M.Sc in CSE শুরু করতে যাচ্ছি. আমি Programming ভালবাসি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে কাজ করার আগ্রহ অনেকদিনের. আপনার টপিকটি পরার পর কিছু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি. আমার ই-মেইল [email protected] …. ডেমো দিলে ও খুব খুশি হব. গতানুগতিক ডেভেলপমেন্ট আর ভাল লাগে না. কিছু শিখতে চাই যাতে মানব সভ্যতার উন্নয়নে টকেনোলজি নিয়ে কিছু করতে পারি…..