গল্পের পিছনের গল্প
আট নয় বছর আগের কথা। আমি তখন থাকি উইন্ডজর নামের একটা ছোট্ট শহরে। এটা ক্যানাডার সর্ব দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত। সীমান্ত শহর। নীল জলের ডেট্রয়েট নদীর তীরে অবস্থিত। এই নদীই আলাদা করে রেখেছে এখানে ক্যানাডাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
উইন্ডজর মূলত ডেট্রয়েটের উপর নির্ভরশীল একটা শহর। শুধু শিল্পের ক্ষেত্রে নয়, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যও ঊইন্ডজর নির্ভর করতো আমেরিকান এই শহরের। সে কারণেই বিনোদনের নানান উপকরণ গড়ে উঠেছে এখানে। ক্যাসিনো, নৈশক্লাব, পানশালা, এডাল্ট এন্টারতেইনমেন্ট এগুলোর কোনো অভাব নেই উইন্ডজরে। সপ্তাহান্তের রাতে এর ডাউনটাউনের চেহারাই বদলে যেতো। তখন আমেরিকান ডলার ক্যানাডিয়ান ডলারে চেয়ে দেড়গুণ শক্তিশালী। আমেরিকান একজন লোক পকেটে করে এক ডলার নিয়ে ক্যানাডায় ঢোকার সাথে সাথে তা দেড় ডলারে পরিণত হয়ে যেতো। ফলে, প্রচুর পরিমাণে আমেরিকান সীমান্ত অতিক্রম করে চলে আসতো এই পারে। এ ছাড়া এলকোহল কেনার বয়সেরও একটা পার্থক্য ছিল। আমেরিকায় ঊনিশ না হলে কেউ এলকোহল কিনতে পারতো না। অন্যদিকে ক্যানাডায় এই বয়সসীমা ছিল আঠারো। বিপুল সংখ্যক আঠারো বছরের আমেরিকান কিশোর দিয়ে ভরে যেতো উইন্ডজর উইকএন্ডে। এলকোহল ছাড়া অন্য সব আকর্ষণতো ছিলই।
এই শহরে আমার আগমন অবশ্য বিনোদনের উদ্দেশ্যে ছিল না। গরীব মানুষ আমি। পেটেই ভাত জোটে না, তার আবার বিনোদন। পড়াশোনা করতে এসেছিলাম আমি। না, উইন্ডজরে নয়। ডেটরয়েটে। গরীবের ঘোড়ারোগ বলে একটা কথা আছে। আমার সেই ঘোড়ারোগ হয়েছিল সেই সময়ে। ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডজর বাদ দিয়ে, ডেট্রয়েটের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ তে ভর্তি হয়ে যাই আমি। এমনিতেই ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডজরের তুলনায় ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির খরচ ছিল দ্বিগুণের বেশি। তার উপরে এমবিএ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচবহুল প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমার খরচ আরো বেশি ছিল। প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে এপার ওপার করতে টানেলে বা ব্রিজে পয়সা গুনতে হতো আমাকে।
তো এই ব্যয়ভার বহন করার জন্য শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নেমে গেলাম আমি। ঢাকাইয়া সিনেমার নায়কদের মত ঠেলাগাড়ি ঠেলা থেকে শুরু করে কোদাল হাতে মাটি কাটার কাজ বা শক্ত হাতুড়ি দিয়ে জন হেনরির মত পাথরভাঙার কাজ কোনোটাই বাদ গেলো না। আমার বাসাটা খুব বাজে একটা জায়গায় ছিল। ওখান থেকে হাঁটার দূরত্বে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। পাবলিক ট্রানজিটও ছিল অনিয়মিত। আমাদের মাত্র একটা ভাঙাচোরা গাড়ি থাকার কারণে আন্নার পক্ষে কাজ করা সম্ভব ছিল না। যাই হোক ঢাকাইয়া সিনেমার নায়ক আমি, বউ কাজ করলে হিরোইজম কি আর থাকে? সে কারণে একাই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলাম সংসারতরী।
এই ঠেলাঠেলির সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই এই গল্প। অবশ্য গল্পটার কতটুকু সত্যি আর কতটুকু কল্পনা, সেটা বলবো না আমি। পাঠককে এই দোলাচলে রাখবো আমি ইচ্ছে করেই। 🙂
এই গল্পটা লিখে মুক্তমনায় পোস্ট দেবার পরে বেশ ভালো রকমের বিপদে পড়েছিলাম আমি। আন্না প্রায়ই গোপনে গোপনে মুক্তমনা পড়ে। আমার উপর গোয়েন্দাগিরি করাই মূল উদ্দেশ্য। এই গল্প পড়েতো সে অগ্নিশর্মা। বলে যে, এই গল্প মোছো মুক্তমনা থেকে। তুমি যে এত খারাপ লোক এতদিনে টের পাই নাই আমি। বললাম যে, ‘কী হয়েছে?’ ‘কী হয়েছে মানে। এই সব কী সব আজেবাজে কথা লিখছো তুমি। হয় গল্প মোছো, না হয় এগুলো মোছো।‘ চিৎকার চেচামেচি করে বলে সে। যতই ওকে বোঝাই যে, এগুলো মুছলে গল্পের আর কিছু থাকবে না। সে কিছুতেই বোঝে না। খালি বলে যে, ‘তোমার মুখ থেকে এই সব খারাপ কথা বের হলো কেমনে?’ ‘আরে যন্ত্রণা, এগুলো তো আমি বলি নাই। গল্পের চরিত্র বলেছে। গল্পের চরিত্র তো কত কিছুই বলতে পারে।‘ আমি বলি। ‘তুমি নিশ্চয়ই এইসব খারাপ কথা মনে মনে ভাবো। তা না হলে এগুলো লিখবা কী করে?’ মাথা চাপড়ে বিলাপ করে সে। ‘হায় আল্লাহ! এ কোন বদমায়েশ লোকের সাথে এতদিন আমি সংসার করেছি না বুঝে।
এখন অবশ্য আর বদমায়েশ না, তার পুরোপুরি ধারণা জন্মে গেছে যে, আমি ক্রিমিনাল টাইপের একটা লোক। মুখোশ পরে সমাজে বসবাস করছি। তা না হলে আমার প্রায় সব গল্পের চরিত্রই কেন ভয়ানক সব ক্রিমিনাল লোকজন হবে? এদের কেউ রাজনৈতিক গুন্ডা, সভ্যের ভান করে থাকে। কেউ স্বার্থের লোভে গোপন প্রেমিকাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় উঁচু টাওয়ার থেকে। কেউ প্রেমিকার জন্মদিনের উপহার চুরি করতে গিয়ে হাসিমুখে মানুষ খুন করে বসে। কেউ বা ভয়াবহ সাইকোপ্যাথ। ভুল করে সামান্য একটু পয়সা কম ফেরত দেওয়ার অপরাধে চেইন দিয়ে গলা পেচিয়ে হত্যা করে ফেলে কাউন্টারের মেয়েটাকে। কেউ বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে একজন শিং ওয়ালা লোককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় পাহাড়ের নীচে। কেউ বা ছুরি ধরে জিম্মি করে রাখে অসহায় একজন ব্যাংক ডাকাতকে। এমন লোক নিজে ক্রিমিন্যাল না হয়ে যায় কী করে?
যাক গে, আমার ক্রিমিন্যালগিরির কথা বাদ দিন। এখন কথা হচ্ছে যে, এই পুরোনো গল্প আবার পোস্ট করা কেন?
আগে মুক্তমনার ওয়েবসাইটে যে সব লেখা ছিল, সেগুলো এখনকার পাঠকেরা পাঠ করতে পারেন না। স্বপন মাঝি নামের এক ভদ্রলোক নতুন মুক্তমনায় এসেছেন। নতুন মানুষ যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই মুক্তমনা নিয়ে তাঁর উৎসাহটা একটু বেশিই। নয়া মুসলমানতো, তাই গরুর গোস্ত বেশি বেশি খান। এই ভদ্রলোক কোনো এক বিচিত্র কারণে আমার লেখার ভক্ত (সত্যি মিথ্যা জানি না, তিনি বলেছেন এই কথা।) কোথা থেকে যেন জেনেছেন যে, আমি নিশাচর প্রাণী। মাঝে মাঝেই তাই রাত-বিরেতে ফোন করেন তিনি। ফোন করে আমার লেখার প্রতি তাঁর উচ্ছ্বাস, উদ্দাম ভালোবাসার কথা জানান। আমি অবশ্য খুব একটা গলি না তাতে। তিনি যখন প্রবল আবেগে এগুলো বলে যেতে থাকেন, আমি তখন আস্তে করে কান থেকে রিসিভারটা দূরে সরিয়ে রাখি।
প্রশংসা খাই না, এমন মহাপুরুষ আমি নই। তবে, এই উচ্ছ্বাসের পিছনের কারণগুলো কী কী হতে পারে সেটা অনুমান করতে পারি বলেই আমার এই নিরুত্তেজনা। আদিল মাহমুদ নামের এক ভণ্ড নবী আছেন। তিনি যখন গাঁজায় দম দেন, তখনই ধমাধম আয়াত নাজিল করতে থাকেন আমাকে সুসাহিত্যিক ইত্যাদি সুবচনে ভূষিত করে। সুসাহিত্যিক তো দূরের কথা নিজেকে সাহিত্যিক বলেই মনে করি না আমি। যাঁরা দেওয়ান গাজীর কিসসা নাটক দেখেছেন, তাঁরা এই রোগটা সম্পর্কে সম্যক অভিহিত আছেন। স্বপন মাঝির ক্ষেত্রেও আমার একই ধারণা। তিনি আমাকে যখন ফোন দেন, তখন নাম না জানা কোনো তরলের প্রভাবে তাঁর মনটা খুবই সরল অবস্থায় থাকে। সে কারণেই এতো উচ্ছ্বাস। সরলই থাক আর গরলই থাক, এই ভদ্রলোক কয়েকদিন ধরে জ্বালিয়ে মারছেন আমার পুরোনো লেখাগুলো পাওয়ার জন্য। একটা দুটো লিংক দিয়েছিও তাঁকে। তাতে খুশি নন তিনি। আমাকে বলেছেন পুরোনো লেখাগুলো রিপোস্ট দিতে। জনস্বার্থে। 🙂
তাঁর সেই অনুরোধেই এই রিপোস্ট। পাঠক যদি বিরক্ত হয়ে কাউকে কড়া পিটুনি দিতে চান, স্বপন মাঝিকে দিয়েন। তিনিই প্রাপ্য এই পিটুনির। আমি এর মধ্যে নেই।
আরেকটা কথা বলে যাই। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার নায়ক অমিত রায় বলেছিল যে, কবি মাত্রের পাঁচ বছর কবিতা লেখা উচিত। এর বেশি নয়। তা না হলে নিজের লেখা থেকেই নকল করা শুরু করে। ব্লগারদের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। পাঁচ বছর পরেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো উচিত তাঁদের। তা না হলে এরকমই হবে। রিপোস্টে রিপোস্টে ভরে যাবে এই ভূবন।
এই গল্পটা যখন শুরুতে পোস্ট করেছিলাম মুক্তমনায় কয়েক বছর আগে, আমার বাংলা ভাষায় দীনতার কারণে এর শিরোনামটা তখন ভুল ছিল। শিরোনাম দিয়েছিলাম নাচনেওয়ালী। কিন্তু এই শব্দটা অভিধানে নেই। আসল শব্দটা হবে নাচ-ওয়ালি বা নাচওয়ালি। এবার সেটা সংশোধন করে দিলাম।
:line:
দাঁতে দাঁত চেপে গাড়ী চালাচ্ছে রাসেল।
মেজাজ ভয়াবহ রকমের খারাপ। মেজাজটাকে স্বাভাবিকে আনতে মনে মনে এক থেকে একশ’ পর্যন্ত গোনা শুরু করেছে সে। কোথায় যেন পড়েছিল প্রচণ্ড রাগ হলে মনে মনে সংখ্যা গুনলে নাকি রাগ কমে যায়। পঁচাত্তর পর্যন্ত গুনে ফেলেছে তবু রাগ কমছে না। কমছে না দেখেই আরো রাগ বেড়ে যাচ্ছে তার। অন্য কোন সময় হলে অবশ্য এতো ঝামেলা করতে হতো না। বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে দুনিয়ার যত খারাপ খারাপ গালি আছে সেগুলোর তুবড়ি ছুটিয়ে রাগ মিটিয়ে নিতো। মনে মনে অবশ্য রাজ্যের গালাগালি করছে, কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। শব্দ করে গালি দিতে না পারলে গালির কার্যকারিতাও থাকে না মনে হয়। এখন সেটা করা যাচ্ছে না বলেই যত সমস্যা।
সমস্যাটার উৎস হচ্ছে তার পিছনের সিটে বসা স্বল্পবসনা স্বর্ণকেশী সুন্দরী নাচওয়ালিটি। ন্যাংটো নাচের ক্লাব লেপার্ড এর সামনে থেকে আধা ন্যাংটো এই ছুকড়িকে তুলেছে রাসেল। যাবে আরেক ন্যাংটো ক্লাব চিতায়। বেশবাস দেখেই বোঝা যাচ্ছে লেপার্ডের নাচানাচি শেষ করে চিতায় উদোম হয়ে নাচতে যাচ্ছে। তাতে অবশ্য রাসেলের মেজাজ খারাপ হওয়ার কিছু নেই। দুনিয়ার সব খারাপ কাজের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে এমন কোন দিব্যি তাকে কেউ দেয়নি। কে কোথায় ন্যাংটো হয়ে নাচছে তাতে তার কিছুই যায় আসে না। নিজের সমস্যা নিয়েই অস্থির হয়ে আছে সে। অন্যের কায়-কারবার দেখার সময় কোথায়।
ছুকড়ি যখন গাড়ীতে উঠেছে তখনই ভুর ভুর করে মদের গন্ধ পেয়েছে রাসেল। সেটাও কোন সমস্যা নয়। মাঝে মাঝে রাতে যখন ট্যাক্সি চালায় তখন বেহেড মাতালদেরকেও যাত্রী হিসাবে নেওয়ার অভিজ্ঞতা তার আছে। তেমন বড় ধরনের কোন সমস্যাতেই সে কখনো পড়েনি। একবার এক মাতাল অবশ্য টাকা না দিয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন ওই বাড়িতে যেয়ে বলতেই আগের রাতের সেই মাতাল লোকটাই বার বার ক্ষমা চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে দিয়েছিল রাসেলকে। আরেকবার এক মাতাল বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিল সারা গাড়ি। কার ওয়াশে নিয়ে পরিষ্কার করতে গাঁটের অনেকগুলো টাকাই খরচ হয়ে গিয়েছিল রাসেলের। সেই সব সমস্যার তুলনায় এই ছুকরিতো কিছুই করছে না।
গাড়িতে উঠার পর থেকেই অসম্ভব বাজে ব্যবহার করা শুরু করেছিল মেয়েটা। আর সেটাই রাসেলের মেজাজ খারাপের মূল কারণ। রাসেলের সম্ভাষণের বিপরীতে খিটখিটে মেজাজে চিতায় যেতে আদেশ দেওয়া থেকে এর সূত্রপাত। কোন কারণে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে ছিল নটি সুন্দরীর। ‘হারি আপ, হারি আপ’ বলে অনবরত চিৎকার করছিল সে। অফিস ছুটির সময় বলে রাস্তায় অসম্ভব ভিড়। দক্ষ হাতে এ লেন ও লেন করে ট্যাক্সিটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল রাসেল। তার মধ্য দিয়ে পেছন থেকে তারস্বরে চেঁচিয়েছে মেয়েটা।
‘’ইউ ফাকিং ইডিয়ট, মুভ ফাস্টার। শিট!! আই এ্যাম গোনা বি লেট। ডোন্ট ইউ নো হাউ টু ড্রাইভ? হু গেভ ইউ দ্য ফাকিং লাইসেন্স’।’
‘’তোর বাপে দিছে, মাগি’। রাসেল মনে মনে বলে। মুখে অবশ্য বলে, ‘আই এ্যাম ট্রাইং মাই বেস্ট, ম্যাম। টু মেনি ট্রাফিক্স টুডে। প্লিজ, হ্যাভ পেশেন্স’।’
ট্রাফিক সিগন্যাল হলুদ হয়ে আসতেই ট্যাক্সিটাকে এক ইন্টার-সেকশনে থামিয়েছিল রাসেল। আর পায় কে? নাচওয়ালির মুখে যেন খই ফুটতে শুরু করেছিল। ‘’হোয়াট আর ইউ ডুয়িং, এ্যাসহোল? হোয়াই দ্য হেল ইউ স্টপড? হোয়াই ডিডন’ট ইউ রান দ্য ইয়েলো লাইট? ফাকিং থিফ। ইউ ওয়ান্ট টু স্টিল মাই ফাকিং মানি’।’
‘’তোর গতর বেচা টাকা চুরি করার কোন ইচ্ছাই আমার নাই। ওই টাকায় আমি থুথু দেই। তোর টাকা তুই মশলা মাখাইয়া খা গিয়া’।’ মনে মনে বিচ্ছিরি একটা গালি দিয়ে বলেছিল রাসেল। বাইরে অবশ্য পাথরের মতো ভাবলেশহীন মুখে নর্তকীর গালি হজম করেছিল সে। কাস্টমার গালি দিলেও হাসিমুখে তা হজম করতে হবে এটাই এই দেশের নিয়ম।
যে শালারা এই দেশে কাস্টমারদের ঈশ্বরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে তাদের চোদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ে রাসেল। সামারের সময় অনেক বাঙালিদের ফ্যান বা এয়ারকুলার কিনে কয়েক মাস ব্যবহার করে ওয়ালমার্টে ফেরত দিতে দেখেছে রাসেল। স্যার স্যার বলে ওই সব ছ্যাঁচড়দের পুরো টাকা ফেরত দিয়ে দেয় ওয়ালমার্টের গর্দভগুলা। নিজের অদৃষ্টকেও গাল দিতে ছাড়ে না রাসেল। কোন দুঃখে যে ক্যানাডায় এসেছিল। এই মড়ার দেশে কেউ আসে। পড়ার খরচ যোগানোর জন্য হেন কোন কাজ নেই যা সে করেনি। ভয়ংকর ঠাণ্ডার মধ্যে ফুল সার্ভিস গ্যাস স্টেশনের এটেনডান্টের কাজ করেছে সে। ক্যানাডিয়ান টায়ারের সামনে দাঁড়িয়ে সারাদিন ধরে হট-ডগ বেঁচেছে একসময়। মেক্সিকান শ্রমিকদের সাথে দিনের পর দিন লেমিংটনের টমাটো ক্ষেতে কাজ করারও অভিজ্ঞতা আছে তার। ভাগ্য ভাল ক্যাব লাইসেন্স করেছিল। এক বাঙালি ক্যাব ড্রাইভার সপ্তাহে দুই দিন তার গাড়ি রাসেলকে চালাতে দেয়।
ট্রাফিক সিগন্যালের গালিগালাজের পর থেকেই কী কারণে যেন চুপ মেরে গেছে মেয়েটা। রাসেল রিয়ার ভিউ মিররে দেখার চেষ্টা করে তাকে। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্বর্ণকেশী। মুখের একপাশটা শুধু দেখতে পায় রাসেল। ডিম্বাকৃতির অপূর্ব সুন্দর একটা মুখ। এক মাথা ঢেউ খেলানো সোনালি চুল আছড়ে পড়ে আছে সুগঠিত নগ্ন কাঁধে। সুডৌল স্তন-দ্বয়ের অর্ধেকটাই উদ্ধত ভঙ্গিতে উন্মুক্ত। গাড়ির দুলুনির সাথে তির তির করে কাঁপছে সে দুটো। মনে হচ্ছে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে এক জোড়া অবাধ্য পায়রাকে। সুযোগ পেলেই বাঁধন কেটে ডানা মেলে উড়াল দেবে আকাশে। অন্য সময় হলে হয়তো রাসেল তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতো এই অসাধারণ সৌন্দর্যকে। কিন্তু মেজাজ গরমের কারণে এখন আর তা হচ্ছে না। এরকম একটা সুন্দরী মেয়ের মুখ দিয়ে এরকম বিচ্ছিরি সব গালিগালাজ কী করে বের হয়, তাই নিয়ে বরং গবেষণা শুরু করে দেয় সে।
চিতার সামনে আসতেই ইচ্ছে করেই সজোরে ব্রেক করে রাসেল। প্রচণ্ড ঝাঁকি খেয়ে আকাশের দিক থেকে মুখ সরিয়ে নেয় মেয়েটা। সাপের মত হিস হিস করে গালি দেয় রাসেলকে, ‘’ফাক ইউ’’।
‘’বাসায় আসিস, হারামজাদী। তখন দেখবো কে কারে কী করে’।’ থমথমে মুখে মনে মনে পালটা উত্তর দেয় রাসেল।
মিটারে সাড়ে চৌদ্দ ডলার ভাড়া উঠেছে। পার্সের ভিতর থেকে একটা বিশ ডলারের নোট বের করে দলা পাকিয়ে সিটের উপর দিয়ে রাসেলের কোলে ছুড়ে দেয় মেয়েটা। কাটা কাটা স্বরে বলে ‘কিপ দ্য চেঞ্জ’। তারপর পেভমেন্টে নেমে দড়াম করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয় সে।
‘’তোর চেঞ্জের আমি নিকুচি করি, বেশ্যা মাগি’।’ মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে রাসেল। একদিন লেপার্ড বা চিতায় যেয়ে এই নাচওয়ালির নাচ দেখবে সে। উলঙ্গ হয়ে ছুকড়িটা যখন তার টেবিলের সামনে আসবে তখন সে তার বিশেষ অঙ্গে বিশ ডলারের একটা নোট গুঁজে দিয়ে উদার স্বরে বলবে, ‘কিপ ইট’।
এখন গলা ছেড়ে গালি দিলে আর শুনবে না এই ভরসায় ঘাড় ঘুরিয়ে রাসেল তার জানা সবচেয়ে কুৎসিত খিস্তিটা দিতে গিয়ে মাঝপথেই থমকে গেলো। কোনো এক আশ্চর্য উপায়ে মেয়েটা যেন জানতো রাসেল কী করবে। ঠিক একই সময়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সেও তাকিয়েছে রাসেলের দিকে। মেয়েটার চোখে চোখ আটকে যায় রাসেলের। সাগরের মতো ঘন নীল দুটো মায়াময় ডাগর চোখে গভীর বিষাদ।
এতো বিষণ্ণ চোখ মানুষের হয় কি করে? দৃষ্টি নামিয়ে নেয় রাসেল।
রাসেলের দিকে পিছন ফেরে মেয়েটা। তারপর মাথা নিচু করে পা টেনে টেনে এগিয়ে যেতে থাকে চিতার দিকে।
বেশ…..ভাল…..
….তবে….আর….একটু…..এগিয়ে….নিলে….ভাল……হত….
গল্পটা সুন্দর , গল্পের গল্পটা আরও চমৎকার সন্দেহ নাই । কিন্তু দাদা হুমায়ুনের উপর একটা সিরিজ শুরু করছিলেন সেটা ইয়াদ আছে তো ? এক সপ্তাহের মধ্যে ২য় পর্ব দেবার কথা , ২ সপ্তাহ যে যায় যায় !! 🙁 😕
@ধ্রুবনিল,
চলবে বললে যে চলে না, এইটাতো বলছিলাম মনে হয়। 🙂
আসবে, এই সপ্তাহের মধ্যেই আসবে আশা করছি।
আপনার গল্প আমার বেশ ভালো লাগে টেকনিকের কারনে। যে অনুভূতিটি দিতে চাইছেন পাঠককে তার ১০ মাইলের ভেতর দিয়ে না হাঁটিয়ে, শেষে গিয়ে আক্রান্ত করেন বেশ গুরুতর ভাবে।
আপনার শেষের কবিতার ওই কোট গল্পকারদের জন্য খাঁটে না, তাই আশা করি লিখতে থাকবেন।
@পলাস,
লজ্জা দিচ্ছেন। আমি গল্পকার নই। নিতান্তই শখের বশে দুই-চারটা গল্প লিখেছি, এই যা।
হাহাহা। এই ফাঁকটা যে ছিল খেয়াল করি নাই। নাহলে অন্য কোট দিতাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনাকে। (F)
গল্পটার শেষাংশ জোরে ধরে চেঞ্জ করে ফেলতে মন চাইছে। 🙂
@সৈকত চৌধুরী,
ক্যান? পছন্দ হয় নাই? 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
হাঃ হা। কিছু কিছু জিনিস আছে যা পছন্দ হলেই চেঞ্জ করতে মন চায়। আসলে পাঠকের এই আকুলতার মধ্যেই গল্পকারের সফলতা নিহিত রয়েছে।
আমিতো প্রথমে আপনার কথাকেই গল্প ভেবে পড়ছিলাম!
চমতকার লেখার হাত আপনার। এই গল্পটাও মেদহীন টান টান, ঐ নাচওয়ালির মতোই!
এটা একটা বড় আকারের উপন্যাস হলেও এক টানেই পড়ে ফেলতাম। (এমন আরো কিছু গল্প আছে মনে হচ্ছে! লিঙ্ক দেন 🙂 আর নতুন গল্প ছাড়েন)
@তানভীরুল ইসলাম,
:)) গল্পের গল্প এটা।
ধন্যবাদ তানভীর। বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞান লেখকদের সাধারণত সাহিত্যের প্রতি দরদ অনেক কম হয়। আপনি ব্যতিক্রম। (F)
ফরিদ ভাই, আপনার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ হইল আপনি এত কৃপণ কেন? গল্পের জাদুকর আপনি- থলির ভিতর থেকে কত্তদিন পরে পরে একটি একটি বাহির করেন। আরো একটু বেশি পাইবার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে। গল্পের আগের গল্প পড়িয়া কিছু আগুনগরম গালাগালি শিখিবার লোভ হইয়াছিল। কিন্তুক দেখিলাম আন্নাভাবীতে ভীত হইয়া আপনি আপনার কী-বোর্ড সংযত করিয়াছেন। যাহা হউক – আরো বেশি বেশি আপনার লেখা চাই – পুরনো হইলেও আপত্তি নাই।
@প্রদীপ দেব,
কে কারে কী বলে? আজকে একটা স্বীকারোক্তি করে যাই। কেউ জানে না এটা। আমার গল্প লেখার ইচ্ছার সূত্রপাত মুক্তমনায় আপনার একটা গল্প পড়েই শুরু হয়েছিল।
বুড়া বয়সে কিছু শেখা যায় না। সময় থাকতে যখন শেখেন নাই, আর শেখার দরকার নাই। আমি সব জানি, খালি সেন্সর বোর্ডের সভানেত্রীর ভয়ে কইতে পারি না। 🙂
যতটুকু বুঝতেছি আসল গালাগালিগুলা আসে নাই। তাইলে হয়ত আপনার কান্নাও আন্না ভাবীর মন গলাইতে পারত না। বাসা থেকে নির্ঘাত বহিস্কার। :)) :))
আচ্ছা আরেকটা ব্যাপার ফরিদ ভাই। বেশ কিছু দিন আগে শুনলাম “দৈন্যতা” নাকি ভুল। “দৈন্য” নাকি সঠিক। আমি শুইন্যা কই, কস্কি মমিন! আমার কাছে অভিধান নাই। একটু বলেন তো কেসটা কী?
@সাইফুল ইসলাম,
তোমার আন্না ভাবি বড় হইছে ভিন্ন পরিবেশে। শালার মত মধুর একটা শব্দে কাউরে ঘরের মধ্যে ডাকলেও সে আপসেট হয়ে যায়। আসল গালি আর দিমু কেমনে? 🙁
দৈন্যতা ভুল। আমি নিজেও জানতাম না। এখন ঠিক করেছি। শব্দটা হবে দৈন্য অথবা দীনতা।
অসাধারণ, চমৎকার !
@সফ্টডক,
ধন্যবাদ আপনাকে। (C)
গল্পের গল্পই ভাল লেগেছে। (Y)
@আসরাফ,
টাটকা যে। গল্পটাতো পুরোনো। 🙂
নাচওয়ালির ছবি কই? :-[ :-[
@রামগড়ুড়ের ছানা,
বড় হও দাদা ঠাকুর, তোমায় আমি নাচওয়ালির ছবি দেখাবো! 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
২২ বছর হয়ে গেলো , আর বড় হইলেতো আপনার মতো বৃদ্ধ হয়ে যাবো যার সংখ্যা দেখলে মাথা ঘুরায়,পানি খেতে হয় 🙁 ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এইটা দেখো দাদাবাবু। খালি নাচওয়ালি দিতে পারলাম না, নাচওয়ালাও আছে সাথে।
এটা একটা আইরিশ স্টেপ ড্যান্স। আমার দারুণ পছন্দের।
httpv://www.youtube.com/watch?v=HgGAzBDE454
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ও ছবি; ছবি? দেখসি তো; ৩৬ ২২ ৩৬ আর হেল্লেগাই তো অর চোখের দিকে তাকাইসে। যদি ৪২ ২২ ৩৬ হৈত তাইলে কিন্তু আর সাগরের মতো ঘন নীল দুটো মায়াময় ডাগর চোখে চোখ পড়তো না :))
@কাজী রহমান,
আপনারেও কি রামগড়ুড়ের ছানাের মত অংকের রোগে ধরলো নাকি? এইসব হিজিবিজি অশ্লীল সংখ্যা দিয়া কী কইতে চান আপনে? :-s
@ফরিদ আহমেদ,
৩৬ ২২ ৩৬ যে তাহার মাপ ইহাও কি মাসুদ রানা ভক্ত এবং ভরাটবক্ষপ্রিয় ফরিদ আহমদকে বুঝাইয়া বলিতে হইবে? মাপখানি ৩৬ ছাড়িয়া কিঞ্চিৎ আরো ভরাট হইলে নায়ক আঁখি ত্যাজিয়া ভরাটের দিকেই চাহিয়া রহিত। সে ডাগর চক্ষু এবং বিষাদ কিছুই দেখিতে পাহিতো না।
@কাজী রহমান,
আপনিতো দেখি তোতা পাখির মত সেই ছত্রিশ আর বিয়াল্লিশের নামতা পড়েই যাচ্ছেন, পড়েই যাচ্ছেন। আসল কথাতো কন না। গজ ফিতা ছাড়া ছত্রিশ না বিয়াল্লিশ মাপবো কেমনে? আর যদি মাপতেই যাই, সহি সালামতে বাড়িতে ফেরা কি সম্ভব হবে? টেংরি হাতে ধরায় ছাইড়া দিবো না? মাসুদ রানাও বাঁচাইতে পারবো না মনে হয়। মাইয়ারা আইজকাল কেউ আর সলজ্জ সোহানা না, সবাই রুদ্র রূপা।
বুলবুলি পাখি আশে পাশে নাই মনে হচ্ছে। তাই তোতাপাখির মত মুখ তপড়াচ্ছে্ন। 😉
@ফরিদ আহমেদ,
আয় হায়রে সাধু পুরুষ। রামগড়ুড়ের ছানারে পাঠাইতে হইবো মনে লয়, ‘অনুমান’ অঙ্কের হিসাব বুঝায়া দিবো
পাখি ধান ক্ষেত পাহারায় ব্যাস্ত; আইলের খবর সহজে নিতে আইবো না।
হ
কেক? (^)
অনেক সুন্দর,অনেক অনেক অনেক। শেষ লাইনে এসে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। রিপোস্ট করবার জন্য ধন্যবাদ।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
এই অনুভূতিটা দরকার খুব। (F)
@ফরিদ আহমেদ
অনেক ভাল লেগেছে গল্পটি। মনে মনে এই গালির আলাপন টা নিয়ে যে যাই বলুক আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। শৈল্পিক উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে গল্পে ভাব প্রকাশটাই আসল।
“শিল্পের অনুপস্থিতি ই ভাল্গারিদম এর বাজনায় ভালগার হয়ে উপস্থাপিত হয় আমাদের সাদা চোখে” (D)
@নিলীম আহসান,
ধন্যবাদ আপনাকে। একটা নাচওয়ালির ব্যানার করে দিতে পারেন এই সুযোগে। রামগড়ুড়ের ছানাের মত একটা নাবালক ছেলে কী মিষ্টি আবদার করেছে। ওই আবদার না রাখলে কি চলে, বলেন?
নাচওয়ালি, গানওয়ালি, চলওয়ালি, সুনওয়ালি > ভুল।
নাচ্-নে-ওয়ালি, গান্-নে-ওয়ালি, চল্-নে-ওয়ালি, সুন্-নে-ওয়ালি > শুদ্ধ।
তেমনি-
নাচওয়ালা, গানওয়ালা, চলওয়ালা, সুনওয়ালা > ভুল।
নাচ্-নে-ওয়ালা, গান্-নে-ওয়ালা, চল্-নে-ওয়ালা, সুন্-নে-ওয়ালা > শুদ্ধ।
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/untitled-7.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
আপনাকে একটা অনুরোধ করি। এইসব পণ্ডিতি নিজের মধ্যেই রাখেন অথবা অন্য কোথাও গিয়ে দেখান। আমার পোস্টে এসে প্রসব করবেন না, প্লিজ। আমি খুব একটা মুগ্ধ হই না আপনার পাণ্ডিত্যে।
আমি জেনে শুনেই নাচওয়ালি করেছি। পারলে বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধানটা দেখে নিয়েন। বানানের ক্ষেত্রে ওটাই বাংলা একাডেমীর সর্বশেষ আপডেট।
আপনার সাথে তিক্ততাময় তর্কে যাবার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পারবেন আপনি।
@ফরিদ আহমেদ, :lotpot:
@ফরিদ আহমেদ,
নাচনেওয়ালি আপনার আগের শিরোনামটাই সঠিক ছিল বলে মনে করি। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি, বইয়ে পড়েছি ডান্সার বা নর্তকীর উর্দু নাচনেওয়ালি। উর্দু গ্রামার সে কথাই বলে। বস্তুর মালিক বা মালিকানা প্রকাশে নামবাচক শব্দ যে রূপ নেয়, ক্রিয়াপদের সাথে সংযুক্ত হলে অন্য রূপ নেয়। নাচ একটি ক্রিয়া, বস্তু নয়। স্ক্রিনশটের উর্দু লেখাটা আমার হাতের নয়, উর্দু ডিকশনারী থেকে নেয়া। আর বাংলাটার লিঙ্ক এখানে।
এখানে পণ্ডিতি বা তিক্ততাময় তর্কের কী হলো? বলে দিলেই পারেন – আপনারটাই সঠিক, আমি ভুল। সমালোচনার উর্ধে কোন মানুষ থাকতে পারেন আমার জানা ছিলনা। ঠিক আছে আপনার লেখায় আর মন্তব্য করবোনা।
@আকাশ মালিক,
আমার অবশ্য আপনার আর ফরিদভাইয়ের মধ্যে কে সঠিক কে বেঠিক সেই বিতর্কে ঢোকার ইচ্ছে নাই। বানানে আমি রীতিমত দুর্বল, আর ব্যাকরণ তো বুঝিই না 🙂 তবে
এটা নিয়ে আমার কিছু কথা ছিল। নাচের মতোন গানও কিন্তু ক্রিয়া। কিন্তু গানওয়ালা শব্দটা অশুদ্ধ বলে তো শুনিনি। সুমনের একটা গানই আছে ‘গানওয়ালা’ নামে, আপনার কথা অনুযায়ী সেটা গাননেওয়ালা হবার কথা ছিলো না?
httpv://www.youtube.com/watch?v=7R831XhwV54
তবে এটা স্বীকার করছি – নাচওয়ালি শুনতেই আমার বেখাপ্পা লাগছে (আর নাচনেওয়ালি সঠিক)। অবশ্য সেটা শব্দের লাগাতার ভুলভাবে অপপ্রয়োগের ফলও হতে পারে। যেমন ‘ইতিমধ্যে’কে সঠিক মনে হয়, ইতোমধ্যে ভুল। অথচ ব্যাকরণগতভাবে ইতোমধ্যেই সঠিক বলে জানি।
@অভিজিৎ,
সামসাদ ডিকশেনারিতে নাচনেওয়ালি শব্দটাই নেই, আছে
নাচআলী, নাচউলি, নাচওয়ালী=professional dancing girl or dancing women, a ballerina
@বন্যা আহমেদ,
সংসদ বাঙ্গালা অভিধানের হার্ড কপির ৩৬৯ পৃষ্ঠার ইমেজ এখানে। নাচওয়ালীর অর্থ হিসাবে দেওয়া আছে পেশাদার নর্তক, বাইজী। এখানেও নাচনেওয়ালী নেই।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/05/shongshod.jpg[/img]
এ টি দেবের স্টুডেন্টস ফেভারিট ডিকশোনারি (বেঙ্গলি টু ইংলিশ) এ নাচ-ওয়ালীর ইংরেজি হিসাবে দেওয়া আছে Dancing girl, female dancer by profession. নাচনেওয়ালী অনুপস্থিত।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/05/AT-Dev1.jpg[/img]
বাংলা একাডেমী উচ্চারণ অভিধানে নাচওয়ালি, নাচওয়ালী দেওয়া আছে। অর্থ হিসাবে বলা আছে, পেশাদার নর্তকী, বাইজী। উপস, এখানেও নাচনেওয়ালী নেই। 🙁
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/05/bangla_aca.jpg[/img]
বাংলা বানানের ক্ষেত্রে আমি বাংলা একাডেমীকে অনুসরণ করি। শুধু আমি না, বাংলাদেশ সরকারও বাংলা একাডেমীর বানানকেই সরকারীভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলা একাডেমীর বাংলা বানান অভিধানে শব্দটা লেখা হয়েছে নাচওয়ালি হিসাবে। নাচউলি আছে কিন্তু নাচনেওয়ালী বলে কোনো শব্দের অস্তিত্ব এই অভিধানেও নেই।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/05/Bangla-Academi.jpg[/img]
রবীন্দ্রনাথ তাঁর রক্তকরবী নাটকেও নাচওয়ালী শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাঁর চেয়ে ভালো বাংলা জানা লোকতো আর বঙ্গদেশে জন্মায় নি।
@আকাশ মালিক,
কোনটা তিক্ততায় যাবে, আর কোনটা মিঠে দিকে গড়াবে, এই বোধটা খুব ভালো করে হয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায়। আপাতত নিরুদ্রপ একটা জীবন কাটাতে চাচ্ছি। তিক্ততার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আপনার এই মন্তব্যের উত্তরে অনেকদূর যেতে পারতাম, কিন্তু যাচ্ছি না শুধু ওই কারণেই।
আপনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল।
আশা করছি যে, এটাই আমার শেষ উত্তর হবে।
@আকাশ মালিক, বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধান – পরিমার্জিত সংস্করণ, পৃঃ ৬৭১ – নাচ-ওয়ালি/ওয়ালী – নর্তকী, বাইজী। নাচুনী, নাচুনি, নাচনী – শব্দের অর্থও নর্তকী। কিন্তু নাচনেওয়ালা বা নাচনেওয়ালী – নেই।
গল্পের পিছের গল্পটা তো খুব মজার। :)) আর গল্পটা অসাধারণ।
@নির্মিতব্য,
ধন্যবাদ নির্মি।
ধাতানিটা খাওয়াটা অত মজার ছিল না। 🙁
“উলুনতুস মুছ/ ফেসাতুল বাহার/ কালা কুতুবিহি” – আল ফরিদ
আত্ম রক্ষার্থে ভক্তের বয়ানঃ
মাসে দুবার কথাই যদি “প্রায়শ” বা রাত বিরেত হয়, তাহলে প্রশ্ন করতেই হচ্ছে বিশেষ তরল দ্বারা কে বেশি প্রভাবিত?
ভাল না লাগা – “অলিভিয়া…” বলার সময় মনে হয় কান থেকে ফোন অনেক দূরে ছিল।
তবে খুব করে চাইবো ‘জিম্মি, নীল পাহাড়ের চূড়ায়, জন হেনরির মত লেখা যার হাত থেকে বের হয় – তাকে ফোনে নয়, সরাসরি বাসায় গিয়ে উপস্থিত হতে। তখন এই ‘হুইন্যা মুসলমানরে’ গরু না দিয়ে একটু শাক পাতা দিলেই কৃতার্থ হবে। হা হা হা
যাক এবার, গল্প নিয়ে কিছু না বললেই নয়।
শ্রমজীবি মানুষের ভাষা থেকে সুশীল লেখকবৃন্দ অনেক অনেক দূরে থাকেন। এরা যেন অস্পৃশ্য। নাচওয়ালি গল্পে ভাষাটা যদি সুশীল হতো, তা’হলে এটাকে একটি ‘অশ্লীল গল্প’ বলা যেত। অশ্লীল(!) ভাষার কারণে গল্পটা বেশ সুশীল হয়ে উঠেছে। সার্থক গল্প।
@স্বপন মাঝি,
ফরিদ আহমেদকে জ্বালানোর মত দুঃসাহসী কাজটি করার জন্য ধন্যবাদ।
এক লাইনেই গল্পটি মানবিকতাবোধে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
এমন গল্পের লেখক কে?
ফরিদ ছাড়া আবার কে?
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ দিদি। (C)
@গীতা দাস,
আমি তার ‘জিম্মি এবং ‘নীল পাহাড়ের চূঁড়ায়’ পড়ে মুগ্ধ। ভাল গল্প খুব একটা চোখে পড়ে না। অনেকের মত আমিও মনে করি, তরুণ লেখকদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। আমি এ-ও মনে করি, মুক্তমনা অনেক সম্ভাবনায় লেখকের তীর্থ হয়ে উঠছে। আরো বেগবান করা যাবে, যদি নবাগতদের ভুল বা ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা বিনয়ী হই।
ভাল লেখা-র অপেক্ষায়।
@স্বপন মাঝি,
হ, টেলিফোনের মধ্যে দিয়ে যে ভুরভুরে ঘ্রাণ আসে, ওতেই নেশা হয়ে যায় আমার। :))
অলিভিয়ার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে আমি কান সাধারণত বন্ধ রাখি আমি। অন্ধপ্রেম বলে কথা।
এইসব ভগিচগিতে আমি ভুলছি না দাদা। শাকপাতার এইখানে অনেক দাম। এক আটি মটরশুটি শাকের দাম পাঁচ ছয় ডলার। এর চেয়ে গরু খাওয়াবো আপনারে ইচ্ছেমত। সস্তা খাবার। 🙂
ধন্যবাদ আপনাকে। আমারও ধারণা একই রকম। গালিগুলোগুলোকে আনতে হয়েছে গল্পের প্রয়োজনেই।
@ফরিদ আহমেদ,
আর সামনে এসে দাঁড়ালে….। আরো আরো অগ্নি-ঝরা লেখার আশায়, মুখোমুখি হ’বার স্বপ্নের সমাপ্তি।
এমনিতেই আমরা আন্ধা, তার উপর আবার অন্ধ প্রেমের আমদানি।
ঈশ্বরের ভাব-মূর্তি বদল হচ্ছে। মর্ত-লোক থেকে সপ্ত-লোকে, সপ্ত-লোক থেকে আবার মর্ত-লোকে প্রত্যার্বন।
অসাধারণ গল্প, ফরিদ ভাই। এক নাচওয়ালির বিষাদগ্রস্ত এক টুকরো জীবন অপূর্ব দক্ষতায় তুলে এনেছেন। একই সাথে এই ছোট গল্পটিতে রয়েছে এক প্রবাসীর সংগ্রাম-মুখর জীবন চিত্র। আপনার বলার ভঙ্গি গল্পটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে, করেছে বিশ্বাসযোগ্য!
পুনশ্চ: ইংরেজি গালিগুলি দুর্দান্ত। তুলনায় বাংলা গালিগুলি একটু নরমই মনে হল। এমন তো নয়, বাংলা ভাষায় এর চেয়ে কঠিন গালির অস্তিত্ব নেই।
@কাজি মামুন,
হা হা হাহা হা সত্যবাদী এখন ধরা খাইসে; যেই গাইল পাড়সিলো হেইগুলির কিস্-সু কয় নাই; ড রা ই সে :))
তবে, তবে এইটা আমি দিমুঃ
এ এক অন্য চোখে অন্যকে দেখা; পোড় খাওয়া নিজে একটা গভীর উপলব্ধির মানুষে রূপান্তরিত হয়ে অন্য আরেকটা মানুষকে দেখা; অসাধারন (D)
@কাজী রহমান,
ডরের কথা আপনের মুখে শোভা পায় না। বুলবুলির ডরেতো ঘরের মধ্যেই হিসু করে দেন। বাথরুম পর্যন্ত যেতে পারেন না।
ধন্যবাদ বড়দা। সেই চোখ যাবে না ভোলা। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
আমার প্রিয় একজন কবি-র গোপন তথ্য ফাঁস করে দে’য়ার জন্য, আপনার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেবার জোর প্রস্তুতি চলছে।
@স্বপন মাঝি,
কিয়ের মামলা, আরে হামলা,
হামলা ছাড়া কথা নাই,
মাইরের উপর ঔষধ নাই
@ফরিদ আহমেদ,
আইচ্ছা রাস্তায় পায়া লই, বুজামুনি
(জইল্লা গেলাম, এতো খিলাইলাম কাম অইলো না, নতুন নাচওয়ালির খুল্লামখুল্লা ছবি লাগবো মনে হয়)
@কাজি মামুন,
এই সমস্ত নরম গালির ফলেই যে গরম হাওয়া তৈরি হয়ে গিয়েছিল, কঠিনগুলো দিলেতো কান্নাকাটি করা ছাড়া আর উপায় থাকতো না। বাড়ি থেকে বহিষ্কার করতো সুনিশ্চিত। 🙁
গল্প শুরু করছিলাম পড়তে। কোন এক ভণ্ড নবীর কথায় আর পড়তে পারলাম না, মেজাজ বেজায় বিলা হয়ে গেল।
আপনাকে কে কবে কি বলে ত্যালায় সেগুলি আবার মনে ধরে বসেও থাকেন আর গোঁফে তেল দেন।
এখনো সময় আছে, আলোর পথে আসুন……
@আদিল মাহমুদ,
মেজাজটা কী বেশি বিলা মহানবীর? সুরা আল ফরিদ আবার নাজিল করে বসবেন নাতো? হাত ধ্বংস হলে লিখবো কেমনে? 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
কেউ নবী পয়গম্বর তো আর শখ করে হয় না, গায়েবী নির্দেশ পেলে তবেই না হয়। আপনাদের এসব বলে যদিও কোন লাভ নেই।
সুরায়ে আবে ফরিদ নাজিল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুক্তমনারদের খতম কর যেখানেই পাও, বিপরীত দিক হতে তাদের হস্তপদ কেটে দাও এ সমস্তই থাকবে। সাথে সাথে গুপ্তঘাতক লেলিয়ে ধমেশ্বরের শত্রুদের রাতের আঁধারে……ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনা তো জানেনই।
@আদিল মাহমুদ,
বুঝছি। আপনার ধারে কাছে থাকা যাবে না আমার। ক্যানাডার জীবন আমার ফুরাইছে। রাতের মধ্যেই বউ বাচ্চাকে বগলদাবা করে হিজরত করবো ইনশাল্লাহ। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
সত্যের সেনানীরা নেবে নাকো বিশ্রাম
আমাদের সংগ্রাম চলবেই অবিরাম।
@আদিল মাহমুদ,
এ আপনাদের কোন ব্যারাম?
শুধু বকবক করেন অবিরাম
@ফরিদ আহমেদ, :lotpot: :hahahee: :lotpot: :hahahee:
@আদিল মাহমুদ,
কেমন আছেন চাচাজি? আজকাল মুক্তমনায় তেমন দেখাই যায়না আপনাকে। একটা সমস্যা হয়ে গেছে,আজকাল আলুপুরি ছাড়া কিছু ভালো লাগেনা,সবই আপনার আশীর্বাদ (I) ।
@ভাতিজা রামগড়ুড়ের ছানা,
আজকাল নুতন ধর্মপ্রচার নিয়ে ব্যাস্ত থাকি। সেনাবাহিনীর ভেতর ধর্ম প্রচারের কাজে তোমার সক্রিয় সহায়তা চাই। দেখি, হিতা জুতার কায়দায় যদি একটা ক্যু ফ্যু গোছের কিছু করা যায়।
আমাদের ধমাধম ধর্মে ডালপুরি বিষয়ক বিধান আছে। ডাল বেশী খেলে রক্তে ইউরিয়া বেড়ে কিন্তু বেড়াছেড়া অবস্থা হতে পারে মনে রাখবা…
@আদিল মাহমুদ,
নাহ চাচাজীর দেখি চোখের পাওয়ার কমে গেছে,লিখসি আলু পড়সেন ডাল।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এ হে, বড় ভুল হয়ে গেছে। তোমার কথা মনে হয় ধমেশ্বরের শাফায়াত প্রাপ্ত ডাইলের কথাই খালি মনে পড়ে…আমার কি দোষ।
তবে তুমি আলোর পথে আসছ দেখে ভাল লাগল।