[স্বীকারোক্তি: চার্বাক নিয়ে কিছু লেখা আর একটা সাগর মন্থন করা মনে হয় একই কথা। এই সাগর হলো প্রাচীন ভারতীয় দর্শন। তা কেবল সাগরই নয়, মহাসাগরই বলা যায়। অতএব প্রথমেই এটা বলে রাখা সঙ্গত হবে যে, চার্বাক নিয়ে লেখার মুরোদ বা দুঃসাহস অর্বাচীন আমার নেই। বরং অত্যন্ত কৌতুহলি পাঠক হিসেবে চার্বাককে জানার এক অসফল চেষ্টা হিসেবে অনুসন্ধান চালানোর যে জটিল পথে পা বাড়িয়েছি, তারই চিহ্নরেখা এই সিরিজের উপাত্ত। ফলে এক কদম এগিয়েই ভেতর থেকে উত্থাপিত প্রশ্নের ধাক্কায় আরেক কদম এগিয়ে যাবার অবাধ্য মোহকে অস্বীকার করতে পারি নি বলেই সসঙ্কোচে আরেক পা বাড়িয়ে দেয়া। গুটি গুটি পায়ে এভাবে কয়েক পা এগিয়েছি বটে, কিন্তু এ দূরপনেয় দীর্ঘ পথের শেষ কোথায় এটা যেমন জানা নেই, তেমনি আদৌ কোনো সঠিক পথে এগুচ্ছি কিনা তাও নিশ্চিত নই। তাই এ অনিশ্চিত অভিযানের নাম দিয়েছি ‘চার্বাকের খোঁজে...’। শেষপর্যন্ত খোঁজ পাই আর না-পাই, নির্বুদ্ধিকভাবে হলেও অন্ততঃ খোঁজার চেষ্টা তো করেছি, এটাই সান্ত্বনা ! হা হা হা !
এই বেআক্কেলে অভিযানে যে পথ পেরিয়ে যাবো, সে পথে আবারো যে ফিরে ফিরে আসতে হবে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংযোজনে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মূল পাণ্ডুলিপিতে এই সংযোজনগুলো যথারীতি সন্নিবিষ্ট হতে থাকলেও ব্লগ-পোস্টে তা পুনঃসম্পাদন করা যদিওবা সম্ভব হবে না, তবে তা পরবর্তীকালে প্রকাশিতব্য সম্ভাব্য গ্রন্থকে হয়তো পুষ্ট করবে। অবশ্য আদৌ তা হবে কিনা তাও জানি না।
পরিশেষে যা না-বললে সত্যের অপলাপ হবে, তা হলো, এটাকে কোনক্রমেই মৌলিক কাজ ভাবার কারণ নেই। কেননা এই অভিযান আসলে তো এক দীর্ঘ পুস্তক-ভ্রমণই। এর সমস্ত তথ্য-উপাত্তই অকৃপণভাবে ধার করা হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থ থেকেই। তাছাড়া এ বিষয়ে আমি এমন নতুন কিছু তো রচনা করছি না, কেবল তথ্য জড়ো করা ছাড়া ! যার উৎস হলো এখানে এই ক্রমান্বয়াধীন গ্রন্থসূচি। ] তাই আশা করছি আমার এই নির্বুদ্ধিতাকে বুদ্ধিমান পাঠক নিজ গুণেই মার্জনা করবেন। ]
……………………………………..
১.০ : ভূমিকা
…
ভারতীয় দর্শন বলতে আমরা এমন এক আধ্যাত্মিক দর্শনের জগতকে বুঝে থাকি যেখানে প্রায় সবগুলো দর্শনই বিপুলভাবে আধ্যাত্মবাদে পরিপূর্ণ। এই সর্বগ্রাসী আধাত্মবাদের বিপরীতে কেবল একটি মাত্র দর্শন যে তার বস্তুতান্ত্রিক জড়বাদী ধারায় একক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্র ধরে সেই প্রাচীনকাল থেকেই নিজের অবস্থানটিকে শক্ত করে ধরে রেখেছে তা হলো চার্বাক দর্শন (carvaka philosophy) ।
.
শুধু তাই নয়, ভারতীয় আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির প্লাবনে ভেজা মাটিতে পাশাপাশি দাঁড়ানো এই মতবাদের বহমান অক্ষুণ্নতা স্বমহিমায় এতোটাই উজ্জ্বল যে, ভারতীয় দার্শনিকরা তাঁদের নিজ নিজ মতবাদকে সাজাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সম্ভাব্য আপত্তি অনুমান করে আগেভাগেই যুক্তি তর্কের সাহায্যে সেই আপত্তি খণ্ডনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। দু’পক্ষের দ্বন্দ্বময় যুক্তি আর পাল্টা যুক্তির যুযুধান স্রোতের বিপুল আয়োজনে ভারতীয় দর্শনের জগতটা তড়তড় করে এক সমৃদ্ধ অবস্থানে এগিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে চার্বাক পক্ষের নিজেদের অবস্থানের জায়গাটা ঢাকা পড়ে গেছে এক রহস্যজনক অন্ধকারে। চার্বাকদের নিজস্ব রচনা সম্ভারগুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিলুপ্ত এখন। তা কি যথোচিত সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে, না কি ক্ষমতাসীন প্রতিপক্ষের দুরভিসন্ধিমূলক অভিপ্রায়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে আমাদের জানার উপায় নেই। তবে বস্তুতই এ মতবাদ যে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াবার যোগ্যতা রাখে তা অপরপক্ষের সমরায়োজনের প্রস্তুতি থেকেই আমাদেরকে অনুমান করতে হয়। এই বিরুদ্ধপক্ষ কর্তৃক চার্বাক মতবাদকে ঠেকানো ও খণ্ডনের বিচিত্র প্রয়াস হিসেবে সেই দ্বন্দ্বপ্রসূত বিরোধী রচনাগুলোই চার্বাক মতবাদ জানার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য মহামূল্যবান উৎস হয়ে আছে আজো।
.
বিরুদ্ধপক্ষের নিজেদের অনুকুল দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উপস্থাপিত দর্শন-তত্ত্ব ও সাহিত্যে প্রতিপক্ষের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি ও মূলানুগ মতবাদ জানার প্রচেষ্টা কতোটা সন্দেহমুক্ত ও নির্ভরযোগ্য হবে তার আশঙ্কা প্রশ্নাতীত নয় যদিও, কিন্তু চার্বাকদের নিজস্ব সৃষ্টিসম্ভারের একান্তই অনুপস্থিতিতে এ ছাড়া আমাদের উপায়ও নেই। তাঁদের দর্শনসম্বন্ধীয় ধারণার জন্য অন্যের রচনার উপর এই নির্ভরতার কারণেই হয়তো চার্বাক মতের সুপ্রাচীন শক্তিটা অবিকৃতভাবে আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না কখনোই। তবে যুক্তিশীল কল্পনা অবারিত করলে তা অনুমান করা মোটেও দুঃসাধ্য হবে না বলে বিশ্বাস। এই অনুমান যথাযথ করার নিমিত্তে ভারতীয় দর্শনের প্রাথমিক পরিচিতি ও কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য জেনে রাখা আবশ্যক।
…
(চলবে…)
…
[*] [পরের পর্ব: ভারতীয় দর্শন-সূত্র]
…
চার্বাক দর্শনের বইটা কোন প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে ? সিলেটে কই পাব বই টা ?
ভারতীয় দর্শনের প্রধান শাখাগুলোর অন্যতম। এটি অধ্যাত্মবাদবিরোধী দর্শন। যখন এখানে বেদ ও উপনিষদকে কেন্দ্র করে অধ্যাত্মবাদী দর্শন চর্চা শুরু হয়, তখনই এ-দর্শন সামনে চলে আসে। এ-দর্শন কোনো প্রকার প্রত্যাদেশে বিশ্বাসী নয়, ‘প্রমাণ’ই এ-দর্শন অনুসারে যথার্থ জ্ঞানের উৎস। পারলৌকিক নয়, ইহজাগতিক সুখ ভোগই মানুষের একমাত্র কাম্য বলে চার্বাকরা মনে করত। ..পরের পর্ব পড়তে তর সইছে না …অনেক শুভ কামনা রইলো (Y)
দাদা, দারুণ। চার্বাক সম্পর্কে আগ্রহ আছে। যুক্তিশীল কল্পনার সাহায্যে অনুসন্ধানের যাত্রায় সাথে আছি। (Y)
@জাফর সাদিক চৌধুরী, ধন্যবাদ।
স্বাগতম দাদা,
শেষ হয়ে ও হইল না শেষ !!! ওমা এতো দেখি শুরুর আগেই শেষের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত মূল্যবান একটা বিষয়ে হাত দিয়েছেন। আপনি এটা লিখছেন এর মাহাত্ব্য শুধু এটুকুই না। আমাদের মত হাজার হাজার মানুষদের কাছে চার্বাক দর্শন তুলে ধরছেন, এর বিলুপ্তির হাত থেকে খোদ চার্বাক দর্শনকেই রক্ষা করছেন। আপনার উপর ভরসা আছে তাই, একটা উপভোগ্য সিরিজ সামনে পাচ্ছি। সেই আশাতেই রইলাম। আপনার সুসাস্থ্যের কামনা করছি।
@ছেঁড়াপাতা, হা হা হা ! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। তবে
এই কথার মাজেজাটা মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে ! কেন যেন বোধগম্য হলো না!
@রণদীপম বসু,
দাদা দুঃখিত, আমি ঠিকভাবে বুঝাতে পারিনি, তখনই কথাটা একটু বেখাপ্পা লাগছিলো, কিন্তু সময়ের অভাবে আর ঠিক করতে পারিনাই।
আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, আপনি চার্বাক দর্শন নিয়ে লিখছেন, এটা খুবই দুষ্প্রাপ্য একটা বিষয়। আমরা চার্বাক দর্শন নাম শুনি অনেক কিন্তু এটা পড়ার বা জানার ভাগ্য এখনও হয়নি। যেহেতু আপনি লিখছেন তাতে এটা আমাদের কাছে অনেক সহজপ্রাপ্য হয়ে উঠবে। এতে চার্বাক দর্শন বিলুপ্তির থেকে রক্ষা পাবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। এটুকুই
ধন্যবাদ দাদা, পরের পোষ্টের অপেক্ষায় আছি।
চারু = চার নবরূপে উত্তীর্ণ যাহাতে; চার্ব্বাক = যে বাক চার বহন করে (বঙ্গীয় শব্দকোষ, কলিম খান)
আপনাকে অভিনন্দন, চার্ব্বাক ( চার্বাক বলতে ভয় পাচ্ছি, কলিম খান আবার কি ব্যাখ্যা হাতে ধরিয়ে দেন কে জানে?)নিয়ে লেখার জন্য। অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বলছি, উনার লেখা থেকেই জানতে পারলাম ঈশ্বর আর ভগবানের আসল পরিচয়। পরে এরা কি করে জগতের মালিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, সেও এক মজার কাহিণী।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, এ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য। আশা করি বিভিন্ন মন্তব্য থেকে আরো অনেককিছু জানতে পারবো।
@স্বপন মাঝি, আমরা যদিও চার্বাক বানানেই লিখি, পুরনো গ্রন্থাদির মধ্যে দেখলাম বাংলায় চার্ব্বাক হিসেবেই লিখছে। তবে এ পর্যন্ত অধ্যয়নে এটা বোঝা যায় যে, এই দর্শনের নামাকরণে চার্বাক শব্দটির মাহাত্ম্য কোন ব্যাকরণ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। চার্বাক নামের উৎস খোঁজার সময় বিষয়টি আসবে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@রণদীপম বসু,
দাদা, ভূমিকাতেই শেষ!! তারপর? :-s
@বিপ্লব রহমান,
প্রথম পাতা থেকে এটা সরে না-যাওয়াতক পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে বিপ্লব দা !
দারুণ একটা সিরিজ শুরু হল। সাথে আমি দাদা। শুভেচ্ছা।
@মোজাফফর হোসেন, ভাবছিলাম মাথা শুধু আমারটাই নষ্ট হবে ক্যান ! সবাইরে নিয়াই নষ্ট হই! এজন্যেই এ সিরিজের জন্ম। হা হা হা !
এসব বিষয় মাথার উপর দিয়ে যায় তাই আর কোনো কাজ না পেয়ে আপনার লেখার শিরোনামটা ঠিক করে দিলাম,চন্দ্রবিন্দুটা ঠিকমত আসছিলোনা,এখন ঠিক আছে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, অংশগ্রহণই বড় কথা ! হা হা হা ! ধন্যবাদ রামগড়ুড়ের ছানা।
চার্বাক দর্শনের ব্যাপারে আমার অসম্ভব আগ্রহ রয়েছে । লেখাটি পড়ে আমার খুব ভাল লাগলো । আশা করি পরের পর্ব খুব শীঘ্রই পাবো ।
@মাসুদ রানা, ধন্যবাদ আপনাকে। বর্তমান পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরে গেলেই দ্বিতীয় পোস্টটি দিয়ে দেবো আশা করছি।
চার্বাক নিয়ে লেখায় এত ভয় কেন ?
যৌক্তিক এবং নির্মোহ দৃষ্টির সাহায্য নিয়ে যে কোন ব্যক্তির লেখা নিয়ে আলোচনা করা যায়। দর্শনের বিশাল সব ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা সব সময় হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এরিস্টোটল কিংবা প্লেটো নিয়ে শুধু আলোচনা নয় সমালোচনাও করা হয়। তবে হ্যা, অপ্রতুল উপাত্তের উপর ভিত্তি করে লিখতে গেলে প্রায়ই পাঠকদের দৃষ্টি মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে গিয়ে লেখকের সামর্থ্যের উপর গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয়।
চার্বাকের সময়কাল প্রাচীন হওয়ায় এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ যে, যেসব উপাত্ত ‘চার্বাকের নিজস্ব’ বলে ধারণা করা হয় সেসবের ঐতিহাসিক ও প্রামানিক বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আপনার লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। লেখার সফলতা কিংবা অসফলতা নিয়ে অগ্রীম দায়মুক্তির প্রয়োজন নেই।
@সংশপ্তক, হা হা হা ! চার্বাক নিয়ে লেখার ভয়টা হলো লেখাটা আদৌ চার্বাকের দিকে যাচ্ছে কিনা, সেটা প্রথম। দ্বিতীয়ত, কোন ব্যক্তিকে নিয়ে লেখায় সমস্যা নেই, কিন্তু চার্বাক নামে আদৌ কোন ব্যক্তি কি ছিলেন ? সেটাই তো এখনো অপ্রমাণিত ! আসলে চার্বাক একটা মতবাদ বা দর্শন। যার কোন নিজস্ব সাহিত্য পুরোপুরি বিলুপ্ত। আবার খ্রিস্টিয় অস্টম শতাব্দির আগে চার্বাক নামের কোন নাম-নিশানাই তো পাওয়া যায় না ! একই মতবাদে দেখা যায় তখন এর ধারক হচ্ছেন কোন এক বৃহস্পতি। এই বৃহস্পতিটা কে, তারও পরিচয় অন্ধকারে। প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে বৃহস্পতি একজনই আছেন, তিনি হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি। ভয়ানক বিভ্রম ! আবার প্রাচীন দর্শন সাহিত্যের অধিকাংশ স্থানেই এই মতবাদকে বলা হচ্ছে লোকায়ত। কেউ কেউ আবার দেহাচারী তান্ত্রিক সাধনার সাথে দেহাত্মবাদী লোকায়তকে মিশিয়ে হরদম বকাবকি করেছেন। এখানেই শেষ নয়, আড়াই হাজার বছর আগের কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বার্হস্পত্য মত হিসেবে যে সূত্র উদ্ধৃত আছে, সেখানে আরেক বিভ্রম। সেখানে ব্রাহ্মণ্যবাদী হেতুশাস্ত্র বা অনুমানশাস্ত্রকে বলা হচ্ছে আন্বীক্ষিকী, যা তিনটি দর্শনের সমন্বয়- সাংখ্য, যোগ ও লোকায়ত। বিদ্যা হিসেবে কৌটিল্য কেবল এগুলোই অনুমোদন করেছেন। অথচ বার্হস্পত্যরা এই আন্বীক্ষিকীকে বিদ্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। আবার রামায়ণ ও মহাভারতে এই হেতুবিদ্যা নিন্দিত হিসেবে চিহ্নিত, নাস্তিক্যের সমতুল্য বা একই। গত দুবছর ধরে অর্থনাশ, সময়নাশ, স্বাস্থ্যনাশ করে এই জটিল বিভ্রমে ঢুকে যদি একবাক্যে বলে ফেলি পেয়ে গেছি, পাগলেও হাসবে। কারণ, সেই বিরাশি-তিরাশি সালে অনার্সের ছাত্র থাকাকালীন উদীচিতে নির্মলেন্দু গুণের লেখা একটা স্যাটায়ার গান গাইতাম আমরা- কত গরু আইলো গেলো কত গরু গেলো তল, বঙ্গোপসাগরে আইসা ভেড়ায় বলে কত জল ! হাহ হা হা ! অতএব আমার হৃদকম্পের সারমর্ম কি বুঝাতে পারলাম ?
জয় করার নিমিত্তে বীরের বেশে যে গোলক ধাঁধায় ঢুকেছি, এখন সত্যি বলতে কি, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা ! তবে এই বুহ্যে ঢুকেই গেছি যখন তখন বেরোতে তো হবেই। আর সেই ঢোকা আর বেরুনোর চিহ্নরেখাই এই সিরিজের বিষয়বস্তু। তাই পাঠককে জানিয়ে না রাখলে নিজের প্রতি সৎ থাকা হয় না বলেই এই স্বীকারোক্তি। হাজার হাজার বছরের পুরনো প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য-দর্শন ও অগণিত শাস্ত্রের সমুদ্র মন্থন করা একক কোন ব্যক্তির এক জীবনে সম্ভব নয়। তার উপর প্রয়োজনীয় গ্রন্থের ভয়ঙ্কর অপ্রতুলতা নিয়ে ভিন্ন অংগনের একজন লেখক কিছু একটা করে ফেলবেন তাও সম্ভব নয়। আর চার্বাক বুঝতে হলে সবকটা ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে একটা ধারণা ছাড়া চিন্তাই করাই তো অসম্ভব। এতগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা নিয়ে মুই কী হনুরে বলার হিম্মত অন্তত আমার নেই।
আরো আশ্চর্যের বিষয় যে, আমাদের দেশের কোন দার্শনিক বা দর্শনের লোক এযাবৎ এ বিষয়টি নিয়ে কোন বই কি লিখেছেন ? অন্তত আমার সন্ধানে চোখে পড়েনি। আর আমি তো দর্শনের ছাত্রই নই ! হা হা হা !
তবে হাঁ, আমার এই চার্বাক ভ্রমণে যারা চার্বাক বিষয়ে খুব একটা ওয়াকেবহাল নন, তাঁরা অন্তত হতাশ হবেন না বলেই মনে করি। কেননা আমি নিজে হতাশ নই। আর এজন্যেই এই সিরিজ লেখার দুঃসাহস দেখাচ্ছি।
অনেক দীর্ঘ মন্তব্য করে ফেললাম। কোথাও কোনো বেফাস কিছু বলে ফেললাম কিনা জানি না। আশা করি আমার কোন কথায় মনে কষ্ট পাবেন না। এই ভ্রমণে সঙ্গি হয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন আশা করছি।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
@রণদীপম বসু,
আমাদের দেশের কোন দার্শনিক বা দর্শনের লোক এযাবৎ এ বিষয়টি নিয়ে কোন বই লিখেন নি বলেই তো আপনার মত কাউকে না কাউকে একাজে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের ধীরে ধীরে উন্মোচন করতে হবে ব্যক্তি চার্বাকের ঐতিহাসিক অস্তিত্বের সত্যতা। আসলেই চার্বাক দর্শনের উৎস ব্যক্তি চার্বাক না কি এই দর্শন অতীতের বিদ্যমান দর্শন বা দর্শন সমষ্টির অপভ্রংশ ? ভারতে লিখন পদ্ধতির প্রচলন তুলনামূলভাবে অনেক অর্বাচীন হওয়ায় প্রাচীন ভারতের মৌখিক লোকগাঁথাকে বাস্তব অবাস্তব ব্যক্তি বিশেষের মোড়ক দেয়াকে এতকাল যেভাবে বিতর্কাতীতভাবে গ্রহন করা হত , ইদানিং সে প্রথায় পরিবর্তন লক্ষনীয়।
@সংশপ্তক, এই সমস্যাটা মূলত প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের। কেননা প্রচীন সংস্কৃত সাহিত্য রচনাকাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাণ্ডুলিপিতে কোথাও নিজের নামটাও উল্লেখ করতেন না। তখন তো রীতি ছিলো পাণ্ডুলিপি শেষ লাইনটা ‘ইতি…প্রণীতম্’ কথাটা উল্লেখ করার। কোন কারণে ওই শেষ বাক্যটা বাদ পড়লে গোটা লেখাটা অজ্ঞাত পরিচয়ধারীর হয়ে যেতো। ফলে একজনের রচনা পরবর্তীকালে অন্যের রচনা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা অসম্ভব ছিলো না। এরকম সমস্যা নিয়ে সচলায়তনে ‘চাণক্যজন কহেন’ শিরোনামের সিরিজে কবিশ্রেষ্ঠ ভর্তৃহরির আলোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনা করতে হয়েছে।
এখন এই প্রযুক্তির যুগে সেটা হবার সম্ভাবনা শূন্যই বলা যায়।
@রণদীপম বসু,
সমস্যাটা এই যে, ব্রাহ্ম লিপিতে লেখা চার্বাক দর্শনের ভিত্তিমূল ‘বৃহস্পতি সূত্রের’ আসল পাণ্ডুলিপি নেই। ধারনা করা হয় যে, মৌর্য যুগে (খৃঃ পূঃ ৩২২ – খৃঃপূ ১৮৫) সেগুলো হারিয়ে গেছে। বিবিধ বিচ্ছিন্ন উৎস থেকে দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী ১৯২৮ সালে ৬০ টি সূত্র ‘বৃহস্পতি সূত্র’ নামে প্রথম প্রকাশ করেন।
@সংশপ্তক, দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী মহাশয় আসলে ৫৪ টি সূত্র সংকলন করে বৃহস্পতি সূত্র নাম দিয়েছিলেন এবং উৎস হিসেবে চার্বাক, বৃহস্পতি, পুরন্দর, কমলাশ্বতর এই দার্শনিকদের নাম করেছেন। তবে তাঁর এই সংগ্রহের মধ্যে চার্বাকের নামে প্রচলিত কিছু ছড়াকৃতির সংস্কৃত লোকগাথাও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বলে প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছেন। তবে ইংরেজ গবেষক টমাসের উদ্ধারকৃত এবং ১৯২১ সালে প্রকাশিত বার্হস্পত্য সূত্র নামের বইটিতে সম্ভবত একশটি সূত্র রয়েছে। তবে চার্বাক ষষ্ঠিতে চার্বাকের নামে প্রচলিত প্রামাণিক ষাটটি লোকগাথা রয়েছে, যাকে উদ্ধৃত করেই মূলত মাধবাচার্য শঙ্করাচার্যের মতো অষ্টম-নবম শতকের ন্যায় ও বেদান্ত দার্শনিকেরা চার্বাক দর্শনের যুক্তি খণ্ডনে প্রয়াসী হয়েছিলেন। বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করেছি নির্ধারিত পর্বে। এই বার্হস্পত্য-সূত্র, চার্বাক ষষ্ঠি সবই উপস্থাপন করবো যথাস্থানে।
সব মিলিয়ে অভিযানটা রোমাঞ্চকরই, অন্তত আমার কাছে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@রণদীপম বসু,
চার্বাক দর্শন নিয়ে সবচেয়ে অথেন্টিক কাজ যিনি করেছেন বলে মনে করা হয়, তার কথা তো আপনি জানেনই। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তার সুপরিচিত গ্রন্থটির নাম – লোকায়াত দর্শন।
এ ছাড়া লতিকা চট্টোপাধ্যায়ের চার্বাক দর্শন নামে একটি বই আছে। বেশ ক’বছর আগে পড়েছিলাম। দেখতে পারেন।
তবে আমি সবেচেয়ে বেশি চার্বাকদের নিয়ে জেনেছি শফিকুর রহমানের হিউম্যানিজম গ্রন্থটি পড়ে। বইটির ‘প্রাচীন ভারতে যুক্তিবাদ‘ অংশটি দেখতে পারেন। এ ছাড়া প্রবীর ঘোষের অলৌকিক নয় লৌকিক গ্রন্থেও (প্রথম পর্ব) চার্বাক শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বেশ ভাল আলোচনা আছে।
আমি আত্মা নিয়ে একটি লেখায় চার্বাকদের কথা উল্লেখে করেছিলাম বিচ্ছিন্নভাবে, হয়তো দেখে থাকবেন। আমার আর রায়হানের অবিশ্বাসের দর্শনেও চার্বাকদের কথা এসেছে প্রাসঙ্গিকভাবে।
আপনার এ সিরিজের সাফল্য কামনা করছি।
@অভিজিৎ, দা, পোস্টে একটা গ্রন্থসূচির হাইপারলিংক করা আছে। ওখানে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমার রেফারেন্স বইগুলোর তালিকা যুক্ত করে রেখেছি, যেগুলো আমার সংগ্রহে আছে। তবে শফিকুর রহমানের বইটাই পাই নি আমি, খুঁজতে হবে।
@রণদীপম বসু,
দেখলাম। ম্যালা বই যোগাড় করছেন দেখি।
আপ্নার মিশন আসলেই সফল হবে, এইবার।
@অভিজিৎ, হা হা হা ! অভিজিৎ দা, পথে নেমেই গেছি যখন, খালি হাতে কি আর ফেরা যাবে ! অমূল্য বা মূলহীন কিছু একটা তো নিয়ে আসতে হবে ! দেখা যাক কী হয়। তবে এটা আমার দীর্ঘমেয়াদী মিশন। আপাতত যতটুকু সঞ্চয় করেছি সেটুকুই এখন সিরিজ আকারে দিয়ে দিচ্ছি। কম্পুর হার্ড ড্রাইভকে বিশ্বাস করার সময় পেরিয়ে এসেছি যে !!
@রণদীপম বসু,
বই তালিকায় অভিজিৎ যে কটার নাম লিখেছে ওটাতে আমি আরো একটা যোগ করে দিলাম। কালী প্রসন্ন দাসের ‘ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা চার্বাক ও হিউম’; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; জুন ১৯৯৪।
@কাজী রহমান,
বইটি মনে হয় এখন আর স্টকে নেই, রহমান ভাই! তবে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, চার্বাক আর হিউম কি করে একসাথে আলোচিত হতে পারে? চার্বাক হল ভারতের আদিম লোকায়ত দর্শন; অন্যদিকে, হিউম (১৭১১-১৭৭৬) হলেন মধ্যযুগের দার্শনিক। চার্বাকের সাথে তুলনীয় হতে পারে আদিম গ্রিক দর্শনের। গুনে-মানে দুটিই ভয়াবহ লিবারেল। এবং মানবমুক্তির পথ পরিদর্শক।
@কাজি মামুন,
নতুন মন্তব্য দেখে ক্লিক করলাম। দেখছি আপনার একটা প্রশ্ন অনিচ্ছাকৃত ভাবে চোখ এড়িয়ে গেছে আমার। আন্তরিক ভাবে দুঃক্ষিত। আপনার প্রশ্ন ও আমি যা বুঝেছি তা নিচে দিয়ে দিলাম।
দর্শনের গুরুত্বপূর্ন একটি শাখা জ্ঞানবিদ্যা বা Epistemology. । চার্বাকরা প্রাচীন ভারতে জ্ঞানবিদ্যার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবাদী ধারা চর্চা করতেন। সেটা প্রায় আড়াই হাজার বছরের বেশি পুরোনো কথা। আর এই প্রায় আড়াইশ বছর আগের ব্রিটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম জ্ঞানবিদ্যার অভিজ্ঞতাবাদী ধারাকে যৌক্তিক ও সঙ্গতিপূর্ণ এবং প্রায় পরিনত রূপ দান করেন (ওর “Treatise of Human Nature”, বইটা দেখে নিতে পারেন)। কাজেই হিউম এসময়ের হলেও তার গুরুত্বপূর্ন কাজ যা জ্ঞানবিদ্যার অভিজ্ঞতাবাদী ধারা, সেটা প্রাচীন ভারতের চার্বাকদের জ্ঞানবিদ্যা ভিত্তিক বলা যাবে। যোগাযোগটা এখানেই। চার্বাকদের আর হিউমের জ্ঞানবিদ্যাগত মতবাদের বা মৌলিক ধারণার ব্যখ্যা নিয়ে কিছু তুলনা, সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্য কালী প্রসন্ন দাসের ‘ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞানবিদ্যা চার্বাক ও হিউম’; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; জুন ১৯৯৪, বইটির পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে।
অনেক দিন দেখছিনা যে? ভালো তো?
@কাজী রহমান,
বাংলা একাডেমীর এই বই মার্কেট আউট। পাবার আর সম্ভাবনা নেই, যদি না দয়াপরবশ হয়ে কেউ দান করে বা ধার দেয়।
@রণদীপম বসু,
বইটা পেলেন নাকি? আপনার অনেক আগের মন্তব্যের জের ধরে বলছি; দান ধার বিরাট সমস্যা। তবে আর একটা বইয়ের খবর দিচ্ছি। পাতায় পাতায় মশলা। এটা হচ্ছে; “চার্বাক দর্শন”, দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, ১ বঙ্কিম চ্যাটার্জ্জী স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০৭৬.
এই বইটা ধার করেছি এবং ফেরত দিতে গড়িমসি করছি যথারীতি। দেখতে পাচ্ছি সর্বশেষ সংস্করণ হয়েছিলো , জানুয়ারী ১৯৯৯ তে। পরেও হতে পারে; ঠিক জানি না।
আপনাকেও তো দেখছি না অনেকদিন; তথ্যজ্বীনের খপ্পরে পড়েননি তো?
রনদীপমদা,
এমন কঠিন কঠিন বিষয় গুলো ধরেন কি করে? আমি তো ধরার আগে নিজেই ধরা পরে যাই। যাইহোক একসময় স্যারেরা গিলিয়ে বিদ্যা খাওয়ানোর কথা বলতেন, মনে হচ্ছে এই কঠিন আপ্রহোদ্দীক বিষয়টা এবার আপনার মাধ্যমে গিলে ফেলার প্রানান্ত চেষ্টায় লিপ্ত হওয়া যাবে!
@কেশব অধিকারী, ধন্যবাদ। কতটুকু গেলা যাবে তা প্রস্তুতকৃত খাবারই বলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমার ক্ষিদাটা কিন্তু অনেক তীব্র। দেখা যাক !
চার্বাক কে নিয়ে লিখতে গিয়ে নির্বাক হয়ে গেলেন কেন? শুরুতেই শেষ।
আশা করি পরের পর্ব গর্ব ভরে ফিরে আসবে।
@অরণ্য, বড় করে শ্বাস ছাড়তে হবে তো, তাই দম নিচ্ছি ! হা হা হা !!
চার্বাক নিয়ে অনেক শুনলেও প্রাচীণ ভারতের এই ধর্ম দর্শন নিয়ে আমার তেমন কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই তবে আগ্রহ আছে প্রচুর। নিভু নিভু এই দর্শন আপনার মত শক্তিশালী লেখকের হাতে পড়ে অত্যান্ত আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে এবং আমার মত অজ্ঞ পাঠকের(যদিও আশা করছি নাই, তারপরেও ফাঁক ফোকরে দুএকজন যদি থেকে থাকেন) খুতখুত করা এই দর্শনের জিজ্ঞাস্য প্রশ্নের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে সেই প্রত্যাশায় অপেক্ষায় রইলাম আগুয়ান পর্বের।
@রাজেশ তালুকদার, ধন্যবাদ। দেখা যাক্ কদ্দুর কী হয় !!
এই মানুষটা অন্তত আমার কাছে সেলিব্রেটি পর্যায়ের। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের। যদিও ধারাবাহিক লেখা নিয়ে আমার ভেতরে শুধু সংশয় কাজ করে পরের লেখা আসবে কি আসবে না। :))
আর বিরাট বড় একটা মাইনাস ভুমিকা এত ছোট দেয়ার জন্য।
@সাইফুল ইসলাম, হা হা হা ! চেষ্টা করবো অন্য পর্বগুলিতে ক্রমেই এই ঘাটতিটুকু পুষিয়ে দিতে।
অনেক দিন ধরেই চার্বাক আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অভিজিৎদার লেখাতেই প্রথম চার্বাক সম্পর্কে জানতে পারি। আপনার লেখাতেও চার্বাক দর্শনের টুকটাক বিষয় জানতে পারি, কিছু ধারনা লাভ করি। কিন্তু চার্বাকের উপর একক কোন লেখা খুব করে চাইছিলাম। আপনি অবশেষে চার্বাককে আনলেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এটাই সবচেয়ে আনন্দের কথা।
খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে! চার্বাকের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। একটা মতবাদ কতটা শক্তিশালী হলে, তার বিরুদ্ধ মতবাদের উৎস থেকেও তার ভিতরকার ইতিবাচকতাকে বের করে আনা যায়!
চার্বাকের সাথে পাচ্ছি ভারতীয় দর্শনও। খুব উৎসাহ নিয়ে বসে আছি, রণদীপমদা!
@কাজি মামুন, ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনার আগ্রহের জন্য। তবে এ বিষয়টাতে আমার আগ্রহ এতোটাই অদম্য যে, গত দেড় বছর ধরে আর সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল চার্বাক আর ভারতীয় দর্শন নিয়ে বিরতিহীন পড়াশুনা করে যাচ্ছি। তবে তা দেড় যুগ ধরে চললেও তার কিয়দংশও যে সম্পন্ন করা যাবে না এটা বুঝে গেছি ! তাই চার্বাক বোঝাতে নয়, বরং চার্বাককে জানার লক্ষ্যে আমার নিজস্ব পথরেখাটা চিহ্নিত করে যাওয়ার চেষ্টাই এই সিরিজ।
আপনাদেরকেও পথের সঙ্গি হিসেবে পেয়ে আরো প্রাণিত হচ্ছি। দেখা যাক্। চলতে থাকি। কেননা, পথ চললেই পথের হিসাব !
আরেকটা দারুণ সিরিজ শুরু করলেন তাহলে; অভিনন্দন।
ভারতীয় দর্শনে বেদবিরোধী চার্বাকদের জ্ঞানবিদ্যা আর অভিজ্ঞতাবাদী ধারা নিয়ে যত কথা হবে আমরা মনে হয় মুক্তমনা চার্বাকদের নিয়ে ততই বেশী জানবো।
একটা ছোট্ট বিভ্রান্তি দূর করেনঃ
ওটা কি অনুকুল না প্রতিকূল?
@কাজী রহমান, চমৎকার ! অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য। তবে এখানে শব্দটা ঠিকই আছে, শুধু তার আগে একটা শব্দ ‘নিজেদের’ বাদ পড়ে গেছে।
অনেক ধন্যবাদ। আশা করি আপনার এই পর্যবেক্ষণ দৃষ্টি বহাল রেখে আমাকে শুদ্ধ হতে সহায়তা করবেন।
@কাজী রহমান ভাই, বাদ পড়া শব্দটা বসিয়ে দিলাম।
@রণদীপম বসু,
পরিষ্কার হয়ে গেছে এখন। আগামী পরব্য ছাড়েন; জলদি, অগ্রিম (C)
রণদীপম বসু, এ কী? শেষ! নাকি লেখাটা দেওয়ার সময় ভুল জায়গায় কেটে ফেলেছেন? ইচ্ছা করে এভাবে শেষ করে দিয়ে থাকলে সেটা ক্ষমার অযোগ্য পাপ হিসেবেই গণ্য করা হবে … 🙂 ।
চারবাক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার ইচ্ছা আমার বহুদিনের, তার সম্পর্কে কেন এত কম জানি সেটা নিয়ে নিজেকে বহুবার প্রশ্নও করেছি। এবার হয়তো অল্প কষ্টে আপনার এই সিরিজ পড়ে এই অজ্ঞানতা দূর করা যাবে।
@বন্যা আহমেদ, আপু, হা হা হা ! এই পোস্টটা আসলে নকিবের ঘোষণার মতো হয়েছে। তবে আমি ভাবছি পরবর্তী পোস্টগুলো নিয়ে ! ওগুলোর বিষয়সূচি অনুসারে প্রতিটা বিষয়কে অখণ্ড রাখতে একেকটা পোস্টের আকার কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে। পাঠকের আবার হাঁফ ধরে যায় কিনা তাই ভাবছি ! তারপরও নিরূপায় আমাকে হয়তো সেই কঠিন সিদ্ধান্তই নিতে হবে।
আর চার্বাক সম্বন্ধে আমি তো কিছু জানাতে আসি নি। বরং আমি কিভাবে জানার চেষ্টা করছি সেটা দেখানোই তো এই সিরিজের বিষয়বস্তু ! হা হা হা ! যে কিনা অন্যের অজ্ঞানতা দূর করতে আলোক-বর্তিকা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তার অজ্ঞানতা দূর করার দুঃসাহস দেখানোর হিম্মত এই সিরিজের কি হবে !! আপনার অজ্ঞানতা এটাই যে, আপনি অজ্ঞতা বশতঃ আমার কাছে সে জিনিসই চেয়ে বসেছেন !! হা হা হা !!