“গল্প শোনাবে? তাহলে আমি সব গাছে পানি দিয়ে দিব।” – ছোটবেলায় এভাবেই আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতো বাবা-মা কিংবা বড় বোন। আপনার ছোটবেলায় এমন ঘটনা ছিল না? নিশ্চয়ই ছিল। হয়তো এখন মনে করতে পারছেন, তবে ছিল নিশ্চয়ই। আসলে গল্পের জন্য সবার মনেই একটু-আধটু দুর্বলতা আছে। আমার কিন্তু এখনো আছে, যদিও একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে – যেমন, “‘জ্ঞান’ দিলে আমি নাই।” ‘বিবর্তনের পধ ধরে’-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – গল্প বলার ঢং। মিথ্যে বলবো না, বইটা শুরু করেছিলাম একটুখানি জ্ঞান নিতেই; তবে শুরু থেকেই শুরু করা গল্প আমাকে টেনে নিয়েছে গল্পের মধ্যে, শেষ অবধি ধরে রেখেছে গল্পের মধ্যে। গল্পের গল্প শোনাতে এসেছি তাই।
বইটা পড়া শুরু করেছিলাম এক বন্ধুর সাথে তর্কের সূত্র ধরে। সে বলছিলো- “বিবর্তনতত্ত্ব প্রমাণিত”। আমি মানিনি। আমার যুক্তি এইরকম – “প্রমাণ শব্দটা একটা বিশেষ কিছু। কোন কিছুর পক্ষে হাজারটা উদাহরণ দিলেও তা প্রমাণ হয়না, যেখানে কেবল একটা বিপক্ষ উদাহরণই তা ভুল প্রমাণ করতে পারে”। তবে বন্ধু আমার সম্বন্ধে অনেক জানে কী না, তাই এক্কেবারে মোক্ষম জায়গার কথা বলে আমাকে মোটামুটি বোল্ড করে দিলো – “তুমি কখনো বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করোনি, তাই জানো না, আগে পড়ো, তারপর তর্ক করো।” কী আর করা, আমি যখন পড়িই নাই, আর সে যখন পড়েছে, তখন তার কথাতো আপাতত গলাধঃকরণ করতেই হবে।
ভাবছিলাম কোথা থেকে শুরু করা যায়। উইকি থেকেই শুরু করার কথা মাথায় এলো প্রথমে, সাথে কিছু আর্টিক্যাল। শুরুতেই সমস্যা হলো ইংরেজিতে। আরে ভাই, সারাজীবন একাডেমিক কিংবা প্রফেশনাল খাতিরে না হয় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ইংরেজি পড়েছি, কিন্তু তাই বলে মনের আনন্দে পড়ার জন্য ইংরেজি পড়েছি নাকি কোনদিন! এমনিতেই নিরস বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, তার উপর ইংরেজি! এ দু’য়ে মিলে আমার নিতান্ত-খারাপ-না গোছের ইংরেজি দিয়ে বিজ্ঞান-শিক্ষা বেশি দূর এগোলো না। এদিকে বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা বইয়ের উপর আস্থাও নাই তেমন। এ অনাস্থার ব্যাপারে আমার কোন দোষ নাই, আমার পূর্বসূরিরা আমার আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এদিকে মুক্তমনার আর্টিকেলগুলো খন্ডিত ধারণা দিলেও সম্পূর্ণতার অভাব থেকেই যায়। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত মুক্তমনার উপর একটুখানি আস্থার উপর নির্ভর করে শুরু করলাম বন্যা আহমেদের “বিবর্তনের পথ ধরে” বইটি। ২০০৭ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটার পরবর্তী সংস্করণ ২০০৮ সালে বের হলেও, বিদেশ বিভূঁইয়ে যেহেতু মুদ্রিত বই পাওয়া সম্ভব না, অতএব অনলাইন ভার্সনেই ভরসা। বইয়ের প্রতিটা অধ্যায়ের পরের তথ্যসূত্র আমার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে নিলো। আর সেই সাথে গল্প বলার ঢং কেড়ে নিল আমার মনোযোগ আর আকর্ষণ। শুরু হলো এর সাথে আমার পথচলা।
পথচলা শেষে একটা কথাই নতুন করে মনে হচ্ছে, মানুষকে যুক্তির সৌন্দর্য বুঝাতে পারলে, আর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে পারলে, স্রোতে ভেসে যাবে ভিত্তিহীন ধর্মবিশ্বাস। আজকাল প্রচুর লেখা পাই, যেখানে প্রচলিত ধর্মগুলোর অসারতা, সাংঘর্ষিকতা নিয়ে কথা বলা হয়। সেসব লেখায়ও যুক্তি দিয়েই প্রমাণের চেষ্টা করা হয়, তবে ঐসব যুক্তির বেশিরভাগই হয় ‘আবেগী’ ধরনের। যেমনঃ ইসলাম ধর্মে উত্তরাধিকারে মেয়েদের অধিকার ছেলেদের অর্ধেক। তার মানে, মেয়েরা অর্ধেক মানুষ। নীতিগতভাবে এ ধরনের যুক্তি সমর্থন করলেও, এ ধরনের ‘আবেগী’ যুক্তিতে একজন ধর্মবিশ্বাসীর বিশ্বাসের কতখানি হেরফের হয়, তাতে ঢের সন্দেহ আমার। তাতে ফল বরং উলটো হয়, এটাই আমার পর্যবেক্ষণ। এ ধরনের যুক্তিকে ধর্মবিশ্বাসী তার বিশ্বাসের প্রতি অপমান হিসেবে দেখে, যা সে প্রকারান্তরে নিজেকে অপমান বলেই ধরে নেয়। ফলশ্রুতিতে তার মধ্যে এক ধরনের প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করে, মনে মনে প্রতিহিংসা তৈরি হয় তার। একই সাথে, নানান কোণাহীন শোনা ঘটনার উদাহরণ দেখিয়ে তার অবস্থানকে জাস্টিফায়েড করতে চেষ্টা করে। সেই ধর্মবিশ্বাসী আরো একটুখানি তিমিরে তলিয়ে যায়। ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইটির বিশেষত্ব এখানেই। এখানে আবেগী যুক্তি দিয়ে কিছু বলা হয়নি। কিংবা “ঈশ্বর মানুষের সৃষ্টিকর্তা নয়” কেবল এ কথা বলেই থেমে যাওয়া হয়নি। বরং বিজ্ঞানের যুক্তির সৌন্দর্য দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মানুষের কোন ‘সৃষ্টিকর্তা’ নেই, মানুষ হুট করে সৃষ্ট হয়নি, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে কেবল। এ যুক্তির মূল কৃতিত্ব বিবর্তনতত্ত্বের হলেও, লেখিকা যে এর সাথে আবেগকে মিলিয়ে ফেলেননি, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারা যায় না।
নিজের কথা বাদ দিয়ে বরং বইটার সাথে পথচলার গল্প বলি। শুরুতেই (১ম অধ্যায়- এলাম আমরা কোথা থেকে?) দেখা ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদে বামন মানুষদের সাথে। ৩ ফুটের কিছু বেশি (১ মিটার) উচ্চতার ক্ষুদে বামনরা নাকি আমাদের মানুষদেরই আরেক প্রজাতি! যদিও তাদের মস্তিষ্কের আকার আমাদের চেয়ে বেশ ছোট। মজার ব্যাপার হলো, এই বামন মানুষের ফসিলগুলোর পাশেই পাওয়া যায় বেশ কিছু পাথুরে অস্ত্রের ফসিলও। এই দুই ফসিলের সাথে যোগসূত্র থেকে ধারণা করা হয়, ক্ষুদে বামনরা তাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের সাহায্যেই হাতিয়ার বানাতে পারতো! পুরো ব্যাপারটা একদম চোখের সামনে ভেসে উঠলো বিজ্ঞানীর যুক্তি আর শিল্পীর তুলি – এ দু’য়ের সমন্বয়ে যখন বামন মানুষদের সম্ভাব্য ছবি দেখানো হলো। এরকমই কোন ক্ষুদে বামন কিংবা নর-বানর যে আমাদের পূর্বপুরুষ আর সমস্ত জীবজগত যে একই আদি জীব থেকে বিবর্তিত হয়েছে সে কথা ছোট্ট করে দেখানোর পাশাপাশি ১ম অধ্যায়ের শেষে পরিষ্কার করে দেয়া হলো যে, “বিবর্তনতত্ত্ব প্রাণের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করে না, বরং উৎপত্তির পর প্রাণের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করে।”
এরপর (২য় অধ্যায়ে- বিবর্তনে প্রাণের স্পন্দন) চলে গেলাম উনিশ শতকের শুরুতে। মূলতঃ ডারউইনের জীবনকাহিনীর সাথে পরিচিত হতে থাকলাম – কীভাবে ধর্মযাজক হওয়ার পরিবর্তে ডারউইন হয়ে উঠলেন একজন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক, কীভাবে তার জীবের স্থিরতায় বিশ্বাসী চিন্তাধারা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে লাগলো। বিগল জাহাজে করে ঐতিহাসিক বিশ্বভ্রমণের সময়ে ডারউইনের দেখা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও তাদের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের টুকরো টুকরো উদাহরণ ও স্থানে-স্থানে চিত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম, বুঝতে পারলাম কীভাবে তার চিন্তার দুয়ার একটু একটু করে উন্মুক্ত হয়েছিল। ডারউইনের গল্পের মাঝেই ছোট করে পরিচিত হলাম ল্যামার্ক, লায়েল সহ তৎকালীন বিজ্ঞানী ও তাদের চিন্তাধারার সাথে।
ডারউইনের গল্প চলতে থাকলো এর পরের অনন্ত সময়ের উপহার অধ্যায়েও। এখানে মূলতঃ ডারউইনের চিন্তার সাথে ধর্মের সাংঘর্ষিক ব্যাপারগুলো উঠে এলো। একে একে উঠে এলো ডারউইনের সময়ে ও তার আগে কালের-পর-কাল ধরে ধর্ম কর্তৃক বিজ্ঞানের টুঁটি চেপে ধরার কাহিনীগুলো, উঠে এলো কালে-কালে কিছু কিছু সাহসী ও আলোকিত ব্যক্তির সংগ্রাম ও অবদানগুলো। এরকম পরিস্থিতিতে আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের সাথে মিলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের মতো যুগান্তকারী তত্ত্ব দেয়ার আগে হাজার রকম ভাবে নিশ্চিত হওয়ার ঘটনাগুলোও একে একে চাক্ষুষ করলাম। সেই সাথে চাক্ষুষ করলাম মহাপরাক্রমশালী ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের ডারউইনের বিরুদ্ধে বিষোদগার, নিন্দা, গালাগাল আর অপমান। দেখলাম, ডারউইন টললেন না তার অবস্থান থেকে, বরং কিছু বিজ্ঞানী-বন্ধুর অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে একে একে প্রতিহত করলেন বিরুদ্ধবাদীদের যুক্তি, তুলে ধরলেন বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা।
বিবর্তন যে কেবল বইয়ে লেখা তত্ত্ব নয়, বরং আমাদের চারপাশের প্রাত্যহিক ঘটনাগুলো যে আসলে বিবর্তনকে ধারণ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সেই কথা জানলাম পরবর্তী ‘চোখের সামনেই ঘটছে বিবর্তন!’ অধ্যায়ে। মশার বিবর্তনের কারণেই যে আমরা এখন আর কীটনাশক দিয়ে আগের মতো কার্যকরভাবে মশা ধ্বংস করতে পারি না, ফুল-ডোজ এন্টিবায়োটিক শেষ না করলে যে পরে পস্তাতে হয় আর তার পিছিনে যে দায়ী ব্যাক্টেরিয়ার বিবর্তন – এইসব ঘটনার সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা পেলাম এখানে। বিবর্তনতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লম্বা হুলওয়ালা পোকার অস্তিত্বের ব্যাপারে ডারউইনের করা ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হওয়া প্রমাণ করে এ তত্ত্বের উপযোগিতা।
৪র্থ অধ্যায়ের মতো ৫ম অধ্যায়ও (ফসিল এবং প্রাচীন উপাখ্যানগুলো) গল্পপ্রেমীদের জন্য চরম আকর্ষণের জায়গা। রাক্ষস-খোক্ষস, দৈত্য-দানব আর ড্রাগনের রূপকথাগুলো যে আদতে ফসিল থেকে পাওয়া সেই গল্পের আকর্ষণ রোধ করা ভার। ডাইনোসর থেকে পাখির বিবর্তনের সাথে গ্রীস রূপকথার গ্রিফিন নামক অর্ধেক পাখী – অর্ধেক সিংহ চরিত্রের বিস্ময়কর মিল দেখে যার-পর-নাই অবাক হতে হয়। চীনদেশের ড্রাগনসমৃদ্ধ রূপকথার সাথে সেখানকার ডাইনোসরের ফসিলের চমকপ্রদ মিলও চোখ বড় করে তাকাতে বাধ্য করে।
গল্পের পাশাপাশি বিজ্ঞানের রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলোর সমাহার ঘটেছে ‘ফসিলগুলো এলো কোথা থেকে’ অধ্যায়ে। বৈজ্ঞানিক শব্দ তেমন না কপচিয়ে সহজ ভাষায় প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে কীভাবে ফসিলগুলো একে উপরের উপর স্তরে স্তরে বিন্যস্ত থাকে, তা জানতে পারলে কার না ভাল লাগে বলুন! আর সেই সাথে যদি এসব স্তরের সাথে অন্য মজার ঘটনার মিল দেখতে পান, তাহলে ভাল লাগা বেড়ে যাবে না বলুন? ভূতত্ত্বের একটা অন্যতম তত্ত্ব হচ্ছে মহাদেশগুলোর একে-অপরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার তত্ত্ব। আগে সবকটা মহাদেশ একসাথেই ছিল, যা মহাদেশের মানচিত্রগুলো একত্রে করে চমৎকারভাবে দেখানো হয়েছে। একত্রে করার পর দেখা গেলো, ভিন্ন মহাদেশের যেসব জায়গা আগে কাছাকাছি ছিলো সেখানকার প্রাণীগুলোর ফসিলের মধ্যে অসম্ভব মিল। ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্ব একই কথা বলছে, মজা না?
ফসিলের গল্প শেষ হতে চায় না, বরং আকর্ষণ বাড়তে থাকে। ৭ম অধ্যায়েও (প্রাণের মেলা কত পুরনো?) চলতে থাকে ফসিলের চমকপ্রদ গল্প। ফসিলের বয়স নির্ধারণের নানা তড়িকা জানা গেল এখানে। একই ফলাফল কীভাবে বারবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ক্রস-চেক করার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ কীভাবে উড়িয়ে দেয়া যায়, তা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে এখানে। ফসিলবিদ ও ভূতত্ত্ববিদরা একত্রে মিলে ভূ-ত্বকের বিভিন্ন স্তরে পাওয়া বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর ফসিলের ভিত্তিতে আপেক্ষিক সময়ক্রম তৈরি করেন। মজার ব্যাপার হলো, এ ক্রম তৈরি হয়েছে বিবর্তনতত্ত্বেরও ১৮ বছর আগে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মূল ছকটি এখনো প্রায় একইরকম আছে। ভূতত্ত্ব ও ফসিলতত্ত্বের সাপেক্ষে বিবর্তনতত্ত্ব কীভাবে খাপে-খাপে মিলে যায় সে কথা জানতে পারলাম গল্পে গল্পে।
বিবর্তনতত্ত্ব নিজেই বলে যে, ধীরে ধীরে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে। আর তাই “ডাইনোসর থেকে পাখির বিবর্তন হয়েছে” – একথা সত্যি হলে নিশ্চয় ডাইনোসর আর পাখির মধ্যবর্তী আরো অনেক প্রজাতি থাকার কথা! যতক্ষণ পর্যন্ত এ মধ্যবর্তী প্রজাতিগুলোর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, ততক্ষণ পর্যন্ত এদের বলা হতো ‘মিসিং লিংক’। এ মিসিং লিংকগুলো যে এখন আর মিসিং নেই তা ছবির মাধ্যমে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে “মিসিং লিংকগুলো আর মিসিং নেই” অধ্যায়ে।
সময় এগিয়ে চলে, ১৪০০ কোটি বছর আগে থেকে শুরু করা গল্প এসে ঠেকে আমাদের সময়ে। “আমাদের গল্প” নামের নবম অধ্যায়ে ফসিলের সাথে সহজ করে জেনেটিক আলোচনা এবং চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তনের গল্প এক-এক করে তোলে আনে আমাদের বিবর্তনের জটিল ইতিহাস!
১০ম অধ্যায়টা এক্কেবারে আক্ষরিক অর্থেই এখনকার সময়ের গল্প। ধর্মের সুবিধাভোগীরা কত ছল-চাতুরী আর ছদ্মবেশে বিবর্তনতত্ত্বকে উঠিয়ে তাদের সৃষ্টিতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তার একগাদা ফিরিস্তি পাওয়া যায় এখানে। এসব ছলচাতুরী বিবর্তনের আলোকে নাকচ করে দেয়ার আগে পরিষ্কারভাবে বুঝানো হয়েছে তাদের অন্যতম যুক্তিগুলোর (প্যালের ঘড়ি, সৃষ্টিতত্ত্ব, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন) সারকথা। সেই সাথে টেনিসির স্কোপ্স মাংকি ট্রায়াল, আরকানসাসের ভারসাম্যমূলক বিচার আইন, লুইজিয়ানার সৃষ্টিবাদী আইন সব বিখ্যাত মামলাগুলোর বিশদ কাহিনী জানলে ও আমেরিকার মতো দেশে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গ্রহণের অনীহার কথা জানলে অবাক হতে হয় বৈকি!
সবশেষে, আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনের কথা বলে গল্পের ইতি টানা হয়েছে “যে গল্পের শেষ নেই” অধ্যায়ে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ গল্পের অন্যতম দিক হচ্ছে, সহজবোধ্য প্রতিদিন ব্যবহারের মতো শব্দের সাথে সখ্যতা। শুরুর অধ্যায়গুলোতে বৈজ্ঞানিক পারিভাষিক শব্দের কপচানি বলতে গেলে নেইই, যেটুকু আছে সেটুকুও সহজ ভাষায় বলে নেয়া হয়েছে ব্যবহারের আগে। সাধারণ পাঠকদেরও তাই বিবর্তনতত্ত্বের মূল ধারণা উপলব্ধি করতে এতটুকু বেগ পেতে হয় না। তবে ৭ম অধ্যায় থেকে বৈজ্ঞানিক কঠিন কঠিন শব্দের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে গেছে। যদিও লেখিকা নিতান্ত বাধ্য হয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকথা ও বৈজ্ঞানিক নাম উল্লেখের কথা নিজেই বলেছেন (৯ম অধ্যায়, পৃ-১৪, পৃ-২২) এবং বেশির ভাগ জায়গায় এগুলোর ব্যবহার যুক্তিসংগতও, কিছু কিছু জায়গায় বৈজ্ঞানিক শব্দ ও তত্ত্ব আরেকটু কম বলা যেত বলে মনে হয়। যেমনঃ তেজস্ক্রিয় ডেটিং বুঝাতে গিয়ে (৭ম অধ্যায়, পৃ-১০) ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, ধনাত্মক-ঋণাত্মক চার্জ, পারমাণবিক সংখ্যা, পারমাণবিক ভর, আইসোটোপ সহ রসায়নের প্রাথমিক তত্ত্বগুলো এত বিশদভাবে ব্যাখ্যা না করে, সাধারণভাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উদাহরণ ও তাদের নির্দিষ্ট গতিতে ক্ষয়ের কথা উল্লেখ করলে সাধারণ পাঠকের জন্য ভাল হতো। একই কথা প্রযোজ্য HIV ভাইরাসের বিস্তারের ক্ষেত্রেও (৪র্থ অধ্যায়, পৃ-২)। সাধারণ পাঠকের জন্য এই ভাইরাস “DNA এর বদলে RNA দিয়ে তৈরি বলে নিজে নিজে বংশ বিস্তার করতে পারে না” – এ তথ্য খুব একটা প্রয়োজনীয় না, কারণ DNA আর RNA এর মধ্যে পার্থক্য তার কাছে পরিষ্কার না। তার জন্য এটুকু জানাই যথেষ্ট যে, ভাইরাসটি মানুষের DNA তে ঢুকে পড়ে বংশবৃদ্ধি করে। এরপর HIV ভাইরাসের মধ্যে রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজের উপস্থিতি এবং এ কারণে ভাইরাসের বিবর্তনের ব্যাপারটা খুব সুন্দর করে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বইয়ে। দুয়েক জায়গায় এমন একটুখানি বেশি তত্ত্বকথা থাকলেও, একথা এক বাক্যে স্বীকার করতেই হবে যে, খুব সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষায় গল্প বলাই এ বইয়ের প্রাণ।
এ বইয়ে আমার মুগ্ধতার পেছনে আরো একটা কারণ আছে। কেবল একটা দিক থেকে বিবর্তনের তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাখ্যা করা হয়নি এখানে, বরং ফসিলবিদ্যা, ভূতত্ত্ববিদ্যা, জেনেটিক্স সহ বিজ্ঞানের কয়েকটি শাখার কিছু কিছু তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা করে সেগুলোও যে একই বিবর্তনের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে, তা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ক্রস-চেকিংয়ের মাধ্যমে বিবর্তনতত্ত্ব যেরকম শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা যে ঠুনকো যুক্তিতে অস্বীকার করার উপায় নেই তা পাঠক উপলব্ধি করতে পারে তীব্রভাবে।
আরো একটা ব্যাপার বিশেষভাবে উল্লেখ করার দাবি রাখে। লেখিকা কেবল বিবর্তনতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেননি, বরং এর বিরুদ্ধবাদীদের মতবাদও সহজ ভাষায় সুন্দর করে বুঝিয়ে নিয়েছেন। এবং তা করেছেন পর্যাপ্ত রেফারেন্স দিয়ে। বিরুদ্ধবাদীদের মতামত ব্যাখ্যা করার পর তা খন্ডনের কথাও বলেছেন রেফারেন্স দিয়ে। এত করে পক্ষে-বিপক্ষের মতামতগুলো পর্যালোচনা করা পাঠকের জন্য বেশ সহজ ও আকর্ষণীয় হয়েছে।
বইটির শুরুর দিকে (৫ম অধ্যায় পর্যন্ত) ছবিগুলোর লেবেলিং ও ক্যাপশন বাংলায় রূপান্তর করার প্রয়াসও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এ প্রয়াস পরবর্তী অধ্যায়ের ছবিগুলোতেও বজায় থাকলে আরো ভাল হতো। সেই সাথে আরো ভাল হতো যদি একই তথ্যের বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধৃতিগুলোর মধ্যে কিঞ্চিৎ অসামঞ্জস্যতাটুকুও না থাকতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মানুষ আর শিম্পাঞ্জির জিনের মধ্যে মিল-অমিলের পরিমাণের কথা [মিল ৯৮.৬% (১ম অধ্যায়, পৃ-৬), অমিল ১.২% (৯ম অধ্যায়, পৃ-৭), মিল ৯৯% (৯ম অধ্যায়- পৃ-৯)], কিংবা বিভিন্ন জায়গা বা মানুষের নামের বানানের কথা [আরকানসাস/আর্কানসাস, স্পেনসার/স্পেন্সর]।
কোপার্নিকাসের উদাহরণ প্রাসঙ্গিকভাবেই বারবার এসেছে বইটিতে। তবে “কিছু কৈফিয়ত এবং কৃতজ্ঞতা” ছাড়াও আরো ছয়টি অধ্যায় মিলিয়ে অন্তত ১২ বার একই ঘটনার উল্লেখের ফলে শেষের দিকে এর আবেদন যেন একটু কমে গেছে বলে মনে হলো। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি আলফ্রেড ওয়ালেসের ধার্মিকসত্তার কথা ও মানুষের ক্ষেত্রে নিজের প্রস্তাবিত “প্রাকৃতিক নির্বাচন” তত্ত্ব প্রয়োগের অনীহার কথার অনুপস্থিতি দেখে কিছু অবাকই হয়েছি বলতে হবে। ঘটনাটা বইয়ে আসলে এবং একারণে বিজ্ঞানীমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা কীভাবে কমে এসেছিল সে কথাও বললে পাঠকের জন্য তা আরো আকর্ষণীয় হতো।
একটা ব্যাপার না বললেই নয় যে, রাম-সাম-যদু-মধুদের বই থেকে সুলেখিত বই পার্থক্য করার একটা প্রাথমিক হাতিয়ার হলো – শুদ্ধতা। অনলাইনে থাকা ই-বইয়ের যে ভার্সনটা যদি বইটির ১ম প্রকাশের কপি হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে বলতেই হবে যে, আমি যার-পর-নাই হতাশ। এখানে এত এত ভুল যে, এক সময় সেগুলো আর মস্তিষ্ক পর্যন্ত যায়নি। একবার আর্টসেলের কনসার্টে গিয়েছিলাম, তখনো আর্টসেলের গান সম্বন্ধে তেমন জানাশুনা নেই আমার। সেখানে গিয়ে তাদের অনবরত চিৎকার-চেঁচামেচি আমাকে এতই বিরক্ত করেছিল যে, চিৎকারের সুষমতায় আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঠিক এমনটাই ঘটেছে বইটি পড়ার ক্ষেত্রে। ভুলগুলো একসময় আর মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছিল না। বইটির ভুলের ছোট্ট একটা পরিসংখ্যান দেই। ৯ পৃষ্ঠার একাদশ অধ্যায়ে ভুলের সংখ্যা ৬০ এরও বেশি। ৯ম ও ১০ম উভয় অধ্যায়েরই ভুলের সংখ্যা শতাধিক। বাকিগুলোর হিসাব করিনি। তবে আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, ১ম প্রকাশের আগেই বেশির ভাগ ভুলগুলো সংশোধন করা হয়েছিল এবং ১ম সংস্করণে ভুলের সংখ্যা শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
ও হ্যাঁ, আমার সেই বন্ধুটির সাথে বিবর্তনের ব্যাপারে এরপর আর কথা বলা হয়নি, বলবো নিশ্চয়। তাকে এখন আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারবো, আমার যুক্তি থেকে নড়িনি আমি। তাই বলে আবার “বিবর্তন প্রমাণিত নাকি অপ্রমাণিত” তা নিয়েও তর্ক করতে চাই না। তত্ত্বের ব্যাপারে আমার বর্তমান ধারণা হলো – তত্ত্ব কোন গাণিতিক সূত্র নয় যে প্রমাণ করার প্রশ্ন উঠবে, বরং এটা একটা মডেল, যার মাধ্যমে বাস্তবকে ব্যাখ্যা করা যায়। কোন একটা মডেলের সীমাবদ্ধতা থাকলে সে মডেল বাদ হয়ে যায় না, বরং আরো ভাল একটা মডেল খুঁজতে উৎসাহিত করে বিজ্ঞানকে। একটা মডেল বা তত্ত্ব কেবল তার থেকে আরো ভাল একটা মডেল বা তত্ত্ব দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়, যা বাস্তবকে আরো ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে। বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে ভূরিভূরি উদাহরণের উপস্থিতি ও তার বিপক্ষে কোন উদাহরণের অনুপস্থিতি এ তত্ত্বকে বিজ্ঞানের জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
বইটা ডাউনলোড করার কোন লিঙ্ক আছে কি?
@প্রতিফলন: মন্তব্যের উত্তর আসলে মেইল পাচ্ছেননা বলে অভিযোগ করেছিলেন। সম্ভবত মেইল আপনার spam ফোল্ডারে চলে যাচ্ছে,আমি এই মাত্র ইয়াহুতে আমার spam ফোল্ডারে দেখলাম অনেকগুলো মেইল এসেছে। নতুন সার্ভারকে ইয়াহু চিনতে না পারায় এমন হচ্ছে। একটু চেক করে জানান।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
হুম, স্প্যাম ফোল্ডারে এসেছে, খেয়াল করা হয়নি। “Not spam” চিহ্নিত করে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ।
মডারেটররা সবাই অনেক ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততার মাঝেও অনেক ধৈর্য্য ও যত্ন নিয়ে লেখা এবং মন্তব্যগুলো পোষ্ট করেন। আমি মুক্তমনার নতুন পাঠক। অধিকাংশ লেখা আর মন্তব্যই আমার কাছে বায়াস্ড মনে হচ্ছে। কেউ ধর্মের পক্ষে আর কেউ বিপক্ষে। কেউই নিরপেক্ষ নয়। আমার মনে হয়, জেতার জন্য তর্ক না করে fact-র জন্য তর্ক করাই ভালো। আর মন্তব্য/সমালোচনা আরো সহনশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। তা না হলে মুক্তমনা কেবল নাম সর্বস্ব একটা ব্লগসাইট হবে মাত্র!
কিছু কিছু মানুষ থাকেন, থাকে; তারা অনেকটা মূর্খের মত। আমি তাদের একজন। মানুষ কিভাবে এলো না এলো, এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই ( হয়তো মাথাটাই নেই, থাকবেই বা কেমন করে?, এটা মধ্যবিত্তরা বুঝবে না) তাই এসব বই পড়ার কোন ইচ্ছা আপাতত নেই।
‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’
এবার একটা হাইকু-
কেউ মরে, খেয়ে;
কেউ, না খেয়ে।
কে্উ, খেয়ে বাঁচে,
কেউ, না খেয়ে।
@স্বপন মাঝি,
মানবতার জয় হোক, যে চিন্তা থেকেই হোক না কেন! 🙂
@প্রতিফলন,
যথার্থ বলেছেন!
@স্বপন মাঝি,
তবু আজও কবিতা লেখা হয়!
আজও কেউ বাঁচার জন্য খায়
কেউবা খাওয়ার জন্য বাঁচে
কেউ খেয়ে হজমী খায়
কেউবা না খেয়েই রয়
তবুও মানুষ বাঁচে
ভালোবাসে!
……
জেগে থাকে ঘুমবে বলে
বেঁচে থাকে মরবে বলে
………
তবু আজও কবিতা লেখা হয়
তবুও মানুষ বাঁচে
ভালোবাসে!
……
@অরণ্য,
মন্তব্যের ঘরে সোনাদানা ছড়িয়ে যাচ্ছেন, তাতে না আবার অগ্নি, অঙ্গার হয়ে, বাতাসে উড়ে যায়। অনুগ্রহ করে ছাড়ুন, পোস্টের ঘরে এলে পাঠকদের ছোঁয়া পেয়ে, আরো পুষ্ট হয়ে উঠবে।
আমার চোখে এরা হলো ‘পথিক’।
এটা করতে গিয়ে, এরা একসময় হয়ে উঠে – ‘বৃথামাংসভুক’।
অনলাইনে বইটার প্রথম ড্রাফ্টের পিডিএফ ভার্সান দেয়া আছে। বই আকারে প্রকাশিত হবার আগে সবগুলো অধ্যায়ের বিবর্তন ঘটেছে অনেকবার। তাই শুধুমাত্র প্রথম ড্রাফ্টের ভিত্তিতে মূল বইয়ের ব্যাপারে এরকম হতাশা প্রকাশ করলে বইটার প্রতি অবিচার করা হয়। মূল বইটা হাতে পেলে আমার মনে হয় আপনার নিজের একটু অস্বস্তি লাগবে আর্টসেলের চিৎকারের সাথে ‘বিবর্তনের পথ ধরে’র বানান ভুলের তুলনা করায়। তত্ত্ব ও তথ্যে কোন ভুল না থাকলেও শুধুমাত্র বানানের কারণেই এতটা হতাশা!!
@প্রদীপ দেব,
১ম প্রকাশের আগেই বইটির ভুলগুলোর বেশির ভাগ ভুল শুধরে নেয়া হয়েছে জেনে খুশি হলাম। আমার এত হতাশার আগে “অনলাইন কপিই মূল বইয়ের প্রথম প্রকাশের কপি” হওয়ার কথা বলা ছিল। আর আর্টসেলের সাথে তুলনা করাটা একটু বেশিই কঠোর হয়ে গেলেও, তা আমার ক্ষেত্রে সত্য ছিল। সত্য নিয়ে তাই লজ্জা থাকলেও সেই সত্য অস্বীকার করবো না। আসলে মুক্তমনার ১ম সারির লেখক-লেখিকাদের কাছে প্রত্যাশাটা একটু বেশিই থাকে। সত্যি কথা বলতে, বানানের ব্যাপারটা পুরোপুরি এড়িয়েই গিয়েছিলাম, আপনার এক পাঠ প্রতিক্রিয়া দেখেই ভুলের পরিসংখ্যান বের করার ইচ্ছে জেগেছিল। তবে এই হতাশা বইটি নিয়ে আমার মুগ্ধতাকে অতিক্রম করে গেছে কি? এমনটি হয়ে থাকলে সেটা আমার প্রকাশের সীমাবদ্ধতা।
বন্যার বইটা বাংলায় লেখা বিবর্তনের উপর সেরা বই। বাংলাদেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগসমূহের পাঠক্রমে সহায়কগ্রন্থ হিসাবে এই বইটার থাকা উচিত।
এই বইয়ের পর্যালোচনা করে অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য একটা কাজ করেছেন আপনি। (Y)
@ফরিদ আহমেদ,
আমার যেহেতু এ বই বাদে অন্য বইগুলো পড়া হয়নি, তাই সেরা বই কিনা তা বলতে পারছি না। তবে সেরা হওয়ার সব উপাদানই এর মধ্যে আছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
সহমত। আর বইটার ভাষাটাও বেশ ঝরঝরে এবং সাবলীল। এই বইটা আমি প্রায় গল্পের মতো করে পড়ে গিয়েছি। বন্যা’পাকে আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ এই বইটা লেখার জন্যে। এই বইটা পড়েই আমার বিবর্তনের বেসিকটা পরিষ্কার হয়েছে। আশা করি মানব মস্তিষ্কের বিবর্তনের উপরে বন্যা’পার লেখাগুলোও দ্রুত পাবো।
@স্বাধীন, আমি এবং মুহাম্মদ দুজনেই চরম অলস বিধায় গত ৩ বছরেও বইটা কিছুতেই করে উঠতে পারছি না, তাই ব্যাপক বুদ্ধি খরচা করে একটা বুদ্ধি (অলস বলে কি বুদ্ধি নাই নাকি আমাদের!) বাইর করসি। একজন লেখক (এই লেখক কিছু লিখবে বললে ফটাফট লিখে ফ্যালে বা ফেলতে পারে!!!) ‘ভাড়া’ করা হয়েছে মানব মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য আরও কয়েকটা অধ্যায় লিখে দেওয়ার জন্য 😉 । আমাদের এই স্কিম অনুযায়ী কাজ আগালে এবছর বইটা হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
প্রতিফলনকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি বইটি নিয়ে রিভিউটি লেখার জন্য। বিবর্তনের পথ ধরে বইটি সম্পর্কে এত ভালো ভালো মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন সত্যিই মনে হচ্ছে মানব বিবর্তনের বইটা শেষ করে ফেলা উচিত।
@মুক্তমনা এডমিন
কোন মন্তব্য কি পরে পরিবর্তন করা যায়? যদি যায়, তাহলে কীভাবে করা যায় জানালে খুশি হবো। আমি নিজের মন্তব্য পরিবর্তন করার অথরিটি রাখি কিনা সেটাও আরেক প্রশ্ন।
যে কারণে একথা বললাম। মোবাইল থেকে পড়া বন্যা আহমেদের মন্তব্য আর পরে কম্পিউটারে বসে পড়া মন্তব্যের সাথে অনেক পার্থক্য দেখলাম। যেমন মোবাইলে আছে –
কিন্তু এখন দেখি –
বি.দ্র. দুই ধরনের মন্তব্যের সময়ই একই।
@প্রতিফলন,
সদস্যদের মন্তব্য সম্পাদনের সুযোগ নেই। একমাত্র মডারেটরবৃন্দই তা করেতে পারেন। কেউ যদি তাঁর মন্তব্যে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করতে চান, তবে মডারেটর বরাবরে অনুরোধ জানাতে হয়। বন্যা আহমেদের মন্তব্যে ওই অংশটা সংযোজন করা হয়েছে তাঁর অনুরোধের কারণেই।
@প্রতিফলন, আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার মন্তব্যের জন্য। হ্যা, এটাই আমার সন্দেহ হচ্ছিল, আপনাকে উত্তরটা দেওয়ার পর কেমন যেন মনে হচ্ছিল হয়তো বেশী কঠোর এবং অসংবেদনশীল হয়ে গেছে, এবং এও মনে হচ্ছিল যে আপনি হয়তো তত্ত্বের কথা বলেছেন, বিবর্তন ফ্যাক্ট কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। সে জন্যই আমার মন্তব্যটাকে একটু গ্রিজ দিয়ে নরম করার চেষ্টা করেছিলাম এবং সংশোধনগুলো অরিজিনাল মন্তব্যে যোগ করে দিতে অনুরোধ করেছিলাম মডারেটরদের। এখন আপনার উত্তরটা দেখে মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তটা বোধ হয় সঠিকই ছিল (যদিও আপনি বিবর্তনের বাস্তবতা নিয়ে আপনার মতামত এখানেও পরিষ্কার করে বলেননি, তারপরও আমি ধরে নিচ্ছি যে আপনার প্রশ্নটা শুধু তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা নিয়েই, বিবর্তন যে ফ্যাক্ট সেটা নিয়ে নয়, আবারো ভুল বুঝে থাকলে দয়া করে শুধরে দিবেন)।
@বন্যা আহমেদ,
🙂
হায়রে, সবই কি পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বলতে হবে নাকি! Donald R. Lindsay এর মাধ্যমেই বলি –
বাঘা-বাঘা বিজ্ঞানীরা যখন একে ফ্যাক্ট বলে মানছেন, সেখানে আমি কোন ছার! আর যেদিন এটা ফ্যাক্ট না বলে অলটারনেটিভ ফ্যাক্ট বৈজ্ঞানিকভাবে দেখাতে পারবো সেদিনতো আমি দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত হয়ে যাবো!
ভালো কথা…
‘এখানে’ – এর লিংকটা কিন্তু নেই এখানে।
আরো একটা কথা আগের মন্তব্যে মূল বিষয় থেকে মনোযোগ নষ্ট না করার জন্য এড়িয়ে গিয়েছিলাম।
প্রকাশকের সাথে কী ধরনের শর্তে আবদ্ধ আপনি তা জানা নেই আমার। কিন্তু বইয়ের চ্যাপ্টারগুলো হুবহু তুলে দেয়া কি একেবারেই সম্ভব না? বাণিজ্যিক কারণে জ্ঞান আটকে থাকতে দেখলে কষ্ট লাগে। বাংলায় বিজ্ঞানের বই এমনিতেই কম, যে দুয়েকটা আছে তার মধ্যে আপনার এ বইটা যে সামনের সারিতে থাকবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মূল বইয়ের হুবহু কপি পেলে পাঠক উপকৃত হতো, আর সমৃদ্ধ হতো বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা। এছাড়া হুবহু কপি ইন্টারনেটে ফ্রি পেলেও বই বিক্রিতে তা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে না, বরং বইয়ের বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করবে। এই যেমন আমি কোন ছোট ভাই-বোনকে গল্পে গল্পে বিজ্ঞান চর্চার কোন বই উপহার দেয়ার কথা ভাবলে (দুয়েকবার এ কাজটা করেছিও) এ বইটার কথাই যে আগে ভাববো তা হলফ করে বলতে পারি। অন্ততঃ ১ম প্রকাশের বইটার একটা কপি কি অনলাইনে রাখা যায় না?
ভাল থাকবেন।
সার্বিকভাবে বইটির নিরেট পর্যালোচনা ভাল লেগেছে কিন্তু উপরোক্ত বিষয়টির সাথে একমত হতে পারছিনা। DNA আর RNA এর পার্থক্য যে না বুঝবে সে কোন ভাবেই বুঝতে পারবে না HIV ভাইরাস কিভাবে প্রাণী কোষের DNA এর সাথে মিউটেশন করে একটি নতুন প্রজাতির ভাইরাস তৈরি করতে পারে। বিবর্তনের হাজারও প্রমাণের মধ্যে থেকে আমাদের এ ক্ষুদ্র জীবনে স্ব-চক্ষে একটি প্রজাতির পুরো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া দেখার মত অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে HIV ভাইরাসের বিবর্তন প্রক্রিয়া। আমি মনে করি, বন্যা আহমেদ এ অধ্যয়টিতে যথার্থ ভাবে এ প্রক্রিয়াটিকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন।
@জিল্লুর রহমান,
আপনার মতকে সম্মান জানাই। আমি বলিছি না আমার মতের সাথে একমত হতেই হবে। আমি বরং আমার মত পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।
DNA এবং RNA এর মধ্যে পার্থক্য বলতে আমি কিছু বেসিক জিনিস ছাড়া তেমন বেশি কিছু জানি না। যেমনঃ DNA হচ্ছে – আর RNA হচ্ছে । একটা ডাবল-হেলিক্স, আরেকটা সিঙ্গেল হেলিক্স। DNA এর বেস হচ্ছে A,T,G,C, A,U,G,C. কিন্তু এই পার্থক্যগুলো কীভাবে মিউটেশনে ভূমিকা রাখছে তা আমার ছোট মস্তিষ্কে আসে না। তবে, যখন বলা হয়, ভাইরাসের মধ্যে থাকা রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেস নামের এনজাইমটি খুবই দুর্বল ধরনের প্রাচীন এক মেকানিজমে তৈরি, তাই প্রতিলিপি তৈরি করতে সমস্যা হওয়ার কারণে প্রচুর মিউটেশন ঘটে, তখন আমার ছোট এন্টেনাও কিছু কিছু জিনিস ধরতে পারে। যদিও “প্রাচীন মেকানিজম” কী জিনিস তখনও তা পরিষ্কার হয় না, তারপরেও কেন মিউটেশন হয় এবং তা থেকে কীভাবে বিবর্তন ঘটে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
তবে একথাও ঠিক যে, কেউ যদি এ ঘটনাগুলো বুঝতে পারেন সেক্ষেত্রে তার শিহরিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যেমনটা হয়েছেন কাজী মামুন তেজস্ক্রিয়তার কথা জেনে। আসলে, আমি খুব দরকারি না হলে তত্ত্বের বেশি ভিতরে না ঢুকার পক্ষপাতী। সে চিন্তা থেকেই আমার এই মতামত। এটাকে বইয়ের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং আমার মতামত হিসেবে দেখাই অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর হবে বলে মনে হয়।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
@প্রতিফলন,
http://blog.mukto-mona.com/?p=8433
এই লিংক থেকে পিডিএফ ফাইলটি পড়ে নিন। মিউটেশন নিয়ে কিছু আলোচনা এখানে আছে।
@অনন্ত বিজয় দাশ,
ধন্যবাদ, পড়ে নেব সময় করে।
প্রতিফলন,
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে সময় নিয়ে অনলাইন ভার্সনের রিভিউ করার জন্য। নাহ, অনলাইন ভার্সানের এই প্রবন্ধগুলো অনেক আগের লেখা, আপনার উল্লেখিত অনেক ভুল ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতাই বইএ ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল, এমনকি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করার সময় প্রথম সংস্করণেরও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বইটি আসলে প্রাথমিকভাবে ২০০৪-২০০৬ সালে লেখা এই অনলাইন প্রবন্ধগুলোর পরিবর্ধিত/পরিমার্জিত/সম্পাদিত/সমন্বিত রূপ। সাধারণ সম্পাদনার পাশাপাশি বিভিন্ন টেকনিকাল বিষয়েরও সম্পাদনা করা হয়েছিল।এই অরিজিনাল পিডিএফ ফাইলগুলো সম্পাপাদনা করার ধৈর্য এবং সময় কোনটাই নেই, আর ওদিকে বইটির চ্যাপ্টারগুলো হুবহু তুলে দিলে প্রকাশক মহাশয় খুব একটা খুশী হবেন বলে মনে হয় না, ব্যক্তিগতভাবে যদি বলেন, আমি আসলে অনলাইন ভার্সানটির বেশীর ভাগ অংশ তুলে দেওয়ার পক্ষপাতি, মুক্তমনার কতৃপক্ষের সাথে এব্যাপারে কথা বলা দরকার।
সে যাক, আসল কথায় আসি, সময়াভাবের কারণে খুব সংক্ষেপে দুচারটে কথা বলেই সারবো। আপনার লেখাটার উপসংহারটা মিসলিডিং লাগলো, ভুল বুঝে থাকলে জানাবেন । আপনি এখানে বিবর্তন তত্ত্বের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগে আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। বিবর্তন যেমন একটা তত্ত্ব তেমনি এটি কিন্তু একটি বাস্তবতা বা ফ্যাক্ট। যেমন ধরুন মাধ্যাকর্ষণ একটি বাস্তবতা, আইনস্টাইন যখন নিউটনের তত্ত্বের সীমবদ্ধতাগুলো তুলে ধরেন তখন কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ ব্যাপারটা বিতর্কিত হয়ে পড়েনি। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে, পরিবর্ধণ, সংযোজন চলছে, কিন্তু তার ফলে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাপারটা বেঠিক প্রমাণিত হয়ে যায়নি। ঠিক তেমনি বিবর্তন একটি বাস্তবতা, এ নিয়ে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, প্রকৃতপক্ষে জীববিজ্ঞান এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখা দাঁড়িইয়েই আছে বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে। ডবঝানষ্কি যেমন বলেছিলেন যে, বিবর্তনের আলোয় না দেখলে জীববিজ্ঞানের কোনো কিছুরই আর অর্থ থাকে না। তবে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতই বিবর্তন তত্ত্বের বিভিন্ন টেকনিক্যালিটি নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণা হচ্ছে, যেমন, প্রাকৃতিক নির্বাচন আসলে বিবর্তনের চালিকাশক্তির মধ্যে কতটা গুরুত্ব বহন করে এ নিয়ে বহু গবেষণা হচ্ছে, নতুন নতুন বিষয় বেড়িয়ে আসছে। আপনি মুক্তমনার বিবর্তন আর্কাইভে ( এই আর্কাইভটাও পুরনো হয়ে গেছে, এটাকে ঢেলে সাজানোর একটা পরিকল্পনা করছেন মুক্তমনার কয়েকজন সদস্য) দেখতে পারেন, এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা দেখতে পারেন এখানে। আপনি যে ধরণের গাণিতিক মডেলের কথা বলছেন অনেকটা সেরকম প্রমাণ জেনেটিক্সের অগ্রগতির সাথে সাথে বেড়িয়ে আসছে, আমাদের ডিএনএর ভিতরেই লুকিয়ে আছে আমাদের জীবজগতের বিবর্তনের সামগ্রিক ইতিহাস, আশা করা যায় জেনেটিক্সের বিভিন্ন অঙ্গনে আমাদের বিচরণ যত শক্তিশালী হবে ততই আমরা শুধুমাত্র ডিএনএ থেকেই আমাদের সম্পূর্ণ ইতিহাসটুকু পরে ফেলতে সক্ষম হব। এখন, আপনি যদি বিবর্তনকে ফ্যাক্ট মেনে তারপর তাকে ব্যাখ্যা করার জন্য তত্ত্বের টেকনিকালিটি নিয়ে আলোচনা করতে চান তাহলে সে নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই, কিন্তু আপনি যদি বিবর্তন ফ্যাক্ট কিনা এ নিয়ে বিতর্ক করতে চান তাহলে অত্যন্ত বিনীতভাবে বলবো আমি সেই আলোচনায় যেতে একান্তই অনিচ্ছুক, এ নিয়ে হাজার হাজার জারনাল, প্রবন্ধ বই লেখা হয়েছে। অনুরোধ করবো, বিবর্তনও নয়, ইংরেজিতে জীববিজ্ঞানের ইউনিভার্সিটি লেভেলের যে কোন একটি বেসিক বই পড়ুন, বিবর্তন ছাড়া জীববিজ্ঞানের কোন কিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব কিনা সেটা বুঝে নিন, তাহলেই হয়তো ব্যাপারগুলো আরও ভালো করে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আবারো ধন্যবাদ এত কষ্ট করে লেখাগুলোর রিভিউ করার জন্য। ভালো থাকুন।
@বন্যা আহমেদ,
আমার সংক্ষিপ্ত উপসংহারের মূল বক্তব্যটুকু মনে হয় কেউই ধরতে পারেনি, সংকীর্ণ অর্থটাই সবার চোখে লেগেছে। যেহেতু বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটেছে (এবং কেউ বুঝতে পেরেছে এমন উদাহরণও নেই), সেহেতু নিজের বক্তব্য সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ভার মাথা পেতে নিচ্ছি।
খেয়াল করে দেখবেন, আমি এখানে “বিবর্তন তত্ত্বের” সীমবাবদ্ধতার কথা বলিনি, বরং সাধারণভাবে “তত্ত্ব” জিনিসটারই সীমাবদ্ধতার কথা বলেছি। বিবর্তন তত্ত্ব যেহেতু একটা তত্ত্ব, সেহেতু তত্ত্বের inherent সীমবাদ্ধতাটুকুতো মানতেই হবে, তাই না? তত্ত্বতো প্রমাণ করার জিনিস না, বরং তত্ত্বকে সঠিক ধরে তা থেকে inference এর মাধ্যমে অন্য কোন দাবি প্রমাণ করা হয়। যদি কোন তত্ত্ব দিয়ে এমন কোন দাবি প্রমাণ করা যায় যা বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক, তাহলে সেটা সেই তত্ত্বের সীমবদ্ধতা। এরকম দাবির পরিমাণ খুব কম হলে তা বলে দেয় যে, তত্ত্বের মধ্যে নিশ্চয় কোন “ফ্যাক্টর” বিবেচনা করা হয়নি, তাই একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে এই তত্ত্ব সঠিক হলেও সব ক্ষেত্রে নয়। আর তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক দাবির পরিমাণ ভূরিভূরি হলে তা বলে দেয়, তত্ত্বটাই ঠিক নয়। তত্ত্বের নিজের মধ্যেই থাকা যে বৈশিষ্ট্যের (এটাকে সীমাবদ্ধতা বলা হবে কিনা সেটা আরেক প্রশ্ন এবং সেদিকে যাচ্ছি না) কথা বলেছি, সেখানে কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন, খুশি হবো।
তত্ত্ব আর প্রমাণের ব্যাপারে আমি যেহেতু নিজের বক্তব্য বুঝাতে পারিনি, তাই ইন্টারনেট থেকে একই রকম বক্তব্য খোঁজার চেষ্টা করে এই লিংকটা পেলাম। Donald R. Lindsay এর বক্তব্য আমার বক্তব্যের সাথে আমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মিলে, তত্ত্ব ও প্রমাণ এর তাত্ত্বিক কথার সাপেক্ষে বিবর্তন তত্ত্বের অবস্থানের ব্যাপারেও যেন আমারই প্রতিফলন ( 😉 ) ঘটাচ্ছেন উনি। গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে তুলে ধরছি-
আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম, এরপরও যদি কেউ আমার বক্তব্য ধরতে না পারেন, তাহলে আমি নিরুপায়। 🙁
@বন্যা আহমেদ,
বিবর্তনের পথ ধরে বইটি পড়লাম এবং অসাধারন লাগল।তথ্য ও যুক্তিগুলো ভীষন শক্তিশালী।তবে একটা বিষয় ঠিক পরিষ্কার হতে পারছিনা সেটা হচ্ছে এপেনডিক্স কি আসলেই নিষ্ক্রিয় অঙ্গ??? এই ব্যাপারটা যদি একটু পরিষ্কার করে দিতেন তাহলে উপকৃত হতাম।
@সত্যের সাধক,
এ নিয়ে আমাদের বিবর্তন আর্কাইভে ভাল আলোচনা আছে। এখানে এবং এখানে দেখুন।
@সত্যের সাধক, দুঃখিত, উত্তরটা দিতে দেরী হয়ে গেল। অভিজিত এবং অনন্ত ইতোমধ্যেই মোটামুটি সব কিছু বলে দিয়েছেন। গত কয়েক বছরে এ নিয়ে আরও কিছু গবেষণা হয়েছে, ডারউইনের সময় যেভাবে ভাবা হয়েছিল যে খুব কম সংখ্যক প্রাণীর মধ্যেই এপিন্ডিকেসের অস্তিত্ব আছে তা ভুল ছিল, এখন দেখা যাচ্ছে চেয়ে আর যে তার চেয়েও আরো অনেক বেশী প্রাণীর মধ্যেই এপিন্ডিক্স টিকে আছে এবং তা প্রাণীর দেহের কিছু কিছু কাজেও ভূমিকা রাখে। তবে আমি যতদূর জানি এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী সেগুলোর সবই সেকেন্ডারি ফাংশান, সে হিসেবে এটিকে বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এখনো ‘নিষ্ক্রিয় অংগ’ বলা যেতে পারে, অনন্ত তার মন্তব্যে এটা পরিষ্কার করেছেন।
বিবর্তনের পথ ধরে বইটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অনেকদিন ধরে প্রকাশক দ্বিতীয় সংষ্করণের কথা বলছেন, কিন্তু সময়াভাবের কারণে করা হচ্ছে না। এটি ছাড়াও বইটিতে আরও দুই একটি জিনিস (বিভিন্ন ধরণের চোখ হয়তো আলাদা আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়নি, বা তিমিকে ‘মাছ’ বলা, ইত্যাদি) আপডেট করে দিতে হবে নতুন সংষ্করণে।
@বন্যা আহমেদ,
http://en.wikipedia.org/wiki/Vermiform_appendix
উইকিপিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানতে পারলাম Immune function এবং Maintaining gut flora তে এপেনডিক্স এর অবদান আছে।এক্ষেত্রে ব্যাখ্যাটা একটু পরিষ্কারভাবে জানতে চাচ্ছি।
@সত্যের সাধক,
মানুষের শরীরে বেশকিছু অপুষ্ট অঙ্গের (Vestigial Organ) অস্তিত্ব রয়েছে। যেমন মেরুদণ্ডের একদম নীচের দিকে লেজের হাড় ‘পিকচঞ্চু’ (coccyx), তলপেটের ডানদিকের নিচে বৃহৎ অন্ত্রের সাথে লাগানো সরু নলাটির নাম অ্যাপেন্ডিক্স, পুরুষের ইউটেরাস, পুরুষের স্তনবৃন্ত, আক্কেল দাঁত ইত্যাদি। শুধু মানুষ নয়, প্রাণীজগতে প্রচুর প্রাণীর দেহে (যেমন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী তিমির শরীরে লুপ্তপ্রায় শ্রোণীচক্র, পায়ের হাড়ের অস্তিত্ব) এরকম লুপ্তপ্রায় বা অপুষ্ট অঙ্গাদির অস্তিত্ব রয়েছে। লুপ্তপ্রায় এই অঙ্গাদি একসময় পূর্বপুরুষদের কাজে লাগলেও বর্তমানের পরিবর্তিত পরিবেশে এরা আর যথেষ্ট পরিমাণে কাজে আসে না।
জীববিবর্তন কখনোই বলে না, লুপ্তপ্রায় বা অপুষ্ট অঙ্গাদির কখনো কোনো কার্যকারিতা ছিল না এবং বর্তমানে নেই। বরং একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একই সাথে লুপ্তপ্রায় এবং সীমিত পরিসরে কর্মক্ষম থাকতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে বর্তমানে কর্মক্ষম না হওয়ার কারণে এই প্রত্যঙ্গকে লুপ্তপ্রায় বা অপুষ্ট অঙ্গ বলা হচ্ছে না। বরং Vestigial Organ এই জন্যে বলা হচ্ছে যে পূর্বে পরিবেশের সাথে অভিযোজনের সময় এ প্রত্যঙ্গের প্রয়োজনীয়তা ছিল, কিন্তু বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্তমানের পরিবর্তিত পরিবেশে তারা আর যথেষ্ট পরিমাণে ভূমিকা রাখার প্রয়োজন পড়ছে না। যেমন এমু পাখি, উট পাখি, কিউই পাখির ছোট ডানা আছে, এই ডানা দিয়ে হয়তো তারা গা ঝাড়া দিতে পারে কিন্তু তারা অন্যান্য পাখির মত ডানা ব্যবহার করে উড়তে পারে না।
আর বিবর্তনতত্ত্বের বিপক্ষে ও যে ভূরিভূরি উদাহরণের উপস্থিতি ও তার বিপক্ষে অনেক উদাহরণের প্রমাণ আছে সেগুলি কি আপনার চোখে পড়ে না নাকি? থাকলে ও পরার কথা নয় কারণ নাস্তিকতার অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে বিবর্তনবাদ।
কে কি বলেছে কিছুই লিখলাম না, এতো সময়ই নাই, কিছু তথ্য সুত্র দিতেছি ওই গুলা একটু খতিয়ে দেখেন… এনারা বিবর্তনবাদ লইয়া কি বলেছে, একটু সার্চ দিবেন দয়া করে যদি জানার ইচ্ছা থাকে,
1.Dr. Michael Walker-Evolved Or Not, That’s the Question
2.On the Origin of Species By Charles Darwin
3.N.C. Gillespie-Charles Darwin and the Problem of Creation-University of Chicago-1979
4.Pierre Paul Grassé-Evolution of Living Organisms- New York-Academic Press
5. Derek Ager-The Nature of the Fossil Record-Proceedings of the Geological Association-Vol. 87- No. 2-
6. Introduction: De (Evolution), Encyclopedie Française
7. François Jacob, Le Jeu des Possibles-The Play of Possibilities-Paris-LGF- 1986.
8. Dr. Colin Patterson-Evolution and Creationism: Can You Tell Me Anything About Evolution?-November 1981 Presentation at the American Museum of Natural History-New York City
যদি ও উত্তর গুলি আমি জানি, তার পরে ও ছোট মানুষ এর মত জানার ইচ্ছা জাগল আপনার কাছ থেকে, কোটি বছর আগের ডাইনোসর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিবর্তিত হলনা কেন? কেন তারা টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে গেল?
কেনই বা ডাইনোসরের আগের তেলাপোকা এখনও পর্যন্ত বিবর্তিত হয়নি। কবে তারা বিলুপ্ত হয়ে ছয় পা ওয়ালা পাখি হবে।
অতিকায় তিমি কোন অতিকায় প্রানী থেকে বিবর্তিত হয়েছে? ভবিষ্যতে কি অতিকায় তিমি বিবর্তিত হয়ে অতিকায় দানব মানুষ হয়ে যাবে?
ভবিষ্যতে মানুষ বিবর্তিত হয়ে কি হবে?
বিবর্তনবাদের অনেক কিছুই যৌক্তিক মনে হলেও অধিকাংশই এখন প্রোপাগান্ডা মনে হয়, আসলে বিবর্তববাদীদের লক্ষ্য হল তাদের মত করে পৃথিবীর ইতিহাসকে সাজানো। (শুধুমাত্র উইকিপিডিয়া পড়লেও এ বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়) যদিও পৃথিবীর ইতিহাস ও জীব সমূহের গঠন বৈচিত্র এর উল্টোটাই সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে, প্রতিনিয়ত। আসলেই বিনোদনে ভরা। বিবর্তনবাদিদের কথা শুনলে না হেসে উপায় থাকেনা । :lotpot:
@বেয়াদপ পোলা,
আপনার কি মনে হয় যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেগুলোর উত্তর পাওয়া যায়নি? বিবর্তনের ইতিহাসে শতকরা ৯৯ ভাগ প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেটা কি আপনি জানেন, তাহলে ডায়নোসার কেন বিলুপ্ত হল, সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে না, তাই তার কাছে ডায়নোসারও যা, তেলাপোকাও তা। তেলাপোকা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থেকেছে, তাই বিলুপ্ত হয়নি, খুব বেশি পরিবর্তিত হয় নি (যদিও আপনি যে রকম ভাবছেন তেলাপোকা একেবারেই বিবর্তিত হয়নি সেটা সত্য নয়, তেলাপোকার বহু প্রজাতি রয়েছে, এবং এক প্রজাতির সাথে অন্য প্রজাতির পার্থক্য উল্লেখ করার মতোই বিশাল)।
তেলাপোকা ছয় পাওয়ালা পাখি হওয়া বা না হওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? সেটা হলেই বা কি হবে, আর না হলেই বা কি হবে? তেলাপোকা ছয়-পাওয়ালা পাখি না হলে, কিংবা আপনার এহেন দৃশ্যমান বুদ্ধিশুদ্ধির কোন পরিবর্তন ভবিষ্যতে না হলে কি বিবর্তন মিথ্যে হয়ে যাবে? এই ধরণের প্রশ্নের শানে নজুল কি?
তিমির বিবর্তনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বিজ্ঞানীরা বের করেছেন, আপনি যদি না জানেন, তাহলে সমস্যা বিবর্তনের নয়। আপনি কি এলোমেরিক্স, পাকিসিটাস, রোডোসিটাস, ডোরুডন – এগুলোর নাম শুনেছেন? এরা সবাই তিমির পূর্বপুরুষ (দেখুন এখানে)।
হলফ করে না বলা গেলেও অনুমান তো করা যেতেই পারে। আর কোন কিছু হলফ করে না বলতে পারলেই বা কি? আপনি কি হলফ করে বলতে পারবেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে পটুয়াখালি জেলার মাদারবুনিয়া গ্রামে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে বৃষ্টি হবে কিনা? আপনি অনুমান হয়তো করতে পারেন, কিন্তু হলফ করে কখনোই বলতে পারবেন না। কিন্তু তাতে করে তো আবহাওয়া-বিজ্ঞান আর জলবায়ু সংক্রান্ত সকল বৈজ্ঞানিক গবেষণা মিথ্যে হয়ে যায় না, যায় কি? শুধু বিবর্তন কেন, জ্যোতির্বিদ্যা কিংবা প্রত্নতত্ত্বের সবকিছু আমরা সবসময় হলফ করে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলতে পারি না। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পুরোটাই তো দাঁড়িয়ে আছে অনিশ্চয়তার উপর ভর করে, তাতে কি বিজ্ঞানের শাখাগুলো মিথ্যে হয়ে গেছে?
আমি নিশ্চিত,’বিবর্তনবাদিদের কথা শুনলে’ যেমন হাসেন, ঠিক তেমনি ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত ৬০ হাত বা নব্বই ফুট লম্বা আদমের হাড্ডি থেকে হাওয়া বিবির জন্ম, গন্দম ফল আর শয়তানের রসালো কাহিনি, নূহের নৌকায় পঙ্গপালের মত কোটি কোটি প্রজাতির স্থান দেয়া, কিংবা সাবাতের দিনে মাছ ধরার কারণে আল্লাহপাক ইহুদীদের মানুষ থেকে বানরে রূপান্তরিত করার রূপকথার কেচ্ছা-কাহিনি শুনলে আপনার কখনোই সেইরকম হাসি পায় না, কি আর করা যাবে! এক সময় গ্যালিলিও বা ব্রুনোর বলা পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে শুনলেও আপনের মতো লোকেরা হাসতো। তাতে বাস্তবতা পাল্টায় নি। হেসে যান যত ইচ্ছা। হাসি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
@অভিজিৎ,
বেয়াদপ পলা ত ত ভালো কাজ করে!, ফালতু প্রশ্ন করে কিন্তু উত্তরে আরও অনেক কিছু জানা যায়। তবে বেয়াদপ পোলা আর একটু বেয়াডোপ হোলে আরও ভালো হত, সবসময় তর্কের মাঝখান থেকে লউড় দেয়,অবশ্য সবাই ঝালাই দেয়।।এতাও ঠিক
@অভিজিৎ,
জবাবটা জব্বর হয়েছে অভিজিৎ দা, “ইটের জবাব পাটকেল দিয়ে না দিলে কি আর খেলা জমে”। :lotpot:
@বেয়াদপ পোলা,
আপনি বলেছেন উত্তর আপনার জানা কিন্তু আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর কই পাবো? বিবর্তনবাদ মিথ্যা প্রমাণিত করে বাংলায় কোথাও কিছু লিখা থাকলে সুত্র লিংক দেন। তখন বিবর্তনবাদীদের সাথে আমরাও যুক্তি-তর্ক করতে পারবো।
@বেয়াদপ পোলা,
এ প্রশ্নগুলো দেখেও আপনি আসলে কতখানি সঠিক জানেন তা নিয়ে প্রশ্ন করছি না, অভিজিৎ সুন্দর করে ধৈর্যের সাথে যে জবাব দিয়েছেন তাই যথেষ্ট বলে মনে করি।
ভাল থাকবেন।
@বেয়াদপ পোলা,
প্রিয় বেয়াদপ পোলা। সময়ের অভাব সবারই। আমরা তো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্য মুক্তমনায় সময় দেই। আপনারা সময় দিলে তো ঐ সময়টুকুর জন্যও সওয়াব পাবেন, হাজার হোক, ঈশ্বরের নিয়োগকৃত কি-বোর্ডিস্ট আপনারা। আপনাদের কি-বোর্ডেই আজকাল ঈশ্বর তার আত্মপরিচয় খোঁজেন। সো আরেকটু সময় লাগান, আরেকটু পূণ্য কামান। তথ্যসূত্রে যে বইগুলোর উল্লেখ করলেন, তার কোনোটাই হয়তো আপনি পড়েন নি। এমনকি যে আটটা তথ্যসূত্র দিলেন, সেটাও এক সাইট থেকে একেবারে সিরিয়াল সমেত কপি-পেস্ট করা। কি তথ্য সূত্র দিলেন, সেটাও যদি একবার একটু চোখ বুলিয়ে দেখতেন, তাহলে বোধহয় দুইনম্বর বইটি রেফার করার আগে আরেকবার আপনার ভেবে দেখার সুযোগ হতো।
অবশ্য আপনাদের তো আর বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়না। আপনারা এমনিতেই জ্ঞানী।
আপনারা এতো কিছু জানেন, তাই বোধহয় মস্তিষ্কে সেগুলোকে সংরক্ষণ করতে গিয়ে কমন সেন্সের আর জায়গা দিতে পারেনি ঈশ্বর মহোদয়। যাই হোক, ডাইনোসোর কেনো বিলুপ্ত হলো সেটার কারণ দেখতে পারেন এই সাইটে। সাইটটি বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা। আপনি যেহেতু ‘ছোট মানুষের’ মতো জানতে চাইলেন তাই খুঁজে পেতে এই লিংকটি বের করতে হলো।
সাইটটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন, ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর বুকে একের অধিক এস্টেরয়েড আঘাত হাতে। এই আঘাতের কারণে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। তাপমাত্র কমে আসে এবং চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। এই প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে ডাইনোসোররা একা না, বড় বড় অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদও বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ধার্মিকরা সাধারণত তাদের উদ্দেশ্যে করা মন্তব্যগুলো পড়েন না, যেহেতু তারা সব জানেন, নতুন করে জানার কিছু নেই। আমার ধারণা আপনিও আমার এই মন্তব্য পড়ছেন না, পড়ে থাকলে এখন আপনার মাথায় কী প্রশ্ন আসবে সেটা বলি।
আপনার মাথায় প্রশ্ন আসবে যেহেতু বিবর্তন তত্ত্ব বলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকার সংগ্রামের কারণে প্রাণ বিবর্তিত হয়। তাহলে নতুন এই পরিবর্তিত পৃথিবীতে ডাইনোসোররাও বিবর্তিত হয়ে নতুন করে টিকে থাকা শুরু করলো না কেনো?
স্বর্গীয় জ্ঞানে জ্ঞানী হবার পাশাপাশি, কিছু বিবর্তন বিষয়ক কোনো গ্রন্থগত বিদ্যা (একেবারে ধরেন ক্লাস ফাইভ লেভেলের) আপনার থাকতো তাহলে আপনি জানতে পারতেন, বান্দররা আজকে চিন্তা করছে টিকে থাকার সুবিধার জন্য মানুষ হওয়া দরকার, চলো কালকে থেকে সংবিধান সংশোধন করে আমরা সবাই মানুষ হয়ে যাই- এভাবে বিবর্তন কাজ করেনা। অভিদা যেমন বললেন, জগতে আসলে ৯৯% প্রাণিই বিলুপ্ত হয়ে যায়। বাকিদের নিয়েই গড়ে ওঠে এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল আর মিঠানদীর মাছ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ বদলে তাই পরের দিন থেকেই অন্যভাবে বিবর্তিত হয়ে ডাইনোসোরটা টিকে থাকতে পারেনি। তবে একেবারে কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। পাখি কিন্তু ডাইনোসোর থেকেই বিবর্তিত হয়ে এসেছে। আপনার তো ইংরেজি উইকিপিডিয়া পড়া শেষ, তারপরও এই লিংকে একটু ঢু মেরে দেখতে পারেন।
বন্যা আপার অসাধারণ বইটি নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এ বইয়ে আমার সবচেয়ে ভাল লাগা কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে ছিল এই তেজস্ক্রিয় ডেটিং। মনে আছে, ফসিলের বয়স নির্ধারনের রহস্য জানতে পেরে রীতিমত শিহরিত হয়েছিলাম। বিশদ ব্যাখ্যা না থাকলে হয়ত সেই শিহরণ থেকে বঞ্চিত হতাম। ভাল কথা, আমি কিন্তু অতি সাধারণ (বিজ্ঞানের ‘ব’ না জানা) পাঠক।
@কাজি মামুন,
তেজস্ক্রিয়তার পুরো ব্যাপারটি আগে থেকে বিজ্ঞানের ‘ব’-ও না জেনে এ বই থেকে বুঝতে পেরে শিহরিত হয়েছেন জেনে বন্যা আহমেদ ও আপনার উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো। :guru: এ কথা মানতেই হবে যে, বন্যা আহমেদ বইটিতে রসায়নের কাঠখোট্টা মৌলিক জিনিসগুলোকে যথেষ্ট সহজ করে বর্ণণা করেছেন, তবে সাধারণ পাঠক আপনার মতো কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না এখনই। আবার এমনও হতে পারে যে, আমি হয়তো টেক্সট বই থেকে পাওয়া ধারণা হতে বের হতে পারিনি। 🙁
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। 🙂
আমি বিবর্তন তত্ব নিয়ে কাজ করা কোন বিজ্ঞানীকে কখনও বলতে শুনিনি যে বিবর্তন তত্ব প্রমানিত নয় বরং তারা সবাই দাবী করেন প্রমানীত। ভাবছি উনারা ভুলটা কোথায় করছেন?
ঠিক কি প্রমান বা কি ধরনের প্রমান পেলে আপ্নি আপ্নার যুক্তি থেকে নড়বেন সে ব্যাপারে কি কিছু বলবেন?
@হোরাস,
আপনার আর আমার point of view এর মধ্যে পার্থক্য আছে বলে মনে হচ্ছে। আপনার কী বলতে চান তা বুঝেছি এবং আমি কী বলতে চাই তা নিচে বন্যা আহমেদের মন্তব্যের জবাবে বলেছি। সেখান থেকে আমার বক্তব্য বুঝতে পারলে আমার চেষ্টা সার্থক মনে করবো।
সত্যি কথা বলি, প্রথম অধ্যায়ে এলাম আমরা কোথা থেকে পড়ার পর বিবর্তনবাদ নিয়ে আমার ভেতরে যে সামান্যটুকু অবিশ্বাস তখনও নড়বড় করছিলো, সেখানের শেষ পেরেকটা মেরে দিল বন্যার এই বই। বিবর্তনের উপর অবশ্যই এর আগে আরো কিছু বই পড়েছি, কিন্তু হজম করতে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু বন্যা এমন একটি ডাইজেষ্টিব ট্যাবলেট তার লেখায় ঢুকিয়ে দিলেন মনে হচ্ছিল যেন আমি পাঠক নিজেই গল্পের ভিতরে মিশে গেছি। অপটিক ইল্যুশনের মতো মনের মানসপটে আমি যেন ষ্পষ্টই দেখতে পাচ্ছিলাম আমার পূর্ব পুরুষ সেই প্রথম মানুষটির ছবি। এই একটা বইয়ের জন্যে বাংলা ভাষায় জীববিজ্ঞানের উপর লেখা বইয়ের লেখকদের মধ্যে তিনি অনন্যা চির স্ম্বরণীয় হয়ে থাকবেন।
@আকাশ মালিক,
নিজেকে “আশরাফুল মাখলুকাত” থেকে সরিয়ে কেবলই “প্রকৃতির অংশ” ভাবা নিতান্ত সহজ কাজ নয়। আপনার-আমার-ই-বা কি দোষ, প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রবক্তা আলফ্রেড ওয়ালেস নিজেও পারেননি!
নিজের কথা ব্যক্ত করার জন্য ধন্যবাদ।