বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে খানিকটা ধান্ধায় পড়ে গেলাম আমি- ইসলামিক বইয়ের প্রচ্ছদ এত ‘কালারফুল’ কিম্বা এমন কাব্যিক কাব্যিক হয় নাকি? প্রচ্ছদ শিল্পী, চারু পিন্টুকে ইমেইলে তা জানালে ওনার মোবাইলে ফোন করতে বললেন আমাকে। চারু পিন্টু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিউট থেকে পাশ করেছেন অনেকদিন আগে। বইয়ের প্রচ্ছদ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কথায় কথায় জানালেন, অন্তত হাজার খানেকের ওপরে বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিনি এ যাবৎকাল। আমার অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে খানিকক্ষণ হাসলেন। তারপর জানালেন, বইয়ের ভূমিকা পড়ে শুরুতে যদিও তিনি খুব একটা নিশ্চিত ছিলেননা প্রচ্ছদটা কেমন করবেন, কিন্তু প্রকাশক মেজবাহউদ্দিন আহমেদ উনাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন বইয়ের প্রচ্ছদ যেন প্রগতিশীল ধরনের ‘থিম’-এর ওপর ভিত্তি করে হয় যা বইয়ের সার্বিক মেসেজের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। এবং তিনি যথেষ্ট সময় নিয়ে অত্যন্ত যত্ন করে প্রচ্ছদটা করেছেন। নিজের কাজ সম্পর্কে চারু পিন্টুর কন্ঠস্বরে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সুর শুনে সন্তুষ্ট চিত্তে ফোন রেখে দিলাম আমি।
চলতি বই-মেলার মাঝামাঝি (ফেব্রুয়ারী ১৫ নাগাদ) আমার বহু প্রতীক্ষিত ও নিজস্ব স্বপ্ন-পূরনের বই, ‘ইসলাম নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ও মুসলিমবিশ্ব’ অবশেষে বের হচ্ছে। ৩৪০ পৃষ্ঠার এ বইটা বের করছে অংকুর প্রকাশনী। মূদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা। বইটা বের করার জন্যে বিগত দুই-তিন বছর ধরেই বাংলাদেশের নানা প্রকাশনা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছি আমি। গত ২০১০ ও ২০১১ সালের বই-মেলায় আমার একটা করে ছোট গল্পের বই বের হলেও এ বইটা বের করতে অধিকাংশ প্রকাশকই রাজি হননি। ধর্মের গন্ধ আছে, এমন বই অনেকেই ছাপতে চাননা।
গত বছরের জুন-জুলাইতে আমার পরিচিত ও অপরিচিত বেশ কতগুলো প্রকাশনা সংস্থাকে বইয়ের পান্ডুলিপিটা পাঠিয়েছিলাম। দু’তিন মাস পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে একে একে ওনাদের সবাইকে ফোন করা শুরু করলাম। দু’একজন প্রকাশক স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন এ ধরনের বই তাদের প্রকাশনী বের করেননা। বইটা তারা বের করবেননা শুনে কিছুটা ভগ্ন-হৃদয় হলেও তাদের স্পষ্ট উত্তরে আমি বরং খুশীই হয়েছিলাম। বরং অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম ঐসব প্রকাশকদের ওপরে যারা সুস্পষ্টভাবে ‘হ্যাঁ’ কিম্বা ‘না’ কিছু বলেননি। বরং “পান্ডুলিপি এখনও দেখছি” ধরনের উত্তর দিয়ে আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সবচেয়ে বেশী আহত হয়েছিলাম যখন জনৈক প্রকাশক দীর্ঘ দুই-আড়াই মাস পর ফোনে আমার বইটা বের করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে জানতে চাইলেন “আপনার বইয়ের মূল বক্তব্যটা কী তা আমাকে সংক্ষেপে একটু বলুনতো”। অর্থাৎ উনি পান্ডুলিপিটা খুলে পর্যন্ত দেখেননি। একজন প্রকাশকের এহেন ‘আনপ্রফেশনালিজম’ দেখে আমি যার-পর-নাই আশ্চার্যান্বিত হয়েছিলাম।
হঠাৎ করেই তখন একদিন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কথা আমার মাথায় এলো। অভিজিতের ‘সমকামীতা’ বইটা শুদ্ধস্বরের বের করার খবরটা মুক্তমনা ব্লগ থেকেই জেনেছিলাম। ব্যতিক্রমী বিষয় নিয়ে শুদ্ধস্বরের বই প্রকাশ করার কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেট ঘেঁটেঘুটে আহমেদুর রশীদ টুটুল-এর ফোন নাম্বার যোগাড় করে ওনাকে ফোন করলাম একদিন। উনি ফোনে বেশ সময় নিয়েই আমার সাথে কথা বললেন। পান্ডুলিপি পাঠাতে বললেন, আগে উনি পড়ে দেখবেন। ওনাকে পান্ডুলিপি পাঠানোর সম্ভবত দিন দশেক কিম্বা দিন পনের পর ওনাকে একদিন ফোন করলাম। জানালেন, পুরো পান্ডুলিপিটাই ইতিমধ্যে পড়ে শেষ করেছেন উনি। এমনকি ওনার পরিচিত দ্বিতীয় আরেক ভদ্রলোককে (সম্ভবত ওনার কোনো কলিগ কিম্বা কোনো প্রফেশনাল এডিটর হয়ে থাকবে) দিয়েও পুরো পান্ডুলিপিটা উনি পড়িয়েছেন। তবে ফোনে বইটা বের করার ব্যাপারে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ কিম্বা ‘না’ জানাতে রাজি হলেননা উনি। বরং ইমেইলে অফিসিয়ালি আমার পান্ডুলিপি সম্পর্কে কমেন্টস করার এবং বইটা বের করার ব্যাপারে ওনার মতামত সত্বর আমাকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন উনি। একজন প্রকাশক হিসেবে টুটুল ভাইয়ের ‘প্রফেশনালিজম’ সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করলো। আমি কিঞ্চিত আশার আলো দেখতে শুরু করলাম।
তারও দিন কতক পর টুটুল ভাইয়ের বহু কাংক্ষিত ইমেইল এলো। তিনি বইটা বের করতে রাজি আছেন তবে একটা বিশেষ প্রবন্ধ বই থেকে শেষপর্যন্ত তিনি বাদ দিতে চান এবং একজন পেশাদার সম্পাদককে দিয়ে বইটা এডিট করার প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন যেহেতু বইতে বিতর্কধর্মী কয়েকটা প্রবন্ধ রয়েছে যেখানে বিপক্ষীয় লেখকের বক্তব্যের হুবহু অনুপস্থিতির কারনে আমার উক্ত প্রবন্ধগুলো স্বাভাবতই কিছুটা অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়েছে। বিতর্কধর্মী প্রবন্ধগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পুনর্লিখন করতে আমি নিমেষেই রাজি হলেও এবং ঐ সবিশেষ প্রবন্ধটা পুরোপুরি বাদ দিতে কিছুটা নিমরাজি হলেও, একজন পেশাদার সম্পাদককে নিয়োগ করার প্রস্তাবে খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। কেননা দেশে বেড়াতে গিয়ে বইপাড়ায় সীমিত আসা-যাওয়া থেকে আমার ধারনা ছিল (প্রকাশকদের কারো কারো কাছ থেকে শোনা; তথ্যটা সঠিক নাও হয়ে থাকতে পারে) পেশাদার সম্পাদকরা নাকি সাধারনত প্রচুর সময় নেন একেকটা বইয়ের এডিটিং শেষ করতে। ততদিনে অক্টোবর মাস শুরু হয়ে গেছে এবং বই-মেলা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকটা মাস বাকি। তারপরও টুটুল ভাইয়ের প্রস্তাবে শেষপর্যন্ত আমি হয়ত রাজি হতাম যেহেতু তখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র প্রকাশক যিনি বইটা বের করতে রাজি হয়েছেন।
হঠাৎ করেই এরমধ্যে একদিন অংকুর প্রকাশনীর মেজবাহউদ্দিন আহমেদ জানালেন উনি বইটা বের করতে রাজি আছেন। সাথে এটাও জানালেন যে, বইটা যদিও একজন পেশাদার সম্পাদককে দিয়ে এডিট করা লাগবে, কিন্তু ওনার মনে হয়না বইতে খুব বেশী এডিটিং-এর প্রয়োজন আছে। বই থেকে কোনো প্রবন্ধ বাদ দেয়ার কথাও উনি উল্লেখ করলেন না। কাজেই সবদিক বিবেচনা করে অংকুর প্রকাশনীর মাধ্যমেই বইটা বের করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি শেষপর্যন্ত এবং টুটুল ভাইকে ইমেইল করে বিষয়টা জানালাম। উনি আমার সিদ্ধান্তকে সহজ ভাবেই নিলেন এবং স্বাগত জানালেন। আমার পরবর্তী বই কবে বের হবে জানিনা। তবে সেটা যখনই হোকনা কেন, আমার পরবর্তী বইয়ের পান্ডুলিপি সর্বপ্রথম শুদ্ধস্বরের টুটুল ভাইকেই সম্ভবত পাঠাবো আমি।
বইপাড়ার প্রচলিত ধারনাকে সঠিক প্রমান করে বেশ কয়েক মাস কেটে গেল প্রুফরীডার ও এডিটরের হাত ঘুরে বইয়ের পান্ডুলিপিখানা অবশেষে প্রকাশকের হাতে আসতে। এছাড়া কিছুটা শারিরিক অসুস্থতাজনিত কারনে মেজবাহ ভাই ঠিকমত অফিস করতেও পারেননি গত দু’তিন মাস ধরে। আমার বইটার সবকিছু শুরু থেকে উনি নিজেই তদারকি করছিলেন বলে অফিসে ওনার অনিয়মিত উপস্থিতিও বইয়ের কাজটাকে কিছুটা পিছিয়ে দিল। যাহোক, ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখ নাগাদ বইটা শেষপর্যন্ত মেলায় নামবে বলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়েছেন মেজবাহ ভাই। সাথে যদি অতিরিক্ত দু’তিন দিন অনাকাংক্ষিত দেরীর সম্ভাবনাকে যোগও করি, তাহলেও আশা করা যায় ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি নাগাদ বই-মেলায় অংকুর প্রকাশনীর ষ্টলে পাওয়া যাবে আমার বইটা।
আমি মুক্তমনার নিয়মিত একজন লেখক না হলেও মোটামুটি নিয়মিত একজন পাঠক বলা যায়। মানুষের ধর্মীয় মনোবিজ্ঞান কিম্বা ধর্মীয়-মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে মুক্তমনার অনেক লেখকের বক্তব্যের সাথে আমি যদিও সহমত প্রকাশ করিনে, কিন্তু তারপরও এসব বিষয়ের ওপর প্রকাশিত লেখাগুলো সাধারনত আমি পড়ি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, অন্যের বক্তব্য থেকে অনেক সময় কিছু না কিছু নতুন বিষয় জানা ও শেখা যায় এমনকি তার বক্তব্যের অধিকাংশ বিষয়ের সাথে আমি যদি সহমত প্রকাশ নাও করি। কাজেই আমি আশা করবো, মুক্তমনার সদস্যরা আমার এ বইখানা কিনবেন ও পড়ে দেখবেন।
মুক্তমনাসহ কিছু কিছু ব্লগে আমার লিখিত শেষ প্রবন্ধ ‘গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ বনাম ড্যামেজ কন্ট্রোল’ প্রকাশিত হয়েছিল সেপ্টেম্বর ২০১০-এ; প্রায় বছর দেড়েক আগে। এরপর প্রায় গোটা দশেক প্রবন্ধ লিখেছি আমি যা কখনও কোনো ব্লগে প্রকাশিত হয়নি। মূলত এ বইটা বের করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে (এবং একইসাথে পরিচিত বিভিন্ন ব্লগে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে) ইচ্ছে করেই এ প্রবন্ধগুলো ব্লগগুলোতে পাঠানো হয়নি। আমার লিখিত ইংরেজী প্রবন্ধগুলোর বঙ্গানুবাদ বাদ দিলে এই শেষোক্ত নয়-দশটা প্রবন্ধ পৃষ্ঠাসংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম দিকের বাকি পঁচিশটা প্রবন্ধের সম্মিলিত পৃষ্ঠাসংখ্যার প্রায় সমান। বলাবাহুল্য, প্রচুর তথ্য ও বিশ্লেষন সন্নিবেশিত করা হয়েছে এই শেষোক্ত প্রবন্ধগুলোতে।
আমেরিকার রাজনীতিতে সেদেশের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে একটা প্রসিদ্ধ মনোভাব হলো, একজন প্রেসিডেন্ট যখন একইসাথে দেশের উদারপন্থি ও রক্ষনশীল- উভয় দলের সমর্থকদের কাছেই সমানভাবে বিরাগভাজন, তখন বুঝতে হবে- দেশের কল্যানে প্রেসিডেন্ট সম্ভবত সঠিক সিদ্ধান্ত সমুহই নিচ্ছেন। আমি অবশ্যই তেমনটা দাবী করবোনা। তবে এটুকু অন্তত বলতে পারি, ধর্মীয় রক্ষনশীল ও উদারপন্থি- উভয় পক্ষের ভ্রূ কোঁচকানোর মত যথেষ্ট পরিমান রসদ আমার এ বইটাতে আছে বলেই আমার ধারনা।
নীচে বইয়ের সূচিপত্র ও বইয়ের ফ্রন্ট-ফ্ল্যাপে সংযোজনের জন্যে আমার লিখিত বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরনীটি পাঠকদের জ্ঞাতার্থে দিয়ে দিচ্ছি।
সূচিপত্র
ভূমিকা
আরব দেশের মুসলমান
আমেরিকার সম্ভাব্য ইরাক আক্রমনের নেপথ্যে
ইসলাম ও আমেরিকান মিডিয়া
তাবলীগ জামাত কী এবং কেন
আমেরিকার ইরাক আক্রমনঃ যুদ্ধের জন্যেই যে যুদ্ধ
এক চোখে পৃথিবী দর্শনঃ ধার্মিক বনাম নির্ধর্মীর দৃষ্টি
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশঃ আমরা কোন্দিকে যাচ্ছি?
খাবার-দাবারে তাকওয়া
কোরান ও বিজ্ঞানঃ দ্বন্দ্ব নাকি সমন্বয়?
প্রসঙ্গঃ নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষা
ইহুদী চক্রান্ত ও মুসলিম বিশ্ব
মুসলিম সন্ত্রাসবাদ ও ইসলাম
বাই-প্রডাক্ট
বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদের উত্থানঃ সমস্যার শেকড় কতদূর?
Freedom of Speech/Expression, When it Comes to Religion
Deliberate Blasphemy to Islamic Faith: Where could be the Catch?
When Humanity is a Hostage of Media Propaganda
আস্তিকতা, নাস্তিকতা ও মানবতার ভুল সমীকরন
ধর্মীয় সম্প্রিতী বিনষ্টে পশ্চিমা মিডিয়ার ভূমিকা
Pat Robertson Said it Again, But What’s with Bob McDonnell?
ধর্মীয় বিভাজন ও অসহিষ্ণুতার শিক্ষা- কতদূর প্রোথিত এর শেকড়?
অতিরিক্ত ধর্মীয় জোশ ও গোঁড়ামী চরমপন্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে
মডারেট মুসলিম
ধর্মকে ‘না’ বলা কতখানি বাস্তব?
গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ বনাম ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’
মুসলিম মাইন্ডসেট- ১
মুসলিম মাইন্ডসেট- ২
ইসলামী শরিয়াঃ মধ্যযুগ থেকে একবিংশ শতাব্দির পথে
ধর্মীয় মৌলবাদের সাম্প্রতিক উত্থানঃ একটি সার্বিক পর্যালোচনা
বিন লাদেনঃ এক দুর্বিনীত মুসলিম যোদ্ধা, নাকি এক কিংবদন্তি সন্ত্রাসী?
ইতিহাসের আলোকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা
চাঁদ দেখা ও মুসলিম উম্মাহর বিভাজন
বাংলাদেশঃ যে দেশকে নিয়ে গর্ব করা যায়
ক’জন মুসলিম কন্ভার্ট এবং প্রচলিত একটা হাসির গল্প
বইয়ের ফ্রন্ট-ফ্ল্যাপে সংযোজনের জন্যে বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরনীতে আমি লিখেছি-
আজ থেকে প্রায় চৌদ্দশ বছর আগে আরবের মরুঅঞ্চলে শান্তির বাণী নিয়ে আগমন ঘটেছিল ইসলাম ধর্মের। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মের অনুসারী তথা মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় দেড়শ কোটি। একদিকে শান্তিপূর্ণ ধর্মপ্রচার এবং অন্যদিকে অমুসলিম বিরুদ্ধাচারীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সমরাভিযান পরিচালনা- এই দুই চুড়ান্ত সীমারেখাসহ ইসলামের বহুবিধ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়েছে বিগত চৌদ্দশ বছর ধরে। মুসলিম নেতৃত্ব কিম্বা ওলামাদের মতানৈক্য থেকে শিয়া-সুন্নী সহ জন্ম হয়েছে আজকের ‘সুফিবাদী’ কিম্বা ‘জঙ্গিবাদী’- উভয় ধরনের ইসলামপন্থিদের, যাদের সকলেই ইসলাম ধর্মের সঠিক ধারক ও বাহক এবং কোরআনের সঠিক বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দাবীদার। মাঝখান থেকে বিপদে পড়েছি আমরা সাধারন মুসলমানরা, বাপ-দাদার ধর্মে জন্ম নিয়ে যারা নামমাত্রে মুসলমান, যাদের ধর্ম-জ্ঞান সামান্যই এবং যাদের ধর্মপালন অধিকাংশ সময় পারিবারিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কাজেই আজ যখন ইসলামের নামে সংঘটিত হচ্ছে আমেরিকার নাইন-ইলেভেনের মত সন্ত্রাসী ঘটনা, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে সুইসাইড বম্বিং-এ এবং অধিকাংশ পশ্চিমা মিডিয়া এ সবকিছুর জন্য ক্রমাগত দায়ী করে চলেছে ইসলামী ধর্মগ্রন্থ কোরআন ও ইসলামের নবীকে, তখন আমরা মুসলমানরা হয়ে পড়েছি হতবিহব্বল, বিভ্রান্ত। কোন্টা সত্যি কোন্টা মিথ্যে, কাকে বিশ্বাস করবো আর কাকে করবো না- এহেন সন্দেহ ও দ্বিধা আজ যেন আমাদের প্রায় সবার। এহেন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিমবিশ্বের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রচিত অনেকগুলো নিবন্ধ সংকলিত করে প্রকাশিত হচ্ছে আলোচ্য বইখানি। ধর্মীয় বই প্রকাশনার জগতে এ বইটি একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে ধার্মিক ও নির্ধর্মী- সকল শ্রেনীর পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সমর্থ হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আব্দুর রহমান আবিদ
ফেব্রুয়ারী, ২০১২
বর্তমান যুগে মিডিয়াতে বা সামাজিকভাবে ইসলামি আইন তথা ইসলামি কঠোরতা নিয়ে কথা বলার বাজার নেয়। তাই অন্তরে অন্তরে জিহাদি জিকির তুললেও সামাজিক স্ট্যাটাস পেতে চাইলে আপনার মতো ভারসাম্য বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেয়।
আপনার মতে মুসলিম নেতৃত্ব বা উলামা সমাজের নীরবতা বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।
আল্লা-মালুম, তারা নীরব না হয়ে যদি সরব হতেন, তাহলে তো রক্তের হোলি জাতীয় খেলায় পরিণত হত।
আমি ভুল না হলে আপনার বই পড়ে মানুষ ধর্মীয় গাজার নেশা থেকে যারা বের হয়ে সুস্থ হইতেছিল, তারা আবার হেরোইনাসক্ত হয়ে পড়বে।
এ-ই যখন পরিস্থিতি, তখন পশ্চিমা মিডিয়ার সুরে সুর মিলিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছেন নাস্তিকতার দাবীদার একদল মানুষ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক যুক্তিবাদী বা নাস্তিক-পন্থী অনেকগুলো ই-ফোরাম যেখানে ধর্মের বন্ধনমুক্ত যুক্তিবাদ ও মুক্তচিন্তা প্রচারের নামে প্রকারান্তরে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ প্রচার করছেন অনেকেই।
আপনার এই মতামত আর লাদেনের মতামতের পার্থক্য হল- লাদেন আপনার বক্তব্যের পরে আর একটা লাইন যুক্ত করে,তাহল- ‘সুতরাং বিধর্মীদের কতল করতে হবে।’
ইসলামের তথা মুসলিমদের মঙ্গল করতে চাইলে আপনার দরকার কুরআন- হাদিসের বিধর্মীদেরকে হত্যা, আক্রমণ ইত্যাদি আয়াতগুলো সংশোধন করা। নবীজি জীবনে অতর্কিত হত্যা, লুণ্ঠন, মাগিবাজী ইত্যাদি যে আকামগুলো করেছেন, তা যে ভুল ছিল তা স্বীকার করা।
আপনার বইয়ের সফলতা কামনা করতে পারছিনা বলে দুঃখিত।
@হেলাল, (Y)
এখানে একটা ইনফরমেশন এ সামান্য ত্রুটি আছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র না। আমি ইউনিভার্সিটি অব ডেভালপমেন্ট এর চারুকলা অনুষদ এ পড়াশোনা ( ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং ) এ। ধন্যবাদ। আর এই বইটির প্রচ্ছদ করতে পেরে আমি দারুন আনন্দিত এবং আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।
যুক্তি, তর্ক, উদ্ধৃতি, উদাহরণ দিয়ে আপনাকে নাস্তানাবুদ কর আমার উদ্দেশ্য নয়।
আপনি—নিরবে হলেও যে স্বীকার করেছেন–ইসলামে এক বিশাল সমস্যা আছে, এবং আজকের সভ্যতায় জিহাদি ইসলাম এক হুমকি তার জন্য আপনাকে অভি্নন্দন জানাচ্ছি।
আপনার বই সাফল্য লাভ করুক তাই কামনা করি। যদি বইটা পাই তবে নিশ্চয়ই পড়ব।
আপনার লেখা বই যেহেতু সহজেই বুঝতে পারছি কী মূল লক্ষ নিয়া বইটা লেখছেন। দুই নৌকায় পাও দিয়া আর কত?
খুবই ইন্টারেস্টিং! “ধর্মীয় রক্ষনশীল ও উদারপন্থি- উভয় পক্ষের ভ্রূ কোঁচকানোর মত যথেষ্ট পরিমান রসদ” রাখার জন্যে যথেষ্ট ধন্যবাদ প্রাপ্য আপনার। ইসলাম নিয়ে যে ডিকোটমি প্রচলিত আছে, সেটার ফাঁদে পা না দিয়ে ভিন্ন অ্যাঙেল থেকে দেখাটা ইসলামের ও মুসলমানদের নির্মোহ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য একান্ত জরুরি। আমার শেষ দুটি লেখায় এই চেষ্টাটাই করেছিলাম।
খোদার প্রকোপের প্রায় বাইরে বা নাস্তিকের চেয়েও কম কম আস্তিকতা
নাস্তিক মুসলমান
পলেমিকাল ও অবরোহী নয়, বরং আরোহী ও আলোচনামূলক রচনা বলা যেতে পারে একে।
@রূপম (ধ্রুব),
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। লিংকের লেখা দুটো বেশ ইন্টারেষ্টিং। ধন্যবাদ লিংক দুটো শেয়ার করার জন্যে।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
বইয়ের ফ্রন্ট-ফ্ল্যাপে সংযোজনের জন্যে বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে আপনি দুই জায়গায় দুই-রকম বক্তব্য দিয়েছেন, যা আপনার কাছ থেকে আশা করিনি। অন্য একটি ফোরামে একই ভুমিকা লিখতে গিয়ে এক পর্যায়ে আপনি লিখেছেন-
এরা যে কারা এবং কোন্ ফোরামের কথা বলছেন তা বুঝতে কারো অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। দুই জায়গায় দুই প্রকার ভিন্ন ভুমিকার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সে দিকে আর যাচ্ছিনা। সেখানে আপনি শতধারায়, মতে, চিন্তায়, বিশ্বাসে বিভক্ত মুসলমান, ইসলামের নামে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও নিজেদের মধ্যকার রক্তাক্ত সংঘর্ষের কথা কিছুটা উল্লেখ করে বলেছেন-
এই নীরবতার কারণ আপনার জানা। আপনি জানেন কোরান ও হাদিসে কী আছে। আপনি জানেন ওমর, উসমান, আলী, মুয়াবিয়া, আয়েশার ইসলামের সুদীর্ঘ কলংখিত ইতিহাস। কত লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ নিরীহ মুসলমান এদের হাতে খুন হয়েছেন। উসমানের মদীনায়, আলীর কুফায়, আয়েশার বসরায়, মুয়াবিয়ার সিরিয়ায়, হোসেনের কারবালায় আমেরিকার ষড়যন্ত্র, ইসরাইলের চক্রান্ত ছিলনা, সেটা আপনার জানা নেই? রাজনৈতিক ইসলামের বিপরীতে সুফী ইসলামের জন্ম কোন্ দিন থেকে কাদের মাধ্যমে, কখন থেকে শুরু হয়েছিল এবং তাদের পরিণতি কী হয়েছিল, সেটাও আপনার অজানা থাকার কথা নয়। এ সবের উত্তর আপনার কাছে নাই, আলেম উলামাদের কাছেও নাই। তাই এই জটিলতা তাই এই নীরবতা। আর নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ। ইন্টারনেটে বাংলা ইসলামী ফোরাম জগতে মুসলিম ভাইয়েরা নাস্তিকদের ইসলাম শেখাতে, আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমান করতে হাজার হাজার প্রবন্ধ লিখে, একটা প্রবন্ধ লিখতে পারেনা নিরপরাধ নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ হত্যাকারী, সেই ইসলামী বোমাবাজ, ফতোয়াবাজদের উদ্দেশ্যে। আজও খোলা মাঠে ময়দানে সরল মনের সাধারণ ধর্মভভীরু মানুষদেরকে দেশীয় সংস্কৃতি, দেশ ও দেশের সংবিধান বিরোধী কথা শেখানো হয়। আমাদের কবি সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সাধারণ মানুষের মনে ঘৃণার বীজ বুপন করা হয়। এ সব কিছু চোখের সামনে দেখেও আপনার সমমনা, শিক্ষিত মডারেইট মুসলমানগণ যখন নীরবতা পালন করেন, তখন আমরাই সেই অত্যাচারিত, নির্যাতিত অসহায় সাধারণ মানুষদের পাশে এসে দাঁড়াই। ধর্মের নামে সঙ্ঘটিত সকল অমানবিক অন্যায়ের বিরোদ্ধে নাস্তিকেরা যত সোচ্চার আস্তিকেরা ততই নীরব। কারণটা কী? মুসলমান একটি কার্টুন, একটি ভাষ্কর্য ধ্বংস করতে দেশের উপর ভুমিকম্প শুরু করে দিতে পারে, আপন বুকে বোমা বেঁধে জীবন দিতে পারে, একজন শেলী একজন নুরজাহানের জন্যে তাদের কলমটাও হাতে উঠেনা। আমরা এই অনাচার, অনিয়ম, অবিচার, অমানবিকতার উৎস থেকে নিরীহ সাধারণ মানুষদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করি। মুসলিম বিদ্বেষ নয় বরং এই জটিলতা ভেঙ্গে দিয়ে সত্যটা জানিয়ে দেয়াই যে আমাদের লেখালেখির কারণ সেটা আপনার মতো একজন সচেতন ব্যক্তিত্ব নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাই একটা জায়গাটায় এসে, শিক্ষিত মডারেইট মুসলিম আর ঐ উপরে আপনার উল্লেখিত মুসলিম নেতৃত্ব ও ওলামা সমাজ একই অবস্থানে অটল,অবিচল। কওমী মাদ্রাসা হয়েছে সন্ত্রাসী তৈ্রীর উর্বর ক্ষেত্র। এর কারণ উদ্ঘাটন ও প্রতিবাদ প্রতিকার মুসলমানরা খুঁজবে, না কি নাস্তিকেরা?
পরিশেষে আপনার বইয়ের সফলতা কামনা করি। আপনি বলেছেন আপনার বইয়ের টার্গেট নিরীহ সাধারণ মানুষ। তবে পরবর্তি টার্গেটটা নিরীহ সাধারণ মানুষ না হয়ে শক্তিশালী, অসাধারণ বিন-লাদেন, শায়েখ আব্দুর রহমান, মুফতি হান্নান, বাংলা ভাই, গোলাম আজম, নিজামী, ফতোয়াবাজ, বোমাবাজদের উত্তরসুরীরা যেন হয়। পরিশেষে আপনার অনেক কষ্টের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই বইয়ের সফলতা কামনা করি।
@আকাশ মালিক,
(Y) (Y) আপনার সম্পূর্ণ মন্তব্যটি অসাধারণ। আবিদ ভাই যে দুই জায়গায় দুই রকমের কথা বলবেন তা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। উনি নিজেই দুই নৌকায় পা রাখা মানুষ। বিজ্ঞান,সাহিত্য,দর্শন, “ধর্মনিরপেক্ষতা” নিয়ে মুক্ত আলোচনা হলে উনি তাকে সাদর সম্ভাষণ জানান কিন্তু পৈতৃক ধর্মটির যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা শুরু হলেই তিনি বেঁকে বসেন। তবুও যেহেতু ওনাকে “মডারেট মুসলিম” হিসেবেই জানি তাই আশা করবো বইটি অন্তত তার দৃষ্টিভঙ্গিতে হলেও মৌলবাদ,জঙ্গিবাদ বা ধর্মীয় গোঁড়ামির বিপক্ষে থাকবে এবং ধর্ম নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরুৎসাহিত করবে। বইয়ের জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার এ বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারলাম না। ইসলাম কখনই যে শান্তির বানী প্রচার করেছে ইসলামের ইতিহাস, কোরান হাদিস, খোদ মোহাম্মদের জীবনী পড়ে তা জানা যায় না। শুধুমাত্র তার প্রাথমিক ১০ বছরের মক্কার জীবনের ইসলাম ছিল শান্তির বানী। ইসলাম যেখানেই গেছে, সেখানকার সমাজ সংস্কৃতিকে দুমড়ে মুচড়ে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদেরকে বানিয়েছে আরবের সেবাদাস। পক্ষান্তরে আরবী সংস্কৃতি তেমন কোন উন্নত সংস্কৃতি না হওয়ায় মুসলমানরা ইসলাম চর্চা করে মানব সভ্যতায় জ্ঞান বিজ্ঞান সংস্কৃতি সাহিত্য কোথাও তেমন কোন কৃতিত্বের নজীর দেখাতে পারে নি।
তারপরেও আপনার প্রকাশিত বইটি যথেষ্ট কৌতুহলোদ্দীপক মনে হচ্ছে। সম্ভব হলে যোগাড় করে পড়ার চেষ্টা করব।
@ভবঘুরে,
বইটা যোগাড় করার চেষ্টা করবেন জেনে খুশী হলাম। ধন্যবাদ।
অভিনন্দন আপনাকে।
বইয়ের সূচিপত্র বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। আর, সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেখে নিবন্ধগুলোর প্যাটার্ন কিছুটা অনুমান করে নিতে পারছি। আশা করছি ভবিষ্যতে বইটি পড়বার সুযোগ হবে এবং এটি প্রকৃত অর্থেই একটি ব্যতিক্রম সংযোজনী হবে।
মেলায় আসার পর বইটি সম্পর্কে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া আমাদের সাথে শেয়ার করবেন বলেও আশা রাখছি। আবারো অভিনন্দন। (F)
@মইনুল রাজু,
অভিনন্দন জানানোর জন্যে ধন্যবাদ।