[স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে আমার পুরনো। লেখাটা প্রায় সমাপ্ত করে মুক্তমনায় দেয়ার সময় নজরে আসলো বিপ্লব পালের বিবেকানন্দ নিয়ে চমৎকার লেখাটি। ভাবছিলাম এখন আর লেখাটা না দেই। কিন্তু বিবেকানন্দকে নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছেই, তখন ভাবলাম আমার নিজস্ব মতামতটিও আলোচনার জন্য দেয়া যাক। আর তাছাড়া বিপ্লবও অনুরোধ করেছে লেখাটি দিতে। তাই অগত্যা দিয়েই দিলাম। লেখাটি পাঠকদের ভাল লাগলে কিংবা কিছুটা চিন্তার উদ্রেগ করলেই আমি খুশি।]
:line:
স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে হিন্দুরা খুব আপ্লুত থাকেন। মুক্তমনা দাবীদার এক হিন্দু ব্লগার এসেছিলেন কিছুদিনের জন্য মুক্তমনায়, এমনিতে ইসলামের দোষত্রুটি ভালই দেখতে পেতেন, কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের বেলায় আবেগটাই বড় হয়ে দেখা দিত। একবার স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত এক প্রবন্ধ লিখে বসলেন। এ ধরনের লেখা যা হয় আরকি – ভাল ভাল কথা সাজিয়ে চরণামৃত পরিবেশন। শুধু হিন্দুরা নয়, এমনকি যারা অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনা বলে পরিচিত মুসলিম আছেন, তারাও বিবেকানন্দকে নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত থাকেন। যেমন, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর কথা বলা যায়। তিনি সারা জীবনই অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার মানুষ ছিলেন। দেশ বিদেশের খোঁজ-খবর রাখা পণ্ডিত মানুষ ছিলেন তিনি। তিনিও বিবেকানন্দকে নিয়ে খুব উঁচু ধারনা পোষণ করতেন। তিনি তাঁকে নিয়ে একটি লেখাও লিখেছিলেন মুক্তান্বেষা পত্রিকায় (২য় বর্ষ, ২য় সংখ্যা), শিরোনাম ছিলো – স্বামী বিবেকানন্দ অফুরন্ত প্রেরণার উৎস।
এ ধরণের লেখায় যে আমার বড় একটা আপত্তি আছে তা নয়। তবে এই চরণামৃত লেখাগুলোর দুর্বলতা হল, এতে থাকে গভীর বিশ্লেষণের অভাব। তাহলে কী থাকে এ ধরনের সপ্রশংস লেখাগুলোতে? থাকে বিবেকানন্দ কত মহান ছিলেন, কত বড় সাধক ছিলেন, কত বড় তার দেশপ্রেম ছিল, জীবে তার কত দয়া ছিলো, সামাজিক কুসংস্কার দূর করাতে তার কত আগ্রহ ছিলো, জাতিভেদ বাল্যবিবাহ, সতীদাহ দূর করার জন্য সাধারণ মানুষের জন্য কত কাজ করেছেন, ইংরেজদের বিরুদ্ধে কত আগুন ঝরা বক্তৃতা দিয়েছেন ইত্যাদি। এ লেখাগুলোতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিবেকানন্দের বলা বহু ব্যবহারে জীর্ণ কিছু বাণীকে সামনে নিয়ে আসা হয় –
- জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
- খালি পেটে ধর্ম হয় না, ক্ষুধার্ত জনগণকে ধর্ম উপদেশ দেয়া অবমাননাকর।
- হে ভারত ভুলিও না মেথর, মুচি চণ্ডাল তোমার ভাই…
- ব্রিটিশ সভ্যতা তিনটি ব এর সমষ্টি – বাইবেল, বেয়নেট ও ব্র্যাণ্ডি।
- আমি সন্ন্যাসী, তাই জগতে নিজেকে প্রভু নয়, দাস বলেই মনে করি।
ইত্যাদি।
এ কথাগুলো শুনতে ভালই লাগে। মনে হয় কত মহৎ সব কথা। কিন্তু বার বার বহুভাবে চর্চিত বাণীগুলোর পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিবেকানন্দকে জানার জন্য তার রচনাবলীর দিকে সংশয়ী দৃষ্টি দিলেই জাগবে চোখ ধাঁধানো বিভ্রম। দেখা যাবে উপরে যে ভাল ভাল কথামালার লিস্টি ঝোলানো হয়েছে, প্রতিটি বানীরই ঠিক একশত আশি ডিগ্রী বিপরীত কথা আবার তিনিই বলে গেছেন। এক দিকে জীবপ্রেমের গান শুনাচ্ছেন তো অন্যদিকে নিজেই বরাহনগর মঠে পশুবলি প্রবর্তন করেছেন। একদিকে চণ্ডালদের ভাই বলে সম্বোধন করেছেন তো অন্যদিকে আবার বলছেন, ‘ভারতে ব্রাহ্মনেরাই চরম আদর্শ’। একদিকে বাল্য বিবাহকে খারাপ বলছেন তো পর-মুহূর্তেই আবার বলছেন, ‘বাল্য বিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করেছে’। একবার কুসংস্কার দূর করার জিকির তুলছেন তো একই মুখে আবার জন্মান্তর, আত্মা আর জাতিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে সাফাই গাইছেন। একবার নিজেকে সন্ন্যাসী বলে জাহির করেছেন তো আরেকবার ভোগ, বিলাস ব্যসনে আর রাজ রাজাদের গৃহে গিয়ে উদরপূর্তিতে অফুরন্ত সময় ব্যয় করেছেন। কিন্তু ভক্তকুলের নিবিষ্ট প্রচেষ্টায় সেই বিপরীত কথাগুলো কিংবা তার স্ববিরোধী কাজগুলোকে সযত্নে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। ভক্তকুলের অহর্নিশি স্তব, ফুল চন্দন আর নানাবিধ প্রশংসায় বিবেকানন্দ এখন পরিণত হয়েছেন ‘যুগ নায়ক’-এ, ‘অফুরন্ত প্রেরণার উৎসে’ । কিন্তু যুগ-নায়কের হলুদ গৈরিক বসনের লেবাস একটু ঠ্যালা মেরে সরিয়ে দিলেই বের হয়ে পড়ে নানাধরনের ভণ্ডামি আর স্ববিরোধিতার নগ্ন-রূপ। বেরিয়ে পড়ে চালেডালে মেলানো মেশানো অদ্ভুত খিচুড়ি বিবেকানন্দের আসল স্বাদটুকু। কিন্তু এই খিচুড়ির পূর্ণাংগ রসালো স্বাদ পেতে চাইলে বিবেকানন্দকে খণ্ডিত-ভাবে না জেনে সামগ্রিকভাবে জানতে হবে, আগাগোড়া পড়তে হবে তার ‘বাণী ও রচনা’, ‘পত্রাবলী’, নিবেদিতার লেখা ‘স্বামীজীকে যেরূপ দেখিয়াছি’, শঙ্করীপ্রসাদ বসুর লেখা ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ প্রভৃতি বইগুলো। যারা স্তবের আলো থেকে সরে নির্মোহ ভাবে বিবেকানন্দকে জানতে চান, তারা সংগ্রহে রাখতে পারেন নিরঞ্জন ধরের লেখা ‘বিবেকানন্দ : অন্য চোখে’ (উৎস মানুষ সংকলন) বইটি কিংবা রাজেশ দত্ত সম্পাদিত ‘রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ : মুক্তমনের আলোয়’ (র্যাডিকাল প্রকাশনী, কলকাতা) বই দুটো। গোলাম আহমাদ মোর্তজার লেখা ‘বিভিন্ন চোখে স্বামী বিবেকানন্দ’ (বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন) এবং প্রবীর ঘোষের অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড, দ্বে’জ প্রকাশনী) বইটিতেও অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য পাওয়া যাবে।
‘জীবে প্রেম করে যেই জন’ বনাম পশুবলি
বিবেকানন্দকে নিয়ে আমার খটকার সূচনাটা হয়েছিলো প্রবীর ঘোষের অলৌকিক নয় লৌকিক বইটির (প্রথম পর্ব) মাধ্যমেই। একটি বই মানুষের জীবনকে কতভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তার সার্থক উদাহরণ ছিল আমার জীবনে এই বইটি। ছেলেবেলায় এই বইটি পড়া না হয়ে উঠলে আমি এই আজকের আমি হয়ে উঠতাম কীনা তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে আমার। অলৌকিকতা, পারলৌকিকতা আর যাবতীয় ভাঁওতাবাজির গোমড় ফাঁস করার ব্যাপারগুলো তো আছেই, সেই সাথে প্রবীর ঘোষ আরেকটা বড় ব্যাপার করেছিলেন এ বইটির মাধ্যমে। মহাপুরুষ কিংবা মহামানব বলে কথিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গের নানা কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার দিক সামনে নিয়ে এসেছিলেন, ভেঙ্গে ফেলেছিলেন সেই চিরন্তন মিথটি – মহাপুরুষ হলেই তাকে দেবতা বানিয়ে একেবারে মাথায় করে রাখতে হবে! প্রবীর ঘোষের ‘মিথ ব্লাস্টার’ তালিকায় ছিলেন রামকৃষ্ণ, ঋষি অরবিন্দ, সত্যেন বোস, অনুকূল চন্দ্র, গান্ধী সহ অনেকেরই অতিরঞ্জিত মিথ[1]। স্বামী বিবেকানন্দও ছিলেন তার সমালোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে। যেমন, বিবেকানন্দ রচনাবলী (বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র, অখণ্ড বাংলা সংস্করণ, প্রকাশক নবপত্র, পৃঃ২৬৪ ) থেকে উদ্ধৃত করে প্রবীর ঘোষ দিয়েছেন বিবেকানন্দের অবৈজ্ঞানিক এবং উদ্ভট চিন্তার উদাহরণ – অন্ধকার ঘরে ইস্পাতের পাতের উপর শক্তি প্রয়োগ করলে নাকি পাতটা চৈতন্য বা মনে রূপান্তরিত হয়ে যায়। প্রবীর ঘোষ লিখেছেন [2]–
“একটি ইস্পাতের পাত গড়ে, তাকে কম্পিত করতে পারে এ রকম একটা শক্তি এতে প্রয়োগ কর। তারপর কি ঘটবে? যদি একটি অন্ধকার ঘরে এই পরীক্ষাটি করা হয়, তবে তুমি প্রথমে শুনতে পাবে একটি শব্দ – একটি গুন গুন শব্দ। শক্তিপ্রবাহ বর্ধিত কর, দেখবে ইস্পাতের পাতটি আলোকময় হয়ে উঠছে। শক্তি আরো বাড়িয়ে দাও, ইস্পাতটি একেবারে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ইস্পাতটি মনে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।”
কি, এই কথাগুলো মেনে নিতে পারছেন না? একটা ইস্পাতের পাত নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেই তো পারেন। মনে রূপান্তরিত হয়েছে কিনা কি করে বুঝবেন? কেন ই.সি.জি মেশিনের সাহায্যে।
পরীক্ষায় ইস্পাতের পাতটি আলোকময় হচ্ছে না? অদৃশ্য হচ্ছে না? উল্টো-পাল্টা বিজ্ঞানবিরোধী আষাঢ়ে গল্প ফেঁদেছি বলছেন? আমাকে এর জন্য ধিক্কার দেবেন নাকি? একটু থামুন। শুনুন, এমন একটা তথ্যের বা তত্ত্বের জন্য প্রশংসা বা নিন্দা কোন কিছুই আমার প্রাপ্য নয়, প্রাপ্য বিবেকানন্দের। বিবেকানন্দ রচনাসমগ্রের উল্লেখিত বইটির ২৬৪ পৃষ্ঠায় বিবেকানন্দের বক্তব্য হিসেবেই এমন উদ্ভট কথা লেখা হয়েছে।
সেই থেকে শুরু। প্রথমে ভেবেছিলাম স্বামীজী বিজ্ঞান হয়তো ভাল জানতেন না, তাই দু-এক জায়গায় হয়তো উল্টো-পাল্টা কিছু লিখেছেন। সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোতে নিশ্চয় এমনতর গুবলেট করেননি। তারপরও এক ধরণের সংশয়ী মন নিয়েই বিবেকানন্দ পড়া এবং জানার চেষ্টা করলাম। প্রথমে পড়লাম বিবেকানন্দ সমগ্র, এরপরে পড়লাম আরো আনুষঙ্গিক বইপত্র। এই অযাচিত আগ্রহ আর বেত্তমিজির ফল খুব একটা সুখপ্রদ হল না; যা বেড়িয়ে এলো তা রীতিমত চমক! স্তব আর মোহের স্তর সরিয়ে যে বিবেকানন্দকে আমি খুঁজে পেলাম, তিনি আগা-পাশ-তলা আদ্যোপান্ত এক স্ববিরোধী বিবেকানন্দ। এ নিয়ে আগে কারো কারো সাথে বিতর্ক করতে গিয়ে মন্তব্য আকারে কিছু লিখেছিলাম (যেমন এখানে কিংবা এখানে), তবে পূর্ণাঙ্গ আকারে বাংলায় কিছু লেখা হয়নি। আমার আজকের এই প্রবন্ধে খণ্ডিত নয়, পূর্নাঙ্গ ভাবে স্বামী বিবেকানন্দকে দেখবার একটি প্রচেষ্টা নেয়া হল।
জীব প্রেম নিয়ে স্বামীজীর অমিয় বাণীটির কথা আমরা সবাই জানি। স্বামীজী বলেছেন –
বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর
জীবে প্রেম করে যেই জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর।
ভাল কথা। কিন্তু আমি ইতিহাস ঘেঁটে দেখলাম, এই বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ‘বরাহনগর মঠে’র প্রতিষ্ঠার পরে সেখানে মহা উৎসাহে পশুবলি পবর্তন করেছিলেন। অধিকাংশ গুরুভাইদের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সর্বদাই দেবী পূজায় পশুবলির ব্যবস্থা রাখতেন। এমনকি বেলুড়মঠের দুর্গাপূজাতেও তিনি পাঁঠাবলি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার গুরু রামকৃষ্ণের স্ত্রী সারদা দেবী আপত্তি করলে তিনি তা করতে পারেননি[3]। কিন্তু বেলুড় মঠে করতে না পারলেও কালিঘাট থেকে বলি দিয়ে পাঁঠা নিয়ে এসে ভোজনের আয়োজন করতেন। পরবর্তী জীবনে আমরা আরো দেখি তার ইংরেজ শিষ্য নিবেদিতাকে দিয়ে বিভিন্ন জনসভায় পশুবলির সমর্থনে বক্তৃতার ব্যবস্থা করেছিলেন[4]। বিবেকানন্দের জীবপ্রেমের কি অত্যাশ্চর্য নমুনা! একজন বেদান্তবাদী সন্ন্যাসী হিসেবে সমগ্র জীবজগতকে ভালবাসার উপদেশের সাথে পশুবলি একেবারে অসঙ্গতিহীন, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে। শুধু তাই নয়, বিবেকানন্দ বললেন[5] –
আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।
অর্থাৎ কল্পিত ভগবানকে পাওয়ার জন্য দরকার হলে মানুষকে পর্যন্ত বিবেকানন্দ বলি দেবেন! এই না হলে ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’।
বিবেকানন্দের নারী ভাবনা : বিধবা-বিয়ে বিরোধিতা এবং বাল্য বিবাহ আর সহমরণ সমর্থন
বাল্যবিবাহ নিয়ে বিবেকানন্দের দড়ি টানাটানির নমুনা আরো এককাঠি মজাদার। বিবেকানন্দের একটি উক্তিকে খুব বড়াই করে সামনে নিয়ে আসেন বিবেকানন্দ ভক্তরা[6] – ” বাল্যবিবাহের উপর আমার প্রবল ঘৃণা।”
এমনকি বিবেকানন্দ এও বলেছেন[7], “বাল্যবিবাহ দেয় এমন মানুষকে খুন পর্যন্ত করতে পারি”।
অথচ, সেই বিবেকানন্দই আবার আরেক জায়গায় গণেশ উল্টিয়ে দিয়ে বলেছেন[8]–
‘বাল্যবিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করিয়াছে’।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন বিধবা বিয়ে দিয়ে হিন্দুদের কুসংস্কার দূর করাতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন, তখন বিবেকানন্দ শোনাচ্ছেন অন্য কথা, অন্য গান[9] -‘ বিধবাদের পুনর্বিবাহ দিলে কুমারী মেয়েদের ভাগ্যে স্বামী কম পড়ে যাবে’, এবং ‘বিধবাগনের স্বামী সংখ্যার উপর কোন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না’; এবং এও বলেছেন, ‘বিধবাবিবাহ আন্দোলনে শতকরা সত্তর জন ভারতীয় নারীর কোন স্বার্থই নাই’।
এ জায়গায় পাশ্চাত্য মেয়েদের প্রশংসা করে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলছেন[10],
‘এ দেশের (আমেরিকা) স্ত্রীদের মত স্ত্রী কোথাও দেখিনি … এরা কেমন স্বাধীন। এদের মেয়েরা কি পবিত্র। ২৫-৩০ বছরের কমে কারুর বিয়ে হয় না। আর আমরা কি করি? আমার মেয়ের ১১ বৎসরে ‘বে’ না হলে খারাপ হয়ে যাবে! আমরা কি মানুষ?’
আবার পরক্ষণেই ভারতীয় মেয়েদের আকাশে তুলে আর পাশ্চাত্যের মেয়েদের যা-তা বিশেষণে বিশেষিত করে লিখেছেন[11],
ওদেশে (পাশ্চাত্যে) মেয়েদের দেখে আমার অনেক সময় স্ত্রীলোক বলেই বোধ হত না – ঠিক যেন পুরুষ মানুষ। গাড়ী চালাচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে, প্রফেসরি করছে। একমাত্র ভারতবর্ষেই মেয়েদের লজ্জা, বিনয় প্রভৃতি দেখে চক্ষু জুড়ায়।
বাল্যবিবাহ যে আসলে ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘কত ভাল’, তা আমরা প্রত্যক্ষ করি বিবেকানন্দের নানা কুসংসারাচ্ছন্ন উক্তিতে, যেখানে তিনি বলছেন ‘প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হইবার পূর্বে বাল্যকালে’ বিয়ে দেয়া ভাল হবে, নইলে হবে ঘোর ‘অনর্থ’ [12] –
কখনো কখনো শিশু বয়সেই আমাদিগকে বিবাহ দেওয়া হয়, কেননা বর্ণের নির্দেশ। মতামতের অপেক্ষা না রাখিয়াই যদি বিবাহের ব্যবস্থা করিতে, তবে প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ দেয়া ভাল। যদি অল্প বয়সে বিবাহ না দিয়া ছেলেমেয়েদের স্বাধীনভাবে বাড়িতে দেয়া হয়, তবে তাহার এমন কাহারো প্রতি আসক্ত হইতে পারে, যাহাদের সহিত বিবাহ বর্ণ অনুমোদন করিবেন না। সুতরাং তাহাতে অনর্থের সৃষ্টি হইতে পারে। সুতরাং বাল্যকালে বিবাহ হইলে, বালক-বালিকার ভালবাসা রূপ-গুণের উপর নির্ভর না করিয়া স্বাভাবিক হইবে।
‘প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে’ বিয়ে দেয়ার পরামর্শটা বিবেকানন্দের কোন হাল্কাচালে করা আপ্তবাক্য ছিলো না, ছিল চিন্তাশীল বাক্যই। আসলে মানুষের স্বাভাবিক প্রেম ভালবাসা নিয়ে তিনি ছিলেন অতিমাত্রায় শুচিবায়ুগ্রস্ত। তিনি মনে করতেন ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কেউ বিয়ে করলে তার সন্তান নাকি হবে আসুরিক বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন। তিনি বলেছেন[13],
“যদি কাউকে ইচ্ছেমত পতি বা পত্নীরূপে গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া যায়, যদি ব্যক্তিগত সুখ এবং পাশবপ্রবৃত্তির পরিতৃপ্তির চেষ্টা সমাজে বিস্তার লাভ করে, তার ফল নিশ্চয় অশুভ হবে- দুষ্টপ্রকৃতি, অসুর ভাবের সন্তান জন্মাবে।”
কাজেই যে স্বাধীনচেতা ছেলে মেয়েরা ইচ্ছেমত প্রেম ভালবাসা আর ডেট-এর মাধ্যমে প্রণয় কিংবা বিয়ের জন্য সঙ্গি খুঁজে নিচ্ছেন, তাঁদের এখন থেকেই আসুরিক সন্তানের আশঙ্কায় অপকর্ম থেকে নিবৃত হওয়া উচিৎ, কী বলেন।
আসলে প্রেম ভালবাসা বিয়ে প্রভৃতি নিয়ে কোন যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেকানন্দের মধ্যে কখনোই গড়ে উঠেনি। তিনি নিজে ছিলেন চিরকুমার, আজীবন বিয়ে-থা করেননি। নিজে তো বিয়ে করেননিই, অন্যদের বিয়ে করতে দেখলেও তার মেজাজ বিগড়ে যেত। এমনকি নিজের ভাই মহেন্দ্রনাথের বিয়ের যখন কথা চলছিল, তিনি এমন রেগে গিয়েছিলেন যে, বলেছিলেন তার সাথে কোন সংশ্রব রাখবেন না। তার উক্তিতেই[14] –
“এ বিষয়ে আমার একটিমাত্র সিদ্ধান্ত থাকিতে পারে – নিন্দা! বালক-বালিকা-যাহারাই হউক না কেন, আমি বিবাহের নাম পর্যন্ত ঘৃণা করি। তুমি কি বলিতে চাও আমি, আমি একজনের বন্ধনে সহায়তা করিব? কি আহাম্মক তুমি! যদি আমার ভাই মহিন (মহেন্দ্রনাথ) আজ বিয়ে করে, আমি তার সাথে কোন সংস্রব রাখব না। এ বিষয়ে আমি স্থির সংকল্প। ”
আরেকবার বিবাহোন্মুখ মাদ্রাজীদের সম্পর্কে অযথাই ‘যোনিকীট’ হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন, আর তাঁদের বিয়েকে তুলনা করেছিলেন বেশ্যালয়ে গমনের সাথে এভাবে[15] –
“মাদ্রাজীরা অপেক্ষাকৃত চটপটে ও দৃঢ়তা সহকারে একটা বিষয়ে লাগিয়া থাকিতে পারে বটে। কিন্তু হতভাগাগুলো সকলেই বিবাহিত। বিবাহ! বিবাহ! বিবাহ! পাষণ্ডেরা যেন ঐ একটা কামেন্দ্রিয় লইয়া জন্মাইয়াছে – যোনিকীট – এদিকে আবার নিজেদের ধার্মিক এবং সনাতন পন্থাবলম্বী বলিয়া পরিচয়টুকু দেয়া আছে। অনাসক্ত গৃহস্থ হওয়া অটি উত্তম কথা, কিন্তু উহার ততটা প্রয়োজন নাই, চাই এখন অবিবাহিত জীবন! যাক, বলাই! বেশ্যালয়ে গমন করিলে লোকের মনে ইন্দ্রিয়াসক্তির যতটা বন্ধন উপস্থিত হয়, আজকালকার বিবাহ প্রথায় ছেলেদের ঐ বিষয়ে প্রায় তদ্রূপ বন্ধনই উপস্থিত হয়। এ আমি বড় শক্ত কথা বলিলাম।”
প্রেম ভালবাসা বিয়ে নিয়ে বিবেকানন্দের এই বিকৃত মনোভাবের কারণ যে কী এ নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। আমার ধারণা এর পেছনে তার গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের প্রলাপের কিছুটা হলেও প্রভাব আছে। শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন এক অশিক্ষিত, মূলতঃ মানসিক বিকারগ্রস্ত এক সাধক, যাকে নিয়ে ভারতবাসীরা এখনো যার পর নাই গর্বিত। এই প্রায়-অর্ধোন্মাদ সাধক বলতেন তিনি সাধনায় মা কালীর সাথে এক্কা দোক্কা খেলেন; সাধনা করতে করতে প্রায়ই মূর্ছা যেতেন তিনি। আজকের দিন হলে তাকে মনোবিজ্ঞানীদের কাছে পাঠিয়ে হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা করা হত নিঃসন্দেহে। তার আধ্যাত্মিকতা কিংবা অসুস্থতা – কোনটা নিয়েই আমার অবশ্য কোন আগ্রহ নেই। আমার ভাবনা অন্য জায়গায়। নারী সম্পর্কে তার মনোভাব ছিলো খুবই সনাতন। নারীকে তিনি মনে করতেন ‘নরকের দ্বার’[16] –
‘কামিনী নরকস্য দ্বারম্। যত লোক স্ত্রী লোকের বশ’।
নারী সম্বন্ধে সাধক শ্রীরামকৃষ্ণের আরো কিছু ‘কথামৃত’ শ্রবণ করা যাক[17] –
- মেয়ে মানুষের কাছে খুব সাবধান হ’তে হয়। মেয়ে ত্রিভুবন দিলে খেয়ে।
- আমি মেয়ে বড় ভয় করি। দেখি যেন বাঘিনী খেতে আসছে। আর অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ, ছিদ্র সব খুব বড় বড় দেখি! সব রাক্ষসীর মত দেখি।
- মেয়ে মানুষের শরীরে কি আছে – রক্ত, মাংস, চর্বি, নাড়ীভুঁড়ি, কৃমি, মূত্র, বিষ্ঠা এই সব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন?
- দেখ না, মেয়ে মানুষের কি মোহিনী শক্তি, অবিদ্যারূপিনী মেয়েদের! পুরুষগুলোকে যেন বোকা অপদার্থ করে রেখে দেয়। যখনই দেখি স্ত্রী-পুরুষ এক সঙ্গে ব’সে আছে, তখন বলি, আহা! এরা গেছে।
- হাজার ভক্ত হলেও মেয়েমানুষকে বেশীক্ষণ কাছে বসতে দেই না। একটু পরে হয় বলি – ‘ঠাকুর দেখো গে যাও’; তাতেও যদি না উঠে, তামাক খাবার নাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।
- যদি স্ত্রীলোক ভক্তিতে গড়াগড়ি যায়, তবুও তার কাছে যাতায়াত করবে না।
- মেয়ে মানুষের সঙ্গে থাকলেই তাঁদের বশ হয়ে যেতে হয়।
- মেয়ে ভক্তদের গোপাল ভাব- ‘বাৎসল্য ভাব’ বেশি ভাল নয়। ঐ ‘বাৎসল্য’ থেকেই আবার একদিন ‘তাচ্ছল্য’ হয়।
- মেয়ে মানুষের গায়ের হাওয়া লাগাবে না; মোটা কাপড় গায়ে দিয়ে থাকবে, পাছে তাঁদের হাওয়া গায় লাগে।
আমি নিশ্চিত কেউ যদি আজকে এই বাক্যগুলো লিখতেন কিংবা বলতেন তাকে পাগল ঠাউরিয়ে হেমায়েতপুরে পাঠানোর সকল ব্যবস্থা করা হত। অথচ হিন্দু ধর্মের গর্বে গর্বীরা তাঁকে দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ সাধকের সম্মান। অশিক্ষিত এই সাধককে নিয়ে অতি সুশিক্ষিতরাও হয়ে পড়েন হতবিহবল; বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ পরমহংসের বিশাল মর্মরমূর্তি গড়ে চলে ধুম ধারাক্কা পূজা-অর্চনার যাবতীয় আয়োজন।
চিত্র- বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ পরমহংসের মর্মরমূর্তি
রামকৃষ্ণ মনেই করতেন, মেয়েদের লজ্জাই হওয়া উচিৎ একমাত্র ভূষণ। আরো বলতেন, ভাল মেয়ে সেই, যার কাম ক্রোধ ঘুম এসব কম, আর স্নেহ, মায়া লজ্জা এসব বেশি থাকে। একবার শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম গৃহীভক্ত শ্রী মহেন্দ্র গুপ্তের বাড়ির নয়-দশ বছরের দুটি মেয়ে এসে একবার রামকৃষ্ণকে দুটো ভক্তি-গীতি শুনিয়েছিলেন। সেই গান শুনে ঠাকুর বড়ই আনন্দিত হন। তারপর আরেকদিন সেই মেয়ে দুটো কাশীপুর বাগানে ঠাকুরকে গান শোনানোর সময় ভক্তরাও সেটা শুনে ফেলে, আর তাঁদের ডেকে নিয়ে তারাও গান শোনে। তখন শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তোমার মেয়েদের আর গান শিখিও না। যার তার কাছে গাইলে লজ্জা ভেঙ্গে যায়। লজ্জা মেয়েদের বড় দরকার’।
লজ্জা যে মেয়েদের খুবই দরকার, আর গান গাওয়া কিংবা মঞ্চে ওঠা মেয়েদের যে লজ্জা ফজ্জা থাকে না, তারা যে খারাপ মেয়ে – এই মানসিকতা শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভক্তরা আজো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন তাঁদের মননে এবং আচরণে। একটা উদাহরণ দেই। ১৯৯৪ সালের দৈনিক আজকালের একটা খবর থেকে জানা যায়, বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলের বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ‘লোককৃষ্টি’ নামের একটি নাটকের দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েও শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি। কারণ – ঐ দলে কিছু নারী শিল্পী ছিলেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিতর্ক শুরু হলে মিশনের প্রধান জানান[18],
‘রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কোন অনুষ্ঠানে মহিলারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারেন না। ১৮৯৭ সালে স্বামীজি যখন বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তখন থেকেই এই ঐতিহ্য এবং ভাবধারা বহমান। বেলুড় মঠের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং ভাবধারা মেনেই ঐ অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি’।
মিশনের প্রধান ভুল কিছু বলেননি। তিনি নিয়মনিষ্ঠ ভাবে রামকৃষ্ণের সেই ‘নারীরা নরকের দ্বার’ নামক ঐতিহ্যই অনুসরণ করেছেন। আসলে নারীদের নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা আর যৌন-ভীতি ছিলো। তিনি সকল স্ত্রী লোককে নাকি ‘মা হিসেবে’ দেখতেন- এমনকি তার নিজের স্ত্রী সারদা দেবীকেও। বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীকে একটা সময় পরে তিনি ‘ভাই বোনের’ মত থাকার পরামর্শ দিতেন –
‘স্ত্রী লোক কিরূপ জান? যেমন, আচার তেঁতুল। মনে করলে মুখে জল সরে। আচার তেঁতুল সম্মুখে আনতে হয় না। … আপনারা যতদূর পার স্ত্রীলোকের সাথে অনাসক্ত হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে নির্জন স্থানে গিয়ে ঈশ্বরচিন্তা করবে। সেখানে যেন ওরা কেউ না থাকে। ঈশ্বরেতে বিশ্বাস ভক্তি এলে অনেকটা অনাসক্ত হয়ে থাকতে পারবে। দু-একটি ছেলে হলে স্ত্রী-পুরুষ দুইজনে ভাইবোনের মত থাকবে। আর ঈশ্বরকে সর্বদা প্রার্থনা করবে, যাতে ইন্দ্রিয় সুখেতে মন না যায়, ছেলেপুলে আর না হয়’।
নিজের স্ত্রীকে মা ডাকা, বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীদের ভাই-বোনের মত থাকার পরামর্শ দেয়া – এই নির্বোধ পাগলামি মনে হয় কেবল রামকৃষ্ণের পক্ষেই সম্ভব। তার পক্ষেই বলা সম্ভব – ‘যে বীরপুরুষ, সে রমণীর সাথে থাকে, না করে রমণ’। এটা নিঃসন্দেহ যে, রামকৃষ্ণের জীবন-চর্চায় যারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার বাণী অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন, তাঁদের সুস্থ স্বাভাবিক যৌন-জীবন ব্যহত হতে বাধ্য। এর কোন ব্যত্যয় নেই। রামকৃষ্ণের অন্ধ-স্তাবকেরা অবশ্য মিন মিন করে বলার চেষ্টা করেন – ‘আচার-তেঁতুল’ বলে নারীসঙ্গ ত্যাগের ব্যাপারটা কিংবা রমণ না করার মত উক্তিগুলো নাকি কেবল সন্ন্যাসীদের কথা মাথায় রেখে বলেছেন, সংসারী মানুষের জন্য নয়। এটা ভুল ব্যাখ্যা। ‘যে বীরপুরুষ, সে রমণীর সাথে থাকে, না করে রমণ’ – রামকৃষ্ণের এই নির্দেশ কোন সন্ন্যাসীর প্রতি ছিলো না, ছিলো তার অন্যতম গৃহীভক্ত ভবনাথের প্রতি[19]। তার অপর এক গৃহীভক্ত বিনোদকে রামকৃষ্ণ স্ত্রীর সাথে না শুতে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন[20] –‘ দেখো, সঙ্গ হোক, আর না হোক, একসাথে শোয়াও খারাপ। গায়ের ঘর্ষণ, গায়ের গরম’। আজকের দিনের স্বামীরা রামকৃষ্ণের এই উপদেশগুলো মানলে তাঁদের সংসারে কী বিপত্তি নেমে আসবে, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে।
নারীদের নিয়ে নিজের মনেই এক ধরণের যৌন-ভীতি তৈরি করে অস্বাভাবিক উপায়ে কাম জয়ের চেষ্টা সত্ত্বেও রামকৃষ্ণ যে সফল হননি, তা বলাই বাহুল্য। তার স্বীকৃতি মেলে তার নিজের করা উক্তিতেই[21] –
‘ওরে ভগবদ্দর্শন না হলে কাম একেবারে যায় না। তা (ভগবানের দর্শন) হলেও শরীর যতদিন থাকে ততদিন একটু-আধটু থাকে, তবে মাথা তুলতে পারে না। তুই কি মনে করিস, আমারই একেবারে গেছে? একসময় মনে হয়েছিল কামটাকে জয় করেছি। তারপর পঞ্চবটিতে বসে আছি।, আর ওমনি কামের এমন তোড় এলো যে আর যেন সামলাতে পারিনি! তারপর ধুলোয় মুখ ঘষড়ে কাঁদি আর মাকে বলি – মা , বড় অন্যায় করেছি আর কখনো ভাবব না যে কাম জয় করেছি-’
কাম জয়ের চেষ্টায় সফল না হলেও, অস্বাভাবিক উপায়ে কাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার ফলে তার মনে তৈরি হয় নারী আর কাম নিয়ে নানা মানসিক বিকারগ্রস্থতা। এ জন্যই তিনি সারদামনির সাথে কোন সুস্থ যৌনসম্পর্ক কখনোই গড়ে তুলতে পারেননি। দক্ষিণেশ্বরে এ প্রায় ৮ মাস এক শয্যায় শয়ন করার পরেও স্বাভাবিক যৌনসম্পর্ক করতে পারেননি, বরং ‘ঠাকুর শ্রী শ্রী মাতাঠাকুরাণীর অঙ্গ স্পর্শ করতে উদ্যত হইবামাত্র মন কুণ্ঠিত হইয়া সহসা সমাধিপথে এমন বিলীন হইয়া গেল যে, সে রাত্রিতে উহা আর সাধারণ ভাবভূমিতে অবরোহণ করিল না … দেহবোধ বিরহিত ঠাকুরের প্রায় সমস্ত রাত্রি এইকালে সমাধিতে অতিবাহিত হইত’[22]। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান আর মনস্তত্ত্বের নিরিখে বিচার করলে এই যৌন-ভীতি থেকে উদ্গত সমাধিকালকে ‘কনভারশন হিস্টিরিয়া’ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না[23]। যৌনতা সংক্রান্ত মানসিক নানা টানাপোড়নের ফলে তিনি দেহবোধ বিরহিত শারীরিকভাবে অক্ষম এক পুরুষে পরিণত হন, আর তা ঢাকতে নিজের স্ত্রীকে মা ডাকা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভাই-বোনের সম্পর্ক গড়ে তোলা সহ নানা আজগুবি ধ্যান-ধারনার উন্মেষ ঘটান আর তার শিষ্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হন।
যিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে গুরু এবং আদর্শ হিসেবে বরণ করে নিয়েছেন, রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করে গুরুর আদর্শ দিগ্বিদিক ছড়িয়ে দেওয়ার সংকল্প হাতে তুলে নিয়েছেন, সেই বিবেকানন্দ মনে প্রাণে আর কতটুকুই বা ব্যতিক্রম হবেন? তারপরেও বিবেকানন্দ যে নারীদের নিয়ে ভাল কথা বলেননি তা নয়। বিপ্লব পাল সম্প্রতি মুক্তমনায় প্রকাশিত তার একটি লেখায় স্বামী বিবেকানন্দের ইংরেজিতে করা কিছু উদ্ধৃতির উল্লেখ করেছেন[24] –
“The best thermometer to the progress of a nation is its treatment of its women.”
” There is no chance for the welfare of the world unless the condition of women is improved.”
“Woman has suffered for aeons, and that has given her infinite patience and infinite perseverance.”
“The idea of perfect womanhood is perfect independence.”
বিবেকানন্দের বলা এই ‘perfect independence’ যে তিনি নারী স্বাধীনতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব, তা স্পষ্ট করেছেন আরো অনেক উদ্ধৃতিতেই –
‘বিকশিত হবার প্রথম শর্তই হল স্বাধীনতা। এটা খুবই অন্যায়, সহস্রবার অন্যায়, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ এ কথা বলার দুঃসাহস রাখে যে, আমি নারী এবং শিশুর মুক্তিসাধন করব’।
তিনি মেয়েদের শিক্ষিত হবার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, মেয়েদের সমস্যা বিষয়ে বলবার অধিকার পুরুষের নয়, কেবল নারীদের হাতেই সেটা থাকা উচিৎ তার ইঙ্গিত করেও বলেছেন –
‘প্রথমে তোমাদের নারী জাতিকে শিক্ষিত করে তুলে তাদের ব্যাপার তাঁদের উপরেই ছেড়ে দাও; তখন তারাই তোমাদেরকে বলবে তাঁদের জন্য কোন কোন সংস্কার প্রয়োজন। তাদের ব্যাপারে তোমরা মাথা গলাবার কে?’।
এই উক্তিগুলো পড়ে বিবেকানন্দকে খুব প্রগতিশীল, নারী স্বাধীনতার ‘অগ্রদূত’ টাইপ বলে কিছু মনে হতে পারে, কিন্তু সেই ইমেজ পরক্ষণেই ধূলিস্ম্যাৎ হয়ে যায়, যখন আমরা শুনি, বিবেকানন্দই আবার অন্য মুখে বলছেন[25] –
‘হে ভারত ভুলিও না তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী ও দয়মন্তি’।
যে স্বামীজী নারী স্বাধীনতার জন্য এতো অন্তপ্রাণ, তিনিই আবার সীতার মত পতিব্রতা হয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন; সীতা, সাবিত্রী দয়মন্তিদের আদর্শ মেনে চলার জন্য মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি বলছেন[26],
‘আমাদের নারীগণকে আধুনিক-ভাবে গড়িয়া তুলিবার যে সকল চেষ্টা হইতেছে সেইগুলির মধ্যে যদি সীতা-চরিত্রের আদর্শ হইতে ভ্রষ্ট করিবার চেষ্টা থাকে, তবে সেগুলি বিফল হইবে। … ভারতীয় নারীগণকে সীতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া নিজেদের উন্নতি বিধানের চেষ্টা করিতে হইবে। ইহাই একমাত্র উন্নতির পথ’।
সীতার মত পতিব্রতা নারী স্বামিজীর পছন্দ ছিল বলেই কীনা জানিনা, সতীদাহ কিংবা সহমরণের মত ঘৃণ্য প্রথাকেও তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে সমর্থন করেছেন । সতীর আদর্শকে মহান প্রতিপন্ন করতে গিয়ে বলেছেন[27] –
এই আদর্শের চরম অবস্থায় হিন্দু বিধবারা সহমরণে দগ্ধ হতেন।
সহমরণের সমর্থনে তার আরো অনেক সুস্পষ্ট উদ্ধৃতিই হাজির করা যাবে। যেমন[28] –
‘প্রথমে সেই ভাবটাই উস্কে দিয়ে তাঁদের (হিন্দু নারীদের) character form করতে হবে – যাতে তাঁদের বিবাহ হোক বা কুমারী থাকুক, সকল অবস্থাতেই সতীত্বের জন্য প্রাণ দিতে কাতর না হয়। কোন একটা ভাবের জন্য প্রাণ দিতে পারাটা কি কম বীরত্ব?’
স্বামী বিবেকানন্দ যে সহমরণ সমর্থন করতেন, তা ভগ্নি নিবেদিতার ভাষ্যেও স্পষ্ট হয়[29] –
‘জগতের চোখে সহমরণ এত বড় প্রথা কেন – কারণ ওতে ইচ্ছাশক্তির বিকাশ হয়’।
স্বামীজি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগরের বিধবা বিয়ে নিয়েও ছিলেন দারুণ বিরূপ। ১৯০০ সালের ১৮ই জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতের নারীদের নিয়ে তিনি একটি বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি বলেন, যেহেতু পুরুষের চেয়ে নারীরা সংখ্যায় বেশি, সেহেতু বিধবাবিবাহ প্রবর্তিত হলে নাকি ‘কুমারী মেয়েদের স্বামী মিলবে না’।
স্বামীজির এই সারবত্তাহীন বক্তব্য জাকির নায়েকের ‘জোকারি মূলক’ উক্তির সমতুল্য, যেখানে তিনি পুরুষের বহুবিবাহকে বৈধতা দিতে চান পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাধিক্য টেনে এনে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই সত্য নয়। সারা পৃথিবীতে নারী এবং পুরুষের অনুপাত হল ১ :১.০১ । পুরুষেরাই বরং সামান্য হলেও সংখ্যায় অধিক। এমনকি ভারতের ক্ষেত্রেও স্বামীজির বক্তব্য যে অসার তা দৈনিক আজকালে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন ভারতের মানবতাবাদী সমিতির সম্পাদিকা সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৪ সালের ৮ ই এপ্রিল[30] (সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ নির্মোহ চিঠিকে এবং তার পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদী পাঠকদের জবাবকে কেন্দ্র করে দৈনিক আজকাল পত্রিকায় ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছিলো, যেগুলো পরবর্তীতে সংকলিত হয়েছে রাজেশ দত্ত সম্পাদিত ‘রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ : মুক্ত মনের আলোয়’ শীর্ষক গ্রন্থে। উৎসাহী পাঠকেরা পড়ে দেখতে পারেন)-
‘১৯০১ সালের সেন্সাস অনুজায়ই ভারতীয় নারী-পুরুষের অনুপাত হল ৯৭২ : ১০০০। অর্থাৎ, প্রতি একহাজার জন পুরুষ পিছু ৯৭২ জন নারী। সুতরাং স্বামীজি তার স্বমত প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারী পরিসংখ্যানকে শুধু বিকৃত করেননি, বিদ্যাসাগরের মত একজন সমাজ সংস্কারকের জীবনের ‘সর্বপ্রধান সৎকর্ম’কেও অস্বীকার করেছেন’।
আসলে স্বামীজি হিন্দু ধর্মের কোনরূপ সংস্কারের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না, তা সে বিধবাবিবাহ প্রবর্তন হোক কিংবা হোক জাতিভেদ প্রথার বিলোপসাধন। আমরা সেটা আরো ভাল করে বুঝতে পারব এই প্রবন্ধের পরবর্তী ‘সমাজ সংস্কারক নাকি প্রথার অচলায়তনে বন্দি বিবেকানন্দ?’ অংশে। কিন্তু তার আগে সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের ভোগ বিলাস নেয়েও একটু জানা দরকার।
‘সন্ন্যাসী’ বিবেকানন্দের ভোগ বিলাস আর জিহ্বা লাম্পট্য
বিবেকানন্দ সমালোচক যুক্তিবাদী নিরঞ্জন ধর ‘বিবেকানন্দ: অন্য চোখে’ গ্রন্থে বিবেকানন্দের সন্ন্যাস গ্রহণ সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন- ‘বিবেকানন্দ স্বভাব সন্ন্যাসী ছিলেন না, ছিলেন অভাব সন্ন্যাসী’[31]। কথাটা ঠিকই। তার জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি সন্ন্যাস জীবনের মাহাত্ম্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সন্ন্যাসী হননি, তিনি হয়েছিলেন অভাবের তাড়নায়। শ্রীরামকৃষ্ণ একে বলতেন ‘পেট বৈরাগী’। সেজন্যই তার সন্ন্যাস জীবনের লেবাস ভেদ করে মাঝেমধ্যেই উঁকি দিতো উদগ্র লোভাতুর গৃহী রূপটিও। শুধু তার সন্ন্যাস গ্রহণ নয়, পরবর্তী কালে শিকাগো ভ্রমণ সহ যাবতীয় যশ খ্যাতি সবই ছিলো অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য মাথায় রেখে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে শিকাগো ধর্ম মহাসম্মিলনের জন্য তৈরি বিবেকানন্দ এমনি এমনি রেডিমেড পয়দা হয়নি, নরেন্দ্রনাথকে বিবেকানন্দ বানিয়েছিলেন রাজস্থানের খেতরি মহারাজা অজিত সিংহ। সে সময়টা অখ্যাত এই নরেন্দ্রনাথ (বিবেকানন্দের আসল নাম) তখন পরিচিত ছিলেন ‘বিবিদিষানন্দ’ এবং ‘সচ্চিনানন্দ’ নামে। ১৮৯১ সালের জুন মাসে মাউন্ট আবুতে খেতরি রাজার সাথে আলাপ হয় এবং তিনি সেখানে ৬ মাস থেকে যান। খেতরি রাজার কোন পুত্র ছিল না। স্বামীজি ‘হুজুর সাইদাবাদী’ মার্কা কিছু পানি পড়া দিলেন (ডিটেল না হয় নাই বা বললাম) মনে হয় সেখানে, ফলে মহারাজা এক পুত্রসন্তান লাভ করলেন। পুত্র দেখতে শুনতে বিবেকানন্দর মতো হয়েছিলো কীনা তা আমার জানা নেই, কিন্তু ইতিহাস থেকে জানা যায় এর পর থেকেই মহারাজার সাথে বিবেকানন্দের এক ‘স্পেশাল’ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৮৯৩ সালে শিকাগো যাত্রার আগে আবার তিনি সেখানে যান। মহারাজা তাকে ৩০০০ টাকা দেন যাত্রার খরচ বাবদ; শুধু তাই নয় যে পোশাক পরা বিবেকানন্দের ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, সেই পোশাকও তাকে দিয়েছিলেন অজিত সিংহ, দেখিয়ে দেন কিভাবে এই পোশাক পরতে হয়। সেই সাথে তার নতুন নামকরণ করেন ‘বিবেকানন্দ’[32]!
এই অজিত সিং এর সাথে স্বামীজির সম্পর্ক এতোটাই ‘স্পেশাল’ ছিলো যে, সেটাকে বিবেকানন্দ নিজের পরিবারের স্বার্থে কাজে লাগাতেও তিনি দ্বিধা করেননি। প্রথমবার আমেরিকা ভ্রমণের আগে তিনি মা এবং ভাইদের ভরণপোষণের জন্য তিনি মহারাজকে দিয়ে একশত টাকার এক মাসিক ভাতা মঞ্জুর করতে রাজি করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন নরেন্দ্রনাথের মা ভুবনেশ্বরী দেবী বেঁচে ছিলেন) নিয়মিত এই টাকা দিয়ে এসেছেন অজিত সিংহ। শুধু তাই নয় ১৮৯৮ সালে আবার স্বামীজির অনুরোধে মহারাজ স্বামীজির ব্যক্তিগত খরচের জন্য তাঁকে আরো একশ টাকা ভাতা মঞ্জুর করেন।
তিনি বরাবরই এ ধরণের দেশীয় রাজা-মহারাজদের আথিত্য গ্রহণে অতিশয় ঔৎসুক্য দেখিয়েছেন। তিনি সুযোগ পেলেই রাজাদের রাজপ্রাসাদে বাস করতেন, রাজাদের সাথে খানাপিনা করতেন। বিদেশ থেকে ভারতবর্ষে ফিরে আসার পর বিবেকানন্দের সম্মাননার আয়োজন করেন রামনাদের রাজা, মহীশুরের মহারাজা এবং পোরবন্দরের দেওয়ান। ভারত ভ্রমণে বেড়িয়েও তিনি অধিকাংশ সময় রাজ রাজড়াদের বাসস্থানেই উঠতেন। এ প্রসঙ্গে নিরঞ্জন ধর লিখেছেন –
‘… উক্ত রাজ্যসমূহের প্রায় সর্বত্রই বিবেকানন্দ তাঁদের রাজা বা রাজ্যের দেওয়ানদের আতিথ্য নিতেন এবং সেই রাজ্য ছেড়ে যাবার সময় নৃপতি বা দেওয়ানদের আতিথ্য নিতেন এবং সেই রাজ্য ছেড়ে যাবার সময় নৃপতি বা দেওয়ানদের কাছ থেকে পরবর্তী উদ্দিষ্ট শাসক, দেওয়ান বা উচ্চ-কর্মচারীর নামে পরিচয়পত্র নিয়ে যাত্রা করতেন। সন্ন্যাস জীবনের যে সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ, তার সঙ্গে রাজা-গজাদের আতিথ্যের জন্য এতোখানি লালায়িত হওয়ার সামঞ্জস্য পাওয়া দুষ্কর’।
রাজ রাজড়াদের সাথে ‘সন্ন্যাসী’ স্বামীজির অন্তরঙ্গতা স্বামীজীর জীবদ্দশাতেই গৃহী গুরুভাইদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। দেশের বিত্তশালী অংশের সাথে বিবেকানন্দের এতটা মাখামাখি রামকৃষ্ণভক্তরা সুনজরে দেখেনি। তারা মনে করেছিলেন যে, স্বামীজি রামকৃষ্ণের আদর্শ লঙ্ঘন করেছেন। ১৮৯৯ সালে সাধারণ সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহের ব্যাপারটা এতো প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, তারা বেলুড় মঠের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘গরীব রামকৃষ্ণ সভা’ নামে আলাদা সংস্থা সৃষ্টি করে ফেলতে শুরু করেছিলেন। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন গিরীন্দ্র ও হারাধন[33]। তবে শেষ পর্যন্ত নানামুখি মধ্যস্থতায় তাঁদের অসন্তোষ দূর করা হলেও এটি আমাদের কাছে বিবেকানন্দের ভোগবাদী চরিত্রের একটি দৃষ্টান্ত হয়েই রইবে।
স্বামীজির ভোগবাদী চরিত্র বোঝার জন্য একটা নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ বোধ হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না । পুনা থেকে স্বামীজি একবার ভাবনগরের মহারাজার পরিচয়পত্র নিয়ে কোলাহপুরে গিয়েছিলেন এবং কোলাহপুরের রানির প্রাইভেট সেক্রেটারি স্বামীজিকে বেলগাঁওয়ের এক মহারাষ্ট্রীয় ভদ্রলোকের কাছে একটি পরিচয়পত্র দেন। সেই পরিচয়পত্র নিয়ে স্বামীজি একদিন ওই ভদ্রলোকের বাসায় যান। ভদ্রলোকের বাসায় হঠাৎ হাজির হলেন, গল্প গুজব করলেন, তারপর ভুঁড়ি-ভোজ সম্পন্ন করার পরে স্বামীজি আয়েশ করে পান-সুপুরি চেয়ে বসলেন। তারপর চাইলেন দোক্তা। স্বামীজির ব্যাপার-স্যাপার দেখে গৃহকর্তার সুশিক্ষিত পুত্র মন্তব্য করলেন[34] :
‘যে সন্ন্যাসীর এই এই প্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দৈহিক ভোগের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া উচিৎ, তাঁর মুখে এই জাতীয় চাহিদা শুনলে মনে কী ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হয় তা সহজেই অনুমেয়। … সন্ন্যাসী হয়েও তিনি এমন সব জিনিসের জন্য লালায়িত যা শুধু গৃহস্থদের বেলা শোভা পায়’।
খানাপিনা আর ভোগ-বিলাসের দিকে স্বামীজির এই দুর্বলতাগুলো শুধু ভারতে নয়, পশ্চিমেও নানা ভ্রু-কুঞ্চনের কারণ ঘটিয়েছিল। ১৮৯৪ সালে আলা-সিঙ্গাকে বিবেকানন্দ একটি পত্রে লিখেছেন –
‘কিছু একটা করে দেখাও। মাদ্রাজে আমার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করতে না পার তো আমি থাকবো কোথায়?’
আবার আমেরিকায় থাকাকালীন অবস্থায় ইসাবেলকে লিখছেন,
‘গতকাল ১৩ ডলার দিয়ে একটা মীরশ্যাম পাইপ কিনেছি। ফাদার পোপকে যেন আবার বোল না। কোটের দাম পড়বে ৩০ ডলার। আমি তো বেশ ভালই আছি। খাবার দাবার জুটছে, যথেষ্ট টাকা কড়িও। আগামী বক্তৃতাগুলো হয়ে গেলে ব্যাঙ্কে কিছু রাখতে পারব আশা করি’।
শিকাগো মহাসভার পরের দিনগুলোতে পাশ্চাত্যের মহনীয় বিলাস ব্যসনে এতটাই আপ্লুত হয়ে যান যে, তিনি ভারতে ফিরতেও দ্বিধান্বিত ছিলেন। ১৮৯৩ সালে আলা-সিঙ্গাকে লেখেন –
‘ভারতে গিয়ে ফল কি? ভারত আমার আইডিয়া শক্তিশালী করতে পারবে না। আমার আইডিয়ার প্রতি এদেশের (আমেরিকার) মানুষ সহৃদয়।‘
তার বোনকে ১৮৯৬ সালে লেখেন –
‘আমার হৃদয় রয়েছে আমেরিকায়। আমি ভালবাসি ইয়াঙ্কি দেশকে’।
তা ‘ইয়াঙ্কি দেশকে’ তিনি ভালবাসবেন নাইবা কেন, ভারতের হিন্দু ভিখারিরা তো আর তার রোজকার চুরুটের দামও দিতে পারবেন না, সেখানে তিনি পারবেন না ১৩ ডলার দিয়ে মীরশ্যাম পাইপ কিনতে বা ৩০ ডলার দিয়ে কোট কিনতে। বলা বাহুল্য, আজকের দুর্দিনের বাজারেও শিকাগোর কাপড়ের দোকানে সেল দিলে এখনো চল্লিশ ডলারের মধ্যেই থ্রি-পিস স্যুট দিব্বি পাওয়া যায়, সাথে টাই ফ্রি। আর ‘সন্ন্যাসী’ বিবেকানন্দ সে সময়ে বসে একটা পাইপের জন্যই খরচ করছেন ১৩ ডলার, আর একটা কোট কিনেছেন ৩০ দলার দিয়ে।
এমনকি স্বামীজির বেহিসেবী খরচ আর অমিতব্যায়িতা দেখে আমেরিকার বহু ভক্ত তার সান্নিধ্য ত্যাগ করেছিলেন। বিবেকানন্দ স্তাবকদের বদান্যতায় আমরা অবশ্য কেবল আইরিশ নারী মিস মার্গারেট নোবলের নামই জানি, যিনি শিষ্য হিসেবে ভারতে এসে ভগ্নি নিবেদিতা নামে পরিচিত হন। কিন্তু একই সময় আবার অগণিত শিষ্য যে স্বামীজির অসন্ন্যাসীমার্কা কার্যকলাপের পরিচয় পেয়ে তার থেকে দূরে সরে গেছেন সে ব্যাপারটি চেপে যাওয়া হয়েছে নিপুণ কৌশলে। এপ্রসঙ্গে এডওয়ার্ড স্টার্ডির কথা বলা যেতে পারে, যার সাথে স্বামীজির পরিচয় হয়েছিল ইংল্যান্ডে। স্টার্ডি ইংল্যান্ডে স্বামীজির কাজের পরিচালকও নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে তিনি জানালেন যে, স্বামীজি মধ্যে তিনি ‘মহত্তম বন্ধু ও বিশুদ্ধ গুরুর’ সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু পরের বছরের শুরুতেই স্বামীজির স্বরূপ পুরোপুরি বুঝবার পর তার সম্বন্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখি। তিনি স্বামীজির অন্ধভক্ত সিস্টার নিবেদিতাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন –
‘এই দেশে যে সব সন্ন্যাসীর পদার্পণ ঘটেছে তাঁদের বৈরাগ্য সম্পর্কে অনেক কিছু শোনা গেলেও আমি তাঁদের মধ্যে বৈরাগ্যের অতি সামান্য পরিচয়ই পেয়েছি। আমি কোনভাবে আপনার আদর্শকে প্রভাবিত করতে চাই না, তবে স্বীকার করতেই হবে যে, নানাভাবে আমি তার সম্পর্কে নিরাশ হয়েছি’।
আরেকটি চিঠিতে স্টার্ডি বলেন,
‘এই দেশে আমি সন্ন্যাসের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু মুখে যারা এ-বিশয়ে সোচ্চার, তাঁদের ব্যবহারে আমি এর কোন নিদর্শন পাইনি। … আহার ও বাসস্থান নিয়ে তাঁরা সর্বদা অসন্তোষ জানাচ্ছেন। বস্তুত এই সব তথাকথিত সন্ন্যাসীদের পুষতে আমাদের দারিদ্র্য-পীড়িত কেন্দ্রগুলির যে ব্যয় বহন করতে হচ্ছে তা একজন পরিশ্রমী অধ্যক্ষ, তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক কিংবা একজন ডাক্তারের ভরণ-পোষণের ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি, যদিও তারা ত্যাগী বলে নিজেদের জাহির করেন না। … আমি শুধু বলতে চাই যে, আমি কোথাও উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠা দেখার আশা রাখি না, বা দেখতেও চাই না, তবে কোন ছলনা বা মিথ্যাচারকেও স্বীকার করতে রাজি নই। যদি সন্ন্যাসীর মধ্যে আমরা মানসিক সন্তোষ ও স্থৈর্য, সরল পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি না দেখি এবং তার পরিবর্তে যদি তারা শিলং-মূল্যের চুরুট, সর্বোৎকৃষ্ট আহার ও বেশভূষার জন্য কেবলই দাবী জানাতে থাকেন তাহলে তাঁদের স্বরূপ সম্পর্কে আমরা কী ধারণা করতে পারি? আমি শুধু বলতে পারি যে, তাঁদের জীবনে সন্ন্যাসের আদর্শ প্রতিফলিত হয়নি’।
স্টার্ডির এই অভিযোগ নিবেদিতাকে খুব বেকায়দায় ফেলেছিল। তিনি সে সময় আমতা আমতা করে কিছু জবাব দিলেও তার পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব হয়নি যে, রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুরা ‘যথেষ্ট আত্মসংযমী নন’। শুধু স্টার্ডি নয়, স্বামীজির বেহুদা বেপরোয়া খরচ আর ভোগ বিলাস দেখে তিতি বিরক্ত হয়ে স্বামীজির সংস্রব ত্যাগ করেন একদা অনুরক্ত হেনরিয়েটা মুল্যারও। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি ভারতের জনগণের সেবার জন্য স্বামীজিকে যে অর্থ দিয়েছিলেন তা বিবেকানন্দ পারিবারিক প্রয়োজনে এবং বেলুড় মঠে নিজে থাকার জন্য বড় বড় তিনটি আরামপ্রদ ঘর (নিরঞ্জন ধর একে বিবেকানন্দের বাগানবাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেছেন) তৈরিতে ব্যয় করেছেন। লুই বার্কের ‘সেকেন্ড ভিজিট’ গ্রন্থে স্বামীজির ভোগবিলাস এবং জিহ্বা লাম্পট্যের অনেক উদাহরণ সংকলিত হয়েছে [35]।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শিকাগো মহাসভার সম্মিলনের সময় এবং তার পরবর্তী বছরের সময়গুলোতে সমগ্র ভারতবর্ষে চলছিলো ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। ১৮৯৬-৯৭ সালে রাজস্থান, বর্তমান উত্তরপ্রদেশ, বোম্বাই, হায়দ্রাবাদ, মাদ্রাজ বিশেষত মধ্যপ্রদেশে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের সংখ্যা ছিলো ৯৬.৯ লক্ষ এবং দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা ছিলো ৫১.৫ লক্ষ। অথচ ‘জীব-প্রেমিক’ বিবেকানন্দ মধ্যভারতের দুর্ভিক্ষের সময় প্রপীড়িত মানুষের সাহায্যের জন্য একটি কপর্দকও সাহায্য দিতে রাজী হননি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, তিনি কিন্তু স্বদেশ তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে প্রচুর অর্থব্যয় করতে শিষ্যদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন আমেরিকা থেকেই। তখনো দেশে দুর্ভিক্ষ পুরোদমে চলছিলো। অভ্যর্থনা বাদ দিয়ে কিংবা সংক্ষেপিত করে সেই অর্থ তিনি দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং, তার বন্ধু প্রিয়নাথ সিংহ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন[36],
হ্যাঁ, আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে আমায় নিয়ে একটা হৈ চৈ হয়। কি জানিস, একটা হৈ চৈ না হলে তাঁর (ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের) নামে লোক চেতবে কি করে! … তাকে ঠিক জানলে তবে ঠিক মানুষ তৈরি হবে; আর মানুষ তৈরি হলে দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি তাড়ানো কতক্ষণের কথা!
বিবেকানন্দের স্বজাত্যবোধের উৎস কি ভারতীয় জাতীয়তাবাদ নাকি অন্ধ হিন্দুত্ব?
লাগাতার প্রচারণার মাধ্যমে বিবেকানন্দকে খুব ঘটা করে ‘ভারতীয় জাতীয়তাবাদী’ ব্যক্তিত্বে পরিণত করা হয়েছে, তাকে দেয়া হয়েছে ‘দেশ নায়ক’ উপাধি। অথচ বিবেকানন্দের স্বজাত্যবোধের উৎস কখনোই ভারতীয়তা ছিলো না, ছিল হিন্দুত্ব। এ প্রসঙ্গে তার নিজস্ব উক্তিই ছিলো – ‘হিন্দু জাতি সমগ্র জগত জয় করিবে’[37]।
দেশ যখন দুর্ভিক্ষে তোলপাড়, বিবেকানন্দ তখন খেতরির মহারাজার কাছ থেকে প্রভূত অর্থ যোগাড় করে শিকাগো ধর্মসভায় যোগ দেন, এবং সেটাও হিন্দু ধর্ম প্রচারের জন্যই। রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথের’ দেখাদেখি তিনিও মুখে ‘সব ধর্মই সত্য’ টাইপের গৎবাঁধা বুলি মাঝে সাঝে প্রচার করলেও তিনি মূলত বেদান্ত দর্শনকেই মহাসত্য মনে করতেন। তিনি সেজন্যই বলতেন, ‘বেদান্ত – কেবল বেদান্তই সার্বভৌম ধর্ম হতে পারে, আর কোন ধর্মই নয়’[38]। এমনকি জগতের অন্য সব জাতি অপেক্ষা হিন্দুদেরই তিনি অধিক নীতি-পরায়ণ জাতি বলে মনে করতেন[39]।
স্বামীজি ভারতবর্ষ বলতে কেবল হিন্দুদের ভারতবর্ষই বুঝতেন। তিনি যে ভারতবর্ষে কেবল হিন্দুদেরই একাধিপত্য চাইতেন তা মাদ্রাজে তার মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা দেখেই বোঝা যায়। তিনি বলেন[40],
‘আমরা যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করার কথা বলিতেছি উহা অসাম্প্রদায়িক হইবে, উহাতে সকল সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উপাস্য ওঙ্কারেরই কেবল উপাসনা হইবে। যদি কোন সম্প্রদায়ের ওঙ্কারোপসনায় আপত্তি থাকে, তবে তাহার নিজেকে হিন্দু বলিবার অধিকার নাই।‘
এখন বহু জাতি এবং ধর্মের দেশ ভারতে যে ‘ওঙ্কার’ চিহ্ন কখনোই সকলের একমাত্র উপাস্য হতে পারে না, সেটা বিবেকানন্দ বুঝেও না বোঝার ভান করেছেন। তিনি হিন্দুধর্মের ওঙ্কারোপসনাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করে আবার সেটাকে নাম দিয়েছেন ‘অসাম্প্রদায়িক মন্দির’। এই দ্বিচারিতার কোন সীমা-পরিসীমা নেই।
স্বামীজি খেতরির মহারাজের বদান্যতায় শিকাগো মহাসভায় যোগ দেন হিন্দু ‘গৈরিক বসন’ পরে সেটা আমরা আগেই জেনেছি। সেখানে জনৈক ভক্তকে আশা প্রকাশ করে লেখেন, ‘প্রভুর ইচ্ছা হলে এখানে (আমেরিকা) ও ইংল্যাণ্ডে গৈরিক পরিহিত সন্ন্যাসীতে ছেয়ে যাবে’[41]।
কখনো কখনো স্বামীজির হিন্দু ধর্মপ্রেম রূপ নিতো উদগ্র সাম্প্রদায়িকতাতেও। তার বহু উক্তি এবং লেখায় এর প্রতিফলন আছে। হিন্দুদের পরধর্মসহিষ্ণুতার প্রশংসা করেছেন, পাশাপাশি আবার মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের ‘পরধর্মবিদ্বেষী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন[42]। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মকে বিষাক্ত জীবাণুর সাথে তুলনা করে তিনি বলেন[43],
‘পাপ দুষিত খাদ্য ও নানাবিধ অনিয়মের দ্বারা (হিন্দুদের) দেহ পূর্ব হইতেই যদি দুর্বল না হইয়া থাকে, তবে কোন প্রকার জীবাণু মনুষ্যদেহ আক্রমণ করিতে পারে না’।
তিনি প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণকে ‘বেশ্যাবৃত্তির’ সাথে তুলনা করে তিরস্কার করেছেন [44], হিন্দু সমাজত্যাগী মুসলিমদের স্বামীজি ‘দেশের শত্রু’ বলেও চিহ্নিত করেন[45] –
‘কোন লোক হিন্দু সমাজ ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করলে সমাজে শুধু যে একটি লোক কম পড়ে তা নয়। একটি করে শত্রু বৃদ্ধি হয়’।
তিনি হিন্দু সমাজককে মুসলিমদের সম্বন্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন[46], –
এইটি বিশেষভাবে লক্ষ্য করিও যে, মুসলমানগণ যখন ভারতে প্রথম আসে, তখন ভারতে এখনকার অপেক্ষা কত বেশি হিন্দুর বসবাস ছিল, আজ তাহাদের সংখ্যা কত হ্রাস পাইয়াছে।
শুধু ইসলাম বা খ্রিস্টধর্মের উপর ঝাল ঝেড়েই স্বামীজি ক্ষান্ত হননি, হিন্দু ধর্মের যাবতীয় কুসংস্কারের দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন বৌদ্ধধর্মের উপরে। তিনি বলেন[47],
আমাদের সমাজে যে সকল বিশেষ দোষ রহিয়াছে, সেইগুলি বৌদ্ধধর্মজাত। বৌদ্ধধর্মই আমাদিগকে তাহার উত্তরাধিকারস্বরূপ এই অবনতির ভাগী করিয়াছে।
ভারত যে হিন্দু-প্রধান দেশ, এবং দেশটা মূলতঃ সেজন্য হিন্দুদের জন্যই – সেটা সবসময় বিবেকানন্দ মাথায় রাখতে চেয়েছেন। হিন্দু ধর্মের এই জল হাওয়া কারো অপছন্দ হলে তাকে ‘মানে মানে সরে পড়বার’ উপদেশ দিয়ে বিবেকানন্দ বলেন[48],
‘এ দেশে সেই বুড়ো শিব ডমরু বাজাবেন, মা কালি পাঁঠা খাবেন আর কৃষ্ণ বাঁশি বাজাবেন এ দেশে চিরকাল। যদি না পছন্দ হওয়, সরে পড় না কেন’।
সমাজ সংস্কারক নাকি প্রথার অচলায়তনে বন্দি বিবেকানন্দ?
বিবেকানন্দকে সমাজ সংস্কারকের তকমা লাগিয়ে মিডিয়ায় তুলে ধরা হলেও তিনি আসলে যে বিধবা বিবাহের বিরোধিতা করেছিলেন, আর সেই সাথে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, পুরুষের বহুবিবাহ সহ অনেক কুৎসিত প্রথাকে সমর্থন করেছিলেন, তার বেশকিছু দৃষ্টান্ত আমরা উপরে দেখেছি। তিনি প্রথাবিরোধী কেউ ছিলেন না, বরং প্রথার সুচতুর রক্ষক। এটার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রথার অচলায়তনে বন্দি বিবেকানন্দের নিজস্ব স্বীকারোক্তি থেকেই[49] –
‘যতোই বয়োবৃদ্ধি হইতেছে, ততই এই প্রাচীন প্রথাগুলি আমার ভালো বলিয়া মনে হইতেছে’।
তিনি সনাতন হিন্দুধর্মের প্রতি এতোই মোহাবিষ্ট ছিলেন যে, সংস্কারের প্রয়োজনে পাছে ধর্মে আঘাত লাগে, তাই ‘সমাজ সংস্কার ধর্মের কাজ নয়’ বলে নিশ্চেষ্ট থাকতে চেয়েছেন[50]। তার ব্রাহ্মণ শিষ্যদের উপদেশ দিয়েছেন, ‘তুই বামুন, অপর জাতের অন্ন নাই খেলি’[51]।
জাতিভেদ প্রথার সমর্থনে এর চেয়েও স্পষ্ট উক্তি আছে স্বামীজির। তাঁর মতে[52],
‘জাতিভেদ আছে বলেই ত্রিশ কোটি মানুষ এখনো খাবার জন্য এক টুকরো রুটি পাচ্ছে’।
তিনি এও বলেছেন, ‘জাতিপ্রথায় উচ্চতা অর্থ দ্বারা নিরূপিত হয় না’। এমনকি জাতিভেদকে সমাজতন্ত্রের সাথেও তুলনা করে বলেছেন- জাতিপ্রথা এক ধরণের সমাজতন্ত্র, কেননা ‘জাতির মধ্যে প্রত্যেকেই সমান’[53]।
এ প্রসঙ্গে নিরঞ্জন ধর তার ‘বিবেকানন্দ অন্য চোখে’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন –
স্বামীজি কেবল জাতিপ্রথাকে সমর্থন করেই ক্ষান্ত হননি, এমনকি নিম্নবর্ণের হিন্দুদের তিনি তাঁদের বর্তমান হীন সামাজিক অবস্থাকে মেনে নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন, ইন্দুমতী নাম্মি এক পত্রলেখিকাকে তিনি জানাচ্ছেন, ‘ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ‘দেব দেবী’ লিখিবে, বৈশ্য ও শূদ্রেরা ‘দাস’ ও দাসী’। এমনকি বিবেকানন্দ জাতিভেদ প্রথাকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন বলে মনে হয়, কারণ তিনি লিখেছেন, ‘জ্ঞানোন্মেষ হলেও কুমোর কুমোরই থাকবে। ’
সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষা প্রসঙ্গেও আসা যাক। বিবেকানন্দকে পরিচিতি দেয়া হয়েছে অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত তুখোড় ছাত্র এবং পরবর্তীতে বিশাল শিক্ষাবিদ হিসেবেও। কিন্তু তার এন্ট্রান্স, এফএ এবং বিএ পরীক্ষার মার্কশিটের হাল দেখলে কিন্তু তা মনে হবে না। ইংরেজি ভাষায় তিনি আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড জয় করেছেন বলে তার ভক্তরা হৈ-হুল্লোড় করেন, অথচ ইংরেজিতে তাঁর নম্বর এন্ট্রান্সে ছিলো ৪৭, এফএ-তে ৪৬ এবং বিএ-তে ৫৬। অঙ্ক, ইতিহাস প্রভৃতিতেও ফলাফল আশানুরূপ নয়। ত্রিশ চল্লিশ বড়জোর পঞ্চাশের ঘরে পেয়েছেন নম্বর বিষয়গুলোতে। লজিকে তো পেয়েছিলেন মাত্র ১৭।
অবশ্য বিবেকানন্দের মার্কশিটের ব্যাপারটা এখানে উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে জোর করে থাকে খারাপ প্রমাণ করা। কারণ আমরা জানি অনেক খারাপ ছাত্রই পরবর্তী জীবনে পেশাগত সাফল্য পেয়েছেন। আইনস্টাইন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ কিংবা অধুনা বিল গেটস, স্টিভ জবস সহ অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েও কিংবা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না করেও স্ব মহিমায় উজ্জ্বল হয়েছেন নিজের কাজের গুণেই তা আমরা দেখেছি। বিবেকানন্দও কিন্তু তেমনি। তার শিক্ষা জীবন পরবর্তীতে তার কর্মকাণ্ডের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি মোটেই। তিনি তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন নিজ গুণেই। কিন্তু মার্কশিটের ব্যাপারটা উল্লেখ করা হোল এ জন্যই যে ভাবালুতা এড়িয়ে ভাবতে শেখা যে, বিবেকানন্দ কোন উঁচুমানের কৃতবিদ্য ছাত্র ছিলেন না, বরং ছিলেন আর দশজনের মতো অতি সাধারণ মানেরই।
শিক্ষায়তনের মার্কশিটের কথা না হয় বাদ দেই, ভারতবর্ষে যে শিক্ষার উন্নতির চেষ্টার জন্য বিবেকানন্দকে এতো উচ্চাসনে বসানো হয়, সেই শিক্ষা নিয়েই বা তার ভাবনা কেমন ছিলো? বিবেকানন্দ শিক্ষার কথা বলেছিলেন, কিন্তু তার সে শিক্ষার ব্যাপারটা পুরোটাই তার হিন্দু ধর্মকে সামনে রেখে। বেদান্ত আর আনুষঙ্গিক হিন্দুধর্মের জ্ঞান ছাড়া অন্য কোন কিছুর দরকার নেই, সেটা তিনি স্পষ্ট করেছেন এই উদ্ধৃতিতে –
‘যত কম পড়বে তত মঙ্গল। গীতা ও বেদান্তের উপর যে সব ভাল গ্রন্থ আছে সেগুলি পড়। কেবল এগুলি হলেই চলবে।‘
যত কম পড়বে ততই ভাল, কিংবা কেবল হিন্দু বই-পুস্তক ছাড়া অন্য সব কিছু পরিত্যাজ্য, এটা বিবেকানন্দ শিক্ষাদর্শনের সার কথা। তারপরেও বিবেকানন্দের ভক্তরা তার শিক্ষাদর্শন নিয়ে নিদারুণ গর্বিত থাকেন। হ্যাঁ শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে বিবেকানন্দের কিছু ভাল ভাল কথা আছে বটে, কিন্তু এর বিপরীতটাও কম দৃশ্যমান নয়। দুই একটি উদাহরণ দেয়া যাক –
‘বই পড়িয়া আমরা তোতাপাখি হই, বই পড়িয়া কেহ পণ্ডিত হওয় না’[54]।
কিংবা এটি –
‘ধার্মিক হইতে গেলে আপনাদিগকে প্রথমেই গ্রন্থাদি ফেলিয়া দিতে হইবে। বই যত কম পড়েন ততই ভাল[55]।
তবে গ্রন্থ সম্বন্ধে বিবেকানন্দের এই উক্তিটিই ক্লাসিক –
গ্রন্থ দ্বারা জগতে ভাল অপেক্ষা মন্দ অধিক হইয়াছে। এই যে নানা ক্ষতিকর মতবাদ দেখা যায়, সেগুলোর জন্য এই সকল গ্রন্থই দায়ী[56]।
যার বই-পুস্তক গ্রন্থাদির প্রতি এত বিরাগ তাকে কি করে একজন শিক্ষা-সচেতন আদর্শ ব্যক্তি বানিয়ে স্তব করা যায়, তা কোনক্রমেই আমার বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা দীক্ষাকে তিনি ‘কেরানি গড়ার কল’ বলে ব্যঙ্গ করতেন, উচ্চশিক্ষা উঠিয়ে দেয়ার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন,
‘একদিক থেকে দেখলে তদের বড়লাটের উপর কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। High education (উচ্চ শিক্ষা ) তুলে দিচ্ছে বলে দেশটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে।‘
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবি ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির রাজা যেমন বলতেন, ‘জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’ , বিবেকানন্দও একই ধরণের উপদেশ বর্ষণ করেছেন পাশ্চাত্য দেশবাসীদের জন্য[57] –
যতটা জানিলে তোমার পক্ষে কল্যাণ তোমরা তাহা অপেক্ষা বেশি জান – ইহাই তোমাদের মুশকিল।
ব্রিটিশ-বিরোধী বিবেকানন্দ, নাকি ব্রিটিশের একনিষ্ঠ স্তাবক?
স্বামীজির ব্রিটিশ বিরোধিতা নিয়েও প্রচুর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে ভক্তদের তরফ থেকে। তার বহু ভাষণ, বানী উদ্ধৃতি সামনে নিয়ে এসে বিবেকানন্দ ভক্তরা প্রমাণ করতে চান যে, বিবেকানন্দ ইংরেজদের তাড়ানোর জন্য একেবারে যেন ঝাণ্ডা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন! তিনি ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্য তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন, এমনকি বন্ধুক নির্মাতা ম্যাক্সিম হিরণের সঙ্গে নাকি বন্ধুত্ব করেছিলেন। তিনি নাকি মিস ম্যাকলাউডের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশ থেকে অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে এসে সেহ স্বাধীন করার পায়তারা করছিলেন। কিন্তু এ সমস্ত ঘটনা বেশিরভাগই অতিরঞ্জন কিংবা বিবেকানন্দের খণ্ডিত চিত্র। হ্যাঁ বিবেকানন্দের অনেক বানীই আছে যা উপর থেকে দেখলে ‘ব্রিটিশ বিরোধিতার’ মত শোনাবে বটে, কিন্তু একটু গভীরে ঢুকলেই পাওয়া যায় তার চিরন্তন স্ববিরোধী চরিত্রের হদিসটি। যেমন, প্রাসঙ্গিক-ভাবে একটি ঘটনার কথা বলা যায়। শিকাগো মহাসভা থেকে ফেরার পর কলকাতায় এক অভিনন্দন সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন, “ইংরাজদের সম্বন্ধে যে ঘৃণার হৃদয় নিয়ে আমি ইংলণ্ডের মাটিতে পদার্পন করেছিলাম, কোন জাতি সম্বন্ধে তার থেকে অধিক ঘৃণার ভাব লয়ে সে দেশের মাটিতে আর কেউ কখনো নামেনি।” বিবেকানন্দভক্তরা বিবেকানন্দের এই বক্তব্যকে তুলে ধরে প্রমাণ করতে চান এটি তার ইংরেজ-বিরোধিতার নমুনা। কিন্তু আসলে এটা বিবেকানন্দের বক্তব্যের খণ্ডিতাংশ। “কেউ কখনো নামেনি”-র পরের লাইনেই বিবেকানন্দই কিন্তু বলেছিলেন, “এই সভা মঞ্চে যেসব ইংরেজ বন্ধু উপস্থিত আছেন, তারাই সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। কিন্তু যতই আমি তাদের মধ্যে বাস করতে লাগলাম, তাদের জাতীয় জীবনযন্ত্র কিভাবে কাজ করছে দেখতে পেলাম, তাদের সঙ্গে মিশে জানলাম কোথায় রয়েছে তাদের জাতির হৃৎস্পন্দন – ততই আমি তাদের ভালবাসতে লাগলাম। তার ফলে, হে ভাতৃগণ, এখানে এমন কেউ নেই যিনি আমার থেকে ইংরাজদের বেশি ভালবাসেন।”[58]
বিবেকানন্দ তার বহু লেখাতেই ইংরেজদের অভিহিত করেছেন ‘বীরের জাতি’,’ প্রকৃত ক্ষত্রিয়’, ‘অটল ও অকপট’, এবং ‘প্রভু’ হিসেবে [59]। কীভাবে ‘বীর্য, অধ্যবসায় ও সহানুভূতির’ সাথে শাসন করলে ভারতে ‘শতবার’ ইংরেজ শাসন বজায় থাকবে, তার ফিরিস্তি দিয়েছেন[60]। বিবেকানন্দ যে ছিলেন চরম ও পরম ইংরেজভক্ত, সেটা নিজেই লেখায় উল্লেখ করেছেন[61]। ভক্তদের পক্ষ থেকে আজ তাকে অযথা ‘যুগনায়ক’, ‘মহাবিপ্লবী’ প্রভৃতি বানানোর চেষ্টা করা হলেও আসল কথা হল, স্বামীজি কখনোই ইংরেজ শাসনের সংগে প্রত্যক্ষ বিরোধিতায় যেতে চাননি। ব্রিটিশ শাসককে তোষামোদ করতে গিয়ে তিনি পরাধীন ভারতবর্ষকে ভর্ৎসনা করতেও দ্বিধান্বিত হননি। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা সাধারণ মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভকে বাতিল করে, এবং বিদ্রোহীদের ‘ডাকাত’ হিসেবে অভিহিত করে দিয়েছিলেন নিম্নোক্ত মন্তব্য[62] –
“সকল কথার ধুয়ো হচ্ছে – ‘ইংরেজ আমাদের দাও।’ বাপু আর কত দেবে? রেল দিয়াছে, তারের খবর দিয়াছে, রাজ্যে শৃঙ্খলা দিয়াছে, ডাকাতদের তাড়াইয়াছে, বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়াছে। আবার কী দেবে? নিঃস্বার্থভাবে কে কী দেয়? বলি তোরা কী দিয়েছিস?”
এই উক্তি থেকে বোঝা যায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে বিবেকানন্দের কোন স্পষ্ট ধারনা ছিলো না। হ্যাঁ, রেল ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রচলন, ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি ব্রিটিশরা করেছে, কিন্তু এগুলোও তারা করেছে তাদের কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখার প্রয়োজনেই, ভারতের উন্নতি করার মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, যা রবীন্দ্রনাথ বা বিবেকানন্দেরা সে সময় ভাবতেন। ব্রিটিশেরা ভারতে এসে প্রথমেই যেটা করতে সফল হয়েছিল তা হচ্ছে দেশী শিল্পের ধ্বংস সাধন, এবং পাশাপাশি ব্রিটেন থেকে আসা দ্রব্যের একটা বড় সড় বাজার তৈরি। এই প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে ভারতে রেলপথ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সে সময় অনুভব করে ইংরেজরা[63]। ইংল্যান্ড থেকে পাঠানো শিল্পজাত নানা দ্রব্য ভারতের বন্দরগুলো থেকে দেশের অভ্যন্তরে বহন করে নিয়ে যাওয়া, ভারতের কাঁচামাল বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানো, আর তার সাথে চলমান বিদ্রোহ বিপ্লবকে ঠাণ্ডা করে ভারতকে সামরিক শক্তির পদানত রাখার উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ কম সময়ের মধ্যে সৈন্য সামন্ত প্রেরণের সুবিধার জন্য ভারতে রেলপথ স্থাপন খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। এমনকি লর্ড ডালহৌসির ১৮৫৩ সালের প্রতিবেদনেও ব্যাপারটা স্বীকার করে বলা হয়েছিল, রেলওয়ে স্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ভারতকে গ্রেট ব্রিটেনের কাঁচামাল সরবরাহের উৎস এবং অপরদিকে ভারতকে গ্রেট ব্রিটেনের রপ্তানিকৃত শিল্পদ্রব্যের বাজার হিসেবে গড়ে তোলার সুস্পষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে[64]।
শুধু বিবেকানন্দ নন, তার সারা জীবনের অর্থের যোগানদাতা বন্ধু রাজা অজিত সিংহও ছিলেন এক পরম ব্রিটিশ অনুরক্ত শাসক। ১৮৯৭ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালের হীরক জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছিলো। সেই সময় ব্রিটিশ অনুরক্ত নৃপতিরা দলে দলে ভারতবর্ষ থেকে ইংল্যাণ্ডে গিয়ে আনুগত্যের শপথ জানিয়ে এসেছিলেন। বলা নিষ্প্রয়োজন, মহারাজা অজিত সিংহও দলের সাথে মিলে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার স্তব করতে সেখানে গিয়েছিলেন।
স্বামীজি- বহুরূপে সম্মুখে তোমার
আসলে পুরো স্বামীজিই আদ্যোপান্ত স্ববিরোধিতায় পরিপূর্ণ। বিবেকানন্দের যেমন অনেক বিপ্লবী এবং প্রগতিশীল উক্তি আছে, তেমনি আছে বহু কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং গোঁড়া উক্তি-ও। এটা আমার কথা নয়, রামকৃষ্ণ জিবনীকার ক্রিস্টোফার ইশারউডও সেটা স্বীকার করে বলেছেন[65] –
‘স্বামীজি আজ যা বলতেন, পরদিন তার কথার সাথে কোন মিল থাকতো না।‘
‘আজ যা বলতেন, পরদিন তার কথার সাথে কোন মিল থাকতো না’ – দুর্ভাগ্যক্রমে এইটাই স্বামীজির পরিপূর্ণরূপ। সেজন্য সচেতনভাবেই আমি এই প্রবন্ধের নামকরণ করেছি ‘স্ববিরোধী বিবেকানন্দ’। হ্যাঁ, বিবেকানন্দ জনসেবামূলক কাজ করেছেন, জীবপ্রেমের কথা বলেছেন, কিন্তু আবার অন্যমুখে যে পশুবলি দিয়ে উৎসাহিত হয়েছেন, সেটা আমরা প্রবন্ধের প্রথমেই দেখেছি। এমনকি আরেকটু গভীরে ঢুকলে দেখা যাবে, তার জনসেবামুলক কাজগুলোর প্রেরণাও নিঃস্বার্থ ছিলো না। মূলত জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষের মাথার মধ্যে ‘হিন্দুধর্মের বীজ’ বপনই ছিলো তার সেবাপরায়ণতার মূল উদ্দেশ্য। তিনি জনসেবাকে অস্ত্র হিসেবে নিয়েছিলেন দরিদ্র মানুষের মগজ ধোলাই করে বিশ্বাসের কাতারে আনতে, সেটা তার অনেক কাজ এবং উক্তি থেকেই স্পষ্ট হয়। ১৮৯৭ সালে আলমোড়া থেকে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত এক পত্রে স্বামীজি নির্দেশ দেন[66] –
কলিকাতার মিটিং এর খরচা বাদে যা বাঁচে, তা ঐ famine তে পাঠাও বা কলিকাতা, ডোমপারা, হাড়িপারা বা গলিঘুঁজিতে অনেক গরীব আছে, তাঁদের সাহায্য কর… ঐ কাজ, ঐ কাজ। তারপর গলিঘুঁজিতে অনেক গরীব আছে, তাঁদের সাহায্য কর… ঐ কাজ, ঐ কাজ। তারপর লোকের (হিন্দুত্বে) বিশ্বাস হবে, তারপর যা বলবে শুনবে।
স্বামী অখণ্ডানন্দ মহুলাতে যখন গ্রামে গ্রামে গরীব ঘরে চাল বিতরণ করছিলেন, তখন স্বামীজি তার সমালোচনা করে বলেছিলেন – ‘চাল বিতরণে শক্তিখরচ করে কি হবে, যদি কোন প্রচারকার্যই না হয়’[67]।
তিনি একবার ‘প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকা’ নামে পত্রিকা প্রকাশে উদ্যত হন, কারণ, তিনি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের হিন্দু ধর্মের একই ছায়ার নীচে আনতে চেয়েছিলেন। তার নিজের কথাতেই,
‘প্রবুদ্ধ –শব্দটার মধ্যেই (প্র + বুদ্ধ) বুদ্ধের অর্থাৎ গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে ভারত জুড়লে ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ হিন্দু ধর্মের সাথে বৌদ্ধধর্মের সম্মিলন বোঝাতে পারে। ঐ নামটা দিলে তাতে হিন্দুদের মনে কোন আঘাত না দিয়ে বৌদ্ধদেরও আমাদের দিকে আকৃষ্ট করবে’।
তার সামন্ত প্রভুদের স্বার্থ বজায় রাখতে বিবেকানন্দ সবসময় সচেতনভাবেই নানা স্ববিরোধী মন্তব্যের আশ্রয় নিয়েছেন। এর একটি প্রমাণ পাওয়া যায় মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজির জীবনের ঘটনাবলির ২য় খণ্ডে বর্ণিত একটি ঘটনায়। গঙ্গা মহারাজা (স্বামী অখণ্ডানন্দ) তখন নষ্ট স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য খেতরি রাজ্যে গিয়েছিলেন। তখন বিবেকানন্দ তাকে একটি চিঠিতে গরীব এবং নিচু জাতির লোকজনের ঘরে গিয়ে ধর্মোপদেশ দিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু অখণ্ডানন্দ খেতরিতে এসে দেখলেন সেখানে অনেক নীচতলার অধিবাসীরা দাসসুলভ ব্যবহারে অতিষ্ঠ। তিনি তখন গোলাম বলে চিহ্নিত দাসদের দাসত্ব থেকে মুক্তির আন্দোলনে শরিক হয়ে যান। কিন্তু প্রজাপীড়ক রাজা অজিত সিংহও এতে যার পর নাই রুষ্ট হন। ঘটনা কালক্রমে বিবেকানন্দের কানে পৌঁছুলে তিনি অজিত সিংহের পক্ষ নিয়ে গঙ্গাকে ভর্ৎসনা করে বলেন,
‘গঙ্গা সন্ন্যাসী, তারা রাজা, তাঁদের রাজকর্মের পলিটিকসে হাত দিতে গেছলো কেন? এর জন্য তো রাজা অজিত সিং একটু বিরক্ত হয়েছিল’।
তাই একদিকে নিজের ‘প্রগতিশীল’ ইমেজ বজায় রাখতে ‘হে ভারত ভুলিও না…’ ধরণের জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন, তিনি আবার মুখ মুছে উপদেশ দিয়েছেন ‘ধনী-দরিদ্রের বিবাদ যেন বাঁধিয়ে বোস না; ধনীদের আদতে গালমন্দ দেবে না’[68]। ডোম, মেথর, মুচিদের প্রতি কিংবা শূদ্রদের প্রতি তার জ্বালাময়ী ভাষণ, কিংবা তাঁদের প্রতি সহানুভূতিও ছিলো আসলে তার কৌশলগত প্রচারণা। শূদ্র-ভারতের জাগরণের কথা বললেও একই মুখে আবার বলেছেন, ‘ভারতে ব্রাহ্মণই মনুষ্যত্বের চরম আদর্শ’। তিনি এও বলেছেন, ‘ব্রাহ্মণদের মধ্যেই অধিকতর মনুষ্যত্ব-বোধসম্পন্ন মানুষের জন্ম হয়’[69]। শুদ্রদের নিয়ে তার সহানুভূতির খেলা যে কীরকম কৌশলী ছিলো তা বোঝা যায় ১৮৯৫ সালে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রদের সবাইকেই ‘খুশি করে চলার’ উপদেশ দিয়ে পত্রিকার সম্পাদককে বলেন –
‘গত সংখ্যায় ক্ষত্রিয়দের খুব বাড়ানো হয়েছে, পরের সংখ্যায় ব্রাহ্মণদের খুব প্রশংসা কর, তার পরের সংখ্যায় বৈশ্যদের’[70]।
যুগনায়ক, দেশনায়ক কিংবা সন্ন্যাসী কোনটিই নয়, বরং ‘বহুরূপে সম্মুখে’ উঠে আসা এই কৌশলী বিবেকনন্দই ছিলেন প্রকৃত বিবেকানন্দ। তিনি সব ধর্মের সব সম্প্রদায়ের মানুষদের হিন্দু ধর্মের ছায়ার নিচে আনতে ‘যখন যেমন, তখন তেমন নীতি’ অনুসরণ করেছেন, কখনো সেজেছেন প্রগতিশীল, কখনো বা চরম রক্ষণশীলতার মুখোশ ব্যবহার করেছেন। নিজেকে প্রগতিবাদী প্রমাণ করতে কখনো শূদ্রদের নিয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছেন, কখনো বা পশ্চিমা নারীদের স্বাধীনতার জয়গান গেয়েছেন, আবার যখন প্রয়োজন পড়েছে গোঁড়া রক্ষণশীলদের মতোই নারীদের নামে বক্রোক্তি করেছেন কিংবা জাতিভেদকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন। যখন পেরেছেন বিধবা বিয়েতে বাধা দিয়েছেন, এমনকি সমর্থন করেছেন সতীদাহের মত বর্বর প্রথাকেও।
স্বামীজির এই দ্বিচারী মনোভাবকে তুলে ধরার অর্থ এই নয়, তার ভাল ভাল কাজকে অস্বীকার করা। তার অসংখ্য ভাল কাজ আছে বলেই তিনি সমগ্র ভূ-ভারতে একজন আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু আমি চেয়েছি ভক্তদের ভক্তির ভাবালুতায় আপ্লুত হয়ে বিবেকানন্দের চারিদিকে যে স্বর্গীয় জোতির্বলয় (halo) তৈরি করা হয়েছে,তা থেকে স্বামী বিবকানন্দকে বের করে নিয়ে এসে মানুষ বিবেকানন্দকে অনুধাবন করতে। আমরা বরাবরই বলে এসেছি মুক্তমনা হওয়ার অর্থ কেবল ধর্মের সমালোচনা নয়, বরং মহাপুরুষদের অমহাপুরুষসুলভ বিভিন্ন কাজের আলোচনা কিংবা সমালোচনা করাটাও কিন্তু মুক্তমনাদের ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হুমায়ুন আজাদ তার ‘নারী’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের নারী ভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। আহমদ শরীফ তার বইয়ে কাঙ্গাল হরিনাথের উপর ঠাকুর বাড়ির প্রবল আক্রোশের কথা সুনিপুণ শিল্পীর মতো তুলে ধরেছেন। প্রবীর ঘোষ তার অলৌকিক নয়, লৌকিক গ্রন্থে অনুকূল চন্দ্র সহ ভারতবর্ষের সব সম্মানিত পুরুষদের অযৌক্তিক ধ্যান ধারনার উল্লেখ করেছেন। প্রয়াত মুক্তমনা লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন্স তার বইয়ে এবং প্রবন্ধে মাদার তেরেসার অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরেছেন – কিভাবে তেরেসা কালোবাজারির সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন, কিভাবে তিনি দারিদ্র্য নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছেন, কিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ, কণ্ডম ব্যাবহার প্রভৃতিতে বাঁধা দিয়েছেন তেরেসা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে তার যৌক্তিক বিশ্লেষণে। এগুলোতে দোষের কিছু নেই; মহাপুরুষদের পূজার আসনে বসিয়ে নিরন্তর স্তব নয়, বরং তাঁদের কাজের নির্মোহ বিশ্লেষণই কেবল আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সেজন্যই ধর্মীয় সমালোচনার পাশাপাশি মুক্তমনা লেখকেরা আগে রবীন্দ্রনাথ, রোকেয়া, বায়েজিদ বোস্তামী, সম্রাট অশোক সহ অনেকের কাজেরই নির্মোহ বিশ্লেষণ হাজির করেছেন, সেগুলো রাখা আছে আমাদের সাইটের ‘নির্মোহ এবং সংশয়ী দৃষ্টি : মুক্তমনের আলোয়’ বিভাগে। স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনা সেই ধারাতেই নতুন সংযোজনমাত্র।
তথ্যসূত্র :
[1] অপার্থিব ইংরেজীতে একসময় এ প্রসংগগুলো নিয়ে একটি চমৎকার লেখা লিখেছিলেন মুক্তমনায় ‘An Irreverent Look at Some of India’s Most Revered Figures’ শিরোনামে।
[2] প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক, দে’জ পাবলিশিং, একাদশ মূদ্রণ, ১৯৯৮, পৃঃ ২১৭।
[3] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[4] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[5] মহেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজির ঘটনাবলী, প্রথম খণ্ড, পৃঃ ৯৬।
[6] ভারতীয় নারী, উদ্বোধন, পৃষ্ঠা ৯০
[7] গোলাম আহমাদ মোর্তজা, বিভিন্ন চোখে স্বামী বিবেকানন্দ, বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, পৃঃ ১৫৯
[8] স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১২।
[9] স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ১২।
[10] এস মানুষ হও, ষষ্ঠ সংস্করণ, উদ্বোধন, পৃঃ ৮।
[11] স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা, নবম খণ্ড, পৃঃ ১৮।
[12] ভারতীয় নারী, উদ্বোধন, পৃঃ ১৫।
[13] শঙ্করীপ্রসাদ বসু, বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৪
[14] পত্রাবলী, উদ্বোধন, পৃঃ ১৩৫।
[15] সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, বিবেকানন্দ চরিত, উদ্বোধন, পৃঃ ৩০১।
[16] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, শ্রীম কথিত, অখণ্ড সংস্করণ, ১৯৮৬-৮৭।
[17] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, শ্রীম কথিত, অখণ্ড সংস্করণ, উদ্বোধন কার্যালয় থেকে সংগৃগীত; উক্তিগুলো পাওয়া যাবে রাজেশ দত্ত সম্পাদিত ‘রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ: মুক্তমনের আলোয় বইয়েও (র্যাডিক্যাল, ২০০২)।
[18] রাজেশ দত্ত (সম্পাদনা), রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ: মুক্তমনের আলোয়, র্যাডিক্যাল, ২০০২।
[19] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, শ্রীম কথিত, অখণ্ড সংস্করণ, পৃঃ ১৭৮।
[20] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, শ্রীম কথিত, অখণ্ড সংস্করণ, পৃঃ ৩৬০।
[21] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ, গুরুভাব পূর্বার্ধ, প্রথম অধ্যায়, উদ্বোধন, পৃঃ ১৩।
[22] শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ, সাধক ভাব, বিংশ অধ্যায়, উদ্বোধন, পৃঃ ১৭৫।
[23] রাজেশ দত্ত (সম্পাদনা), রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ: মুক্তমনের আলোয়, র্যাডিক্যাল, ২০০২।
[24] বিপ্লব পাল, স্বামী বিবেকানন্দ-একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ, মুক্তমনা।
[25] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[26] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১১৪-১১৫
[27] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩০
[28] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ১০ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯
[29] ভগ্নী নিবেদিতা, স্বামীজিকে যেরূপ দেখিয়াছি, পৃঃ ১৮৩
[30] সুতপা বন্দোপাধ্যায়, গুরুজি ও স্বামীজি, দৈনিক আজকাল, এপ্রিল ৮, ১৯৯৪।
[31] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[32] রোমা রলাঁর মতে বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন বলেই তার নাম রাখা হয় বিবেকানন্দ।
[33] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[34] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[35] Marie Louis Burke, Swami Vivekananda’s second visit to the west, Vedanta Press ।
[36] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[37] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১৩১
[38] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৫৪
[39] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৫৯
[40] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৪
[41] পত্রাবলী, উদ্বোধন, পত্র নং -২৭২, পৃঃ ৪৪৪
[42] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৯
[43] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪৩
[44] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪৩
[45] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৪
[46] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ২৬২
[47] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৮১
[48] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ১১৮
[49] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ২২
[50] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩১
[51] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭
[52] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[53] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
[54] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৮৫
[55] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৯৯
[56] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১০৯
[57] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৪৪
[58] বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২
[59] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩০৭
[60] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৫
[61] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৬
[62] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ২৫৩
[63] সুকোমল সেন, ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস (১৮৩০-২০০০), এনবিএ, ষষ্ঠ মূদ্রণ, ২০০৫
[64] সুকোমল সেন, পূর্বোক্ত।
[65] খ্রিস্টোফার ইশারউড, রামকৃষ্ণ ও তার শিষ্যগণ, পৃঃ ২৭৮
[66] পত্রাবলী, উদ্বোধন, পত্র নং ৩৬৩, পৃঃ ৫৭২
[67] পত্রাবলী, উদ্বোধন, পত্র নং ৩৬৫, পৃঃ ৫৭৫
[68] পত্রাবলী, উদ্বোধন, পত্র নং ৪৭৬, পৃঃ ৯৬
[69] স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৬।
[70] পত্রাবলী, উদ্বোধন, পত্র নং ২৩৯, পৃঃ ৩৯১-৯২
:line:
আপডেট: আমার এই লেখাটির পরে সুমন চৌধুরী (Suman Chowdhury) নামে এক বিবেকানন্দ ভক্ত আমার লেখাটির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ করে সমালোচনা লিখেছিলেন ইংরেজিতে, তার এই লেখার প্রত্যুত্তরে আরেকটি সম্পুরক লেখা লিখেছিলাম, আরো কিছু বাড়তি তথ্য সন্নিবেশিত করে, লেখাটা পড়া যাবে এখান থেকে –
স্ববিরোধী বিবেকানন্দ – কিছু সমালোচনার জবাবে
:line:
৩.”নরেন্দ্রনাথকে বিবেকানন্দ বানিয়েছিলেন রাজস্থানের ক্ষেতরীর মহারাজা “….এই বাক্যটি সত্যের অপলাপ। গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ গত হবার পরে ১৮৮৬ সালে নরেন্দ্রনাথ আরো আট যুবকের সঙ্গে হুগলীর আটপুর গ্রামে সন্নাস গ্রহণ করেন। সন্নাস জীবনে নতুন নাম নেন – বিবেকানন্দ। ১৮৮৮-৯৩ – এই পাঁচ বছর বিবেকানন্দ পরিব্রাজক হয়ে ভারতভূমির পুব পশ্চিম উত্তর দক্ষিন চষে বেড়িয়েছেন, চিনেছেন সত্যিকারের ভারতবর্ষকে।তাই তিনি ভারতবাসীকে ডাক দিয়ে বলেছেন, ” স্বগর্বে বলো – মূর্খ ভারতবাসী,চন্ডাল ভারতবাসী আমার রক্ত আমার ভাই…” এই পরিব্রাজক জীবনের অন্তিম লগ্নে বিবেকানন্দের সঙ্গে আলাপ হয় ক্ষেতরীর মহারাজার।তার উৎসাহ ও অর্থসাহায্যে ১৮৯৩ সালের শিকাগোর বিশ্ব ধর্ম মহাসম্বেলনে যোগ দেবার জন্য অনাহূত হয়ে আমেরিকা যাত্রা করেন। রাজা মহারাজারা বরাবরই মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন।১৮৯৩-৯৭ সময়কালে তিনি আমেরিকা,কানাডা,চীন ও জাপান ভ্রমণ করে ভারতীয় বেদান্ত দর্শনকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরেন।
৪. ” ভোগবিলাসী বিবেকানন্দ ” তে নিবন্ধকার পাইপ,কোট,ডলার ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন ভারতবর্ষে সঙসারত্যাগী সন্ন্যাসীদের শ্মশান থেকে রাজদ্বার সর্বত্রই অবাধ বিচরণ ছিল। বৈদান্তিক সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। নিবন্ধে লেখা হয়েছে ” সন্ন্যাসী মার্কা ছবি” দেখিয়ে নাকি তিনি ” বাঙালি হিন্দুদের মগজ ধোলাই করেছিলেন”।প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন শিকাগোতে কোলকাতার ব্রাম্ভ সমাজের এক প্রতিনিধি ও যোগ দিয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে হিন্দু সমাজের যথোচিত নিন্দেমন্দ করে আসেন। জীবিতকালে বিবেকানন্দের নিন্দুকের অভাব ছিল না।
৫. নিবন্ধকার ” শিকাগো শহরে তার বক্তৃতাটি পড়ে উল্লেখ যোগ্য কিছু ” পাননি। মনে হয় নিবন্ধকার বাঙলা বোঝেন না অথবা ভারতীয় দর্শন-সঙস্কৃতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ।
৬. নিবন্ধকার লিখেছেন, ” বিকৃতমস্তিষ্ক স্বামী বিবেকানন্দ হীরক রাজার মত জ্ঞানার্জন বিরোধী ছিলেন “। এটি লেখকের উর্বর মস্তিষ্কের কষ্টকল্পনা। জাহাজে দেশে ফেরার সময় স্বামীজীর সঙ্গে আলাপ হয় উদ্যোগপতি জামসেদজী টাটার। স্বামীজি টাটাকে পরামর্শ দেন , ” ইউরোপের মতো সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নত করতে হলে ভারতবাসীকে উন্নত মানের বিজ্ঞান গবেষনার গড়ে তুলতে হবে। পরবর্তীতে জামসেদজী ব্যাঙগালুরুতে মাইশোর মহারাজার সাহায্যে ” ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স ” গড়ে তোলেন। এটি বর্তমানে ভারতের প্রথম সারির মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণাগার।
১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ বরানগরে স্থাপন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে বিশ্বে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে ২১৬ টি শাখা।
১) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭-ছবিটির মধ্যে ‘তুই বামুন, অপর জাতের অন্ন নাই খেলি’ উক্তিটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কি?
২) স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ১২ এর ছবিটির মধ্যে ‘বিধবাদের পুনর্বিবাহ দিলে কুমারী মেয়েদের ভাগ্যে স্বামী কম পড়ে যাবে’, এবং ‘বিধবাগনের স্বামী সংখ্যার উপর কোন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না’; এবং এও বলেছেন, ‘বিধবাবিবাহ আন্দোলনে শতকরা সত্তর জন ভারতীয় নারীর কোন স্বার্থই নাই’ – উক্তিগুলি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কি? এই বিষয়ে স্বামীজীর এই উদ্ধৃতিটি যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ-In his book, “On India and Her Problems”,
he wrote: “Remember that the nation lives in the cottages. But, alas, nobody ever did anything for them. Our modern reformers
are very busy about widow-remarriage. Of course, I am a sympathiser in every reform, but the fate of a nation does not depend
upon the number of husbands the widows get, but upon the condition of the masses”. Vivekananda went a step further and said,
“So long as millions live in hunger and ignorance, I hold every man a traitor.”
৩)[স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১০৯] ছবিটিতে কি প্রসঙ্গে স্বামীজী এই উক্তিটি করেছেন সেটা জানবার দরকার তাই গোটা পৃষ্ঠারছবিটি দিলাম। অত্যাশ্চর্যভাবে “বর্তমানকালে গ্রন্থসমূহই সর্বত্র মিথ্যাবাদী সৃষ্টি করিতেছে”-স্বামীজির এই উক্তিটি নক্কারজনক ভাবে উদ্ধৃত করা হয়নি।
৪) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড-এই খন্ডের পৃষ্ঠা ১৩৯ এর পরে ১৪৮ নং পৃষ্ঠা নামাঙ্কিত আছে। সেই অনুযায়ী ১৪৪-১৪৫ পৃষ্ঠা দুটির ছবি দিলাম।‘একদিক থেকে দেখলে তদের বড়লাটের উপর কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। High education (উচ্চ শিক্ষা) তুলে দিচ্ছে বলে দেশটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে।’উক্তিটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কি?
৫)স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ২৫৩ এর ছবিটি দিলাম-সমস্ত পৃষ্ঠাটা পড়লে বোঝা যাবে কি প্রসঙ্গে এবং কি উদ্দেশ্যে স্বামীজী ওই উক্তিগুলি করেছেন।
উচ্চ শিক্ষার জন্য উনি উনিভার্সিটি তৈরি করতে চাইছিলেন।আর কিসব বললেন।এখন রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (4 টা ক্যাম্পাস), নরেন্দ্র পুর এর রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় রয়েছে।যার সব কটার মান অনেক বেশি উন্নত।এসব তৈরি হয়েছে সব ই স্বামীজি র চিন্তা ধারায়।তাই উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ঠিক ভাবে বলেন নি।আর প্রথা গত শিক্ষা সত্যি ই কেরানি তৈরির জন্য।ভালো করে ভেবে দেখুন উত্তর পেয়ে যাবেন।
নমস্কার,
স্পষ্ট করে সত্য কে তুলে ধরলেও সেই সত্য সবাই দেখতে চাইবেনা ,এটাই স্বাভাবিক।
আপনার লেখার সঙ্গে পুরোপুরি একমত না হলেও খুব ভালো ভাবে বুঝিয়েছেন অনেক কিছু।
নিজের পছন্দের মানুষ ভন্ড হলেও তাকে নিয়ে স্বেচ্ছায় যারা অন্ধত্ব গ্রহন করে থাকতে পছন্দ করে তাদের কথায় মনোবল হারাবেন না।
ধন্যবাদ সত্য কে তুলে ধরার জন্য।
একবার যোগীন মহারাজ(গেরুয়া ধারণ করার অনেক আগে) নৌকা করে দক্ষিণেশ্বরে আসছিলেন …নৌকায় থাকা বাকি কিছু যুবক সেখানে ঠাকুরের নামে নিন্দা করছিলেন… গুরুনিন্দা শুনেও শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের যোগীন মহারাজ কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না… দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছে প্রথমেই তিনি যান মা সারদার কাছে … কাঁদতে কাঁদতে নিজের ব্যর্থতার কথা বলেন…সব শুনে মা বলেছিলেন ‘ তা তুই কী করতিস…তাদের মারতিস! তুই যেমন আমার সন্তান তেমনি ওরাও আমার সন্তান…. তুই তো কিছু ভুল করিসনি… কখনো কারো দোষ দেখবি না….কারো নিন্দা করবি না….এমন কি একটা পিঁপড়েরও না’
প্রবন্ধটি পড়ে এই কথাটাই মাথায় এলো…
বিবেকানন্দ সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু জানলাম | শিখলাম যে কখনো মহামানব ভেবে কাউকে অন্ধের মতন অনুসরণ করতে নেই | অভিজিৎ স্যার এর লেখা যখনি পড়ি, নতুন কিছু শিখি; নিজের মধ্যে পড়ার ও লেখালেখি করার এক অদম্য স্পৃহা অনুভব করি | স্যারের শূন্যতা আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি | বিনম্র শ্রদ্ধা স্যারের স্মরণে…
পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনি হয়তো তার ভক্তদের থেকে তর্কের কচকচি চাইছেন আত্মশ্লাঘা উপভোগের জন্য। একটা কথা সত্যি বলছি, লেখাটা পড়ে তার উপর ভক্তি বাড়লো বই কমলো না। আপনি আপনার মত করে তাকে খুঁজছেন। চালিয়ে যান। জানেন তো বিরোধিতা ও একটা ভাব। আর বিরোধিতা শুধু আজ নয় তার সমসাময়িক কালেও হয়েছে। আপনার যুক্তি খণ্ডনের জন্য পাল্টা যুক্তির পাহাড় কিংবা অযথা গালাগালি করতে পারছিনা বলে মাফ করবেন। এর কোনো প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছিনা। আপনি যা হোক ভেবে নিতে পারেন। আপনার লেখা টা পড়ে শুধু একটি বিষয় আরো হৃদয়ঙ্গম হল যে সত্যিই তিনি আধার বুঝতেন।
বিবেকানন্দ ভক্তের প্রণাম নেবেন।
লেখক “ধরবে শশী হয়ে বামন!”
স্বামীজীর আপাত বিরোধী বক্তব্য এখানে যা উল্লেখ হয়েছে, (যার দু একটা ভুল, বাকি সব ঠিক) তার থেকে অনেক অনেক বেশি আপাত বিরোধী বক্তব্য আমি জানি।
স্বামীজীকে সামান্যতম বুঝতে পারলে দেখা যায় ঐ আপাত বিরোধী বক্তব্যসমূহ সব এক সুরে গাঁথা।
‘অর্ধ সত্য মিথ্যার থেকেও ভয়ঙ্কর।’ এখানেও তাই, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য ভয়ঙ্কররূপে প্রতীয়মান।
লেখক অনাবশ্যক কতকগুলি বইয়ের উল্লেখ করেছেন যা মূল পাঁচটি বই থেকে নেওয়া:
…বানী ও রচনা,
… সমসাময়িক ভারতবর্ষ,
…As I saw him,
…by his eastern and western disciples
And
…New discoveries.
যার সবগুলিই রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রকাশিত।
অতএব “তাঁর স্ববিরোধী কাজগুলিকে সযত্নে আড়াল করে ফেলা হয়েছে” বলে লেখকের বক্তব্য কার উদ্দেশ্যে কে জানে।
আর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রায় সব ভক্তই এসব তথ্য জানে। এর মানেও জানে। লেখকই বরং জানতেন না। ভক্তদের জানার পরিধি সম্বন্ধেও তাঁর মনগড়া কিছু ধারণা আছে।
তিনি নিজেকে ‘মুক্তমনা’ ভাবেন, শ্রীরামকৃষ্ণ আর স্বামীজি সম্পর্কে যেরকম কটূক্তি করেছেন তাতে স্পষ্ট যে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দ বিদ্বেষ-বন্ধনে দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ।
সুন্দর বলেছেন
বিবেকানান্দর অনেক কিছু পড়েছি । কিন্তু এইরকম দ্বন্দ পূর্ণ লেখা পরিনি। সামান্য কিছু পড়েছি । যেমন উনি বিফ খেয়েছেন । অয়াইন পান করেছেন। খুব খেতে ভালবাসতেন, বিশেষ করে মাংস। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড রেগে যেতেন । উনি ২১ টি রোগে ভুগেছেন। একদিকে রাজা মহারাজদের সান্নিধ্য উপভোগ করতেন অন্য দিকে বনে গিয়ে উপবাস করতেন। বিদ্যাসাগরের স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি কারন ভর্তির টেস্টে ফেল করেছিলেন। মায়ের ওপর প্রচণ্ড রাগ। বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেখা করেন নি। প্রথম জীবনে রবিন্দ্রনাথের সাথে মত বিরোধ ।
আমি পুরোটা পড়তে পারিনি। সম্পূর্ণ পড়ে জবাব দেব।
“স্ববিরোধী বিবেকানন্দ”এর লেখক অভিজিৎ রায় মহাশয়কে……
(প্রথমেই বলে রাখি, আপনার লেখা পড়ে আমি মোটেই অবাক হইনি। হাজার হোক স্বামীজী যেহেতু মানুষের রূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন সেহেতু তাঁর মধ্যে কিছু কিছু মানবিক সঙ্কীর্ণতা/অসঙ্গতি থাকতেই পারে। আর পরমহংসদেবকে আপনি পাগল ভাবতেই পারেন; আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, যাঁরা পরার্থে জীবনপাত করেন, সর্বদা জিব ও জগতের মঙ্গল চিন্তা করেন, “যত মত তত পথ” গোছের প্রলাপের দ্বারা সর্ব-ধর্ম- সমন্বয়ের দুরাশা পোষন করেন, না চাইতেই “তোমাদের চৈতন্য হোক” বলে আশীর্বাদ দিয়ে বসেন……. অথবা “আপেলটা বোঁটা থেকে খসে উপর দিকে না গিয়ে নিচে কেন পড়ল” এই ধরনের উদ্ভট চিন্তায় আত্মসুখ বিস্মৃত হন তাঁরা সকলেই পাগল)
মাননীয় মহাশয়,
আমরা বাউল ফকির মানুষ,
“মানুষ আমাদের ভজনার বিষয়
মানুষই আমাদের দেবতা
মানুষের প্রতি তাই আমাদের অগাধ আস্থা…..”
আর সেই আস্থার প্রভাবেই আপনাকে এই কথাগুলি বলা……
হে মহা জ্ঞানী আপনি কি ভেবে দেখেছেন, আপনি যেটা করেছেন সেটা বর্তমান জনমানসে ক্রমাগত বেড়ে চলা মানুষের প্রতি মানুষের অনাস্থা, অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা এবং তা থেকে জাত হতাশা-রূপ আত্মঘাতী সমুদ্রের মধ্যে আরো একঘটী জল সংযোজনের মতোই অকিঞ্চিতকর ! যে ঘরের মধ্যে মানব-বিদ্বেষী ঝোড়ো হওয়া উত্তরোত্তর বর্ধিত রূপ নিয়ে অলরেডি ঢুকছে সেই ঘরে স্বামীজী-বিদ্বেষ রূপ পাখা চালিয়ে চিন্তা-রূপ বৈদ্যুতিক শক্তি অপচেয়ের সার্থকতা কোথায়?
তাহলে এই পরিশ্রমের উদ্দেশ্য কি? স্বামীজিকে খাটো করে নিজের বুদ্ধিমত্ত্বা জাহির করা এবং সস্তায় বাহবা কুড়ানোর মত নিকৃষ্ট উদ্দেশ্য আপনার মত মহা জ্ঞানীর থাকতে পারে না।
তাহলে? জনহিত?
তাই বা কিকরে হবে। জীবে প্রেম করে যেই জন…… বা যত্র জীব তত্র শিব….. জাতীয় প্রলাপ কে পাথেয় করে যে গুটিকয় মানুষ এখন জীব সেবা সমাজ সেবা করে থাকেন তাঁরা যদি স্বামীজী এবং তাঁর প্রচারিত আদর্শকে অবজ্ঞা করতে শুরু করেন তো মানুষের অল্প বিস্তর ক্ষতিই হবে, উন্নতি নয়।
তা হলে? আপনি কি উল্টো পথে পা চালাতে চেষ্টা করেছেন?
কিন্তু হে মহাশয়, শ্রদ্ধা থেকে অশ্রদ্ধার দিকে/ সৃস্টি থেকে ধ্বংসের দিকে হাঁটা মনে তো স্রোতের অনুকূলে হাঁটা……. আপনি যদি এর উল্টোটা করেন তবেই না আপনাকে প্রতিকূল-পন্থী বলা যাবে।
জনসমাজে যারা মন্দ বলে খ্যাত, যেমন ধরুন মীরজাফর, আপনি যদি তাঁর ভালো দিক গুলো তুলে ধরে মানুষকে বলেন…… দেখো কোন মানুষকে শুধুমাত্র তার কুকর্মের দ্বারা বিচার করে দূরে ঠেলে দিলে তাঁর ভাল জিনিস গুলি থেকে তুমি বঞ্চিত হবে (প্রসঙ্গত বলে রাখি, পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যিনি সারাজীবন শুধুমাত্র কূকর্মই করে গেছেন)। মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষই কোন না কোন কারনে শ্রদ্ধার দাবীদার।
আপনি যদি এই ধরনের কাজ করেন তবেই জানবেন আপনি আপনার প্রতিভার প্রতি সুবিচার করলেন। নইলে…. শুধুই অপচয়……. শুধুই অনিষ্ট……..
……….ক্ষমা-প্রার্থী মূর্খ ব্রহ্মময় চট্টরাজ
সর্বজন মনাকর্শনকারী মুক্তমনা ব্লগধারী মহামান্য অভিজিৎ রায় মহাশয় সমীপেষু——
মহাশয় বিবেকানন্দের পুস্তকাবলি কণ্ঠস্থ করে তাঁর ছায়ার(কালো দিক) সন্ধান করে প্রবন্ধ রচনা করেছেন অনবদ্য ভাবনার অত্যন্ত প্রশংসা করি।
একটি মাত্র প্রশ্ন আপনার কাছে,
বিবেকানন্দ শিকাগো সভায় প্রথম কি বলে সভাস্থল-ত্যাগী বিদ্বজনদের বসিয়ে দিয়েছিলেন, এবং হিন্দু সনাতন ধর্মকে বিশ্বের দরবারে সগৌরবে প্রতিষ্ঠত করেছিলেন ?
এর উত্তর পেলে পরের প্রশ্নটি পাঠাব এবং আপনি যে একটি মনুষ্যেতর জীব, তার প্রকৃত প্রমান পাঠাব
ইতি—-
অত্যতিবৃদ্ধ প্রপৌত্রম শ্রীকান্ত দেবশর্মনম
“স্ববিরোধী বিবেকানন্দ”এর লেখক অভিজিৎ রায় মহাশয়কে……
(প্রথমেই বলে রাখি, আপনার লেখা পড়ে আমি মোটেই অবাক হইনি। হাজার হোক স্বামীজী যেহেতু মানুষের রূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন সেহেতু তাঁর মধ্যে কিছু কিছু মানবিক সঙ্কীর্ণতা/অসঙ্গতি থাকতেই পারে। আর পরমহংসদেবকে আপনি পাগল ভাবতেই পারেন; আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, যাঁরা পরার্থে জীবনপাত করেন, সর্বদা জিব ও জগতের মঙ্গল চিন্তা করেন, “যত মত তত পথ” গোছের প্রলাপের দ্বারা সর্ব-ধর্ম- সমন্বয়ের দুরাশা পোষন করেন, না চাইতেই “তোমাদের চৈতন্য হোক” বলে আশীর্বাদ দিয়ে বসেন……. অথবা “আপেলটা বোঁটা থেকে খসে উপর দিকে না গিয়ে নিচে কেন পড়ল” এই ধরনের উদ্ভট চিন্তায় আত্মসুখ বিস্মৃত হন তাঁরা সকলেই পাগল)
মাননীয় মহাশয়,
আমরা বাউল ফকির মানুষ,
“মানুষ আমাদের ভজনার বিষয়
মানুষই আমাদের দেবতা
মানুষের প্রতি তাই আমাদের অগাধ আস্থা…..”
আর সেই আস্থার প্রভাবেই আপনাকে এই কথাগুলি বলা……
হে মহা জ্ঞানী আপনি কি ভেবে দেখেছেন, আপনি যেটা করেছেন সেটা বর্তমান জনমানসে ক্রমাগত বেড়ে চলা মানুষের প্রতি মানুষের অনাস্থা, অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা এবং তা থেকে জাত হতাশা-রূপ আত্মঘাতী সমুদ্রের মধ্যে আরো একঘটী জল সংযোজনের মতোই অকিঞ্চিতকর ! যে ঘরের মধ্যে মানব-বিদ্বেষী ঝোড়ো হওয়া উত্তরোত্তর বর্ধিত রূপ নিয়ে অলরেডি ঢুকছে সেই ঘরে স্বামীজী-বিদ্বেষ রূপ পাখা চালিয়ে চিন্তা-রূপ বৈদ্যুতিক শক্তি অপচেয়ের সার্থকতা কোথায়?
তাহলে এই পরিশ্রমের উদ্দেশ্য কি? স্বামীজিকে খাটো করে নিজের বুদ্ধিমত্ত্বা জাহির করা এবং সস্তায় বাহবা কুড়ানোর মত নিকৃষ্ট উদ্দেশ্য আপনার মত মহা জ্ঞানীর থাকতে পারে না।
তাহলে? জনহিত?
তাই বা কিকরে হবে। জীবে প্রেম করে যেই জন…… বা যত্র জীব তত্র শিব….. জাতীয় প্রলাপ কে পাথেয় করে যে গুটিকয় মানুষ এখন জীব সেবা সমাজ সেবা করে থাকেন তাঁরা যদি স্বামীজী এবং তাঁর প্রচারিত আদর্শকে অবজ্ঞা করতে শুরু করেন তো মানুষের অল্প বিস্তর ক্ষতিই হবে, উন্নতি নয়।
তা হলে? আপনি কি উল্টো পথে পা চালাতে চেষ্টা করেছেন?
কিন্তু হে মহাশয়, শ্রদ্ধা থেকে অশ্রদ্ধার দিকে/ সৃস্টি থেকে ধ্বংসের দিকে হাঁটা মনে তো স্রোতের অনুকূলে হাঁটা……. আপনি যদি এর উল্টোটা করেন তবেই না আপনাকে প্রতিকূল-পন্থী বলা যাবে।
জনসমাজে যারা মন্দ বলে খ্যাত, যেমন ধরুন মীরজাফর, আপনি যদি তাঁর ভালো দিক গুলো তুলে ধরে মানুষকে বলেন…… দেখো কোন মানুষকে শুধুমাত্র তার কুকর্মের দ্বারা বিচার করে দূরে ঠেলে দিলে তাঁর ভাল জিনিস গুলি থেকে তুমি বঞ্চিত হবে (প্রসঙ্গত বলে রাখি, পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যিনি সারাজীবন শুধুমাত্র কূকর্মই করে গেছেন)। মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষই কোন না কোন কারনে শ্রদ্ধার দাবীদার।
আপনি যদি এই ধরনের কাজ করেন তবেই জানবেন আপনি আপনার প্রতিভার প্রতি সুবিচার করলেন। নইলে…. শুধুই অপচয়……. শুধুই অনিষ্ট……..
……….ক্ষমা-প্রার্থী মূর্খ ব্রহ্মময় চট্টরাজ
মুক্তমনা লেখকদের প্রতি অধমের আন্তরিক অনুরোধ:-
আপনাদের লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে আপনাদের চিন্তার প্রখরতা, পড়াশুনার ব্যাপ্তি, যুক্তিবিন্যাসের ক্ষমতা এবং কলমের ধার এত বেশি যে বিশ্ব-বরেণ্য ব্যক্তিকেও এক ঝটকায় ঘৃণার পাত্র করে তুলতে সক্ষম আপনারা।
কিন্তু একটু ভেবে দেখুন. ……
আপনারা মুক্ত মন নিয়ে লিখলেও আপনাদের লেখা পড়ে আমাদের মত প্রায় অজ্ঞান(মনে রাখতে হবে বার্তমান ভারতে আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ) মানুষের মনে সঙ্কীর্ণতা, অশ্রদ্ধা, হতাশা বৃদ্ধির যথেষ্ট আশঙ্কা আছে।
আমার অনুরোধ আপনারা আপনাদের অপরিসীম ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এমন কিছু লিখুন যা পড়ে মানুষ মানুষকে শ্রদ্ধা করতে ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ হবে। মনীষীদের ভুল ধরার কাজে নিজের মনীষার অপচয় না করে নিজেই মনীষী হয়ে উঠুন…. নিষ্কলুষ মনীষী!
যে মননের জোড়ে আপনারা বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, মাদার টেরেসা প্রমুখের ভুলের হিসাব করছেন সেই আলো একবার নিজের উপর ফেলে দেখুন আপনি যে উদ্দেশ্যে লিখছি ভাবছেন আপনার লেখা আদৌ সেই উদ্দেশ্য সাধিত করছে তো……. না কি তার উল্টোটা করছে???
এই লেখাটি পরে মানুষের মধ্যে হতাশা জগতে পারে, আপনি ঠিক ই বলেছেন, কারণ এই লেখা বহু মানুষের বিশ্বাস কে আঘাত করে….কিন্তু এই হতাশা মানুষ অতিক্রম করতে পারে যদি সে মহাপুরুষকেই একমাত্র “মানুষ” ভাবা থেকে বিরত হয়, সে যদি সব মানুষ কেই সমানভাবে মর্যাদা দেবার অভ্যেস করতে শুরু করে, সেইটেই এই লেখাটির উদ্দেশ্য, সুতরাং এই সাময়িক বিশ্বাসভঙ্গে বিচলিত হবেননা
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ভারতবর্ষকে জানতে হলে বিবেকানন্দ পড়তে হবে | আমরা সাধারণ মানুষ আর কি বুঝি ? যার সবাই গুন গায় তাকেই মানি | বিবেকানন্দ ভন্ড এ কথা তো আপনিই প্রথম বললেন | রবীন্দ্রনাথও যেমন অজ্ঞ ! ভাগ্যি খোকা সঙ্গে ছিল নইলে কি ধারনাটাই না হতো !!
শেষ প্রজন্ত আমার মুক্তি লাভ হয়েছে, হ্যা অনেক পড়ে বুঝলাম যে বিবেকানন্দ কে ছোট দেখাবার জন্য এই লেখা টা নয় । তাই আমার আগের মত থেকে সরে এলাম। আর অন্ধ ভক্তি নয়। অনেক হয়েছে। আরেকটা ব্যাপার , আরেকটা বিষয়ের উপর একটা লেখা চাই।
কলঙ্কিত ঠাকুর বাড়ি। কাঙ্গাল হরি নাথের লেখা থেকে বেরিয়ে এসেছিল ঠাকুর বাড়ির কেচ্ছা ও প্রজা নির্যাতন। এটা সবার সামনে উন্মুক্ত হোক।
তাজমহলের স্থাপত্যেও ত্রুটি ছিল, সেটা না খুঁজে তাকে চাঁদের আলোয় দেখাই শ্রেয়। বিবেকানন্দ মানুষ হিসেবে কী ছিলেন সেটা বড় কথা নয়। তিনি আজ আর মানুষ নন। তিনি আজ আমাদের বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় এক ধারণা, আমরা তাঁর নির্যাস পেতে চাই, তাঁকে পুরোপুরি না পেলেও চলবে। ওষধি বৃক্ষের মতো, কেউ গাছটাকে খায় না, তার রস খায়। তিনি না থাকলে আজ আপনি এই পোস্ট লিখতে বা শেয়ার করতে পারতেন কিনা সেটাই ভাবার। আজ যখন জাতীয় জীবনে নারদা আর সারদা ছাড়া কিছু নেই, তখন বিবেকানন্দ বা রবীন্দ্রনাথের বাতকর্মের গন্ধ না শুঁকে তাঁদের কাজ নিয়ে কথা বলাটাই উচিত নয় কি? ওঁদের তো আজকাল অন্য গ্রহের প্রাণী মনে হয়। রামমোহন-বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ, আজকাল তো আপনারা এটা প্রমাণ করতেই ব্যস্ত যে ওঁরা কেউ মহামানব নন, মদন মিত্তির বা রাহুল সিনহার মতোই রক্তমাংসের লোক। আজকাল আপনারা সব কিছু বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সংশ্লেষের দিকটায় একেবারেই হীন হয়ে পড়ছেন। মহৎ মানুষ, মহৎ চিন্তাগুলোকে এর ফলে শুধু সন্দেহ ছাড়া আর কিছু দেওয়ার ক্ষমতাই নেই আপনাদের। ভাবছেন মুক্তমনা হচ্ছেন। এই মুক্তি কিন্তু পাশবিক স্বেচ্ছাচারের দিকে যাচ্ছে। যেতে বাধ্য। জনসংযোগ করছেন ভালো কথা, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে নিজেদের মনুষ্যত্বের জায়গাটা ঠিক রাখবেন, আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মানুষের নৈতিক ভিত্তির প্রতি দায়িত্বটাও। কথা কিন্তু একবার বেরিয়ে গেলে আর জিভে ফেরত আসে না।
ধন্যবাদ দাদা
যাই বলুন না কেন একটি বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ একদম ঠিক ছিলেন যা হলো ভারত হলো হিন্দু দের দেশ | তা না হলে কি আজ আর পাকিস্তান বা বাংলাদেশের উদ্ভব হতো | তাছাড়া ভারতের ভাষা গুলি এসেছে সংস্কৃত বা প্রোটো-দ্রাভিদিয়ান ভাষা থেকে | কিন্তু আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হন বা না হন নিজের মাতৃ ভাষা কে ত আর অস্বীকার করতে পারবেন না | এইদিক দিয়ে ভারতীয় ধর্ম যেমন হিন্দু ধর্ম থেকে আব্রাহামিক ধর্মে ধর্মান্তকরণের ফলে ভারতীয় ভাষার উপর বড়ো আঘাত এসেছে যেমন বাংলাদেশিরা বাঙালি হয়েও বাংলা নাম ব্যবহার করেন না, তার বদলে আরব বা ফার্সি নাম ব্যবহার করেন | হিন্দু ধর্ম যেহেতু ভারতীয় ধর্ম তাই হিন্দু বা অন্যান্য ভারতীয় ধর্মের অনুসরণকারীরা ওই সব বিদেশী নাম যে শব্দ গুলি নিজের মাতৃভাষায় নেই সেই নাম ব্যবহার করেন না | তাছাড়া হিন্দু ধর্ম হলো ভারতের নিজস্ব ধর্ম তাই সম সংস্কৃতি বশতই আপনি নিজেও একজন আরএসএস সদস্যের সঙ্গে বেশি মিল অনুভব করবেন একজন মার্কিন ফান্ডামেন্টালিস্ট খৃস্টান বা পাকিস্তান থেকে কোনো ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্ট এর থেকে | ভুলে যাবেন না ধর্ম অনেক সময়ই একটি দেশ ক ঐক্যবদ্ধ করে রাখে ও হিন্দু ধর্মের ডিক্লাইনে না হলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অস্তিত্বই তাহলে থাকতো না ও ভারত একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হতো | তাই ভারতীয় সভ্যতার জন্য হিন্দু ধর্ম বা অন্যান্য ভারতীয় ধর্ম যত তা অনুকূল, আব্রাহামিক ধর্ম গুলো ততটাই প্রতিকূল | আর বাংলা ভাষা তো ভারতীয় সভ্যতারই অংশ |
বিবেকানন্দ বা যে কোনও যুগ প্রতিনিধি চরিত্র সম্পর্কে কিছু পরস্পর বিরোধী উক্তি তুলে বিষয়ের প্রতি সুবিচার হয় না। বিবেকানন্দ যদি কৌশলী লম্পটও হয়ে থাকেন কি উপায়ে তিনি একটি যুগের যুব শক্তিকে এতদূর প্রভাবিত করতে পেরেছেন তা ভাবা দরকার। তাছাড়া এই রচনাটি একটি ঔৎসুক্য জাগায়, আরও চিন্তার, আরও তথ্য ও বিশ্লেষণের, তা পূর্ণ হয় নি। লেখককে ধন্যবাদ তিনি সাহস করে তাঁর মত উপস্থাপনা করেছেন, কিন্তু রচনা সমাপ্ত করেন নি। আমার মত বিবেকানন্দ অনুরাগীর কাছে এটি সুখপাঠ্য কিন্তু কৌতুকপ্রদ বলে মনে হয়েছে।
:good: ……….. ভালো হইছে এন্ড রাইট…!
সকল মুক্তমনা দের জানাচ্ছি , একটা সরল জিনিষ। আমি আশা করছি এটা অনেক সাহাজ্য করবে। আমি সব তর্ক গুলো দেখলাম, হ্যা এই আলোচনার দরকার ছিল। এই সমালোচনা দরকার ছিল। মানুষ ধিরে ধিরে অসভ্য থেকে সভ্য হয়েছে ।
প্রথমে আগুন জালানো , প্রথম কৃষিকাজ শেখানো মানুষের সঙ্গে কি আপনি এখনকার বিজ্ঞানী দের বুদ্ধির তুলনা করতে পারবেন না। এখানেও তাই , স্বামী বীবেকনন্দ সমাজের একজন ছিলেন , সমাজ বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। তো বুঝতে পারছেন,
তিনি নিজের যে বিরোধ করেছিলেন তার জন্য সমাজ ব্যাবস্থা দায়ি ছিল, আজকের সমাজে থেকে আমরা যে চিন্তা করতে পারি তখণকার মানুষ সেটা পারত না। সুতরাং একটু ভেবে চিনতে পোস্ট করবেন।
সেই সমাজের মধ্যেই বিদ্যাসাগর ও ছিলেন, সেই একই সময়ে কিন্তু ঠিক এই জিনিসের বিরোধিতা করেই তিনি বিধবা বিবাহ চালু করেন, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন, প্রাশ্চাত্ত্ব শিক্ষাকে তীব্রভাবে অগ্রাধিকার দেন।
দাদা,
আপনি যে স্বামিজির রেজাল্ট টা দেখালেন , সেই প্রসঙ্গে একটা ব্যাপার আছে। একবার উনার এক বন্ধু একটা এনসাইক্লোপিডিয়া এনেছিলেন, এনে বলেছিলেন এটা পড়তে দিরঘ সময় লাগবে। স্বামিজি মাত্রই ১ দিনেই পড়ে দেখিয়ে দিলেন পুরো এনসাইক্লোপিডিয়া টি। এমনি ছিল উনার মেধা।
আবারো বলছি , Hinduism is not only a religion, its a way of life. যেটা বললেন উনাকে ছোট করতে চান না , প্লিজ ছোট করবেন না।
সমাজ যতটুকু এগোতে পেরেছে আজ ইনাদের অবদান কিন্তু অনেক ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক জায়গায় লিখেছিলেন “কালকের সোজা পথ যদি আজ যমের দক্ষিনদুয়ারে নিয়ে যায় তবে বলার কিছু থাকে না” আর আজ সেটাই হচ্ছে, ধর্মীয় উন্মাদের দল মানব সভ্যতাকে যমের দক্ষিনদুয়ারে নিয়ে যাবার প্রতিজ্ঞা করেছে,
আচ্ছা , ধর্মীয় মৌলবাদ খারাপ মানছি , কিন্তু এর উল্টদিকের যে বিষাক্ত আধুনিক্তা আছে যা মানবিক তো নয়ই বরং ঘাতক তাকে কি সমর্থন করা যায়? ড্রাগ নেওয়া , কলেজে র্যাগিং , কর্পোরেট কেলেঙ্কারি , মিডিয়া কেলেঙ্কারি এগুলো কি আদৌ সমর্থন যোগ্য ? মুক্ত বাজার অর্থনীতি জা মানুষ কে ক্রিত দাস এবং পুতুলে পরিণত করেছে তা তো ধবংসাত্বক। বাজার সংস্কৃতি মুক্ত হলে তবেই বলা যাবে যে ধর্মীয় মৌলবাদ থেকে বেরিয়ে ধর্ম হীন মানব সমাজ বানানো যাবে। স্বামীজির একটি উক্তি ঃ– “প্রাচ্যদেশ পুরোহিত দের অত্যাচারে কাতর ভাবে ক্রন্দন করিতেছে (ধর্মীয় মৌলবাদ) আবার পাশ্চাত্য দেশ শাইলকদের অত্যাচারে আর্তনাদ করিতেছে (আধুনিক কুস্নস্কার তথা মুক্ত পুজিবাদি একনায়ক্ত্ব) ” আজকের দিনে ভীষণ বাস্তব। স্বামীজি যে ধর্ম মানতেন তা হল মানবধর্ম। তিনি কিন্তু কোটি কোটী টাকা কামিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতেন , করেন নি । আপনারা এখানে একজনের নাম তো দিলেন ই না । মা সারদা , যিনি “সতের ও মা অসতের ও মা”। শত কে গ্রহন করে অসৎ শত হতে পারে তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন। বলি কি স্বামিজীর মত মুক্ত মনা কে বিচার করবার আগে ভাল করে তাকে জানুন , বুঝুন। শুধু আক্ষরিক অর্থ তুলে কাদা ছেটাবেন না। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুন। সব মহাপুরুষদের সঙ্গে ইনাকে অনায়াসে ইনাকে তুলনা করা যায়। —————- গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।
আধুনিকতা বিষাক্ত নয়, বিষ চিরকাল ই বিষ , আমরা তলিয়ে চিন্তা ভাবনা না করে বিশ্বাস করি, আমরা ধর্মগুরু দের বিশ্বাস করি, নেতাদের বিশ্বাস করি, ধনীদের বিশ্বাস করি, বুদ্ধিজীবীদের বিশ্বাস করি, কারন বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু তর্কে বহুদূর। এটা আমাদের দুর্বলতা
এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে যাদের বিষ ছড়িয়ে নিজেদের আখের গোছাতে হয়, তারা গোছাচ্ছে। ড্রাগ নেওয়া , কলেজে র্যগিং কর্পোরেট কেলেঙ্কারি , মিডিয়া কেলেঙ্কারি বিষ, আধুনিকতা নয়।
জানি বিষ চিরকালের বিষ। ভাল লাগল মন্তব্য । শুনুন , অনেক নমস্য মহাপুরুষ দের দেখবেন তাদের অনেকের ই স্ববিরোধিতার ব্যাপার ছিল , এটা স্বাভাবিক। “বৃষ্টিটা কক্ষন হবে” আবার বেশি ব্রিস্টি হলে “থামছে না কেন” এটা সবারই স্বভাব , একটা স্বাভাবিক স্বভাব। একজন মানুষ তার যে অবদান , রামকৃষ্ণ মিশন যা রীতিমত মানব সেবায় নিয়োজিত, তাকে আপনারা কৌশলে যেভাবে খাটো করলেন , আশ্চর্য লাগল। আবার এই মুক্তমনা পেজেই দেখলাম মহম্মদ বন্দনা, তা আপনারা মুক্ত মনা নন। শুধু বই এর তথ্য নয় প্রকৃত মুল্যায়ন করতে লাগে একটা মানুষকে , এই আলোচনায় আপনারা সেটা করেন নি একদম। শুনুন স্বামীজির একটি উক্তি ” শতবার চেষ্টা করিয়া বিফল হইয়াছ তো কি ? ওই আদর্শ হৃদয় আবার ধারণ করে মনেপ্রাণে আর একটিবার চেষ্টা কর”। এই মন্ত্র আমাকে জীবনে আশ্চর্য সাফল্য দিয়েছে। আমি মেনে কিন্তু ফল পেয়েছি, কমার্স নিয়ে পড়েও আমি টেকনিকাল কাজ করে ভাল মাইনে পাই যা কোনদিন পারব ভাবি নি। তাই বলি একজন মহাপুরুষ কে ভাল ভাবে জানুন , তার পর মন্তব্য করুন।
এক্সকিউস মি,
আমার কিছু বলবার আছে। একবার সেই সময়কার সমাজ ব্যাবস্থা (নিচ এবং নোংরা) ভাল করে জানুন। সেই অনুপাতে বিবেকানন্দ কি অবদান রেখেছেন বুঝতে পারবেন সেইটা। সব মানুষের ই দোষ ত্রুটি থাকে , সুধু সেটাকে দিয়ে মানুষকে বিচার ঠিক নয়। স্বামী বিছাকাানন্দের গুরু শ্রী রামকৃষ্ণ
বলেছেন ঃ–“আমি বাবু হতে চাই নে , মান্যগণ্য হতে চাই নে”। আরো বলেছেন “আমি চাল কলা বিদ্যা চাই না , সেই বিদ্যে চাই , যাতে মুক্তি আসে”।
তিনি সেই যুগেই অচলায়তন ভাঙতে চেস্টা করেন। রামকৃষ্ণের অর্ধ নগ্ন বেশ এবং সরল কথা বাত্রা ছিল ততকালিন বাবু সমাজ (ইংরেজদের চামচা) দের মুখে একটা জোরালো চপেটাঘাত, এবং সাধারণ মানুষের কাছে প্রানের মানুষ হওয়া । তার শিশ্য স্বামী বিবেকানন্দ তার পথই অনুসরণ করে গেছেন, এবং যুব সমাজকে জাগাতে চেয়েছিলেন। মানুষ মাত্রই দোষ ত্রুটি থাকে তাঁর ও ছিল। চাদের গায়েও কলঙ্ক থাকে কিন্তু সেই কলঙ্কই চাদের একমাত্র পরিচয় নয়। প্রাচীন হিন্দু ধর্ম এক সমাজ বিগ্যান , যে সমস্ত ধর্ম মত এমনকি নাস্তিকতা কেও নিজের মধ্যে যায়গা দেয় , এইটা পুরো জগত কে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তাই এই নমস্য ব্যাক্তিত্ব কে বিচার করবার আগে তাকে ভাল করে বুঝুন, সেই ধ্রমান্ধ যুগে তিনি কিভাবে অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়েছিলেন, বিদেশিনিকে ভগিনী বলে সম্মান দেন , তা সেই যুগে আর কেউ করতে পারেন নি। আর নিরামিষ যে খেতেই হবে , সেই গোঁড়ামি তিনিই ছাড়িয়েছিলেন । আপনি আরো একবার ভাল করে স্বামিজী কে পড়ুন জানুন।
আসলে সাদা কাপড়ে দাগ লাগানো সোজা কিন্তু একটা কাদা মাখানো কাপড়কে সাদা বানানো অনেক কঠিন। এইজন্য মহাপুরুষেরা কারো পরনিন্দা করে কারো চরিত্রকে কর্দমাক্ত করতেন না.
2. সেই সময় সন্ন্যাসীদের মনে নানা কুসংস্কার ছিল, যেমন আমিষ খাবে না। বিবেকানন্দ সেই কুসংস্কার দূর করার উদ্দেশ্যেই গুরুভাইদের পাঠার মাংস খাইয়েছেন। তার যা ইচ্ছা হত তাই খেতেন, এমনকি রাস্তার ভিখারীদের কাছ থেকে ধূমপানও করতেন।
৩. আর নারীদের প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো তিনি একটি প্রবন্ধে সীতা আর দ্রৌপদীর তুলনা করার সময় বলেছে। তিনি বলেছেন ভারতীয় নারীরা সীতাকে আদর্শ হিসাবে মেনে চলে কিন্তু তিনি কখনই বলেননি যে সীতা দ্রৌপদী অপেক্ষা ভালো এবং তিনি এও বলেছেন তখন মেয়েরা বহুবিবাহ করত কিন্তু সেটাকে পরবর্তীকালে মায়ের এদেশের দোহাই দিয়ে চালানো হয়েছে। তিনি মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়ার কথা বলেছেন এবং মেয়েদের সেলাই শেখার স্কুল ও খুলেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দের প্রধান দোষ ছিল তিনি ভারতীয় সংস্কৃতের মধ্যে দোষ খুঁজে পেতেন না।
তাই বলে লোকটির ব্যক্তিত্ব ছিল বিশাল, আর এরকম ব্যক্তিত্ব ছিল বলেই তো তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই সমাদর লাভ করতেন। আমাদের মতো নিন্দুকদের সেই রকম ব্যক্তিত্ব নেই বলেই আমরা শুধু নিন্দা করতে পারি। আসলে উনি কি বলতে চেয়েছেন তা না বুঝে মাঝে মাঝে হটাৎ করে এক একটা প্রবন্ধ থেকে একটা লাইন উদ্ধৃত করে তার একটা বাহ্যিক অনুবাদ করে আপনি নিজের ক্রেডিট দেখতে চান।
1. তিনি তো কখনো বলেননি যে চন্ডালের ধর্ম প্রকৃত ধর্ম তিনি বলেছেন চণ্ডাল আমার ভাই, অর্থাৎ সেই সময় চণ্ডালদের যেরকম অস্পৃশ্য বলে দূরে সরিয়ে রাখা হত তিনি সেই প্রথার অবসান চেয়েছিলেন। আর ব্রাহ্মণদের ধর্ম প্রকৃত ধর্ম বলতে বোঝাতে চেয়েছেন- চণ্ডালরাও হিন্দু আর ব্রাহ্মণরাও হিন্দু, কিন্তু ব্রাহ্মণরা যে প্রথা মেনে চলে সেটাই প্রকৃত হিন্দু ধর্ম অর্থাৎ অহিংস, সকলের পুজো করার অধিকার ইত্যাদি
মহাশয় এর প্রচেষ্টা সাধুবাদ যোগ্য ।। কিন্তু সমস্যা হল নিরপেক্ষতার …খাদ কে বাদ দিলে গয়না হয় না , জানা কথা …কিন্তু কেউ ব্যাস্ত শুধু কাচা সোনা নিয়ে , আর কেউ বা শুধু খাদ নিয়ে … এই দুই এর নিরিখে এক নিরেপেক্ষ বিশ্লেষণ বোধ হয় বেশ কঠিন …
‘আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি কারন আমি এমন এক শহর(শিকাগো) থেকে আসছি যেখানে ভারতের এক বীর সন্যাসীর আবির্ভাব হয়েছিল বহু বছর আগে’।-বারাক হুসেন ওবামা,ভারতীয় পার্লামেন্ট।
অভিজিৎ বাবু ও বিপ্লব পাল অস্বাধারন লিখেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের মতো একজন মহাপুরুষ সম্পর্কে এই ধরনের বিকৃত ও কষ্টকল্পিত অথচ সুসজ্জিত একটি আর্টিক্যাল কে খুব সুন্দর ভাবে প্রোমোট করার অপূর্ব দক্ষতা দেখিয়েছেন আপনারা। আপনাদের এই সাধু প্রয়াশের ফলশ্রুতি হিসেবে কিছু বিবেকানন্দপ্রেমি যে বিবেক হারাবে ‘তা আর কা কথা’।
আপনাদের আলোচনা পরার পর দীর্ঘদিন কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে এই লেখার উদ্দেশ্যটা কি। প্রতিটি মানব চরিত্রই স্ববিরোধী এবং ভাল-খারাপ গুনে বিভোষিত। মানব শরীরের বৈশিষ্ঠই তিন গুনের সমাহার। কেঊ পরিপূর্ন সত্ব গুনাধারী হন না। শ্রী শ্রী ঠাকুর তাই বলেছেন, ‘সোনায় একটু খাদ না মেশালে ছাচ হয় না’।তাই বিবেকানন্দের ক্ষেত্রে ৯০% যদি আমরা ভাল গুনের সন্ধান পাই, তবে খুজলে ১০% খারাপ গুন ও পাব। এই ভাল খারাপের মিশ্রন না থাকলে মানব শরির গঠন হয়না। সত্ত্ব গুনাধিক্যে দেবশরীর হয়, রজগুন নর এবং তমোগুনাধিক্যে পশুযোনী প্রাপ্ত হয়।একটু অবৈজ্ঞানিক কিন্তু আধ্যাত্বীক কথা বলে ফেললাম, আমি ক্ষমা প্রার্থী।
পুরো আলোচনা টায় স্বামীজী এবং তার আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী ঠাকুর কে নিয়ে যা খুশি বলা হয়েছে, ব্যাপার গুলিকে এমন ভাবে উত্থাপন করা হয়েছে যাতে এই দুই জনকে ভন্ড এবং বিকৃত মস্তিস্কের লোক বলে সহজেই মন হয়। অথচ এই দুইজন বিকৃত মস্তিস্কের লোকের হাত ধরেই ভারতের অপামর জনসাধারন বিশ্ববাসীর কাছে সম্নানীত হয়েছিল। এই প্রভাব এতোটাই, যে বারাক হোসেন ওবামা ভারতের পার্লামেন্ট এ দাঁড়িয়ে স্বামিজীর প্রশংসায় পঞ্চমূখ। সমগ্র ভারতকে এক আধ্যাত্বিক সমুদ্রে আন্দোলিত করে গেছেন এই দুই ব্যাক্তি।
আপনারা যে সব বত্ত্বব্য এখানে তুলে ধরেছেন তা যে উদ্দেশ্য প্রনোদিত তা আপনারাই জানেন। তাই এই ব্যাপারে আর কিছু বল্লাম না। যারা ‘স্বামীজির বানী ও রচনা’ ঠিক ভাবে পড়েন নি একমাত্র তারাই এই বক্তব্যগুলিকে বেদ বাক্য মনে করবেন।
শ্রী শ্রী ঠাকুর পুকুরঘাটে রমনীদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখেছিলেন সত্য কথা।কিন্তু কেন দেখেছিলেন তার সন্তোষজনক উওর ঐ বইতেই
থাকা সত্ত্বেও নিতান্তই উদ্দেশ্য প্রোনোদিত ভাবেই তা আপনারা গোপন করে গেছেন। নারী শরীরে কিসের এত আকর্শন তা জানার জন্য কোন উপায় না দেখে সহজ সরল ঠাকুর এই কাজই করেছিলেন। তার কাজে যদি কোন খারাপ উদ্দেশ্যই থাকত তাহলে গ্রন্থকার এই বিষয়গুলি অবশ্যই ‘কথামৃতে’ তুলে ধরতেন না।
ঠাকুর বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী কে দুই একটা বাচ্চা হবার পর ভাই বোনের মত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অনেকে তাকে বিকৃত মস্তিস্ক ও পাগল বলতে ও ছাড়েন নি। তারা ব লেছেন যে এতে স্বাভাবিক যৌন জীবন নষ্ঠ হবে। কখনো কি আপনারা শুনেছেন যে একজন সন্ন্যাসী বিয়ে করে যৌন জীবন পালন করার উপদেশ দিয়েছেন??? হযরত মোহম্মদ(সাঃআঃ) এর মত লোক পর্যন্ত এইসব বর্জন করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত হিরা গুহায় গিয়ে সাধনায় মগ্ন ছিলেন। যিশু বিয়ে করেন নি। মুসা তার স্ত্রী পূত্রকে পরিত্যাগ করেছিলেন। আপনাদের কি মনে হয় তারা পাগল ছিল? হয রত মোহ্মমদ নিজের পূত্রবধূকে(জয়নাব) বিয়ে করেছিলেন। কোরয়ান এ চার বিয়ে সমর্থীত হওয়া সত্বেও তিনি নয়টা বিবাহ করেছিলেন। আপনাদের কি মনে হয় তিনি যৌন বিকৃত ছিলেন।
বিদেশী মিশনারী দের প্রচারের একটা অংগ ছিল ভারতীয় ধর্ম জংলী আশিক্ষিত লোকেদের জন্য। সুটেড বুটেড লোকেদের জন্য না। স্বামীজির অতি দামী কোর্ট এবং চূরুট এই জন্যই, যে ভারতীয় সাধুরা কেবল
অর্ধনংগ সাধুনন, প্রয়োজনে তাদের থেকে অধিক ফরমাল এবং সুটেড বুটেড হওয়ার ক্ষমতা ভারতীয় সাধুরা রাখেন।এখানে বিলাশ প্রদ্র্শন তার উদ্দেশ্য নয়।
ভারত যখন হীনবির্য তখন এই দুই পাগলের হাত ধরেই তা আবার স্বমহিমায় ফিরে আসে। আর সেই মহিমা এখনো বর্তমান।তাই নরেন্দ্র মোদীর মত সিংহপুরুষ বেলুর মঠে গিয়ে স্বামীজির ঘড়ে একান্তে সময় কাটান।
স্বামিজী স্ববিরোধী কথা কখনোই বলেন নি, যেখানে যা বলার তাই বলেছেন। ভারতীয় বিভিন্ন প্রথা,যেমন সহমরন, বাল্যবিবাহের বিজ্ঞান সম্নত কারন ব্যখ্যা করে যেমন তিনি খ্রিষ্টান মিশনারীদের এটা দেখাতে চেয়েছিলেন যে এই প্রথাগুলো মূর্খের সৃষ্টি না, যা মিশনারী রা মনে করতেন, তেমনি এই প্রথাগুলির বিরুধীতা এজন্য করেছিলেন কারন প্রথাগুলির বিকৃতকরন হয়েগেছে, তাই বজ্রনীয়।তিনিই সেই ব্যক্তি জিনি বজ্রঘোষিত কন্ঠে এই কথা ঘোষনা করেছিলেন, যে ‘ কুসংস্কারাপন্ন হওয়ার চেয়ে নাস্তিক হওয়া ভাল, কারন কুসংস্কারীর কোন আদর্শ নেই, কিন্তু নাস্তিকের আছে’।
স্বামীজি বিজ্ঞান চর্চা এবং উচ্চশিক্ষার পক্ষে ছিলেন। তিনি প্রাচ্য কে পাশ্চাত্তের শিক্ষায় এবং পাশ্চাত্তকে কে প্রাচ্যের ভাব ধারায় উদ্ভূত হবার জন্য বলেছিলেন।
পরিশেষে বলি, আরো পড়ুন, আরো জানুন।
ধন্যবাদ দাদা,
ভাল লাগল , যে আপনি ঠিক মুল্যায়ন করলেন। এই মুক্তমনা উপর উপর দিয়ে বিচার করল , অকারণে আঘাত করল , আপনি তার বদলে যুক্তি দিয়ে আঘাত করলেন ভাল লাগল। রিসেন্ট একটা লেখায় দেখলাম মহম্মদ বন্দনা , এবং তার অলৌকিক ব্যাপারের গুণগান , তাহলে বিবেকানন্দ কি অন্যায় করলেন । মুক্তমনা যেন সঠিক আন্দোলনের দিকে চলে , একজন মহাপুরুষের উপর যেন অকারণে কাদা না ছেটায়। স্বামী বিবেকানন্দ নিজেই এক মুক্তমনা । ———- গুরুদেব দয়া কর দীনজনে ।
স্বামি বিবেকানন্দের মতো ব্যক্তিকে নিয়ে না যেনে এ ধরনের মন্তব্য না করাটাই ঠিক।
কোন মানুষের সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তার নিজের ভুল ট্রুটিগুলি দেখা উচিত। তাই নিন্দুকের কথায় কান দিতে নেই।
@আব্দুল্লা-আল-মামুন,
ধন্যবাদ ।
শ্রী রামকৃষ্ণদেব মেয়েদের উলঙ্গ অবস্থাই চান করতে দেখেছিলেন এটা কথামৃতের কত নম্বর পৃষ্ঠায় আছে?
ব্লগে রসিয়ে গুলতানি দিয়ে নায়ক হওয়ার প্রয়াস প্রকৃত শিক্ষা থাকলে এটা বুঝতে অসুবিধা হতনা যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতি দুরকম কথা মুখ দিয়ে বেরোনো সম্ভব তা বলে সেটাকে স্ববিরোধী বলা হয় না… প্রবিত্র কুরান সরিফে লেখা আছে যে সকল জীব আল্লার সন্তন জীব হত্যা পাপ আবার সেই জীবকেই হত্যা করে ধর্মীয় রীতি পালন হয়..তবে কী ইসলাম স্ববিরোধী ধর্ম ???
কখনোই নয়…ঠিক তেমনি স্বামীজিও স্ববিরোধী নন… ধর্মীয় সম্প্রিতি বজায় রাখতে আর কিছু বললাম না..
একদম, বিভিন্ন পরিস্তিতে মানুষের মুখ দিয়ে নানা কথা বেরিয়ে পরে তাই বলে সেটিকে স্ববিরোধী বলা মোটেও ঠিক না.
আপাত যুযুধান দুই পক্ষ, কিন্তু কোন পক্ষেই পারফেক্ট যুক্তির বুনোট দেখছিনা। ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। দু’রকম বিশ্বাস নিয়ে কথা চলছে, তথ্যপ্রমাণ তো সবসময়েই আপেক্ষিক। আমার কথা বলি, আমি এই দুয়ের কোনো বিশ্বাসেই বিশ্বাসী নই। আমার মধ্যে কোন দল নেই। কিন্তু যেহেতু বিষয়টা রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠছে ক্রমশঃ, তাই মনে হচ্ছে একটু ধুঁয়ো দেয়া দরকার। 😛 আমি পরমহংস, বা উট বা ছাগল কোনটাতেই বিশ্বাস করিনা, কিন্তু একই সঙ্গে iconoclasm-এও ঘোর আপত্তি আছে। যখন বিকল্প আইকন দিতে পারবো, তখনই একমাত্র প্রতিষ্ঠিত আইকন ভাঙ্গার অধিকার জন্মায় – আমি এইটাই বিশ্বাস করি। এখানেও বিশ্বাস। অর্থাৎ আপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে আমার বিশ্বাসকে আপনার বিশ্বাস না বানানোর। কিন্তু, তার আগে একটু দেখে নিই অন্য দু’একটা কথা। আমি যতটুকু বুঝলাম – এ প্রবন্ধের মূল উপজীব্য আইকনোক্লাজম নয়, বরং একটা কল্পিত স্ববিরোধ আবিষ্কার করে কিছুটা আত্মকণ্ডূয়ন। যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁদের বরং কোন সুস্পষ্ট লাইন নেই, কেউ বলছেন ‘প্রসঙ্গ উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা কর’ (এইটাই সবচেয়ে pertinent), আর বাকীরা গুলিয়ে ফেলছেন সেবাধর্মের সুফল নিয়ে। কিন্তু প্রথম প্রবন্ধে সমস্যা আছে ত্রিবিধ। এক, স্ববিরোধ। যুক্তিবিদ্যার ভাষায় যখন একটিমাত্র বিবৃতিতে দুটি পরস্পরবিরোধী অংশ থাকে, তখন হয় স্ববিরোধ। কিন্তু প্রবন্ধকার কোথাও এমন একটাও বিবৃতি উদ্ধার করেননি। ভিন্ন প্রসঙ্গে, ভিন্ন বিবৃতিতে, ভিন্ন সময়ে ভিন্ন কথা বলা হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু লজিক্যালি তাকে স্ববিরোধ বলেনা, বলে পারম্পর্যহীনতা। ল্যাটিনে বলে non sequitur। কিন্তু একজন প্রশাসক সংগঠনের প্রয়োজনে ভিন্ন ওয়ার্কগ্রুপকে বিভিন্ন নির্দেশ দিতেই পারেন, সেটা কখনোই পারম্পর্যের নিরিখে বিচার হবেনা। সম্মিলিত ভাবে সংগঠনের স্থিতি তাতে বাড়ল কিনা, সেটাই বিচার্য। স্থিতির বিচারে রামকৃষ্ণ মিশন সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এখনও পর্যন্ত প্রশাসনিক দুর্বলতার কোন বড় নজির নেই। সুতরাং পারম্পর্যের প্রশ্নও এখানে অবান্তর। দুই, ঔচিত্যবোধ। কোনটা স্বাভাবিক, আর কোনটা অস্বাভাবিক আচরণ, মিশেল ফুকোর অনবদ্য পর্যবেক্ষণের পরে এসব নিয়ে তর্ক করে মূর্খেরা। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ কোথাও হলে – ক্ষমতাবানরা ঠিক করে দেয় কোনটাকে ‘স্বাভাবিক’ বলা হবে ইত্যাদি। মুক্তমন যেহেতু তার সংজ্ঞা অনুসারে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে, সে হেতু স্বাভাবিকতা নিয়ে গলাবাজি করাটাই বরং non sequitur। তিন, মনস্তত্ব। মনুসংহিতা থেকে সিগমুন্ড ফ্রয়েড হয়ে কার্ল ইউং পর্যন্ত কেউই বলেননি যে কাম অবদমন করলে পুরুষত্ব চলে যায়। কাম দমন করলে ক্রোধ বাড়তে পারে, বিকৃতকামীও হতে পারে কেউ, কিন্তু তার যৌন ইচ্ছা চলে যাবে, তার জায়গা নেবে ভীতি, ট্রমা – এটা অবৈজ্ঞানিক ধারণা। বরং ট্রমা হতে পারে অবাঞ্ছিত জবরদস্তি যৌনসংসর্গ হলে, যাকে বলে ধর্ষণ। গদাই ধর্ষিত হয়েছিল সে রকম কোন রেফারেন্স আছে নাকি? লেখক বরং মনস্তত্বের বইপত্র একটু ঘাঁটতে পারেন। সুতরাং প্রবন্ধটিকে সুলিখিত বলা যাচ্ছেনা। এবার ফিরে আসি মূল কথায় – বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। কিন্তু বস্তুটা কি? প্রবন্ধকার সেটাই বুঝতে চাননি যে বিবেকানন্দের অভীষ্ট বস্তুটি ধর্ম নয়, ধর্মপ্রচার। আমি যদি কনডোমের বিজ্ঞাপন লিখি, আমাকে সারাদিন কনডোম পরে বসে থাকতে হবে? কি কাণ্ড! এই প্রচারের জন্য তাদের দরকার ছিল একটি প্রতিষ্ঠান, এবং সেই জন্যে অর্থ। অনেক অর্থ। সন্ন্যাসী মাধুকরী করতে রাজাগজার কাছে যাবে, এটা কি খুব আশ্চর্য হবার মতো কথা? বিবেকানন্দ এদের কাছে না গেলেই তো বরং তাঁর মিশনের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। কে কার মুখ দেখতেননা, সে প্রশ্ন অবান্তর। সে তো সমকালীন অনেকে রবিবাবুর-ও মুখ দেখতেন না, তাতে হলোটা কি? একেবারে শেষে এসে আরও দুটি প্রসঙ্গ। নারীদের সম্মানজ্ঞাপন, এবং ব্রিটিশের চাটুকারিতা। আজ থেকে এক শতাব্দীরও আগে যিনি নারীকে নরকের দ্বার বলেছেন সেই তিনিই কিন্তু গিরীশ ঘোষের নাটকে পতিতা বিনোদিনীর অভিনয় দেখে ভাবসমাহিত হয়েছেন, দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন সেই পতিতাকে। আবার বিবাহিত পুরুষ সেবামূলক কাজে সাধারণত অচল, এ অভিজ্ঞতা আমাদের প্রত্যক্ষ ভাবেই আছে। সংগঠনের সদস্য বা সম্ভাব্য সদস্যদের বিয়েপাগলা হলে চলেনা – প্রশাসক বিবেকানন্দ ভালোই বুঝতেন সেটা। আর সাম্রাজ্যবাদের তোষণ, করেছিলেন নাকি বিবেকানন্দ? তা রবীন্দ্রনাথের জনগণমন নাকি পঞ্চম জর্জকে সম্বোধন করে লেখা! রাজীব দীক্ষিত তাই মনে করেন। ভিডিও দেখুন। রাজীব দীক্ষিতকে আমি ইডিয়েট বলে মনে করি। দুর্ভাগ্য, এই প্রবন্ধকারকে তার বেশী কিছু বলতে পারলামনা।
স্বামী বিবেকানন্দ সমাজের জন্য, ভারতবর্ষের মানুষের জন্য যে কাজ করে গেছেন, সমালোচনা করার আগে সেটা জানা দরকার। তিনি চেষ্টা করলেই ধনী মানুষ হতে পারতেন, দামী গাড়ি, পোষাক পড়তে পারতেন। তার পরীক্ষার নম্বর দেখিয়ে তার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করাটাই হল একটা নোংরামী। যিনি সেটা করেছেন তিনি জানেন না স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন সেই বছরে তার বিদ্যালয়ে একমাত্র ছাত্র যিনি প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন ( সুত্র:- গোপাল শ্রীনিবাস বান্হাত্তি র লেখা বই ” লাইফ এন্ড ফিলসফি অফ স্বামী বিবেকানন্দ” )। ঘরে বসে বসে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে তার নামে যা তা লিখে দিলাম, আর কেউ কেউ x, y, z এসব লিখে সমর্থন করলাম, এটা কাজের কথা নয়। সমালোচনা করতে হবে বলেই করতে হবে, তার জন্য কোনও কিছু ভাবব না, জানব না এটা সঠিক পন্থা নয় । তার কাজটা নিয়ে ভাবুন, তার মতো চেষ্টা করুন, অযথা বাজে কথা লিখবেন না ।
মুখের ওপরে জবাব, এটাই দরকার ছিল। আপনার
অসাধারণ লাগলো! কিছুক্ষন আগে ই পড়লাম, গোগ্রাসে গিললাম বলতে গেলে।স্তব স্তুতিগান হীন এমন মোহহীন লেখা বিরল.. মিশনের ছাত্র থাকার সুবাদে মিশন ও মঠের যাবতীয় কার্যকলাপে মেয়েদের অংশগ্রহণের বিধিনিষেধ এর ব্যাপার টি লক্ষ্য করেছি।তাই সত্যতা সম্পর্কে দ্বিধাহীন।অন্য ভাবে ভাবালেন, ধন্যবাদ!
@souvik,
অবাক লাগলো মিশনের ছাত্র অথচ রামকৃষ্ণ-এর বাণী ঠিক মত পড়েন নি । তিনি ত্যাগী সন্ন্যাসী ভক্তদের উদ্দেশে কী উপদেশ দিয়েছেন , তার কতগুলি উল্লেখ করছি :-
১) “সন্ন্যাসীর পক্ষে কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ । সন্ন্যাসী স্ত্রীলোকের পট পর্যন্ত দেখবে না। স্ত্রীলোক কেমন জানো, – যেমন আচার তেতুল; মনে পড়লে মুখে জল সরে, সামনে আনতে হয় না । ”
২) “সন্ন্যাসীরা যে সংসার একবার ত্যাগ করেছে, আর তাতে প্রবেশ করবে না । যে থুথু একবার ফেলা হয়েছে, আবার তাহা খাওয়া উচিত নয় । ”
৩) “সন্ন্যাসী বা ত্যাগী হলে অর্থউপার্জন কী কামিনী সহবাস করা দূরে থাক, যদি হাজার বত্সর সন্ন্যাসের পর, স্বপ্নেও কামিনী সহবাস হচ্ছে বলে জ্ঞান হয় ও ………..হয়, অথবা অর্থের দিকে আসক্তি জন্মে, তা হলে অতদিনের সাধনা তত্ক্ষনাত্ নষ্ট হয়ে যায়”।
সারাক্ষন মেয়েদের কামিনী কামিনী করে বলে যাওয়াটা কেন! এত বিদ্বেষ বা ভয় কেন? মেয়েরা এত্ত খারাপ? আর কিসের এত সাধনা ফাধনা? এই এত্ত সাধনা করে করে করে , প্রচুর ধর্মের আচার বিচার পালন করেও তো দেখি ভাল কিছু হল না! সব সময়ে নাকি সমাজ ও জীবন খারাপ দিকেই চলেছে! আর তার করন হিসেবে ধর্মাচরন না করার কথাই বলা হচ্ছে! এত্ত বিবেকানন্দ – যার মধ্যে নাকি সুর্য্যের শক্তি- বিবেকানন্দ চর্চা স্তুতি এসব করেও লাভ হছে না তাহলে? লোকে খুব খারাপ? তা বাপু জন্ম হওয়ার বা দরকার কি? মেয়ে সৃষ্টিরই বা দরকার কি? নাটকের জন্য? তা নাটকেতো মজা পাওয়ার কথা নয় কারণ যিনি সর্বঞ্জ তিনিতো আগে থেকেই জানেন যে নাটকে কি হবে? আর তার ঐ লীলা বা তুচ্ছ নাটকেই বা এত আগ্রহ থাকবে কেন? বিবেকানন্দের মায়নেজমেন্টটা আসলে খুব ভাল ছিল। যদি ঐ শক্তি ফক্তিই থাকত তাহলে রাজা রাজরাজদের (যারা ভোগী এবং অনেক সময়েই অন্যায় কারি, পাওয়ার সেন্টার!) না গিয়ে একটা গরিব, চন্ডালদের নিয়ে একটা প্রতিষ্টান গরলেই হত নাকি? আসলে যখন যেমন দরকার তেমন কথা বলে একটা প্রতিষ্টান গড়েছেন এবং তাই চালাবার চেষ্টা করেছেন। ঐ হিন্দু ভাইরাতো বললেই সাহায্যের হাত টা বাড়িয়ে দিত না! আর পরস্পর বিরোধীতা মজ্জায় মজ্জায় ছিল, ছিলই! আর রামকৃষ্ণ মঠ ও প্রতিষ্টানে পড়লেই যে বানী সমূহ পড়তেই হবে এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে সেটা সেটা ছাত্রদের বাধ্যতামূলক করার আগে,প্রতিষ্টানের যারা সন্যাসী তাদের পালন করতে বললে হয় না! তারা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেন নাকি? বিবেকানন্দের সঠিক বিশ্লেষণ হওয়া উচিৎ তো বটেই এবং যেটা সত্যি সেটার ওপর ভিত্তি করেই তার মূল্যায়ন এবং আরো সব ধর্মগুরু বা ব্যাক্তিত্বদের মূল্যায়নই হওয়া উচিৎ! সোজা কথা!
পুরুষকে নারী বর্জন করতে বলা হয়েছে,আর নারীকে পুরুষ। আপনি মা সারদা দেবীর বানী পরুন,তিনি নারীদের নিজের পিতাকেও বিশ্বাস করতে বারন করেছিলেন(বিশেষ পরিস্থিতিতে)। একজন নারী সন্ন্যাসীনির পুরুষ বিশের মতো প পরিত্যাজ্য।
রামকৃষ্ণ মা মাসির বয়েশি স্নানরতা মেয়েদের তার কিশোর বয়েসে, তার কামারপুকুর গ্রামের হালদার পুকুরে লুকিয়ে স্নান করতে দেখতেন এবং সে সময় সিনিওর ওইসব মা মাসির বয়েসি কিছু মহিলা কিশোর রামকৃষ্ণ মা চন্দ্রমনি দেবীর কাছে সে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এ কথা রামকৃষ্ণ নিজামুখে স্বীকার করেছিলেন। হ্যা রামকৃষ্ণ কথামৃত তে এ কথা লেখা আছে। কত পাতায় সেটা এখন আমি মনে করতে পারছি না, পরে পাতার সংখ্যা এবং কত চ্যাপ্টার এ আছে সেটাও জানিয়ে দেব। এছাড়া, গত বছর ২০১৯ সালে নভেম্বরে, কালীপুজোর দিনে, ঘন্টাখানেক এর সঙ্গে সুমন, এ বি পি আনন্দের ওই অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য প্রচারিত হয়। বিশ্বাস না হয় ইউটিউব এ গিয়ে সার্চ করে অথবা এ বি পি এ আনন্দের মেন সাইটে গিয়ে সার্চ করে ওটা এখনই দেখতে পারেন।
আসলে সব টাই জলাঞ্জলি গেছে আপনার। সারদা মঠ বলে যে আরো একটি মঠ আছে এটা কী আপনার মাথা এড়িয়ে গেল!!!! কুমারী পূজা টা চোখে পড়ল না,? নাকি শ্রী শ্রী ঠাকুর স্ত্রী কে ষোড়শী রুপে পূজো করে স্ত্রী দের অসম্মান করলেন??
মঠের ছাত্র অথচ তারপরেও এটা কেন মাথায় ঢুকলো না যে কেন ওখানে নারী প্রবেশ বিধি নিষেধ আরোপ করেছে, সন্যাসী এমনি এমনি বলে?? সারদা মঠ কেন তবে ?? এই জন্য বেলুড় মঠ শ্রী শ্রী মায়ের নামে দুর্গা পূজার সঙ্কল্প করে।। আসলে পুথি মুখস্থ হয়েছে কাজের কাজ কিছুই হয় নি!!! বেকার খাটুনি।
কি আর বলবো । একটি অসাধারণ লেখা । পড়তে শুরু করলাম তো না থেমে পড়তে হলো । আমি বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, ও সারদা দেবী-র জীবনী গুলো ছোট বেলা থেকেই পড়তে শুরু করি । তবে মূল বই গুলো পরা শুরু করার পর অনেক বিষয় মাথায় এলো । যদিও কখনো আপনার মত ভালো করে লিখতে পারিনি কিন্তু কথোপকথনে উল্লেখ করেছি। লুইস বার্কের একটি বই আছে পাশ্চাত্যে বিবেকানন্দ । বইটি খোলা চোখে পড়লে অনেক কিছুই নতুন করে ভাবতে হয় । ভাবতে হয়, কেন আজও আমরা কোনো ব্যক্তির ঐতিহাসিক মূল্যায়নে ব্যর্থ ।
আমার মনে হয় , এর একটা প্রধান কারণ হচ্ছে অনেকই মূল বই গুলো পরেন না । দ্বিতীয়ত অনেকেই একটা অনিশ্চয়তায় ভোগেন । তৃতীয়ত মুক্ত চিন্তা -র জন্য সময় বের করতে অনীহা ।
বিবেকানন্দ থীয়সফিকাল সোসাইটি-র কাজকর্মে বেশ কিছুটা প্রভাবিত হয়েছিলেন । উনি জগদীশ বোসের সঙ্গেও কিছু যোগাযোগ রাখতেন । এই উপমহাদেশে-র মহাপুরুষ-দের মূল্যায়নে স্ব -বিরোধী ঘটনা ক্রমগুলোকে সামনে এনে এদের যুগসুত্র খুঁজতে হবে । এই মূল্যায়ন ব্যক্তিকে কলুষিত করার প্রয়াস নয় । প্রয়াস হচ্ছে আমাদের মধ্যকার স্ব-বিরোধিতাকে আবিস্কারের ।
@সৌরভ সোম,
স্বামীজির স্ব-বিরোধিতা খুজে লাভ কী আছে বুঝলাম না । সকল মানুষের মধ্যেই স্ব-বিরোধিতা আছে । আমি আজকে যেটা ভাবছি কালকেও সেইটি ভাববো এটা বেকার চিন্তা ভাবনা । চিন্তা ভাবনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে । প্রথম দিকে বিবেকানন্দ নাস্তিক ছিলেন, কারণ তখন ও পর্যন্ত ঈশ্বর-র সম্বন্ধে কেউ সঠিক ধারণা দিতে পারেননি, কিন্তু রামকৃষ্ণ-র সাথে পরিচয় হবার পর তিনি আস্তিক-এ পরিণত হন । এটা আশা করি সকলের জানা আছে ।
স্বামীজির মূল্যায়ন করতে গেলে আগে নিজের মূল্যায়ন করা দরকার ।
ভাল লাগল। সত্যি সত্যিই বেশ মুক্তচিন্তা। একতা জিনিস খেয়াল করে দেখছি বাংলাদেশের অনেক য়ুবক প্রগতিশীল এবং ধরমান্ধতা বিরধি। কেউ কেউ নিরীশ্বরবাদী। ফেসবুককে ধন্যবাদ এদের সাথে পরিচিত হবার জন্য। পিতামহের দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে ভালবাসি। বাংলার চরচা বাংলাদেশেই বেশী। অরবিন্দকে নিয়ে কিছু লেখা লিখুন না।
ভক্তপনামী’তে মুসলিম হিন্দু কেউই দেখি কম যায় না। মুক্তমনাতে লিখলে আওয়াজ আসে, “শুধু ইসলাম নিয়ে লেখেন কেন। হিন্দুদের নিয়ে তো লেখেন না। ও ভারতের টাকা খেয়ে শুধু ইসলাম বিরোধীতা।” আবার বিল্পব পাল যখন “গুরুচন্ডালীতে” লেখেন তখন আওয়াজ আসে, “পারেন তো শুধু হিন্দুবাদীতা নিয়ে লিখতে। কই ইসলাম নিয়ে তো লেখার সাহস নেই। তাহলে বুঝি মুন্ডু নেমে যাবে”
একটা জিনিস এই পাঁড় বিবেকানন্দ ভক্তরা কোন ভাবেই বুঝলো না যে, অভিজিতদা এখানে বিবেকানন্দ কত খারাপ তার বিচার আচার তুলে ধরেননি। তিনি এটাও বলছেন না যে বিবেকানন্দ ভাল কিছু করেননি। তিনি শুধু বুঝাতে চাচ্ছেন, ভদ্রলোককে যে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজা করা হয়, বলা হয় তাঁর কোন দোষ নেইই শুধু গুণে গুণে গুণান্বিত, সেটা ঠিক না। তিনি একজন মানুষ, আচ্ছা মানছি তিনি একজন মহান মানুষ, তবে শুধু মানুষ, দেবতা-ফেরেশতা-অবতার (যদি এজাতিয় আদৌ কিছু থেকে থাকে ) নন।
কিন্তু এঁরা কোন ভাবেই মানতে চাচ্ছেন না যে বিবেকানন্দ ভুল কিছু করতে পারেন। কনটেক্সট চাচ্ছেন। কি অদ্ভুত গোঁড়ামি। কোনো পরিপ্রেক্ষিতে যদি একজন মহামানব বাল্যবিবাহ বা সতীদাহকে মহান বলে সায় দিতে পারেন তাহলে কি পার্থক্য একজন সাধারণ মানুষের সাথে তাঁর। একজন মহামানবের কাছ থেকে তো আমরা বলিষ্ঠতা আশা করি নতজানুতা নয়। তাহলে পরিস্থিতীভেদে বক্তব্যের ধরণ পরিবর্তন হবে কেন?
কেউ কেউ বলছেন তিনি ৩০ ডলারে কোটনা কিনে কি শীতে মারা যাবেন। অবশ্যই তিনি কোট কিনবেন, কিন্তু সেই যুগের ৩০ ডলার তো এই যুগে কমসে কম ৭০০ ডলারের সমানুপাতিক। এই দামে কোট কেনাটা প্রয়োজনীয়তা নয় বিলাসিতা। তিনি অবশ্যই মীরশ্যম পাইপ কিনবেন কিন্তু ১৫ ডলারের পাইপ মানে সবচে দামীটা। এটা কি বিলাসিতা নয়। বলতে পারেন আর দশজন সন্যাসীওতো এরকম করেন। তবে তিনি আর দশজনের মতই। তবে সেই আমলে আম্রিকা ইংল্যান্ড গিয়ে তিনি কাঁপিয়ে টাপিয়ে দিয়ে এসেছেন, আজও তিনি কাঁপাচ্ছেন। সেদিক দিয়ে বিচার করলে তিনি একজন সফল প্রভাববিস্তারকারী। এটুকুই যা।
@এনালিস্ট,
(Y)
আমি দুই পর্বে প্রবন্ধ লিখে যে সহজ ব্যাপারটা বোঝাতে পারলাম না, সেটা আপনি এক মন্তব্যেই সেটা স্পষ্ট করে দিলেন।
হিন্দু জোকার্নায়েকদের কাজকর্মে আমি যার পর নাই বিনোদিত। চলুক এই বিনোদন।
@অভিজিৎ, (Y)
@এনালিস্ট,
“একজন মহামানবের কাছ থেকে তো আমরা বলিষ্ঠতা আশা করি নতজানুতা নয় ৷”
একদম ঠিক কথা ৷ এখানে বলে রাখি, তিনি ঠিক সেই কাজটিই করেছেন ৷ যেমন, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি তিনি সমর্থন করেছেন পশ্চিমীদের কাছে, আর আমাদের, i.e. হিন্দুদের কাছে এসবের কঠোর সমালোচনা করেছেন ৷ বাল্যবিবাহ/বিধবা ইস্যুতে যেউদ্ধৃতিগুলো দেওয়া হয়ছে তা সবই পশ্চিমে দেওয়া বক্তৃতা থেকে ৷
@এনালিস্ট, সটিক মন্তব্য।
তাই নাকি ?
স্ববিরোধী কে নন? আপনি আমি নই? মহাপুরুষরাও মানুষ , কখন নতজানু আর কখন দৃঢ় হতে হয় তারা সেটা আপনার আমার থেকে ভাল জানেন। ডেল কার্নেগী বলেছিলেন ঝড়ের সময় আপেল গাছের মত নুইয়ে পড় , ঝড় কমে আস্তে থাকলে আস্তে আস্তে দৃঢ় হও , বাশ গাছের মত হইয়ো না , ভেঙ্গে যাবে।আরো সহজ করে বললে একটা কথা আছে না বাংলায় “বেশি বড় হয়েও না ঝড়ে ভেঙ্গে যাবে , অতি ছোট হয়েও না , ছাগলে খেয়ে যাবে ।” স্বামিজি পরিস্থিতি অনুযায়ী চলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বলে গিয়েছিলেন। এই সহজ মুল্যায়ন এবং রামকৃষ্ণ আশ্রমের দান ধ্যান বন্যা বা অন্য দুরভিক্ষের সময় আপনি অস্বিকার করতে পারেন না।(জেটা আপনারা বেবাক চেপে গেলেন)। রাজা রামমোহন রায়কে নিয়েও কিছু বিতর্ক হয়। কিন্তু তিনি সতী দাহ নামে এক মারণ প্রথা রোধ করেন। সেটাকে বাদ দিয়ে কি আপনি তার চারিত্রিক ত্রূটি টাকেই বড় দেখাবেন , সতী দায় প্রথা রোধ করা কি কিছুই না ? চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে , সেটাকেই বড় করে দেখাবেন, চাঁদের আলোটা কিছুই নয়। নিজেকে নিজে প্রশ্ন ক্রুন, তারপর সমালোচনা করবেন , সেটাই ভাল হবে। আর কিছু প্রশ্ন থাকলে ক্রুন আমাকে দেব উত্তর ।
একটা বোর্ডে এই লেখার লিঙ্ক দেখে পড়তে হল। লেখাটা একপেশে। অরিজিৎ, দৃশ্য বাংলা এঁরা যে মন্তব্য করেছেন তার সঙ্গে মোটের উপর একমত হলেও আরও একটা বিষয়ের অবতারণা করতে হল। শুধু প্রসঙ্গ উহ্য রাখাই নয়, লেখক প্রায় সব ক্ষেত্রেই যেটা উল্লেখ করেননি সেটা হল কোনো রচনা বা উক্তি কার উদ্দেশ্যে করা, বিশেষ করে সংসারী-সাধু পার্থক্য। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এর মধ্যে বহুতর উক্তিই শিষ্যদের উদ্দেশ্যে করা (শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রে তো প্রায় সবগুলিই); খুব স্বাভাবিকভাবেই সন্ন্যাসীজীবনের পথনির্দেশের সঙ্গে সাংসারিক জীবনের পদ্ধতির ফারাক আছে। এমনকি পাত্রভেদে সম্পূর্ণ বিপরীত নির্দেশ বা উপদেশ দেওয়াও বহু ক্ষেত্রে কর্তব্য। আর এটা যে সাধারণ জীবনেও প্রায়ই ঘটে থাকে তা আশা করি কেউ অস্বীকার করবেন না।
বস্তুতঃ বোধ হয় আধ্যাত্মিক ব্যাক্তিত্বকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ও দেখাতে গেলে তাঁর ব্যক্তিত্ব তথা ভূমিকার মূল সূত্রটিকেই হয় উপেক্ষা না হয় অপব্যাখ্যা করতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
প্রেক্ষাপটকে বাদ দিয়ে স্বামীজির কথার “অর্থ” করতে গেলে অনর্থই হবে। যেমন অনেকে বলেন স্বামীজি নাকি ‘দ্ব্যার্থহীন’ ভাষায় বলেছেন, “for our motherland, a conjunction of the two great systems, Hinduism and Islam — Vedanta Brain and Islam Body is the only hope.’’ কিন্তু কথাটা উনি হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেননি, ওটা উনি লিখেছিলেন এক মুসলিম কে একটা ব্যক্তিগত চিঠিতে।
আসলে তার রচনাবলীর অধিকাংশই (বোধহয় নব্বই শতাংশই হবে) হলো বক্তৃতা, চিঠি, সাক্ষাৎকার বা ব্যক্তিগত কথোপকথন। তিনি যখন কিছু বলতেন তখন দর্শকের মানসিকতা ও পরিপ্রেক্ষিত মাথায় রেখে বলতেন। তিনি ব্রিটিশদের অনেক গুণের প্রশংসা করতেন , অনেক ব্রিটিশ শিষ্য-ভক্তও ছিল , কিন্তু আবার বিপ্লবী হেমচন্দ ঘোষ কে প্রেরণা দিয়াছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে।
এইভাবেই পাশ্চাত্যবাসীকে religious tolerance-এর বাণী শুনিয়েছিলেন, কিন্তু হিন্দুদের বলেছিলেন একটু fanatic হতে।
তার কর্মকাণ্ডের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু জাতির পুনরুত্থান এবং তিনি মনে করতেন,”the key to success is to follow the path of least resistance”। তিনি নিজেই একথা বলেছিলেন। এই কারণেই , পাশ্চাত্য দর্শকদের সামনে হিন্দু রীতিকে ইতিবাচক ভাবে উপস্থিত করেছেন,আবার হিন্দু দর্শকদের সামনে ততটাই hard hitting হয়েছেন যতটা তারা নিতে পারবেন। বিধবা বিবাহ এবং জাতিবাদ প্রসঙ্গে তার মতবাদ কে বুঝতে গেলে এই কথাটা মনে রাখতে হবে তিনি ধ্বংসাত্মক পদ্ধতি সমর্থন করেননি। হিন্দু জাতির মধ্যে আত্মমর্যাদা ও অহংকার গড়ে তুলতেই তিনি চেয়েছিলেন তাঁর প্রত্যাবর্তনকে নিয়ে একটু হইচই হোক। স্বামীজির এই আগ্রহ কতটা বিচক্ষণতার পরিচয়, যাদের mass psychology সম্পর্কে কিছুমাত্র ধারণা আছে তারাই উপলব্ধি করবেন। মানুষ grandiosity-র দিকে স্বভাবতই আকৃষ্ট হয় । প্রসঙ্গত বলা যায়, ভারত সেবাশ্রম সংঘ রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বেশি কাজ করা সত্বেও বাঙ্গালী মানসে দাগ কাটতে ব্যার্থ হয়েছে কিছুটা এই কারণে। আবার ইসকনের মন্দিররূপী বৃহৎ অট্টালিকাগেলি একই কারণে মানুষকে আকর্ষণ করে।
”জীবে প্রেম” অর্থে তিনি মূলত মানুষ কে ভালবাসার কথাই তিনি বলেছেন,পশু কে নয় কারণ তাঁর সময়ে ভারতের মানুষের খাবার জুটছিল না ,পশুর প্রতি দয়া করা তখুন barbaric। ”স্বামী-শিষ্য-সংবাদ” বইটির প্রথমেই তাঁর মতবাদ ভাবে পরিষ্কার বোঝা যায়। পশুবলি (animal sacrifice) তিনি সমর্থন করতেন কারণ তিনি মনে করতেন অশোক ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে মানুষ নিরামিষাশী হতে গিয়ে নিজেরাই পুরোপুরি vegetable-এ পরিনত হয়েছে। তিনি বলেও ছিলেন যে কয়েকটা ছাগলের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে দেশটা হাজার বছর ধরে পরাধীন রয়ে গেল।
তিনি রাজাদের সাথে ঘুরতেন কারণ তিনি মনে করতেন রাজাদের প্রভাবিত করতে পারলে সারা রাজ্যের কল্যাণ। কিন্তু তাঁর বিবেচনা বোধও ছিল। ক্ষেত্রির রাজা তাঁর শিষ্য ছিলেন এবং তাঁর দরবারে স্বামীজির পদসেবাও করতে চেয়েছিলেন কিন্তু প্রজাদের চোখে তাতে রাজাদের সম্মানহানি হবে বলে তিনি রাজি হননি।
মেয়েদের প্রসঙ্গে তাকে বিচার করতে গেলে মাথায় রাখতে হবে তিনি কোন যুগে জম্মেছিলেন। সেই যুগে তার মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট উদার। আজকের সমাজে দাড়িয়ে তিনি যে আরো উদারতা দেখাতেন তা বলা বাহুল্য। আসি ”সতিত্ব” প্রসঙ্গে। ‘সতীত্ব’ অর্থে ‘fidelity’। তিনি এই fidelity (দু’পক্ষেরই) চেয়েছেন কারণ তা সুস্থ ও স্থিতিশীল পরিবার গঠনের জন্য একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া যে সমাজে fidelity-র অভাব সেখানে সন্ন্যাস আশ্রম উন্নতি করতে পারবে না। কিন্তু বিভিন্ন শাস্ত্রে মেয়েদের উদ্দেশ্যে যে বিধি নিষেধ আছে তাতে যে পুরুষ স্বার্থ রয়েছে তা তিনি বুঝতেন . একবার একজন কে বলেছিলেন আমরা মেয়েদের উপর যে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখার জন্যই তাদের উপর সতীত্বের বাধা চাপিয়েছি। এখানে খেয়াল রাখতে হবে “fidelity”-কে নৈতিকতার দিক দিয়ে প্রশংসা করা আর নিজের স্বার্থের জন্য প্রশংসা করা এক নয়। একবার একজনকে ধমকের সুরে বলেওছিলেন যে আমরা ‘সতীত্ব’র গুণ গাই মেয়েদের উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম করার জন্য। কিন্তু আপনি পশ্চিমী ও ভারতীয় মহিলাদের তুলনামূলক আলোচনা ও মতামতের মধ্যে যে “স্ববিরোধিতা”-র সন্ধান পেয়েছেন তা যুক্তিযুক্ত নয় – আমাদের গ্রামের নির্জনতাও যেমন ভাল লাগে তেমন খৃস্টমাসে জমকালো পার্ক স্ট্রীটকেও কি ভাল লাগে না?
তিনি ভোজনরসিক ছিলেন এটা কোনো নতুন কথা নয় , তিনি রন্ধনও করতে পারতেন ভালো। তবে হা, রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের আহারের বৈচিত্রতাকে বিলাসিতা বলা যেতে পারে এবং আমর সেটাকে ভালো চোখে দেখি না। কিন্তু তা তাঁর বৈরাগ্যকে প্রভাবিত করতে পারেনি।
পুনরায় বলি, তার মূল উদ্দেশ্য ,ভারত হিন্দু ধর্মের resurgence, এবং তাই জন্য তিনি পাশ্চাত্যের কাছে হিন্দু ধর্ম কে সবসময় চেষ্টা করেছেন positive ভাবে দেখাতে। একই ভাবে, তিনি হিন্দু সমাজের সামনে নিজের বক্তব্য করেছেন এমন ভাবে যাতে তার নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা না হারিয়েও ,বিভিন্ন কুসংস্কার ও সংকীর্নতার উর্দ্ধে উঠে প্রগতিশীল ও dynamic হতে পারেন।
আমি আপনাকে ও এই লেখার পাঠকদের কে অনুরোধ করব ”স্বামীজির বাণী ও রচনা” ৬ ও ৯ খন্ড দুটি বারংবার পড়তে কারণ এখানে রয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত কথোপকথন ও উদ্বোধনে লেখা কিছু প্রবন্ধ যা বিভিন্ন সময়ে স্বামীজির মতামত বুঝতে আমদের সাহায্য করে।
ভালো লাগলো। অনেক কিছুই না জানা জানতে পারলাম। (Y) (N) । আগামি দিনে ভাগবদ ধর্ম ও আনন্দ মার্গ সম্বন্ধে জানতে চাই। আনন্দ মার্গ একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সঙ্ঘটন। শুনেছি তাঁরাও বিভিন্ন সেবা মূলক কাজে রত থাকেন। আনন্দ মার্গ সম্বন্ধে আলোচনা সমালোচনা পোস্ট করলে কিছু জানতে পারবো। (Y)
” “আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।” এটা কিন্তু কথার কথা, যে টা কে আপনি আবার আক্ষরিক অথে`ধরেছেন, এটা কিন্তু ওনার ঈশ্বর দশ`ন পাওয়ার প্রতি তীব্র আক্ষ্মাকে বুঝিয়েছে. নেতাজি কে “give me blood i will give you freedom” বলার জন্য ভ্যাম্পায়ার বলবেন না । মুক্তমনের হতে গেলে রসবোধ কি বিস`জন দিতে হয়?”
– কাজলের লেখার এই অংশের কোন উত্তর (কোন উত্তর হয়ত হয় না, প্রতিমন্তব্য বা লেখকের বক্তব্য গোছের কিছু হওয়া সম্ভব) আশা করেছিলাম। যারা মুক্তমনা এবং যুক্তি যাদের কাছে একমাত্র গ্রহণীয়, এইরকম একটি লেখার মধ্যে এইটি সবচেয়ে কাঁচা ও অযৌক্তিক অংশ। স্ববিরোধীতা খোঁজার ঝোকের প্রাবল্য এত বেশি ছিল যে বাক্যের স্বাভাবিক অর্থ বুঝতেই অক্ষমতার স্বাক্ষর হয়ে থাকল।
বিবেকানন্দের জীবনে স্ববিরোধীতা সেই সময়ের এবং বর্তমান কালের সমাজবাস্তবতা, নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করলে সম্ভবত লেখাটি আরো সমৃদ্ধ ও কার্য্যকরী হতে পারত। না হলে কষ্ট করে খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা স্ববিরোধীতা উপস্থিত করলে শেষবিচারে একগাদা তথ্যের সম্ভার ব্যতীত অন্য কোন কিছুই দাঁড়ায় না। বিবেকানন্দকে আপনি (লেখক) যদি ভন্ড, বুজরুকি সর্বস্ব মানুষ ভেবে থাকেন তাহলে এক কথা। তা হলে এই ধরনের লেখায় কিছু উপকার হতে পারে। আর যদি প্রবন্ধের আলোচনার শেষে এসে যা বলেছেন – “
– এই বিষয়ে আন্তরিক হন তবে তা অন্য কথা। সেই হিসাবে লেখা থেকে যে কি অনুধাবন করা গেল তা স্পষ্ট হয় না। আপনার লেখা পড়ার পর কাল থেকে কি করা উচিৎ? সবাইকে বলব “বিবেকানন্দ ভালো লোক নয়, সে ভন্ড, সে স্ববিরোধী”। কারো বাড়িতে ছবি দেখলে বলব – ‘এই এইটা সরিয়ে ফেল।’ যারা বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করেন তারা বিবেকানন্দের ভালো কথা বা ভালো কাজ (আপনার কথা অনুযায়ী – তার ভালো কাজ কি বা কোনগুলো সে সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই জানিয়ে রাখছি) স্মরণ করেই করেন। বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করেন বলে কেউ এখন বাল্যবিবাহ চান, বিধবা-বিবাহের বিরোধীতা করেন এমন তো শুনি নি। বিবেকানন্দকে সবাই মানুষ হিসাবেই তো দেখেন, তাকে তো কেউ পয়গম্বর বলেন না। যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার করলে তো আপনার লেখা অনুযায়ী একজন খাদ্যালোভী, ব্যসনলোভী, রাজা-গজার সান্নিধ্যলোভী ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কু-অভ্যাস, কু-স্বভাব ও কু-গুণাবলীর মানুষ হয়েও কি ভাবে তিনি
তার কার্যকারণ সম্পর্ক সম্বন্ধে আলোচনা করাটাই শ্রেয় ও প্রয়োজনীয় ছিল।
কে স্ববিরোধী নয় বলুন কে স্ববিরোধী নয় বলুন তো? আমি তো কাউকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না । প্রতেক মানুষের দৃষটি ভঙ্গী সময় এর সাথে সাথে বদলায়, সেটা স্বাভাবিক, মনে হয় স্বামী বিবেকানন্দ কথা গুলোর পশ্চাৎপট আলাদা, যেটা আপনি বলেন নি, শুধু উধৃতি তুলে দিয়েছন, উনি যা প্রথমে হতে পারে বিশ্ৱাস করতেন (বা লোকের সামনে বোলতেন) তা পরে বদলে যায়.
আমার দেখা অনেক জীবপ্রেমী কিন্ত মাংসাষী, পশুবলী এরা হয়ত নিজেরা করেননা, কিন্ত পরোক্ষ ভাবে তো…
সে ভাবে ভাবতে গেলে ঠগ বাছতে… । আপনাকে ভাবতে হবে সেই সময় পশুবলী খুব সাধারন ব্যাপার ছিল বাংলাতে, আমাদের ছোটেবলা তো দেখেছি পুজোর সময় পাঁঠা বলি হতে, মা, মাসী-রা যেত, এবং দেখত, আমার তো কখনও এদের দেখে খুব কঠোর মনের মনে হয় নি, বা মনে হয় নি এদের দেহে দয়া মায়া নেই. আ’মি কোনদিন পশুবলী দেখিনি বা দেখার সাহস আছে বলে মনে হয় না, কিন্তু আমি যে মানব/জীব দরদী সে অতি বন্ধু ও বলবে না. খ্যাদাভ্যসের সাথে মানুষের কাজের এতটা দৃঢ় সম্পক নেই. “জীবপ্রেম” টা কে বড্ড আক্ষরিক অথে`ধরে তুলোধনা করেছেন। আমার মতে “জীবপ্রেম” তুলোনা টা ঠিক টিঁকছে না ।
“আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।” এটা কিন্তু কথার কথা, যে টা কে আপনি আবার আক্ষরিক অথে`ধরেছেন, এটা কিন্তু ওনার ঈশ্বর দশ`ন পাওয়ার প্রতি তীব্র আক্ষ্মাকে বুঝিয়েছে. নেতাজি কে “give me blood i will give you freedom” বলার জন্য ভ্যাম্পায়ার বলবেন না । মুক্তমনের হতে গেলে রসবোধ কি বিস`জন দিতে হয়?
আজকালকার অনেক বিখ্যাত জীবনমুখী গায়ক নাকি স্কচ খেতে ভালবাসেন, ওটা ছাড়া চলে না. কিন্তু গানে থাকে না খেতে পাওয়া মানুষের কথা. আমরা নিজেরা কি এর থেকে বেরোতে পারি?
যখন সুযোগ মিলেছে আরামে থেকেছেন স্বামী জী, ভাল খেতে ভালবাসতেন, খাবার প্রতি তার ভালবাসার কথা সব`জনবিদিত. কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে সারা জীবন শুধু আরামে কাটিয়েছেন?
নেতাজী-ও হিটলার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, হিটলার কেমন লোক তার চেয়ে নেতাজীর কাছে বড় ছিলো ভারতের স্বাধীনতা । স্বামী জীর মনে হয়েছিল রাজাদের মিশলে অথ`সাহায্য পাওয়া যাবে যা তার দরকার ছিল, এর মধ্যে অসুবিধে টা কোথায়. আজকাল তো NGO রা CORPORATE দের অনুদান নেয়, সেটা খারাপ? না ওদের সাথে মেলামেষা করা খারাপ?
আমিও মনে করি “মহাপুরুষ” দের নিয়ে যে প্রচলিত ধারনার গুলোর তার পরিবতন দরকার. তারজন্য আমাদের কে আর-ও পড়তে হবে, সঠিক ইতিহাস জানতে হবে. আর দোষ টা কিন্তু প্রধানত ভক্ত গনের, মিথ গুলোর জন্য এরাই দায়ী.
কিন্তু আপনার লেখার উদ্দেশ্য টা কি? ধরুন সবাই মেনে নিল স্বামী জী স্ববিরোধী ছিলেন। তারপর? আপনার চিন্তাভাবনার মৌলোকিত্ব টা কোথায়? অন্যের কাজ নিয়ে সমালোচনা? সে তো সবাই করে। নিজের কিছু আছে
কি? যদি থাকে শোনান,শুনব । আপনার লজিক, ইংলিশ এর নম্বর তো নিঃসন্দেহে ভালো । আর একটা কেউ হয়ে দেখান না? ওঁনারা তো আর মাথার দিব্যি দিয়ে যান নি আর কেউ আসবে না এর পরে।
@kajal,
আমার লেখার উদ্দেশ্য আমার লেখার শেষ প্যারাগ্রাফেই আছে। তার অসংখ্য ভাল কাজ আছে বলেই তিনি সমগ্র ভূ-ভারতে একজন আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু আমি চেয়েছি ভক্তদের ভক্তির ভাবালুতায় আপ্লুত হয়ে বিবেকানন্দের চারিদিকে যে স্বর্গীয় জোতির্বলয় (halo) তৈরি করা হয়েছে,তা থেকে স্বামী বিবকানন্দকে বের করে নিয়ে এসে মানুষ বিবেকানন্দকে অনুধাবন করতে। আমরা বরাবরই বলে এসেছি মুক্তমনা হওয়ার অর্থ কেবল ধর্মের সমালোচনা নয়, বরং মহাপুরুষদের অমহাপুরুষসুলভ বিভিন্ন কাজের আলোচনা কিংবা সমালোচনা করাটাও কিন্তু মুক্তমনাদের ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হুমায়ুন আজাদ তার ‘নারী’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের নারী ভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। আহমদ শরীফ তার বইয়ে কাঙ্গাল হরিনাথের উপর ঠাকুর বাড়ির প্রবল আক্রোশের কথা সুনিপুণ শিল্পীর মতো তুলে ধরেছেন। প্রবীর ঘোষ তার অলৌকিক নয়, লৌকিক গ্রন্থে অনুকূল চন্দ্র সহ ভারতবর্ষের সব সম্মানিত পুরুষদের অযৌক্তিক ধ্যান ধারনার উল্লেখ করেছেন। প্রয়াত মুক্তমনা লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন্স তার বইয়ে এবং প্রবন্ধে মাদার তেরেসার অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরেছেন – কিভাবে তেরেসা কালোবাজারির সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন, কিভাবে তিনি দারিদ্র্য নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছেন, কিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ, কণ্ডম ব্যাবহার প্রভৃতিতে বাঁধা দিয়েছেন তেরেসা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে তার যৌক্তিক বিশ্লেষণে। এগুলোতে দোষের কিছু নেই; মহাপুরুষদের পূজার আসনে বসিয়ে নিরন্তর স্তব নয়, বরং তাঁদের কাজের নির্মোহ বিশ্লেষণই কেবল আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমি সেই ধারাটিই বহমান রাখতে চাই।
আমার কথা আসছে কেন তা ঠিক বোধগম্য হল না। স্বামী বিবেকানন্দের সমালোচনা করতে হলে তার মত হয়ে দেখাতে হবে নাকি আগে? সরি স্বামী বিবেকানন্দ হবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। তবে আপনার লজিকে তো সাহিত্য সমালোচনা, ধর্মীয় সমালচনা, দার্শনিক সমালোচনা, রাজনৈতিক সমালচনা, সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি সবই একে একে বাতিল করে দিতে হয়। আমি হুমায়ূন আহমেদের সমালোচনা করতে পারব না, কারণ তার আগে আমার হুমায়ূন আহমেদ হয়ে দেখাতে হবে। নজরুলের কোন কবিতার সমালোচনা আমি করতে পারব না, কারণ তার আগে আমার নজরুল হয়ে দেখাতে হবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা গিয়ারও সমালচনা আমার বাদ দিতে হয়, কারণ এ জীবনে প্রধানমন্ত্রী টন্ত্রি হয়ে ওঠা আমার পক্ষে আর হবে না। মুহম্মদের সমালোচনাও এই লজিকে হারাম বলে দিতে হয়, কারণ আমি কোন পয়গম্বর নই। এমনকি হিটলার, গোলাম আজম নিজামীদেরও সমালোচনা করার এখতিয়ার আমার আছে কিনা কে জানে, কারণ দুর্ভাগ্যবশতঃ ওগুলো হবার মত ক্ষমতাও আমার নেই। ঠিক বলেছি না?
@kajal,
১) ভালই বলেছেন, কিন্তু অভিজিৎ রায়ের সমালোচনা করার আগে অভিজিৎ রায় হয়ে দেখালেন কই? ‘অভিজিৎ রায়’ না হলে তো অভিজিৎ রায়ের সমালোচনা করা চলবে না মশাই। (H) (আপনারই পরোক্ষ যুক্তিতে)
২) হিচেন্স-এর ‘The Missionary Position’ বইটা আর মুক্তচিন্তা পাবলিকেশনের ‘মাদার টেরেজা – ভাবমূর্তি নির্মাণের রাজনীতি’ বইটা পড়ে দেখুন। দেখুনই না পড়ে, ক্ষতি কি মশাই!
বিঃদ্রঃ – হিচেন্সের সমালোচনা করার আগে হিচেন্স হতে হবে কিন্তু।
“স্ববিরোধী বিবেকানন্দ ” প্রবন্ধ লেখকের মূল উদ্দেশ্য স্বামীজীকে ছোট করা ।
“স্ববিরোধী বিবেকানন্দ ” প্রবন্ধ টি পড়লাম । সাথে মন্তব্য গূলোও । এখানে কুটকৌশলে একজন মহামানব কে ছোট করার অপচেষ্টা করা হয়েছে । তবে প্রবন্ধটির লেখক খুব ধূর্ত প্রকৃতির যা সহজেই বোঝা যায় । যতগুলো বিষয় তিনি উল্ল্যেখ করেছেন তার আগেই অনেক হীন ভাবে স্বামীজীকে সম্বোধোন করেছেন । অথচ সর্বোচ্য চেষ্টা চালিয়েও তাঁকে এভাবে সম্বোধোনের মত খারাপ কিছুই দেখাতে পারেননি । যা দেখিয়েছেন তা কোনোটা উল্লেখে ভূল , কোনোটা ব্যাখ্যায় ভূল , কোনোটা যুক্তিতে ভুল আবার কোনোটা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক । প্রবন্ধটির লেখক আবার নিজের লেখাকে নিরপেক্ষ ও যুক্তিগ্রাহ্য বোঝানোর জন্য মাঝে মাঝে স্বামীজীর কিছু প্রশংসা করেছেন আবার এও বলেছেন আলোচিত বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক । কিন্তু আবার সিদ্ধান্তে গিয়েছেন স্বামীজীকে মন্দ বলেই । যেমন – স্বামীজীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা মার্কশীট প্রসঙ্গে । মানে , যেকরেই হোক স্বামীজীকে ছোট করতেই হবে । “বিচার মানি কিন্তু তাল গাছ আমার” এই হচ্ছে প্রবন্ধের ধরন । স্বামীজীর দর্শন ও চিন্তা ভাবনা বুঝতে পারার জন্য অনেক উচূ স্তরের জ্ঞানের প্রয়োজন আছে । সাধারন বিজ্ঞান নয় , কোয়ান্টাম বিজ্ঞান জানুন , সাইকোলজি জানুন , আইনস্টাইনের থিউরীগুলো জানুন , স্টীফেন হকিংসের থিউরীগুলো জানুন , জানুন হিবস-বোসন কনা সহ সভ্যতা ও জীবন বিকাসের প্রক্রিয়া এভাবে আরো অনেক কিছু নিয়ে ভাবুন । তারপর স্বামী বিবেকানন্দ কে জানার চেষ্টা করুন । তখন আপনার এই কৃতকর্মের জন্য বা অজ্ঞতার জন্য আপনি লজ্জা ও অনুশোচনা বোধ করবেন । আর চরম শ্রদ্ধা , কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা উপলব্ধি করবেন বিশ্ব বিবেক স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি ।
@অভিজিৎ দা,লেখাটা অপূর্ব হয়েছে। (Y)
ইস্কন নিয়েও কিছু একটা লিখুন,ওরা ইদানিং বেশি লাফাইতেছে।গীতাশিক্ষার নাম কইরা গ্রামে গ্রামে,এমনকি কলেজ,ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের মনে নানা কুসংস্কারের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
বিবেকানন্দের মার্কশিটের ব্যাপারটা একটু দেখবেন। মার্কসের সহজলভ্যতা কিন্তু বেড়েই চলেছে। তাই, সেই যুগে যে ঐ মার্কস-ই যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেয় না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের এমন চ্রম ধোলাই অভি দা ছাড়া আর কে পারেন? শাবাশ!! (Y) (Y)
অভিজিৎ, আপনি স্বামীজীর যে বক্তব্যগুলোকে `পরস্পরবিরোধী’ বলেছেন তার পশ্চাৎপট বিচার করেননি, যেটা আপনার প্রবন্ধের মারাত্মক ত্রুটি। কেন `মারাত্মক’ সেটা ব্যাখ্যা করছি।
আমার বক্তব্য, স্বামীজীর চিন্তাভাবনা আদৌ বিক্ষিপ্ত ছিলনা, এক ও অভিন্ন সত্যকে তিনি বুঝতে ও বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যগুলোর মধ্যে তাহলে এই আপাত অসংলগ্নতা কেন?
এর কারণ হচ্ছে, একই সঙ্গে কোনো এক জায়গায় কথাগুলো তিনি বলেননি। স্বামীজীর উদ্ধৃতিগুলোর অধিকাংশই চিঠিপত্র কিংবা গুরুভাই বা শিষ্যদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন থেকে সংগৃহীত। স্থান-কাল-পাত্র সবই আলাদা। একই কথা সকলকে বলা হলেও বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তা নেয়। ফলে শ্রোতা কিভাবে তাঁর বক্তব্যকে নেবে সেটা ভেবেই `বিভিন্নভাবে’ তাঁকে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। বক্তব্যের ভাষা পাল্টেছে, অনেক ক্ষেত্রে বাহ্যিক অর্থটাও বদলে গেছে।
তাই পশ্চাৎপট বিচার না করলে বিভ্রমটাকেই সত্যি বলে মনে হয়।
উদ্ধৃতিগুলো আরও বিষদে দিলে ভালো হত। তর্কটা জমতো।
সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এধরণের নৈর্ব্যক্তিক লেখা দেবেন।
শুভ দীপাবলী। (I)
@অভ্রনীল,
বাল্যবিবাহ বা পশুবলিকে সমর্থন করতে কোন ‘পশ্চাৎপট’ ব্যবহার করাকে আপনি ‘জাস্টিফায়েড’ মনে করেন?
@Sam,
এরা অনেকটা সেই ইসলামিস্টদের মতোই। কোরানের ভায়োলেন্ট ভার্স দেখালেই নাকি সুরে বলে সব ‘আউট অব কন্টেক্সট’।
যেন কনটেক্সট শুধু খারাপ আয়াতের জন্যই প্রযোজ্য। ভাল ভাল আয়াতগুলো বা বাণীগুলো কনটেক্সটের বাইরে থাকবে।
আমিও তো বলতে পারি স্বামীজি যে ভাল ভাল কথা বলেছেন, সেগুলোও অভ্রনীল সাহেব ‘ পশ্চাৎপট বিচার’ করে করেননি, ‘ পশ্চাৎপট বিচার’ করলে সেগুলো আর ভাল শোনাবে না, সেগুলোও আউট অব কন্টেক্সট। ইসলামিস্ট মোল্লা কিংবা স্বামীজি-ভক্ত কেউই ভাল ভাল বানীগুলোর ব্যাপারে টু শব্দ করে না, কেবল সমস্যা হয় চাঁদের উল্টো পিঠই দেখালেই। মজার না?
যাহোক, স্বামীজি ছিলেন আদ্যোপান্ত স্ববিরোধিতাগ্রস্থ, এটাই প্রবন্ধের মূল কথা। এটা খণ্ডন করতে না পেরে উনারা নানা পদের ত্যানা প্যাচাচ্ছেন। শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায়? আর তাছাড়া স্বামীজির উক্তি শুধু নয়, তার কাজেও রয়েছে স্ববিরোধিতা। একমুখে স্বামীজি জীবপ্রেমের গান গেয়েছেন তো আরেক মুখে বরাহনগর মঠে পশুবলি চালু করেন। একমুখে চণ্ডালদের ভাই বলে সম্বোধন করেছেন তো অন্যদিকে আবার বলছেন, ‘ভারতে ব্রাহ্মণেরাই চরম আদর্শ’ কিংবা ‘‘জ্ঞানোন্মেষ হলেও কুমোর কুমোরই থাকবে’ । একদিকে বাল্য বিবাহকে খারাপ বলছেন তো পর-মুহূর্তেই আবার বলছেন, ‘বাল্য বিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করেছে’। একবার কুসংস্কার দূর করার জিকির তুলছেন তো একই মুখে আবার জন্মান্তর, আত্মা আর জাতিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে সাফাই গাইছেন। একবার নিজেকে সন্ন্যাসী বলে জাহির করেছেন তো আরেকবার ভোগ, বিলাস ব্যসনে আর রাজ রাজাদের গৃহে গিয়ে উদরপূর্তিতে অফুরন্ত সময় ব্যয় করেছেন। রেফারেন্স দিয়েই আমি স্বামীজির স্ববিরোধিতাগুলো তুলে ধরেছি। তারপরেও উনারা বলবেন, কন্টেক্সট নাকি বিবেচনা করা হয়নি। কি আর করা।
@অভিজিৎ, আপনার রেফারেন্সগুলো তো দেখলাম। কিন্তু রেফারেন্স আর পশ্চাৎপট কি এক হল স্যার? (H)
@অভ্রনীল,
রেফারেন্স দেয়া হয়েছে পশ্চাৎপট তুলে ধরতেই। ঘটনার রেফারেন্স না দিলে বুঝবেন কি করে যে স্বামীজি ঘটা করে জীবপ্রেমের গান শুনিয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে, তিনিই আবার ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ‘বরাহনগর মঠে’র প্রতিষ্ঠার পরে সেখানে পশুবলি প্রবর্তন করেছিলেন, নিবেদিতাকে দিয়ে এর স্বপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন? কি করে জানবেন যে জীবপ্রেমিক স্বামীজিই বলেছিলেন, ‘আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।’
পশুবলি না হয় বাদ দিন, স্বামীজি যে বাল্য বিবাহ সমর্থন, সতীদাহ সমর্থনের মত বর্বর প্রথা সমর্থন করেছিলেন, জাতিভেদের সাফাই গেয়েছিলেন, সেগুলোর মানসিকতা বুঝতে পশ্চাৎপট লাগে না। যে সতীদাহে হাজার হাজার নারী পুড়ে মরেছে তার চোখেরই সামনে, তাকে স্বামীজি নির্লজ্জভাবে সমর্থন করেছেন। জোকার নায়েকের মত নারী-পুরুষের অনুপাতের ভুল পরিসংখ্যান হাজির করে বিধবা বিয়ের বিরোধিতা করেছেন, কিংবা বলেছেন, ‘‘বাল্যবিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করিয়াছে’। বলা বাহুল্য, এগুলো সীমাবদ্ধ মানসিকতার পরিচায়ক, কোন যুগনায়কের নয়।
আর পশ্চাৎপটের ধুয়া তুলে এগুলোকে জায়েজ করতে চাইলে, যে কোন অপরাধ – তা হিটলারের লাগাতার গণহত্যাই হোক, কিংবা মুহম্মদের বানু কুরাইজার উপর আগ্রাসনই হোক, কিংবা হোক একাত্তরে রাজাকারদের গন-ধর্ষণ – সবই কিন্তু জায়েজ করা সম্ভব, আর স্ব স্ব ক্ষেত্রে বহু এপোলোজিস্টরা তাই করেন।
@Sam, আমি বলছিনা সবকিছুই ঠিক। কিন্তু আরো ধৈর্য ধরে সবকিছু বিবেচনা করা উচিৎ। বাল্যবিবাহের ব্যাপারে কিছু বলাটা বাড়াবাড়ি, কিন্তু পশুবলি আদৌ অনৈতিক কিছু কিনা সেবিষয়ে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। তাছাড়া স্বামীজী যাদেরকে একথা বলেছেন তাদের মানসিকতাটা দেখতে হবে। কারণ, বহু মানুষ এই বলিদান দেওয়াটাকে ঈশ্বরকে তুষ্ট করার(ঘুষ দেওয়া?) পথ হিসেবে দেখেন। এঁদের স্বচক্ষে দেখেছি বলেই আস্ত উন্মাদ বলে বোধ হয়না। ঈশ্বরকে ভজানোর জন্য মানুষ আরো হাজার ধরণের পাগলামি করে থাকে। মানে শুরু করলে শেষ পর্যন্ত ধর্ম বা ঈশ্বরেই তর্ক শেষ হবে।
জীবে প্রেম মানে তো উদ্ভিদপ্রেমও বোঝায়। তাহলে কি হাওয়া খেয়ে বাঁচব? :-s
তাহলে তর্ক শুরু করুন…. 🙂
@অভ্রনীল,
আসলে দুঃখটা কি জানেন! যিনি ‘ হাজার ধরণের পাগলামি’ দেখেও ‘তাদের মানসিকতাটা’ বিচার করে তাদের মনের মত পরামর্শ দেন, হে হে, তাঁকে ‘যুগপুরুষ’-টুরুষ বলতে লজ্জা হয় যে। যে যেমন, তাঁকে তেমন-তেমন পরামর্শ দেব। যে পরীক্ষায় টুকলি করে, তাকে টুকলির গাইডবুক উপহার দেব। যে ফার্স্ট হয়, তার সামনে আবার বলব,”টুকলি খুব বাজে জিনিস।”
বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা-র কয়েকটা খন্ড কিছুটা করে পড়া ছিল। এই পোস্টটা পড়ার পর পোস্টে উল্লিখিত খন্ডগুলো ভালো করে পড়লাম, প্রায় ১ মাস ধরে। ‘পশ্চাৎপট’ তো স্বামীজীর ফেভার-এ কিছু বলল না মশাই।
বিঃ দ্রঃ – স্বামীজীর শরীরে আবার ‘ইলেকট্রিক কারেন্ট’ জন্মাত, জানেন তো?
@Sam,
😀
ইয়ে আপনার ইমেইল কি চেক করেছেন? লগইন করে মন্তব্য প্রদান করতে পারেন কিন্তু।
@অভিজিৎ,
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@Sam, যা দেখছি আমি এখানে সবচে মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। আপনাদের যুক্তিগুলো মানতে পারলামনা বটে- আমিও স্বামীজীর রচনাবলী পড়ে পাল্টা কমেন্ট মারবো।
http://www.islam-watch.org/authors/78-sujit/88-humanity-assassinated-ethnic-cleansing-of-minorities-in-islamic-bangladesh.html
@পাপু, খুবই মর্মান্তিক। এর কারণ কী কে জানে।
@পাপু,
:hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee:
http://www.islam-watch.org/AbulKasem/SexInIslam/sex_and_sexuality_in_islam.htm
লড়তে হলে এনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন,
@পাপু,
হাঃ হাঃ হাঃ … আবুল কাশেমের এই লেখা দিয়ে কি বোঝাতে চাইলেন বোধগম্য হল না। এই লেখাটা মুক্তমনাতেও আছে, এমনকি এর বাংলাও করা হয়েছে। একটু কষ্ট করে আমাদের সাইটে সার্চ করলেই পাবেন।
আর ব্যাপারগুলো আপনার কাছে মিচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বলে মনে হলেও আমার কাছে না। এদের বিরুদ্ধে আমি প্রতিদিনই লড়ছি। আমার বহু লেখাতেই এর প্রমাণ পাবেন। ইসলামের বিরুদ্ধে একটা সময় আমি যে পরিমাণ লিখেছি, অনেকেই সেরকম লেখেননি। সেটা কথা নয়, কিন্তু আপনাদের সমস্যা হল – নিজের ধর্মটিকে সযত্নে আগলে রেখে অন্যের পশ্চাতে হান্দাতে ভালবাসেন । এইটাই হল সমস্যা। আবার একটা নাম নিয়েছেন ‘আবুল কাজী বাসার’। যাতে মুসলমান টাইপের একটা ফিলিং আসে। এগুলা চালাকি ভালই জানা আছে বাপু। ‘কাজী আবুল বাসার’ নাম হলেও না হয় বুঝতাম। নাম নিয়েছেন ‘আবুল কাজী বাসার’। তা আবুলই নন, পাপু হন, আর গাপুই হন, কিংবা হন না কোন এক হরিদাস পাল – নিজেদের নধর গোপাল মুখটাও পারলে একটু দেইখেন আয়নায়। নজরুল বলেছিল মনে আছে – ‘অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো’।
আবার উত্তর দিতে আসলে এভাবেই কান মলা খাবেন, বলে দিলাম।
মল্লের দোউর মসজিত অবধি, অন্যের লেখা মাল না জেনে নিজের নাম চালান করলে, উত্তর
দেয়া যায় না কাকা,
@পাপু,
মোল্লার দৌড় না হয় মসজিদ অবধিই হল, কিন্তু আপনার যে দৌড়ের ছিরি তাতে উত্তর দেয়াটাই সময়ের অপচয়। চারটা শব্দ দিয়ে একটা বাক্য লিখলেন, তার মধ্যে তিনটা শব্দের বানানই ভুল – ‘মল্লের’, ‘দোউর’, ‘মসজিত’ !!!! বাহ বাহ~!
কার মাল নিজের নামে চালান করলাম তা একটু খোলসা করুন না দাদা।
এইসব ভং চং বহু দেখা হয়েছে। লেখায় যা বলা হয়েছে তা খণ্ডন করতে না পারলে উন্মাদীয় প্রলাপই ভরসা।
সুনীলের প্রথম আলো উপন্যাসে স্বামীজির দন্ধ নিয়ে সুনীল যে ভাবে আলোচনা
করেছেন তা অনেক যুক্তি যুক্ত, আর অভিজিৎ আপনি যে সকল বই থেকে আপনার লেখাটা
লিখেছেন তার সম্পূর্ণ তালিকা তো আপনি লিখেছেন , আপনার লেখাটা যে শুধু স্বামীজির কোটেশন নয়
তা সবাই দেখতে পাচ্ছে, ফালতু ফালতু অন্যের লেখা কষ্ট করে টাইপ করে এত বাহবা পেতে চান কেন তা কে জানে ?
আপনি তো এত স্বামীজি সমন্ধে এত জানেন বলুন তো স্বামীজি ভারতবর্ষে ফিরে প্রথম কি ভাষায় বক্তিতা দেন ? আর কেন ? উত্তর না দিতে পারলে জানব আপনি বোকা চোর , কি চুরি করেছেন তাই জানেন না ?
ইতি আবুল কাজী বাসার (পাপু)
@পাপু, ‘ফালতু ফালতু অন্যের লেখা কষ্ট করে টাইপ করে এত বাহবা পেতে চাওয়ার’ বিষয়ে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন – আদৌ চাইছেন কিনা (বা স্রেফ ফাজলামি মারছেন) কিছুতেই বোঝা গ্যালো না। দ্বিতীয়টা হলে ঠিক আছে। না হলে, ছুটতে হবে আর্কি।
যদ্দুর মনে হয় – ‘প্রথম আলো’ পড়া-সত্ত্বেও আপনি এই জায়গাটা মিস করে গ্যাছেন, তা হোলোঃ লেখক সুনীল একজন হার্ডকোর নাস্তিক, এবং একজন নাস্তিক ও একলপ্তে প্রতীক-বিরোধী (Iconoclast) না হ’লে ও মাস্টারপিস রচনা সম্ভব না।
‘স্বামীজি ভারতবর্ষে ফিরে প্রথম কি ভাষায় বক্তিতা দেন…উত্তর না দিতে পারলে জানব আপনি বোকা চোর’ -টা কী খুব অদ্ভুত, ও একেবারেই বাচ্চা-সুলভ ন্যাকামি শোনায় না? ভারি আনন্দ পেলাম এই যুক্তিহীন ও আধোআধো কমেন্ট (‘বক্তিতা’) পড়ে। অনেকেই পাবেন, ভরসা। থ্যাঙ্কু!
@আদিদেব, `প্রথম আলো’ একটি উপন্যাস- এই ভরসায় সুনীল মহাপুরুষদের জীবনী নিয়ে বহু জায়গায় যথেচ্ছ ছিনিমিনি খেলেছেন। সে তুলনায় বরং `সেই সময়’-এ সুনীল এই অপকর্ম তত বেশী করেননি।
@পাপু,
‘স্বামীজী’ যে ভাষাতেই বক্তব্য রেখে থাকুন না কেন, তা কখনোই এই প্রবন্ধের যুক্তিগুলোকে খন্ডন করতে পারবে না।
@পাপু,
স্বামীজি সরাসরি ভারতে ফেরননি। তিনি প্রথমে কলম্বো পৌঁছিয়েছিলেন, পরে সেখান থেকে পাম্বান, মাদ্রাজ হয়ে কলকাতা আসেন। এই ভ্রমণের সময় অসংখ্য বক্তৃতা করেন যা ‘কলম্বো থেকে আলমোরা’ [Lectures from Colombo to Almora] হিসেবে পরবর্তীতে সংকলিত হয়েছে। এই হিন্টই কি যথেষ্ট নয়?
যাহোক এই ধরণের কুইজের তাৎপর্য কি বলুন তো? কোন একটি তথ্য সম্বন্ধে আমি অবগত না থাকতে পারতাম, তাতে কি আমি যে বিষয়টা নিয়ে লিখেছি সেটা মিথ্যা হয়ে যাবে? আপনাকেও একটা সহজ কুইজ দেই। বৈকুন্ঠনাথ সান্ন্যাল কে ছিলেন? স্বামীজির বেলুড় মঠের ট্যাক্স দেয়া নিয়ে যখন গোলমাল হয়েছিল, সেখানে তার ভূমিকা কি ছিল?
ধরুন, আপনি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। তবে কি আপনি যে মন্তব্য করেছেন সব মিথ্যে হয়ে যাবে, প্রমাণিত হবে যে আপনি চুরি করে মন্তব্য করেছেন? আপনাকে বলি – পুনর্বার মন্তব্য করতে আসার আগে একটু যুক্তিবিদ্যার পাঠটা নিয়ে আসবেন, কেমন? বিশেষত Argumentum ad hominem, Red herring এবং Non sequitur ফ্যালসিগুলো কি সেটা জেনে আসলে সবাই উপকৃত হয়। এটা তাফালিং করার জায়গা নয়।
@অভিজিৎ,
ধুর মশাই এইসব আজেবাজে লেখার থেকে কমিক লিখুন কাজ দেবে ।
‘এভেন্ট’ না, ইভেন্ট। চ্চ।
যাহোক, রিপ্লাই আশা করছি। মডারেশনের পর। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ, খুব ভালো লেখা। প্রায় আমার নিজেরই কিছু চিন্তা ভাবনা এখানে আগে থাকতে লেখা হয়ে গ্যাছে, জেনে অবাক, করমর্দন। স্রেফ একটি ব্যাপার একটু উল্লেখ করে দিলে আরো ‘মুক্তমনা’ হোতো, বিশ্বাস। ঐ ভোগবাদী বিবেকানন্দের ইস্যুতে, এটাও বলাঃ অসম্ভব দারিদ্র্য সহ্য করে যে ভদ্রলোক ভারতবর্ষ চষে বেড়িয়েছেন এবং এই দেশের শ্রমজীবী মূর্খ দরিদ্র, আরো সংক্ষেপে বললে, গরীব, তাদের ভালোবেসেছেন (বিবেকানন্দই একবার বলেছিলেনঃ ‘আমি নিজে গরীব, আমি গরীবদের ভালোবাসি’ । ) – তাঁর এই ‘বিলাসপ্রিয়’ আচরণগুলো ‘এগুলো তো আমাদের ক্ষেত্রেও খাটে, সন্ন্যাসী হলেও তাঁর ইন্সটিংক্টগুলো তো থাকবেই, তাছাড়া একটা মানুষের অনেকগুলো দিক থাকে, অনস্বীকার্য। আর এই ‘টাকা সঞ্চয়’ বা ‘পাইপ খাওয়া’ এভেন্টগুলো তো তাঁকে আরো বেশি করে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে- পরস্পরবিরোধী হলেও, প্রতিপন্ন করে, প্রফেট হিসেবে নয়। এরকম মানুষ স্পষ্টত, খুবই আবেগপ্রবণ, ত্রুটিপূর্ণ, রক্তমাংসের-ই, তাই আমার পছন্দের। অন্তরের দিক থেকে , এরকম লোক আর যাই হোক, খুব খারাপ হন না। …
এই সহ-ব্যাপার উল্লেখে আর কিছু না, আরো নিরপেক্ষ, কী বলব, তাই শোনাত। যাগগে, এ বাদ দিলেও, যা আছে, তা তুঙ্গ লজিকাল, সহস্রহাততালিযোগ্য। শেষ অবধি, আমরা সকলেই জানি, বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা করা যায় (বা সম্মান), তাঁর হৃদয়ের জন্যে। হাইপোথ্যালামাস-এর জন্যে, বাকি মস্তিষ্কের জন্যে নয়। ফের ধন্যবাদ। শেয়ার করলাম। 🙂
@আদিদেব, কিছুটা একমত।
স্বামীজী বই-এর নিন্দা করেছেন। করতেই পারেন। কিন্তু, বই না থাকলে তাঁর মহান (?) উক্তিগুলো লোকে জানবে কি করে, সে বিষয়ে কোনো উপায় বাতলে দিতে এই প্রবন্ধের লেখক মহাশয়-কে অনুরোধ করছি। উপায় বাতলানোর জন্য স্বামী অভেদানন্দের ‘মরণের পারে’-র সাহায্য নিতে পারেন, এক্টোপ্লাজম-টাজম নিয়ে বইটিতে অসামান্য (বিশ্বাস করুন, অসামান্য :)) ) তত্বকথা রয়েছে।
আরো একটা প্রশ্ন, ‘বিবাহ’ নিয়ে এত ঘৃণা! বলি, বিবাহ না হলে বিবর্তনের ধারাটাই বা এগতো কি করে?
বিবাহবর্জিত প্রজনন করে? 😕 :-s
সবশেষে, লেখক মহাশয়ের প্রতি আন্তরিক সেলাম। অনবদ্য লেখা। প্রবীর ঘোষ-এর বইগুলি পড়েছি, কিন্তু এই বিপুল তথ্য জানা ছিল না। ভাবার উদ্রেক-ও সেভাবে হয়নি। ধন্যবাদ। তবে একটা অভিযোগ-ও আছে। এত ‘উক্তি’ জুগিয়ে আমার সুস্থ পেট-কে হাসিয়ে অসুস্থ করার জন্য। :lotpot:
রাজেশ দত্ত-র মনোবিজ্ঞানের আলোকে ঈশ্বর দর্শন গ্রন্থে বলেছেন,
“স্বামী অভেদানন্দ বিবেকানন্দের স্মৃতিচারণায় এক ‘দিব্য-অনুভূতি’র ঘটনা বলেছিলেন। “রাত তখন গভীর। স্বামীজী ও আমি পাশাপাশি বসে ধ্যান করতে করতে স্বামীজীর শরীর খুব কাঁপতে লাগল। স্বামীজী আমাকে বললেন,’আমার ছুঁয়ে থাক তো।’ আমি ডানহাত দিয়ে তাঁর ঊরু ছুঁলাম। স্বামীজী বললেন,’কিছু feel করছিস কি?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, ইলেকট্রিক কারেন্ট-এর মতো।’ ক্রমে ঐ কাঁপুনি এত প্রবল হল যে, আমার হাত কাঁপতে লাগল। স্বামীজী বললেম, ‘একেই কি শক্তি সঞ্চার বলে – ঠাকুর যা বলেন?’ আমি বললাম,’কি জানি।’ ” অভেদানন্দ না জানলেও, মনোবিদরা জানেন, এটি স্পর্শানুভূতির ভ্রম।” :lotpot:
রাজেশ দত্তের একটা চমৎকার লেখার খোঁজ পেলাম এখানে –
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরক্ষায় বিবেকানন্দের আদর্শ: সর্ষের মধ্যে ভূত
কামারপুকুরের গদাধর চাটুজ্যের (রামকৃষ্ঞ) বিয়ে হয়েছিল ২৪ বছর বয়সে। ক্ষেমঙ্করী (সারদা দেবী) -র বয়স তখন ৫ বছর। তৎকালীন সামাজিক নর্ম অনুযায়ী এ বিয়ে । লোকটি তৎকালীন সামাজিক প্রকরণের থেকে মানসিক ভাবে হয়তো এগিয়েই থাকবেন, তাই ফুলশয্যার রাতে বাসরঘরে এই বালিকাকে দেখে ভাবে বিভোর হলেন। মা বলে ডাকলেন। কিন্তু তবেই বুঝুন, ২৪ বছরের ছেলেটি ৫ বছরের মেয়েটির সাথে ফুলশয্যার রাতে সেক্স না করে কেন তাকে পুজো করল – স্বাভাবিক যৌনতাবোধসম্পন্ন লোকেদের কাছে তা সেকালেও যতটা আশ্চর্যের, আজও তেমনি – দেখাই যাচ্ছে। সেই মেয়েটি, যাকে ৫ বছর বয়সে প্রথম দেখা, সে ক্রমশ: বড় হয়ে উঠলে, যুবতী হয়ে উঠলেও কেন তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা গেল না, কেন তাঁকে লোকটি সারাজীবন মা বলেই ডাকলেন, সেটা বুঝতেও খুবই অসুবিধে হয় বুঝতে পারি । মুক্তমনা বলে কথা ।
@সোমনাথ,
এক কাজ করেন, আপনের গুরু রামকৃষ্ণের মত আপনেও চব্বিশ বছর বয়সে ৫ বছরের এক কন্যারে বিয়ে করে মা ডাকা শুরু করেন। দেখেন কি হয়। জিতেন্দ্রিয় হবার নামে ইদিপাস কমপ্লেক্সে ভুগলে অবশ্য অন্য কথা।
আরেকটা ব্যাপার – আপনার কথা শুনে মনে হয় সারদা দেবীর বয়স সারা জীবন ৫ বছরেই আটকে ছিল। তা তো নয়। এমনকি পরিণত বয়সেও রামকৃষ্ণ সারদা দেবীর সাথে কোন সুস্থ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারেননি। যেমন, ১৮৭২/৭৩ সালের দিকে দক্ষিণেশ্বর গিয়ে (যখন সারদা দেবীর বয়স ছিল প্রায় ২০) ৮ মাস একই শয্যায় শয়ন করেও এবং কামভাব জাগ্রত হবার পরেও রামকৃষ্ণ সারদামনির সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারেননি, বরং, ‘‘ঠাকুর শ্রী শ্রী মাতাঠাকুরাণীর অঙ্গ স্পর্শ করতে উদ্যত হইবামাত্র মন কুণ্ঠিত হইয়া সহসা সমাধিপথে এমন বিলীন হইয়া গেল যে, সে রাত্রিতে উহা আর সাধারণ ভাবভূমিতে অবরোহণ করিল না’। এগুলো রামকৃষ্ণের জীবনীতেই বলা আছে। রামকৃষ্ণ মশাই যখন মারা যান তখন সারদা দেবীর বয়স ছিল ৩৩। আর তাছাড়া তিনি শুধু নিজের স্ত্রী নয়, অন্যের বেলাতেও একই উপদেশ দিয়েছেন। যেমন, অন্যতম গৃহী-ভক্ত ভবনাথের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বলে – ‘যে বীরপুরুষ, সে রমণীর সাথে থাকে, না করে রমণ’। তার অপর এক গৃহীভক্ত বিনোদকেও রামকৃষ্ণ একই ভাবে নিজের স্ত্রীর সাথে না শুতে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন –‘ দেখো, সঙ্গ হোক, আর না হোক, একসাথে শোয়াও খারাপ। গায়ের ঘর্ষণ, গায়ের গরম’। কাজেই কেবল নিজের ফুলশয্যার কথা তুলে এই পাগলকে রেহাই দেয়া যাবে না সোমনাথবাবু।
তাও না হয় আপনার কুযুক্তি মানা গেল কিন্তু, তিনি তো নারীদের সম্পর্কে ঢালাওভাবে বলেছেনই – ‘নারীরা নরকের দ্বার’ ( নরকস্য দ্বারম্), কিংবা ‘মেয়ে মানুষের কাছে খুব সাবধান হ’তে হয়। তারা ত্রিভুবন গিলে হায়’ – এগুলো কথা তো ‘মহাপুরুষ’ রামকৃষ্ণের উক্তিই। আসলে প্রথম থেকেই অলীক ঈশ্বরলাভের মিথ্যা সংস্কারে গা ডুবিয়ে দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে কাম জয়ের প্রবল ইচ্ছা তৈরি করতে গিয়ে শারীরিকভাবে নিজে তো অক্ষম হয়ে গিয়েছিলেনই ( ‘সখিভাবে’ থাকা, মেয়েদের গয়না পরা ইত্যাদি থেকে শুরু করে নিজের স্ত্রীকে মা ডাকা, ষোড়শীজ্ঞানে পূজা করা ইত্যাদি – সবগুলো টুকরো জোরা দিয়ে খেয়াল করুন), অন্য ‘শিয়াল’দেরও একইভাবে ‘লেজ কাটার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে কোন পরিস্কার বৈজ্ঞানিক ধারনাই রামকৃষ্ণের ছিল না। এটাই বাস্তবতা।
অভিদা, একটা কথা। আমি পড়েছিলাম যে প্রাচীন ভারতে নাকি কাপালিক নামের এক সম্প্রদায় নরবলি দিত। ব্যাপারটা কি সত্য? আর যদি সত্য হয় তবে এরা কি মুলধারার হিন্দু ছিল?যদি সেটাই হয় তবে কি এই ধরনের কোন মানসিকতা থেকেই তারা নরবলিম দিত? তাহলে বিকানন্দের চিন্তা ধারার থেকে ওদের তফাতটা কি ছিল?এসব অসুস্থ মানসিকতাই যুগে যুগে নরবলি দিতে উৎসাহ যুগিয়েছে। আর তাই স্প্যানিশরা অ্যাযটেকদের যে নির্মম ভাবে ধ্বংস করেছিল এসব ইতিহাস পড়ে বিন্দু মাত্র করুনা জাগে না, কারণ ওই এক্টাই, নরবলি।
@অচেনা,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
কাপালিক সম্বন্ধে আমারও জানাশোনা কম। যতটুকু জানি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা পড়েই। সেখানে নরবলির কথা আছে, আছে তাদের সাধনার কথাও, যদিও এর ঐতিহাসিক ভিত্তি তর্কাতীত নয়। রমেশচন্দ্র মজুমদার তার সম্পাদিত ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে লিখেছেন—‘তান্ত্রিকরা (কাপালিকেরা) অনেক বীভৎস আচরণ করে যেমন, মানুষের মৃতদেহের ওপর বসিয়া মরার মাথার খুলিতে উলঙ্গ স্ত্রী-পুরুষের সুরা পান (১৩৮০ সংস্করণ)’। কাপালিকদের বাইরে ‘ঠগি’দের কথা বলা যায়, যারা ছিল আসলে ছদ্মবেশী ডাকাত। এরা কালীপূজায় নরবলি দিত বলে কথিত আছে।
অভিদা, পুরো লেখাটা পরে পড়ব। আপাতত এই ডোজটাই হজম করতে দেন।ধন্যবাদ আপনাকে, রামকৃষ্ণ সম্পর্কে এই জিনিস আগে জানতাম না
এই লোক কি আসলেই পাগল ছিল নাকি শ্রেষ্ঠতম ভণ্ড বুঝতে পারছি না।বউকে মা ডাকত!! সুবহানাল্লাহ!!!:-Y
তো দু একটি ছেলে হবার দরকার কি? যেহেতু বউকে মায়ের নজরে দেখতে হবে তাহলে মিলন ঘটলে তো অজাচার হবার কথা। :-s
পুরো লেখাটাই চুরি করা এতে মৌলিখ কিছুই নেই . শঙ্করীপ্রসাদ বসু, বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ এবং আরো অনেক বইতে বহু লেখালেখি আছে. যারা পড়েনি তাদের কাছে এটা নতুন
@পাপু,
আফনেরেও আমি চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করলাম। কারন লাইন দুইটার প্রত্যেকটা অক্ষর আর শব্দ আমি আদর্শলীপি আর বাঙলা একাডেমী অভিধানে পাইছি। শরম করে না চুরি করতে?
@সাইফুল ইসলাম,
উনি আসলে ঠিকি বলেছেন। আমি তো চুরি করেছিই। এই যে বিবেকানন্দের যে উদ্ধৃতিগুলো আমি আমার লেখায় ব্যবহার করেছি তা হুবহু বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র থেকে নেওয়া। এটা তো এক অর্থে চুরিই তাই না? 🙂
অবশ্য আমি যদি বিবেকানন্দ সমগ্র থেকে কেবল ভাল ভাল বানীগুলোর উদ্ধৃতি তুলে দিয়ে আবেগের ফুলঝুরি ছুটাতাম, তাইলে অবশ্য পাপু গাপু হাপু কারোরই কোন সমস্যা হত না। ভক্তিতে বুঁদ হয়ে থকলে এমনই হয়। কি আর করা। উনি ভাবছেন নির্বোধের মত আবোল তাবোল কিছু অভিযোগ করলেই বিবেকানন্দরে সাফ সুতরা বানায় দেওয়া যাবে আর কি!
রামকৃষ্ণের অস্বাভাবিক আচরণের যে ব্যাখ্যা বিবেকানন্দ দিয়েছেন, একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমিও তা বুঝতে পারিনি। কিন্তু সেই কারণে আপনি তাঁকে মিথ্যুক বলতে পারেননা। তার কারণ তপস্যা বা সাধনা বিষয়ে ভারতের ঐতিহ্য। ধ্যান করার মাধ্যমে যেভাবে মনকে একাগ্র করে তোলা হয় তার দ্বারা অনেক কিছুই সম্ভব। গড়ে আমাদের মস্তিষ্কের মাত্র ০.5% আমরা কাজে লাগাই। চিন্তাশীল মানুষের ক্ষেত্রে এটা 0.5% এর থেকে বেশি হয়। সেজন্য একজন সাধকের অনুভূতি যে স্তরে পৌঁছতে পারে তা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য হতেই পারে। চেতনাকে আরো আরো বেশি একাগ্র করার জন্য তাঁরা সাধারণত নিভৃত জায়গা খোঁজেন।
বিজ্ঞানী, কবি বা দার্শনিক যেই হোন না কেন, এঁরা সকলেই বিভিন্ন স্তরের চিন্তাবিদ। কিন্তু সাধকেরা হলেন এই কাজের স্পেশ্যালিস্ট। চিন্তা করাটাই এঁদের পেশা। এর মাধ্যমে এঁরা নিজের নিজের মতো করে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে চান।
তাই যেহেতু রামকৃষ্ণ নিজে থেকে আপনার কাছে সিক্রেট ফাঁস করেননি, তাই হুট করে তাঁকে বুজরুক বলার অধিকার আপনার নেই।
@অভ্রনীল,
তাই বলে বউকে মা ডাকতে হবে?
@অভ্রনীল,
“গড়ে আমাদের মস্তিষ্কের মাত্র ০.5% আমরা কাজে লাগাই। চিন্তাশীল মানুষের ক্ষেত্রে এটা 0.5% এর থেকে বেশি হয়।”
মোটেও না। আপনি নিজেকে যুক্তিবাদী দেখাতে চাইলেও আপনার কথাতে যুক্তি কমই আছে। বেশির ভাগ লোকের মতই মিথ কে সত্য বলে বিশ্বাস করেন। উদাহরণ হিসেবে উপরের উদ্ধৃতি টা তুলে দিলাম। আগে এই লেখা টা পড়ে নেবেন দয়া করে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Ten_percent_of_brain_myth
“এর পেছনে তার গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের প্রলাপের কিছুটা হলেও প্রভাব আছে। শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন এক অশিক্ষিত, মূলতঃ মানসিক বিকারগ্রস্ত এক সাধক, যাকে নিয়ে ভারতবাসীরা এখনো যার পর নাই গর্বিত।”
রামকৃষ্ণ কিংবা বিবেকানন্দ বিষয়ে আপনার অন্য ধরণের মত থাকতেই পারে। কিন্তু আপনার ভাষা সংযত করুন। ভারতবাসীদের যেভাবে আপনি এক কথায় নির্বোধ বলছেন সেকথা তো ছেড়েই দিলাম। রামকৃষ্ণের মানসিক বিকার এবং `অশিক্ষা’ (শিক্ষিত হওয়ার শর্ত কী, সেটা স্পষ্ট নয়।) নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। বিবেকানন্দ স্বয়ং এবিষয়ে সন্দিহান ছিলেন (মনে রাখা দরকার নরেন্দ্রনাথ সন্ন্যাস গ্রহণের আগে পর্যন্ত জড় যুক্তিবাদে বিশ্বাস করতেন)।
@অভ্রনীল,ভাল লাগল এমন একজন হিন্দু দেখে যিনি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। জীবনে যত হিন্দুর সাথে পরিচয় আছে আমার, কোনদিন কাউকে এইসব হিন্দু গুরুজন দের কে দোষারোপ করলে খ্যাঁক খ্যাঁক করতে দেখিনি( এটা আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য ঠিক বুঝতে পারছি না)!। আজ আপনি সেই অপ্রাপ্তি দূর করলেন। 🙂 (Y)
@অচেনা, হাস্যকর কথা বলছেন। রামকৃষ্ণের ভন্ডামি বিষয়ে সন্দেহের বিশাল অবকাশ আছে। তাই তাঁর প্রতি অভিজিৎবাবু যে বিশেষণগুলো দিয়েছেন, সেগুলো দেখে খারাপ লাগলো। বাকস্বাধীনতা মানে কি গালাগাল করার টিকিট? (H)
@অভ্রনীল,
অবশ্যই আমার বিশেষণগুলো দেখে আপনার খারাপই লাগবে, গালাগালি মনে হবে, কিন্তু আপনার আরাধ্যপুরুষ রামকৃষ্ণ পুরো নারীজাতিকে যে ‘নরকের দ্বার’ বলেছেন, সেটা আপনার কাছে গালাগালি নয়; মেয়েরা ‘ত্রিভুবন দিলে খেয়ে’, বলার পরও সেগুলোকে গালাগালি না, অমৃত বচনই মনে হবে, ধর্মের মোহ এমনই। মুসলিমরাও মুহম্মদকে নিয়ে এরকমই উচ্ছ্বসিত থাকেন, তার নারী বিদ্বেষী অমানবিক অপকর্মগুলো জানার পরেও।
মন্দিরে গিয়ে কালীমূর্তির বুকের উপর উঠে কামকেলি করা, স্নানরত নগ্ন মেয়েদের যৌনাঙ্গ দেখা, নিজের বউকে মা বলে ডাকা, অন্যদেরও বউ এর সাথে শুতে নিষেধ করা (বিনোদকে যেমন বলেছিলেন, সঙ্গ হোক, আর না হোক, একসাথে শোয়াও খারাপ) – এগুলো দেখলে কেউ তাকে সুস্থ মাথার মানুষ মনে করবে না। উন্মাদকে উন্মাদ বললে যদি আপনার গায়ে ফোস্কা পড়ে আমি নিতান্তই দুঃখিত। আপনি আপনার আরাধ্য পুরুষকে কোলে বসিয়ে চোখ বুজে পূজা করতে পারেন যত ইচ্ছে। কিন্তু আপনি অন্ধ হলে তো জগতে প্রলয় বন্ধ থাকবে না।
@অভিজিৎ,
আপনারই দোষ। হ্যালুসিনেশন ও ডিলিউশন মোটেই মানসিক বিকার নয়। বুঝলেন? এগুলো সুস্থ স্বাভাবিক মনের পরিচয়। :guru:
স্বামীজির স্ববিরোধীতার ঠ্যালা সব থেকে বেশি গান্ধীজি ভুগেছিল
স্বামীজি দুর্বল ভারতবাসীকে যখন শক্তি বাড়ানোর জন্যে পাঠার মাংস
খেতে বলছেন , গান্ধীজি তখন নিরামিষ আর এই জন্যে সবাই গান্ধীজিকে
এত বিরক্ত করেছিল যে গান্ধীজি এই বিতর্ক আর করেননি. :lotpot:
কেবল রামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দ জুটিই নয়, হিন্দুধর্মের বিরিঞ্চিবাবাদের অনেকের মাঝেই লক্ষ্য করেছি নারী বিষয়ক নানা বিকৃতি। সম্প্রতি নিকটবর্তী পাড়ায় হয়ে গেল, অনুকূল ঠাকুরের স্মরণে এক সভা। সেখানে জানলাম অন্য সব বিরিঞ্চিবাবাদের ন্যায় অনুকূল ঠাকুরও ঈশ্বর স্বয়ং (এ আর নতুন কি) এবং তার নারী বিষয়ক মতামতগুলো হলো:
১। সকল মেয়েকেই ভাবতে হবে নিজের মা। এই সাধনায় সফল হবার পরেই কেবল বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করা যাবে।(সত্যানুসরণ থেকে উদ্ধৃতি দিলেন বক্তা)
২।’সুপ্রজনন’এর জন্য পুরুষের বহুবিবাহ অতি জরুরী, প্রথম বিবাহ করবেন নিজের জাতে, পরেরগুলো করা উচিত নিচু জাতের মেয়েদেরকে তাতে নাকি ঐ মেয়েদের জাত উপরে উঠবে এবং ‘তেজবীর্যসম্পন্ন’ বংশধর পাওয়া যাবে।
কথাপ্রসঙ্গে জানলাম অনুকূল ঠাকুরের অন্তত তিনটি বিবাহের কাহিনী (আরো থাকতে পারে, বক্তা তিনটির কথা বলেছেন)।ভক্তিগদগদ কথার মাঝে জানা গেলো, তার দ্বিতীয় স্ত্রী সর্বমঙ্গলা তার শ্যালিকা ছিলেন এবং তৃতীয় স্ত্রী পারুলবালার সাথে তার বয়সের বিস্তর ব্যবধান ছিলো।
৩। মেয়েদের ঘরের বাইরে বের হওয়া, চাকুরী করা বিশেষ উচিত নয়। তাতে নারীসুলভ গুণাবলী বিনষ্ট হয়।
ভক্তদের কথাতেই এগুলো বেরিয়ে এল, অনুকূল-কথামৃত জাতীয় বইয়ে না জানি কি লেখা আছে।
অদ্ভুত লাগলো, শ্রোতাদের মাঝে নানা বয়সের প্রচুর মহিলা ছিলেন, অনুমান করি অনেকেই শিক্ষিত এবং চাকরীজীবি কিন্তু তারাও মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন এইসমস্ত প্রলাপ।
আপনি একজন যোয়ান বা বৃদ্ধ লোককে বলতেই পারেন গরুর দুধ তার স্বাস্থের জন্যে ভালো কিন্তু একজন ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে আপনিই বলবেন গরুর দুধ তার একদম খাওয়া উচিত নয় । শুধু মাত্র মায়ের দুধই তার খোরাক । সাধারণ ভাবে একজন পরিণত মানুষ কে আপনি অবশ্যই বলবেন তার পর্যপ্ত জল খাওয়া উচিত কিন্তু একজন ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে আপনার বলা উচিত এক ফোঁটা জল ও যেন সে না খায় তার একমাত্র খোরাক হল মায়ের বুকের দুধ ।
এক্ষেত্রে আপনি কি স্ববিরোধী? না। আপনি জানেন একই মাপের জুতো সবার পায়ে হয় না । এইটুকুই।
বোঝানো গেল?
@সোমনাথ,
স্বামীজির বাল্যবিবাহ সমর্থন, সতীদাহ সমর্থন, জাতিভেদের সাফাই গাওয়ার মতো কাজগুলো ‘৬ মাসের কম বয়সী শিশু’ আর ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ লোকের দুধ খাওয়ার তুলনা দিয়ে রেহাই পাওয়া যায় না। ‘একই মাপের জুতো সবার পায়ে হয় না’ যুক্তি অনুযায়ী তাহলে গোলাম আজম, নিজামী সাইদীদেরও রেহাই দেয়া যায় একাত্তুরের অপকর্ম করার জন্য। যে কেউ বলতেই পারে পাকিস্তান বাঁচানোর প্রেক্ষাপটে ওটা সঠিক ছিল। কি বলেন? ‘একই মাপের জুতো সবার পায়ে হয় না’ যুক্তি দিয়ে ধর্ষণ রাহাজানির বৈধতা যদি আমি দিতে শুরু করি তো আপনি মেনে নেবেন? আমার ক্ষেত্রে আপনি যেটা চোখ খুলে দেখতে পান, স্বামীজির ক্ষেত্রে চোখ মুদে থাকলে চলবে? স্বামীজি সতীদাহের মত ঘৃণ্য প্রথা পর্যন্ত সমর্থন করেছেন, আর আপনি কোথাকার কোন্ দুদু খাওয়ার উপমা নিয়ে আসলেন। সাধু সাধু।
হ্যা বুঝলাম যে, আপনাদের ভাণ্ডারে কু-যুক্তির কোন অভাব নাই।
@সোমনাথ, ভালো বলেছেন। ‘মুক্তমনা’দের এটা বোঝা উচিৎ।
” কোন কথা বুঝতে হলে তার আগে পরে প্রসঙ্গটা জানাটা খুব জরুরি।”
@বদ্ধমনা,, একদম একমত…।।
এখানে অনেক কোটেশান করা হয়েছে, কিন্তু তার প্রেক্ষাপট আলোচনা করাহয়নি। একটা মানুষের জীবনের ১০০ টা কোটেশান তুলে তাকে স্ববিরোধী প্রমাণ করা এমন কিছু কঠীন কি?
প্রেক্ষাপট অনুসারে একটা কথার নানান মানে করা যায়।
ধরুন আজ আপনি বললেন “ঊফ্! বৃষ্টি টা খুব দরকার ছিল”
আবার কিছুদিন পরে বললেন “হতচ্ছারা বৃষ্টি কি থামবে না !”
এবার ভেবে দেখুন প্রেক্ষাপট ছাড়া এই ২টি কোটেশান তুলে আপনাকে “স্ববিরোধী” প্রমান করাটা কত সহজ!
@সুমন দাস, দাদা তো বেশ বুদ্ধি রাখেন।আচ্ছা দেখুন তো এটা স্ববিরোধী হল কিনা। ১দুধ স্বাস্থের জন্য ভাল।২দুধ স্বাস্থের জন্য খারাপ…আমি বলতে চাচ্ছি শুধু একটি বিশয়ে আপনার পরস্পর বিরোধী অবস্থান মানেই স্ববিরোধীতা।এখন আপনার টাও যেমন কার্যকর তেমনি আমারটাও।এখন প্রশ্ন বিবেকানান্দ কোনটি করেছিলেন? আপনার কি মত?
@সুমন দাস,
বৃষ্টির দরকার ছিল কি ছিলনা এটা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে, কখনও এটার দরকার আছে, কখনও আবার নেই।কিন্তু সতীদাহের দরকার কোনদিনই ছিল না, যেমন নরবলিরও কোন দরকার নেই। আসলে যে লোক নরবলি দিতে রাজি আছে ইশ্বর কে পাবার জন্য, আমার মনে হয় তাকে অ্যাটেম্পট টু মার্ডার এর মামলায় ফাঁসানো যেতে পারে, না হলেও হত্যাতে উৎসাহ দেবার দোষে কঠিন ভাবে অভিযুক্ত করা যেতে পারে।সাজা টা কি সেটা আপনার জানা আছে। এটা আমার আর আপনার জন্য যেমন নবী রসুল আর পুরহিত বাবাদের জন্যেও ঠিক তেমনই হবে যদি আইনটা সভ্যলোকদের তৈরি করা হয়।
যাক ১০০ বছর পরেও ওই লোকগুলো কে নিয়ে “বাজে” কথা বলেও কেও কেও করে খাচ্ছে…। 😛
মন্তব্য প্রকাশের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মুক্তচিন্তার কাণ্ডারিগন,
অভিনন্দন আপনাদের, বিবেকানন্দের এতগুলি স্ববিরধিতা আবিস্কাররের জন্য। আমি নয় নয় করে স্বামিজির লেখাপত্র বেশ কিছুতা পড়েছি। আপনার উদ্ধৃত লাইন গুলির বেশ কয়েকটা আপনার লেখা পড়বার পূর্বেই পড়েছিলাম। কিন্তু বদ্ধমনা হবার কারণে ঠিক আপনার মতন চিন্তা ভাবনা করে উঠতে পাড়িনি। যেমন ব্রাহ্মণত্ব ভারতীয়ের আদর্শ বলতে কখনই ভাবিনি যে তিনি অপর জাতিকে ছোট করেছেন, বরং মনে হয়েছে সকল জাতিকে সামাজিক ভাবে সর্বোচ্চ স্থানে উঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিভেদ প্রথা যে গুনগত তার স্বপক্ষে প্রমাণ স্বামিজির শুদ্রজাগরন নামক প্রবন্ধ। আলাসিঙ্গা পেরুমল কে শুধু ওই একটি চিঠি নয় আরও অনেক চিঠিতে তাঁর আইডিয়া গুলি ওয়ার্ক আউট করার জন্য অনেক কথাই লিখেছেন। সেগুলিকে তাঁর বাক্তিগত বাড়ি গাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা বলে আমার মনে হয়নি। বরং দার্শনিক বিচারে আটকে না থেকে প্রকৃত অর্থে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান বলেই মনে হয়েছে। ভারতীয় নারীর আদর্শ সীতা হতে বাধা কোথায় একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ। আপনারা, মুক্তমনারা না জানলেও এটাই সত্য সমগ্র ভারত সীতাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে। সেখানে রামায়নের পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনা পরম্পরার চেয়ে সীতার চারিত্রিক দৃড়তা, সংগ্রাম, এবং স্বামির প্রতি নিশ্চলা প্রেম এই ব্যাপারগুলিই অধিক প্রণিধান যোগ্য বলে আমার মনে হয়। আসলে প্রশ্নটা মিস-কোটেশান বা ভুল উদ্ধৃতির নয়, প্রশ্নটা দৃষ্টি ভঙ্গির এবং উদ্দেশ্য প্রনদিতভাবে ভুল ব্যাখ্যার! আপনারা একটি গ্লাসের দশ শতাংশ ফাঁকা দেখছেন। আমরা যারা আপনাদের ভাষায় বিবেকানন্দের স্তাবক, তারা দেখছি যে গ্লাসটার নব্বই শতাংশ পূর্ণ। আপনারা আপনাদের মতন করে দেখতেই পারেন, আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু পজেটিভ দৃষ্টি নিয়ে দেখলে সমাজের তাতে কিছু লাভ আছে। কারন ওই গ্লাসটির নব্বই শতাংশ জলে পূর্ণ, সেটি আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারে। দেখুন না ওই যে আলাসিঙ্গা পেরুমল কে স্বামিজি অতকথা বলতেন তাতে সমাজ পেল মাদ্রাজ রামকৃষ্ণ মিশন, যার কর্ম প্রসার প্রশ্নাতীত। আজ বেলুড় মঠের পর মাদ্রাজ মঠই সম্ভবত রামকৃষ্ণ মিশনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মঠ। স্বামিজির ‘চরনামৃতসেবী’ রামকৃষ্ণ মিশন ভারত এবং বহির্ভারতে যে বিপুল সেবাযজ্ঞ চালাচ্ছে তাতে যে কোটি কোটি মানুষের কত উপকার হচ্ছে, তাতে ক্ষতি কি? শুধু রামকৃষ্ণ মিশন কেন, আরও অসংখ্য ছোট বড় রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ নামাঙ্কৃত সংস্থা নানাভাবে সমাজসেবা করে চলেছে নিরন্তর। আমি যতদূর জানি ভারতসেবাশ্রম সঙ্ঘও বিবেকানন্দের আদর্শকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে চলে। স্বামীজি বিদেশ থেকে ফেরার পর তাঁর বন্ধু প্রিয়নাথ সিংহ কে বলেছিলেন যে তিনি চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে একটা হইচই হোক, তিনি বলছেন তাঁর আদর্শ একবার ছড়ালে দুর্ভিক্ষ তাড়াতে কতক্ষন? দেখুন কি দূরদৃষ্টি! একটু মুক্তমনে চিন্তা করে দেখুন। আজ তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কি না করছে! যদি সেদিন একটু হইচই না হত তবে এই প্রতিষ্ঠানের অর্থ ও মানব সম্পদ আসত কোথা থেকে? হ্যাঁ মানছি আপনারা খুঁজে খুঁজে এই কর্মযজ্ঞেরও কিছু ত্রুটি হাজির করাতে নিশ্চয়ই পারবেন, কিন্তু দেখুন কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হওয়া স্বাভাবিক নয় কি? একটু বলুন না আপনারা যুক্তিবাদের নামে সমাজের এইরকম কি উপকার করছেন, বা ভবিষ্যতে করার কথা ভেবে রেখেছেন? বলবেন নিশ্চয় বিজ্ঞানের অবদানের কথা। কিন্তু একটু ভাবুন না বিজ্ঞানীরা কি কোন সমাজকল্যানকর আবিস্কার নাস্তিকতার নামে উৎসর্গ করেছেন। জানলে খুশি হবেন বিবেকানন্দের স্তাবকেরা কিন্তু তাদের যাবতীয় সৎকার্য বিবেকানন্দের নামেই করে থাকে! আর হ্যাঁ, বলা দরকার রামকৃশ্ন-বিবেকানন্দ ভাবধারা কিন্তু জগতে কোন রক্তপাতও ঘটায়নি। আমার বিনীত আবেদন যুক্তির চর্চা করুন, কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে।তাতে প্রকৃত বিবেকানন্দ অনুরাগী আনন্দই পাবেন।
এই ব্লগের সমস্ত মুক্তমনা পাঠককে আমার অনুরোধ সমালোচনা নিশ্চয়ই পড়বেন। কিন্তু আগে নিজে মূলগ্রন্থগুলি নিজে খুঁটিয়ে পড়ুন। মূলগ্রন্থ বলতে এই ব্লগে তুলে দেওয়া অংশটুকু নয়। চেষ্টা করুন স্বামিজির নিজের লেখা বইগুলি যতটা পারেন নিজে পড়তে। আমি নিজেও স্বামিজির লেখা নিজে পড়ার আগে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ বইইয়ে স্বামিজির সমালোচনা পড়েছি। তখন আমারও মনে স্বামিজির সম্পর্কে ভুল ধারণা হয়েছিল। কিন্তু তারপর স্বামিজির লেখা বিস্তৃত ভাবে পড়েছি এবং এখন আমি স্বামিজিকে ভালবাসি। কোন কথা বুঝতে হলে তার আগে পরে প্রসঙ্গটা জানাটা খুব জরুরি। প্রসঙ্গত আমার কয়েকজনের মন্তব্য পড়ে মনে প্রশ্ন জাগছে, যে এইসব মানুষের সামনে মন্তব্য করে কী লাভ? কয়েকটা ক্ষেত্রে শালীনতার সীমা অতিক্রম করে গেছেন তাঁরা। তবুও আশা করা যায় প্রকৃত ভদ্রলোকও কেউকেউ এই ব্লগের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আমার এই লেখা তাদের উদ্দেশ্যে।
অভিজিত বাবুকে বলি একজন প্রকৃত বিবেকানন্দ অনুরাগীর মনে সন্দেহের বীজ বপন করতে আপনার লেখা ব্যার্থ হবে বলেই আমার মনে হয়। সত্যি বলছি আমার একটুও গাত্রদাহ হচ্ছে না! কেন এত লিখলাম জানেন, যাতে প্রকৃত মুক্তচিন্তার মানুষেরা একটু চিন্তা করার সুযোগ পান।এখানে আরও একটা বিষয় না বলে পারছিনা। আশা করা যায় আপনি ভদ্রসমাজের একজন। অজিত সিংহের পুত্রলাভ সম্পর্কে আপনি যে অশালীন ইঙ্গিত করেছেন সেটা পড়ে কিন্তু আমার অন্যরকম মনে হচ্ছে। আশা করি ভবিষ্যতে এইধরণের আজেবাজে কথা বলে সস্তার জনপ্রিয়তা ভিক্ষা করবেন না। যাইহোক আমি আপনার প্রতিটি অভিযোগকেই যুক্তি এবং প্রসঙ্গ উল্লেখ করে খারিজ করতে পারি, সেব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কাজটা প্রচুর সময় সাধ্য, কিন্তু হাতে সময় পাচ্ছি না। আমি একজন ছাত্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করি। সামনে পরীক্ষা, প্রজেক্ট, প্রচুর চাপ! সময় সুযোগ হলে বিস্তৃত ভাবে আলোচনার ইচ্ছা রইল।
ধন্যবাদান্তে
একজন বদ্ধমনা
(বিবেকানন্দের স্তাবক)
@একজন বদ্ধমনা, একজন কিছু ভাল কথা বলে বিখ্যাত হলে ই মানুশের একটা বদ অভ্যাস তাকে পুজনীয় করা। আসুন আপনি আর আমি মিলে ভাল কিছু কথা বলি আর কিছু বই লিখি-মানুষের কেমন হওয়া উচিত,নারীদের কার মত হওয়া উচিত আরো নানা রকম ভ্যান্ত্যারা।ব্যশ।এবার একটা সংস্থা খুলে আর্ত্ মানবতার সেবায় লেগে সেলেব্রিটি! এইত আপ্নিও হলেন বিবেকানন্দ।—-নারীদের সীতার মত হতে হবে(আহ কি জ্ঞানের কথা,কি সুন্দর আদর্শ),—ব্রাহ্মন ভারতের আদর্শ(আহ কি যে মহান বানী,মাথা ঘুরে পরে গেলাম)—আপনাকে কি আর বলব। মতাহের হুসেন বলেছিলেন-যাদের নিজেদের নির্দেশনা দেবার শক্তি নেই তারা অন্যর ধার করা নির্দেশিত পথে চলে। আর রইল বিবেকানন্দের রাম কৃষনমিশন। বেকার মানুষ,সময় হাতে নেই, নাহলে বুঝিয়ে দিতাম কেন এই সব মহান দের না মাড়ানোই ভাল।
@একজন বদ্ধমনা,
অপূর্ব লিখেছেন বদ্ধমনা। ব্লগে এই অল্পবিস্তর না দেখে সবাইকে স্বামী বিবেকোনন্দের লিখাগুলো পূর্ণভাবে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। আমারও সময় কম। নইলে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা ছিল।
শুভেচ্ছা রইল
অভিজিৎ দা, লেখাখানি আগে পড়া হয় নি কারণ আমার চক্ষুর বেইমানিতে। এর আগে বিবেকানন্দের স্ববিরোধিতা পড়েছিলাম প্রবীর ঘোষের ‘লৌকিক ও অলৌকিক’ বইতে। তবে আপনার এই লেখাটি অনেক তথ্যবহুল হয়েছে। অনেক কিছু নতুন জানলাম। লেখাখানি মুক্তমনার জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। ধন্যবাদ…. (F)
আপডেট: আমার এই লেখাটির পরে সুমন চৌধুরী (Suman Chowdhury) নামে এক বিবেকানন্দ ভক্ত আমার লেখাটির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ করে সমালোচনা লিখেছিলেন ইংরেজিতে, তার এই লেখার প্রত্যুত্তরে আরেকটি সম্পুরক লেখা লিখেছিলাম, আরো কিছু বাড়তি তথ্য সন্নিবেশিত করে, লেখাটা পড়া যাবে এখান থেকে –
স্ববিরোধী বিবেকানন্দ – কিছু সমালোচনার জবাবে
আরেকটা অসসামান্য কাজ। লেখাটা তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিত সব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরই পড়া উচিৎ। অন্তত ঘটের ভেতর যদি একটু স্বাধীন ভাবনার উদয় হয় !
ধন্যবাদ অভিজিৎ দা।
@রণদীপম বসু,
ঠিক রণদীপমদা, সেই জন্যই এটি লেখা!
আপনার কথায় মেনেই নিলাম
১ যে স্বামীজী একজন স্বার্থপর কৌশলী ভন্ড ছিলেন । কিন্তু উনি এর পরেও সমাজ কে যতোটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তা দেখেছেন। উনার বহুল প্রচলিত বাণী গুলো কে কেউ যদি মেনে চলে সেটাই যথেষ্ট। তার জন্যে উনার ব্যাক্তি জীবন কে টানছেন কেন?
২ আপনি অত্যন্ত বিদগ্ধ চিন্তা শীল ব্যাক্তি , সবাই নয় , তাই এভাবে উনার বক্তব্য গুলি কে বিকৃত করে পরিবেশন করলে কেউ বুঝবে না আশা করেছেন ।
৩ স্বামীজী সেই সময় দাঁড়িয়ে নারী দের জন্যে যা ভেবেছেন তা এই সময় দাঁড়িয়ে ও সবাই ভাবতে পারেনা
৪ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব কে আপনি কি হিসেবে অশিক্ষিত বললেন । যৌণ সঙ্গম এর উদ্দেশ্য হলো সন্তান লাভ। অন্যথায় এটা এক প্রকার শক্তি ক্ষয়। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী যৌণ সঙ্গম কে বিনোদন ভাবেনা। যৌণ আসক্তি কম থাকলে নারী পুরুষ একসাথে কাজ করা সস্তিদায়ক। অন্তত নারী দের জন্যে। এই সমাজ ব্যাবস্থায় যখন ধর্ষণ এর জন্যে পোশাক কে দায়ী করা হয় তখন যৌনাকাঙ্খা না থাকা ভালো বৈকি।
ভালো লাগলো লেখাটা। বিবেকানন্দ’ কে নিয়ে অন্ধ ভক্তকূলের যদি চক্ষু খুলে যায়।
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ!
সম্পূর্ণ লেখাটি ভাবের ঘরে ফাটল ধরানোর মত প্রমাণসহ নির্মোহভাবে লেখা হলেও একটা জায়গায় একটু ফাঁক আছে। যেমনঃ
তেমন শক্ত তথ্য আছে বলে লেখাটিতে প্রমাণ নেই এবং আমরা যারা এ নিয়ে কথা বলব তাদের রেফারেন্সের জন্য আরেকটু বাড়তি তথ্য প্রয়োজন।
@গীতা দাস,
হ্যা এটার কোন প্রমাণ নাই আমার কাছে। স্রেফ ‘ব্লগীয় রসিকতা’ হিসেবেই নিতে পারেন, দিদি।
তবে স্বামীজির ‘অনুগ্রহে’ যে অজিত সিংহের সন্তান হয়েছিল সেটা অজিত সিংহ নিজেও ভাবতেন। সেজন্যই সারা জীবন ধরে বিবেকানন্দের যখনই ‘প্রয়োজন পড়েছে’ উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি বিবেকানন্দের পারিবারিক আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থাও অজিত সিং করেছিলেন। বিবেকানন্দও সেটা স্বীকার করে এক চিঠিতে লিখেছিলেন “এই জগতে শুধু একজনের কাছেই আমার কিছু চাইতে লজ্জা হয় না এবং সে হচ্ছে আপনি” (পত্রাবলী, পত্র নং ৪২৪, পৃঃ ৬৪২)।
অবশ্য এর কোনটাই অজিত সিং এর পুত্র সন্তান হবার পেছনে ‘অনুগ্রহ’ ছাড়া আর কোন কিছু প্রমাণ করে না, সেটা মেনে নিচ্ছি।
I dont have so much time to challenge all the single lines. I have challenged only one reference and checked all other references. Now it is reader’s duty to check all.
http://chowdhurysuman.blogspot.com/2012/01/my-vivekananda-and-avijit-roys.html
@Suman,
এটার উত্তর এখানে।
Asakori moderator amar ei lekha ta delete korben na !
http://chowdhurysuman.blogspot.com/2012/01/my-vivekananda-and-avijit-roys.html
@chowdhury,
আপনার সাথে এ নিয়ে ফেসবুকেই দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। সেটা আপনিও ভাল জানেন। আমি আমার লেখায় বিবেকানন্দের যে উদ্ধৃতিগুলো ব্যবহার করেছি সেগুলোর প্রকাশনীর নাম পৃষ্ঠানম্বর সবই দেয়া হয়েছে। আপনাকে মিলিয়ে দেখবার অনুরোধ করেছিলাম। আপনি দেখননি, তা না করে ইংরেজী অনুবাদ নিয়ে বিতর্ক করতে বলেছেন আমাকে। এখন আপনার দেয়া ইংরেজী অনুবাদের কোথায় কি আছে সেটা আমি জানি না, এমনকি সেই অনুবাদ কতটা নির্ভরযোগ্য সেটাও নিশ্চিত নই। যেমন আপনাকে আমি বলেছিলাম ‘জীবপ্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’ সেটার ইংরেজী ট্র্যান্সলেশন আপনার দেওয়া পিডিএফ থেকে দেখাতে, কিন্তু আপনি সেটা না দেখিয়ে ব্লগপোস্টের লিঙ্ক দিয়েছেন। আপনার ইংরেজী অনুবাদে যদি ‘জীবপ্রেম কয়রে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’ না থাকে তবে কি ধরে নেব যে, বিবেকানন্দ সে কথা বলেননি? এবার আসুন বিতর্কে ঢোকা যাক।
জীবপ্রেম নিয়েঃ
জীবপ্রেম নিয়ে আপনি এমনই সারবত্তাহীন বক্তব্যও দিয়েছেন যে লজ্জিতই হতে হয়। আপনি বলেছেন ‘’Zibe prem kore je jon – means only human not animal…’। কবে থেকে জীব মানে কেবল ‘মানুষ’ হল, অন্য কিছু নয়? মানুষ হলে কেবল মানুষ বললেই হত। আলাদা করে জীব বলার কিছু নেই। আমি আপনাকে এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করছি – এমনকি ইংরেজী ট্র্যান্সলেশনেও আপনি জীবপ্রেমের ইংরেজীতে’only hman’ পাবেন না। আসলে একমুখে জীবপ্রেমের কথা বলে অন্য মুখে পশুবলি প্রথার প্রচলণ করেছেন বিবেকানন্দ – সেই সত্যকে ঢাকতে গিয়ে এই ‘কেবল মানুষ’ ইন্টারপ্রিটেশন নিয়ে এসেছেন। আর মানুষ ভাবলেও আপনার যুক্তি ধোপে টিকছে না, কারণ, বিবেকানন্দই বলেছেন –
আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।
আমি আমার লেখায় রেফারেন্স দিয়ে দেখিয়েছি অধিকাংশ গুরুভাইদের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সব সময়ই দেবী পুজায় পশুবলির ব্যবস্থা রাখতেন। এমনকি বেলুড় মঠের দূর্গাপূজাতেও তিনি পশুবলির পক্ষে ছিলেন। তিনি ইংরেজ শিষ্য নিবেদিতাকে দিয়ে বিভিন্ন জনসভায় পশুবলির সমর্থনে বক্তৃতার ব্যবস্থা করেছিলেন। পশুবলির সমর্থন ছাড়াও বিবেকানন্দ ‘বৃথা মাংস’ ভক্ষণেও অভ্যস্থ ছিলেন বলে জানা যায়। অথচ চৌধুরী সাহেব নিজস্ব ইন্টাপ্রিটেশন থেকে উপসংহারে চলে গেছেন, ‘Vivekananda never spoke about animal killing’। এটা হচ্ছে গায়ের জোরে পাহাড় ঠেলার মতো। স্বামিজি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য অর্থ ব্যয় না করে শিকাগো গেছেন ধর্মসভা করতে, তারপর স্বদেশ তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে প্রচুর অর্থব্যয় করতে শিষ্যদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন আমেরিকা থেকেই। তখনো দেশে দুর্ভিক্ষ পুরোদমে চলছিলো। অভ্যর্থনা বাদ দিয়ে কিংবা সংক্ষেপিত করে সেই অর্থ তিনি দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং, তার বন্ধু প্রিয়নাথ সিংহ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন,
হ্যাঁ, আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে আমায় নিয়ে একটা হৈ চৈ হয়। কি জানিস, একটা হৈ চৈ না হলে তাঁর (ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের) নামে লোক চেতবে কি করে! … তাকে ঠিক জানলে তবে ঠিক মানুষ তৈরি হবে; আর মানুষ তৈরি হলে দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি তাড়ানো কতক্ষণের কথা!
এই হচ্ছে বিবেকানন্দের জীবপ্রেম এবং মানবপ্রেমের নমুনা! এখন পাঠকদেরাই বিচার করুক কে সঠিক আর কে ভুল।
এবার আসুন – অন্য প্রসঙ্গগুলোও দেখি।
বিবেকানন্দের বেহিসাবি জীবন:
বিবেকানন্দের বেহিসাবি জীবন নিয়ে আমার লেখায় অজস্র রেফারেন্স হাজির করা হয়েছে। সেগুলোর ধারের কাছে না গিয়ে চৌধুরী সাহেব আবেগময় বুলি আউড়েছেন –
A person who abandoned all the materialistic luxury at young age of 25 and passed his extreme beggar life from age of 25 to 33 !, a person who initiated monastic order of Ramakrishna Mission at 1897, collected some money to build Belur math at 1899 and passed away at 1902 after initiating a great karmayoga !
বস্তুত: আমার লেখায় আমি দেখিয়েছি খেতরির রাজা অজিত সিং-এর সাথে বিবেকানন্দের কেমন চমৎকার দহরম মহরম ছিলো। কিভাবে তার কাছ থেকে সারা জীবন ধরে বিবেকানন্দ অর্থ সাহায্য নিয়েছেন, নিজের জন্য পরিবারের জন্য – সেগুলোর সত্য মিথ্যা চৌধুরী সাহেব যাচাই করার প্রয়োজনবোধ করলেন না। শুধু অজিত সিংহ নয়, বহু রাজরাজরাদের কাছ থেকে মঠের জন্য এবং ‘নানা জনহিতকর’ কাজের জন্য বিবেকানন্দ সাহায্য পেয়েছেন, বিদেশ থেকেও প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন কিন্তু সেই সংগৃহীত অর্থের একটা বিরাট অংশ তিনি নিজের পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করেন। আমি আমার লেখায় দেখিয়েছি স্টার্ডি, ম্যুলার প্রমুখ কয়েকজন বিদেশী ভক্ত স্বামীজির সংসর্গ ত্যাগ করেছিলেন। বিশেষতঃ হেনরিয়েটা ম্যুলার যিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি ভারতের জনগণের সেবার জন্য স্বামীজিকে প্রায় ৩০০০ ডলার দিয়েছিলেন তা বিবেকানন্দ পারিবারিক প্রয়োজনে এবং বেলুড় মঠে নিজে থাকার জন্য বড় বড় তিনটি আরামপ্রদ ঘর তৈরিতে ব্যয় করেছেন। তিনি ১৮৯৮ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ‘সোশাল রিফর্মিস্ট’ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বিবেকানন্দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন।
আমি আমার লেখায় যা উল্লেখ করেছি তার বাইরে আরো অনেক উদাহরন আছে বিবেকানন্দের জিহ্বা লাম্পট্যের। যেমন, জুনাগড়ের নবাবের দেওয়ান হরিদাস বিহাড়িদাসের বাড়িতে তার আথিতিয়তার কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি। ভারত পরিক্রমাকালে জুনানগড়ে পোঁছে যখন তার বাড়িতে উঠেন তখন বাড়ির মালিক উপস্থিত ছিলেন না। তার বাড়ি নিরামিশাষী ছিলো। কিন্তু সেই রান্না স্বামীজির পছন্দ না হওয়ায় তিনি পাচককে দিয়ে মাছ মাংস সহযোগে নিজের পছন্দমতো রান্না রাঁধিয়ে নিয়েছিলেন। এই ঘটনা মহেন্দ্র দত্তের ‘বিবেকানন্দের জীবনের ঘটনাবলি’ গ্রন্থেই পাওয়া যায়।
স্বামীজি জনসেবার জন্য দেয়া টাকা নিজের জন্য খরচ করে ফেলতেন তার বহু প্রমাণ আছে। অলি বুল নামে এক ইংরেজ নারী ছিলো যাকে বিবেকানন্দ ‘ধীরা মাতা’ বলে ডাকতেন। তিনি বহু সময়ই বিবেকানন্দের বেহিসেবি খরচকে নানাভাবে সামাল দিতেন। যেমন, ১৯০০ সালের ১ মে তারিখে বুল বিবেকানন্দকে যে পত্র লেখেন তা থেকে জানা যায়, স্বামীজি বেলুড় মঠের জন্য সংগৃহীত অর্থ থেকে হাজার ছাব্বিশেক টাকা ভেঙে ফেলেছেন। বুল স্বামীজির জনহিতকর কাজের রেকর্ড ‘পরিস্কার’ রাখার উদ্দেশ্যে তাকে এককালীন অনুদান দিসেবে ৩০,০০০ তাকা দেন। সেক্ষেত্রে মঠের ঋণ শোধ করার পরেও তার হাতে হাজার চারেক উদ্বৃত্ত থাকবে। এভাবেই কখনো অজিত সিংহ কখনো অলি বুল প্রমুখের স্মরনাপন্ন হয়ে স্বামীজি তার বেহিসেবিপনা সামাল দিয়েছেন, কেবল ‘karmayoga’ দিয়ে নয়, সলালোচক সেটা নয়া বুঝলেও বুদ্ধিমান পাঠকেরা ঠিকি বুঝে।।
আমি Suman Chowdhury সাহেবকে বলেছিলাম লুই বার্কের ‘সেকেন্ড ভিজিট’ (Marie Louis Burke, Swami Vivekananda’s second visit to the west ) গ্রন্থে স্বামীজির ভোগবিলাস এবং জিহ্বা লাম্পট্যের অনেক উদাহরণ সংকলিত হয়েছে, সেগুলো পড়ে দেখতে, তা না করে উনি কেবল আবেগময় বুলি ব্যবহার করে চলেছেন। অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকবে?
নারী ভাবনা:
বিবেকানন্দের নারী ভাবনা নিয়েও নতুন করে বলার কিছু নেই। সহমরণের সমর্থনে বিবেকানন্দ বলেন –
‘প্রথমে সেই ভাবটাই উস্কে দিয়ে তাঁদের (হিন্দু নারীদের) character form করতে হবে – যাতে তাঁদের বিবাহ হোক বা কুমারী থাকুক, সকল অবস্থাতেই সতীত্বের জন্য প্রাণ দিতে কাতর না হয়। কোন একটা ভাবের জন্য প্রাণ দিতে পারাটা কি কম বীরত্ব?’
উক্তিটি আছে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনার, ১০ম খণ্ডে (পৃঃ ৩৯)। স্বামী বিবেকানন্দ যে সহমরণ সমর্থন করতেন, তা ভগ্নি নিবেদিতার ভাষ্যেও স্পষ্ট হয় – ‘জগতের চোখে সহমরণ এত বড় প্রথা কেন – কারণ ওতে ইচ্ছাশক্তির বিকাশ হয়’। বিবেকানন্দ কি রকম নারী জাগরণ চেয়েছিলেন, তা বোঝা যায় ‘ভারতীয় নারীগণকে সীতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া নিজেদের উন্নতি বিধানের চেষ্টা করিতে হইবে’ (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১১৪-১১৫) এই উক্তি থেকেই। মহাত্মা রাম সীতার গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্ম্যহত্যাকে পতিব্রতের আগ্নেয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থিত করেছেন । পুরাণের প্রথম বধু হত্যাকারী রামচন্দ্রের সর্বংসহা পতিব্রতা স্ত্রী হয়ে উঠেছেন বিবেকানন্দের ‘আদর্শ চরিত্র’ (বিবেকানন্দের সতীদাহের পক্ষের উক্তিগুলো এর নিরিখেই যাচাই করুন, তাহলেই বুঝবেন)। আর সেটারই সাফাই গাইতে চান বিবেকানন্দের ভাব-শিষ্য Suman Chowdhury।
ব্রিটিশ বিরোধিতা:
চৌধুরী সাহেব টিপিকাল বিবেকানন্দ ভক্তের মতোই বলেছেন, বিবেকানন্দ তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী ছিলেন। তার উদাহরণ হিসেবে বলেছেন – ‘most of the Indian freedom fighters were indeed inspired from his lectures.’ এতে প্রমাণিত হয় তিনি বিপ্লবী? ব্রিটিশ বিরোধী? বঙ্কিমের আনন্দমঠ থেকেও তো অনেক স্বাধীনতাকামীরা ‘ইন্সপিরেশন’ পেয়েছেন। তা বলে তো বলা যায় না যে বঙ্কিম ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রণী সৈনিক ছিলেন। বরং রামমোহন বঙ্কিমেরা কিভাবে ব্রিটিশদের প্রশস্তি করেছেন, তার বহু উপকরণই তাঁদের লেখায় এবং কাজে আছে। চৌধুরী সাহেব লিখেছেন ‘he protested with two English men in a train trip’। হতে পারে (যদিও এটার কোন রেফারেন্স দেননি, এবং এটা উনার ইংরেজী পিডিএফ-এও নেই)। যদি ধরেও নেই – ঘটনা সত্য, আমরা দেখি আবার সেই বিবেকানন্দই ইংরেজদের ‘বীরের জাতি’,’ প্রকৃত ক্ষত্রিয়’, ‘অটল ও অকপট’, এবং ‘প্রভু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, কিংবা বলেছেন, “সকল কথার ধুয়ো হচ্ছে – ‘ইংরেজ আমাদের দাও। বাপু আর কত দেবে? রেল দিয়াছে, তারের খবর দিয়াছে, রাজ্যে শৃঙ্খলা দিয়াছে, ডাকাতদের তাড়াইয়াছে, বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়াছে। আবার কী দেবে? নিঃস্বার্থভাবে কে কী দেয়? বলি তোরা কী দিয়েছিস?” চৌধুরী সাহেবের কথা সত্য হলে স্বামিজীর অন্য দিকের মত ব্রিটিশ তোষণ-বিরোধিতার ব্যাপারটাও পরিস্কার স্ববিরোধিতাই।
আউট অব কনটেক্সট:
বিবেকানন্দের অন্ধকার দিক কিংবা কদর্য বাণীগুলোকে নির্মোহভাবে উল্লেখ করলে চৌধুরী সাহেব ইসলামিস্টদের মতই জ্বলে উঠে বলেন ওগুলো নাকি সব ‘আউট অব কন্টেক্সট’! কোনটা উইদিন কন্টেক্সট আর কোনটা আউট সেটা কি চৌধুরী সাহেবের ইন্টারপ্রিটেশনে নির্ধারিত হবে নাকি? আমিও তো বলতে পারি ‘জীবপ্রেম করে যেই জন’ কিংবা ‘হে ভারত ভুলিও না ‘ মার্কা যে ভাল ভাল কথা বলেছেন, সেগুলো সব আউট অব কনটেক্সট। মুশকিল হচ্ছে চৌধুরী সাহেবের মত বিবেকানন্দভক্তরা ভাল ভাল বানীর ক্ষেত্রে কনটেক্সট ভুল হয়েছে বলে মনে করেন না, যত সমস্যা হয় কেবল চাঁদের উলটো পিঠটি দেখালেই।
উনি অরিজিনাল টেক্সট নিয়ে বিতর্ক করতে চান, রেফারেন্স চান। ভাল কথা। উনাকে আমি বলেছিলাম,
ভাই, অরিজিনাল টেক্সট আপনি কাকে বলবেন? এই যে রামকৃষ্ণ বলেছেন ‘‘কামিনী নরকস্য দ্বারম্। যত লোক স্ত্রী লোকের বশ’ সেটা তো আমি রামকৃষ্ণের ইংরেজী অনুবাদের দেখতে পাচ্ছি না –
http://www.kathamrita.org/kathamrita4/
কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে রামকৃষ্ণ সেটা বলেননি। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, শ্রীম কথিত, অখণ্ড সংস্করণ, ১৯৮৬ সংস্ককরণে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি। রামকৃষ্ণ তো অশিক্ষিত ছিলেন, ইংরেজী জানতেন না, তার ক্ষেত্রে আবার বইলেন না যে ইংরেজীটাই মূল যেহেতু Ramakrishna mission library তে সেটা আছে, সেটাই ঠিক। রামকৃষ্ণ বাংলাতেই বলেছিলেন ‘মেয়ে মানুষের কাছে খুব সাবধান হ’তে হয়। মেয়ে ত্রিভুবন দিলে খেয়ে’। কিংবা ‘মেয়ে মানুষের গায়ের হাওয়া লাগাবে না; মোটা কাপড় গায়ে দিয়ে থাকবে, পাছে তাঁদের হাওয়া গায় লাগে’ – এর জন্য আমার ইংরেজী অনুবাদে যাওয়ার দরকার নেই।
ঠিক একইভাবে বিবেকানন্দ ‘প্রণয়বৃত্তি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে বাল্যকালে বিবাহ দেয়া ভাল’ কিংবা ‘যদি কাউকে ইচ্ছেমত পতি বা পত্নীরূপে গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া যায়… দুষ্টপ্রকৃতি, অসুর ভাবের সন্তান জন্মাবে’ কিংবা ‘সকল অবস্থাতেই সতীত্বের জন্য প্রাণ দিতে কাতর না হয়। কোন একটা ভাবের জন্য প্রাণ দিতে পারাটা কি কম বীরত্ব?’ এগুলো যেমন বাংলায় বলেছিলেন, ঠিক তেমনি ‘জীবপ্রেম করে যেই জন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর’ সেটাও বাংলায় বলেছিলেন। এখন ইংরেজী পিডিএফ-এ সেগুলো সেরকমভাবে না থাকলে আমি কি করতে পারি? সেজন্য তো বিবেকানন্দের মূল বানীগুলো মিথ্যে হয়ে যাবে না।
‘মন্তব্য আটকে দেয়া’ নিয়েও চৌধুরী সাহেব মিথ্যাচার করেছেন। উনার কোন মন্তব্যই আটকে দেয়া হয়নি। উনাকে কেবল অনুরোধ করা হয়েছিলো ইংরেজীতে কিংবা বাংরেজীতে মন্তব্য না দিয়ে বাংলায় মন্তব্য করতে। এর আগে বহু মন্তব্যকারীর মন্তব্যই মডারেটরেরা ডিলিট করে দিয়েছিল ইংরেজীতে কিংবা বাংরেজীতে মন্তব্য করা জন্য। অথচ উনি নিজের ক্ষেত্রে অন্য নিয়ম দাবী করেন। পাঠকেরা যদি খেয়াল করেন তবে দেখবেন, উপরে চৌধুরী সাহেবের বাংরেজী মার্কা তিনিটি মন্তব্য ইতোমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে যা মুক্তমনা নীতিমালার পরিপন্থী। তারপরেও মডারেটরেরা উনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেগুলো প্রকাশ করেছেন। তারপরেও উনি মুক্তমনার নামে জিকির করে চলেছেন। আমি উনার কোন মন্তব্যই আটকে দেই নাই। তবে আমি ছারাও মুক্তমনায় আরো অন্য মডারেটররা আছেন, তারা নিজ দায়িত্ব কোন সিদ্ধান্ত নিলে আমি দায়ী নই। আমি ঘুম থেকে উঠে সার্ভারে গিয়ে উনার যে মন্তব্যগুলো দেখেছি (সেগুলো ইংরেজি- বাংরেজি হওয়া সত্ত্বেও) সেগুলো এপ্রুভ করে দিয়েছি। তাও যদি বিবেকানন্দের শিষ্যের আত্মা নন সব শান্ত হয়! কিন্তু উনার মন বিভিন্ন কারণেই অশান্ত। উনাকে বাংলায় লিখতে অনুরোধ করা হলেও কিংবা অভ্রের লিঙ্ক দেয়া হলেও উনি বাংলায় লিখবেন না বলে ঠিক করেছেন। এমনকি এটাও বলেছেন বাংলায় লেখা নাকি ‘waste of time’ । এ নিয়ে ফেসবুকেও তাকে কথা শুনতে হয়েছে।
উনার মুশকিল হয়েছে যে, পাঠকেরা বুঝতে শুরু করেছে – প্লাবনের জোরালো ধাক্কায় বিবেকানন্দের ‘অবতারত্ব’ ভেসে যাচ্ছে, মূর্তি থেকে মাটির আস্তরণ ক্রমশ সরে যাচ্ছে, ধুয়ে যাচ্ছে আলগা চাপানো রঙ। বিগ্রহ খসে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে হাড্ডিসার কংকালসার নগ্ন রূপের বিবেকানন্দকে, যে কদর্য কুৎসিত রূপটিকে উনি নিজেও আর সহ্য করতে পারছেন না। এটাই নির্মম সত্য।
@অভিজিৎ,
চোধুরী মশাইয়ের কথা শুনেতো আমার ভিমড়ি খাবার জোগাড়। সারাজীবন যে লোক ট্রেন আর জাহাজের ফার্স্ট ক্লাসে চড়লো, সে নাকি বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করেছিল। অবশ্য এর পিছনে বিবেকানন্দ নিজেই যুক্তি দিয়ে গিয়েছেন, চৌধুরী মশাইকে আর কিছু বলতে হবে না। বিবেকানন্দ তাঁর গুরুর মতই পেটের পীড়ায় ভুগতেন। দিনে পঁচিশবার লোটা-বদনা নিয়ে টাট্টিখানায় দৌড়াতে হতো। সেকারণে ট্রেনের থার্ডক্লাসে চড়তে পারতেন না, জাহাজের ডেকে অন্য সব সাধারণ যাত্রীর সাথে থাকতে পারতেন না। তবে, জাহাজে উঠার পরে অবশ্য যাদুমন্ত্রবলে দাস্তের প্লাবন বন্ধ হয়ে যেতো। আমাশয় আছে দেখে দয়া করে তার জাহাজযাত্রার ফার্স্ট ক্লাস কেবিনের টিকেট কিনে দিয়েছিল খেতড়ির মহারাজা। কৃতজ্ঞ বিবেকানন্দ তখন এস এম পেনিনসুলা থেকে চিঠি লিখে মহারাজাকে জানাচ্ছেন,
দানবীর মহাপুরুষ ছিলেন তিনি। টাট্টিখানায় উদারহস্তে দান করায়ও কোনো কার্পণ্য ছিল না তাঁর।
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যা উনি সব সময় ফার্স্ট ক্লাসে ভ্রমণ করতেন, এবং বিদেশে গিয়ে শহরের দামী হোটেলে থাকতেন। দামী চুরুট খেতেন। ১৩ ডলার দিয়ে পাইপ কিনতেন। সন্ন্যাসী বলে কথা। কিন্তু আমি-আপনে বললে কী হবে? বিবেকানন্দই তার কাজের সাফাই গেয়েছেন এভাবে –
“সাধু হয়েছি বলে কি চুরির দায়ে ধরা পড়েছি যে উপোস করতেই হবে, গায়ে ছাইভস্ম মাখতেই হবে? …শুকনা সন্ন্যাসী হয়য়ে জঙ্গলে পড়ে থাকা আমার আদর্শ নয়। জগতকে শিক্ষা দেয়াই সাক্ষীর কাজ। আমার আদর্শ হচ্ছে তিনি যা বলে গেছেন আর শাস্ত্রাদিতে যা আছে, তা সাধারণ লোককে জানানো।”
বলেন আমীন!
@অভিজিৎ,
বিবেকানন্দ রচনাবলীর ইংরেজি গুলোই অরিজিনাল-বরং বাংলা গুলোই অনুবাদ। উনার ৯০% লেখা বা বক্তব্য ইংরেজিতেই। সেগুলো বঙ্গানুবাদ করেই বিবেকানন্দ রচনাবলী তৈরী হয়েছে।
বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ বা শ্রী চৈতন্য-এরা ইন্সটিটিউশন-এদের ওপর শয়ে শয়ে গবেষক কাজ করছে। সুতরাং এই ধরনের কাজ অথেন্টিক করতে গেলে, বেসিক কনসেপ্টে বেশী ভুল থাকলে, আগেই লোকে গ্রহণ করবে না।
@chowdhury,
কোনটা মিসকোটেড ছিল? আপনি specific করে বলবেন না পাঠকের জন্য… আপনার লেখা থেকেঃ
আর অভিজিৎ এর লেখা থেকেঃ
পরে রেফারেন্স থেকে নিচের নাম আসলো, তাহলে এটা অভিজিৎ এর ভার্সন নাকি তার সংকলন?
[3] নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন
অভিজিৎ তো কথাও দাবি করে নাই যে এটা তার নিজের গবেষণার ফল? অনেক লেখা পরে সামারি, তাইলে অভিজিৎ কে আক্রমণ কেন? নিরঞ্জন ধর কে না কেন? এটা শুধু একটা উদাহরন, আপনি আর কোথায় কোথায় misquote পেয়েছেন দয়া করে বলবেন।
– তাহলে আপনি এখানকার পাঠকদের আক্রমণ করছেন “বিশ্বাসী” বলে, আর আরেকজনকে secondary paper থেকে রেফারেন্স ব্যবহার করার জন্য দোষ দিচ্ছেন কিন্তু নিজের লেখায় কোনো রেফারেন্স নাই!!! Its always easy to point out…
yes… lets all judge Vivekananda work, values, life history from his own writing!!!
তবলিগ বা রামকৃষ্ণ মিশন যার হয়েই জীবন উত্সর্গ করুক না কেন, এবং তার পেডিগ্রি যাই হোক না কেন, সে একটি বিজ্ঞান বিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সেবা করছে এই সত্যকে অস্বীকার করা যায় না. তবলিগ বা রামকৃষ্ণ মিশন, দুই পক্ষই এরকম দুএকটি পথভ্রস্ট ভালো বিজ্ঞানের ছাত্রকে তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করে থাকে. সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়, অতো ভালো বিজ্ঞানের ছাত্র যদি তবলিগ বা রামকৃষ্ণ মিশনের জন্য কাজ করতে পারে তাহলে তুমি তবলিগ বা রামকৃষ্ণ মিশনকে খারাপ বলার কে. খোদ রামকৃষ্ণ বাজারে এত নাম করেছিল বিবেকানন্দের মতন একজন ক্যারিসমেটিক ভক্ত পাওয়ার সুবাদে. বিবেকানন্দ ও অরবিন্দের বাজার বল হয়েছিল মেমসাহেব বাগানোর সুবাদে. অতএব, আই এই টির একটি ছাত্র কি করিল তা নিয়ে সময় নস্ট না করাই বোধহয় ভাল.
মনে রাখা ভাল, তথাকথিত ‘সমাজসেবা’, অর্থাত স্কুল বা হাসপাতাল চালানো টাইপের কাজ, তবলিগ, রামকৃষ্ণ মিশন. হামাস, আর এস এস সবাই করে থাকে.
@মিয়া সাহেব,
ঠিক কথা, আসলে সমাজ সেবা মোটেও তাদের উদ্দেশ্য নয়, সাধারন লোকের কাছে নিজেদের মতবাদ ছড়িয়ে দেয়া আর জনপ্রিয় করে তুলবার এগুলো হলো তাদের চতুর কৌশল।
I am also surprised to see those so called Muktomona/ free thinker, who didnt study vivekananda for a single moment and sit here to criticize him. I dont think most of the users have any scientific brains, rational brains.
Why did MuktoMona delete my earlier comment???
@chowdhury,
মুক্তমনা ব্লগে বাংলায় মন্তব্য করতে হয়। বাংরেজিতে কিংবা ইংরেজীতে নয়। আপনার মন্তব্য ডিলিট করা হয়নি, কিন্তু ইংরেজীতে মন্তব্য করতে থাকলে ভবিষ্যতে ডিলিট করা হবে বৈকি।
@chowdhury,
আপনিতো আপনার অনেকগুলো moments পার করেছেন বিবেকানন্দ পড়ে, তা নিজে surprise হওয়ার আগে আপনার ‘scientific’ আর ‘rational’ মাথাটা খাঁটিয়ে কিছু বলে আমাদেরকে surprise করুন!
একটা উল্লেখযোগ্য নিউজ এখানে দিচ্ছি।
সুরেশ যাদবের। সে আই আই টির টপার ছিল-মানে ভারতের সেরা ছাত্রদের একজন না, সেরা ছাত্র। কিন্ত বিবেকানন্দের আদর্শে “বিশ্বাস” করে, এখন সমাজসেবা করে-চাকরী করে নি। এমন আত্মত্যাগের উদাহরন মিশনে আমি আরো অনেককেই দেখেছি।
তবলীগী জামাতে বিশ্বাস করে অনেক মুসলমান ছাত্র সমাজসেবাতে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে।
এগুলোকে কিভাবে দেখা যায়। আমরা বিবেকানন্দ বা তবলীগের বিরুদ্ধে বলতে পারি ত অনেক-কিন্ত তাদের আদর্শ উদবুদ্ধ হয়ে যখন একজন সমাজসেবাতে নিজের আত্মত্যাগ করছে-তখন সমস্ত ব্যপারটা নিয়ে আরো গভীর ইনস্পেকশন দরকার। এই ব্যপার নিয়ে আমার নিজস্ব মত আছে- আগে অন্যদেরটা শুনিঃ
***************
Five years ago, I was posted in Kolkata to look after the eastern region. This is where I had the soul-stirring experience of meeting Shreesh at Belur Math, the Ramkrishna Mission’s headquarters. Away from the city’s boisterous roads, Belur is tranquility personified as its sylvan surroundings are placed close to the mighty Hooghly. It had been 18 years since Shreesh and I had passed out from IIT, Kanpur, where we spent our days in neighbouring hostel rooms, and 14 years since we had last met. In the course of lunch that day at Belur, he unfolded his post-IIT story, which marked a turning point for my own view towards life.
Shreesh Jadhav was ranked second across India in the JEE and completed his B.Tech in computer science with a perfect 10 CPI. A recipient of the President’s gold medal at IIT, he spurned all offers of plum scholarships from top foreign universities. Instead, he went on to do his Ph.D from IIT, Kanpur. As his neighbour, I was familiar with Shreesh’s leanings towards Swami Vivekananda and Ramkrishna Paramhans. Often, when I barged into his room for a chat session, I would find him deep into reading their teachings. These had an impact on his day-to-day actions as well.
An example of his austerity was the fact that he managed to pass those four years with just a pair of white kurta-pyjamas . Top brain that he was, the toughest assignments were cracked by him in a jiffy and his answers matched up to the second decimal of the model answers put up later outside the exam hall. He also found time to take up the cause of mess workers, which temporarily invited the ire of IIT authorities, but eventually bore results. Through his Vivekananda Samiti, he taught several of the mess workers’ children, besides other poor employees of IIT.
With three sisters, he was the only son of his parents, and the entire family along with many of us, egged him on to study abroad. I occasionally mocked his convictions and told his parents that he would eventually succumb to the lure of dollars, just like several of his batchmates. But, he couldn’t be deterred from his single-minded pursuit of serving humanity. He would explain, “Just like Silicon Valley, social sectors too desperately need intelligent people.”
He continues to positively impact the lowest rung of the social ladder. Recently, he helped save the life of 12-year-old Sarita, who developed a hole in her heart. Her operation in Bangalore cost Rs 3 lakh and on reading Shreesh’s email, I had contributed my bit, but was doubtful if he would meet the target. But, as I recently found out, Sarita was back home in Kanpur after a successful surgery, making me put my faith in Shreesh’s words that “there are a lot of good people in the world, we just need to reach out to them”.
আপনার সুবিশাল লেখা মাঝ পথেই ছেড়ে দিয়েছি,পড়ার ইচ্ছে বা ধৈর্য্য কোনটাই জাগিয়ে রাখতে পারলাম না। সেজন্যে দুঃখিত। বিশ্লেশণী লেখা হিসেবে এটা একটা চূড়ান্ত উদাহরণ হতে পারে,তার বেশী কিছু নয়। আপনি কি ধরনের মানসিতায় বিরাজ করেন তার একটা সুচারু আবহাওয়া পেয়ে গেলাম। আপনার বিরুদ্ধে আমার কোন মন্তব্য নেই একমাত্র “ছিঃ” শব্দটুকু ছাড়া। আশা করি আপনার নিজের অর্জিত জ্ঞানের আলোকে আপনার ভবিষ্যত পথ উজ্জ্বল হবে।
যেখানে মননই নেই, তার আবার মুক্তমনা হবার বাসনা কেন ? সমগ্র শতাব্দীতে এই ধরনের জীব ছিলো,কলিকালে থাকবে সে আর বিচিত্র কি ? আর নামের আগে পিছে কিছু নেই,নাকি এই লেখা লেখার সময় ভয় পেয়েছেন ?
নামের আগে কিছু নেই, তবে পিছনে রায় ছিল। আপনার মত জঙ্গি হিন্দুত্ববাদীর ভয়ে সেটা হায় হায় করে পালিয়েছে।
@ফরিদ আহমেদ,
নামের আগে পিছে কিছু থাকার প্রয়োজনটা কি?? আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম না, কারন উনি আমার আমাকে ছি ছি করে ভরিয়ে দিবেন!! আর তার উপর আমার নামই নাই!!!! আমি ভাবছি, উনি কি একটু খুশি যে উনার নামের শেষে দত্ত আছে!!! অভিজিৎ দা এর নাম ‘সৈয়দ অভিজিৎ বিন রায়’ হলেই বা কি হত!!!! নামে কি বা পরিচয়…
@ফরিদ আহমেদ,
আমি জংগি নই, আর কথায় কথায় হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের নস্যাৎ বা অপমান করি না। জীবনে কখনও করবো না। আমদের ধর্মে এ সব শেখায় না, আমরা যত মত তত পথের বিশ্বাসী। তাই আমদের মন অনেক মুক্ত। কোন মুক্ত মনের এমন বিচারের দরকারই নেই, যা সে অন্যের ঘরের দুয়ার ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে ! এটা সার্বিক ভাবে সভ্যতারও অপমান। যাই হোক, এই সব বোঝার জন্যে যে পরিষ্কার মনের দরকার তা এখানে আশা করা বাতুলতা মাত্র। আমি এই আলোচনার (যদিও এটাকে এই আলোচনা নাম দিতে বাঁধছে) ইতি টানছি। আপনাদের মুখোমুখি হয়ে নিজেকে আর ছোট করতে চাই না।
@হিমাদ্রী শেখর দত্ত,
ভয়ের কারণে নামের শেষে যে কিছু নাই প্রশ্নটা করেছিলেন না। সেই ভয়টা তাহলে কার কাছ থেকে এসেছিল? আপনারাতো জঙ্গি নন, ভক্তিরসে ভরপুর মানুষ।
হাসায়েন না দাদা। এই লেখার প্রথম কমেন্টে আপনি আমাদের সম্পর্কে নিদারুণ সব অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন। একটুখানি তুলে দিচ্ছি এখানে।
এই মন্তব্যেও আমাদের মন যে অপরিষ্কার সেটা বলে গালমন্দ করেছেন। এগুলো যদি অপমান না হয়, নস্যাৎ করা না হয়, তবে অপমান আর নস্যাৎ কাকে বলে?
হ, সেই মুক্তির চোটে নিজের নামকেও মুক্ত করে দিয়েছেন। একবার হন হিমাদ্রী শেখর দত্ত, একবার হন শেষাদ্রী শেখর বাগচী। পরের বার যে কোন শেখর আদ্রী হবেন কে জানে।
যাক, অন্তত এইটুকু বুঝেছেন যে, আসলে কোনো আলোচনা করতেই আপনি আসেন নি। হনুমানের মত আঙুল দিতে এসেছিলেন, এখন পাল্টা আঙুল খেয়ে পোড়া লেজটাকে গুটিয়ে নিয়ে পালালেন।
আপনাকে কেটে কয় ইঞ্চি খাটো করে দিয়েছি, সেটা একটু বলে গেলেই পারতেন। আমরা আবার এগুলোর হিসাব রাখি কিনা।
@হিমাদ্রী শেখর দত্ত,
আপনার জন্য আমি কয়েকটা পদক্ষেপের কথা ভেবেছি, মানে আপনার গভীর চিন্তাভাবনা প্রসূত মন্তব্য দেখে আর কি।
১. দ্বিবীজপত্রী থেকে একবীজপত্রী হয়ে যান।
২. বিবাহ করেছেন? না করলে তাড়াতাড়ি করে স্ত্রীকে বোন বানিয়ে ফেলুন।
৩. কাম প্রতিরোধ দিবস ঘোষনা করুন। কামে জর্জরিত নারী পুরুষের বিরুদ্ধে আইন গড়ে তুলুন।
৪. মুক্তমনা নামে এইসব বদ্ধমনাদের সাথে বাকবিতন্ডায় না জড়িয়ে এখান থেকে মানে মানে কেটে পড়ুন। কী করবেন বলুন, আমাদেরতো বীজ দুটো, আবার কিনা কামভাব জাগ্রত হয়। আমাদের সাথে কথা বলে উত্তেজনায় যদি আবার আপনার শরীর থেকে কিছু বিয়োগ হয় তাতে করে জাত যাবে যে!!
ওম নম!!
@হিমাদ্রী শেখর দত্ত,
ঠিক ধরছেন। আমি লুকটা ‘খুব খ্রাপ’! কি আর করা। :))
তবে আপনার জন্য ‘খ্রাপ লুকের’ পরামর্শ হল – উত্তাপ সহ্য করার মত শক্তি না থাকলে এর পর থেকে চুলার ধারে না যাওয়াই উত্তম হবে।
@হিমাদ্রী শেখর দত্ত,
সমগ্র শতাব্দীতে এই ধরনের নাম ছিলো,কলিকালে থাকবে সে আর বিচিত্র কি ? যেমন — রাম, কৃষ্ণ, অর্জুন….
@রৌরব,
হ্যা, আপনি তো বলবেনই। আপনার নামের আগে পিছেও তো কিছু নেই। 🙂
@হিমাদ্রী শেখর দত্ত, ”ভবিষ্যত পথ উজ্জ্বল” হওয়া বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন?
সবাই সব ভালো কথা অলরেডি বলে ফেলেছে অভিজিৎ দা। এত ভালো লেখা, এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। প্রগতিশীলের নামে কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষ কম না! তাদের লিস্ট(আমার নিজের) আজকে বিবেকানন্দ ভারী করল। আপনি তো আমাকে আরো আরো পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করছেন!! আর কত পড়ি!
অসাধারণ বিশ্লেষণ। অনেক হিন্দুর মুখে কুলুপ এটেঁ দেয়ার মতো চমৎকার একটা পোস্ট…
অভিজিৎ ভাই। অসাধারণ একটি পোস্ট দিয়েছেন।আমার হিন্দু বন্ধুদের (যারা বিবেকানন্দ-ভক্তিতে গদগদ)তাদের দেখাতে হবে।
‘স্ববিরোধী বিবেকানন্দ’ শিরোনাম দেখে যতটুকু আশা করেছিলাম, জল গড়িয়েছে অনেক দূর।
সে জলে আমরা দেখলামঃ
প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির উর্বর ভূমি রচনায় সহায়ক শক্তি-সংস্থা-ব্যক্তির স্বরূপ উম্মোচনে এ লেখার গুরুত্ব অনেক। এ কেবল স্ববিরোধী ব্যক্তির মুখোশ উম্মোচন নয়, ঐ সময়েরও উম্মোচন।
আজকেও যারা সেবাকে তার দর্শন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখেন, তারা ধূর্ততার দিক থেকে অতীতের চেয়ে অগ্রসর।
আপনার এ লেখাটা খুব বেশি ভাল লেগেছে বলে, রাত জেগে মন্তব্য।
চমৎকার! অসাধারণ হয়েছে লেখাটা। যুক্তি আর রেফারেন্স ধরে ধরে চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিখুঁতভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন স্ববিরোধিতার প্রতিটি ক্ষেত্র। (F) (F) (F)
এখানে কয়েকটা বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই –
১)
পুরো লেখাটা যেখানে সাক্ষ্য-প্রমাণের কঠিন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে এমন অপ্রমাণিত অনুমানের কথা বলাটা মানানসই হয়নি। নির্মোহ বিশ্লেষণে “পুত্র দেখতে শুনতে বিবেকানন্দর মতো হয়েছিলো কীনা” – এ ধরনের বক্রোক্তির অনুপস্থিতিই বেশি আকাঙ্ক্ষিত।
২) বিবেকানন্দের মন্তব্যগুলোর তারিখ নিয়ে একটু আলোচনা করলে আরো ভাল হতো। এতে সময়ের সাথে উনার চিন্তাধারা বদলেছে, নাকি সব সময়েই এরকম স্ববিরোধী কথা বলে গেছেন, তা আরো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেতো।
৩) বিশাল এ লেখায় ভুলের হার খুব বেশি না হলেও, একটু পরপর কিছু কিছু ভুল বানানের উপস্থিতি মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। আসলে, ভাল লেখায় ভুল বানান চোখে পড়লে তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ লাগে।
ভাল থাকবেন।
এ লেখার সেরা লাইনটি হল
😀
এ লেখাটির ব্যাপারে আমার একটা মেটা-আপত্তি আছে। ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা আমার কাছে দুর্বলতা নয়, শক্তি বলেই প্রতিভাত হয়। স্ববিরোধিতার সাহস না থাকলে বরং বুদ্ধিবৃত্তিক একেশ্বরবাদের খপ্পরে পড়বার সম্ভাবনা বেশি।
@রৌরব,
ধন্যবাদ! 🙂
কোন কোন ক্ষেত্রে মনে হয় ‘None of the above’ এ টিক মার্ক দেয়া শ্রেয়তর হবে। :))
@অভিজিৎ,
except that ইতিহাস সবসময় আপনাকে সেই সুযোগ দেয় না 😛
ইংরেজ শাসন, ফ্যাসিবাদ, জাত-পাত — এগুলি লাইন বন্দী দাঁড়িয়ে নেই একগুলিতে মারার জন্য। এগুলির মধ্যে কনট্রাডিকশন আছে (সিপাহী বিপ্লবের উৎস ও ফল জানাটাই যথেষ্ট এটার জন্য)। ইংরেজ শাসনের ব্যাপারে যে স্ববিরোধিতার কথা বলেছেন, সেই ’স্ববিরোধিতা’-য় আক্রান্তদের মধ্যে আপনার লেখা থেকেই দুজনের নাম বলতে পারি — সত্যজিৎ রায় ও ক্রিস্টোফার হিচেন্স।
@রৌরব,
সত্যজিৎ রায় ও ক্রিস্টোফার হিচেন্স-এর স্ববিরোধীতার খবর জানার আগ্রহ রইলো। এখনতো মনে হচ্ছে স্ববিরোধীতার প্রকৃতি প্রতিটা মানুষের মধ্যেই কম-বেশী থাকে, সে মহাপুরুষ হউক, কি সাধারন হউক। এটা যেন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরই একটি অংগ। মহাপুরুষগনও মানুষ, সাবধানতা অবলম্বন না করলে মহাপুরুষগনই এতে ধরা খেয়ে যান। আর এভাবে দেখতে গেলে এখন এটাকে খুব অন্যায় বলে মনে হচ্ছেনা যতক্ষন না স্ববিরোধী উক্তিগুলো শুধু কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, সেগুলোর প্রতিটি বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ বাস্তবে গৃহীত না হয়। তবে এটাও ঠিক যে সময়ের সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পালটায়, আর তাই সময়ের ব্যবধানে মানুষের করা উক্তিগুলোর হেরফের হতে পারে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমার অবস্থানটা কিন্তু ভিন্ন। আমার অবস্থান এটা নয় যে স্ববিরোধিতা-তো-সবারই-থাকে-কি-আর-করা-যাবে। আমি এটার প্রশংসা করছি (ক্ষেত্রবিশেষে, যেমন ইংরেক শাসনের ক্ষেত্রে)।
@ব্রাইট স্মাইল্,
httpv://www.youtube.com/watch?v=C4kSNNOQGh4
3:45 থেকে দেখুন।
সত্যজিতের ব্যাপারে আমার কথাই আপাতত বিশ্বাস করতে হবে :razz:, হিচেন্স যা বলছেন সেধরণের কথা তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এবং তাঁর alter ego ফেলুদার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন।
@রৌরব,
আপনি ভিডিওটা দিলেন কি স্ববিরোধীতার উদাহরনসরূপ? একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
সত্যজিতের অন্যতম একটি চরিত্র প্রদোষচন্দ্র মিত্র, কিন্তু এটি তার alter ego, আমার এরকম কখনো মনে হয় নি, বরং আমি কোথাও শুনেছিলাম(কোন রেফারেন্স নেই আমার) এই চরিত্রটি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে চিন্তা করে লেখা। যাই হোক আপনি হয়তো ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আরো বলবেন, বা তথ্য দিবেন।
@নির্মিতব্য,
ফেলুদার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ নয় (সত্যজিৎ নিজেই একথা বলেছেন), তারপরও…ফেলুদা সৌমিত্রকে মাথায় নিয়ে লেখা নয়। ওই আইডেন্টিটি অনেক পরের ব্যাপার। এনিওয়ে, সত্যজিতের বহু ব্যক্তিগত থীম — তাঁর ধর্মবিরোধিতা, ’সভ্যতার’ বিষয়ে তাঁর দ্বিধা এসব ফেলুদা ও শংকুর মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, এঁদেরকে সরাসরি তার অল্টার ইগো না ধরেও সেটা আশা করি স্বীকার করা সম্ভব।
ভেবেছিলাম সত্যজিতের নিজের মুখের কথার রেফারেন্স দিতে পারব না, কিন্তু গুগলে তাও পেয়ে গেলাম। satyajit british rule দিয়ে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন (এন্ডারসনের সাথে সাক্ষাৎকার)।
হিচেন্সের ব্যাপারে ঠিক কি বলব বুঝতে পারছি না। সাম্রাজ্যবাদ খারাপ, কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নানান ভাবে ভারতের জন্য উপকারী ছিল, এরকম এটা ’স্ববিরোধী’ বক্তব্য দেখতে পাচ্ছেন না কি?
@রৌরব,
ইন্টারভিউ লিঙ্কটার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। অবশ্যই সময় নিয়ে এটা পড়ে দেখব।
সাম্রাজ্যবাদ খারাপ, আবার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নানান ভাবে ভারতীয়দের উপকার করেছে এটা আসলে আমার কাছে স্ববিরোধী মনে হছে না, কারন এটা একটা সাদা কালো ইস্যু না। সাম্রাজ্যবাদ এখন খারাপই তো, বরং এখনকার যুগে এটা খুব দৃষ্টিকটুও বটে। আধিপত্যের জন্য একটা দেশকে আক্রমণ, তারপর আবার সেখানে সব রাস্তা ঘাট বানিয়ে, তেল গ্যাস সোনা দাস-দাসী সব লুটে পুটে নিয়ে, নিজের দেশে বড় বড় মিউজিয়াম বানিয়ে, নিজের দেশের ব্যাঙ্ক সোনাদানা দিয়ে ভরিয়ে সভ্যতা ছড়ানোর(এযুগে গনতন্ত্র উফার দেবার জন্য) জন্য নিজেকে বাহবা দেওয়া, বরই আজব শোনায়। কিন্তু যেখানে সাম্রাজ্যবাদ যায় নি কখনো, তারা এখনো আদিম যুগের মত দিন যাপন করে(যেমন নগণ্য কিছু আদিবাসি সমাজ)। এখন আপনি পুরানো সাম্রাজ্য এর প্রভাবকে ভাল বলবেন না খারাপ। অনেকটা ধর্মের মত, ধর্মের রীতি-ভীতি একসময় মানুষকে বর্বরতা থেকে বাচিয়েছে, কিন্তু আজকে ধর্ম বড় বেমানান। হিচেন্স ভারতে সাম্রাজ্যবাদের সুফলটাই বলেছে, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদকে খারাপ ও বলছে, অন্তত এই বক্তব্যে তো স্ববিরোধী পেলাম না।
@নির্মিতব্য,
🙂
আপনার মন্তব্যটা আমার ভাল লাগল, কারণ এখানে যে underlying assumption আছে সেটার সাথেই আমার ঝগড়া। আপনার ফ্রেমওয়ার্ক হল — সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার একটা টেনশন বিহীন থিয়োরি সম্ভব, যেটা কিনা এই — সাম্রাজ্যবাদ ’তখন’ ভাল ছিল, ’এখন’ খারাপ।
না, সাম্রাজ্যবাদ ’তখন’ ভাল ছিল কিনা, সেটার মধ্যেই কনট্রাডিকশন। বিবেকানন্দ বা রামমোহন ’এখন’ বসে ডায়লগ দিচ্ছেন না। হিচেন্সের বক্তব্যও শুধু এটা নয় যে ’এখন’ সাম্রাজ্যবাদ খারাপ বা খারাপ নয় — তাঁর দ্বিধা ’তখন’ নিয়ে।
@রৌরব,
‘এখন’ আর ‘তখন’ ব্যাপারটা আমার নিজের ভাবনা। ওটা বাদ।
সারমর্মঃ হিচেন্স সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে প্রশ্ন করার আগে ভেরিফাই করে নিল যে সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা progress নিয়ে সে উত্তর দিবে কিনা, বা এরকম কোনো তুলনামূলক প্রশ্ন কিনা, তার মানে কি তাই নয় সে ওভারঅল সাম্রাজ্যবাদ এর প্রভাব নিয়ে উত্তর দেয় নি। হিচেন্স পুরাপুরি কার্ল মার্ক্সের ব্রিটিস সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে চিন্তাভাবনা উদ্ধৃতি করে গেলেন, এবং হিচেন্স বলল(৫:১৯), যে ভারতে ব্রিটিস সাম্রাজ্য আধুনিক অনেক প্রযুক্তি এনেছে যা ব্রিটিস সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতকে প্রগতিশীল করেছে। কিন্তু সে ব্রিটিসদের ভারতের প্রতি আচরন নিয়ে কিছু বলেন নি, বা এই প্রযুক্তিগুলো কেন ভারতে আনা হলো তাও ব্যাখ্যা করেন নি। কিন্তু ফলাফল ভালই ছিল এমনি বলেছেন। কিন্তু ব্রিটিস সাম্রাজ্য আয়ারল্যান্ড বা উত্তর আফ্রিকাতে তেমন প্রযুক্তিগত উন্নতি প্রভাব ফেলতে পারে নি তাই বলল হিচেন্স।
এটা আপনার দেওয়া ভিডিও এর ৩:৪৫ থেকে ৬:৩০ পর্যন্ত, আর আমার এখনো তাকে স্ববিরোধী মনে হচ্ছে না। আপনি কি আরেকটু পয়েন্ট আউট করে দেবেন।
@নির্মিতব্য,
ঠিক আছে, আপনার যদি মনে না হয় তাহলে ভালই। নিচে অভিজিতের মনে হয়েছে কিন্তু।
বলা মুশকিল। হয়তো আমরা বুশের মত দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি – ‘আইদার উইথ আস, অর উইথ দেম’। আসলে অনেক সময় জনগণের অধিকার থাকে দুটোকেই ‘না’ বলার!
বিবেকানন্দের স্ববিরোধিতার প্রশ্ন বাদ দিলেও তার রাজনৈতিক দর্শনও ধর্মের প্রভাবমুক্ত নয়। যদিও তিনি সচেতনভাবে রাজনীতি পরিহার করেছেন (এমনকি রাজনীতিকে ‘বাঁদরামি’ বলেও উল্লেখ করেছেন একটি লেখায়) কিন্তু হিন্দুত্বকে ভারতীয়ত্বের সমার্থক হিসেবে দেখায়, এবং বেদান্তকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় তৈরি হয়েছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ধারা। পরবর্তীতে ভারতে যে আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ যে হিন্দু রাষ্ট্রের ধ্বনি তুলেছিল, তার মূলে ছিল ঐ একই হিন্দু-জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। স্বামীজি রাজনীতি এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলেন বটে, কিন্তু ইতিহাসের এমন নির্মম পরিহাস যে, ভারতের জাতীয় জীবনের সর্বাপেক্ষা প্রতিক্রিয়াশীল ধারাটি তাঁর এবং বঙ্কিমের প্রেরণা থেকেই হয়তো জন্মলাভ করেছে।
অবশ্যই। সত্যজিতের ব্যাপারটা সঠিক জানিনা, তবে হিচেন্সের অনেক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরই আমি সমর্থক নই, বিশেষতঃ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে। তার স্ববিরোধিতাকে স্ববিরোধিতা বলতে আমার আপত্তি বা কার্পণ্য কোনটাই নেই।
@অভিজিৎ,
উমম…আপনার কি ধারণা হল, আমার স্ববিরোধিতার সমর্থন বুশের পক্ষে গেল? বুশ আমার কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক একেশ্বরবাদের উজ্জ্বল উদাহরণ।
না বলার অধিকার নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবতা স্ববিরোধী রূপ ধারণ করে, কাজেই যেসব বিশ্লেষক সেই স্ববিরোধিতাকে ধারণ করতে পারেন, সেটা তাদের শক্তি বলে মনে করি। একটি কনক্রিট রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিপাহী বিপ্লব আপনি সমর্থন করছেন কি করছেন না এই প্রশ্নটা যখন ওঠে, তখন কেঁচে-গন্ডুষ করে বিশুদ্ধভাবে বিপ্লব করতে পারলে আপনি কি করতেন, সেটা সাইড ইস্যু।
ব্রাইট স্মাইলকে বলা কথাটা আবার উল্লেখ করি — আমি হিচেন্সের স্ববিরোধিতা প্রশংসাসূচক ভঙ্গিতে উল্লেখ করছি, ‘শুধু বিবেকানন্দ নন অন্যরাও স্ববিরোধী‘ এই অ্যাঙ্গেল থেকে নয়। সেটা মানে এই নয় যে হিচেন্সের সাথে আমি একমত। স্ববিরোধী dialectic এর মধ্যে দিয়ে গিয়ে কেউ সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারে, কেউ বেঠিক। সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও স্ববিরোধিতার প্রশংসা করব সেক্ষেত্রে।
@রৌরব,
সিদ্ধান্তের সমালোচনায় কিছু স্ববিরোধীতা থাকতে পারে, কিন্তু একজনের আদর্শচ্যুত বা ১৮০ ডিগ্রী উল্টো স্ববিরোধীতাও কি একই পর্য্যায়ে পরে আর তা প্রশংসাযোগ্য হতে পারে?
@ব্রাইট স্মাইল্,
আদর্শ জিনিসটার প্রতি আমার অ্যালার্জি আছে, তারপরও, fair enough। স্ববিরোধিতা নিন্দার হাত থেকে রেহাই পাবার লাইসেন্স নয়।
@রৌরব,
এখানে আদর্শ বলতে যা বুঝিয়েছি তা হলো কারো নিজস্ব চিন্তাধারা বা মতবাদ আর সেটার প্রতি সততা প্রদর্শনের ব্যাপারটা। সেই মতবাদ সমাজের জন্য ভালো ও খারাপ যে কোন একটা বা দুটোই হতে পারে যদিও সেটা আপেক্ষিক, কিন্তু আমার উক্তিতে সেটা প্রধান নয়।
@রৌরব,
না এখানে আপনার সাথে বুশের কোন সম্পর্ক নেই। বুশের নামটি এখানে মুখ্য নয়, তার উক্তিটাই মুখ্য। আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হল বুশের এই আইদার অর উক্তিটা ‘ফ্যালাসি অব বাইফারকেশন’ এর উদাহরণ। হয়তো তৃতীয় কোন অপশন রয়ে গেছে যেটা বিবেচনাতেই আনা হয় নি।
তারপরেও খুব যে একমত হলাম তা নয়। কিন্তু যাহোক…আমার মতে হিচেন্স-এর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষের অবস্থানটা সে সময়কার পরিস্থিতিকে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে শিল্পভিত্তিক পুঁজিতন্ত্রের বিনিয়োগটা যেভাবে বেড়ে উঠেছিল সেটা গোনায় ধরা হয়নি। উৎপাদনে এই বিপ্লব ঘটার প্রাথমিক শর্ত ছিলো – পুঁজি এবং শ্রম -দুটোরই প্রচুর যোগান। সে সময় পুঁজির যোগান এসেছিলো প্রথমতঃ সতেরো শতকের বণিকদের বিপুল মুনাফা থেকে, যে মুনাফা তারা অর্জন করেছিলো নতুন আবিস্কৃত দেশগুলোর খনি আর বাগিচা থেকে এবং হাজার হাজার ক্রীতদাসদের খাটিয়ে; এবং অন্যদিকে ভারতবর্ষকে লুণ্ঠন করে। উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের জনসংখ্যাও বাড়ছিলো হু হু করে। প্রয়োজন পড়েছিলো অধিক পরিমাণ খাদ্য আর কাঁচামালের। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে পাশ্চাত্যের জমির পাশাপাশি প্রাচ্যের জমিকেও কাজে লাগানো হতে থাকে। এই প্রেক্ষিতেই ভারতকে তৈরি করা হয়েছিলো সরাসরি শোষণের ক্ষেত্র হিসেবে। অবশ্যই উপর থেকে দেখলে রেলপথ, টেলিগ্রাফ, শিক্ষার বিস্তার এগুলোকে ইংরেজদের খুব বিশাল অবদান কিংবা ‘নিঃস্বার্থ উপকার’ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ইংল্যান্ডের পুঁজিতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই এগুলো তাঁদের করতে হয়েছিল – শিল্পজাত নানা দ্রব্য ভারতের বন্দরগুলো থেকে দেশের অভ্যন্তরে বহন করে নিয়ে যাওয়া, ভারতের কাঁচামাল বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানো, আর তার সাথে চলমান বিদ্রোহ বিপ্লবকে ঠাণ্ডা করে ভারতকে সামরিক শক্তির পদানত রাখার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল। হিচেন্স যদি মনে করেন সাম্রাজ্যবাদিতা খারাপ (যেটা হেনরি কিসিঞ্জারকে নিয়ে বই লেখার সময় তিনি বলেওছিলেন), কিন্তু আবার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভাল – সেটা আমার চোখে একধরণের স্ববিরোধিতাই। বাট হ্যা, স্বামীজির স্ববিরোধিতাগুলোর তুলনায় সেটা নস্যি।
@অভিজিৎ,
নিঃস্বার্থতার ব্যাপার আসছে কেন? আমি তো হিচেন্স কেন (আপনি যা লিখেছেন তিনি সেটা সংক্ষেপে এক বাক্যে সেরেছন ওই ভিডিওতে), বিবেকানন্দের যে উদ্ধৃতি আপনি দিয়েছেন তাতেও দেখছি ব্রিটিশ যে স্বার্থ নিয়েই কাজটা করেছে তার স্বীকৃতি।
আমার চোখেও 🙂 । তাঁকে প্রশংসা জানাই।
@রৌরব,
আপনাদের মন্তব্য থেকে অনেক কিছু জানা গেল। 🙂 আমি হিচেন্স এর কোনো বই এখনো পড়ি নি। পড়লেও অনেক পরে পড়া হবে। ইউটিউব থেকে যতখানি সম্ভব ততটুকু দেখি। আমি ডকিন্স কে সহজে ফলো করতে পারি। বিজ্ঞান আমার দ্বিতীয় ভাষা। কিন্তু হিচেন্স এর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনেক কঠিন লাগে!! এখন জানতে ইচ্ছা করছে হিচেন্স কোন প্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদকে খারাপ ভেবেছেন, এ বিষয়ে কোন লিঙ্ক থাকলে একটু শেয়ার করেন, আমার জন্য সোজা হবে খোজা/পড়া।
@নির্মিতব্য,
সাম্রাজ্যবাদের উপর হিচেন্সের মূল বই Blood, Class and Empire: The Enduring Anglo-American Relationship। তবে সবচেয়ে সহজ উপায় বোধহয় hitchens imperialism দিয়ে সার্চ দিয়ে ওয়েবে কি পান দেখা। বিশেষত জর্জ অরওয়েলের ওপর তাঁর লেখা ও সাক্ষাৎকারগুলি দেখতে পারেন (ভিয়েতনামের ওপরেও)।
@রৌরব,
ধন্যবাদ। 😀
আপনার অসংখ্য ভালো লেখার মধ্যে এটি অন্যতম সেরা লেখা। “বিবেকানন্দ” নামটি শুধু শুনেছি এতকাল কিন্তু তাঁকে জানার অভাব থেকে গেছে আমার সব সময়। আপনার এই বিশ্লেষণ মূলক প্রবন্ধটি আমাকে সেই অভাব পূরণ করেছে দারুণ ভাবে। মনে হল “বিবেকানন্দ” নিয়ে গড়ে ওঠা মিথকে ঘিরে সুনামির একটা মহাপ্রলয় নাচন যেন বয়ে গেল।
কিছু কিছু ভাল কাজ জীবনে অনেকেই করে থাকে। কিছু কিছু ভাল কথা জীবনে অনেকেই বলে থাকে। কিন্তু এতসব মারাত্নক কথা বলার পরও ক্যামন করে একজন মানুষকে ত্রুটিমুক্ত, মহামানব বানিয়ে দেয় অন্যান্য মানুষেরা!অনেক তথ্য সমৃদ্ধ, চমৎকার লেখা (Y)
খুব ভাল লেগেছে আপনার এই শ্রমসাধ্য তথ্যবহুল আলোচনা! এমন ধর্ম সংস্কারকের আবির্ভাব অন্যান্য ধর্মেও দেখতে পাওয়া যায়! এমনকি এখনো!
বিবেকানন্দের জীব-প্রেম ঈশ্বরকেন্দ্রিক; তাই সে ঈশ্বরকে খুশী করতে প্রেমী জীবকে তো উৎসর্গ করা যেতেই পারে!
কিন্তু লেখাটির প্রতি ছত্রে ছত্রে রয়েছে, কিভাবে ভাল কাজগুলোর আড়ালে অশুভ উদ্দেশ্যগুলো অতি যত্ন করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে! তাহলে এমন কথার মাধ্যমে সমাপ্তি টানা কেন?
@কাজি মামুন,
তাহলে বিবেকানন্দের জীবপ্রেমটা আসলে ঠিক জীবপ্রেম ছিল না, ব্যাপারটা মোটাদাগে ঈশ্বরসেবা। নিরঞ্জন ধর তার বিবেকানন্দ সমালোচনায় বলেছেন, ‘জীবসেবার আড়ালে শিব সেবা’ই তার মূল লক্ষ্য ছিলো। এটা শুধু তার জীবপ্রেমের ক্ষেত্রে নয়, তার পরার্থপরায়নামূলক সব কাজের মধ্যেই পাওয়া যাবে।
‘স্বামীজির এই দ্বিচারী মনোভাবকে তুলে ধরার অর্থ এই নয়, তার ভাল ভাল কাজকে অস্বীকার করা। তার অসংখ্য ভাল কাজ আছে বলেই তিনি সমগ্র ভূ-ভারতে একজন আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন’ – না এই বাক্যটি আমার সমাপ্তিসূচক বাক্য ছিলো না, বরং আমার উপসংহার ছিলো বিবেকানন্দ আদ্যোপান্ত স্ববিরোধী। আমি বলতে চেয়েছি বিবেকানন্দের ভাল কাজ অবশ্যই আছে, ভাল ভাল বাণীও তিনি দিয়েছেন ঢের, কিন্তু তিনি ছিলেন রক্তমাংসের মানুষ, দেবতা নন। নিপুন পলিটিশায়নের মতোই কৌশলী ছিলেন বলেই অসংখ্য পরস্পরবিরোধী কথা একমুখে সর্বক্ষণ বলে গেছেন। গৈরিক বসনের আড়ালে সাধারণ মানুষের মতো লোভ, ভোগ-বিলাস হতাশা, ঘৃণা এমনকি ক্ষেত্রে বিশেষে সাম্প্রদায়িকতাও ছিলো তার উচ্চারণে আর কাজে। তার ভাল কাজগুলো বিস্মৃত না হয়েও তার সাধারণ মানবীয় স্বরূপটি তুলে ধরাই ছিলো উদ্দেশ্য।
@অভিজিৎ,
এই নামের আলাদা কোন বিভাগ তো আমার চোখে পড়ছেনা। একটু জানাবেন কি?
@রাজেশ তালুকদার,
সরি, মূল লেখায় লিঙ্কটা ভুল দিয়েছিলাম। এখানে দেখুন
@অভিজিৎদা,
কিন্তু লেখাটিতে তো তার ভাল কাজের কোন নমুনা দেখতে পাওয়া যায় না; বরং ভাল কথার আড়ালে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ্য- এমনটাই তো দেখানো হয়েছে। এমনকি তার পরহিতকর কাজগুলি পর্যন্ত দলবৃদ্ধির চক্রান্তে ঠাসা। তাই আপনি যখন উপসংহারের প্যারায় ‘স্বামীজির এই দ্বিচারী মনোভাবকে তুলে ধরার অর্থ এই নয়, তার ভাল ভাল কাজকে অস্বীকার করা।”, তখন মনে প্রশ্ন জেগেছিল, তার আর কি কি ভাল কাজ রয়েছে, যা ধর্মীয় স্তাবক বা নিরীহ ভক্ত বাদে অন্য মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে? তার দেশপ্রেম, সমাজ সংস্কার, বিজ্ঞানমনস্কতা ইত্যাদি প্রায় সবগুলো দিককেই তো অস্বীকার করা হয়েছে এই নিবন্ধে!
@কাজি মামুন,
অস্বীকার হিসেবে কেউ নিতে পারেন যদিও, তবে আমি দেখাতে চেয়েছি সেগুলো কোনটাই নিঃস্বার্থ ছিলো না।
@অভিজিৎ,
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী,
আপনার গায়ে একটু ফোস্কা পড়ল নাকি মহাশয়?
কিছু করার নেই, রামকৃষ্ণের অসুস্থ ধ্যান ধারণাকে অসুস্থই তো বলতে হবে। যিনি মা কালির সাথে এক্কা দোক্কা খেলেন, নিজের স্ত্রীকেও মা বলে ডাকেন, যিনি স্বামি স্ত্রীকে ভাই বোনের মত থাকতে পরামর্শ দেন, বলেন যে, ‘মেয়ে মানুষের গায়ের হাওয়া লাগাবে না; মোটা কাপড় গায়ে দিয়ে থাকবে, পাছে তাঁদের হাওয়া গায় লাগে’ তাকে কি আপনার সুস্থ মনে হচ্ছে?
আসলে রামকৃষ্ণের স্বাভাবিক যৌনজীবন সম্বন্ধে কোন পরিস্কার ধারনাই ছিলো না। তিনি ভাবতেন ‘বীর্যপাতে বলক্ষয় হয়’ (শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, অখণ্ড সংস্করণ, পৃঃ ৩১৪) , এবং ভাবতেন ‘ঈশ্বরকে পেতে বীর্য ধারন করতে হয়’ (প্রগুক্ত, পৃঃ ৩১৪)। রামকৃষ্ণের যৌনভীতি তার যৌনবিকারেরই ফল। ঈশ্বরলাভের সংস্কার থেকে আসা কামজয়ের প্রবল ইচ্ছা এবং একই সঙ্গে বিবাহিত স্ত্রীর সাথে সঙ্গলিপ্সা একত্রে তার মনে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছিল, সেই দ্বন্দ্ব থেকেই মানসিকবিকারগ্রস্থতার জন্ম নিয়েছিল, সূচিত হয়েছিল শারীরিক অক্ষমতাও। সেজন্যই নিজের স্ত্রীর অঙ্গ স্পর্শ করামাত্রই তার মন কুন্ঠিত হয়েছিল, তাই ‘সহসা সমাধিপথে এমন বিলীন হইয়া গেল’। এইটা বুঝতে কি খুব অসুবিধা হচ্ছে?
রামকৃষ্ণের অনেক কিছুই যে ছোটবেলা থেকেই স্বাভাবিক ছিল না, সেটা তার অনেক উক্তিতেই মেলে। বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন ঘটনায় তার পরিচয় পাওয়া যায়। সে সময় তিনি গ্রামের পুকুরে মেয়েদের ঘাটে নেমে স্নান করতে চাইতেন। গ্রামের মেয়েরা মার কাছে নালিশ জানালে মা তাকে বকাবকিও করেন। মেয়েদের ঘাটে নামা ছাড়াও তিনি আড়াল থেকে স্নানরতা নগ্ন মেয়েদের দিকে আড়ালে আবডালে উঁকি দিতে শুরু করেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গে এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। যৌনসুড়সুড়ি পাওয়ার আশায় গোপনে যৌনাঙ্গ দেখার অভিলাস এবং অব্যাসকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ভোয়ুরিজম বা স্কোপোফিলিয়া’। এটাকে মানসিকবিকারগ্রস্থতা বলায় আপনার এত লাগে কেন?
আরো দেখুন। মেয়েদের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ ঢাকতে তিনি একসময় মেয়েদের কাপড় গয়না পরা শুরু করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এতে জিতেন্দ্রিয় হওয়া যাবে। দেখুন তার কথাতেই – ‘জিতেন্দ্রিয় হওয়া যায় কেমন করে? আপনাতে মেয়ের ভাব আরোপ করতে হয়। আমি অনেকদিন সখিভাবে ছিলাম। মেয়েমানুষের কাপড়, গয়না পরতুম, ওড়না গায়ে দিতুম’ (শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, অখণ্ড সংস্করণ, পৃঃ ১৫০)। এগুলো কি সুস্থ স্বাভাবিক পরিচয়? এটলিস্ট এক্ষেত্রে আমি বিবেকানন্দ কে আমি ক্রিডিট দিব তিনি বিয়েই করেননি, কিন্তু বিয়ে করে অনর্থক স্ত্রীকে মা ডাকা, কখনো স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করে কামরিপু নষ্ট করার চেষ্টা কোন স্বাভাবিক কার্যকলাপ নয়।
ঠিক বলেছেন। আমি মানসিক বিকারগ্রস্থ কারণ-
-আমি মা কালির সাথে এক্কা দোক্কা খেলতে পারি না।
-স্ত্রীকে মা বলে ডাকতে পারি না
– অন্য বিবাহিত দম্পতিকে মানে স্বামী-স্ত্রীকে ভাই বোনের মত থাকতে পরামর্শ দিতে পারি না
– পুকুর ঘাটে গিয়ে স্নানরতা নগ্ন মেয়েদের দিকে উঁকি দেই না।
– মেয়েদের কাপড় গয়না পরা শুরু করি না।
-মেয়েদের নরকের দ্বার বলে সম্বোধন করি না।
– মেয়েদের হাওয়া গায়ে লাগার ভয়ে মোটা জামা গায়ে পরে ঘুরে বেড়াই না।
আমি মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত, আপনি এবং আপনার গুরুজি সম্পূর্ণ সুস্থ!
মা কালীর সাথে শুধু এক্কা দোক্কাই খেলেনি, আরো অনেক কিছুই করেছে এই গ্রেট গুজ। ফুল চন্দন সাজিয়ে ফষ্টি-নষ্টিও কুরেছে এই আপ্রাণভাবে কামদমনকারী বিকৃতকামী এই লোকটা। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের বই থেকে তুলে দিচ্ছি কিছুটা।
গ্রেট গুজের এই অপকর্মগুলো লুকিয়ে দেখেছিল তার ভাই। সে তখন বলছেঃ
ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গিয়েছি। গ্রেট গুজের সত্যিকারে নাম রামকৃষ্ণ নয়, গদাধর।
মেয়েদের কাপড় গয়না যে শুধু পড়তো তাই নয়, কাম তাড়ানোর জন্য দুই বছর মেয়ের ছদ্মবেশ নিয়ে ছিল ভণ্ডটা। তার নিজের ভাষাতেই
ক্রস ড্রেসিং যে একধরণের মানসিক রোগ, এটা এখন সবাই-ই জানে। খালি এই নেংটুবাবার শিষ্য শেষাদ্রী শেখর বাগচীরাই মনে হয় তা জানে না।
@ফরিদ আহমেদ,
আপত্তি জানাচ্ছি। ট্রান্সজেন্ডাররা মানসিক রোগী নয় (গদাধর ছিলেন কিনা ভিন্ন প্রশ্ন)।
@রৌরব,
আপত্তিটা আমাকে না জানিয়ে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক আসোসিয়েশনকে জানাতে হবে। তাদের DSM -র সেকশন 302.85 বাতিলের আন্দোলনে সামিল হোন। 🙂
সেকশন 302.85 এ কী আছে দেখা যাক।
Gender Identity Disorder of Adults, 302.85
The diagnostic criteria for gender identity disorder for adults and adolescents (APA, 1994), formerly transsexualism, are :
•
• A. A strong and persistent cross-gender identification (not merely a desire for any perceived cultural advantages of being the other sex). In adolescents and adults, the disturbance is manifested by symptoms such as a stated desire to be the other sex, frequent passing as the other sex, desire to live or be treated as the other sex, or the conviction that he or she has the typical feelings and reactions of the other sex.
• B. Persistent discomfort with his or her sex or sense of inappropriateness in the gender role of that sex. In adolescents and adults, the disturbance is manifested by symptoms such as preoccupation with getting rid of primary and secondary sex characteristics (e.g., request for hormones, surgery, or other procedures to physically alter sexual characteristics to simulate the other sex) or belief that he or she was born the wrong sex.
• C. The disturbance is not concurrent with a physical intersex condition.
• D. The disturbance causes clinically significant distress or impairment in social, occupational, or other important areas of functioning.
• Specify if (for sexually mature individuals) Sexually Attracted to Males, … Females,… Both, … Neither.
উইকিতেও আমার বক্তব্যের সমর্থন পাবেন।
The terms “transsexualism”, “dual-role transvestism”, “gender identity disorder in adolescents or adults” and “gender identity disorder not otherwise specified” are listed as such in theInternational Statistical Classification of Diseases (ICD) or the American Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM) under codes F64.0, F64.1, 302.85 and 302.6 respectively
@ফরিদ আহমেদ,
মনে হচ্ছে ফ্রান্স এদিক থেকে এগিয়ে আছে
http://trans.ilga.org/trans/welcome_to_the_ilga_trans_secretariat/news/france_transsexualism_will_no_longer_be_classified_as_a_mental_illness_in_france
@অভিজিৎ, আপনার কথামত রাম শ্যাম যদু মধু সকলে তাদের স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পরক গড়েছে।
আর ওই লোকটা গরেনি, অন্যরা কেউ মা কালির সাথে এক্কা দক্কা খেলেনি আর ওই লোকটা খেলেছে। ওই লোকটা আমাদের থেকে অন্যরকম। ওর আচার ব্যবহার আমাদের মনবিবর্তনীয় যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছেনা। অতএব নিশ্চয়ই লোকটি মানসিক বিকার গ্রস্ত।
আপনি নিজেই নিজের স্ববিরোধ করছেন। আপনি একজন ব্যাক্তির আচার ব্যাবহারের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করতে না পেরে আপনার প্রচলিত বিশ্বাসকেই পাথেয় করেছেন। একাধারে আপনি এই মুক্তমনা সাইটএর প্রতিষ্ঠাতা , সেই হিসাবে আপনি নিজেকে মুক্তমনা বলে দাবি করেন। আবার আপনি অনেক হিজিবিজি জিনিসে বিশ্বাস রাখেন। আপনার বিশ্বাসের জগতে ঈশ্বর, আত্মা, ইত্যাদি উপাদানের অভাব থাকলেও উলটোপালটা বৈজ্ঞানিক অনুসিদ্ধান্তের অভাব নেই। এবং তার কারনে আপনি দুমদাম কাউকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে দিতে পারেন। যারা ধরমে বিশ্বাস করে তারা ধর্মীয় কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। আপনার এই ধরনের বিশ্বাসও এক ধরনের কুসংস্কার (logical superstition) ।
সেই দিক থেকে আপনি শুধু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্তই নন, কুসংস্কারাচ্ছন্নও বটে।
একাধারে ‘লজিকাল’ আবার উহা ‘কুসংস্কার’? একটু ‘বিবাহিত ব্যাচেলরের’ মতো শোনাচ্ছে না? অবশ্য আপনি যেহেতু রামকৃষ্ণের ভাব শিষ্য, তার আকাম-কুকাম-পাগলামি-ছাগলামি-ভণ্ডামি সবই ডিফেন্ড করার বাসনা নিয়ে এসেছেন, আপনাদের অভিধানে হয়তো সবই সম্ভব।
সেটা তো আমি আগেই স্বীকার করে নিয়েছি আপনি আর নতুন কথা শেখালেন কই? আমি কি ভাই পারি মা কালির সাথে এক্কা দোক্কা খেলতে, নেংটু পুটু হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে, লুকিয়ে লুকিয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে স্নানরত নগ্ন মেয়েদের যৌনাঙ্গ দেখতে, মন্দিরে মা কালির বুকের উপর চরে বসে কামকেলি করতে, বলুন? এটা ‘সুস্থ মাথার’ রামকৃষ্ণ-এর পক্ষেই সম্ভব, আর সম্ভব শেষাদ্রী শেখর বাগচীর মত মানুষের সেগুলো ডিফেন্ড করা।
আমিতো বলেছিই, আমি অসুস্থ, আর আপনি আর আপনার গুরুজি সম্পূর্ণ সুস্থ!
অদ্ভুত আধাঁর নেমেছে পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি চোখে দেখে তারা … 🙂
@অভিজিৎ,
এটাই যথেষ্ট।
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী, ভাই ছাড়ান দ্যান এইসব মুক্ত বিহঙ্গদের। পন্ডিতমশাই নিজেই রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের সব কুকীর্তি ধরে ফেলেছেন এটা দেখাতে পারলেই এনার শান্তি। আরে বাবা, সবাই যা বলছে তার থেকে আলাদা কিছু বললেই তো সস্তা হাততালি। ওখানেই সব যুক্তি খতম। আর কিছু উলুখড় আর নাকউঁচু অধার্মিক (নাস্তিক নয়,অধার্মিক!) খুব সহজেই জুটে যায়।
মুক্ত বিহঙ্গেরও কিন্তু বসার জন্য বৃক্ষের শাখা প্রয়োজন হয়! :clap :clap
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী,
এই লেখাতে যতগুলো তথ্যসূত্র দেয়া হয়েছে লেখাটি সে আলোকেই লেখা হয়েছে। এটি লেখকের মনগড়া লেখা নয়। আপনি তথ্যসূত্র অনুযায়ী আলোচনা বা লেখার যুক্তি খণ্ডন না করে নিজের মনগড়া কথা বলে যাচ্ছেন কেন? নিজের পত্নীকে মা বোন সম্বোধনে ডাকা লোককে আপনার কাছে সুস্থ্য মনে হচ্ছে আর যিনি সে বিকৃত রুচির লোককে অসুস্থ মনে করলেন তাকে আপনার কাছে অসুস্থ মনে হচ্ছে!
@তামান্না ঝুমু, আপনার কতটুকু লেখাপরা আছে রামকৃষ্ণ বা বিবেকানন্দকে নিয়ে ?
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী,
http://www.kathamrita.org/kathamrita4/k4SectionXV.htm
এরপরও কি পরমহংসকে সুস্থির মানসিকতার বলে মনে হচ্ছে। 😕
গ্রেট গুজ যে সুস্থ ছিল না, এটা তার আপন লোকজনেরাও জানতো। তার পাগলামির জন্য ওঝা ডেকে এনে দেখানো হয়েছে। উত্তরোত্তর তার পাগলামিতে বিচলিত আত্মীয়স্বজনেরা তার স্নায়ুবিকার হয়েছে এই আশংকায় কোলকাতার সবচেয়ে বড় ডাক্তার গঙ্গাপ্রসাদ সেনকেও ডেকে এনেছে। কিন্তু তিনিও বিফল হয়েছেনু গ্রেট গুজকে সুস্থ করতে। পরেও আরেকবার গঙ্গাপ্রসাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। সেখানে গঙ্গাপ্রসাদ এবং তাঁর ভাই দূর্গাপ্রসাদও (ইনি পূর্ববঙ্গের বিখ্যাত ডাক্তার ছিলেন) ছিলেন। কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। তাকে সুস্থ করা সম্ভব হয় নি।
আজকের দিনে জন্ম নিলে গ্রেট গুজকে আজীবন রাঁচিতেই থাকতে হতো।
@ফরিদ আহমেদ,
সুনীলের প্রথম আলোতে একটা ব্যাপার ছিলনা যেখানে মহেন্দ্র ডাক্তারও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হন? নাকি সেটা ক্যান্সারের ব্যাপারটা ছিল?
@ফরিদ আহমেদ,
শ্রী রামকৃষ্ণ যা করেছেন, তা ভারতীয় ভক্তিবাদের অশুদ্ধ না। রসে বসে থেকে পাগলামো করে, তারা তুরীয় আনন্দ লাভের চেষ্টা করে।
কেও যদি কালীর সাথে এক্কাদোক্কা খেলে, বা সেখানে পড়ে থেকে জীবনে অনাবিল আনন্দ পায় ক্ষতি কি?
ভক্তিবাদ মনে একটা “ভাললাগা রসের” পাগলামো সঞ্ছার করে। মানুষ যেমন মদ খেয়ে নেশা করে-এও তেমন অন্য ধরনের মদ। মদেও মানুষ ডোবে -আবার অতিরিক্কত ভক্তিবাদেও ডোবে। মদ খাওয়া যদি গুনাহ না হয়, ঈশ্বর বা আল্লা প্রেমে পাগলামোও গুনাহ না।
ঈশ্বর বা আল্লাকে ভয় পাওয়ার থেকে ভালোবেসে পাগলামো করা অনেক ভাল বলেই মনে হয়।
যবে সেক্স নিয়ে ভারতীয় দর্শনটাই ঘাঁটা- শুধু বিবেকানন্দ আর রামকৃষ্ণকে পাকরাও করে কি হবে :guru: 🙂 । এই জন্যেই মহম্মদ আমার পছন্দের লোক। সুন্দরী নারী কে সুন্দরী বলতেন-সুযোগ পেলে বিয়েও করে ফেলতেন :kiss: একদম পুরুষের মতন কাজ-স্বচ্ছ জৈবিক মানুষ!
তোমার পোলা বড় হইয়া বিয়া করার পরে তোমারে আর তার বাড়ির ত্রিসীমানায় ঢুকতে দিবো না। খেয়াল কইরা। 🙂
@বিপ্লব পাল,
জৈবিক মানুষতো সবাই, সুন্দরী নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা সব পুরুষেরই, এই ইচ্ছার জন্য একদম বা ব্যাতিক্রম কোন পুরুষ হতে হয়না। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, সুন্দরী নারীকে সুন্দরী বলে ঝটপট বিয়ে করার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে কিতাব নাযিল করে নিজকে নবী ঘোষনা দিয়ে বিয়ে করার ন্যায্যতা প্রদানের সুযোগ থাকে কতজনের?
@ফরিদ আহমেদ,
পরমহংস, পরমবক অথবা পরমউট সবারই দেখি একই অবস্থা! সবারই কি মানসিক বিকার ছিল, নাকি ভড়ং ?
@তামান্না ঝুমু,
ওরে ওরে এমন করে বলতে নেইরে! পাপ হবে যে!!
পরমহংস, পরমঊট, পরমদুম্বা, পরমবুদ্ধু, পরমছাগুরাইতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। এরা না থাকলে আমাদের চলতো কী করে?
নেংটুবাবা পরমহংস যে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন মানুষ সে বিষয়ে বিবেকানন্দের কোনো সন্দেহই ছিল না। সেজন্যই এই নেংটুবাবাকে সাহায্য না করা জন্য বড্ড গোস্যা হয়েছিলেন তিনি। প্যারিস থেকে আলাসিঙ্গার কাছে চিঠি লিখে সখেদে বলেছিলেন,
জগৎ যে এইরূপ অকৃতজ্ঞ তা তাঁর সুদৃশ্য পাগড়ি, গেরুয়া বসন আর পরমহংসের পরিধেয় কিঞ্চিৎকর কৌপিন নিয়ে মুক্তমনাদের টানাটানি দেখলেই বোঝা যায়। 🙂
@ফরিদ আহমেদ, :lotpot: :hahahee:
তথ্যবহুল লেখা, সাথে তথ্যবহুল মন্তব্য- সব মিলে অসাধারণ!! ভাবছি এই লেখাটিকেও পিডিএফ করে সবার সাথে শেয়ার করব নাকি?
@মুক্তমনা এডমিন,
আমার কয়েক টি প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা করছে,যদি জনান।
১।কত তারিখ হতে মুক্তমনা আন্তর্জালে কাজ আরম্ভ করেছে?
২। কার কার উদ্যোগে এটা প্রতষ্ঠিত হয়েছিল ?
৩।সর্ব প্রথম কত তারিখ হতে কোন লেখকের কোন প্রবন্ধ টি দিয়ে এই ব্লগে প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে?
ধন্যবাদ
@অভিজিত্
সব যুগে স্ববিরোধী লোকের সংখ্যাই তো বেশি দেখছি। না হয়েও বা উপায় কী! এবং তা জ্ঞানী, গুণী, মানী,সাধু-সন্ন্যাসী, নবী-অবতারদের মাঝেই বেশি। এর মানে কী এটা যে তাঁরা তাঁদের সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি,ধর্ম, সংস্কৃতি দ্বারা সবাই কম বেশি আক্রান্ত এবং বিভ্রান্ত কোথাওবা বিকৃত ছিল।এবং সেটা কী তাঁদের সময়ের সুযোগে উচ্চাসনে থাকার কারণে! আবার হয়তো এও হতে পারে তাঁরা তাঁদের তথাকথিত দ্বায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন নি। তাঁদের অনুরাগী, অনুগামী কথা ভেবেই এবং সেই সময়ের সমস্যা চাওয়া-পাওয়াগুলো মিলেতে গিয়ে তাঁরা তাঁদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে, অনুধাবনে প্রচন্ড রকম স্ববিরোধী হয়ে পড়েন।আর অধিকাংশ সাধারণরাই জ্ঞানের এত শাখা প্রশাখার ঘুরাঘুরি করেও না।তাই তো তাঁরা স্বী ন্যায়, নীতি, নৈতিকতা ও ভ্রান্ত আর্দশের বুলি আউড়িয়ে সাধারণ মানুষদের শোষণ শাসন পীড়ন নির্যাতন প্রতারণা করে যাচ্ছে যুগে থেকে যুগে।বিবেকান্দের সময়তে রবীন্দ্রনাথ্ও প্রশ্নাতীত নয়।রবীন্দ্রনাথ নিজে বাল্য বিয়ে করেছেন।আবার বাল্যবিয়ের বিপক্ষে লিখেও তিনি তাঁর মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও তার সর্ম্পকে আরো কিছু বির্তকিত বিষয় তো রয়েছেও।ধন্যবাদ, লেখাটি ভালো লেগেছে।
জানি না মন্তব্য যাইব কিনা। আল্ট্রাসার্ফ দিয়া কমেন্টাইতাছি। আমার আইএসপি মুক্তমনা ব্লক কইরা দিছে। কারন জিগান। মালিক দাড়িওয়ালা যুবক। সুতরাং মুক্তমনা হের মালিকানারা ধারেকাছেও আইতারবোনা। কমপ্লেইন জানাইছি। দেহি কী করে।
অস্থির একখান লেখা অইছে। আমার কত সখ আছি এই প্রাচীন বিবেকরে লইয়া একখান লেখা দেয়নের। কিন্তু আফনে আর বিপ্লব দা যা করলেন তাইতে আর কাউরি দরকার নাই। :))
@সাইফুল ইসলাম,
ভাই, আপনের লেখাডা দিয়া ফালান! অভিজিৎদা আর বিপ্লবদা লিখছে বইলাই যে আপনার লেখার প্রয়োজন ফুরাইছে, তা কে কইল? আপনের আর তাগো লেখাতো এক রকম না! সুতরাং, জলদি কইরা লেখাডা ছাইড়া দ্যান। আর ভাল থাইকেন!
পুনশ্চঃ আপনার কামানের গোলা থেকে বাঁচার জন্য বিবেক কিভাবে পালায়, তা দেখবার লাইগা অস্থির হইয়া আছি! 🙂
অভিজিৎ,
রামকৃষ্ণ নগ্ন থাকতেন, তাঁর লাজলজ্জার বালাই নাই। কিন্তু তুমি তো দেখি বিবেকানন্দরে এক্কেবারে ল্যাংটা করে দিলা! বিবেকানন্দ-ভক্তদের কাছ থেকে কিছু শুনতে পারলে ভাল হতো। মূর্তি ভাঙ্গার কাজ অব্যাহত থাকুক।
@ইরতিশাদ ভাই,
অনেক ধন্যবাদ। এত মুর্তি চারিদিকে … 🙂
দারুণ পোস্ট। এটা খুব কাজে লাগবে আমার।
দারুন!!
ছোটবেলা একটা গল্প শুনতাম- রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দকে নিয়ে এক শিষ্যা বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছেন। ফেরার সময় বিবেকানন্দের নারীদের দিকে নজর যায় এবং কামভাব জাগ্রত হয়। গুরুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। গুরু আবার সেই শিষ্যা বাড়ি গিয়ে রান্না করার সময় ঐ শিষ্যা মনে মনে কি ভাবছিলেন সেটা জিজ্ঞেস করতে বললেন। জানা যায় ঐ শিষ্যা নাকি স্বীকার করেছিলেন যে বিবেকানন্দের রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে পেতে চেয়েছিলেন। বিবেকানন্দের নারী বিদ্ধেষের সূচনা এখানেই।
স্বামী-স্ত্রীকে ভাইবোনের মত থাকার পরামর্শ কেন দিতেন বলে মনে করেন?
আমার প্রায়ই একটা সন্দেহ হয় যে অধিকাংশ সাধু সন্ন্যাসীর সাইজ দুই ইঞ্চির নিচে। প্রেম ভালবাসা বিয়ে নিয়ে এদের এত শুচিবায়ুতা দেখলে এ সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। এরা বংশরক্ষাতেও খুব অপটু হয়।
রামকৃষ্ণ তার বাল্যবধুকে বেদীতে বসিয়ে পূজা পর্যন্ত করতেন। আমার কাছে এইটাকেই নারীজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অবমাননা বলে মনে হয়।
রামকৃষ্ণ আর বিবেকানন্দ- দুজনেরই ভালো খাবারের প্রতি লোভ ছিল। অন্যান্য সঙ্ঘের মত রামকৃষ্ণ মিশনে মাছ-মাংশ এই জন্য বন্ধ হয় নাই। মহারাজগুলার তৈলাক্ত দেহ দেখে এদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে। অথচ বাইরে থেকে কেউ মিশনে গেলে প্রসাদ হিসাবে শুধু নিরামিষ পাবেন।
প্রণয়বৃত্তি নিয়ে অনেকেই নাক ছিঁটকায়। অথচ শাস্ত্রে গান্ধর্ব বিবাহকে অর্থাৎ প্রেম করে নিজেদের ইচ্ছেমত বিয়ে করাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বিয়ে হিসাবে গণনা করা হয়েছে।
বিধবা বিবাহও যে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল ভালোভাবেই সেটাও রামমোহন-বিদ্যাসাগররা দেখিয়ে গেছেন। কিন্তু তার পর আর কেউ আসে নাই বাকি কুপ্রথাগুলো রদ করতে। সাধু সন্ন্যাসীরা শুধু ঈশ্বর লাভ করে নিজেদের মুক্তি খুঁজেছেন। রবীন্দ্রনাথের সাথে এখানেই বিবেকানন্দের বিরোধ ছিল। দুজনে সমসাময়িক হলেও দেখা-দেখি বন্ধ ছিল। “বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়। অসংখ্য বন্ধন-মাঝে মহানন্দময় লভিব মুক্তির স্বাদ।”
প্রতিটা “মহাপুরুষ”ই স্ববিরোধী কথা বলেছেন। বিবেকানন্দও তার ব্যতিক্রম নন।
(এত রেফারেন্স কিভাবে সংগ্রহ করলেন?)
@শ্রাবণ আকাশ,
আমার প্রায়ই একটা সন্দেহ হয় যে অধিকাংশ সাধু সন্ন্যাসীর সাইজ দুই ইঞ্চির নিচে। প্রেম ভালবাসা বিয়ে নিয়ে এদের এত শুচিবায়ুতা দেখলে এ সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। এরা বংশরক্ষাতেও খুব অপটু হয়।
দাদা, ফাটিয়ে দিয়েছেন যে… :hahahee: :hahahee: :hahahee:
@শ্রাবণ আকাশ,
খুবই ঠিক কথা, যখনি কোথাও দেখি নারীকে দেবীর আসনে বসানো হয় তখনি মনে হয় নারীকে untouchable করা হচ্ছে, কেউ ঘৃণা থেকে ছুঁতে চায় না, কেউ অতি সম্মান থেকে!! সেই হিসেবে এখানে গুরু আর শিষ্য একি মানুষ আসলে। নারী কে ছোয়ার সামর্থ নেই। দুই ইঞ্চি নিচু সাইজ থিওরি আমারো মনে ধরছে। নারীকে দেবী-দাসী না করে, মানুষ হিসেবে দেখ।
@নির্মিতব্য, হুম, নারীদের দাসী বা দেবী হিসাবে দেখা- দুইটাই মারাত্মক! ঠিক বলেছেন।
রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে থাকা পোলাপান বা এখানে যাতায়াত করা অনেকের মধ্যেই “তুই শালা মহারাজ হইয়া যা” টাইপের একটা কথা প্রচলিত আছে। কথাটা হাসিঠাট্টার ছলে বলা হলেও মনে হয়ে এটার উৎপত্তির পিছনে নিগুঢ় কোনো কারণ ছিল বা আছে।
@শ্রাবণ আকাশ,
হা হা! কুম্ভমেলায় নাগা সন্ন্যাসীদের দেখেননি বোধহয় কখনো!তারা রতি শাস্ত্রে পারঙ্গম কিনা জানিনা কিন্তু বেশীরভাগই দু ইঞ্ছির অনেক বেশী।সাধুগুলো যদি অক্ষমই হত, তাইলে কি আর ভারতে এত্ত সাধু যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যেত?
@অনামী,
আমি খুবই দুঃখিত এটার উত্তর দেবার জন্য, কোনো ভাবেই সুন্দর ভাষায় বলা সম্ভব না। আসলে দু ইঞ্চিটা ভাবার্থে বলা হয়েছে হয়তো, অনেকের যন্ত্র আছে কিন্তু যন্ত্র চালাতে জানে না। আবার ধর্মীয় প্রিস্ট বা সাধুরা এত কেলেংকারীতে জড়িত কারন তারা চেষ্টা করে তাদের কাম দমিয়ে রাখতে, কিন্তু তা তো নেচেরাল না। তারপর এরা নিজেদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে আর দূর্বলদের উপর আক্রমন করে। আর এগুলো মিডিয়াতেও বেশি আসে কারন মজিদ-রমন-জন কিছু করেছে অতো ইন্টারেস্টিং না, যতটা ইন্টারেস্টিং ধর্মীয় বাণী ছড়ানো যাজক/ জটাধারি সাধু কিছু করেছে সে খবরটা। একজন বয়স্ক পুরুষ কম বয়শী নারীকে তখনি চায় যখন সে একজন অভিজ্ঞ শক্তিশালী নারীকে ভয় পায়। এজন্যে এখন সমাজে কুড়িতেই বুড়ি, পুরুষরা বুড়া হলেও যন্ত্র ঠিক থাকে ইত্যাদি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা এখনো আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে সব পুরুষ তাদের স্ত্রী সঙ্গীদের অত্যাচার করে তারা আসলে তাদের যৌন অক্ষমতা লুকিয়ে রাখতে চায়। নারীকে নামায় ও উঠায় অক্ষম পুরুষ, হয় তার দু ইঞ্চি কম, বা তার যন্ত্রে তেল নাই।
@নির্মিতব্য,
সিরিয়াস্লি নেবেন না! সিরিয়াসলি বলিনি কথাগুলি।
ভিন্নমত! বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখলে বোধহয় বলতে হয় যে বয়স্ক পুরুষ কম বয়শী নারীকে চায় কারন কম বয়শী নারীর প্রজনন ক্ষমতা বেশী হবার সম্ভবনা বেশী।লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তন পুরুষের মধ্যে এই চাহিদা ঢুকিয়ে দিয়েছে। সমীক্ষা করে দেখুন, গড়পরতায় বেশীরভাগ পুরুষ অভিজ্ঞ(অভিজ্ঞ বলতে এখানে বয়স বোঝানো হয়েছে) অথচ পরনির্ভর(পড়ুন স্বামীর উপর), বাধ্য ও সাত চড়ে রা কাড়ে না এমন নারী অপেক্ষা স্বাধীনচেতা, আত্মনির্ভর অথচ যুবতী নারীকে কামনা করবে। ক্ষমতাশীল পুরুষগুলো দাপটের সাথে করবে, মিনমিনে দুর্বলগুলো কুঁইকুঁই করে করবে, কিন্তু করবে ঠিকই!
আরেকটি মাইলফলক। শুভেচ্ছা।
অভিজিত লেখাটি খুবই তথ্য বহুল এবং সুন্দর হয়েছে। কিন্ত কিছু স্থলে কনটেক্সট না দিলে বিবেকানন্দ ভক্তরা এই লেখার দুর্বল দিকটা বার করে দেবে। যেমন ওপরেরটা।
এখানে বিবেকানন্দের বক্তব্য ছিল পাঠ অপেক্ষা “এসিমিলেশন এবং বোধ” বেশী দরকার। ধর্মের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দের এই উক্তির বেশ পজিটিভ দিক আছে। উনি যেটা বলছেন সেটা হচ্ছে পুস্তকস্থ ধর্ম বা ধর্ম শাস্ত্র অসার- মানুষের ব্যক্তিগত উপলদ্ধি এবং বোধটাই আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে বেশী দরকার। বই এর থেকেও অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্ঞান মানুষকে বেশী সমৃদ্ধ করে।
এটা তার এবং ভারতীয় দর্শনের মত। ব্যাপারটি বিতর্কিত-কিন্ত কনটেক্সটটা এখানে লেখা উচিত ছিল।
ভোগী, বিলাসী বিবেকানন্দর ব্যপারটা অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনে সবাই জানে।ওটা কে মানুষ বিবেকানন্দ হিসাবে মেনে নেওয়া হয়। আমিও এতে স্ববিরোধিতা দেখি-তবে এটা এমন কিছু বেশী না।
তবে মেয়েদের ব্যপারের রামকৃষ্ণ মিশনের ভূমিকা এবং দর্শন একদম বালখিল্য এটাই সব থেকে বাজে দিক। আরো বাজে দিক, বাঙালী হিন্দুদের উচ্চগোষ্ঠির কিছু লোক এইসব বালখিল্যপনা ( যে সন্তানের পর স্বামী স্ত্রঈ ভাই বোনের মতন থাকবে) অন্ধের মতন মেনে নেয়।
এই জন্যেই আমাদের এখনো কোন শিঁড়দারা নেই।
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ বিপ্লব। লেখাটা যে ‘তথ্য বহুল এবং সুন্দর’ লেগেছে সেজন্য ধন্যবাদ। তবে লেখাটার সমালোচনা প্রসঙ্গে তুমি যে কন্টেক্সটের কথা বলছি, আমি বলব আমার কন্টেক্সট খুব একটা দূরে নয়। তবে ইসলামিস্টরা যেমন কোরানের বানী উদ্ধৃত করলেই ‘আউট অব কন্টেক্সট’ বলে ফাল পাড়ে, বিবেকানন্দভক্তরাও তা করবেন জানি। কিন্তু সেটা প্রতিহত করার শক্তি এই লেখার মধ্যেই আছে বলে মনে করি।
‘সেটা হচ্ছে পুস্তকস্থ ধর্ম বা ধর্ম শাস্ত্র অসার- মানুষের ব্যক্তিগত উপলদ্ধি এবং বোধটাই আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে বেশী দরকার’ -এটা কি ঠিক এইভাবে বিবেকানন্দ কোথাও বলেছেন? আমি দেখিনি। এটা যদি তোমার বা অন্য কারো ইন্টারপ্রিটেশন হয়ে থাকে তবে আমি বিপরীতটাও দেখাতে পারব। বিবেকানন্দ আসলে সব বই বাদ দিয়ে কেবল গীতা এবং বেদান্ত পড়তে বলেছিলেন। সেজন্যই বলেছেন –
‘যত কম পড়বে তত মঙ্গল। গীতা ও বেদান্তের উপর যে সব ভাল গ্রন্থ আছে সেগুলি পড়। কেবল এগুলি হলেই চলবে।‘
বলাই বাহুল্য বিবেকানন্দের মাথাতে বেদান্ত আর হিন্দু ধর্মের বইগুলো ছাড়া অন্য সব বই ফালতু মনে হয়েছিল। এটা ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্ঞান’ নয়, বরং পুরোটাই ধর্মজ্ঞান। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষাকে ‘একদল কর্মদক্ষ ক্রীতদাস’ সৃষ্টির উপযোগি শিক্ষা বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন। বরলাট যখন উচ্চশিক্ষা উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তিনি সেটা সমর্থনও করেছিলেন। এগুলোতে প্রমাণিত হয় না যে তিনি ধর্মশিক্ষার বদলে অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বরং, আমার কাছে উল্টোটাই জোরালো মনে হয়েছে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
শিক্ষার ওপর বিবেকানন্দের দীর্ঘ রচনা আছে এবং তার সংকলন এখানে পাবেঃ
http://www.scribd.com/doc/9436920/Education-by-Swami-Vivekananda
এখানে খুব পরিস্কার ভাবে স্বামীজি লিখেছেনঃ
[ এই প্রবন্ধের ৭ পাতা তে]
ভারতবাসীর উন্নতির জন্যে ইংরেজি শিক্ষা, পাশ্চাত্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিক্ষা ব্যাতীত গতি নাই। শিল্পন্নত ভারতের জন্যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিক্ষা সবার থেকে এবশী আগে দরকার।
স্বামীজিকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছে উনি কোথায় কি বলেছেন-সেটা স্ববিরোধিতা কোথাও না কোথাও নিজেই করেছেন। তবে শিক্ষা নিয়ে তার এই প্রবন্ধটাকেই প্রামান্য বলে ধরে লোকে। এবং সেখানে তুমি যা লিখেছ, তার ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত বক্তব্যই পাবে।
@বিপ্লব পাল,
অভিজিৎ-এর কথাটা যেমন
ঠিক, তেমনি বিবেকানন্দের লেখা থেকে জানা যায়,
এইসব স্ববিরোধী আচার-আচরন বা উক্তি প্রমান করে যে সুবিধাবাদী মহাপুরুষগনের মনে আসলে কোন নির্দিষ্ট আদর্শ কাজ করেনা, জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে যখন যেভাবে, যেটা সুবিধাজনক মনে করেন তখন সেভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে যান।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ঠিক! এইটাই আমার প্রবন্ধের মূল কথা ছিলো। বিপ্লব শিক্ষা নিয়ে যে কথাগুলো বলেছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত কথাও পাওয়া যাবে বিবেকানন্দের রচনায়। আসলে তার সামগ্রিক দর্শনই স্ববিরোধী। শুধু শিক্ষা নিয়ে নয়, বাল্য বিবাহ, সতীদাহ, জাতিভেদ অস্পৃশ্যতা, ইংরেজ বিরোধিতা – সব জায়গাতেই স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন – কখনো পক্ষে, কখনো বা বিপক্ষে। বস্তুতঃ বিবেকানন্দের মত ‘একমুখে বহুরকম কথা’ খুব কম প্রতিভাবান মানুষই বলতে পেরেছেন।
(Y)
@ ফরিদ আহমেদ পরমহংস নাকি নিজ লিঙ্গ পূজা করতেন 😛 :hahahee:
দারুন একটা লেখা হয়েছে!!! (Y) (Y) (Y)
এই মহাপুরুষের(!) মতো হবার জন্য ছোট বেলায় বড়দের কাছে যে কত উপদেশ শুনেছি তা বলে শেষ করতে পারব না। ভাগ্যিস ওইসব এক কান দিয়ে ঢুকে আর এক কান দিয়ে বেরিয়ে গেছে! অভিজিৎ দাদাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এরকম তথ্যবহুল বিশ্লেষণধর্মী এক সুন্দর লেখার জন্য ।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ৷ একটা ছোট ভুল চোখে পড়ল ৷ বিবেকানন্দের আগের নাম বিবিদিষানন্দ, বিবিষানন্দ নয়৷
এই পরম পূজনীয় ব্যক্তিটির শুধু নামের বানান ভুল করার মত অমার্জনীয় অপরাধই করে নি অভি, তাঁর একটা দুর্দান্ত নাম স্মরণ না করার মত গর্হিত কাজও সে করেছে। সেকালে সবাই যে বিবেকানন্দকে পূজো করতো তা নয়। আমাদের মত কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোকজনও ছিল, পরমহংসের পরম আদরের চেলাটির পথে কাঁটা বেছানোর জন্য। তারা তাঁকে বিবি কা আনন্দ নামে ডেকে ত্যাক্ত-বিরক্ত করতো।
@ফরিদ আহমেদ,
:lotpot:
@রৌরব,
আমেরিকা থেকে সনাতন ভারতের হৃত গৌরবই উদ্ধা্র করেই আনেন নি তিনি, সাথে করে সেই দেশের কিছু সুন্দরী ভক্তিমতী মেমসাহেবদেরও বগলদাবা করে নিয়ে এসেছিলেন। আর এ দেখেই নিন্দুক এবং ঈর্ষাকাতর লোকজন তাঁকে বিবি কা আনন্দ নামে ডাকা শুরু করেছিল। এই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেন নি। সেই দুঃখে কাটা ঘায়ে এখন আপনি লবন ঢেলে দিচ্ছেন টেবিল চাপড়ে উল্লাস করে। খুবই খ্রাপ এবং হিংসুক লোক আপনারা দেখছি। সাধে কি আর তিনি এক চিঠিতে দুঃখ করেছেন এই বলে যে,
স্বামীজ্বী যে দিব্য দৃষ্টিতে ভবিষ্যত দেখতে পেতেন, এই চিঠির ভাষ্যই তার প্রমাণ। মুক্তমনার লোকজনের মত হিংসুক, নির্দয় লোক আর নেই। সব মানী লোকজনের লুঙ্গির গিট, না হয় ধুতির খোট ধরে টানাটানিতে বড়ই ওস্তাদ এরা। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই বিবেকানন্দের ক্ষেত্রে বোধয় আলখাল্লার খোট হবে। ওনাকে ছবিতে সারাজীবন এক পোষাকেই দেখেছি। :))
@ফরিদ আহমেদ,
বিবি কা আনন্দ লুঙ্গি খোলার যে কাজটি বিবিগণের জন্য রাখতে চেয়েছিলেন সেটি মুক্তমনারা করবে, এটা কি সহ্য করতে বলেন? এসব ‘মুক্তকাছা‘-দের বাড়াবাড়ি নয়?
@শোভন,
ঠিক বলেছেন। বিবিদিষানন্দই হবে। ‘দি’ বাদ পড়েছিলো।
আরো কিছু ছোটখাট টাইপো আছে। আস্তে আস্তে ঠিক কয়রে দিচ্ছি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কঠিন লেখা অভিদা কঠিন। কিছু বলার নাই। আপনার তুলনা শুধু আপনিই। এই লেখাটা আপনার এখনও পর্যন্ত ওয়ান অফ দা বেস্ট। বিপ্লবদার একটা বিশাল ধন্যবাদ প্রাপ্য আপনাকে লেখাটা দিতে উৎসাহিত করার জন্য। নাইলে হয়ত দিতেনই না। লেখাটা না পড়লে মিস করতাম। বিবেকানন্দের স্ববিরোধী চরিত্র সম্পর্কে প্রবীর ঘোষের লেখা থেকে কিছু কিছু জানতাম। কিন্তু সেটাতো দেখি টিপ অফ আইসবার্গ। বিবেকানন্দকে আবার নতুনভাবে চিনলাম এই লেখাটা পড়ে। আর রামকৃষ্ণকেও যেভাবে ধরেছেন সেটাও অতুলনীয়। যে মানুষ দিনরাত মা মা করে বেড়ান, ঈশ্বরকে মাতৃরূপে পুজা করেন, জগতের সকল নারীকে পূজনীয় ভাবেন তিনিই যে মেয়েদের সম্পর্কে এমন বাজে ও নিচুমানের উক্তি করতে পারেন তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই ভদ্রলোককেও অবতার বানিয়ে ছাড়া হয়েছে। আধুনিক হিন্দুরা এই দুজনের নামে পাগল। প্রগতিশীলতার আড়ালে এদের আসল চেহারাটা দেখিয়ে উপকার করলেন। (Y) (Y)
বইতে তো আছে, নেটেও এরকম একটা লেখা থাকার দরকার ছিল। রামকৃষ্ণকে নিয়েও একটা লেখা হোক। তারপর দুটোকে নিয়ে রামকেষ্ট মিশনের মস্তিষ্কপ্রক্ষালিত ছাত্রদের বিতরণ করতে হবে। :))
@কৌস্তুভ, আমার অভিজ্ঞতা বলে রামকৃষ্ণ মিশন এর বেশিরভাগ ছাত্রদের কিন্তু মস্তিষ্ক প্রক্ষালিত নয় ৷ কাছ থেকে সবকিছু দেখে বলেই বোধহয় তারা মোহমুক্ত ৷
@শোভন, বেশি-কম তা বলতে পারবো না। তবে আমার সাথে একজনের ফেসবুক বিতর্ক চলছে। সে ১০০% মমিনের মত ‘আউট অফ কনটেক্সট’ ইত্যাদি অভিযোগ চালাচ্ছে।
বিবেকানন্দ লিখে সার্চ করছিলাম হঠাৎ এই লেখাটি পেলাম, মোবাইল দিয়ে বেশী কিছু লিখতে পারবো না, তবে একটা কথা বলতে পারি বিবেকানন্দকে বোঝার জন্য এক জন্ম যথেষ্ট নয়। আমি শুধু একটি বিষয়ের উল্লেখ করছি, যেখানে তিনি ভারতের নারীদের সাবিত্রী হতে আহ্বান জানিয়েছেন সেখানে প্রথমে দেখতে হয় সাবিত্রী কে?… সাবিত্রী ছিলেন রাজকন্যা ছেলেবেলায় তিনি অস্ত্র বিদ্যা, পুঁথিগত বিদ্যা সবকিছু লাভ করেছেন…বিয়ের বয়স হলে তিনি পিতার কাছে দেশভ্রমণের আজ্ঞা চেয়েছেন…অনেক দেশ ভ্রমণ করে অনেক বড় বড় রাজার রাজপ্রাসাদ ঘুরে একদিন অরণ্যের পথে যাওয়ার সময় সত্যবানের সঙ্গে পরিচয়… প্রেম… প্রতিশ্রুতি। রাজপ্রসাদে ফিরে আসার পর নারদ জানালেন সত্যবান বেশী দিন বাঁচবেন না, কিন্তু সাবিত্রী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন না … সুতরাং বিয়ে হল… আজকের আধুনিক মেয়েদের সকলেই কী সাবিত্রীর মতো এতটুকু লড়াই করতে শিখেছে…
@কৌস্তুভ,
হেইডা দাদা আপফেনে শুরু করেন না ক্যা?
মুক্তমনায় অনেক দিন ধরেই আপনার লেখা পেন্ডিং!
আগে বিবেকানন্দ সম্পর্কে অনেক উচ্চ ধারনা পোষণ করতাম। এক রকম আদর্শ মনে করতাম। কিন্তু একটু বোঝার বয়স হবার পর তার স্ববিরোধী বক্তব্যগুলো বুঝতে না পারলেও, নারীদের নিয়ে গোঁড়ামি চোখে পড়ে যায়। আপাতত কাউকে আদর্শ হিসেবে রাখতে পারি না। অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ
লেখাটা পইড়া মনে হইলো আমাগো এরশাদ মিয়াঁ তো এগো তুলনায় ফুলের মত পবিত্র। আহারে এগো ভক্ত যে কত্ত। আইচ্ছা বিপ্লব পালও কি এগো ভক্ত? কয় বচ্ছর আগে কি জানি দেখসিলাম অয় অগ আশ্রমে যায়; কি জানি, অরা আরো কি কি জানি কয় :-s
@কাজী রহমান,
ভক্ত হয়তো নয় তবে তাদের মিশন সমর্থন করেন। ইসলামের সুফিবাদ বা মোতাজিলা মতবাদ, জালালুদ্দিন রুমী, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ মিশনের প্রশংসা করেন। তার সাথে তর্কের সুবাদে রামকৃষ্ণের জীবনী কিছুটা পড়ি। যতদূর মনে পড়ে (বইটা এখন আর হাতের কাছে নেই) ছোটবেলা ঘাটে স্নানরত যুবতি মেয়েদের এক নজর ন্যাংটা অবস্থায় দেখা রামকৃষ্ণের নেশা ছিল। মেয়েরা ঘাটে আসলে রামকৃষ্ণ বৃক্ষপল্লবের আড়ালে লুকিয়ে মেয়েদের ভেজা কাপড়ে গোসলের দৃশ্য উপভোগ করতেন। নাটকে পালা-পর্বণে নারী সেজে অভিনয় করতেন। তাকে নিয়ে যে সব আজগুবি কাহিনি লিখা হয়েছে তা বাস্তবে সম্পূর্ণই অসম্ভব। আমি দেখলাম সে তো এক উলঙ্গ পাগল ছাড়া আর কিছু ছিলনা।
@কাজী রহমান,
কোন জিনিসকে সমালোচনা করার আগে সেই ব্যপারটির গভীরে ঢোকা উচিত। রামকৃষ্ণ মিশন বহু সেবা কার্য চালায় দেশে। এবং ঠিক ঠাক চালায়। “মানব সেবা” আসল ধর্ম-এটিই মিশনের স্টেটমেন্ট। সমাধি বা ধর্মাচারনের চেয়েও মানুষের এবং সমাজের উপকারের জন্যে কাজ চালিয়ে যাওয়টাকে মিশনের স্বামীদের মূল কাজ হিসাবে দেওয়া হয়। মিশনের কাজে আমি অন এনF অফ যুক্ত ছিলাম। এখনো কেও যদি কোন সেবাকাজের জন্যে ডাকে, নিশ্চয় যাব। আমি ধর্মের সমালোচক মানে এরা ভাল কিছু করার জন্যে ডাকলে যাব না-সেটাকে আমি ঠিক বলে মনে করি না। মানুষের সেবাই পরম ধর্ম-সেটা আস্তিকতা বা নাস্তিকতার ওপরে।
এছারা রামকৃষ্ণ মিশনে পাঠচক্রে আমি দুদিন গিয়ে, বেশ কিছু গন্ডোগল হওয়াতে আমি আর যায় নি। স্বামীজির রচনা থেকে পাঠ হচ্ছিল-আমি স্বামীজির রচনার দুর্বলতা যুক্তি দিয়ে দেখালাম। ভক্তরা ক্ষেপে গেল। বললো তোমার জন্যে না স্বামীজির রচনা শুনতে এসেছি। যদিও আরেক সন্নাস্যী [ যিনি আমেরিকান], আমাকে সেই যাত্রায় ভক্তরোষ থেকে বাঁচায়-বুঝলাম এসব পাঠচক্র হচ্ছে গাধাদের আড্ডা। এরপরে পাঠচক্রে যায় না-স্বামীজিদের সেবামূলক কাজে ডাকলে সারা দিই এবং দেব।
জালালুদ্দিন রুমি এবং রবীন্দ্রনাথকের কবিতার আধ্যাত্মিক সুর একই রকম-এদের কবিতায় মানুষই বিজয়ী। রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়লেও দেখা যাবে উনিও সেই একই সুরে কথা বলেছেন-সবার ওপর মানুষের জন্যে ভালবাসা সত্য। তবে নারীদের ব্যাপারে বিষয়গুলি এসে গেলে, তাদের দর্শন ও গোলমেলে হয়।
কোন কিছুই পারফেন্ট না-বিজ্ঞানমুখী সমাজের নামে স্টালিন লেনিন ও খুন করেছেন। তাই ক্রীটিক্যাল দৃষ্টিভংগী বজায় রেখে সব কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত। জীবন পরীক্ষার জন্যে-সক্রেটিসের এই অমোঘ বানী ভোলার না।
@বিপ্লব পাল,
দাদা আপনার সাথে একমত। আস্তিক হোক আর নাস্তিক হোক, প্রত্যেকেই নিজের মত ও পথ প্রতিষ্ঠার জন্যে যুক্তি খোঁজেন। অনেক উদাহরণ আছে, আস্তিক-নাস্তিক উভয় গ্রুপের লোকজন হাজার হাজার লোক খুন করেছিলেন। আপনি চীনের নাস্তিক মাও সেতুঙের নামটাও উল্লেখ করতে পারতেন। চীন বিপ্লব ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তিনি কত হাজার লোককে খুন করেছিলেন।
@অডঙ চাকমা,
আপনি কিসের ভিত্তিতে আস্তিক ও নাস্তিককে সরলীকরণ করলেন।মাও বা স্ট্যালিন নাস্তিক ছিলেন এতে কোন দ্বিমত নেই কিন্তু তাদের ম্যাসমার্ডারিংয়ে কিভাবে নাস্তিকতা প্রভাব রেখেছে।তাদের এই বর্বরতার পেছনেতো রাজনৈতিক মতাদর্শ দায়ী।অনেকেই রাজনীতি ও ধর্মকে আলাদা করে দেখেন।আদতে এই দুটি একে অন্যের পরিপূরক।ধর্মের বিবর্তনের ইতিহাসে সেই সব ধর্ম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যারা ক্ষমতাসীনদের আনুকল্য পেয়েছে অন্যদিকে যুগে যুগে ধর্মকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ব্যবহার করা হয়েছে।আমার প্রশ্ন এই দুই মার্ডারারের এই অমানবিক বর্বতা কিভাবে নাস্তিকতার দ্বারা প্রভাবিত হল রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা নয় তা বলুন।নইলে আস্তিক ও নাস্তিককে এক কাতারে মাপার উদ্দেশ্যটা কি?
@বিপ্লব পাল,
ঠিক আছে। বুঝলাম। নিজের অবস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার। ব্যাখ্যার সুযোগও থাকা প্রয়োজন। বেশ জমে উঠেছে লেখা।
@বিপ্লব পাল,
ইস আপনার অভিজ্ঞতা দেখে আমার একটু হিংসা হলো।
সম রায়হান স্ক্রিনশট নেবার আগেই এটা একটু সংশোধন করতো তাড়াতাড়ি। ফরিদ আহমেদ বলে যে বাস্তবে কেউ নেই, আসলে এটা তোমারই অসংখ্য নিকের আরেকটা, তা প্রমাণ হয়ে যাবে আজই। খামোখাই লোকজনকে মনের সুখে পেটানোর জন্য আসল নাম বাদ দিয়ে এই নিক ব্যবহার করো তুমি। 🙁
http://blog.mukto-mona.com/?author=2&submit=%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%A8
@ফরিদ আহমেদ,
খাইসে, এইডা কি?
ফরিদ আহমেদ যে অভিজিৎ রায়ের আরেকটা নিক, তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
@ফরিদ আহমেদ, :lotpot: :lotpot: :lotpot:
@কাজী রহমান,
অভিজিৎ শুধু ভিন্ন ভিন্ন পুরুষ নিকেই লিখেন না মেয়ে নিকেও লিখেন। আমারও অনেক নিক আছে যেমন, আকাশ মালিক, আবুল কাশেম, ভবঘুরে, বোকা মেয়ে, রফিক, সফিক ইত্যাদি ইত্যাদি। চক্ষুমুদিত বুদ্ধের মতো ঈমানদার, রামকৃষ্ণের মতো ন্যাংটা পীর আর মুহাম্মদের মতো বিশ্বাসীর খাঁটি উম্মত ছাড়া সাধারণ মানুষ এ সব দেখতে পায়না।
@আকাশ মালিক,
😀
@ফরিদ আহমেদ,
এটা একটা কোডের বাগ। কেউ সহলেখক রেখে পোস্ট দিলে সহলেখকের প্রোফাইলে মূল লেখকের ছবি যুক্ত হয়ে যায়। আমাদের আগের পোস্টটায় ( মুক্তমনা সংকলন গ্রন্থের পোস্টটা আরকি ) আপনেরে সহলেখক রাখছিলাম। হেই কারণে হইছে। সহলেখক ওয়ালা পোস্টটা লেখকের প্রবন্ধ তালিকার সবার উপরে থাকলে এই ঝামেলা বাধে। টেকি সাফি আর শফিউল জয় এটা ভাল জানে। এটা ঠিক করতে হবে, সময় পাচ্ছি না।
আপাততঃ এটা থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে পোস্টটাকে আপনার প্রোফাইলে লেখার তালিকার উপর থেকে নীচে নামানো। এজন্য আপনার কাজ হবে নিজের নামে একটা পোস্ট দেয়া। যতক্ষণ সময় নয়া পাচ্ছেন, আরেকটা কাজও করতে পারেন – একটা টেস্ট পোস্ট (এরকম) কেবল ‘নিজের পেইজে’ (নীড় পাতায় প্রকাশিত হবে না) রেখে দিতে পারেন। ঠিক হয়ে যাবে।
কেউ বিশ্বাসে আবদ্ধ আর কেউ যুক্তিতে। মুক্তমনা কে?
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী, একটু বিশদ এ ব্যাখা করলে ভালো হত না ?
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী, বিশ্বাসের দ্বার রুদ্ধ; যুক্তির মুক্ত।
@শ্রাবণ আকাশ, যুক্তির দ্বার মুক্ত? একটু ব্যাখ্যা করলে ভাল হত।
@শেষাদ্রী শেখর বাগচী, এই যে আমার কথার একটা ব্যাখ্যা চেয়েছেন- এটাই একটা ব্যাখ্যা। আমি যদি “বিশ্বাসের” কথা বলতাম, তাহলে আপনি তার ব্যাখ্যা দাবি করতেন কি?
এই গ্রেট গুজ লোকটা প্রায় অর্ধোন্মাদ নয়, পুরোপুরিই উন্মাদ ছিল। প্রায় সময়ই নেংটু হয়ে ঘোরাফেরা করতো। তার এই নেংটুপুটু থাকা নিয়ে বেশ মজার একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন স্বামী সারদানন্দ।
অশিক্ষিত এই লোকের উচ্চারণ বিভ্রাটও ছিল, বিবেকানন্দকে নরেন বলে ডাকতে পারতো না। বলতো লরেন। এই লোক যে অশিক্ষিত সেটা বিবেকানন্দও জানতেন। তার কাছ থেকে দর্শন, সমাজ বা অন্য বিষয় জানতে যেতেন না। বিবেকানন্দ তাকে সাথে তর্কের সময় প্রায়ই মূর্খ বলে গালি দিতেন। বলতেন যে, ‘তুমি মুকখু লোক, লেখাপড়া জান না, তোমার কাছে আবার দর্শশাস্ত্রের কথা কী শিখব। আমি এসব বিষয় ঢের জানি।’ তাহলে কথা হচ্ছে যে, বিবেকানন্দ কেন এই নাঙ্গা পাগলাকে গুরু মানতেন। বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রনাথ জানাচ্ছেন যে, নরেন্দ্রনাথ (বিবেকানন্দ) একবার এক যুবককে বলেছিলেন যে, ‘ওঁর কাছে যাই সমাজ বা অন্য বিষয় শেখবার জন্য নয়। ওঁর কাছে Spirituality (ব্রহ্মজ্ঞান) শিখতে হবে। এটা ওঁর কাছে আশ্চর্যরকম আছে।’
নেংটু বাবাদের মনে হয় এই জিনিস একটু আশ্চর্যরকমেরই থাকে। 🙂
নেতা দেখে যেমন জাতি কেমন হবে বলে দেওয়া যায়, সেরকম গুরু দেখেও শিষ্য কেমন হবে, সেটা বলে দেওয়া যায়। সেজন্যই শর্ষিনার পির আর আটরশির পিরকে দেখেই আমরা বুঝে যাই এরশাদ সাহেব কেমন লোক হবেন।
আজকে গুরু পর্যন্তই গড়ালাম। সময়, সুযোগ আর ইচ্ছা টিচ্ছা হলে শিষ্য মশাইকে নিয়েও না হয় মণিকাঞ্চন কিছু যোগ করা যাবে এখানে। অবশ্য সেটা না করলেও বোধহয় চলবে। অভি সবই লিখে ফেলেছে এর মধ্যেই।
সুপার কাজ হইছে অভি। তোমার অন্যতম সেরা লেখা এটি। (Y)
@ফরিদ আহমেদ,
ছি ছি
কি বলেন এগুলো। একটা জলজ্যান্ত সুস্থ মানুষকে নিয়ে রসিকতা। এক রামকৃষ্ণ ভক্ত উলটা আমারেই পাগল বানাইছে, এইখানে দেখেন।
আপনার কথার কি দাম আছে? শিবের বাহন তো বলছিলো আপ্নে তো সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠির লোক! 🙂
এতে মন খারাপের কী আছে? এতো আনন্দের সংবাদ, খুশির বয়ান! দুনিয়াতে পাগলদেরইতো কদর বেশি। এক ন্যাংটো পাগল রাঁচি থাকার বদলে হয়ে গেছে রামকৃষ্ণ পরমহংস। আর তুমি, কাপড় পরা পাগল, তোমার থাকার কথা হেমায়েতপু্রে। তার বদলে তুমি হয়ে গেছো মনা ধর্মের ধর্মগুরু। সম রায়হান তোমার কিতাব দেখতে চাইছে। কিতাব লিখো, কিতাব। কিতাব ছাড়া কোনো ধর্ম নাই। 🙂
কিতাব তো কম লিখলাম না, আর কি লিহুম? । 🙂 কুরান লিখবার কয় নাকি? ওইগুলা পরম হংস নাইলে পরম উটের কাম। হেরাই পারবো।
@অভিজিৎ,
কিতাব লিখতে পরমহংস বা পরমউট কিছুই হওয়া লাগেনা। যে কেউই চাইলে কয়েকখানা কিতাব লিখতে পারে। কোন জ্ঞান বিজ্ঞানেরও দরকার নেই। কিছু আজগুবি কথা লিখে দিলেই কিতাব হয়ে গেল। ইচ্ছা থাকলে অবতার বা পয়গম্বার হওয়া কোন ব্যাপারই না।
@তামান্না ঝুমু,
(Y) কিছু আজগুবি,অবৈজ্ঞানিক,নারীবিরোধী,যুদ্ধ বিগ্রহবাদী,তোষামোদি কথা না থাকলে আবার কিতাব কিসের!
@তামান্না ঝুমু,
পরমহংস আর পরমউট কিন্তু এক কাঠি বাড়া। নিজেরা ছিল ক অক্ষর গোমাংস। একজন মৃগী রোগীর মত কাপাকাপি করে প্রলাপ বকতো, আর আরেকজন নেংটুপুটু হয়ে নদীর ধারে গিয়ে এক হাতে কাদা আর আরেক হাতে টাকা নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বিড়বিড় করতো টাকা মাটি, মাটি টাকা। এইসব বিড়বিড়ানি শুনে ভক্তরা সব ভক্তিরসে ভেসে কথামৃত রচনা করে ফেলতো।
বিবেকানন্দ যা করেছেন, গান্ধিও তাই করেছেন, আমাদের হালের ডঃ ইউনুসও তাই করছেন। ফরমুলা ত একই। কেউ ধর্মের নামে , কেউ দারিদ্র দুরিকরনের নামে। সরোজিনী নাইডুর মতে গান্ধির দারিদ্রতা বাজারজাতকরন ছিল খুবই ব্যয় সাপেক্ষ। গান্ধিও ত ভারতের একধরনের ধর্মীও গুরুই ,ব্রিটিশের পা চাটাই ছিল যার ধ্যান। নেতাজি সুভাস বস কে দ্বিতীয় দফায় কংগ্রেস এ এমন এ অসহযগিতা করেন যে নেতাজি পদত্যাগ করেন এবং গান্দধিকে নেংটি ইদুর বলে অভিহিত করেন। মুসলমান কে ভারত ত্যাগে পথ দেখিয়ে দেয়ার মাধ্যমে গান্ধী গং প্রকারান্তরে ভারতে স্থায়িভাবে মুসল্মান্দের সঙ্খ্যালঘু করার পথ প্রশস্থ করেন। রাম-রহিমের এক সাথে থাকার বিরোধী দুজনেই ছিলেন কি গান্ধী আর কি জিন্না।যদিও মুখে বলেন নাই কখনো এরা।
বিবেকানন্দ।গান্ধি ,ডঃ ইউনুস এদের মনোভাব হচ্ছে,যেহেতু প্রভুর সাথে লড়াই এ আমরা পারব না,তাই এদের পা চাটার মাধ্যমে শান্তিপুরন ভাবে যা আদায় করা যায় তাই আমাদের প্রাপ্য।
@সপ্তক,
হিটলারের দোসর এই সুভাস বোসকে নেতাজী বললে কেমন জানি লাগে ভাই!