সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা প্রায় ৬০০ আলোক বর্ষ দুরে এমন একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন যা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে তোলপাড় চলছে। খবরটি বিশ্বের সকল প্রচার মাধ্যমে ব্যপক প্রচারিতও হয়েছে। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন বড় গ্রহটির তাপমাত্রা আনুমানিক ২২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, যা জীবজগতের বিকাশের জন্য এক আদর্শ তাপমাত্রা, কারন এরকম দুরত্বেই সৃষ্টি হতে পারে পাথুরে গ্রহ যেখানে থাকবে বিপুল পরিমান তরল পানি আর বলাবাহুল্য এ ধরণের পরিবেশে সেখানে জীবজগৎ সৃষ্টি হওয়া অসবম্ভব কিছু নয়। গ্রহটির ভূতাত্ত্বিক গঠন কঠিন শিলাময় হলে তা হবে এক অনন্য গ্রহ যেখানে হয়ত জীব জগতের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। উল্লেখ্য, পৃথিবী একটা শিলাময় পাথুরে গ্রহ, মঙ্গলও তাই, শুধুমাত্র তফাত পৃথিবীতে বিপুল তরল পানি আছে মঙ্গলে তা নেই, যদিও ধারণা করা হয় অতীতে হয়ত সেখানে তরল পানির অস্তিত্ব ছিল আর তখন ছিল হয়ত বা কোন জীবানু সদৃশ জীবের অস্তিত্ব। অন্যান্য গ্রহসমূহ যেমন- বৃহস্পতি, শনি, ইরেনাস ইত্যাদি গ্যসীয়। গ্রহটি খুজে পাওয়া গেছে কেপলার নামক এক দূরবীণ দিয়ে যা নাসা উৎক্ষেপন করেছে মূলত: আমাদের সৌরমন্ডলের বাইরে বিশেষ করে আমাদের গ্যালাক্সি ছায়াপথের কোথাও জীবন বিকাশের উপযোগী গ্রহ আছে কিনা তা খুজে বের করতে।বিখ্যাত জ্যেতির্বিদ জোহান কেপলারের সম্মানে বিশেষ এ গ্রহটির নাম রাখা হয়েছে- কেপলার বি ২২। কেপলার এ পর্যন্ত ১০০০ এর মত বস্তু সনাক্ত করেছে যারা গ্রহ হতে পারে আর তার মধ্যে ১০ টির মতো আছে যাদের আকৃতি পৃথিবীর মত আর যে নক্ষত্রগুলোকে কেন্দ্র করে তারা ঘুরছে তাদের থেকে প্রানীজগত বসবাসযোগ্য দূরত্বে অবস্থান করছে। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের পৃথিবী সুর্য থেকে এরকম দূরত্বেই অবস্থান করছে। খুবই আশাপ্রদ বিষয় এই যে কেপলার যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তা আমাদের সুর্যের মতই একটি নক্ষত্র। তাই যদিও এটার ব্যসার্ধ পৃথিবীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুন (প্রায় ২.৪ গুন) তারপরও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এ গ্রহে জীবজগৎ সৃষ্টির সমুহ সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকতে পারে যদি এটা পৃথিবীর মত পাথুরে গ্রহ হয়। যদিও বিজ্ঞানীরা বলতে পারেন নি যে এটা পাথুরে গ্রহ কি না। এযাবৎ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত গুহগুলোর মধ্যে কেপলার ২২বি হলো সবচাইতে ছোট গ্রহ যা তার কেন্দ্রের নক্ষত্র থেকে জীবজগত বসবাসযোগ্য দূরত্বে অবস্থান করছে। তবে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে কেপলার ২২ বি ঘুরছে তার আকৃতি ও তাপমাত্রা আমাদের সূর্যের চেয়ে একটু কম, তাই তার জীব বসবাসযোগ্য সীমানা হবে সূর্যের চেয়ে একটু কম। পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে আবিষ্কৃত কেপলার ঠিক সেরকম দূরত্বেই অবস্থান করছে। যাহোক, এর আগেও পৃথিবীর আকার সদৃশ কিছু গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু তারা এ দূরত্বে অবস্থানকারী ছিল না। আর এ বিষয়টিই কেপলার ২২বি কে অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে, যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন যে এটা পাথুরে, নাকি গ্যসীয়, নাকি তরল পদার্থের তৈরী একটা গ্রহ।
শিল্পীর আঁকা কেপলার ২২ বি গ্রহ
পৃথিবী ও কেপলার ২২ বি এর তুলনামুলক অবস্থানের চিত্র
গ্রহটি তার তারকার চারপাশে আনুমানিক ২৯০ দিনে একবার সম্পূর্ন প্রদক্ষিণ করে যা আমাদের পৃথিবীর সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারী/২০১১ মাসে কেপলার দূরবীণ ৫৪ টির মত বস্তু সনাক্ত করেছে যারা তাদের নক্ষত্র থেকে জীবজগৎ বসবাসযোগ্য দুরত্বে অবস্থান করছে, কিন্তু সবার আকৃতি পৃথিবীর মত নয় আর তাদের মধ্যে কেপলার বি ২২ সর্বপ্রথম নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করা হলো। এর আগে মহাশূন্যে অবস্থানকারী স্পিৎজার দূরবীণ দিয়েও সৌরজগতের বাইরের গ্রহ সনাক্ত করা যেত কিন্তু তার পরিমান ছিল কম, কিন্তু কেপলার মহাকাশ দূরবীণে আরও অনেক বেশী সূক্ষ্ম তরঙ্গ পরিমাপক যন্ত্রপাতী বসানো হয় যার ফলে বহির্বিশ্বে গ্রহ আবিষ্কারের সংখ্যা অনেক বেশী বেড়ে গেছে এবং বর্তমানে এর সংখ্যা মোট ২,৩২৬। এর মধ্যে ২০৭ টা প্রায় পৃথিবীর আকৃতি সদৃশ, ৬৮০ টা পৃথিবীর চাইতে অনেক বড়, ১০৮১ টা নেপচুন গ্রহের মত, ২০৩ টা বৃহস্পতি গ্রহের আকৃতির এবং ৫৫ টা এমনকি বৃহস্পতি গ্রহের চাইতেও বড় আকৃতির। কেপলার দুরবীণের আগে অতি বৃহৎ গ্রহ যেমন বৃহস্পতি বা নেপচুনের মত আকৃতির গ্রহ আবিষ্কার করা যেত কিন্তু পৃথিবীর মত আকৃতির গ্রহ আবিষ্কার করা যেত না, কেপলারের নতুন উন্নত মানের যন্ত্রপাতী সে সমস্যা দূর করার ফলে পৃথিবী আকৃতির গ্রহ আবিষ্কার সম্প্রতি ২০০ গুনের মত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ আবিষ্কারের ফলে দিন দিন বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ ধরণের ধারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে যে- আসলে গ্যালাক্সি সমূহে পৃথিবীর মত গ্রহে গিজ গিজ করছে আর তার অর্থ মহাবিশ্বে পৃথিবী ছাড়াও বহু গ্রহ আছে যেখানে জীবজগত বিরাজ করছে এবং মহাবিশ্বে আমরা একাকি নই। বিজ্ঞানীরা এখন এ গ্রহে অভিযান চালানোর কথা ভাবতে পারে, সে সাথে ভাবতে পারে জনসংখ্যা ভারাক্রান্ত পৃথিবী থেকে কিছু লোককে সেখানে অভিবাসন করে পৃথিবীর ভার কিছুটা লাঘব করতে, তবে সমস্যা হলো সেখানে মানুষের বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে পৌছতে ২২ মিলিয়ন বছর বা ২ কোটি ২০ লক্ষ বছর লাগবে। এ ধরণের সমস্যা একই সাথে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় মহাবিশ্ব বিজয়ে বা ভ্রমণে আমাদের প্রাযুক্তিক জ্ঞান ভয়াবহ রকম ভাবে আদিম পর্যায়ে আছে।এ ধরণের বক্তব্যে অনেকে আবার ঐশ্বরিক অস্তিত্বের সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে উঠতে পারে।আমরা সবে মাত্র মহাবিশ্বের চারদিকে সবিস্ময়ে চোখ মেলে তাকাতে শুরু করেছি এবং হাটি হাটি পা পা করে হাটতে শিখছি।
তথ্য সুত্র: নাসার ওয়েবসাইট http://www.nasa.gov/mission_pages/kepler/news/kepscicon-briefing.html
পরে ফেললাম । কিন্তু ভয় হচ্ছে তাদের নিয়ে , তারা আবার এই বিষয় টিকে কিভাবে নেবে ?
আমি সেই সব বিশ্বাসীদের কথা বলছি । হে হে হে … 😀 😀
আসুন পবিত্র কুরআনে কি লেখা মিল পাই কিনা খুঁজে দেখি , তারপর সদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ি । ইসলামিক টি.ভী একটি সুন্দর কেপলার ২২ গ্রহের জন্য।
মহাবিশ্বের কোথাও প্রাণ থাকতে হলে যে পৃথিবীর মতই আলো বাতাস ও তাপমাত্রা থাকতে হবে এমন নিয়ম কে বলল?
কেপলার বি ২২ এর আগেও গ্লিয ৫৮১-সি বা সুপার আরথ কে আবিস্কার করা হয়েছিলো। সে বিষয়ে পোস্ট পাঠানো যাবে নাকি আগে থেকেই এখানে আছে? আর এই ব্লগে আস্তিকদের লেখা ছাপানো হবে ভাই?
:-s
ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ ভবঘুরে।
মহাবিশ্বে প্রাণ ও তার সন্ধানে মানুষের যুক্তি ও চেষ্টার বিস্তারিত বিবরণ অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদের ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইতে পাওয়া যাবে।
আচ্ছা ‘দুরের’ বানান কি “দূরের” হবে?
যদি কোন দিন কেপলার বি ২২ এ যাওয়ার জন্য মানুষের প্রয়োজন হয় তবে আমি এক নম্বরে রাজি আছি!
একটা বার যদি ঐ গ্রহটায় প্রাণের অস্তিত্ব আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পেতাম, তাহলে হয়তো পুরো পৃথিবী তার সমস্ত প্রচেষ্টা ঢেলে দিতো মহাকাশে আমাদের অচেনা সঙ্গীদের কাছে পেতে..
বিজ্ঞান এগিয়ে চলুক। আমি হয়তো মৃত্যুর আগে দেখতে পাবো না, কিন্তু মানুষ কোনো না কোনো অনাগত দিন মহাকাশের দূর কোনো সীমানায় সঙ্গী খুঁজে পাবে, এই স্বপ্নটা পুষে রাখবো সবসময়।
@অবর্ণন রাইমস,
সহমত
@অবর্ণন রাইমস,
ঢালতো যদি লাভের কড়ি কিছু মিলতো।সত্যি কথা বলতে কি মহাকাশ গবেষণায় তখনই এত পয়সা ঢালা হবে যখন তা দিয়ে আরো কোটি কোটি ডলার কামানো যায়। দুঃখের বিষয়, ওয়াল স্ট্রীট ব্যাঙ্কদের মুক্ত করতে মার্কিন সরকার যে আর্থিক অনুদান দেয়, তা নাসা-র গত পঞ্ছাশ বছরের বাজেটের-ও বেশী! এটাই বাস্তব।
@অবর্ণন রাইমস,
সহমত। হয়ত তারাও মানুষের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হবে আর মানুষের সাথে একসাথে কাজ করে গড়ে তুলবে আরও উন্নত কোন সভ্যতা। হয়ত মহাবিশ্বের প্রান্তিক সমস্যাগুলোর সমাধানও তারা একসাথে করবে।
মহাবিশ্বে পৃথিবী ছাড়াও পৃথিবীর মতো মানুষের বসবাসযোগ্য গ্রহ থাকাটা বিচিত্র কিছুই নয়!
জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষ একদিন ঠিকই ঐসব গ্রহে পৌঁছতে সক্ষম হবে এই বিশ্বাস করি। মানুষ যা চিন্তা করে তা কোন একদিন বাস্তবায়ন করে ছাড়েই এমনই তার ক্ষমতা।
(U) (U) ভাবছিলাম কোন এক ছুটিতে কেপলার বি২২ তে ঢুঁ মেরে আসবো। তাবুঝি আর হল না :-Y । ৬০০ আলোক বর্ষ পারি দিতে তো বোরাখ ৯০০৭ মডেল লাগবে।
আমার সত্যিই জানা নাই,কোন আয়াতের ভিত্তিতে এটা দাবী করা হয়েছে। আর আমার এত টা ধৈর্য ও নাই যে কোরানের হাজার হাজার আয়াতের অনুবাদ তন্ন তন্ন করিয়া দেখিব।
আর হ্যাঁ আপনি বিশ্রামে অবকাশ কাটান। আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। পরে কখনো সময় সুযোগে এ ব্যাপারে আলোচনা করিতে পারেন।
আপনাকে disturb করর জন্য আমি দুঃখিত।
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ,প্রায় আমাদের গ্রহ সম আর একটি সদ্যাবিস্কৃত গ্রহের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার জন্য। কয়েকদিন আগেই বিবিসি বাংলা সংবাদে শুনার পর থেকে বিস্তারিত জানবর ইচ্ছা হচ্ছিল। আমরা আসাবাদী এই মহাবিশ্বে আমরা নিসংগী নই। হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের মতন অথবা আমাদের চেয়ে কোন বেশী উন্নত প্রানীর সন্ধান পেয়ে যাব।
যদি বিজ্ঞানীরা এরকম একটা কিছু পেয়ে যায় তখন দেখা যাবে কোরানে ১৪০০ বছর আগেই এটা বলে দেয়া হয়েছে। কাজেই কোরানটাকে এখন থেকে আরো একটু বেশী করে ঘাটাঘাটি করে দেখার দরকার নয় কি ?
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
আপনি কি মনে করেন এটা দাবী করা হয় নি ? অনেক আগেই দাবী করা হয়েছে। কিন্তু ভাই, আমি আসলে একটু রিফ্রেশমেন্টর জন্য এ আর্টিকেল লিখেছি। কোরান হাদিস নিয়ে তো যথেষ্ট হলো। তো ভাই , আপনি একটু এ বিষয়ে গবেষণা করুন না , কোথায় কোরানে এটা লেখা আছে। চাই কি আপনি হয়ে যেতে পারেন কোরানিক বিজ্ঞানী ! 🙂
@আঃ হাকিম চাকলাদার, জি হা কুরআন আ এইরকম একটা আয়াত আছে, এখন কি করার বলেন, এখন আছে যেহেতু তাই তারা দাবি আনেক আগেই করে রাখসে। এখন প্রমানিত হলে এই কথাটা শূনতে হবে যে এটা কুরআন এর আরও একটা বাণী সত্য প্রমানিত হলও। যেহেতু আগের গুলাও মিলে গেছে।
@বেয়াদপ পোলা,
কোরানের এই বৈজ্ঞানিক আয়াতটা কোথায় আছে জানাইলে কৃতজ্ঞ হইব।
ধন্যবাদ।
@বেয়াদপ পোলা,
প্রস্রাব পায়খানা করার পরের দোয়াটাও তো মনে হয় কুরানেই আছে কি বলেন? ওখানে কি যেন বৈজ্ঞানিক ব্যাপার আছে একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?ঐ দোয়া পরলে নাকি শয়তান দূর হয়।আচ্ছা শয়তান দূর হলে কি পেটের অসুখ গুলো ভাল হয়ে যাবে? নাকি কোন বিশেষ বৈজ্ঞানিক ব্যখা আছে ঐ দোয়ার ?
:hahahee:
লেখাটা ভালো লাগল। কেপলার ২২-বি নিয়ে একটা ভিডিও দেখুন। শিক্ষানবিশ‘এর করা।
httpv://www.youtube.com/watch?v=znTfTbkySBY
@নিটোল,
খুব সুন্দর একটা ভিডিও উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ কেপলার বি নিয়ে লেখার জন্য। আমরা শুধু জানি যে গ্রহটা “বাসযোগ্য” দুরত্বে আছে,গ্রহটা নিয়ে ডিটেইলস কিছু এখনো জানা যায়নি,তাই আগেই ওখানে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে আশাবাদী হবার খুব বেশি কারণ দেখছিন।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আশাবাদী হতে তো পয়সা লাগে না , যেমন বিশ্বাসী হতে পয়সা লাগে না।