ধরুন আপনাকে একটি জরিপের দায়িত্ব দেয়া হল, আপনার জরিপের বিষয়বস্তু- যিশুর জন্মদিন কবে লোকজনের কাছ থেকে তার উত্তর জিজ্ঞেস করা। নিশ্চিত ফলাফল আসবে, কেন ২৫শে ডিসেম্বর! আর একটু ফাজিল টাইপের কেউ হলে মনে মনে হয়তো বলবে “ওহ গড” এ আহাম্মক যিশুর জন্মদিন জানে না!
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বিদের বিশ্বাস ঈশ্বর পুত্র যিশু ঠিক এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন স্বর্গ হতে বিতাড়িত আদম গুষ্ঠির মান ভাঙ্গিয়ে পুনরায় তাদের ঈশ্বরের অনন্ত সুখ রাজ্যে ফিরিয়ে নিতে, মানুষকে সকল দুঃখ যন্ত্রনার নাভিশ্বাস হতে মুক্ত করতে, শয়তানের সকল চক্রান্তের ফাঁক গলে চির অসহায় মানুষকে সত্যের পথে আনতে। এই দিনটি খৃষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে তাই পরম আনন্দের। পরপারের ঈশ্বরের কাছে রওনা হতে পারার নিশ্চয়তার আনন্দকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে এই দিনটিকে ঘিরে তাঁর অনুসারীরা রাস্তাঘাট, গীর্জা, শপিংমল, বাড়ী-ঘর সহ সর্বত্র আয়োজন করে সাজ সাজ রব, উৎসবের তরী ভাসায় আনন্দের সাগরে। চারিদেকে মুহুর্মুহু আলোর ঝলকানি ও ক্রিসমাস ট্রির সুশোভিত ছায়ায় কিছুদিনের জন্য এক দৃষ্টি নন্দন ঝলমলে স্বর্গীয় আমেজের পরিবেশ তৈরী করে খুশির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় চিরচেনা বৈচিত্রময় পৃথিবীর বুকে। কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস, প্রার্থনা, ছুটোছুটি, ব্যতিব্যস্ততাই এটা যেন প্রমাণ করার চেষ্টা করে এই সেই শুভদিন, যে দিনে ঈশ্বর পুত্র যিশু ধরণীতে অবতির্ণ হয়েছিলেন নিঃসন্দেহে, শুধু মানব মুক্তির খাতিরে। অবশ্য সত্যান্বেষি ঐতিহাসিক ও অবিশ্বাসীদের কথা একেবারেই ভিন্ন। বরাবরি তাদের দাবী যিশু নামের কোন চরিত্র এই পৃথিবীতে জন্মই নেয়নি কোন কালে। যিশু কিছু মানুষের সৃষ্ট এক কাল্পনিক চরিত্র মাত্র। অন্যান্য ধর্ম পুরুষ যেমনঃ- মহাবীর, বুদ্ধ, মুহাম্মদের জীবণ, ধর্ম দর্শন নিয়ে প্রচুর সমালোচনা, বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বহু দ্বন্দ্ব আছে সত্য কিন্তু পৃথিবীতে তাঁদের জন্ম গ্রহণ নিয়ে তিল মাত্র সন্দেহ নেই কোন সমালোচকের। অপর দিকে যিশুর ক্ষেত্রে তাঁর ধর্ম দর্শনের সাথে সাথে পৃথিবীতে তাঁর জন্মটাই ঝুলে আছে বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্নে।
কল্পনার রং তুলির আঁচড়ে আঁকা বলেই হয়ত একি মূল হতে উৎপন্ন অগ্রজ ইহুদীরা যিশুকে স্বীকার করে না একদম কিন্তু অনুজ ইসলাম যিশুকে ঈসা নবী বানিয়ে তাঁর নবীত্বের বিশ্বাসে রেখেছে পূর্ণ আস্থা। স্বীকৃতি পর্যন্ত ভক্তির দৌড় সীমাবদ্ধতা থাকায় মুহাম্মদ ছাড়া ঈসা বা অন্যকোন নবীর জন্ম ও মৃত্যু দিন পালন নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই, নেই কোন আগ্রহ, উৎসব, কেমন যেন গাছাড়া ভাব। অনেকটা মানাতে বাধ্য হয়ে মানা, এটাই যেন তাদের মনোগত চেতনার প্রতিফলন।
এই প্রবন্ধে অবিশ্বাসীদের সব সমালোচনার দাবি আলোচনার বাইরে রেখে আমরা শুধু পর্যালোচনা করার চেষ্টা করব মাতৃগর্ভে ভ্রুণ গঠন ও জন্মদিন নিয়ে যিশু ভক্ত জীবন রচয়িতাকারিদের কার কি বিশ্বাস ও অভিমত তা নিয়ে।
যিশুর জন্ম বিষয়ক আলোচনার গভীরে ঢুকার আগে আমাদের সামান্য হলেও বুঝতে হবে Gospel কি?
খ্রীষ্টিয় ৫ম থেকে ১২দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইংরেজী ভাষার প্রাচীণ রূপটিকে অবিহিত করা হয় অ্যাংলো-স্যাক্সান নামে। Gospel শব্দটি এসেছে ইংরেজী ভাষার এই প্রাচীণ অ্যাংলো-স্যাক্সান রূপ god-spell থেকে। যার অর্থ “সুসমাচার” বা “শুভ সংবাদ”, ঈশ্বর প্রেরিত প্রতিনিধি যিশুর মাধ্যমে যে বাণীগুলো প্রচারিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয় তাই Gospel. এই Gospel রচনাকারীদের মধ্যে খ্রীষ্টিয় অনুশাসন মতে মার্ককে বিবেচনা করা হয় প্রথম সুসমাচার রচনাকারী। তাঁর রচনা কাল খ্রীষ্টিয় ৬০-৮০ অব্দ। এরপরে আরো সুসমাচার লিখেন ম্যাথিও(Matthew), লুক (Luke), জন (Jhon)। মূলত তাঁদের বিশ্বাসের হাত ধরেই যিশুর জন্ম কাহিনি, শিক্ষা, মৃত্যু, পুনরুত্থান সহ যিশুর যাবতীয় ঘটনাবলি আজো উপস্থাপিত হয় বিশ্ববাসীর কছে। তাঁরা সামান্য কয়েক বছরের ব্যবধানে বাইবেলে Gospel গুলো রচনা করলেও ব্যক্তি মনন ও আপন স্বকীয় বিশ্বাসে পার্থক্য থাকায় তাঁদের লেখা বাণীগুলোর মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে বেশ ভাল অমিল চোখে পরে। তবে একথা সত্য এই Gospel রচয়িতাদের মধ্যে কেউ কখনো যিশুর সফর সঙ্গী ছিলেন না কখনো, এমনকি কেউ নিদেনপক্ষে যিশুকে কাছ থেকে দেখেছেন বলে দাবিও তোলেন নি।
তাঁদের Gospel রচনাগুলো নিয়েও আবার আছে প্রচুর মতানৈক্য, আছে সংশয়। ইতিহাসবিদের দাবী-
“All four Gospels are anonymous in the sense that none mentions the author’s name. The traditional names – Matthew, Mark, Luke and John – did not become associated with these writings until the second century. Whether or not these men were the actual authors is very controversial.”
“লেখকের কোন নাম না থাকায় চারটি সুসমাচারকেই অজানা কোন লেখকদের লেখা মনে করা হয়। প্রচলিত নাম অনুসারে ম্যাথিও, মার্ক, লুক এবং জনকে সুসমাচার লেখক হিসাবে বলা হলেও খ্রীষ্টিয় ২য় শতক পর্যন্ত কোখাও এ সু সমাচার গুলোতে তাদের নাম যুক্ত না। তাই এই লোক গুলোই যে প্রকৃত লেখক তা নিয়ে রয়েছে প্রচুর সংশয়”।
ম্যাথিও এবং লু্ক যে সুসমাচার লেখেন তাকে বিবেচনা করা হয় মার্কের লেখা সুসমাচারের কার্বন কপি। তাঁরা যে কাজটি করেন তা হল মার্কের লেখা সুসমাচারকে আরো অধিক গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করতে মার্কের মূল ভাবকে প্রায় অবিকৃত রেখে রসদ হিসাবে তাতে কিছু কিছু বাক্য ও শব্দের সংষ্কার।
একটি ছোট উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
Matthew 10:9-10
Do not take along any gold or silver or copper in your belts; take no bag for the journey, or extra tunic, or sandals or a staff
Mark 6:8-9
Take nothing for the journey except a staff – no bread, no bag, no money in your belts. Wear sandals but not an extrat unic.
Luke 9:3
Take nothing for the journey – no staff, no bag, no bread, no money, no extra tunic.
তাছাড়া ম্যাথিও এবং লু্ক আরো কিছু কিছু নতুন প্যারা তাতে যোগ করেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচিত-সমালোচিত virgin birth প্রসঙ্গ। অর্থাৎ কোন পুরুষের সাথে কোন প্রকার যৌন সংসর্গ ছাড়া মা মেরীর জটরে যিশুর ভ্রুণ গঠন।
Virgin birth প্রসঙ্গে দেখা যাক ম্যাথিও কি বলেন।
তিনি তাঁর সুসমাচারে বলেন, মেরী জোসেফের বাগদত্তা হওয়ার পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলেন, কিন্তু তখনো তাদের বিয়ে হয়নি।
সমস্যা বিয়ে হওয়া না হওয়া নিয়ে কথা নয় সমস্যা ছিল তাদের মধ্যে কোন রকম শারীরিক মিলন তখনো ঘটেনি। তাহলে মেরীর পেটে বাচ্চা আসা কি ভাবে সম্ভব! আপাত দৃষ্টিতে একে অবাস্তব একেবারেই অসম্ভব মনে হলেও বিশ্বাসীদের কাছে এই কাজটি সহজে সম্ভব হয়েছিল এক অলৌকিক পবিত্র সত্ত্বার মাধ্যমে।
Matthew 1:18
“she was found to be with child through the Holy Spirit.”
(তাঁকে পবিত্র সত্ত্বা দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাওয়া যায়)
মেরীর অন্তঃসত্ত্বার খবরে মেরীর সাথে কোন প্রকার শারীরিক সম্পর্ক না করা জোসেফের মুষড়ে পড়াই স্বাভাবিক ছিল। হয়েছেনো তাই, রাগে ক্ষোভে হতাশায় সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তিনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দিতে চাইলেন। হাজার হলেও তিনিতো রক্তমাংসের মানুষ। লোক সমাজে মান সন্মান বলে কথা। এই সব দুশ্চিন্তার ভার মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ফাঁকে তাঁর এই মনের অস্থিরতা দূর করতেই এক দেবদূতের আগমন ঘটে স্বপ্নে। সেই দেবদূত সবিস্তারে খুলে বলা কথায় জোসেফ শান্ত হলেন। মন থেকে সন্দেহ মুছে দিয়ে জোসেফ রাজি হলেন মেরীকে বিয়ে করতে।
Matthew 1:19-24
Joseph wanted to back out of the marriage after he found out about the pregnancy. But then an angel appeared to him in a dream, told him about Jesus, and convinced him to accept Mary as his wife
(জোসেফ যখন জানতে পারলেন অন্তঃসত্ত্বার বিষয়ে তিনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দিতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের মধ্যে এক দেবদূত দেখা দিল, তিনি তাঁকে যিশু সম্পর্কে বলল্লেন, এবং মেরীকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে রাজী করালেন)
ঈশ্বর পুত্র কল্পনায় ম্যাথিও এতটাই বুদ হয়েছিলেন যে যিশুর জন্মটা সাধারণ মানুষের মত কোন ক্রমেই স্বাভাবিক নরনারীর মিলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে তা মানতে পারেন নি। হয়তো তিনি যৌনতাকে মনে করতেন অপবিত্র অসূচি কাজ। তাঁর বদ্ধ বিশ্বাস ছিল পবিত্র পুরুষের জণ্মতো আর চোরের মত চুপিচুপি যৌনকাজ দিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। হোক না তারা স্বামী স্ত্রী তাতে কি!
তিনি যৌনতাকে কত অপবিত্র মনে করতেন তা আরো স্বচ্ছতা পায় তাঁর নীচের কথাতেই।
Matthew 1:25
“had no union with her until she gave birth to a son”
(তিনি সন্তান জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের মিলন ঘটেনি)
উপরের বাক্য থেকে যিশুর জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে স্বামী স্ত্রী হিসাবে স্বাভাবিক যৌন মিলন ঘটাতে তাঁর যথেষ্ট আপত্তি ছিল তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় কারো। যিশুর জন্মটাকে এত অস্বাভাবিক ভাবে অতি পবিত্র করণ করতে গিয়ে তাঁর জন্মটাকেই ম্যাথিও প্রশ্ন বিদ্ধ করে গেলেন তা বুঝার বোধটুকুও বিশ্বাসীদের অবশিষ্ট না থাকলেও এক সময় তা অন্যদের কাছে বিরাট প্রশ্ন বোধক চিহ্ন হয়ে দেখা দেয়।
এবার আমরা দেখি virgin birth প্রসঙ্গে আরেক সুসমাচার রচয়িতা লু্কের ভাষ্য।
লুকি বলেন, দেবদূত জেব্রাইল মেরীর নিকট আগেই এসে জানান দিলেন-“ পবিত্র সত্ত্বা আপনার নিকট আসবে এবং সর্বোচ্চ শক্তি আপনার উপর আশ্রিত হবে, তাই যে শিশু জন্ম নিবে তাকে ডাকা হবে পবিত্র- ঈশ্বরের পুত্র”।
Luke 1:35-38
says that the angel Gabriel visited her beforehand and told her that “the Holy Spirit will come upon you, and the power of the Most High will overshadow you. therefore the child to be born will be called holy—the Son of God. ”
মেরী দেবদূতকে জিজ্ঞেস করলেন “ এটা কি ভাবে সম্ভব, আমি যে এখনো কুমারী”
34 And Mary said to the angel, “How will this be, since I am a virgin?”
দেবদূত বলল্লেন “ঈশ্বরের কাছে অসাধ্য কিছু নাই”
37 For nothing will be impossible with God.”
অথচ যিশুর জন্ম সংক্রান্ত এত গুরুত্বপূর্ণ virgin birth মার্ক কখনো উল্লেখ করেননি তাঁর প্রচারিত সুসমাচারে। তাহলে এত বড় তথ্য মার্ক কি সত্যি ইচ্ছে করে চেপে গেলেন? চাপলে কেন চেপে গেলেন? তিনি কি চান নি আসল সত্য লোকজন জানুক? এই সব প্রশ্নের ছুটে আসা তীরের দিক পরিবর্তন করতে স্মরণাপন্ন হওয়া যাক সেইন্ট পলের। তার পূর্বে খানিকটা জেনে নিই কে এই পল, কি সেইন্ট পলের কীর্তি।
ঐতিহাহিকদের ধারণা old testament উৎপত্তি হয়েছে খ্রীষ্টিয় ১৫০০-৪০০ বছর আগে প্রায় ৩৯ টি বইয়ের সমন্বয়ে যা লিখিত হয়েছে মূলত হিব্রু ভাষায় এবং কিছু আরামায়িক(Aramaic) ভাষায়। প্যালেষ্টাইন অঞ্চলের আমজনতার ভাষা ছিল এই Aramaic। অপর দিকে গ্রীক ভাষায় new testament লিখিত হয়েছে ২৭ টি বইয়ের সমন্বয়ে। বাইবেল সম্পর্কিত দলিল দস্তাবেজ ঘেটে ঐতিহাসিকরা এমন দাবি করেন এই ২৭টা বইয়ের মধ্যে নাকি ১৩টাই সেইন্ট পলের লেখা। পলের ভুমিকা এখানেই শেষ নয়, বিশ্বাস করা হয় চার সুসমাচার রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম লুকি এই পলের সাথে সঙ্গি হয়ে ধর্ম প্রচারে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্যবার। শুরুর দিকে নানান জটিলতা এড়িয়ে একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদকে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা উপযোগী করে একটি প্রাণবন্ত গ্রহণযোগ্য মজবুত অবস্থানে নিয়ে যেতে পল হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করেন। অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন জন সাধারণের দোরগোড়ায় ঈশ্বরের বাণী বা যিশুর বাণী পৌঁছে দিতে। তাই যিশু সম্পর্কে যে কোন আলোচনায় সেইন্ট পলের ভাষ্যকে বিবেচনায় না আনলে তার গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। খ্রীষ্টিয় ৪৯-৫৫ অব্দে খৃস্ট ধর্মের এই নিবেদিত প্রাণ পল তাঁর লেখা সুসমাচারে ঘোষণা করেছিলেন যিশু জন্মেছিলেন আর দশ জন সাধারণ মানুষের মত, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। তিনি বলেন-
Galatians 4:4,
“But when the time had fully come, God sent his Son, born of a woman, born under law.
“(যখন সময় পূর্ণ হল ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠালেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মাতৃগর্ভে)
উপরের বক্তব্যটি বিশ্বাসীদের কারো কাছে ধোঁয়াশা মনে হতে পারে তাই আনুমানিক ৫৭ খ্রীষ্টাব্দে পল অন্য এক লেখনিতে যিশুকে ঈশ্বর পুত্র বলে সম্বোধন করলেও স্পষ্ট জোড়ালো ভাষাতে ডেভিড জোসেফের বীর্য হতে যিশুর জন্ম হয়েছে বলে মত প্রকাশ করে গেছেন
“I Paul, a servant of Jesus Christ, called to be an apostle and separated onto the gospel of God…concerning his Son Jesus Christ our Lord, which was made of the seed of David according to the flesh.”
“আমি পল, যিশু খ্রীষ্টের দাস, যাকে যিশুর অন্যতম শিষ্য ও অন্তঃপ্রাণ ঈশ্বরের বাণী প্রচারক হিসাবে বিবেচিত করা হয় … তাঁর পুত্র যিশু খ্রীষ্ট আমাদের পালনকর্তা, যিনি ডেভিড এর বীজ থেকে ভ্রুনে পরিণত হয়েছেন.”
এ তো গেল পলের মতামত।
এই বার আমরা দেখি সর্বশেষ Gospel রচয়িতা জন কি বলেন virgin birth প্রসঙ্গে। ঐতিহাসিকদের দাবির প্রেক্ষিতে বলতে হয় জনের প্রচারিত বাণী গুলো কোন একক ব্যক্তির কথা নয়। সেগুলো ছিল একটি দলগত লেখকদের বিশ্বাসের বাণী। জন ছিলেন তাদের মুখপাত্র। বিতর্ক না গিয়ে আমি খ্রীষ্টিয় অনুশাসন মতে জনকে একক ব্যক্তিত্ব হিসাবে মেনে নিচ্ছি। তিনি ম্যাথিও ও লুকেরর virgin birth ধারনা একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন। অনুসারীদের মনে ম্যাথিও ও লুকির প্রচারিত virgin birth বিশ্বাসের উপর গড়ে উঠা দেয়ালে সজোরে কুঠারাঘাত করতে চেয়েছিলেন জন। তিনি বিশ্বাস করতেন যৌনক্রিয়া ছাড়া কোন সন্তানের জন্ম হওয়া একে বারেই অসম্ভব। তিনি মনে করতেন virgin birth এটা শ্রেফ একটা ভ্রান্ত ধারনা। যদিও খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নি তবে চেষ্টা করেছিলেন মিথ ভাঙ্গতে। না পারার কারণটা পরে ব্যখ্যা করব।
John 1:45
they refer to Jesus specifically as “the son of Joseph.”
তাঁদের মতে জেজাস শুধু জোসেফের পুত্র
John 6:42
has the townspeople ask: “Is this not Jesus, the son of Joseph, whose father and mother we know?
শহরের লোকদের কি জিজ্ঞেস করা হয়নি “একি সে জেসাস নয়, যে জোসেফের পুত্র, যার বাবা মাকে আমরা জানি”?
ইতিহাসবিদদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইতিহাস খনন করে যুক্তি তর্ক ও প্রমাণের মুক্ত বায়ুতে ম্যাথিও, মার্ক, লুক এবং জন এই চার জন ছাড়াও আরো কিছু সুসমাচার লেখকের কথা পুনরুত্থান ঘটাতে সক্ষম হন। এদের মধ্যে একজন হলেন থমাস।
ধারনা করা হয় থমাসের সুসমাচারটি প্রথম লিখিত হয়েছিল আনুমানিক ৭০ খৃষ্টাব্দে। যা মার্কের লেখা প্রথম সুসমাচারটির সমসাময়িক বলা যায়। এই সুসমাচারটির লিখিত ভাষা ছিল গ্রিক। ১৯০০সালে প্রথম এর তিনটি খন্ড আবিষ্কৃত হয়। পরে ঘটনাচক্রে ১৯৪৫ সালে মাটি খুড়ে “নাগ হামাদি” লাইব্রেরী আবিষ্কৃত হলে এর একটি সম্পূর্ণ লিখিত অংশ কপ্টিক অর্থাৎ মিশরীয় ভাষার অনুদিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। দূর্ভাগ্য বলতে হয় থমাসের, কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় আধুনিক খ্রিষ্টান অনুশাসনে এই সুসমাচারের স্বীকৃতি আর মিলেনি। কিন্তু ঐতিহাসিকরা যিশুর জীবন সম্পর্কিত প্রচলিত বিবর্তনিয় বিশ্বাসের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ দলিল ঠিকি হাতে পেয়ে যান। এটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য জন এবং ম্যাথিও প্রচারিত সুসমাচার থেকে এটি অনেক স্বাধীন মতামত প্রতিনিধিত্ব করে। বলাবাহুল্য virgin birth নিয়ে থমাসও কিছুই বলেন নি।
আরো একটি কাল্পিত সুসমাচার নথির উপর ইতিহাসবিদেরা বিশ্বাস রাখেন। যাকে অভিহিত করা হয় হারিয়ে যাওয়া নথি হিসাবে। এর জার্মান নাম Quelle যার অর্থ “উৎস”, সংক্ষেপে বলা হয় Q সুসমাচার। এর কোন পূর্ণাঙ্গ নথি এখনো পর্যন্ত পাওয়া না গেলেও ম্যাথিও ও লুকের রচিত সুসমাচার বিশ্লেষণ করে Q সুসমাচারের প্রতি ইতিহাসবিদেরা পূর্ণ আস্থা রাখেন। তাঁদের দাবি ম্যাথিও ও লুক অনেক কিছু মার্কের সুসমাচার থেকে ধার করলেও তাতে এমন অনেক কথা বলেছেন যা মার্ক কখনো উল্লেখ করেননি তাঁর লেখায়। তাহলে প্রশ্ন আসে ম্যাথিও এবং লুক এসব কথা পেলেন কোন উৎস থেকে? আগেই বলেছি যিশুকে তো তাঁরা দেখেন নি। তাহলে বক্তব্য গুলোর উৎস কি? এই প্রশ্নের যুতসই জবাব খুঁজতেই ইতিহাসবিদেরা Q সুসমাচারে ভরসা রাখেন। তাঁরা মনে করেন প্রচলিত মার্ক, ম্যাথিও, লুক, জনের লেখা সুসমাচার গুলোর বহু পূর্বে অর্থাৎ খ্রীষ্টধর্ম শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে মৌখিক বা লিখিত ভাবে যিশুর আগমন, শিক্ষা, মৃত্যু ইত্যাদি বিষয়ক Q সুসমাচার অস্থিত্ব বিদ্যমান ছিল পরে কোন অদৃশ্য কারনে তা হারিয়ে যায়। এই Q সুসমাচারে যিশুর জন্ম, মৃত্যু, ক্রশবিদ্ধ হওয়া, পুনরুত্থান বিষয়ে নীরব থেকে জোর দিয়ে গেছে শুধু যিশুর শিক্ষা নিয়ে।
তবে সব কথার মূল কথা বিশ্বাসের মূলোটা আমাদের হাতেই, আমরা কি বিশ্বাস করব সেইন্ট পল, মার্ক ও জনের দাবি অনুসারে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যিশুর জন্ম কাহিনি নাকি মেনে নেব যিশুর নতুন জন্ম কাহিনি লিখা ম্যাথিও ও লুকের আরোপিত virgin birth এর।
কথায় আছে- বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর।
(চলবে)
বিশ্লেষণ ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।
ইতিহাস সত্যের সাক্ষী হয়ে থাকে। বিশ্বাসীরা যতোই বিকৃত করুক না কেনো, দলিল দস্তাবেজ ঠিকই প্রমাণ দেয় সত্যের। আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ উপকৃত হলাম…শুভকামনা জানবেন।
:rotfl: :rotfl: :rotfl: চমৎকার লেখা চমৎকার। :rotfl: :rotfl: :rotfl:
এই ধরনের একটা লেখার প্রচন্ড প্রোচন্ড প্রয়েজন ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ :guru: । লেখা চলতে থাকুক :rotfl:
ধন্যবাদ রাজেশ দাদাকে অসাধারন একটি লেখা উপহার দেওার জন্য।
এধরনের একটা লেখারই অপেক্ষায় ছিলাম , অনেক ধন্যবাদ ।চলুক—————-
@হেলাল,
কি যে বলেন হেলাল ভাই, মনে করার কি আছে। সেইন্ট পল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন।
পড়ার এবং জানতে চাওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
লেখাটি বেশ ভালো হয়েছে ।অনেক কিছুই জানতে পেরেছি ।সম্ভব হলে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে details লিখলে উপকৃত হব ।thanks go on
@মহাশূন্য,
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য (D)
@ রাজেশ ভাই,
সেইন্ট পল কি কোন গস্পেল লিখেছে? নাকি সে অন্য গস্পেল লেখকের লেখাই সে আবার লিখে প্রচার করেছে?
নিউ টেষ্টামেন্টের ২৭টা বই কি সব গস্পেল লেখকদের লেখা নাকি অন্য কিছু?
অনেক প্রশ্ন করলাম, আশা করি কিছু মনে করবেন না।
ভাই চমত্কার । জ্ঞানের যে কতো সচ্ছতা আছে তা আবারও প্রমাণ হলো।
অনুবাদটা আর একটু সহজগোম্য করলে ভাল করতেন।কিছু নতুন জিনিস জানলাম।
@ovro banarjee,
অস্বীকার করি না অনুবাদে দূর্বলতা আমার চিরকালে ছিল। পরের পোষ্ট গুলোতে সহজ করার চেষ্টা করব। পরিশেষে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
চমৎকার লেখা। চলুক। (Y)
অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ
এই লাইনটার উপরে একটু দৃষ্টি আকর্ষন করছি। হয়ত টাইপো। সীমাবদ্ধ “টানায়” লিখলে শব্দটা হবে সীমাবদ্ধতা। আর সীমাবদ্ধতা লিখলে হবে “থাকায়”। ঠিক করে নিয়েন। 🙂
Luke এর উচ্চারনটা আমি যতদুর জানি লুক বা লিউক হয়।
একটু অনুবাদের কথা বলিঃ
দ্বিতীয় লাইনটা আপনার অনুবাদের একটু কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এভাবে কি লেখা যায়ঃ
“প্রচলিত -ম্যাথিও, মার্ক, লুক এবং জন নাম গুলো ২য় শতক পর্যন্ত এই লেখাগুলোর(গসপেল) সাথে সম্পৃক্ত ছিল না”।
আপনার ভাষাতেই এবার লেখা নিয়ে বলি,আমি অবিশ্বাসী। মানে যীশুর ঐতিহাসিক অনস্তিত্ব সম্পর্কে আমি নিঃসন্দেহ। তবে আপনার লেখাটা কাজে দেবে যারা মনে করে যীশু কুমারী মায়ের সন্তান।
নস্টিক গসপেল নিলে কি পরের পর্বগুলোতে কিছু পাব? এটা মনে হয় অনেক ভাইটাল কিছু যোগ করতে পারবে। যদিও থমাসের কথা এসেছে।
লেখা চলুক। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
ভুল গুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। :guru:
এই পর্বে নিজের মতামত ও অবিশ্বাসীদের কথা যথাসম্ভব পরিহার করে বিশ্বাসী যিশু ভক্ত গস্পেল রচয়িতাদের virgin birth নিয়ে নিজেদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বটাকে টেনে আনতে চেয়েছি।
গঠন মূলক মন্তব্যের জন্য (C)
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। তবে একটা অনুরোধ… জিসাস বলে কারু অস্তিত্ব আদৌ ছিল কি না এব্যাপারে যে বিতর্ক, সেটা নিয়েও সম্ভব হলে কিছু আলোকপাত করুন!
চমৎকার লেখা। অনেক কিছুই জানা ছিলো না। লেখা চলুক। (Y)