আবুল কাশেম
উম হানী এবং তাঁর মাতার ইসলাম গ্রহণ
মার্টিন লিঙ্গস্ মনে করেন আবু তালেবের মৃত্যুর পর অথবা তার আগেই আবু তালেবের স্ত্রী ফাতেমা ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে এই ব্যাপারে অনেকেই সন্দেহ করেন। অনেকেই মনে করেন আবু তালেবের স্ত্রী কখনই ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। আর আমরা উপরে একটা তিরমিজি হাদিসে দেখেছি যে উম হানী ছিলেন একজন তুলাকা—যার অর্থ হচ্ছে যে উম হানী মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। মার্টিন লিঙ্গস ছিলেন একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। উনি ক্যাথলিক থেকে ইসলামে দীক্ষিত হন। উনার ইসলামী নাম হল আবু বকর সিরাজ আদ উদীন। মার্টিন লিঙ্গস্ যে ইসলামের গুণগান গাইবেন এবং মুহাম্মদকে উচ্চাসনে বসাবেন এটাই ত স্বাভাবিক। সে জন্য উনার লেখা মুহম্মদের জীবনী, যা উনি দাবী করেন যে সবচাইতে প্রাচীন উৎস থেকে নেয়া তথ্য থেকে লেখা তা সমগ্র ইসলামী জগতে অত্যন্ত কদরের সাথে গ্রহণ করা হয়। এখন উনার বই থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেখা যাক।
আবু তালেবের বিধবা স্ত্রী ফাতেমা ইসলামে দীক্ষিত হলেন। এটা হয়েছিল আবু তালেবের মৃত্যুর আগেই অথবা পরে। তাঁর কন্যা উম হানী যিনি ছিলেন আলী এবং জাফরের ভগিনী সেই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু উম হানীর স্বামী হুবায়রা সর্বদায় একেশ্বরবাদের প্রতি বিরূপ ছিলেন। তা সত্যেও যখনই নবী তাঁর গৃহে আসতেন হুবায়রা নবীকে স্বাগতম জানাতেন। যদি তখন নামাযের সময় হত তখন গৃহের সব মুসলিমরা এক সাথে নামাজ পড়তেন। (লিঙ্গস্ পৃঃ ১০১)
ঐতিহাসিক তাবারি তাঁর ‘তারিখ আল তাবারি’ গ্রন্থে লিখেছেন:
হুবায়রা বিন আবি ওহব এক অবিশ্বাসীই রয়ে গেলেন। যখন তিনি জানতে পারলেন যে তার স্ত্রী উম হানী বিন্ত আবি তালেব (যার নিজস্ব নাম ছিল হিন্দ) মুসলিম হয়ে গেছেন তখন তিনি বললেন:
হিন্দ কি তোমাকে আর আকাঙ্ক্ষা করে?
অথবা সে কি তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে?
এই-ই দূরে থাকা—তার বন্ধন, (তারপর) তার চলে যাওয়া। (তাবারি, খণ্ড ৮, পৃঃ ১৮৬)
পূর্বেই ইবনে ইসহাকের উদ্ধৃতিতেও এই প্রসঙ্গে হুবায়রার একটি কবিতা দেওয়া হয়েছে।
এখানে বলা প্রয়োজন যে তাবারি এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের সময়। অর্থাৎ মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পরই উম হানি ইসলাম গ্রহণ করেন—কিন্তু তাঁর স্বামী হুবায়রা ইসলাম গ্রহণ করেন নাই, বরং চিরজীবন অমুসলিম থেকে যান। উম হানীর ইসলাম গ্রহণে হুবায়রা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন এবং উম হানীকে ছেড়ে নির্বাসনে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কারণ মুহাম্মদ নিয়ন্ত্রিত মক্কায় মুসলিম অমুসলিম দম্পতির একত্রে বসবাস নিষিদ্ধ ছিল। আগেই লিখা হয়েছে যে মুহাম্মদ হুবায়রাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। কাজেই মুহাম্মদ নিয়ন্ত্রিত মক্কায় পৌত্তলিক হুবায়রার ভাগ্যে কি ছিল তা সহজেই অনুমেয়।
দেখা যায়, তাবারি এবং ইবনে ইসহাক একই কথা লিখেছেন—উম হানী ইসলাম গ্রহণ করেন মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পর তার আগে নয়। মার্টিন লিঙ্গস কতটুকু সত্য লিখেছেন তা ভাবার বিষয়।
তবে এই বিভ্রান্তির একটা ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে এই ভাবে। এমন হয়ত হয়েছিল যে উম হানী মুহাম্মদকে খুশী করার জন্য গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হুবায়রাকে বিবাহের পর উম হানী ইসলাম ত্যাগ করে পৌত্তলিকতায় ফিরে গেলেন। আর মুহাম্মদ বিবাহ করেন খদেজাকে। আল্লাহ যখন মুহাম্মদকে নবী বানালেন, তখন হয়ত মুহাম্মদ যখন কাবায় আসতেন তখন উম হানীর সাথে কিছু সময় কাটাতেন। আমরা আগেই দেখেছি যে উম হানীর গৃহ এবং কাবা একেবারে পাশাপাশি ছিল। নবীও তখন পরকীয়া প্রেম চালাতেন আর তাতে উম হানীরও সায় ছিল। তাই উম হানী তখন নবীর অবস্থানে এক গোপন মুসলিম হিসাবে থাকতে চাইতেন।
যাই হোক, এই সবই অনুমান।এই সব ঘটনার ইসলামি উৎস এতই বিপরীত তথ্য, তালগোল পাকানো এবং বিশৃঙ্খল যে সত্য বাহির করা দুরূহ।
এত-সত্ত্বেও এটা পরিষ্কার যে নবী মুহাম্মদ উম হানীকে মনঃপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন—যদিও তার জন্য দরকার ছিল পরকীয়া প্রেমের। মনে হয় নবী উম হানীকে (হিন্দ) যে পরিমাণে ভালবাসতেন সেই পরিমাণে অন্য কোন নারীকেই সেই ভাবে ভালবাসেন নাই—এমনকি উনার অগুনতি স্ত্রী ও উপপত্নীদের কাউকেও না।
নবীর স্বপ্ন আয়েশা/সওদাকে বিবাহ
পূর্বেই সওদাকে বিবাহের ব্যাপারে কিছু লিখা হয়েছিল এখানে আরও কিছু তথ্য দেওয়া হল।
খদিজার সাথে বিবাহের আগে উম হানী ছাড়া নবীর জীবনে অন্য কোন নারীর অনুপ্রবেশের উল্লেখ আমরা ‘সিরা’ (মুহাম্মদের জীবনী)তে দেখিনা। যদিও ২৫ বছরের মুহাম্মদের সাথে চল্লিশোর্দ্ধ খদিজার বিবাহের ঘটনা বেশ বিরল তবুও মুহাম্মদ এই বিয়েতে মোটামুটি শান্তিতেই ছিলেন। তখন আরব সমাজে মহিলাদের বিবাহ অল্প বয়সেই হয়ে যেত—খুব সম্ভবতঃ ১৫-১৬ বছরেই। সেই হিসাবে বলা যেতে পারে যে মুহাম্মদ বিবাহ করলেন তাঁর মায়ের বয়সী এক মহিলাকে। এর আগে খদিজার দু’বার বিবাহ হয়েছিল। তাই সংসার এবং দাম্পত্য জীবনে ছিল খদিজার প্রচুর অভিজ্ঞতা। আর খদিজা ছিলেন ধনকুবের। তাই মুহাম্মদের প্রায় সব চাহিদাই খদিজা মিটাতে পেরেছিলেন শুধু একটা শর্তে—তা ছিল যে খদিজার জীবদ্দশায় মুহাম্মদ আর কোন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবেন না।
এই প্রসঙ্গে রডিন্সন লিখেছেন:
…অনেকে বলেন আরব সমাজে বহু বিবাহ অবাধে প্রচলিত ছিল কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তেমন ছিলনা। যতটুকু মনে করা হয় বহুবিবাহ প্রথা তার চাইতে অনেক কম ছিল। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদ ছিল বহুল প্রচলিত এবং সহজ। এছাড়াও বেশ্যাবৃত্তি, যার অপর নাম ছিল অস্থায়ী বিবাহ তাও প্রচলিত ছিল। ধর্মের রীতিনীতি সমর্থিত যৌনসংগম অনেক সময় করা যেত। খুব সহজেই কেনা যেত সুন্দরী এবং তরুণী যৌন-দাসীদের। খুব সম্ভবত তাঁদের বিবাহের সর্ত ছিল যে মুহাম্মদ কোন দ্বিতীয় স্ত্রী নিতে পারবেন না। ধনবতী খদেজার পক্ষে এই দাবী করা ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক। (রডিন্সন, পৃঃ ৫৫)
স্যার উইলিয়াম মুর লিখেছেন:
খাদিজার মৃত্যুর দুই অথবা তিন মাসের ব্যবধানে মুহাম্মদ সওদাকে বিবাহ করলেন এবং সেই সাথে আবু বকরের কন্যা আয়েশাকে বাগদত্তা স্ত্রীও বানালেন। অনেকেই বলেন আয়েশার সাথে বিবাহের কারণ ছিল দুই বন্ধুর মধ্যে বন্ধুত্ব গাড় করা। (উইলিয়াম মুর, পৃঃ ১০৯)
খদিজার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ প্রথমে বিবাহ করেন সওদাকে। সওদা ছিলেন বয়স্কা, স্থূল, অনাকর্ষণীয় এবং গরীব। খদিজা এবং সওদা মুহাম্মদকে যা দিতে পারেন নাই—যৌবন, সৌন্দর্য এবং শিশুশুলভ চপলতা এই সবই মুহাম্মদ দেখলেন উনার অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকরের ছয় বয়স্ক শিশু কন্যা আয়েশার মাঝে। একই সাথে উম হানীর সাথেও নবী চালিয়ে যেতে থাকলেন পরকীয়া প্রেম।
শিশু আয়েশার সাথে ৫১ বছর বয়স্ক মুহাম্মদের বিবাহ নিয়ে অনেক প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। তাই এই নিয়ে এখানে বেশী লিখার প্রয়োজন নাই। শুধু আমাদের কৌতূহল হল এই দুই বিবাহ (সওদা এবং আয়েশা) কি নবীর মেরাজের আগে হয়েছিল না পরে? এই ব্যাপারেও এখনও কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না।
এই সময় নির্ধারণ একটু গুরুত্বপূর্ণ; কারণ আমরা একটু পরেই দেখব যে নবী যে রাত্রিতে আকাশ ভ্রমণে (ঈস্রা এবং মেরাজ) করেছিলেন তা কোথা থেকে শুরু করেছিলেন—উম হানীর ঘর হতে না অন্য কোন স্থান হতে। কারণ ইসলামকে রক্ষা করতে গিয়ে অনেকে বলে থাকেন যে নবী কোনদিনই রাত্রিবেলা উম হানীর গৃহে ঘুমিয়ে মেরাজ করেন নাই। তার কারণ তিনি তখন সওদার সাথে বিবাহিত, আর আয়েশার সাথে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন আবু বকরকে। তাই উনি কেমন করে উম হানীর ঘরে রাত্রি যাপন করবেন?
এর উত্তর তেমন জটিল নয়। প্রথমে রডিন্সনের উদ্ধৃতি পড়লে বুঝা যায় যে খদিজার মৃত্যুতে মুহাম্মদ উপরে উপরে দুঃখ প্রকাশ করলেও মনে মনে হয়ত একটু স্বস্তি পেয়েছিলেন। কারণ এখন তিনি খদিজার হাতের মুঠো থেকে মুক্ত। এখন যা খুশী তাই করতে পারবেন—যে মেয়েকে পছন্দ তার সাথেই রাত কাটাতে পারবেন—বিবাহ করেই হোক বা না করেই হোক। যদি পরকীয়াও হয় তাতেই বা কি অসুবিধা?
যাক, এই ব্যাপারে আমরা পরে দীর্ঘ জানব। এখন আয়েশা এবং সওদাকে বিবাহ নিয়ে কিছু চমৎকার হাদিস পড়ে নিব।
প্রথমেই দেখা যাক মার্টিন লিঙ্গস্ কি লিখেছেন:
এই একই বছরে (খুব সম্ভবত: ৬১৯ ৬২০ সালে) যখন খদিজার মৃত্যু ঘটল তখন নবী এক স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নটা ছিল এই রকম: নবী দেখলেন এক পুরুষ লোক কাউকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ ব্যক্তি তাঁকে বলল: “এই-ই হচ্ছে তোমার নববধূ। তুমি একে খুলে দেখ।“ নবী রেশমি কাপড়টা উন্মুক্ত করে দেখলেন যে ঐ মেয়েটি হচ্ছে আয়েশা। কিন্তু আয়েশা তখন মাত্র ছয় বছরের। আর নবী পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেছেন। তা ছাড়াও আবু বকর কথা দিয়েছেন মুতিম কে যে তিনি আয়েশাকে তুলে দিবেন মুতিমের পুত্র যুবায়েরের হাতে। তার পর নবী স্বগতোক্তি করলেন: “এই-ই যদি আল্লাহর ইচ্ছা, তবে তাই হোক।’’ কয়েক রাত্রির পর নবী দেবদূতকে (ফেরেশতা) বললেন: “আমাকে দেখান।’’ফেরেশতা রেশমি কাপড় উঠালো, আবার দেখা গেল আয়েশাকে। আবার নবী বললেন: “এই-ই যদি আল্লাহ্র কাছ থেকে, তবে তাই-ই হোক।’’ (লিঙ্গস্, পৃঃ ১০৬)
এই স্বপ্নের কথা বোখারী শরীফ এবং মুসলিম শরীফেও লেখা হয়েছে। এখানে মাত্র একটি উল্লেখ করা হচ্ছে:
আয়েশা (রা:) হইতে বর্ণিত আছে, হযরত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাঁহাকে বলিয়াছেন, স্বপ্নে আমায় দুই বার তোমাকে দেখান হইয়াছে—এক লোক রেশমি কাপড়ে তোমাকে বহন করিয়া নিয়া আসিয়াছে, অতঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, এইটি আপনার স্ত্রী। সেমতে আমি রেশমি কাপড়ের আবরণ উন্মোচন করিলাম এবং দেখিতে পাইলাম তুমি-ই।
নিদ্রা ভঙ্গের পর আমি ভাবিলাম, ইহা যখন আল্লাহর তরফ হইতে তবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই বাস্তবায়িত করিবেন। (বোখারী শরীফ, মাওলানা আজিজুল হক সাহেব অনুদিত, খণ্ড ৫, হাদিস ১৬৯২)
এবারে কিছু হাদিস দেখা যাক খাসায়েসুল কুবরা থেকে। এই বইটির লেখক হচ্ছেন ইমাম সিয়ুতী যিনি ইসলামের সর্বোচ্চ পণ্ডিতদের একজন:
হযরত আয়েশার (রাঃ) সাথে বিবাহ
ওয়াকেদী ও হাকেম ওরয়ার মুক্ত ক্রীতদাস হাবীব থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, হযরত খাদিজার (রাঃ) ইন্তিকালের কারণে নবী করীম (সাঃ) খুবই মর্মাহত হন। হযরত জিবরাইল আয়েশা (রাঃ) কে দোলনায় নিয়ে তাঁর কাছে এলেন এবং বললেন: এই বালিকা আপনার দুঃখ বেদনা লাঘব করে দিবে। সে খাদিজার (রাঃ) স্থলাভিষিক্ত হবে।
আবূ ইয়ালা, বাযযার, ইবনে ওমর, আদনী ও হাকেমের রেওয়ায়েতে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন: রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বিয়ে করেননি, যতদিন না জিবরাঈল আমার আকার আকৃতি তাঁর সামনে প্রকাশ করে দেন। তিনি আমাকে এমন অবস্থায় বিয়ে করেন যে, আমি শিশুদের পোশাক পরিহিত ছিলাম। আমার বয়স কম ছিল। তিনি যখন আমাকে বিয়ে করলেন, তখন আল্লাহতায়ালা কম বয়সেই আমার মধ্যে লজ্জা শরম সৃষ্টি করে দেন। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৪৩)
হযরত সওদা বিনতে যমআর সাথে বিবাহ
ইবনে সা’দ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, হযরত সওদা বিনতে যমআ (রাঃ) সুহায়ল ইবনে আমরের ভাই সকরান ইবনে আমরের বিবাহে ছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, রসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর সম্মুখ দিয়ে আসছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ঘাড়ে পা রেখে দিয়েছেন। তিনি স্বীয় স্বামীর কাছে এই স্বপ্ন বর্ণনা করলেন। স্বামী বললেন: এই স্বপ্ন সত্য হলে আমি মারা যাব এবং রসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাকে বিয়ে করবেন। এরপর সওদা (রাঃ) দ্বিতীয় রাতে স্বপ্ন দেখলেন সে, আকাশ থেকে একটি চাঁদ তাঁর উপর নেমে এসেছে এবং তিনি শায়িত। এ স্বপ্নের কথা স্বামীর কাছে ব্যক্ত করলে স্বামী বললেনঃ যদি তোমার স্বপ্ন সত্য হয়, তবে আমি আর কয়েকদিন মাত্র জীবিত থাকব, এরপর ইন্তেকাল করব। আমার পরে তুমি বিয়ে করবে। সকরান সেদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েকদিন পরেই ইন্তেকাল করেন। এরপর হযরত সওদা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিবাহে আসেন। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৪৩-৩৪৪)
চলবে (৪র্থ পর্বে)…
আপনার আরেকটি লেখা। সদালাপীদের জন্যে আরেকটি দুঃস্বপ্ন।
চালিয়ে যান।
ছেলেবালায় ভাবতাম কেন যে মধ্যযুগের একজন সম্রাট কিম্বা বাদশাহ হয়ে জন্মালাম না! এখন ভাবি- যদি এমন একজন নবী হয়ে জন্মাতে পারতাম!
@মুরশেদ,
প্রচুর ধন্যবাদ, কষ্ট করে লেখাটি পোড়েছেন।
তাই নাকি?
নবী হয়ে কেউ জন্মায় না। নবী হিসেবে ঘোষণা দিতে হয়।
একবার চেষ্টা করুন—উজরুকি-বুজরুকি, পানি পড়া, ফল পড়ার কেরামত কিছু দেখান, কিছু ম্যাজিক শিখে নিন–দেখবেন মুরিদের অভাব হবে না। সাঁই বাবা তাই করে লক্ষ লক্ষ মুরিদ বানিয়ে ফেলেছিল–আর বানিয়েছিল কোটি কোটি টাকা—সম্পদের পাহাড়।
সাঁই বাবাই আমাদের জিবদ্দশার মধ্যে সব চাইতে স্বার্থক নবী। সে মুহাম্মদের চাইতেও বেশী সফল–কারণ সে তরবারি ছাড়াই নবী হয়ে গেল!
@আবুল কাশেম,
ভাইয়া, শেষ নবীর পর নিজেকে নবী বলে ঘোষণা দিবেন, এতবড় সাহস মনে হয় হাতে গোনা কিছু লোকেরই থাকে কি বলেন? দেখেছেন না, মির্যা গোলাম আহম্মদ সাহেব কি বিপাকেই না পড়েছেন। 🙂
@আবুল কাসেম
লেখাটি কৌতূহল উদ্রেককর- ঋজু-ঋদ্ধ ও পরিশ্রমলব্দ এবং ঘটনার পৌর্বাপর্য বিচার-বিশেষণ নিরবদ্য। উম হানী ও নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য, তত্ত্ব ধোঁয়াসাছন্ন এবং দুর্লভ। ভালো থাকুন।
@আহমেদ সায়েম,
আপনার এই মন্তব্যটা খুবই ভাল লাগলো। আশা করি আগামী পর্ব্বগুলোও পরে নিবেন।
বারবার ফিরে আসি মুক্তমনায় এই ধরণের লেখা পড়তে। মনে হচ্ছে দিনে দিনে আমরা সচেতন হচ্ছি। কিন্তু মুক্তমনাদের সংখ্যা ইন্টারনেটে কম কেন? এককভাবে কেউ নিজস্ব ব্লগে লিখছে না। আগে ছিল অগ্নিসেতু এখন এসেছে ধর্মকারী। আর কই। আবুল কাশেমকে ধন্যবাদ। আপনি আরও লিখুন। সম্ভব হলে প্রিন্ট করে বই ছাপুন। হোক না সেটা নিষিদ্ধ। তাহলেও বাজার পেয়ে যাবে।
@শারমিন,
আপনি কষ্ট করে পড়েছেন সেই জন্য ধন্যবাদ।
আপনার মত আরও সুচিন্তিত পাঠক ও লেখক দরকার–তবেই মুক্তমনার সম্ভার বিস্তৃত হবে। আজকাল ত অনেক উন্নতি হয়েছে। দশ বছর আগে মাত্র দুই তিন জন মুক্তমনায় লিখতাম ইসলামের সমালোচনা করে।
এখন পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের চাইতে অনেকগুণ মেধাবী এবং বলিষ্ঠ লেখক এখন মুক্তমনায় ইসলামকে টুকরো টুকরো করে দেখছে এবং দেখাচ্ছে। তাদের লেখা পড়ে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। আমরা–পুরোনো ”মূর্তাদেরা,’ চিন্তাই করতে পারি না যে বাঙলাদেশের তরুণ সমাজ কলম ধরবে ইসলামের সমালোচনায়।
এখন এই নতুন প্রজন্মের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি আমাদের অসমাপ্ত কাজ।
বই ছাপানোর জন্য কেউ উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসলে আমার আপত্তি নাই। তবে ব্যক্তিগত ভাবে বই প্রকাশের দায়িত্ব নেবার কোন ইচ্ছা আমার নাই।
হযরত আয়েশার (রাঃ) সাথে বিবাহ
এই সমস্ত হাদিছ গুলী কখনোই আমাদের জানার সৌভাগ্য হয় নাই। আপনার লেখা গুলী অত্যন্ত তথ্য ও যুক্তিতে ভরপুর। এখানে কোন ফাক ফোকর বের করবার কারো সুযোগ নাই। এভাবে সত্যকে উদ্ঘাটনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আপনার কাছ থেকে এ ভাবে উপহর গুলী পাইবার জন্য আকাঙ্খী। যদি ও এগুলী লেখা অত্যন্ত পরিশ্রম সাধ্য।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
প্রচুর ধন্যবাদ—এই লেখা কষ্ট করে পড়েছেন।
কাশেম ভাই, এটা কিন্তু মারাত্বক একটা তথ্য যে, উম্মে হানি মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন, যা সম্ভবত দুনিয়ার বেশীরভাগ মুসলমান জানেন না। এই সময়ে অর্থাৎ মক্কা বিজয়ের পরে আবু সুফিয়ান ও তার স্ত্রী হিন্দার জীবনেও ঘটে ঠিক একই রকম ঘটনা।
আলী কেমন নৃশংস ছিলেন তার একটি নমুনা।
Narrated ‘Ikrima:
Some Zanadiqa (atheists) were brought to ‘Ali and he burnt them. The news of this event, reached Ibn ‘Abbas who said, “If I had been in his place, I would not have burnt them, as Allah’s Apostle forbade it, saying, ‘Do not punish anybody with Allah’s punishment (fire).’ I would have killed them according to the statement of Allah’s Apostle, ‘Whoever changed his Islamic religion, then kill him.'”
Bukhari, Volume 9, Book 84, Number 57
@আকাশ মালিক,
হাঁ, আমি যা লিখেছি তা সত্য। এই তথ্য আমি প্রথমে বিস্বাসই করছিলাম না। কিন্তু পরে অনেক হাদিস দেখলাম–বিশেষতঃ তিরমিজি এবং সহিহ মুসলিম। দেখলাম, না তথ্য সঠিক। তারপরই কাগজে কলম ধরলাম। এর আগেই তিরমিজি হাদিস দিয়েছি, যেখানে উম হানী নিজের মুখে বলছেন–আমি ছিলাম তুলাকাদের মধ্যে একজন। আর তুলাকার অর্থ হল–যারা মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন।
হাঁ, আপনি ঠিকই লিখেছেন, আর এক অন্যতম তুলাকা হচ্ছেন হিন্দ, আবু সুফিয়ানের স্ত্রী। উহুদের যুদ্ধে এই হিন্দই নবীর চাচা হামযার কলিজা চিবিয়ে ছিলেন।
হাঁ, আমার ত মনে হয় এই তথ্য–৯৯% ইসলাম জগত জানেনা–বা জানলেও না জানার ভান করেন। এমনকি মার্টিন লিঙস্ও এই তথ্য গুম করে দিয়েছেন।
উম হানীর এই স্বীকারোক্তি এক বম্বশেল (বাঙলা কি হবে?) ।
উম হানি ছিল মোহাম্মদের গোপণ প্রেমিকা আর বলা বাহুল্য এ জন্যে তার প্রতি মোহাম্মদের ছিল দুর্বার টান। নইলে দুনিয়ায় এত যায়গা থাকতে মোহাম্মদ কি খামোখা তার বাড়ী থেকে মেরাজে যাত্রা করে ?
ধন্যবাদ ভাই আপনার চমৎকার তথ্যপূর্ণ লেখার জন্য। এসব তথ্য পরে আমারও কাজে লাগবে।
(Y)
ইসলাম ত্যাগ করে পৌত্তলিকতা বা অন্য কোন ধর্মে গেলে তো চরম দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। উপপত্নীর সদর্পে বেঁচে থাকার কারন কি তাহলে অতীব গোপনে ইসলাম গ্রহন? পরকীয়া পার্শ্বীয়ালিটিই ওখানে কিছু অবদান রেখেছিলো না কি?
@কাজী রহমান,
যখন এই ঘটনা ঘটেছিল তখন মুহাম্মদের বাহুবল ছিলনা। তাই অগত্যা উম হানীর সিদ্ধান্ত মুহাম্মদকে হজম করে নিতে হয়েছিল।
বাহুবল পাবার পর নবী এবং তাঁর জামাতা হুবায়রার সাথে কি আচরণ করেছিলেন তা পরের পর্বে জানবেন।
বলং বলং বাহু বলং—বাহুবল না থাকলে মনে হয় কোন ধর্ম টিকে থাকতে পারে না। ইসলাম এর ব্যতিক্রম হবে কেন? নবী ত নিজেই বলে গেছেন তরবারির নিচেই আছে অবাধ শান্তি।
চলুক। (Y)
এতদিন যত ধর্ম ভিত্তিক লেখা পড়েছি তার প্রায় সবই আবেগে টই টই। কিন্তু এই লেখাটি তথ্য প্রমান ও যুক্তিপুর্ন। গবেষনাধর্মী এই লেখাটা সত্যি সময় ও শ্রম সাপেক্ষ। অনেক ধন্যবাদ লেখককে। এমন লেখা আরও চাই।
@শাখা নির্ভানা,
জ্বী হাঁ, এই লেখা সত্যি শ্রম সাপেক্ষ ।
@শাখা নির্ভানা,
ইসলামের ওপর যে কোন লেখাই ভীষণরকম সময় ও শ্রম সাপেক্ষ। কোরান হাদিস সিরাতে এত পরিমান স্ববিরোধী ও উদ্ভট কথা বার্তা লেখা যা নিয়ে লিখতে গেলেই কোনটা রেখে কোনটা লিখবেন প্রথমেই সে বিপদে পড়তে হবে। তার পর কোন বিষয়কে লক্ষ্য করে তার পর লিখতে হবে, তখন আবার শত শত তথ্য থেকে যুতসই তথ্য গুলো সংযোজন করতে হবে নইলে তা কোরানের মতই জগাখিচুড়ী হয়ে যাবে, তখন লেখার উদ্দেশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে।
@ভবঘুরে,
একেবারে সত্যি কথা।
ইসলামের সমালোচনা করে লিখা সহজ নয়। লেখা অভ্রান্ত হতে হবে–কোন ভুল থাকলে সে লেখা আবর্জনার স্তুপে যাবে, লেখক হারাবেন গ্রহণযোগ্যতা।
প্রত্যেকটি রচনা নিঁখুত হতে হবে। ইসলামের ব্যাপারে কার্যকরী জ্ঞান না থাকা পর্যন্ত কাগজে কলম রাখা যাবেনা।
ধন্যবাদ। (Y)
চালিয়ে যান। এ গবেষণাকর্ম বেশ কাজে আসবে । উম্মে হানিকে নিয়ে এত বিস্তারিত লেখার উদ্যোগ আমার জানামতে অতীতে আর কেউ নেন নাই।