::পর্ব ২::
উন্নত বিশ্বে সুন্দর করে কথা বলাটা শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। ভুল বললাম। উন্নত-অনুন্নত-অবনত সকল বিশ্বেই সুন্দর করে কথা বলতে পারাটা শিল্প। কথা বলার সময়, বিশেষ করে আপাতদৃষ্টিতে শ্রুতিকটূ কথাগুলো বলার সময় শব্দ-বাক্যগুলোকে রীতিমতো হাস্যকরভাবে শৈল্পিকরূপ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেটা কতটুকু প্রয়োজন সেই বিতর্কে না গিয়ে বরং নির্দ্বিধায় এইটুকু বলে দেয়া যায় যে, শ্রুতিমধুর করে কথা বলে অন্তত সমব্যথী হবার ব্যর্থ চেষ্টাটুকু করা যেতে পারে। একটু উদাহরণ দেবার চেষ্টা করি। ধরুণ, আপনি মোটামুটি ধরণের একটা রেজাল্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করলেন। কিন্তু, আপনার শখ হলো উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করবেন বিদেশের সবচেয়ে নামী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। চান্স পাবার ১% সম্ভাবনা নিয়ে আবেদন শেষে আপনি যখন সেই আবেদনের কথা ভুলেতেই বসেছেনে, তখন আপনাকে অবাক করে দিয়ে আপনার করা আবেদনের উত্তর আসলো। উত্তরটার বাংলা তর্জমা করলে মোটামুটি দাঁড়ায় এরকমঃ
প্রিয় স্টুডেন্ট,
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করে যে সন্মান আমাদের দেখিয়েছ, তার জন্য কৃতজ্ঞতায় আমাদের পাগল হবার দশা। এবার আমাদের এখানে এত বেশি স্টুডেন্ট আবেদন করেছে যে (যাদের মধ্যে বিশজন প্রায় নোবেল পাওয়ার মত), তোমার মত দুর্দান্ত মেধাবী আর যোগ্যদের মধ্যেও যোগ্যতম স্টুডেন্টকেও আমরা নিতে পারছিনা। আমাদের এই মরার বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন যে আরো বেশি সিট থাকলো না, সেজন্য এখন আমাদের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তোমাকে না নিলে কি হবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই; তোমার অ্যাপ্লিকেশান আমাদের কম্পিউটারাইজড্ সিস্টেমে আগামী তিন-তিনটা বছর রেখে দেব। তবে আগেভাগে বলে রাখা ভালো, সিস্টেমে তোমার অ্যাপ্লিকেশান রেখে দিলেও, পরের বছর তোমাকে আবার একশো ডলার খরচ করে নতুন করে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
ইতি,
তোমার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী।
উপরের লাইনগুলোর নির্ভেজাল বাংলা করলে দাঁড়ায় সর্বমোট দুই লাইন-
তোমার কি বুদ্ধি-সুদ্ধি কিছুই নাই? টাকা নষ্ট করার ইচ্ছে থাকলে পরের বছর আবারো আবেদন করতে পারো।
কিন্তু আমি ভাবছিলাম, এই মিষ্টি কথা গুলো আমাদের বাংলাদেশে কি একদমই কেউ বলে না? নিশ্চিত করে চিঠি কিংবা ইমেইলের উত্তরে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বা তার কর্তামহাশয় এমন মধু বর্ষণ করবেন না। বাঙালি পারতপক্ষে ইমেইলের উত্তরই দিবে না। আর অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেতো কথাই নেই, ইমেইল চেকই করবেন না। তাহলে আমাদের বাংলাদেশের লোকজন কোথায়, কি উপলক্ষ্যে কিছুটা মিষ্টি করে কথা বলে? প্রশ্ন মনে আসতে না আসতেই উত্তরও খুঁজে পেলাম, কোথায় আবার- নিউমার্কেটের শাড়ীর দোকানে। নিতান্তই বেমানান আপামনিরাও, তাদের ফেয়ার এন্ড লাভলীর অভাবসম্পন্ন অঙ্গে যখন মাটি কালারের শাড়ী উঁচিয়ে ধরেন, একমাত্র বঙ্গদেশে অবস্থিত ‘নিউমার্কেট’ নামক রঙ্গশালার দোকানদাররাই এমন একটা ভাব করতে পারেন যে, মনে হয় এইমাত্র ঐশ্বরিয়া রায় তাদের সামনে ‘ইশক্কামিনা’ গান গেয়ে প্রস্থান করলো। সে না-হয় বাদই দিলাম। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মুগ্ধ ভাব করা কঠিন কিছুতো নয়। কিন্তু, এলিফ্যান্ট রোডের বিখ্যাত এক টেইলর্সের সেই বিখ্যাত বাক্য শোনার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে, তারা ভালো করেই টের পেয়েছেন, মিষ্টি কথা শুধু মুগ্ধই করে না, কখনো কখনো তাজ্জবও করে ফেলে।
এলিফ্যান্ট রোডে এরিয়াতে যারা শার্ট বানাতে যান, তারা এই নামকরা টেইলর্স এর কথা জেনে থাকতে পারেন । এমনিতেই ব্যাক্তিগতভাবে আমার রেডিমেড শার্ট-প্যান্ট পরা অভ্যাস। দর্জির দোকানে প্যান্ট বানাতে গেলে তারা এমন সব জায়গায় গিয়ে মাপ নিতে আরম্ভ করে, মনে হয়- ধরণী দ্বিধা হও। একজন জোরে জোরে বলে, আরেকজন আবার লিখে। কিসের মাপ যে লিখে সেটা সাধারণ মানুষ-বঙ্গদেশে যারা ‘পাবলিক’ নামে পরিচিত- তাদের বুঝার উপায় নেই। একমাত্র শার্ট বা প্যান্ট লম্বা কত ইঞ্চি দেয়া হবে, সে ব্যাপারে পাবলিকের মতামত বিবেচ্য। দেশের প্রেসিডেন্ট এর জন্যও একই সিস্টেম, এ-নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। অবশ্য প্যান্ট এর সাথে তুলনা করলে শার্ট বানানো তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম অস্বস্তিকর।
এইসব গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা মাথায় রেখেও কোনো এক অশুভদিনের, পড়ন্ত বিকেলের কোনো এক কুক্ষণে চলে গেলাম সেই নামকরা টেইলর্স এর দোকানে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর প্রধান ব্যক্তিটি আমার শার্টের মাপ নেয়ার জন্য বিনীতভাবে কাছে ডাকলেন। হাত-টাত ধরে, উপরে উঠিয়ে, নীচে নামিয়ে কি সব মাপ নিতে থাকলেন আর সহকারীকেও সাথে সাথে বলতে থাকলেন। আমি পাথরের মত শক্ত হয়ে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছি। কবে শেষ হবে সেই আশায় যখন সেকেন্ড-মিনিট পার করছি, ঠিক তখনটাতেই জনাব কিছুটা কাছে এসে, একটু নীচু স্বরেই বললেন-“মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর শরীর আপনার”। নাউজুবিল্লাহ্, ব্যাটা বলে কি! ততক্ষণে আমার কপাল থেকে ঘাম ঝরতে শুরু করেছে। বিব্রত ভঙ্গিতে কোনো রকমে মাপটা দিয়েই, তড়িঘড়ি করে কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়েছি শার্ট ডেলিভারির তারিখটা জানতে। মনে মনে স্থির করে ফেলেছি, ইহজনমে আর শার্ট বানাতে আসবো না। দরকার হলে চাদর পরে ঘুরে বেড়াবো। ভিতরে ভিতরে যখন আরো ক্ষেপে উঠছি, তখনই সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুনতে পেলাম, আমার পরবর্তী অত্যন্ত বেঢপ ধরণের ভদ্রলোককেও জনাব এবার মিষ্টি করে নীচু গলায় বলছেন-“মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর শরীর আপনার”। আহ্! শুনেই মনে হলো এই বুঝি আমার চারপাশ দিয়েই শান্তির সুবাতাস বয়ে গেলে। বুঝতে পারলাম, তিনি তার মিষ্টি কথার অংশ হিসেবে সকল কাস্টমারকেই এই মিষ্টবাক্য উপহার দিয়ে থাকেন। হোক আর না-হোক, হিতে না-হয় বিপরীতই হোক, কিন্তু একটু চেষ্টাতো করেন। তথাকথিত ভদ্দরনোকেরা কিন্তু মিষ্টি করে কথা বলার চেষ্টাটুকুও করেন না।
চেষ্টাটুকু না-হয় করাই হবে, তবে তার আগে মিষ্টি শব্দ বলার জন্য বর্ণগুলোতো জানতে হবে। আমার নিজ জন্মভূমি নোয়াখালীতে বর্ণগুলো, বিশেষ করে ব্যঞ্জণবর্ণগুলো, অন্য জেলার থেকে কিছুটা আলাদা। ছোটোবেলায় প্রাইমারি স্কুলে স্যাররা আমাদের পড়াতেন, “ফ ফ ভ ভ ম”। ছোট্ট আমাদের মনে প্রশ্ন আসতো, দুইটা ‘ফ’ আর দুইটা ‘ভ’ কেন? স্যার বলতেন, ফ্রথমটা ছোটো ‘ফ’, ফরেরটা বড় ‘ফ’। আমরা জিজ্ঞেস করতাম, ‘দুইটা ‘ফ’ থাকার দরকার কি?’ স্যার অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলতেন, ‘এটা কোনো ফ্রশ্ন হলো’। উল্টো জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোর ফরিবারে যদি একটা বড় ভাই আর একটা ছোটো ভাই থাকে তাহলে কি কোনো ফ্রব্লেম আছে।’ আমরা বলতাম, ‘না’। তখন স্যার বলতেন, ‘তাহলে এখানে দুইটা ‘ফ’ থাকলে কি ফ্রব্লেম?’ উত্তর শুনে আমাদের মন খুশীতে ভরে উঠতো। তাইতো, এর থেকে বড় কি আর যুক্তি থাকতে পারে। দুইটা ‘ফ’ আমাদের দুইটা ভাইয়ের মত। দুই ভাইকে আলাদা করা কখনোই উচিৎ হবে না; চুলোয় যাক মিষ্টি করে কথা বলা।
(চলবে)
মইনুল রাজু (ওয়েবসাইট)
[email protected]
ভাই কি লেখা দিলেন আমিতো হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছি।
আপনার লেখাগুলো এতো সুন্দর কেন? আমি সত্ত্যি অসম্ভব মুগ্ধ হয়েছি।
আপনার লেখা পড়তে পড়তে নিজের মনের মধ্যে একটা সর্গীয় ভাব অনুভব করছি।
আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। ফেসবুক IDটা শেয়ার করলে আপনার সাথে আপডেট থাকতে শুবিধা হতো।
@জাহিদুল ইসলাম,
আপনার মন্তব্য পেয়ে পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমি ফেইসবুক প্রোফাইলে আমার পরিচত অল্পকিছু লোকজন আছেন, বেশিরভাগ আমার ক্লাশমেটরা। পাবলিক প্রোফাইল এক্টিভেট কর নেই এখনো। কিন্তু, আমি নিয়মিত ইয়াহু([email protected]) এবং জিমেইলে([email protected]) থাকি। কথা হবে হয়তো কোনো এক দিন।
ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য। (F)
হা হা হা………………………………….কোন ফ্রবলেম নাই। (Y)
আমার দাদার বাড়ি নোয়াখালির করিমপুরে। হেরা তো দেখি “প” কে “হ” উচ্চারণ করে, পানিকে বলে “হানি”।
@পৃথিবী,
ঠিকই বলেছেন। এটা বিশাল গবেষণার বিষয় কিন্তু। আমি ভাষার এই প্যাটার্নগুলো কিছুটা উদ্ধারও করতে পেরেছি। পরে একসময় লিখবো হয়তো। 🙂
ধন্যবাদ।
একে বলা যেতে পারে :-s ‘বিশেষণ-প্রয়োগ-বিদ্যা’ 🙂 । (আমার ইংরেজী ব্যকরণের শিক্ষক বলতেন, যারা বিশেষণের ব্যবহারে পটু, অর্ধেক দুনিয়া তাদেরই; বড় বেশি সত্যি কথা !)
@কণাদ,
ভালো বিশেষণ দিয়েছেন, ‘বিশেষণ-প্রয়োগ-বিদ্যা’ 🙂
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
হাসতে হাসতে হাঁস। :lotpot:
@শাব্দিক,
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন। 🙂
খুব সুন্দর হয়েছে । বিশেষ করে নোয়াখালী অংশটুকু । চালিয়ে যান
@মাসুদ রানা,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন 🙂 ।
বিয়াপক মজা পাইলাম।হাসতে হাসতে ফরানটা জুড়াইয়া গেলো।
@মাহফুজ,
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন। 🙂
আসলেই মজাদার লেখা! 🙂 দর্জির ব্যাপারটা আরো রসালো। 🙂
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিজিত’দা। আমিতো ভেবেছিলাম আপনি বলবেন, ‘পুরুষের প্রতি পুরুষের আকর্ষণ থাকাটাই স্বাভাবিক, এতে নাউজুবিল্লার কি হলো?’ :))
@মইনুল রাজু, :lotpot:
চাদর নয়, ছালার চট পড়ে টিএসসি-র সামনে ঘুরে বেড়াত এক ভদ্রলোক। কারো সাথে খুব একটা কথা বলতো না। কবিতা উৎসবে একবার আমাকে তার ঝোলা থেকে নোংরা হাতে একটা কূল বড়ই দিয়েছিল আর তাতেই বন্ধুমহলে আমার দাম বেড়ে গিয়েছিল, তার নজরে পড়েছি বলে।
পণ্যের বাজারে কে কতটা শিল্পসম্মতভাবে মিথ্যা উপস্থাপন করতে পারে, তার উপরেও সাফল্য অনেকটা নির্ভর করে।
কথাটা হলো এই, রসের আড়ালে, রসের ছলে আপনার এই যে বলে যাওয়া, এক কথায় চমৎকার। দেখা যাক, এই চমৎকারিত্ব কিভাবে এগিয়ে যায়?
@স্বপন মাঝি,
পুরো ক্যাম্পাসে চট পরে অনেককেই ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। তবে কখনো কারো নজরে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। বন্ধুমহলে আপনার দামা বাড়াটাই স্বাভাবিক। :))
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। 🙂
লেকা ইবা বেশি গম লাইগ্যে বদ্দা। আরুগগার লাই চাই থাক্কি। বেশি দেরি ন গইরজন।
@প্রদীপ দেব,
বদ্দা, ‘গইরজন’ ছাড়া আর সব বুঝতে পারছি। :)) ধন্যবাদ বদ্দা।
@প্রদীপ দেব,
এই বাসাত লেখন এইল্ল্যা সহজ খাম ন। আই খাইল্লা খইতাম আচ্চিদি অনর বারান বেক্কিন বোত টিক ওইয়ে। বালা লাগিল।
***মইনুল্লে “গইরজন” ন বুজিলে ন বুজি বই তহক।***
@ছিন্ন পাতা, :))
@ছিন্ন পাতা,
অবু………ক এডেত দেইর চিটাইংগা ভরি গিয়েগই। দেখিনি খুব ভালা লাইগি। প্রদীপ দেব ও ছিন্ন পাতা অনারারেতো খাটি চিটাইংগা লাগের বদ্দা। অ্যাঁইও আছি।
রাজুর লেখা বরাবরই উপভোগ্য এবং রঙ্গ ভরা অঙ্গনে (পর্ব ১)এর ব্যতিক্রম নয়।
আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরটি হাস্যরসের উদ্রেক করলেও অতিরঞ্জিত। আমরা আবার নেতিবাচক উত্তরে এতটা অতিরঞ্জন আশা করি না। এতে তো অনেকে বিভ্রান্তও হতে পারে।হয়ও। নিদেনপক্ষে কিছু ডলার গচ্ছা দিতে হয়।
তাছাড়া অনেককে বলতে শুনেছি, এবার হয়নি। আগামীতে যাচ্ছি। আগামী আর আসে না। আগামীর আশায় অনেকে দেশের বর্তমানকে হারায়।
ধন্যবাদ রাজুকে হাস্যরসের মাধ্যমে চিত্রটি তুলে ধরার জন্য।
রঙ্গ ভরা অঙ্গনের বাকি নয়টি পর্ব পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকছি।
আর হ্যাঁ, আমাদের নরসিংদি অঞ্চলের, আসলে ঢাকা অঞ্চলের লোকজন ভাত না খেয়ে বাত খাই।
@গীতা দাস,
নিশ্চিত করে অতিরঞ্জিত। এখানে প্রতিটা বাক্যই আসলে রঞ্জিত করে লেখার চেষ্টা করেছি। স্বাভাবিকভাবেই কিছু বাক্য স্বল্পরঞ্জিত এবং কিছু বাক্য অতিরঞ্জিত হয়ে গেছে। তবে ঠিকই বলেছেন, কেউ যদি এটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নেন তাহলে বিভ্রান্ত হবেন। আসলে মনে হয়, লেখার কোথাও একটা নোট লিখে দিলে ভালো হতো।
নরসিংদী আমি জীবনে একবারই গিয়েছিলাম, তাই বেশি কথাবার্তা শোনার সুযোগ হয়নি। তবে একবার গিয়ে নরসিংদীর লোকজনকে বেশ ধীরস্থির মনে হয়েছে, বাকীটা জানি না। 🙂
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
মাস্টার্সে ভাষা বিজ্ঞানের উপরে আমাদের কিছু পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ভাষা বিজ্ঞানের অল্প-সল্প পড়ে বুঝেছি, আমাদের ভাষা কতোটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। ড. হুমায়ুন আজাদ-এর ” তুলনামুলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান” গ্রন্থে এর কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু এর শোচনীয়তা থেকে তুলে আনতে কেউ অগ্রসর নয় বরং এর ক্ষতি করতেই যেনো সবার ভালো লাগে। ফেইসবুক-ব্লগ-পত্রিকা থেকে আমার এমনই উপলব্ধি…যাহোক, চমষ্কীও বিল্পবের ফলে ভাষার যে উৎকর্ষতা পেয়েছে তার প্রয়োগ আমাদের প্রিয় বাঙলা ভাষায়ও হয়তো দেখা যাবে….আপনার লেখা সেই বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করুক।
শুভকামনা।
@মাহমুদ মিটুল,
ধন্যবাদ মন্তব্যের আপনার জন্য। ভালো থাকবেন 🙂 ।
আয়হায় কয় কি, এইটা লৌরাইবো 😀
@কাজী রহমান,
🙂
আপনার নোয়াখালীর উচ্চারন শুনে চিটাগঙ্গীয় উচ্চারন শোনানোর লোভ সংবরন করতে পারলাম না।
আমাদের ক্লাশ সেভেনের বাংলা প্রথম পত্র পড়াতেন একজন খাঁটি চিটাগংএর স্যার। ওনার উচ্চারন এতই মজার ছিল যে উনি মুখ খুললেই আমরা বলতাম “কমেডি সিরিজ শুরু”।
একদিন ক্লাশে এসে –
“তোমরা পাকি কবিতাটা পড়েচ?”
ওনার মুখে ভুল উচ্চারন শোনার জন্য আমরা বলতে লাগলাম না স্যার, ওটাতো পড়া হয়নি। বোধ হয় সিলেবাসে নেই।
“কি বলচ? পাকি পরনি? পাকি, পাকি…যে পাকি পাকা মেলে আকাশে উরে চলে যায় আর কি।”
@ছিন্ন পাতা,
:)) :))
আপনার কমেডি সিরিজের অংশ বিশেষ শুনে, আমি আবার আরেকটা কমেডি সিরিজের অংশ বিশেষ বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ার সময়, আমার সাথে পরিচয় ছিলো এক সিলেটি স্যার এর। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আলু শেষ করছো?’ আমি বলি, ‘কোন আলু, কার আলু?’ উনি বলেন, ‘না না আলু না, আলু’। আমি বলি, ‘আমাদের বাসায়তো আলু রান্না হয় নি আজকে’। উনি আবারো বলেন, ‘আরে আলু না-তো, আলু’। অবশেষে বুঝতে পারি, উনি জিজ্ঞেস করছেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থ বিজ্ঞান বই আর ‘আলো’ অধ্যায়টা আমি পড়ে শেষ করেছি কি-না’। :))
@মইনুল রাজু,
ভুট চাই ভুটারের, দুয়া চাই সকলের।
@অনিরুদ্ধ রায়,
😛 :))
বেশ মজারু। মুক্তমনায় রম্য লেখার বড়ই অভাব। মনে হয় দায়িত্বটা আপনি নিলে আমরা মুক্তমনায় মাঝে সাজে প্রাণ খুলে একটু হাসতে পারতাম। 😉
@রাজেশ তালুকদার,
ধন্যবাদ। আমিতো এটা কমপক্ষে দশ পর্ব লিখবোই। আপনারাও মাঝে মাঝে এ-জাতীয় লিখা লিখবেন আশা করি 🙂 । ভালো থাকবেন।
খুব ভালো লাগলো…
@শিমুল,
অনেক ধন্যবাদ 🙂 ।
@মইনুল রাজু,
আমাদের পূর্বপুরুষের ভাষা আরবি ছিল বিধায় আমাদেরকে শিখিয়েছেন- খ খ , গ, গ, ছ, ছ, জ, জ, ফ,ফ।
খ এর উচ্চারণ হবে আরবি খা এর মতো- আলিফ, বা, তা, ছা, খা, আইন, গাইন। ক, ঘ, চ, ঝ, প, য, এমন অপ্রয়োজনীয় বর্ণ সমুহ নাই। সুতরাং আমরা পড়ি-
ভোর হলো দোর খুলো (আরবি খা এর উচ্চারণ) খুখুমনি ওঠরে
ঐ ডাখে ঝুঁই শাখে ফুল খুখী ছোটরে।
খুলি হাল তুলি ফাল ঐ তরী ছললো
এইবার এইবার খুখু ছুখ খুললো।
আলসে নয় সে ওঠে রোজ সখালে
রোজ তাই ছাঁদা ভাই (আরবি ছা এর উচ্চারণ) টিফ দেয় খফালে।
ঠিক তেমনি-
ঐ দেখা জায় (আরবি জাল এর উচ্চারণ) তাল গাছ
ঐ আমাদের গাঁ (আরবি গাইন এর উচ্চারণ)
ঐ খানেতে বাস খরে খানা বগীর ছা।
ও বগী তুই খাস খী, ফান্তা ভাত ছাছ খি
ফান্তা আমি ছাইনা, ফুটি মাছ ফাইনা
এখটা যদি ফাই
অমনি ধরে গাফুস গুফুস খাই।
ছ্যার আমার সিলটি খবিতা ভালা লাগছেনি?
:clap :clap :clap :clap
@আকাশ মালিক,
আপনার খবিতা ভালো হয়েছে :))। ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক,
বাইজান এইডার ঢাকাইয়া ভার্সন হুনেন,
এউগা যদি পাই
অম্বে দইরা ঘাপ্পুত ঘুপ্পুত খাই
……………এইডা কলাম রিয়েল গটনা, আমার ক্লাসের ঢাকাইয়া দোস্ পয়লাটুক বালাই কইসিলো, স্যাসবেলা গিয়াই এক্কেরে ‘ঘাপ্পুত ঘুপ্পুত’
রম্যরচনা এই ব্লগে বড় একটা দেখা যায় না। অনেক দিন পরে আপনার লেখাটা পড়ে অনেক হাসলাম- হাসলাম আর চিন্তা করলাম। ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়বার জন্য। ভালো থাকবেন। 🙂
:lotpot: :lotpot: :lotpot:
@নিটোল,
ধন্যবাদ পড়বার জন্য। 🙂
আহা, আফনের লেহা ফড়লেই মনডা বালা অইয়া যায়। :))
@সাইফুল ইসলাম,
আফনাকে দন্যভাধ। :))
দারুণ 😀 😀 ,সামনের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ধন্যবাদ রামগড়ুড়ের ছানা 🙂 ।
দারুন মজা পেলাম। হাসতে হাসতে সোফা থেকে পড়ে যাচ্ছি।
তবে আপনার ওই স্যারের মতো আমিও শ,ষ আর স এর উচ্চারনের পার্থক্য আজ পর্যন্ত ধরতে পারিনি।
@রনবীর সরকার,
‘শ’ আর ‘স’ এর পার্থক্য যথেষ্ট, একটু কোথাও খুঁজলেই পাবেন। তবে ‘ষ’, শুধু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে ব্যবহৃত হয়। এটাকে অতিরিক্ত হিসেবে ধরতে পারেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘শ’ এর মত উচ্চারণ করতে পারেন। এতটুকুই আমি জানি, ভুল থাকতে পারে। 🙂
ধন্যবাদ।
@মইনুল রাজু,
হ্যা।ঠিক বলেছেন। শ আর স এর মধ্যে পার্থক্য আছে।
তবে বেশিরভাগক্ষেত্রেই এদেরকে সঠিক উচ্চারনে পাঠ করা হয় না।
যেমন ‘সাম’ বলতে গিয়ে কিন্তু ‘শাম’ ই উচ্চারিত হয়।
অফিসের ‘বস’ এর ক্ষেত্রে বস এর ‘স’ ঠিকভাবেই উচ্চারিত হয়। আবার বসতে বললে ‘স’ এর উচ্চারন ‘শ’ হয়ে যায়।
আর একটা যুক্তাক্ষর ক্ষ এর উচ্চারন আবার বাংলায় এসে এর মূল হতে বিচ্যুত হয়ে খ এর মতো উচ্চারিত হচ্ছে।
@রনবীর সরকার,
এটা আমিও খেয়াল করেছি। নিশ্চয়ই ব্যকরণের বইতে কোনো নিয়ম থাকবে। কিন্তু আমি নিজেই কিছু নিয়ম তৈরী করে নিয়েছি। যেমন, শব্দের শুরুতে হলে ‘স’ এর উচ্চারণ ‘শ’ এর মত হয়। যেমনঃ সাবধান, সাধারণ। যদিও বেশ কিছু ব্যতিক্রম আছে। আবার বিদেশী শব্দ হলে (যেমনঃ বস্) সবসময় ‘স’ তার নিজের মতই থাকে। 🙂
ধন্যবাদ।
আমার জন্মভূমি সন্দ্বীপে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জণবর্ণ উভয়েরই শোচনীয় অবস্থা। হ্রস্ব-ই কে বলা হয় রশি দীর্ঘ-ঈ কে বলা হয় দীর্গি
হ্রস্ব-উ কে রশু দীর্ঘ-ঊ কে দূর্খু।
তালব্য-শ কে তালিবাক্সমানে তালি দেয়া বাক্স। ণ কে মদিনান্ন মানে মদিনার অন্ন।
@তামান্না ঝুমু,
:)) :)) । আপনি যেগুলো বললেন, তা আমাদের ওখানেও আছে। রশির নাম যে কোথা থেকে রশি হলো সেটা বুঝতে আমার উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লেগে গেছে 😛 ।
হা…হা…বাংলা তর্জমাটা দারুন মজা লাগলো।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। 🙂
মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর লেখা আপনার।
@রৌরব,
:)) :)) । আপনি কি চান আমি আবারো পাথরের মত শক্ত হয়ে, দম বন্ধ করে বসে থাকি? :))
ধন্যবাদ।
মুক্তমনার গুরুগম্ভীর এবং গুরুপাক পরিবেশের মাঝে আপনি আনলেন সহজ, সরল এবং হাসিখুশীর পরিবেশ–স্বল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও।
আপনার লেখা পড়ে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার উপক্রম হল।
প্রচুর ধন্যবাদ এই হালকা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য।
@আবুল কাশেম,
আমারো………………………পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
ধন্যবাদ মামুন ভাই।
@আবুল কাশেম,
আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। 🙂
হাসতে হাসতে শ্যাষ!
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ 🙂 ।
হাসতে হাসতে তো পেটে খিল ধরে গেল, মইনুল ভাই! তবে আমার মতে ওদের এই মেকি ভদ্রতারও কিন্তু একটা মূল্য আছে। কিছুটা হলেও অন্যের প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা কিনা সুস্থ ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণের জন্য খুব জরুরী।
‘রঙ্গ ভরা অঙ্গনে’-এর প্রথম পর্বেই বাজিমাৎ করে দিয়েছেন! সামনের পর্বের জন্য মুখিয়ে আছি।
@কাজি মামুন,
পুরোপুরি একমত আপনার সাথে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জন্য, এই ভদ্রতা দেখানোর চেষ্টাটাই আসল।
ভালো থাকবেন।