মুক্তমনায় জ্ঞানী গুনি বিদগ্ধ পাঠকদের তথ্যজ্ঞানের অভাব নেই। অনেক পাঠক আছেন যারা আমার এই লেখার তথ্যগুলো সম্পর্কে পূর্ব পরিচিত। আশাকরি তাঁরা সহজ ভাবেই নেবেন। মূলত এই লেখায় নতুন কোন তথ্য নেই, সবি পুরানো। এই পুরনো তথ্য গুলোকে হয়তো আবার অনেকের কাছে নতুন হতে পারে মূলত তাদের উদ্দেশ্যেই এই লেখা।
প্রাকৃতিক বিবর্তনের খেয়ালি ধারায় সৃষ্ট বিবর্তিত সরীসৃপ প্রজাতিয় প্রাণীদের মধ্যে সাপ অন্যতম। আমাদের ভীরু মানসপটে সাপ সাধারণত খুবি হিংস্র প্রাণসংহার কারী প্রাণী কল্পিত হয়ে থাকলেও সাপ মোটেও তেমন ভীতিকর প্রানী নয়। পারত পক্ষে মানুষ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। আক্রান্ত মনে করলেই কেবল নিজের জীবন বাঁচাতে ছোবল মারতে উদ্যত হয়। সাপ নিয়ে কৌতুহল, ভয় ও কুসংস্কার কোনটারি ঘাটিতি নেই আমাদের দেশে। সঠিক জ্ঞানের অভাবে সাপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এক ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক। যা বংশানুক্রমে আমরা আজো বহন করে চলেছি। মানুষের এই দূর্বলতাকে পুজি করে সাপ নিয়ে রচিত হয়েছে নানান লোক কথা, জনশ্রুতি, উপখ্যান, গল্প। সৃষ্টি হয়েছিল পেশা, চলে বানিজ্য। তৈরী হয়েছে নানান শিল্প ও ভাষ্কর্য। বেহুলা লক্ষিন্দরের গল্প তো লোকের মুখে মুখে। সাপের কাল্পনিক দূর্লভ মনির কথা বিশ্বাস করা লোকের অভাব নেই আজো আমাদের দেশে। সাপ মিশে গেছে আমাদের লোকজ সংষ্কৃতি, ধর্ম ও ভাষ্কর্যে। সাপকে আরো অধিক রহস্যি করনে সাপ ইচ্ছাধারী অর্থাৎ মাথাটা মানুষের বাকি অংশ সাপের রূপ ধারন করার ক্ষমতা আছে কল্পনা করে তৈরী হয়েছে ভারত বাংলায় অসংখ্য চলচিত্র। সেখানে আমাদের দেখানো হয় সাপ কিভাবে জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়, মনুষ্য রূপ ধারন করে কি ভাবে প্রেম করে, খারাপ মানুষের উপর কি ভাবে ঝাপিয়ে পড়ে, কখনো বা ভালো মানুষের জীবনরক্ষা কারী প্রতীক রূপে। তবে লক্ষ্যনীয় এখানে র্নিবিষ কোন সাপ নয় বরং বিষাক্ত ফনা উঁচিয়ে ফোস ফাস করতে পারা সাপকেই শক্তির আধার হিসাবে কল্পনা করা হয়।
অত্যধিক সাপের ভয় থেকে সূচনা হয় ভক্তির। ভক্তির মোহে পড়ে এক সময় সাপকে দেবতা তুল্য করে চালু হয় সাপের পূজা বন্দনা। হিন্দু সমাজে মনসা পূজা তার জ্যান্ত প্রমান। শক্তির মহাত্ম প্রকাশে ভক্তিতে গদ গদ হয়ে ভক্তকুল শিব ঠাকুরের গলায় লটকে দেয় সাপের প্রতিকৃতি। শিবের এই সাপ বশিকরনে শিবের মহাত্ম যেন বেড়ে যায় আরো শত গুন।
হিন্দুদের এই প্রচ্ছন্ন সর্প ভক্তির হাওয়া সামান্য হলেও পরশ বুলিয়ে যায় পথ হারা ভারতীয় বৌদ্ধ সমাজকে। বৌদ্ধ মিথেও অনুপ্রবেশ করে সাপের কিছু ভূমিকা। জানা যায় এক ঝড় বাদলের রাতে সর্প রাজ তার বিশাল ফনা ছাতার মত মেলে ধরে বুদ্ধকে রক্ষা করে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে।
রচিত হয় সাপের পা দেখা, দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা, কেঁচো কুড়তে সাপ, দুমুখো সাপ, ইত্যাদি প্রবাদ বাক্যের।
শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয় এক সময় প্রাচীন মেসোপ্টেমিয়া, মিসর, গ্রীক,অষ্ট্রেলিয়া,দক্ষিন আমেরিকা, আফ্রীকায় ধর্ম, সংষ্কৃতিতে, একদা গুরুত্ব পূর্ণ স্থান দখল করেছিল সাপ। চীনা মিথ অনুসারে “নুয়া”ই (যার সারা শরীর সাপ হলেও মাথাটা ছিল দেবীর) প্রথম কাদা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করে। গ্রীক দেবী “মেডুসা”র চুলের বদলে ছিল মাথা ভর্তি সাপ। বাইবেলের বর্ননা মতে স্বর্গীয় উদ্যান ইডেনে ঈভকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিষিদ্ধ জ্ঞান বৃক্ষের ফল সরবরাহ করে এই সারপেন্টে বা সাপ। অনুন্নত জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া দেশগুলুর কথাই বা শুধু কেন বলি পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত দেশ গুলো সাপের এই মিথ জ্বরের কবল থেকে মুক্ত হতে পারে নি এখনো। সাপ মিথকে ভিত্তি করে তারাও তৈরী করেছে অনেক কাল্পনিক ছবি ও গল্প। তবে ছোট খাট নয়, তারা মাথা ঘামায় পাইথন(অজগর), বোয়া, আনাকোন্ডার মত বিশাল বিশাল সাপ নিয়ে।
সাপের আকার আকৃতির প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস নিয়ে জীব বিজ্ঞানীরাও বহুদিন ছিলেন ধোয়াসাচ্ছন্ন, ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত। তাদের মতানৈক্যের কারন ছিল বিশ্বাসযোগ্য ফসিলের অভাব। সাপের হাড়ের গঠন খুবি ভঙ্গুর হওয়ায় তাঁরা খুঁজে পান নি কোন অকাট্য শক্ত প্রমানের ভিত, আসতে পারেন নি কোন গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে। বিগত কয়েক দশক ধরে চলে তাদের সাপ বির্তক। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটে ৪ই মার্চ ২০০৯ সালে। দক্ষিন আমেরিকার কলম্বিয়ার পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উন্মুক্ত কয়লা খনি চেরিজনের কয়লা স্তুপের খাজে পাওয়া যায় ৬০ মিলিয়ন বছরের পুরানো এক বিশাল সাপের ফসিল। প্রাগৈতিহাসিক যুগের ডাইনোসরের মত আরেক বিশাল প্রাণীর অস্থিত্বের গন্ধে রোমাঞ্চিত হয়ে নড়ে চড়ে বসেন বিজ্ঞানীরা। অতি বিশাল বা দানব আকৃতির জন্য “টাইটান” আর বর্তমান “বোয়া” প্রজাতির সাথে কিছুটা মিল থাকায় বিজ্ঞানীরা এর নামের প্রথম অংশ রাখেন “টাইটানোবোয়া” আর চেরিজনে পাওয়া গেছে বলে নামের দ্বিতীয় অংশ রাখেন “চেরিজোনেনসিস” অর্থাৎ পুরো নাম দাঁড়ায় “টাইটানোবোয়া চেরিজোনেনসিস”।
এই সাপ নিয়ে আলোচনার আগে আকার-আকৃতি, চলনে-বলনে, খাদ্যাভাসে এদের কাছাকাছি আমাদের অতি পরিচিত প্রজাতি পাইথন বা অজগর সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিলে তুলনা মূলক আলোচনা আরো একটু প্রাণবন্ত হবে।
দক্ষিন এশিয়ার দেশ ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার মত উষ্ণ দেশগুলোতে প্রায় বিশাল অজগরের দেখা মেলে। শীতল রক্ত বিশিষ্ট এই প্রাণীটি কিছুটা উষ্ণতা প্রিয়। তবে বেশী গরম ও তীব্র ঠান্ডা এরা কোনটাই সহ্য করতে পারে না। পানি, গাছ-গাছালি এবং শুকনো ভূমি আছে এমন জায়গায় আবাস গড়তে তারা বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। গাছে চড়া ও সাঁতার কাটাতে এরা সমান দক্ষ।
স্ত্রী অজগর গড়ে ২৫-৩৫ টি ডিম পাড়ে তবে কোন কোন অজগর ৬০ টিরো অধিক ডিম পাড়তে দেখা গেছে। বিশাল শরীর স্বাস্থ্যের জোর থাকলেও শত্রু কম নেই। অনেক সময় শত্রুর চোখ ফাঁকি দিতে ডিম গুলোকে গাছের পাতা বা মাটি দিয়ে ঢেকে রাখে। আবহাওয়া শীতল থাকলে মা অজগর কুন্ডলি পাকিয়ে ডিম গুলিকে পর্যাপ্ত তাপ দিয়ে যায়। এক একটি ডিম আকার ৪ইঞ্চি বা তারো বেশী হতে পারে। ডিম পাড়ার পর মা অজগর বংশ রক্ষায় কিছুটা আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে। বড় মাপের পাখি- ঈগল, সারস, কুমির, গিরগিটি, কিছু কিছু বন্য পশু বাচ্চা অজগরের প্রধান শত্রু। বড় অজগরের শত্রু বাঘ, সিংহ।
৪-৫ বছরের মধ্যে এক একটি শিশু অজগর পূর্ণাঙ্গ অজগরের রূপ নেয়। এক একটি পূর্ণাঙ্গ অজগর লম্বায় ৩-৩৩ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত অজগরের গড় আয়ু ২০-৩০ বছর হয়ে থাকে তবে ৪৭ বছর ধরে পৃথিবীর মায়া ভোগ করে গেছে এমন রের্কডও আছে।
সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাসে এদের তৎপরতা চোখে পড়ে বেশি। জুন থেকে আগস্ট মাসে গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় এ মাস গুলোতে মাটির গর্তে বা গাছের কোটরে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করে।
তার নাদুস নুদুস ভারি দেহটাকে টানা হেঁচড়ার ধকল থেকে বাঁচাতে শিকারের পিছে না ছুটে ববং শিকারের জন্য ওঁত পেতে থাকাতেই তার যত শান্তি। অবশ্য বিশাল বপু নিয়ে শিকারের পিছে ছোটার গতিই বা তার আছে কই? ঘন্টায় ছুটতে পারে মাত্র ১ মাইলের মত। অজগরের উপরের চোয়ালে থাকে তাপ বোধশক্তি সংবেদক অঙ্গ যা তাকে শিকারের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে। শিকার বাগে এলেই তার দানব দেহটা দিয়ে শিকারকে আষ্টে পৃষ্টে পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। তারপর শিকারের মাথার অংশটা প্রথমে মুখে পুরে পরে আস্ত শিকার ধীরে ধীরে তৃপ্তি সহযোগে সোজা চালান করে দেয় ভুরিতে। গিলতে সুবিধার জন্য প্রয়োজনে মুখ ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে নেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে অজগরের। খাদ্য বৈচিত্রের জন্য তাকে বেশ ভোজন রসিকও বলা যায়। তার খাদ্য তালিকায় আছে ব্যাঙ, ইঁদুর, খরগোশ, গিরগিটি, পাখি, মুরগি, বানর, শুকর, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, ছাগল, অন্যান্য প্রজাতির সাপ, কুমির, ইত্যাদি।
শিকার কত বড় হবে তে নির্ভর করে তার দেহের আকার আকৃতির উপর। একবার খেলেই সে সাপ্তা খানেকের জন্য নিশ্চিন্ত। এই খাবার হজম হতে তার কয়েক দিন থেকে সাপ্তা খানেক লেগে যায়। দীর্ঘ দিন না খেয়েও বাঁচার অপূর্ব ক্ষমতা আছে অজগরের। অনেক সময় এটা সেটা দিয়ে ভুরি ভোজ করতে গিয়ে বাধিয়ে ফেলে বিপত্তি, ফলাফল তাড়িয়ে বেড়ায় মৃত্যু। খাবারের লোভে বৈদ্যুতিক কম্বল ও গলফ বল গিলে হজমের চেষ্টা করতেও দ্বিধা করতে ছাড়েনি ।
মোটামুটি সংক্ষিপ্ত আকারে একটা ধারনা পাওয়া গেল এই বিশাল অজগরের জীবন পরিক্রমা নিয়ে, এই বার আসি টাইটানবোয়া প্রসঙ্গে।
কয়লা খনিতে পাওয়া সাপের ফসিলটি দেখে বিজ্ঞানীদের চোখ তো ছানাবড়া। ফসিলটি নেড়ে চেড়ে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন এটি লম্বায় ছিল প্রায় ৪৫ ফুট। সবুজ আনাকোন্ডার সর্বোচ্চ ওজন যেখানে ২৫০ কেজি সেখানে টাইটানবোয়ার ওজন ছিল সোয়া টনেরও বেশী। আর প্রস্থে ছিল এক জন পূর্ণ বয়ষ্ক লোকের কোমরের পাজরের সমান । মেরুদন্ডের যে কশেরুকা পাওয়া গেছে প্রস্থে তা ছিল সুস্থ পূর্ণ বয়ষ্ক যে কোন লোকের হাতের চেয়েও বড়।
এই বিশাল ফসিল আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা লেগে গেলেন গবেষনায়। হিসাব কষে বের করেন প্রকান্ড ডাইনোসর যুগের অবসানের পরেই তাদের রাজত্ব শুরু। যেন এক দৈত্য রাজার রাজত্বের অবসানের পর আরেক দৈত্য রাজার উত্থান।
কিছু চিত্র
১) দেখুন
২) দেখুন
৩)দেখুন
৪)দেখুন
সাপটির আকার আকৃতি ছাড়া এখনো বিস্তারিত তথ্য জানা না গেলেও বিশাল দানবটি বেশির ভাগ সময় পানিতে বিচরণ করত তা বিজ্ঞানিরা নিশ্চিত হয়েছেন। দানবটির উদর পূর্তির আয়োজন ছিল পিলে চমকানোর মত। ফসিলটির পাশেই পাওয়া গেছে ছয় কোটি বছর আগের এক কুমির প্রজাতির। বিলুপ্ত ক্রোকোডাইলিফর্ম পরিবার ডাইরোসাউরিডায়ে গোত্রের সদস্য ছিল এই কুমির। যাকে অধুনা কুমিরের পূর্ব পুরুষ বলা যায় আর ২ মিটার দানব আকৃতির কচ্ছপের দেহবাশেষ। মারার আগে হয়তো কোন নিষ্ঠুর প্রাকৃতিক দূর্যোগ তাকে সেই খাবার উপভোগের সুযোগ দেয় নি। জীব বিজ্ঞানীদের ধারনা এই সাপ অনায়াসে গিলে ফেলত ৭/৮ ফুট আকারের ইয়া বড় কুমির ও বড় বড় কচ্ছপ, মাছ ইত্যাদি।
ঘন গাছ গাছালি আর নদী ঘেরা সবুজ বনাঞ্চলে বিস্তৃত ছিল তাদের অবাধ সাম্রাজ্য।
কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সাপ ফসিল বিশেষজ্ঞ একি সাথে স্মিথসোনিয়েন ইনেস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড.জনসনের মতে-
“That’s longer than a city bus and … heavier than a car”
সাপটির বিশালতা বুঝাতে তিনি রসিকতার ছলে বলেন-
“If it tried to enter my office to eat me, it would have a hard time squeezing through the door,”
তিনি আরো বলেন-
“The discovery of Titanoboa challenges our understanding of past climates and environments, as well as the biological limitations on the evolution of giant snake.
তাঁর এই উপলব্ধির পেছনে কাজ করেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা পরিবর্তন। সে সময় বৃষ্টিপাত যুক্ত বনাঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩০ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বর্তমান বিশ্বের যে কোন বৃষ্টিপাত যুক্ত বনাঞ্চলের গড় তাপমাত্রার চেয়ে আরো প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশী। জীব বিজ্ঞানীরা তাই নতুন করে হিসাব কষতে শুরু করেছেন মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের তাপমাত্রার সাথে বর্তমান তাপ মাত্রায় হের ফেরে জীব জগতের জটিল বিবর্তনের হিস্যা নিয়ে।
এই ফসিল আবিষ্কারের আগে এতদিন উত্তর আফ্রিকার “জাইগেন্টোফিস জারস্টিনি” বিজ্ঞানী মহলে বিবেচিত হয়ে আসছিল সব চেয়ে দানব সাপ রূপে। যার বিচরন কাল ছিল আজ থেকে ৪০ মিলিয়ন বছর আগে। এই সাপ লম্বায় ছিল ৩৬-৩৮ ফুট।
আর আধুনিক বিশ্বের সব চেয়ে বড় অজগরটির রের্কড ৩৩ ফুট।
নিউ ইর্য়কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হ্যারি ডাব্লিউ গ্রীনের মতে-
For decades herpetologists have argued about just how big snakes can get, with debatable estimates of the max somewhat less than 40 feet
জীব বিজ্ঞানী মহলে কয়েক দশক ধরে সাপ নিয়ে চলে আসা বির্তকের আপাত অবসান ঘটলেও কোন কোন জীব বিজ্ঞানী দাবী করেন যদি আমরা পৃথিবীকে ফিরিয়ে দিতে পারি তার মিলিয়ন বছর আগের হারানো সেই তাপমাত্রা, ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হই উপযুক্ত বাঁচার পরিবেশ তবে বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করা শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণীগুলো আবার ফিরে পাবে তাদের সেই বিশাল দানব আকৃতির দেহ, তাদের হারানো ঐতিহ্য।
আমাদের তখন আর প্রয়োজন হবে না কোন কম্পিউটার এ্যানিমেইশনে সৃষ্ট দানবের। তাদের বিশাল বিশাল শরীর নিয়ে হেলে দুলে ঘুরে বেড়ানো দেখব অবাক বিস্ময়ে কোন সাফারি পার্কে, হয়তো মিডিয়া পর্দায়, নয়তো চিড়িয়াখানায় শক্ত কোন লোহার খাঁচায় বন্ধি হয়ে মানুষের মনোরঞ্জনের পণ্য হতে।
বিঃ দ্রঃ- সব তথ্য নেট থেকে সংগৃহীত
দুটো প্রানি, সাপ আর তেলাপকা, লুপ্ত হয়ে গেলেও প্রকৃতির কোন ক্ষতি হবে না। জীবনে প্রচুর সাপ মেরেছি। আর এখন যে দেশে আছি সেখানে সাপ তেমন নেই। ভাল খবর হল বাংলাদেশ থেকেও সাপ মোটামুটি উঠে গেছে। তবে পরিপূর্ণ লুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সজাগ থাকতে হবে, কারন সরীসৃপের জন্মহার খুব বেশি। আমার পরামর্শ হল বাংলাদেশে সাপ খাওয়ার চর্চা শুরু করে দেয়া। তাইলে অল্প যে কিছু সাপ অবশেষ আছে সেগুলোও নিঃশেষ হয়ে যাবে যদি না কেউ সাপের চাষ শুরু করে দেয়।
তবে সাপ ছাড়া আর কোন প্রানিই মারা যাবে না। এমনকি কুরবানির নামে যে গবাদি পশুর গনহত্যা সেটাও বন্ধ করতে হবে। প্রানবৈচিত্র ধবংস করে মানুষ ভালভাবে বাঁচবে না। সাপ নির্মূল করাটা দরকার এ কারনেও। কুৎসিত এই প্রাণীটা ছোট পাখি ও মাছ খেয়ে প্রানবৈচিত্র ধ্বংস করে। গুয়ামের দৃষ্টান্তটা লক্ষ্য করুন।
এত কিছু খুব ভাল লাগল। ধন্নবাদ আপনাকে। (Y)
মজাদার, ইন্টারেস্টিং গল্পসল্প ভালো লাগল। তবে এত বানানপ্রমাদের কারণে পড়তে খুব অস্বস্তি লাগছিল।
দারুন লেখেছেন রাজেশ দা।
সাপ সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই। শহরে যেসব বেদে প্রকৃতির লোক সাপ দেখিয়ে লোকের কাছ থেকে পয়সা নেয় তাদের বিড়ে অনেক সময় থাকতাম ছোটবেলায় সাপ দেখার আশায়।
——ধন্যবাদ আমাদের মতো অজ্ঞ পাঠকদের দারুন কিছু তথ্য দেয়ার জন্য।
———শুধু গল্প তৈরী করেই ক্ষান্ত হয়নি, গল্পকে সত্য প্রতীয়মান করতে বাস্তবে এর পটভূমিও তৈরী করা হয়েছে। শুনেছি বগুড়ায় নাকি বেহুলা-লক্ষীন্দর এর বাসরঘর আছে। 🙂
——ছোটবেলায় আমার সবচেয়ে প্রিয় চলচিত্র ছিল সাপ সম্পর্কীয় চলচিত্রগুলো।
——-হিন্দুশাস্ত্রেতো সৃষ্টির প্রারম্ভের কাহিনীতেও সাপ রয়েছে। সৃষ্টির প্রারম্ভে ভগবান বিষ্ণু অনন্ত নাগের শয্যায় শায়িত ছিলেন এবং বিষ্ণুর রাম এবং কৃষ্ণ অবতারে এই অনন্তনাগও তার সাথে ছিলেন। সম্ভবত শঙ্গরাচার্য বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বলে প্রচার করার পরই বুদ্ধের সাথে অনন্তনাগের সম্পর্কের মিথ তৈরী হয়।
এখন একটা প্রশ্ন ঢাকা শহরে বর্ষাকালে এক ধরনের ছোট সাপের মতো সরীসৃপ দেখা যায়। অনেকে এটাকে দুমুখো সাপ বলে। এটা নাকি দুমুখ এক করে ছোবল দিলে শিকার কখনো বাচে না। আপনার থেকে জানতে পারলাম আসলেই লেজের দিকে মুখ আছে এরকম কোন সাপ নেই।
এই সাপটার সম্পর্কে একটু বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন। এর ইংরেজী নাম না জানা থাকাতে সার্চ দিতেও পারছি না।
@ছিন্ন পাতা,
উত্তরঃ আমাদের দেশে মাথা ও লেজে দুদিকে মুখ নিয়ে যে “দুমুখো সাপে”র ধারনা গড়ে উঠেছে তা আসলে একটা মিথ। এই রকম সাপের কোন প্রজাতির অস্তিত্ব পৃথিবীতে এখনো পাওয়া যায় নি। তবে কিছু কিছু সাপের প্রাজাতি আছে যাদের লেজের শেষ প্রান্তটা দেখতে ঠিক মাথার মত।একি সাথে তারা লেজের এই অংশটি নাড়া চাড়া করাতে বিশেষ দক্ষ। এটা তাদের খাবার খুজতে ও সাঁতার কাটতে বিশেষ সাহায্য করে। তবে এটি মাথা নয় এতে চোখ, দাত, মুখ কিছুই নেই।এটি স্রেফ লেজ। এই প্রজাতির সাপ থেকেই আমাদের দেশে “দুমুখো সাপে”র প্রবাদ বাক্যটি গড়ে উঠেছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন<
উত্তরঃ এটা পুরাই মিথ। আপনি তো নিজেই তার চাক্ষুস প্রমান পেয়েছেন। কিছু প্রাচীন মানুষের সাপকে অতিরিক্ত ভয় ও ভক্তি থেকেই এই সব মিথ গড়ে উঠেছে। তাছাড়া সাপ কোন প্রতিহিংসা পরায়ন প্রানী নয় স্থান, কাল পাত্র মনে রেখে প্রতিশোধ নিতে তার উৎসাহ নেই।
@রাজেশ তালুকদার, দেশে যারা গ্রামে থাকার স্বাদ পেয়েছিল তাদের অনেকের কাছ হতে সাপের গল্প শুনলেও দুমুখো সাপের গল্প প্রায় কেউ বলতনা। আপনার প্রথম লিখাতেও অনেক তথ্য আছে কিন্তু আমাদের দেশে বা এশিয়া মহাদেশের কোথাও দুমুখো সাপের কথা উল্লেখ নেই। তাই একটু খটকা লেগেছিল আমার নিজে দেখা সেই কুচকুচে কালো দুমুখো সাপের অস্তিত্ব নিয়ে। সে কারনে ওভাবে প্রশ্নটি করা।
তথ্যসহ জবাব দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার কারনে ছোটবেলার একটি ভ্রম আজ পরিস্কার হল। কিন্তু কি অবাক কান্ড! অবিকল মাথার মতন লেজের দিকটা! আপনার দেয়া লিংকটির সাপগুলো তাও হাল্কা রঙের। কালো কুচকুচে সাপের ক্ষেত্রে কি অবস্থা হয় ভাবুন তো।
শেষ করার আগে – যেহেতু সাপ নিয়েই আলোচনা তাই সাপের একটি গল্প সবাইকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার চাচাত বোনের বিয়ে দেয়া হয় চিটাগং এর সমুদ্রের পাড়ে একটি পরিবারে। কোন এক অজানা কারনে তার শশুর পক্ষরা তাদের বাড়ির সবার কাছ হতে বিচ্ছিন্ন এবং অনেক ধনী হওয়া সত্তেও শহরে এসে বাস করতে অনিচ্ছুক। তাদের বর্তমান বাড়ি বিশাল এক ধান ক্ষেতের মাঝখানে। আক্ষরিক অর্থেই একাকী একটি বাড়ি চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত। ধানক্ষেতের একপাশে বাড়ি দেখেছি, বাড়ির পেছনে ধানক্ষেত দেখেছি কিন্তু এ বাড়ির বর্ণনা শুনে খুব ঈর্ষা হচ্ছিল। স্বপ্নিল একটি বাড়ির মতন মনে হচ্ছিলো। কিন্তু পরের ঘটনা শুনে ধানপক্ষেতের কেন্দ্রবিন্দুতে বাড়ি তো দূরে থাক, তার আশেপাশে হাঁটার ইচ্ছেও উড়ে গেছে।
আমার বোনটি রান্নাঘরে খুব ভোরে সকালের খাবার তৈরী করছিল। হঠাৎ টের পায় তার কামিজ ধরে কে যেন টানছে। সে ভাবল মুরগির ছানা, খাবার চাইছে। বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে মুরগির ছানা সরাতে গিয়ে টের পায় ঠান্ডা কিছু। ঘুরে তাকিয়ে দেখে বিশাল এক ফনা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিশালদেহী এক সাপ। ও ঘুরে দাড়ানোর সাথে সাথেই সাপটি ওর পায়ের গোড়ালীর একটু ওপর ছোবল দেয়। সাথে ছিল ওর ছ’ বছরের ভাতিজা। ছোবল খেয়েও আপুর কিছুক্ষন সব রকমের হুঁশ ছিল। চীৎকার করে শাশুড়ীকে ডাকা, তার সাথে করে ভাতিজাকে নিয়ে এক লাফে রান্নাঘর হতে বেরিয়ে যাওয়া, আমার ভাইয়া এবং তার ভাইকে ফোনে কল দিয়ে তাকে মেডিকেল নিয়ে যেতে বলা সব ও করেছে।
ওর শাশুড়ী পুরনো দিনের অনেক মানুষের মতন মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রথমে ব্লেড দিয়ে ছোবলের যায়গা কেটে দেন, তারপর জন্মের মতন এমন শক্ত বাঁধন যে মেডিকেল নেবার পর ডাক্তার দের অনেক কষ্ট হয় বাঁধন খুলতে। তারপর শরীর নীল হতে শুরু করে এবং শুরু হয় শ্বাস্ককস্ট। পরে জানা যায় যে সাপ ওকে কামড়েছিল সেটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বিষাক্ত সাপ এবং সাপের বিশ ওর ফুসফুস অব্দি চলে যায়। বাঁচার সব রকমের আশা সবাই ছেড়ে দেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ঠিক ওই কদিন আগেই এ্যামেরিকা হতে কিছু ডাক্তার আমাদের দেশে যান সাপ এবং সাপের বিশ নিয়ে গবেষনা করতে। তাদের জন্য এই রোগী ছিল সোনায় সোহাগা। দেশের ডাক্তার জবাব দিয়েছিলো এই রোগীর পা কেটে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের অনেকের ধারনা এ্যামেরিকার ডাক্তার আর আমাদের দেশের সব চাইতে ভাল ডাক্তাররা সহ যে বোর্ড মিটিং করেছেন তার ফলাফল হচ্ছে আমার আপুটির এখনো একটি নয়, দুটি পা।
খুব বেশি বলে ফেলছি, তাই সংক্ষেপ করার চেস্টা করছি। পা অবশেষে কাটা হয়নি। অনেক অনেক ধকলের পর, পায়ের ওই জায়গা হতে অনেকটুকু মাংস কেটে ফেলে, গ্রাফটিং করে পর ও সুস্থ হয়। এসব গল্প ফোনে শোনা। এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে দেশে গিয়ে পুরো গল্প শোনা হয় ওর কাছ হতে।
সাপটি ছিল সম্পুর্ণ সোনালী রঙের। খুবই শুন্দর দেখতে। ভীষণ মোটা শরীর, ভীষণ লম্বা। তাকে ছোবল দিয়েই সাপটি শরীরকে উলটে দেয়। মানে চীৎ হয়ে যায়। পরে ফুপাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি সব সাপের দাঁত নাকি কেমন যেন ভেতরে উলটানো থাকে। ছোবল দেবার জন্য তাকে দাঁত বের করতে হয়। ছোবল দিয়ে পর সে চীৎ হয়ে আবার দাঁত কে ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়। যে সাপ কড়া কামড় দেয়, তার পর তাকে উলটে যেতে নাকি হবেই। এ তথ্য আমার অজানা ছিল। (এত চীৎ হয়ে কাৎ হয়ে আদৌ ছোবল দেবার কি দরকার বুঝিনা)।
ওর শাশুড়ী পায়ে কাটা ও বাঁধ দেয়া, আর মেডিকেল যাবার মুহুর্ত গুলোর মাঝে আরেকটি কান্ড ঘটে। আপুর দেবর গিয়ে একজন ওঝা কে ডেকে নিয়ে আসে। মোটামুটি বৃদ্ধ একজন ওঝা। তখনো আপুর জ্ঞান ছিলো। ওর ভাষ্যমতে – সেই ওঝাটি ওর কপালের ওপর হতে একটি চুল ছিঁড়ে নিয়ে ওর সারা শরীর বারবার চুলটি দিয়ে ঝারেন। আরো অনেক কিছুও করছিলেন তখন আপু চীৎকার করে বলেন যে, এইসব ওঝা ফোঝা অর দরকার নেই। ওর দরকার ডাক্তারি ট্রিটমেন্ট।
ঠিক তার তিনদিন পর ওঝা টি মারা যান। মৃত্যুর কারন কেউ বলতে পারেনা। পরিবারের কেউ না, পাড়ার কেউ না। গল্পটি যখন আপুর মুখে শুনছিলাম, ওঝার মৃত্যুর কথায় এসে আপুর কন্ঠে ছিল একধরনের ভীষন অপরাধবোধ আর ভয়। উনি নাকি মৃত্যুর আগ অব্দি খুব জংগলে ঘুরেছিলেন, সাপটির খোঁজে। বিজ্ঞান এত এগিয়েছে, এর পরও আমাদের জীবনের কিছু কিছু সত্য আজীবন অন্ধকারেই থেকে যাবে। যেমন থেকে যাবে মানুষের প্রতি মানুষের মমতাবোধের কারন ও উৎপত্তি আজীবন রহস্যে।
উল্লেখ্য- পুরো ঘটনাটি ঘটে ২০০৮ অথবা ২০০৯ সালে।
অজগরের কান্ড দেখুন 🙂
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-08-30/news/182363
প্রতুল মূখোপাধ্যায়ের সাপ নিয়ে একটা গান দিতে চেয়েছিলাম। গানটা আই পডে আছে, কিন্তু এখানে তুলে দে’য়ার কলা-কৌশল জানা নেই, ভাবতে ভাবতে ভানুর কৌতুকের আসামী ঝুলে গেল ফাঁসির মঞ্চে।
চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। তবে এই সাপ-দানবেরা যেন আমাদের অ্যানিমেশনের জগতেই থাকে! কোন দরকার নেই মিলিয়ন বছর আগের সেই তাপমাত্রা ফিরিয়ে আনার! শোনা যায়, সব মিথকেই বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। সাপকে নিয়ে উপমহাদেশে প্রচলিত মিথের এমন কোন ব্যাখ্যা রয়েছে? লেখক যদি এই বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করেন, তাহলো কৃতজ্ঞ থাকব।
@ রাজেশ:
কৌতূহলোদ্দীপক রচনা।
‘“টাইটানিক” এর মত বিশাল’ বলতে কি বোঝালেন তা স্পষ্ট নয়।
এখানে শব্দটি এসেছে Titan-এর বিশেষণ হিসেবে [titan-ic বা দানবীয় অর্থে],
কাজেই যদি বলা হতো ‘টাইটানের মতো বিশাল’ বা ‘টাইটানীয়’ তাহলে বোধহয় আরো পরিষ্কার হতো।
@নূপুরকান্তি,
বাক্যটির অসঙ্গতি ধরিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ঠিক করে দিয়েছি। ভালো থাকুন।
লেখাটি ভাল লাগল।
btw, সাপের পা দেখেছেন কখনো? না দেখলে এখানে দেখুন
[img]http://i.telegraph.co.uk/multimedia/archive/01480/snake_1480967c.jpg[/img]
@অভীক,
অ্যাঁ? :-O
@অভীক,
হা হা হা সাপের পা দেখিয়ে ছাড়লেন- 😀
সম্ভবতঃ এটা প্রবাদ বাক্য নয়। আমার যতদুর মনে পড়ে,আমার সৃতিতে যদি ভুল না হয়ে থাকে,তবে কোন একটিTV অনুষ্ঠানে প্রামাণ্য চিত্র দেখাবার সময় আমি দুমুখ সাপ দেখেছি।
বিষয়টি একটু অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।
সাপের প্রবন্ধ টি তো বেশ ভালই লাগল।
ধন্যবাদান্তে,
আঃ হাকিম চাকলাদার
নিউ ইয়র্ক
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
লোকে কথার ছলে বলে- “ওই ব্যাটা একটা দু’মুখো সাপ”।
আপনার দেখা ঠিকি আছে অনেক দু’মুখো সাপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে-
[img]http://3.bp.blogspot.com/_awaeWdWdJZw/TQ4TC9lLo-I/AAAAAAAAAL8/s7T2K7IYOUY/s1600/Two-headed%2Brat%2Bsnake.jpg[/img]
ধন্যবাদ।
@রাজেশ তালুকদার,
সাপের বিষয়ে আমার ঘেন্না আছে। দেখলে গা শিরশির করে উঠে আমার। তারপরেও দুমুখো সাপের ছবিটা দেখে মজা লাগলো। দুমুখো সাপ তাহলে আর কথার কথা নয়, সত্যি সত্যিই আছে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
যদিও সাপের ছোবল থেকে একবার বেঁচে গেছি দৈবক্রমে তার পরেও সাপকে ভয় লাগে না বরং রং বেরং এর সাপ দেখতে ভালই লাগে।
@রাজেশ তালুকদার, আমার অজ্ঞতাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু দুমুখো সাপ আমাদের দেশে অনেক আছে/ছিল না? জন্ম নানার বাড়ি নোয়াখালী। জন্মের পর ছ’বছর অব্দি ওখানেই থাকা হয়। আমাদের বিশাল এক ধানের গোলা ছিল। ওই গোলা হতে প্রায়শই দুমুখো সাপ বের হত। ভরা দুপুরে, তবে বেশিরভাগ সময়ই রাতে। তবে আপনার দেয়া ছবির দুমুখো নয়। আমাদের দেখা দুমুখো সাপ গুলো ছিল কুচকুচে কালো, অনেক লম্বা, দুমুখ ঠিকই কিন্তু একটি সামনে আরেকটি লেজের জায়গায়। মানে শরীরের দুদিকে দুটো মুখ। কি ভয়ংকর! ছোট একটি বাচ্চা মনে সেই সাপ লিকলিকিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে আর একদল মামারা ভাইয়ারা তাকে কিছুক্ষন বাঁচতে দিয়ে লাঠি দিয়ে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলছে দেখে কি প্রভাব পড়তে পারে? যতটা মায়া হত সাপটার পরিবারের কথা ভেবে, ততটাই ভয় হত নিজেদের জীবনের কথা ভেবে। রাতের বেলা তো এই সাপের বাবা, মা বা জীবন সাথী আসবে প্রতিশোধ নিতে! সারাদিন সারারার ভয়ে কাটতো! খাট বেয়ে উঠে এসে আমাদের সবাইকে শেষ করবে। তাও আবার দুটো মুখ। এক মুখ দিয়ে আমাকে কামড় দিলে আরেক মুখ দিয়ে ছোবল দেবে আমার পাশে যে শোবে তাকে। আমার সমবয়শী ছাড়া বড় কারো কি ভয় লাগছেনা? আজ রাতে কেউ কারো ঘরে ফিরে না গেলেই হয়। আর কারো কি ভয় নেই? হায়রে ভয়ে কান্না পেত। কাঁদা নিষেধ, নইলে আপারা, মামারা সবাই পরে ক্ষেপাবে।
আচ্ছা স্মৃতিচারণ অনেক হল। প্রশ্ন দুটি। এক – আপনাদের মাঝে আর কেউই কি কখনোই দুমুখো সাপ দেখেননি? দুই -চলচ্চিত্রে যা দেখি, বইতে যা পড়ি, একটি সাপকে মারলে প্রতিশোধের ব্যাপারটা – এর কি কোন ব্যাখ্যা (বানান ঠিক হয়েছে?) কোথাও ছিলো বা আছে? নাকি এটাও শুধুই একটা মিথ? বলতে গেলে বলা যায় অমুক গ্রামে শুনেছি এক লোক সাপকে মেরেছিল তার কিছুদিন পর তাকে মৃত পাওয়া যায় সাপের ছোবলে। এমন গল্প আমরা অনেক শুনেছি। কিন্তু চাক্ষুশ প্রমান পাইনি। আবার আমার প্রশ্নের মাঝেই উত্তর আছে যে আমার নানা বাড়ির যারা এত এত সাপ কে মেরেছে কই তাদের প্রতিশোধ নিতে আজ অব্দি মৃত সাপের কোন পরিবার সদস্য আসেননি। হয় ওনাদের সবার ভাগ্যের জোর নয়তো ওই সাপগুলো অনাথ। আচ্ছা ঠাট্টা নয়, হয়তো এ নিয়ে কেউ কিছু জেনে থাকবেন। অনুগ্রহ করে জানালে বাধিত থাকিব। 🙂
ধন্যবাদ।
সাপ নিয়ে লেখা পোষ্টটা ভালো লাগলো।
Titanoboa নিয়ে একটি ছোট তথ্য চিত্রের ইউটিউব লিংকঃ
http://www.youtube.com/watch?v=gyVKmQgoP7A
@জাহিদ রাসেল,
আপনাকে ধন্যবাদ লিংকটি সংযুক্ত করার জন্য। সেই সাথে রইল ঈদের শুভেচ্ছা।
লেখাটা খুবই ভাল লাগল। সাপ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ। (F)
@রাজীব রায়,
আপনাকে সাপ বিষয়ে কিছু জানাতে পেরে আমারো ভাল লাগছে।
ওটা আদম নয়, ঈভ। ঈভকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিষিদ্ধ জ্ঞান বৃক্ষের ফল সরবরাহ করে এই সারপেন্টে বা সাপ। আর ঈভ খাওয়ায় আদমকে।
Genesis 3:4 But the serpent said to the woman: “You certainly will not die! 3:5 No, God knows well that the moment you eat of it your eyes will be like gods who know what is good and what is bad”
@কাজী রহমান,
দুঃখিত তথ্যটা জেনেও খামখেয়ালিতে ভুল করলাম। ঠিক করে দিচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ। :guru:
@রাজেশ তালুকদার,
অসুবিধা নাইরে ভাই, এইটা তেমন কোন ব্যাপার না।
ব্যাপারটা হোল ওই আয়াতে দেখুন সব দোষ কিন্তু ঈভের, মানে স্ত্রীলোকটির। মানে ঘুরেফিরে সব খানে ওই একই কথা, নারীই সব ভ্যাজালের মূলে। আহা, বাইবেলও কি মহান। :))
@কাজী রহমান,
একথা কি জানা গিয়েছে যে ওই সাপটি স্ত্রী ছিল না পুরুষ ছিল? :-s
@অভীক,
আমার জানা মতে স্ত্রী না পুরুষ তা জানা যায়নি। সাপ হুজুরের সাথে লটর পটর তো ঈভেরই ছিল, মানে স্ত্রী/নারীটিরই ছিলো। ওকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। পুরুষের চোখ দিয়ে দেখলে (পুরুষ গড জগতে যা হবার কথা), নারী ছলনাময়ী; সাপটা যেহেতূ ছলনা করেছে তাই সে নারী। আফটার দোষ তো নারীতেই চাপাতে হবে, তাই না? আর যদি পুরুষই হোত, তা হলে আদম ঈর্ষার ব্যাপার ঘটত, ঈভ কে দখলের ঘটনা ঘটত, আদমের সাথে মারামারি হত, ইত্যাদি। তা কিন্তু ঘটেনি। সুতরাং, ওই যে, যাহা বাহান্ন তাহাই তেপ্পান। সব দোষ নারীর।
যাকগে, এইসব মাথা চুলকানি বাদ দিয়ে সাপের পা খোঁজা যাক, কি বলেন?
@কাজী রহমান,
সাপের পা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আমার নিচের কমেন্টে দেখুন। তবে এটা পা না হাত সেটা আমি নিশ্চিত নই।
@কাজী রহমান,
পরশুরাম (রাজশেখর বসুর) একটি গপ্পে পড়েছিলাম, ক্রিশ্চান গড ব্রহ্মাকে বলছে ওই সাপ নাকি আসলে ছিল বাসুকি!
সমুদ্র মন্থনে বেচারার গায়ের ব্যাথা সারাতে ইডেন উদ্যান গিয়ে এই “কুকীর্তি”-টি করে আসে।
:lotpot: :hahahee:
@অনামী, আহারে ভগবানের প্রিয়পাত্রকে, এইভাবে অপমান করলেন গড, তবে ভগবান নিরব কেন? 🙁 ( বাসুকির কোলেই বিষ্ণু শুয়ে থাকেন না?) মারামারি বাধলে দেখা যেত কে জেতে। সেই সাথে আল্লাহপাকও যোগ দিতে পারেন।তবেই বোঝা যেত কে বড় 😀
একসময় সাপ মোটেও ভাল লাগতো না, এখন ইউটিউবে খুজে খুজে সাপ নিয়ে ভিডিও দেখি।
ভাল লাগলো (Y)
@টেকি সাফি,
আমার প্রাইমারী স্কুলটি ছিল চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং এর কাছেই। প্রতিদিন টিফিন ছুটি হলেই দৌড়ে চলে যেতাম কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে উদ্দেশ্য সাপের খেলা দেখা। বিচিত্র বাহারি রং এর সাপ গুলো দেখে আমি খুব মজা পেতাম সেই সাথে বোনাস হিসাবে থাকত সাপুড়েদের উপস্থাপন ক্যারিশমা।
আমার জীবনের এক বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি-
একবার আমি মুখোমুখি হই সাপের বিষাক্ত ছোবলের। এক বর্ষায় বেড়াতে যাই ছোট খালার বাড়ি। খালা তখন গ্রামে থাকতেন। বিকেলে খালার বাড়ির অদূরে ঘুরতে যাই এক দাদুর বাড়ি। সবে সন্ধ্যা নেমেছে, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল তাই দ্রুত পা চালিয়ে ফিরে আসছিলাম খালার বাড়িতে। হাঁটছি তো হাঁটছি বৃষ্টির ভয়ে কোন দিকে তাকানোর সুযোগ নেই তখনি ঘটে বিপত্তি। খট করে শোনা শব্দে আমি থমকে দাড়াই। নীচে তাকিয়ে আমার শরীর তো হিম, হার্ট বিট বেড়ে গিয়ে এমন ধুক ধুকানি শব্দ হচ্ছে মনে হচ্ছে আমার বুকে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। ভয়ার্ত চোখে দেখি এক সাপ দাঁত বের করে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সে রাস্তা পার হচ্ছিল আড়াআড়ি আর আমার এক পা গিয়ে পড়ল সোজা সাপটির লেজে আর যাই কই? সাপটি ঘুরে সোজা ফোস করে ছোবল চালিয়ে দিয়েছিল আমার কোমল পায়ে। তাতেই শব্দটির উৎপত্তি হল বুঝতে পারলাম তাৎক্ষনিক। দুরু দুরু বুকে লক্ষ্য করি সে যাত্রায় আমাকে কোন মতে অক্ষত রেখে বাঁচিয়ে দিয়েছে আমার পায়ে বর্ম হয়ে সেঁটে থাকা চামড়ার পুরু স্যান্ডেল। তার ছোবলটি সরাসরি আঘাত হানে আমার স্যান্ডেলে আর আমি বেঁচে যাই অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ঝুকির বিপদ থেকে। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা আমি চাইলেও হয়তো কখনো ভুলতে পারব না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগলো। জায়ান্ট সাপ,ম্যমথ,ডাইনোসর এখনো বেচে থাকলে মন্দ হতোনা :-[ ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
গভীর পানিতে বিচরণ করা তিমি পর্যন্ত নিস্তার পায় না শিকারীদের হাত থেকে সেখানে ম্যমথ, ডাইনোসরেরা নিশ্চিত প্রাণ হারাতো লোভী ও শখের শিকারীদের হাতে। প্রকৃতির হাত থেকে কোন মতে বাঁচতে পারলেও সম্ভবত মানুষের হাতেই তাদের মৃত্যু হত। :-s
বহু দিন পরে সাপ নিয়ে একটা মজার ঐতিহাসিক লেখা পড়লাম খুব ভাল লাগল। লেখক কে ধন্যবাদ।
@আরুপ,
আপনার ভাল লেগেছে দেখে খুশি হলাম। ঈদের শুভেচ্ছা রইল। (G)