নাজিম হিকমত বলেছিলেন, “বিংশ শতাব্দীতে শোকের আয়ু এক মাস”, কিংবা হয়তো কাম্যুর আউটসাইডারের নায়কের মতো অনেকেই ভুলেই যাই আমরা কখন মারা গেছে আমাদের মা। বাস্তবতা খুব যন্ত্রণাদায়ক আর কর্কশ বলে সন্তানশোক ভুলেও আমাদের যন্ত্রবৎ নেমে পড়তে হয় আবারো জীবনসংগ্রামে।
কিন্তু, এর মধ্যেও কিছু মৃত্যু পর্বতের চাইতেও ভারি হয়ে নেমে আসে আমাদের মনে, পথে। গত ১৩ অগস্ট, ২০১১ দিনটা এমনি এক বুকে পাথরচাপানো অমাবস্যার রূপ নেয়, যখন গতিদানবের এক ঝটকায় মুহূর্তে লাশ হয়ে মাটিতে পড়ে থাকেন এই বাংলার এমুহূর্তের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকর তারেক মাসুদ, এসময়ের সেরা একজন দৃশ্যমান গণমাধ্যমকর্মী আশফাক চৌধুরী মিশুক, তাঁদের চালক এবং দুজন প্রডাকশন কর্মী। এখন সবাই জেনে গেছেন অনেক কিছুই, তাই নতুন করে কিছুই জানানোর নেই, শুধু ব্যক্তিগত কিছু অর্থহীন এবং মূল্যহীন কথা বলার জন্যেই এই অন্তঃসারশূন্য কথকতা। তবে, তার আগে বলি, এটা দুর্ঘটনা নয়, নৃশংস এক হত্যাকাণ্ড। এবং, আমরাই এর দায়ভার বহন করি পরোক্ষে।

তারেক মাসুদের সাথে আমার সরাসরি আলাপ হয় নি কখনোই, যদিও সুযোগ পেয়েছিলাম একবার। গত ডিসেম্বরে এসেছিলেন তিনি আমাদের শহরে, খুব প্রিয় ছিলো তাঁর এই শহর। তিনি তাঁর একাধিক ছবির প্রথম প্রদর্শনী করেছেন এই শহরেই। এখানেই যে থাকেন তাঁর প্রিয়তম বন্ধু শিল্পী এবং চবির চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ঢালী আল মামুন, যিনিও সস্ত্রীক ছিলেন সেই পরিবহনটিতে এবং এখনো পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নন, এবং বিশদ বাংলার পরিচালক আলম খোরশেদ। তাঁর সাম্প্রতিকতম ছবি ‘রানওয়ে’-র (২০১০) প্রথম বাণিজ্যিক প্রদর্শনী হয় আমার শহরেই আমাদেরই চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সহযোগিতায়। ব্যক্তিগত নানা সমস্যায় জর্জরিত আমি হারিয়েছি তাঁর সাথে মুখোমুখি আলাপের সুবর্ণ সুযোগটি। গতকাল সেই চলচ্চিত্র কেন্দ্রের শোকসভায় শুনছিলাম নানান জনের স্মৃতিচারিতা এবং ভাবছিলাম আবোলতাবোল অনেক কিছুই।

সবচাইতে মূল্যবান ছিলো আলম খোরশেদের ব্যক্তিগত স্মৃতিকথন। বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র এবং ভূতপূর্ব আমেরিকা-কানাডা প্রবাসী আলম খোরশেদ তারেক মাসুদের সাথে আত্মার বাঁধনে আবদ্ধ ছিলেন অনেক দিন ধরেই। এমনকি, মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জুলা কাজী, যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পথিকৃতদের অন্যতম কাজী হাবীবের কন্যা, ছিলেন আলম খোরশেদের ‘প্রিয়সখী’। কত দিন, কত রাত, কত প্রিয় মুহূর্ত তাঁরা একসাথে কাটিয়েছেন তার বিবরণ দিতে গিয়ে খোরশেদ ভাই অপারগ বিধায় আর্টসবিডিনিউজের জন্যে লেখা চটজলদি অগোছালো লেখাটিই তিনি পাঠ করলেন। হয়তো ভবিষ্যতে সেটি আলোর মুখ দেখবে।

তাঁর এবং অন্যদের কথা আর এই কয়দিনের নানা লেখা থেকে শুধু একটাই কথা বোঝা যাচ্ছিলো, কী গভীর আর নিবিড় ছিলো তাঁদের দেশপ্রেম। “রক্ত কথা বলে” নামের অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বটিতে আমার কখনোই শ্রদ্ধা ছিলো না, কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন কেউ অতিভক্তি দেখাতে তাঁদের দুজনকে বেছে নিতেই পারতেন। শহীদ মুনীর চৌধুরীর তিন পুত্রের অন্যতম আশফাক চৌধুরী মিশুক নানান সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বের সেরা কিছু গণমাধ্যমে কাজ করার এবং সেখানেই পেশাজীবী জীবন গড়ার। সবকিছু পেছনে ফেলে তিনি স্রেফ দেশে কিছু দেবেন বলে ছুটে এলেন এখানে। তেমনি তারেক মাসুদও। তাঁর পিতাও, যিনি প্রয়াত হয়েছেন মাত্র সপ্তাখানেক আগে, ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের বিখ্যাত মেধাবী ছাত্র। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণী পাওয়া মানুষটা যে-অবোধ্য কারণে ফরিদপুরের অজপাড়াগাঁয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জীবন বেছে নেন, বোধহয় সেই ‘রক্তের টানে’ই তারেক মাসুদও দুগ্ধমধুর দেশ আমেরিকা ছেড়ে ঠাঁই নেন বাংলা নামে দেশে। এপ্রসঙ্গে না বললেই নয় তাঁর সুযোগ্য স্ত্রী ক্যাথরিনের কথা যিনি বাংলার সংস্কৃতির সাথে, বাংলার ভূগোলের সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন ও আছেন দীর্ঘদিন থেকে। তাঁর পিতামহের পিতামহ হিরাম বিংহাম প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে উঠেছিলেন মাচ্চু পিচ্চুর চূড়ায়, এই নামটি সত্যজিৎ ব্যবহার করেছিলেন ‘আগন্তুক’ ছবিতে। সামগ্রিকভাবে পরিবার হিসেবেই তাঁরা যথেষ্ট পরিশীলিত, সংস্কৃতিবান এবং বনেদি। অর্থবিত্তে নন, সংস্কৃতি চর্চাতেই তাঁরা দীর্ঘকাল ধরেই ঋদ্ধ। অর্থনীতির মেধাবী ছাত্রী ক্যাথরিন যে কিসের টানে এই দেশের একটা এনজিওতে চাকরি করতে আসেন, কেনই বা এখানের শিল্পজগতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যান আর কেনই বা তাঁর শেকড় ছড়িয়ে দেন এখানে, গাঁটছড়া বাঁধেন তরুণ নির্ধন স্বাপ্নিক ইতিহাসের ছাত্র এক চলচ্চিত্রকারের সাথে, সে-রহস্য হয়তো আমাদের তথাকথিত ‘বাস্তববাদী’ মন কখনোই উদ্ঘাটন করতে পারবে না। শিল্পকে ভালোবাসার আর ভালোবাসায় শিল্পমগ্ন হওয়ার আন্তঃসম্পৃক্তি কখনোই আমাদের গড়পড়তা দৃষ্টির সীমানায় বোধগম্য হবে না। যেমন হবে না মাসুদ দম্পতির সেই পারিবারিক জীবনে ভূমিকা বদলের কাহিনি। লিয়ার লেভিনের সাথে কাকতালীয় পরিচিতির পর সেই দম্পতির একমাত্র ধ্যানজ্ঞানআরাধ্য হয়ে দাঁড়ায় সেই হাজার হাজার ফুটেজের ফিল্মগুলো জনসমক্ষে তুলে আনার। ক্যাথরিন কাজ নেন সিটিব্যাংক এন. এ.-তে। মাসুদ যথারীতি ঘরের হাল সামলান, পাশাপাশি তাঁর বাড়িওয়ালার ঘরে রং আর মেরামতির কাজ করে একটা সম্পাদনার যন্ত্র ভাড়ার টাকা যোগাড় করেন। অতন্দ্র রাত আর শ্রমময় দিন পেছনে ফেলে অক্লান্ত ছুটে-চলার ফলাফল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য, অবিশ্বাস্য রূপায়ণ ‘মুক্তির গান’।

আমার আজও মনে পড়ে সেই দিনের কথা যখন আমি পর্দায় সেই আবেগথরথর ছবিটা দেখছি আর আমার সর্বাঙ্গে দেখা দিচ্ছে কাঁপন আর বুকের ভেতর ঢেউ তুলছে প্রবল পরাক্রান্ত মুক্তিযুদ্ধ। আমি বুঝতে পারছি কাকে বলে মুক্তিযুদ্ধ, কিসের নাম একাত্তর। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, মুক্তিযুদ্ধের এতো অসাধারণ চিত্রায়ণ এতোদিন আমাদের চোখের আড়ালে ছিলো। সে এক অদ্ভুত অন্ধকার সময় ছিলো এই জনপদে। আমাদের প্রজন্মের অনেকেই জানতো না মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস। গণমাধ্যমগুলোতে কিছুটা এলেও একমাত্র সরকারি দৃশ্যমাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর পরিচয় ছিলো ‘হানাদার বাহিনী’, রাজাকার-আলবদর নামে ঘৃণ্য যে দালালেরা ছিলো আমাদের দেশে, তারা তখন তৎপর রাজনৈতিকভাবে। কেউ তাদের প্রবলভাবে অস্বীকারের সাহস দেখায় না এক অরাজনৈতিক ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ বাদে। তারাও মাঠে-ময়দানে সশস্ত্র সহিংস প্রতিরোধের মুখোমুখি হয় যুবকমান্ড নামে ভৌতিক একদল দ্বিপদ জানোয়ারের হাতে। একজন আধাআধি সেক্টর কমান্ডার তখন কালো সানগ্লাস পড়ে দেশের মরণোত্তর মেসাইয়া হয়ে বসেছেন, সম্ভবত তাঁর ছবি বুকে রেখেই তাবিজ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, সম্ভবত তিনিই সাত মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে, সম্ভবত তিনিই ছয়দফা নামের এক জোরালো দাবি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের মুখের দিকে। শেখ মুজিব নামের কোন হারামির বাচ্চা দেশকে অতল গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো তার খবর কে রাখে? ওই হার্মাদের হাত থেকে দেশ বাঁচানো যে গেছে সেটাই তো বিশাল আনন্দের কথা, রীতিমত জন্মদিনের আনন্দ! পাঠ্যবই তো বটেই, এমনকি গণমাধ্যমেও মুজিব নেই, কোথাও নেই। মুক্তিযুদ্ধ যেন হাওয়া থেকে পাওয়া!

সেই মুমূর্ষু সময়ে ‘মুক্তির গান’ যে ঠিক কী এনে দিয়েছিলো আমাদের তরুণ হৃদয়ে, একাত্তুরের চেতনার আগুনে মশাল কতটা গনগনে করে জ্বালিয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধের অভিঘাত আমাদের বুকে কতটা বিরাট করে দামামা বাজিয়েছিলো, তার হিসেব তো ইতিহাস লিখে রাখে না। শুধু তারেক মাসুদ আমাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধার এক আধুনিক অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠেন। শুধু এই কুৎসিত অন্ধকার থেকে উত্তরণের এক অতুল সূর্যসঙ্গী হিসেবে তিনি চিরশ্রদ্ধেয় হয়ে থাকেন। শুধু অমরত্বের তালিকায় ওপরদিকের একটা নাম হিসেবে নীরবে ছাপটা থেকে যায়।

এরপর তাঁর নানা কাজ দেখেছি এবং নিঃসংকোচে তাঁকে মেনে নিয়েছি এসময়ের সেরা চলচ্চিত্রকার হিসেবে। তাঁর সমকালীন অন্যেরা যখন জাতীয় পর্যায়টাই উন্নত করতে লড়ছেন, তখন তিনি এক ঝটকাতেই নিজেকে নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এবং তাঁর নিশ্চুপ কমরেড হিসেবে মিশুক মুনীর বারবার অনন্যসাধারণ সঙ্গত করেছেন, তাঁকে উপহার দিয়েছেন নিখুঁত এক মানিকজোড়ের আশ্বাস, আমৃত্যু, আইরনিকভাবেই।

মানুষ হিসেবে দুজনই ছিলেন মুক্তমনা।

সর্বার্থেই।

তারেক মাসুদের দেড় বছর বয়েসি সন্তানের নাম ছিলো বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিষাদ। স্ত্রীর বংশীয় পদবি সন্তানকে উপহার দেওয়ার মানসিকতা কজন তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ দেখাতে পেরেছেন? তারেক ছিলেন নিষিদ্ধঘোষিত রাজনৈতিক দলের একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি তাঁর অন্য অনেক সঙ্গীর সাথে বাস করতেন ‘কমিউনে’। ভাগ করে নিতে শিখেছিলেন সবকিছুই অন্যদের সঙ্গে। ‘ডিক্লাসড’ বা ‘শ্রেণীচ্যুত’ হওয়ার সাধনায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি মানুষকেই সর্বাগ্রে ঠাঁই দিয়েছিলেন তাঁর জীবনে ও কর্মে। এবং, সে-মানুষ বাংলার। অথচ, এই মানুষটির মৃত্যুর পরই ফেসবুকে একজন মার্ক্স-লেনিন-স্ট্যালিনপ্রেমী কমিউনিস্ট-চেতনার মানুষ মন্তব্য করেন যে, এসব সেলিব্রেটির মৃত্যু তাঁর মনে কোন দাগ কাটে না। তিনি বরং অনেক চিন্তিত শত শত শ্রমিকের সড়ক দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যুতে। আসলেই, মানবতা কখনোই কোন দর্শনের ফ্রেমে আঁটে না-রাজনৈতিক বা ধর্মীয়। আমরা আশা করবো তিনি আত্মীয় বা তাঁর পছন্দের মানুষদের অকালদুর্ঘটনার দুঃখও ভুলে যাবেন হাজারো এমনি মৃতদের কথা ভেবে।

তাঁর আশির দশকের প্রথম ছবি ‘আদম সুরত’ যে-চলচ্চিত্রকার নিয়ে নির্মিত, সেই এস এম সুলতানও তো মাটির টানেই বিদেশের সম্মান ও সম্ভাবনা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসেন নড়াইলের প্রত্যন্ত গ্রামে। তাঁর কথা বলতে গিয়ে তারেক মাসুদ তো আসলে বাংলার আবহমান শিল্পীর, শিল্পধারার কথাই বলেন। সেই সময় থেকেই তো মিশুক মুনীর তাঁর ছায়াসঙ্গী।

এই সেই মিশুক মুনীর যিনি কাজ করেছেন দেশ-বিদেশের নানা দৃশ্যশ্রাব্যমাধ্যমে, কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক মানের তথ্যচিত্রে, বাংলার দৃশ্যমাধ্যমগুলোকে দিয়েছেন উন্নততর মান। মনে থাকবে হয়তো অনেকের একুশে টিভির কথা, যা বাংলাদেশের সংবাদ পরিবেশনা, উপস্থাপন ও সংগ্রহে দেখিয়েছিলো অদ্বিতীয় মুনশিয়ানা। আজও সেই মানের কাছাকাছিও পৌঁছুতে পারে নি কেউ। এটাও মিশুক মুনীরেরই অবদান। পর্দার পেছনে থেকে দৃশ্যমান পর্দাটি কত রুচিসম্মত, আধুনিক এবং জনতার প্রিয়তম করে তোলা যায়, সেটা তিনি করে দেখিয়েছেন হাতে-কলমে। পরিচিত ছিলেন ‘বাংলার সাইমন ড্রিং’ নামে। অসম্ভব কাজপাগল, আত্মপ্রচারবিমুখ এই মানুষটির অন্তিম ইচ্ছে ছিলো নিজের দেহদান করে যাওয়ার। কানাডায় তিনি এই কাজটি করেছিলেন, কিন্তু দেশে এসে নানান ব্যস্ততায় এখানে তাঁর সেই ইচ্ছের দালিলিক প্রতিফলন তিনি ঘটাতে পারেন নি। তাঁর স্ত্রীর এখনো সেই আশা, কিন্তু আর সম্ভব হবে কি তাঁর মুক্তমনের বাস্তবায়ন ঘটানোর সুযোগ পারিপার্শ্বিকের ধর্মীয় ও সামাজিক চাপে?

এই মৃত্যুও আমরা ভুলে যাবো কিছুদিন তাঁদের স্মৃতিবিক্রির পরেই। আবারো অপেক্ষায় থাকবো কখন রাষ্ট্রবিধাতার আসনে বসা শ্রদ্ধেয় মাননীয় শুয়োরের বাচ্চারা এরকম আরো অকালমৃত্যুর পরে মধুর নসিহত করবেন। সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে মহতী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রায় চব্বিশ হাজার ঘাতককে মানুষখুনের লাইসেন্স দিয়ে স্টিয়ারিং হাতে দিয়ে রাস্তায় নামানোর কোনরকমের পরীক্ষা ছাড়াই। এক মহান শ্রমিক নেতা-কাম-মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় নামক বাঞ্চোতটির হুমকিতে পিছু হটেছেন খোদ যোগাযোগ মন্ত্রী। প্রলেতারিয়েতরাজ কায়েম হলো বলে! সেই মন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন এসব লাইসেন্স দেওয়া না হলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। বিরোধী দলের দরকারটাই বা কী? আমরা শালা পাবলিক নামের চুতিয়া মেরুদণ্ডহীন কৃমিরা মিলিটারির বুটের লাথি খাই ব্লাডি সিভিলিয়ান হিসেবে আর গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা দিনেরাতে আমাদের পাছা মেরে যায় জুতোর শুকতলার ময়লা হিসেবে। আর আমরা মহানন্দে দুবাহু তুলে নেত্য করতে করতে গণতন্ত্রের মহোৎসবে গিয়ে পাঁচ বছর পর পর ঠিকেদারি দিয়ে আসি কারা আমাদের পশ্চাদ্দেশ রক্তাক্ত করবে সেই ভারটি। ১৫ই অগস্ট একদল কাঁদোকাঁদো মুখের অভিনয় করবে, আরেকদল হাসতে হাসতে কেক কাটবে, ছবি তুলবে ঠেলাঠেলি করে। আর আমরা দুদলকেই পালা করে সালাম দিয়ে পাছা পেতে দেবো।

আবার সড়ক, নৌপথে দুর্ঘটনায় মারা যাবে হাজার হাজার, লাখো লাখো লোক, পৃথিবীতে আমরা রেকর্ড করবো, নাম তুলবো গিনিস বুকে, ধেইধেই করে নাচবো আন্তর্জাতিক খ্যাতির মহানন্দে, রাষ্ট্রের মদতে এভাবে খুন চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে, আমরা ধর্ষিত হতেই থাকবো, হতেই থাকবো…

উই ডিজার্ভ ইট, উই রিয়েলি, ট্রুলি, এবসোল্যুটলি ডিজার্ভ ইট।