গান শোনার ক্ষেত্রে আমি মোটামুটি একটা সর্বভুক প্রাণী। তবে, এই সর্বভুকতা কাজ করে শুধু বাংলা গানের ক্ষেত্রে। এর কারণটা অবশ্য সহজবোধ্য। পৃথিবীতে এই একটা ভাষাই মোটামুটি জানি আমি। কাজেই, আমার সব নির্ভরতা, সব আনন্দের উৎস যে এই এক ভাষাকেন্দ্রিক এতে কোনো বিস্ময় নেই। সেকারণেই বাংলা গানের ক্ষেত্রে বাছ-বিচারটাও করা হয় না তেমন করে। একমাত্র ব্যতিক্রম উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত। এই সঙ্গীতের বিষয়ে ছোটবেলা থেকেই উচ্চ ধরনের ভীতি আছে আমার। সেই উচ্চ ধরনের ভীতি এখনো উবে যায় নি আমার মন থেকে। বরং বহুলাংশে বর্ধিত হয়েছে তা বর্তমান কালে এসে। এর বাইরে যেখানে যা পাই, তার সবই শ্রবণেন্দ্রীয়ের সুক্ষ্ণ ছিদ্র দিয়ে মস্তিষ্কের নিউরনে পাচার করে দেই। তারপর সেটা হয়ে দাঁড়ায় মস্তিষ্কের দায়িত্ব। ওই গান দ্বিতীয়বার শুনবে কী শুনবে না সেটা তাঁর ব্যাপার। আমার হাতে অত সময় নেই বাছবিচার করার। কত কত অসংখ্য গান পড়ে রয়েছে শোনার জন্য। অথচ সময় বড় অল্প। সোনাঝরা রোদেলা দিনগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। নুয়ে পড়া সূর্যের নতজানু রোদ্দুর ত্রস্ত হরিণীর মত দ্রুতপায়ে পালাচ্ছে দিনশেষের অতল অন্ধকারের দিকে।
গান শোনার এই বাছবিচারহীনতা দেশ-কালের সীমানাও অতিক্রম করে গিয়েছে আমার। বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের গান বলে আমার কাছে আলাদা কিছু নেই। যেমন নেই এই দশকের গানের সাথে গত শতাব্দীর তিরিশ বা চল্লিশের দশকের গানের। অবশ্য সেটা থাকলে ক্ষতিটা হতো আমারই। কোলকাতা বাংলা গানকে যা দিয়েছে তার ধারে কাছে পৌঁছোনোর ক্ষমতা ঢাকার কখনোই ছিল না। এখনও নেই বললেই চলে। ভবিষ্যতের কথা অবশ্য জানি না। যদিও ঢাকাইয়া ফিল্মের গানও আমার অসম্ভব প্রিয়। তারপরেও আমি বলবো যে, যত বাংলা গান আমি শুনেছি তার বেশিরভাগই মূলত কোলকাতার। তবে, এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ব্যান্ডের গান। কোনো এক অজানা কারণে ভূমি, চন্দ্রবিন্দু বা ক্যাকটাসের মত দুই একটা ব্যান্ডের দুই চারটা গান বাদে অন্য ব্যান্ডগুলোর গান শোনাই হয় নি আমার।
অজানা কারণ বলাটা আসলে ঠিক হচ্ছে না। খুঁজে খুঁজে একটা কারণকে বের করেছি আমি। আমার কৈশোর এবং তারুণ্যের সময়ে ঢাকায় ব্যান্ড সঙ্গীতের জোয়ার এসেছিল। বাংলাদেশের ব্যান্ডগুলো নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় সব গান সৃষ্টি করে চলেছিল সেই সময়। সোলস, মাইলস, ফিডব্যাক, এলআরবি, নগরবাউলেই মগ্ন ছিলাম আমি তখন। এদের চৌকষ চাকচিক্য, মনোমুগ্ধকর মঞ্চপরিবেশনা, প্রবল প্রতিভা এবং সীমাহীন সৃষ্টিশীলতার কাছে কোলকাতার ব্যান্ডগুলোকে একেবারেই নিস্প্রভ মনে হতো আমার। সে কারণেই হয়তো খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় নি তাদের প্রতি আমার। অনাগ্রহের একটা অনাবশ্যক বাধা গড়ে উঠেছিল এদেরকে ঘিরে।
তবে, এই নিস্প্রভ পানসে ব্যান্ডগুলো মধ্যে একটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। লিলিপুটদের মধ্যে গালিভার যেমন আকাশছোঁয়া উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । ঠিক সেরকম আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে একেবারে তারাদের রাজ্যের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেটি। টগবগে ঘোড়া যেমন কোনো বাধা মানে না। যে কোনো বাধাকেই গ্রীবা বাকিয়ে কেশর দুলিয়ে টপকে যায় অনায়াস দক্ষতায়, মহীনের ঘোড়াগুলিও তেমনি আমার অনাগ্রহের বাধাকে টগবগিয়ে টপকে চলে এসেছিল বুকের একেবারে কাছাকাছি। ঠিক সেখানটায়, যেখানে লুকিয়ে রেখেছি আমি সুগভীর ভালবাসার এক স্বপ্নময় সুনীল সরোবর। ভালবাসার সেই সুনীল সরোবরে হাত পা ছুড়ে সাঁতার কেটেছে জীবনানন্দের কবিতা থেকে উঠে আসা মহীনের ঘোড়াগুলি, নিজ সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একদল অসম্ভব প্রতিভাবান গানপাগল তরুণের দল।
মন খারাপ আপনার। বিষন্নতায় ছেয়ে আছে কোনো বৃষ্টিমুখর বাদলা দিন। তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে, ক্রমশ তারচেয়েও দূরে সরে যাচ্ছে প্রিয়তম কোনো মানুষ। ভাবনার কিছু নেই। এক্ষুনি মন ভাল হয়ে যাবে আপনার। মহীনের ঘোড়াগুলি শুনুন।
মন খারাপ হওয়া একজন মানুষের মন ভালো করে দেবার বিস্ময়কর মায়াবী মন্ত্র নিয়ে মর্তধামে জন্মেছিল এরা।
httpv://www.youtube.com/watch?v=5oBY-XTFt4c&feature=related
কোলকাতার গানগুলোর লিরিক গুলো প্রান ছুঁয়ে যায়, মহিনের ঘোড়াগুলির লিরিক এর কথা তো বলাই লাগে না। আমাদের দেশের গানগুলোই প্রেমের একটা বিশাল জোয়ার এবং শুধু ‘আমি তুমি’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এজন্যে আমরা একটু পিছিয়ে ই আছি মনে হয়।
আহ! মহীনের ঘোড়াগুলি আমার শোনা সবচেয়ে পছন্দের ব্যান্ড ছিলো নব্বইয়ের দশকে। তবে গানের দলটি কিন্তু অনেক পুরোনো। আমরা যে গানগুলো এখন শুনি সেগুলো রিমিক্স করা। শুনেছি সত্তুরের দশকে তারা খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য গানের দলটি তৈরি করলেও এরা জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলো মধ্যবিত্ত সমাজেই বেশি, যাদের সাথে খেটে খাওয়া মানুষদের কোন সংস্রব নেই, যারা কেবল ড্রয়িংরুলে বসে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে চোখ বুজে জীবনমুখি গান শুনতে ভালবাসে । সেই দুঃখে নাকি তারা গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো। পরে বিশ বছর পর অসাধারণ গানগুলো আবার রিমিক্স হয়ে বেরোয়।
যা হোক, পুরো অ্যালবামের আমার প্রিয় গান নিঃসন্দেহে “ভালো লাগে”। এই গানটার তুলনা মেলা ভার –
ভালবাসি জ্যোৎস্নায় কাশবনে ছুটতে
ছায়াঘেরা মেঠোপথে ভালবাসি হাঁটতে
দূর পাহাড়ের গায়ে গোধূলির
আলো মেখে কাছে ডাকে ধানক্ষেত সবুজ দিগন্তে
তবুও কিছুই যেন ভাল যে লাগে না কেন
উদাসী পথের ধারে মন পরে থাকে যেন
কোথায় রয়েছে ভাবি লুকিয়ে বিষাদ তবুও …
httpv://www.youtube.com/watch?v=ulNBxWfKl3Y
ফরিদ ভাইয়ের লেখা দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায়।
আগে না শোনা অনেকগুলো চমৎকার গান শোনলাম।
(F)
একটু বাউল ধাঁচের গান আমার ভাল লাগে। দুটি গান-
বনমালী তুমি, পরজনমে হইও রাধা।
কুহু সূরে…………।
@সৈকত চৌধুরী,
এই মন্তব্যটা দেখে আমারও মন ভাল হয়ে গেলো। :))
ধন্যবাদ সৈকত, পড়ার এবং দুটো গানের লিংক দেবার জন্য।
হিন্দিভাষী কেই বাংলায় গান গাইলে একসেন্টের একটা সমস্যা থেকেই যায়। লতার কিছু গানে এই সমস্যাটা আমি খেয়াল করেছি। তবে, আশার গানে এই সমস্যাটা আমি দেখি নি। বাঙালির বধু হবার কারণে হয়তো তিনি এর থেকে মুক্ত ছিলেন। অলকার গাওয়া বাংলা গান খুব একটা শোনা হয় নি। কিন্তু কোলকাতার সাথে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে তাঁর ক্ষেত্রেও উচ্চারণ বিভ্রাট না থাকাটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয় আমার।
আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উপরে কথা বলা ঠিক হবে না। কাজেই কিছু বলছিও না। শুধু দুটো গান তুলে দিচ্ছি এখানে। শুনে দেখুন। আপনার পছন্দ-অপছন্দের বর্তমান অবস্থানটা পাল্টালেও পাল্টাতে পারে হয়তো। 🙂
httpv://www.youtube.com/watch?v=bBeKem1L4Ak
httpv://www.youtube.com/watch?v=Laeq6MgYVPk&feature=related
লতা,আশা,অলকা, ইত্যাদি যারা মূলত হিন্দি গান করেন তাদের কন্ঠে বাংলা গান আমার মোটেও ভাল লাগেনা।
ভূমি ব্যান্ডের গানও খুব হালকা মনে হয়।
আর বাকিদের বেলায় কোন কথা নেই।
(Y)
ফরিদ আহমেদের গান নিয়ে লেখা দেখলে মনটা খুশী হয়ে যায় এই ভেবে যে কিছু সুন্দর গান শোনার সৌভাগ্য হবে। আরও জানি এর পরে এই লেখায় আরও কিছু জানা অজানা ভালো গান শুনার সুযোগ হবে। যাই হউক সবাইকে ধন্যবাদ সুন্দর গানগুলো উপহার দেয়ার জন্য। (F)
@ব্রাইট স্মাইল্,
এরকম একটা সুন্দর মন্তব্যের পরে আপনার জন্য একটা গানের লিংক না দেওয়াটা হবে ভারি অন্যায়। 🙂
অনেক দিন পরে আবার গান নিয়ে লেখা। গান শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো। :rotfl:
ভালো কিছু গানের লিংক পেয়ে গেলাম 🙂
অনেকের মধ্যে একটি গানের উপহার । শিল্পী এবং মডেলিং যে মেয়েটি তার নাম ছিল প্রিয়াংকা চাকমা । হাস্যুজ্জ্বল চেহারার মাঝে যেমন ছিল কোমলতা তেমন ছিল সরলাপনা । অহংহীন ছিল বলে সঙ্গীদের সবাই তাকে ভালোবাসতো । কিন্তু নতুন পরিবার করতে গিয়ে একবুক আঘাত পেয়ে যাই । সেই অব্যর্থ ব্যথাকে বুকে নিয়ে যখন তার মা-বাবারা আমেরিকায় বেড়াতে চান, শিল্পী প্রিয়াংকা চাকমা আত্মহত্যা করে বসে । চাকমাদের গানের জগতে অন্য এক প্রতিভাশীল নারী নেতৃত্বকে হারালো । মধুর কন্ঠের অধিকারিনী প্রিয়াংকা চাকমা আজও অনেকে হৃদয়ে বেঁচে আছে শুধু তার অনবধ্য গানগুলোর জন্য ।
httpv://www.youtube.com/watch?v=HxmbZ3yx5yM&feature=related
গানটির বাংলা অনুবাদঃ
ভালোবাসার মাঝে সুখ আছে
যদি ও আমি পাবো না তোমাকে
তবুও তোমাকে আমি ভালোবেসে যাবো সারা জীবনভর
আমি তোমাকে যে ভালোবাসি হয়ত তুমি জানো না
জানি না কোনদিন বলতে পারবো কিনা !
যখন তুমি জানবে আমার কথা, তখন আমি হয়ত বেঁচে থাকবো না
তবু ও তোমার জন্য রেখো যাবো একবুক ভালোবাসা
@অমিত হিল,
গান শুনে আনন্দ পেলাম, কিন্তু প্রিয়াংকার পরিণতির কথা জেনে মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো।
ইউটিউবের কল্যানে চাকমা, মনিপুরী বা রাখাইন গানও শোনা হয় ইদানিং বেশ। ভাষার দুর্বোধ্যতায় কথাগুলো বুঝতে পারি না ঠিকমত, তবে মিষ্টি সুরগুলো ঠিকই হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
মহিনের ঘোড়াগুলি আমারও খুব প্রিয় একটা ব্যান্ড। রকসঙ্গীতে শোচনীয়তার সিংহাসন ছাড়বে না বলে কলকাতা বোধহয় পন করে ছিলো, এমনকি সহোদর পাইক্যা ভাইদের চেয়েও রকসঙ্গীতে তারা ঐতিহাসিকভাবে হয়েছে অপেক্ষাকৃত বেশী রিটার্ডেড! মহিনের ঘোড়াগুলি-ই বোধহয় একমাত্র ব্যতিক্রম, সুন্দর গান করে। বিশেষকরে ৯৫এ রিফর্ম করার পর গৌতম চট্টোপাধ্যায় আসলেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে মাস্টারি প্রদর্শন করেছে, ‘ভেবে দেখেছো কি’ এর ইন্টারলুডগুলোতে যেই গিটার সলোগুলো বাজিয়েছে সেগুলো আসলেই আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে বলে আমি মনে করি,। আর গানের লিরিকগুলাও সুন্দর; আবার লিরিক লেখার ক্ষেত্রে শোচনীয়তার সিংহাসন ছাড়বে না বলে পন করেছে বোধহয় বাংলাদেশ! কলকাতার গানের লিরিকগুলো সুন্দর হয়, বাংলাদেশের গানের লিরিকগুলো না কোথাও পৌছে, না থাকে তাদের কোন স্ট্রাকচার। অঞ্জন দত্তের লিরিকও আমার খুব প্রিয়; সিম্পল, ক্লিয়ার এবং ক্রিস্পি এবং সবচেয়ে গুরুতবপুর্ণভাবে, ইউনিক। অনেকদিন পরে শুনলাম মহিনের ঘোড়াগুলির গান, ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়, ধন্যবাদ। সুন্দর দুটো গানের লিঙ্ক ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে, আমি আরও দু-একটা দেই।
httpv://www.youtube.com/watch?v=YoQSN2zBgP0
httpv://www.youtube.com/watch?v=d9II9zidTNA
আরেকটা গান আছে এদের ‘সারা রাত’; এটা ইউটিউবে পেলাম না, বেসুরো গলায় করা, তাল-লয় এবং কন্সোনেন্সহীন, ডিসসিঙ্ক্রোনাস এক বৃদ্ধের গলায় করা কভার পাওয়া গেলো, বুড়ো খুব দৃষ্টিকটুভাবে সুন্দর গানটা হাইজ্যাক করে নিয়েছে। তথাপিও আপাতত সেটাই দিচ্ছি কেননা এস্থেটিক আবেদন না থাকলেও গানটির রম্যাবেদন রয়েছে যথেষ্টই বলে আমার কাছে মনে হয়েছে :)) !
httpv://www.youtube.com/watch?v=KyLyhMqqGUo
@আল্লাচালাইনা,
দুঃখ পেলাম। বয়স্ক ভদ্রলোকের এই আধুনিক গানের ব্যাপারে আগ্রহ, ইউ টিউবের সঙ্গে নিজেকে জড়ানো , বিষয় গুলো কিন্তু ফেলনা নয়। বৃদ্ধ হলেই যে শখ থাকতে নেই , আমোদ করতে নেই, তা তো নয়। দিক না মেলে শখের ডানা দিন ফুরোবার আগে, কারো তো ক্ষতি হচ্ছে না ।
আমি নিজেও বৃদ্ধ বলেই হয়তো কথা গুলো বলছি। ভাবছি আমার কোন শখ , ইচ্ছে দেখে না জানি কে কটাক্ষ করে হাসছে! আমরা সকল বৈষম্য এর বিরুদ্ধে ধব্জা ধরবো, বিজয় কেতন ওড়াবো সে কারনেই তো আল্লাচালাইনা মুক্ত-মনায় লিখছেন আর আমরা পড়ছি।
@কেয়া রোজারিও, আফরোজা আলম, ফরিদ আহমেদ-
হ্যা আপনারা ঠিকই বলেছেন, আসলেই এইভাবে বলাটা উচিত হয়নি, সরি। আসলে এত চিন্তাভাবনা করেও বলিনি, আরেকটু চিন্তাভাবনা করে বলা উচিত ছিলো। ফিসফিস করে একটা কথা শুধু বলে যাই- আমি নিজেও কিন্তু বুড়ো হবার দ্বারপ্রান্তেই রয়েছি, তাই আমার এই আপাত বুড়োবিদ্বেষী কথাটাকে একপ্রকারের ফ্রয়েডিয়ান ডিনায়াল হিসেবেই দেখতে পারেন! আবারও সরি। যদি স্যার ডেভিড এটেনবরার মতো জ্ঞান-প্রজ্ঞা আর তারুণ্যে টইটুম্বর বুড়ো হতে পারতাম তবে সেটাই হতাম।
@আল্লাচালাইনা,
ইস্নিপ্সে পেলাম। আসল গান নাকি নকল গান জানি না। আগে কখনও শোনা হয় নি এ গানটা আমার।
এমন করে বলেন কেন? বুড়ো বলে কি বেচারার সাধ-আহ্লাদ বলে কিছু নেই নাকি? 🙂
এই বুড়োর গানের প্রানান্তর প্রচেষ্টা দেখে একটা জিনিস মনে হলো আমার। খামোখাই আমি নিজের প্রতিভার প্রতি আস্থাহীনতার কারণে বাথরুমেও গলা ছেড়ে গান গাই না, পাছে কেউ বেসুরো কণ্ঠ শুনে ফেলে এই সংকোচে। এই বুড়োর মত বিপুল পরিমাণে না হলেও, কিছুটা আত্মবিশাস থাকাটা প্রয়োজন ছিল। 😛
আরিফুর রহমানের সাথে সুর মিলিয়ে একটা বিষয় বলে যাই। আপনার ক্রিস্পি এবং ইউনিক কমেন্টগুলো অসাধারণ লাগে আমার কাছে (সময়ে সময়ে অতি আক্রমণটুকু বাদ দিয়ে অবশ্যই)। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
(Y) মাঝে মাঝে মনে হয় সে যেন শুধু মন্তব্য করে নাই, বরং একটি কবিতা লেখেছে। এত শক্তিশালী মন্তব্য সত্যিই বিরল। তবে ব্রেকেটের মধ্যের অংশের সাথেও একমত। 🙂
@সৈকত চৌধুরী, কেয়ারফুল বাতাস দিয়ে ফুলাতে চাইলে ক্রিপ্টন বা যেনন দিবেন প্লিজ, হিলিয়াম দিয়েন না কিন্তু ভুলেও; সর্বোচ্চ বইয়ান্সি অর্জনপুর্বক মহাশুন্য আর বায়ুমন্ডলের ইন্টারফেইসে ভেসে যাবার কোন ইচ্ছা নেই এই মুহুর্তে!! (H)
@আল্লাচালাইনা,
বুড়ো বা এমন ধরণের মন্তব্যের আগে একটু ভেবে দেখা উচিত ছিলনা?
আমি এমনেইতেই আপনার লেখারও ভক্ত। তাইএমন উক্তি শুনে কেয়া রোজারিওর মতন আমারো লজ্জা এবং ক্ষোভ দুটোই হল।
তবে জনাব ফরিদের গানের ওপরে লেখা সত্যি প্রশংসারদাবীদার। (Y) (F)
@আফরোজা আলম,
যদিও যোগ্য নই, তারপরেও প্রশংসা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আল্লাচালাইনা হয়তো এটার ব্যাখ্যা ভাল দিতে পারবেন। তবে, আমার কাছে তাঁর মন্তব্যটা বর্ণবিদ্বেষী বা কাউকে বয়সের কারণে হেয় করার উদ্দেশ্যে লিখিত বলে মনে হয় নি। বরং অনেকটা রসিকতার ছলে করা বলেই মনে হয়েছে। যার কারণে এর পাল্টা হিসাবে আমিও ওই লোককে মজা করে বুড়ো বলে সম্বোধন করেছি। এটুকুকে নির্দোষ রসিকতা হিসাবে নিলেই খুশি হবো।
আপনার এবং ক্যাথেরীনার এটা নিয়ে লজ্জিত বা ক্ষুব্ধ না হওয়াটাই শ্রেয়। আপনারাতো একেকজন তন্বী তরুণী। :)) আসল বুড়ো হচ্ছি আমি (আল্লাচালাইনার কথা জানি না)। মুক্তমনায় যদি কখনো বুড়োদের তালিকা করা হয়, তবে নিশ্চিত থাকুন যে, আমার নামটা সেই তালিকার শুরুর দিকেই থাকবে। 😛
না, অন্য ব্লগ নয়, কিছু আইডিয়া, আর ফেসবুকে সময় যাচ্ছিলো।
মুক্তমনার পেছনে হিজু আর ছাগবান্ধব-বাম, দুই দলই কেন ক্ষিপ্ত এটা নিয়ে মনের মাঝে জিজ্ঞাসা তো ছিলোই..
@আরিফুর রহমান,
দূর পূর্ব যেমন আসলে পশ্চিমেরই কাছে, সেরকম অতি বামও আসলে ডানেরই কাছাকাছি। এই দূরত্বহীনতার কারণেই বাংলাদেশে জামাত আর ফরহাদ মাজহার গংদের এতো মাখামাখি। মুক্তমনার প্রতি এই দুইপক্ষের ক্ষিপ্ততাও সেজন্য ব্যতিক্রম কিছু নয়।
আমি ঠিক নিশ্চিত নই, এই স্লামিস্টাক্রান্ত বামদের ব্যাপারে কেউ থরো আলোচনা করেছে কি না।
বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্ম দেখা যাচ্ছে হয় গায়েবী প্রতিশ্রুতিতে মশগুল, অথবা অর্থনৈতিক নিষ্পেষনে ক্ষুব্ধ।
দুই ধরনের তরুণকেই টেনে নেবার দল আছে। তাদের কেউ কেউ আবার গোপনে হাত মিলিয়েও থাকে।
সরি, অফটপিক কথাগুলি বল্লাম।
@আরিফুর রহমান,
এদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় নি। তবে, হওয়াটা জরুরী। দৃশ্যমান ইসলামিস্টদের আমরা চিনি। এদেরকে মোকাবেলা করা সহজ। কিন্তু, এই বামপন্থী ইসলামিস্টরা ছদ্মবেশী। প্রগতিশীলের ভেক ধরে মিশে থাকে আমাদের মাঝেই। ক্ষতি করার সুযোগটা তাই এদের বেশি।
দুঃখিত হবার কিছু নেই। আমার এই পোস্টটা সিরিয়াস কোনো পোস্ট না। অনটপিক, অফটপিক সবকিছুই আলোচনা করা যাবে এখানে।
@আরিফুর রহমান,
এইটা একদম মনের কথা বলেছেন। বামপন্থাটাকে আমি সমস্যা মনে করিনা; সমস্যা হয় বামপন্থার সাথে যখন কিনা যুক্ত হয় বাস্তবতার প্রতি অশ্রদ্ধাশীলতা, ভেরিফাইয়েবল তথ্যের চেয়ে কনস্পিরেসি থিওরি এবং নিজ অবচেতনের কনফার্মেশনাল বায়াস দ্বারা দুষিত ভুতখেদানো এনালিসিস, সেই সাথে প্রস্তরযুগীয় যাদুটোনার প্রতি একটা অন্ধ ফিলিসিটি। এটাকে আমি একটা স্পেক্ট্রাম হিসেবেই দেখি, একএকের ব্যক্তিতে এটার এক্সপ্রেশন হয়তো একেকরকম, কিন্তু এই এনভায়রনমেন্টালিজম-এনিমল-রাইটস এক্টিভিজম- কমিউনিজম/সোস্যালিজম/মার্ক্সিজম-বৌদ্ধদর্শন-প্রস্তরযুগীয় হিন্দুধর্মদর্শন-পোস্টমডার্নিজম-পোস্টকলোনিয়ালিজ-ইসলাম-দর্শন-সমাজবিজ্ঞান-ফুকো/ড্রিডা/এডওয়ার্ড সাইদ-দেশীয় কৃষ্টিকালচার-লালনগীতি-হাছনরাজা-মিছিরালি-প্যারাসাইকোলজি, এই সবগুলো উপসর্গের আন্ডারলাইয়িং কারণ আমি মনে করি একটাই- স্কলারি এবং সুডোস্কলারির ভেতর পার্থক্য নির্ণয় করতে ব্যর্থ হওয়া। অথচ সমস্যাটা কিন্তু খুবই সহজে রিজল্ভেবল, সবাই যদি সমস্বরে এদেরকে শুধু জানিয়ে দিতে পারে একবার যে তুমি হচ্ছো নিছকই একটি বিরিঞ্চিবাবা, তাহলেই কিন্তু হালে পানি না পেয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াটাই হবে এদের নিয়তি। কিন্তু সেখানে সমস্যা হচ্ছে এই আপাতদৃষ্টিতে অক্ষতিকর মতাদর্শগুলোকে মানুষ অবহেলা করে গদাম কষা হতে বিরত থাকে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ফোরামে এই ব্যাপারগুলোতে আলোচনা হওয়াটা জরুরী।
@আল্লাচালাইনা, (Y)
সেই রকম ক্রিস্পি কমেন্ট, আল্লাচাল্লাইনা। (Y)
হুম…..শুনলাম । ভালো লেগেছে । তবে জানি না কতক্ষণ পর্যন্ত মন ভালো থাকবে ? 🙂
@অমিত হিল,
মন খারাপ হওয়া শুরু হলে এই দ্বিতীয় গানটা শুনতে থাকুন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=epxyZF9GD9Q&playnext=1&list=PL883BC2E29FC4513C
একটা লেখা লিখতে যাচ্ছিলাম, আপনার দেয়া গানটি শুনার পর লেখা হয়ে উঠলো না । আসলেই মন ভালো করার মতো গান । বহুদিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকতে গিয়ে ভালো গান আর শুনা হয় না । ধন্যবাদ ।
এটাতো হিন্দি সিনেমা “গ্যাংস্টার” এর একটি গানের সুর হুবহু নেয়া। শুধু কথা ভিন্ন।
হয়তো অনুমতি নিয়েই করা।
@দাদাভাই,
বাংলা গানটা তৈরি হয়েছে সত্তরের দশকের শেষের দিকে। আর হিন্দি গানটা সেদিনের। এবার বুঝে নিন কারটা কে নকল করেছে। প্রীতম ব্যাটা আস্ত একটা চোর। কোনো অনুমতি বা চক্ষুলজ্জার ধার ধারে নি এই অসাধারণ গানটার সুরকে হুবহু চুরি করার ক্ষেত্রে।
@ফরিদ আহমেদ,
চোরদের খ্যাতির চোখ ঝলসানো আলোকে ম্রিয়মান করে দিল আপনার এই প্রিয় গানটি ৷ এই অদ্ভুত সুন্দর গানটি শোনানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ৷
@ফরিদ আহমেদ,
দাদা, প্রীতম চোর বটে। কিন্তু এই গানটি বলেই চুরি করেছে।
@অনামী,
বলেই চুরি করেছে মানে কী? অনুমতি নিয়ে নকল করেছে? এ বিষয়ে সন্দেহ আছে আমার। এতে অবশ্য আমাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে না। প্রীতমের গান চুরির একটা তালিকা আছে এখানে। এই বিশাল তালিকা্টা দেখার পরে যে কারোরই তার প্রতি সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক।
@ফরিদ আহমেদ,
অনুমতি নিয়ে নকল করেছে — হ্যাঁ।
বলে চুরি মানে অনুপ্রাণিত যাকে বলে আরকি।
প্রীতম খুবই চুরিচামারি করে – বলিউডের আর সক্কলের মতন(এ আর রহমান বাদে)।
কিন্তু ছোকরা গানের arrangement-টি করে খাশা। সেইটা মানতই হয়।
আরেকটি কথা প্রাসংগিক।
৯০-র দশকে পশ্চিমবাংলায় জীবনমুখী গান (সুমন, অঞ্জন, নচিকেতা প্রভৃতি), বা তারপরে ফসিলস, ভূমি বা লক্ষীছাড়া-দের গান ফেলনা নয় কিন্তু।
অধুনা Insomnia বা Jack rabbit দের মতন ব্যান্ডও খুব ভাল কাজ করছে।
Jack rabbit এর আমার প্রিয় গানের লিঙ্ক এইখানে দিলাম।
http://www.youtube.com/watch?v=oHkRzBvpefs
http://www.youtube.com/watch?v=Lx9q8C50ZK0
@অনামী,
আমি যা বুঝলাম তা হলো ছোকরার চুরির হাত খাশা!
@টেকি সাফি,
দাদা, শিল্পে original বলে সত্যি সত্যি কিছু হয় কি? খোঁজ নিয়ে দেখুন কত অর্ধরথ মহারথীদের কাজ হজম করে অতিরথ হয়ে গেছেন! ওই যে বল্লুম না, ঠগ বাছতে গ্রাম উজাড়!
আমার বক্তব্য হলো কোথা থেকে টুকেছি সেই source-কে credit দিলেই চুরি হয়ে যায় অনুপ্রেরণা।
কিন্তু রবি ঠাকুর করলে লীলা আর প্রীতম করলে বিলা এটা বলা ঠিক নয় 😀
প্রীতমের যেইটা ভালো সেইটা হল ওর arrangement! আমি এমন কিছু প্রীতম ভক্ত নই। কিন্তু এই ইংরিজি আপ্তবাক্যটি মানি : Give the devil his due!
@ফরিদ আহমেদ, আপনার কাছ থেকে সত্যিটা জানতে পারলাম। ভালো লাগল।
এদের গানগুলি অসম্ভব ভালো লাগে আমার। প্রথম শুনেছিলাম ময়মনসিংহ গীতিকা’র গানটা।
ওরকম গান এখনো আরেকটা শুনিনি..
@আরিফুর রহমান,
গান পছন্দে মিল আছে আমাদের। 🙂
আপনার তীব্র মন্তব্যসমূহ মিস করি মুক্তমনায়। অন্য ব্লগে ব্যস্ত নাকি?
@আরিফুর রহমান,
আসলেও অদ্ভুত সুন্দর এই গানটা। মুক্তমনার পাঠকদের জন্য এখানে তুলে দিচ্ছি।
@ফরিদ আহমেদ,
খুব মনমাতানো একটা গান !
অনেক ধন্যবাদ !
আপ্নার লেখা ছোট হোক বা বড় হক বা যে কোন সম্বন্ধেই হোক কেন জানি না ভাল লাগে। গান গুলি ঘরে গিয়ে শুনব দেরী করে হলেও।
@সেন্টু টিকাদার,
ধন্যবাদ সেন্টুদা। এটাকে লেখা বললে, লেখাকে অপমান করা হবে। 🙂 অনেকদিন পরে হঠাৎ করেই মহীনের ঘোড়াগুলির গান শুনছিলাম। সেই শোনারই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এটি।
ছোটবেলায় মান্নাদে, হেমন্ত, হৈমন্তি শুক্লা, ভুপেন হাজারিকা সহ বিখ্যাত সবার গানই শোনা হয়েছিল আব্বা, মা, চাচাদের কল্যানে। যার জন্য বলা যায় আমার কৈশরের পছন্দের গানগুলো ছিল ঐগুলোই। পরে স্কুলের শেষের দিকে এসে পেয়ে বসে ব্যান্ড। এদের স্বপ্নিল জগতের থেকে আর বের হতে পারিনি। আপনার মতন আমারও গানের ব্যাপারে সর্বভুক চাহিদা।একটা ব্যাপার, বাঙলা গানের ক্লাসিকাল জনরার কথা বলতে পারবনা, সেখানে হয়ত কলকাতার ধারে কাছেও আমাদের বাঙলাদেশ যেতে পারবে না, তবে বাঙলা ব্যন্ডের কথা আমি বলতে পারব যেখানে শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, সম্পূর্ন এশিতেই বাঙলাদেশের ব্যান্ড একদম প্রথম সারিতে। আমাদের সমস্যা একটাই, আমরা বাঙলাতে গান করছি। ভাষাগত এ সমস্যাটা না থাকলে বাঙলা ব্যন্ড এতদিনে দুনিয়া জোড়া পরচিতি পেত এটা শতভাগ নিশ্চিত।
ভারত পাকিস্তানে ব্যন্ডের গানকে আরোও অন্তত ২০ ৩০ বছর সামনে হাটতে হবে বাঙলাদেশের গানের সমমর্যাদায় আসতে হলে।
মহিনের ঘোড়াগুলির মনে হয় বিখ্যাত আমার একটাই শোনা হয়েছে, আপনার শিরোনামে দেয়া গানটা। চমৎকার একটা গান। এদের আমার কাছে জোশ একটাই মনে হয়েছিল, ব্যন্ডের নামটা। জীবন বাবুর কবিতার থেকে নিয়ে। ভালো লাগা গানটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ফরিদ ভাই। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
একদম খাঁটি কথা। তবে, আশি আর নব্বই দশকের সেই উন্মাদনা আর সৃষ্টিশীলতা এখন আর কেন যেন পাই না বাংলাদেশের ব্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে। ভাটা এসে গেছে মনে হয় ভরা নদীতে।