ভাষা ও ধর্ম- দুইটি বিষয়ই আসলে সংস্কৃতির বেশ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু দুইটার ভিতর বেশ কিছু মাত্রাগত নিশ্চিত পার্থক্য বিদ্যমান। ভাষাকে আসলে সংস্কৃতির বিভিন্ন ভিত্তিমূলের অন্যতম বলা যায়, অপরদিকে মূলগত বিবেচনায় ‘ধৃ’ ধাতু থেকে সৃষ্ট ‘ধর্ম’ শব্দটির দ্বারা মানুষের জীবন ব্যবস্থার একপ্রকার অন্তর্গত অনুভূতি ও তার প্রকাশকেই বোঝানো হয়, যা সংস্কৃতির বিভিন্ন ভিত্তিস্থাপনকারী বিষয়গুলোর উপর নির্ভরশীল এবং তার আচরণ অনেক বেশি সামাজিক গতিশীলতার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কথা, কিন্তু প্রচলিত ভাবে ধর্ম বলতে আমরা যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোটিকে বুঝি সেই ধর্ম আসলে কোনোভাবেই সংস্কৃতির ভিত্তি অথবা গতিশীল উপাদান নয়, বরং দীর্ঘ দিনের চর্চার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা সংস্কৃতির কিছু বিষয়কে যখন কোনো জনগোষ্ঠী তাদের জীবনব্যবস্থায় অপরিবর্তনীয় এবং অবশ্যম্ভাবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে তখনি তা ঐ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রচলিত চিন্তায় ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত হয়। অর্থাৎ, যেভাবেই দেখি, ভাষা ও ধর্ম- সংস্কৃতির দুইটি উপাদান।
এখন, বুঝতে হবে রাষ্ট্র কি? সোজা কথায়, রাষ্ট্র মানুষের দ্বারা ও মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্ট একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান মাত্র। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক বিষয়াবলী এর অন্তর্গত। রাষ্ট্রের একটা সরকার ব্যবস্থা থাকে যেটির দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিভিন্ন অন্তর্গত সংস্থা ও ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়, যেমন- এর আমলাতন্ত্র, নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য রয়েছে এর আইনব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ, রাষ্ট্র সামগ্রিকভাবেই একটি কাঠামোগত সামাজিক প্রতিষ্ঠান যে তার সভ্যদের (যারা জনগণ নামে পরিচিত হয়) কিছু চাহিদা মেটাবার মূল সঞ্চালক হিসেবে কাজ করে থাকে এবং সেটা সে নিজে নিজে করে না, জনগণেরই খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ এই প্রতিষ্ঠানটিকে ও এর কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণ করে।
এখন, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানের কোনো ভাষা বা ধর্ম(প্রচলিত কাঠামোকেন্দ্রিকতার অর্থে) থাকতে পারে কিনা? যদি থাকেও, তবে আদপেই তা কতটা যুক্তিসঙ্গত? সত্যি বলতে, আসলেই কোনো প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত মানুষের যদিও নিশ্চিতভাবেই ভাষা ও ধর্ম থাকে স্বাভাবিকভাবেই, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিজের কোনো ভাষা বা ধর্ম থাকতে পারে না সাধারণভাবে। একটা বিশাল অট্টালিকার ভাষা বা ধর্ম থাকাটা যেমন হাস্যকর বিষয় , ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র যখন জনগণের, তার অন্তর্গত মানুষের প্রতিশব্দ ও প্রতিবিম্ব হয়ে উঠে, তখন সেই বিবেচনায় রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আগের বিশ্লেষণটি ভিন্নভাবে তৈরি হতে পারে। তখন বিষয়টির বিশ্লেষণ বা চিন্তা রাষ্ট্রের জনগণের প্রয়োজনীয়তা উপরে নির্ভর করে, রাষ্ট্র মানে সেখানে তার জনগণ।
রাষ্ট্রভাষা ও রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে ইদানিং একটা আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আলোচনাটা অনেকক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কিন্তু এর কিছুটা যৌক্তিক অবস্থানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রশ্নটি হলো- রাষ্ট্রের যদি রাষ্ট্রভাষা থাকতে পারে তবে রাষ্ট্রধর্ম থাকলে সমস্যাটা কোথায়? রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে অন্য ধর্মাবলম্বী কিংবা ধর্মহীন নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। দেশে এমন অনেক জনগোষ্ঠী আছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়? তাহলে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিলেও কি একইভাবে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয় না? শুধু সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা থাকলেই কি দেশ অসাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে?
প্রশ্নটা নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলেই কেনো রাষ্ট্রধর্মকে নাকচ করতে চাইলে, রাষ্ট্রভাষাকে কোন যুক্তিতে আমরা গ্রহন করবো? রাষ্ট্রকে একটি প্রতিষ্ঠান অথবা কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করলে, তার যেমন নিজস্ব ধর্ম থাকতে পারেনা, তেমনি তার ভাষা থাকতে পারে কি? যদি পারেই, সেটা কীভাবে। এই বিষয়টি আমাদের কাছে এখন স্পষ্ট হওয়া খুব প্রয়োজন, তা না হলে সাম্প্রদায়িক শক্তি এই প্রশ্নের চাতুরতাতেই জনগণকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত করার সুযোগ পেয়ে বসতে পারে! আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের পক্ষে এই প্রশ্নের যৌক্তিকতাকে খারিজ করার কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠার সম্ভাবনাই প্রবল।
রাষ্ট্র একটা আদপেই সামাজিক সংঘ/ প্রতিষ্ঠান; তাই রাষ্ট্র যেমন ধর্ম থাকতে পারে না, তেমনি এর ভাষা থাকারও কথা না; কিন্তু… হ্যা এখানে এমন একটি ব্যাপার থেকে যাচ্ছে যাতে রাষ্ট্রভাষা বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে … ভিন্ন মাত্রায়। সেটি হলো রাষ্ট্রকে আমরা শুধুমাত্র একটি কাঠামো হিসেবেই দেখবো; নাকি তার জনগণের, তার অন্তর্গত মানুষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করবো? আসলে দুইটি বিষয়কেই একসাথে বিবেচনা করতে হবে, বিচ্ছিন্নভাবে নয়, তা না হলে কিছু ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই সত্যের অস্বীকার করা হবে।
একটি রাষ্ট্রের ভিতর বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষ থাকতেই পারে, তাদের প্রত্যেকের মাতৃভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হলেও প্রতিটি মানুষের পারষ্পরিক যোগাযোগ এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রমের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট ভাষাকে ব্যবহার করার দরকার হয়ে পড়ে, যেমনটা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা এখন গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টা পুরোমাত্রাতেই আসলেই আমাদের কর্মপ্রক্রিয়া আর যোগাযোগের বাস্তব প্রয়োজনীয়তার জায়গা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট ভাষাকে যদি জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও দাপ্তরিক অর্থ্যাৎ অফিসিয়াল কার্যক্রমের স্বার্থে চিহ্নিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অনেক কার্যক্রম স্থগিত ও স্থবির হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা ঠিক, যে এখানে অধিক মানুষের কোনো ভাষাকে যখন রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তখন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষার উপর ঐ রাষ্ট্রভাষার আধিপত্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, কিন্তু জাতীয়তাবাদ কেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই আধিপত্যকে সম্পূর্ণভাবে খারিজ করা কোনোভাবেই সম্ভব না, যতখানি সম্ভব কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। আর তাই, রাষ্ট্র আর তার জনগণের সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তার স্বার্থেই আমাদের দুইটি বিষয়কে যথাযথ বিবেচনায় রেখেই এগুতে হবে, ১। রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার সকল ভাষাভাষি জনগণ যাতে তাদের পারষ্পরিক যোগাগযোগ ও কার্যক্রমের জন্য একটি ভাষাকে নির্বাচন করতে সক্ষম হয় এবং ২। ঐ ভাষা কর্তৃক অপরারপর ভাষার উপর উগ্র আধিপত্যবাদ কোনোভাবেই যাতে শুরু অথবা প্রতিষ্ঠিত না হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রয়োজনে একাধিক রাষ্ট্রভাষাও থাকতে পারে, যেমন- পাকিস্তান রাষ্ট্রে উর্দু ভাষার অপ্রয়োজনীয় আধিপত্যবাদের প্রতিবাদে ও সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তার স্বার্থে আমরা বাঙ্গালিরা কিন্তু পরবর্তীতে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ফলে রাষ্ট্রের কাঠামোকেন্দ্রিক ধারনায় রাষ্ট্রভাষা বিষয়টি যুক্তিযুক্ত না হলেও রাষ্ট্রের জনগণের প্রয়োজনের নিমিত্তে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারাতে রাষ্ট্রভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং তা প্রচন্ডভাবেই যুক্তিগ্রাহ্য।
কিন্তু ধর্মের বিষয়টি এরকম না। রাষ্ট্রের সকল জনগণের পারষ্পরিক যোগাযোগ ও অপরাপর প্রয়োজনীয়তায় একটি ধর্মকে সুনির্দিষ্ট করার আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে- এটাই স্বাভাবিক। এখানে যেমন আস্তিক’রা থাবে, একই সাথে নাস্তিক’রাও থাকবে। পরষ্পরের বিশ্বাস ও যুক্তিবোধ-এ ভিন্নতা থাকতেই পারে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাতে কেউ কারো প্রতি আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে না, হওয়া উচিৎ না, এতে সামাজিক অস্থিতিশীলতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট হয়। ফলে এখানে ধর্ম বিষয়টা কিন্তু রাষ্ট্রের সকল জনগণের কোনো মৌলিক একইরকম স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট না, প্রত্যেকের (ব্যক্তি/ গোষ্ঠী) স্বতঃস্ফূর্ততা আর স্বাধীন চর্চার মধ্যেই সীমিত। তাই এখানে একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতেই কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে সকলের জন্য সুনির্দিষ্ট করার দরকার নাই। একারণেই রাষ্ট্রের কাঠামীকেন্দ্রিক ধারনার পাশাপাশি রাষ্ট্রের জনগণের প্রয়োজনের ভিত্তিতেও রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই অবান্তর ও যুক্তিহীন।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রভাষা ও রাষ্ট্রধর্ম- বিষয় দু’টো মূলত রাষ্ট্র কাঠামোর ভিত্তিতে নির্ধারিত হচ্ছে না, এর জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রভাষা বিষয়টি কোনোভাবেই রাষ্ট্রধর্মের মত সাম্প্রদায়িক আধিপত্যবাদী বিষয় হয়ে উঠে না। বলছি না, কখনোই হয়ে উঠতে পারে না, যেমনটা হয়েছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্রে উর্দু ভাষা। কিন্তু যেহেতু এটি রাষ্ট্রের জনগণের স্ব-স্বার্থেই নির্ধারণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাই রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণীর দায়িত্বশীল ভূমিকা আর জনগণের মুক্তচিন্তা আর বোঝাপড়ার মাধ্যমেই এর সাম্প্রদায়িক আধিপত্যবাদের সম্ভাবনাকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। ফলে রাষ্ট্রভাষাকে বজায় রেখেই শুধুমাত্র রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টিকে খারিজ করার মধ্য দিয়েই যেকোনো রাষ্ট্র যথেষ্ট পরিমাণে অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।
মূলত, জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রাষ্ট্র। তাই সীমার বন্ধন এর সারা গায়ে জড়িয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে আধিপত্য থাকবে, সেটাকে খারিজ করার প্রচেষ্টাও থাকবে। আর এই সকল ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে একসময় রাষ্ট্রের সীমানা মুছে যাবে মানুষের স্বাধীন স্বকীয় বিকাশের নিশ্চয়তার স্বার্থে, প্রয়োজনীয়তার স্বার্থেই। মানুষ ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে আন্তর্জাতিকতাবাদী ব্যবস্থায়, যেখানে আলাদা রাষ্ট্রের প্রয়োজন থাকবে না, ফলে আর রাষ্ট্রভাষা বলে কোনো কিছু’র প্রয়োজন থাকবে না, লুপ্ত হতে থাকবে আধিপত্যবাদী সকল উপাদান। সামাজিক ব্যবস্থায়, জীবন প্রনালীতে যুক্ত হতে থাকবে বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক ধারনা। পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের প্রয়োজনে আরেক প্রান্তের মানুষ কথা বলবে, ভাবতে শিখবে। একটি জাতির সংস্কৃত আরেক জাতির সংস্কৃতির উপর কোনোরূপ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে না, বরং এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিটি সংস্কৃতিই বিকশিত হবে, এভাবেই হয়তো এক অভূতপূর্ব বৈশ্বিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, যা ধারণ করবে পৃথিবীর সকল মানুষকে, সকল মানুষের স্বাধীন বিকাশকে। কিন্তু সে ব্যবস্থায় যাওয়ার এখনো অনেক দেরি। তার আগে এই জাতীয়তাবাদী ব্যবস্থাতেই এর ভিত্তি তৈরি করা প্রয়োজন, যে কোনো ধরনের আধিপত্যবাদকে যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন, তাহলেই ভবিষ্যত মানুষের জন্য এক আধিপত্যহীন এবং শোষনহীন সমাজব্যবস্থার চারা রোপন করে যেতে পারবো আমরা, আর সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার লেখাটা অনেক ভালো লাগলো পড়ে। আসলে আমাদের দেশের সরকার এখন মুখে নিয়ে ফেলেছে খাবার এমন অবস্থায় আছে যে খেতেও পারছেনা আবার ফেলতেও পারছেনা। তার হয়েছে বেহাল দশা। এমন একটা ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে যা নিয়ে মোল্লারা নাড়া দিলে সরকার পতন হতে সময় লাগবেনা। যাই হোক আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছুদিন আগে সামহোয়ার এ একটা ফানপোষ্ট দিয়েছিলাম কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে।কেউ উত্তর দেয়নি, এখানে উল্লেখ করছি দেখি আপনি কিভাবে দেখেন ব্যাপরগুলো। (আগেই বলে নিচ্ছি ফানপোষ্ট)
১. বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তার মানে বাংলাদেশ মুসলিম, মানুষের জন্য বেহেশ্ত আর দোযখের কথা আছে কিন্তু দেশ হিসেবে কে বেহেশ্তে যাবে তা তো কুরআনে মনে হয় নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেহেশ্তে গেলে হুর পাবে নাকি?? পাইলে কি করবে ???
২. আল্লাহ আমাদের মানুষদের জন্য যে সব জিনিস ফরয করছেন যেমন রোজা, যাকাত, নামাজ ইত্যাদি; কিন্তু মুসলিম হিসেবে এই বাংলাদেশ কি এসব পালন করে?? না করলে এর কি গুনা হচ্ছে না??? এই ব্যাপারে কি করা যায়??? আমি খুবই টেন্সিত এ ব্যাপার টা নিয়া।
৩. বাংলাদেশে বেশ কিছু কাফির আছে ( যদিও হুজুরদের নির্দেশে তাদের সঠিক সংখ্যাটা আমরা কখনও উল্লেখ করিনা) তারা তো পূজা, প্রার্থনা করে কিন্তু একটা মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে থেকে এসব করলে কি বাংলাদেশের গুনা হচ্ছেনা???
৪. একজন মুসলিম হিসেবে তো ইসলামিক আইন কানুন গুলো মান্য করা উচিত, কিন্তু দেশে ইহুদি, খ্রীষ্টানদের করা অনেক আইন এখনও বলবৎ আছে পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আইন তৈরী করা হচ্ছে এটা কি ইসলামের বিরুধিতা হচ্ছেনা?? আল্লাহ তো বেজার হবেন।
৫. নবিজি যেখানে বিধর্মীদের জন্য বিভিন্ন প্রকার করারোপ, তাদের সুযোগ সুবিধা কম রেখেছেন, তাদের জন্য বিভিন্ন বাধ্যকতা রেখে গেছেন সেখানে বর্তমান সরকার সমান অধিকারের কথা কিভাবে তুলছে??
@পদ্মফুল,
১। অবশ্যই বেহেস্তে যাবে, তবে হুর নিয়ে কে কি করবে সেটা বলা মুশকিল। সেখানে বাংলাদেশের মানুষের স্লোগান থাকবে একটাই- হুর যার যার, বেহেস্ত সবার!!! :rotfl:
২। দিলেন তো ঝামেলায় ফালাইয়া, এইকারণেই বোধ হয় এখন দেশে এত সমস্যা, পরকালে তো বেহেস্ত পাবেই(১নং উত্তর দ্রষ্টব্য), তাই ইহকালে দোযখের স্বাদ দিতেছে বোধ হয় আল্লাহ হুজুর!!! 🙁 :guli:
৩। আল্লাহ ভালো জানেন, সকল প্রশংসা ও দুর্নাম তারই জন্য! :clap
৪। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- তার ইচ্ছা ব্যতীত গাছের পাতাও নড়ে না, আপনি কি করে ভাবলেন এটা আল্লাহর অনিচ্ছায় হচ্ছে। তারও তো রুচি পরিবর্তন করতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে, তাই না? 😀
৫। এইতা আল্লাহ আর সরকারের দ্বিপাক্ষীয় রাজনৈতিক চুক্তির অন্তর্গত বিষয়, এর দ্বারা পরষ্পরের ফায়দা লোটার রাস্তাটা ক্লিয়ার হচ্ছে, এইটাও বোঝেন না? আজব!!! :lotpot:
(ফানি পোস্টে আমিও একটু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম, উত্তর পছন্দ না হইলে আমার কোনো দোষ নাই, সবি আল্লার দোষ, তার ইশারাতেই এগুলা লিখছি!) (*)
@নিঃসঙ্গ বায়স,
‘দেশপ্রেম’ আর ‘উগ্র জাতিয়তাবাদী চিন্তা’র মাঝে প্রায়ই আমি কোন ফারাক খূঁজে পাই না। ‘আমার দেশকে হতে হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ’-এমন কথার মাঝে কেউ কোন দোষ খুঁজে পাবে বলে মনে হয় না এবং এহেন ‘দেশপ্রেম’ স্কুলের বাচ্চাদেরও শেখানো হয়; কিন্তু যদি একটু অন্যরকম করে বলা হয় যে “অন্য দেশকে শোষন করে হলেও আমার দেশকে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ধনী দেশ বানাবো’, তাহলে নিশ্চিতভাবেই একে ‘উগ্র জাতিয়তাবাদী চিন্তা’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, কম-বেশী ‘শোষন’ ছাড়া কি ‘শ্রেষ্ঠ’ হওয়া যায়? বিবর্তনের ইতিহাসে মানুষ যেমন শ্রেষ্ঠত্বের জন্য লড়াই করেছে, তেমনি জাতি-রাষ্ট্রগুলোও কি লড়াই করেনি? বর্তমান পৃথিবীও কি এর বাইরে? ধরা যাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন, ‘তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি এমনভাবে করতে হবে যাতে ভারত বেশী পানি পায়, আর এই উদ্দেশ্য সাধনে ভারতের শক্তিশালী ‘ডিপ্লোমেসি’কে কাজে লাগাতে হবে’। এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কি বলা হবে? ‘দেশপ্রেমিক’ নাকি ‘উগ্র জাতিয়তাবাদী’?
পরিশেষে লেখককে ধন্যবাদ এই অতি ‘সময়োপযোগী’ লেখাটি উপহার দেয়ার জন্য। তবে একটি প্রশ্ন না করেই পারছি না। যে ধর্মকেন্দ্রিক জাত্যভিমান, অতি উৎসাহ আর অহংকার থেকে ‘রাষ্ট্রধর্মে’র জিগির তোলা হচ্ছে, রাষ্ট্রভাষাকেন্দ্রিক জাত্যভিমান আর অহংকার কি তার থেকে খুব আলাদা?
@কাজি মামুন,
ভাইয়া, ব্যক্তিগত ব্যস্ততার দরুণ উত্তর দিতে দেরি হলো। দুঃখ প্রকাশ করছি শুরুতেই।
আপনার চিন্তার মূলগত ভাবের সাথে আমিও একমত। এজন্য লেখায় ভাষার আধিপত্যবাদ ও তার সম্ভাবনা, জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা- এগুলোকে কিন্তু খুব সংক্ষেপে হলেও নিয়ে এসেছি। তবে একটা বিষয়ে একটু দ্বিমত আছে। দেশপ্রেম আর উগ্র জাতীয়তাবাদকে আমি এক কাতারে ফেলতে পারছি না। পৃথিবীতে ভৌগলিক সীমারেখার যে ব্যবধান, তা মুছে গেলেই কী দেশপ্রেম মুছে যাবে, দেশপ্রেম একটা চিরায়ত অনুভূতি, একটি প্রাণীরও তার নিজের যে এলাকায় জন্ম, বেড়ে ওঠা, তার প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে, আর জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠে বিভিন্ন ডগমার উপর ভিত্তি করে; যার একটি শক্তিশালী বিষয় হচ্ছে, ভৌগলিক সীমানা যেটি যেকোনো রাষ্ট্রকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার প্রধান উৎস। তাই দেশপ্রেম আমার কাছে মায়ের প্রতি সন্তানের যে নির্মল অনুভূতি, সেরকম একটি বিষয়।
আমি নিজেও জাতীয়তাবাদের সমর্থক নই, নিজেকে একজন আন্তর্জাতিকতাবাদী হিসেবে ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের এর কন্টেক্সটে জাতীয়তাবাদ অনেকখানি প্রাসঙ্গিক, সাধারণ মানুষের চেতনায় এখনো জাতীয়তাবাদের একটা গভীর প্রভাব রয়েছে, তাই বিষয়টাকে কতখানি সহনশীল ভাবে রাখা যায়, তারই একটি প্রচেষ্টা আমার এই লেখাটি। আমার লেখার শেষ প্যারা পড়লেই সেটা স্পষ্ট হওয়ার কথা।
আর আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তরে এটাই বলা যায়, যে কোনো সাংস্কৃতিক ডগমা-ই(এর প্রাসঙ্গিক বঙ্গানুবাদ খেয়াল আসছে না) অনেক বেশি আধিপত্যবাদী ও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে যদি তাকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়। রাষ্ট্রভাষা/ভাষা এর ব্যতিক্রম নয় মোটেও। এজন্য এসকল ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতাবোধ গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী।
ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত দেওয়ার জন্য। ভালো থাকুন (F)
আমার মাথায় আরেকটা পয়েন্ট এসেছে, রাষ্ট্রের জন্য ধর্মের প্রয়োজন মনে হয় পোশাকি। যেমন- স্কুল-কলেজ, সিএনজি-ক্যাব চালকদের কিংবা অফিসের পিয়ন- সিকিউরিটি গার্ডদের ইউনিফর্ম পরানো হয়, ঠিক তেমনি।
এখানে একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, স্কুলের টিচারদের ইউনিফর্ম থাকে না, অফিসের বড় অফিসারদেরও থাকে না, যারা রাস্তায় প্রাইভেটকার চালায় তাদেরও থাকে না। ইউনিফর্ম মনে হয় শুধু ছোটদের জন্য। তেমনি রাষ্ট্রধর্মও হবে শুধুই ছোটদের (আমজনতার) জন্য। 😀
ধর্ম নিয়ে বিড়ম্বনা থেকে সুদূর যুক্তরাজ্যে এসেও রেহাই মিলছেনা অবশ্য বিড়ম্বনাটা কোন ইংরেজদের পক্ষ থেকে আসে না আসে আমাদের স্বদেশী বাঙালী পরিচিত ভাইদের কাছ থেকে। আমার নামটাই সাক্ষ্যদেয় আমি ইসলামের অনুসারী নই।এই সুযোগ টা নিতে চায় আমার পরিচিত মুমিন ভাইয়েরা। সময় ও সুযোগ পেলে আমাকে ইসলাম গ্রহনের দাওয়াত দিয়ে মনে প্রাণে প্রশান্তি নিতে চেষ্টা করে কিন্তু মুমিন গুলো বুঝতে চেষ্টা করেনা তাদের এই দাওয়াত আমার মনে অশান্তির উদ্রেক করে। তাদের সেই চিরাচরিত কথা ইসলাম শ্রেষ্ঠ। তর্ক করতে মন চায় না তার পরেও সীমালঙ্ঘন করতে দেখলে চুপ থাকতে পারি না অনেক সময়। হয়তো বিদেশ আছি বলে পরিবেশ অনুকুল থাকায় প্রতিবাদ করার সাহসটা পাই, দেশে থাকলে নীরবে হজম করা ছাড়া কোন উপায় থাকত না। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার মধ্যে দুটি ঘটনার বর্ননা দিচ্ছি-
দেশে থাকা কালীন এক ঘটনাঃ
ট্রেনে চড়ে ঢাকার উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম ছেড়ে রওনা দিয়েছি। সম্ভবত কুমিল্লার কাছা কাছি কোথাও পৌঁছেছে ট্রেন। বসে থাকতে থাকতে অসহ্য বোধ করলাম ভাবলাম ট্রেনে একটু হাটা হাটি করি। এক এক বগি পার হয়ে আরেক বগিতে গিয়ে পৌছলাম দেখি এক সিটে গেরুয়া কাপড় পড়ে এক বৌদ্ধ বিক্ষু বসে আছেন তার পাশ দিয়ে হাটছিল আরো তিনজন যুবক হঠাৎ তাদের মধ্যে এক জন ভিক্ষু টিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল “চল এটারে ধরে ট্রেন থেকে ফেলে দি” তাদের এই দম্ভোক্তি পুরো বগির যাত্রীরা শুনল, আমিও শুনলাম, ভিক্ষুটিও শুনতে পেল।লক্ষ্য করলাম ভয়ে ভিক্ষুটির মুখ শুকিয়ে গেছে, হয়তো মনের ভেতরে বয়ে গেছিল কোন ঝড় তুফান। কিন্তু আমরা এত লোক থেকেও কারো পক্ষে সেই কথার প্রতিবাদ করার কোন সাহস হল না।মনে মনে খুব অসহায় বোধ করলাম সেদিন। ভেবেছি এ কোন দেশে আমরা বাস করছি।
যুক্তরাজ্য ঘটনা ২
কয়েক জন মিলে আমাকে দাবী সহ বয়ান দেয়া হচ্ছে ইসলাম শ্রেষ্ঠ।অনেক ক্ষন শুনার পরে ধৈর্য্য ধারন করা অসম্ভব হয়ে উঠল শুরু করলাম প্রতিবাদ। জানি বিজ্ঞান দিয়ে এদের বুঝানো সম্ভব নয় তাই সাদা চোখে যা দেখা যায় তা দিয়ে শুরু করলাম, তাদেরকে বলল্লাম আমাকে দেখান- শিক্ষা-সংষ্কৃতি, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, খেলাধুলা, শিল্প, চিকিৎসা কোন দিকে ইসলাম শ্রেষ্ঠ? পৃথিবীর উন্নত ও সভ্য বলে বিবেচিত দেশ গুলোর মধ্যে কয়টি ইসলামী দেশ আছে? তাছাড়া পৃথিবীতে যদি গণ ভোটের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কোরানের পক্ষে ভোট পড়বে বেশী না বিপক্ষে পড়বে বেশী? তো কিসের মাপকাঠিতে আপনারা দাবী করছেন ইসলাম শ্রেষ্ঠ?
আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার এই যুক্তি তারা কখনো মানবে না তবুও বিদেশ আছি বলে তাদের মুখের সামনে এভাবে প্রতিবাদ করার সাহস অন্তত পেলান নিজের দেশে যা আমি কখনো পারি নি।
সময় উপযোগী একটা ভালো পোষ্ট দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
লেখাটা পড়লাম। ভাষা ও ধর্ম আপনার বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে। বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে যেমন তুমুল বিতর্ক আছে ভাষা নিয়ে তেমনটা নেই। অর্থাৎ ধর্ম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যতটা না স্থান পেয়েছে ভাষা তেমনটা পায়নি।
আমার প্রেক্ষিত থেকে দেখলে দু’টোতে সমস্যা আছে আদিবাসীদের জন্যে। আদিবাসী সমাজের নেতারা ধর্ম নিয়ে চিল্লাচিল্লি করলেও ভাষা নিয়ে তেমনটা করেনি বলে হয়। সংবিধান অনুসারে আদিবাসীরা ভাষাতে যেমন বৈষম্যের শিকার, তেমনি ধর্মতেও। রাষ্ট ভাষা বাংলা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।
অধিকাংশ নাগরিক বাঙালি। স্বাভাবিকভাবে বাংলার প্রধান্য থাকবে। এই প্রাধান্য দিতে গিয়ে আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষার উপর অবিচার করা হয়েছে। তাদের ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারের জন্যে সাংবিধানিকভাবে ব্যবস্থা থাকতে পারতো। কিন্ত তা হয়নি। ভাষা নিয়েও বাঙালিদের আধিপত্যবাদী মনোভাবের প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। অথচ এ ভাষার সাথে মানুষের বিকাশ ও জ্ঞান বিজ্ঞান ধারনের ব্যাপারটি রয়ে গেছে। ভারতে সাংবিধানিকভাবে তিন ভাষা নীতি – হিন্দি, ইংরেজী ও যে অঞ্চলে যে ভাষা প্রযোজ্য – রয়েছে। বাংলাদেশেও ভাষানীতি দরকার। এখানে ভাষানীতি বলেই আদিবাসী শিশুরা প্রথমদিনে স্কুলে বৈষম্যের শিকার হয়। বাঙালি শিশুরা নিজের ভাষায় পড়ছে, কিন্তু আদিবাসী শিশুরা সে অধিকার বা সুযোগ পাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার প্রথম দিন থেকেই একটি আদিবাসী শিশুকে অন্য ভাষা শেখার কসরত হচ্ছে। শব্দ, উচ্চারণ, বাক্য ইত্যাদির সাথে পরিচিত হতে হচ্ছে। অর্থাৎ এক বাঙালি শিশু প্রথম দিন থেকে যে কবিতা, ছড়া ও গল্প মনের আনন্দে গড় গড় করে পড়তে পারছে এক আদিবাসী শিশু তা পারছে না। ফলে আদিবাসী শিশুর বিকাশটাও বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। আর পরীক্ষায় এক বাঙালি শিশুর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। অর্থাৎ ভাষা বৈষম্যের কারণে সে প্রতিযোগিতায় বাঙালি ছেলের তুলনায় পিছিয়ে থাকতে পারে। কাজেই রাষ্ট্র যদি সব নাগরিকের জন্যে সমান ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়, সবার ভাষারও স্বীকৃতি থাকা দরকার।
ধর্ম নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক কলাম লেখকের (নামটা এখন মনে নেই) একটি লেখার কথা মনে পড়ছে। তিনি লিখেছিলেন, চীনে গিয়ে একদিন তিনি মুসলিম খাবারের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। হালাল খাবার। এখানে সেখানে খুঁজে দেখলেন। অবশেষে একটা রেস্টুরেন্ট পাওয়া গেলো। সেখানে গিয়ে খাবারের নামটাম পড়তে পারেন না। শুধু হালাল খাবার লাগবে সেটা ওয়েটারকে বোঝাতে পেরেছিলেন। দু’তিনটা আইটেম নিলেন। এমনভাবে রান্না করা সেগুলো কোনটা কী চিহ্নিত করা তার জন্যে কঠিন ছিলো। একটা আইটেম খুবই স্বাদ লেগেছিলো তার। খাওয়া শেষে বিল এলো। কিন্তু খাবারের নামটা তার জেনে নেওয়া দরকার। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঐ খাবারের নাম কী? তখন ওয়েটার জবাব দিলো, “ফ্রগস লেগস”। তখন উনার তো চক্কু চরক গাছ! বলে কী, ফ্রগস লেগস এখানে হালাল খাবার! শেষে ঐ কলাম লেখক ভাবছিলেন, “ব্যাঙ খাওয়া বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্যে হারাম। কিন্তু ঘুষ খাওয়া হারাম হয় না!” তারপর মনে মনে প্রশ্ন করলেন, কোনটা বেশি হারাম – ঘুষ খাওয়া নাকি ব্যাঙ খাওয়া? বাংলাদেশের মুসলমানরা বেশি ভালো নাকি চীনের মুসলমানরা?
ঠিক ঐ কলাম লেখকের মত আমারও ভাবনা হলো – ঠিক আছে বাংলাদেশ সরকার ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম বানালো। ইসলাম ধর্মে ঘুষ খাওয়া হারাম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার পরও বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। তাই প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাংলাদেশের ঘুষ খাওয়া কমাতে পারবে কী? যদি পারে, তাহলে বলবো, ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করে এর মধ্যে কিছুটা সার্থকতা আছে।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
@বাসার,
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রের রাষ্ট্রধর্ম প্রয়োজন কেনো তা খুব সহজেই বুঝা সম্ভব, আমি যদি এখানে ইংলিশ, আরেকজন চাকমা, আরেকজন জার্মান, আরেকজন হিন্দি ভাষায় এসে কমেন্ট লেখা শুরু করে তাহলে 🙂
রাষ্ট্রভাষা মানে আসলেই আমাদেরকে অফিসিয়াল কাজে রাষ্ট্রভাষায় লেখতে/পড়তে/বলতে ফোর্স করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম মানেও কেনো আমাদেরকে এই ধর্ম পালন করতে ফোর্স করা হচ্ছে না তার মর্ম উদ্ধারে আমি অক্ষম।
আরেকটা দিক দেখাই, বাংলাদেশকে ভালবাসি, মানে কী? এদের পুকুরের পচা কাঁদা আমার খুব প্রিয়? আবেগের বশে অনেকে সেটা বললেও বাস্তবে বাংলাদেশকে ভালবাসা মানে বাংলাদেশের লোকদের ভালবাসা, বাংলাদেশের জন্য কাজ করা মানে দেশের মানুষদের জন্য কাজ করা। দেশের আইন মানে, তাও জনগনের জন্য আইন, আচ্ছা তাহলে রাষ্ট্রের ধর্ম মানে জনগনের ধর্ম কেনো বুঝাবে না?
মানে কথা আমার পরিস্কার, রাষ্ট্র একটা বিমুর্ত কাঠামো, এর আকার, প্রকার, দেহ, মন, মস্তিস্ক কিছুই নেই, কিন্তু এই কাঠামোকে সংশ্লিষ্ট করে যা কিছু বলা হয় সবকিছুই এর অন্তর্গত মানুষদের সম্পর্কিত করেই বলা হয়।
@টেকি সাফি,
দুঃখিত, একটা ভুল হয়েছে,
রাষ্ট্রের রাষ্ট্রধর্ম প্রয়োজন এর পরিবর্তে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা প্রয়োজন পড়ুন।
@টেকি সাফি,
একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। রাষ্ট্রের সীমানা বলতে আমরা কী বুঝবো? যে ভৌগলিক অঞ্চলজুড়ে রাষ্ট্রটি বিস্তৃত, তার পরিসীমা; নাকি জনগণের? 😛
আশা করছি, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ধারনায় আমার বিশ্লেষণটি এখন বুঝতে পেরেছেন! আমি তো লেখাতেই বলেছি একারণে-
আর দেখুন, ধর্ম সম্পর্কে আমার যে ধারনা, সেটার সাথে অনেকের মত বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু আমি ‘ধৃ’ (যার অর্থ ধারণ করা) ধাতু থেকে আগত ধর্মকে শুধুমাত্র ‘বিশ্বাসের’ বা আধ্যাত্মিকতার জায়গা থেকে দেখি না, যে কোনো বস্তু বা প্রাণীর সমাজ ও প্রকৃতিতে টিকে থাকতে ও ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে তাদেরকে যে সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হয় এবং প্রতিনিয়ত যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়, তার সবটাই ঐ বস্তু বা প্রাণীর ক্ষেত্রে তার নিজস্ব ধর্ম। যার কারণে আমরা যেমন মৌলিক পদার্থের ধর্ম নির্ধারণ করি, তেমনি প্রাণী বা ব্যক্তিমানুষেরও ধর্ম খুঁজি। ঝামেলাটা হয়, যখন ধর্ম শব্দটিকে পশ্চিমা কায়দায় শুধু কিছু বিশ্বাস আর আধ্যাত্মিকতার আড়ালে ফিক্সড আচার সর্বস্ব ও ঈশ্বকেন্দ্রিক একটি বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেটাকে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বলা যেতে পারে। এবং এখন আমরা ধর্ম বলতে এই বিষয়টাকেই বুঝি এক কথায়। কিন্তু ধর্মের এই প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি তো একটি রাষ্ট্রের সকল মানুষের জন্য একই রকম না, এবং এই মানুষগুলোর পরষ্পরের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন ছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দাপ্তরিক অথবা যোগাযোগের কোনোধরনের প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই কিন্তু তাদের এই বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের একটি মিল থাকার প্রয়োজন বা আবশ্যিকতা নাই, যেটা ভাষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। একারণে রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টা পুরোমাত্রাতেই একটা হেয়ালী, যেখানে রাষ্ট্রভাষা বিষয়টি এখন পর্যন্ত অত্যন্ত জরুরী। এই কারণে এই দু’টি বিষয়কে না বুঝেই এক কাতারে ফেলে দেওয়া হয় নির্বুদ্ধিতা ও বোঝাপড়ার অভাব, নাহয় হীন সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ধন্যবাদ।
আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা মানেই শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা নয়, একই সাথে এর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাও বোঝায়। 🙂
@নিঃসঙ্গ বায়স,
আমার দৃষ্টিভঙ্গি খানিক ভিন্ন তাহলে, এবং এটা নিয়ে তর্ক করেও লাভ নেই কারন আমি আপনার দেশপ্রেমানুভুতি বুঝবো না আপনিও আমারটা বুঝবেন না। দেশপ্রেম সত্যিই আমার কাছে প্রকৃতি প্রেম নয়, আমার সকল দেশের সকল স্থানের প্রকৃতিই ভাল লাগে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজ দেশের প্রকৃতির চেয়ে অন্য দেশের প্রকৃতি সুন্দরও লাগে।
আর রাষ্টের সীমানার ধারণা ঠিক আছে কিন্তু এখানে প্রাসাংগিক কীভাবে হলো বুঝলাম না, সীমানা দ্বারা একটা এলাকা নির্ধারিত হয়, একটা এলাকা ঘুরে ফিরে সেই আবার বিমূর্তরুপী কিছু, একটা এলাকা বসে বসে ইবাদত করে নাকি? নাকি ঐ এলাকার লোকগুলো?
রাষ্ট্র একটা কাঠামো এটা আগেই বলেছি, আর এই কাঠামোর মধ্যে যেসকল নিয়ম কানুন জারি করা হয় তা এই কাঠামোর মধ্যে থাকা জনগনের জন্য। কাঠামো নিজে কোন আইন অনুসরন করেনা, এর মধ্যে থাকা লোকগুলো করে। আর এই আইনগুলোই আবার কাঠামোর বিবর্তন, পরিমার্জন করে।
তাই রাষ্ট্রধর্ম বলতে আমি বুঝি, কাঠামো কতৃক নির্ধারিত একটা ধর্ম যা এর মধ্যে থাকা লোকদের প্রভাবিত করবে, সামান্য হোক আর বেশী হোক, এবং আমি কোনভাবেই প্রভাবিত হতে চাইনা। আমি আমার ধর্ম দিয়ে আমার ছোট ভাইকেও প্রভাবিত করতে চাইনা, সেখানে রাষ্ট্রের সকল জনগনের ধর্মকে প্রভাবিত করাটা আমার কাছে ভালো ঠেকে না।
@টেকি সাফি,
আরে ভাই, আমারো বক্তব্যও তো সেখানে, যে রাষ্ট্রভাষা একটা পর্যায় পর্যন্ত ঠিক থাকলেও রাষ্ট্র ধর্ম পুরোপুরিই একটা সাম্প্রদায়িক বিষয়! আমি নিজেও চাইনা জনগণ দূরে থাক, আমার ছোট ভাইটিও আমার নিজস্ব ধর্মবোধ দ্বারা প্রভাবিত হোক, তাহলে আপনার সাথে আমার দ্বিমত থাকছে কোথায়? আমি ঠিক বুঝতেছি না!!! নাকি আপনি আমাকে রাষ্ট্রধর্মের পক্ষের লোক ধরে নিয়েছেন! সে ক্ষেত্রে তো ভাই আমার পুরো লেখাটাই বৃথা হয়ে গেলো!!! :-Y :-Y :-Y
আর দেশের প্রতি ভালোবাসার মানে এই নয় যে আরেক দেশের প্রকৃতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনার দেশের প্রকৃতির চাইতে ভালো লাগতে পারবে না, আরেক দেশের কোনো মানুষকে আপনার দেশের কোনো মানুষের চেয়ে ভালো লাগতে পারবে না; অইটাতো উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনা, আমি নিজেও এরও বিপক্ষের লোক, কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় আপনার দেশের মানুষ আর প্রকৃতি আপনার কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে, সেটাই আপনার দেশপ্রেম, এমনকি রাষ্ট্রব্যবস্থা না থাকলেও এই দেশ নিয়ে মানুষের অনুভূতির বিষয়টিকে খারিজ করা সম্ভব কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে! 🙂
ভালো থাকুন। :thanks:
@নিঃসঙ্গ বায়স,
আপনার সাথে যে আমার দ্বিমত আছে মনে করেছিলেন কেন? 😀 হাঃহাঃহাঃ দ্বিমত নেই তাইতো দেখছি, এবং আমি শুধু আমার কিছু কথা বললাম এই যা 🙂
ভাল থাকবেন (D)
খুবই ইন্টারেস্টিং বিষয়। একটা পয়েন্ট, একটি প্রতিষ্ঠানের ভাষার প্রয়োজন দাপ্তরিক কাজ করতে, যোগাযোগ করতে। কিন্তু ধর্মের কি প্রয়োজন?
@আতিকুর রাহমান সুমন,
প্রচলিত অর্থে আসলেই কোনো প্রয়োজন নেই… 🙂
ভাল লিখেছেন।
রাষ্ট্রের অফিশিয়াল কাজের জন্যই একটা ভাষা প্রয়োজন। কিন্তু এসব কাজের জন্য কোনো ধর্মের প্রয়োজন নেই। আসলে কোনো কাজের জন্যই নেই। সংক্ষেপে এই জিনিসটাই সুবিধাবাদীরা বুঝতে বা বুঝতে দিতে চায় না।
@কৌস্তুভ, ধন্যবাদ আপনাকে (F)
@রণবীর সরকার এবং পাপিয়া চৌধুরী- পড়ে ভালো লাগার জন্য আপনাদের দু’জনকেও ধন্যবাদ 😛
বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব দরকারি একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। খুব ভালো লাগল পড়ে। প্রিয়তে নিলাম, ফেসবুকে শেয়ার দিলাম। শেষের অনুচ্ছেদটা বিশেষ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ (F) ।
চমৎকার যুক্তিনির্ভর লেখা।
ভাল লাগল।