:: হাইপেশিয়া :: রুকসানা/আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট :: অ্যাডা :: তসলিমা নাসরিন :: হুমায়ুন আজাদ :: দালাইলামা :: সুরের রাণী মমতাজ ::
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিক্সায় যেতে যেতে হঠাৎ পাশে থাকা বন্ধু চিৎকার করে উঠলো, হুয়াক্কা হুয়া! সব দাঁত বের করে, দাঁড়িয়ে উঠে, দূর দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজনকে লক্ষ্য করেই বার বার সে বলে যাচ্ছে, হুয়া, হুয়া, হুআ, আ আ আ। কে জিজ্ঞেস করতেই, আকাশ থেকে পড়ে বললো, হুআ’কে চিনিস না? হুমায়ুন আজাদ। তারপর, একের পরে এক হুমায়ুন আজাদের অপকীর্তির বর্ণনা দিতে দিতে টায়ার্ড হয়ে পড়ে। কিন্তু, তার সমালোচনা করতে করতেই আবার চনমনে হয়েও উঠে, মনে হলো শুধু হুমায়ুন আজাদের নাম মুখে নিতে পেরেই তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায় তার প্রতিক্রিয়া। ভাবখানা এমন যে, এমন এক মানুষকে নিয়ে কথা বলছে যাকে সে অনেক দূরে বর্জন করতে পারলেই খুশী হবে।
২০০৪ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী, যেদিন বাংলা একাডেমী বইমেলা থেকে ফেরার পথে কাপুরুষদের আক্রমণে রক্তাক্ত হলো বাংলার আজাদ, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে রুমে এসে আমার সে একই বন্ধু আপত্তিকর শব্দের পর শব্দ,অপশব্দ ব্যবহার করে বলে গেলো, এ-দেশ শেষ হয়ে গেলো, এ-দেশকে শেষ করে দিলো। শুধু সে-ই নয়, একজন একজন করে উত্তপ্ত হতে হতে, অবশেষে উত্তপ্ত হয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো আবাসিক হল। আমি শুধু তাদের সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভেবেছিলাম, কী অদ্ভুত মানুষের মনোজগৎ! মানুষ নিজেই বুঝতে পারে না, কাকে সে ভালোবাসে, কার সে অনুরাগী। চেতন মনে হুমায়ুন আজাদকে বর্জন করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেও, অবচেতন মনে তারা আপন করে নিয়েছে হুমায়ুন আজাদ’কে। মনে মনে ভাবী, একদিন যাকে দেখলে তোমরা বাজে কথায়, সমালোচনায় জর্জরিত করে দিয়েছো, যার উপস্থিতিই তোমাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতো; তার উপর আক্রমণে আজ তোমরাই সবচেয়ে বেশি মর্মাহত, সবচেয়ে বেশি বিহ্বল? যে উপলক্ষ্যে চেতন মনে হুমায়ুন আজাদকে তোমরা বর্জন করে দিয়েছো, কে জানে, হয়তো সে বর্জন করার দুঃসাহসটুকু হুমায়ুন আজাদই তোমাদের দেখাতে শিখিয়েছিলো।
বাংলায় আজ মৌলবাদীদের অভাব নেই। শুধু আস্তিক মৌলবাদী নয়; অসংখ্য নাস্তিক মৌলবাদীদেরও আবির্ভাব ঘটেছে। তারা সারাজীবন নাস্তিক কারণ একবার হঠাৎ করে মনে হলো তারা নাস্তিক। এক মুখে দুই কথা বলা তাদের দিয়ে সম্ভব না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং ওয়াক্তের ফাঁকে ফাঁকে পর্নো ছবি দেখতে থাকা আস্তিক যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় শুধু আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে সামান্য মনোযোগ পাওয়ার তুচ্ছ আশায় গজিয়ে উঠা মানসিকভাবে অসুস্থ নাস্তিক। এই ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা নাস্তিকের দেশে হঠাৎ করে লাখ কিংবা কোটি টাকার সমান দামী হয়ে উঠেছিলেন হুমায়ুন আজাদ। সঠিক করে বলতে গেলে তাঁর দাম কোটি টাকা হয়নি, কোটি টাকা হয়েছিলো তাঁর খন্ডিত মস্তকের দাম। কেন? তিনি অবিশ্বাসী নাস্তিক ছিলেন তাই? না! তিনি অবিশ্বাসী ছিলেন সেই জন্য নয়; বরং এই জন্য যে, তিনি অবিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি জানতেন কেন তিনি অবিশ্বাসী ছিলেন, তিনি যৌক্তিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন কেন তিনি অবিশ্বাসী ছিলেন। অবিশ্বাসে সৌন্দর্য নেই, সৌন্দর্য যুক্তিতে।
পরিসংখ্যান ছাড়াই বলা যাবে, মৌলোবাদীরাই সবচেয়ে বেশি পড়ে পাক সার জমিন সাদ বাদ, তারাই নাভিশ্বাসে ব্যাগে নিয়ে ঘোরে আমার অবিশ্বাস। সেখানেই হয়ে যায় সর্বনাশ, চুরমাচুর হয়ে যায় বছরের পর বছর ধরে লালন করতে থাকা অপবিশ্বাস। রাস্তার মোড়ের অযথাই নাস্তিকের দুর্বল যুক্তি অট্টহাসিতে উড়িয়ে দেয়া গেছে, কিন্তু আজাদের যুক্তির কাছে উড়ে গেছে তাদের নিজের যত অর্থহীণ, অযৌক্তিক অপবিশ্বাসগুলি। আরব মরুর বুকে প্রচণ্ড পানির অভাবে সেখানকার বেহেস্ত কল্পনাকারীরা বেহেস্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার বলেছে, সেটাই বেহেস্ত যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা বয়ে যাবে। ঝর্ণা আর পানির লোভ হয়তো বর্বর আরবদের দেখানো যেত, কিন্তু নদীমাতৃক বাংলার মহান মোল্লা সম্প্রদায়, বছর বছর বন্যার পানিতে হাবুডুবু খেয়ে পানি আর ঝর্ণার লোভ বহু আগেই ত্যাগ করেছেন। সেটা না হয় ত্যাগ করা গেলো, কিন্তু চোখে কাজল দেয়া, দুধে আলতা গায়ের রঙ, বহু দিনের আরাধ্য সত্তরটা হুরপরীর যে কথা ছিলো, তার কি হবে? সেই লোভ যে ত্যাগ করা সম্ভব না। মদাসক্ত মাতাল যেমন সুস্থ হয়ে বুঝতে পারে, যত অবাস্তবই হোক, নেশার ঘোরে ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো খুব একটা মন্দ নয়; অতএব, আবারো মাতাল হওয়া যাক। তেমনি, যত ভালো করেই বুঝতে পারুক হুরপরী আর সুমিষ্ট খেজুর বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণাধারা ঘুমপাড়ানী মাসী-পিসির গল্পমাত্র, তবুও মাতালের নেশার জগতের মত তারা টিকিয়ে রাখতে চায়, অবাস্তব বুঝতে পেরেও তাদের ভাবনায় রাখতে চায় ঝর্ণাস্নাত খেজুর বাগান আর হেরেমখানার রাজ্য।
অতএব, গালগল্পপ্রিয় মৌলোবাদী সম্প্রদায় হুমায়ুন আজাদের দিকে তেড়ে আসবে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই ঠোঁটকাটা বাংলার আজাদ দিনে দুপুরে তাদের দেখিয়ে দিয়েছে, তারা নেশার ঘোরে মাতাল হয়ে আছে। এরকম সঠিক দুঃসাহস বাংলায় কম লোকই দেখাতে পেরেছে। মৌলোবাদীদের কাছে অবিশ্বাসী হওয়া হয়তো অতটা অপরাধ হয় না, যদি না কেউ যৌক্তিক হয়। হুমায়ুন আজাদ শুধু অবিশ্বাসী ছিলেন না, ছিলেন যুক্তিবাদী অবিশ্বাসী।দুটোর মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক। বাংলায় যুক্তিবাদী হওয়া যাবে, তবে সেক্ষেত্রে আস্তিক হতে হবে; বহু সায়দাবী, যুক্তিবাদীরা বাংলায় ধর্মব্যবসা করেন। আবার, নাস্তিক হতেও সমস্যা নেই, কিন্তু সেক্ষত্রে যুক্তিবাদী হওয়া যাবেনা, বোকা নাস্তিক সেজে চুপচাপ বসে থাকতে হবে। একই সাথে যুক্তিবাদী হওয়া এবং নাস্তিক হওয়া?- আশ্চর্য! এটা কি নানা বাড়ীর আবদার না-কি। এ-দেশতো এখনো মগের মুল্লুক হয়ে যায়নি। মুমিন ভাইয়েরা বেঁচে থাকতে সেটা হবেও না।
কিন্তু মুমিনগণ একটা জিনিস এখনো কেন বুঝতে পারছেন না সেটাই অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার- তাদের উচিত এখনি দেশে দেশে হুমায়ুন আজাদের পরিণতি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অবিশ্বাস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করা, সউদি আরব কিংবা কুয়েত এর তেলবান-দের খয়রাতি টাকায় ফান্ড করে বছরে কয়েকশো অবিশ্বাসী উৎপাদন করা; তারপর, রামদা দিয়ে কুপিয়ে সেই অবিশ্বাসীদের হত্যা করে শর্টকাট পদ্ধতিতে হেরেমখানাময় বেহেস্তে প্রবেশের জন্য অগ্রিম টিকেটর বন্দোবস্ত করা।কিন্তু এ-কী! ইন্সটিটিউট খোলাতো দূরের কথা, মুমিন মুরুব্বীগণ তাদের কন্যা-পুত্র, ভাই-বেরাদারদের পারলে হুমায়ুন আজাদের থেকে একশো হাত দূরে রাখেন, হুমায়ুন আজাদের বই দেখলে তার আশপাশ দিয়েও যেতে দেন না, তার চেহারাতো দূরে থাক, তার বইয়ের চেহারাও দেখতে দেন না সাত বছর থেকে বিশ্বাসের জগতে বিচরণ করে ধীরে ধীরে যে মিথ্যা বিশ্বাসের পর্বত তৈরী হয়, সে পর্বত আজাদের বইয়ের প্রচ্ছদ দেখেই হয়তো ভূপাতিত হয়ে যায়। উদীয়মান সূর্য দেখলে ক্ষুদ্র পোকামাকড়ের দল নির্বিচারে গর্তে ঢুকে যায়, কিন্তু তাই বলে সূর্যের শক্তিমত্তা কমে যায় না, কিছু যায় আসেও না। হুমায়ূন আজাদ কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা আর কেউ বিবেচনা করে না, বিবেচনা করলেও কিছু যায় আসে না; বরং হুমায়ুন আজাদকে গ্রহণ করতে পারার সক্ষমতা দিয়ে আজ একজন মানুষ কতটা মানুষ সেটা বিচার করা যায়।
বাংলার আজাদকে শত শত বছর বাঁচতে হতো না, বাঁচেনওনি তিনি। স্ফুলিংগ তৈরী করা কঠিন। কিন্তু একবার আগুন ধরে গেলে, স্ফুলিংগ নিভে গেলেও পোড়ানোর কাজ ঠিকই চলে। বাংলার আজাদ যে যুক্তির স্ফুলিংগ বাংলায় ধরিয়ে গেছেন, যে আগুন বাংলায় জ্বালিয়ে গেছেন, সে-আগুনে পুড়ে যাবে সমস্ত অনাচার, অপবিশ্বাস আর কুসংস্কার। কত সালের কত তারিখে কোথায় জন্মেছে সেটা সবার জন্য বলতে হয় না। বাংলার আজাদ বললেই হলো, হাজার বছরের জন্য সেটিই যথেষ্ট।
জুলাই ০৭, ২০১১
[email protected]
লেখাটি অনেক ভাল লেগেছে, আমার প্রিয় মানুষকে নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। ওনার মত পরিপূর্ণ মানুষ খুব কমই জন্মায়। 🙁
চমৎকার লেখা, আশা করছি চালিয়ে যাবেন।
ডঃ আযাদকে নিয়ে সব ধরনের লেখাই মনোযোগ দিয়ে পড়ি, এবারো তার ব্যতিক্রম নয় এবং আশাও ভঙ্গ হয়নি।
(Y)
ধন্যবাদ!
@পিড়ন ঠাকুর,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আজাদের লেখা বা আজাদকে নিয়ে লেখা পড়ার সময় আমারো কখনো মনোযোগের অভাব হয়নি।
ভালো থাকবেন। 🙂
আপনার এই সিরিজটি সত্যই আমার ভাল লাগছে। অজানা অচেনা মানুষদের কথা তো জানছিই, পাশাপাশি আরো ভাল লেগেছে আপনি অসীম সাহসী কিছু চেনা জানা মানুষদের নিয়েও লিখছেন। তসলিমাকে নিয়ে লিখেছেন আগে, এবারে হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে। তাকে আমার একটা লেখা আছে এখানে – স্মৃতিতে হুমায়ুন আজাদ। পড়েছেন বোধ হয়।
ভাল থাকুন, আরো লিখুন!
@অভিজিৎ,
অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা। আপনার লেখাটা আগেও পড়েছিলাম। তবে, হুমায়ুন আজাদের লেখা কিংবা হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে লেখা যতবার পড়ি ততবারই ভালো লাগে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।
(Y)
আযাদের পরিষ্কার বক্তব্য, সরাসরি উচ্চারন ও সাহসী মনোভাব একসাথে মেলা ভাব।বাংলাদেশে তসলিমা ছাড়া একমাত্র আযাদই ছিলেন এমন।
উনার কথায় ঝাঁঝ থাকে, যুক্তি গুলো একেবারে ভিতরে গিয়ে আঘাত করে।
পাক সার জমিন সাদ বাদে তিনি মৌলবাদীদের যেভাবে তুলে ধরেছেন তা আর কেউ করতে পারে নি।
শ্রদ্ধা বাংলার আযাদকে।
@রাহনুমা রাখী,
সহমত ও ধন্যবাদ। 🙂
@মইনুল রাজু
:clap (F)
@কাজী রহমান,
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ওনার দৃপ্ত বাচন আমাকে চমৎকৃত করে। বড় কোনো লেখা পড়ার সুযোগ হয়নি এখনও, ভবিষ্যতে হবে নিশ্চয়ই।
@কৌস্তুভ,
আপনি এই লিংকটাতে গিয়ে উনার প্রবচনগুচ্ছ দেখতে পারেন। আর http://www.esnips.com সার্চ করলে উনার অনেক লেখা পাবেন। যদিও আমাদের সবার উচিত হবে উনার বই কিনে পড়া। 🙂
http://www.munshigonj.com/MGarticles/HA/HAprabachan01.htm
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@মইনুল রাজু,
লিঙ্কটার জন্য ধন্যবাদ, কিন্তু ওনার প্রবচনগুচ্ছ আগেই পড়া, ওইটুকুও না পড়লে তো বলতাম ওনার কোনো লেখাই পড়া হয়নি 🙂
@মইনুল রাজু,
প্রবচনগুচ্ছের লিংকটা আপডেট করে দিবেন দয়া করে…
http://munshigonj.com/26296-2-2/
হুমায়ুন আজাদ বিতর্কিত ছিলেন, আত্মগর্বী ছিলেন, উদ্ধত ছিলেন, বেয়াদব ছিলেন। কিন্তু যে দেশ নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে, সে দেশে হুমায়ুন আজাদের মতো বেয়াদবের বড় প্রয়োজন। ধন্যবাদ রাজু, অনেকের ভীড়ে অনন্য হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে লেখার জন্য।
@ইরতিশাদ,
অনেক ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাই। যে কষ্ট করে তিঁনি নষ্টদের সাথে সংগ্রাম করে গেছেন, সেটা আমাদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। জীবিত কিংবা মৃত উভয় হুমায়ুন আজাদই সমানভাবে শক্তিশালী, সমানভাবে অনুসরণযোগ্য।
অনেকদিন পর আপনার মন্তব্য দেখে ভালো লাগলো। 🙂
আপনার অলঙ্কারপুর্ণ ল্রখাটী ভালো লাগলো।
আমার পর্যবেক্ষণও এইরকমই। পজিটিভলি দেখতে গেলে বস্তুত মর্টালি আহত হবার মধ্য দিয়েই বোধহয় হুমায়ুন আজাদ জানতে পারেন তার মুল্য মানুষের কাছে কতোটা উচ্চ ছিলো। এই জানতে পারাটুকু হুমায়ুন আজাদের ন্যায্য পাওনাই ছিলো।
@আল্লাচালাইনা,
একজাক্টলি। সারাজীবন তিনি দেখে এসেছেন মানুষ শুধু তার সমালোচনাই করেছেন। আহত হবার পর সবার সাথে সাথে তিনিও বুঝতে পেরেছেন, তাকে ভালোবাসে এরকম লোকজনের সংখ্যাও কম নয়। এর থেকে বড় শান্তি, বড় পাওনা একজন প্রথাবিরোধী লেখকের আর কী হতে পারে।
হুমায়ুন আজাদের মতো যুক্তিবাদীকে মারার জন্য এদেশে কোটি কোটি মুমিন মুসলমান এখনও রয়ে গেছে। কিন্তু আজ একজন হুমায়ুন আজাদের খুব দরকার।
@বাসার,
নতুন একজন আসলে তাকেও মেরে ফেলা হবে। তখন আমরা আবার বলবো এখন আমাদের আরেকজন দরকার। এর থেকে বরং আর না আসুক, না মরুক।
একদম তাই। সে আগুন দাউ দাউ করে বাংলার আকাশে বাসাতে আরো হাজার গুনে ছড়িয়ে পড়ুক এই আশাই করছি।
বরাবের মতো দারুন লেখা।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
ধন্যবাদ মামুন ভাই। আশা করি ভালো আছেন। 🙂
লেখা ভাল হয়েছে, তবে আর একটু বড় হলে ভাল হত। পরবর্তিতে অবশ্যই বড় লেখা দেখতে চাই। (F)
@সীমান্ত ঈগল,
ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তীতে বড় করতে চেষ্টা করবো। 🙂
অসম্ভব পছন্দ হয়েছে এই লাইনটি।
@লীনা রহমান,
অনেক ধন্যবাদ। 🙂
মইনুল রাজুর এই লেখাটি আমার একেবারেই ভাল লাগেনি। আমি বুঝতে পারছি না, একটা মন্তব্য লিখব, না কি আরেকটা ভিন্ন ও কঠিন লেখা লিখব? একটা ভাল লেখার জন্য যে গবেষনা করা দরকার, সেই সময় ঠিক এই মুহুর্তে আমার হাতে নাই। প্রাথমিক তথ্য আছে শুধু। খুব দেরি হওয়ার আগেই তাই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাখলাম।
এই লেখাটিতেও আমি সেই গবেষনার স্থানটি সম্পর্কে নির্মোহতার ছাপ দেখতে পাচ্ছি না। ভক্তের আবেগ বা উচ্ছাসকে আমি ছোট করছি না, যদিও এর বাইরে থেকে দেখতে চেষ্টা করাটাকে আমার কাছে বেশী গ্রহন যোগ্য। আমার মতে সেই নির্মোহ বিশ্লেষনের দিকটি এখানে চরম ভাবে অবহেলিত ও উপেক্ষিত হয়েছে।
@নাসিম মাহমুদ,
এই লেখা একেবারেই ভালো লাগবেনা সেরকম পাঠকই বেশি হবার কথা। অতএব, চিন্তিত হবার কোনো কারণ নেই।
ভক্ত কথাটাতে আপত্তি থাকলো। আমি কারো ভক্ত নয়। আবেগ শব্দটিও এখানে যথার্থ নয়। তবে, উচ্ছ্বাস শব্দটাতে আপত্তি করতাম না, যদি আপনার বানান ঠিক থাকতো। অন্যদিকে, নির্মোহ বিশ্লেষণ আমি করিনি। নির্মোহরাতো তাকে কেটে রক্তাক্ত করে ফেলেছিলো।
আর আপনি যে গবেষণা/ বিশ্লেষণ করতে চান সেটা সব বলে বেড়ানোর সময় ‘ণ’ দিয়ে বলবেন। না হলে আপনার গবেষণায়/বিশ্লেষণে কেউ আগ্রহী হবে না।
ধন্যবাদ।
তাঁর (বাঙলার আজাদ) নামে গত বছর অনেক কষ্টে আমি ও মৌলি আজাদ একটা কবিতা পুরস্কার চালু করেছি। এটাকে একটু মডিফাই করে দুই বছর পরপর হু আ সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে আগামী বছর থেকে। আমি মে ১৯, ২০১১ তে মৌলি আজাদ, মৌলির আম্মু, ও ওসমান গণি সাহেবের সাথে কথা বলে এসেছি। এখানে আপনাদের মন্তব্য দেখে খুব সুখবোধ করছি, ও সাহস পাচ্ছি।
@আদনান,
পুরস্কার-এর খবর পত্রিকাতে পড়েছিলাম। সাহিত্য পুরস্কার এর কথা শুনেও ভালো লাগলো। উনার পরিবারের প্রতি আমাদের শুভকামনা থাকলো।
দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় নজরুলের লেখা একটি কথিকা আমাদের পাঠ্য ছিল – দুরন্ত পথিক। সেসময় তা শুধু পরীক্ষার কথা ভেবে পড়েছিলাম। দুরন্ত পথিক হত্যাকারীর আঘাতে মরতে মরতে বলে যাচ্ছিল, “আমার তো মৃত্যু নেই, আমি আবার আসব।”
@তুহিন তালুকদার,
হুমায়ুন আজাদ মরে গিয়ে যেন আরো বেশি সজীব রূপ নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন।
সত্যিই খুব ভালো লাগলো লেখাটা। হুমায়ুন আজাদের কিছু যুক্তি আমি মেনে নিতে পারি না, কিন্তু তাতেও উনার প্রতি মুগ্ধতা কমে নি। এই যে বললাম উনার কিছু যুক্তি আমি মেনে নিতে পারি না- এটাও কিন্তু উনার কাছ থেকেই আমি শিখেছি।
হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জামিন সাদ বাদ’ আমি পড়ি ৮ম শ্রেণীতে থাকাকালে। তখনো আমি নাস্তিক হই নি, বরং ভালো মুমিন বান্দাই ছিলাম বলা যেতে পারে। বইটা পড়ার পর আমার সমস্ত পৃথিবী দুলে উঠেছিল, হয়ত বর্ণনা করতে পারব না ঠিক কেমন ছিল সেই অনুভুতিটুকু। অনেক পরে আমি বুঝেছি আমার বিশ্বাসের দেয়ালে ফাটল তখনই দেখা দিয়েছিল।
@নিটোল,
সহমত। হুমায়ুন আজাদের অনেক যুক্তির সাথে আমার নিজেরো দ্বিমত আছে, কিন্তু যুক্তির সৌন্দর্য উপলব্ধি করার জন্য উনার মত মানুষের লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
@নিটোল,
মানুষের তো কিছু সমস্যা থাকবেই। দেখতে হবে তাঁর উদ্দেশ্য সৎ কিনা।
আদনান
@আদনান, ভাই, সৎ-অসতের ব্যাপার নয়। আমি বলছিলাম উনার যুক্তির সাথে দ্বিমত পোষণ করার যে শক্তি আমি পেয়েছি সেটা উনার কাছ থেকেই। এ কারণেই আমি তাঁর অনুরাগী।
এটা কি ২০০৪ হবে না?
@নিটোল,
অনেক ধন্যবাদ। ঠিক করে দিলাম। 🙂
@আদনান,
আপনার এই ধারনার উৎস কোথা থেকে এল আমার ঠিক বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে এখনো মৌলবাদী চিন্তা চেতনা থেকে বের হয়ে উঠে আসতে পারেনি বরং বলা যায় মৌলবাদ ক্রমশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।ব্যবসায়ীদের দাবীর প্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন টা রোববার করতে সাহস পায়নি তথাকথিত বাঘ সিংহকে ঘোল খাওয়ানো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর সংবিধান সংশোধন নিয়ে বর্তমান সরকারের লেজেগোবরে অবস্থাটা লক্ষ্য করুন।
হু আ যে এখনো এক শ্রেনীর লোকের কাছে চরম ঘৃণার পাত্র রয়ে গেছে তা জানতে দেখুন
@রাজেশ তালুকদার,
কোন রাজনৈতিক সরকার দিয়ে মৌলবাদ নির্মূল সম্ভব না, সেটা আমরা বুঝে গেছি। এখন একমাত্র ভরসা যুক্তিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সেটাও খুব একটা সহজ নয়।
আমার সবসময়ই মনে হয়েছে যে হুমায়ুন আজাদকে আসলে কেউ ঘৃণা করেনা। আসলে তাঁর জ্ঞানকে সবাই ভয় পায়, কেননা তাঁর জ্ঞানের পাশে সবাই নিজেকে খুব ক্ষুদ্ররুপে খুঁজে পায়। তাঁর জ্ঞানকে সবাই এতো ভয় পায় যে তাকে সরিয়ে না ফেলা পর্যন্ত তারা শান্তিতে থাকতে পারিনি। কিন্তু তাদের এই শান্তি থাকবেনা, কেননা দিনে দিনে মৃত হুমায়ুন আজাদই বেঁচে উঠবেন আরো ভয়াবহ রুপে।
@আদনান,
আপনি একটু অপটিমিস্টিক হয়ে বলছেন কেউ ঘৃণা করে না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা ঘৃণা করে না, কিন্তু তারা বুঝেনা যে তারা ঘৃণা করে না। অন্যদিকে, কিছু কিছু মানুষ আছে যারা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। এটাই বাস্তবতা। বাংলায় ভালোবাসা অপরাধ আর ঘৃণা করা সামাজিক ব্যাধি।