১৯৯৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আমেরিকার নেতৃস্হানীয় সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল সিএনএন গত এক হাজার বছরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসাবে চেঙ্গিস খানকে “ম্যান অব দ্য মিলেনিয়াম” হিসাবে নির্বাচিত করে। আধুনিক ইতিহাসবিদরা মনে করেন তার দোষ ত্রুটির তুলনায় সাফল্যের পরিমাণ অনেক অনেক বেশী ছিলো। চেঙ্গীস খান ছিলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্ব্বৃহত অবিচ্ছিন্ন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
১২২৭ সালে তার মৃত্যুর সময় পীত সাগর থেকে শুরু করে ইরান, ইরাক, এবং দক্ষিণ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার সাম্রাজ্য। ১২০৬ সালের মধ্যেই মঙ্গোলিয়ার সবগুলো ছোট-বড় গোত্রকে একত্রীভূত করে বৃহত্তর মঙ্গোলিয়ার পত্তন ঘটান তিনি। এই তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগও পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ তাকে চেনে অন্যতম একজন নৃশংস যুদ্ধবাজ নেতা হিসাবে। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই যে চেঙ্গীস খান বহু নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছেন তবে সেই সব নৃশংসতা ক্রুসেডারদের তুলনায় খুব বেশী কিছু যে ছিলো তা মনে হয় বলা যাবেনা। তবে তার জীবনের ঘটনাবলী নির্মোহ ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে তিনি খুব সহজেই আধুনিক নৈতিকতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়ে পরিচিতি পেতে পারেন একজন মহান মানুষ হিসাবে। একবার তার শাসনের আওতায় যারা এসেছে তারা অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় অনেক বেশী নিরাপদ, প্রগতিশীল, এবং স্বাধীন ছিলো। পৃথিবীর অন্যতম দূরদর্শী নেতা হিসাবে চেঙ্গীস তার শাসনামলে একটি দেশ, একটি ভাষা, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা, পোস্ট অফিস/পোনি সার্ভিস, লিখিত আইন ব্যবস্থা, টোল রোডের নেটওয়ার্ক সহ অন্যান্য আরও অনেক নতুন জিনিষের গোড়াপত্তন কিংবা প্রচলন শুরু করেন।
তৃতীয় ক্রুসেডে (১১৮৯ – ৯২) কিং রিচার্ড উত্তর ইসরায়েলের বন্দর শহর অ্যাক্রে বহুদিন অবরোধের পরে পরিশেষে দখল করে নেন। সুলতান সালাহউদ্দীনের সাথে অঙ্গীকার করেন বেসামরিক নাগরিকদের কোন ক্ষতি সাধন করবেন না। কিন্তু দখল করে নেয়ার পর রিচার্ড সকল মুসলিম, তাদের স্ত্রী, এবং শিশুদের হত্যা করেন। সেই রিচার্ডকেই অনেক পস্চিমা ইতিহাসবিদরা এবং বিশেষ করে ইংরেজরা ভালবেসে “সিংহ হৃদয়” রিচার্ড নামে ডেকে থাকেন।
বানু কুরাইজা গোত্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে সাবালক সকল বয়সের পুরুষকে হত্যা করার আদেশ দেন মুসলমানদের চোখে পৃথবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মোহাম্মদ। একদিনে প্রায় সাতশ থেকে নয়শর মত লোককে মেরে ফেলা হয় গলা কেটে এবং নারী ও শিশুদের দাস/দাসী হিসাবে মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হয় । কিন্তু এরকম ঘটনাও মোহাম্মদের অনুসারীদের মাঝে তাকে সর্কালের সেরা মানুষ হিসাবে দাবী করা থেকে বিন্দুমাত্র বিরত রাখতে পারেনি এবং পারবেওনা।
যুদ্ধের অজুহাতে মানুষ মারাটা কারও ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার ব্যাপারে কোন বাধা সৃষ্টি করেনি বা করেনা। এরকম অসংখ্য নজীর ইতহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই সচেতনভাবেই চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ হত্যার অভিযোগ আছে তা এখানে আলোচনার বাইরে রাখব। যুদ্ধক্ষেত্রে তার নিষ্ঠুরতার ব্যাপারে কোন সংশয় নেই, সংশয় নেই তার বহু বিবাহ (৬ টি) এবং অসংখ্য কনকিউবাইনের ব্যাপারেও। কিন্তু ইতিহাস আমাদের স্বাক্ষী এ দুটি ব্যাপারের কোনটিই একজন মানুষের ভাল মানুষ কিংবা শ্রেস্ঠ মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কোন সমস্যাই না।
বাবা ইয়েসুগেই এবং মা ইয়েলুন উজিনের বড় সন্তান তেমুজিন ১১৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তেমুজিনের জন্মের দিনই বাবা ইয়েসুগেই পুরোনো শত্রু তাতারদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে দুজন বন্দী তাতার নেতাকে বন্দী করে নিয়ে আসেন। তাদের একজনের নাম ছিলো তেমুজিন। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে পরাজিত শত্রু নেতার নামে বাবা ইয়েসুগেই ছেলের নাম রাখেন তেমুজিন। ১২০৬ সালে তেমুজিন যখন সমগ্র মঙ্গোলিয়ার খান নির্বাচিত হন তখন নতুন নাম নেন চেঙ্গিস খান। চেঙ্গিস নামের অর্থ হলো universal ruler বা সারা বিশ্বের শাসক। চেঙ্গিস খানের যখন ৯ বছর বয়স তখন তার বাবা ইয়েসুগেই কেরাইট গোত্রের বোরটের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেন। বোরটে ছিলো চেঙ্গিসের চেয়ে বয়সে ১ বছরের বড়। মঙ্গোল রীতি অনুযায়ী বিয়েটা ছেলে-মেয়ে সাবালক হওয়ার পরেই হত। বিয়ে ঠিক হওয়ার কিছুদিন পর পুরোনো এক তাতার শত্রু ইয়েসুগুইকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে। নিজ গোত্রের কিছু কুচক্রী লোক বালক চেঙ্গিসের নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে দলবল সহ মা, ভাই বোন সহ চেঙ্গিসকে গোত্র থেকে বের কর দেয়। এর পরের সাত বছর চেঙ্গিস খানের জীবন ছিলো এক ভয়াবহ কঠিন সংগ্রামের জীবন। মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ন বিরাণ সমতল ভূমিতে গাছপালার শিকড়-বাকড় আর খরগোশ জাতীয় প্রাণী শিকার করে বেঁচে থাকবার সংগ্রাম। ১১৭৯ সালে চেঙ্গিসের বয়স যখন ১৭ বছর এবং অবস্হার বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে তখন সে তার বাগদত্তা বোরটেকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কেরাইট গোত্রে উপস্হিত হয়। বোরটেও এতদিন তেমুজিনের অপেক্ষায় ছিলো। বিয়ের কিছুদিন পরেই ইয়েসুগেইয়ের আরেক পুরোনো শত্রু মেরকিটরা চেঙ্গিস এবং তার পরিবার এবং সহোযোগীদের উপর হামলা চালায় এবং বোরটেকে ধরে নিয়ে যায়। অসহায় চেঙ্গিস স্ত্রীকে উদ্ধার করার আশায় বাবা ইয়েসুগেইয়ের পুরোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেন। উপযুক্ত সময় এবং লোকবলের অভাবের কথা বলে তারা কিছুদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেয় এবং প্রায় একবছর অপেক্ষার পর মিত্রদের সহায়তায় মেরকিটদের আক্রমণ করে চেঙ্গিস খান স্ত্রী বোরটেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। উদ্ধার করার সময়ই বোরটে সন্তান সম্ভবা ছিলো। এর কয়েকমাস পর বোরটে জন্ম দেন তাদের বড় ছেলে জুচি’র। চেঙ্গিস খান নিজে কোনদিন জুচিকে নিয়ে কখনও দ্বিধা দ্বন্দে ভোগেননি। এমনকি তার ভয়ে কেউ কখনও জুচির পিতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন করার সাহস পায়নি। এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় এর বহুদিন পর খোয়ারিজম সাম্রাজ্য আক্রমণের আগের দিন উত্তরাধিকার মনোনীত করার উদ্দেশ্যে তিনি তার সব জেনারেলদের এবং ছেলেদের ডেকে পাঠান। বড় ছেলে জুচিকে তার মতামত জিজ্ঞাসা করলে মেজ ছেলে চাহেতাই (চাগেতাই) আপত্তি করে
ওঠে এই বলে যে, “পিতা আপনি জুচিকে সবার আগে জিজ্ঞাসা করলেন এর মানে এই কি যে আপনি সিংহাসনের দায়িত্ব তাকেই দিয়ে যাবেন? কিন্তু সেতো মেরকিটদের বংশধর। তার কথা কিভাবে মেনে নিতে পারি?” এ কথায় জুচি ক্ষুব্ধ হয়ে বলে ওঠে, “পিতার এ ব্যাপারে কোন আপত্তি নাই, তুমি কোন সাহসে এরকম কথা বলো?” একথায় দুভায়ে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলে চেঙ্গিস খান অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন, “জুচি আমার বড় সন্তান, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে কেউ যেন আর কোন কথা না বলে।” সমঝোতা হিসাবে দুভাইয়ের সম্মতি নিয়ে তাদের দুজনকেই বাদ দিয়ে সেজভাই উকুতাই’কে (উগেদাই) তার উত্তরসূরী হিসাবে মনোনীত করেন।
চেঙ্গিস তার জীবনে বোরটে ছাড়াও আরও পাঁচজনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু আর কাউকেই তিনি তার ছোটবেলার ভালবাসা বোরটের মত বোধহয় ভালবাসেননি। তিনি সবসময়ই বোরটের পরামর্শ শুনতেন এবং তা প্রয়োজনে গ্রহণও করতেন। মেরকিটদের কাছে নির্যাতিত সেই দুঃসহ এক বছরের ঘটনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বোরটের প্রতি তার ভালবাসায় চিড় ধরাতে পারেনি।
চেঙ্গিস খান ছিলেন আপাদ মস্তক একজন ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ। আজীবন তার নিজের ধর্ম শামানে বিশ্বাসী ছিলেন। শামানরা আকাশ দেবতায় বিশ্বাসী ছিলো। ১২০৬ সালে যখন ঐক্যবদ্ধ মঙ্গোলিয়ার খান নির্বাচিত হন তখন শামান ধর্মের প্রধান পুরোহিত কুকচু ঘোষণা করেন যে আকাশের দেবতাদের পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী চেঙ্গীস খান সমগ্র পৃথিবী শাসন করার জন্যে এসেছেন। চেঙ্গীস নিজেই কুকচুর এই কথা বিশ্বাস করতেন। আর তাইতো ঐক্যবদ্ধ মঙ্গোলিয়ার খান নির্বাচিত হয়ে বলেছিলেব, “The Sky has ordered me to govern all peoples. With protection of the everlasting Sky I defeated Keraits and attained to supreme rank.” আর এ কারনেই তিনি তার নতুন নাম নিয়েছিলেন চেঙ্গিস খান বা সারা পৃথিবীর শাসনকর্তা। কিন্তু তার পরও তিনি ছিলেন সব ধর্মের প্রতি অত্যন্ত সহনশীল। তার কড়া নির্দেশ ছিলোসব ধর্মকেই সমান গুরত্ব দিতে হবে এবং কোন ধর্মকেই অন্য ধর্মের উপরে স্হান দেয়া যাবে না, এমন কি তার নিজের ধর্ম শামানকেও না। চেঙ্গীস খান সারা জীবনে বহু ধর্মের ধর্মীয় গুরুদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং খ্রীস্টান, বৌদ্ধ, ইসলাম, তাওবাদ সহ অন্যান্য ধর্ম, তাদের সৃষ্টিকর্তা কিংবা দেবতাদের সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি আদেশ দিয়েছিলান কোন ধর্মের অনুসারীরাই ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে চরমপন্হা অবলম্বন করতে পারবে না।
যেকোন বিষয়ে দক্ষ, পারদর্শী, জ্ঞানী, গুণী ব্যক্তি, চিত্রকর, ভাস্কর, প্রকৌশলী, এবং ধর্মীয় গুরুদেরকে তিনি সন্মানের চোখে দেখতেন তার কড়া নির্দেশ ছিলো এধরণের মানুষদের যেন কোন ভাবেই হত্যা করা না হয়। আর অন্য ধর্মীয় গোত্রের লোকদের, বিশেষ করে ধর্মীয় গুরু এবং বিশেষ কাজে পারদর্শী যেমন প্রকৌশলী, চিত্রকর, এবং অন্য জ্ঞানী মানুষদের কর মওকুফের ব্যবস্হা রেখেছিলেন। তবে শান্তি নষ্ট করতে পারে এমন ধর্মীয় অসহিন্ষুতার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন খড়গ হস্ত।
চেঙ্গীস খান এবং তার মা জীবনে মোট চার জন ছেলেকে পালক হিসাবে গ্রহন করেন। মজার ব্যাপার হলো এরা সবাই ছিলো শত্রু গোত্রের ছেলে এবং তাদের সবার বয়স ছিলো খুবই অল্প। মেরকিটদের সাথে যুদ্ধের পর চেঙ্গিস ৫ বছর বয়সী কুচুকে (মেরকিট) নিয়ে এসে তার মাকে দেন। ইয়েলুন ছেলেটাকে পছন্দ করে ফেলেন এবং তাকে তার পালক ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে কুচু একজন প্রসিদ্ধ মঙ্গোল জেনারেল হয়েছিলেন। ১১৯৬ সালে চিরদিনের শত্রু তাতার বাহিনীকে জিন রাজ্যের ওয়াং ইয়ানজিনের সহায়তায় যুদ্ধে পরাজিত করে। এই যুদ্ধের পর এক তাতার বালককে নিয়ে এসে মাকে দেন। এই ছেলেকেও ইয়েলুন পালক ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেন। এই তাতার বালক শিজি হুতুহু পরবর্তিকালে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সর্বোচ্চ বিচারকের পদটিও চেঙ্গিস খান সৃষ্টি করেছিলেন দেশের আইন কানুন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য। ঝুদের সাথে যুদ্ধে চেঙ্গিস বোয়েরহু নামে আরেকটি ছেলেকে এনে তার মাকে দেন। ইয়েলুন একেও পালক ছেলে হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। বড় হয়ে বোয়েরহু নামকরা যোদ্ধা হয়েছিলো।
চেঙ্গীস খান সাহসী এবং বিশ্বস্ত মানুষদের পছন্দ করতেন এবং বিনিময়ে ফেরৎ দিতেন সেই বিশ্বস্ততা। তিনি মানুষ চিনতে খুব কমই ভুল করতেন। একের পর যাদের তিনি পরাজিত করেছেন পরবর্তীতে তারাই তার বিশ্বস্ত অনুসারীতে পরিনত হয়েছিলো। তাতারদের সাথে যুদ্ধে ঝু গোত্রের যোগ দেবার কথা ছিলো। কিন্তু তারা তা না করে চেঙ্গিস খানের পিছিয়ে পরা সৈন্যদের আক্রমণ করে এবং তাদের সম্পদ লুন্ঠন করে। চেঙ্গিস খান এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাতারদের পরাজিত করেই আবার ঝু’দের আক্রমণ করে এবং পরাজিত করেন। ঝুদের পরাজিত করে চেঙ্গিস খানে সবচাইতে বড় যে পুরষ্কারটি লাভ করেন তার নাম হলো ‘মুহুলাই’। মুহুলাইয়ের সাহসীকতা এবং বীরত্বের জন্য চেঙ্গিস তাকে নিজের দলে নিয়ে নেন। পরবর্তী কালে মুহুলাই কুচুর মতই চারজন বিখ্যাত মঙ্গোল জেনারেলের একজন হন। ১২০২ সালে চেঙ্গিস তায়িচুদের সাথে যুদ্ধে তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। যুদ্ধের পর ঝিবি নামে এক অসীম সাহসী যোদ্ধা তার কাছে এসে বলেন, ” গতকাল আমার তীরেই আপনি আহত হয়েছিলেন। আপনি যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তবে আমি আপনার দলে যোগ দিতে চাই।” চেঙ্গিস তার সততায় মুগ্ধ হয়ে ঝিবির ইচ্ছা পূরণ করেন। পরবর্তী কালে ঝিবি চারজন বিখ্যাত ভ্যানগার্ডের একজন হয়েছিলো।
প্রথম লিখিত মঙ্গোল ভাষা সৃষ্টির সাথে সাথে চেঙ্গিস তার রাজ্যের জন্য ইয়াসা নামে পরিচিত প্রথম লিখিত আইন বা কোড-অব-ল তৈরী করেছিলেন। উইঘুরদের সাথে যুদ্ধে চেঙ্গিস তাতাঙ্গেরকে বন্দী করেন। তাতাঙ্গের ছিলেন একজন উইঘুর ভাষাবিদ। চেঙ্গিসের আদেশে তাতাঙ্গের উইঘুর ভাষার সাহায্যে লিখিত মঙ্গোল শব্দ সৃষ্টি করেন এবং প্রথমবারের মত লিখিত মঙ্গোলিয়ান ভাষার সৃষ্টি করেন। বর্তমানের মঙ্গোলিয়ান ভাষা সেই লিখিত উইঘুর-মঙ্গোলিয়ান ভাষারই আরও উন্নত সংস্করণ।
তথ্য আদান প্রদান ছিলো চেঙ্গীস খানের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর একারণে তিনি চালু করেছিলেন ইয়াম (Yam) পদ্ধতির। ইয়াম পদ্ধতির কারণে তার তথ্য বাহকেরা দিনে প্রায় ২০০ মাইলেরও বেশী পথ পাড়ি দিয়ে এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় তথ্য নিয়ে যেতে পারত। এজন্য তিনি বিভিন্ন চেকপোস্ট তৈরী করেছিলেন যেখানে সবসময়ই তথ্য বাহকদের জন্য ঘোড়া, খাদ্য, এবং পানির সুব্যবস্হা থাকত। এর রক্ষাণাবেক্ষনে নিয়োজিত ব্যক্তিরা চাহিবা মাত্র তথ্য বাহকদের এইসব সেবা প্রদান করতে বাধ্য ছিলো। ফলে দূরবর্তী অঞ্চলের মধ্যে সবসময়ই খুব সহজেই যোগাযোগ রক্ষা করতে সমর্থ ছিলেন। অনেক সময় সাধারণ নাগরিকরাও তথ্যবাহকদের তাদের নিজেদের গুরুত্বপূর্ন খবর আদান-প্রদানের কাজে ব্যবহার করতে পারত। তথ্য বহনের এই রাস্তা ধরেই তিনি ব্যবসায় নিয়োজিত দেশী বিদেশী ক্যারাভানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছিলেন। তার কড়া নির্দেশ ছিলো কেউ যেন এ সমস্ত ক্যারাভান আক্রমণ না করে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার শাস্তি ছিলো ভয়াবহ। আর এর ফলেই সম্ভব হয়েছিলো পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে ব্যবসা-বানিজ্য, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আদান প্রদানের।
চেঙ্গীস খান অন্য সব মঙ্গোলিয়ানের মতই ছিলেন অশিক্ষিত। বালক বয়সে বাবাকে বিষ প্রয়োগে শত্রুরা হত্যা করলে পরিবার সহ যুদ্ধবাজ গোত্র থেকে বিতারিত হয়েছিলেন এবং বছরের পর পর বছর নিজ গোত্রের এবং বাইরের পুরোনো শত্রুদের কাছ থেকে পালিয়ে বেরিয়েছেন। ছোট বেলায় দুর্ঘটনাবশতঃ সৎভাইকে হত্যা করেন। তার স্ত্রীকে শত্রুরা অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলো। ত্যার সবচাইতে কাছের বন্ধু তাকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করেছে। এতসব কিছুর পরও তার একটা “ভিশন” ছিলো; দূরদর্শিতা ছিলো সেটাকে বাস্তবায়িত করার। একটা নিরুপদ্রব সাম্রাজ্য গড়েছিলেন যেখানে ছিলো ধর্মীয় স্বাধীনতা, শিল্পীর স্বাধীনতা, শিক্ষা এবং আন্ত্রজাতিক বাণিজ্য সহায়ক। চেঙ্গীস যে শুধুমাত্র একজন সামরিক জেনারেলই ছিলেন তা নয় তিনি ছিলেন একজন মহান নেতাও। যদিও চেঙ্গীস তার জীবদ্দশাতেই বিশাল বড় বড় সব সাফল্য অর্জন করেছিলেন তবুও তিনি তার প্রতিকৃতি আঁকাননি, কোন মনুমেন্ট তৈরী করাননি, মুদ্রার পিঠে নিজের ছবি বসাননি, তার গৌরব গাঁথা নিয়ে গান কিংবা কবিতা লেখাননি, প্রাসাদ কিংবা উপাসণালয়ের নাম নিজের নামে রাখেননি। তিনি যখন মারা যান তখন তার জন্মভূমিতে কবর দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন এবং কোনরকম স্মৃতিসৌধ বানাতে নিষেধ করে গিয়েছিলেন।
একজন অশিক্ষিত, বর্বর, যুদ্ধবাজ মানুষের পক্ষে এতসব সাফল্য অর্জন করা কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো সেটা হৃদয়াঙ্গম করা আমার মতে এককথায় একটি অসম্ভব ব্যাপার।
সূত্রঃ
1. Genghis Khan – His Life and Legacy By Paul Ratchnevski
2. Genghis Khan By Robert N. Webb
3. Genghis Khan – Heavens Proudest Son of An Era By Liu Yi and Dan Pool
4. Rulers of The world By Philippe Gigantes
5. Bringing Genghis Khan to America (Interview with Don Lessem) By Kallie Sxczepanski
ভাই খালি খালি ফালতু কথা বইলা লাভ আছে??.. সঠিক তথ্য পেতে হলে বই পড়েন “সিক্রেট বুক অফ মঙ্গলস্”।
(হোরাস) সঠিক তথ্য দিবেন উল্টোপাল্টা দিবেন না।😠
Vai,লেখাটা অনেক ভাল লেগেছে। তাইমুর লং সম্পর্কে কিছু লিখলে খুশি হব
বঙ্কিম নাকি কোথায় বলেছিলেন যে জীবনের উদ্দেশ্য হলো : “আহার নিদ্রা আর মৈথুন!”
স্বার্থপর জিনের ভাষ্য অনুযায়ী প্রতিটি জীবিত প্রাণী আসলে তাদের জিনের বাহক বৈ কিছু নয়| আমাদের নশ্বর জীবনের পেছনে কাজ করছে স্বার্থপর জীনেদের বদমাইশি| যারা শুধু নিজেদের কপি রেখে যেতে চায়| আজকের দিনে মঙ্গোলিয়া আর মধ্য এশিয়াতে কোটি কোটি লোক নাকি চেঙ্গিজের থেকে উদ্ভুত| মানে চেঙ্গিজ যে অসংখ্য গর্ভে নিজের বীর্য নিক্ষেপ করে গেছে, তার সন্তান সন্ততিরা আজ কলেবরে কয়েক কোটি| সেই হিসেবে চেঙ্গিজ চরম শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান রেখে গেছে কোনো সন্দেহ নেই! মুহাম্মদ বা যিশু বা বুদ্ধকে এই বিষয়ে চেঙ্গিজ লক্ষ খানেক গোল দেবে|
তবে ইয়ার্কি থাক| ওই রকম একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ খুঁজতে যাওয়া বোকামি| গত হাজার বছরের শ্রেষ্ট মানুষ বলে কিছু হতে পারেনা| আমাজোনের যে আদিবাসীরা বাস করছে বা এস্কিমোদের চেঙ্গিজ কে নিয়ে কিসসু যায় আসেনা| বরং আমার মতে সমগ্র মানব জাতির উপর প্রভাব বিচার করলে রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বর থেকে বেশি আসবে বৈজ্ঞানিকদের নাম| নিউটন, ফ্যারাডে, আইনস্টাইন, টেসলা, হাতর্জ, জগদীশ বস, ডারউইন, পাস্তুর, ফ্লেমিং, ফাইনম্যান, ক্রিক-ওয়াটসন দের নাম| আজকে আমাদের চাড্ডি থেকে কম্পিউটার, বাড়ি গাড়ি, জীবনদায়ী ওষুধ থেকে দুধের বোতল এদেরই কল্যানে| চাঙ্গেজি কারনামা বা মুহাম্মাদী মাস্তানি না জানলেও কারো কিছু ক্ষতি হবে না| কিন্তু এদের কীর্তিকলাপ সম্বন্ধে যে জাতি বা মানুষরা অজ্ঞ, তাদের একবিংশ শতাব্দিতে থাকা আর মধ্যযুগে থাকা সমান!
মোহাম্মদ ছিলেন শ্রেষ্ঠ নবী তার সাথে আপনি কারো তুলনা করতে পারেন না।
হুম্ম, অনেকে হিটলারকেও মনে হয় মহামানবের আসনে বসাত যদি এবং কেবল যদি সে যুদ্ধে জিতত 😕
@সংবাদিকা, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মন্তব্যের কল্যাণেই অনেক পুরাতন একটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য ( নাকি দুর্ভাগ্য কোনটি বলব?) হল।
চেঙ্গিস খানের মত পিশাচকে কেউ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বানাতে পারে, এ এক অন্যরকম আর বিরল অভিজ্ঞতা। 🙂
অনেক পুরাতন লেখা।চেঙ্গিস খান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ?আমার মনে হয় এই কথা আমি এই প্রথম শুনলাম। আচ্ছা হিটলার , স্ট্যালিন এরা সেই জায়গাটা নিতে পারল না কেন? এরাও তো ওই একই রকম খুনি।
(N) (N) (N)
@অচেনা, হিটলার আর স্ট্যালিনের চেহারা ভাল না তাই।
@হোরাস,
বাহ খোঁচা তো ভালই মারতে পারেন। খোঁচা মেরে কি কোনদিন ভালকাজ কেই করতে পেরেছে?আপনার সাথে অনেকেই দ্বিমত করতে পারে, কিন্তু তাদের কি খোঁচা দেয়াটা খুব জরুরী বলে আপনি মনে করেন?
@হোরাস,
কই আমার কাছে তো খান সাহেবের ( চেঙ্গিস) চেয়ে এই দুইজনের চেহারাই ভাল লাগে বেশি। 🙂
এ বাক্যেটিতে আপনি “ক্রসেডারদের হত্যাকান্ডের সাথে চেঙিসীয় হত্যাকান্ডের” তুলনা করে “চেঙিসীয় হত্যাকান্ডের” বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করলেন নাকি?
বাক্যটি সেরকমই শুনালো।
বাহ! হায়রে মানবতা!
আমি অপেক্ষা করছি, আপনি কোন দিন আবার “পাকি-নপুংসক-অমানুষ আইয়ুব খানকে” মহান মানব বলে পোস্ট দিবেন সেটার জন্য।
এরপর আপনি আপনার এই পোস্টে মুহাম্মদ (সা:)-এর সময়কার ও কিং রিচার্ডের ক্রসেডীয় সময়ের নৃশংসতার সাথে চেঙিসীয় নৃশংসতার “তুলনা করলেন” ও চেঙিসকে জাতে তোলার চেষ্টা করলেন।
নৃশংসতার কোন তুলনা হয় কি?
নৃশংসতা তো কমপ্লিটলি অমানবিক। কম নৃশংসতা বা, বেশি নৃশংসতা বলে কিছু নেই।
এক নৃশংসতার সাথে আরেক নৃশংসতার তুলনা করে কোনটিকে বৈধতা দেয়ার প্রয়াস কোন মানবতাবাদীর হতে পারে না।
যত ভাল কাজই করুক না কেন, পররাজ্য লোভী-আগ্রাসী-অহেতুক মানব হত্যাকারী চেঙিস খানকে মহামানব বলতে গেলে আমার পাকিদের কথা মনে পড়ে যায়।
সরি, আমার মুখে থু থু এসে গেল।
এই লেখাটা পরে পড়ার জন্য রেখে দিলাম। আমাদের সাথে এক ছেলে পড়ত সবাই তাকে টাইটেল দিয়েছিল
চেঙ্গিস নামে। এখন তাকে সবাই সেই নামেই জানে। কী আশ্চর্যের কথা তাই না?
@আফরোজা আলম, জি অবশ্যই আশ্চর্যের কথা। তার থেকেও বড় আশ্চর্যের কথা হল বাংলাদেশে অনেক বাবা মা রাই ছেলের নাম আদর করে হিটলার রাখে। আর আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপু যে,বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ হিটলারের রীতিমতো পুজা করে কারণ সে ইহুদী নিধন করেছিল বলে।কি সভ্য সমাজেই না আমরা বাস করি। 🙁
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
ফেসবুকে দেখেছি গোলাম আজম কেও অতিমানব সাজিয়ে তার গুনগান করা হচ্ছে। এই দেশে সব সম্ভব।
@সবুজ পাহাড়ের রাজা, পোস্টের হেডিং দেখেই উত্তেজিত? ভিতরের লেখা মনযোগ দিয়ে পড়ে হয়ে ওঠেনি?
আপনি বলেছেন,
এক্সাক্টলি দ্যাট ইজ মাই পয়েন্ট। কিং রিচার্ড যদি সিংহ হৃদয় হতে পারে, মুহাম্মাদ যদি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ হতে পারে তবে চেঙ্গিসের নৃশংসতা বাদ দিয়ে তার ব্যবক্তিজীবন কেমন ছিলো সেটা আলোচনা করা যাবে না কেন। আর যদি নৃশংসতার কারণে তাকে বাদ দিতে হয় তবে অন্যরা কেন বাদ যাবে না। সেটাই আমার প্রশ্ন। আশা করি উত্তেজনা কমেছে।
@হোরাস,
আমি মুহাম্মদকে সর্বকালের নিকৃষ্ট মানুষ আর নিকৃষ্ট খুনি বলেই মনে করি। আর তাদের পরেই আছে হিটলার, পাকিস্তানী খুনি আর দোসর রাজাকার রা,স্ট্যালিন আর চেঙ্গিস খান কে।অ্যাটিলাও কম ছিল না।
ধন্যবাদ।
@অচেনা,
আপনাদের অনেকের কাছেই এমন মন্তব্য আগেও এই ব্লগে পড়েছি। কিন্তু কেন? মুহাম্মদ সাঃ এর প্রতি এই বিজাতীয় বিদ্বেষের কারন কি? কোনদয়া মায়াই কি তিনি কোনদিন কারো প্রতি দেখান নাই? কেন আপনারা সবাইকে বাদ দিয়ে একজনের পিছনেই লাগেন সেটা আমার বোধগম্য না।
ওল্ড টেস্টামেন্টের কোথায় জানি পড়েছিলাম মনে নাই পড়ে দেখবেন, পরেছিলাম যে এক টেকো নবীকে ( সম্ভবত ইলিশা হবেন ( এলিয়াহ নন) ) একদল বালক টেকো বলার অপরাধে সেই নবী নাকি বালকদের অভিশাপ দেয়ার সাথে সাথেই সদাপ্রভু ভালুক পাঠিয়ে বালকদের সংহার করেছিলেন।
মুহাম্মাদ তো কোন শিশুকে হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন বলে মনে পড়ে না। সেখানে কেন এই রকম ভাবনা???
আপনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি মনে করেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় আপনি কিছু মনে করলেই তার সম্মান কমে যাবে না আবার কিছু মনে না করলে তার সম্মান বেড়ে যাবে না আর আপনার মনের কথা কেউ শুনতেও যায়নি এটা একান্ত আপনার ব্যাক্তিগত বিষয় আপনারা চেঙ্গিস খান কে নিয়ে আলোচনা করছেন করেন তাতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু এখানে ধর্মকে টানছেন কেন আপনারা চেঙ্গিস খানকে নিয়ে আলোচনা করছেন এখান থেকে মানুষ অনেক কিছুই শিখছে অনেক অজানা কথা জানতে পারছে কিন্তু এর মাঝখান দিয়ে যদি আপনারা ধর্মকে নিয়ে টানাটানি করেন তাহলে তো মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লাগে আশা করি আমার কথা গুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন
@ হোরাস,
কিং রিচার্ডকে ‘সিংহ হৃদয়’ কারা বলে?
নিশ্চয় খ্রীস্টানরা বা, শোভিনিস্ট ইংলিশ/ব্রিটিশরা।
মুহম্মদ (সা:) কে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কারা বলে?
নিশ্চয় মুসলমানরা।
ব্লগার হোরাসকে মুক্তবুদ্ধির অধিকারী হিসেবে চিনি, জানি।
একজন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী হিসেবে পরিচিত ব্যাক্তি যখন “চেঙ্গিস খান”কে নৃশংসতার অংশটুকু বাদ দিয়ে জীবনের অন্যান্যদিকের আলোকে মহান ব্যাক্তি প্রমাণ করার প্রয়াস চালায় এবং এর পিছনে যুক্তি হিসেবে অন্যান্যদের নৃশংসতার সাথে তুলনা করে, তখন তা ভাববার বিষয় হয়, তাই নয় কি?
আপনি বলছেন,
আলোচনা করা যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে কিন্তু আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি কেউ চেঙ্গিস খানকে মহান বলে প্রমাণ করতে চাই, তা চিন্তার উদ্রেক করে।
আপনি বলেছেন,
আপনার পোস্টে আমি এর নমুনা কোথাও পেলাম না। যা পেলাম তা হল, অন্যদের নৃশংসতার তুলনায় চেঙ্গিসের নৃশংসতা কম, উনি এই করেছেন, সেই করেছেন, উনি নানাভাবে বিশিষ্ট বিচক্ষণ সফল ভদ্রলোক, তা প্রমাণ করার চেষ্টা।
ভাল থাকবেন।
চেঙ্গিস খান যদি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হয় তাহলে হিটলারেরও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া কেউ ঠ্যকাতে পারবেনা।
আপনার কাছে চেঙ্গিস খান যদি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হয় তাহলে ঠিক কী যুক্তির কারনে আপনি মুহাম্মদ আর যীশুকে এই লিষ্টের বাইরে রাখলেন?
মুহাম্মদের জীবনের দয়ার অন্তত ডজন খানেক উদাহরন দেয়া যাবে যেটা চেঙ্গিস খান কল্পনাও করতে পারত না। যীশু নিজে ছিলেন দয়ালু লোক। তার জীবনে হিংস্রতা নাই বললেই চলে। আর গৌতম বুদ্ধ? প্রানি হত্যা করতে হবে দেখে সারাজীবন নিরামিষ খেয়ে কাটিয়ে দিলেন। এদের রেখে কিনা আপনার কাছে শ্রেষ্ঠ মানুষ চেঙ্গিস খান?
হাউ কাম????
@সাইফুল ইসলাম,
আমার চোখে এই লেখাটা আজ প্রথম পড়ল। আমি নিজেও খুব বিস্মিত। দুনিয়াতে এত লোক থাকতে শেষে চেঙ্গিস খান হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ? সত্যি লেখক কি দেখে এই বিচার করলেন তা মাথায় আসছে না।
@সাইফুল ইসলাম, হাজার বছরের মধ্যে কি মুহাম্মাদ, যীশু, বুদ্ধ পরে? তাহলে তাদের কথা আসছে কেন? দুহাজার কিংবা তিন হাজার বছরের হিসাব আসলে তখন না হয় আলোচনা করা যাবে। আর হিটলারকে আপনার চেঙ্গিসের চেয়ে ভাল মনে হলে হবে। আপনার সাথে মিলল না বলে কি আপনাকে এখন আমি গালি দেব?
চেঙ্গিস মুহাম্মদের মত ইসলাম ধর্ম নামক এক জলাতঙ্ক রেখে যায়নি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও , শুধু এ কারণেই মুহাম্মদের চেয়ে হাজার গুন শ্রেষ্ঠ বলা যায়।
মুহাম্মদ শুধু ধর্মের কারণেই নিষ্ঠুরতায় চেঙ্গিস এর মত লোকের মুখে মুখে কুখ্যাত হওয়া থেকে বেচে গেছে। বাংলাদেশে চেঙ্গিসকে প্রাণ ভরে গালি দিলে কেউ আপত্তি না করে মারহাবা বলবে। আর চেঙ্গিসের বড় ভাই দয়াল নবীকে সাল্লাল লাহু আলাইহে সালাম ছাড়া নাম বললে গর্দানও যেতে পারে।
@হেলাল,
নাহ ইসলাম মোটেই জলাতঙ্ক নয়, বরং আপনারাই এমন বিশ্রীভাবে ইস্লামাতঙ্কে আতঙ্কিত যে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে আমার। আর মুহাম্মদের মত একজন মানুষ যেহেতু এতই ক্ষমতাবান জিনি কিনা জলাতঙ্ক ছড়াতে পারেন, যেটা কিনা পৃথিবীর বৃহত্তম মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা পর্যন্ত পারেন নি, সেখানে আপনি কি পরোক্ষ ভাবে নিজের ফাঁদেই পা দিলেন না? নিজেই কি পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করলেন না যে মুহাম্মদের পিছনে সত্যি কোন অসীম শক্তিশালী সত্বা ছিল( প্লিজ বিতর্ক শুরু করবেন না, আমি বিতর্কের উদ্যশ্যে বলিনি, জাস্ট উপমা এটা; আমার বিশ্বাস যে আপনার বিশ্বাস হতেই হবে, এমন ভাবা দলের লোক আমি নই)? না হলে মুহাম্মদের সাম্রাজ্য তো চেঙ্গিসের চেয়ে ছোট ছিল, সেখানে এত বড় সম্রাট কেন তারেকটি জলাতঙ্ক ( আপনার ভাষায়) রেখে যাবার খমতা রাখতেন না? কোন অসীম সত্বা তার পিছনে ছিলেন না বলেই কি?
এ আর নতুন কি। হিটলার, ইয়াহিয়া খানও অবশ্যই মুহাম্মদ সাঃ এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ তাই না? নিচে দেখেন অচেনা নামের এক ব্লগার এটাই বলেছেন, এক্কেবারে সরাসরি, কোনরুপ ভনিতা ছাড়াই।
চেঙ্গিস কি শুধু মুসলিমদের কাছেই কুখ্যাত? মনে হয় না। বরং এর বংশধর ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আমার তো মনে হয় যে ইউরোপিয়ান রাই চেঙ্গিস কে বেশি কুখ্যাত বলে থাকে।
আচ্ছা চেঙ্গিসের বংশধর মহান হালাকু ( শয়তানও মনে হয় না এত খারাপ) যে গোটা বাগদাদ নগরের সব মানুষ কে হত্যা করেছিলেন, সেটা কি খুব ভাল কাজ ছিল? হ্যা ভাল কাজই তো, কেননা আজ আপনাদের মধ্যে কিছু লোক তো সুযোগ পেলে সেতাই করত। আপনি কি জানেন না যে মহান হালাকু বাগদাদের অবলা প্রানীদের কেও হত্যা করে? শাসক কে সোনাদানা, হীরা জহরত ভরা রত্নাগারে বেঁধে রেখে না খাইয়ে তিলে তিলে মেরেছে? এটা খুবই মাননবিক কাজ, কোনই সন্দেহ নেই।
হালাকু কেন এমন করেছিলেন জানেন? আমার সঠিক মনে নেই, তবে যতদূর মনে পড়ে কারনটা ছিল এই যে, ভয়াবহ Assassin দের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্রাট, হালাগু কে সাহায্য করতে চান নি, অবশ্যি তিনি Assassin দের রোষের কারন হতে চান নি। হায়রে কপাল, আপনারা যে ইসলাম কে Convert, Pay or Die টাপ ধর্ম বানাতে চাচ্ছেন, হালাগুই কিন্তু আসলে এমনটা করেছিল তাকে সাহায্য না করার অপরাধে ২০ লক্ষ নরনারী শিশু কে কয়েক ঘন্টার মধ্যে শেষ করে দিয়ে।
চেঙ্গিসে হালাগু কেন আসলো জানেন? যেহেতু ইসলাম প্রচার করে গেছেন মুহাম্মদ আর তাই এটা আপনার কাছে জলাতঙ্ক, সেই সুর মিলিয়েই বলতে হল, হালাগুও তো চেঙ্গিসের সরাসরি রক্তের সম্পর্কের মানুষ, আর চেঙ্ঘিস দারা অনুপ্রানিত।
লেখাটির কারণে আর কিছু না হোক এক বসায় চেঙ্গিস খানের উপর একটি ছবি, ডকুমেন্টারি দেখে ফেললাম। আগ্রহীদের জন্যে লিঙ্ক দিয়ে যাচ্ছি। সবই ইউটিউবের লিঙ্ক।
মুভির প্রথম খন্ড। এর পরের খন্ডের লিঙ্ক সেখানেই পাবেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=1b8lPNSuMUw
Mongol Invasion of Europe – Part 1 এইটা ইউরোপ দখল নিয়ে
httpv://www.youtube.com/watch?v=OiLTX_2-560&feature=related
Dynasties: The Mongol Empire- Part 1/5 আর এইটা চায়না দখল নিয়ে
httpv://www.youtube.com/watch?v=znKNqj0-jGg&feature=related
লেখাটা পড়ে চেঙ্গিস খান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম, এই জন্য হোরাসকে ধন্যবাদ। তবে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানব বলাটাকে খানিকটা অত্যুক্তিই বলবো আমি। এর কারণ হচ্ছে গিয়ে- ওয়েল কারণের উদাহারণ চোখের সামনেই বর্তমান, অনেকের মতে বিবেকানন্দ হচ্ছে গিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভারতীয়, আবার অনেকের কাছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় হয়তো হবে শচীন টেন্ডুলকার 😀 ! ব্যক্তিগতভাবে আমার মত নিলে আমি বলবো- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় হচ্ছে কারিশমা কাপুর। তার টিকটিকির মতো সাদা চামড়া, লম্বা শরু পা যুগল আর লালচে রঙের চুল দিয়ে আমার শৈশব এবং অর্ধেক কৈশর সে মোহিত করে রেখেছিলো। সো, কি ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আপনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ নির্ধারণ করবেন সেটা নির্ধারণ করার কোন উপায় কিন্তু আপনার নেই, ব্যাপারটা হতে যাচ্ছে সম্পুর্ণই সাবজেক্টিভ।
তবে কি কি করলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া যাবে না সেটা কিন্তু অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক অনেক অবজেক্টিভ। যেমন- ৬ বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া যাবে না; উটের মুত্র নিজে ঢক ঢক করে পান করলে, অন্যকে পান করতে পরামর্শ দিলে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হবার সম্ভাবনা অনেক ক্ষীণ হয়ে আসবে; একইভাবে কি- লাইক – লাখ লাখ মানুষ মেরে ফেললেও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ হবার সম্ভাবনাটা ক্ষীণ হয়েই আসা উচিত না? আমি ছোটবেলায় একটা গেইম খেলতাম এইজ অফ এম্পায়ার্স নামে, সেইখানে একটা একটা যুদ্ধের আগে ও পরে যুদ্ধের হালকা পাতলা ইতিহাসও দেওয়া থাকতো। ঐ গেইমের একটা চাপ্টার ছিলো চেঙ্গিস খান, ওখানে দেখেছি মনে আছে ইউরোপের কোন এক নগর দখল করে প্রত্যেক নগরবাসীর দুই কান এবং নাক কেটে নেয় সে! একে কিভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলা যায়?
তার অন্যান্য পজিটিভ দিকগুলোর প্রসংশা করেই বলছি এতোটা ক্ষমতাশালী একটি পলিটিকাল বা যেকোন ফিগার যার হাতে কিনা সরাসরিই ক্ষমতা রয়েছে হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলার, তাকে ইভালুয়েট করার বেলায় আমি কিন্তু সবার প্রথমে বিবেচনা করবো আদৌ সে কোন অযথা রক্তপাত করেছে কি না! আর স্পেশালি সেই ইভালুইয়েশনের অধীন মানুষটি যদি মধ্যযুগের বাসিন্দা হয় তাহলে তার ইভালুয়েশনে আমি হবো আরও অনেক অনেক সতর্ক; আর যদি কোন সভ্যতার ছায়ায় না থাকে- বা যদি বর্বর হয় যেমন- গথ, ভিসিগথ, হান, মঙ্গোল ইত্যাদি হয় তবে থাকবো সতর্কতার শীর্ষে!
আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ নির্ধারণের পক্ষে নই, তারপরেও যদি বাধ্য হয়ে করতেই হয় তবে করবো- একজন মানুষ নয় বরং অন্তত একডজন মানুষ। এবং সেগুলোর দশ জনই খুব সম্ভবত হবে সায়েন্টিস্ট যাদের অক্লান্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের সিমলেস ধারা অব্যাহত আছে বলেই পরম বিলাসিতায় আজ আমি হিসাব নিকাশ করতে বসার অবসর পাচ্ছি যে- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষটা ছিলো কে! হাজার বছরের শেষ্ঠ ডজনের দশজন বিজ্ঞানী আর বাকী দুইজন নায়িকা অথবা মডেল (H) ।।
@আল্লাচালাইনা, আপনি যদি নৃশংসতার অভিযোগে সবাইকে কন্সিডার না করেন তাহলে আমি আপত্তির কিছু দেখি না। তবে কাউকে করবেন আর কাউকে করবেন না সেটা ঠিক না।
আর গেইমের কথা যা বললেন আমি হলে ওটাকে সিরিয়াস্লি নিতাম না। গেইমে আপনি সঠিক ইতিহাস পাওয়ার আশা করলে ঠকবেন। যেমন্টি ঠকবেন হলিউডের মুভিতে যদি ১০০% খাটি ইতিহাস খুজতে যান।
@হোরাস,
মোবাইল ফোন থেকে লেখাটি দু-তিন দিন আগে পড়লেও সেখান থেকে মন্তব্য করা যায় না বলে একটু দেরিতে বলছি। ..
লেখাটি থেকে অনেক কিছু জানলাম। মতামতগুলো্ও শিক্ষনীয়। ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ/ বাঙালি’ প্রসঙ্গে বিপ্লব পালের বক্তব্যর সঙ্গে একমত। আগেও দেখেছি, তার সরাসরি বক্তব্যের ধাক্কা অনেকেই নিতে পারে না। এবারও তাই ঘটেছে। 🙂
হুমায়ুন আহমেদ পড়ে কেউ ইতিহাস বুঝতে চাইছে, এ বিষয়টা বেশ অবাক করেছে। :))
চলুক। (Y)
@হোরাস,
ঠিক, আমিও একমত। তবে strategy গেম গুলোতে ভাল ইতিহাসই দেয়া আছে। এইজ অব এম্পায়ার আমিও খেলতাম।পরে দেখি চেঙ্গিস টাইপের লোকের সম্পর্কে যে ইতিহাস ওতে আছে, তা অনেকটাই উইকির সাথে মিলে যায়।
আচ্ছা আপনি কি অ্যাসিরিয়ান দের ইতিহাস পড়েছেন? যারা কিনা কোন এক নগর ধ্বংস করে, মানুষের মাথা আর চামড়া দিয়ে স্তম্ভ বানিয়েছিল?
আর বাইবেলেও নহুম অধ্যায়ে দেখবেন যে কিভাবে প্রফেট নহুম উল্লাসে ফেটে পড়েছেন অ্যাসিরিয়ান দের পতনের পরে। নিনেভের পাপের ভরা পুর্ন হয়েছে…… । না পড়া থাকলে পড়ে দেখুন।
লেখাটা অনেক তথ্যে ভরপুর নিঃসন্দেহে।তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম সে জন্য ধন্যবাদটা আপনার অবশ্যই প্রাপ্য। তবে চেঙ্গিস খানের গুনাবলির সাথে সাথে তার দোষ ত্রুটি তুলে ধরে অলোচনা করে তিনি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বা সর্ব নিন্ম মানব কিনা সে সিদ্ধান্তের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিলে লেখাটা আরো অধিক গ্রহন যোগ্য ও অযথা বিতর্ক এড়ানো যেত। 🙂
@রাজেশ তালুকদার, ধন্যবাদ। আমি শুধু আমার মতটা তুলে ধরেছি। চেঙ্গিসের খারাপ দিক সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই, সবাই অনেক সেটা বেশী বেশী জানে .. তবে ভালো দিকগুলো খুব কম মানুষই জানে।
হোরাস, আমার লেখাটির শিরোনাম আপত্তিকরই লাগলো। চেঙ্গিস খানের মত এক যুদ্ধবাজ, ধর্ষক নারী লোলুপ পিশাচকে কেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মনে করতে হবে তা আমার বোধগম্য হল না, এমনকি আপনার পুরো লেখাটি পড়বার পরও না। উপরে ফরিদ আহমেদ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলেছেন তার মন্তব্য। সেটি দেখতে পারেন। মুহম্মদকে মুসলিমরা শ্রেষ্ঠ মহামানব কিংবা আওয়ামী চ্যালারা বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তকমা লাগান বলেই চেঙ্গিস খানকেও সেরকম একটা কিছু বানিয়ে কাউন্টার দিতে হবে বলে তা আমি মনে করি না। চেঙ্গিস খানের নৃশংসতা আর গণধর্ষণের উপাখ্যান তো অজানা নয়। তার মত এক যুদ্ধবাজ কেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হবেন, কেন গৌতম বুদ্ধ কিংবা সমরূপ কেউ হবেন না – সেটা কি বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব? ‘সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব’ মানে শ্রেষ্ঠ মানব না। হার্ট তার বইয়ে মুহম্মদকে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে রায় দিয়েছিলেন তার একতা বইয়ে নব্বইয়ের দশকে । আর মুসলিমরা সেতাকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব’ বানিয়ে লাফালাফি শুরু করেছিল। সিএনএন আর ওয়াশিংটন পোস্ট এবার চেঙ্গিস খানকে ‘সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব’ বলে মনে করেছে, কিন্তু আপনি যদি সেটাকে শ্রেষ্ঠ মানব বানিয়ে এরকম একটি লেখা লেখেন, তাহলে আর পার্থক্য থাকল কোথায়?
তবে লেখার সাথে দ্বিমত করলেও চেঙ্গিস খানকে নিয়ে কিছু অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনি যোগান দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই।
@অভিজিৎ, আপনি লেখার প্রতিটি অক্ষরের সাথে দ্বিমত করতে পারেন তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে শিরোনামটা কেন আপত্তিকর মনে হলো সেটা আমি বুঝতে পারলাম না!
স্বামী, পিতা, ছেলে হিসাবে ব্যক্তি চেঙ্গিসের মধ্যে যে মহানুভবতা আমি দেখেছি সেটাকেই বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। স্ত্রীর গর্ভে অপহরণকারীর সন্তানকে যে নিজের ছেলের মর্যাদা দিতে পারে তাকে আমার মহান বলেই মনে হয়। পাঠকরা সবাই আমার দৃষ্টিভঙ্গী শেয়ার করবেন সেটাও আমি আশা করিনি। আর এটাও শুনেছি চাইনীজ এবং মঙ্গোলরা চেঙ্গিসের অবদানকে খুবই খুবই উচ্চ দৃষ্তিতে দেখে। মাও সেতুং এক কবিতায় তাকে “Heaven prodest son of an era” বলে অভিহিত করেছেন।
ধন্যবাদ।
@হোরাস,
আমি আসলে মনে করি না, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ’ নির্ধারণের কোন সঠিক মাপকাঠি আছে। চেঙ্গিস খানের হত্যা ধর্ষণ প্রভৃতি কিন্তু খুব ভাল ভাবেই ডকুমেন্টেড। আর মহানুভবতার কথা যদি বলেন, হিটলারের মধ্যেও পাওয়া যাবে। হিটলার মদ সিগারেট কিছু খেতেন না, একদারপত্নী ছিলেন, মেয়েদের দেখলেই ছোঁক ছোঁক করতেন না – কাউকে ধর্ষণের তো প্রশ্নই আসে না। হিটলার পুরো জার্মান জাতিকে একত্রিত করেছিলেন, দেশের জন্য প্রাণোৎসর্গ করতে দ্বিধান্বিত হননি – প্রভৃতি গুণাবলী সামনে এনে তাকে ‘শ্রেষ্ঠমানুষ’ বানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে বটে – কিন্তু সেটা মোটেই তার ইহুদীবিদ্বেষ কিংবা গনহত্যার দায় থেকে মুক্তি দিবে না। আসলে ‘শ্রেষ্ঠ মানব’ বলে কিছু নেই। ধার্মিকেররা মুহম্মদকে নিয়ে যা করেন, আমাদেরও তা করতে হবে বলে মনে করি না। এগুলো করা মানে তাদের ট্র্যাপেই পা দেয়া।
দেখুন, নির্মলেন্দু গুণও তো বঙ্গবন্ধুকে নি কবিতা লিখেছেন। পাবলো নেরুদা স্ট্যালিনকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কিন্তু কবিতা যতই লেখা হোক এগুলো কোনটিই ‘শ্রেষ্ঠ মানব’ হবার মাপকাঠি নয়। নেরুদা স্ট্যালিনকে নিয়ে যতই আবেগের ঝড় বইয়ে দিক না কেন, সেটা স্ট্যালিনীয় নৃশংসতাকে ঢাকার জন্য যথেষ্ট নয়, শ্রেষ্ঠ মানব হবার জন্য তো নয়ই। মাও সেতুং তার কবিতায় চেঙ্গিস খানকে নিয়ে যে বিশেষণই আউরাক না কেন, সেটা তাকে শ্রেষ্ঠ মানব করে না কিন্তু।
আমার বিনীত প্রস্তাবনা হল – যদি লেখাটির শিরোনাম শ্রেষ্ঠ মানব না হয়ে – “চেঙ্গিস খান – অজানা অধ্যায়” গোছের কিছু হত, হয়ত এই বিতর্কগুলো এড়ানো যেত।
@অভিজিৎ,
(Y)
“বানু কুরাইজা গোত্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে সাবালক সকল বয়সের পুরুষকে হত্যা করার আদেশ দেন মুসলমানদের চোখে পৃথবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মোহাম্মদ। একদিনে প্রায় সাতশ থেকে নয়শর মত লোককে মেরে ফেলা হয় গলা কেটে এবং নারী ও শিশুদের দাস/দাসী হিসাবে মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হয় ।” এ তথ্য online এ কোথায় পাব তা জানতে চাই?একটার বেশি বিশ্বাসযোগ্য source দিবেন।
@মাহমুদুল হাসান,
আমি একটু রেফারেন্স দিয়ে সাহায্য করি। এটার রেফারেন্স আপনি অনেক জায়গাতেই পাবেন, প্রাথমিক সোর্স হিসেবে দেখতে পারেন ইবনে ইসহাকের সিরাতে রসুলুল্লাহ পৃঃ ৪৬৪ –
After 800-900 male adults of Bani Quraiza were beheaded in batches, and thrown in trenches dug in Madina, the apostle divided their property, wives and children as booty… He took Rayhana d. Amr b. Khunafa for himself.
সহি বুখারিতেও আছে এই ঘটনার ইঙ্গিত –
Sunan Abu-Dawud Book 38, Number 4390:
Narrated Atiyyah al-Qurazi:
“I was among the captives of Banu Qurayzah. They (the Companions) examined us, and those who had begun to grow hair (pubes) were killed, and those who had not were not killed. I was among those who had not grown hair.”
ইত্যাদি। আমি যতদূর জানি – বানু নাদিরের উপর হামলার সময়েও মুহম্মদ এভাবে নারী এবং শিশুদের হত্যা করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন উবাই এর হস্তক্ষেপে সেটা থেকে বিরত হন। কিন্তু বানু কউরাইজার ক্ষেত্রে মুহম্মদ উবাইকে উপেক্ষা করেন। সেই ইতিহাস পাওয়া যায় এম এ খান রচিত ‘ইসমিক জিহাদ’ বইয়ে (Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery )-
…Following this, a trench was dug at the market-place; and in Muhammad’s presence, those 800–900 captives were brought to the brink of the trench with their hands tied behind and were beheaded with swords before pushing the dismembered bodies into it. Muhammad himself chopped off the heads of two Jewish leaders. The spectacle went on from morning through the day and continued by torchlight into the night. This ghastly massacre created revulsion even in Karen Armstrong, who is immensely popular amongst Muslims for her relentless campaign to correct Western misconceptions about Islam. She was so disgusted that she compared it to the Nazi atrocities of the Jews.lxviii This cruel massacre can obviously be called the First Holocaust of the Jews.
আপনি খুঁজতে চাইলে আরো রেফারেন্স পাবেন। মুক্তমনাতেও অনেকের লেখায় এর রেফারেন্স আপনি পাবেন। আকাশ মালিকের ‘যে সত্য বলা হয়নি’ ই-বইইয়েও এর রেফারেন্স আছে সম্ভবতঃ।
@মাহমুদুল হাসান, আপনি মুসলমান হয়েও এ ঘটনা জানেন না? কখনও পড়েননি?
@মাহমুদুল হাসান,
ঠিক একই প্রশ্ন আমার ব্লগে একজন করেছিলেন-
আরে সাহেব হাতের কাছে কোরান আর হাদিস থাকতে online কী? একাধিক বিশ্বাসযোগ্য source থেকেই দিবো। চলুন সরাসরি কোরান আর হাদিস খুলেই দেখা যাক-
প্রথমে হাদীসগুলো দেখুন-
Narrated Ibn Umar:
Bani An-Nadir and Bani Quraiza fought (against the Prophet violating their peace treaty), so the Prophet exiled Bani An-Nadir and allowed Bani Quraiza to remain at their places (in Medina) taking nothing from them till they fought against the Prophet again) . He then killed their men and distributed their women, children and property among the Muslims, but some of them came to the Prophet and he granted them safety, and they embraced Islam. He exiled all the Jews from Medina. They were the Jews of Bani Qainuqa’, the tribe of ‘Abdullah bin Salam and the Jews of Bani Haritha and all the other Jews of Medina. (সহিহ বোখারি শরিফ, ভলিউম ৫, বুক ৫৯, নং ৩৬২)
এক সাথে ৯০০জন পুরুষকে হত্যার মহোৎসব নীচের হাদীসে বর্ণীত আছে-
All jubilant Muslims of Medina had gathered to watch the colorful beheading spectacle, and anticipated booty distribution. A trench was dug in the market-place. Several men were in charge of disrobing the Jewish male prisoners for checking the growth of pubic-hair. Those having pubic-hair were marked for beheading, and the rest were sent to the enslavement camp (আবু দাউদ, বুক ৩৮, নং ৪৩৯০)
বাঙ্গালীর লুঙ্গী খুলে পাকিস্তানিরা চেক করতো পুরুষাঙ্গের মাথা কাটা কি না, আর মুহাম্মদের সৈনিকেরা চেক করতো পুরুষাঙ্গের উপরে লোম আছে কি না। হাদিসটা দেখুন-
Narrated Atiyyah al-Qurazi:
“I was among the captives of Banu Qurayzah. They (the Companions) examined us, and those who had begun to grow hair (pubes) were killed, and those who had not were not killed. I was among those who had not grown hair.”
এবার কোরান থেকে-
কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ।
তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমির, ঘর-বাড়ীর, ধন-সম্পদের এবং এমন এক ভূ-খন্ডের মালিক করে দিয়েছেন, যেখানে তোমরা অভিযান করনি। আল্লাহ সর্ববিষয়োপরি সর্বশক্তিমান। (সুরা আহযাব, আয়াত ২৬-২৭)
এরপর ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ এর ৪৬৪ পৃষ্টায় ঘটনার পূর্ণ বর্ণনা আছে। অথবা তাবারীর তারিখে রাসুলুল মুলকও দেখতে পারেন।
আমার ব্লগে ঐ ভদ্রলোক তার মন্তব্যের শেষে বলেছেন-
আমি বলেছিলাম- তাহলে ঐতিহাসিকের রেফারেন্স চাইলেন কেন?
@আকাশ মালিক,
আমি তো জানতাম ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ বইটির কোন অস্তিত্বই আর অবশিষ্ট নেই সেই অষ্টম শতাব্দি থেকে। এখন এই বই কোথা থেকে এলো? http://en.wikipedia.org/wiki/Ibn_Ishaq
আমার ব্লগে আপনার একটি উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
একজন যোদ্ধা হিসেবে তার অবস্থান ও জীবনের বিপুল বৈচিত্র ও সংগ্রামকে আমি সবসময়ই শ্রদ্ধার সাথে দেখে এসেছি।আপনার পোষ্টটি দারুন লাগল।
কিন্তু ‘স্রেষ্ঠ মানুষ’ শব্দটির ব্যবহারে আমার কিছুটা আপত্তি আছে।আপনি শুরুতেই তার জীবনের কিছু বিতর্কের কথা তুলে ধরেছেন এবং তা মেনে নিয়েই তাকে ‘স্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আপনি ‘স্রেষ্ঠ যোদ্ধা’ বলতে পারতেন তাতে আপত্তি ছিল না।কিন্তু মানুষ হিসেবে বলতে গেলে পুরো জীবনের সংগ্রামের সাথে সাথে আদর্শের কথাও চলে আসে।তিনি একজন সাহসী যোদ্ধা তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু মানুষ হিসেবে তাকে ‘স্রেষ্ঠ’ বলা যায় না।আর তিনি আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন না।
উনার হিংস্রতার কথা কে না জানে!হিংস্রতা দিয়ে ‘স্রেষ্ঠ মানুষ’ এর পদবি গ্রহনযোগ্য নয়।
মুহম্মদকে যারা শ্রেষ্ঠ হিসেবে বর্ননা করে তারা ধর্মান্ধ পাবলিক।কিন্তু তাই বলে আমরা কেনো অন্ধ হব!
@রাহনুমা রাখী,
আপনি ঠিক আমরা এরকম হবো না। আমি আমার মতামত দিয়েছি। কিন্তু সেটা পাথরে খোদাই করা কিছু না। নতুন তথ্যের ভিত্তিতে এই মত পরিবর্তন করতে আমার কোনই অসুবিধা নাই। ইনফ্যাক্ট আমি ৬ষ্ঠ খৃষ্ঠপূর্ব এথেন্সের সোলোনকে এদের যে কারও উপরে রাখব।
ফরিদ ভাইয়ের তথ্য পড়ে ভয়ে শিহরে উঠলাম। মঙ্গোলরা কি মানুষ প্রজাতির ছিল নাকি অন্য কোন প্রজাতি? আর এখনকার মঙ্গোলীয়ান সমাজেও কি নিষ্ঠুরতা আছে নাকি আর দশটা স্বাভাবিক সমাজের মতই তারা?
এই লেখাটা পড়তে গিয়ে কেন যেন মনে হচ্ছে যে, চেঙ্গিস খান মূল নয়, এর আড়ালে লুকিয়ে আছে মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। মুহাম্মদের প্রতি ঘৃণার প্রাবল্যেই খুব সম্ভবত চেঙ্গিসকে শ্রেষ্ঠ মানব বলা হচ্ছে। যেহেতু মুহাম্মদকে তাঁর অনুসারীরা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে কাজেই চেঙ্গিসই শ্রেষ্ঠ। লেখকের ভাষ্য অনুযায়ী চেঙ্গিস যে কারণে শ্রেষ্ঠ, সে কারণে মুহাম্মদও শ্রেষ্ঠদের একজন হতে বাধ্য এবং হিটলার যদি পরাজিত না হতেন, তবে তিনিই হতেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।
একজন মানুষকে তাঁর খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, ধ্বংসকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজ্যবিস্তারের সক্ষমতা দিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানব বলা যেতে পারে, সেটা এই প্রবন্ধ না পড়লে জানতেই পারতাম না।
চেঙ্গিস খানের নৃশংসতা পাঠকেরা কমবেশি সবাই জানেন। কাজেই এ নিয়ে বেশি কিছু বলবো না আমি। এককোটি পঞ্চাশ লাখ লোক সরাসরি মারা গিয়েছিল চেঙ্গিস খান এবং তাঁর বাহিনীর হাতে। তিন থেকে চারকোটি লোকের মৃত্যুর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত চেঙ্গিস খান। কোন শহর আক্রমণ করতে গেলে সেখানকার নিরীহ লোকজন বা পরাজিত সৈন্যদের হিউম্যান শিল্ড হিসাবে ব্যবহার করতো চেঙ্গিস খানের বাহিনী। গণধর্ষণ, গণহত্যা, লুটতরাজ, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ এগুলো ছিল অন্য শহর বা রাজ্যকে আতংকিত করার কার্যকর পদ্ধতি। যে সমস্ত এলাকা দখল করতো মোঙ্গল বাহিনী সেগুলোকে সুরক্ষিত করার মত লোকবল তাদের ছিল না। সে কারণে দখলাদারী এলাকার সমস্ত পুরুষদের অকাতরে হত্যা করতো তারা। চেঙ্গিস খানের অদম্য ধর্ষণস্পৃহার কারণে বর্তমান বিশ্বের ষোল মিলিয়ন মানুষের পিতৃপুরুষ তিনি।
ইরানের তিন চতুর্থাংশ মানুষ হত্যার পিছনে দায়ী চেঙ্গিস খান। ইরানের সুউন্নত, সুবিস্তৃত এবং সুবিন্যস্ত সেচ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। ইরানের মুসলমানদের তীব্র প্রতিরোধে ক্ষিপ্ত হয়ে চেঙ্গিস খান এই অপকর্মটি করেছিলেন। ফলে, ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং মহামারী দেখা দেয় সেখানে। তিন চতুর্থাংশ লোক মারা যায় সেই দুর্ভিক্ষে। এরপর সাতশো বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল ইরানের চেঙ্গিস খানের আক্রমণের সময়কার জনসংখ্যায় পৌঁছোতে।
@ফরিদ আহমেদ,
আসলেই তাই।
চেংগিস খানের নানান গুনাবলী ছিল এই লেখায় জানতে পেরেছি, তাই বলে তাকে একেবারে শ্রেষ্ঠ পদবী দেওয়াটা খুবই বাড়াবাড়ির মতই শোনায়।
আমি তার বিদ্রোহ দমন সম্পর্কে কিছু পড়েছিলাম। যে প্রদেশে বিদ্রোহ দেখা দিত সেখানে তার নির্দেশ থাকতো নির্বিচারে গনহত্যা, শুধু তাইই নয়; গর্ভবতি মহিলাদের পেট কেটে যেন ভ্রুনহত্যা করা হয়ে সে নির্দেশও দেওয়া হত।
@ফরিদ আহমেদ, পূর্ন সহমত। প্রথম থেকেই লেখাটিতে মন্তব্য করতে দ্বিধা করছিলাম কারন আমার শ্রেষ্ঠ মানব, শ্রেষ্ঠ এই-শ্রেষ্ঠ সেই, এসব অবোৈজ্ঞানিক তুলনায় আ্যলার্জি আছে।
চেংগিস খানের হত্যা্যজ্ঞ এড়িয়ে তার অবদান আলোচনা করা আর হলোকস্ট বিনা হিটলারের ক্যারিয়ার বিশ্লেষন একই কথা। চেংগিস বিশ্বের বৃহত্তম সাম্রাজ্যের স্থপতিই শুধু নন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষনস্থায়ী সাম্রাজ্যেরও রূপকার। মোংগল আক্রমন এশিয়াকে পাশ্চাত্যের সাথে প্রতিযোগীতায় শুধু পিছিয়েই দেয়নি, মধ্য এশিয়ায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশকেও বিনাশ করেছে।
@ফরিদ আহমেদ, :clap :clap
চমৎকার মন্তব্য। আহা , সকল মুক্তমনাই যদি আপনার মতো নিরপেক্ষ হতো!!
@ফারুক,
নাহ, তা কি আর হয়।
যেমন আমি নিরপেক্ষ নই, তাই আমার লেখায় চেংগিস খানকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে অভিহিত করায় তীব্র আপত্তি থাকলেও এই লেখার মূল প্রেরনা আসলে নবী মোহাম্মদকে হেয় করার প্রচেষ্টা এমন মনে হয়নি। নবী মোহাম্মদের প্রসংগ মাত্র একবারই উদাহরন হিসেবে এসেছে, যেমন এসেছে রাজা রিচার্ডের কথা। তবে কিছু পাঠক অযাচিতভাবেই কমেন্টে আসল কথা বাদ দিয়ে সেই বানু কোরাইজা নিয়েই মেতে ছিলেন। এর দায় লেখকের নয়। আপনাদের কাছে নবীজি সবচেয়ে সম্মানিত আল্লাহর নবী হলেও যারা ইসলামে বিশ্বাসী নয় তাদের কাছে তিনি একজন ঐতিহাসিক চরিত্র, রাজা রিচার্ড বা আকবর যেমন তেমনই একজন। তাকে উদাহরন হিসেবে আনা যাবে না? আনলেই বাঁকা উদ্দেশ্য বার করতে হবে এমন কথা নেই।
নৃসংশ আচরন করেও অনেকের কাছে জনপ্রিয় এমন চরিত্র কি হতে পারে না? আমাদের ধারে কাছেই অনেক আছে। বেশীদুর যেতে হবে না, আমাদের দেশেই জিয়াউর রহমান সাগেব সম্পর্কে কি মূল্যায়ন করবেন? আমার যতদুর মনে হয়েছে তিনি সামগ্রিক বিচারে এই দেশের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনেতা। তবে নৃশংশতায় তিনি ভালই পটু ছিলেন। তার কি জনপ্রিয়তা দেশে নেই?
মানুষের সামগ্রিক বিচার একমূখী ভাবে করা যায় না। তবে যার যার পছন্দের গুরুত্ব অনুসারে সে বিচারের ইস্যু নির্ধারন করে। যেমন জিয়া কারো কাছে দেশের শ্রেষ্ঠ শাসক, আবার কারো কাছে নৃশংস রক্তলোলুপ স্যাডিষ্ট।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এই সরল স্বীকারোক্তির জন্য , আপনাকে হাততালি দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
@ফারুক,
আপনি যে দূঃখিত হবেন তা জানতাম।
@ফরিদ আহমেদ,
কার যেন একটা কথা পড়েছিলাম, এখন মনে পরছে না। কথাটি ছিলো এরকম “Too much self-righteousness can lead to hypocrisy.”
বিভিন্ন পোস্টে আপনার কমেন্ট দেখলে মাঝে মাঝে আমার এই কথাটা মোনে পড়ে। তবে আপনি আজকে এটার যথার্থতা প্রমাণ করলেন।
প্রথমতঃ চেঙ্গিসকে আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বলেছি। পরিষ্কার ভাবেই মুহাম্মাদ হাজার বছরের বাইরে। সেটুকু চিন্তা করে বের করতে আপনি নারাজ।
দ্বিতীয়ত: আপনি বুঝে ফেলেছেন আমার পোস্টের মোটিভেশন হলো মুহাম্মাদের প্রতি ঘৃণা। আমি মুহাম্মাদকে ঘৃণা করি না তবে তার নামে তার সমর্থকরা অযৌক্তিক কিছু প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে কখনও তার সমালোচনা করতেও ছাড়িনা। ভবঘুরের পোস্টে আপনার মত বালিকা আয়েশার হাত ধরা উত্থিত যৌনাঙ্গের মুহাম্মাদের ছবি দিয়ে সস্তা রসিকতাও আমি কখনও মুহাম্মাদকে নিয়ে করিনি। তাই বলে আপনাকে গিয়ে উপদেশও দিইনি … যে এটা সস্তা রসিকতা হয়ে গেল বা আপনি মুহাম্মাদকে ঘৃণা করেন। অথচ আপনি নিজে করে আবার আমাকে লেক্চার দিচ্ছেন মুহাম্মাদকে ঘৃণার ব্যাপারে। হায় সেলুকাস..!!
[img]http://i52.tinypic.com/k0lmj4.jpg[/img]
@হোরাস,
হিপোক্রেসি করলেও, সেটা স্বনামে করার সৎসাহসটুকু আমার আছে। প্রাচীন কোনো দেবতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে চেঙ্গিস খানের মত বীরপুরুষ সাজি না আমি।
@ফরিদ আহমেদ, প্রাচীন কোনো দেবতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়েও কখনও হিপোক্রেসী করেছি এটা কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না। সে আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
কেউ বলতে পারবে না, এই আত্মবিশ্বাস থাকাটা খুব কাজের কিছু নয়। মুখোশের আড়ালে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় হিপোক্রেসি।
@ফরিদ আহমেদ,
🙁 একই কথাতো রাসুলে পাক খাজা হযরত হয়রান রাদিয়ানহুতায়ালাও বলে থাকেন!
@আল্লাচালাইনা,
এ্যাঁ! বলেন কী!! :-Y
@ফরিদ আহমেদ, আপনার শেষ কয়েকটা কমেন্ট পরে মনে হচ্ছে আপনি পণ করেছেন শেষ কথাটা আপনাকে বলতেই হবে।
বাংলা সাহিত্যের মুখোশ পরা তথা আপনার ভাষায় হিপক্রেট কয়েকজন লেখকের নামঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – ভানুসিংহ
শেখ আজিজুর রহমান – শওকত ওসমান
অচিন্তকুমার সেনগুপ্ত – নীহারিকা দেবী
কালি প্রসন্ন সিংহ – হুতোম পেঁচা
চারুচন্দ্র মুখোপাধ্যায় – জরাসন্ধ
ডঃ মনিরুজ্জামান – হায়াৎ মামুদ
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় – সুনন্দ
প্যারীচাঁদ মিত্র – টেকচাঁদ ঠাকুর
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় – বনফুল
প্রমথ চৌধুরী – বীরবল
মীর মশাররফ হোসেন – গাজী মিয়া
মোহিত লাল মজুমদার – সত্য সুন্দর দাস
সমরেশ বসু – কালকূট
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – নীল লোহিত
@হোরাস,
নাহ! সেরকম কোনো পণ করি নাই। আমি থেমে যাচ্ছি এখানে। আপনি-ই বরং শেষ কথাটা বলুন।
সাহিত্যিকদের ছদ্মনামের এত বড় তালিকা না দিলেও চলতো। সাহিত্য ক্ষেত্রে ছদ্মনাম নিলে বা ব্লগে কেউ নিক নিয়ে লিখলেই ঢালাওভাবে আমি তাঁদেরকে মুখোশ পরা বলি না। বলি তাঁদেরকেই যারা প্রাণপনে নিজেদের পরিচিতি লুকোতে চায়। নিজেরা যা বলছে সেটাকে স্বনামে ডিফেণ্ড করতে পারবে না এই ভয়ে। শরৎচন্দ্র যেমন অনীলা দেবী ছদ্মনাম নিয়েছিলেন, নারীর প্রতি অবমাননাসূচক লেখা লিখবার জন্য। কথিত আছে যে, রবীন্দ্রনাথও তাঁর সমালোচনা সইতে পারতেন না। ফলে, অনেক সময় নানান ছদ্মনামে নিজেই মাঠে নেমে পড়তেন তাঁর সমালোচকদের বিরুদ্ধে। মুখোশধারী হচ্ছে এরা। গাছ-পাথর, মুসাফির, নীললোহিত বা কালকূটেরা নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
আমার মনে হয় মুখোশ পরা না পরা নিয়ে অনর্থক বিতর্ক হচ্ছে। ধরা যাক হোরাস ‘আবুল খায়ের’ নাম নিয়ে ব্লগ করতে আসলেন। কি ভাবে আমরা বুঝব যে সেটা আসল নাম? আমরা তো কারো কাছে পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট চেয়ে ব্লগভুক্ত করছি না। যেমন ধরুন, ‘আদিল মাহমুদ’ নামে যিনি লেখেন তিনি তো ঘোষণা দিয়েই বলেছেন যে এটা তার আসল নাম নয়। এখন সেটা যদি তিনি না বলতেন তবে অনেকেই ভেবে নিত যে আদিল মাহমুদ বোধ হয় আসল নাম। এখন হোরাসকে ‘মুখোশ পরা’ ডাকলে আদিল মাহমুদকেও তাই ডাকতে হয়, তাই না? মুখোশ পরা হোক, কিংবা মুখোশ ছাড়া হোক, আদিল মাহমুদ আমার কাছে আদিল মাহমুদই। তার পেছনে কে আছেন তা আমার জানার দরকার নেই। আর আমার জানা মতে আদিল মাহমুদ শুধু এই একটি নামেই ব্লগ করেন। এমন নয় যে কোথাও তার সমালোচনা হলে আরেক নাম নিয়ে তার সমালোচনার জবাব দিতে আসেন। হোরাসও কিন্তু আপনার সমালোচনাগুলোর জবাব হোরাস নামেই দিচ্ছেন। শরৎচন্দ্র যেমন, অনীলা দেবী ছদ্মনাম নিয়ে নীচু মানের একটা লেখা লিখতেন, তারপর সেই সমালোচনাকে তিনি নিজেই আবার শরৎচন্দ্র নামে খণ্ডন করতেন। এই মানসিকতা হোরাসের জন্য খাটে কি? উনি তো হোরাস নামেই জবাব দিচ্ছেন। অবশ্য আপনার অবজারভেশন ভিন্ন হলে বলতে পারেন।
আর হোরাস, আমি চাইব ব্যক্তিগত আক্রমণ পরিহার করে তর্ক করি। আমিও ব্যক্তিগতভাবে আপনার লেখাটির সাথে একমত নই। নীচে আমি আমার ভিন্নমতগুলো খোলাখুলি জানিয়েছি। আমি আনন্দিত যে আমাদের ভিন্নতা ব্যক্তিগত কলহে রূপ নেয়নি। কাউকে হিপোক্রিট বলে মন্তব্য শুরু করলে ব্যাপারটা প্রথমেই ঝগড়ায় রূপ নেয় নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।
চেঙ্গিস খানকে নিয়ে আলোচনা খুবই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আসুন আমরা আমাদের মতদ্বৈততা সত্ত্বেও প্রাণবন্ত পরিবাশটি বজায় রাখি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
বিতর্কটা মুখোশ পরা বা না পরা নিয়ে হচ্ছে না, হচ্ছে হিপোক্রেসি নিয়ে। হোরাস আমাকে সরাসরি হিপোক্রেট হিসাবে অভিযুক্ত করেছেন। আমার এই হিপোক্রেসি নাকি দীর্ঘ দিনের। এর পালটা হিসাবে আমি শুধু দেখিয়ে দিয়েছি যে, তিনিই হচ্ছেন সবচেয়ে বড় হিপোক্রেট। সত্যি কথা বলতে কী, হোরাসের অযাচিত আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে আমি আরো অনেক বেশি কঠোর হতে পারতাম, কিন্তু হই নি। অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াই করাটা অর্থহীন একটা কাজ।
কেউ ছদ্মনামে ব্লগিং করলেই তাঁকে আমি হিপোক্রেট বলি এমন নয়। আমার আগের মন্তব্যেই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। মুক্তমনায় আদিল মাহমুদ ছদ্মনামে লেখেন, স্বাধীন ছদ্মনামে লেখেন, নীল রোদ্দুর ছদ্মনামে লিখছেন। মুক্তমনায় এরকম অনেকেই আছেন। কিন্তু এদের সত্যিকারের পরিচয়টা আমরা কোনো না কোনোভাবে জানি। সে কারণেই এদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে আমাদের তেমন কোনো ভাবনা নেই। হোরাস আমাকে যে হিপোক্রেট বলে গালি দিয়েছেন সেটা তাঁর পরিচয়হীনতার সুযোগ নিয়েই দিয়েছেন। আমি নিশ্চিত যে, তাঁর সত্যিকারের পরিচয় আমার জানা থাকলে, আমাকে এতবড় একটা গালি দেবার আগে তিনি অন্তত একশ বার চিন্তা-ভাবনা করতেন। কাজেই হোরাস হোরাস নামেই উত্তর দিচ্ছেন এই যুক্তিটা এখানে কার্যকর নয়। তিনি একজন অদৃশ্য মানব এবং সেই অদৃশ্যতার সুযোগটাই তিনি নিয়েছেন আমাকে কুৎসিত গালি দিয়ে।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, হোরাস ভাই এর সাথে আমার ব্যাক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে একই শহরে বসবাসের সুবাদে, উনি একেবারে কল্পিত চরিত্র নন। ছদ্মনাম বিষয়ে অভিজিতের সাথে একমত, একই নিক বজায় রাখলে নামে কিছু যায় আসে না, তবে আপনার পয়েন্টও ধর্তব্য। হোরাসের বদলে যে কোন সাধারন বাংগালী নাম দখল করে দিব্ব্যী উনি ব্লগিং করতে পারতেন। তাহলে হয়ত জানতেও পারতেন না ওটা যে ছদ্মনাম, যেমন আমি নিজ থেকে না বললে কেউ টের পেত না আমারটাও ছদ্মনাম, যদিও কোন কোন উন্মাদ আমাকে “ফেক নেম” পরিচয় করিয়ে নোবেল বিজয়ীয় আনন্দ পায়:)) ।
হোরাস ভাই,
নবী মোহাম্মদের সমালোচনা করা বা ফরিদ ভাই আগে করেছেন মানেই কিন্তু এই না যে সেই প্রসংগ সব সময় টানতে হবে। ফরিদ ভাই কোন নবী ভক্ত লোক না সেটা নুতন কিছু না, আমরাও জানি। নবী সমালোচনা উনি আগেও করেছেন, মাঝে মাঝেই করেন। এখানে ওনার আপত্তি ছিল অযাচিত ভাবে নবী প্রসংগ টানা, যদিও আমি ওনার সেই মূল অভিযোগের সাথে একমত না। তেমনি চেংগিসের শ্রেষ্ঠ আসনেও মোটেও একমত না। উনি নবী ফেরশতা নিয়ে আগে ঠাট্টা তামাশা করেছেন সেটা টানাটানি করার কি দরকার।
বাদ দেন এইসব।
@আদিল মাহমুদ, আপনি আমার সাথে দ্বিমত হয়েছেন তাতে কোন অসুবিধা নাই, হতেই পারেন। আমি জানি বেশির ভাগ মানুষই আমার সাথে একমত হবে না। সেটা জেনেই আমি পোস্ট দিয়েছি।
ওনার কাছে অপ্রসাংগিক মনে হলেই উনি ট্যাগিং শুরু করবেন? এটা কেমন কথা? অন্যদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে কিনা বা আসলেই অপ্রাসঙ্গিক কিনা সেটা বিবেচনা করবেন না।
@ফরিদ আহমেদ, আপনার সাথে ক্যাচাল করার ইচ্ছা থাকলে আপনার মুখোশপরা লেখকদের নিয়ে করা কমেন্টের উত্তরে অনেক কিছুই বলতে পারতাম। বলিনি, ভেবেছিলাম ব্যাপারতা ওখানেই শেষ হবে। আজ সকালে আপনার এই কমেন্টটা দেখে কিছু না বলে পারছি না।
তাই নাকি? হোরাসের আড়ালে কে আছে সেটা আপনি জানেননা তাই হোরাস ‘সবচেয়ে বড় হিপোক্রেট’। আপনার যুক্তির প্রশংসা না করে পারলাম না। (F)
আপনি না চিনলেও অনেকেই আমাকে চেনে আর তাছাড়া আপনার যুক্তি অনুযায়ী আমিও ‘ফরিদ আহমেদ’ নিকের পিছনের মানুষটাকে চিনিনা। যদি পারেন হোরাসের করা কোন হিপোক্রেটিক কথা বার্তার উদাহরণ দেখান। গায়ের জোরে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেইতো হবেনা।
ভবিষ্যতে বিবেক সাজার আগে মনের আয়নায় নিজেকে দেখে নিতে ভুলবেন না।
@হোরাস,
আশা করছি যে, এই কথাগুলো বলতে পেরে আপনার বুকের ভিতরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কিছুটা উপশম হয়েছে।
আমি বিবেক সাজি কি না জানি না, তবে মুক্তমনায় আমার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব এবং নিজস্ব একটা ভূমিকা রয়েছে। আমি আমার সেই দায়িত্ব এবং ভূমিকা পালনে কখনোই শৈথিল্য প্রদর্শন করি না, কখনোই দ্বিধাগ্রস্ত হই না। আমার ওই ভূমিকাটা কারো কাছে নিয়ন্ত্রণবাদী মনে হতে পারে, কারো কাছে বিবেকের ভূমিকাও মনে হতে পারে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, আজকে মুক্তমনার যে সুনির্দিষ্ট একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড়িয়েছে, সমাজে গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, সেখানে বিন্দু পরিমাণে হলেও আমার ভূমিকা রয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সামান্য একটু ঢিল দিলে, আজকে মুক্তমনার পরিণতি হয়তো ফেইথফ্রিডমের মতই হতো। কাজেই, যতদিন এর সঙ্গে যুক্ত আছি, মুক্তমনার প্রতি ভালবাসাটুকু অটুট আছে, ততদিন আপনার ভাষায় বিবেকের ভূমিকাটা আমি পালন করেই যাবো। সেই দায়িত্ব পালনের আগে আয়নায় নিজেকে দেখা না দেখার গুরুত্বটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়।
@ফরিদ আহমেদ,
চেঙ্গিজ কি ইরান পর্যন্ত পৌঁচেছিলেন? নাকি আপনি সাধারণ ভাবে মোঙ্গল সাম্রাজ্যের কথা বলছেন?
@রৌরব,
পুরো ইরান দখল করতে মঙ্গোলদের দীর্ঘ সময় লেগেছিল। তবে সূত্রপাতটা করেছিল চেঙ্গিস খানই। ১২২০ সালে বোখারা এবং সমরখন্দ দখল করে নেয় চেঙ্গিস বাহিনী। শুধুমাত্র কারিগর ছাড়া বাকি সবাইকে হত্যা করা হয় সেখান। সেখান থেকেই পরবর্তী বছর ইরানে আক্রমণ চালায় তারা। ইরান এবং ইরাক পুরোপুরি দখলে আসে চেঙ্গিসের নাতি হোলেগু খানের ১২৫৮ সালে বাগদাদ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে।
@রৌরব, চেঙ্গিস নিজে ইরান পর্যন্ত কখনই পৌছাননি। সমরখন্দ/বোখারা থেকেই তিনি ব্যাক করেন চীনের উদ্দেশ্যে। ঐদিকে কখনও ব্যাক করেননি, ১২২৭ সালে মৃত্যু হয় তার। তার নাতি হালাকু খান ইরান দখল করেন তার মৃত্যর প্রায় ৩০ বছর পর।
সঙ্গত কারণেই ভুল তথ্যের উপর ভর করে এটা চেঙ্গিসের কাঁধে চাপানোটা কোনভাবেই ঠিক না।
অবশ্যই নয়। তাঁর মত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ একজন মানুষকে এভাবে দায়ী করাটা আসলেই সঠিক নয়।
চেঙ্গিসের বদলেই মোঙ্গল বলা উচিত ছিল আমার। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, চেঙ্গিস যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছিল, সেটাকেই সুসম্পন্ন করেছে তাঁর নাতিরা। এই ধারাবাহিকতাটা এতই শক্ত বুনটে বাঁধা যে, ইতিহাসবিদরাও এদেরকে আলাদা করতে অনেক সময় ব্যর্থ বা অনিচ্ছুক হয়।
@ফরিদ আহমেদ, তাইতো, চেঙ্গিসের মৃত্যুর ৩০ বছর পরে হালাকু খানের করা হত্যাকান্ডও আলাদা করা অনেক কঠিন একটা কাজ। বেশ বলেছেন। (Y)
@হোরাস,
১২২১ সালে নিশাপুরের দেড় মিলিয়নের বেশি মানুষ হত্যার কথাটা ভুলে গেছেন বোধহয়। একটা প্রাণীকেও বাঁচিয়ে রাখা হয় নি সেই শহরের। তাঁদের কাটামুণ্ডু দিয়ে যে টাওয়ার বানানো হয়েছিল, সেটাও কি বিস্মৃত হয়েছেন?
@হোরাস,
উইকিপিডিয়ায় কিন্তু দেখছি বোখারা-সমরখন্দের ব্যাপারটা আছে (চেঙ্গিজ খান, পরবর্তী মোঙ্গলরা নয়)।
@ফরিদ আহমেদ,
চেঙ্গিজের নিজস্ব সহিংসতাই এত বেশি যে বংশধরদের কর্মকাণ্ড তার উপর চাপানোর প্রয়োজন দেখছি না। “ধারাবাহিকতা” একটা ধোঁয়াটে ব্যাপার। ঔরঙ্গজেবের সাইকোপ্যাথলজি কি আকবরের ধারাবাহিকতা? কে জানে?
@রৌরব,
চেঙ্গিসের নাতিরা সরাসরি পিতামহের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। পিতামহের পরিকল্পনাকেই বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা। সে কারণেই তাঁদের সব কর্মকাণ্ডই চেঙ্গিসের উপরে চাপানো হয়। এটা শুধু আমি করি নি, ঐতিহাসিকেরাও এই কাজটা করে থাকেন। এখানে হোরাসও একই কাজ করেছেন। তিনি যে ম্যাপটা দিয়েছেন মোঙ্গল সাম্রাজ্যের, এর পুরোটা চেঙ্গিস খানের সময় দখলে আসে নি। তাঁর নাতিপুতিরা এই সাম্রাজ্যের বিস্তারে অংশ নিয়েছিলেন।
@ফরিদ আহমেদ, ঐতিহাসিকেরাও এই কাজটা করে থাকেন… আর তাতেই সব শুদ্ধ হয়ে গেলো। (Y)
@রৌরব,
আমি খোরাসান প্রদেশে চেংগিস খাঁর বাহিনীর নৃসংশ উপায়ে বিদ্রোহ দমনের বর্ননা পড়েছিলাম। ঠিক নিশ্চিত নই সেটা এখনকার কোন দেশে পড়ে। যতদুর মনে পড়ে গুরগংগা নদী নামে এক নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে বিস্তির্ন জনবহুল এলাকা প্লাবিত করে ফেলা হয়েছিল
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার মন্তব্য ভাল লাগলো। চেঙ্গিস খান, হালাকু খান পৃথিবীর “শ্রেষ্ঠ” নৃশংসতম ব্যক্তিবর্গের সন্মুখ সারির সদস্য।
বানু কুরাইজা গোত্রে গণহত্যার কথাই বলেন কিংবা জামাল যুদ্ধের কথাই বলেন- এগুলো সম্পর্কে সাধারন মুসলমানেরা জানে খুব কম! এগুলো তাদের জানা দরকার!
@Husain,
বহুদিন পর সেই পুরনো রূপ কথা শুনলাম। মুহাম্মদ (স) এর অনুসারীদের অবদান গুলোকে যদি তার অবদান হিসেবে চালিয়ে দেন তবে তার আরও কিছু অনুসারী যারা রমনা বটমূল তথা সারা দুনিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে সে অবদান গুলোও নিশ্চয় মুহাম্মদের (স) অবদানই হবে?
আর আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে তিনি মাথায় হাত বুলায়ে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। তার সুখের সংসারের কথা শুনে চেঙ্গিস খা’র সংসারের কথা জানতে ইচ্ছা করছে? তবে মোগল রাজারা যে এত নিষ্ঠুর ছিল, তাদেরও তো সুখের সংসারই ছিল। আর এরশাদ শিকদার এরও তো শুনেছি সুখের সংসারই ছিল। কোন বউ যদি জানে যে তার জামাই কচুর কাটার মত মানুষ মারতে পারে, আর ঐ বউয়ের মাথায় গিলু থাকলে ভাল মেয়ে না হয়ে উপায় আছে?
যাঁর কথার এতো প্রভাব, চৌদ্দশত বছর ধরে এখনো অবিকল প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে, তার বানী ও আদর্শ কি পড়তে বা জানতে সামান্য ইচ্ছে করে না? একবার ভেবে দেখুন তো?
মুক্তমনার রিসোর্সগুলো হয়তো এখনও দেখেন নি ভাই। আশা করি ঈমান চলে যাবার ভয়ে ই-বুকগুলো না পড়ে গালাগালি করতে করতে মু্ক্তমনা ছেড়ে চলে যাবেন না।
অথচ এর বিপরীতে মুহম্মদ, আল্লার দোহাই দিয়ে কোরানের ৩ নং সূরা আল-ইমরানের ৮৫ নং আয়াতে কী বলেছে দেখুন
এ থেকেই দুজনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা বোঝা যায়।
@হৃদয়াকাশ,
মুহাম্মদ নতুন কিছুই করেননি। কেবল ইহুদি ধর্মটাকে নতুন নামে বাজারজাত করেছেন। নতুন কোনো গ্রহনযোগ্য প্রথা তৈরি করবার শিক্ষাও তার ছিলো না। সে বিবেচনায় তাকে মহান নেতা বলা চলে না। দেখুন কুরান ৮৭:১৮-১৯ “অবশ্যই এটা (কুরান) আছে পূর্বতন বইগুলোতে – ইব্রাহিম ও মুসার বইয়ে।” প্রকৃত প্রস্তাবে নতুন ধর্ম হিসেবে ইসলামের অস্তিত্বই থাকতে পারে না। কুরানে মুহাম্মদ বহুবার দাবি করেছেন যে তিনি ইব্রাহিম ও মুসার ধর্মই পুনঃপ্রচার করেছেন। কুরান ৪০:৩৮।
@তানভির জহির,
Thanks, অনেকদিন পর পুরোনো অনেক কথা মনে পড়লো।
কে কতো বেশী রাজ্য দখল করেছে, বা কে কতোবড় শাষক ছিলো, তা দিয়েই কাওকে ‘শ্রেষ্ঠ’ বা ‘সেরা’ বিবেচনা করাটা ভুল। হ্যা, তিনি তার নির্দিষ্ট কোনো পারদর্শিতার জন্যে ঠিক সেই ক্ষেত্রেই ‘সেরা’ হতে পারেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে ‘সেরা’ হতে পারেন। শেখ মুজিব হয়তোবা ‘বাংলাদেশের শাষক’দের মাঝে ‘সেরা’ খেতাব পেতে পারেন। তাই বলে ওভার-অল বিবেচনায় এরা ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ হবে এমন কোনো কথা নেই!
একজন ব্যক্তিত্বের অনেক দিকই ফুটে উঠে একসাথে। যিনি তার সমস্ত দিকের বিবেচনায় সবচেয়ে বেশী সফল হবেন, তাকেই শ্রেষ্ঠ বলা উচিৎ। সেই ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মদ (সঃ) কেই এই পর্যন্ত সকলেই সেরা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কেবল মুসলমান গবেষকরাই নয়, পশ্চিমা গবেষক, ইহুদী প্রফেসর, হিন্দু পন্ডিৎসহ বিভিন্ন ধর্মের বড় বড় ব্যক্তিত্বরা একবাক্যে মুহাম্মদ (সঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। আপনি হয়তো অনেকের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই জানেন, যেমন মাইকেল এইচ হার্টের ‘দ্যা হান্ড্রেড’ এ নবীজী (সঃ) সার্বিক বিবেচনায় তিনি সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। তা ছাড়াও গান্ধীজীও নবীজী (সঃ) এর শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করেছেন। আরো যারা একইভাবে মুহাম্মদকে (সঃ) সার্বিক বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাদের সকলের উক্তি নিয়ে নীচের এই লিঙ্কটি দেখুনঃ
http://www.answering-christianity.com/philosophers.htm
আর এখানে কিছু ভিডিও আছে, দেখে নিতে পারেন যদি মনে ধরেঃ http://www.discoveringislam.org/non-muslims_testify.htm
এবার আসুন, সাধারণ যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করি। ইতিহাসের পাতার মাঝে নবীজী (সঃ) এর জীবনের কেবল যে কোনো একটি দিকই ফুটে উঠেনি। তিনি যেমন একজন ন্যায় পরায়ন শাষক ছিলেন, তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন, আবার তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত ও তাঁর আদর্শে আদর্শবান হয়েই পরবর্তি পাঁচশত বছর ধরে মুসলমানরা পৃথিবীর অর্ধেকটা শাষন করেছিলো। শুধু শাষনই করে যায়নি, জ্ঞান-বিজ্ঞানেও পৃথিবীকে আরো কয়েকশত বছর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। প্রথম মুদ্রা প্রচলন করেন ওমর (রাঃ), প্রথম পুলিশ প্রশাষনের ব্যবস্থা করেন তিনিই, ‘ডেমক্রেসি’ বলতে যা বুঝায় – গনপ্রতিনিধির মতামতের ভিত্তিতে শাষক নিয়োগ করা – তা তিনিই প্রচলন করেছিলেন! প্রথম কোনো ‘গ্রন্থ’ হিসেবে সংরক্ষণ করা বলতে গেলে আবু বকর (সঃ) ও তাঁর সাথীরাই করেন। তাদের পূর্বে কোনো বই বা গ্রন্থ – হোকনা ধর্মীয় বা সেক্যুলার, সাহিত্য বা ইতিহাস – কেউই করেননি! প্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূচনা করেছেন মুসলমানরা। এভাবে বলতে গেলে লিষ্টটা অনেক অনেক বড় হয়ে যাবার ভয়ে এখানে ক্ষান্ত হতে হচ্ছে! সারমর্ম হিসেবে এভাবেই বলা যায় আধুনিক বিজ্ঞান যে ভিত্তির উপর গড়ে উঠেছে, তা ইসলাম তথা মুহাম্মদ (সঃ) এর সাথী এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই পাওয়া! যার কথায়, কাজে, এবং জীবনে এতোটুকুন প্রভাব রয়েছে, তিনি কি শ্রেষ্ঠত্বের তালিকা থেকে এতো সহজেই বাদ পড়ার মতো মানুষ??
মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন একমাত্র নেতা, যিনি গন্ড-মূর্খ জাহেলী এক গোষ্ঠী মানুষকে মাত্র ২৩ বছরের মাথায় সেই সময়ের সবচেয়ে সভ্য, সবচেয়ে শিক্ষিত, সবচেয়ে আধুনিক ও সবচেয়ে ‘প্রগ্রেসিভ’ হিসেবে পরিবর্তন করেছেন!! আর কে আছে ইতিহাসের পাতায় যিনি তাঁর মতো এতো অল্প সময়ে এতো প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন?
এতো কিছুর পরও তো তিনি তাঁর পারিবারিক জীবন যাপন করতে ভুলে জাননি! তাঁর পারিবারিক জীবনেও তিনি ছিলেন সফল! তাঁর রাষ্ট্রীয় জীবনের সফলতা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে বরং সফলতার স্বর্ণ-শিখরে নিয়ে গেছেন তাঁকে!! আর ক’জনই বা নেতা পাওয়া যায়, যারা নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনকে বিসর্জন দেন না?? ক’জন রাষ্ট্র নায়কেরই বা ব্যক্তি জীবনটা শুখকর?
তিনি কেবল নবী হওয়ার পরেই নয়, বরং নবী হওয়ার আগে থেকেই তাঁর সমাজে সমাদৃত ছিলেন! বরঞ্চ তাঁকে ‘আল-আমীন’ বা সত্যবাদী হিসেবেই জানতো সবায়! কি মুশরিক, কি কাফের, কি ইহুদী, বা খৃষ্টান, এক কথায় সবায়ই তাঁকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখতো! অতএব, এমনটাও ভাববার সুযোগ নেই যে তিনি নবুয়্যতের পরে আল্লহর কৃপায় ভাল হয়ে গেছেন!! তাঁর আনীত ধর্মবানী গ্রহন না করলেও ততকালীন কাফেররা সবাই তাঁর বানীর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলো! কেউ কেউ আত্মমর্যাদা হানীর ভয়ে, আর কেউ নিজ ধর্ম ত্যাগ করার আত্মম্ভীরতায় তাঁকে গ্রহন করেনি।
এতো কিছুর পরও আর কাকে পাওয়া যাবে যিনি একাধারে ধর্ম প্রচার করেছেন, রাষ্ট্র নায়ক ছিলেন, সবার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন – এমনকি শত্রুরও, পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেছেন, সর্বোপরি একদল এমন মানুষ গঠন করেছেন যারা তাঁর প্রস্থানের পরেও শত শত বছর ধরে তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন?! চেঙ্গিস খানের কি সেই আনুসারী আছে? কিংবা অন্য কোনো নেতা বা ধর্ম প্রচারকের কি সেই প্রভাব এখনো বিস্তৃত আছে যেমনটা নবীজী (সঃ) এর আছে?? তাঁর এমন ওভার-অল শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই তো তাঁকে সবাই ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে!
যাঁর কথার এতো প্রভাব, চৌদ্দশত বছর ধরে এখনো অবিকল প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে, তার বানী ও আদর্শ কি পড়তে বা জানতে সামান্য ইচ্ছে করে না? একবার ভেবে দেখুন তো?!
মানুষের বহু রকমের চেহারা থাকে। ব্যালেন্সড মূল্যায়ন মনে হয় খুবই বিরল। চেংগিস সম্পর্কে যেসব কাহিনী শুনে এসেছে তাতে তাকে পিশাচ ভিন্ন কিছু কল্পনা করা খুবই শক্ত ছিল। সে বিদ্রোহী রাজ্যে যেভাবে বিদ্রোহ দমন করত তা পড়লে গা শিউরে উঠতে বাধ্য। ওনার যে এত উন্নত রাজ ব্যাবস্থা ছিল তা জানা ছিল না।
কুবলাই খান কি এনার কোন বংশধর ছিলেন?
আর এত পরাক্রমশালী মোংগল বংশের পরে কিভাবে বেহাল অবস্থা হল? এখন তো মোংগলিয়া বলতে কেবল ধুধু প্রান্তর আর কিছু তাবু আর ভেড়া চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
@আদিল মাহমুদ,
কুবলাই চেঙ্গিজ-এর ছেলে। সাম্রাজ্যের ভাগাভাগিতে চীন তার ভাগে পড়ে।
@আদিল মাহমুদ, কুবলাই খান ছিলো চেঙ্গিস খানের নাতি। কুবলাই খান চেঙ্গিসের সাম্রাজ্য কে আরও বড় করেছিলো। সে তার রাজধানী প্রথমে চীনের ঝাংদু নামে এক শহরে প্রতিষ্ঠিত করে পরে সেটা স্হানান্তর করে বর্তমান সময়ের বেইজিংয়ে। মোটামুটি নাম মঙ্গোল সাম্রাজ্য হলেও কাজ কাজকারবার ছিলো চীন বেইজড।
@হোরাস,
আপনার আর রৌরবের কথা থেকে তো ছেলে নাতি সমস্যায় পড়ে গেলাম।
কুবলাই খানের নৃসংশতা মনে হয় চেংগিস টাইপের ছিল না। হালাকুও কি এই বংশের?
সে যুগের ষ্ট্যান্ডার্ডে মনে হয় চেংগিসের নিষ্ঠুরতা তেমন গুরতর কিছু না। মোগল বাদশাহরা বলা যায় মাত্র এই সেদিনের, ওনাদের আমলেরও যেসব কাহিনী আছে তাতেও অবাক হতে হয়, সে তূলনায় আকবর ছাড়া তেমন প্রজা হিতৈষী রেকর্ড মনে হয় না কারো আছে।
লেখা ভাল হয়েছে, এই গোছের আরো লেখেন। বিবর্তবাদের লন্ড্রি পরিষ্কার করে আর কতদিন:)) ।
@আদিল মাহমুদ,
আমি ভুল করেছি। নাতি হবে।
এই তথ্য সমৃদ্ধ দারুন চমৎকার লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ৷ কিন্তু আরো অনেকের মতই ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ’ শব্দ ব্যবহারে কিছুটা কুন্ঠা বোধ করছি ৷ ভালো মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ আমরা কি একটু অন্য অর্থে ব্যবহার করিনা ? যেমন হয়তো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বা শাসক লিখলে হয়তো এমনটা মনে হতোনা ৷ যা হোক আপনার লেখা পড়ে দারুন ভালো লাগলো ৷ আপনাকে আবারো ধন্যবাদ ৷
@শুভ্র,
এটা কোন সমস্যা না। আপনি তা করতেই পারেন। (Y) আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। (F)
@হোরাস,
বর্বরতার কথা মনে আসলেই আগে হালাকু খা-চেঙ্গিস খা’র কথা মনে আসত। যদিও এখ্ন আরেক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদের কথা মনে হয়।
মুহাম্মদের কুকীর্তির কথা জেনে যেমন চমকে উঠেছিলাম তেমনই চেঙ্গিস খা’র গুনের কথা শুনে চমকে উঠেছি।
আচ্ছা আরেক মঙ্গলিয়ান নেতা হালাকু খা’র কি ভাল কোন গুন ছিল? নাকি মুহাম্মদ যেমন খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ করে দেশ দখল করত, সেও তাদেরকে তাই করেছে?
@হেলাল, মোটামুটি সব মঙ্গোল শাসকরাই নিষ্ঠুরতার ক্ষেত্রে কেউ কারও থেকে কম যায়না। হালকুও তার ব্যতিক্রম নন বলেই আমার ধারণা।
মঙ্গোলদের নিষ্ঠুরতার একটা উদাহরণ দেই… সেই সময় মঙ্গোল সমাজে নিষ্ঠুর না হয়েও উপায় ছিলো না। চেঙ্গিসের বাল্য বন্ধু এবং ব্লাড ব্রাদার জামুখা পরবর্তীতে ক্ষমতার দ্বন্দে তার শত্রুতে পরিণত হয়। একবার চেঙ্গিস যখন লোকবলে দুর্বল ছিলো জামুখার সাথে যুদ্ধে সে পরাজিত হয়। তার অনেক সহযোদ্ধাকে জামুখা বন্দী করে এবং প্রত্যেককে জীবন্ত সেদ্ধ করে মারে। সেই ঘটনার পর জামুখার অনেক সহযোগী চেঙ্গিসকে অনেক বেশী মানবিক মনে করে তার দলে যোগ দেয়।
তাহলেই বুঝেন অবস্হা। 🙂
@হেলাল,
হালাকু চেঙ্গিসের ছেলে এবং বিশেষ রকম নৃশংস ছিল। মোঙ্গলদের হাতে পরাজিত প্রায় সব জাতিই মনস্তাত্বিক ভাবে বিপর্যস্ত, এখনও। চীনা বা ইরানীদের চেঙ্গিস খানের কথা বলে প্রতিক্রিয়া দেখবেন। মজা পাবেন 🙂
@মইনুল রাজু,
একমত । চেঙ্গিস খান সম্পর্কে এখানে যা বলা হয়েছে তাতে বলা যায় যে তিনি একজন বীর যোদ্ধ এবং কুশলী নেতা ছিলেন ।
কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলাতে কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে । কিভাবে তিনি মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল প্রমুখদের থেকেও শ্রেষ্ঠ হতে পারেন ?
@ছদ্মবেশী, কোন পারস্পেকটিভ থেকে আলোচনা করছি সেটা এখানে বিবেচ্য বলে আমি মনে করি।
আপনি আমাকে ইতিহাস থেকে কয়েকটা উদাহরণ দিতে পারেন, যেখানে এই দুইটা ব্যাপার থাকার পরও তাদেরকে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
আরেকটা কথাওতো আছে, “ইতিহাস সবসময় বিজয়ীর পক্ষে”। আলেকজান্ডার কে নিয়ে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম, সমস্ত ইতিহাস বলে “আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট”, কিন্তু বাস্তবে হওয়া উচিৎ গ্রেট ওয়ারিয়র বা বীরযোদ্ধা। চেঙ্গিস খানের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথাই প্রযোজ্য। যোদ্ধা হিসেবে শ্রেষ্ঠ হতেই পারে, কিন্তু এরা মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ কিনা সেটা ভেবে দেখার বিষয়।
চেঙ্গিস খানের খানকে নিয়ে Vasily Yan এর বইটা আমি পড়েছি।
তাকে নিয়ে ১৯৬৫ এবং ২০০৭ সালে করা দুটো মুভ্যি-ই আমি দেখেছি। ইউটিউবে থাকা বেশ কিছু ডকুমেন্টারি দেখেছি।কিন্তু কখনোই তাকে শ্রেষ্ঠ মানুষ মনে হয় নি।
অবশ্য কাকে শ্রেষ্ঠ মানুষ দাবি করা হবে সেটা আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। আপনার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হতেই পারে। জানি-না আপনি রূপকার্থে, ভালো দিকগুলোর দিকে জোর দেয়ার জন্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলেছেন কি-না। তা না-হলে আপনাকে যুক্তি দেখাতে হবে, কেন চেঙ্গিস খানের অবস্থান মাদার তেরেসার-ও উপরে। 🙂
@মইনুল রাজু,
লেখকের “শ্রেষ্ঠ” বিশেষণটিকে সমর্থনের ইচ্ছা নাই, তবে লেখক প্রথমে যে ৯৫ সালের জরিপের কথা উল্লেখ করেছেন, সেখানে বলা হয়েছে “গুরুত্বপূর্ণ”, শ্রেষ্ঠ নয়।
তবে “শ্রেষ্ঠত্ব”-র ব্যাপারটাও আইরনিক রূপ নিতে পারে। আলেকজান্দারের উদাহরণটিই নেয়া যায়। লোকটা প্রায় অকারণে ক্লাসিকাল গ্রীসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী থেবেসকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করে দিয়েছে, ধ্বংস করেছে টাইর সহ অন্যান্য বহু জায়গা। বর্বরতার চরম যাকে বলে। কিন্তু আলেকজান্দারের অভিযান জন্ম দিয়েছে হেলেনিস্টিক যুগের, মিশর-পারস্য-ভারতে যার প্রভাব কিনা অনেকটাই ধ্বনাত্মক। সেটার জন্য আলেকজান্দার কি কিছু পয়েন্ট পান?
অন্য প্রসঙ্গে, মাদার তেরেসার ব্যাপারে ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতামতের সাথে কি আপনি পরিচিত?
@রৌরব,
হিটলারের আবির্ভাবও ‘গুরুত্বপূর্ণ’। কিন্তু সেটা নেতিবাচক অর্থে। আমি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আর ‘শ্রেষ্ঠ’ শব্দ দুটিতে অনেক পার্থক্য করবো। আর লেখার ভিতরের জরিপের কথা বলেছেন। আপনার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শব্দটা ধার করেই বলি, একটা লেখার হেডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে কি বলেছেন শুধু সেটা নিয়েই হয়তো কথা বলা যায়।
আপনার সাথে একমত। বর্বর আলেকজান্ডারও অনেক ধ্বণাত্বক দিক অবশ্যই আছে। সেটা আমি অবশ্যই স্বীকার করছি। কিন্তু তার জন্য শ্রেষ্ঠ বিশেষণ দিয়ে দেব না, যেমনটা আপনারো সমর্থনের ইচ্ছে নেই। তবে, অবশ্যই আলেকজান্ডার পয়েন্ট পান এবং অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই।
ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতামতের সাথে আমি পরিচিত নয়। লিঙ্ক থাকলে দিতে পারেন। আমি মাদার তেরেসার নাম একটা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছি মাত্র, লেখার সময় তাৎক্ষণিকভাবে মনে এসেছে বিধায়।
@মইনুল রাজু,
httpv://www.youtube.com/watch?v=9WQ0i3nCx60
@মইনুল রাজু, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহকে তার অনুসারীরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে দাবি করে সেতো আপনি জানেনই। উপরে বিপ্লব পাল আকবর দি গ্রেটের কথা বলেছেন। পোস্টে রিচার্ড দি লায়ন হার্টের ক্থা আছে। এদেরকে ভাল মানুষ হিসাবে দাবী করা হয় বলেই আমি জানি।
আমার সাথে আপনি বা অন্যরা একমত হবেন সেটা আমি আশা করিনা। ইনফ্যাক্ট ‘শ্রেষ্ঠ’ শব্দটা আমি ইচ্ছা করেই ব্যবহার করেছি… অন্য শ্রেষ্ঠ দাবীদারদের সাথে একটা ‘সাটল’ তুলনা করার কথা মাথায় রেখে। অনেকেই দাবী করেন এ যুগের নৈতিকতার মানদন্ডে তাদের বিচার করলে হবে না। আমি দেখাতে চেয়েছি চেঙ্গিসের ব্যক্তি জীবনের ঘটনাগুলো এ যুগের নৈতিকতার মানদন্ডেও উত্তীর্ণ হয় অনায়াসে।
মাদার তেরেসাকে আমিও নিঃসন্দেহে খুবই ভাল মানুষ মনে করি। তবে তার কাজের প্রভাবটা ছিলো লোকাল মানে যাদের সেবা করেছেন শুধু তারাই উপকৃত হয়েছেন। আর চেঙ্গিসের প্রভাবটা ছিলো গ্লোবাল তার শাসনাধীন এলাকা ছাড়াও অন্যরা এমনকি পরবর্তী সব জেনারেশন তার ফল ভোগ করেছে বা করছে। উপরে রৌরব আলেকজান্ডার সম্পর্কে যা বলেছেন অনেকটা সেরকম। আর আমি শ্রেষ্ঠ বলেছি বলেই যে সবাই আমার সাথে একমত হবে এমনটা আমি আশা করিনা।
@হোরাস,
অনুসারীদের কাছে যদি শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেন তাহলে আমি একমত আপনার সাথে। সেক্ষেত্রে, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও কারো কাছে শ্রেষ্ঠ মানব হলে আপত্তি করার কিছু নেই।
তবে, চেঙ্গিসের ব্যক্তি জীবনের ঘটনা এ-যুগের নৈতিকতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে আপনার সাথে পুরোপুরি একমত। তবে, চেঙ্গিসের সাথে তেরেসার যে পার্থক্যটা দেখালেন, তাতে বলা যেতে পারে, চেঙ্গিস খান মাদার তেরেসার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব বিস্তারকারী।
আরেকটা কথা না বললেই নয়, আপনার লেখার স্টাইলটা ভালো হয়েছে। 🙂
অসাধারন।
@রিনরে, ধন্যবাদ। (F)
চেঙ্গিস খান সম্বন্ধে এতদিনের জানাটা পাল্টে গেল!
লেখাটা ভাল লেগেছে।
@লাইজু নাহার, আপনার ভালোলাগাটা কষ্ট করে জানিয়ে গেলেন এই জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এই মেরেছে। “হাজার বছর”-এর সাথে মুজিবের নাম না লাগিয়ে, চেঙ্গিস খানের নাম লাগালেন। আপনার তো দেখছি ভাই ক্ষমতার লোভ নেই!
@আদনান, আমি পারলে আরও এক হাজার যোগ করি। 🙂 আর শেখ মুজিব কিন্তু শ্রেষ্ঠ বাঙালী মানে শুধু একটি জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
@আদনান,
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই সব ব্যাপার গুলো ফালতু। রবীন্দ্রনাথের থেকে বড় বাঙালী কেও আসে নি-সম্ভব ও না। শেখ মুজিব বাঙলাদেশের বর্তমান দুর্দশা এবং ইসলামায়নের জন্যে বেশ অনেকটাই দায়ী। অনেকেই আমাদের দিকে জ্যোতি বসুকে খুব বড় নেতা বলে মনে করে-আসলেই লোকটা ছিল অপদার্থ। মুজিবকেও একজন অপদার্থ নেতা বললে কম বলা হয়-মুক্তিযুদ্ধের সময় আসল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন।
ভারতের অধিকাংশ জরীপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় বিবেকানন্দ। তিনি আবার বাঙালী ছিলেন। কিন্ত তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী না-প্রথম ১০ এর মধ্যে থাকেন-বুঝুন ঠেলা। নেতাজির অবস্থাও তাই-তিনি প্রথম পাচজন ভারতীয়র একজন, অথচ প্রথম বাঙালীদের মধ্যে নাই! সাম্প্রদায়িক ব্যাপার স্যাপার আছে দুই ধরনের জরিপেই।
চেঙ্গিস খানের মূল্যায়নের ব্যপারে আমি কিছুটা একমত- কারন লোকটা সফল নিরেপেক্ষ প্রশাসক এবং সমর নায়ক ছিল। যেগুন মুজিবের মধ্যে ছিল না। মুজিব হচ্ছে ওবামার মতন নেতা-ভাষন দেওয়ার জন্যে দারুণ-প্রশাসনে জিরো। আমি অবশ্য সম্রাট আকবরকে কাছাকাছি রাখব। আকবর একজন মহান দার্শনিক ও ছিলেন। রুমি , মহত্মা গান্ধী, নেপোলিয়ান, জর্জ ওয়াশিংটন-সবাই কাছাকাছিই থাকবে।
@বিপ্লব পাল,
আমি আপনার সাথে কিছুটা একমত।
“রবীন্দ্রনাথের থেকে বড় বাঙালী কেও আসে নি-সম্ভব ও না।”
আমিও তা-ই মনে করতাম, কিন্তু হুমায়ুন আজাদের “নারী” পড়ার পর থেকে আমি এর থেকে কিছুটা সরে এসেছি। তারপরও বলবো রবীন্দ্রনাথের কাছাকাছি আর আছেটা কে?
আদনান
@আদনান,
আমার ধারনা নারীবাদের মানদণ্ডে বিচার করতে গেলে ঠগ বাছতে গা৺ উজাড় হবে ৷ নারী নিয়ে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে আমরাইকি তার থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি ?
@বিপ্লব পাল,
ক্যাচাল-প্যাচালের মুড আর নাই দাদা। শেখ মুজিবকে একজন অপদার্থ নেতা বলা একটু বেশী হয়ে গেলো না?
@বিপ্লব পাল,
আমি আপনার সাথে একমত ৷ যা বলেছেন এর চাইতে সুন্দর করে বলতে পারতামনা, তাই আপনার মন্তব্যের পাদটিকায় আমার সহমত জানালাম ৷
@বিপ্লব পাল,
এসব মন্তব্য করার আগে আর একটু ভাবা উচিৎ। কাউকে ছোট করার আগে, আগে তার সমান হতে হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি’র লোকজন যখন শেখ মুজিবকে ছোট করার প্রতিযোগিতায় নেমে ছিলো, তখন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের শেখ মুজিব সম্পর্কে এক মন্তব্যের জবাবে একজন ফরাসি কূটনীতিক মন্তব্য করেছিলো,
আপনার মন্তব্য পড়ে আমার সেই কথা মনে পড়ে গেলো।
@হৃদয়াকাশ,
মুজিবএর সঠিক ইতিহাস , মুল্যায়ন এখনো লেখা হয় নি।
একজন নেতাকে আমরা দেখব জাতিকে তিনি কিভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ১৯৭২-১৯৭৫ এ বাংলাদেশের ইতিহাস আমি যেটুকু জেনেছি-তাতে চারিদিকে মুজিবের ভুল ই চোখে পড়ে-এবং সেই ভুল ঠেকাতে তিনি গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করতে বাকশালও গঠন করেন।
১৯৭০ সালেও তিনি সিওর ছিলেন না পূর্নাঙ্গ স্বাধীনতা না তখনো পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে চলবেন। আপনি লাফালাফি করতেই পারেন-তবে তাতে এটা মিথ্যে হবে না-পাকিস্তান তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্বীকার করলে, বাংলাদেশের জন্ম হত না। উনি সেটাই চেয়েছিলেন। যদিও পাকিস্তান তাকে স্বীকার নাও করতে পারে-এই জন্যে তিনি র এবং কেজিবির কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। ইতিহাসে আরো অনেক নেতা আমি দেখেছি-তারা মুজিবের থেকে অনেক বড়-বাংলাদেশেও আমি তাজুদ্দিনকে মুজিবের থেকে বড় নেতা বলে মনে করি।
@বিপ্লব পাল,
তখন কি এর খুব একটা প্রয়োজন ছিলো ? পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি পশ্চিমবঙ্গের স্বাধীনতা চায় ? কেনো চায় না ? নিশ্চয় তারা কেন্দ্রের শাসনে খুশি। বাঙ্গালিরা যদি কেন্দ্রের শাসনে খুশি থাকতো তাহলে কি স্বাধীনতার দাবি উঠতো ? না শেখ মুজিবের ডাকে কেউ সারা দিতো? মুজিবের ক্রেডিট এখানেই যে, পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ তার ডাকে সারা দিয়েছিলো এবং তার উপর আস্থা রাখতে পেরেছিলো এবং এই জনগনের সাহোয্যেই তিনি দেশকে পাকিস্তানের শোষণ শাসন থেকে মুক্ত করতে পেরেছিলো। আপনি আর কী চান ? দেশ অনেকেই গড়তে পারে এবং পারবেও কেয়ামত পর্যন্ত, কিন্তু স্বাধীনতা সবাই এনে দিতে পারে না।
নেতার শক্তি হচ্ছে জনগণ। আপনি কার সঙ্গে কার তুলনা করছেন ? ৭১ এর আগে বা পরে মুজিবকে দিয়ে লোকজন তাজউদ্দীনকে চিনতো না তাজউদ্দীনকে দিয়ে মুজিবকে চিনতো ? যার অবস্থানে তাকে থাকতে দিন। একজনকে বড় করতে গিয়ে আরেকজনকে নিচে নামালে উনারা কেউ নিচে নামবেন না। নিচে নামবেন আপনি।
@হৃদয়াকাশ,
মানে আপনি বলতে চাইছেন মুজিবকে পাকিস্তান স্বীকার করে নিলে স্বাধীনতার দরকার ছিল না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের ৯০% যুক্তিকেই আপনি অস্বীকার করলেন। ভাল কথা।
এবার তাজুদ্দিনের কথায় আসি। যে লোকটা মুক্তিযুদ্ধ আসলে পরিচালনা করল-তাকে লোকে চিনবে মুজিবের জন্যে!
আমি এই দুজনকে চিনেছি বেশ কিছু লোকের মাধ্যমে যারা তাদের অধীনে কাজ করত। মোটামুটি এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তাজুদ্দিন মুজিবের চেয়ে অনেক বেশী দক্ষ প্রশাসক, শিক্ষিত এবং বিচক্ষন নেতা ছিলেন। বাংলাদেশ তাকে তার যোগ্য সন্মান দেয় নি। আমি উনার বহুঘটনা তৎকালীন ভারতীয় মিলিটারী অফিসারদের কাছ থেকেও শুনেছি-তারা এমন মন্তব্য করেছেন যে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবের বদলে তাজুদ্দিনের থাকা শাপে বর-কারন মুজিব ছিলেন ভীষন এরাটিক এবং আবেগপ্রবণ-সিস্টেম মানতেন না।
আপনার মতের বিপক্ষে গেলেই কেও নীচে নামবে না। কারন ইতিহাস হচ্ছে কালের দন্ডে শাসিত বিচার। আজথেকে ৫০০ বছর বাদে বাংলাদেশের ইতিহাস এখনকার মতন করে লিখবে না।
@বিপ্লব পাল,
নেতার জন্মই হয় কিছু পরিবর্তন করার জন্য; সেই নেতা যখন ক্ষমতা হাতে পান তখন সেটা করে থাকেন। মুজিব যদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন তাহলে কি তিনি পূর্ব-পাকিস্তানের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারতেন না ? আর তা করতে পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কি প্রয়োজন ছিলো ? একটি বড় রাষ্ট্র ভেঙ্গে দুটি ছোট রাষ্ট্রের জন্ম কি, খণ্ডিত কোনো রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক ? অখণ্ডিত পাকিস্তান থাকলে কি প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারতো না ? এখন ভারত কোথায় আর প্রতিবেশি বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান কোথায় ? পাকিস্তান না ভাঙলে কি তাদের অবস্থা এমন হতো ?
আপনি বাংলাদেশ সম্পর্কে আর ও ভালো করে পড়াশুনা করেন। দেখেন ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মুজিবের ভূমিকা। তাহলেই বুঝবেন কার নেতৃত্বে যুদ্ধ হয়েছিলো ? তখন একমাত্র মুজিবকেই লোকে চিনতো। আপনি তাজউদ্দীনকে অন্যভাবে চিনতে পারেন, সেটা আপনার ব্যাপার।
@বিপ্লব পাল, ভাই জ্যোতি বসু আর শেখ মুজিবকে অপদার্থ বলে ফেললেন? এবার অপদার্থ শব্দটার একটা ব্যাখ্যা দেওয়া তো দরকার, নাকি?
@আতিকুর রাহমান সুমন,
যারা নিজের জাতিকে পিছিয়ে দিয়েছেন।
পশ্চিম বঙ্গকে ভারতের সব রাজ্যের থেকে পিছিয়ে দিয়েছেন জ্যোতি বসু। উনি যখন ক্ষমতায় আসেন গুজরাতের লোকেদের মাথাপিছু ইনকাম বাংলার ১৩০% ছিল। এখন সেটা ৩৩০%। বাকী সব ক্ষেত্রেই বাঙালীর পতন ঘটিয়েছেন জ্যোতিবাবু। এই লোক অপদার্থ না হলে অপদার্থর সংজ্ঞা বদলাতে হবে।
আর মুজিবের জন্যে আজ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এই দুরাবস্থা-যেটা ঠিক করতে এতদিন লাগছে। উনি কোন সিস্টেম নিজেও মানতেন না-ফলে তৈরী করতেও পারে নি। বাংলাদেশের দুরাবস্থার জন্যে তার দায় ১০০%।
@বিপ্লব পাল,
একটু বেশি হয়ে গেল না ভাই?
মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা কতটুকু ছিল বলতে পারেন?
@রনবীর সরকার,
বাংলাদেশের সৃষ্টি ছিল সময়ের দাবী। মুজিব না থাকলেও আরো অনেক নেতাই ছিলেন-মনে রাখবেন মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব ছিলেন পাকিস্তানে বন্দি-মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাজুউদ্দিন। মুজিব না জন্মালেও বাংলাদেশ হতই-কারন ভারতের স্বার্থ এবং বাংলাদেশীদের ক্ষোভ একসাথে মিলেছিল।
মুজিবের ১৯৭২-১৯৭৫ -প্রশাসনিক অপদার্থতার চূড়ান্ত। উনি সিস্টেম মানতেন না-সিস্টেম বানাতেও চান নি। ওই সময়টা হচ্ছে সবুজ বিপ্লবের প্রাক সময়-খাদ্যাভাব গোটা বিশ্বেই ছিল। তাজুউদ্দিন উনার মন্ত্রীসভা থেকে কেন পদত্যাগ করেছিলেন সেটা কি জানা আছে আপনার? সেই ইতিহাসটা গভীরে জানুন। তাহলে মুজিবের অপদার্থতা নিয়ে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
@বিপ্লব পাল,
আকবরের জীবনের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক হচ্ছে তার পিতার একান্ত অনুগত বৈরাম খা কে (যার কৌশলের ফলেই আকবর ছোটবেলায় রক্ষা পেয়েছিল) গুপ্তঘাতক দিয়ে হত্যা করানো যার সত্যিকার অর্থেই কোন প্রয়োজন ছিল না।
@রনবীর সরকার,
আকবর যে গুপ্তঘাতক দিয়ে বৈরাম খাঁকে হত্যা করেছিল, এই তথ্য কোথায় পেয়েছেন? হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস বাদশাহ নামদারে?
নাবালক অবস্থায় আকবরের নামে বৈরাম খাঁ সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন, কিন্তু আকবর আঠারো বছর হবার পরে তাঁদের দুজনের মধ্যে বৈরিতা দেখা দেয়। বৈরাম খাঁর অনুসারীরা তাঁকে ক্ষমতা দখলের জন্য ফুসলালে তিনি এতে রাজী হন নি। হজ্জ করার জন্য মক্কায় রওনা দেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তিগত কাজে তিনি পাঞ্জাবের দিকে গেলে, তার শত্রুরা আকবরের কানে খবর পৌঁছায় যে, বৈরাম খান সেখানে বিদ্রোহ ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। আকবর তাঁর শিক্ষক মীর আব্দুল লতিফকে দিয়ে ডিক্রি পাঠায় এই বলে যে, বৈরাম খানের কাছ থেকে তিনি প্রশাসনিক সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁকে হজ্জ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এর খরচপাতি সবকিছু সম্রাট বহন করবেন। বৈরাম খান এতে রাজী হন, কিন্তু গতি হয় ধীর। তিনি সময় নিতে থাকেন। তিনি যাতে দ্রুত মক্কার দিকে অগ্রসর হন সে কারণে পীর মোহাম্মদ খানের নেতৃত্বে বিশাল এক বাহিনী পাঠানো হয়। বৈরাম খান তখন জলন্ধরের দিকে সরে যান। পীর মোহাম্মদ ফিরে এসে সব খবর জানান। তখন আতগা খানের নেতৃত্বে বিরাট এক বাহিনী জলন্ধরে রওনা হয়। এই বাহিনী বৈরাম খাঁকে পরাজিত করে এবং তাঁকে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর আকবর নিজেই সসৈন্যে রওনা দেন বৈরাম খাঁকে ধরার জন্য। তিলওয়ারা দূর্গে তাঁকে ঘেরাও করে ফেলা হয়। তখন তিনি আকবেরর কাছে বিদ্রোহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নিজেকে আত্মসমর্পনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। হাজিপুরে এসে তিনি আকবেরর কাছে আত্মসমর্পন করেন। আত্মসমর্পনের পরে আকবর তাঁকে তিনিটি অপশন দেন। এক, কালপেরি এবং চান্দেরী জেলা তাঁকে দেওয়া, দুই, তাঁর গোপন মন্ত্রণাদাতা হিসাবে কাজ কর্ তিন, হজ্জে যাওয়া। বৈরাম খাঁ শেষ অপশনটা বেছে নেন এবং গুজরাট হয়ে মক্কার দিকে রওনা করেন। গুজরাটেই মোবারক খানের নেতৃত্বে একদল আফগান তাঁর শিবিরে হামলা চালায়। এই হামলার মূল কারণ ছিল মোবারক খানের পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়া। মোবারক খান বৈরাম খাঁকে হত্যা করে এবং তাঁর শিবির তছনছ করে দেয়। বৈরাম খাঁর পরিবার পরিজন নিঃস্ব অবস্থায় আহমেদাবাদে পৌঁছায়। আকবর তাঁদেরকে সেখান থেকে দিল্লী নিয়ে আসেন এবং বৈরাম খাঁর বিধবা স্ত্রী সেলিমা বেগমকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন এবং বৈরাম খাঁর এতিম সন্তান মির্জা আব্দুর রহিমের শিক্ষা দীক্ষার ব্যবস্থা করেন। মির্জা আব্দুর রহিম মির্জা খান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বড় হয়ে তাঁর বাবার খেতাব খান খানান এ ভূষিত হয়েছিলেন।
কাজেই বৈরাম খাঁকে হত্যা করা আকবরের কলংক নয়। তাঁর কলংক অন্য জায়গায়। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে চোখে তীরের আঘাত পেয়ে হিমু অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। অচেতন হিমুকে মোগল শিবিরে নিয়ে আসা হয়। হিন্দু কাউকে হত্যা করলে গাজী উপাধিতে ভূষিত করা হয়, এটা ছিল মোগল রীতি। আকবরকে গাজী উপাধিতে ভূষিত করার জন্য হিমুকে হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের দুটো মত আছে। একদল বলে যে, আকবর নিজেই তরবারী দিয়ে হিমুর শিরোচ্ছেদ করেছিল। অন্যদল বলে যে, তিনি তরবারী দিয়ে হিমুর মাথা ছুঁইয়ে দেন এবং বৈরাম খাঁ তাঁর পক্ষ থেকে হিমুর শিরোচ্ছেদ করেন। তবে যাই ঘটুক না কেন, হিমুর শিরোচ্ছেদের কারণে আকবর ভূষিত হন গাজী উপাধিতে। হিমুর কাটা মাথা তখন পাঠিয়ে দেওয়া হয় কাবুলে, মোগল হেরেমের মহিলাদের দর্শনের জন্য। মস্তকবিহীন হিমুর দেহ দিল্লীতে মুক্তস্থানে রাখা হয় দর্শকদের জন্য। হিমুর বাহিনীর সৈন্য এবং অনুগত লোকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয় এবং তাদের কাটা মুণ্ডু দিয়ে সাজিয়ে বিজয় টাওয়ার করা হয়। ও হ্যাঁ আরেকটি তথ্য দিয়ে যাই, যারা আকবরকে ধর্মনিরপেক্ষ বানাতে চান তাঁদের জন্য। হিমুর স্ত্রী পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও তাঁর বাবা পারেন নি। তাঁকে ইসলাম গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়। না করলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে হত্যা করা হয়।
চিতোর দূর্গ দখলের পরে উদয় সিং এর রাজপুত সেনারা কৌশলে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। আটকে পড়ে তিরিশ হাজার কৃষক, যারা দূর্গের ভিতরে বসবাস করতো। এই তিরিশ হাজার নিরীহ এবং নিরস্ত্র নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেন প্রতিশোধস্পৃহ গাজী আকবর দ্য গ্রেট।
@ফরিদ আহমেদ,
হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে আমিও এই আকবর কর্তৃক বৈরাম খাঁ হত্যা ঘটনায় খুবই মর্মাহত হয়ে সামান্য নেট খোঁজাখুজি করে মোটামুটি এই রকম তথ্যই পেয়েছিলাম।
হুমায়ুন আহমেদ নিজেই বলেছেন যে তিনি ইতিহাস বই লেখেননি, নিজেই স্বীকার করেছেন যে কিছু অপ্রিয় ব্যাপার স্যাপার তিনি ইচ্ছে করেই বাদ দিয়েছেন। যেমন হুমায়ুনকে তিনি মহান করে দেখাতে চেয়েছেন তাই হুমায়ুনের বিশাল হেরেম খানার কথা তিনি কেমন করে লেখেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার তথ্য পেয়ে তো দ্বিধায় পড়ে গেলাম। আমি তো জানতাম হুমায়ন আহমেদ একটু বেশি পড়াশুনা করেই বই-টই লেখে। 🙂
আপনার তথ্য যদি সত্য হয়, তবে আকবর আসলে তখনকার মানদন্ডে খুব নৃশংসতা মনে হয় দেখাননি।
আর যদি বৈরাম খা আকবরের গুপ্ত ঘাতক দ্বারাই নিহত হয়, তবে সেটা অবশ্যই অন্য নৃশংসতাগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।
আমরা যারা একটু কম পড়াশুনা করি, তাদের তো আসলেই মহা সমস্যা। :-Y :-O 🙁
কোন তথ্যটা বিশ্বাস করব, সেটা নিয়েই ত দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়।
@রনবীর সরকার,
হুমায়ুন আহমেদ পড়াশোনা করে লিখেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাদশাহ নামদারতো একটা উপন্যাস, ইতিহাস বই নয়। তিনি কল্পনার রং ব্যবহার করেছেন তাঁর উপন্যাসকে আকর্ষণীয় করার প্রয়াসে। এই স্বাধীনতা একজন ঔপন্যাসিকের আছে। তবে, এটা সত্যি যে, বাদশাহ নামদারে তিনি ইতিহাসের অনেক কাছাকাছি ছিলেন। তাঁর উপন্যাসটির বেশিরভাগ তথ্যই তিনি নিয়েছেন বাদশাহ হুমায়ুনের বৈমাত্রেয় ভগ্নি গুলবদন বেগমের লেখা হুমায়ূনামা থেকে।
@ফরিদ আহমেদ,
আকবরের জীবনটাও কিছুটা সম্রাট অশোকের মতন। উনি ইসলাম নিয়ে আস্তে আস্তে বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন রাজ্য পরিচালনা করার সময়। প্রথম জীবনে আকবর এবং শেষ জীবনের আকবর এক নন।
@বিপ্লব পাল,
শেখ মুজিব যদি আসলে কোন বড় মাপের নেতা নাই হবে, আপনার কাছে একটা প্রশ্ন, তার ঐ সময়কার শতভাগ জনপ্রিয়তার কারন কী?
শুধু মাত্র মুজিব আমাদের পাশে আছে এই বিশ্বাসে একটা সম্পুর্ন মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গেছে। যেখান থেকে কিনা আবার আমরা স্বাধীনও হয়েছি। সে সময়ের স্লোগান হল, তোমার নেতা, আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।
তাজউদ্দিনের অবদান আমি কোনভাবেই, আবারও বলছি কোনভাবেই খাটো করে দেখছি না। কিন্তু কথা হল, মুজিবের ক্যারিজম্যাটিক ব্যক্তিত্বের ধারেকাছেও তখন কেউ ছিল না। যার জন্যেই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সিম্বলিক ক্যরেক্টার ছিলেন মুজিবই, তাজউদ্দিন বা অন্য কোন নেতা নন।
আপনি মুজিবের মাত্র দু তিন বছরের শাসনামল দেখেই তাকে অপদার্থ বলে বসে আছেন। আপনার এই আবজাব কথা বার্তা দেখে কেউ যদি আপনাকে অপদার্থ একজন ব্লগার বলে তাহলে কেমন হয়? মুজিবের নেতৃত্ব বুঝতে হলে আপনাকে দেখতে হবে তার আন্দোলনের সময়কার ঘটনা। মাত্র কয়েকদিনের শাসন নয়। একটা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে যেখানে সবার কাছে অস্ত্র, যে যা পারছে লুটে নিচ্ছে, অরাজকতাময় পরিবেশ এর মধ্যে একটা দেশকে শুধুমাত্র ২ ৩ বছরের মধ্যে আওতায় আনা একপ্রকার অসম্ভব। আমি এখানে মোটেও মুজিবের বাকশালীয় সিস্টেমের সমর্থন করছি না। শুধু এটুকুই বলতে চাচ্ছি, মুজিবকে অপদার্থ বলার আগে তার আন্দোলন, তার সংগ্রাম দেখতে হবে।
বাংলাদেশের সৃষ্টি ছিল সময়ের দাবী। মুজিব না থাকলেও আরো অনেক নেতাই ছিলেন।
আপেক্ষিকতার নীতি আইন্সটাইন না দিলেও মানুষের প্রয়োজনে অবশ্যই সময়ের দাবী হিসেবে তা সৃষ্টি হতে বাধ্য। একথা বিজ্ঞানের প্রায় প্রত্যেকটা আবিষ্কারের ক্ষেত্রেই বলা যায়। তো আসেন সেই মহান বিজ্ঞানীদের ক্রেডিট না দিয়ে শুধু বলি, ওগুলো তো সময়ের দাবী মাত্র! আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আপামর জনগন যোগ না দিলে মুক্তিযুদ্ধের এমন চেহারা হত না। তো আমরা আসেন বলি, আরে ঐ সময় তো মইরাই যাইত,তো কয়ডারে লইয়াই মরল। এই আর কি। এত সম্মানের কী আছে?
আপনি বললেনঃ
একজন নেতাকে আমরা দেখব জাতিকে তিনি কিভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
আমাদের বাঙালী জাতিকে স্বাধীন বানিয়ে রেখে গেলেন তিনি, আপনি বলতে চান এটা আগানো নয়? অবশ্য আপনার কাছে যদি স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া না হয় তাহলে আমার কিছু বলার নাই।
আমার দেশের যে লোকটা আমাদের একটি দেশ দিল, স্বাধীন বানিয়ে রেখে গেলো সেই হিমালয়সম মানুষটার চরিত্র কিনা জানতে হবে আরেক দেশের মানুষের কাছ থেকে? কলিকাল আর কাকে বলে!
@বিপ্লব পাল,
এটা ঠিক বলেছেন। আমি একমত।
প্রমাণ ছাড়া এইসব দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য আপনার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
@বিপ্লব পাল,
প্রথমটুকু( বোল্ড) না হয় মেনে নিলাম।২য় অংশটুকু দিয়ে কি বুঝাতে চাইলেন? এটাই কি যে রবীন্দ্রনাথের থেকে বড় বাঙালী আর আসবেও না, বা আসা সম্ভবও না?
চেঙ্গিস খানের জীবনী অন্য কারণে আমার কাছে বিরাট অনুপ্রেরণার।
ছোট বেলা থেকেই সে বঞ্ছিত-বাবাকে মেরে ফেলেছে কাকুরা। এমন কি যখন সবে সে গোষ্ঠি নেতা হয়েছে-তখন তার বৌকে অপহরণ করে অন্যদলের নেতারা। সেখানেই থামে নি। অসম এক গোষ্টিযুদ্ধে হেরে তাকে ক্রীতদাস করে চীনে পাঠানো হয় তিন বছর। দাসের ওপর কিরূপ দুর্ব্যাহর হয়-সেটা নিজে অনুভব করায়, চেঙ্গিস খান যুদ্ধে হারাদের ক্রীতদাস না বানিয়ে, তাদেরকে নিজের সেনা বাহিনীতে নিয়োগ করতেন। যাইহোক-সেই ক্রীতদাস অবস্থা থেকে পালিয়ে এসে-আবার নিজের গোষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করে, নতুন উদ্যোমে মঙ্গোল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন তিনি। তার মূলমন্ত্র ছিল বিভেদ না-এক্ করতে হবে। পরাজিতদের ক্রীতদাস না বানিয়ে, তাদেরকে তার সাম্রাজ্যে সামিল করতে হবে। ক্রীতদাস অবস্থায় যখন তার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে-ঠিক তখনো লড়াই ছাড়েন নি চেঙ্গিস খান। দেওয়ালে পিঠ ঠেকা অবস্থায়ও মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে বারে বারে তার চরিত্রগুণে-চেঙ্গিস খান তার সব থেকে বড় উদাহরন। শুধু তাই না-তার প্রশাসনে মঙ্গল এবং নন-মঙ্গলদের সমান গুরুত্ব ছিল এবং তিনি মেরিটোক্রাসিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। জাতি, ভাষার বিভেদের ওপরে ওঠা সেকালে সহজ ছিল না-কিন্ত ছোটবেলায় মঙগোলদের গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব তাকে এত ভুগিয়েছিল-তিনি বুঝেছিলেন জাতিগর্ব মানুষের নষ্টের মূল।
চেঙ্গিস খান এর ওপর একটা রাশিয়ান সিনেমা আছে- সবাইকে দেখতে অনুরোধ জানালাম।
Mongol, a film by Sergei Bodrov released in 2007. (Academy Award nominee for Best Foreign Language Film.)
@বিপ্লব পাল, ছবিটা আমি দেখেছি। ক্রীতদাসের ঘটনাটাও জানতাম। শক্ত রেফারেন্সের অভাবে পোস্টে যোগ করিনি। আসলে ভাবতেই অভাব লাগে যে ছোটবেলা থেকে চেঙ্গিস সম্পর্কে ঠিক উল্টোটা জেনেই বড় হয়েছি।
শিরোনাম দেখেই কেমুন কেমুন জানি লাগলো! অনেকদিন ধরে শুনে আসা প্রায় ধ্রুব সত্য হতে বসা সেই কথাটিও মনে পড়ে গেলো! :-s 😛
@নিটোল, কোন কথা? বলে ফেলেন।
@হোরাস,
‘He-who-should-not-be-named’ হইলেন দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ!!
@নিটোল, দুইজনের মধ্যে তুলনা করলে তো আমার চেঙ্গিসকেই বেটার মনে হচ্ছে। ভাগ্যিস বেচারা ধর্ম প্রচার শুরু করে নাই। 🙂
@হোরাস, এই চেঙ্গিশ খানের বংশধররাই পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামিক সভ্যতাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। শিল্প, সাহিত্য, গবেষণা নতুন মাত্রা পায়। কিন্তু এসব নিয়ে এরা কখনোই লিখবে না।
@নিটোল, ঠিক বলেছেন,চেঙ্গিজ খান ছিলো তাতারী ফেৎনা র মহা হারামী তৎকালীন ইরাকেই এই হারামজাদা ১৮লক্ষ নিরাপরাধ লোক হত্যা করে,শায়খ ইবনে তাইমিয়া রহঃ অক্লান্ত পরিশ্রম করে ও এই অভিশপ্ত হারামীকে দমন করতে পারেন নি.তারপর সিরিয়া মিশর তো আছেই,সবচেয়ে আশ্চর্য্য বিষয় এইযে পরবর্তীতে এই হারামী গুলি জাতির পিতা জাতির মাতা জাতির দুলাভাই হিসাবে পরিনত হন।
সুন্দর তথ্যবহুল লেখা।
@বাসার, ধন্যবাদ। (F)