(চর্য্যাপদ নিয়ে লিখছি।হাতের কাছে তেমন বই পত্র নেই।তারপরও এ বিষয় নিয়ে লেখার তাগিদ বোধ করছি।কেননা এর পংক্তিগুলো আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।সব গুলো না কিছু কিছু।কিন্তু এ কিছু কিছু সহজ পংক্তি এত গভীর ভাবে মনে লেগে থাকে যে তা ভোলা যায় না।মনের মধ্যে গুনগুন করে।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।নিচের লেখায় আমি মূলত সাহায্য নিয়েছি মুহম্মদ আবদুল হাই ও ডঃ আনোয়ার পাশা সম্পাদিত ‘চর্য্যাপদ’ (চতুর্থ সংস্করণ,১৯৮৯) হতে।হুমায়ুন আজাদের বাংলা সাহিত্যের জীবনী থেকেও নিয়েছি সাহায্য।উইকিপিডিয়াও সাহায্য করেছে অনেক ক্ষেত্রে)
১৮৮২ সাল।রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র,নেপাল থেকে ফিরে,প্রকাশ করলেন একটি তালিকা।তালিকাটি একটি বিশেষ কারণে বিখ্যাত।হাজার বছর ধরে নিগৃহীত শোষিত বঞ্চিত বাংগালীর আদি সাহিত্য পাওয়া গেছে বিদেশ বিভুঁইয়ে,নেপালে।ওই তালিকায় প্রথমবারের মত দেখানো হল বাংলা সাহিত্যের বিস্তার মাত্র দু-তিন শতাব্দী নয়।এর পেছনে আছে আরো কয়েকশ বছরের সোনালী ইতিহাস।সে ইতিহাসের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে কিছু অসাধারণ মানুষ ও তাদের সৃষ্টি এবং ঐ চমৎকার সৃষ্টিকর্মগুলো শুধু মহান করে তোলে নি তার স্রষ্টাদের-এটি ভরে তোলেছে বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার।যে বাংলা সাহিত্য ভুগছিল কৈশোর উত্তীণর্তায় এ তালিকা তাকে করে তুলল প্রাজ্ঞ আর পরিণত।রাজেন্দ্র লাল মিত্রকে এ কারণে বাংলা সাহিত্য মনে রেখে দেবে,সম্ভবত,আরো হাজার বছর।বাংলা সাহিত্যের ভাগ্যে লাঞ্চনা পড়েছে বহুবার।নিজের দেশে তাকে পাওয়া যায় নি তার আদিরূপে;যখন পাওয়া গেল-তাকে নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশিত হল;তা-ও বাংলায় নয়,বিদেশী ভাষা ইংরেজিতে।শিরোনাম ছিল-‘Sanskrit Buddhist Literature in Nepal’।রাজেন্দ্র লাল মিত্রের এ তালিকা ছিল বাংলা সাহিত্যের অদেখা ভুবনে প্রবেশের একমাত্র পথ।এ প্রবেশ পথের দিকে প্রচন্ড সাহস নিয়ে যে ব্যক্তি প্রথম পা বাড়ালেন তিনি মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।১৯০৭-এ নেপালের রাজদরবার থেকে দক্ষ জহুরীর মতো তিনি তুলে আনলেন ৫১ টি মুক্তোর মত কবিতা বা গীত;পড়িয়ে দিলেন বাংলা ভাষার গলায়।বাংলা ভাষা সম্রাজ্ঞীর মতো মহিমায় আবিভূর্ত হলো। ইংরেজি ভাষার সেই চরম আধিপত্যের সময়ও বাংলা ভাষা দেখাল তার শৌর্য;কেননা বাংলার জন্ম ইংরেজির প্রায় সমসাময়িক।ইংরেজি ভাষার উন্নতি বাংলাকে দেখিয়ে দিল সে তার যাত্রাপথে কীভাবে ছিটকে পড়েছে।তৈরী হতে থাকল বাংলার সমৃদ্ধায়নের পটভূমি।বহু শ্রম,ভুল আর বিচিত্র কমর্কান্ডের সমন্বয়ের ইতিহাস সেটি।কিন্তু তা অন্য বিষয়।আমরা এখন নিজেদের জড়িয়ে রাখব আদি আর মৌলিক বাংলা ভাষার নিদশর্নের সাথে।তার নাম চযার্পদ।
তবে শুরু করার আগে আরো একটি আফসোসের খবর জানিয়ে রাখা উচিৎ।আমাদের হাতে মূল ‘চযার্পদ’ নেই।হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যা পেয়েছিলেন তা ছিল চযার্পদের সংস্কৃত ভাষার টীকা।সে টীকায় ভাষ্য ছিল,ছিল কবিতার ব্যাখ্যা।চযার্পদ বাংলার সম্পদ না-কি অসমিয়া,হিন্দী অথবা ঊড়িয়া ভাষার সম্পদ তা নিয়েও শুরুতে ছিল প্রচন্ড বিতর্ক।সে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন নিজ নিজ ভাষার শ্রেষ্ঠ পন্ডিতেরা।কিন্তু হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,পরবর্তীতে ডক্টর সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়,যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দেখালেন যে চর্যাপদ বাংলা ভাষারই সম্পদ;অন্য কোন ভাষার নয়।
চর্যাপদ এখানেই ক্ষান্ত দেয়নি।দেশীয় পন্ডিতদের মাঝেও সে তুলেছে বিতর্ক।পন্ডিতেরা প্রশ্ন তুলেছেন চর্যাপদের নাম নিয়ে।হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যে পুঁথি পেয়েছেন সেটির নাম হল ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’।বিধুশেখর শাস্ত্রী নামে এক পন্ডিত মত প্রকাশ করলেন যে এর নাম হওয়া উচিৎ ‘আশ্চর্য্যচর্য্যাচয়’।সুকুমার সেন ও প্রবোধচন্দ্র বাগচী বলছেন এর নাম হবে ‘চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়’।এরকম বিতর্ক চলেছে বহুবছর।সবাই মিলে,অবশেষে,একটা ব্যাপারে একমত হলেন যে চর্য্যাগীতির প্রকৃত নাম হচ্ছে ‘চর্য্যাগীতিকোষ”।
চর্যাপদ পন্ডিতদের কম কষ্ট দেয় নি।নামকরণের পর তার চর্য্যা সংখ্যা নিয়ে লাগল প্রচন্ড ঝামেলা।নেপালী পুঁথির কয়েকটি পাতা নষ্ট;তাই ওখানে পাওয়া যায় না ২৪,২৫ ও৪৮ নাম্বার চর্য্যা।তবে পাওয়া যায় ২৩ নাম্বার সংখ্যার অর্ধেকটা।তবে তিব্বতী অনুবাদ একটা পাওয়া গেল।এবং সেখানে পাওয়া গেল সমগ্রটা।আরো ঝামেলা আছে।৫০ সংখ্যক চর্য্যা পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল।বাঁধ সাধল ৫১ সংখ্যক চর্য্যা।এর পদকর্তার নাম পাওয়া যায়;পাওয়া যায় না পদটিকেই।ওই পদটি হারিয়ে গেছে চিরতরে বাংলা ভাষার ইতিহাস থেকে।
চর্য্যাপদের কবি ২৩ জন।হারিয়ে যাওয়া পদটির কবিকে হিসেবে ধরলে ২৪ জন।কবিদের নামগুলো বেশ অভিনব লাগতে পারে আমাদের কাছে।যেমন-কুক্কুরীপাদ,লুইপাদ,চাটিলপাদ,ডোম্বীপাদ,ভুসুকপাদ ইত্যাদি ইত্যাদি।কবিদের অধিকাংশই বাংগালী।তবে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে এদের কেউ কেউ বাংলার বাইরের অধিবাসীও বটে।
রচনাকাল হিসেব করলে চর্য্যাপদের জন্ম-সময় ধরা যায় খ্রীস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে।এটা অবশ্য ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অভিমত।অন্যরা কিছুটা মাত্রায় দ্বিমত পোষণ করেছেন।
কী পরিচয় চর্য্যাপদের কবিদের?কী উদ্দেশ্য ছিল তা রচনার?নিখাদ শৈল্পিক কোন আবেদন জাগাতে কি রচিত হয়েছিল চর্য্যাপদ?নাকি উদ্দেশ্য ছিল বাস্তবিক জীবনকে তুলে ধরার প্রয়াস? এ নিয়ে পরবর্তী লেখায় লিখব।
চর্যাপদ নিয়ে আরেকটি তথ্যবহুল লেখা পাবেন যুক্তাক্ষর ব্লগ এর বাংলা সাহিত্যের সূর্যোদয়ঃ চর্যাপদ প্রবন্ধটিতে।
ডালিম ভাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। ফরিদ ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ।
@মোঃ রিফাত হুসাইন, আপনাকেও ধন্যবাদ
চর্যাপদ নিয়ে পরবর্তী লেখায় কিছু কিছু পংক্তির আধুনিক বঙ্গানুবাদ থাকলে ভাল হয়।
@তামান্না ঝুমু, @তামান্না ঝুমু, চর্যাপদের আধুনিক বংগানুবাদ স্বাক্ষর শতাব্দ প্রস্তাবিত এই লিংকটিতে কিছু আছে;সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ কতৃক ২১ টি চর্যা অনূদিত হয়েছে এখানে-
@ইমরান মাহমুদ ডালিম, “http://chokhachokhi.com/?p=210”
লেখাটি আমার কাছে ভাল লেগেছে। কারণ এই লেখায় বহু ঐতিহাসিক বিষয় উঠে এসেছে। চর্যা পদ যে বাঙ্গালী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের রচনা এতে কোন সন্দেহ নেই। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জাতিবেদ প্রথা মানে না, তাঁরা নির্মোহ হয়, তাঁরা ঈশ্বর বিশ্বাসী হয় না, তাঁরা হয় কর্ম বিশ্বাসী। চর্যাপদের ভাষা গুলো কর্ম ও কর্ম ফলকে গিরে রচিত হয়েছে।
@অরূপ, ধন্যবাদ।আসলে চর্যা গুলো বৌদ্ধ সহজিয়া মত অবলম্বনে সৃষ্ট ।
এই ধারণাটা ভুল। চর্যাপদের দাবীদার হিসাবে অসমিয়া এবং উড়িয়াকে খারিজ করে দেওয়া যায় না। চর্যাপদ শুধু বাংলার একক সম্পদ এমন কথা কোনো পণ্ডিতই বলেন নি। বাংলা, উড়িয়া এবং অসমীয়া একসময় খুব কাছাকাছি ভাষা ছিল। চর্যাপদ যে সময়ে রচিত হয় (বারো শতকের আগে কোনো এক সময়), সে সময়ে এই তিনটি ভাষার মধ্যে সুষ্পষ্ট কোনো পার্থক্য ছিল না। কাজেই, চর্যাপদকে কেউ উড়িয়া, কেউ অসমীয়া দাবী করলেও তাঁদের দাবীকে উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে ডঃ সুকুমার সেন বলেছেনঃ
ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং ডঃ সুকুমার সেন এই তিনজনই একমত যে, তেরো শতকের পরে উড়িয়া এবং ষোলশতকের পরে অসমীয়া বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই তিনজন এবং ডঃ প্রবোধচন্দ্র বাগচীর অভিমত হচ্ছে যে, চর্যাপদ বারো শতকের আগে লিখিত। এটা যদি হয়ে থাকে, তাহলে চর্যাপদ শুধু বাংলা ভাষারই সম্পদ, এই ধারণা ধোপে টেকে না।
ফরিদ ভাই আমার কাছে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো ছিল বলে আমি আসলে এই উক্তি করেছিলামঃ
১)সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায় মত দিয়েছেন যে চর্য্যার ভাষায় দ্বাদশ শতকের প্রাচীন বাংলা ভাষার রূপটি বিদ্যমান।(চর্য্যাগীতিঃসম্পাদনা-আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা)
২)মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন যে বাংলা সাহিত্যের উদ্ভব ৭ম শতক এবং আরো বলেন-“বাঙ্গালা ভাষা ইহার অন্তত একশত বৎসর পূর্বের হইবে”।তিনি মৎস্যেন্দ্রনাথকে(২১ সংখ্যক চর্য্যার মীননাথ) ৭ম শতকের বাংগালী কবি ধরে নিয়ে এ কথা বলেন।(বাংলা সাহিত্যের কথা,১ম খন্ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ)।আবার সুনীতিকুমার মনে করেন মীননাথ দ্বাদশ শতকের লোক।তবে সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায় চর্য্যাপদের ভাষাকে পশ্চিমবংগের উপভাষা বলে মনে করেন।ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দুজন পদকর্তা(শান্তিপাদ ও আর্য্যদেব) বাদে অন্য সব পদকর্তার ভাষা বাংলা বলে দাবি করেছেন।অবশ্য তিনি এও বলেছেন যে চর্য্যার ভাষাকে বঙ্গ-কামরূপী বলাই শ্রেয়।অসমীয়াদের দাবিও তিনি উড়িয়ে দেন নি।কেননা তাঁর মতে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা ও অসমীয়ার মধ্যে তেমন পার্থক্য ছিল না)
৩)“চর্য্যাগীতির ভাষা বাংলা-এ কথা সকলেই যে একবাক্যে স্বীকার করেছেন এমন নয়।কিন্তু ভাষা বিচারের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগি প্রয়োগ করলে একে বাংলা ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।ডঃ সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়,ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ পন্ডিতগণ দেখিয়েছেন,চর্য্যাপদের ভাষা মূলতঃই বাংলা”(চর্্য্যাগীতিকাঃসম্পাদনা-আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা)
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
দুজন নয়, পাঁচজন। তিনি পাঁচজন চর্যাকারের রচনা বাঙলা নয় বলে স্বীকার করেছেন। শান্তির ভাষা মৈথিলী, আর্যদেবের ভাষা উড়িয়া, কঙ্কনের ভাষা অপভ্রংশ ঘেঁষা, মহীধরের মৈথিলী, জয়নন্দীর ভাষা অর্বাচীন অবহট্ট বা প্রত্ন উড়িয়া-মৈথিলী-বাঙলা-আসামী আর কাহ্ন-সরহ-ভুস্কুর ভাষা বঙ্গ-কামরূপী বলে মেনে নিয়েছিলেন।
বাংলা ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না, এই কথাটা ঠিক না। আমি আগেই বলেছি যে, চর্যার রচনাকালীন সময়ে এই তিন ভাষার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য ছিল না। সে কারণে চর্যার উপরে কোনো এক অঞ্চলের বা কোনো এক ভাষার একক দাবি স্বীকার করা চলে না। চর্যার ভাষা আসলে অর্বাচীন অবহট্ট অর্থাৎ বাঙলা, উড়িয়া, মৈথিলী, অসমীয়ার জননী ভাষা।
@ফরিদ আহমেদ, ধন্যবাদ।এই তথ্যগুলো আমার জানা ছিল না।
@ফরিদ ভাই,চর্যাপদ সংক্রান্ত কিছু বইয়ের নাম যদি বলে দেন তাহলে আমি ও অন্যরা বেশ উপকৃত হবো
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
ভাল লোকের কাছেই বইয়ের নাম চেয়েছেন। 😛 আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে। দেশমাতাকে বিসর্রজনের মুহুর্তে বইগুলোকেও ব্রক্ষ্মপুত্রের জলে ভাসিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছিল আমাকে। তারপর থেকে বাংলা বইয়ের সাথে সম্পর্করহিত প্রায়। 🙁
তারপরেও কিছু বইয়ের নাম দিচ্ছি। এগুলোর বেশিরভাগই আমি পড়ি নি। কাজেই ভিতরে কী আছে জানি না।
ডঃ সুকুমার সেন – চর্যাগীতি পদাবলী
তারাপদ মুখোপাধ্যায় – চর্যাগীতি
ডঃ শশীভূষণ দাসগুপ্ত – বৌদ্ধধর্ম ও চর্যাগীতি
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী – হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা
ডঃ আহমদ শরীফ – বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য
@ফরিদ আহমেদ, ধন্যবাদ।আর বিদেশ বিভূঁইয়ে হলে কী হবে-আপনার স্মরণ শক্তির প্রশংসা না করে পারছি না।
রসনা তৃপ্তির জন্য বঙ্গানুবাদ সহ একটা দুটা পংক্তি পরবর্তী লেখার সাথে উদাহরণ স্বরূপ রাখবেন আশা করি।
@নৃপেন্দ্র সরকার, অবশ্যই অবশ্যই
ডালিম চর্য্যা নিয়ে লিখছ? সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ। আরো কিছু দিন অপেক্ষা করলে ভাল হয় না ? তবুও লেখ….। পড়েছি। ভালো লেগেছে। আমার নিজের যে সমস্যা; অর্থাৎ বানান সমস্যা কাটিয়ে উঠো।
@শামশাম ভাই, আসলে আমার ঘরে কাজ নাই তো আর ক্যাম্পাসে চলে গেলে অনেকদিন মুক্তমনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে-তাই ছোটখাট একটি লেখা লিখে ফেললাম আর কী!
ভালো লাগলো।
এই লিংকে ২১ টা চর্যা আছে > http://www.stat.wisc.edu/~deepayan/Bengali/WebPage/Archive/zzzCharyapad/archive.bn.html
সমসাময়িক বাংলা রীতিতে কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের রূপান্তর চেষ্টাঃ http://chokhachokhi.com/?p=210
@লেখক, রাহুল সাংকৃত্যায়ণের একটা সংগ্রহ ছিল, সম্ভবত তিব্বতী ভাষা থেকে।
@স্বাক্ষর শতাব্দ, আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে আধুনিক বাংলায় অনূদিত চর্যাগুলো।ধন্যবাদ লিংকটি দেয়ার জন্য।
খুবই ভাল লাগলো চর্যাপদ নিয়ে আপনার এই সমৃদ্ধ ছোট লেখাটি।
কি করে এই চর্যাপদ বাংলাভাসীদের স্থানে(অবিভক্ত বাংলায়) পাওয়া না গিয়ে পাওয়া গেল নেপালে তা কোথাও পাই নাই।
এই চর্যাপদ আমাদের বাংগালীদের স্থান, কাল, পাত্র ও ধর্মের ভেদা ভেদের মধ্যেও ঐকের এক সুমহান সাক্ষর বহন করে।
আশাকরি পরবর্তি পর্বে আর বিস্তৃত লিখবেন।
@সেন্টু টিকাদার, ধন্যবাদ।আসলে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রথম দুবার(১৮৯৭ ও ১৮৯৮)নেপালে গিয়ে তেমন কিছুই পান নি।পরবর্তীতে ১৯০৭ এ গিয়ে পুঁথি উদ্ধার করে আনেন।
@সেন্টু টিকাদার,
প্রাচীন বাংলা দীর্ঘদিন নেপাল কর্তৃক শাসিত হয়েছিল। আজকে যে নেপালকে এত দূর্বল মনে হচ্ছে সেই নেপাল এবং তৎসংলগ্ন উত্তর ভারত বুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী কয়েক শো বছর (যেমন সম্রাট অশোকের সময় – যিনি, সুনীতি কুমার চাটার্জীর মতে, নেপালীদের মত মঙ্গোলীয় ছিলেন) বলতে গেলে পুরো ভারতবর্ষকে শাসন করত। বুদ্ধের সময় নেপালী লিচ্ছবীরা ছিল অনেক শক্তিশালী জাতি। মনে করা হয় যে গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত বৈবাহিক সূত্রে লিচ্ছবীদের থেকে যৌতুক হিসাবে বাংলার শাসনভার প্রাপ্ত হন। এর প্রমাণ হিসাবে সুনীতি কুমার চাটার্জী চন্দ্রগুপ্তের পুত্র সমুদ্রগুপ্তের একটি শিলালিপির উল্লেখ করেন যেখানে তিনি নিজেকে “লিচ্ছবী দৌহিত্র” হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে লিচ্ছবীরা শৌর্যবীর্যে এত গরীয়ান ছিল যে সমুদ্রগুপ্ত নিজেকে তাদের দৌহিত্র হিসাবে পরিচয় দিতে গৌরবান্বিত বোধ করেছিলেন। চর্যাপদ যে সময় রচিত হয় তখনো বাংলার উত্তর-পূর্বাংশ (যেখানে চর্যাপদের সিংহভাগ রচিত হয় বলে ধারণা করা হয়) বিশেষতঃ কুমিল্লা অঞ্চল নেপালের খর্গবংশ (গুর্খা) দ্বারা শাসিত হত। এই খর্গ বংশের রাজাদের কর্তৃক নেপালের রাজদরবারে “চর্যাপদ” সংরক্ষিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। @পুলক