আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।
বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।
রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।
সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।
আপনি
আপনারা
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।
বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ
হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য ব্লগ থেকে নেয়া।
কৃতজ্ঞতায়ঃ গীতিয়ারা নাসরিন, চেয়ারপারসন, জার্নালিজম, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়।
পাঠক লেখাটা আমার না!
কবিতাটি একটি অসাধারণ স্থম্ভ যা পাঠকরার পর সমস্থ শরীর অগ্নিরন্যায় নাচতে থাকে।
খুব ভাল
কবিতাটির নাম “আমি সেই মেয়ে-1” কবি শুভ দাশগুপ্ত, আর এই কবির বেশিরভাগ কবিতায় গ্যন্থাকারে বেরোয়নি, তাঁর বেশিরভাগ কবিতা ব্রততী বন্দোপাধ্যায়ের কন্ঠে আবৃত্তির সিঁড়ি রূপে প্রকাশ পেয়েছে
হুম এটার এল্বামের নাম
“আমিই সেই মেয়ে” এর আবার ২টো পার্ট আছে…
সব গুলোই খুব ভালো, সা রে গা মা থেকে সিডি রিলিজ হয়েছিল।
কবিতা টা না শুনলে বুঝবেন না কি অ সাধারন কবিতা…
ব্রততীর কন্ঠে জাস্ট “অসাম”
মারী ফারার টা শুনলে গায়ে কাটা দেয়
এইটা ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবিতা
@নিশা মাহমুদা, এখানে যে কি হয়েছিলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।
মাথার ৩ হাত উপর দিয়ে গেলো সব :-s
কবিতাটি অদ্ভুদ সুন্দর ও গতিময়। (Y)
এই প্রসঙ্গে আমিও আর এক টি কবিতা শোনাতে চাই——
আমি ই সেই মেয়েটি-
সেই মে যার জন্মের সময় কন শাখ বাজেনি
জন্ম থেকেই যে জ্যোতিষির ছকে বন্দী
যার লগ্ন রা
@নীল, আমিই সেই মেয়েটি, কবিতাটির কবির নামটি একটু জানাবেন প্লিজ????
কবিতাটি আমি আগেও শুনেছি…কবিতা কৃষহ্ন মুরতি এর গলায়…।আমার খুব পছন্দের কবিতা…প্রতিটা পুরুশের ভেবে দেখা উচিত একটা মে এর কন্ঠে এই ভাসা কত বেদনায় উচ্চারিত হয়…আসলে এটাই ঘটে চলেছে আমাদের সমাজে…নারী স্বাধীনতা নিছক এ উপমা মাত্র।।আসলে নারী আজ বঞ্চিত……কবিতার লেখক ক জনিনা।।তবে তার জন্য রইল আমার অসংখ্য ধন্যবাদ…।।
লেখাটা ক্যাডেট কলেজ ব্লগে এসেছে। সেখানে সানাউল্লাহ লাবলু এটি পোস্ট করেছেন। লেখক শুভ দাশগুপ্ত। আবৃত্তিও আছে সেখানে। গীতিআরা নাসরীনের ফেসবুক থেকে কবিতাটি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আসলেই ঠিক তাই ঘটেছে!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
কবিতাটা ভীষণ ভাল লেগেছে তাই এখানে শেয়ার করা।
লাইজু নাহার,
কবিতাটি বিভিন্ন ব্লগে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তাই কবিতাটির উৎস নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে অন্য ব্লগ থেকে স্রেফ কপি করে এনে মুক্তমনা ব্লগে দেওয়াকে আমরা উৎসাহিত করি না। এই লেখাটির মূল রচয়িতা, কোন উৎস থেকে নেয়া হয়েছে তা পরিস্কারভাবে উল্লেখ না করলে লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। তথ্যসূত্রগুলো কবিতাটির উপরে যোগ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এটা তো ব্লগার পলাশের লেখা শুভংকর ও পার্বতী যা গত বছরে প্রকাশিত। এটার মূল থিম ছিলো ”পার্বতি,তোমাকে ভুলতে গিয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি।”
দারুণ একটি কবিতা, বিশেষ করে শেষের পংতিগুলো। লেখা আপনার না হলেও এটা তো তরজমা না করলে বুঝতে পারছিনা।
@আকাশ মালিক,
আতঙ্কে স্তব্ধ নয়। আমার কাছে মাকালির প্রশস্তি বলেই মনে হচ্ছে।
“মুক্তকেশীং”, “চতুর্ভুজাং”, “কালিকাং”, “মুন্ডমালা” থেকে মনে হচ্ছে দেবী কালির কথা বলা হচ্ছে। “বিবসনাং” শব্দটি থাকলে নিশ্চিত করে বলা যেত। বন্দনা (বিভুষিতাং) শব্দ থেকে মনে হচ্ছে প্রশস্তি করা হচ্ছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
শ্লোকটার দ্বিতীয় পংক্তিতে ছন্দপতন ঘটলো বলে মনে হয়েছে। যাহোক, মূল অর্থ বোধহয় এমন:
মহামেঘের মতো যাঁর প্রভা, অন্ধকারাচ্ছন্না, এলোচুলো, চারহস্তবিশিষ্টা সেই কালিকা, যিনি মানুষের মাথার মালায় বিভূষিত।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
অনুবাদের জন্য কৃতজ্ঞতা!
সংস্কৃত আমার কাছে হিব্রুর মতই!:-)
@লাইজু নাহার,
কবিতাটা আপনার নয় সে তো বলেছেন। এবার একটু এডিট করে উৎস আর লেখকের নামটা লাগিয়ে দেন না? ধর্ম আর বিজ্ঞানকে একটু বিরতিতে পাঠিয়ে চলুন কিছুক্ষণ কবিতা শুনি। বিভিন্ন ব্লগে ঘুরাঘুরি করে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি আমি বোবা হয়ে যাবো, যদি তাতেই হয় সুখ। শুনুন আমার পছন্দের সুন্দর একটি কবিতা। ইয়ার-ফোন কানে লাগিয়ে কবিতা শুনছি আর একা একা হাসছি। বউ বলে কিছুটা তো বলো কেন হাসছ, আমি বলি ‘বলতে নেই’।
httpv://www.youtube.com/watch?v=LKAGgOvWZ4c
@আকাশ মালিক,
নীচে ব্লাডি সিভিলিয়ানের লেখা দেখুন!
ভাই বোবা হলে পৃথিবী চলবে কি করে?
@আকাশ মালিক,
চমৎকার কবিতা!
কবি কে? আপনি কবিতার এত ভক্ত জানতাম না!
আপনাকে একটা কবিতা উৎসর্গ করব ভাবছি!
@লাইজু নাহার,
আমার কপালেও তা লিখেছিল বিধি?
একটা গান শুনুন, আমরা একদিন বাঙ্গালী ছিলামরে– :rotfl: :-Y
httpv://www.youtube.com/watch?v=vkAdZG8tBdI&playnext=1&list=PL793A7CF74E1FE91D
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
বাহ, চমৎকার তরজমা করেছেন দাদা।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন-
এবার ‘আমি সেই নারী’র একটা ছবি দেয়া যায়-
[img]http://www.taratarot.com/sitebuildercontent/sitebuilderpictures/kali.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
বাহ বাহ ! দূর্দান্ত :lotpot:
@আকাশ মালিক,
আচ্ছা এই শব্দটা কী হবে?
– আমার মতে -পঙক্তি
নাকি আপনার মতে- পংতি
ভেবে দেখুন তো আমি তো বুঝতে পারছিনা :-s
@আফরোজা আলম,
শুদ্ধ বানানটা হবে- পংক্তি
অনেকের লেখায় এভাবেও পঙক্তি দেখেছি।