[আবারও আরেকটা ডিসক্লেইমার দিয়েই শুরু করছি লেখাটা, আমাদের আচরণের ‘কতটুকু জৈবিক এবং কতটুকু সাংষ্কৃতিক’ নিয়ে একটা পর্বটা লেখার পর মস্তিষ্কের গঠন এবং বিকাশ নিয়ে আরও বেশ কয়েকটা বই এবং নতুন গবেষণা পড়তে শুরু করেছিলাম। আর সে জন্যই দেরী হয়ে গেল এই লেখাটা দিতে। এই লেখাটার শিরোনাম থেকেই বোধ হয় বুঝতে পারছেন যে,আগের লেখাটার অকাল মৃত্যু ঘটেছে। ফরিদ ভাই প্রায়শঃই বলেন পরের পর্ব লেখার প্রতিজ্ঞা করে কোন লেখা শেষ করলে সেই লেখা নাকি আর কখনও ব্লগের আলো দেখে না।ওনার কথা পুরোপুরি ফলে না গেলেও কিছুটা তো গেলই। যারা ওই লেখাটাতে মন্তব্য করেছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানানোর জন্য। এখন বুঝতে পারছি আজকের আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার বিভিন্ন গবেষনা এবং দাবীগুলোকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে মানুষের মস্তিষ্কের গঠন এবং বিকাশটা বোঝা খুব জরুরী। ব্যাপারটা অনেকটা সারা রাত রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ বলে চিৎকার করে ওঠার মতও বলতে পারেন। বিবর্তনীয়ভাবে আমাদের মস্তিষ্ক কতটুকু নমনীয়তা বা স্থিতিস্থাপকতা ধারণ করতে সক্ষম বা মস্তিষ্কের মত এত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বিকাশ কীভাবে ঘটেছে, আমাদের জন্মের আগে এবং পরে মস্তিষ্কের গঠন কীভাবে বদলায়, বংশগতিয় পরিবেশের সাথে তার মিথষ্ক্রিয়াটা ঠিক কীভাবে কাজ করে, এগুলো সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা না থাকলে খালি প্রান্তিক কিছু বিষয়ের চৌহদ্দিতে মাথা ঠুকরে মরতে হবে, তর্ক বিতর্কও চলতে থাকবে উপরে উপরে ভাসাভাসা ভাবেই। বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার ভিতরে ঢুকতে হলে, এর মধ্যে কতটুকু বাজারে কাটতি বাড়ানোর জন্য লেখা ‘পপ বিজ্ঞান’ এবং কতটুকু সত্যিকারের বিজ্ঞান তা বুঝতে হলে মস্তিষ্কের গভীরে ঢোকা ছাড়া বোধ হয় গত্যন্তর নেই। চলুন এবার মনোবিদ্যা দিয়ে শুরু না করে মননের উৎপত্তিস্থল মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে দেখি কতদূর এগুনো যায়।]
মস্তিষ্কের বিবর্তন নিয়ে লিখতে চাচ্ছি বহুদিন ধরেই কিন্তু কিছুতেই সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। একে তো মস্তিষ্কের ব্যাপার স্যাপার বেশ জটিল,তার উপর আবার দেহের এই এনার্জিখেকো(দেহের ওজনের মাত্র শতকরা ২ ভাগ ওজনের অংগটিকে সচল রাখতে ২০% এনার্জি ব্যয় করতে হয় আমাদের), জিনখেকো(মানুষের জিনোমের প্রায় ২৩-২৫ হাজার জিনের ৭০% নাকি এক্সপ্রেসড হয় মস্তিষ্কে) ৩ পাউন্ডের নরম অংগটি সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছুই জানি না (১)। আসলে ব্যাপারটা এতখানি জটিল বলেই তো আমরা এ সম্পর্কে এখনও এত কম জানি! এ প্রসঙ্গে ডঃ শন ক্যারল তার এন্ডলেস ফর্মস মোষ্ট বিউটিফুল বইতে আইবিএম এর এক কম্পিউটার রিসার্চ সাইন্টিস্ট এর মজার এক উক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন,’ if the human brain was so simple that we could understand it, we could be so simple that we could not’. ( এই কথাটার বাংলা করতে পারছি না, কেউ করে দিলে উপকৃত হব)
তবে আশার কথা হচ্ছে গত এক দশকে এ বিষয়টা নিয়ে প্রায় কালবৈশাখীর গতিতে কাজ শুরু হয়ে গেছে। ১৯৮১ সালে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী জীববিজ্ঞানী পিটার মিডাওয়ার দুঃখ করে বলেছিলেন, মানুষের মনের উন্মেষ নিয়ে গবেষণা করতে হলে আমাদের হাতে একটি মাত্র পথই খোলা আছে, আর তা হল দুটো মানুষের মধ্যে ব্যবহারের পার্থক্য নির্ধারণ করে তা থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। মাত্র তিন দশক আগের কথা; তার এই বক্তব্যের সাথে আজকের রিসার্চগুলোর পরিধি তুলনা করলেই কিন্তু বোঝা যায় গত তিন দশকে আমরা কতটা এগিয়ে গেছি। আজ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি হাতে হাত রেখে অকল্পনীয় গতিতে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র দুই ব্যক্তির ব্যবহারের পার্থক্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে সিদ্ধান্ত টানার দিন ফুরিয়েছে। আমরা প্রথমবারের মত একদিকে যেমন পূর্ণাংগ জিনোমের খুঁটিনাটি সম্পর্কে বুঝতে শুরু করেছি,ভ্রূণাবস্থায় বিভিন্ন জিনের এক্সপ্রেশন বা কর্মকান্ড ও বিকাশ প্রত্ক্ষ্য করছি, ঠিক তেমনিভাবে উঁকি মেরে দেখতে সক্ষম হচ্ছি আমাদের মস্তিষ্ক নামক রহস্যময় অংগটির ভিতরে। এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তরই হয়তো অজানা রয়ে গেছে কিন্তু যে গতিতে আমরা আগাতে শুরু করেছি তা তে করে ‘আরো অনেকখানি’ জানতে হয়তো খুব বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
মস্তিষ্ক নিয়ে লিখতে গেলে আরেকটা কঠিন সমস্যার সম্মুখীণ হতে হয়। এমন সব বিষয় উত্থাপন করতে হয় যাকে শুধু ‘বোরিং’ বললে আসলে কমই বলা হবে। এ যেন শাখের করাত, ‘হিপোক্যম্পাস, থ্যালামাস বা এ্যমিগডালা কাহাকে বলে’, জাতীয় রসকষহীন গালভরা পাঠ্যবই মার্কা কথাবার্তাগুলো না লিখে যেমন আগানোও যায় না আবার এগুলো নিয়ে লিখতে বসলেই পাঠকের দূর্গতি তো অনেক পরের কথা,নিজের দূরাবস্থার কথা মনে করেই ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মনে হয় কেউ যেন হ্যারি পটারের সেই চেতনা-শুষে নেওয়া ভয়াবহ ডিমেন্টেটরদের মত দম শুষে নিয়ে আমার এই রক্তমাংসের দেহটাকে তেজপাতার মত ছিবড়ে বানিয়ে দিচ্ছে। তাই ভাবছি একটু অন্যভাবে শুরু করলে কেমন হয়, আলোচনার খাতিরে এখানে সেখানে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের গঠনের প্রসংগ আসলেও সেটাকে মূল আলোচনা হিসেবে আনা হবে না। মুক্তমনার ব্লগার নীল রদ্দুর ইতোমধ্যেই এই দূরহ কাজটায় হাত দিয়েছেন, তাই ভাবছি আমি আরও পথে পা বাড়াবো না। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের গঠন নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন পড়লে নীল রোদ্দুরের মস্তিষ্কে অনুরণন লেখাটি থেকেই দেখে নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
শীবের গীততো অনেকই হল চলুন এখন মূল প্রসঙ্গে ঢোকা যাক। ইংরেজি ভাষায় মুরগি কেন রাস্তা পার হল এ নিয়ে অসংখ্য কার্টুন, জোক্স এবং কমিক আছে। এরকম দু’জন মোরগ এবং মুরগির গল্প দিয়েই মানুষের মস্তিষ্কের গল্প শুরু করা যাক। সম্বোধনের সুবিধার জন্য তাদের নাম দেওয়া যাক আবুল এবং রহিমা।
মোরগ আবুল এবং মুরগি রহিমা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার এ পারে। রাস্তা পার হয়ে ওপারে যাবে তারা। দেখা গেল মুরগী রহিমা দুপায়ে দৌড়ে,প্রায় অর্ধ-উড়ন্ত অবস্থায় ওপারে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু মোরগ আবুল কেমন যেন ইতস্তত করতে থাকলেন এবং শেষ পর্যন্ত রাস্তাটি পার না হয়ে কেমন যেন বিহবল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ।আবুল কেন রাস্তা পার হলেন না, তার সঙ্গিনী তড়তড় করে চলে যাওয়ার পরও উনি কেন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন? উনি কী ঠিকমত দেখতে পাচ্ছিলেন না, নাকি উনি যা দেখছিলেন তার মাথমুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলেন না, নাকি রাস্তা কীভাবে পার হতে হয় সেই মেমরিটি হঠাৎ করেই তার মস্তিষ্কে আর আর কাজ করছিল না। এমনও তো হতে পারে যে, রাস্তা পার হওয়ার ইচ্ছার সাথে পেশীর নাড়ানোর জন্য স্নায়ুতন্ত্রের যে সমন্বয়ের দরকার তা সেই মুহূর্তে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিংবা, হয়তো ব্যাপারটা আদৌ জটিল কিছু নয়, আবুল হয়তো রহিমার সাথে দীর্ঘদিনের এই সম্পর্কটায় হাপিয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন, তার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ইচ্ছাটা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ইচ্ছে করেই আর রাস্তাটা আর পার হলেন না? কয়েক দশক আগেও আবুল কেন রহিমার সাথে রাস্তা পার হল না এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে জীববিজ্ঞানী এবং মনস্তত্ত্ববিদদের মধ্যে রীতিমত গন্ডোগোলই বেঁধে যেত। মনস্তত্ত্ববিদের হয়তো বলতেন,রহিমের আবেগ এবং ইচ্ছাটাই এখানে প্রধাণ কারণ, এই ‘স্বাধীন ইচ্ছা’র পিছনে বংশগতিয় কারণ টেনে আনাটা হাস্যকর। ওদিকে জীববিজ্ঞানীরা হয়তো বলতেন, এর পিছনের কারণটা বংশগতিয় না হয়েই যায় না, নিশ্চয়ই সেই মুহূর্তে রাস্তা কী করে পার হতে হয় মস্তিষ্কে ধারণ করে রাখা সেই মেমরিটা ফেল মেরেছিল। জিন এর সাথে মনন এবং আচরনের সম্পর্কগুলো বের করার জন্য বেশীভাগ সময়েই বিজ্ঞানীরা মিউট্যান্ট ব্যবহার করেন।ধরুন,একটি ইদুঁর স্বাভাবিক সময়ে কীরকম ব্যবহার করে বনাম তাদের দেহে কোন বংশগতিয় পরিবর্তন ঘটালে ব্যবহারের কী পরিবর্তন ঘটতে পারে সেটার তুলনা করেই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত টানেন। আগে, গবেষণাগারের ইদুঁরগুলো যখন কোন পূর্ব-চেনা গোলকধাঁধা মধ্যে দিয়ে রাস্তা খুঁজে বের করে খাওয়া খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হত তখন সাধারণভাবেই তাকে মেমরির ব্যার্থতা বলেই ধরে নেওয়া হত (2)। আর এ কারণেই যে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈশিষ্ট্য,মনন,আচার আচরনগুলো শুধুই ‘মানবিক’, অর্থাৎ যেগুলো অন্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ মানুষের উপর মিউটেশন ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরণের জিনের এক্সপ্রেশন ঘটানো তো আর সম্ভব নয়।
তবে মনোবিজ্ঞানী এবং জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রায় সাপে নেউলে সম্পর্কের দিন মনে ফুরোতে শুরু করেছে। জন বি ওয়াটসনের সেই ডজন শিশু নিয়ে করা বিখ্যাত উক্তিটার কথা তো আমরা অনেকই শুনেছি। এক ডজন সুস্থ সদ্যজাত শিশুকে বড় করার জন্য এনে দিলে তিনি এদের যে কাউকে নাকি ইচ্ছেমত ডাক্তার, উকিল,আর্টিস্ট, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পথের ভিখারী বা চোর বানিয়ে ছেড়ে দিতে পারবেন। তাদের স্বভাব, চরিত্র,রুচি,পছন্দ অপছন্দ, বুদ্ধিবৃত্তিক ট্যালেন্ট, ক্ষমতা বা বাপ-দাদার ইতিহাস কিছুই এখানে ব্যাপার নয়, উনি এ সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নাকি এদের ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারবেন (৩)। বিহেভিয়ারিস্ট সাইকোলজির প্রবক্তা বি এফ স্কিনারের সেই বিখ্যাত দাবীটিই বা কম যায় কিসে? মানুষের মস্তিষ্ক নাকি ‘ব্ল্যাঙ্ক স্লেট’ ছাড়া আর কিছু নয়, এর পিছনে কোন বংশগতিয় বাধ্যবাধকতা নেই, আমাদের মনন এবং ব্যক্তিত্ব শুধুমাত্রই অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ করে শৈশবের অভিজ্ঞতা দ্বারাই নির্ধারিত হয়। আবার ওদিকে নেচারিস্টদের মুখেও অহরহ শোনা যেত যে মানবিক গুণাবলীগুলো প্রধাণত জিন দ্বারাই নির্ধারিত, চরম কোন পরিবেশের প্রভাব সৃষ্টি না হলে আমাদের চারপাশের অভিজ্ঞতা এগুলোর উপর নাকি কোন প্রভাব ফেলে না!
নাহ, এরকম উক্তিগুলো এখন আর তেমন একটা শোনা যায় না। গত প্রায় এক দেরশ’ বছরে বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারটা নিয়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাগুলো পেন্ডুলামের মত এক প্রান্ত থেকে আরেক্প্রান্তে ঘোরাঘুরি করলেও এখন মোটামুটিভাবে মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে মনে করার কোন কারণ নেই যে এ নিয়ে বিতর্কের নটে গাছটি মুড়িয়েছে। বিতর্ক চলছে পুরোদমেই, তবে বিতর্কের পরিধি এখন দুই চরম প্রান্ত থেকে ক্রমশঃ মাঝখানে সরে আসতে শুরু করেছে। মস্তিষ্কের উপর গবেষণা যতই আগাচ্ছে ততই এ ধরণের চরম অবস্থানগুলোর অসাড়তা প্রমাণিত হচ্ছে। এখন পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে যে আমাদের চিন্তা ভাবনা, বুদ্ধিবৃত্তি বা ব্যবহারগুলোর উপর জেনেটিক্স এবং পরিবেশ বা সংষ্কৃতির এক জটিল মিথষ্ক্রিয়া কাজ করে, এরা একে অপরকে অনবরতভাবে প্রভাবিত করতে থাকে।
এ বিষয়টির উপর যমজ শিশুদের নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। এগুলো থেকে ক্রমশঃ পরিষ্কার হয়ে উঠতে শুরু করেছে যে কিছু বৈশিষ্ট্যের পিছন জিনের প্রভাব প্রবল আবার অন্যগুলোর উপর ততটা প্রবল নাও হতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবেশও আসলে বিশাল ভূমিকা রাখে। সদৃশ এবং অসদৃশ (আইডেন্টিকাল এবং নন-আয়ডেন্টিকাল) যমজদের উপর গত কয়েক দশকে প্রচুর কাজ হয়েছে এ নিয়ে। এই গবেষণাগুলো থেকে যা বোঝা যেতে শুরু করেছে তা কিন্তু বেশ মজার। যেমন ধরুন, আমাদের ব্যক্তিত্বর তুলনায় বুদ্ধিমত্তার উপর নাকি জিনের প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম। সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, শতকরা ৫০ ভাগ সরাসরি জিনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও বাকি অর্ধেকের উপর পরিবেশের বেশ কড়া প্রভাব রয়েছে (৪)। মধ্যবিত্ত পরিবারে যমজ শিশুদের একজন বড় হলে, দরিদ্র পরিবারে বড় হওয়া আরেক যমজ ভাই বা বোনের তুলনায় তার বুদ্ধিমত্তা অপেক্ষাকৃত ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশী থাকে। একইভাবে যমজদের একজন উচ্চবিত্ত পরিবারে এবং আরেকজন মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হলে কিন্তু আবার তাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার তেমন কোন হেরফের দেখা যায় না। অর্থাৎ, সাধারণ বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে জিন এবং পরিবেশ দুইএরই ভূমিকা থাকলেও, চরম পরিবেশে জিনের চেয়ে পরিবেশের প্রভাব কর্তৃত্ব করতে পারে। কিন্তু পরিবেশে চরম কোন পার্থক্য না থাকলে বুদ্ধিমত্তার উপর জিনের প্রভাব প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে (৪)।ব্যাপারটা অনেকটা ভিটামিনের মত। আপনার শরীরে যদি ভিটামিনের অভাব থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরণের মারাত্মক সমস্যা দিতে পারে, কিন্তু আপনি যদি সারাদিন ধরে সাপ্লিমেন্ট খেয়ে খেয়ে শরীরে শতকরা দুই চার বা পাঁচশ ভাগ ভিটামিনের সাপ্লাই দিতে শুরু করেন তাহলে কিন্তু বাড়তি কোন লাভ হবে না। অর্থাৎ, আপনার শিশু মধ্যবিত্ত স্বচ্ছলতার মধ্যে থেকে যে সুযোগ সুবিধাগুলো পাচ্ছে তা দিয়েই মস্তিষ্কের অপ্টিমাম বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশগুলো ঘটানো সম্ভব, আরও অঢেল বিলাসিতা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বাড়তি কোন সুবিধা নাও দিতে পারে।
জীববিজ্ঞানের একটি নতুন শাখা কগনিটিভ নিউরোসাইন্স বা কগনিটিভ স্নায়ুবিজ্ঞানে এগুলো নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দুই একটি গবেষণার উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। ২০০২ সালে সাইন্স জারনালে প্রকাশিত একটি রিসার্চ দিয়েই শুরু করি। অনেক সময় চাপযুক্ত সংসারে বা সহিংস পরিবেশে বড় হয়েও দেখা যায় এক ভাইয়ের জীবনে এর তেমন কোন ছাপই পড়েনি। আর ওদিকে আরেক ভাইয়ের জীবন এমনই তামা তামা হয়ে গেছে যে সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করাই হয়ে উঠলো না তার। এর পিছনের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই হিমশিম খাচ্ছেন। আধুনিক গবেষণাগুলো থেকে বিজ্ঞানীরা আজকাল বুঝতে শুরু করেছেন যে, এ ধরণের জটিল সমস্যাগুলোর পিছনে ‘শুধু পরিবেশ বা শুধু জিন’ এককভাবে কাজ নাও করতে পারে। ডিউক ইউনিভার্সিটির নিউরসাইন্স সাইকিয়াট্রি এবং বিহেভিয়ারাল সাইন্সের অধ্যাপক ডঃ এ্যভশ্যলম কাস্পি এবং তার দল এ ধরণের বিষয়গুলো নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। তারা বহু বছর ধরে ছেলে শিশুদের বেশ বড়সড় একটা নমুনাক্ষেত্রের উপর একটি গবেষণা করেছিলেন। খুব চাপযুক্ত পরিবেশে অত্যাচার, নির্যাতন মধ্যে বড় হলে কোন কোন শিশু পরবর্তী জীবনে সহিংস এবং অসামাজিক হয়ে উঠলেও বাকিদের মধ্যে এর ছাপ পড়ে না কেন? তাদের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে পরিবেশের পাশাপাশি এর পিছনে একটি বংশগতিয় কারণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ব্যাপারটা সংক্ষেপে অনেকটা এরকম, একটি বিশেষ জিনের ভিতরে বহুরূপতার (functional polymorphism) কারণে MAOA (Monoamine Oxidase A) নামক একটি রাসায়নিক অনুঘটকের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। যে শিশুদের মধ্যে এই MAOA এর পরিমাণ বেশী থাকে তারা সামাজিক বা পারিবারিক চাপকে অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারে। এই গবেষণার ফলাফলটি যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে আংশিকভাবে হলেও হয়তো আমরা বুঝতে পারবো কেন নির্যাতিত শিশুদের অনেকে সহিংস হয়ে ওঠে কিন্তু আবার অনেকে এর প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয় (৫)।
ডঃ কাস্পির আরেকটি গবেষণার কথা উল্লেখ করছি। সাইন্স জারনালে প্রকাশিত এই গবেষণাটিতে উনি প্রস্তাব করেছেন যে, বিষন্নতার পিছনেও এ ধরণের জিন এবং পরিবেশের যৌথ ভূমিকা কাজ করতে পারে (৬) (নীচে তথ্যসূত্রে এই গবেষণা দুটোর এ্য্যবস্ট্রাক্টগুলো দিয়ে দিলাম, উৎসাহী পাঠক পড়ে নিতে পারেন) সাইন্টিফিক আমেরিকান মাইন্ডের মে/জ়ুন ২০১০ সংখ্যায় বাচ্চাদের মধ্যে লিংগ বৈষম্যজনিত ব্যবহারগুলোর কতটুকু বংশগতিয় এবং কতটুকু পরিবেশগত তা নিয়ে একটি চমৎকার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। এই গবেষণাগুলো নিয়ে এখন আর কথা বাড়াচ্ছি না, পরবর্তী পর্বগুলোতে এগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রইলো।
এখন ‘পরিবেশবাদী’ই বলুন আর ‘জিনবাদী’ই বলুন, সবাই খুব পরিষ্কারভাবে বুঝতে শুরু করেছেন যে আমাদের মনন, বুদ্ধিমত্তা, আচার ব্যবহারের মত জটিল ব্যাপারগুলোর ব্যাখ্যা ‘এস্পার বা ওস্পারের’ মত সাদা কালো ব্যাপার নয়। মোরগ আবুলের রাস্তা পার হতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে শুধুমাত্র শারীরিক বা বংশগতিয় ব্যর্থতা ছাড়াও অন্য আরও বহুবিধ কারণ কাজ করে থাকতে পারে। মনস্তত্ত্ববিদেরাও বুঝতে শুরু করেছেন যে এক্কেবারে ‘স্বাধীন ইচ্ছা’ বলতে কিছু নাও থাকতে পারে, আমাদের বেশীর ভাগ আচার, আচরণ, ব্যবহার বা কর্মকান্ডের পিছনেই সহজাত কোন বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ বংশগিতয় প্রভাব থাকার সম্ভাবনা বড়ই প্রবল। তবে এখানে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। কোন আচরনের সাথে বংশগতিয় কোন বৈশিষ্ট্যের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া মানেই কিন্তু বোঝায় না যে এই আচরনের পিছনের কারণটিকে চোখ বন্ধ করে ‘বংশগতিয়’ বলে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া যাবে। আমরা অনেক সময়েই বুঝি না যে ‘সম্পর্কিত’ মানেই ‘কারণিক’ নয়। আমাদের অনেক আচরণের পিছনেই হয়তো বংশগতিয় এবং পরিবেশের এক জটিল এবং সমন্বিত ফ্যাক্টর কাজ করে। বংশগতিয় ফ্যাক্টরগুলোর সাথে মনোযোগ, তাৎক্ষনিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের করার জন্য স্নায়বিক সমন্বয়, পরিবেশ, সংষ্কৃতি বা এপিজেনিটিক প্রভাবসহ এক জটিল পদ্ধতির জাল কাজ করতে পারে।
আজকাল প্রায়শঃই পত্রিকা খুললেই দেখা যায় বিজ্ঞানীরা নাকি ‘মাদাষক্ততার জিন’ খুঁজে পেয়েছেন বা ‘গে জিন’ আবিষ্কার করে ফেলেছেন বলে ফলাও করে খবর ছাপা হয়েছে। আর ওদিকে তো পপ বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের খবরের যেন কোন অন্ত নেই, আজ হয়তো ছাপা হচ্ছে মেয়েদের মেয়েলি হওয়ার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা, কাল হয়তো পাওয়া যাচ্ছে কেন মেয়েদের মস্তিষ্ক অংক এবং বিজ্ঞান ধারণ করতে সক্ষম নয় তার ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’। এভোলিউশানারী ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজির অন্যতম গবেষক শন ক্যারল এগুলো নিয়ে সাবধান করতে গিয়ে বলেছিলেন, এখন যেহেতু আমরা মোটে FOXP2 বা MYH16 এর মত জিনগুলোর কথা জানতে শুরু করেছি আমাদের এ প্রসঙ্গে অনেক বেশী সাবধাণতা অবলম্বণ করা প্রয়োজন। এ ধরণের কোন একটা আবিষ্কারকে মানুষের বিবর্তনের বা কোন একটা বৈশিষ্ট্যের ‘সব-রহস্য-সমাধানকারী’ কারণ বলে অভিহিত করার যে স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে তা বন্ধ করা একান্তভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। একদিকে ফসিলবিদ এবং নৃতত্ববিদেরা যেমন বুঝতে শুরু করেছেন যে আমাদের বিবর্তন কোন সরল এক রৈখিক পথে ঘটেনি ঠিক তেমনি স্নায়ুবিজ্ঞানীরাও পরিষ্কারভাবে বুঝতে শুরু করেছেন যে আমাদের আচার ব্যবহার বা বুদ্ধিবৃত্তির পিছনের কারণগুলো অনেক গভীরে প্রথিত। আমাদের ‘মানবীয় ক্ষমতাগুলোর’ মূল কার্যকরণ বা উৎপত্তি আমাদের মস্তিষ্কের কোন ‘এনাটিমিকাল ল্যান্ডমার্কের’ সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।আমাদের দ্বিপদী হয়ে ওঠা, মস্তিষ্কের আকার বড় হওয়া বা গঠন, ভাষা শেখার মত ক্ষমতাগুলো সম্ভবত ‘কয়েকটা’ জিনের উপর নির্ভরশীল নয় (4)। এমনও হয়তো হতে পারে যে মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো, বিশেষ করে আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোর পিছনে একটি নয় দুটি নয় শ’য়ে শ’য়ে জিনের হাত রয়েছে। শুধু তো তাইই নয়, তার উপর আবার রয়েছে পরিবেশের প্রভাব। বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার উপর ভিত্তি করে এই জিনগুলোর এক্সেপ্রেশনও আবার বদলে যেতে পারে।
ছবিঃ মেয়েদের এবং ছেলেদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় এ ধরণের ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলোতে।
আমরা এ নিয়ে এখনো অনেক কিছুই জানি না। কিন্তু গত দশকের এই গবেষণাগুলো থেকে ইতোমধ্যেই কতগুলো ব্যাপার ক্রমশঃ পরিষ্কার হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ‘জিন না পরিবেশ’ বা ‘প্রকৃতি বনাম সংষ্কৃতি’ ধরণের প্রশ্নগুলো গোড়াতেই গলদ রয়ে গেছে। প্রকৃতি বেশী গুরুত্বপূর্ণ নাকি পরিবেশ বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো মনে হয় অনেকটা ‘নারী বেশী ভালো নাকি পুরুষ বেশী ভালো’ ধরণের প্রশ্নের মত। পরিবেশ ছাড়া যেমন প্রকৃতি সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি প্রকৃতির সাথে পরিবেশের সাথে মিথষ্ক্রিয়া ব্যতীত আমাদের অস্তিত্বই সম্ভব নয়। একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটার গুরুত্ব পরিমাপ করাও সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বিজ্ঞান যতই আগাচ্ছে ততই আমরা আরো বেশী করে বুঝতে শুরু করেছি যে মানুষের মন এবং মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পর্কে জানতে হলে ‘কোনটি ভালো’ নয় বরং জিজ্ঞাস্যটা হতে হবে ‘কীভাবে’, জিজ্ঞেস করতে হবে মস্তিষ্ক এবং চেতনার বিকাশে আমাদের সহজাত বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যগুলো তার চারদিকের পরিবেশের কীভাবে মিথষ্ক্রিয়া করে।
ম্যাট রিডলী তার ‘অ্যজাইল জিন’ বইটিতে এ নিয়ে চমৎকার কিছু আলোচনা করেছেন। রিডলীর আমার খুব পছন্দের লেখক হলেও তার সাথে দ্বিমত হয় হরহামেশাই। তা তে যে রিডলীর মত বড় লেখকের কিছু এসে যায় তা নয়, কিন্তু আমার বড়ই উপকার হয়। তার বক্তব্যের সাথে দ্বিমতের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে আরো অনেকগুলো বই পড়ে ফেলি, কিন্তু সে কথা আপাতত তোলা থাক। উনি অ্যজাইল জিন বইটিতে একদিকে জিনের সহজাত পূর্ব-নির্মিত গঠন প্রবৃত্তি এবং আরেকদিকে এর স্থিতস্থাপকতা এবং নমনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেই সাথে দেখানোর চেষ্টা করেছেন পরিবেশ, পরিস্থিতি বা সংষ্কৃতির ছোঁয়া কিভাবে আমাদের বংশগতীয় ছাঁচগুলোকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রূপে গড়ে তোলে বা প্রভাবিত করে। বইটি তিনি শেষ করেছেন এই বলে, “জিন হচ্ছে সংবেদনশীলতার প্রতীক, জিন আমাদের নমনীয়তা এবং অভিজ্ঞতার ভৃত্য হওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতি বনাম পরিবেশ বিতর্কের দিন ফুরিয়েছে, পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রকৃতি টিকে থাকুক বহুকাল” (৮)।
সে যাক, এবার মস্তিষ্ক নিয়ে মূল আলোচনায় ঢোকা যাক। লেখাটিকে আপাতত তিনটি প্যরাডক্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। ভবিষ্যতে বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে লিখতে শুরু করলে এর পরিধি হয়তো আরও বাড়াতে হতে পারে। এই তিনটি প্যারাডক্সের আলোচনা করতে গেলে ঘাড় টানলে মাথা আসার মত অনেক প্রাসংগিক আলোচনাও হয়তো চলে আসবে। মস্তিষ্কের গঠন এবং বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়েও আলোচনা করতে হবে। চলুন শুরু করা যাক,
প্যারাডক্স নম্বর একঃ মস্তিষ্ক নিয়ে বিভিন্ন লেখা পড়লে প্রথমেই দেখা যায় যে বেশীর ভাগ লেখকই মানুষের মস্তিষ্ক কত অভিনব এবং কত বিষ্ময়কর তা নিয়ে আলোচনা করেন। কথাগুলোর মধ্যে একেবারেই যে সত্যতা নেই তা নয়। পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণীর বুদ্ধিবৃত্তি এবং মননের সাথে তুলনা করলে মানুষের মস্তিষ্কের কর্মকান্ডকে ‘অভিনব’,’নভেল’ জাতীয় বিশেষণে ভূষিত করাটাই হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের এই বিষ্ময়কর বুদ্ধিবৃত্তি এবং মনন-ক্ষমতা যে মস্তিষ্কের ফসল সেটার গঠন সম্পর্কেও কী একই বিশেষণগুলো প্রয়োগ করা সম্ভব? আমাদের দেহের সর্বোচ্চ কুঠরীতে অবস্থান করা তিন পাউন্ডের এই অংগটির গঠন আসলেই কী অভিনব কোন প্রকৌশলগত নৈপূন্য প্রকাশ করে? নাকি আমাদের অন্যান্য অংগের মতই এই মস্তিষ্কটিও কোটি কোটি বছরের বিবর্তনীয় জোড়াতালির সাক্ষ্য বহন করে?
চোখের গঠন নিয়েও আমরা কিন্তু সৃষ্টিবাদীদের কাছ থেকে একই ধরণের বক্তব্য শুনে অভ্যস্ত, চোখের মত একটি সুগঠিত এবং ‘অভিনব’ অংগ নাকি কোনভাবেই বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠতে পারে না! মুক্তমনাতেই আইডি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি মানুষের চোখের গঠন মোটেও নিঁখুত কোন প্রকৌশগত বা কারিগরী বিষ্ময় নয় বা এর মধ্যে উৎকর্ষের পূর্ণমাত্রার কোন নিদর্শনই পাওয়া যায় না। চোখের গঠন বেশ জটিল হলেও সেটিও কিন্তু দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতই দীর্ঘকালের বিবর্তনের ‘প্যাচ-ওয়ার্কের’ই ফসল। আমি আমার লেখায় দেখানোর চেষ্টা করবো যে, আমাদের মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কেও একই কথাই প্রযোজ্য। তাহলে এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে, আমাদের মস্তিষ্কও যদি বিবর্তনীয় পথে এমন জোড়াতালি দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে তাহলে আমরা কীভাবে এমন অভূতপূর্ব বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হতে পারলাম? যার গঠনে এমন জোড়াতালি তার কম্ম কী করে এত ‘মহান’ হওয়া সম্ভব? হ্যা, এই প্যারাডক্সটা নিয়েই আলোচনা করতে চাই এর পরের পর্বের লেখাটায়।
প্যারাডক্স নম্বর দুইঃ দ্বিতীয় প্যারাডক্সটিও বেশ জটিল। একটি গবেষণায় যদি দেখানো হয় যে, নবজাত মানব শিশু সহজাত বেশ কিছু বুদ্ধিবৃত্তি নিয়েই জন্মায়, মস্তিষ্ক মোটেও ‘ব্ল্যাক স্লেট’ নয় এর পরেই আবার আরও দুটো গবেষণার কথা শোনা যায় যেখানে এর উলটো কথা শোনা যায়। দেখানো হয়, আমাদের আচার আচরন, ব্যবহারের অনেক কিছুই বদলানো সম্ভব বা অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কের গঠন বদলে দিলেও আমরা দিব্যি অনেক নিত্য নৈমিত্তিক কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আজকালকার বহু গবেষণাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, মস্তিষ্ক দিয়ে আমরা যেমন পরিবেশের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করি, মস্তিষ্কই যেমন আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি এবং সহজাত চেতনার আধার, ঠিক তেমনিভাবে পরিবেশও আবার মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম। জন্মের পরে আমাদের মস্তিষ্ক চারপাশের পরিবেশ থেকে অনেক কিছুই শিখতে সক্ষম। কিন্তু তাহলে এখন স্বভাবতই প্রশ্ন করতে হয়, আমাদের মস্তিষ্কের গঠন যদি এতটাই সহজাত বা ‘ইনেট’ হয়, তাহলে আবার এর মধ্যে এতখানি স্থিতিস্থাপকতা বা নমনীয়তা থাকাটা কীভাবে সম্ভব? একই জিনিসের যুগপৎভাবে কঠিন এবং নমনীয় হওয়া সম্ভব কী করে? মস্তিষ্ক এবং চেতনার নিয়ে লিখতে গেলে আজকাল আর এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। এই প্রশ্নটিকে এই শতাব্দীতে জীবিবিজ্ঞানের অন্যতম একটি জটিল প্রশ্ন হিসেবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে। আমরা যে এই প্যাডক্সটির সবটুকু বুঝি তা নয় তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু বুঝি তা নিয়েই আলোচনা করার ইচ্ছে রইলো দ্বিতীয় পর্বে।
প্যারাডক্স নম্বর তিনঃ এবার আসি শেষ প্যারাডক্সটিতে। আসলে মস্তিষ্ক নিয়ে আলোচনার চ্যালেঞ্জটাই এই জায়গাটিতে, আপনি যা নিয়েই আলোচনা করতে চান না কেন, পদেপদে বেশ কিছু জটিল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আগাতে পারবেননা। যাই হোক, আমি এর পরে যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা হল, আমরা এই একুশ শতাব্দীতে পা দিয়ে জেনেছি যে, আমাদের ডিএনএতে মাত্র ২৩-২৫ হাজার জিন রয়েছে। এই ‘জিন শর্টেজ’ বা ‘জিনের স্বল্পতা’ নিয়ে আমি আমার এভো ডেভো লেখাটায় বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। পরিবেশবাদীরা প্রায়শঃই এই ব্যাপারটা নিয়ে হইচই করেন, বলেন, মাত্র ২৩ হাজার জিন দিয়ে কোনভাবেই আমাদের মস্তিষ্কের সব কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাদের কথাটা সম্পূর্ণভাবে সঠিক না হলেও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতও কিন্তু নয়। আসলেই তো, চিন্তা করে দেখুন, আমাদের মস্তিষ্কের এক শ’ কোটি (এক বিলিয়ন) নিউরন এবং প্রায় পাঁচ শ’ হাজার কোটি (৫০০ ট্রিলিয়ন) সিন্যাপ্সের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি কিন্তু চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। caenorhabditis elegans নামক ছোট্ট এবং প্রায় ‘বোধ-বুদ্ধিহীন’ (অনেকে বলবেন মানুষের সাথে তুলনা করলে এদেরকে তো বোধ বুদ্ধিহীন বলাটাই সমীচীন হবে) কৃমিটির ৩০২ টি নিউরন এবং প্রায় ৭৮০০ সিন্যাপ্সের হিসেব রাখার জন্য যদি প্রায় ১৯ হাজার জিনের প্রয়োজন হয় তাহলে মাত্র ২৫ হাজার জিন দিয়ে কী করে আমাদের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণের কাজটি করা সক্ষম? এই প্রশ্নটির উত্তরে মধ্যেই বোধ হয় আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে।
এই প্রশ্নটির উত্তর সঠিভাবে দিতে পারলে মস্তিষ্কের স্থিতিস্থাপকতার মাত্রা নিয়ে সমস্যাটারও হয়তো আংশিক সুরাহা হতে পারে। এ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসংগেরও অবতারণা করতে হবে। আমরা প্রায়শঃই বিজ্ঞানের সাহিত্যের বইগুলোতে ডিএনএ কে ব্লুপ্রিন্ট হিসেবে উল্লেখ করতে দেখি। আমাদের জিনোম কী আসলেই একটি ব্লুপ্রিন্ট? এভাবে ডিএনএ কে ব্লুপ্রিন্ট বলাটা শুধু একটি ভুলই নয়, একটি মারাত্মক ভুল। এই ধারণাগত ভুলটি থেকে বেশ কিছু ভুল ধারণার জন্ম নিতে পারে। এই বেসিক ব্যাপারগুলো পরিষ্কারভাবে না বুঝলে মস্তিষ্কের কর্মকান্ডের মত জটিল বিষয়গুলো তো দূরের কথা প্রাণের বিবর্তন নিয়েই সঠিক ধারণাটা অর্জন করা সম্ভব নয়।
পরের সপ্তাহে প্রথম প্যারাডক্সটি নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে রইলো…
তথ্যসূত্রঃ
১) – Why Does the Brain Need So Much Power? Nikhil Swaminathan
– Model of Human Brain’s Energy Usage Underestimated Its Efficiency, Katherine Harmon,
২) Marcus G, 2004, The Birth of the Mind, Basic Books, p. 189.
৩) John B. Watson, Behaviorism (1930), p. 82
৪) Linden, J.D, The Accidental Mind, First Harvard University Press, 2008, p. 54.
৫) Role of Genotype in the Cycle of Violence in Maltreated Children, Caspi et al,
Science 2 August 2002: Vol. 297 no. 5582 pp. 851-854 DOI:10.1126/science.1072290
Abstract টা তুলে দিচ্ছি এখানে,
We studied a large sample of male children from birth to adulthood to determine why some children who are maltreated grow up to develop antisocial behavior, whereas others do not. A functional polymorphism in the gene encoding the neurotransmitter-metabolizing enzyme monoamine oxidase A (MAOA) was found to moderate the effect of maltreatment. Maltreated children with a genotype conferring high levels of MAOA expression were less likely to develop antisocial problems. These findings may partly explain why not all victims of maltreatment grow up to victimize others, and they provide epidemiological evidence that genotypes can moderate children’s sensitivity to environmental insults.
৬) Influence of Life Stress on Depression: Moderation by a Polymorphism in the 5-HTT Gene Avshalom Caspi, et al. Science 301, 386 (2003); DOI: 10.11
Abstract টা তুলে দিচ্ছি এখানে,
In a prospective-longitudinal study of a representative birth cohort, we tested why stressful experiences lead to depression in some people but not in others. A functional polymorphism in the promoter region of the serotonin transporter (5-HTT)gene was found to moderate the influence of stressful life events on depression. Individuals with one or two copies of the short allele of the 5-HTT promoter polymorphism exhibited more depressive symptoms, diagnosable depression, and suicidality in relation to stressful life events than individuals homozygous for the long allele. This epidemiological study thus provides evidence of a gene-by-environment interaction, in which an individual’s response to environmental insults is moderated by his or her genetic makeup.
৭) Carroll S, 2005, Endless Forms most Beautiful. W.W. Norton & Company, p. 270-280.
৮) Ridley M, 2003, The Agile Gene. Fourth Estate, p. 254
কাজের মন্তব্য করার সুযোগ নাই বন্যাপা। সময় কম। পরীক্ষাটা শেষ হলেই আমি লিখতে শুরু করব। আপনি লিখতে থাকেন এর মধ্যে…
আমি এই ব্যাপারে খুব অল্পই জানি। মোটামুটি ভাবে এই ধরনের গবেষণাগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- মাইক্রো এবং ম্যাক্রো। বিবর্তন মনোবিদ্যা ম্যাক্রোমডেল-আর নিউরনের মডেলিং করাটা মাইক্রো। তবে গবেষকদের কাছ থেকে যদ্দু্র জানি, ম্যাক্রো বা মাইক্রো-কোন কিছুতেই সুবিধা হচ্ছে না। মানব মস্তিস্ক নিয়ে আমাদের জ্ঞান এখনো প্রাথমিক বললেও ভুল হবে। ৫ বছ্রের ম ্ধ্যেই গবেষণার ফলাফলগুলি বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
মানব-মস্তিষ্কের বিবর্তন বিষয়ে আপনার লেখা ভালো লাগলো কেননা মানব-মস্তিষ্ক একটি চমতকার অঙ্গ। একইভাবে মানবযকৃতও কিন্তু খুবই খুবই চমতকার একটি অঙ্গ। মানবরসায়নের প্রায় সমস্ত বিক্রিয়াই এক্সোথার্মিক বিধায় এবং যকৃতেই সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বিক্রিয়া সংগঠিত হয় বিধায়- এটি মানবদেহের সর্বাধিক তাপ উতপাদনকারী অঙ্গ! এটি ইনসুলিন অনুঘটিত গ্লাইকোজেনেটিক গমনপথ সম্পন্ন করে রক্তকে বিষাক্ত গ্লুকোজের হাত থেকে বিশুদ্ধ রাখে, একইভাবে গ্লুকাগন অনুঘটিত গ্লাইকোজেনোলাইটিক গমনপথ সম্পন্ন করে কোষে কোষে পৌছিয়ে দেয় জীবনরক্ষাকারী জ্বালানী গ্লুকোজ! গ্লাইকোজেনোলাইটিক গমনপথ ব্যর্থ হলে, যেমন- ডাইবিটিক রোগীদের ক্ষেত্রে, ব্যাকআপ গ্লুকোনিওজেনেটিক গমনপথ সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে এটি নিশ্চিত করে গ্লুকোজের যোগান! এটি স্টোর করে রাখতে পারে লিপিড মেমব্রেইন অতিক্রম করতে সক্ষম প্রত্যেকটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন হাইড্রোফোবিক ভিটামিন এ,ই,ডি এবং কে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য! এছাড়াও সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত স্টোর করতে পারে ভিটামিন সি বাদে আর বাদবাকী প্রায় সকল হাইড্রোফিলিক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও এমনকি! এটি মানবদেহের একমাত্র অঙ্গ যা ইন্টারকনভার্শনে সক্ষম এমিনো এসিড, লিপিড এবং কার্বোহাইড্রেট; এটি কোলেস্টেরল সংশ্লেষ করে এবং কোলেস্টেরল থেকে সংশ্লেষ করে বাইল সল্ট যার অভাবে কিনা পাকস্থলির প্রচন্ড প্রতিকুল এসিড খাদ্যের সাথে পরিবাহিত হয়ে হাইড্রোলাইসড করে ফেলতো আমাদের ক্ষুদ্রান্ত! যেকোন বিষাক্ত নাইট্রোজেনাস বর্জ্য ইউরিয়ায় রুপান্তরিত করে মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দিয়ে আমাদের জীবন রক্ষা করে মানবযকৃত! এছাড়াও এটি সংশ্লেষ করে প্রত্যেকটি ব্লাডপ্লাজমা প্রোটিন যেমন এলবুমিন, লাইপোপ্রোটিন ও গ্লবুলিন! উতপাদন করে হিম যার অভাবে কিনা সম্পুর্ণই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তো একাধিক এনযাইম নিঃসন্দেহে যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হিমোগ্লবিন! রক্তে মিশে থাকা অন্ত্রে শোষিত প্রত্যেকটি অনুকে হেপাটিক পোর্টাল ভেইনের মাধ্যমে নিজের ভেতর নিয়ে এসে পরীক্ষা করে এই অঙ্গটি সিদ্ধান্ত নেয় কোন অনুটি রক্তে যাবে কোনটি যাবে না, যা কিনা একে বানায় অন্ত্রের ক্যান্সার যেমন কলোরেক্টাল ক্যান্সারের মেটাস্টেসিস প্রাপ্তির প্রথম পছন্দনীয় স্থান! একই কারণে এটি ঘটিত করে ফার্স্ট পাস লস যা কিনা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল পথে ড্রাগ এডমিন্সট্রেশনের একটি বিশাল বড় বাধা, যার কারণে কিনা আমাদের ইন্ট্রাভেনাস বা অন্যান্য পথে এডমিন্সট্রেট করতে হয় ড্রাগ, যা কিনা একটি ড্রাগের খরচ বাড়িয়ে দেয় কয়েক থেকে কয়েকশো গুন! এছাড়াও যকৃত হচ্ছে মানবদেহের একমাত্র অঙ্গ যার কোন মেশিন মিমিক আমরা এই পর্যন্ত আবিষ্কার করতে সক্ষম হইনি; হৃতপিন্ড ও ফুসফুস বিহীন মানুষকে আমরা মেশিনে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, কিডনীবিহীন মানুষকে, পাকস্থলীবিহীন মানুষকে পারি- কিন্তু যকৃত এমন একটা অঙ্গ যার অভাবে মৃত্যু কিনা বাধ্যতামূ্লক! এবং এতোক্ষণ পর্যন্ত মানবযকৃতের যতোটুকু চমতকারিত্ব আমি বর্ণনা করলাম, এর সর্বমোট চমতকারিত্বের শতাংশের শত কোটিভাগের একভাগও সেটা নয়! শুধুমাত্র এলকোহল ডিহাইড্রজেনিস- যেটি কিনা একটি নিছকই সাধারণ মামুলি প্রোটিন- এর কাজ ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে লেখা যেতে পারে গোটা একটি বই; এবং এলকোহল ডিহাইড্রোজেনিস সম্পর্কে যদি একটি বই লেখা যায় তবে মাত্র দুটি প্রোটিন দ্বারা গঠিত সাইটোক্রোম পি৪৫০-ইপোক্সাইড হাইড্রোলেস ব্যাবস্থা সম্পর্কে লেখা যাবে একটি সম্পুর্ণ লাইব্রেরী (btw কেউ যদি আগ্রহী হন তবে- এই সাইটোক্রোম পি৪৫০-ইপোক্সাইড হাইড্রোলেস ব্যাবস্থা হচ্ছে প্রতিদিন যেই অসংখ্য বিষের মুখোমুখী আমরা হচ্ছি সেই বিষগুলো নির্বিষ করার একটি উপায় আমাদের যা কিনা সবচেয়ে বেশী কার্যকর থাকে যকৃতে)! এটি এতোটাই জটিল একটা অঙ্গ যে এটা কিভাবে কাজ করে আমরা জানি না, যেদিন জানবো মানবোসভ্যতার চেহারা আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে সেইদিন! শুধুমাত্র হেপাটোসাইট পেট্রিডিশে কালচার করার প্রযুক্তি যদি আমরা আবিষ্কার করতে পারি, মানব সভ্যতার চেহারা পরিবর্তন করে দিবে এটা কয়েক দশকের মধ্যে! তো দেখা যাচ্ছে মানবযকৃতও খুবই খুবই চমতকার একটি অঙ্গ। মানবযকৃতের বিবর্তন সম্পর্কেও আপনার একটি পোস্ট চাই। বিশেষ করে যকৃতের রোগ আবার হার্ট ডিজিজ, ক্যান্সার ইত্যাদির পরে পঞ্চম সর্ববৃহত কিলার রোগ কিনা; মুক্তমনা পাঠকদের অনেকেই হয়তো যকৃতের রোগে ঘায়েল হতে যাচ্ছি আমরা নিঃসন্দেহে; আমাদের অনাগত সেই শত্রুর সাথে মুখোমুখী পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই এটা এবং এটার বিবর্তন একটি আলাদা পোস্ট দাবী করে বলে আমার মত।
@আল্লাচালাইনা,
সুন্দর কথা বলেছেন। যকৃত নিয়ে তেমন আলোচনা মানুষ করে না কারন এটা নিয়ে বিরিঞ্চির বাজারদর স্বল্পই বলা যায়। যদিও এটার সাথে জীবনের প্রশ্ন জড়িত। আমার সবচেয়ে প্রিয় অঙ্গ পাকস্থলী যেটার কিনা অনেক ইন্টারেস্টিং হরমোন ফ্যাক্টর আছে।
@আল্লাচালাইনা, আপনি যকৃতের গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি থেকে কোন ফান্ডিং পান নাকি, তাহিতি ট্রিপটা কবে? 😉 ।
নাহ, অন এ সিরিয়াস নোট, আমি আপাতত ব্রেইনের অব্রেইনসুলভ কাজকর্মে নিমজ্জিত, এ ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি আর কতটুকু জানিনা সেটা বুঝতে গিয়েই এখনও হাবুডুবু খাচ্ছি। যকৃত নিয়ে আপনি একটা লেখা নামান না। আপনার পরের লেখাটা তো ডিউ হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই।
@আল্লাচালাইনা,
যকৃতের উপরে একটি লেখা দেওয়া আপনার জন্য আবশ্যকীয় কাজ হয়ে পড়েছে এই রকম চমৎকার একটা মন্তব্যের পরে। আশা করি খুব শীঘ্রই পাবো।
অসাধারণ টপিক। তার চেয়ে আমার ভাল লেগেছে উপস্থাপন। এমন কঠিন সাবজেক্টটাকে এমন সহজ সরলভাবে বর্ণনা করেছেন কল্পনাই করা যায় না।ধন্যবাদ।
বন্যা,
এককথায় অনবদ্য। :clap তবে এটা যে একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে তা শিরোনাম দেখে বোঝার উপায় নাই। এই পর্বটাকে একটা বিশাল, বিরাট আর জটিল লেখার ভূমিকা বলেই মনে হলো। তবে দারুন একটা ভূমিকা! তর তর করে পড়া যায়। পরের পর্বগুলো, সব মিলিয়ে যা একটা ই-বুকে পরিণত হওয়ার দাবী রাখে, অচিরে পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা আর তা নিয়ে লেখা – এখানেই একটা প্যারাডক্স আছে মনে হয়। কারণ গবেষণাটা আবার করতে হয় মস্তিষ্ক দিয়েই।
স্বনামধন্য রিচার্ড ডকিন্স মনে হয় তাই লিখেছিলেন, “পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মাধীন এই পৃথিবীতে বিবর্তনের জটিল প্রক্রিয়া, এমন কি প্রাণের অস্তিত্বও, সত্যিই বিস্ময়কর – অথবা বলা উচিত আপাতঃ বিস্ময়কর; কারণ, বিস্ময় হচ্ছে এক ধরনের আবেগের বহিপ্রকাশ যা মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত, যে মস্তিষ্ক আবার সেই খোদ বিস্ময়কর প্রক্রিয়ারই ফলশ্রুতি”। (“The evolution of complex life, indeed its very existence in a universe obeying physical laws, is wonderfully surprising – or would be but for the fact that surprise is an emotion that can exist only in a brain which is the product of that very surprising process.” –
Richard Dawkins, The God Delusion, Transworld Publishers, London, 2006, p. 366.)
একটা কথা –
এখানে মনে হয় লিন্ডেন সাহেব (রেফারেন্সটা কি ঠিক মতো এসেছে? বইয়ের নামটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না) ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তাকে আলাদা করে দেখছেন, এটা কিভবে সম্ভব? বন্যার লেখা পড়ে আর আমার নিজের স্বল্পবুদ্ধির বিবেচনায় আমার কাছে এই দুটো ব্যাপার (ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তা) একে অপরের সাথে মিশে আছে মনে হয়। হয়তো এ নিয়ে পরে আরো আলোচনা আসবে এই সিরিজে।
পাদটীকা – মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রটাকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, নীচে কয়েকটা দিলাম। (বিজ্ঞ পাঠকেরা আরো যোগ করতে পারেন।)
মস্তিষ্ক – যে যন্ত্রটাকে ধোয়া যায়।
মস্তিষ্ক – যে যন্ত্রটা ঘিলু বা গোবরের তৈরি হতে পারে।
মস্তিষ্ক – যে যন্ত্রটা পাচার হয়। (ব্রেইন-ড্রেইন)
@ইরতিশাদ ভাই, ডঃ লিন্ডেনের বইটার রেফারেন্সটা ঠিক করে দিলাম, নামটাই বাদ পড়ে গেছিল:-Y , রেফারন্সের চেহারা যদি এরকম হয় তাহলে খবরই আছে। ধন্যবাদ।
কী যে দারুণ একটা বই এইটা, ওনার এই বইটা পড়েই বুঝতে পেরেছি যে, মস্তিষ্ক নিয়েও মজা করে এবং সোজা করে বই লেখা সম্ভব।
আর আপনার বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর একটু পড়ে দিচ্ছি, একটু দৌড়ের উপর আছি সকাল থেকে।
@ইরতিশাদ,
হ্যা ইরতিশাদ ভাই, এটা লিখতে খুব কষ্ট হয়েছে, যা পড়েছি, যা জানি সব তার সবকিছু কীভাবে শুরু করবো সেটা নিয়ে প্রায় এক মাস বসে ছিলাম। মুশকিল অনেকগুলো, ব্যাপারগুলো একে তো জটিল তায় আবার এখনো অনেক কিছুই জানি না, আজ যা ঠিক মনে হচ্ছে কালই তা বদলে যেতে পারে। আবার এগুলো নিয়ে লেখা এত কঠিন যে সাধারণ পাঠকের কথা মাথায় রেখে সোজা করে লেখা খুব মুশকিল। বেশী সোজা করে লিখতে গিয়ে মূল বিষয়গুলো যেন হারিয়ে না যায় সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাক্স ডেলব্রুক কোথায় যেন বলেছিলেন, ‘Imagine that your audience has zero knowledge but infinite intelligence’ সেটাই এখন ভরসা। মানব বিবর্তনের বইটা তো গত বছর করতে পারলাম না, এ বছর সেটাকে মাথায় রেখে আগানোর চেষ্টা করছি, দেখি এবার হয় নাকি।
এটা কেন বললেন তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমি তো বুদ্ধিমত্তা এবং ব্যক্তিত্ব এই দুটোকে সম্পর্কিত হলেও আলাদা বলেই মনে করি। সাইকোলজি, নিউরোসাইন্স এগুলো ডিসিপ্লিন এ মনে হয় ইন্টেলিজেন্সের জন্য আলাদা সব টেস্টই (যেমন, জেনারেল ইন্টেলিজেন্স টেস্ট) আছে। আর ব্যক্তিত্ব বলতে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝায়, যেমন ধরেন, আপনি কতখানি সামাজিক, মিশুক, খোলামেলা ইত্যাদি। openness, agreeableness, conscientiousness, extraversion, জাতীয় ব্যাপারগুলোকে পারসোনালিটি ট্রেইটের পরীক্ষায় টেস্ট করা হয়। আমি অবশ্য খুব বেশী জানি না এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে, আপনি জিজ্ঞেস করার আগে এ নিয়ে আলাদা করে কখনও ভাবিনি।
@বন্যা,
আসলে ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তাতো আলাদাই, যদিও একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত। আমার প্রস্নটা এদের ওপরে প্রকৃতি আর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে। আমার কোন ধারণাই ছিল না যে, ব্যক্তিত্বের ওপরে প্রকৃতি (nature) আর পরিবেশের (nurture) প্রভাব, বুদ্ধিমত্তার ওপরে এই দুই ফ্যাক্টরের প্রভাবের মতো নাও হতে পারে। আমার প্রশ্নের টোনটা ঠিক ছিল না, আমি লিন্ডেনের পর্যবেক্ষনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই নি, এ নিয়ে আসলেই আরো জানতে চাচ্ছিলাম।
লিন্ডেন-এর কথানুযায়ী বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো-কমানো যতটা সোজা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন অতটা সোজা নয়। (‘যার নয় বছরে হয় না, তার নব্বই বছরেও হবে না,’ কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয় তাহলে!)
রিলেটেড প্রশ্ন, ১। আই, কিউ কি চেষ্টা করলে বাড়ানো যেতে পারে? ২। একজন লাজুক স্বভাবের মানুষ কি ইচ্ছে করলে তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন? তোমার লেখার পরের পর্বগুলোতে এই ইস্যুগুলো হয়তো এমনিতেই এসে পরবে, তাই আলাদা করে উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই।
@ইরতিশাদ,
হ্যা পারে। আমি দিয়েছি আইকিউ পরীক্ষা। প্রথমবার যখন দেই স্কোর অতোটা ভালো ছিলো না, কিন্তু পরে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে আবার দেই সেটাতে স্কোর মোটামুটি ভালোই পেয়েছিলাম। যেই কয়েকটি স্কিল তারা টেস্ট করে যেমন- কগনিটিভ ক্ষমতা, এনালিটিকাল ক্ষমতা, ডিসিশন মেইকিং স্কিল, পাটিগাণিতিক ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি- একবার প্রশ্ন দেখে সমধর্মী কিছু প্রশ্ন নিজ মনে দাড়া করিয়ে উত্তর করার চেষ্টা করলেই স্কোর বাড়ে, আমার মতে। আবার অকর্মন্য থাকলে নাকি স্কোর কমেও যায়! আমার একটা বন্ধু কিছুদিন আগে বলছিলো শুনেছিলাম যে সে নাকি মেনসা টেস্টে ডিগবাজী খেয়েছে। মেনসা হচ্ছে উচ্চ আইকিউধারীদের একটি সোসাইটি যারা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে আইকিউ টেস্ট নিয়ে বেড়ায়।
btw আইকিউ পরীক্ষার এফিকেসি কিন্তু অনেকে চ্যালেঞ্জ করে যেমন- স্টিফেন জেই গুল্ড, কারণ আইকিউ পরিসংখ্যান কিছু অসবস্তিকর উপাত্তের জন্ম দেয় যেমন- ককেশিয় শ্বেতাঙ্গদের বুদ্ধিমত্তা অন্যান্য এথনিসিটির তুলনায় গড়পড়তা বেশী, পুরুষদের বুদ্ধিমত্তা গড়পড়তা নারীদের বুদ্ধিমত্তার তুলনায় বেশী, স্বচ্ছলদের বুদ্ধিমত্তা অস্বচ্ছলদের তুলনায় গড়পড়তা বেশী ইত্যাদি ইত্যাদি।
@মুক্ত-মনা এডমিন,
আমি দুই দিন আগে একটি কবিতা পোষ্ট করেছিলাম।কবিতাটা কি পাওয়া গিয়েছে?যদি পাওয়া গিয়ে থাকে তাহলে কি ছাপানো হবে?এডমিন বা মডারেটর থেকে আমাকে বলা হয়েছিল লেখা পাঠানোর একদিন পরে ছাপানো না হলে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে।আমি ব্লগ লিখুন এ ক্লিক করার পরে যে পেজটা আসে তাতে লিখে তার পরে পোষ্টে ক্লিক করেছিলাম।লেখা পোষ্ট করার নিয়ম ঠিক হয়েছে কিনা জানিনা।কারন মুক্তমনায় এ আমার প্রথম লেখা পাঠানো।অনুগ্রহ পূর্বক জানাবেন।
@তামান্না ঝুমু,
আপনার লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে এখানে।
আপনি লেখাটিকে ড্রাফট হিসেবে সেভ করেছিলেন, প্রকাশের জন্য পাঠাননি; সেজন্য আমার তা পাইনি। এর পরে ব্লগ লিখে প্রকাশ বা “submit for review” বাটনে ক্লিক করবেন।
ধন্যবাদ।
@মুক্তমনা এডমিন, ধন্যবাদ।
প্রিয় একটি বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করেছেন বলে ধন্যবাদ জানাই। যদিও এখন অনেক অনিয়মিত, তথাপি সিরিজে নিয়মিত হলাম।
@স্বাধীন, ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য। এ বিষয়টা যে আপনার প্রিয় তা জানতাম, তাই আপনার কাছ থেকে আরেকটু বিস্তারিত ফিডব্যাক আশা করেছিলাম 🙂 । লেখাটার পরবর্তী পর্ব বা বিষয়গুলোর স্কোপ নিয়ে কোন পরামর্শ থাকলেও জানাবেন।
আপনি এত অনিয়মিত কেন?
@বন্যা আহমেদ,
থিসিস লেখা নিয়ে ব্যস্ত আছি। পাঁচ বছরের অধিক হয়ে গেল একই বিষয় নিয়ে লেগে আছি। আর কত, এবার ক্ষান্ত দেওয়ার পালা। সে দিকটাতেই আপাতত সকল চিন্তা দিতে চাচ্ছি। বিষদ মন্তব্য করার জন্য যে পরিমান মনোযোগ দেওয়া দরকার সেটা দিতে চাচ্ছি না। পড়ে যাবো, এ টুকু বলতে পারি। 🙂
@স্বাধীন, যাক, ফাইনাল ডিসেন্ট শুরু হয়েছে তবে। নিজে পিএইচডি না করলেও এর ইন্ডিরেক্ট ভুক্তভোগী আমিও ;-( । দীর্ঘ পাঁচ বছরের ‘রিসার্চ’ যে কত ‘দীর্ঘ’ তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেম কয়েক বছর আগে। গুড লাক, আশা করি সময় মতই সব শেষ হবে।
আমার কাছে মানুষের মস্তিষ্ক তথা বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনের অন্যতম প্যারাডক্স মনে হয়, কেনো আমরা এতটা বুদ্ধিমান? কেমন করে আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স করতে পারি? মহাবিশ্বকে আত্মস্থ করার সাহস করতে পারি। মাত্র কয়েকশত জেনারেশন আগেও আমরা ছিলাম ভাষাবিহীন হান্টার-গেদারার এবং তাদের সাথে আজকের আমাদের সামান্যতম পার্থক্যও নেই। সেই সমাজেও অবশ্যই অন্যরকম বুদ্ধিমত্তার অনেক প্রয়োজন ছিলো। সামাজিক এপ (ape) দের বুদ্ধিমত্তা এবং প্রয়োজনীয় থিয়োরী ওফ মাইন্ড এর নিত্যনতুন দিক প্রতিদিনই বের হচ্ছে। কিন্তু এই মস্তিষ্কই যে কিভাবে গ্র্যামার সমৃদ্ধভাষা, সিম্বলিক লজিক এর উপযোগী হয়েছিলো এক-দেড় লক্ষ বছর ধরে সেটা বেশ আশ্চর্যের ব্যাপার। হয়তো আমাদের সভ্যতা-সংষ্কৃতি একটি বিবর্তনের একটি স্প্যান্ড্রেল ছাড়া আর কিছু নয়। লক্ষ লক্ষ বছর পরে কয়েক হাজার বছরের মধ্যেই মানুষের মননের বিস্ফোরক পরিবর্তন মনে করিয়ে দেয় বিবর্তনের কেন্দ্রে র্যান্ডমনেস এর অবস্থানকে।
@সফিক,
আপনার এই কথাটার উত্তরে অনেক রকমের বিতর্ক করা সম্ভব, কিন্তু কোনটারই উত্তর ১০০% জানা নেই দেখে বিতর্কই সার হবে, তাই আর ও পথে পা বাড়াচ্ছি না 🙂 । তবে সংষ্কৃতি আসলে কী সেটা কিন্তু বেশ মজার একটা প্রশ্ন। রিডলী তার অ্যজাইল জিন বইতে এটা নিয়ে প্রায় একটা পুরো অধ্যায়ই ব্যয় করেছেন। এটাকে তো আপাতঃদৃষ্টিতে স্প্যন্ড্রেলই মনে হয়। আর গত কয়েক হাজার বছরে মননের বিষ্ফোরক বিস্তারের পিছনে আমাদের সংষ্কৃতি-পুঞ্জীভবনের ক্ষমতাটাই মনে হয় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। তবে এ নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে, অনেকে এটা মানতে চান না যে আমাদের মননের কোন এক্সপোনেনশিয়াল বা কোয়ালিটেটিভ পরিবর্তন ঘটেছে।
@সফিক,
রান্নাবাড়া শিখে সুস্বাদু খাবার খেয়েই মনে হয় এই দশা হয়েছে।
@ফরিদ আহমেদ,
😀 এই দশাকে দুর্দশাই বলা যায়!:-P
রান্না করা খাবার খাওয়া থেকেই মানুষের মস্তিষ্কের এই রকম যুগান্তকারী উল্লম্ফন ঘটেছে জানার পর থেকে, রন্ধনজাত খানাপিনার প্রতি আগহটা বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছি আমি। 😀
@ফরিদ আহমেদ, আমার আগের লেখাটায় প্রযুক্তির গুণগান গাইতে গিয়ে এ কথাটাই বলেছিলাম,
এসব তত্ত্ব কথা তো গেল, আসল আনন্দের বিষয় হচ্ছে আপনার মন্তব্যে বানান ভুল ( ‘আগহ’টা টাইপো হলেও আপনার ক্ষেত্রে সেটাকে বানান ভুল বলেই গণ্য করা হবে) দেখা যাচ্ছে।
আর আপনার ‘খানা’র সাথে ‘পিনা’ আসলো কোথা থেকে, পানি আর আনফারমেন্টেড ফলের রসকে আর যাই বলুক ‘পিনা’ বলে না।
@বন্যা আহমেদ,
আমার ক্ষেত্রে এই বর্ণবিদ্বেষ কেন? 🙁
আমার ল্যাপ্টপের ‘আর’ বাটনটা ঠিকমত কাজ করছে না। অনেকখানি চাপ দিতে হচ্ছে তাই এই দশা।
খানাপিনাটা টাইপো, খানাপানি-ই লিখতে চেয়েছিলাম আসলে। এমন কাঁচা ভুল আমি করি নাকি যে খানাপিনা লিখবো? 😛
@ফরিদ আহমেদ,
মানুষের মগজ আগুনের ব্যবহার শেখার আগেই বড় ছিলো যা এখন প্রমানিত। এছাড়া মগজে শক্তির ব্যবহারে মানুষের চাইতেও বেশি ‘শক্তিখেকো’ প্রানী আছে। প্রানীটার নাম Elephant Nose fish যার মগজ মোট দেহের ৩% এবং মগজে শক্তি ব্যয় প্রায় ৬০% । মানুষের ক্ষেত্রে এই মগজ মোট দেহের ২% শক্তিব্যয় মাত্র ২০% , সাধারন বানরদের ১৩% ।
@সংশপ্তক,
হুম বুঝলাম। মানবমস্তিষ্ক যদি বুঝিয়া ফেলিবার মত সরল হইতো, তাহা হইলে আমরাও ইহাকে না বুঝিবার মতই গর্ধভ হইতাম। 🙁
@সংশপ্তক,
তাই? আমার ধারণা ছিল (শেষ দেখা পর্যন্ত) যে এটা নিয়ে বিভিন্ন অনুকল্প আছে, তবে এখনও প্রমাণিত হয়নি।
@বন্যা আহমেদ,
@বন্যা আহমেদ,
বিষয় : মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি
এবার একগাদা রিসার্চ পেপারের কার্পেট বম্বিংয়ে না গিয়ে আসুন এ বিষয় নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন premise এর উপর হেলিকপ্টারে করে চক্কর দিয়ে আসি।
১ম , শরীরের যে কোন অঙ্গের আকার পরিবর্তনের সাথে কোষের প্রলিফারেশনের প্রশ্ন জড়িত যার সাথে আবার অঙ্গওয়ারী প্রোটিন বরাদ্দের ব্যাপরটাও এসে যায়। এটা নিয়ন্ত্রন করে তৎসংশ্লিষ্ট জীন যারা একাজে নিয়োজিত।
২য়, প্রোটিন ইনটেইক বৃদ্ধি মানেই কোন বিশেষ অঙ্গের অনিয়মিত আকার বৃদ্ধি নয় কারন প্রোটিন বরাদ্দের অনুপাত একই থাকছে। সার্বিক বডি মাস এক্ষেত্রে হয়তো বাড়তে পারে আবার কমতেও পারে।
৩য়, প্রোটিন বরাদ্দ নিয়ন্ত্রনকারী জীনে মিউটেশন হলে বরাদ্দে পরিবর্তন আসতে পারে তবে তার জন্য অতিরিক্তি প্রোটিন সরবরাহের প্রয়োজন নেই। রিসোর্স রিডিপ্লয়মেনট এখানে ঘটবে যার ফলে এক অংশের রিসোর্স অন্য অংশে চলে যাবে। Elephant Nose fish এর যেমন শরীরের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে তার মাথা। এই মিউটেশন প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য যথাযথ ফিটনেস দিলে তো ভালোই আর না হলে কাহিনীর সেখানেই ইতি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে , শরীরের কোন অংশের আনুপাতিক আকার নিয়ন্ত্রনে নিয়ন্ত্রকারী জীনের মিউটেশনেই যথেষ্ট। এর জন্য প্রানীর জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরী নয়। নৃতত্ত্ববিদদের বা জীবাশ্মবিদদের এখন সময় হয়েছে মানুষের জীন এক্সপ্রেশনের উপর প্রচুর পড়াশোনা করা।তাদের শিখতে হবে মানুষের কোষে কিভাবে ভাঙ্গা গড়া চলে যদি তারা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে ঐতিহাসিক গবেষণা করতে চায় কারন মানুষ কোন জড় পদার্থ নয়।
@সংশপ্তক,
মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তনে জিনের মিউটেশন যথেষ্ট, কিন্তু কাজে? মস্তিষ্কের যেটুকু ইন্টেক প্রয়োজন, সেইটুকু ইন্টেক যদি সে না পায়, তাহলে কি সেই মিউটেটেড কনফিগারেশন টিকে থাকবে। শুধু মিউটেশন হয়েই তো শেষ নয়, তাকে তো টিকেও থাকতে হবে। আমার দেহে গ্লুকোজ বা অক্সিজেনের ঘাটতি হলে কি সবচেয়ে বেশী কাজে বযঘাত মস্তিষ্কেরই ঘটার কথা না? একটা মিউটেটেড কনফিগারেশন কে টিকিয়ে রাখতে কি জীবনযাত্রাই ও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন এনে এডজাস্ট করে নিতে হয়না?
@নীল রোদ্দুর,
আমি ইতিপূর্বে কি বলেছি লক্ষ্য করুন:
প্রোটিন বরাদ্দ নিয়ন্ত্রনকারী জীনে মিউটেশন হলে বরাদ্দে পরিবর্তন আসতে পারে তবে তার জন্য অতিরিক্তি প্রোটিন সরবরাহের প্রয়োজন নেই। রিসোর্স রিডিপ্লয়মেনট এখানে ঘটবে যার ফলে এক অংশের রিসোর্স অন্য অংশে চলে যাবে। Elephant Nose fish এর যেমন শরীরের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে তার মাথা। এই মিউটেশন প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য যথাযথ ফিটনেস দিলে তো ভালোই আর না হলে কাহিনীর সেখানেই ইতি।
অর্থাৎ অপটিমাম কনফিগারেশনে না পৌছা পর্যন্ত রানডম মিউটেশন চলতেই থাকে। একটা অংশে পরিবর্তন আসলে অন্য অংশে পরিবর্তন আসবে। উচ্চতায় , সার্বিক বডি মাস সবকিছুতেই পরিবর্তন আসবে রিসোর্স রিডিপ্লয়মেন্টের কারনে। ভারী পায়ে বদলে হাল্কা পা দেখা যাবে। সাত ফিট থেকে উচ্চতা পাঁচ ফুটেও নামতে পারে।
@ফরিদ আহমেদ, রান্নাবাড়ার সূচনা হয়েছিলো ২-২.৫ লক্ষ বছর আগে। আমাদের ফিজিওলজিক্যাল স্পিসিস হোমো স্যাপিয়েন্স দের আবির্ভাবও ২ লক্ষ বছর আগে। আর ধরা হয় হোমো স্যাপিয়েন্সদের মধ্যে একটি বিশেষ গ্রুপের (দ্বীতিয় আউট ওফ আফ্রিকা) ভাষা এবং সিম্বলিক চিন্তার ক্ষমতা আসে ৫০,০০০ বছর আগে।
আসলে আমার কাছে প্যারাডক্সটা হলো যে একটি মধ্য প্যালিওলিথিক যুগের হোমো স্যাপিয়েন্স আর আজকের একুশ শতকের রকেট বিজ্ঞানী হোমো স্যাপিয়েন্স এর মধ্যে আ্যানাটমিক্যালি, ফিজিওলজিক্যালি, জেনেটিক্যালি কোনো পার্থক্যই নেই। তার মানে (অতি সিম্পলিফিকেশনের দায় নিয়ে) আমাদের যুক্তি-বিজ্ঞান-সংষ্কৃতি ক্ষমতার বড় অংশই ন্যাচারাল সিলেকশনের ফলাফল নয়, একটা সৌভাগ্যপ্রসূত সাইড এফেক্ট (স্প্যন্ড্রেল)।
আসলে এবিষয়ে অনেক তর্কই করা যায় কিন্তু সিদ্ধান্তে পৌছনো দুষ্কর হবে কারন যতদুর জানি বিজ্ঞানীদের মধ্যেই এনিয়ে তর্ক চলছে। তবে বন্যা যেমন বলেছেন আমাদের সংষ্কৃতি-পুঞ্জীভবনের ক্ষমতাটা সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একারনেই আমি দাবী করতে পারি যে আমার মস্তিষ্ক নিউটনের চাইতে অনেকগুনে ইনফেরিয়র হলেও আমি নিউটনের চাইতে জগৎটাকে অনেক বেশী ভালো জানি ও বুঝি।
@shafiq,
এই বিষয়টা নিয়েও আমারও অসীম কৌতুহল। কিন্তু অতো পড়াশোনা করার ধৈর্য নেই বলে আর ঘাটাঘাটি করি নি তেমন করে। একবার বন্যাকে কিছুদিন বিরক্ত করেছিলাম এটা বলে বলে। শেষে আইডিওয়ালা বলে গালি খেয়ে ক্ষান্ত দিছি। এই গালি খেতে কার ভাল লাগে বলুন। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আপনি তো লোক বেশী সুবিধার না, সুযোগ পাইলেই আমার নামে প্রপাগান্ডা ছড়ান :guli: । আইডিওয়ালা ডাক শোনার দুঃখ আপনের আর গেল না। প্রশ্নগুলা করার জন্য আইডিওয়ালার সাথে তুলনা করি নাই, আসলে আপনার সাথে আইডিওয়ালাদের তুলনাই করি নাই সেইভাবে। বলতে চেয়েছিলাম, যে আপনের প্রশ্নের ধরণটা অনেকটা ওদের মত হয়ে যাচ্ছে। ‘কেন আমাদের হল অন্যদের হল না’ প্রশ্নটা বিবর্তনের মূল কন্সেপ্টের সাথে ঠিক যায় না, তবে ‘কেমন করে হল’ বের করা যায়, এখানে র্যন্ডম মিউটেশনের সাথে ন্যাচারাল সিলেকশানের একটা জটিল ব্যাপার কাজ করে। তবে বিজ্ঞান নিয়ে তো যে কোন প্রশ্ন করাই যায়, এটাতে বাঁধা দেওয়াও ঠিক না। আপনের যখন এতই দুঃখ এইটা নিয়ে তখন এই তুলনাটাও ফিরায় নিলাম। আপনি যতখুশী প্রশ্ন করেন, আইডিওয়ালা কমু না আর কোনদিন 😉 ।
@shafiq,
এটা নিয়েও বোধ হয় এখন দ্বিমত আছে। আগে ভাবা হত যে ৫০-৬০ হাজার বছর আগে একটা ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ ( জেয়ারড ডায়মন্ড বোধ হয় এই কথাটা ব্যবহার করেছিলেন) এর মত ঘটনা ঘটেছিল ইউরোপে। এখন সাউথ আফ্রিকার উপকূলবর্তী অঞ্চল ধরে, প্রায় দের লাখ বছরের পুরোনো মনুষ্য বসতি থেকে পাওয়া নিদর্শনগুলো থেকে মনে হচ্ছে এই বিকাশটা হয়তো আকষ্মিকভাবে ঘটেনি, ধীর এবং ক্রমিকভাবেই ঘটেছে।
মহামান্য মোরগ আবুল সাহেবের এতোবড় দার্শনিক অনুভুতিটা (নাকি কষ্টটা) হাড়ে হাড়ে কি কেউ উপলব্ধি করতে পারছেন? :))
@অভিজিৎ,
“আশীবিষে যারে
দংশেনি তারে
বুঝিবে সে কিসে!!”
………………
@অনন্ত বিজয় দাশ, এমনিতে তো তোমাকে ব্লগে দেখাই যায় না। আর এখন আবুল মোরগের গল্প শুনেই হাজির হয়ে গেলা?
@বন্যা আহমেদ,
:hahahee: দিদি
সব জায়গায় যাইতে নাই, জায়গা মত গেলেই হয়!!! :guli: :guli:
:lotpot:
@অনন্ত বিজয় দাশ, অসধারণ । কবিতার চরণটি সম্ভবত এমন-
‘কী যাতনা বিষে
বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে
দংশেনি যারে’
প্রথম দিকে লেখার গতিপ্রকৃতি খুব অাগোছালো লাগছিল। কিন্তু শেষে এসে পরের পর্বের পূর্ণ অাগ্রহ তৈরি করে দিলেন! খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক।
@রূপম (ধ্রুব), অগোছালো লাগার পরও কষ্ট করে পুরোটা পড়েছেন বলে ধন্যবাদ। মস্তিষ্ক নিয়ে লেখা এবং পড়া দুটোই বেশ কষ্টকর, তাই আগে থেকে একটু ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা বলতে পারেন এই লেখাটাকে…
@বন্যা আহমেদ,
এই পর্বটাকে ভালো বলে দিলে পরের পর্ব অার অাসবে না জানি 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
না না, এবার আসবে, ফরিদ ভাই এর কথা এবার পুরাপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
মানব আচরণের পিছনে ঠিক কতটা ভ্যারিএবল কাজ করে, তা এখনও জানিনা। কিন্তু জিন, স্নায়ুতন্ত্র এবং পরিবেশ এই তিনটা যে প্রতিষ্ঠিত ভ্যারিয়েবল, সেটা বলা যায় এখন।
আপু, আমাদের জিন নির্দেশনা না দিলে পাখির মস্তিষ্ক আর মানুষের মস্তিষ্ক- এ পার্থক্য হত না, এটা সত্য। কিন্তু সেইসাথে আমাদের সেরেব্রাল কর্টেক্স, মেমরি এইসবও জিনের একক প্রভুত্ব কেড়ে নিয়েছে। বিবর্তিত হয়েই আমরা আমাদের মস্তিষ্কের গঠন পেয়েছি, জানি। কিন্তু যা জানার লোভ সামলাতে পারছিনা, তা হল, আমাদের থট মেশিন (বিশেষভাবে কর্টেক্স) কতটা স্বতন্ত্র্য এবং থট মেশিনের বিবর্তনের পিছনের জেনেটিক ব্যাখ্যা। মলিকুলার বায়োলজী বা জেনেটিক্সে আমার জ্ঞান কম, তবুও প্রশ্ন করছি…
জিন, মস্তিষ্ক, পরিবেশ… এগুলোর কোনটা কতটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল অথবা ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল?
আপাতত, আমার বুদ্ধি এবং জানায় আমার কাছে মনে হচ্ছে, মস্তিষ্ক ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল, পরিবেশ ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল, কিন্তু জিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল। আসলে কতটা সত্যি হল ব্যাপারটা? মেট সিলেকশনটুকু বাদ দিলে মনে হয় জিনকে যতটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল ধরা যায়, বিবেচনায় আনলে কিন্তু ততটা যায় না।
@নীল রোদ্দুর,
সবসময়ই জিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভেরিয়েবল হিসেবে কাজ করে কিনা সেটা নিয়ে আমি ঠিক নিশ্চিত নই। এখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে জিনের ভূমিকাও অন্য অনেক কিছুর উপর নির্ভর করতে পারে। এপিজেনেটিক বিভিন্ন ফ্যাকটরের উপর নির্ভর করে জিনের সুইচ অন বা অফও হইয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে এভো ডেভো লেখাটাতে কিছু আলোচনা করেছিলাম।
এই গবেষণাগুলোই তো এখন মোটে শুরু হয়েছে। তুমিও তো ডঃ পোলার্ডের গবেষণা নিয়ে লিখেছিলে। HAR1 বা ASPM এর মত দ্রুত পরিবর্তনশীল অনুক্রম বা জিনগুলোতো মস্তিষ্কেই এক্সপ্রেসড হচ্ছে। আমাদের জিনের ৭০%ই মস্তিষ্কে এক্সপ্রেসড হয়। গত কয়েক লক্ষ বছরে যে ডিএনএ অনুক্রমগুলো সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে তাদের অনেকেই মস্তিষ্কে এক্সপ্রেসড হচ্ছে। আবার ওদিকে বিবর্তনের ধারায় আমাদের এই বিশাল কর্টেক্সের বিকাশ ঘটেছে সবচেয়ে পরে। তাই, এদের কাজ সম্পর্কে ধারণা পেতে শুরু করলেই আমরা কর্টেক্সের কাজ সম্পর্কেও হয়তো অনেক কিছু জানতে পারবো। আর আমি লেখাতেও উল্লেখ করেছি, সংশপ্তকও বলেছেন, মানুষের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর বংশগতিয় ব্যাপারগুলো নিয়ে গবেষণায় এথিকাল ব্যাপারটা বেশ বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই গবেষণাগুলো হয়তো একটু ধীরেই এগুবে, কিছু করার নেই।
আপনার এ লেখাটা অনেকাংশে ভারসাম্যপূর্ন যা আপাতঃ দৃষ্টিতে বিতর্কের সৃষ্টি করবে না।
এটা খুবই সত্যি যে :
তেমনি সেই সাথে একটা নতুন প্রশ্ন সামনে এসে যায় যেটা মস্তিষ্কের এবং স্নায়ুতন্ত্রের ফাংশনগুলোর সাথে সার্বিক বুদ্ধিমত্তার ডিমার্কেশন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। প্রানীর সার্বিক বুদ্ধিমত্তার এবং মস্তিষ্কের কতটুকু স্নায়ুতন্ত্রের দ্বারা এবং কতটুকু হরমোনাল তন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা এখনও পরিস্কার নয়। আনবিক জীববিজ্ঞান ইতিমধ্যেই অন্যান্য প্রানীদের মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ অনেকদুর টেনে নিয়ে গেছে এবং মানুষের ক্ষেত্রে কাজ আটকে আছে শুধু গবেষনার এথিক্যাল কারনে । নিউরোসাইন্সকে নির্ভর করতে হবে আনবিক জীববিজ্ঞানের গবেষণার অগ্রগতির উপর , জীনোম প্রজেক্ট যার মধ্যে অন্যতম। নিউরোসাইন্সকে ইদানিং যেভাবে মস্তিষ্কের একক ঠিকাদারী নিতে দেখা যায় তাতে তাদের ক্ষতি বৈ লাভ হবে না কারন শেষ পর্যন্ত তাদের সীমাবদ্ধতা গুলোকে অতীতের মতোই আনবিক জীব বিজ্ঞানকেই সমাধান করতে হবে।
কষ্টসাধ্য লেখাটার জন্য সাধুবাদ আপনার অবশ্যই প্রাপ্য।
@সংশপ্তক,
ভারসাম্যপূর্ণতা দেখানো ঠিক উদ্দেশ্য ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল গবেষণাগুলো কোন দিকে যাচ্ছে তা তুলে ধরা 🙂 । আসলে আগের লেখাটা লেখার পর থেকেই ভাবছিলাম যে মস্তিষ্কে না ঢুকে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আপনার যদি কোথাও ভুল বলেছি বলে মনে হয় তাহলে অবশ্যই জানাতে দ্বিধা করবেন না। মুক্তমনায় এজন্যই লেখাগুলো দেই, প্রায় একটা পিয়ার রিভিউ হয়ে যায়…
আচ্ছা, ‘আপাতঃ দৃষ্টিতে’ কথাটার মধ্যে একটা ক্যাচ আছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু 😉 ।
আমার কিন্তু ঠিক উল্টোই মনে হয়েছিল। এই ডিসিপ্লিনগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু আনবিক জীববিজ্ঞান ছাড়া নিউরোসাইন্স কীভাবে আগাবে এটা আমার বোধগম্য নয়। ইদানীংকালের বহু রিসার্চ পেপার দেখেই কিন্তু মনে হয়েছে তারা একে উপরের সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে যুক্ত। ডঃ কাস্পির গবেষণাগুলোই দেখুন, আনবিক জীব বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া এগুলো কীভাবে সম্ভব? আর আমার তো মনে হচ্ছিল ঠিক এ কারণেই গত ক’বছরে নিউরোসাইন্সের এমন অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। এভোলিউশেনরী ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি থেকে শুরু করে আনবিক জীববিজ্ঞানের সব গবেষণাগুলোই তো এখন নিউরোসাইন্সের বিভিন্ন কাজে আসার কথা। তবে আপনি হয়তো এ ব্যাপারে আরও ভালো জানবেন।
@বন্যা আহমেদ,
জীবদেহের আচরনের ব্যাখ্যায় আমি সবসময়ই আনবিক জীববিজ্ঞানের ওপরই আস্হাশীল যার অন্যতম প্রমান যুগান্তকারী জীনোম প্রজেক্ট। নিউরোসাইন্স নিয়ে যতই ইদানিং নাচানাচি করা হোক না কেন নিউরোসাইন্সের দৌড় স্নায়ুতন্ত্র পর্যন্তই। নিউরোসাইন্স তত্ত্বের অন্যতম বড় দূর্বলতা হলো বুদ্ধিমত্তা = মস্তিষ্ক= স্নায়ুতন্ত্র এভাবে দেখানো। তারা এটাই দেখাতে পারেনা কিভাবে মস্তিষ্কের আকার ও বৃদ্ধি নির্দিষ্ট হারে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে , হাতীর মত বড় হয়ে যাচ্ছে না কিংবা স্বয়ং স্নায়ুতন্ত্রের টিস্যুগুলো কিভাবে সৃষ্টি হচ্ছে। এসব জিনিষ ব্যাখ্যা করতে আনবিক জীববিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হবে। আর বুদ্ধিমত্তা = মস্তিষ্ক= স্নায়ুতন্ত্র এটা দেখানো যে কতবড় ভূল তা বলাই বাহুল্য। বুদ্ধিমত্তা মানেই শুধু মস্তিষ্ক আর স্নায়ুতন্ত্র যে নয় এই ধারনা থেকে বেড় হয়ে আসতে হবে এবং হরমোনাল তন্ত্রকে হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। হরমোনাল তন্ত্রকে আনতে হলে রিসেপটর জীনগুলো হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। যেমন, স্ত্রীদেহে estrogen level নিচে নেমে গিয়ে মাইগ্রেন হচ্ছে এবং সেসাথে তার সার্বিক আচরন প্রভাবিত করছে।
@সংশপ্তক,
এই প্রশ্নটাই আসলে করেছি নীচের মন্তব্যে। আমি জানতে চাই।
@নীল রোদ্দুর,
এখানে প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে কোষের বৃদ্ধির হার তথা রিসোর্স বরাদ্দ (যাতে হাতীর মত না হয়) থেকে শুরু করে প্রোটিন সিন্থেসিস সহ কোষ বৃদ্ধির অন্যান্য প্রকরনসমূহ।এককোষী ব্যকটেরিয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি দেখি ? আমরা দেখি যে কোষ প্রসারের হার এবং জীনের আচরন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই।
@সংশপ্তক,
আবারও হয়তো একই কথা জিজ্ঞেস করছি। কিন্তু আমি যেটা বুঝতে পারছি না তা হল, নিউরোসাইন্স কী করে শুধু মস্তিষ্ক আর স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে আটকে থাকে। আনবিক জীববিজ্ঞান বা ডেভেলপমেন্টাল জীববিজ্ঞানের কাজগুলো থেকে এখন নিউরোবায়োলজির ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলো বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। এগুলোকে এড়িয়ে তো নিউরোবায়োলজি বা কম্পেরেটিভ নিউরোবায়োলজি কাজই করতে পারবে না। এ জন্যই ডঃ কাস্পির কাজের উদাহরণটি দিয়েছিলাম, উনি আচরণগত বিষয়গুলোর উপর যে গবেষণাগুলো করছেন তার প্রত্যেকটি আনবিক জীববিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিষন্নতার উপর তার সাম্প্রতিক গবেষণাটির মূল বিষয়টাই সেরেটোনিন ট্রান্সপোর্টার জিনের প্রমোটার রিজিওনের উপর পলিমরফিজমের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। একই কথা খাটে সহিংসতা নিয়ে গবেষণাটার ক্ষেত্রেও। আর আরেকটা বোকার মত প্রশ্ন করি, স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের মূলে যেতে হলেও তো এর পিছনে জিনের কাজগুলো বুঝতে হবে, নাকি?
ইশস এবার আমার দুঃখের কথাটা মনে করিয়ে দিলেন। সারাটা জীবন শুধু মাইগ্রেনের ব্যাথায় মাথা চাপড়ে মরলাম। শুনেছি ২৫% মেয়ের মধ্যে নাকি মাইগ্রেনের ব্যাথা দেখা যায়। কিন্তু আবারও সেই একই প্রশ্ন চলে আসবে এখানেও, এর পিছনে মিউটেশনগুলো বুঝতে হলেও তো আনবিক জীববিজ্ঞানের দ্বারস্থ হোয়া ছাড়া উপায় নেই। ক্রোমোজম ৩ বা ১৯ এ যে মিউটেশনগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো তো নিশ্চয়ই কোন না কোনভাবে আনবিক জীববিজ্ঞানের গবেষণার উপরই নির্ভরশীল।
@বন্যা আহমেদ,
Potassium channel subfamily K member 18 (KCNK18) জীনে মিউটেশন এর জন্য দায়ী। ক্রোমোজম 10q26.11 । এবিষয়ে অক্সফোর্ডের ডঃ জামিলের রিসার্চ পেপারটা এখানে পাবেন।
@সংশপ্তক, দুটি প্রশ্ন ছিল। প্রথমটি হল, আপনি এখানে আনবিক জীববিজ্ঞানের সাথে নিউরোসাইন্সের যে কনফ্লিক্টের কথা বলছেন তার আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা কী কোথাও পাওয়া সম্ভব? আর না থাকলে আপনিই না হয় আরেকটু বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে বলুন এখানেই। আমি আপনার সাথে এ ব্যাপারে একমত, বলতে পারেন যে এতটাই একমত যে, এটা কেন ইতোমধ্যেই ঘটছে না তাইই বুঝতে পারছি না।
দ্বিতীয় প্রশ্নটা এখানে ঠিক প্রাসঙ্গিক নয়, কিন্তু অনেকদিন ধরেই আপনাকে জিজ্ঞেস করবো বলে ভাবছিলাম। আপনি কোন একটা লেখায় প্যাটারনিটি টেস্ট করালে বেশ ভয়াবহ কিছু ব্যাপার জানা যাবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। মন্তব্যটা এখন খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমি সেখান থেকে যা বুঝেছিলাম তা হল, আপনি মানুষের মধ্যে মনোগামী বৈশিষ্ট্যের উলটো দিকটা নিয়ে হিন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যে, আমরা আপাতঃদৃষ্টিতে মনোগামী হলেও সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই কমিটমেন্টগুলো নিয়ে অনেক দুই নম্বরি ঘটে। কিন্তু ডেভিড যে লিন্ডেন তার এই অ্যক্সিডেন্টাল ব্রেইন বইটা তে কিন্তু ঠিক এর উল্টোটা বলেছেন। উনি কী বলছেন তা এখানে হুবহু তুলে দিচ্ছি,
‘ In studies where paternity has been evaluated with genetic tests across large numbers of children, vast majority (over 90 percent) of children are indeed found to be the offspring of the mother’s husband or long-term partner, and most fathers provide some form of care and support for their children. ‘
লিন্ডেন এখানে কোন পেপারের রেফারেন্স দেননি, কিন্তু মনে তো হচ্ছে এটা নিয়ে বেশ বড়সড় স্কেলেই গবেষণা করা হয়েছে। আমি কী আপনার কথা ভুল বুঝছিলাম?
@বন্যা আহমেদ,
বিষয়টা The impact of molecular biology on neuroscience পেপারটা থেকে পড়তে পারেন। পিডিএফ লিংকটা দিয়ে দিলাম। সূচনা পড়ে কিছুটা অনুমান করতে পারেন :
….. evolution is a tinkerer. To an astonishing extent it builds on what is already there, rarely innovating from scratch. The result is that, at all levels, most organisms are unbelievably complex.
This is only too clear to molecular biologists, but it is only gradually becoming clear to neuroscientists. Psychologists in particular have a touching faith in Occam’s razor, which, however appealing it may seem, is a very unreliable tool in biology.
As for theoretical neuroscientists, they too easily believe that because their oversimplified models are so appealing (having been carefully massaged to fit some of the data) they must be true. Molecular biologists have learnt the hard way that a beautiful theory can be quite wrong.
এ ব্যপারে আমি পরে আপনাকে জানাবো। তবে ,লিন্ডেন সাহেবের বক্তব্যের ভিত্তি যে কোন জেনেটিক্সের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি চ্যালেন্জ করতে পারে।
@সংশপ্তক, ধন্যবাদ পেপারটার জন্য। ফ্র্যান্সিস ক্রিকের পেপারটা ১৯৯৯ সালে লেখা, হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট শেষ হওয়ার ঠিক আগে আগে। তখন যে অবস্থা এরকম ছিল তা জানতাম, তবে আমার আশা ছিল যে এর পরে হয়তো অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আনবিক জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিশেষ করে, গত দশ বছরে , জিনোমিক্স বা ডেভলপমেন্টাল বায়োলজির ( এবং সেই সাথে ডঃ পোলার্বাডের বায়োস্ট্যাস্টিক্সের মত গবেষণাগুলো) যে অগ্রগতি ঘটেছে সেখানে তো নিউরোসাইন্সের পক্ষে আলাদা করে সাইলোতে বসে থাকার উপায় আর খোলা থাকার কথা না। ক্রিক এখানে যে কথাগুলো বলেছেন তার প্রত্যেকটাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।
আরেকটা কথা, আপনি প্যাটারনিটির ব্যাপারটা নিয়ে বলেছেন,
লিন্ডেনের বইটা নেচার, সাইন্স এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কমিউনিটি থেকে খুবই ভালো রিভিউ পেয়েছে। ওখানে এত বড় একটা ভুল কথা থাকলে খুব অবাকই হব, তবে তারপরও থাকতেইই পারে। অবাক করা ব্যাপার স্যাপার তো আর কম ঘটে না……
@বন্যা আহমেদ,
হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট সম্পূর্ন হয়নি।
হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট সম্পূর্ন হয়েছে বলে যে ধানাটা পপুলার মিডিয়া দেয় সেটা ভূল। প্রকৃত অবস্থা এই যে, হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের প্রথম ফেইজটা সম্পূর্ন হয়েছে যেটা জিনোম সিকোয়েন্সের সাথে সম্পৃক্ত , যদিও অল্প কিছু জায়গা এখনও বাকী। কিন্তু প্রতিটা জীনের একক কার্যক্রম এবং তার নিয়ন্ত্রন ব্যবস্হা ম্যাপিং কেবল শুরু হয়েছে মাত্র যেটাকে ফেইজ-২ বলা যায়।এখনও বহুদূর যেতে হবে।
এটাতো গেল মানুষের জীনের কথা। অন্যান্য প্রানীদের কথা চিন্তা করুন, যেমন আমি বিড়ালের জীনোম প্রজেক্টে বিশেষভাবে আগ্রহী। এর কারন বিড়ালের মস্তিষ্কের সাথে মানুষের সাদৃশ্য অভাবনীয় , বলাই বাহুল্য যে জ্যান্ত মানুষ নিয়ে গবেষনা বৈধ উপায়ে সম্ভব নয়।
জীব বিজ্ঞানের কোন লেখায় মনোবিদ্যা ( যা কিনা সমাজবিদ্যার পর্যায়ে পরে) সংক্রান্ত কোন শব্দ দেখা মাত্র লাল পতাকা উচানো জীববিজ্ঞানীদের একটা কমন প্রাকটিস। এর কারনটা খুবই মৌলিক। মনোবিদ্যার মূল তত্ত্বটাই ফলসিফাইয়েবল না। জীববিজ্ঞানীদের যেখানে জীবের প্রতিটা কোষ এবং অনু আঙুল দিয়ে দেখাতে হয় সেখানে , অন্যান্যদের বেলায় নিয়ম কেন শিথিল হবে ? মনোবিদ ও নিউরোসাইন্সের লোকেরা তাদের মডেল সিমুলেশন করে এমন সব জিনিষ বের করেন যা প্রাণীর দেহের কোথাও ইমপিরিক্যালি খুজে পাওয়া যায় না তো বটেই ফলসিফিকেশনের প্রশ্ন তো অনেক দূরের কথা। (@)
আনবিক জীববিজ্ঞানীদের পরামর্শ মানলে মাইগ্রেইন রোগীদের কোটি কোটি ডলারের মেডিক্যাল বিল সাশ্রয় হতো আর নিউরোসাইন্টিস্টদের রোলস রয়েস কিংবা লাক্সারী বাংলো কেনা কমতো। (O)
@সংশপ্তক,
একমত। ক্লিনিকাল প্রয়োগবিহীন ফ্যান্সি রিসার্চ অপ্রতুল ফান্ডিং এর অপাত্রে দানই শুধু ঘটায় না, বিরিঞ্চিবাবাদের একটি নিউট্রিয়েন্ট রিচ কালচার মিডিয়াম, হিসেবে কাজ করে!
@আল্লাচালাইনা,
মাল্টি ট্রিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিজ শুধু বিরিঞ্চিগিরির উপর দাড়িয়ে আছে। এটা থেকে বাঁচা সহজ নয়। মানুষকে নিজেই সচেতন হতে হবে। ফান্ডিংয়ের অভাবে অনেক জীবন রক্ষাকারী রিসার্চ প্রজেক্ট আটকে আছে কিন্তু ভাওতাবাজি রিসার্চে পয়সার অভাব হয় না।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ ঠিক করে দেওয়ার জন্য, প্রাথমিক ধাপের কথা উল্লেখ করা উচিত ছিল।
তবে আপনার জন্য আরেকটা প্রশ্ন ছিল, আপনি তো মনে হচ্ছে এই নতুন স্মাইলিগুলোর অর্থ বুঝতে পেরছেন। মুক্তমনা এডমিনের কাছেও জানতে চেয়েছিলাম এই কান খাড়া করা মহামূল্যবান আর্টসি সাদা কালো বিড়ালটা দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে, তার কোন জবাব পাইনি। আকাশ মালিকও আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বিশাল আরেক বিড়ালের ছবি দিয়ে দিয়েছিলেন ব্লগে। আপনিই বোধ হয় প্রথম এই বিড়ালের আইকনটা ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, এর অর্থটা কী বলেন তো।
@বন্যা আহমেদ,
এর মানে ”Attempts to attract notice” (@) এই ইমোটা ফরাসীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। এটার একটা সূন্দর ইতিহাসও আছে অবশ্য ।
@সংশপ্তক,
আনবিক জীববিজ্ঞানীদের পরামর্শগুলো কী তা জানি না, তবে গত ৫-৭ বছরে খুবই কার্যকরী কিছু ওষুধ বের হয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকে মাইগ্রেনের ব্যাথা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি, এই প্রথমবারের মত জীবনে এটাকে ৮০-৯০% নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে বিভিন্ন দেশে বহু বছরের চিকিৎসার পর যা বুঝেছি, তা হল মাইগ্রেনের চিকিৎসা শুধু ওষুধ দিয়ে করলে হবে না, এর সাথে কমনসেন্স বেশ কিছু চিকিৎসাও ( স্লিপিং প্যাটার্ন, শারীরিক অন্যান্য দূর্বলতা যেগুলো মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে, আবহাওয়া, এলার্জি টাইপের অনেক কিছুর দিকে একটু খেয়াল রাখলে মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়)। আমি একজন ফাটাফাটি নিউরোলজিস্ট এর দেখা পেয়েছি কয়েক বছর আগে, উনি উপরের চেম্বারে একটু ‘কু কু’ 😕 হলেও আমার যে চিকিৎসা করেছেন তার জন্য আমি ওনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। তবে এখনো অনেক রোগের মত মাইগ্রেনও শুধু নিয়ন্ত্রণ করেই চলেছি আমরা, একে সারানোর ব্যবস্থা করতে হলে আনবিক জীববিজ্ঞানের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর অন্য কোন উপায় তো খোলা নেই।
@সংশপ্তক, বন্যা আহমেদ,
আমাকে জানাতে ভুলেন না কিন্তু। জানার ক্ষিদেটা আমার ভয়াবহ রকমের বেশী :))
সূচনাতেই একেবারে গেথে ফেলেছেন,
শুধু ইংরেজী বাক্যটার একটা সম্ভাব্য বাংলা বলতে এলাম,
“If the human brain was so simple that we could understand it, we could be so simple that we could not’.”
->
“মানবমস্তিষ্ক যদি বুঝে ফেলার মতই সরল হতো, তাহলে আমরাও সেটাকে না বোঝার মতই সরল হতাম।”
এবার যাই বাকিটা পড়ি গিয়ে… 🙂
@তানভীরুল ইসলাম, এম্নিতেই কী আর ফরিদ ভাই আপনাকে পয়সা দিয়ে হেড অনুবাদক হিসেবে চাকরী দিতে চায়! এইটার কথা কত মানুষরে জিগাইলাম, কেউ এত ভালো করে অনুবাদটা করে দিতে পারলো না। ধন্যবাদ।
@বন্যা আহমেদ,
হ্যা, তানভীরুলের অনুবাদ-যজ্ঞ দেখে আমি নিজেকেই বলি, আমি কতটা অনুবাদ-অজ্ঞ! ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজের সাথে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজকে এতো সুন্দর করে মেলাতে পারে, তানভীর যা করে, তা আসলে অনুবাদ-শিল্প! (F)
@তানভীরুল ইসলাম, বন্যা আহমেদ:
আমি আর একটা অনুবাদের চেষ্টা করলাম। এটা ভাবানুবাদ, আক্ষরিক অনুবাদ নয়। কেমন হল জানাবেন।
“মানুষের মগজ যদি এতই সরল হত যে আমরা সহজেই বুঝতে পারতাম, তাহলে তাহলে আমরাও এত সাদাসিধা বোকাসোকা হতাম যে তা পারতামনা।”
যদি অনুবাদটা পছন্দ হয়, তাহলে আমাকে অন্ততপক্ষে সহকারী অনুবাদকের চাকরীটার জন্য বিবেচনা করবেন। আর যদি পছন্দ না হয়, তাহলে আমার মগজটা দিয়েই গবেষণা শুরু করতে পারেন; ওটা বোঝা খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। :))
দারুন একটা লেখা দেওয়ার জন্য বন্যা আহমেদকে ধন্যবাদ।
@মোঃ হারুন উজ জামান, @মোঃ হারুন উজ জামান,
এখানে একটা ছোট্ট সমস্যা আছে। চাকরিদাতা কিন্তু আমি না ফরিদ ভাই (শুনেছি উনি নাকি কোন কোন সোর্স থেকে পয়সা পান:-) )। আর ফরিদ ভাই যে রকম ‘খ্যাচড়া’ টাইপের মানুষ তাতে করে কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারটাতে উনি আর কাউকে নাক গলাতে দেবেন বলে মনে হয় না। আর উনি যদি তানভীরুলকে হেড অনুবাদক হিসেবে নিয়োগ করেন তাহলে এই দুজনের সম্মিলিত স্বজনপ্রীতির ধাক্কা সামলিয়ে এই পজিশনে আপনার (বা আমার) আর কোন সুযোগ থাকবে বলে মনে হচ্ছে না :)) ।
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
@বন্যা আহমেদ,
বুঝতে পারছি আমার অনুবাদটা কোন কাজের হয়নি। তানভীরুল ইসলামের অনুবাদটা ছিল আঁটশাঁট; এটাকে অনেকটা অনুবাদের “অকামের খুর” বলা যায়। ভাষাটাও ছিল ফর্মাল। আমি চেষ্টা করেছিলাম আরও ইনফর্মাল ভাষায় আরও একটু ঢিলাঢালা অনুবাদ করতে, যদিও তানভীরুলের অনুবাদটাও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। বুঝতে চেষ্টা করছিলাম কোন ধরনের অনুবাদ পাঠক পছন্দ করে। এই এক্সপেরিমেন্টের প্রাথমিক ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে আঁটশাঁট ফর্মাল অনুবাদই মনে হয় পাঠক বেশী পছন্দ করবে।
ঠিক করেছি মূল প্রবন্ধটার উপর কিছু মন্তব্য করব। তবে আজকে নয় কারন এখন আমাকে যেতে হবে।