সুজলার মেজাজ তেতে আছে। ইদানিং তার মেজাজ তেতেই থাকে। এ নিয়ে অনুযোগও শুনতে হয়। যদিও সে অনুযোগের থোড়াই পাত্তা দেয়।কারণ তার মেজাজ তেতে থাকার কারণগুলো ঘটিয়ে আবার নিজেরাই অনুযোগ দেয়। সেই বিয়ের পর থেকেই স্বামীর পরিবার কারণগলো ঘটিয়ে আসছে। জন্মের পর ঘটিয়ে আসছে সমাজ। এখন দেখে রাষ্ট্রীয় আইনও তার পক্ষে নয়।
বিয়ের পরপরই ধাক্কা খায়। পাশের বাড়ির হেড মাষ্টারবাবুর বউ এসএস সি পরীক্ষায় ফেল করে গৃহিণী হয়েও বড় মাষ্টারণী আর সুজলা নিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের বি এস সি শিক্ষক হয়েও ছোট মাষ্টারণী। প্রথম প্রথম বিষয়টি তার কানে বিঁধত। এখন কান সইয়ে নিলেও মন পারে না। নিজের নামটিও হারিয়ে গেছে। এখন বাড়িতে কৃষ্ণের মা। পাড়ায় ছোট মাস্টারণী আর স্কুলে বি এস সি দিদিমণি।
উদাহরণ দিতে গিয়ে তুলনা করে বলাও মুশকিল। বড় মাষ্টারণী কষ্ট পাবেন। সুফলাকে অহংকারীও ভাববে। পরে একদিন দেবরের সাথে আলাপ করতেই তার কাছ থেকে উত্তর পেয়েছে —পাড়ার লোকের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ভাষা বিজ্ঞানীদের বল। পেশাজীবী হিসেবে নারী মাষ্টার আর মাষ্টারের স্ত্রীকে নিরক্ষর মানুষ সম্বোধনে কিভাবে পার্থক্য করবে? মিস্ট্রেজ তো আমাদের পাড়ার মানুষজন উচ্চারণই করতে পারবে না। সম্বোধন যা ইচ্ছে করুক না। তোমাকে তো সম্মান, শ্রদ্ধা, সমীহ সবই করে। তা ছাড়া বড় মাষ্টারণীও তো তোমাকে ভালবাসে। আমি তো তোমাকে মাস্টার বৌদিমণি ডাকি। কাজেই ধীরে ধীরে নিজের কানকে সইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আলমারীর চাবিটা যে কোথায় রেখেছে তা সুজলার স্বামী খুঁজে পাচ্ছে না । সারাদিন ধরেই খুঁজছে আর বার বারই মনে হচ্ছে রিং দিলেই তো বেজে উঠে। কিন্তু মোবাইলে রিং করতে নম্বর টিপতে গিয়ে মনে পড়েছে এ তো আর আরেকটা নিখোঁজ মোবাইল নয় যে খুঁজে না পেয়ে অন্য ফোন থেকে রিং দিলেই সাড়া দিবে—– আমি এখানে পড়ে আছি।
আসলে একটা দরকারী কাগজ খুঁজে পাচ্ছে না। সুজলার বাপের বাড়ির জায়গা জমির কাগজ। ওই কাগজটা আলমারীতে খুঁজতে গিয়ে দেখে চাবিটাই পাচ্ছে না। চাবির কথা স্ত্রী সুজলাকে জিজ্ঞেস করলেই পাওয়া যাবে। তবে সাথে সাথেই প্রশ্ন আসবে, কি দরকার?
কি যে দরকার তা সহজে বলা মুশকিল। শুধু সহজে নয় — ঘুরিয়ে বলাও মুশকিল। চাবিটা না পেয়ে এক ফাঁকে মনে উদয় হয়েছিল যে সুজলাই চাবিটা সরিয়ে রেখেছে। পরে নিজেকে শাসিয়েছে। সুজলাকে ছোট করতে গিয়ে নিজের মনকেই তো ছোট করছে।
চাবিটা এক জায়গায়ই থাকে। ওখান থেকেই চাবি নিয়ে যার যখন প্রয়োজন আলমারী খুলে। সেই দরজার পেছনে তারকাটায় চাবিটা ঝুলানো নেই।
সুজলা জানে, স্বামী চাবি খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছে, অথচ চাবিটি আলমারীতে তালার সাথেই লাগানো। স্বামী দরজার পিছনে তারকাটায়,খাটে তোষকের নীচে, বেড়ায় ঝুলানো মা বাবার ছবির পেছনে খুঁজছে কিন্তু আলমারীর দিকে তাকাচ্ছে না। পুরুষ মানুষের মন- মানসিকতার মতই চাবি খোঁজার কৌশল।
চাবিটা যেখানে থাকার কথা সেখানে আর গতানুগতিক যেখানে যেখানে থাকতে পারে সে সবের আশে পাশে খুঁজছে। চাবিটি যে আলমারীতে তালার সাথে থাকতে পারে তা মাথায় না আসলেও যা খুলবে তার দিকে তো একবারও তাকাবে! এ যেন পুরুষদের ধাঁতেই নেই। আসল জায়গায় চোখ পড়ে না। সহজ সমাধান দেখে না।
আর স্বামীটি ধরেই নিয়েছে কিছু না পেলে সুজলা খুঁজে দিবে। কিছুর প্রয়োজন হলে এনে দিবে। কি লাগবে তা বলে দিবে। স্বামীর অধিকার সব কিছুই অনায়াসে পাওয়া। তবে চাবিটা আলমারীতে তালার সাথে থাকলেও কাগজটি যথাস্থানে নেই। সুজলা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। কালকেই এ কাজটি করেছে সে। এজন্য তার মধ্যে কোন অপরাধবোধও কাজ করছে না। তার বাবার সম্পত্তিতে মায়ের অবর্তমানে একমাত্র সন্তান হিসেবে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দেশের আইন তা বলুক আর না বলুক। ধর্ম তা মানুক আর না মানুক। দশের মতামত তা সমর্থন করুক বা না করুক। তার পরিবার তা শুনুক বা না শুনুক।
স্বামীবাবুর মনটা যে আজ বড় বেশি আনচান করছে তা সুজলা জানে। মোবাইলে সাব কাবলা, আমার স্ত্রী, দুই ছেলেই সাবালক, অগ্রিম কিছু লাগবে, বাকীটা পরে দিলেও হবে। ছেলের ভর্তি ইত্যাদি শব্দই বলে দিয়েছে সুজলার বাপের বাড়ির জায়গা জমি বেচার ধান্ধা।
স্বামী চাবিটাসহ কাগজটি খুঁজে পাচ্ছে না, আবার নিজে মোবাইল টিপে চাবি খোঁজার মত বোকামি মাথায় এসেছে, অগ্রহায়ণের বিকেলে শিশির পড়ছে বৃষ্টির মত, সুজলার বাপের বাড়ির জায়গা জমি বেচার ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুহুরি আজকে আসার কথা ছিল এমন আবাহাওয়ার জন্য আসবে না বলে জানিয়েছে। একদিকে ভালই হয়েছে। আসলে তো কাগজ দেখাতে পারত না। স্ত্রী সুজলাও অনর্থক তেতে আছে। ছেলের লেখা পড়ার চেয়ে বাবার বাড়িতে পরিত্যক্ত সম্পত্তিই বেশি হল! উপরন্তু শুকনো খড়গুলো গাদায় তোলা হয়নি, এমন ভিজা খড় আবার রোদে না শুকিয়ে গাদায় উঠানো ঠিক হবে না —— সব মিলিয়ে স্বামীবাবু ত্যক্ত -বিরক্ত।
এরই মধ্যে চোখ যায় বাইরে। উঠোন পেরিয়ে কাফিলা গাছটার দিকে। দেখে ছোট ছেলে উষ্ণ বেশ হেলে দুলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে আসছে। কাঁধে একটা ছাপার কি যেন বোঝা। স্বচ্ছ পলিথিনে জড়ানো। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে পলিথিনের গায়ে শিশিরের ফোঁটা পড়ে ভেজা প্যাকেট। বাম হাতে বোঝাটি ধরা আর ডান হাতে মোবাইলে কথা চলছে। বোঝাটি মাথায় নেয়নি। এটাই বুঝি এক ধরণের স্টাইল। মুটে বইবে না। মাথা দিবে না, তবে কাঁধ দিবে। সুজলা ছেলেকে শেখাতে চেষ্টা করেও পারছে না। যতই বলে, মাথা খাটাও।
না। মাথা রেখে শরীরের জোর খাটায়। শক্তি প্রকাশে আগ্রহী। নিজেই বলে, মা, শরীরের শক্তি বা টাকার শক্তি অথবা বড় ভাইদের শক্তি। শক্তিতেই এখন মুক্তি। শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে আর সব স্থবির। তোমার ভগবত গীতার মাহাত্ম্য ভক্তিতে মুক্তি এখন অচল।
সুজলা সাথে সাথে ছেলেকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমার না। তোমার ঠাকুমার। আমার কাছে জ্ঞানেই মুক্তি।
উষ্ণেরও তাৎক্ষণিক উত্তর, ঐটা ও তো ভগবত গীতার মাহাত্ম্য।
সুজলা এবার একটু গম্ভীর স্বরে বলে, আমি তো আর ভগবত গীতার মাহাত্ম্য হিসেবে বলছি না। জীবনের জন্য— তোমার জীবিকার জন্য বলছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
ফাটানো হাসি দিয়ে উষ্ণ বলে, আমিও তো অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। হ্যাঁ, জীবিকার জন্য জ্ঞান চাই আর সে জ্ঞানের সুযোগের জন্য টাকা লাগবে, মা।
বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর প্যাকেজ ব্যবহারে উষ্ণ ব্যস্ত। এজন্য কয়েকটা সিম কিনেছে। সকালের প্যাকেজ। দুপুর বারোটার পরের প্যাকেজ। প্যাকেজময় জীবন যাপন। লোভে পড়ে নিজের সব সময় বেচে মোবাইল কোম্পানীর কাছে। এই করে করেই ইন্টারমিডিয়েটে এ প্লাস পেয়েও কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি বলেই স্বামীবাবুর ধারণা। ভর্তি পরীক্ষায় টেকেনি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য অনেক বলা হয়েছে। উষ্ণের এক কথা,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব,সে পাবলিক হোক আর প্রাইভেট হোক। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব না।
ছোট ছেলের এ ভর্তি না হতে পারাটা স্বামীবাবুর মনটাকে পোড়ায়। তারা তো দিব্যি মা বাবার কোন রকম উদ্বেগ আর উদ্যোগ ছাড়াই ভর্তি হয়েছে। লেখাপড়া করেছে। পাশ করেছে। চাকরিও করছে। নিজেই নিজের সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিতে হয়েছে।
এখন জমি না বেচে উষ্ণগের ভর্তির টাকা যোগাড় সম্ভব নয়। এককালীন অনেক টাকা। কৃষ্ণের পড়ার খরচ তো এত লাগে না। হলে থাকে। খাওয়ার টাকা শুধু পাঠাতে হয়। আর কিছু হাত খরচ।মাঝে মাঝে কিছু বই কেনা লাগে, তা ও কম।
স্বামীবাবুদের সম্পত্তি এখনও ভাইদের মধ্যে মেপে জুখে ভাগ বাটোয়ারা হয়নি। বাবা মারা যাওয়ার পর যার যার নামে কাগজপত্রও হয়নি। শুধু পশ্চিমের ক্ষেত বড় জনের তো নদীর পাড়েরটা ছোট নিক। মেজো করুক রাস্তার পাশেরটা — এভাবে দখলে আছে। কাজেই বেচতে গেলে আমিন এনে কাগজপত্র ঠিক করতে হবে। শাশুড়ি সবার সাথেই আছে। তবে সুজলার সাথেই খায়। খুব সহযোগিতাও করে। মূলত শাশুড়ির সংসারই ধীরে ধীরে সুজলার হাতে আসছে। শাশুড়ি আছে বলে অবশ্য সুজলার চাকরি করতে সুবিধা। স্কুলে গিয়ে বাড়ি ঘরের চিন্তা করতে হয় না।
স্বামীর মতে সুজলার বাপের বাড়ির জায়গা জমি বেচে দিলেই ঝামেলা কম। পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। যদিও সুজলা এটাকে পরিত্যক্ত বলতে নারাজ। কাকা তো আছেনই। উনি বাবার ঘরটাকে আত্মীয় স্বজন আসলে থাকতে দেয়। অন্য সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্নই রাখে। সুজলা বছরে বা ছয় মাসে একবার গিয়ে থাকে। কাকাই আম কাঁঠাল পাকলে খবর দেয়। সময় পেলে নিতেও আসে।স্কুল ছুটি হলেই যায়। ছোটবেলার আমেজ অনুভব করে। নিজের খাটে গিয়ে ঘুমায়। মা বাবার ছোঁয়া পায়। আসার সময় কিছু ফল পাকর নিয়েও আসে। কাকিমাই বেঁধে দেয়।
স্বামীবাবুর প্রবল সমর্থণ উষ্ণের বিশ্ববদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছের প্রতি। সুজলারও। তবে বাপের জমি বেচে ছেলে পড়াতে দুজনেরই ঘোর আপত্তি। এজন্য নিজেদের জমি ভাগ বাটোয়ারা হয়নি বলে স্বামীর অজুহাত। এটা যে অজুহাত তা স্বামী নিজেও জানে, তবে মুখে বলে,সব ভাইরা থাকতে হবে তো? এরা ব্যস্ত। তাছাড়া মা থাকতেই বাবার সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্ধ্ব শুরু হবে তা কি ভাল দেখাবে?
সুজলা ঝাঁঝের সাথে উত্তর দেয়, তোমার বাবার সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করা নিয়ে কথা কাটাকাটিতে মা কষ্ট পাবে আর আমার বাবার সম্পত্তি বেচলে যে আমার বাবার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে এ নিয়ে আমার কোন কষ্ট নেই?
গত দিন পনের আগে বুদ্ধিটা স্বামীর মাথায় এসেছে। সুজলার বাবার বাড়ির সম্পত্তি তো রয়েছে। ওই সম্পত্তি তো কৃষ্ণ আর উষ্ণেরই পাওনা। তখন থেকেই মোবাইলে কৃষ্ণের সাথে কথাটা বলে। কৃষ্ণের উত্তর, মাকে জিজ্ঞেস করে নাও।
উষ্ণই ভেজাল বাঁধিয়েছে। বাবার প্রস্তাব মাকে বলে দিয়েছে। সুজলাকে জিজ্ঞেস করতেই ফুঁসে উঠেছে।
এজন্য স্বামী বাবুর মন মেজাজ প্রায়শঃই খারাপ থাকছে। তবে বরাবরের মত মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সংসারের সব কিছুর সিদ্ধান্ত সুজলার। লেপ বানানো। পিঠা বানানো। জুতায় আঠা লাগানো। পাঁঠার মাংস খাওয়া। কিন্তু কাঠার হিসাব নিয়ে স্বামী তার ভাইদের সাথে বোঝা পড়া করে মতামত নেয়। সুজলা গ্রামেরই উচ্চ বিদ্যালয়ে অংক করায়। কিন্তু বিষয় সম্পত্তি নিয়ে সুজলার অংকে স্বামীটির আস্থা নেই, মতামত নেওয়ার ইচ্ছেও নেই।
কাফিলা গাছের নীচ দিয়ে উষ্ণ আসার সময় পাশের গয়াম গাছের নিচু ডাল কাঁধের বোঝাটায় খোঁচা লেগে কাঁধ থেকে পড়ে যাবার উপক্রম হলেও পড়তে দেয় না। সে একটু বেঁকে, নুয়ে বোঝাটাকে ঠিক করে নেয়। কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে জেনেছে পলিথিনের মোড়ানো বোঝাটি লেপের। ছোটবেলা থেকে লাল রঙের লেপ ও সাদা রঙের লেপের কভার ব্যবহার করে আসছে। লেপ ও সাদা লেপের কভারে শীত থেকে বেশি সুরক্ষা পায় কি না জানে না। এখন দেখে রঙিন ছাপা লেপ ও লেপের কভার । চোখ তা মেনে নিতে একটু সময় লাগল।
জিজ্ঞেস করল — তোর মা কি এ রকম ছাপার লেপ বানাতে বলেছে?
উষ্ণ বোঝাটি কাঁধ বদল করে ও মোবাইলটি হাত বদল করে উত্তর দেয়, না, মা বলেনি। এখন সবাই রঙিনই বানায়।
সবাই তো ইন্টারমিডিয়েটে এ প্লাস পেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোথাও ভর্তি হয়। তুই কি করেছিস । স্বামীবাবু তা শব্দ করে বলেনি, মনে মনে বলেছে। কারণ উষ্ণের উত্তরটি স্বামীবাবুর জানা। অথবা কল্পনায় উত্তরটি আগেই শোনা। উষ্ণ বেশ মোলায়েম সুরে বলবে, বাবা, সবাই সব পারে না। যেমন, তুমি মাকে সামনাসামনি কিছু বলতে পার না।
কাজেই তিরিক্ষি মেজাজ নিয়িন্ত্রণ করে চুপ হয়ে যায়। এমনি অনেক কিছুতেই স্বামীবাবু চুপ থাকে। স্বামীবাবু নিজেকে সঁপে দিয়ে সংসারের অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে গেছেন। অবশ্য বাঁচলেও নিজেকে যে বেচেননি এর প্রমান প্রায়শ দিয়ে থাকেন।
বড় ছেলের নাম কৃষ্ণ রাখা নিয়ে এখনও সুজলার কথা শুনতে হয়। নামটি স্বামীবাবুর মা রেখেছিলেন। ঠাকুমার উদ্দেশ্য ছিল উঠতে বসতে নাতিকে ডাকার সাথে সাথে ঠাকুরের নামও নেওয়া হবে। তা নিয়ে সুজলার আপত্তি খাটেনি। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় ছেলের নাম রাখা নিয়ে জোর আপত্তি করতেও পারেনি। তবে ছোট ছেলের নাম নিজে রেখেছে। আগেই স্বামীবাবুকে বলে রেখেছিল, এবার ছেলে মেয়ে যাই হোক আমি নাম রাখব। পরকালের মুক্তি বাদ দিয়ে ইহকালে মন ভরে নিজের সন্তানকে ডাকতে দাও।
সুজলা যা ইচ্ছে বলুক। মায়ের ইচ্ছে তো পূর্ণ হয়েছে। এবারও ছেলেকে সুজলার বাবার সম্পত্তির টাকায়ই ভর্তি করবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রতুলতার জন্যই ছেলেটি ভর্তি হতে পারেনি। বলে মা বাবা দুজনেই মনে করে। অংক, ইংরেজী সবটাই উষ্ণ ভাল বুঝে। এমনিতে মায়ের সাথে মাস্তানী উদাহরণ দিলেও বাইরে কখনও কোন খারাপ সঙ্গে মিশে না। মা বাবার সাথে খুনসুটি করলেও বাধ্য ছেলে। এখন একটাই শখ, মোবাইলের প্যাকেজ ব্যবহার। পিসি, মাসি, কাকা,মামা কৃষ্ণ সবার খবরাখবর রাখে। ঢাকার শিক্ষার্থীদের সাথে টিকতে পারেনি। মামা আর মাসি বলতে মায়ের কাকাতো ভাইবোনেরা। মায়ের তো কোন আপন ভাইবোন নেই।
স্বামীবাবু কখনও অন্যের উপর রাগ দেখান না। পরিবারেও না। অফিসেও না। নিজ জেলায়ই তার চাকরি জীবন কেটেছে। সব সময় বাড়িতে থেকেই চাকরি করেছেন। সাথে কামলা দিয়ে পুরোপুরি কৃষি কাজ চালাতে কোন অসুবিধা হয়নি। বড় ছেলেও বাবার মত। রাগারাগিতে নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাড়িতে আসলে সংসারের কাজে সহায়তা করে। কৃষ্ণ বুঝে যে কৃষির আয়ের টাকাই তাদের মূলধন।
উষ্ণও সংসারের কাজ করে, তবে মায়ের মতই তার মেজাজ। আর মায়ের সাথে খাতিরও বেশি।
সুজলার বাবার জায়গা জমির কাগজপত্রও কাকা সুজলার স্বামীকে বুঝিয়ে দিয়েছে। সুজলাই বুঝে নিতে পারত। তখন বুঝেনি যে এ নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে। তার ক্ষেত্রেও যৌবনে রক্ষতি ভর্তা, বার্ধক্যে রক্ষতি পুত্রঃ প্রযোজ্য হবে।
ঘরে ঘরে শুধু জীবনস্বত্বের অধিকার। এ জীবনস্বত্বের অধিকার নিয়েই স্বামী পুত্রের সাথে লাগবে। তার জীবন তো এখনও শেষ হয়নি। সুজলার এখনও বার্ধক্য আসেনি। তাছাড়া, যৌবনে রক্ষতি ভর্তা, বার্ধক্যে রক্ষতি পুত্রঃ শ্লোকে সুজলার প্রয়োজন নেই,আস্থাও নেই। এই জীবনস্বত্বের অধিকার নিয়েই সুজলার জীবিত অবস্থায় সে তার বাবার জায়গা জমি অক্ষত রাখবে, অব্যয়িত রাখবে, অবিক্রিত রাখবে।
ছেলেরা সই করলেই হবে।সম্পত্তি সুজলার বাবার আর বেচবে তার ছেলেরা। সুজলা বলেছিল, কাকা কাকিমা বেঁচে থাকা পর্যন্ত সুজলা তার বাবার বাড়ির অস্তিত্ব বিলীন করতে চায় না।
স্বামীবাবু সে কথা মানছে না। সামনাসামনি প্রতিবাদও করছে না। তবে ক্রেতা দেখাচ্ছে। দাম দরও করছে। মোবাইলে কৃষ্ণের সাথে আলোচনায় মনে হয় ছেলেরা রাজী হচ্ছে না। মামা নেই বলে মা তো আছে। দাদুর সম্পত্তি মা জীবিত অবস্থায় ছেলেরা এ নিয়ে কোন চিন্তাই করতে চায় না। আর স্বামীটি ছেলেদের এ নিয়ে চিন্তা করতে মানা করছে। এখন নয়। সুযোগ ও সময়মত সাব কাবলা করে দিলেই হবে।
সুজলা ভেবে পাচ্ছে না কি করে তা সম্ভব। নিজের বাপের ভিটা থেকে উচ্ছেদ! তাহলে সুজলাও ঘরে থেকেই যুদ্ধটা করবে।
সুজলা আদালতে যাবে না। সে জানে আইন তার পক্ষে যাবে না। আর এক ঘরে বসত করে মামলা করা যাবে না। জমির কাগজ এখন যৌথ স্থান আলমারী থেকে নিজের কাছে। স্বামীকে ভোগাবে। ভোগান্তি হবে ক্রেতারও। সবাই অন্তত শিক্ষা পাবে। বাপের সম্পত্তি বেচার আগে নিদেন পক্ষে মেয়েকে জিজ্ঞেস করবে। জীবনস্বত্ব! জীবনের সত্য বুঝাবে চারপাশকে।
বিষয় কিভাবে বিষ হয়- আরেকবার বুঝলাম!
নিজের যোগ্যতায় যেটুকু কুলায়, লাইফস্টাইলটা তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করি। মনের ভুলেওতো বাপ-দাদার সম্পত্তির কথা মনে পড়ে না। কেমন যেন নিজের বলে ভাবতে পারি না। ভাবলেই নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোটো বলে মনে হয়।
মনকে বুঝাই- মনের এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।
@শ্রাবণ আকাশ,
‘বিষয় বাসনা বিসর্জন’ বড় কঠিন কাজ।
(এই কাহিনীর প্রথম পাঠক ছিলাম আমি)
সুজলা হবে কি?
মুসলিম নারী (বোন) পৈতৃক সম্পত্তি পাই ভাইয়ের অর্ধেক। হিন্দু নারীদের বেলায় বিধান কি?
@মাহফুজ,
শুধু জীবনস্বত্বের অধিকার ।
ছবিটি আমাকেও খুব কষ্ট দিচ্ছে। শুধু নিহত ফেলানীর ছবিটি দেখার ভয়ে আমি এই ক’দিন ঘন ঘন মুক্তমনায় আসছি না। আমার সন্তানও প্রায় ওরই বয়সের।
@মনজুর মুরশেদ,
আপনার ও আমার যৌথ আবেদনে মুক্ত- মনা এডমিন আমাদের একটা মানসিক কাঁটা থেকে বাঁচালেন।
ধন্যবাদ একাত্মতার জন্য।
@গীতা দাস, (F)
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এ পোষ্টের সাথে একটা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য । সীমান্তে বি এস এফ এর গুলিতে নিহত ফেলানীর ছবিটি কোন কোন লেখায় পৃষ্ঠার উপরে দৃশমান যা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে এবং আমার স্ত্রীধন নামক গল্পটিরও কভার মানে পৃষ্ঠার উপরে দৃশমান।
এ ছবিটি ব্যবহার কেন বন্ধ করা উচিৎ তা আমি হয়ত যুক্তি সহকারে বুঝাতে পারব না। তবে ছবিটি দেখলে আমার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। তাই ছবিটির ব্যবহার না করা নিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইল।
বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়ে থাকলে আমার মন্তব্য আমি অগ্রীম উঠিয়ে নিচ্ছি। কারণ এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে সময় ও সুযোগ হলে এ নিয়ে বিস্তারিত লেখা যাবে।
@গীতা দাস,
আপনার এবং মনজুর মুরশেদ সাহেবের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ব্যানারটি সরিয়ে ফেলার কথা। রামগড়ুড়ের ছানাের ভাষ্য অনুযায়ী সেটি সরিয়েও ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমি নিজেও মাঝে মাঝে ব্যানারটি দেখছি, আবার কখনো কখনো দেখছি না। ফলে নিশ্চিত না যে ব্যানারটি সত্যিই সরিয়ে ফেলা হয়েছে কি না। আমার কম্পিউটারের মস্তিষ্কে তথ্যের কোনো ভুল ব্যাখ্যাতেও এই রকম ভুতুড়ে ঘটনা ঘটাটা বিচিত্র কিছু নয়। 🙂
আপনার এই গল্পটি গল্পের চেয়েও, সত্যি ঘটনা বলেই বেশি মনে হলো।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ ব্যানারটি সরিয়ে ফেলার জন্য।
আর
পড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হল আমার। একদিকে গল্পটিতে বাস্তবতার ছোঁয়া রয়েছে। ভাল লাগল।
অন্যদিকে গল্প হিসেবে মান সম্মত হয়নি। কাজেই :-s
অশেষ ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ ব্যানারটি সরিয়ে ফেলার জন্য।
আর
পড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হল আমার। একদিকে গল্পটিতে বাস্তবতার ছোঁয়া রয়েছে। ভাল লাগল।
অন্যদিকে গল্প হিসেবে মান সম্মত হয়নি। কাজেই 🙁
অশেষ ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
@গীতা দাস,
নিজে নিজেই যদি গ্লাসের অর্ধেক খালি দেখেন, তাহলে আমি আর কী করতে পারি? 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
ঠিক বলেছ। তোমার করার কিছুই নেই। আমার তো “চোরের মন পুলিশ পুলিশ।” 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
অশেষ ধন্যবাদ
শুভেচ্ছা
মনজুর
খুব ভালো লাগল।বিশেষ করে,
সুজলা আদালতে যাবে না। সে জানে আইন তার পক্ষে যাবে না। আর এক ঘরে বসত করে মামলা করা যাবে না। জমির কাগজ এখন যৌথ স্থান আলমারী থেকে নিজের কাছে। স্বামীকে ভোগাবে। ভোগান্তি হবে ক্রেতারও। সবাই অন্তত শিক্ষা পাবে। বাপের সম্পত্তি বেচার আগে নিদেন পক্ষে মেয়েকে জিজ্ঞেস করবে। জীবনস্বত্ব! জীবনের সত্য বুঝাবে চারপাশকে।
দারুণ লিখেছেন।
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ গল্পটি পড়া ও মন্তব্য করার জন্য।