কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান

পশ্চিমবাংলা না কেরল – মাদ্রাসা শিক্ষায় কে বেশি সার্থক ?

লিখেছেনঃ সত্য মিত্র

জি হ্যাঁ। বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষার উন্নতিকরণের জন্য গঠিত কমিটির লোকেদের গন্তব্যস্থল ভারতের দুটি কমিউনিস্ট রাজ্য। বাংলাদশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইসলামী শিক্ষাবিদদের কাছে ইসলামী শিক্ষার প্রসার ও প্রচারের আলোকবর্তিকা বহন করছে এই দুটি কমিউনিস্ট রাজ্য, মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান বা আরব রাষ্ট্রগুলি নয়। কমিটির সদস্য ও অন্যান্য ইসলাম নিবেদিত ব্যক্তিদের বিতর্ক ও আলোচনার মূল বস্তু হল – কোন রাজ্য(পড়ুন কোন রাজ্যের কমিউনিস্টরা) মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে আরবী ভাষা ও দ্বীনিয়াতের স্বার্থ রক্ষায় বেশি সফল।

মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা পশ্চিম বাংলার শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামী করনের সক্রিয় সমর্থক আনন্দবাজার পত্রিকা যারা অন্যান্য ক্ষেত্রে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রমের সমালোচক (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই দলে পড়েন যিনি মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সব কাজে খুঁত খুজে পান শুধু শিক্ষার ইসলামী করণ ও তসলিমা বিতাড়নে তিনি মার্ক্সবাদীদের নীরব সমর্থক)। আনন্দবাজার পত্রিকা তার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০১০ সংখ্যায় গর্বসহকারে জানিয়েছে, “ফেরার আগে ঢাকার প্রতিনিধিরা জানিয়ে গিয়েছেন, সফর ব্যর্থ হয়নি। যে অভিজ্ঞতা তাঁরা নিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের উদ্যোগ সফল করতে তা খুবই সহায়ক হবে। বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদল এক সপ্তাহ ধরে এ রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসা ঘুরে দেখেছে। তাঁরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার এই ‘উৎকর্ষের’ পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হল: ● পশ্চিমবঙ্গে মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার ফারাক নেই। (এটা ডাহা মিথ্যে।তাহলে, মূল ধারার স্কুল না খুলে ইসলামী মাদ্রাসা কেন?) ● মাদ্রাসার পরিকাঠামো যথেষ্ট উন্নত।● এ রাজ্যের মাদ্রাসায় অ-মুসলিম পড়ুয়ার সংখ্যাও যথেষ্ট।● শিক্ষক নিয়োগ হয় সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে।● সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক অবস্থান ভাল।”

বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা “পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসায় অ-মুসলিম ছাত্রছাত্রীর বহর দেখেও তাঁরা কার্যত অভিভূত। বর্ধমানের ওরগ্রামের এক মাদ্রাসায় তো অ-মুসলিম পড়ুয়াই ৬২%! (বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারী) নজরুলের কথায়, “এই ব্যাপারটা ভীষণই ভাল লাগল।” (ভাল লাগারই কথা। হিন্দুর ছেলেরা একেবারে ছোটবেলা থেকে শিখছে কাফের হওয়ার জন্য তাদের দোজখে যেতে হবে, যদি না তারা ইসলাম ধরম গ্রহণ করে। এবং এরপর বাংলাদেশে হিন্দুদের মাদ্রাসায় পড়তে আপত্তি করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না।)। পশ্চিম বাংলার মাদ্রাসা শিক্ষামন্ত্রী (কংগ্রেসী আমলে একজন শিক্ষামন্ত্রীই যথেস্ট ছিল, কমিউনিস্টরা দ্বীনের স্বারথে আলাদা মন্ত্রী বানিয়েছেন) কমরেড আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা কী ভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা-ব্যবস্থা চালাচ্ছি, ওঁরা মূলত তা দেখতে এসেছিলেন। আমাদের ব্যবস্থা ওঁদের যে ভাল লেগেছে, তা জেনে আমাদেরও ভাল লাগছে।” বাংলাদেশের ইসলাম পসন্দ পত্রিকা ‘নয়া দিগন্ত’ তার ১৫ই ডিসেম্বর, ২০১০ (৮ মহররম, ১৪৩২) সংখ্যায় জানিয়েছে যে “পশ্চিম বঙ্গের মন্ত্রী আবদুস সাত্তার বলেন, বাংলাদের মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে যাচ্ছে।“

পশ্চিম বাংলার কমিউনিস্টরাই কি শুধু ইসলামের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেন? ইসলামের সঠিক সেবকরা সেই উত্তর খুঁজতে পৌছে গেছেন আরেক ঘোর কমিউনিস্ট রাজ্য কেরলে। তাদের ইসলাম সেবার ঐতিহ্য তো পশ্চিম বাংলার চেয়ে কোন কম নয়। সেই ১৯৫৯ সালে কমরেড নাম্বুদ্রিপাদ মুসলিম লীগের হাত ধরে কমিউনিস্ট সরকার গঠন করেছিলেন কেরল রাজ্যে। ভারত বিভাগের ক্ষত তখনো তাজা এবং ‘মুসলিম লীগ’ একটি ঘৃণিত নাম, তবু পিছু হটেন নি কমরেড নাম্বুদ্রিপাদ। সেই সম্পরক আজো অটুট বিভিন্ন রূপে। তাই নয়া দিগন্তের সাংবাদিক পৌছে গেছেন ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তের সেই রাজ্যে। ২৫শে ডিসেম্বর, ২০১০ (১৮ মহররম, ১৪৩২) সংখ্যায় এক প্রতিবেদনে তিনি জানিয়েছেন যে, “ কেরালায় মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগে বা সরাসরি মুসলিম সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়।>>>>> এসব মাদ্রাসায় ইসলামি চরিত্র ও শিক্ষা-দীক্ষাকে বিনষ্ট না করেও আধুনিক বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এমনকি আধুনিক শিক্ষাপ্রণালীও সেখানে প্রয়োগ করা হয়, যার সাথে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর ভারতের বাঁধাধরা খাতের মাদ্রাসাগুলোর চরিত্র ও শিক্ষাকাঠামোর কোন মিলই নেই।>>> কেরালা এটা করে দেখিয়েছে। কিন্তু আমলাতন্ত্র ও পারটির কুক্ষিগত পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোরড তা করতে পারেনি, বিড়ম্বনা এখানেই।”

অতএব, খেলা জমে গেছে। ইসলামের সেবায় কোন রাজ্যের কমিউনিস্টরা বেশি নম্বর পাবেন। বাংলাদেশ কাকে স্বীকৃতি দেবে? কেরল না পশ্চিম বাংলা? কেরালা বেশি ইসলাম ভক্ত, কারণ ওখানে বেশির ভাগ মাদ্রাসায় পড়ানোর মাধ্যম আল্লার ভাষা আরবী এবং আন্তরজাতিক ভাষা ইংরেজী। সংস্কৃত ভাষার দুরগন্ধ যুক্ত মালয়ালম ভাষাকে পাত্তা দেওয়া হয়না। পশ্চিমবাংলার মাদ্রাসায় অবশ্য আরবীর সাথে সংস্কৃত ভাষার দুরগন্ধ যুক্ত বাংলাও স্থান পায়, কারণ সেটি যে আবার ইসলামী দেশ বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। পশ্চিমবাংলায় ইসলামী শিক্ষার প্রসারে অগ্রগামী সরকার, কেরলে প্রাইভেট ইনস্টিটিউশন। সরকার না প্রাইভেট ? ইসলাম কোন দিকে ঝুঁকবে ?

খুব কঠিন প্রতিযোগিতা।

ইসলামপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে সুখবর হল পশ্চিমবাংলার সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংশ করে ইসলামী শিক্ষা প্রসারের তিন জন কান্ডারীই ব্রাহ্মণ সন্তান – বুদ্ধদেব ভট্টাচায, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। এবং ১৯৫৯ সালে মুসলিম লীগের সাথে হাতমেলানো কমরেড ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ শুধু ব্রাহ্মণ নন ব্রাহ্মণ শিরোমনি শংকারাচারয পরিবারের সন্তান।