wikileaks07wwwallvoicescom1
খুব সম্ভব এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ওয়েব ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম উইকিলিকস। অলাভজনক এই ওয়েব সাইটটি সাংবাদিকদের তথ্য সূত্র যোগাতে সহায়ক– এমনটিই এর ঘোষণায় বলা হয়েছে। তথ্য সাংবাদিকতার জগতে উইকিলিকস-এর মতো ওয়েব আগে কখনো তৈরি হয়নি; এতোটা আলোচিতও হয়নি। তাদের মিশন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ গোটা বিশ্বের অন্তত আড়াই লাখ গোপন সরকারি নথি ফাঁস করা। আর এ কাজ করতে গিয়ে এরই মধ্যে তারা পরিনত হয়েছে পশ্চিমা প্রভূদের এক নম্বর শত্রুতে।

উইকিলিকস-এর মূল ওয়েব ঠিকানা উইকিলিকস ডটওর্গ পৃথিবীর সেরা হ্যাকারদের হামলায় বার বার বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ কারণে এর মূল ইউআরএল ডোমেইন সংস্থা (এভরি ডিএনএস ডটনেট) বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা একের পর এক ব্যাক-আপ ডোমেইন নিয়েই চলেছে। এর মুখপাত্র অ্যাসাঞ্জ এখন আমেরিকার মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, পশ্চিমাদের চাপে বন্ধ হয়ে গেছে উইকিলিকস’কে অর্থ সাহায্য দেওয়ার পে-প্যাল পদ্ধতি। আমাজন ডটকম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে উইকিলিকস-এর সংবাদের লিংক।

বলা ভাল, তথ্য-সাংবাদিকতা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতারই অংশ। এ জন্য সরকারি গোপন নথিপত্র সাংবাদিকের সংবাদের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বৈকি। উইকিলিকস-এর শ্লোগান– সরকারের স্বচ্ছতার জন্য উইকিলিকস’কে শক্তিশালী করো! কিন্তু একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত তথ্য আন্তর্জাতিক মহলে ফাঁস করাটা কতটুকু সাংবাদিকতার নীতিমালা সম্পর্কিত, সে প্রশ্ন উঠেছে।

মার্কিন মুলুকের মান-সন্মান হানিকর — এমন রাষ্ট্রীয় গোপন দলিল ফাঁস করাটা কথিত গণতন্ত্রের ধজ্বাধারী সিআইএ/এফবিআই বরদাশত করে না। উইকিলিকস তাই এখন পরিনত হয়েছে ওসি-ওয়ার্ল্ড আমেরিকার এক নম্বর শত্রুতে। তারা শুধু মার্কিন সরকারেরই আড়াই হাজার গোপন কূটনীতিক বার্তা ও টেলিগ্রাম ফাঁস করেছে। উইকিলিকস-এর প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য নথির মধ্যে আট হাজার ৩২০টি চীনবিষয়ক, সাত হাজার ৯৫টি আফগানিস্তানবিষয়ক, পাঁচ হাজার ৮৭টি ভারতবিষয়ক এবং চার হাজার ৭৭৫টি পাকিস্তানবিষয়ক। এমন কি তারা দুই হাজার ১৮২টি বাংলাদেশবিষয়ক নথিও ফাঁস করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত উইকিলিকস তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে এমন ৬৮৩টি নথি। ইসলামী জঙ্গিদের এক সময়ের ঘাঁটি বাংলাদেশের নানা অজানা তথ্য প্রকাশ হয়েছে এতে।

উইকিলিকস-এর বড় কৃতীত্বগুলোর একটি হচ্ছে, সরাসরি অসম্পাদিত গোপন ভিডিও ফুটেজ (রাশ প্রিন্ট) ফাঁস করে দেওয়া। তারা সরাসরি ইরাক ও আফগান যুদ্ধের গোপন ভিডিও ফুটেজে তুলে ধরেছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও আল কায়দা দমনের নামে কি নৃশংসভাবেই না মার্কিন সেনারা সাধারণ নিরস্ত্র নাগরিকের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে!

শেষ পর্যন্ত উইকিলিকস থামবে কোথায়– সেটিই এখন দেখার বিষয়।


আরো দেখুন: উইকিলিকসে বাংলাদেশ বিষয়ে ২১৮২ নথি

উইকিলিকসে ইরাক যুদ্ধের বিশেষ ভিডিও ফুটেজ।

কার্টূন: অলভয়েস ডটকম