বাংলাদেশ এর টেলিফিল্ম বা টেলিচলচ্চিত্র নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল তিন দিনব্যাপী একটি প্রদর্শনী উৎসব ভারতের ফিল্মসিটি পুনেতে। বাংলাদেশীয় টেলিফিল্মের আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু হল এই উৎসব থেকেই।
পুনেতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যায় প্রায় ৭৫ এর মত। তাদেরই পরিকল্পনা ও উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ অর্থসাহায্য দিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয়ের অঙ্গসংস্থান-ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস্ সংক্ষেপে আইসিসিআর। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানকে সুগম করতে প্রতিষ্ঠা করেন এ কাউন্সিল। সেই থেকে আইসিসিআর কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালাকে সামনে রেখে। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি প্রদানপূর্বক ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পড়ার সুযোগ করে দেয় আইসিসিআর। সেই সাথে পৃথিবীর অনেক দেশে আন্তর্জাতিকভাবে বিবিধ সাংস্কৃতিক উৎসবও পালন করে। তাই বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তাবিত উৎসবটিকে আইসিসিআর দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অন্যতম দ্বার বিবেচনা করে।
এই বিষয়ে একটা কথা না বললেই নয়, টেলিফিল্ম হল ফিচার দৈর্ঘ্য(৪০-৯০ মিনিট) এর ফিল্মধারা যা শুধুই টেলিভিশন নেটওয়র্ক এর জন্য নির্মিত এবং প্রচারিত। মূলধারার ফিচারফিল্ম এর সাথে এর পার্থক্য এই যে টেলিফিল্ম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়না। বাংলা্দেশে টিভিনাটক বলতে আমরা যা বুঝি তা মূলত টেলিফিল্ম।নাটকের এর চেয়েও ফিল্মের সাথে এর সম্পর্ক বেশি। দৃশ্য এখানে ক্যামেরাতে ধারণ করা হয়, মঞ্চায়ন নয়।
তিনদিনের এই উৎসবে মোট ১১টি ফিল্ম প্রদর্শিত হয়, স্থান ছিল মহারাষ্ট্র এডুকেশন সোসাইটি অডিটোরিয়াম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডঃ ইফতেখার আহমদ, ডীন(টেলিভিশন), ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিট্যুট অফ ইন্ডিয়া(এফটিআইআই), পুনে।বিশেষ অতিথি ছিলেন মিঃ বীরেন্দ্র চিত্রভ, সেক্রেটারী(ওয়েস্টার্ন রেজিওন), ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া(এফ এফ এস আই) এবং মিঃ আর পার্থিবান, রেজিওনাল অফিসার,আইসিসিআর,পুনে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে উৎসবে অংশ নিতে আমন্ত্রন জানানো হয় প্রখ্যাত নাট্যকার মামুনুর রশীদ, ডিরেক্টরস গিল্ড এর সহ-সভাপতি গাজী রাকায়েত এবং ডিরেক্টর সুমন আনোয়ারকে। দু’দেশের জাতীয় সংগীতের সাথে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। ফিল্ম মধ্যান্তরে বাংলাদেশ থেকে আগত ডিরেক্টরদের সাথে দর্শকের পারস্পরিক আলোচনার ব্যবস্থা রাখা হয়।এতে ফিল্ম এন্ড প্রডাকশন এর দৃষ্টিভংগীতে তাঁদের প্রশ্নোত্তর পর্ব বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রেক্ষাপটকে ভারতীয় বোদ্ধাদের কাছে আরো গভীরভাবে পরিচিত করে।
এই উৎসবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আরো দুটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আমন্ত্রন পেয়েছে।
১) ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল,২০১১-মুম্বাই, আয়োজনে আইএফএমসি(মুম্বাই)
২) বসুন্ধরা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল,২০১১-পুনে, আয়োজনে এফএফএসআই
এই দুটি ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিষয়ক দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছে পুনেতে অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীরাই।
বাংলাদেশের টেলিফিল্ম ধারাটি খাস করে এই ফেস্টিভ্যালের পরে ফিল্মবোদ্ধা দর্শকদের মনে বিশেষ প্রভাব রেখেছে। এই অনুষ্ঠানটিকে বাৎসরিকভাবে নিশ্চিত করার জন্য অনেকেই অনুরোধ করেছেন।পুনের অগ্রণী সংবাদপত্রগুলিতে এই ফেস্টিভ্যাল এর উদ্দেশ্য এবং বিবরনী বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানের ২ দিন আগে পুনের পত্রকার ভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে এফএফএসআই সেক্রেটারি বীরেন্দ্র চিত্রভ এই উৎসবের আয়োজন ও পরিকল্পনার সমস্ত দিক সাংবাদিক মহলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি এই বাস্তবায়নকে উপস্থিতির মাধ্যমে সামগ্রিক পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য সকলকে ব্যাক্তিগতভাবে অনুরোধ করেন।উৎসবে প্রবেশ সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। প্রধান অতিথি ডঃ ইফতেখার আহমদ ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত সমস্ত ছবি পুনে ফিল্ম ইন্সটিট্যুট লাইব্রেরীতে রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। মিঃ বীরেন্দ্র চিত্রভ এফএফএসআই এর অধীন ১৮৫টি ফিল্ম সোসাইটিতে এই ছবিগুলো বিতরণে আগ্রহী।
এবার আসল কথাতে আসা যাক। মুক্তমনার পাঠক অবশ্যই জানেন, তারপরও বলছি, ফিল্ম এমন একটি মাধ্যম যা আমাদেরকে বহির্বিশ্বে সামগ্রিকভাবে পরিচিত করতে পারে। বাংলাদেশের নিয়মিত মুলধারার সিনেমার চাইতে এই টেলিফিল্মগুলো সারা জাতির জীবন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মনস্তত্বকে অনেক বাস্তবিকভাবে প্রতিফলন করতে পারে। ইদানিংকালে বানিজ্যিক সুবিধার্থে বানানো কিছু কাজ গৌরবময় ধারাটিকে ভিন্নরুচির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাবসায়িক হিন্দিছবি এবং সিরিয়ালের ছাঁচে তৈরী ফিল্মগুলো তরুন সমাজকে অবাস্তবিক, অতিআবেগীয় ব্যাক্তিত্বের করে তুলছে যা আমাদের মোটেও কাম্য নয়। এই স্খালন রোধের একটি উপায় হল নিজেদের ফিল্মের মুমূর্ষু ধারাটিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে জনপ্রিয়তার ক্ষেত্র তৈরী করা। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার প্রবাসী বাংলাদেশী তাদের নিজ নিজ স্থানে ফিল্মফেস্টিভ্যাল বা তদ্রুপ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে এই ব্যাপারটিকে সফল করতে পারেন। এইরকম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণের ইচ্ছা দেশীয় পরিচালকদেরকে ভাল কাজের ব্যাপারেও আগ্রহী করে তুলবে। কেবল একটি “মাটির ময়না”, “স্বপ্নডানায়” বা “আগামী” নয়, আরো অনেক ভালো কাজ হচ্ছে যেগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে আনতে পারে। অথচ আমাদের দেশে সেই কাজগুলোই পেছনে পড়ে যাচ্ছে, বানিজ্যিক এবং সস্তা হিউমার নেই বলে। নূরুল আলম আতিকের মত মেধাবী পরিচালককে সংগ্রাম করতে হয় তাঁর ছবি “ডুবসাঁতার” নিয়ে, কারণ আমাদের দেশের বড় বড় মাল্টিপ্লেক্সগুলোতেও ডিজিটাল ছবি দেখানোর প্রযুক্তি নেই বলে। দেশের সর্বপ্রথম ডিজিটাল ছবি মুক্তির পর দিনেই টিভিচ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়ে যায়। কারণ প্রেক্ষাগৃহ তার জন্য ভাল দাম দিতে পারেনা। অর্থানুকূল্যের অভাবে শত শত কাজ থেমে যাচ্ছে গোড়াতেই। আর আমরা করে যাচ্ছি নেতিবাচক অনুকরণ। হলিউড দেখে ভারতে যখন বলিউড, তারপর একে একে কলিউড, মলিউড, টালিউড হল তো আমরাও নাম পালটে ঢালিউড করে নিলাম। সেই একই নর্তন-কুর্দন কপিকাট করে চালিয়ে যাচ্ছি বছরের পর বছর। গা বাঁচিয়ে নেওয়া শিক্ষিত ভদ্র শ্রেণী প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখাই ছেড়ে দিয়েছেন। ১১০০ এরও বেশি সিনেমাহল ছিল বাংলাদেশে, এখন ৭০০ তে গিয়ে ঠেকেছে।তাও চলছে কিছু ডাব করা মধ্যমানের ইংরেজীছবি এবং হিন্দি নাচের সুফলে(!)।
স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স ৪০’এ ঠেকল, আজও আমাদের দেশে ফিল্ম নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা নেই। যাও একখানা হল তাও ঢাবি’র সমাজবিজ্ঞান পরিষদ এর অধীনে। এইভাবে চলতে থাকলে শুধু একটা বৃত্তের মধ্যেই থাকা হবে। অপেক্ষায় থাকতে হবে কবে তারিক মাসুদ একটা মাটির ময়না বা রানওয়ে বানাবেন। ফিল্ম লাইনে প্রফেশনালের খুব দরকার এখন। অবশ্য ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাছে পিওর সায়েন্সের অনার্সই এখন এতোটা খেলো হয়ে গেছে আর ফিল্মের পড়াশোনাকে তো শিক্ষিত পিতা-মাতাগণ পাগলছাগলের কাজ বলে মনে করেন। সরকারের মনোযোগ নেই, প্রাইভেট সেকশন বানিজ্যিকতার নামে ফিল্ম নামেরই বারোটা বাজাচ্ছে। তবে কি হবে আমাদের ভবিষ্যত বিনোদন মাধ্যম?? সেই সাস-বহু সিরিয়াল, নিম্নমানের হাস্যরসাত্মক টেলিনাটক আর পূর্বনির্ধারিত, লোকদেখানো ট্যালেন্ট-হান্ট??
@সপ্তক,
প্রথমেই ক্ষমা চাইছি বিলম্বিত উত্তরের জন্য, আপনার করা মন্তব্যের কোনো ই-মেইল নোটিফিকেশন পাই নি আমি, আজ গিয়ে দেখলাম।
আসলে, আমাদের হাসির কারণটা ছিল গতানুগতিক বাংলা সিনেমা’র গল্পকারদের অজ্ঞতা, তাঁরা এটুকু জ্ঞানও রাখেননা যে বুয়েট থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যায় না।
কিছু কিছু ক্ষত কেন যেন সারা জীবনেও সারে না। 🙁
হা হা, ভালো উপমা দিলেন। আসলেই আমরা হতে চাই কি আর হয়ে যাই কি। উত্তরহীন প্রশ্ন। 😕
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আমি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কখন ই বুয়েট এর অধীন ছিল না।আমি বুয়েট এ চান্স না পেয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভরতি হই;-( ।টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটা ফলিত কারিগরি বিদ্যা।এখন বাংলাদেশ এ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি র অধীনে পরানো হয়।এই বিদ্যা টি অনেক টা চিকিৎসা বিজ্ঞান এর ডেন্টাল সাজ’ন এর সাথে তুলনা করা যায়।এটা তেজগাও এ অবস্থিত।বুয়েট এর সাথে এর পাথ’ক্য টা কোথায় তা পাপিয়া বা লিনা কেও পরিস্কার করেন নাই,কিন্তু খুব মজা পেয়েছেন বলে মনে হল। :)) পাস করার আগে ই চাকরি পাই 😀 ।আর মজা পাই যখন দেখি আমার অধিন এ বূএট এর পাশ করা অনেক ইঞ্জিনিয়ার চাকুরি করছে :rotfl: (কিন্তু এতে করে বূএট এ সুজগ না পাওয়ার যন্ত্রনা যায় নাই :-Y )।আমার কিন্তু বিয়ের মার্কেট খারাপ ছিল না 😛 ।কানাডা তে মাইগ্রেট করার পর ফ্যাশান ডিজাইন পরলাম ,জব নাই :-O ।
পরে ওয়াল-মাট কানাডা তে মারচেন্ডাইজার এর জব পাই।।আর পরে বায়িং হউস খুলি,সেলফ এমপ্লয়েড :rotfl: ।বূএট এ চান্স না পাওয়ার বেথা বুকে এখন অ বাজে :-X ।অনেক পুরানো পাপিয়ার লিখা টা নজর এ পরল তাই মনের দুখের কথা লিখলাম।হইতে চাইছিলাম মিস্ত্রি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার),হইছি তাঁতি :lotpot: বূএট এ সুজগ না পাওয়ার জন্ত্রনা বিধউত এই লিখার জন্য বানান ভুল মারজনিও ধরে নিলাম :-X ।
বাংলা চলচিত্রের বরতমানে সার্বিক যে অবস্থা, তাতে বুদ্ধিজীবী মানুষ বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়।
খুবই সত্যিকথা।
—
মুক্তমনায় স্বাগতম। চলুক। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ। চেষ্টা থাকবে চালিয়ে যাওয়ার।
কেউ দেখি মাশাল্লাহ আমার নূরানী চেহারার, বেহেস্তের সিটিজেন, আল্লাহর মোস্ট ফেভারেইট মানুষদের এ ব্যাপারে দায়ী করলেন না।
একদিন ওখানে (সিনেমা হলে) যেতে চেয়েছিলাম, তীক্ষ্ণ ধারালো নখ-দন্তের, সরকারের পোষা কুত্তা বিলাইয়ের ডরে যেতে পারিনি। সংস্কৃতির কোন শাখায় এরা বিষদাত বসায় নি? এদেরকে আমি ডরাই, পাবলিক ডরায়, সরকারও ডরায়। ভাল একটি লেখা, সত্য একটি কাহিনি লিখতে হলেও লেখক এদের কথা মাথায় রেখে লিখতে হয়।
সরকার যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তাহলে আমাদের চলচিত্র জগতে পরিবর্তন সম্ভব নয়।
@আকাশ মালিক,
আসলে, আসল কথাটা একেবারেই ওঠেনি। আমাদের দেশে যেকোনো সাংস্কৃতিক উন্নয়নের বড় বাধা নূরানী চাচারা। তারা বোমা ফাটানোর উত্তম জায়গা খুঁজে পায় উদীচি’র সাংস্কৃতিক সম্মেলন, ছায়ানটের বৈশাখী অনুষ্ঠানে। তাদেরকে আসলে সবাই ডরায়। ছবি তোলা, ফিল্ম বানানোর মত কাজ তাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে। তারা এসব সহ্য করতে পারেনা।
ফিল্ম খারাপ,কারণ সেখানে নায়ক-নায়িকার অবৈধ প্রেম দেখানো হয়। তাদের ধর্মানভূতির যত্ন রাখতে গিয়ে সরকার ফিল্ম-সেন্সর বোর্ড বসিয়েছে। ছবিতে নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠ যেকোনো ছবি দেশ ও জাতির জন্য গজব বয়ে আনবে। কিন্তু ভিলেন যখন যথেচ্ছ অশালীনভাবে নায়িকাকে ধর্ষন করে সেই সীন সেন্সরের চোখেও পড়েনা। আর নূরানী চাচারা ঐ সীন রসিয়ে রসিয়ে দেখে। এই তাদের দর্শন!!
মুক্তমনায় স্বাগতম পাপিয়া।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো ধরনের আশা করা ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন ধরেই। বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে একটা পুরো প্রজন্ম। এর ছাপ পড়েছে চলচ্চিত্র জগতেও। যেখানে এই মুহুর্তে কলকাতা থেকে অন্তত প্রায় আধা ডজন বাঙালি পরিচালক নিয়মিত বিশ্বমানের চলচ্চিত্র তৈরি করছেন, সেখানে আমাদের এক সবেধন নীলমণি তারেক মাসুদ ছাড়া আর কেউ নেই। ওরা যেখানে জাপানিজ ওয়াইফ নিয়ে বিশ্ব কাপাচ্ছে, আমরা সেখানে মনপুরার মত মাঝারি মানের এক টেলি ফিল্ম নিয়ে মাতামাতি করে দিন কাটাচ্ছি।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য। :rose:
তবে একটা বিষয়ে খুব বেজার হলাম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছেন দেখে। মনপুরা হয়তো মধ্যমমানের। কিন্ত তাই বলে আর ছবি হচ্ছেনা তা নয়। সমস্যা হচ্ছে আমাদের, যারা বাকিগুলো চোখে দেখছিনা, শুধু মনপুরা নিয়েই নাচানাচি করছি। আমরা খবরই রাখিনা কত মেধাবী পরিচালক পয়সার অভাবে ভালো কাজ দেখাতে পারছেন না। চলে যাচ্ছেন ফ্রান্স, ইউরোপ বা স্টেটস এর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজে, কেউ তাঁদের আলাদাভাবে সেখানে চিনতেও পারছেনা। শুধু তারেক মাসুদ কেন, তানভীর মোকাম্মেলের মত ডিরেক্টরও তো আছেন। তাঁর “স্বপ্নভূমি/ প্রমিসড ল্যান্ড” দেখে আমি হতবাক ছিলাম। আমাদের দেশে বসবাসরত বিহারীদের লাইফ-স্ট্রাগল নিয়ে ডক্যুমেন্ট্রী ছিল ওটা। ওই ফিল্ম দেখার আগ পর্যন্ত আমার ধারণাও ছিলনা আমরা বাঙ্গালীরাও কতটা নির্মম ছিলাম।
অনেক ছবি ভেতরে ভেতরে তৈরী হচ্ছে, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজী’র জন্য যেগুলো ধরা খেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক টেলিফিল্ম হচ্ছে যেগুলোর থীম, সিনেম্যাটোগ্রাফী, লাইট এডিটিং এক কথায় অপূর্ব। এ ব্যাপারে আমি বলব তরুন পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের কথা। তাঁরই কাহিনী,চিত্রনাট্য,পরিচালনা, আবহ সংগীত, লাইটিং আইডিয়া’র অসাধারণ ফসল “রোদ মেখো সূর্যমুখী”। A+ গ্রেড।
আরও আছেন অনিমেষ আইচ। ওনার ” গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প” পুনের ফিল্ম ফেস্ট এ বাজিমাৎ করে দিয়েছে। দর্শক অনুরোধ করে বসেছিল অন দ্য স্টেজ তাঁর সাথে ফোনালাপ করানোর জন্য।
ফিল্ম ইন্সটিট্যুট আর মাস কম্যুনিকেশনের স্টুডেন্ট’রা বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের রীতিমত বিরক্ত করে যাচ্ছে ঐ ফিল্মটির কপি পাওয়ার জন্য। ভারতের পত্রিকা সাংবাদিক “সকাল টাইমস”, “দৈনিক জাগরণ” এর রিপোর্টারও আছেন এ লিস্টে। এ তো আমাদের অহঙ্কার আবার লজ্জাও।
কারণ বাইরের পৃথিবীর কাছে যে কাজগুলো সম্মানিত হচ্ছে আমরা তার খবরই রাখিনা।
এই মূহুর্তে আমাদেরই দায়িত্ব পড়ে গেছে এই ধারাটিকে পুরোপুরি জীবন্ত করে তোলার।
মন্তব্যটি খুব দীর্ঘ হয়ে গেল।দুঃখিত।
সহমত আপনার সাথ।ে ভালবাসা থাকল
@mashiur,
ধন্যবাদ।
@পাপিয়া চৌধুরী,
বাংলাদেশের চলচিত্র, বিষয়ে আপনার সঙ্গে শতভাগ একমত। একটা বিষয়ে শুধু বলতে চাই, তাহলো বাংলাদেশ চলচিত্রের কারিগরি অংশের দুর্বলতা। আমার মত, আপনিও একমত হবেন…… এরকম নীলচে রং-এর প্রিন্ট দিয়ে আর যাই হোক, র্বতমান র্দশককে সিনেমা হলে আনা, প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া, সিনেমা-হল গুলির র্দুরবস্থা অনেকটা বোঝার উপর শাঁকের আঁটি। নিম্নমানের তথা পুরাতন প্রোজেকশন যন্ত্র, আর প্রায় অসহনীয় হলের ভিতরের পরিবেশ, মধ্যম-আয়ের র্দশককে সিনেমা হল বিমুখ করেছে। আমার ব্যক্তিগত মতামত শুধু এই দুটি দিকে নজর দিলেই মুল-বানিজ্যিক ধারার চলচিত্রে পরির্বতন আশা সম্ভব।
@রুদ্র ফীরাখ/
//এরকম নীলচে রং-এর প্রিন্ট দিয়ে আর যাই হোক, র্বতমান র্দশককে সিনেমা হলে আনা, প্রায় অসম্ভব।//
:yes:
@রুদ্র ফীরাখ,
নীলচে প্রিন্টকে কালারে নিয়ে আসলেও এসব ছবি দর্শক খাবেনা। সাথে সাউন্ড এডিটিং অনেক বড় ব্যাপার। মহাসুন্দর সেট বানিয়ে ছবি শ্যুট করলাম, কিন্তু শব্দের সামঞ্জস্য নেই তো সব মাঠে মারা যাবে বৈকি।
প্রিন্ট এর কথা যদি বলেন, তো ফুজি’র ভেলভিয়া-৫০ দিয়েও ভিভিডে ছবি বানানো সম্ভব। ২০ মিমি থেকে ৩৫মিমি সব সম্ভব।আইএসও ৯৯ অবধি সেন্সিটিভিটি পসিবল। আর এখন যুগ যেখানে এগিয়ে গেছে,গত ৩ বছর ধরে বেস্ট একাডেমী এওয়ার্ড ফর সিনেম্যাটোগ্রাফী গেছে ডিজিটাল ফিল্ম এর কাছে। ডিজিটাল এর ঝামেলা কম। এনালগাস স্ট্রীমে স্টোর করতে হচ্ছে ফিল্ম-রীল এ, আবার রাখ নিয়ে লাইটপ্রুফ,ওয়েট ওয়েদার রুমে। খুব বেশিদিন রেখেও দেয়া যায়না, শুভস্য শীঘ্রম বলে প্রিন্ট বের করে ফেলতে হয়। কত ঝক্কি। ডিজিটালে এসব কিছুই ভাবনা নয়। আপনার হার্ডডিস্ক থেকে শুরু করে ফ্লাশ মেমোরী যেকোনো কিছুই হতে পারে ছবির জন্য সেফ প্লেস। একবার যদি প্রেক্ষাগৃহগুলোর কাছে ডিজিপ্লে টেক চলে আসে তো ফিল্ম দেখা অন্যতম বিনোদন হয়ে উঠবে বাংলাদেশে।
আর লোক একবার আসতে শুরু করলে হলের চেহারাও বদলাবে।নাহলে টিকেটের দাম বাড়াবে কি করে ওরা।
সমস্ত নির্মাতাদের কাছে হাই ডেফ- HVR, HDW ,DCR ক্যাম থাকা বাঞ্চনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।এইভাবে একবারে শট ওকে করে দিয়ে আর কত চলবে? হুমায়ুন আহমেদ এর কাহিনীগুলো অনেকক্ষেত্রে অন্যধারার ভালমানের হলেও তা থেকে তৈরী ছবিগুলো আহামরি কিছু হয়না।কারণ অতি অল্প প্রচেষ্টায় শট নিয়ে শেষ করে দেওয়া হয় বলে।
@পাপিয়া চৌধুরী,
এ বিষয়েও আমি আপনার সঙ্গে একমত। কিন্তু আমার বলার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দর্শককে আবার সিনেমা হলে ফেরত আনার প্রসঙ্গে। কারণ একটি চলচিত্র “দর্শক খাবেনা” বা “দর্শক জনপ্রিয়তা পাবেনা” এই ধারণার সঙ্গে দর্শকের সিনেমাহল-বিমুখতা এক নয়। ভাল ছবি বা মন্দ ছবি নির্ধারনের জন্যও দর্শক উপস্থিতি প্রয়োজন। ভারতে সিনেমা হলে যাওয়া, অনেকটা তাদের সংস্কৃতির অংশ। এদিকে আমাদের এখন ভাল খাবারের অভাবে থালা উঠিয়ে নেয়ার পালা চলছে। এ-মনোভাব এ শিল্পের জন্য শুভ নয়।
আমি নতুন বির্তকের জন্ম দিতে চাই না। কিন্তু আমার মতে, অন্য দেশের ছবি প্রদর্শন বন্ধ করে আমাদের চলচিত্রের কোনো লাভ হয়নি। কারণ এইসময় আমরা আমাদের চলচিত্রকে সময়োপযোগী উৎর্কষতা দিতে পারিনি। বরং দর্শককে ধীরে ধীরে সিনেমাহল-বিমুখ করেছি। অন্যদিকে পূর্ব-এশিয়ার অনেক দেশ যারা আমাদের মত সাহিত্য সম্পদশালী না হয়েও শুধুমাত্র কারিগরি উৎর্কষতা দিয়ে দর্শক ধরে রেখেছে। সেখানে হলিউড ছবির বাজার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ভারতীয় ছবির বাজার। তাই শুধুমাত্র বাংলা ছবির তাত্বিক মান উন্নত করে এশিল্পের বেঁচে থাকা একটু আশংকাজনক। তাছাড়া আপনার digital ছবির মান নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও তা প্রদর্শন করার বর্তমান প্রেক্ষাপট কিন্তু খুবই সীমিত। UK-তে এখন digital film network রয়েছে। 2k projector দিয়ে শুরু করলেও এখন তা অনেক উন্নত। কিন্তু মুলত তা cineplex-র মত ছোটো হল গুলির জন্য।
পাপিয়া,
ভারতের ফিল্মসিটি পুনেতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এর টেলিচলচ্চিত্র প্রদর্শনী উৎসব নিয়ে আমাদের জানিয়ে আপনি সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেন। ধন্যবাদ এজন্য। আপনার এমন আরও লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকব।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ আপনাকেও। আশা আছে চলচ্চিত্র নিয়ে আরো লেখার। সময় সুযোগ মত অবশ্যই চেষ্টা করব।
আপনাকে স্বাগতম। :rose:
( লেখা পোস্ট করার সময় প্যারাগুলো আলাদা করে দিবেন , তবে সুন্দর দেখাবে, সব উপরের ৩ টি প্যারার মধ্যে গ্যাপ দেন নাই)
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ, ভুল দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি প্রথম তিনটে প্যারার মধ্যে স্পেসিং ঠিক করে দিয়েছি।
আসলেই চিন্তা জাগানিয়া একটি লেখা!
ভাবতে অবাক লাগে এই বাংলাদেশে জহির রায়হান, আলমগীর কবিরের মত পরিচালকেরা বিখ্যাত ছবি বানাতেন!
মানুষ উপচে পরত সিনেমা হল গুলোতে। অনেক সময় টিকিট না পেয়ে ফিরে আসতে হত লোকেদের।
মনে পরে বান্ধবীদের সাথে “গোলাপী এখন ট্রেনে” দেখে আব্বা,মাকে বলেছিলাম ছবিটা দেখতে যেতে।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে মনে হয় হলে আর ছবি দেখিনি।
ঐসময়ই মনে হয় চলচিত্র জগতটা আস্তে আস্তে মাফিয়াদের হাতে যাওয়া শুরু
করে।সাংস্কৃতিক বর্বররা এরপর দেশের চলচিত্রজগতটাকে ডুবিয়েছে!
এখন আবার কিছু মেধাবী নবীন পরিচালক ভাল কিছু উপহার দেয়া শুরু করেছেন।সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা আসলেই দরকার দেশে সুস্থধারার চলচিত্রকে বাচিঁয়ে রাখতে।
@লাইজু নাহার,
সেই সিনেমার দিন আমরা তো কখনই দেখিনি আমাদের সময়ে এসে। তবুও ওই ছবিগুলো যখন টেলিভিশন এ দেখি তো অপূর্ব লাগে।
অনুভব হয় আপনাদের কিরকম জাগাতো এই দুর্দান্ত ফিল্মগুলো।
The pianist, Schindler’s list আর Saving privet Ryan দেখে যখন মাথা নষ্ট তার পরেই আপনার পোষ্টটা পড়া হল আর অবধারিতভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের(আসলেই কি??) হালচালও মনে পড়ল। কি বলব, অদ্ভুদ লাগে। আমাদের ইয়াং জেনারেশনের প্রিয় পরিচালক হল, মুস্তাফা সারোয়ার ফারুকি। হাসব না কাঁদব বোঝা মুশকিল!!
অনেক ধন্যবাদ তারেক মাসুদের কথা বলার জন্যে। হ্যটস অফ টু হিম। বস পাবলিক। তার মাটির ময়না আর নিরন্তর দেখে আমি পুরা ফ্যান হয়ে গেছি। অসাধারন কাজ করেন ভদ্রলোক।
কেউ যদি আগে বলত আমাদের দেশে নাটক ভালো করে তাহলে মেনে নিতাম, কিন্তু এখন কথাটা সম্পুর্ণ ফালতু লাগে। নাটক মানেই ফারুকি আর (এই মুহুর্তে নাম মনে করতে পারছি না) ঐ পাবলিকের বস্তা পচা হাসাহাসি, আর ইন্ডিয়ান সিরিয়ালগুলোর শতাব্দী ব্যাপী নাচোন কোদন। আমি সেজন্য টিভি দেখাই ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন হল। কত পারা যায়।
অনেক ধন্যবাদ বিষয়টা নিয়ে লেখার জন্য।
@সাইফুল ইসলাম,
ঠিক বলেছেন। এই ফারুকী ট্রেন্ডটা যতদিন থাকবে, ততদিন প্রতিভাবান ডিরেক্টর বা আরটিস্টের কদর থাকবেনা। অভিনয় বা দৃশ্যধারণগত কোনো নিয়মের ধারেকাছে নেই তাঁর ফিল্ম। নিয়মের বাইরে গেলেই যে তা মন্দ হবে এমন নয়, কিন্তু সমস্যা হল কোনো ওভার অল থীম থাকেনা কাজগুলোতে। কয়েকটা কাজ বেশ মনে রাখার মত ছিল গল্প নির্বাচনের দিক থেকে। যেমন – স্পার্টাকাস ৭১, কিন্তু ফিল্মি কারিগরির কথা বলতে গেলে , দেখা যায় কিছুই নেই।
কি করে এই ট্রেন্ড বন্ধ করা যায় তা নিয়ে যদি ভাবতো অন্যরা।
@সাইফুল ইসলাম,
নিরন্তর ফিল্ম তো তারেক মাসুদের না। আবু সাইয়ীদের।
@সাইফুল ফারদিন,
কি চরম ভুল বলেন তো। আমি এতদিনেও কথাটা খেয়াল করিনি। ওটা হবে, অন্তর্যাত্রা।
অনেক ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
মুক্তমনায় স্বাগতম। আশা করি এরকম বিষয় নিয়ে আরও লিখবেন ভবিষ্যতে।
দুটো বোকার মত প্রশ্ন ছিলঃ
টিভিতেও তো দৃশ্য ক্যামেরা দিয়েই ধারণ করা হয়, আর ফিল্মেও তো মঞ্চায়ন করতে হয়, না কি?
তাহলে কি টিভি চ্যানেলগুলো সিনেমা হলের চেয়ে বেশী দাম দিতে পারে?
@বন্যা আহমেদ,
ধন্যবাদ,বন্যা আহমেদ, আমার লেখার একটা টাইপিং মিস্টেক চোখে পড়ল এখন আপনার মন্তব্য পড়তে গিয়ে।
২য় বাক্যটি হবে এরকম- “নাটকের চেয়েও ফিল্মের সাথে এর সম্পর্ক বেশি।”
আমি বোঝাতে চেয়েছি – যাকে আমরা বাংলাদেশে নাটক বলে চিনি, তা মোটেও নাটক নয়, বরঞ্চ ফিল্ম। নাটক বা ড্রামা মঞ্চে অভিনীত হয়। স্ক্রিপ্ট এর বর্ণনানুযায়ী মঞ্চকে সাজিয়ে বা তৈরী করে নেওয়া হয় দর্শকের দৃষ্টি-নান্দনিকতা বা বোধগম্যতার সুবিধার্থে। অন্যদিকে ফিল্ম বরাবরই ন্যাচারাল সেটে ক্যামেরাতে ধারণ করা হয়।
অনেক সময় মঞ্চনাটকের ফিল্মিং করে রাখা হয় এবং বিভিন্ন সময় সম্প্রচারও করা হয়। সেক্ষেত্রে তাকে ফিল্ম নয়, ক্যানড্ থিয়েটার বলা হয়।
বুঝতে পারলামনা আপনি কি অর্থে বোঝাতে চাইছেন- ফিল্মে মঞ্চায়ন হয়। একটু এলাবোরেট করবেন কি?
আপনার ২য় প্রশ্ন ছিল- টিভি চ্যানেল প্রেক্ষাগৃহের চাইতে বেশি টাকা দেয় নাকি?
আসলে ব্যাপারটা হল, ডিজিটাল ছবি দেখানোর প্রযুক্তি সিনেপ্লেক্সের কাছেও নেই। বাকি হলগুলোর তো প্রশ্নই ওঠেনা। যেনতেন প্রযুক্তিতে দেখালে ওই ফিল্মের কারিগরিই বোঝা মুস্কিল হবে। কে আসবে হলে, কয় টাকারই বা টিকেট যাবে। কিন্তু চ্যানেলগুলোর কাছে কম্পিটিশন জেতার জন্য ডুবসাঁতার এর মত ছবি কিনে নেওয়াও দুষ্কর নয়। আসলে ছবিটিতে প্রডাকশনের খুব একটা লাভই হওয়ার কথা না। এমাসের শুরুর দিকে পরিচালকের একটা মেসেজ এ জেনেছিলাম “সিনেপ্লেক্স ডুবসাঁতার দেখাবে না।” ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন যে তিনি আর মাথাই ঘামাচ্ছেন না এই ছবির মার্কেটিং নিয়ে। তাই এখনও অজানাই রয়ে গেল কেন এইরকম একটা ছবির এরূপ অনাঢ়ম্বর মুক্তি।
মুক্তমনায় স্বাগত জানাচ্ছি। আপনি খুবই প্রয়োজনীয় একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল সবচেয়ে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম চলচ্চিত্রই আজ আমাদের হাতের বাইরে চলে গেছে নষ্টদের দখলে। চলচ্চিত্রের নাম যদি হয় ভালবাসা দিবি কিনা বল, বলব কথা বাসর ঘরে, মন বসেনা পড়ার টেবিলে, পরাণ যায় জ্বলিয়ারে, মাথা নষ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি তাহলে আর কি বলা যায়। এক বাংলা ছবির কাহিনি শুনলাম যেখানে নায়ক বুয়েট থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাস করে!!! :-X হিন্দি সিরিয়ালের নকলে সব চ্যানেলে কিছু ফালতু মেগা সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে(যেগুলোকা আমি বলি ‘বান্দি সিরিয়াল[বাংলা ভাষায় হিন্দি সিরিয়ালের মত ফালতু জিনিসেরও বাজে নকল]’)
গানেরও অবস্থা খুব বেশি সুবিধার না। বেশির ভাগ হলে তো ছবি দেখতে যাওয়ার পরিবেশই নেই। আর আমাদের সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ ছবিতে মৌলিক কিছু ত থাকেইনা আবার সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপারটা হয় তখন যখন দেখি বলিউডের কোন একটা ফ্লপ ছবি ৪/৫ বছর পরে এদেশে রিমেক করা হয় তখন দেখা যায় এরা একটা ফ্লপ ছবির নকলটাও ঠিকমত করতে পারেনি :-Y
বন্ধু মহলে সারাক্ষনই এইসব গান, ছবি বা নাটক নিয়ে হাসাহাসি করি ঠিকই কিন্তু বুঝতে মনের অবচেতনে সবাই এই দুরবস্থার জন্য অনেক হতাশ আর দুঃখিত হই।
তারপরও ভাল কাজ হচ্ছে কিন্তু সেগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে কই? সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা আর দেশের মিডিয়াকে দারুণ একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবার ব্যাক্তিগত সদিচ্ছা ছাড়া অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। এ ধরণের উদ্যোগগুলো আসলেই প্রশংসনীয় কিন্তু আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে করার অনেক কিছু বাকি এখনো।
বিঃদ্রঃ আবার এত ঘটনা বললাম দেখে আবার ভাববেননা যেন যে আমি সারাদিনই ফাউল বাংলা ছবি দেখি। তথ্যগুলো বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া আর ছবির পোস্টারগুলো প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাজমনি হলের পাশে জ্যামে পড়ে দেখি :rotfl:
@লীনা রহমান,
খুব হাসালেন আপনি। ছবির নামকরণ প্রশংসার(!) দাবী রাখে।হা হা।
বুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের খবর আমিও পেয়েছি। ঢালিউড এর কিং খান!! দারুন হাস্যকর গল্পের ফ্লো।তবে বেশি ভাল লেগেছে নায়কের বিদ্যাসাগরীয় স্টাইলে প্রতিবেশীর জানালার আলোতে পড়তে বসাটা। হাসতে হাসতে আমার মাথা পাগল অবস্থা।
লীনা, কেউ যদি ভাবেও বা যে আমরা বসে বসে এই বস্তা পঁচা সিনেমাগুলা দেখি তো কি আসে যায়।
সবরকমের ছবি না দেখলে ফিল্ম এপ্রিসিয়েশনের ধারণাই আসেনা। মন্দের দেখা পেলেই বোঝা যায়, ভালোর কেরামতি। কি বলেন??
চলেন আরও বেশি বেশি বাংলা সিনেমা দেখি। তখন বুঝতে পারব, আমাদের ইম্প্রুভমেন্ট কোথায় দরকার।
বাংলা সিনেমা বাঙালীরা দেখে না। গত এক বছর ধরে বাংলা সিনেমার অনেক মার্কেটিং করেছি। এখানে বেশকিছু সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত বাংলা সিনেমা আছে। প্রত্যেকটিই বেশ ভাল ছবি। কিন্ত ছবিগুলো থেকে টাকা খুব বেশী ওঠে নি। কালকেই নটবর নট আউটের ডিরেক্টর অমিত সেনের সাথে অনেক কথা হল। ছবি টা বেশ ভাল। বাংলাদেশের নতুন একটা ছেলে মোস্তাফা খুব ভাল অভিনয় করেছে। কিন্ত বক্স অফিসে মুখ থুবরিয়ে পড়েছে। ভদ্রলোক আমাকে বললেন-বিপ্লব আমার ভুল টা কোথায়?
আমি বললাম আপনি বাংলা সিনেমা বানিয়েছেন।
@বিপ্লব পাল,
দেখলাম আপনার দেওয়া লিঙ্কটি। ভাল কালেকশন। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার কথা বললেন না- ওটা বাংলা নয় শুধু যেকোনো ভাষার ছবির জন্য সত্য। ঋতুপর্ণ ঘোষের লাস্ট লিয়ার সব হলেই এসেছিলো মোটামুটি, কিন্তু চলেনি। এসব অনেক সময় ডিপেন্ড করে কাহিনী নির্বাচন এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির ওপরে। একই পরিচালকের চোখের বালি অনেক ধামাকা করে চলেছিল, কেউ কিচ্ছু বোঝেনি, কি ছিল মূলভাব। কিন্তু তাও লাফিয়েছে, কারণ ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই ছিলেন। লাস্ট লিয়ার এও অবশ্য একই ব্যাপার- বচ্চন থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় মুখ ছিল। কিন্তু ধামাকা ছিলনা।
আমাদের ওরিয়েন্টটাই এক আজব কিসিমের। ঢোলের বাদ্যি না পড়লে নাচই ওঠেনা।
মুক্তমনায় স্বাগতম, পাপিয়া!
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ।