[অনেকদিন ধরেই ভাবছি ব্যাপারটা নিয়ে, মানুষের বিবর্তন নিয়ে পড়তে এবং লিখতে শুরু করার পর প্রশ্নগুলো আরও বেশী করে সামনে চলে আসছে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে মুক্তমনায় জমজমাট তর্কগুলো দেখে মনে হল এ নিয়ে আরেকটা আলোচনা হলে মন্দ হয় না। মুশকিলটা হল প্রশ্নগুলো যত জোরালো হয়েছে ভাবনাগুলো ততই যেন ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এই লেখাটা আসলে কোন লেখা নয়, আমার কতগুলো চিন্তা এবং প্রশ্নের সমষ্টি। নির্দ্বিধায় ছুরি চালান, আপত্তি জানান, বিশ্লেষণ করুন, বিতর্ক করুন এবং ভুল হলে ধরিয়ে দিন ……]

অটযি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তীর ধনুক হাতে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই, সামনে নদীর ধারে চড়ে বেড়ানো বাইসনের পালটির প্রত্যেকটি জীবকেই যেন আদ্যপান্ত মেপে ফেলেছে সে। পালের সামনে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো নধরতম বাইসনটিকেই শিকার করবে সে আজকে। অটযির বয়স খুব বেশী না হলেও এর মধ্যেই সে দলে দক্ষ শিকারী হিসেবে নাম কুড়িয়ে ফেলেছে, শ্রেষ্ঠ শিকারীর জায়গাটা করে নিতে মনে হয় আর বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না। ক’দিন আগেই বড় বড় শিংওয়ালা হৃষ্টপুষ্ট হরিনটা শিকার করার পর হৈচৈ পড়ে গেছে দলের মধ্যে, আজ সে আরও বড় কোন শিকারের অপেক্ষায় আছে। আর সেজন্যই দলবল নিয়ে এতদূর এসেছে বাইসনের বড় দলটাকে অনুসরণ করে। তার চোখ স্থির হয়ে গেল নাদুসনুদুস পালের গোদা বাইসনটির উপরে, খুব শান্তভাবে তীরটা পড়ালো ধনুকে,কয়েকবার এদিক ওদিক করে নিশানা ঠিক করে নিল খুব সাবধানে, তীর ছুটে চললো সাই সাই করে……

otzi_museum-belesta

ছবি১. ফ্রান্সের মিউজিয়াম বেলেস্তায় বরফমানুষ অটযির প্রতিকৃতি

আমাদের প্রজাতির যে কোন আদি শিকারীই হতে পারে এই অটযি,সে বিবর্তনের ধারায় বিকশিত হোমো স্যাপিয়েন্সদেরই একজন । আমরা যে নরবানর থেকে বিবর্তিত হয়ে এখানে এসেছি এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ ফুরিয়েছে বহু আগেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে নরবানরদেরই আরেক প্রজাতি আমরা, আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জির বংশগতীয়ভাবে পার্থক্য মাত্র শতকরা দেড় ভাগ।বেশীরভাগ অন্ত-প্রজাতীয় সদস্যদের মধ্যেই সাধারণত এর চেয়ে বেশী বংশগতীয় পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই দেড় ভাগ বংশগতীয় পার্থক্যের কারণেই, গত ষাট লক্ষ বছরে আমাদের সাথে অন্যান্য বনমানুষ প্রজাতির এতখানি পার্থক্য হয়ে গেছে যে আজ আমাদের নিজেদেরকে শিম্পাঞ্জির সাথে এক কাতারে ফেলে দেখতে কষ্টই হয়। গায়ের লোম হারিয়ে গেছে, দ্বিপদী হয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে শিখেছি, উন্মুক্ত দুই হাতের যথেচ্ছ ব্যবহার শিখেছি, আমাদের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের মস্তিষ্কের আকার বেড়ে গেছে প্রায় চার গুণ, আর সেই সাথে সাথে বিপ্লব ঘটে গেছে আমাদের বুদ্ধিমত্তায়, চেতনায়। প্রাকৃতিক নির্বাচনই আমাদেরকে এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়ে সুস্থিত করেছে। কিন্তু তারপর যা ঘটেছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব – ভাষা, কৃষি, পশুপালন,শিল্প, প্রযুক্তি, নৈতিকতা, ধর্ম, গান বাজনা, সমাজ এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা এমন এক জটিল কালচারাল বা সাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্ম দিয়েছি যা এই সাড়ে চারশ’ কোটি বছরের পৃথিবীর বুকে আর কখনও ঘটেনি।

অটযিরা কিন্তু ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, আর যতই তারা তাদের খুলির মধ্যে ধারণ করা ~১৩০০ সিসির নরম বস্তুটির ব্যবহার রপ্ত করেছে ততই যেন প্রাকৃতিক নিয়মগুলোকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। আর কোন প্রাণী এভাবে প্রকৃতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর ক্ষমতা রাখে না। প্রকৃতিই আমাদের তৈরি করেছে অথচ আমরাই আবার উলটো প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে চলেছি। প্রকৃতি এবং মানুষের এই নিরন্তর দ্বন্দের মাঝেই কি তাহলে মানব সভ্যতার বিকাশের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে? আমরা এখন জানি যে, নির্দিষ্ট পরিবেশে যোগ্যতররাই টিকে থাকে, যারা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী তো হরিনের পালে তো সেই শক্তিমান হরিনেরই টিকে থাকার কথা যে তার দলের অন্যান্য সদস্যের থেকে সামনে এগিয়ে থেকে নিজেকে চিতার থাবা থেকে রক্ষা করতে পারে! কিন্তু অটযিরা কি সেই নিয়মকে মেনে নিয়েছে?

তারা নিজেরা তো মেনে নেয়ইনি, আশে পাশের পরিবেশকেও যখন যেভাবে পেরেছে দুমড়ে মুচড়ে নিজেদের মত করে বানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছে। তীর ধনুক বর্শা হাতে অটযি কিন্তু চোরের মত ওৎ পেতে থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দুর্বল প্রাণীটিকে ধরার চেষ্টা করেনি, তারা তাক করেছে পালের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং যোগ্য সদস্যটিকেই। যুগের পর যুগ ধরে এভাবে পালের সেরা প্রাণীগুলোকে বধ করতে থাকলে বিবর্তনের ধারায় সেই প্রজাতির কোন সদস্যরা টিকে থাকার সুযোগ পায়, ভেবে দেখেছেন কি? এখানে কি বিবর্তনের উপর খোদকারী করা হচ্ছে না? ইচ্ছেই বলুন আর প্রয়োজনই বলুন, এখানে কি মানুষের হাতেই জৈবিক বিবর্তনের নিয়ম পালটে যাচ্ছে না? শুধু ‘শিকার’ই নয়, কৃষি, পশুপালনও একইভাবে হস্তক্ষেপ করেছে বিবর্তনের ধারায়। আট -দশ হাজার বছর আগে পশুপালন শুরু করার পর প্রণালীবদ্ধভাবে কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে পশুদের বংশবৃদ্ধি করা হয়েছে। সবচেয়ে কম ভরণপোষনে সবচেয়ে বেশী দুধ বা মাংস সরবরাহ করতে পারবে বা ভারবাহী পশু হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন পশুদেরই গৃহপালিত পশুতে পরিণত করা হয়েছে।এখানে কিন্তু প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারার যোগ্যতা নয়, বরং আমাদের প্রয়োজনকেই মূখ্য হিসেবে দেখা হয়েছে। এভাবে ক্রমাগতভাবে কৃত্রিমভাবে প্রজননের ফলে আজ এদের অনেক প্রজাতিই প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে টিকে থাকার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে। একই কথা প্রযোজ্য নির্বাচিতভাবে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের ফলন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও।

কিন্তু চলুন, আজকের আলোচনার জন্য আশে পাশের গাছপালা, পশুপাখি, পরিবেশের কথা না হয় বাদই দেই। এই লেখাটিকে বরং মানব বিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি। আমরা যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে টেক্কা দিয়ে অনবরত চারপাশের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছি সে নিয়ে আমাদের কারও মধ্যে দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। আমরা অন্যান্য সব প্রাণীর মতই বিবর্তনের ফসল এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে আমাদের বিবর্তনের ধারা যে বেশ কিছুটা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে সেটাও বোধ হয় অস্বীকার করার উপায় নেই। এটাই হয়তো মানুষের বিবর্তনের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্যারাডক্স। আমাদের জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলো জৈবিক বিবর্তনের ফলেই তৈরি হয়েছে, কিন্তু তার ফলশ্রুতিতে যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক যে বৈশিষ্ট্যগুলোর উদ্ভব ঘটেছে তার কতটুকু জৈবিক বা বংশাণু দিয়ে নির্ণিত আর কতটুকুই বা আমাদের নিজ হাতে তৈরি সংষ্কৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?

bilogical-vs-cultural

মুক্তমনার ‘বংশাণু নির্ণয়বাদীরা’ আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে একটা জিনিস পরিষ্কার করে নেই,এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই যে সাংস্কৃতিক বিবর্তন ঘটানোর জন্য যে কাঁচামালের প্রয়োজন তার উদ্ভব ঘটেছে জৈবিক বিবর্তনের ফরলশ্রুতিতেই।(এখানে আমি দুটো কারণে আলাদা করে সমাজতত্ত্ববিদদের কথা টানছি না, প্রথমতঃ মুক্তমনায় তাদের আনাগোণা তেমন নেই, তাই তাদের কাছ থেকে তেমন কোন বিতর্কও আশা করছি না। আর দ্বিতীয়ত আমি নিজেই যেহেতু জৈবিক বিবর্তনকে বাদ দিয়ে মানব সমাজের বিকাশের ব্যাখ্যা দেওয়াকে ভুল মনে করি তাই এখানে সেই প্রসংগটা তুলে এনে লেখার পরিসর আর বাড়াতে চাইনা। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করলে মানব সমাজে জৈবিক বিবর্তনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকা কতটুকু আছে বা আদৌ আছে কিনা এ নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই লেখাটার সূত্রপাত। ভাষার কথাই ধরুন, জৈবিক বা বংশগতীয়ভাবে ভাষার ব্যবহারের জন্য বংশগতীয় এবং ফিনোটিপিকভাবে যে পরিবর্তন প্রয়োজন তা না ঘটলে আমরা কথাই বলতে পারতাম না।আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন একটা শিম্পাঞ্জিকে আমাদের মত করে ভাষার ব্যবহার শিখাতে পারবেননা। কিন্তু ভাষার ব্যবহার শুরু হওয়ার পর তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যে জটিল এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি তা নিশ্চয়ই আমাদের চিন্তাভাবনা,আচার আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক, নৈতিকতায় আমুল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এখন এই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের কতটুকু বংশাণু দ্বারা নির্ণিত আর কতখানি সাংস্কৃতিকভাবে প্রোথিত বা কতখানি একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে? অর্থাৎ যা বলতে চাচ্ছি তা আজকের কম্পিউটারের হার্ডওয়ার এবং সফটওয়ার এর ধারণার সাথে মিলিয়ে বলতে গেলে বলা যায় যে, আমাদের মূল হার্ডওয়ারটা যে জৈবিক বিবর্তন থেকে এসেছে সে নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু তার উপর ভিত্তি করে যে সফটওয়ারগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো কি আজ এমন একটা অবস্থায় চলে গেছে যে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা হার্ডওয়ারের সীমাকে অতিক্রম করে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে? আবার, কোন কোন ক্ষেত্রে উলটোভাবে হার্ডওয়ারের বিবর্তনকেই প্রভাবিত করছে? অর্থাৎ, এখানে আমরা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি,

• ১) মানুষের বিবর্তনে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকা কতখানি?

• ২) জৈবিক বিবর্তন যেমন আমাদের চিন্তা ভাবনা এবং সংষ্কৃতিকে প্রভাবিত করে ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক বিবর্তনও কি উলটো জৈবিক বিবর্তনের ধারাকে প্রভাবিত করতে পারে?
• ৩) জৈবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আজকে আমরা কি এমন কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছি যার ফলশ্রুতিতে মানুষ জৈবিক বিবর্তনের প্রভাবের বাইরে গিয়েও সামাজিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
• ৪) আমাদের সব সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা বা নৈতিকতাকেই জৈবিক বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা কি অপরিহার্য নাকি সঠিক? নাকি কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যকে শুধুই সাংস্কৃতিক বিব্ররতন দিয়েই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?

প্রায়ই আমরা এই দুই বলয়ের দুই মেরুতে অবস্থান নেই।সমাজতত্ত্ববিদেরা বলবেন সবই পরিবেশের উপর নির্ভরশীল, কে কোন পরিবেশে বড় হল তার উপরই নির্ভর করবে মানুষের আচার, ব্যবহার,সামাজিক রীতিনীতি, দৃষ্টিভঙ্গী! আর ওদিকে কোন কোন জীববিজ্ঞানীরা বলে উঠবেন,না না এ সবই বংশাণু দিয়েই নিয়ন্ত্রিত,সব সামাজিক আচার বা নৈতিকতার ভিত্তিই হচ্ছে জৈবিক বিবর্তন! তাই কি? ব্যাপারটা যদি এতটাই সোজাসাপ্টা হত তাহলে হয়তো এ নিয়ে এত বিতর্কেরই দরকার পড়তো না। মানুষের বিবর্তনের ৬ লক্ষ বছরের প্যানারোমিক ক্যানভাসটা তৈরি করতেও আমাদের এভাবে হিমশিম খেতে হত না। চিতা,বাদুর,হাঙর বা মাকড়সার বিবর্তনের মতই আমাদের সব সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেও শুধুমাত্র জৈবিক বিবর্তনের নিয়মের মধ্যেই ব্যাখ্যা করা যেত।পিঁপড়া বা ডলফিন বা হাতীর মত কোন কোন প্রাণীর মধ্যে বেশ জটিল সমাজের উৎপত্তি ঘটেছে, কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় তারা কিন্তু জৈবিক বিবর্তনের বেড়ির মধ্যে থেকেই তাদের সমাজ গড়ে তুলেছে। কিন্তু আমদের ক্ষেত্রেও কি একই কথা প্রযোজ্য? হয়তো আমরা বংশগতীয় এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের এক বিচিত্র সংমিশ্রণ যা আগে এই পৃথিবীতে আগে কখনো ঘটতে দেখা যায়নি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ দুইএর সমন্বয়ে আমাদের বিকাশ এতটাই জটিল রূপ ধারণ করেছে যে আজ আমাদের অনেক বৈশিষ্ট্যেরই বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অনেকেই মনে করেন প্রযুক্তির ব্যবহারই আমাদের প্রজাতিকে পৃথিবীর বুকে এতখানি সার্থক হতে সাহায্য করেছে। আমার মতে,এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা বিবর্তন বা বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা নিয়ে আলোচনার সময় এ বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেই না। একটু চিন্তা করে দেখুন,সাংস্কৃতিক বিবর্তন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রযুক্তির কথা না এনে কি উপায় আছে? আমাদের সমাজ, সভ্যতা, সংষ্কৃতির কতটুকু প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল? যুক্তির উদ্ভাবন ছাড়া আমাদের প্রজাতির বিকাশ কি এখানে এসে পৌঁছাতে পারতো? তবে এই আলোচনায় যাওয়ার আগে আগে ‘প্রযুক্তি’ বলতে ঠিক কি বোঝাচ্ছি তা বোধ হয় পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার । ‘প্রযুক্তি’ কথাটা খুব শিথিলভাবে ব্যবহার করছি। ধরুন, প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে হোমো হ্যাবিলিসেরা যখন প্রথম পাথরের অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তাকেই কি প্রযুক্তির শুভসূচনা বলে চিহ্নিত করা যায়না? হোমো ইরেকটাসরা যখন প্রথম আগুনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শুরু করেছিল সেই মূহুর্তটিকে প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করলে কি অত্যুক্তি করা হবে ? কিংবা আরও নিকট ইতিহাসের কথা ধরি, কৃষির উদ্ভব না ঘটলে আমরা বাড়তি খাদ্যের উৎপাদন করতে সক্ষম হতাম না।শহর তৈরি এবং ডিভিশন অফ লেবার গড়ে ওঠার পিছনে এই বাড়তি খাদ্য পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করেছে, না হলে, আজও আমাদের সারাদিন শিকারী সংগ্রাহক হয়ে বনে বাদারে খাদ্যের সন্ধানেই ঘুরে বেড়াতে হত। আজ যে শিল্প সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি, চিন্তা চেতনা গড়ে উঠেছে তার কিছুই হয়তো গড়ে উঠতে পারতো না। একেও আমি ‘প্রযুক্তি’র ব্যবহার বলেই গন্য করছি। নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব,উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে প্রযুক্তি এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক আমাদের সামগ্রিক বিকাশে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। নীচের আলোচনায় ‘প্রযুক্তি’ কথাটা বারবার আসবে বলে এখানে প্রযুক্তি বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাইছি তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।চলুন এবার মূল আলোচনায় ঢোকা যাক।

আজকের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে আমরা শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছি অস্বাভাবিক হারে।এখন ইমিউনাইজেশন বা প্রতিষেধক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছি তাইই নয়,উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস,ক্রনিক হার্টের রোগ বা এইডসের এর মত আত্মঘাতী রোগে আক্রান্ত শিশুদের পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখছি আমরা। আদিম কালে যেখানে ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুর পক্ষেই প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা অসম্ভব ছিল, সেখানে আমরা নিশ্চিত মৃত্যপথযাত্রী শিশুদের দিব্যি বাঁচিয়ে রেখে সুস্থ জীবন যাপন করার নিশ্চয়তা বিধান করছি। এরা বড় হয়ে বংশবৃদ্ধি করছে এবং এই মারাত্মক রোগের ‘দূর্বল’ বংশাণুগুলোকে ছড়িয়ে দিচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মে।আমাদের কোনরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া যদি প্রাকৃতিক নির্বাচনকে এখানে কাজ করতে দেওয়া হত তাহলে কি এদের বংশাণু বিস্তারের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল? এরা কিন্তু আজ দিব্যি টিকে থাকছে, বংশবৃদ্ধি করছে, পরবর্তী প্রজন্মে তাদের বংশাণুগুলোকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।মারাত্মক সব রোগবহনকারী বংশাণুগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মানুযায়ী ধ্বংস না হয়ে জনপুঞ্জে দিব্যি টিকে থাকছে এবং তার ফলশ্রুতিতে আমাদের জনপুঞ্জে এদের জিন ফ্রিকোয়েন্সি বেড়েই চলেছে। জৈবিক বিবর্তনের নিয়ামানুযায়ী বিচার করলে একে রীতিমত আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কি বা বলা যায়?

অন্যদিকে দেখুন, মেয়েদের শিক্ষা এবং সমানাধিকার যত নিশ্চিত হচ্ছে ততই উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যার হার কমতে শুরু করেছে।কোন কোন দেশে তো জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নেগেটিভএ এসে পৌঁছেছে।আর ওদিকে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে শিশু মৃত্যর হার কমিয়ে আনা এবং গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে (এবং মধ্যপ্রাচ্যে তেলের পয়সায় কিছু হঠাৎ করে ধনী হয়ে ওঠা অশিক্ষিত এবং রক্ষণশীল দেশেও) জনসংখ্যার হার বেড়ে চলেছে অস্বাভাবিক গতিতে।

population-growth-chart-from-wiki

ছবিঃ পৃথিবীব্যাপি বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (২)

তাহলে সবকিছু মিলিয়ে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে? আজকের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর সম্পদশালী বা টিকে থাকার জন্য ‘যোগ্যতম’ মানুষগুলো সচেতনভাবেই তাদের বংশাণু বিস্তার করছে না আর ওদিকে অপুষ্টিতে ভোগা,রোগে আক্রান্ত,কম সুযোগ,সুবিধা এবং সম্পদের অধিকারী মানুষেরা তাদের বংশাণু বিস্তৃত করে চলেছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। এই সচেতন সিদ্ধান্তগুলোকে আপনি বিবর্তনের আলোয় কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

প্রাকৃতিক নির্বাচনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্যকে নির্ধারণ করে চলেছি। বিবর্তনীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করলে এখানে কতগুলো খুব গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন না তুললেই নয়। উন্নত বিশ্বের এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আজকে সন্তান ধারণে অনীহা প্রকাশ করছে কিভাবে? প্রকৃতিতে অন্য কোন প্রাণী তো স্বাধীনভাবে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়! পরিষ্কারভাবেই তারা এখানে জৈবিক বিবর্তনের নিয়মের অধীনে থেকে ‘রিপ্রোডাক্টিভ সাক্সেস’ নয় বরং নিজেদের জীবনের ক্ষনিকের স্বাচ্ছন্দ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সব সিদ্ধান্তই যদি জৈবিকভাবেই নির্ধারিত হয়ে থাকবে তাহলে নিজের বংশাণুকে টিকিয়ে রাখার মত বিবর্তনের এত মৌলিক একটা বিষয়কে আমরা কি করে অবজ্ঞা করতে সক্ষম হচ্ছি? এটা তো বিবর্তনের দৃষ্টিতে হিসেব করলে রীতিমত হঠকারিতা!!ওদিকে আবার যদি চিন্তা করে দেখুন, মেয়েরা তো এই সিদ্ধান্ত একা নিচ্ছে না, পুরুষেরাও আজকে শিক্ষিত,স্বাবলম্বী মেয়েদের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে যৌন নির্বাচনের মাধ্যমেই এই ধারাটাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে!পুরুষেরাই বা কি করে নিজেদের কোটি কোটি শুক্রাণু ছড়ানোর পবিত্র বিবর্তনীয় দায়িত্বকে হেলায় দুরে সরিয়ে দিচ্ছে? আমরা তো জানি যে, জৈবিক বিবর্তনে গ্রুপ সিলেকশানের স্থান নেই। আজকে অনুন্নত দেশগুলোতে দ্রুত বংশবৃদ্ধি হচ্ছে বলে অন্যান্য অংশে বংশবৃদ্ধির হার কমে যেতে শুরু করেছে,এ ধরণের যুক্তি তো বিবর্তনতত্ত্বে খাটেনা। বিবর্তন কাজ করে বংশাণু এবং ব্যক্তি স্তরে যা আবার চক্রাকারে জনপুঞ্জের বংশাণুর ফ্রিকোয়েন্সিকে প্রভাবিত করে। তাহলে আজকে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘যোগ্য এবং সম্পদশালী’ অংশটি যে নিজেদের বংশাণুকে জনপুঞ্জ থেকে লোপাট হয়ে যেতে দিচ্ছে তাকে জৈবিক বিবর্তনের আলোয় কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?

এই সবই কিন্তু সম্ভব হয়েছে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভবের কারণে, যেটাকে আমি আবারো সেই ‘প্রযুক্তি’র অধীনেই ফেলছি। এভাবে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থার বিকাশ না ঘটলে পারলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত না ঠিক তেমনিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার আবিষ্কার না ঘটলে সম্ভব হত না মেয়েদের পক্ষে কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণ রোধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণের সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এটা আজকে ক্রমশঃ পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনই আমাদের চেতনা, বুদ্ধিমত্তার মত বৈশিষ্ট্য দিয়ে সুস্থিত করেছে যার ফলশ্রুতিতে আমরা কখনো কখনো জৈবিক বিবর্তনের খুব শক্ত করে এঁকে দেওয়া লাইনগুলোর বাইরেও ছবি আকঁতে সক্ষম। এই পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা জৈবিক নিয়মগুলোকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা রাখি যা অনেক সময়ই প্রাকৃতিক বিবর্তনের নিয়মের বিরুদ্ধেও যায়। আর প্রযুক্তির অভুতপূর্ব উন্নতির সাথে সাথে আমাদের প্রকৃতিকে টেক্কা দেওয়ার এই ক্ষমতাটাও কিন্তু লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করেছে। খেয়াল করলে দেখবেন যে,প্রাকৃতিক নির্বাচনকে আজ আমরা বিভিন্নভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছি। আমাদের যৌণ নির্বাচনগুলোও আজ এমন কিছু সাংস্কৃতিক বিকাশের উপর নির্ভর করে আছে যে তারা প্রায়শঃই বিবর্তনের নিয়মকে উপেক্ষা করে চলেছে। বংশগতিবিদ স্টিভ জোন্স এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন মোটামুটিভাবে মৃত, আমাদের উপর তার প্রভাব হয়তো শেষ হয়ে গেছে,উত্তরোত্তর আমরা নিজেরাই আমাদের ভবিষ্যতকে ‘ডিজাইন’ করতে সক্ষম হব।

আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে এভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে টেক্কা দেওয়ার বা কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করার ঘটনা কিন্তু নিতান্তই কম নয়।আগুণে খাদ্য পুড়িয়ে খাওয়া,শিকারে অস্ত্রের ব্যবহার, পশুপালন, কৃষি কিংবা গৃহপালিত পশুর দুধ খেতে শুরু করা থেকে শুরু করে আজকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পগ্র প্রজাতির গড় আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া পর্যন্ত সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর মধ্যে পড়ে।এখন প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে এই টেক্কা দেওয়ার পরিমাণ বাড়লেও বহুকাল ধরেই আমরা কিন্তু এভাবে বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে আসছি।এখানে অত্যন্ত জটিল এবং চক্রাকার একটি সিষ্টেম কাজ করে চলেছে। ধরুন, বুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য বা অভ্যাস রপ্ত করি তা আবার আমাদের জনপুঞ্জের বংশগতীয় ফ্রিকোয়েন্সিকে বদলে দিতে পারে অর্থাৎ জৈবিক বিবর্তনের গতিকেই হয়তো ঘুরিয়ে দিতে পারে। চলুন এ প্রসঙ্গে আরও কিছু মজার উদাহরণ দেখা ঘেটে দেখা যাক। প্রায় ৮ হাজার বছর আগে পশুপালন শেখার পরে আমরা যখন ব্যপকভাবে গরুর দুধ খেতে শেখা শুরু করলাম তার ফলশ্রুতিতেই কিন্তু ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু জায়গায় ল্যক্টোজ টলারেন্ট জিনের ধণাত্মক নির্বাচন শুরু হয়।এর আগে শুধু গ্যাদা বাচ্চারা ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে দুধের প্রোটিন সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না (অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে মিউটেশনের ফলে এই প্রকারণ হয়তো ছিল যা পরবর্তীতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে ধণাত্মকভাবে নির্বাচিত হতে শুরু করে)। কিংবা ধরুন আমাদের পেটের পাকস্থলী,বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের আকার অন্যান্য নরবানরদের তুলনায় অনেক ছোট। মনে করা হয় যে, উন্নত হাতিয়ার ব্যবহার করে শিকার করতে শেখার ফলে একদিকে আমাদের খাদ্যে পুষ্টির পরিমাণ যেমন অনেক বেড়ে গিয়েছিল তেমনি আবার আগুনের ব্যবহার করে রান্না করতে শেখার ফলে হজম করার জন্য আগের মত এনার্জি বা শক্তি খরচ করার প্রয়োজনও আর ছিল না।এবং তার ফলশ্রুতিতেই আমাদের পরিপাকতন্ত্রের আকার ছোট হয়ে যেতে শুরু করে।অনেকে এও মনে করেন যে এর ফলে আমাদের দেহে যে পরিমাণ এনার্জি সংরক্ষিত হয়েছিল তা সম্ভবত আমাদের মস্তিষ্কের মত একটি ‘শক্তিখেকো’ অঙ্গের বিকাশে কাজে লেগেছিল।

pcbi1000491g003

ছবিঃ গবেষনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে ৮ হাজার বছর আগে পশুপালনের কেন্দ্রস্থল থেকেই ল্যাক্টোজ সহ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর বিস্তৃতি ঘটেছিল (উৎস)।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক এবং জৈবিক বিবর্তন যে বিভিন্ন সময়েই একে অন্যকে প্রভাবিত করেছে এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অর্থাৎ, আধুনিক মানুষের বিকাশে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকাকে ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই।জৈবিক বিবর্তন আমাদের বিবর্তনের ভিত্তি হলেও সাংস্কৃতিক বিবর্তন একে অহরহ প্রভাবিত এবং অনেক সময় নিয়ন্ত্রণও করে চলেছে। আবার আমরা সাংস্কৃতিকভাবে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম যা অনেক সময় জৈবিক বিবর্তনের বিরুদ্ধেও যেতে পারে। অর্থাৎ, আমি লেখাটির প্রথম দিকে যে চারটি প্রশ্ন করেছিলাম তার প্রথম তিনটির উত্তরই পাওয়া যাচ্ছে। এখন বাকি থাকে চতুর্থ প্রশ্নটির উত্তর, আমাদের সব সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা বা নৈতিকতাকেই জৈবিক বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা কি অপরিহার্য নাকি সঠিক?

এই চতুর্থ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার জন্য আমার প্রিয় কতগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই পরবর্তী পর্বে, যেমন ধরুন, নারী অধিকার, জেন্ডার সাম্যতা, পুরুষের বহুগামিতা বনাম মেয়েদের ‘চুজি বা খুঁতখুঁতে হওয়া’, মেয়েদের পুতুল খেলা বনাম ছেলেদের বল বা গাড়ি খেলা ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে বলে আজকের মত এখানেই থামছি। পরের পর্বটা কয়েকদিনের মধ্যেই দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

[ডিস্ক্লেইমার ২: মানুষের বিকাশে জৈবিক বিবর্তনের ভূমিকাকে ছোট করাটা আমার উদ্দেশ্য নয়। মুক্তমনার পাঠকদের মধ্যে জৈবিক বিবর্তনের ভূমিকা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই বলেই এ লেখাটা লেখার সাহস পেলাম। আজকে প্রায় ৫-৬ বছর ধরে মুক্তমনায় জৈবিক বিবর্তন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং পাঠকদের মধ্যে বিবর্তনের ব্যাপারে বেশ শক্ত একটা ভিত্তি গড়ে উঠেছে। চলুন এবার আমরা তাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাই। অন্যান্য জীবের বিবর্তনের তুলনার মানুষের বিবর্তন যে কত জটিল সেটা নিয়ে আলোচনা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য ]