[অনেকদিন ধরেই ভাবছি ব্যাপারটা নিয়ে, মানুষের বিবর্তন নিয়ে পড়তে এবং লিখতে শুরু করার পর প্রশ্নগুলো আরও বেশী করে সামনে চলে আসছে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে মুক্তমনায় জমজমাট তর্কগুলো দেখে মনে হল এ নিয়ে আরেকটা আলোচনা হলে মন্দ হয় না। মুশকিলটা হল প্রশ্নগুলো যত জোরালো হয়েছে ভাবনাগুলো ততই যেন ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এই লেখাটা আসলে কোন লেখা নয়, আমার কতগুলো চিন্তা এবং প্রশ্নের সমষ্টি। নির্দ্বিধায় ছুরি চালান, আপত্তি জানান, বিশ্লেষণ করুন, বিতর্ক করুন এবং ভুল হলে ধরিয়ে দিন ……]
অটযি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তীর ধনুক হাতে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই, সামনে নদীর ধারে চড়ে বেড়ানো বাইসনের পালটির প্রত্যেকটি জীবকেই যেন আদ্যপান্ত মেপে ফেলেছে সে। পালের সামনে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো নধরতম বাইসনটিকেই শিকার করবে সে আজকে। অটযির বয়স খুব বেশী না হলেও এর মধ্যেই সে দলে দক্ষ শিকারী হিসেবে নাম কুড়িয়ে ফেলেছে, শ্রেষ্ঠ শিকারীর জায়গাটা করে নিতে মনে হয় আর বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না। ক’দিন আগেই বড় বড় শিংওয়ালা হৃষ্টপুষ্ট হরিনটা শিকার করার পর হৈচৈ পড়ে গেছে দলের মধ্যে, আজ সে আরও বড় কোন শিকারের অপেক্ষায় আছে। আর সেজন্যই দলবল নিয়ে এতদূর এসেছে বাইসনের বড় দলটাকে অনুসরণ করে। তার চোখ স্থির হয়ে গেল নাদুসনুদুস পালের গোদা বাইসনটির উপরে, খুব শান্তভাবে তীরটা পড়ালো ধনুকে,কয়েকবার এদিক ওদিক করে নিশানা ঠিক করে নিল খুব সাবধানে, তীর ছুটে চললো সাই সাই করে……
ছবি১. ফ্রান্সের মিউজিয়াম বেলেস্তায় বরফমানুষ অটযির প্রতিকৃতি
আমাদের প্রজাতির যে কোন আদি শিকারীই হতে পারে এই অটযি,সে বিবর্তনের ধারায় বিকশিত হোমো স্যাপিয়েন্সদেরই একজন । আমরা যে নরবানর থেকে বিবর্তিত হয়ে এখানে এসেছি এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ ফুরিয়েছে বহু আগেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে নরবানরদেরই আরেক প্রজাতি আমরা, আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জির বংশগতীয়ভাবে পার্থক্য মাত্র শতকরা দেড় ভাগ।বেশীরভাগ অন্ত-প্রজাতীয় সদস্যদের মধ্যেই সাধারণত এর চেয়ে বেশী বংশগতীয় পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই দেড় ভাগ বংশগতীয় পার্থক্যের কারণেই, গত ষাট লক্ষ বছরে আমাদের সাথে অন্যান্য বনমানুষ প্রজাতির এতখানি পার্থক্য হয়ে গেছে যে আজ আমাদের নিজেদেরকে শিম্পাঞ্জির সাথে এক কাতারে ফেলে দেখতে কষ্টই হয়। গায়ের লোম হারিয়ে গেছে, দ্বিপদী হয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে শিখেছি, উন্মুক্ত দুই হাতের যথেচ্ছ ব্যবহার শিখেছি, আমাদের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের মস্তিষ্কের আকার বেড়ে গেছে প্রায় চার গুণ, আর সেই সাথে সাথে বিপ্লব ঘটে গেছে আমাদের বুদ্ধিমত্তায়, চেতনায়। প্রাকৃতিক নির্বাচনই আমাদেরকে এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়ে সুস্থিত করেছে। কিন্তু তারপর যা ঘটেছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব – ভাষা, কৃষি, পশুপালন,শিল্প, প্রযুক্তি, নৈতিকতা, ধর্ম, গান বাজনা, সমাজ এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা এমন এক জটিল কালচারাল বা সাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্ম দিয়েছি যা এই সাড়ে চারশ’ কোটি বছরের পৃথিবীর বুকে আর কখনও ঘটেনি।
অটযিরা কিন্তু ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, আর যতই তারা তাদের খুলির মধ্যে ধারণ করা ~১৩০০ সিসির নরম বস্তুটির ব্যবহার রপ্ত করেছে ততই যেন প্রাকৃতিক নিয়মগুলোকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। আর কোন প্রাণী এভাবে প্রকৃতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর ক্ষমতা রাখে না। প্রকৃতিই আমাদের তৈরি করেছে অথচ আমরাই আবার উলটো প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে চলেছি। প্রকৃতি এবং মানুষের এই নিরন্তর দ্বন্দের মাঝেই কি তাহলে মানব সভ্যতার বিকাশের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে? আমরা এখন জানি যে, নির্দিষ্ট পরিবেশে যোগ্যতররাই টিকে থাকে, যারা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী তো হরিনের পালে তো সেই শক্তিমান হরিনেরই টিকে থাকার কথা যে তার দলের অন্যান্য সদস্যের থেকে সামনে এগিয়ে থেকে নিজেকে চিতার থাবা থেকে রক্ষা করতে পারে! কিন্তু অটযিরা কি সেই নিয়মকে মেনে নিয়েছে?
তারা নিজেরা তো মেনে নেয়ইনি, আশে পাশের পরিবেশকেও যখন যেভাবে পেরেছে দুমড়ে মুচড়ে নিজেদের মত করে বানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছে। তীর ধনুক বর্শা হাতে অটযি কিন্তু চোরের মত ওৎ পেতে থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দুর্বল প্রাণীটিকে ধরার চেষ্টা করেনি, তারা তাক করেছে পালের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং যোগ্য সদস্যটিকেই। যুগের পর যুগ ধরে এভাবে পালের সেরা প্রাণীগুলোকে বধ করতে থাকলে বিবর্তনের ধারায় সেই প্রজাতির কোন সদস্যরা টিকে থাকার সুযোগ পায়, ভেবে দেখেছেন কি? এখানে কি বিবর্তনের উপর খোদকারী করা হচ্ছে না? ইচ্ছেই বলুন আর প্রয়োজনই বলুন, এখানে কি মানুষের হাতেই জৈবিক বিবর্তনের নিয়ম পালটে যাচ্ছে না? শুধু ‘শিকার’ই নয়, কৃষি, পশুপালনও একইভাবে হস্তক্ষেপ করেছে বিবর্তনের ধারায়। আট -দশ হাজার বছর আগে পশুপালন শুরু করার পর প্রণালীবদ্ধভাবে কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে পশুদের বংশবৃদ্ধি করা হয়েছে। সবচেয়ে কম ভরণপোষনে সবচেয়ে বেশী দুধ বা মাংস সরবরাহ করতে পারবে বা ভারবাহী পশু হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন পশুদেরই গৃহপালিত পশুতে পরিণত করা হয়েছে।এখানে কিন্তু প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারার যোগ্যতা নয়, বরং আমাদের প্রয়োজনকেই মূখ্য হিসেবে দেখা হয়েছে। এভাবে ক্রমাগতভাবে কৃত্রিমভাবে প্রজননের ফলে আজ এদের অনেক প্রজাতিই প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে টিকে থাকার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে। একই কথা প্রযোজ্য নির্বাচিতভাবে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের ফলন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও।
কিন্তু চলুন, আজকের আলোচনার জন্য আশে পাশের গাছপালা, পশুপাখি, পরিবেশের কথা না হয় বাদই দেই। এই লেখাটিকে বরং মানব বিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি। আমরা যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে টেক্কা দিয়ে অনবরত চারপাশের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছি সে নিয়ে আমাদের কারও মধ্যে দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। আমরা অন্যান্য সব প্রাণীর মতই বিবর্তনের ফসল এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে আমাদের বিবর্তনের ধারা যে বেশ কিছুটা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে সেটাও বোধ হয় অস্বীকার করার উপায় নেই। এটাই হয়তো মানুষের বিবর্তনের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্যারাডক্স। আমাদের জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলো জৈবিক বিবর্তনের ফলেই তৈরি হয়েছে, কিন্তু তার ফলশ্রুতিতে যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক যে বৈশিষ্ট্যগুলোর উদ্ভব ঘটেছে তার কতটুকু জৈবিক বা বংশাণু দিয়ে নির্ণিত আর কতটুকুই বা আমাদের নিজ হাতে তৈরি সংষ্কৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?
মুক্তমনার ‘বংশাণু নির্ণয়বাদীরা’ আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে একটা জিনিস পরিষ্কার করে নেই,এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই যে সাংস্কৃতিক বিবর্তন ঘটানোর জন্য যে কাঁচামালের প্রয়োজন তার উদ্ভব ঘটেছে জৈবিক বিবর্তনের ফরলশ্রুতিতেই।(এখানে আমি দুটো কারণে আলাদা করে সমাজতত্ত্ববিদদের কথা টানছি না, প্রথমতঃ মুক্তমনায় তাদের আনাগোণা তেমন নেই, তাই তাদের কাছ থেকে তেমন কোন বিতর্কও আশা করছি না। আর দ্বিতীয়ত আমি নিজেই যেহেতু জৈবিক বিবর্তনকে বাদ দিয়ে মানব সমাজের বিকাশের ব্যাখ্যা দেওয়াকে ভুল মনে করি তাই এখানে সেই প্রসংগটা তুলে এনে লেখার পরিসর আর বাড়াতে চাইনা। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করলে মানব সমাজে জৈবিক বিবর্তনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকা কতটুকু আছে বা আদৌ আছে কিনা এ নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই লেখাটার সূত্রপাত। ভাষার কথাই ধরুন, জৈবিক বা বংশগতীয়ভাবে ভাষার ব্যবহারের জন্য বংশগতীয় এবং ফিনোটিপিকভাবে যে পরিবর্তন প্রয়োজন তা না ঘটলে আমরা কথাই বলতে পারতাম না।আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন একটা শিম্পাঞ্জিকে আমাদের মত করে ভাষার ব্যবহার শিখাতে পারবেননা। কিন্তু ভাষার ব্যবহার শুরু হওয়ার পর তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যে জটিল এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি তা নিশ্চয়ই আমাদের চিন্তাভাবনা,আচার আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক, নৈতিকতায় আমুল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এখন এই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের কতটুকু বংশাণু দ্বারা নির্ণিত আর কতখানি সাংস্কৃতিকভাবে প্রোথিত বা কতখানি একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে? অর্থাৎ যা বলতে চাচ্ছি তা আজকের কম্পিউটারের হার্ডওয়ার এবং সফটওয়ার এর ধারণার সাথে মিলিয়ে বলতে গেলে বলা যায় যে, আমাদের মূল হার্ডওয়ারটা যে জৈবিক বিবর্তন থেকে এসেছে সে নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু তার উপর ভিত্তি করে যে সফটওয়ারগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো কি আজ এমন একটা অবস্থায় চলে গেছে যে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা হার্ডওয়ারের সীমাকে অতিক্রম করে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে? আবার, কোন কোন ক্ষেত্রে উলটোভাবে হার্ডওয়ারের বিবর্তনকেই প্রভাবিত করছে? অর্থাৎ, এখানে আমরা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি,
• ১) মানুষের বিবর্তনে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকা কতখানি?
• ২) জৈবিক বিবর্তন যেমন আমাদের চিন্তা ভাবনা এবং সংষ্কৃতিকে প্রভাবিত করে ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক বিবর্তনও কি উলটো জৈবিক বিবর্তনের ধারাকে প্রভাবিত করতে পারে?
• ৩) জৈবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আজকে আমরা কি এমন কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছি যার ফলশ্রুতিতে মানুষ জৈবিক বিবর্তনের প্রভাবের বাইরে গিয়েও সামাজিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
• ৪) আমাদের সব সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা বা নৈতিকতাকেই জৈবিক বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা কি অপরিহার্য নাকি সঠিক? নাকি কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যকে শুধুই সাংস্কৃতিক বিব্ররতন দিয়েই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?
প্রায়ই আমরা এই দুই বলয়ের দুই মেরুতে অবস্থান নেই।সমাজতত্ত্ববিদেরা বলবেন সবই পরিবেশের উপর নির্ভরশীল, কে কোন পরিবেশে বড় হল তার উপরই নির্ভর করবে মানুষের আচার, ব্যবহার,সামাজিক রীতিনীতি, দৃষ্টিভঙ্গী! আর ওদিকে কোন কোন জীববিজ্ঞানীরা বলে উঠবেন,না না এ সবই বংশাণু দিয়েই নিয়ন্ত্রিত,সব সামাজিক আচার বা নৈতিকতার ভিত্তিই হচ্ছে জৈবিক বিবর্তন! তাই কি? ব্যাপারটা যদি এতটাই সোজাসাপ্টা হত তাহলে হয়তো এ নিয়ে এত বিতর্কেরই দরকার পড়তো না। মানুষের বিবর্তনের ৬ লক্ষ বছরের প্যানারোমিক ক্যানভাসটা তৈরি করতেও আমাদের এভাবে হিমশিম খেতে হত না। চিতা,বাদুর,হাঙর বা মাকড়সার বিবর্তনের মতই আমাদের সব সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেও শুধুমাত্র জৈবিক বিবর্তনের নিয়মের মধ্যেই ব্যাখ্যা করা যেত।পিঁপড়া বা ডলফিন বা হাতীর মত কোন কোন প্রাণীর মধ্যে বেশ জটিল সমাজের উৎপত্তি ঘটেছে, কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় তারা কিন্তু জৈবিক বিবর্তনের বেড়ির মধ্যে থেকেই তাদের সমাজ গড়ে তুলেছে। কিন্তু আমদের ক্ষেত্রেও কি একই কথা প্রযোজ্য? হয়তো আমরা বংশগতীয় এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের এক বিচিত্র সংমিশ্রণ যা আগে এই পৃথিবীতে আগে কখনো ঘটতে দেখা যায়নি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ দুইএর সমন্বয়ে আমাদের বিকাশ এতটাই জটিল রূপ ধারণ করেছে যে আজ আমাদের অনেক বৈশিষ্ট্যেরই বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অনেকেই মনে করেন প্রযুক্তির ব্যবহারই আমাদের প্রজাতিকে পৃথিবীর বুকে এতখানি সার্থক হতে সাহায্য করেছে। আমার মতে,এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা বিবর্তন বা বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা নিয়ে আলোচনার সময় এ বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেই না। একটু চিন্তা করে দেখুন,সাংস্কৃতিক বিবর্তন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রযুক্তির কথা না এনে কি উপায় আছে? আমাদের সমাজ, সভ্যতা, সংষ্কৃতির কতটুকু প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল? যুক্তির উদ্ভাবন ছাড়া আমাদের প্রজাতির বিকাশ কি এখানে এসে পৌঁছাতে পারতো? তবে এই আলোচনায় যাওয়ার আগে আগে ‘প্রযুক্তি’ বলতে ঠিক কি বোঝাচ্ছি তা বোধ হয় পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার । ‘প্রযুক্তি’ কথাটা খুব শিথিলভাবে ব্যবহার করছি। ধরুন, প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে হোমো হ্যাবিলিসেরা যখন প্রথম পাথরের অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তাকেই কি প্রযুক্তির শুভসূচনা বলে চিহ্নিত করা যায়না? হোমো ইরেকটাসরা যখন প্রথম আগুনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শুরু করেছিল সেই মূহুর্তটিকে প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করলে কি অত্যুক্তি করা হবে ? কিংবা আরও নিকট ইতিহাসের কথা ধরি, কৃষির উদ্ভব না ঘটলে আমরা বাড়তি খাদ্যের উৎপাদন করতে সক্ষম হতাম না।শহর তৈরি এবং ডিভিশন অফ লেবার গড়ে ওঠার পিছনে এই বাড়তি খাদ্য পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করেছে, না হলে, আজও আমাদের সারাদিন শিকারী সংগ্রাহক হয়ে বনে বাদারে খাদ্যের সন্ধানেই ঘুরে বেড়াতে হত। আজ যে শিল্প সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি, চিন্তা চেতনা গড়ে উঠেছে তার কিছুই হয়তো গড়ে উঠতে পারতো না। একেও আমি ‘প্রযুক্তি’র ব্যবহার বলেই গন্য করছি। নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব,উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে প্রযুক্তি এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক আমাদের সামগ্রিক বিকাশে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। নীচের আলোচনায় ‘প্রযুক্তি’ কথাটা বারবার আসবে বলে এখানে প্রযুক্তি বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাইছি তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।চলুন এবার মূল আলোচনায় ঢোকা যাক।
আজকের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে আমরা শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছি অস্বাভাবিক হারে।এখন ইমিউনাইজেশন বা প্রতিষেধক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছি তাইই নয়,উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস,ক্রনিক হার্টের রোগ বা এইডসের এর মত আত্মঘাতী রোগে আক্রান্ত শিশুদের পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখছি আমরা। আদিম কালে যেখানে ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুর পক্ষেই প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা অসম্ভব ছিল, সেখানে আমরা নিশ্চিত মৃত্যপথযাত্রী শিশুদের দিব্যি বাঁচিয়ে রেখে সুস্থ জীবন যাপন করার নিশ্চয়তা বিধান করছি। এরা বড় হয়ে বংশবৃদ্ধি করছে এবং এই মারাত্মক রোগের ‘দূর্বল’ বংশাণুগুলোকে ছড়িয়ে দিচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মে।আমাদের কোনরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া যদি প্রাকৃতিক নির্বাচনকে এখানে কাজ করতে দেওয়া হত তাহলে কি এদের বংশাণু বিস্তারের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল? এরা কিন্তু আজ দিব্যি টিকে থাকছে, বংশবৃদ্ধি করছে, পরবর্তী প্রজন্মে তাদের বংশাণুগুলোকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।মারাত্মক সব রোগবহনকারী বংশাণুগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মানুযায়ী ধ্বংস না হয়ে জনপুঞ্জে দিব্যি টিকে থাকছে এবং তার ফলশ্রুতিতে আমাদের জনপুঞ্জে এদের জিন ফ্রিকোয়েন্সি বেড়েই চলেছে। জৈবিক বিবর্তনের নিয়ামানুযায়ী বিচার করলে একে রীতিমত আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কি বা বলা যায়?
অন্যদিকে দেখুন, মেয়েদের শিক্ষা এবং সমানাধিকার যত নিশ্চিত হচ্ছে ততই উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যার হার কমতে শুরু করেছে।কোন কোন দেশে তো জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নেগেটিভএ এসে পৌঁছেছে।আর ওদিকে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে শিশু মৃত্যর হার কমিয়ে আনা এবং গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে (এবং মধ্যপ্রাচ্যে তেলের পয়সায় কিছু হঠাৎ করে ধনী হয়ে ওঠা অশিক্ষিত এবং রক্ষণশীল দেশেও) জনসংখ্যার হার বেড়ে চলেছে অস্বাভাবিক গতিতে।
ছবিঃ পৃথিবীব্যাপি বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (২)
তাহলে সবকিছু মিলিয়ে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে? আজকের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর সম্পদশালী বা টিকে থাকার জন্য ‘যোগ্যতম’ মানুষগুলো সচেতনভাবেই তাদের বংশাণু বিস্তার করছে না আর ওদিকে অপুষ্টিতে ভোগা,রোগে আক্রান্ত,কম সুযোগ,সুবিধা এবং সম্পদের অধিকারী মানুষেরা তাদের বংশাণু বিস্তৃত করে চলেছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। এই সচেতন সিদ্ধান্তগুলোকে আপনি বিবর্তনের আলোয় কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
প্রাকৃতিক নির্বাচনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্যকে নির্ধারণ করে চলেছি। বিবর্তনীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করলে এখানে কতগুলো খুব গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন না তুললেই নয়। উন্নত বিশ্বের এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আজকে সন্তান ধারণে অনীহা প্রকাশ করছে কিভাবে? প্রকৃতিতে অন্য কোন প্রাণী তো স্বাধীনভাবে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়! পরিষ্কারভাবেই তারা এখানে জৈবিক বিবর্তনের নিয়মের অধীনে থেকে ‘রিপ্রোডাক্টিভ সাক্সেস’ নয় বরং নিজেদের জীবনের ক্ষনিকের স্বাচ্ছন্দ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সব সিদ্ধান্তই যদি জৈবিকভাবেই নির্ধারিত হয়ে থাকবে তাহলে নিজের বংশাণুকে টিকিয়ে রাখার মত বিবর্তনের এত মৌলিক একটা বিষয়কে আমরা কি করে অবজ্ঞা করতে সক্ষম হচ্ছি? এটা তো বিবর্তনের দৃষ্টিতে হিসেব করলে রীতিমত হঠকারিতা!!ওদিকে আবার যদি চিন্তা করে দেখুন, মেয়েরা তো এই সিদ্ধান্ত একা নিচ্ছে না, পুরুষেরাও আজকে শিক্ষিত,স্বাবলম্বী মেয়েদের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে যৌন নির্বাচনের মাধ্যমেই এই ধারাটাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে!পুরুষেরাই বা কি করে নিজেদের কোটি কোটি শুক্রাণু ছড়ানোর পবিত্র বিবর্তনীয় দায়িত্বকে হেলায় দুরে সরিয়ে দিচ্ছে? আমরা তো জানি যে, জৈবিক বিবর্তনে গ্রুপ সিলেকশানের স্থান নেই। আজকে অনুন্নত দেশগুলোতে দ্রুত বংশবৃদ্ধি হচ্ছে বলে অন্যান্য অংশে বংশবৃদ্ধির হার কমে যেতে শুরু করেছে,এ ধরণের যুক্তি তো বিবর্তনতত্ত্বে খাটেনা। বিবর্তন কাজ করে বংশাণু এবং ব্যক্তি স্তরে যা আবার চক্রাকারে জনপুঞ্জের বংশাণুর ফ্রিকোয়েন্সিকে প্রভাবিত করে। তাহলে আজকে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘যোগ্য এবং সম্পদশালী’ অংশটি যে নিজেদের বংশাণুকে জনপুঞ্জ থেকে লোপাট হয়ে যেতে দিচ্ছে তাকে জৈবিক বিবর্তনের আলোয় কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?
এই সবই কিন্তু সম্ভব হয়েছে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভবের কারণে, যেটাকে আমি আবারো সেই ‘প্রযুক্তি’র অধীনেই ফেলছি। এভাবে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থার বিকাশ না ঘটলে পারলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত না ঠিক তেমনিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার আবিষ্কার না ঘটলে সম্ভব হত না মেয়েদের পক্ষে কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণ রোধ বা জন্মনিয়ন্ত্রণের সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এটা আজকে ক্রমশঃ পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনই আমাদের চেতনা, বুদ্ধিমত্তার মত বৈশিষ্ট্য দিয়ে সুস্থিত করেছে যার ফলশ্রুতিতে আমরা কখনো কখনো জৈবিক বিবর্তনের খুব শক্ত করে এঁকে দেওয়া লাইনগুলোর বাইরেও ছবি আকঁতে সক্ষম। এই পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা জৈবিক নিয়মগুলোকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা রাখি যা অনেক সময়ই প্রাকৃতিক বিবর্তনের নিয়মের বিরুদ্ধেও যায়। আর প্রযুক্তির অভুতপূর্ব উন্নতির সাথে সাথে আমাদের প্রকৃতিকে টেক্কা দেওয়ার এই ক্ষমতাটাও কিন্তু লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করেছে। খেয়াল করলে দেখবেন যে,প্রাকৃতিক নির্বাচনকে আজ আমরা বিভিন্নভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছি। আমাদের যৌণ নির্বাচনগুলোও আজ এমন কিছু সাংস্কৃতিক বিকাশের উপর নির্ভর করে আছে যে তারা প্রায়শঃই বিবর্তনের নিয়মকে উপেক্ষা করে চলেছে। বংশগতিবিদ স্টিভ জোন্স এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন মোটামুটিভাবে মৃত, আমাদের উপর তার প্রভাব হয়তো শেষ হয়ে গেছে,উত্তরোত্তর আমরা নিজেরাই আমাদের ভবিষ্যতকে ‘ডিজাইন’ করতে সক্ষম হব।
আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে এভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে টেক্কা দেওয়ার বা কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করার ঘটনা কিন্তু নিতান্তই কম নয়।আগুণে খাদ্য পুড়িয়ে খাওয়া,শিকারে অস্ত্রের ব্যবহার, পশুপালন, কৃষি কিংবা গৃহপালিত পশুর দুধ খেতে শুরু করা থেকে শুরু করে আজকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পগ্র প্রজাতির গড় আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া পর্যন্ত সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর মধ্যে পড়ে।এখন প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে এই টেক্কা দেওয়ার পরিমাণ বাড়লেও বহুকাল ধরেই আমরা কিন্তু এভাবে বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে আসছি।এখানে অত্যন্ত জটিল এবং চক্রাকার একটি সিষ্টেম কাজ করে চলেছে। ধরুন, বুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য বা অভ্যাস রপ্ত করি তা আবার আমাদের জনপুঞ্জের বংশগতীয় ফ্রিকোয়েন্সিকে বদলে দিতে পারে অর্থাৎ জৈবিক বিবর্তনের গতিকেই হয়তো ঘুরিয়ে দিতে পারে। চলুন এ প্রসঙ্গে আরও কিছু মজার উদাহরণ দেখা ঘেটে দেখা যাক। প্রায় ৮ হাজার বছর আগে পশুপালন শেখার পরে আমরা যখন ব্যপকভাবে গরুর দুধ খেতে শেখা শুরু করলাম তার ফলশ্রুতিতেই কিন্তু ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু জায়গায় ল্যক্টোজ টলারেন্ট জিনের ধণাত্মক নির্বাচন শুরু হয়।এর আগে শুধু গ্যাদা বাচ্চারা ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে দুধের প্রোটিন সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না (অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে মিউটেশনের ফলে এই প্রকারণ হয়তো ছিল যা পরবর্তীতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে ধণাত্মকভাবে নির্বাচিত হতে শুরু করে)। কিংবা ধরুন আমাদের পেটের পাকস্থলী,বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের আকার অন্যান্য নরবানরদের তুলনায় অনেক ছোট। মনে করা হয় যে, উন্নত হাতিয়ার ব্যবহার করে শিকার করতে শেখার ফলে একদিকে আমাদের খাদ্যে পুষ্টির পরিমাণ যেমন অনেক বেড়ে গিয়েছিল তেমনি আবার আগুনের ব্যবহার করে রান্না করতে শেখার ফলে হজম করার জন্য আগের মত এনার্জি বা শক্তি খরচ করার প্রয়োজনও আর ছিল না।এবং তার ফলশ্রুতিতেই আমাদের পরিপাকতন্ত্রের আকার ছোট হয়ে যেতে শুরু করে।অনেকে এও মনে করেন যে এর ফলে আমাদের দেহে যে পরিমাণ এনার্জি সংরক্ষিত হয়েছিল তা সম্ভবত আমাদের মস্তিষ্কের মত একটি ‘শক্তিখেকো’ অঙ্গের বিকাশে কাজে লেগেছিল।
ছবিঃ গবেষনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে ৮ হাজার বছর আগে পশুপালনের কেন্দ্রস্থল থেকেই ল্যাক্টোজ সহ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর বিস্তৃতি ঘটেছিল (উৎস)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক এবং জৈবিক বিবর্তন যে বিভিন্ন সময়েই একে অন্যকে প্রভাবিত করেছে এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অর্থাৎ, আধুনিক মানুষের বিকাশে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকাকে ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই।জৈবিক বিবর্তন আমাদের বিবর্তনের ভিত্তি হলেও সাংস্কৃতিক বিবর্তন একে অহরহ প্রভাবিত এবং অনেক সময় নিয়ন্ত্রণও করে চলেছে। আবার আমরা সাংস্কৃতিকভাবে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম যা অনেক সময় জৈবিক বিবর্তনের বিরুদ্ধেও যেতে পারে। অর্থাৎ, আমি লেখাটির প্রথম দিকে যে চারটি প্রশ্ন করেছিলাম তার প্রথম তিনটির উত্তরই পাওয়া যাচ্ছে। এখন বাকি থাকে চতুর্থ প্রশ্নটির উত্তর, আমাদের সব সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা বা নৈতিকতাকেই জৈবিক বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা কি অপরিহার্য নাকি সঠিক?
এই চতুর্থ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার জন্য আমার প্রিয় কতগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই পরবর্তী পর্বে, যেমন ধরুন, নারী অধিকার, জেন্ডার সাম্যতা, পুরুষের বহুগামিতা বনাম মেয়েদের ‘চুজি বা খুঁতখুঁতে হওয়া’, মেয়েদের পুতুল খেলা বনাম ছেলেদের বল বা গাড়ি খেলা ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে বলে আজকের মত এখানেই থামছি। পরের পর্বটা কয়েকদিনের মধ্যেই দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
[ডিস্ক্লেইমার ২: মানুষের বিকাশে জৈবিক বিবর্তনের ভূমিকাকে ছোট করাটা আমার উদ্দেশ্য নয়। মুক্তমনার পাঠকদের মধ্যে জৈবিক বিবর্তনের ভূমিকা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই বলেই এ লেখাটা লেখার সাহস পেলাম। আজকে প্রায় ৫-৬ বছর ধরে মুক্তমনায় জৈবিক বিবর্তন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং পাঠকদের মধ্যে বিবর্তনের ব্যাপারে বেশ শক্ত একটা ভিত্তি গড়ে উঠেছে। চলুন এবার আমরা তাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাই। অন্যান্য জীবের বিবর্তনের তুলনার মানুষের বিবর্তন যে কত জটিল সেটা নিয়ে আলোচনা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য ]
মূল লেখাটা মোটামুটি ভালোই বুঝেছি কিন্তু মন্তব্য পড়তে গিয়ে ভয়ে দৌড় মারতে ইচ্ছা করছে,কিছুই বুঝিনা 🙁 । সাধেই কি আমি বিবর্তনবিরোধী? মুক্তমনা বিবর্তনবিরোধী সংঘ খুলব ভাবছি,ফরিদ দা হবেন সেটার বিশেষ সদস্য।
দ্বিতীয় পর্ব তাড়াতাড়ি আসুক।
@বন্যা আহমেদ
যে তাগিদে আপনি এই লেখাটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন সেই ইন্ধন আমাকেও ভাবায়। আমি বিবর্তনের ছাত্র নই, কিন্তু আমার মনে হয় আপনার প্রশ্নগুলি যথাযথ, সেগুলোর উত্তরের প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি একমত। চেতনা ও স্বজ্ঞার আবির্ভাব ও “বিবর্তন” চিরাচরিত বিবর্তন বলতে আমরা যা বুঝি তাকে বদলিয়েছে ও ভবিষ্যতে আরো বদলাবে। মস্তিষ্কের মাঝে একগাদা ইলেকট্রন ষড়যন্ত্র করে সংকেত আদান-প্রদান মাধ্যমে “আমিত্বের” উন্মেষ ঘটালো, তার চালিকা শক্তি “অন্ধ” জীন হলেও সেই “আমি” যদি মহাবিশ্বের “অন্ধত্ব” বুঝতে পারে, তাহলে সে যে আপাতঃদৃষ্টিতে “অ্যান্টি (বা অ্যান্টাই) বিবর্তন” সিদ্ধান্ত নেবে তাতে আমার সন্দেহ নেই।
বন্যা আহমেদকে লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টি বেশ জটিল। আপনার প্রশ্নর সরাসরি উত্তর আমার কাছে নেই। আমার কাছে মনে হয়, সবকিছুর পরেও বিবর্তনই ঘটছে, কিন্তু প্রাণীর পদক্ষেপ সেই ঘটনার গতিপ্রকৃতিকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঘটনার গতিপ্রকৃতিকে যদি পরিবর্তন আমরা না করতাম আমাদের প্রযুক্তি নির্ভর ক্রিয়া দ্বারা, তাহলে কি আমরা আরো বেশি টিকে থাকতে সক্ষম হতাম? এখন কি আমরা টিকে থাকার বিচারে পিছিয়ে পড়ছি?
আরেকটা ব্যাপার যেটা। আমাদের উচিত বিবর্তন নিয়ে সোনার হরিণ পেয়ে গেছি টাইপ গর্ব না করে ব্যাপারটাকে আরো ভালো করে বোঝার চেষ্টা করা। আমার মনে হয়, আমরা ব্যাপারটা এখনো ভালো করে বুঝি না। এই না বোঝাটা আড়ালে রাখার একটা ব্যাপারও আমার মনে হয় ঘটে একটা রাজনৈতিক কারণে। আর সেটা হলো ধর্মবাদীদের সাথে বিবর্তনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যুদ্ধ করার কারণে। আমাদের বৈজ্ঞানিক আলোচনায় বা উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যথা সম্ভব মিশতে না দেয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।
আই ডি বাতিল করতে কিন্তু বিবর্তন লাগে না। আমরা যদি বিবর্তন তত্ত্ব আবিষ্কার না করতাম, তাহলেই কি আই ডি তত্ত্ব মেনে নেয়াটা উচিত ছিল? না। আই ডি বাতিল কারণ এটা বৈজ্ঞানিক প্রকল্প না। কোনো পূর্বাভাস নেই, কোনো যাচাই নেই।
আই ডি বাতিলে বিবর্তন ব্যবহার করাটার প্রিমাইসেই ভুল আছে।
এভাবে দেখলে আমাদের জন্য সুবিধা হয় বিবর্তন নিয়ে গঠনমূলক আলাপ করতে। তখন আর ডিসক্লেইমার দেবার প্রয়োজন পড়ে না।
বিভিন্ন বিবর্তনীয় ব্যাখ্যাকে নিশ্চিন্তে প্রশ্নের মুখে না ফেলতে পারলে বৈজ্ঞানিক ধারণা হিসেবে সেগুলো খোঁড়া রয়ে যাবে। আমি তো বার বার বলি, একটা বৈজ্ঞানিক প্রকল্পকে ভুল করার সুযোগ দিতে হবে, এটার মানেই ফলসিফায়েবলিটি।
বিবর্তনকে নিয়ে নিশ্চিন্তে পর্যালোচনা চলুক।
বিবর্তন বিষয়ক লেখা নিয়ে মন্তব্য করার মত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা এ বিষয়ে চর্চা আমার নেই বলে বন্যার লেখা পড়লেও মন্তব্য করার সাহস পাই না। এবারের লেখাটি দুই বার পড়ে আমার দুটো মতামত। আমার ধারণা ভুল হলে পাঠক ও বন্যা দুই পক্ষই মার্জনা করবেন।
প্রথমত —- সাংস্কৃতিক বিবর্তননের প্রভাবেই হয়ত কোন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলের মানুষ অনায়াসে কাঠি দিয়ে ভাত খেতে পারে। কেউ পারে চামচ দিয়ে, অথচ এরাই আবার নিজের হাত দিয়ে ভাত তুলতে পারে না। আবার আমরা যারা হাত দিয়ে খেতে অভ্যস্ত তারা চামচ বা কাঠি দিয়ে তুলতে পারি না জৈবিক গড়ন এক হওয়া সত্ত্বেও।
দ্বিতীয়ত —- ভাষার বেলায়ও দেখেছি অনেক ইউরোপীয়ানরা আমাদের মুখে অনায়াসে উচ্চারিত শব্দ তারা সঠিকভাবে উচ্চারণ করত পারে না। যেমনঃ সিদ্দিক সাহেবকে বলে সিদিক।
কাজেই বন্যার মতামত মেনে নেওয়ার জন্য এমন অনেক যুক্তিসঙ্গত উদাহরণ দেওয়া যাবে।
কিছু কিছু পশু-পাখীও টুল কিংবা অভ্যাসের দ্বারা বিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বোধহয় পরিবর্তন করতে সক্ষম। তবে এগুলো সরাসরি কোন ইফেক্ট রাখতে পারেনা বলেই মনে হয়। তবে পরোক্ষ ভাবে নিশ্চয়ই তা প্রভাবিত করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় কিছু কিছু পাখী শীতকালে মাইগ্রশন করার ফলে তাদেরকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় অভিযোজন করার জন্য বিবর্তত হতে হয় না।
আবার পিঁপড়া, কিংবা মৌমাছিদের ক্ষেত্রে বাসা বানানো শেখার পর সেই বাসাকে রক্ষা করা কিংবা নিজেদের ডিফেন্স মেকানিজমে যে বিবর্তন এসেছে সেগুলো তাদের বাসা বানানো শেখার আগে ছিলো না। পিঁপড়ারা পিউপাদের তাদের বাসার বিভিন্ন যায়গায় উষ্ণতা অনুযায়ী মুভ করায় এটাও একই ভাবে উদাহরণ দেয়া যায়। প্রকৃতিতে এরকম আরও অনেক উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
@হোরাস,
এটা বোধ হয় ভুল হল। মানুষের অভ্যাস, আচরণ, সংস্কৃতি বহুকাল ধরেই সিলেকশান প্রসেসকে প্রভাবিত করে আসছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে। উপরে আগুনের ব্যাবহারের ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বিশাল পরিবর্তন, বা ল্যাক্টোজ টলারেন্সের উদাহরণ দিয়েছি, এমন আরও হাজারো উদাহরণ দেওয়া যায়। ম্যাট রিডলির এজাইল জিন বইটা থেকে কয়েকটা লাইন কো্ট করার লোভ সামলাতে পারছি না,
‘ Culture itself can be ‘inherited’ and can select for genetic change to suit it. In the words of the 3 scientists most closely associated with this theory of the coevolution of genes and cultures:
A culture-led process, acting over a long period of human evolutionary history, could easily have led to a fundamental reworking of human psychological disposition.’
লেখাটি নিয়ে তর্ক বিতর্কের ঝড় বহুদূর চলে গেছে। যা যা বলার সবাই বোধ হয় বলে ফেলেছেন। আমি ভাবছিলাম ২য় পর্বের জন্য অপেক্ষা করি, তারপর একটি মন্তব্য করি। কিন্তু বিতর্ক এতোই প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে যে আলোচনায় অংশ নিতেই হচ্ছে। আমি এ লেখায় বন্যার যুক্তিগুলো এবং বিপরীত যুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করব, খুব স্পেসিফিক কোন বিষয়ে না গিয়ে।
বন্যার লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ। সেই অনাদি কাল থেকেই ‘নেচার ভার্সেস নার্চার’কিংবা বাংলায় বললে ‘প্রকৃতি বনাম পরিবেশ’ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। এখনো হচ্ছে। মানুষের কতটুকু প্রকৃতিনির্ভর আর কতটুকু পরিবেশ দিয়ে বদলানো সম্ভব – এ নিয়ে দড়ি টানাটানি সবসময়ই চলবে। আধুনিক জেনেটিক্স, এপিজেনেটিক্স, এভুডেভুসহ বিবর্তনের প্রান্তিক শাখাগুলোর উত্থানের পর বিতর্ক আরো বেড়েছে – আর প্রাণবন্ত হয়েছে। সেই সাথে আধুনিক বিশ্বে নারী অধিকার, জেণ্ডার সচেতনতা, মানবাধিকার প্রভৃতি ইস্যু বিতর্ককে আরো গতিশীল করেছে।
১) বন্যা প্রকৃতি বনাম পরিবেশের বিতর্ক খুব সহজ এবং মোটামুটি মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে লেখার প্রয়াস নিয়েছে, যদিও তার ঝোঁকটি পরিবেশের দিকেই একটু বেশী বলে অনেকের মনে হতে পারে। অপার্থিব লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। এগুলোর বাইরে লেখাটিতে এমনিতেও … “মুক্তমনার ‘বংশাণু নির্ণয়বাদীরা’ আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ার আগে…”, “ওদিকে কোন কোন জীববিজ্ঞানীরা বলে উঠবেন,না না এ সবই বংশাণু দিয়েই নিয়ন্ত্রিত”… এ ধরনের বাক্যের ইচ্ছাকৃত ব্যবহার লেখাটিতে লক্ষ্যনীয়। যদিও এমন কোন জীববিজ্ঞানী নেই (অন্ততঃ আমি দেখিনি) যারা ভাবেন সবকিছুই জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জিনের গুরুত্ব তারা বোঝেন, জিন কি করে কাজ করে তাও তারা জানেন। জিন তো পরিবেশ ছাড়া কাজ করতে পারে না। জীববিজ্ঞানীরা খুব ভাল করেই জানেন পরিবেশ থেকে সংকেত নিয়ে দেহ কিভাবে তার অভ্যন্তরস্থ জিনের প্রকাশভঙ্গিকে (genetic expression) বদলে ফেলা যায়। পরিবেশের গুরুত্ব তারা বৈজ্ঞানিকভাবে না বুঝলে কারা বুঝবেন, তাহলে ? বিবর্তন মনোবিজ্ঞান না হয় বাদ দেই, এই ব্যাপারটা না বুঝলে তো এপিজেনেটিক্স, নিউরোপ্লাস্টিসিটির গবেষণাই এগুতো না। তাহলে দেখা যাচ্ছে জিনকে পরিবেশের শত্রু বানানোটা বৈজ্ঞানিক অবস্থান নয়।
২) ঠিক একইভাবে আমি দাবী করবো, সংস্কৃতিকেও বিবর্তনের শত্রু বানানোটাও কোন বৈজ্ঞানিক অবস্থান হতে পারে না। লেখাটির শিরোনাম দেখে অনেকের মনে হতে পারে জৈবিক বিবর্তন এবং সংস্কৃতি – যেন দুটো স্বতন্ত্র বলয়। আসলে তা নয়। অপার্থিব উপরে বেশ কয়েকবারই বলেছেন যে, সংস্কৃতি আসলে বিবর্তনেরই উৎপাদ। মানুষের অনেক বৈশিষ্টই অনন্য, এয়াবং সেগুলোর সমন্বিত রূপ তৈরি করে সংস্কৃতি, কিন্তু তারপরেও সেটা আসলে জৈবিক বিবর্তনের পথেই উদ্ভুত। সেজন্যই অধ্যাপক Pierre van den Berghe বলেন –
Certainly we are unique, but we are not unique in being unique. Every species is unique and evolved its uniqueness in adaptation to its environment. Culture is the uniquely human way of adapting, but culture too evolved biologically.
এ ধরণের অভিমত আমি এর আগে দিয়েছিলাম ‘সংস্কৃতির ভুত’ নামের একটি লেখায়, বলেছিলাম –
বাঘের যেমন নখর বিশিষ্ট থাবা আছে, ক্যাঙ্গারুর পেটে আছে থলি, ঠিক তেমনি মেরুভল্লুকের গায়ে আছে পুরু পশম। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন স্ব স্ব প্রজাতির ক্ষেত্রে অনন্য বৈশিষ্টের দিকে নির্দেশ করে; ঠিক তেমনি মানব সমাজের জন্য অনন্য বৈশিষ্টের নিয়ামক হয়ে আছে মানব সংস্কৃতি। বাঘে বাঘে নখরের আকার আকৃতিতে পার্থক্য থাকলেও সেটা যেমন শেষ পর্যন্ত বাঘের নখরই, ঠিক তেমনি সংস্কৃতিতে কিছু বাহ্যিক ছোটখাট ভেদাভেদ থাকলেও সেটা শেষ পর্যন্ত অভিন্ন মানব সংস্কৃতিই। এবং এটি জৈববিবর্তনের পথেই উদ্ভুত।
৩) অপার্থিব অভিমত দিয়েছেন যে, সমাজবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয়। ওগুলো ন্যারেটিভ। সমাজবিজ্ঞানীরা সে অর্থে বিজ্ঞানী নন। একই অভিযোগ কি বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীদের জন্যও খাটে না কি? বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের অনেক কিছুই এখনো ন্যারেটিভ। তারাও সমাজবিজ্ঞানীদের মত জরিপ, গ্রাফ, ট্রেন্ড এনালাইসিস প্রভৃতির সাহায্য নিয়ে একটি উপসংহারে পৌঁছন। অনেক সময় নমুনাক্ষেত্রও থাকে খুব ছোট। তাদের এপ্রোচ অনেকসময়ই সমাজবিজ্ঞানীদের চেয়ে উন্নত কিছু নয় কিন্তু (এখনো)। সেজন্যই সংশয়বাদী জীববিজ্ঞানী ম্যাসিম পাগ্লিউসি (Massimo Pigliucci) বলেছেন, “Evolutionary stories of human behavior make for a good narrative, but not good science.”। উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন, ডেভিড বাস যে, ৩৩ টি (পরে ৩৭টি) দেশে সমীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন সঙ্গী নির্বাচনের সময় ছেলেরা এবং মেয়েরা কোন্ কোন্ সব ব্যাপারকে পছন্দনীয় মনে করে, সেগুল কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীদের মত কেবল জরিপেরই উপস্থাপন। সেটা কি সমাজবিজ্ঞানীদের চেয়ে ভাল কিছু? যদিও এই জরিপের পর শ’খানেক করে জার্নালে প্রতিবছর এই স্টাডির উল্লেখ করে দেখানো হয় যে, ছেলে মেয়েদের মধ্যে কত পার্থক্য আছে স্বভাবে কিংবা ব্যবহারে – কিন্তু কেউ বলছেন না মাত্র ৩৩ টি দেশে ছোট নমুনাক্ষেত্রের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল মোটেই শক্তিশালী কোন বিজ্ঞানকে প্রকাশ করে না। তার চেয়েও বড় কথা সাম্প্রতিক কিছু জরিপ নারী পুরুষ নিয়ে বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণার বিপরীতে গেছে মনে করা হচ্ছে –
http://www.scientificamerican.com/article.cfm?id=student-surveys-contradict-claims
যদিও এটার প্রচার বাসের জরিপের মতন দৃশ্যমান নয়। এরকম আর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন কিম হিলের গবেষনা থর্নহিলের অনুমান (ধর্ষন একটি বিবর্তনীয় এডাপ্টেশন)কে ভুল প্রমাণ করেছে…ইত্যাদি।
৪) সংশপ্তক কিছু চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বৈবর্তনিক মনোবিজ্ঞানের জন্ম হয়েছিল সংস্কৃতি ও নৃতত্ত্বের মত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য যে ক্ষেত্রে অধিবিদ্যা অথবা সমাজতত্ত্ব এপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক কথা। তিনি জন টুবি এবং লিডা কসমাইডসের কালোত্তীর্ণ বইটির (The Adapted Mind: Evolutionary Psychology and the Generation of Culture) কথা বলেছেন । এই বইটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এই বইটিকে আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিমূল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা এই বইয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মত সমাজবিজ্ঞানের প্রমিত মডেলকে (standard social science model, সংক্ষেপে SSSM) প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং সামাজিক বিবর্তন এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন রূপরেখা জৈববিজ্ঞানীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করেন। এই দৃষ্টিকোনটিকে আজ অনেকেই অভিহিত করছেন ‘মনের নতুন বিজ্ঞান’ (‘the new science of the mind’) নামে। যারা জন টুবি এবং লিডা কসমাইডসের এই ‘নতুন বিজ্ঞানের’ সাথে পরিচিত হতে চান, তারা অন লাইনে ‘Evolutionary Psychology: A Primer’ প্রবন্ধটি পড়ে নিতে পারেন (আমাদের মুক্তমনা সদস্য শিক্ষানবিস জন টুবি এবং লিডা কসমাইডসের প্রবন্ধটি নিজস্ব বিশ্লেষণ যহযোগে অনুবাদ করেছেন। সেটাও পড়া যেতে পারে –
http://blog.mukto-mona.com/?p=5036
কিন্তু তারপরেও কিছু কথা থাকে। বিবর্তন মনোবিজ্ঞান যে বিজ্ঞানের শক্তিশালি একটি শাখা হয়ে উঠছে তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু অনেক সময় সতর্ক না থাকলে ‘গ্রিডি রিডাকশনিজম’এর কারণে ভুল দিকে গবেষণা চলে যাওয়ার খুব ভাল অবকাশ থাকে। যেমন, নারীপুরুষের জৈবিক পার্থক্যগুলোকে খুব বড় করে কিংবা ‘অনমনীয়’ হিসেবে দেখিয়ে স্টেরিওটাইপিং –এর বৈধতা দেয়া, খুন, ধর্ষণ প্রভৃতিকে এডাপ্টিভ ট্রেইট হিসেবে উপস্থাথাপন করা ইত্যাদির কথা বলা যায়। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের কিছু ‘গবেষক’ এমন ‘পেপার’ও লিখেছেন যে, আফ্রিকা সহ কিছু দেশে মানুষের চিকিৎসা এবং স্বাস্থের দুর্ভোগ দারিদ্র কিংবা অর্থনৈতিক কারণে নয়, বরং ‘লো আইকিউ’ এর কারণে। ফলতঃ এগুলো শুধু ভুলভাবে উপস্থাপিত দুর্বল ‘পপ সায়েন্স’ হয়ে উঠেনি, পাশাপাশি সচেতন মানুষের মধ্যে বহু বিতর্ক তৈরি করেছে। ডেভিড বুলার এ ব্যাপারটিকে ফোকাস করে সায়েন্টিফিল আমেরিকানে একটি লেখা লিখেছিলেন –
Evolution of the Mind: 4 Fallacies of Psychology
তিনি একটি বইও লিখেছেন “Adapting Minds: Evolutionary Psychology and the Persistent Quest for Human Nature” শিরোনামে। তিনি সেখানে বলেছেন, আমাদের মন স্টোনএজ (এডাপ্টেড) ব্রেন নয়, সততঃ পরিবর্তনশীল – এডাপ্টিং।
তবে অনেক সময় ‘পলিটিকাল কারেক্টনেস’-এর কারণে ‘ফ্যাক্ট’কে অস্বীকার করা হয় – এটাও একইভাবে সত্য। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানবিরোধীদের (?!) আবার এটাতে সচেতন থাকা প্রয়োজন। আজ এপর্যন্তই থাকুক। পরের পর্ব-এর অপেক্ষায় রইলাম।
@অভিজিৎ,
সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকানের প্রবন্ধটার জন্য টাকা চাইছে। ফ্রি কোথাও আছে কি?
@রৌরব, আপনাকে ডাউনলোড করে পাঠিয়ে দেব একটু পরে।
@বন্যা আহমেদ,
বিবর্তনবাদী অভিজিৎ ও সংস্কৃতিমনা বন্যা আহমেদের কল্যাণে Evolution of the Mind: 4 Fallacies of Psychology টা পড়া হয়ে গেল। এই দুই সাপে-নেউলে ক্যাম্পের মধ্যে এরকম যৌথ উদ্যোগ আরো দেখা গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে সোনালী, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
[লক্ষ্য করলাম, এই প্রবন্ধে যে ucsb school কে তুলোধুনো করার প্রয়াস পেয়েছেন বুলার, সেই স্কুলেরই লেখা কিন্তু‘Evolutionary Psychology: A Primer’। ]
@রৌরব,
হেঃ হেঃ ucsb school যে বসে আছে তা ভাবলে ভুল হবে কিন্তু! তারাও উত্তর দিয়েছে বুলারকে! এখানে দেখুন।
আর তাছাড়া বুলারের এই আর্টিকেল সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশের পর বহু সমালোচনা হয়েছে। কিছু নমুনা আর্টিকেলের নীচে কমেন্টেই পাবেন।
তবে তর্ক বিতর্ক যে আপনার ভবিষ্যৎ সোনালী করতে পারছে, তাতেই আমি খুশি। আমার ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে তামা তামা 😥
@রৌরব,
আয়রোনিটা ভেবে দেখেছেন! বিবর্তন নিয়ে সেই ২০০৪ সাল থেকে আমিই মুক্তমনায় সবচেয়ে বেশী(এবং বোধ হয় সবচেয়ে প্রথম) লিখেছি, মুক্তমনার পুরনো সদস্যরা আমাকে টিটকারি করে ‘বিবর্তন দিদি’ ডাকে আর সেই আমিই হলাম ‘সংস্কৃতিমনা’ :-Y । এটা শুনে আর কেউ খুশী হোক বা না হোক স্নিগ্ধা যে অপার আনন্দটুকু পাবে সেটা ভাবতেই ভয় লাগছে।
জৈবিক বিবর্তনের শক্তি অনুধাবন করতে পারলে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকেনা, এ এমনই জটিল প্রক্রিয়া ! মানুষের বিবর্তন আজ যেখানে এসে পৌঁছেছে যে একে পদে পদে প্রশ্নবিদ্ধ না করে উপায় নেই। আমার মতে, যারা চোখ বন্ধ করে সব কিছুকে বিবর্তনীয় সাইকোলজির পুড়িয়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে চান বা যারা Our modern skulls house a stone age mind’ বলে শর্টকাট মারতে চান তারা বিবর্তনের জটিলতা এবং নভেলটিকে হ্য় বুঝতে পারেন না বা এড়িয়ে যেতে চান।
মাস দুই হলো, মুক্তমনায় আগমন। সময়ের অভাবে সবগুলো লেখা পড়া হয়ে ওঠে না। শিরোনাম দেখে দু’একটা লেখা-র ওপর চোখ বু্লাই। মন্তব্যগুলো পড়ি। তারপর মনে হয়, কোন একটা লেখা-র বিষয়বস্তুকে স্পষ্ট না করে, অধিকাংশ আলোচক বিষয়টিকে আরো অস্পষ্ট করে তুলেন।
প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের যতটুকু মিল, পার্থক্যটাও কম নয়। এই পার্থক্য রচিত হয় সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে। তাহলে সাংস্কৃতিক বিবর্তন নিয়ে বলতে গেলে, বলতে হবে সংস্কৃতি কি? লেখক ব্যাখ্যা করেন নি, আলোচকবৃন্দ তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারতেন। বন্যা ঠিকই বলেছেন, পাথরের ব্যবহারও প্রযুক্তি বটে, কিন্তু যে কথাটা বলেন নি, সেটি হলো সেদিনের সে প্রযুক্তি আর আজকের প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্দেশ্য এক নয়।
ধর্ম আর প্রযুক্তি কি একি মুদ্রার (গ্রহণ করা অর্থে) এপিঠ ওপিঠ নয়? যারা ধর্ম মানেন আর যারা প্রযুক্তি, একটা জায়গা তাদের মধ্যে মিল হলো এই, কোন প্রশ্ন করো না।
আল্লাতালা ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক আউলিয়া পাঠালেন, এক চট্টগ্রামেই পাঠালেন ৩৬০ জন আউলিয়া। আরো পাঠালেন যতসব মহাবীর যোদ্ধাদের। তারা শত শত বছর ভারত শাসন করলো। শাসনের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মুসলমানের সংখ্যাও বাড়লো। প্রায় ঘরে কোরান আছে, সবাই পড়তেও পারে কিন্তু বুঝতে পারে না কিছু।
আমেরিকায় আসার হিড়িক তখনো তেমন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। বাজার মধ্যপ্রাচ্যে। ঢাকার ফুটপাতগুলোতে তখন আরবী ভাষা শিক্ষা বইয়ের ছড়াছড়ি। মাত্র এক দশকের ঢেউ, আরবীটা জানলে সৌদি আরবে ভাল বেতন।
@স্বপন মাঝি,
আপনার সমালোচনাটা গ্রহন করে নিয়েই বলছি যে মুক্তমনায় বিবর্তন, বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা নিয়ে এত বছর ধরে লেখালিখি হচ্ছে যে, আবার নতুন করে এসবের সংগা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। আপনি নতুন বলে হয়তো ব্যাপারগুলো আপনার কাছে অষ্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে। তবে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করা বোধ হয় কোন লেখকেরই উদ্দেশ্য নয়, খুব বেশী হলে একে লেখকের সীমাবদ্ধতা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
না, আপনার সাথে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবেই দ্বিমত পোষণ করছি। প্রযুক্তি কখন বলেছে যে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না? আমরা প্রতিদিনই তো এক প্রযুক্তিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আরেক প্রযুক্তি গ্রহণ করছি। এ দুটোর মধ্যে টানা এনালজিটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
দুশ্চিন্তার বিষয় তো :-/ ! ওইদিকে আবার পোস্টে আপনার দেওয়া মানচিত্রে আবার দেখা যাচ্ছে হাইপারপ্রজননশীল মুসলমানেরা বংশবৃদ্ধি করে করে পুরো মানচিত্র গরম করে রেখেছে :laugh: ।
এটা এভিডেন্ট যে খুবই অল্প সময়ে আমাদের ডাইজেস্টিভ ট্রাক্ট রান্না করা মাংস খাওয়ার জন্য অভিযোজিত হয়েছে সুন্দরভাবে। আমাদের নারীদের ওর্গাজম লাভ করার অভিযোজন হয়েছে, মানুষে সেক্সুয়াল সিলেক্সনের রূপ যেটা কিনা আমি মনে করি সম্পুর্ণই পরিবর্তন করে দিয়েছে, এইরকম আরও অনেক উদাহারণই রয়েছে অভিযোজন আচরণ নির্দেশ না করে যেখানে আচরন অভিযোজন নির্দেশ করেছে। তবে এটা শুধু মানুষের বেলাতেই না। যে কোন ম্যামালেরই সমাজ ছাড়া সার্ভাইবেবিলিটি শূণ্য। অন্তত মাতৃস্নেহ লাগবেই নবজাতককে বেঁচে থাকার জন্য। সংস্কৃতিও জীবেরা ভিন্ন পরিবেশে বড় হলে শিখেনা। যেমন- চিড়িয়াখানায় একাকী বড় হওয়া বানর ভাষা শিখেনা, টুলের ব্যাবহার শেখেনা। রেসপন্সেও সমস্যা দেখা যায়। যেমন- গাধা, ঘোড়াকে ব্রিড করে করে ডোর্সাইল বানিয়ে ফেলে যেই জীবের উতপত্তি, তার আড্রেনাল রেসপন্স হয় অনেক অসংবেদনশীল। এইতো। সংস্কৃতি বিবর্তনকে প্রভাবিত করবেই। তবে মিউটেশন সিলেক্সন মাইগ্রেশন ও ড্রিফটের মতোই এটাও বিবর্তনেরই একটা ফোর্স হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছে। সমাজ থেকে বাবা-মা বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূ্ত্রে জীব শিখছে সংস্কৃতি। সেই হেরেডিটির উপরই সিলেক্সন কাজ করছে। যেমন যুগ যুগ ধরে পাদ্রি পুরুত শিখেছে কি কাজ করে আর কি কাজ করে না। নিত্য নতুন ধর্মগুলো হয়েছে আগের চেয়েও বেশী ভাইরুলেন্ট বিধায়ই বেশী ফিট। টিকে থেকেছে। আর উন্নত দেশে বংশবৃদ্ধির হার কমে গেছে কেননা আমরা সেক্সুয়ালি ডাইমর্ফিক প্রজাতি যেখানে পুরুষ কিনা ডমিনেন্ট। মেয়েরা সমানাধিকার লাভ করে এখন বলাই বাহুল্য সন্তান ধারণের মতো এতোটা যন্ত্রনাদায়ক একটি পদ্ধতিরভেতর দিয়ে যেতে চায় না, তাই। অনুন্নত দেশগুলতে কিন্তু দেখুন ঠিক এর উল্টো। তবে এতে উন্নত জাতিগুলোর আউটকম্পিটেড হয়ে যাওয়ার সেই সম্ভাবনা দেখলেন এটা বোধহয় ঠিক না। কেননা তারা প্রচুর জনশক্তি আমদানী করছে বাইরের দেশ থেকে। জনসংখ্যার স্ব্ল্প হার নিয়েই ফলে টিক আছে। এবং যেই জনশক্তি আমদানী করছে পাঁচ ছয়জেনেরেশনের মধ্যেই ইন্টারব্রিড করে করে তারা পুরোই মার্জ হয়ে যাচ্ছে। এটাতে কিন্তু লাভই হচ্ছে। আউটব্রেড জনপুঞ্জ সবসময়ই বেশী ফিট। জীববিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানে যেই সংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখছেন তাও ঠিক না বলেই মনে হয়। পাবমেড লিস্ট করে সমাজবিজ্ঞান জার্নালগুলোতে প্রকাশিত সকল প্রবন্ধ এবং মেশও (medical subject headings) তাদের ডাটাবেইজের একটি অংশে ধারণ করে সমাজবিজ্ঞানের ব্যাবহৃত সবগুলো টার্ম।
btw শিম্পাঞ্জীরা কথা বলতে পারেনা কেননা তাদের ভোকাল ফোল্ড নেই। ভোকাল ফোল্ড ছাড়া ভয়েজ বক্স এতো রকমারী পিচের শব্দ উতপদন করতে পারে না। তবে গোরিলার কিন্তু রয়েছে ৪০০এরও বেশী শব্দ ব্যাবহারের মস্তিষ্কগত ক্ষমতা http://www.youtube.com/watch?v=Pmuu8UEi2ko ।
@আল্লাচালাইনা,
একটা সিস্টেমের ভিতর ইনপুট এবং আউটপুট যদি কন্টিনেওয়াসভাবে ফিড করতে থাকে চক্রাকারে তাহলে যে কোন গিভেন মোমেন্টে সেটাকে ইনপুট কিংবা আউটপুট বলে ছেড়ে দেওয়াতেই আমার আপত্তি। এটা যদি একটা কন্টিনেওয়াস প্রসেস হয়ে থাকে তাহলে দুটোকেই বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে। এটাই বোধ হয় সংক্ষেপে আমার লেখার সারমর্ম। তবে প্রযুক্তি, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং মনোগামীতার কারণে প্রাকৃতিক নির্বাচন (Inherited differences in chances of reproduction) আজ এতটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে যে সেটাকে বিবর্তনের যে কোন বিষয়ের মধ্যে ফ্যাক্টর হিসেবে না ধরাটাও একটা বড় সমস্যা বলেই মনে হয়।
উরি বাব্বা! এত্তো কাণ্ড!! 😉
বন্যাপা,
আপনি তো বলেছিলেন এই লেখার সাথে আমার অনেক দ্বিমত হবে। কিন্তু আমি সেরকম দেখতে পাচ্ছি না। আমার তো মনে হচ্ছে আমি অনেকটা এমন মতই পোষণ করি। আর বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের যারা শুরু করেছেন তাদের মতও যে এর থেকে খুব বেশি আলাদা তাও মনে হচ্ছে না।
টুবি আর কসমাইডসের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিষয়খ প্রাইমারটা পড়ার সময় দেখেছিলাম সেখানে নেচার ভার্সেস নার্চার নিয়ে অনেক লেখা আছে। সেখানে প্রথমেই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে সেটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
৭০ লক্ষ বছরের বিবর্তনে ৯৮% সময়ই আমরা যেহেতু শিকারী সংগ্রাহক ছিলাম সেহেতু মানুষের মানসিকতার বিবর্তনে এই সময়টার বিশেষ একটা ভূমিকা থাকারই কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃতি নিজেই জৈবিক বিবর্তনে প্রভাব ফেলেছে এটাও সত্যি। তাই মনে হয় প্রতিটি বিবর্তনে জীববিজ্ঞান আর সংস্কৃতি কার ভূমিকা কতটুকু সেটা খুঁজে বের করাটাই মুখ্য। রবার্ট সেপলস্কির বক্তৃতাতেও এমন কথা ছিল। মানুষের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যের মূল নিহিত আছে জৈব বিবর্তনে যা শিম্পাঞ্জির সাথৈ অনেক মিলে যায়। কিন্তু সেই জৈব বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষ সেটাকে কতো বৃহৎ স্তরে নিয়ে গেছে সেটাই সাংস্কৃতিক বিবর্তনে আলোচ্য মনে হয়।
লেখাটা যখন আরও স্পেসিফিক হবে অর্থাৎ কোন বিবর্তনে সংস্কৃতির ভূমিকা কতটুকু তখন বোধহয় বিতর্ক জোড়ালো হবে।
@শিক্ষানবিস, তুমি তাহলে আস্ট্রিয়াবাসী হয়ে বিদ্যাশের মাটিতে মৃত্যবরণ কর নাই :laugh: । এতদিন পর হাইবারনেশন থেকে উঠে যে আসছো তার জন্য শুভেচ্ছা জাইনো। গায়ের রঙ আর রেস নিয়া তোমার লেখাটা কই?
@বন্যা আহমেদ,
বৈবর্তনিক মনোবিজ্ঞানের জন্ম হয়েছিল সংস্কৃতি ও নৃতত্ত্বের মত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য যে ক্ষেত্রে অধিবিদ্যা অথবা সমাজতত্ত্ব এপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। একই কারনে আধুনিক পদার্থবিদ্যার উৎপত্তি মহাদেশীয় দর্শনের ধ্বংসাবশেষের উপর। বৈবর্তনিক মনোবিজ্ঞান কোন কিছুর উত্তর এখন পর্যন্ত না দিতে পারলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে উত্তর না মেলা পর্যন্ত। একই জিনিষ প্রযোজ্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক জটিলতা সমূহের ক্ষেত্রে যেখানে ভবিষ্যৎ গবেষণার ফলাফলের অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোন বৈজ্ঞানিক সমাধান আমাদের সামনে নেই। যে কোন পরিস্থিতিতে অধিবিদ্যা বা মহাদেশীয় দর্শনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ বিজ্ঞানের নেই। আপনার ব্যস্ত পঞ্জিকায় ফুরসৎ মিললে ,The Adapted Mind: Evolutionary Psychology and the Generation of Culture বইটা অথবা এর সারাংশ পড়ে দেখতে পারেন।
@সংশপ্তক,
এতদিন ধরে মুক্তমনায় বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে লেখার পরে অধিবিদ্যা বা মহাদেশীয় দর্শনে ফিরে যাওয়ার দাবী জানাচ্ছি শুনতে একটু খারাপই লাগলো। আমার মতে যে কোন ডিটারমিনিজম খারাপ, যদি না সেটার পক্ষে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকে। আমি আসলে মনে করি না বিজ্ঞানের পদ্ধতি মেনে সমাজবিজ্ঞানের গবেষণাগুলো যদি এগিয়ে যেতে পারে তাহলে সেটাকে অধিবিদ্যা বা মহাদেশীয় দর্শনের আওতায় ফেলতে হবে। আমার মতে সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যাগুলো বিজ্ঞানের সীমার মধ্যে থেকেই করা যেতে পারে, আমাদের জিনের ইলাস্টিসিটি এবং প্লাস্টিসিটিগুলো না বুঝতে পারাটাই বরং আমার কাছে অবৈজ্ঞানিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়। যারা ‘ …”Our modern skulls house a stone age mind” বলে সব কিছুর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন তাদের জ্ঞানকে সীমিত বলে মনে হয়। কিছুদিন আগে এভু ডেভু নিয়ে একটা দীর্ঘ সিরিজ লিখেছিলাম, জিনের ফ্লেক্সিবিলিটি এবং বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে তার প্লাস্টিসিটি দেখে আশ্চর্য না হয়ে উপায় থাকে না। সেখানে দুই এক লক্ষ বছরের হানটার গ্যাদারার যুগের মধ্যে সব কিছুকে আটকে দেওয়াটাকে কেমন যেন লিমিটেড বলে মনে হয়। এর পরের পর্বে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইলো।
@মুক্তমনা এডমিন,
কথাগুলো মুক্তমনা এডমিনের বক্তব্য হল কী করে? :-/ :-/
@আকাশ মালিক, দোষটা আমার না মুক্তমনা এডমিনের 🙂 । জনৈক এডমিন আমার ল্যাপটপে এডমিন হিসেবে লগ ইন করে কাজ করেছিল, লগ আউট করেনি, সেটা না দেখেই মন্তব্য করতে শুরু করেছিলাম :-Y । আমার আসলে দেখে নেওয়া উচিত ছিল, দুঃখিত।
@বন্যা আহমেদ, :laugh: :laugh:
@বন্যা আহমেদ,
আরে না, কী যে বলেন বন্যাদি, আমি কি না জেনে ও কথা বলেছি, দুঃখিত বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? বিগত কয়েক ঘন্টা গরম গরম মন্তব্য পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম। ভেজালের দুনিয়া তো, দেখলাম ফরিদ ভাইয়ের চোখে পড়ার আগে সতর্ক করে দেই। দোয়া করবেন, আপনার এই লেখাটিকে সামনে রেখে একটি গল্প লেখার ইচ্ছে জেগেছে। আমার দাদা থেকে আমার সন্তান পর্যন্ত এই জনমে যা পরিবর্তন, না বিবর্তন দেখলাম, সে সব জৈবিক না সাংস্কৃতিক তা বুঝে নিতে হবে। কারণ সেদিন আমার দুটো মেয়ে (একটি ১৭ অপরটি ১৮) ডাইনিং টেবিলে বসে মা-বাবার সামনে নির্দ্বিধায় বলে ফেললো এমন দুটো কথা, যা আমাদের চৌদ্দগোষ্ঠির কেউ কোনদিন বলা তো দূরের কথা কল্পনাও করে নাই, তা লিখে রাখতে হবে। অবশ্য আপনার দ্বিতীয় পর্ব না পড়ে সে দিকে হাত বাড়াচ্ছিনা।
@বন্যা,
ক্ক্খী বললি?? এডমিন?! তোর ল্যাপটপে মুক্তমনা এডমিন কাজ করে কীভাবে? কই, আমরা যে এতোজন মুক্তমনা সদস্য আছি, আমাদের কারুর ল্যাপটপে তো জীবনেও কোন মুক্তমনা এডমিনকে কাজ করতে দেখলাম না?!
এধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক ব্যবহার দেখলে মনটা কেমন ভেঙ্গে যেতে চায় 🙁
নাহ, ভঙ্গুর মন নিয়েই তোকে দুইটা লাল গোলাপ দেই যাতে পরের পর্বটা তাড়াতাড়ি দিস …… :rose: :rose2:
@স্নিগ্ধা,
আরে এত ভঙ্গুর মন হলে চলে নাকি। আমরা আছি না। আপনার ল্যাপটপটাকে আমার ঠিকানায় মেইল করে দিন। এডমিনের সব কাজ ওটা দিয়েই করবো, কথা দিচ্ছি।
@বন্যা আহমেদ,
মুক্তমনা এডমিনের পাসওয়ার্ড হ্যাক করছো। আর এখন ধরা খাইয়া দোষ চাপাইতাছো সেই এডমিনেরই ঘাড়ে। ঘোর কলিকাল পড়ছে দেখছি।
@বন্যা আহমেদ,
চমৎকার , ধন্যবাদ। যদি সম্ভব হয় পরের পর্বে এস্ট্রোজেন অন্তর্ভুক্ত করুন কারন সব ম্যামালদের মধ্যে এখন একমাত্র মানুষের মেইটিং প্যাটার্ন বদলে গেছে এই এস্ট্রোজেনের কারনে। এটা নিয়ে গতকাল নতুন তথ্য আমার হাতে এসেছে যা পিয়ার রিভিউ শেষে প্রকাশ করা হবে। তবে পুরোনো তথ্যগুলো তারপরও উৎসাহব্যঞ্জক যা আপনার ধারনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের ফলে। মানুষের জটিল মস্তিষ্কই প্রাকৃতিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে জটলা পাকিয়ে দিয়েছে।অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বিবর্তন চিন্তা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়।
অনেক দার্শনিকও আবার জৈব-বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সামাজিক সাম্যবাদকে উপেক্ষা করেছেন যেমন হার্বাট স্পে নসার উনার মতে প্রাণী জগতে প্রতিকুল পরিবেশের সংগে সংগ্রাম করে যেমন কেবলমাত্র যোগ্যতমরাই বেঁচে থাকে, ঠিক তেমনি মনুষ্য জগতে অবাধ প্রতিযোগীতার মাধ্যমে একমাত্র তারাই টিকে থাকবে যারা যোগ্যতম। সুতরাং দুর্বল ও অযোগ্য ব্যাক্তির রক্ষা করার জন্য সমাজ বা রাষ্ট্র যদি সমাজজীবনে হস্তক্ষেপ করে তাহলে ‘Survival of the fittest’ প্রাকৃতিক নীতি লঙ্ঘিত হবে এবং যোগ্য দক্ষ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তির বিকাশ ব্যাহত হবে। :-/
এইক্ষেত্রে ও আমি বলতে পারি মানুষ্য জগতে শুধু প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে বিচার করলে চলবে। তারও বাইরে যেতে হবে।
আপনার এই লেখাটি আমার কাছে দারুন লেগেছে। পরের পর্বগুলির অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ।
আমার এখানেই আপত্তিটা। কেন এস্পার কি ওস্পার হতে হবে। আমার মতে এ দুটোকে মিলানোর সময় হয়েছে। আমি আসলে যেটা বলতে চাইছি মানুষের সব নৈতিকতা, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সিদ্ধান্তের পিছনেই বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা খোঁজার বিরোধী আমি। পরার্থিতার মত ওভার আর্চিং বিষয়গুলোকে বিবর্তনের আলোকে ব্যাখ্যা করার কারণ খুঁজে পেলেও ছেলেদের বহুগামীতা বা মেয়েদের পুতুল খেলার মত বিষয়গুলোর পিছনে করে বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা হাজির করার বিপক্ষে আমি। এদের পিছনে কিছু জৈবিক ভিত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আবার অনেকখানি সামাজিকও হতে পারে। আমি মনে করি বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আমরা এমন একটা অবস্থায় এসেছি যেখানে আমরা প্রযুক্তি, উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সামাজিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে আমরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম যার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যার দরকার নেই। আমাদের সমাজে সংস্কৃতি এবং জৈবিক বিবর্তন এত জটিল একটা পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যে কখন কোনটা কিভাবে কাকে কেন প্রভাবিত করেছে সেটা নাও বলা যেতে পারে। আবার তার অর্থ এই নয় যে, সেগুলো সব বিজ্ঞানের বাইরে কোন অবৈজ্ঞানিক বিষয় হয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞান যেমন বলছে নৈতিকতার মত অনেক বিষয় বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে তেমনি এক্সটেন্ডেড ব্যাপার হিসেবে কোন কিছু সাংস্কৃতিকভাবে নির্ণীত হলেও তাকে অবৈজ্ঞানিক বলার কোন কারণ নেই। আমি বুঝি এটা খুব একটা ট্রিকি ব্যাপার কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, বিজ্ঞান যত এগুচ্ছে আমরা ততই কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছি। Gene-Culture Coevolution এর মত ব্যাপারগুলো আমরা আগে বুঝতাম না এভাবে, বহু কাঠখড় পেরিয়ে, মেমেটিক্স, সোশিওবায়োলজির রাস্তা পেরিয়ে আমরা আজ এখানে এসে পৌঁছেছি।
@বন্যা আহমেদ,
খুবই ভাল লেগেছে লেখাটা।
আচ্ছা সমাজ সংস্কৃতি এ ব্যাপারগুলো তো বিবর্তনের পথ ধরেই এসেছে তাই না? তাহলে এগুলো ঠিক কখন থেকে জৈবিক বিবর্তনের বাইরে আলাদা বিবর্তনীয় ধারা হিসেবে গুরুত্ব পেতে শুরু করল বলে মনে করেন?
এ লেখায় আপনি যে প্রশ্নগুলো করেছেন তা আমাকেও ভাবাচ্ছে। যেমন
এ ধরণের কিছু ভাবনা জাগানিয়া প্রশ্ন।
এ বিষয়গুলো উপর পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম অধীর আগ্রহে।
বিঃদ্রঃআমার কিন্তু লেখা পড়ে বিবর্তন বিরোধী মনে হয়নি মোটেও 🙂 নিজের কোন মতামত দেয়ার যোগ্যতা এখনো হয়ে ওঠেনি বিবর্তন বিষয়ে তাই ওটা বাদ থাকল। আমার বিবর্তন বিষয়ে প্রাথমিক এবং বিস্তারিত ধারণা আপনার বই থেকেই। এই সুযোগে “বিবর্তনের পথ ধরে” বইটি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম।
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ আপনাকে, বইটি পড়ার জন্য। এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে ‘যোগ্যতা’র চেয়ে বিজ্ঞানমনষ্কতাটাই বেশী জরুরী। যোগ্যতার ব্যাপারটা বোধ হয় আপেক্ষিক, যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করার জন্য যেহেতু বৈজ্ঞানিক কোন স্কেল নেই, তাই সেটা নিয়ে বেশী না ভাবাটাই বোধ হয় ভালো 🙂 ।
@বন্যা আহমেদ,
বিরোধী আসলেই, নাকি বলবেন বিবর্তনীয় ব্যাখ্যাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ছাঁকনি পার হতে হবে? আমার কাছে অনেক সময় মনে হয় সমস্যাটির গোড়ায় আছে মানুষের ন্যারেটিভ তৈরির প্রবণতা, প্রমাণ ছাড়াই। বিবর্তন যেহেতু একটি শক্তিশালী কাঠামো, একটি প্রবণতা আমি দেখি (যেটি মনে হয় আপনিও লক্ষ্য করেছেন) সেটি হল এই মুহূর্তেই যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই “মেয়েদের পুতুল খেলা বিবর্তনের ফল” ধরণের দাবি। “মেয়েদের পুতুল খেলা বিবর্তনের ফল”, এ তথ্য সত্য, যেমন সত্য “মেয়েদের পুতুল খেলা অমুক-অমুক ইউনিভার্সাল কনস্টান্টের ফল” — বলা যেতে পারে vacuously সত্য, কোন আলো দেয় না এই তথ্যদুটির কোনটিই। দেয় না, কারণ এই দাবীর মধ্যে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণ/অপ্রমাণযোগ্য কোন মন্তব্য নেই। কেউ যদি বলেন, ২০৫০ সালে উত্তর বার্লিনে বসে ৫ বছরের সালমা পুতুল খেলবে কিনা তা তিনি predict করতে পারবেন, আমি কান খাড়া করতে রাজি আছি। নইলে এসব দাবীর কোন অর্থ নেই।
পুরোপুরি একমত। পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নিয়ে বলছি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ছাঁকনি পার হলেই বিজ্ঞান, নচেৎ নয়। জীন হোক, বিবর্তন হোক, হোক সমাজতত্ব। অন্য কোন criteria নেই
এ মন্তব্য কি আমার কম্পিউটার-প্রোগ্রাম বিষয়ক দাবীটি থেকে বহুদূরবর্তী? আমার মনে হচ্ছে আপনি দাবি করছেন, অনেক মানব-বৈশিষ্ট্য পর্যালোচলায় বিবর্তনকে আনার cost-benefit analysis আমাদের বলবে যে সেটি না আনলেই আখেরে আমরা ভাল বৈজ্ঞানিক ফল পাব। যেমন পদার্থবিদ্যায় ১০০% সঠিক হিসাব ত্যাগ করে অনেক সময় বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন যে approximation ই ভাল, কারণ একেবারে সঠিক গাণিতিক ফর্মুলা ব্যবহার করতে গেলে অসম্ভব জটিলতার সৃষ্টি হবে, যা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে শেষ বিচারে।
@রৌরব, আপনার সাথে ১০০+X% (X এর ভ্যালু জৈবিক বিবর্তনের ধারায় আমার মস্তিষ্কের গঠন, হরমোনাল কারণে আমার মুড সুইং, আমার চারপাশের পরিবেশ, বিশেষ করে আমার বাড়ির সদস্যদের বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা নিয়ে মাতামাতির মাত্রা, কাজে বসের মুড এবং স্টেক হোল্ডারদের ইতরামী, ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল :laugh: ) একমত। আপনার সাথে এই আলোচনাটা থেকে আমার অনেক উপকার হল, এর পরের পর্বের লেখায় যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে চাচ্ছি সেগুলোকে মাথায় ( ওহ হ্যা, বারবার না বললে বিবর্তনবিরোধী হয়ে যেতে পারি বলে আবারো বলে নেই, বিবর্তনের ধারায় তৈরি মস্তিষ্ক!!) গুছিয়ে আনতে সাহায্য করলো ব্যাপকভাবে, ধন্যবাদ।
আগে বলেছি কিনা জানি না, পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নিয়ে বলছি ( :lotpot: ) আপনার লেখায় শব্দচয়নের পান্ডিত্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই প্রায়শঃই।
ডিস্ক্লেইমার ৩ঃ আমার এই শেষের মন্তব্যটি আপনার এই স্পেসিফিক মন্তব্যের বিষয়বস্তু দ্বারা প্রভাবিত নয়।
@বন্যা আহমেদ,
বুঝছি, সমস্যা তাইলে এইখানে 😀
তাইতো কই শ্রীমৎবিবর্তনওয়ালাবৈরাগী হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রী পল্টি মারে ক্যান।
আইচ্ছা আজ থেইক্যা বিবর্তন মনোবিদ্যা বিসর্জন দিলাম (সাংসারিক সুখের জন্য কীনা করে মানুষ)। (তার বদলে সংস্কৃতিমনোবিদ্যার জয় হোক)!
@অভিজিৎ,
এটাও কিন্তু একটা সারভাইভ্যাল টেকনিক। 😀
@ইরতিশাদ,
হাঁ? শেষ পর্যন্ত বিবর্তন কিনা বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার পরিবর্তে সংস্কৃতি মনোবিদ্যাকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য মনোনীত করল? নিজের কবর নিজেই খোঁড়া আর কি। :laugh:
@অপার্থিব এবং ইরতিশাদ ভাই, আপনাদের জন্য সমবেদনা… এম্পিরিক্যাল ডাটার অভাবে আপনারা এরকম অবৈজ্ঞানিক একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন! কবর খোড়ার জন্য ডাকা কন্ট্রাক্টরকে আপাতত বিদায় করে দিতে পারেন। এখানে সাংস্কৃতিক কিচ্ছু নেই, পুরোটাই বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার মধ্যে পড়ে। সার্চ দিয়ে দেখুন, আমি নিশ্চিত, ‘হোয়াই মেন সুইট টক’ টাইপের কয়েকশ’ বিবর্তনীয় এবং জেনেটিক ব্যাখ্যা পেয়ে যাবেন, আর যেহেতু এরা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের রিসার্চের অংশ এরা ন্যারেটিভ হলেও অসুবিধা নেই :-Y । বলেন তো অভিজিতের এ বছরের প্রকাশিতব্য দুটি বইএর একটার নাম কি? কোন বইটার কাজ সজোরে চালিয়ে যাচ্ছে অভি এখন? হুমম… বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা…
@বন্যা আহমেদ,
আপনি দেখছি ডিস্ক্লেইমারের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন :rotfl:
@রৌরব,
বাহ্! কোন লাইনটা উদ্ধৃত করব, সবই জবর বলেছেন। আজকে বাসায় আসার পথে ঠিক এটা ভাবছিলাম, মানুষের ন্যারেটিভ তৈরির প্রবণতা দ্বারা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান আক্রান্ত হচ্ছে। সবকিছুরই তো বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব। তত্ত্বকে ভুল করতে দিতে পারতে হবে, নাহলে ওটার কোনো কন্ট্রিবিউশান নেই।
বাক্যটা আমি পড়লাম কয়েকবার, পরে সিদ্ধান্তে এসেছি এই দাবি-কাউন্টার দাবির মধ্যে দুটি জিনিস আছে। একটি বৈজ্ঞানিক আলোচনার যোগ্য, অন্যটি আবর্জনা।
আবর্জনার অংশটি হল বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মরতির যে ইঙ্গিত সেটি। কার কাঠামো বেশি সাধারণ, কার কাঠামো সার্বভৌম সেটা নিয়ে বিশ্রী লাঠালাঠি। বিজ্ঞান ও কলার মধ্যে, গণিত ও বিজ্ঞানের মধ্যে, এবং এক্ষেত্রে সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে এসব অপরিষ্কার তর্ক ক্লান্তিকর।
বৈজ্ঞানিক আলোচনাও এই নিয়ে করা যায়, এবং করা গেলে তার একমাত্র মাপকাঠি হবে predictability। পরিষ্কার করে একটা দৃষ্টিভঙ্গী নির্দিষ্ট করে সূক্ষ্ম পরিমাপ ও মডেলিং করলেই হয়। ধরুন, অপরাধ প্রবণতা। জীববিজ্ঞানীরা করুন জেনেটিক অ্যানালাইসিস, উপহার দিন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা জীন পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎবাণী করবে। একই কাজ করুন সমাজবিজ্ঞানীরা। দেখুন কার প্রোগ্রামের ভবিষ্যৎবাণী সঠিকতর। সমাজবিজ্ঞানীদেরটা ২৫% বেশি ভাল ফল দেয়? চমৎকার, খেল খতম পয়সা হজম। কিন্তু না…সমাজবিজ্ঞানীদেরটা ২৫% বেশি ভাল রেজাল্ট দেয় বটে, কিন্তু রাহাজানি আলাদা ভাবে দেখলে সেখানে ভাল ফল দেয় জীন-পর্যালোচনা, আর দুটো প্রোগ্রামকে মিলালে পাওয়া যায় আরো উন্নত ফল? আরো চমৎকার, কারণ “সত্য যে জটিল জটিলেরে ভালবাসিলাম” 🙂
ভাবনা-জাগানিয়া প্রশ্ন বটে!
বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় মানুষ প্রজাতি যে এক টা ভিন্ন পর্যায়ে ‘উন্নীত’ হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। এই উন্নীত প্রজাতির অনেক বৈশিষ্ট্যই (যেমন ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা) শুধু বংশাণুর প্রভাবে ঘটেছে বলা যায় না। মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রজাতির মধ্যে এতটা ‘উন্নয়ন’ ঘটে নি। তবে জৈবিক আর সাংস্কৃতিক বিবর্তন এ দু’য়ের সম্পর্ক দ্বন্দমূলক কি? জৈবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়াতেই সাংস্কৃতিক বিবর্তন ঘটেছে। নয় কি?
আমাদের সব কার্যকলাপ জৈবিক বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা না গেলেও আমরা জৈবিক বিবর্তন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে অকার্যকর বলতে তো পারছি না। পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলোকে যেমন নিজেদের আয়ত্বে এনে নিত্যনতুন নানা জিনিষ আবিষ্কার করে চলেছি, তেমনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করছি। প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তো আমরা কিছুই করছি না বা করতে পারছি না। পারছি কি?
বন্যাকে অভিনন্দন অত্যন্ত সুলিখিত প্রবন্ধটার জন্য। বিতর্কের বিষয়গুলোকে সহজে উপস্থাপিত করার যে দক্ষতা তোমার আছে তাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছো এই লেখায়। জানি, কাজটা পরিশ্রমসাধ্য। পাঠকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অধীর আগ্রহে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
@ইরতিশাদ,
হ্যা সেটা তো আমি বলেছিই। কিন্তু তাই বলে আমাদের সমাজের সব নৈতিকতা বা সামাজিক আচারণকে বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করার বিপক্ষে আমি। আমি মনে করি বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আমাদের জিনে এতটুকু ইলাস্টিসিটি আছে যা দিয়ে আমরা অনেক সময়ই সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারি যার পিছনে বিবর্তনীয় কোন ‘মহাকারণ’ নাও থাকতে পারে। আবার এগুলোই উলটো আমাদের নৈতিকতাকে প্রভাবিত করতে পারে। রৌরব এবং অপার্থিবকে এ প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা লিখেছি, তাই এখানে আর সেগুলো লিখছি না।
আমি মনে করি পারছি। প্রাকৃতিক নির্বাচনই কিন্তু বিবর্তনের একমাত্র চাবিকাঠি নয় এখানে মিউটেশন এবং জেনেটিক ড্রিফটের মত বিষয়গুলোও আছে। তবে মানুষের বিবর্তনে অনেক ক্ষেত্রেও আমি মনে করি আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছি। প্রাকৃতিক নির্বাচন মানে কি? Inherited differences in chances of reproduction. তাই তো, আমার তো মনে হয় আমাদের সমাজে মনোগামিতা, একজন পুরুষের একজন বউ, জন্মনিয়ন্ত্রণ, উন্নত চিকিৎসা ব্যাবস্থার ফলে শিশু মৃত্যর হার কমিয়ে আনা, ছেলেদের বহু জায়গায় গিয়ে চেঙ্গিস খান স্টাইলে বাচ্চা হওয়াতে না পারা ইত্যাদি সব মিলিয়ে আমরা যে অবস্থায় এসেছি অনেক সমাজেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রায় ‘নাই’ হয়ে যেতে শুরু করেছে। স্টিভ জোন্সের এই ভিডিওটা আপনাকে এবং রৌরবকে দেখতে অনুরোধ করছি। অনেক বড় ভিডিও এইটা, ২৮ মিনিটের পর থেকে এ নিয়ে আলোচনাটা আছে, আগেরটুকুও সময় থাকলে দেখতে পারেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=XE_Oy1eRyVg
@বন্যা,
স্টিভ জোন্সের ভিডিওটা দেখলাম। বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, চিন্তার অনেক খোরাক আছে এতে। কিন্তু আমার মনের খটকা পুরোপুরি যায় নি।
আমি একমত।
তা তো বটেই। আমার হয়তো বলা উচিত ছিল, বিবর্তনের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমরা কিছুই করছিনা বা করতে পারছিনা।
আর্ডির ওপরে এক আর্টিকেলে দেখেছিলাম, মনোগামিতা এসেছে কিন্তু সেক্সুয়াল সিলেকশনের পথ ধরে। যদিও এটা একটা হাইপোথেসিস, প্রশ্ন তোলা যায়, এই সিলেকশনটা কি প্রাকৃতিক নির্বাচনকে ‘নাই’ করে দিচ্ছে?
তোমার লেখার পরবর্তী পর্বে হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর আছে, তাই আর কথা বাড়াবো না। অনেক মজাদার একটা লেখা লিখেছ, বেশ দোটানায় পড়ে গেছি!
তবে দোটানাটা উপভোগ্য।
@ইরতিশাদ,বন্যা
বন্যার নীচের মন্তব্যঃ
[আমি মনে করি বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আমাদের জিনে এতটুকু ইলাস্টিসিটি আছে যা দিয়ে আমরা অনেক সময়ই সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারি যার পিছনে বিবর্তনীয় কোন ‘মহাকারণ’ নাও থাকতে পারে। আবার এগুলোই উলটো আমাদের নৈতিকতাকে প্রভাবিত করতে পারে।]
যার সাথে আপনি একমত সে বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই।
বিবর্তনীয় কোন ‘মহাকারণ’ না থাকলে আর কি “কারণ” থাকতে পারে? কারণ আর ন্যারেটিভের পার্থ্যক্য স্মর্তব্য । “জিনের ইলাস্টিসিটি দিয়ে আমরা সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারি” বলাটা একটা ন্যারেটিভে, কোন কারণ বা ব্যাখ্যা নয়। প্রথমত জনপ্রিয় বিজ্ঞানে আমরা অনেক সময় কিছু ভাষার অলঙ্কার ব্যবহার করি যা বৈজ্ঞানিক না হলেও তার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক শব্দাবলীপূর্ণ কোন কোন বাক্যের বা ধারণার ১-১ ম্যাপিং থাকে। জিনের ইলাস্টিসিটির কোন বিবর্তনীয় বা জেনেটিক বৈজ্ঞানিক ধারণ নেই ম্যাপ করার মত। ফেনোটাইপের প্লাস্টিসিটি বলে একটা ধারণা আছে যার মানে হল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াবার জন্য জীনের পরিস্ফুটন (Gene Expression) এর পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন ফেনোটাইপ তৈরী করা। সংস্কৃতি কোন ফেনোটাইপ নয়। সংস্কৃতি এক্সটেন্ডেড ফেনোটাইপ। সেটাও অবশ্য পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে ঘটে জীনের পরিস্ফুটন (Gene Expression) এর পরিবর্তনের দ্বারা, এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে পারে (Gene-Culture Coevolution, যা একটা বিবর্তনভিত্তিক একটা বৈজ্ঞানিক ধারণা) । কিন্তু সামাজিক বা সাংস্কৃতিক যে কোন আচার আচরণই শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে জীনের পরিস্ফুটনের পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট। তাহলে এর পেছনে কোন বিবর্তনীয় “কারণ নেই” বলাটার তাৎপর্য কি? ব্যাখ্যা মানে যদি কারণ খোঁজা হয় তাহলে বিবর্তন বা বিজ্ঞানের ধারণা ছাড়া ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। অন্য কিছুকে ভিত্তি করে “ব্যাখ্যা” করা ন্যারেটিভ, কারণ সংস্কৃতি (অর্থৎ সামাজিক রীতি নীতি সমূহ) নিজেই বিবর্তনের সৃষ্টি।
@অপার্থিব,
আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে (
) আপনার epistemological ব্যাখ্যা ঠিকই আছে। আপনার বক্তব্য খুবই পরিষ্কার। যদিও আমি মনে করি, তার পরেও কথা থেকে যায়।
কিন্তু বন্যার এই কথাটায় –
‘মহাকারণ’ শব্দটার গুরুত্ব বোঝা দরকার। যেমন ধরুন, মানুষের চাঁদে যাওয়া, এর পেছনে বিবর্তনীয় কোন ‘মহাকারণ’ আছে কি? তর্কের খাতিরে বলা যেতে পারে, বেঁচে থাকার জন্যই মানুষ প্রজাতি চাঁদে বা মহাশূণ্যে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এই ধরনের যুক্তি আমার কাছে কষ্টকল্পিত স্ট্রেচ মনে হয়।
সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ডিস্ক্লেইমার ২ এর কি কোন দরকার ছিল? কাকে ভয় পাচ্ছেন? আমারতো মনে হয় আপনি নিজেকেই নিজে ভয় পাচ্ছেন।
এই পর্ব ভাল লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আশাকরি নিরাশ হব না।
@ফারুক, হা হা হা হা হা, ভালো বলেছেন। আমার মতে ডিস্ক্লেইমার ২ হচ্ছে এই লেখার প্রধান অংশ। পাঠক কে এবং কাদের সাথে আলোচনা হচ্ছে সেটা নির্ধারণ করে নেওয়া এই লেখার একটা অন্যতম মূল বিষয়। এই ধরনের লেখা দেখলেই সৃষ্টিবাদীরা ঝাপিয়ে পড়ে মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। এখানে সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তা, ডিজাইন, বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের মত কোন ক্র্যাপের জায়গা নেই এবং এই লেখাটাকে কেউ যাতে ঐদিকে নিয়ে যেতে না পারে তার জন্যই এই ডিস্ক্লেইমার। মানুষের উৎপত্তি এবং বিকাশে জৈবিক বিবর্তন নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই, প্রশ্ন হচ্ছে জৈবিক বিবর্তন আমাদের কতটুকু ইলাস্টিসিটি বা ফ্লেক্সিবিলিটি দিয়েছে তা নিয়ে, অন্য কিছু নয়। বিজ্ঞানের সৌন্দর্য সে জায়গাটাতেই, বিজ্ঞানের বাউন্ডারির মধ্যে থেকেই বহু কিছু নিয়েই বিতর্ক হতে পারে এবং তা তে করে বিজ্ঞান ভুল প্রমাণিত হয় না।
@বন্যা আহমেদ,আমার সন্দেহ যে অমূলক ছিল না , তা আপনার হাসি ও মন্তব্য দেখলেই বোঝা যায়।
এটা দিয়ে কি বোঝাতে চাইলেন ? আমি তো জানি , অনেক ক্ষেত্রেই আজ যা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য , তাই কাল মিথ্যা প্রমানিত করে সেই বিজ্ঞান। এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরন , চিকিৎসা বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা।
@ফারুক,
ঠিক বলেছেন। আজ যা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য তা কালকে পালটে যেতেই পারে। কিন্তু তা বলে বিজ্ঞান ভুল হয় না, ভুল হয় আগেকার তত্ত্ব। আমরা কোন জিনিস ভুল প্রমাণ করি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেই, কোন গায়েবী বা অলৌকিক কিছু দিয়ে নয়। বিজ্ঞানে এটাকে বলে ফলসিফিকেশন। কাজেই এখানে বিজ্ঞান ভুল প্রমাণিত হয় না। বেসিক বিজ্ঞানের যে কোন বইয়েই এগুলো পাওয়া যাওয়ার কথা, এ নিয়ে মুক্তমনায় আলোচনা করে সময় নষ্ট করার কোন অর্থ দেখি না।
আপনি আমার লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইলে করতে পারেন। কিন্তু তা বাদ দিয়ে আমি কার ভয়ে কোন ডিসক্লেমার দিলাম আর না দিলাম তা নিয়ে অযথা ফালতু কথা না বাড়ালেই খুশী হব 😀 । সত্যি কথা বলতে কি এ ধরণের আলোচনাকে প্রশ্রয় যাতে না দিতে হয় সেজন্যই এই ডিসক্লেমারটা দিয়েছিলাম, তাতে কোন লাভ হল বলে তো মনে হয় না :-Y। এটাই এ বিষয়ে দেওয়া শেষ উত্তর।
@বন্যা আহমেদ, ফারুক ভাইয়ের পথ ধরে আমি আরেকটা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে চাই, তবে আলোচনাকে পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আর বেশি পথচ্যুত করব না,
খুঁটিনাটি ধারণা হয়ত পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু আজ পর্যন্ত্য কোন প্রকল্প কি তত্ত্বের মর্যাদায় ভূষিত হয়ে দীর্ঘ সময় পরে অথবা প্রায় সাথে সাথেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে? ফারুক ভাইয়ের দাবিটা অনেকে বিজ্ঞান ও বিশ্বাসকে এক কাতারে ফেলার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করেন, তাই এই বিষয়টা খোলাসা করা দরকার।
@পৃথিবী, এরকম উদাহরণ তো দেওয়াই যায়, টলেমীর ভূকেন্দ্রিক তত্ত্ব, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব যাকে আইনস্টাইনের তত্ত্ব দিয়ে পরিবর্ধিত করতে হয়েছে। আর ছোট ছোট বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত তো অহরহই বদলাচ্ছে, যেমন ধর মাত্র কয়েক দশক আগেও ধরে নেওয়া হয়েছিল যে মানুষের লিনিয়েজ ২০-২৫ মিলিয়ন বছর আগে ভাগ হয়ে গেছে তার সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে। কিন্তু জেনেটিক্সের অগ্রগতির ফলে এখন দেখা যাচ্ছে যে সেটা হয়েছে ৬ মিলিয়ন বছর আগে।
আমার কাছে তো মনে হয় এখানেই বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম বিশ্বাসের মূল পার্থক্য, নতুন নতুন জ্ঞানের আলোয় বিজ্ঞানকে প্রতিনিয়ত ঝালাই করে নেওয়া হয়। বিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি এই ফলসিফিকেশন, যারা এই কারণে বিশ্বাসের সাথে বিজ্ঞানকে মিলাতে চান তারা যে বিজ্ঞানের বেসিক্স বোঝেন না সেটা তো চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। আর চোখ বন্ধওয়ালাদের সাথে বিতর্ক করে কি লাভ, ওদেরকে উট পাখির মত মাটিতে মাথা গুঁজে পড়ে থাকতে দেওয়াতেই সবার মঙ্গল!!!
@পৃথিবী,
বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের উপরে নির্ভরশীল। নিচে বন্যা আহমেদের মন্তব্যটি দেখুন-
তাহলে সত্য কোনটা? কয়েক দশক আগে যেটা জানতাম সেটা , নাকি এখন যেটা জানি সেটা , নাকি ভবিষ্যতে যেটা জানব সেটা? কয়েক দশক আগে যদি আপনি বল্তেন, মানুষের লিনিয়েজ ২০-২৫ মিলিয়ন বছর আগে ভাগ হয়নি , তাহলে আপনাকে ও উট পাখির মত মাটিতে মাথা গুঁজে পড়ে থাকার অপবাদ শুনতে হতো। হয়তো বা দেখা যাবে বাইবেলের কথায় একদিন সত্য হিসাবে এই বিজ্ঞানি প্রমান করে বলবে যে , মানুষের আবির্ভাব এই ধরাধামে ৬০০০ বছর আগে ঘটেছে!! এমনি বিজ্ঞান মনস্কদের তাদের বিজ্ঞানে বিশ্বাস , যে যখন যেটা বিজ্ঞান বলে , সেটাকেই ধ্রুব সত্য হিসাবে বিশ্বাস করে। যদিও সত্য যে কোনটা , তা কে বা জানে!!
@ফারুক,
এটা একেবারেই ভুল কথা। বিজ্ঞান মোটেই বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল নয়। নির্ভরশীল যুক্তি এবং প্রমাণে। ব্যবহারিক প্রমাণ না পাওয়া গেলে, কিংবা বাস্তবতার সাথে না মিললে, বিজ্ঞানে যত বড় মহারথীই হোক না কেন, তার তত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই বিজ্ঞানে হিরো আছে, পয়গম্বর নেই। আপনি যদি আজ আইনস্টাইনের তত্ত্বের ভুল ধরিয়ে দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের জার্নালে পেপার প্রকাশ করতে পারেন, আপনিও হিরো হয়ে উঠবেন, কেবল আইনস্টাইন বলেই কেউ তার তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরে থাকবে না। সেজন্যই বিজ্ঞান সাক্ষ্যপ্রমাণের সাপেক্ষে সতত পরিবর্তনশীল, সেজন্যই বিজ্ঞান কোন ডগমা নয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে তা খাটে না। ঈশ্বর কিংবা নবী রসুল কিংবা পয়গম্বররের বাণীকে সবসময়ই শিরোধার্য করে রাখা হয়। সাক্ষ্যপ্রমাণ ধর্মগ্রন্থের বাইরে গেলেও সেটাকে সত্য ভেবে সাক্ষ্যপ্রমাণকেই সাধারণতঃ বিসর্জন দেয়া হয়। কারণ ঈশ্বরের বানী তো মিথ্যা হতে পারে না। এই ধারণা যুক্তিবোধ থেকে নয়, বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত, বলাই বাহুল্য।
বিজ্ঞানে ‘পরম সত্য’ বইলে কিছু নেই। বিজ্ঞানে সত্যান্বেষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইটস এ জার্নি, নট এ ডেস্টিনেশন। এখানেই ডগমা এবং সায়েন্সের পার্থক্য।
@অভিজিৎ, তবে আমার মনে হয় একটা বিষয় পরিস্কার করা দরকার যে theory কিন্তু কখনও ভুল প্রমাণিত হয় না। বন্যাপু যে উদাহরণগুলো দিলেন, সেগুলো কিন্তু ঠিক theory ছিল না। হাইপোথিসিস কিংবা স্পেকুলেশন হয়ত বদলাতে পারে, কিন্তু থিওরীকে কখনওই শতভাগ বাতিল করা যায় না। পৃথিবীর সমতল হওয়া নিয়ে প্রাচীন বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা স্পেকুলেশন ছিল, থিওরী না। মহাকর্ষ বা জৈববিবর্তন সম্পর্কে আমাদের insight এ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন আসতেই পারে, কিন্তু আমাদের জ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এগুলোর সত্যতা কিন্তু বিন্দুমাত্র বদলাবে না। মানুষের লিনিয়েজ ২০ মিলিয়ন থেকে ৬ মিলিয়নে নেমে আসাটা খুব একটা অদ্ভুত কিছু না, ভূতাত্ত্বিক সময়ে ২০ মিলিয়ন আর ৬ মিলিয়নের পার্থক্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে বলে মনে হয় না। এখন যদি কোন প্রমাণ পাওয়া যায় যে মানুষ আসলে কোন বংশ থেকেই উদ্ভূত হয়নি, তখনই কেবল বিজ্ঞান সম্পর্কে ফারুক সাহেবের অভিমত হালে পানি পেত।
@পৃথিবী,
এটার সাথে আমি ঠিক একমত নই। scientific theories must be falsifiable, না হলে তত্ত্ব হয়ে উঠে না। আর টলেমীর ভুকেন্দ্রক তত্ত্ব স্পেকুলেশন ছিলো না, এর পেছনে গাণিতিক মডেলও ছিলো। ওটা একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই ছিল, আমার মতে। সমতল পৃথিবীর ‘ধারনা’ হয়ত স্পেকুলেশন ছিল, সে হিসেবে সম্পুর্ণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নাও বলা যেতে পারে, কিন্তু ভুকেন্দ্রিক তত্ত্ব তা নয়। আর তত্ত্ব অবশ্যই ভুল হতে পারে। অতীতে ভুকেন্দ্রিক তত্ত্ব, ফ্লোগিস্টন তত্ত্ব, ইথার তত্ত্ব, প্যাঞ্জিয়াম তত্ত্ব, আলো চলাচলের জন্য নিউটনের কর্পাস্কুলার তত্ত্ব সবই একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
কাজেই তত্ত্ব ভুল প্রমাণ হতেই পারে। তবে এটি বলা যেতে পারে, আধুনিক যুগে কোন প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করা দুঃসাধ্য। কারণ প্রতিটি তত্ত্বের পেছনেই পেছনে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা রিসার্চ করছেন। একটি তত্ত্ব বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তবে তত্ত্ব হয়। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি ভুল তত্ত্ব দীঘদিন প্রতিষ্ঠিত থাকা প্রায় অসম্ভবই। সেজন্যই অনেক সময় মনে হতে পারে যে তত্ত্ব ‘কখনও ভুল প্রমাণিত হয় না’। কিন্তু সেটার যে বত্যয় যে ঘটে না তা নয়। যেমন, আইনসটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এর কথা বলা যেতে পারে, বহুদিনের প্রতিষ্ঠিত নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পেরেছিলো ঠিকই। এভাবেই বিজ্ঞান এগোয়।
অভিজিৎ ভাইয়ের সাথে একমত। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে ভুল হবার সুযোগ থাকাটা একটা বাধ্যবাধকতা। যে তত্ত্বের ভুল হবার সুযোগ নেই, সেটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব না। প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে ফলে পর্যবেক্ষণগত যাচাই দিয়ে ভুল ঠিকের একটা পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।
এ নিয়ে আমার দুইটি লেখা আছে, দেখতে পারেন।
যে জ্ঞান কাজের: অধিবিদ্যা বনাম বিজ্ঞান
কৃত্রিম জীবনের পথে: বিজ্ঞানের দর্শন
@অভিজিৎ,
সম্পুর্ণরুপে একমত। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এই পরম সত্যকে স্বীকার করার জন্য। এর থেকে যদি এই উপসংহারে আসি, ডগমা ইজ এ ডেস্টিনেশন, নট এ জার্নি , তাহলে নিশ্চয় আপত্তি করবেন না। কিন্তু মুশকিল হলো যখন কেউ এই জার্নির মাঝপথে থেকেই ডেস্টিনেশনের দাবীদারকে মিথ্যা বলে , অথচ সে জানেই না ডেস্টিনেশনটা কি। কারন বিজ্ঞান নিজেই অজ্ঞ এই ডেস্টিনেশনের ব্যাপারে (আপনারি বক্তব্য অনুযায়ী)। যেহেতু ডগমা এবং সায়েন্স এক নয় , এদের ফলসিফিকেশনের প্রক্রিয়া ও নিশ্চয় এক হতে পারে না।
কয়েক দশক আগেও প্রতিটি বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের লিনিয়েজ ২০-২৫ মিলিয়ন বছর আগে ভাগ হয়ে গেছে তার সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এবং এই বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে আস্তিকদের এক হাত নিতে ছাড়েন নি। এই বিশ্বাসের ভিত্তি ও ছিল বিভিন্ন নামকরা সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত যুক্তি ও প্রমান। জেনেটিক্সের অগ্রগতির ফলে এখন দেখা যাচ্ছে যে সেটা ২০-২৫ মিলিয়ন বছর থেকে ১-২শত নয় এক ধাপে ৬ মিলিয়ন বছরে নেমে এসেছে। এর একটাই মানে – আগের যুক্তি (?) ও প্রমাণে (?) মারাত্মক ভুল ছিল কিন্তু সেটাকেই সকলে সত্য ভেবে বিশ্বাস করেছিল। আগের যুক্তি ও প্রমানে বিশ্বাস না হলে তো এত বিরাট ভুল হওয়ার কথা নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বাস-ই মূল , যুক্তি ও প্রমাণ নয়।
@ফারুক,
“অপ্রমাণিত” অর্থে মিথ্যা। প্রমাণ দাবীদারের দায়িত্ব। বিজ্ঞান জার্নির মাঝপথে আছে সেটা সোৎসাহে স্বীকার করে, শেষে পৌঁছলে ভীষণ boredome-এ আমি অন্তত মারা পড়তাম, কিন্তু প্রমাণের লেশ-চিহ্নবিহীন ডগমার তো সেটা পর্যন্ত স্বীকার করার সৎসাহস নেই।
এক লাইনে বলছেন যুক্তি ও প্রমাণে বিশ্বাস, আবার বলছেন যুক্তি ও প্রমাণ মূল নয়। আমার মনে হয় না কেউ ওই বিশেষ সংখ্যাটিকে ডগমা হিসেবে বিশ্বাস করত। বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস কোন বাইনারী ব্যাপার নয়, প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ০.০০০…০০০১ থেকে ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯… পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। এই স্কেলেরই কোন এক জায়গায় ছিল সেটির অবস্থান। ঠিক কোথায় সেটা বিবর্তন-বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন, কিন্তু সেটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন মিল নেই।
@রৌরব,
ইথারের দাবীদারদের কাছে কিন্তু কেউ প্রমাণ চায় নি বা এখনো ডার্ক ম্যার্টার ও ডার্ক এনার্জির দাবীদারদের কাছে কেউ প্রমান চাচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত ইথারের অনস্তিত্ব প্রমানিত হয় নি , ততদিন কেউ একে মিথ্যা বলে নি। তদ্রুপ যতদিন ডার্ক ম্যাটার ও এনার্জি মিথ্যা প্রমানিত হচ্ছে , ততদিন কার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে একে মিথ্যা বলে? কিন্তু ইথারে বা ডার্ক ম্যাটার ও এনার্জিতে বিশ্বাসীদেরকে কিন্তু কেউ অন্ধ বিশ্বাসী বা মাটিতে মাথা গোজা উটপাখি বলেনি বা বলছে না।
@ফারুক,
অন্যদের মন্তব্যের পর আর কথা বাড়াতে চাই না। আপনি বিজ্ঞানের সমালোচনা করবেন ঠিক আছে। কিন্তু বিজ্ঞান কি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি, সেটা তো জানতে হবে। বিজ্ঞানের একটা মনগড়া রূপ মাথায় নিয়ে সেটার সমালোচনা করলে কিছু করার নেই।
@রৌরব,আসলেই বন্যা আহমেদের মন্তব্যের পরে আর কোন মন্তব্য করা সমীচিন নয়।এটাই এই পোস্টে আমার শেষ মন্তব্য। বুঝলাম না আমি বিজ্ঞানের সমালোচনা কোথায় করলাম? বিজ্ঞানমনস্কদের ডবল স্টান্ডার্ডকেই আমার মন্তব্যে দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞানের জন্য অপ্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত দাবীদারকে মাথায় তুলে রাখা হয়, আর ডগমার জন্য আগে প্রমান চাওয়া হয়। আমার মন্তব্যগুলো আর একবার দেখুন।
যেটা বুঝলাম , মতের বিরুদ্ধে গেলে সকলেই ক্ষেপে যায়।
@ফারুক,
শোনেন ফারুক, গত বছর ফুয়াদকে একটা অনুরোধ করেছিলাম, আজ আপনাকে আবারো সেই অনুরোধই করবো। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি
আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমার লেখায় প্রশ্ন/মন্তব্য করবেন, না হলে দয়া করে যারা আপনার ধর্ম, বিশ্বাস, বাইবেল, কোরাণ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি আছে তাদের লেখায় মন্তব্য করবেন, আমার লেখায় নয়। লেখক হিসেবে আমি মনে করি এটা আমার প্রিরোগেটিভ। আপনি এখানে যে প্রশ্নটা করে অযথা সময় নষ্ট করছেন তার উত্তরটা খুব বেসিক, এবং রুডিমেন্টারি। আপনি যদি বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে সেটা না বোঝেন তাহলে বিজ্ঞান ১০১ এর কোর্স দেওয়া আমার কাজ নয়। আপনি এখানে অযথাই কিছু কথা বলে সময় নষ্ট করছেন, বিবর্তনে ২০ মিলিয়ন বছর এবং ৬ মিলিয়ন বছরের পার্থক্যটা এমন কোন ‘মারাত্মক’ সমস্যা নয় বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে। এখানে বেসিক তত্ত্বটা হচ্ছে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। আপনার এই ৬ হাজার বছরে মানুষের উৎপত্তির ব্যাপারটা ইতোমধ্যেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে ফসিল, জেনেটিক্স, আনবিক জীববিজ্ঞান এবং অন্যান্য বহু শাখায়। আর বিজ্ঞানীরা যখন ২০-২৫ মিলিয়ন বছরের কথা বলছিলেন তখন অন্যান্য বিজ্ঞানীরা তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তাদেরকে কেউ উটপাখির মত চোখ বুজে আছেন বলে মনে করেননি, এই কথাটা শুধু খাটে যেখানে অন্ধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কোন কিছু প্রচার করার চেষ্টা করা হয়।। পৃথিবী যেরকম বলেছে এটা বিবর্তনের শাখার একটা ছোট তথ্য, তেমন বড় কোন তত্ত্ব নয়, এটা নিয়ে এত নাচানাচি করে সময় নষ্ট করে তেমন লাভ নেই। বিজ্ঞানের ফলসিফিকেশন একটা বড় ব্যাপার হলেও দিন দিন প্রযুক্তির উন্নতির ফলে খুব কম প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বই এখন সম্পূর্ণভাবে ভুল প্রমাণিত হয়। বিবর্তনের মত একটা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে প্রায় ৮০ বছর সময় লেগেছে। বিজ্ঞানে তত্ত্ব, পালটা তত্ত্ব নিয়ে সব সময় বিতর্ক চলে, এবং বহুদিনের সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে তা প্রমানিত হয়। বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে এক্সপেরিমেন্ট/ পর্রবেক্ষণ/অনুকল্প, প্রেডিকশান, ফলসিফিকেশনের পদ্ধতি মেনে তত্ত্ব হাজির করুন, তাহলে বাইবেল কেন ঘোড়ার ডিম্ব থেকে প্রশব করা অনুকল্প নিয়েও আপনার সাথে আলোচনা করতে রাজি আছি।
@জনাব ফারুক,
আমার এই লেখা দুটো পড়ুন দয়া করে। অথবা অন্তত একটি।
যে জ্ঞান কাজের: অধিবিদ্যা বনাম বিজ্ঞান
কৃত্রিম জীবনের পথে: বিজ্ঞানের দর্শন
মনে হতে পারে পাবলিসিটি করছি। কিন্তু আপনি বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে যে ভুল ধারণা পোষণ করছে, ঠিক সেটা ভাঙ্গানোর জন্যই কিন্তু এই লেখা দুটো লিখেছিলাম। উপরে বন্যা আপা কিছুটা বলেছেন – ফলসিফিকেশন নিয়ে।
বিজ্ঞান নিয়ে আপনার যে ভুল ধারণা হচ্ছে, সেটা কিন্তু আপনার একার না, আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে বহু বহু মানুষের এই ভুল ধারণা আছে।
মাথায় এই প্রশ্নটি রেখে পড়া শুরু করুন – “আই ডি বৈজ্ঞানিক প্রকল্প নাকি না” তারপর প্রবন্ধগুলো পড়া শেষ ওখানে জানান উত্তর কি পেলেন। আপনাকে যথা সম্ভব যুক্তি দিয়ে সাহায্য করা হবে।
বহুদিনের বলিষ্ঠ বজ্রকণ্ঠী বিবর্তনবাদী বন্যার এমন বিবর্তন বিরোধী বকবকানি দেখে বিপুলভাবে বিমোদিত হইলাম। 😀 আমাদের মত সৃষ্টিবাদীদের দলে আসতে আর বেশিদিন নাই। 🙂
এই লেখাটা শুধু বিবর্তনবিরোধীই নয়, বরং রেসিস্টও। আমরা যারা দুর্বল জিন নিয়ে অযোগ্য এবং অসম্পদশালী হয়েও মানব সমাজে কোনো রকমে টিকে টুকে আছি বিভিন্ন চিপাচাপা দিয়ে, তাদের প্রতি লেখকের অকারণ আক্রোশটাও টের পাওয়া যায় বেশ ভালোভাবেই তাঁর তীব্র হতাশামূলক এই কথাবার্তা থেকে। আমাদের মত দুর্বল জিনের মানুষেরা শুধু যে টিকেই আছি তাই না, বরং আটটা দশটা করে আণ্ডাবাচ্চা ফুঁটিয়ে বেশ জাকিয়ে বসে আছি বিবর্তনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, আর অন্যদিকে সবল সব জিন নিয়ে এত মেধাবী হয়েও তিনি মাত্র একটা বাচ্চাকে সামাল দিতেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন। নিজের জিনপুলকে ছড়িয়ে দেবার সুবিশাল ব্যর্থতায় নিদারুণ শোকে দুঃখকাতর হয়েই যে তিনি এই লেজেগোবরে লেখাখানা লিখেছেন সেটা না বললেও চলবে। 😛
তোমার এই বিশাল লেখা যে বিভ্রান্তি থেকে এসেছে তার জট খোলার চাবি রয়েছে রৌরবের ছোট্ট উত্তরটার মধ্যে।
গত দশহাজার বছরে মানব জিনের যে বিস্ময়কর বিপুল পরিবর্তন ঘটেছে, তার কারণ নিঃসন্দেহে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক। কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার পত্তনই দায়ী এর পিছনে। কিন্তু তুমি যদি এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবটাকে বিবর্তনের বিরুদ্ধ না ভেবে, একে অন্ধ বিবর্তন প্রক্রিয়ারই একটা অংশ বলে মনে করো, তাহলেইতো সবকিছু খাপে খাপে মিলে যায়। যায় না?
@ফরিদ ভাই, আপনার শব্দের ব্যবহারগুলো খুবই ইন্টেরেস্টিং। এটাই বোধ হয় মুশকিলটা, আজকাল কিছু ফোরামে মুখ খুললেই যেমন ‘ছাগু’ বা ‘রাজাকার’ বানিয়ে ছাড়া হয়, ঠিক তেমনি বিজ্ঞানমনষ্করাও মাঝে মাঝে জানা কোন বিষয়ের বাইরে কথা বললেই তাকে ‘বিজ্ঞানবিরোধী’, ‘বিবর্তনবিরোধী’ বলে ট্যাগ লাগিয়ে দিতে শুরু করে। বিজ্ঞান কি আসলেই এভাবে কাজ করে? নাহ, লেজেগোবরে লেখা লিখেছি বলে মনে করছি না, বিভ্রান্ত হয়েও লেখাটা লিখি নি, আমার মতে যারা বিবর্তনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন তাদের পক্ষে এর অপার শক্তি দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। ‘অন্ধ বিবর্তন’ বলে ছেড়ে দিলে উপরে উপরে অনেক কিছু বলা হয়ে গেছে মনে করা যায় কিন্তু ভিতরে ঢোকা হয় না। এখানে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাপারের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি, তার জন্য কিছু বিতর্কিত প্রশ্ন না করে উপায় নেই। তার জন্য যদি আমি ‘বিবর্তনবিরোধী’ হয়ে যাই তাহলে বলার আর কিছু নেই :-Y
চান্স পাইয়া দিলেন খুব একখান!!! আপনার নিজের জানি কয় গন্ডা বাচ্চা ফরিদ ভাই? নিজের একটারে সামলান আগে, তারপর কয়েক গন্ডাআলাদের মাথায় উঠায়েন 🙂
@বন্যা আহমেদ,
বিজ্ঞানমনষ্ক ব্যক্তিবর্গরাতো বেশ বদ বাহে! বিটকেলে সব বাতচিত বুলায় বেশরম বেটাগুলো খালি। এগুলোকে বেশ করে বকাঝকা করে দেওয়া উচিত বন্যার। বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি এ কারণে যে আমি বিজ্ঞানমনষ্ক নই। বিজ্ঞান বিষয়ের, বিশেষ করে বিবর্তনের যে কোনো লেখাতেই আমার বিরাগ এবং বিতৃষ্ণা বেরসিকভাবে সদা বিরাজমান। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
সাহিত্যসম্রাটের কাছে বিনীত প্রশ্ন :-D। বিমোদিত শব্দটিকি একটি portmanteu শব্দ? বিনোদ আর অামোদের অসাধারণ সন্ধি? যদি হইয়া থাকে, তবে জানিবেন আপনার অসাধারণ শব্দ-প্রতিভায় বিস্মিত হইনাই, তবে বিমোদিত হইয়াছি :guru:
@রৌরব,
এটা portmanteu শব্দই। ‘বিশেষ ভাবে আমোদিত’ বোঝানোর জন্য ব্যবহার করেছি। অনেকটা বিমোহিতের মত। তবে বিমোহিত শব্দটা অভিধানে আছে আর বিমোদিতটা অভিধানে নেই, এই যা তফাৎ। 🙂
সাহিত্যসম্রাটের মত একটা স্থূল আর আজেবাজে খেতাবও জুটলো আমার। হায়রে কপাল! :-Y
@ফরিদ আহমেদ,
বঙ্কিমের মত ডোরাকাটা পাগড়ি পরা, দ্বিচতুষ্টয় আণ্ডা-বাচ্চা পরিবেষ্টিত আপনার বিবর্তনীয় ও সাহিত্যক সফলতার একটি ছবি আমার কল্পনায় যেন ভেসে ভেসে আসে 😛 ।
@ফরিদ ভাই,
একদম “বিভ্রান্তি”?!! 🙂
@স্নিগ্ধা,
বিভ্রান্তি না? :-/
@ফরিদ ভাই,
আমি বিবর্তন-বিজ্ঞ নই, তাই বিভ্রান্তি বিষয়ক বাক্যাদি বলশালী যুক্তি দিয়ে পরাভূত করতে হয়তো পারবো না, কিন্তু মতের বিভিন্নতাকে বিশ্বাসের ভ্রান্তি বলে মনে না করে, বিজ্ঞানেরই ব্যাপ্তি কিংবা বিস্ময়াবহ বিস্তার বলে বোধ করতে চাই।
বয়ানটি কি বাহুল্য হলো? 🙂
@স্নিগ্ধা,
বলা বাহুল্য যে বয়ানটি মোটেও বাহুল্য হয় নি, বরং আপনার বিনয়ী বাক্য বিন্যাসিত বিদগ্ধ বয়ানটি যথেষ্ট বিজ্ঞজনোচিত হয়েছে। 🙂
আমিও বিজ্ঞান বা বিবর্তন বিশারদ নই। বকলমই বলা যায় আমাকে। বিভ্রান্তি নিয়ে যে এরকম বিভ্রাট তৈরি হবে সেটা আগে জানলে বালসূলভ এরকম বিটলেমি করতাম না, কোনো বিঘ্নপূর্ণ বাক্যালাপেও যেতাম না। 🙁
বাহাস বাদ দিয়ে বরং বিষয়ান্তরে যাই। বহুগুণান্বিত বন্যার এই বলশালী লেখাটি আসলেই বেশ বাহারী হয়েছে। বঙ্গ সন্তানদের আগে যেরকম বিবর্তনকে বটিকা বানিয়ে বলে বলে গেলানো হয়েছে। এবার সেখান থেকে বিচ্যুতি এসেছে। বিবর্তন বিষয়ক বিতর্ককে বিদগ্ধসভায় ছেড়ে দেওয়াটা সত্যি সত্যি বিরাট বুদ্ধিমত্তার কাজ হয়েছে। বিদগ্ধকুলের বহুমুখী বাদবিতণ্ডা থেকে বিবর্তনের বহুবর্ণা এবং বহুমাত্রিক বিষয়সমূহ উঠে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস।
@ফরিদ ভাই,
আপনার এই মন্তব্যের পরে ‘ব’ দিয়ে বলার মত আমার একটা কথাই খালি বাকি আছে –
ব্বাপ্রেব্বাপ!!! 😀
@স্নিগ্ধা,
বন্যা আর বিবর্তন বন্দনাতেই বাংলা বচনের ব্যাবাক ‘ব’ ব্যয়িত হলো। 😀
বন্যার এই প্রশংসনীয় লেখার অনেক কিছুর সঙ্গে একমত। তবে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভিন্নমত বা ক্ল্যারিফিকেশন দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে বন্যার নীচের মন্তব্যগুলির ([…] বন্ধনীর মধ্যে) সাথে। প্রত্যকে মন্তব্যের বিপরীতে আলাদা করে আমার প্রতিমন্তব্য না দিয়ে আমার প্রতিমন্তব্যগুলি (৫ টি ভাগে) এক জায়গায় একত্রিতভাবে দিচ্ছি কারণ বিভিন্ন মন্তব্যের উত্তরে প্রতিমন্তব্য দিতে গেলে ওভারল্যাপের কারণে দ্বিরুক্তি হবে। বন্যার মন্তব্যের সাথে আমার প্রতিমন্তব্যের সঙ্খ্যার কোন আনুক্রমিক সম্পর্ক নেই।
বন্যার মন্তব্যগুলিঃ
[আজকের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর সম্পদশালী বা টিকে থাকার জন্য ‘যোগ্যতম’ মানুষগুলো সচেতনভাবেই তাদের বংশাণু বিস্তার করছে না আর ওদিকে অপুষ্টিতে ভোগা,রোগে আক্রান্ত,কম সুযোগ,সুবিধা এবং সম্পদের অধিকারী মানুষেরা তাদের বংশাণু বিস্তৃত করে চলেছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। এই সচেতন সিদ্ধান্তগুলোকে আপনি বিবর্তনের আলোয় কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? প্রাকৃতিক নির্বাচনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্যকে নির্ধারণ করে চলেছি।]
…
[ উন্নত বিশ্বের এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আজকে সন্তান ধারণে অনীহা প্রকাশ করছে কিভাবে? প্রকৃতিতে অন্য কোন প্রাণী তো স্বাধীনভাবে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়! পরিষ্কারভাবেই তারা এখানে জৈবিক বিবর্তনের নিয়মের অধীনে থেকে ‘রিপ্রোডাক্টিভ সাক্সেস’ নয় বরং নিজেদের জীবনের ক্ষনিকের স্বাচ্ছন্দ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সব সিদ্ধান্তই যদি জৈবিকভাবেই নির্ধারিত হয়ে থাকবে তাহলে নিজের বংশাণুকে টিকিয়ে রাখার মত বিবর্তনের এত মৌলিক একটা বিষয়কে আমরা কি করে অবজ্ঞা করতে সক্ষম হচ্ছি?]
…
[আমাদের জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলো জৈবিক বিবর্তনের ফলেই তৈরি হয়েছে, কিন্তু তার ফলশ্রুতিতে যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক যে বৈশিষ্ট্যগুলোর উদ্ভব ঘটেছে তার কতটুকু জৈবিক বা বংশাণু দিয়ে নির্ণিত আর কতটুকুই বা আমাদের নিজ হাতে তৈরি সংষ্কৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?]
…
[নৈতিকতাকেই জৈবিক বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা কি অপরিহার্য নাকি সঠিক? নাকি কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যকে শুধুই সাংস্কৃতিক বিব্ররতন দিয়েই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে]
[তাহলে দেখা যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক এবং জৈবিক বিবর্তন যে বিভিন্ন সময়েই একে অন্যকে প্রভাবিত করেছে এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।]
আমার প্রতিমন্তব্যঃ
১। জৈবিক না সাংস্কৃতিক এই দ্বৈতটা টানাটাই ভুল মনে করি। সংস্কৃতিকে বিবর্তন বহির্ভূত কোন সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোন কারণ দেখিনা। সংস্কৃতি বিবর্তনের একটা “Extended Phenotype” ছাড়া আর কিছু না। চূড়ান্ত বিচারে সংস্কৃতি মানুষের নয়, বিবর্তনেরই এক উৎপাদ, কারণ মানুষ নিজেই বিবর্তনের উৎপাদ। আরো চূড়ান্ত বিচারে বিবর্তন পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের উৎপাদ।
২। অনেক কিছুর ব্যাখ্যা জৈবিক ভাবে করা সম্ভব বা উচিত নয়, সাংস্কৃতিক বিবর্তনের দ্বারা তা করা সম্ভব বা উচিত, এরকমটা বলা অনেকটা এক আবহাওয়া বিজ্ঞানীর এরকমটা বলার সমতূল্য যে ঝড় ঝাপ্টার ব্যাখ্যা পদার্থবিজ্ঞানের দ্বারা সম্ভব বা উচিত নয়, সেটা বুঝতে হলে আমাদের আবহাওয়া বিজ্ঞানের নিয়মের আলোকে বুঝতে হবে। কিন্তু কোনও আবহাওয়া বিজ্ঞানী কি এটা বলেন? বা এটা বলার কোন সার্থকতা বা প্রাসঙ্গিকতা আছে কি? আবহাওয়া বিজ্ঞান দাঁড়িয়েই আছে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের উপর। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হল কোন কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা আর পর্যবেক্ষণলব্ধ কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ধারণ করার মধ্যে পার্থক্যটা। ব্যাখ্যা বলতে আমরা বুঝি কার্যের সাথে কারণের এক যৌক্তিক সম্পর্ক নির্ণয় করা। কারণ দুই রকম : (ক) আসন্ন কারণ (Proximate) (খ) চূড়ান্ত (Ultimate) কারণ। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল কার্যের চূড়ান্ত কারণ খোঁজা। ঝড়ের আসন্ন কারণ আমরা জানি বাতাসে নিম্নচাপের সৃষ্টি। বাতাসে নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে ঝড় হবে এটা পর্যবেক্ষণলব্ধ কার্যকারণ সম্পর্ক। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হবে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের দ্বারা কেন নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ঝড় হয় সেটা বের করা। আবহাওয়া বিজ্ঞানের যেসব নিয়ম বা কার্যকারণ সম্পর্ক সেগুলি এম্পিরিক্যাল সুত্র, মৌলিক নয়। জটিলতার কারণে আবহাওয়া বিজ্ঞানের সব এম্পিরিক্যাল সুত্রগুলি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের সরাসরি প্রয়োগের দ্বারা লব্ধ করা সম্ভব নয়। আবহাওয়া বিজ্ঞানের এম্পিরিক্যাল সুত্রগুলির ব্যবহারিক উপোযোগিতা আছে অবশ্যই। কারণ তা গড়ভাবে আমাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া বিজ্ঞানের সব এম্পিরিক্যাল সুত্রগুলি যে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রেই নিহিত সে ব্যাপারে সন্দহ নেই। সাংস্কৃতিক বিবর্তনের সাহায্যে নৈতিকতা হোক, পরার্থিতা হোক সেটা ব্যাখ্যা করা আসলে ব্যাখ্যা নয়, সেটা পর্যবেক্ষণলব্ধ ব্যবহারিক জ্ঞান। আবহাওয়া বিজ্ঞানের মতই এই জ্ঞানের ব্যবহারিক উপোযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু এটা কোন মৌলিক ব্যাখ্যা নয়। সাংস্কৃতিক নিয়মগুলিও আবহাওয়াবিজ্ঞানের নিয়মগুলির মতই বিবর্তনের বা বিজ্ঞানের নিয়মেই নিহিত। প্রকৃত ব্যাখ্যা বা বোঝার ভিত্তি বিজ্ঞানের নিয়ম না হলে সে ব্যাখ্যা গভীর কোন তাৎপর্য নেই। বিবর্তনের সৃষ্ট সংস্কৃতির সাহায্যে কোন কিছুকে ব্যাখ্যা দেয়াটা প্রকৃত ব্যাখ্যা নয়, সেটা একটা আসন্ন কার্য কারণের একটা বর্ণনা মাত্র। বরং সংস্কৃতিকেই বিবর্তনের দ্বারা ব্যাখ্যা করাটাই তাৎপর্যপূর্ণ। সেটাই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের প্রতিপাদ্য। আরেকটা কথা হল বিজ্ঞানে গায়ের জোরে কিছু হয় না। সব কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রাতারাতি বের করা সম্ভব নয়। ব্যাখ্যা সম্ভব না হলে কেউ দাবী করবে না ব্যাখ্যার। কিন্তু গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেউ বের করতে পারলে সেটাকে “এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্ভব নয়, এটাকে সংস্কৃতির দ্বারা ব্যখ্যা করতে হবে” এটা বলা কোন বিজ্ঞানসম্মত উক্তি হবে না, বরং উচিত হবে সেই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ত্রুটি বের করার বা তার চেয়ে উন্নতর কোন ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা। কোন কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে সম্ভব না হলে সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যার সান্ত্বনার চেয়ে অপেক্ষা করাই শ্রেয়। সাংস্কৃতিক “ব্যাখ্যা” উদ্ভাবন করা সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ। সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান নয়। এটা ছোট করার জন্য বলছি না। সমাজবিজ্ঞানেরও মূল্য আছে।
৩। প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে কোন বিশেষ পরিবেশে বিশেষ কোন বংশাণুর নির্বাচিত হওয়াই বোঝায়। এখানে যোগ্যতমের কোন ধারণা নেই। সুশিক্ষিত সম্পদশালী পশ্চিমা সমাজকে আমরা যোগ্যতম বল্লেও বিবর্তনের ভাষায় যোগ্যতম বলে কিছু নেই। আর এরাই যে সব সময় প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হবে এমন মনে করার কোন কারণ নেই। কোন বিশেষ পরিবেশে যারা নির্বাচিত হচ্ছে তাদেরকে সেই পরিবেশে যোগ্যতম (মানুষের ভাষায়, বিবর্তনের ভাষায় নয়) বলা যেতে পারে, নির্বাচিত হবার পর । অপুষ্টিতে ভোগা,রোগে আক্রান্ত,কম সুযোগ,সুবিধা এবং সম্পদের অধিকারী মানুষের বংশাণু অধিকতর সম্পদশালী মানুষের বংশাণুর চেয়ে বেশী বিস্তৃত হলেও বিবর্তনের নিয়ম ভংগ হল না। প্রথমত বংশাণুর সাথে এই দুই জন গোষ্ঠির সুস্পষ্ট ১-১ সম্পর্ক নেই। এই দুই জনগোষ্ঠির মধ্যে বংশাণুর অনেক ওভারল্যাপ থাকতে পারে। আবার এই দুই জনগোষ্ঠির নিজেদের মধ্যেও বংশাণুর হেরফের আছে, যার কারণে এই দুই জনগোষ্ঠির মধ্যে তাদের স্ব স্ব পরিবেশের কারণে তাদের নিজস্ব জীনপুলের মধ্যে প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটছে। কাজেই দুই জনগোষ্ঠির সংখ্যার তারতম্য (যা আবার সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল) উল্লেখ করে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ভুল প্রয়োগ হচ্ছে বলা যায় না। সময়ের সাথে পরিবর্তনশীলতাটাও এক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। আজ যদি কোন উল্কাপিন্ডের আঘাতে মানব জাতি বিলুপ্ত হয়, তাহলে অন্য কোন ইতর প্রাণী বিবর্তিতি হয়ে “সেরা” জীব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কাজেই মানুষ সব সময় সৃষ্টির সেরা জীব, বা বিশেষ কোন জাতি বা ধর্ম সব সময়ের জন্য সেরা বা উন্নত থাকবে এ ধরণের পরম কোন সত্য নেই বিবর্তনের আলোকে যতদূর জানি আমরা। আর “আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভাগ্যকে নির্ধারণ করে চলেছি” এরকম বলাটা একটা নরত্বকেন্দ্রিক (Anthropocentric) বাক্য হয়ে গেল। আমরা (অর্থাৎ মানুষ) বিশেষ কোন সৃষ্টি নই। বিবর্তনের অন্য সব উৎপাদের মতই একটা। এটা ঠিক যে মানুষ তার মস্তিষ্কের জটিলতার জন্য অন্য সব প্রাণির চেয়ে তার পরিবেশকে বেশী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু সেটা বিবর্তনের নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নয়। মানুষ পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে যা কিছুই সৃষ্টি করে সেটাই বিবর্তনের এক্সটেন্ডেড ফেনোটাইপ, সেটা সংস্কৃত হোক বা বোইং ৭৪৭ বিমানই হোক। এগুলো বিবর্তন বহির্ভূত বা বিবর্তন বিরুদ্ধ কিছু না। আর “স্বাধীনভাবে” নিজেদের ভাগ্যকে নির্ধারণ করার কথা বলা আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসের সমতুল্য। এটা বিজ্ঞানের কথা নয়। মানুষের মস্তিষ্ক বিজ্ঞানেরই উৎপাদ, তা বিজ্ঞানের নিয়মই অনুসরণ করে। সেখানে প্রকৃত স্বাধীনতা কোথায়? প্রকৃত স্বাধীনতায় বিজ্ঞানের নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়াটাও সম্ভব হওয়ার কথা। যা অলৌকিক ব্যাপার। এ পর্যন্ত অলৌকিক ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে ঘটতে দেখা যায় নি।
৪। বিবর্তনের প্রসঙ্গে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য এর কথা আবার মনে করিয়ে দেই। বিবর্তনের নিয়ম পারিসাংখ্যিক গড় অর্থে প্রযোজ্য বা অর্থপূর্ণ। কাজেই কিছু মানুষ সন্তান ধারণে অনীহা প্রকাশ করলেই যে বিবর্তনের বিরুদ্ধে যাওয়া হল তা নয়। গড় থেকে বিচ্যুতি বিজ্ঞানের নিয়মেরই এক প্রকাশ। একই রকম অনেক সঙ্খ্যক বস্তু (প্রাণীও অন্তর্ভুক্ত) র ধর্মই হল গাউসীয় ব্যাপ্তি (Gaussian Distribution) যা আমরা বৈচিত্র্য হিসেবে দেখি। কোন জনগোষ্ঠীর গরিষ্ঠ সঙ্খ্যাই বৈশিষ্ট্যে গড়ের কাছাকাছি থাকে। তাদের কিছু কিছু প্রান্তের দিকেও থাকে। যদিও বংশাণু মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে “Gene Machine” হিসেবে তৈরী করেছে বংশাণু রক্ষার এক কৌশল হিসেব, কিন্তু মিস্ফায়ার ও ঘটে। সন্তান ধারণে অনিচ্ছুকরা এরকম মিস্ফায়ার জনিত জীন মেশিন। কিন্তু যদি সন্তান ধারণে অনীহা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পোষণ করতে থাকে দীর্ঘকাল ধরে, যার ফলে সেই জনগোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়ে যায়, সেরকমটি ঘটলেই বলা যাবে তা বিবর্তনের গড় লক্ষ্যের বিরুদ্ধে যাওয়া হল। সংখ্যায় আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সন্তান ধারণে অনীহা প্রকাশে ইচ্ছুকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা হয় নি। হবেও না নিরাপদে বলা যায়। অবশ্য মানুষের তৈরী কোন এক্সটেন্ডেড ফেনোটাইপের কারণে মানুষ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়া আসম্ভব বা অসম্ভাব্য ব্যাপার নয়। পারমাণবিক আস্ত্রের অপপ্রয়োগ একটা উদাহরণ। কিন্তু সেরকমটা ঘটলেও বিবর্তনের নিয়ম ভুল প্রমাণিত হয় না। উল্কাপিন্ডের আঘাতের মতই পারমাণবিক অস্ত্র একটা পরিবেশজনিত আপত বৈ কিছু না। প্রত্যেকটি একক বংশাণুর মধ্যে প্রতিলিপি তৈরীর ইচ্ছা প্রচ্ছন থাকলেও বহু বংশাণুর সৃষ্ট সংস্কৃতি বা পরিবেশ যে প্রত্যেকটি বংশাণু সংরক্ষণে সহায়ক হবে সেটা কখনই বলা যায় না।
৫। “তাহলে দেখা যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক এবং জৈবিক বিবর্তন যে বিভিন্ন সময়েই একে অন্যকে প্রভাবিত করেছে এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।“ কথাটা ঠিক। এটাকেই বিবর্তনের লিটারেচারে বংশাণু-সংস্কৃতি সহবিবর্তন (Gene-Culture Coevolution) বা দ্বৈত বংশগতির তত্ত্ব (Dual Inheritance Theory) বলে। তবে যেটা আগেও উল্লেখ করেছি আবারও বলছি যে সংস্কৃতি বিবর্তনেরই উৎপাদ(Product or Output) । আর সংস্কৃতির প্রভাবে বিবর্তনের নিয়ম পরিবর্তন হয় না, প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরিবেশ বা প্রয়োগের ক্ষেত্র পরিবর্তিত হয়। এই উৎপাদ আবার উৎপাদককে প্রভাবিত করলেও উৎপাদের স্বকীয় কোন অস্তিত্ব নেই উৎপাদক ছাড়া। উৎপাদ এর উৎপাদককে প্রভাবিত করাটা তড়িৎবিজ্ঞানে Feedback এর কথা মনে করিয়ে দেয়। যেখানে আউটপুটকে ইনপুটের প্রান্তে পুনরায় ঢুকিয়ে দিয়ে আউটপুটকে আবারো পরিবর্তিত করে দেয়া হয়, একটা ফীডব্যাক লুপের মাধ্যমে। কিন্তু ইনপুট দ্বারা আউটপুট সৃষ্টির ফর্মূলার কোন পরিবর্তন হয় না।
@অপার্থিব,
আপনি আমার কোন কোন বিষয়গুলোর সাথে একমত? প্রথমে চলুন আমাদের আলোচনার ভিত্তিটা প্রতিষ্ঠিত করি, তারপর আলোচনা আগানো যাবে। আমি এখানে মূলত ৪ টি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করেছিলাম। আপনি কি প্রথম দুটি প্রশ্নের উত্তরের সাথে একমত যে মানুষের বিবর্তনে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জৈবিক বিবর্তন যেমন আমাদের চিন্তা ভাবনা এবং সংষ্কৃতিকে প্রভাবিত করে ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক বিবর্তনও কি উলটো জৈবিক বিবর্তনের ধারাকে প্রভাবিত করতে পারে?
• ১) মানুষের বিবর্তনে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ভূমিকা কতখানি?
• ২) জৈবিক বিবর্তন যেমন আমাদের চিন্তা ভাবনা এবং সংষ্কৃতিকে প্রভাবিত করে ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক বিবর্তনও কি উলটো জৈবিক বিবর্তনের ধারাকে প্রভাবিত করতে পারে?
• ৩) জৈবিক বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আজকে আমরা কি এমন কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছি যার ফলশ্রুতিতে মানুষ জৈবিক বিবর্তনের প্রভাবের বাইরে গিয়েও সামাজিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
• ৪) আমাদের সব সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা বা নৈতিকতাকেই জৈবিক বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা করা কি অপরিহার্য নাকি সঠিক? নাকি কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যকে শুধুই সাংস্কৃতিক বিবর্তন দিয়েই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?
এখানেই মন এহয় আপনার সাথে আমার দ্বিমত। আমি আসলে মনে করি না যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মকে না মানলেই তা বিজ্ঞানের বাইরে যাওয়া হয় এবং এখানে আত্মা বা আলৈকিক ব্যাপার নিয়ে আসতে হবে ( আপনি তো দেখি আমাকে রীতিমত আত্মাবাদী বানায় দিচ্ছেন :-Y )। এখানে বোধ হয় সাবাই আরেকটা ব্যাপার মিস করে যাচ্ছেন, জৈবিক বিবর্তনের ধারায় আমরা এমন কিছু ইলাস্টিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারি যার ফলশ্রুতিতে আমরা সবসময় প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারা মেনে চলতে বাধ্য নই। যেমন ধরুন একটা উদাহরণ দেই, আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তন হয়তো এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যে, আমরা বহুগামী বা মনোগামী হওয়ার অভিপ্রায়টাকে আমাদের পরিবেশের ভিত্তিতে বদলে নিতে পারি। এর জন্য জেনেটিক ডিটারমিনজমের প্রয়োজন নেই!! এর জন্য তো বিজ্ঞান বাদ দেওয়ার দরকার নেই, বরং দরকার হচ্ছে বিজ্ঞানকে এক্সটেন্ড করা। আমরা যে আজকে বহু ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক নির্বাচনকে কৃত্রিম নির্বাচন দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে শুরু করেছি সেই প্রসঙ্গে আপনার মতামত কি?
@অপার্থিব,
আপনার উত্তরটা আবার পড়লাম, এবং এখন মনে হচ্ছে, উপরের অংশটূকু নিয়ে আলোচনা করলেই আসলে আমার জিজ্ঞাস্য প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে। এই পুরো ব্যাপারটাকে প্রান্তিক এবং মিস ফায়ার বলে ছেড়ে দিলাম বিবর্তনের দৃষ্টিতে, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সমাজতত্ত্ববিদেরা জখন সমাজের এই সাংস্স্কৃতিক বিকাশটাকে ব্যাখ্যা করতে যাবেন, তখন তারা কিন্তু শুধু বলতে পারবেন না এটা মিস ফায়ার। তারা প্রযুক্তি, উৎপাদনের সাথে মেয়েদের সম্পর্ক, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ইত্যাদি দিয়ে এটাকে ব্যাখ্যা করবেন। এর সাথে সাথে এই সমাজগুলোতে বিয়ে, বহুগামিতা, নারী পুরুষের সম্পর্কগুলোকে বিশ্লেষণ করবেন। আমরা যদি বলি সব কিছুই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে তাহলে এক্ষেত্রে একে আপনি কিভাবে মিসফায়ার বলে ছেড়ে দেবেন? এই বিশেষ অংশটা যে সচেতনভাবে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এর বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা তখন কি হবে?
আপনার সাথে আমার মূল দ্বিমতটা বোধ হয় এ জায়গাটাতেই। আমার মতে আমাদের জিনের ইলাস্টিসিটি এতখানি যে আমরা স্বাধীনভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, তার জন্য বিজ্ঞানের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই, অলৌকিকতার কোন স্থানও এখানে নেই। বিবর্তনই আমাদের এই ক্ষমতা দিয়েছে. এর চেয়ে ভালো করে বলতে পারবো না বলে এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ আরনেস্ট গেলনারের একটা কথা কোট করছি, ‘ human species displays an unbelievable degree of behavioral plasticity or volatility but that this genetic under-determination is itself genetically determined…. Paradoxically, this very behavioral plasticity deprives us of much innate, instinctual know how that to survive, we have to learn how to be after we are born. This process of childhood enculturation physically molds the infant brain as it soaks in the human world from the safety of its sling.”
আমার মতে আমরা আজকে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে যতই জেনেটিক ডিটারমিনজমের দিকে সরে যেতে শুরু করেছি ততই বেশী করে মানব বিবর্তনের নভেলটিকে অস্বীকার করতে শুরু করেছি। আমাদের জেনেটিক ইলাস্টিসিটি বা আমাদের বিবর্তনে চেতনা বিকাশের এক অভূতপূর্ব স্তরের কথা বললেই সৃষ্টিবাদীদের সাথে এক কাতারে মিলে যাওয়ার ভয়ের কোন কারণ দেখি না।মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা খুবই নগণ্য জীব, যে কোন স্ময় আমরা বিলুপ্ত হয়ে যেতেই পারি, আবার অন্য কোন প্রাণী দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারি। এর মধ্যে আমরা যদি বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় চেতনাগতভাবে কিছু অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্য অর্জন করে থাকি, সেটা কোনভাবেই অলৌকিকতাকে স্বীকার করে নেওয়া নয়, বরং প্রাকৃতিক নির্বাচন বা বিবর্তন কত শক্তিশালী একটা প্রক্রিয়া সেটা মেনে নেওয়া। এই বিষয়টা আনলেই কাউকে সৃষ্টিবাদী বানিয়ে দেওয়া বা বিবর্তনবিরোধী বানিয়ে দেওয়াটা এক ধরণের ইনসিকিউরিটিরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়।আমার মতে বিজ্ঞান্মনষ্কদের মধ্যে এটা ঘটা উচিত নয়।
@বন্যা আহমেদ,
পূর্বের কথার পুনরুক্তি করেই বলছি সমাজবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয়। ওগুলো ন্যারেটিভ। সমাজবিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানী নন।
জেনেটিক ডিটারমিনিস্ট কারা? যারা পরিবেশের ভূমিকা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন? এরকম কোন বিজ্ঞানী আছেন কি? রিচার্ড ডকিন্স? কয়েকজন প্রখ্যাত জেনেটিক ডিটারমিনিস্ট বৈজ্ঞানিকের (আরাম কেদারা দার্শনিক নয়) নাম উল্লেখ করলে বুঝতে সুবিধা হত। মানব বিবর্তনের নভেলটিকে অস্বীকার করার বৈজ্ঞানিক মানে কি? কারা করেন?
কে দাবী করছে যে সব কিছুর বিবর্তনীয় মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে? এটা ত চলমান প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানের যাত্রা শেষ হয়ে গেছে না কি? মিস্ফায়ার হওয়াটা (বা বলাটা) ছেড়ে দেয়ার ব্যাপার নয়। প্রকৃতিতে এটা হয় প্রাকৃতিক নিয়মেই। পারিসাঙ্খ্যিকতা প্রাকৃতিক নিয়মের অন্তর্নিহিত একটা ধর্ম। কূয়ান্টাম মেকানিক্সের স্পিরিট সেটাই। যেটার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা সম্ভব বা অর্থবহ(পারিসাঙ্খ্যিক বিচ্যুতি ছাড়া) সেটা আজকে না পাওয়া গেলে কালকেও যে পাওয়া যাবে না এরকম ভাবার কারণ কি?
@অপার্থিব,
আমার আসলে এই ধরণের ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট মন্তব্যগুলো নিয়েই সমস্যা। সোশ্যাল সাইন্সকে যদি এক কথায় ন্যারেটিভ এর দোহাই দিয়ে ‘বিজ্ঞান নয়’ বলে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার অনেক কিছুকেই সেই একই কারণে বাদ দিতে হবে। আমি বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার কয়েকশ’ এক্সপেরিমিন্টের উদাহরণ দিতে পারবো যারা ন্যারেটিভের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত। সোশ্যাল সাইন্সের কোন ব্যাখ্যা যদি অব্জেক্টিভ হয় এবং প্রেডিকশান ও ফলসিফিকেশনের অপশান রাখে তাহলে তাকে কেন তাকে বিজ্ঞান বলা হবে না সেটা আমার বোধগম্য নয়।
@বন্যা আহমেদ,
সহমত।
পুরো মন্তব্যেই সহমত।
@বন্যা আহমেদ,
আর আমার সমস্যা যেটা( যার কারণে আমার প্রথম মন্তব্য) সেটা হল “এটা বিবর্তন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না, এর জন্য সামাজিক বা সংস্কৃতিক ব্যাখ্যা দরকার” এই ধরণের অ্যাবসলিউটিস্ট বাক্য। এরকম কথা আমরা অনেক প্রসঙ্গে শুনি “এটা বিজ্ঞানের আওতায় পড়েনা, বিজ্ঞানের এখানে নাক গলান ঠিক না” ইত্যাদি, যেমন নৈতিকতা, শিল্প,নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে। ধর্মবাদীরাও এধরণের মন্তব্য করে। আর অধুনা আধুনিকোত্তরবাদী্রাও (Post Modernists) এধরণের কথা বলে। অমুখের ব্যাখ্যা বিজ্ঞান/বিবর্তন দ্বারা কখনই সম্ভব নয় এটা একটা ডগম্যাটিক উক্তি মনে হয় আমার। আমি তো একাধিকবার জোর দিয়ে বলেছি যে সব কিছুর বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা একদিনেই পাওয়া যাবে তা তো নয়। তাই বলে কখনই সম্ভব নয় এটা কি করে বলা যায়?
বিজ্ঞান নয় বলে “বাদ দেয়া” র কথা উঠছে কেন? যার যার নিজস্ব প্রয়োগের বলয় আছে। ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্যসমালোচনা, এগুলি কোনটাই বিজ্ঞান না হলেও বাদ বা বর্জন করার কথা উঠেছে নাকি। কিন্তু যেটা যা নয় সেটা বলাটা ভুল, সেটাই বলতে চেয়েছি। বিজ্ঞান এর সংজ্ঞা তার উদ্দেশ্য থেকেই পরিস্কার। বিজ্ঞানের কাজ হল কিছু মৌলিক স্বতঃসিদ্ধের (বৈজ্ঞানিক সূত্র, শব্দাবলী নয়ে) ভিত্তিতে কোন কিছুর ব্যাখ্যা বের করা। সে ব্যাখ্যাটা হতে হবে অবশ্যই কোন বৈজ্ঞানিক ধারণা বা নিয়মের ভিত্তিতে। সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস এর কোনটারই লক্ষ্য সেটা নয়। এদের কাজ হল সমাজের ঘটনা, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির বর্ণনা দেয়া, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বের করা, পরিসঙ্খ্যানের দ্বারা। এটার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা কোন ব্যাখ্যা নয়। বিভিন্ন সামাজিক আচার রীতিনীতি জানার জন্য সেটা সহায়ক হতে পারে। ব্যখ্যা মানেই হচ্ছে ঘটনা প্রপঞ্চের আরও মৌলিক কোন ধারণার (যা সমাজবিজ্ঞানের বর্ণনা বা শিক্ষার মধ্যে পড়েনা) ভিত্তিতে একটা কার্য কারণ সম্পর্ক বের করা, আর এই মৌলিক ধারণাগুলি বিজ্ঞানের। বিজ্ঞানের ধারণা বা সূত্রের ব্যবহার বা উল্লেখ না করে যা কিছুই করা হয় তাকে সঠিক অর্থে ব্যাখ্যা বলা যায় না।
তোমার দ্বিতীয় পয়েন্টে আসি। কেউ যদি বিবর্তন বিজ্ঞানের লেবেল দিয়ে বিবর্তনের উল্লেখ বা ব্যবহার না করে বা ভুল ভাবে প্রয়োগ করে কোন ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে, সেটাও ন্যারেটিভ হবে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হবে না। এটা ঠিক যে সেরকমটি ঘটে, তাই বলে তো যেটা যা সেটা বলতে তো কোন বাধা নেই। আবার কেউ যদি স্মাজবিজ্ঞানের লেবেলে বিবর্তনের ধারণাকে ভিত্তি করে সঠিকভাবে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করায়, সেটা গ্রহণযোগ্য এক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হবে, সেটাকে সামাজিক ব্যাখ্যা বলা যাবে না। এরকম টি ঘটে। অনেক সমাজবিজ্ঞানী বিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করে বৈজ্ঞানিক ধারণাভিত্তিক ব্যাখ্যায় সচেষ্ট হয়েছেন। সেটা বিজ্ঞানেরই কাজ, সমাজবিজ্ঞানের নয়। ন্যারেটিভ (অর্থাৎ বিজ্ঞান/বিবর্তনের ধারণা ব্যবহার না করে) যেই করুক, বিজ্ঞানী হোক, বা সমাজবিজ্ঞানী হোক সেটা ব্যাখ্যা নয়। আমি সমাজবিজ্ঞানীদের (যারা বিজ্ঞানের গভীরে যান না) নিজেদের বা সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক বলে দাবী করাকে সন্দেহের চোখে দেখি। বিজ্ঞান যুদ্ধের (Science War) সূত্রপাতই হয়েছে বিজ্ঞান ঈর্ষা (Science Envy) থেকে। এ ব্যাপারে প্রচুর লিটারেচার আছে। পোস্টমডার্নিস্ট ফ্যালাসি নিয়ে বহু আলোচনা বিতর্ক হয়েছে। আমি নিজেও মুক্তমণা গ্রূপে এ ব্যাপারে ইংরেজীতে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।
আরেকটা কথা যেটা ইরতিশাদ তুলেছেন, সেটা হল সব কিছুরই কি বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা খঁজা দরকার, যেমন মানুষের চাঁদে অভিযান। যেটা তিনিন মিস করেছেন, সেটা হল প্রত্যেক ঘটনার আলাদা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন কোথায়? বিজ্ঞান বা বিবর্তন একটা সধারণ ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে দেয়, যেখানে অনেক ঘটনাপ্রপঞ্চকে সাধারণভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। মাইক্রোম্যানেজের প্রয়োজন নেই। মানুষের এক্সপ্লোর করার প্রবৃত্তি তো চাঁদে অভিযান, মেরু অভিযান বা সাগরের তলায় যাওয়া, নতুন দেশ বা আবিষ্কার, সবই তো সেই সাধারণ ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেই পড়ে। আবার কিছু কিছু ব্যাপার পারিসাঙ্খ্যিক বিচ্যুতির মধ্যে পড়ে, তার আর কোন আলাদা ব্যাখ্যার প্র্যোজন পড়ে না।
জৈবিক ও সামাজিক বিবর্তনের পরস্পর নির্ভরতা: আপনার প্রবন্ধের এই মূল সুরের সাথে একমত। ল্যাকটোজ বিষয়ক তথ্য এবং “গ্যাদা বাচ্চা” phrase এর ব্যবহারের জন্য ধন্যবাদ :rose2: ।
জৈবিক বিবর্তনে “যোগ্য”-র সংজ্ঞা হচ্ছে: যে টিকে থাকে। এই সংজ্ঞা এতই শক্তিশালী, এতই সর্বগ্রাসী যে এর বাইরে বেরোনোর সুযোগটা কোথায়? যারা নিজেদের লোপাট হতে দিচ্ছে তারা অযোগ্য, এটাই তো বিবর্তনের আলোয় ব্যাখ্যা।
একারণেই
এই ব্যাপারে একটি Methodological প্রশ্ন চলে আসে। প্রাকৃতিক নির্বাচন, আমি যদি ভুল না বুঝে থাকে, সংজ্ঞায়িত হয় পদ্ধতি দিয়ে নয়, ফল দিয়ে। যে টিকে থাকে, সেই নির্বাচিত। সেক্ষেত্রে “প্রাকৃতিক বিবর্তনের নিয়মের বিরুদ্ধে” বাক্যটি বোঝা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। অনেক রাতে লেখাটি চোখে পড়লো। তারপরেও দ্রুত একবার পড়ে গেলাম। সুাযোগ পেলে আলোচনায় অংশ নিবো। আপাতত শুধু আপনার দ্বিতীয় ডিস্ক্লেইমারের সাথে ভীষণ সহমত জানিয়ে যাই। আমারো মনে হয়, জৈবিক বিবর্তন নিয়ে আপনি/অভিজিৎ’দা সহ মুক্তমনার অন্যান্য লেখকেরা যে পরিমান লেখালেখি করেছেন গত কয়েক বছরে এক কথায় অসাধারণ। এই লেখাগুলো পড়েও যদি কেউ বিবর্তনকে জানতে ব্যর্থ হয় সেটা সেই ব্যক্তির ব্যর্থতা হিসেবে আমি ধরে নিবো। এখন সকলের সময় এসেছে সেই জ্ঞানটুকুকে পরবর্তী লেভেলে নিয়ে যাওয়া। মনোবিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞান সে রকমই কিছু বিষয়।
তবে আমার স্বপ্ন আরো বড়। যদি আমাদের এই জ্ঞানটুকুও পরিপূর্ণতা পায় তখন সেটাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে কিভাবে এই জ্ঞানগুলোকে কাজে লাগানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করা হতে পারে তারও পরবর্তী ধাপ। আমি আপনাদের দু’জনকেই বিশেষ ধন্যবাদ জানাই আবারো মানব বিবর্তন এবং মনোবিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে লেখার অবতারনা করার জন্য। প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছে তখন আমার বিশ্বাস আরো অনেক লেখকই এগিয়ে আসবেন এই বিষয়গলো সম্পর্কে জানার ও লেখার জন্য। আলোচনা চলত থাকুক।
ঠিকে থাকার প্রতিযোগিতাটা মানুষের ক্ষেত্রে এসে আর দৈহিক শক্তির প্রতিযোগিতায় আবদ্ধ না থেকে বুদ্ধির প্রতিযোগিতায় আপতিত হল। মানুষের বিবর্তনের ক্ষেত্রে যারা অধিক বুদ্ধিমান তারাই অধিক যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। এভাবে মানুষের ভাষা এমনকি সংস্কৃতির বিকাশকেও আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি। তবে হ্যা, দৈহিক বিবর্তনের সাপোর্ট না পেলে ব্যাপারটা যে সম্ভব হত না তা বলাই বাহুল্য।
হুম, উচু দালানে বসে নিজেদের সাথে শিম্পাঞ্জির তুলনা বেমানান লাগতেই পারে তবে কেউ যদি ভাবে আদিবাসীদের দূরাবস্থার কথা, বন জঙ্গলে যেসব মানুষ রয়েছে তাদের কথা, আজ থেকে সামান্য কয়েক হাজার বছর আগে প্রকৃতির সাথে আমাদের সংগ্রামের কথা, এক সময় গর্তে বসবাস করার কথা তাহলে শিম্পাঞ্জিকে আমাদের সাথে এক কাতারে ফেলতে আপত্তি থাকার কথা না।
:yes:
বিশিষ্ট বিবর্তনবাদীনির বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও বিবর্তন সম্পর্কে কিছু জানি না শুধু না, একজন অ-বিবর্তনবাদী হিসাবে জানানোর সমস্ত ষড়যন্ত্র থেকেও দূরে থাকি! তারপরও এই লেখাটা পড়লাম, এবং পড়ে বুঝতেও পারলাম (সেটা অবশ্য লেখাটা টেকনিক্যাল না হওয়ায়), এবং ভালো লাগলো। লেখাটা ভালো হইসে, আসলেই।
সমাজবিজ্ঞানীরা বা জীববিজ্ঞানীরা কেউই বোধহয় ঠিক প্রতিপক্ষের ভূমিকায় এখন আর নাই। অর্থাৎ ‘পুরাটাই’ পরিবেশ বা জিনের অবদান না বলে যে যেই ফিল্ড বা পার্স্পেক্টিভ থেকে বলে, সে সেটাকে প্রাধান্য দেয়। আমরা বিবর্তনের বা ‘সভ্যতা’র যে স্তর বা লেভেলে এসে পৌঁছাইসি, সেখানে যে কোন ব্যাখ্যায় এতো কিছু একসাথে আসে, আসতে বাধ্য হয়, যে কোন একটার উপর ভিত্তি করে বড়জোর ফ্রেমওয়ার্কটা দাঁড় করানো যায়। সেটাতে হাড়মাস লাগাতে গেলেই অন্যন্য বিষয়গুলা এসেই পড়ে। যেমন, তোর বর্ণিত প্রযুক্তি তো সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসম্ভব জরুরি একটা প্রসঙ্গ। বিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি জরুরি। প্রযুক্তির কারণে বিবর্তিত সামাজিক বা সাংস্কৃতিক প্যারামিটারগুলা আবার গিয়ে বিবর্তনকেও নিয়ন্ত্রণ করতেসে! কী খিটকেল, কী খিটকেল!!
পরের পর্ব শিগগিরই চলে আসবে লিখেই দিলি, তাই জেন্ডার, জেন্ডার সোশালাইজেশন, বহুমিতা ভার্সাস সিলেক্টিভনেস ইত্যাদি প্রসঙ্গে তোর মত বা ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। নারী অধিকারের প্রসঙ্গে এই বায়োলজ্যিকাল ডিফারেন্সেস বিটুইন দ্য সেক্সেস একটা বিরাট, অমিমাংসিত বিতর্ক। অনেক পুরানোও। বিবর্তন দিয়ে বা প্রাকৃতিক, শরীরবৃত্তীয় পার্থক্য দিয়ে নারী/পুরুষের সমাজে ভূমিকা এবং অবস্থানের পার্থক্য যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় সেগুলা আমার চাইতে তুই অনেক ভালো জানিস। আবার, ব্যক্তি হিসাবে এইসব বিষয়ে তোর অবস্থান আমি জানি, কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত পরিসরে। এখন এই সাংস্কৃতিক বিবর্তনের প্রেক্ষিতে এসব নিয়ে পরের পর্বে কী লিখিস সেটা জানার কৌতূহল হচ্ছে 🙂
একটা প্যারা পরপর দুইবার চলে আসছে, যেটা – “অন্যান্যদের মধ্যে দুধের প্রোটিন সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না” – এই লাইনটা দিয়ে শুরু হয়।
@স্নিগ্ধা,
কি মুশকিল, আমরা টেকনিকাল কথা বললে দোষ আর তোরা বললে কি বিজ্ঞতা কি বিজ্ঞতা!!!!
জেন্ডার সোশালাইজেশন, বহুমিতা ভার্সাস সিলেক্টিভনেস এগুলার অর্থ কি :-X
আমি প্রবন্ধের মূল সুরের সাথে একমত না যে জৈবিক বিবর্তন সামাজক সংস্কৃতির আর চালিকাসূত্র না। যদিও অগভীর ভাবে ভাবলে সেটাই মনে হতে পারে। বরং এটাই বলব প্রযুক্তি এবং জৈবিক বিবর্তনের একটা দ্বন্দ আমাদের সাংস্কৃতিক বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রন করছে। কারনগুলি বলি
[১] চাইল্ডলেস বাই চয়েস বা আধুনিক দম্পত্তিদের মধ্যে সন্তান না নেওয়ার প্রবনতা উন্নত প্রযুক্তির অবদান এবং এটি খুব বেশী হলে তিন চার দশকের ঘটনা। যা বিবর্তনের স্কেলে কিছুই না। কিন্ত এটা ভূললে চলবে না, যেসব সমাজ এবং দম্পতিরা চাইল্ডলেস বাই চয়েস হচ্ছে বা তাদের জন সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে না, তাদের সমাজে রক্ষনশীল অভিবাসী সমাজের আগমন হচ্ছে লেবার শর্টেজের জন্যে। সুতরাং এই ধরনের বিবর্তন বিরোধি মিমগুলি টিকবে না বা টিকতে পারে না। আমেরিকা সহ ইউরোপে সর্বত্র এটাই দেখছি যে রক্ষনশীল অভিবাসী সমাজ আস্তে আস্তে তাদের লিবারেল সংস্কৃতিকে পেছেনে ঠেলছে-কারন লিব্যারাল সংস্কৃতি সমাজকে ধরে রাখতে গেলে যে ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে হয়, সেখানে ব্যার্থ। সুতরাং সেই রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের ধারাই বহাল রইল।
[২] সারভাইভাল নিশ্চিত করার পেছনে প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি উভয়ের ভূমিকা আছে। এর মধ্যে সংস্কৃতির একটি ভেক্টর প্রযুক্তি অন্যটী জৈবিক সারভাইভাল থেকে বেঁচে থাকা মিম গুলি-যার মধ্যে মেয়ের ওপর সন্তান ধারনের জন্যে সামাজিক চাপটাও থাকে। প্রযুক্তির ফলে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি জন্ম হয়েছে-ফলে এই চাপ আর নেই। যার জন্যে চাইল্ডলেস বাই চয়েস টাইপের মিমের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্ত সেই প্রযুক্তিকে টিকিয়ে রাখতেও আগামী প্রজন্মের দরকার-আর সেই সাপ্লাইটা যদি আসে রক্ষনশীল পরিবারগুলো থেকে, রক্ষনশীল মিমটাই টিকবে।
নারীমুক্তি কামী প্রগতিশীলতার মিম নতুন কিছু না-অতীতেও ছিল। কিন্ত তখন নারী মুক্তি সম্ভব ছিল না কারন নারী অনেক অনেক সন্তান ধারন না করলে সেই সমাজ টিকত না। উন্নত চিকিৎসার ফলে এখন নারীকে দুই একজন সন্তান নিলেই চলে-ফলে নারীমুক্তিকামী মিমগুলিকে এখন সমাজ গুরুত্ব দিচ্ছে । কিন্ত সেই মিম এই অবস্থায় যেতে পারে না যে তার জন্যে সেখানে সমাজে লোকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে-তাহলে রক্ষনশীল মিম গুলিইই জিতে যাবে কারন সমাজ টেকানোর জন্যে যা লেবার দরকার, তারা তার উৎপাদন করতে পারবে-কিন্ত “প্রগতিশীল নারীমুক্তিকামী সমাজ” তা পারবে না।
বিবর্তনের বিরুদ্ধে তখনই যাওয়া সম্ভব যখন আমরা কৃত্রিম প্রজননে সক্ষম হব-সেই দিন নারীমুক্তি বা সমানাধিকার ব্যাপারগুলির জন্যে আন্দোলনের দরকার হবে না।
বিপ্লব, বিতর্ক করার জন্য না, বোঝার জন্য আলোচনা করতে চাচ্ছি। প্রথমে বল, প্রযুক্তি কি? আমরা যখন বিবর্তন নিয়ে কথা বলি তখন আমাদের তৈরি প্রযুক্তি যে একটা বিশাল ভূমিকা পালন করেছে সেটা কিন্তু উল্লেখ করি না। প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে মানুষের সম্পর্ককে বাদ দিয়ে কি আসলেই আধুনিক মানুষের বিবর্তন আর ব্যাখ্যা করা সম্ভব? আজকে আমাদের বিবর্তন যে অনেক ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম মেনে হচ্ছে না সেটা কি ঠিক মনে কর? আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচনকে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছি। প্রযুক্তি যেভাবে আজকে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে তা কি ঠিক প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম মেনে করছে?
লেখাটায় আসলে দুটো পার্ট আছে, একটা হচ্ছে প্রযুক্তির কারণে আমরা আজকে কখনো কখনো বিবর্তনের ধারা বদলে দিতে সক্ষম, যেটা আমার কাছে এতটা বিতর্কিত বলে আর মনে হয় না, যদিও এটা বেশীরভাগ বিবর্তনের লেখাতেই উল্লেখ করা হয় না। আর দ্বিতীয় বিষয়টা অবশ্যই বিতর্কিত এবং কনফিউসিং, হয়তো এখনো আমাদের হাতে তার উত্তর নেই। আর সেটা হচ্ছে যে আমরা সচতনভাবে কখনো কখনো এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম যা বিবর্তনের বিরুদ্ধেও যায়, সেটার কারণ খোঁজা।
আর আমি মোটেও বলতে চাইনি যে
তুমি আমার মূল সুরটা বুঝতে পারোনি কিংবা আমি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। তুমি কি পুরো লেখাটা পড়েছো নাকি আবারো পাওয়ার রিডিং করলে? কোথায় এটা বলেছি বল তো? লিখে থাকলে বা মিন করে থাকলে আমি সেটা ঠিক করে দেব। আমি বারবার বলেছি এদের ভিত্তি জৈবিক বিবর্তন। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে কিছু সিদ্ধান্ত মানুষ নিতে সক্ষম যেগুলো জৈবিক বিবর্তনের বিপক্ষে যেতে পারে। আজকে একজন দুজন নয় পৃথিবীতে বেশ বড়সড় একটা অংশে পপুলেশন গ্রোথ নেগেটিভে চলে যেতে শুরু করেছে। জনপুঞ্জে জিনপুলের ফ্রিকোয়েন্সি বদলের ফলে এরা যে অধিক সন্তান উৎপাদনকারী অংশের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে সে তো আমিই লেখায় বলেছি। বিবর্তন কাজ করে জিন লেভেলে যেটা ফিনোটিপিকভাবে ব্যক্তি দিয়ে প্রকাশিত হয়। তাহলে ব্যক্তি কি করে এমন বিবর্তনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম?
আমার প্রশ্ন তো সেটা নিয়ে ছিল না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে একজন দুজন নয় আজকে এত মানুষ কি করে বিবর্তনের বিরুদ্ধে যায় এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে? এর পিছনের ড্রাইভিং ফোর্স কি? নিশ্চয়ই জৈবিক বিবর্তন নয়!
@বন্যা আহমেদ,
না এবার থেকে দেকছি কোটেশন না তুলে দিলে, তুমি বিশ্বাস করবে না, আমি পড়েই বলছি। এই কথাটার সাথেই আমি সহমত না। আর তার কারনটা লিখেছি। তুমি যেটা দেখছ সেটা দু -দশ বছরের নতুন মিম। অনেক অনেক মিমের সৃষ্টি হতে পারে, প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্যে। কিন্ত সেটা নির্বাচিত হল কি না- কি করে জানলে মাত্র ক্ষুদ্র সময়ে? আমার উত্তর ছিল সেই প্রসঙ্গেই
@বিপ্লব পাল, এখানে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি আমরা কৃত্রিম নির্বাচন করছি। আজকে মারাত্মক সব ফেটাল রোগের রুগীদের আমরা বাঁচিয়ে রাখছি প্রযুক্তি তথা কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে। তারা বংশবৃদ্ধি করছে, আমাদের জিনপুলে জিনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াচ্ছে, যেটা বিবর্তনের ধারাকে প্রভাবিত করছে। গত একশ বছরে এটা বাড়তে শুরু করেছে এবং এদেরকে আমরা কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে জিন পুলে টিকিয়ে রাখছি। এটাকে কি বলবে? বিবর্তনের ধারার পরিবর্তন নয়?
@বন্যা আহমেদ,
সব প্রজাতিতে প্রত্যেক মুহূর্তে যে সকল ঘটনা বিবর্তনের ধারা মেনে হয়েছে, এমন নিশ্চয়ই নয়। এই মুহূর্তে যারা টিকে থাকতে সবচেয়ে সক্ষম, একটা বড় ধরনের প্রাকৃতিক তাদেরকে দুর্বলতম বানিয়ে দিয়েছে, আর অন্য কোনো গোষ্ঠীকে বানিয়ে দিয়েছে সক্ষম।
সংক্ষেপে বিবর্তনকে কি বলা যায়, সফল জিনের একত্রীকরণ? ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশি, এই লাইনে আমার ধারণা তেমন নেই।
কাজের হবে, যদি আমরা ভবিষ্যত সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পারি। মানে, এই যে প্রযুক্তির কারণে রোগশোকের জিন জনসংখ্যায় টিকে থাকার সুযোগ পাচ্ছে, এর ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে মানব বিবর্তনের গতিপথ কেমন হবে? কারা টিকে থাকবে, কাদের প্রভাব বাড়বে। তারপর চিন্তা করা যেতে পারে, প্রযুক্তিটা না থাকলে কোন পথে যেত। এখান থেকে বের করা যাবে, প্রযুক্তি বির্বতনের ধারাকে ঠিক পরিবর্তিত করতে পারল কিনা।
আমার মতে, আপনি যেমন বললেন, বিবর্তন ঘটবেই, কিন্তু সেটার গতিপথ তো অসীম সংখ্যক সম্ভাবনার মধ্যে একটিই হবে। সেই গতিপথ পরিবর্তনের হাতিয়ার এখন মানুষের হাতে আছে। একটা উল্কাপাত যেমন পৃথিবীর প্রাণীকূলে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছিল, তেমনি মানুষের ক্রিয়া আগামীতে ব্যাপক প্রভাব রাখবে। মানুষের ভাগ্য মানুষ নিজে `ডিজাইন’ করতে পারবে।
তবে যদি স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু আছে কিনা চিন্তা করেন, তখন আবার গোল পেকে যাবে। এবং তখন মনে হবে, সবই আসলে যান্ত্রিক নিয়মে চলছে, প্রযুক্তির আগেরটা যেমন, তেমন প্রযুক্তির পরেরটাও। 🙂
অংশটি দুই বার এসেছে।
বিভিন্ন প্রাণী এমনকি মানুষের মধ্যেও দেখা যায় জিনের লিগ্যাসি টিকিয়ে রাখার জন্য প্যারেন্টরা নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে।মানুষের বেচে থাকার তীব্র আকাঙ্খাও বিবর্তনের ধারার বিরুদ্ধে যেতে পারেনা।আমাদের সাংস্কৃতিক সিদ্ধান্তগুলোর পক্ষে তা কিভাবে সম্ভব?
@মিথুন,
হে হে, আমারও তো প্রশ্ন সেখানেই!! আমি উন্নত বিশ্বের শিক্ষিত অংশের নারী পুরষের কম সন্তান হওয়ানো, সন্তান একেবারেই না হওয়ানোর বা পপুলেশন গ্রোথ নেগেটিভে চলে যাওয়ার যে উদাহরণটা দিয়েছি সেটা কি করে সম্ভব হচ্ছে? মানুষ কি করে বিবর্তনের বিরুদ্ধে গিয়ে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে? বিপ্লবকে উত্তর দিতে গিয়েও বলেছি আবারো লিখছি, বিবর্তন কাজ করে জিন লেভেলে যেটা ফিনোটিপিকভাবে ব্যক্তিতে এক্সস্প্রেসড হয়। তাহলে ব্যক্তি কি করে এমন বিবর্তনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম? প্রযুক্তিগত কারণে আজকে আমরা যেটা করতে সক্ষম সেটা তো আর কোন প্রাণী করতে সক্ষম নয়।
এমন না যে এর সঠিক উত্তরটা আমার জানা আছে, এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, জৈবিক বিবর্তন দিয়ে যদি এই সিদ্ধান্তটা নির্ধারিত না হয় তাহলে কি দিয়ে হচ্ছে?