উৎসর্গ: নৃপেন্দ্র সরকার
আগের পর্বে “সংখ্যা ব্যবস্থা”-র যে সংজ্ঞা ও উদাহরণ দিয়েছিলাম, হয়ত মনে আছে। এবার সরাসরি কাল্পনিক সংখ্যা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করব। ফিরে যাওয়া যাক গণি ও অগ্নি-র কাছে।
গণি: ইয়ে…
অগ্নি: প্লিজ, না।
গণি: কি ব্যাপার? আমি তো কিছু বলি-ই নি এখনও!
অগ্নি: বলার দরকার নেই, তোর ভাব দেখেই বুঝতে পারছি আবার একটা সংখ্যা ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছিস। আমি এর মধ্যে নেই….
গণি: কিন্তু এটা আগেরটার মত নয়। শুনেই দেখ। এই সংখ্যা ব্যবস্থাটা এরকম: একটা দ্বিমাত্রিক তলের প্রতিটা বিন্দু হল এক একটি সংখ্যা।
অগ্নি: দ্বিমাত্রিক তল?
গণি: হ্যাঁ, মানে যেমন একটা কাগজের একটা পাতা। সেটা একটা দ্বিমাত্রিক তলের অংশ। চারিদিকে অসীম পর্যন্ত ছড়ানো যদি একটা পাতা থাকত, সেটাই হত দ্বিমাত্রিক তল।
অগ্নি: আচ্ছা আচ্ছা। দ্বিমাত্রিক তল বুঝতে পেরেছি। X-অক্ষ আর Y-অক্ষ।
গণি: বাহ্, তাহলে তো খুবই ভাল। তুই কার্টেসিয়ান অক্ষ ব্যবস্থার কথা বলছিস। X-অক্ষ আর Y-অক্ষের সাহায্যে তলের যেকোন বিন্দুকে দেখানো যায়। যেমন এই ছবিটাতে।
যেমন, লাল বিন্দুটা ডানদিকে ১ ঘর আর উপর দিকে ২ ঘর গিয়ে পৌঁছনো যায়, কাজেই একে কার্টেসিয়ান অক্ষ ব্যবস্থায় (১, ২) দিয়ে প্রকাশ করা যায়। তেমনি আরো কয়েকটা বিন্দু এবং তার কার্টেসিয়ান রূপ ছবিতে দেয়া আছে।
অগ্নি: হ্যাঁ, এটা মনে আছে। তবে…একটা কথা। কার্টেসিয়ান অক্ষ ব্যবস্থায় এরকম একটা বিন্দুকে প্রকাশ করতে দুটি সংখ্যা লাগে। কিন্তু তুই বলছিস এই বিন্দু গুলোকে নিয়ে তুই একটা “সংখ্যা ব্যবস্থা” তৈরি করবি। অর্থাৎ প্রতিটা বিন্দু প্রকাশিত হবে একটা সংখ্যা দিয়ে। কেমন যেন না?
গণি: কার্টেসিয়ান ব্যবস্থায় দুই সংখ্যা ব্যবহৃত হয় বলে আমারো তা করতে হবে এমন কোন ব্যাপার নেই। আগেই বলেছি কিন্তু, “সংখ্যা” জিনিসটা বিমূর্ত। সাধারণ অর্থে ভাবলে চলবে না। আমি সংখ্যা ব্যবস্থার নিয়ম গুলি মেনে চললেই হল। এসব কথা রেখে আমার ব্যবস্থাটা সরাসরি বর্ণনা করলে বরং বুঝতে সুবিধা হবে।
অগ্নি: ওক্কে।
গণি: শুরু করব X-অক্ষ আর Y-অক্ষ দিয়েই। প্রথমে X-অক্ষ বরাবর সব বিন্দু গুলিকে “সংখ্যা” হিসেবে প্রকাশ করব। X-অক্ষ আর Y-অক্ষের ছেদ বিন্দুকে বলব ০। এখান থেকে ডান দিকের সংখ্যা গুলি সব ধনাত্মক পূর্ণ মান, আর বাম দিকের সংখ্যা গুলি সব ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা। ছবি দেখ।
অগ্নি: মানে! এতো স্রেফ সাধারণ সংখ্যা ব্যবস্থা। সাধারণ ধনাত্মক-ঋণাত্মক সব সংখ্যা তুই X-অক্ষ বরাবর বসিয়ে দিচ্ছিস!
গণি: ঠিক তাই। এই তো বুঝতে পেরেছিস।
অগ্নি: কিন্তু বাকি বিন্দু গুলি?
গণি: ধীরে বন্ধু, ধীরে। এবার Y-অক্ষ ধরব। Y-অক্ষের একটা বিন্দু কিন্তু এর মধ্যেই সংজ্ঞায়িত করেছি। সেটা হল মাঝখানের বিন্দুটা, যাকে ০ নাম দিয়েছি। বাকি আছে এই বিন্দুর উপর ও নিচের অংশ। উপরে দিকে একটা বিন্দুর নাম দিলাম…ঞ।
অগ্নি: ঞঁ!
গণি: ঞঁ! নয়, ঞ। কোন বিপ্লব রহমানীয় অপশব্দ এখানে আনার দরকার নেই। X-অক্ষে ১ কে যতদূরে বসানো হয়েছে, Y-অক্ষে ঞ কে বসানো হয়েছে ঠিক ততটা দূরেই। অন্য কথায়, ০ থেকে ১ এর যে দূরত্ব, ০ থেকে ঞ-র ঠিক সেই দূরত্ব।
অগ্নি: ঠিক আছে।
গণি: এখন Y-অক্ষের বাকি বিন্দুগুলির সংখ্যারূপ বেশ সোজা। ০ থেকে উপরের দিকের বিন্দুগুলি গুলি ঞ-র তুলনায় কতটা বড় বা ছোট সে অনুযায়ী ২ঞ, ৮.৫ঞ, ০.০২২ঞ ইত্যাদি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশিত হবে। আর ০ থেকে নিচের বিন্দুগুলি ঠিক উপরের বিন্দুগুলির মতই, শুধু সামনে একটা – বসবে। অর্থাৎ -ঞ, , -২ঞ, -৮.৫ঞ, -০.০২২ঞ ইত্যাদি।
অগ্নি: অ। এত কিছুই না। X-অক্ষের মতই অনেকটা। স্রেফ সাধারণ সংখ্যাগুলিকে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত লাইন বন্দী করে সাজিয়ে দিয়েছিস, আর একটা ঞ জুড়ে দিয়েছিস প্রত্যেকটার সঙ্গে।
গণি: “জুড়ে দেয়া” ঠিক গাণিতিক ভাষা নয়, তবে কথা ভুল বলিসনি।
অগ্নি: কিন্তু এতো কেবল পুরো কাগজের পৃষ্ঠার মধ্যে দুটো লাইন। বাকি পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে বিন্দুগুলির কি হবে?
গণি: সেটা বলার জন্য আগে এই সংখ্যা ব্যবস্থায় “যোগ” বলতে কি বোঝানো হচ্ছে তা সংজ্ঞায়িত করতে হবে। চার ধাপে সেটা করছি:
১) X-অক্ষের দুটি সংখ্যা যোগ করা ঠিক সাধারণ সংখ্যা যোগ করবার মত: অর্থাৎ
২+৫ = ৭
১০+(-৮) = ২
(-২)+(-৪.৫) = -৬.৫
ইত্যাদি।
২) Y-অক্ষের দুটি সংখ্যা যোগ করাও সাধারণ সংখ্যা যোগ করবার মতই: অর্থাৎ
২ঞ+৫ঞ = ৭ঞ
১০ঞ+(-৮)ঞ = ২ঞ
(-২ঞ)+(-৪.৫ঞ) = -৬.৫ঞ
ইত্যাদি।
৩) X-অক্ষের সংখ্যার সাথে Y-অক্ষের সংখ্যা যোগ করা: এটাই একটু অন্যরকম। উদাহরণ দিয়ে দেখানোই সবচেয়ে সোজা। ধরা যাক, ২ আর ২ঞ যোগ করা হচ্ছে। ২+২ঞ সংখ্যাটি X-অক্ষ বা Y-অক্ষের ওপর থাকবেনা, থাকবে X-অক্ষ বরারব ২ঘর ডানে ও Y-অক্ষ বরাবর ২ঘর উপরে। অন্য ভাবে বলা যায়, কার্টেসিয়ান ব্যবস্থায় যে বিন্দুটিকে (২,২) দিয়ে সূচিত করা হত, সেটিকেই আমরা প্রকাশ করব ২+২ঞ দিয়ে। একই ভাবে -১.৫+৮ঞ হচ্ছে কার্টেসিয়ান ব্যবস্থায় (-১.৫, ৮) দিয়ে যে বিন্দুটি প্রকাশ পায় সেটি। ছবিতে একটা উদাহরণ আছে:
৪) দুটি মিশ্রিত সংখ্যা যোগ করলে কি হবে সেটা আগের তিনটি আইন থেকেই অনুমান করা চলে। ঞ ছাড়া অংশ আর ঞ ওয়ালা অংশ আলাদা আলাদা যোগ হবে। যেমন:
৩ + (৮ + ঞ) = ১১ + ঞ
-৪.৫ + (২ – ৩ঞ) = -২্৫ – ৩ঞ
১ – ঞ + (-১ + ঞ) = ০
১০ – ২.৩ঞ + (-১ + ঞ) = ৯ – ১.৩ঞ
অগ্নি: হুঁ, বুঝলাম। কিন্তু একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। মনে হচ্ছে, কার্টেসিয়ান ব্যবস্থাটাকেই তুই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ঞ-টিঞ দিয়ে দেখাচ্ছিস।
গণি: দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকা…
অগ্নি: থাম।
গণি: উম, কথাটা একেবারে ভুল বলিসনি। নতুন ব্যাপারটা আসবে এখুনি। তবে নতুন কিছু না থাকলেও সমস্যা নেই। একই জিনিসকে নানান ভাবে দেখা গণিতবিদদের সাধারণ প্রবণতা। একেক ভাবে দেখলে একেক জিনিস চোখে পড়ে, “মৌলিক” কোন প্রভেদ না থাকলেও।
অগ্নি: নতুন ব্যাপারটা বল।
গণি: গুণ! সংখ্যা ব্যবস্থাটাকে সম্পূর্ণ করতে হলে যেকোন দুটি “সংখ্যা” কে “গুণ” করতে পারতে হবে। প্রথমত, X-অক্ষের সংখ্যা দিয়ে গুণ। উদাহরণ দিই, তাহলেই বুঝবি:
২ $latex \times$ ২ = ৪
-২ $latex \times$ ২.৫ঞ = -৫ঞ
৪ $latex \times$ (-৭ + ৫ঞ) = -২৮ + ২০ঞ
এই গুণের ব্যাপারটা “জ্যামিতিক” ভাবেও দেখা যেতে পারে। ছবি আগে ব্যাখ্যা পরে।
যা দেখছি ছবিতে সেটা এরকম। যেকোন বিন্দু “ক” নেয়া যাক। এই বিন্দুকে প্রতিনিধিত্ব কারী সংখ্যাকে যদি ২ দিয়ে গুণ করা হয়, তবে যে বিন্দুটি পাওয়া যাবে সেটার নাম দেয়া যাক “খ”। তাহলে “ক” আর “খ” এর জ্যামিতিক সম্পর্ক এরকম: ০ আর ক কে সংযোগ কারী রেখাটাকে যদি তুই টেনে দ্বিগুণ লম্বা করিস, তাহলে তার মাথাটা যেখানে পৌঁছাবে সেটাই হল “খ”। অন্যান্য সংখ্যা দিয়ে গুণ করার ব্যাপারটাও একই ভাবে টেনে লম্বা করা বা খাট করার দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
অগ্নি: উঁ। এই গুণ করার ব্যাপারটা কার্টেসিয়ান ব্যবস্থায় নেই ঠিক। কিন্তু তাও খুব একটা বিস্মিত হতে পারছি না। তুই যা বলছিস সেটা এরকম, একটা সংখ্যাকে ৬ বা -৯ দিয়ে গুণ করা মানে হচ্ছে ওই সংখ্যার ঞ-ওয়ালা আর ঞ-ছাড়া অংশ গুলিকে আলাদা আলাদা ভাবে ৬ বা -৯ দিয়ে গুণ করা। ঠিক কিনা!
গণি: ঠিক। কিন্তু এখনও Y-অক্ষের সংখ্যা দিয়ে গুণ করাটা বাকি আছে। সেটাও জ্যামিতিক ভাবে আগে দেখাবো। প্রথমে বুঝতে হবে ঞ দিয়ে গুণ করলে কি হয়। সেটা বুঝলে Y-অক্ষের বাকি সংখ্যা গুলি দিয়ে গুণ করলে কি হয় সেটা সহজেই বোঝা যাবে।
নিয়ম টা এরকম:
কোন সংখ্যাকে ঞ দিয়ে গুণ করলে যে সংখ্যাটা পাওয়া যাবে সেটা এরকম: সংখ্যাটা যে বিন্দুর প্রতিনিধিত্ব করে সেটার সাথে ০-র সংযোগকারী রেখাটা নেব। এবার এই রেখাটাকে counter clock wise ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিলে রেখাটার মাথা যেখানে পৌঁছাবে সেটাই হল মূল সংখ্যার সাথে ঞ-র গুণফল। নিচের ছবি দুটোয় উদাহরণ দেখা যেতে পারে।
দুটো ছবিতেই ব্যাপারটা এরকম: যে সংখ্যাটাকে ঞ দিয়ে গুণ করা হবে তাকে দেখানো হয়েছে একটা নীল বিন্দু দিয়ে, এবং ওই বিন্দুর সাথে ০-এর সংযোগ রেখাটাকে নীল একটা তীর দিয়ে দেখানো হয়েছে। নীল সংখ্যাটাকে ঞ দিয়ে গুণ করার পরে যে সংখ্যাটা পাওয়া গেল সেটা লাল তীর এবং লাল বিন্দু দিয়ে দেখানো হয়েছে।
অগ্নি: এটা কিভাবে সম্ভব? কোন সংখ্যাকে আরেকটা সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে সেটা এভাবে “ঘুরে” যায় কিভাবে?
গণি: গদাম! সংখ্যা ব্যবস্থায় গুণের সংজ্ঞায় কি বলছে? “যেকোন দুটি সংখ্যাকে গুণ করলে আরেকটা সংখ্যা পাওয়া যাবে।” ছবির নীল সংখ্যাগুলিকে ঞ দিয়ে গুণ করলে যেটা পাচ্ছি, লাল তীর/বিন্দু দিয়ে যেটা দেখানো হচ্ছে, সেটাও একটা সংখ্যা। কাজেই মিলে যাচ্ছে।
অগ্নি: হম। বুঝলাম মনে হয়।
গণি: তাই? পরীক্ষা নেয়া যাক। ঞ × ১ কত?
অগ্নি: সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানে তো মনে হয় ঞ হওয়া উচিত, কারণ যেকোন সংখ্যার সাথে ১ গুণ করলে সংখ্যাটা অপরিবর্তিত থাকে। তোর সংজ্ঞা অনুযায়ী অবশ্য…১ কে আমার ৯০ ডিগ্রি কাউন্টার-ক্লকওয়াইজ ঘোরাতে হবে…সেটা করে পাচ্ছি…ও, সেই ঞ-ই তো পাচ্ছি। এই ছবির মত:
গণি: লা-জওয়াব! এখন বল, ঞ × ঞ কত?
অগ্নি: পারা যাবে এসব এখন, ধরে ফেলেছি ব্যাপারটা। ঞ হচ্ছে Y-অক্ষ বরাবর ১ দৈর্ঘের একটা দাগ, সেটাকে ৯০ ডিগ্রি ঘুরালে সেটা ঘুরে গিয়ে X-অক্ষ বরারব পড়ছে…ও, -১। উত্তর -১। এই যে ছবি:
গণি: ঞ × ঞ = -১?
অগ্নি: হ্যাঁ।
গণি: অর্থাৎ?
অগ্নি: কি অর্থাৎ? ঞ × ঞ = -১, এর আবার…ও…মানে ঞ২ = -১। অর্থাৎ, -১-র বর্গমূল ঞ? ঞ-ই কি সেই রহস্যময় “কাল্পনিক” সংখ্যা? ঞ-ই $latex i$?
গণি: “ঞ-ই আঁই” — এটা কি চট্টগ্রামের কোন প্রবাদ বাক্য?…(অগ্নির অগ্নিমূর্তি অবলোকনে) হ্যাঁ, এই সেই $latex i = \sqrt{-1}$।
অগ্নি: তার মানে -১ এর বর্গমূল আসলে আছে?
গণি: এই সংখ্যা ব্যবস্থায়, হ্যাঁ আছে।
অগ্নি: “এই সংখ্যা ব্যবস্থায়”? আসলে কি তাহলে নেই?
গণি: অর্থহীন মন্তব্য। যেকোন গাণিতিক ধারণা একটা সংখ্যা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতেই হয়। বর্গমূল একটা গাণিতিক ধারণা। এবং আমার সংজ্ঞায়িত সংখ্যা ব্যবস্থায় -১ এর বর্গমূলের অস্তিত্ব আছে। কথা শেষ।
অগ্নি: গণিতবিদরা যে $latex i$ ব্যবহার করেন, সেটা কি একই জিনিস?
গণি: হ্যাঁ, গণিতবিদরা প্রায় হুবুহু এই একই সংখ্যা ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। এবং যখন বলেন -১ এর বর্গমূলের কথা, তখন এই অর্থেই বলেন।
যেসব পাঠক এখনও টিকে আছেন, কাল্পনিক সংখ্যার রহস্য তাঁদের কাছে কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে এই আশা রাখি। গাণিতিক ভাবে কাল্পনিক সংখ্যার সংজ্ঞা পরিষ্কার হলেও এর প্রায়োগিক উপযোগিতা সম্বন্ধে এখনও কিছু বলা হয়নি। সেটিই হবে শেষ পর্বের উপাদান।
চলবে….
সবই ঠিক আছে কিন্তু “ঞ” যে একটা সংখ্যা তার সংজ্ঞায়ন তো করেননি যেভাবে আগে ভিন্ন একটা সংজ্ঞাকে যোগ আর গুণ অপারেটরের মাধ্যমে করেছিলেন।
বেশ ভালো লাগলো, প্রাঞ্জল ভাষায় বিজ্ঞান লিখেছেন, তাও আবার গণিতের মতো বিজ্ঞান, গল্পের সাথে যার সুসম্পর্ক থাকে না সাধারণত। i এর ব্যাবহারিক প্রয়োগ নিয়ে লিখবেন বুঝি পরের পর্বে? সেখানে ইউলার্স আসবে সম্ভবত, অপেক্ষায় থাকলাম।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার মন্তব্য এসেছে দেখে বেশ ভয়ে ভয়েই ক্লিক করলাম 😀
ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল। শেষ পর্বের ব্যাপারে এখনও পরিষ্কার কিছু চিন্তা করিনি।
@রৌরব,আচ্ছা শোনেন, এই গণিত নামক ‘বিচ্ছিরি’ বিষয়টা কি বিজ্ঞানের অংশ নাকি শুধুই একটা টুল। গণিত দিয়ে তো অনেক কিছু হিসাব কষে বের করা যায়, তাই বলে তো সেটা ‘যাচাইযোগ্য পর্যবেক্ষনগত বিশ্লেষণনির্ভর পূর্ভাবাসযোগ্য’ (প্রোপ্রাইটরিঃ সংশপ্তক) হয়ে যায় না, তাই না?
@বন্যা আহমেদ,
টুলই বলব :)। আসলে গণিত দিয়ে ভৌত জগৎ (অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের জগৎ) সম্বন্ধে কিছু প্রমাণ করা যায় না। গাণিতিক প্রমাণ নির্ভরশীল গাণিতিক অনুমানের এর উপর, এবং একটা বিশেষ বৈজ্ঞানিক প্রশ্নে ওই assumption গুলি সঠিক কিনা, সেটা অগাণিতিক প্রশ্ন, এবং পর্যবেক্ষণের ব্যাপার। Assumption গুলি সঠিক হলে অবশ্য গণিত ভীষণ ভাবে সাহায্য করতে পারে, যেমনটি দেখা যায় তাত্বিক পদার্থবিদ্যায়। Assumption গুলি বেঠিক হলে আবার গণিত ভীষণ ভাবে ক্ষতি করতে পারে, যেমনটি দেখা গেল শেয়ার বাজারে তাত্বিক অর্থনীতি প্রয়োগ করতে গিয়ে।
পোকাঁরের নিবন্ধটাতে এবিষয়ক কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল তাঁর।
যাচাইযোগ্য হয়ত হতে পারে, কিন্তু যাচাইকৃত নয়, বা নয় পর্যবেক্ষনগত বা পূর্ভাবাসযোগ্য। হ্যাঁ, গণিত খুব নান্দনিক হলে অনেক সময় বিজ্ঞানীরা হয়ত বলেন “এই হিসাব সত্য না হয়েই যায় না” — এবং দেখা যায় সে হিসেব পরে পর্যবেক্ষণে মিলেও গেল (এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয়), কিন্তু সেটা স্রেফ তাঁদের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক অনুমান।
গাণিতিক হিসাব আর পর্যবেক্ষণে বেমিল হলে (ধরে নিচ্ছি পরীক্ষণ গত ত্রুটি ঘটে নি) নিশ্চয়ই গাণিতিক হিসাব বর্জিত হবে, পর্যবেক্ষণ নয় (বিজ্ঞানের কাজই যেহেতু পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করা)। এরকম টা হলে তার মানে সাধারণত দাঁড়ায় এই: যে assumption এর উপর ভিত্তি করে গণিত করা হচ্ছিল, সেটি ঠিক নয়।
:no:
গণিতের সুগন্ধি সৌরভতান্ডবে কৌরব কুলবংশজাত মহান গণিতবিদ মহামতি রৌরবের গৌরব হয়তো বেড়েছে, কিন্তু মহামূর্খ আমরা যারা গণিত রাজ্যের অপাণ্ডব বংশের ছানাপোনা, তাদের প্রাণখানা যে এই তান্ডব ফানাফানা করে ছেড়েছে।
@ফরিদ আহমেদ, 🙁
@রৌরব,
কষ্ট করে কষ্টকাল্পনিক লেখার জন্য কিপটেমিবিহীন কমলকোমল (জাতীয়তাবাদী) শুভেচ্ছা। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
আমার করুণ মুখ দেখবার পরে আপনার এই শুভেচ্ছা পেয়ে আমার উপহার দেয়া উচিত একটি কাষ্ঠহাসির ইমোটিকন। সেই ইমোটিকন নেই এ মুহূর্তে, কখন পাওয়া যাবে সেটাও একমাত্র আল্ল..আই মিন, শাফায়তই জানেন, কাজেই….
[img]http://www.how-to-draw-cartoons-online.com/image-files/cartoon_sheep.gif[/img]
@রৌরব,
চরম ছবি,আপনি একেছেন নাকি এটা? এটাকো মুক্তমনার ব্যানার বানিয়ে দিব ভাবতেসি 😀 ।
কিন্তু হঠাত সবাই ইমোর পিছে লাগল কেন? ফরিদদাও কিসের যেন ইমো খুজে না পেয়ে কিসের যেন ছবি দিল(!),বিপ্লব রহমান কাঠাল পাতার ইমো চায়, সাইফুল ভাই “গদাম” এর ইমো খুজে,কাহিনী কি? :-/ :-/ ।
@রামগড়ুড়ের ছানা, মেল শভিনিজম এর এক্সপ্রেশানের ইমো দরকার আমার একটা।
@বন্যা আহমেদ,
আমার ছবি দিয়েই কাজ চলে যাবার কথা। ওটা দিয়েই না হোক বানানো হোক মেল শভিনিজম এর ইমো।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
দু-তিনটে জ্যামিতিক ছবি আঁকার কারণে সবাই আমাকে পেইন্টার ঠাউরাচ্ছে নাকি! নাহ্, ওয়েবে “sheepish smile” সার্চ দিয়ে পাওয়া।
উনি চাচ্ছিলেন ফিমেন শভিনিজমের ইমো। নিচে বন্যা আহমেদের অনুরোধও এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য 😀
খুব ভাল লাগল। পুরোনো লেখাগুলিও দেখলাম, আপনার রসজ্ঞান আছে বটে। ভবিষ্যতের পর্বটির অপেক্ষায়। ওঃ! clockwise আর counter-clockwise এর বাংলা কি হবে? দক্ষিণাবর্তী/ডানাবর্তী ও বামাবর্তী? 🙂
@দীপেন ভট্টাচার্য,
ঠিকই বলেছেন, বাংলা একাডেমীও তাই বলছে। তবে সেটা পাঠকের জন্য বিভ্রান্তিকর হবে কিনা ভাবছি। নাকি লম্বা করে “ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে” এভাবে লিখব?
@দীপেন ভট্টাচার্য,
সব কিছুর বাংলা না করলেই কি নয়? নতুন শব্দ সৃষ্টি ও ব্যবহার বক্তব্যকে দুর্বল এবং দ্বিধাগ্রস্থ করে, পড়ার গতিও কমিয়ে দেয়।
এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত।
@নৃপেন্দ্র সরকার, একমত। আসলে আমার প্রশ্নটা রৌরবের চমৎকার লেখায় বাংলা পরিভাষা প্রয়োগের ব্যাপারে ছিল না। বিজ্ঞানের বা আধুনিক লেখায় ক্লকওয়াইজ বা কাউন্টারক্লকওয়াইজ ব্যবহার করা চলে (বা উচিত), কিন্তু কোন কোন ধরণের বাংলা বাক্যে হয়তো দক্ষিণাবর্তী বা বামাবর্তী ব্যবহার করতে হয়। এই দুটি কথা (বিশেষতঃ দক্ষিণাবর্তী) প্রাচীন এবং পুরাতন আচার অনুষ্ঠানের বর্ণনায় এদের প্রয়োগ ছিল। তাই নয় কি? শুভেচ্ছা।
@দীপেন ভট্টাচার্য, আমিও একমত। আমি শুধু যে এই বিশেষ শব্দদুটোকে লক্ষ্য করে বলিনি তা বুঝতে পেরেছেন তা আমি জানি। আপনার সাম্প্রতিক লেখাটার কথাই ধরুণ,
কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দত্রয় থেকে ব্যাপারটি যত সহজে বুঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ শব্দচতুষ্ঠয় থেকে জিনিষটি বুঝতে গেলে একটু খানি সময় দিতে হয়।
শুভেচ্ছে থাকল।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
তবে ডানাবর্তী ও বামাবর্তীটা মনে রাখার সহজ উপায় হলো নিজেকে কেন্দ্রে কল্পনা করে তাকাতে হবে ঘুর্নায়মান বস্তুটার দিকে। ওটা যদি আপনার ডান দিকে সরে তাহলে ডানাবর্তী। আর বাম দিকে সরলে বামাবর্তী।
এ ধরণের লেখা পেলে আমি সবসময় খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। এই লেখাটি আরো ১-২ ভালো করে পড়তে হবে পুরোপুরি বুঝতে। ধন্যবাদ এই সিরিজটি লেখার জন্য।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂
@রৌরব,
আপনার সিরিজে gaussian primes নিয়ে একটা অংশ যোগ করা যায়কি? জিনিসটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এই সিরিজে নয়। আসলে কাল্পনিক সংখ্যাটা নিমিত্ত মাত্র, গাণিতিক বিমূর্তায়ন বা সাধারণীকরণই মূল উদ্দেশ্য এই সিরিজের। প্রায়োগিক দিকটা একেবারে বাদ দেব না বলে ৪ নম্বর পর্বটি লিখব, কিন্তু gaussian prime এর মত অনেক ইন্টারেস্টিং (ইন্টারেস্টিং এর ভাল বাংলা কি?) জিনিস আছে যার সব আলোচনা করা সম্ভব নয়।
কল্পনা করে লিখতে হয়তো আপনার কষ্ট হয়েছে, আমি কিন্তু পড়ে বেশ মজা পেলাম।
বাংলা বর্ণমালার endangered species ঞ-কে বাঁচিয়ে রাখার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য একজন চাটগাঁইয়া হিসেবে আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। (আচ্ছা, কী-বোর্ডে কোন বোতামটা চাপলে ঞ আসে? আমি মাউস-ক্লিক করে টাইপ করেছি, আপনিও কি?)
@ইরতিশাদ,
শুনে স্বস্তি পেলাম, চাটগাঁইয়াদের প্রতিক্রিয়া কি হয় ভেবে কিঞ্চিত ভীত ছিলাম 😛 ।
Good lord, no! মাউজ দিয়ে এ জিনিস লিখতে গেলে লেখা কষ্টকর নয়, হত অসম্ভব। লেখার নাম দিতে হত “অসম্ভব কাল্পনিক” :)। আমি অন্য জায়গায় কিবোর্ডে লিখে পেস্ট করেছি।
মারাত্নক!!! :yes: :yes: :yes:
@মিথুন,
পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂
@রৌরব,
ছবিগুলো নিয়ে অনেক খাটাখাটুনি গেছে, বুঝাই যাচ্ছে। আশা করছি প্রায়োগিক উপযোগিতা নিয়ে শেষ লেখাটির জন্য বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আশা রাখি অচিরেই বাকি পর্বটি মাঠে নামাতে পারব :)।
সত্যি কথা বলতে কি , আপনার কষ্টকাল্পনিক সিরিজের পোস্টগুলো ২/৩ প্যারা পড়ার পরে আর ধৈর্য রাখতে পারিনা এবং কখনৈ শেষ পর্যন্ত পড়া হয়ে ওঠেনি। আমার অংকে যে এলার্জি আছে তা কিন্তু নয় , তবে মনে হয় এটা কি কাজে লাগবে , সেটা না বোঝার জন্যই মনে হয় এমনটা হয়। আপনার পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। এর প্রায়োগিক উপযোগিতা জানলে হয়তো বা সবটুকু পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
@ফারুক,
হে হে, দেখা যাক 🙂
রৌরব, যাক লেখা বেরুলো তাহলে 🙂 ! লেখাটার চেহারাকান্তি দেখে বুঝতে পারলাম কেন পর্বটা আসতে এতদিন লাগল।
‘ঞ’ মনে হয় তার জীবনকালে আর কোন লেখায় এতবার ব্যবহৃত হয়নি। এরকম ডিমান্ড দেখে ওর জন্য খুশী হব না দুঃখ পাবো বুঝতে পারছি না। বেচারা জীবনে একবার এরকম পাত্তা পেল কিন্তু আবার যোগ বিয়োগ গুণ ভাগের টানাহেচড়া সামলাতে গিয়ে তো রীতিমত অক্কা পাওয়ার মত অবস্থা ! আপনার ‘ঞ’ প্রীতির পিছনে কি কোন কাহিনি আছে?
@বন্যা আহমেদ,
আপনার “আদেশ” পেয়েই কাজে নেমে পড়েছিলাম 🙂
নাহ! তবে দুটি আধা-pun এ ঞ-কে কাজে লাগাতে পেরেই খুশি।
ইয়ে মানে আপনি যদি কোনো ভার্সিটিতে গণিত পড়ান তবে একটু বলেন না প্লিজ, পেছনের বেঞ্চিতে চুপিসারে গিয়ে বসে থাকব।
@সৈকত চৌধুরী,
সর্বনাশ! এতটা সময় নষ্ট করবেন? 😉
@রৌরব,
ভাইয়া আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি অনলাইন ম্যাগাজিন প্রকাশ করে থাকি। নাম গ্যালাক্টিকা। আমরা সবাই অনার্স এ পড়ি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যখনি সময় পাই ম্যাগাজিনটি বের করার ট্রাই করি। ম্যাগাজিনের প্রধান উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞান বিষয়ক নানা বিষয় সহজ ভাষায় ফুটিয়ে তোলা। আপনার লিখা গুলো অনেক ভালো লাগে। তাই কিছু লিখা দিতে চাই ম্যাগাজিনে। বিশেষ করে কষ্টকাল্পনিক এই লিখাটি অনেক ভালো লেগেছে। এটি প্রকাশ করতে চাই যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বেসিক খুবই দুর্বল। সত্যি বলতে কি আমার নিজেরও। তাই এই ম্যাগাজিনটি করার ইচ্ছা। শুধুমাত্র সখের বসেই করা। খুব খুশি হব যদি আপনি সথে থাকেন। আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ওয়েব সাইট : http://mgalactica.blogspot.com/
ফেইসবুক পেইজ:http://www.facebook.com/mgalactica
@ইয়াসিন,
আপত্তি নেই। শুধু কোথা থেকে পেয়েছেন সেটা লিংক সহ দিয়ে দিলেই চলবে। “মুক্তমনা ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত এবং লেখকের অনুমতিক্রমে পুনর্মুদ্রিত। মূল লিংক http://mukto-mo….” এরকম কিছু একটা দিলেই হবে।
আপনাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই, যদিও একটিভলি নিজে খুব একটা কিছু করতে পারব না বোধহয়। বিজ্ঞান নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছা আছে অবশ্য মুক্তমনায়।
হেঃ হেঃ লেখাটা বেশ মজারু হইসে! ভালই কষ্ট করছেন। ছবিগুলো কি আপনিই তৈরি করেছেন নাকি?
আপনি আরেকটু ঘন ঘন লিখলেও তো পারেন!
@অভিজিৎ,
ছবি আমারই :)। লিখতে আপত্তি নেই, তবে এত ছবি ওয়ালা কিছু না :D, ঘাম ছুটে গেছে।