৪
বিকল্প ইতিহাস
১৯৯৯ সালে অস্ট্রিয়ার একদল পদার্থবিজ্ঞানী ফুটবল আকৃতির কিছু অণুকে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে একটি পরীক্ষা করেন। ষাটটি কার্বন পরমাণু দিয়ে তৈরি এই অণুগুলোকে প্রায়ই বাকিবল নামে ডাকা হয়, কারণ স্থপতি বাকমিন্সটার ফুলার এই আকৃতির ভবন নির্মাণ করতেন। ধারণা করা হয় ফুলারের ভূ-আকৃতির গম্বুজগুলোই পৃথিবীর বুকে ফুটবল আকৃতির বৃহত্তম বস্তু। আর বাকিবলরা হচ্ছে ক্ষুদ্রতম। বিজ্ঞানীরা যে দেয়ালের দিকে তাক করেছিলেন, সে দেয়ালে দুইটি চিড় বা লম্বা ফালি আকৃতির ছিদ্র ছিলো, যেগুলো দিয়ে বাকিবলগুলো পার হতে পারে। দেয়ালের পিছনে বিজ্ঞানীরা পর্দার মত একটা বস্তু বসিয়েছিলেন যেটা দেয়াল পার হয়ে আসা অণুগুলোকে নির্ণয় ও গণনা করতে পারে।
সত্যিকারের ফুটবল দিয়ে যদি আমাদের এই পরীক্ষা করতে হয় তাহলে আমাদের এমন একজন খেলোয়ার লাগবে যার তাক অতটা ভালো না, তবে সে আমাদের বেঁধে দেওয়া একটা নির্দিষ্ট গতিতে একের পর এক ফুটবলে লাথি দিতে পারে। আমরা আমাদের সেই খেলোয়ারকে সেই দুইটি ফাঁকা স্থান বা ছিদ্রবিশিষ্ট দেয়ালটার সামনে দাঁড় করাবো। একই বরাবর দেয়ালের অপর দিকে আমরা দেয়ালের সমান্তরালে একটি খুব বড় জাল টাঙাবো। খেলোয়ারের বেশিরভাগ শটই দেয়ালে লেগে ফিরে আসবে, কিন্তু মাঝে মাঝেই দুয়েকটা শট দুইটি ছিদ্রের যে কোনো একটি দিয়ে পার হয়ে যাবে। এখন এই ছিদ্রদুটির ফাঁকা যদি বলের আকারের চেয়ে স্রেফ একটু বড় হয় তাহলে আমরা দেয়ালের অপর পাশ থেকে দুইটি সূক্ষ্ম ধারায় বলগুলোকে আসতে দেখবো। আর এই ফাঁকদুটি বলের আকারের চেয়ে যত বেশি বড় হবে, বেরিয়ে আসা বলগুলোও তত বেশি ছড়িয়ে যেতে থাকবে (নিচের চিত্র দ্রষ্টব্য)।
লক্ষ্য করুন, এখন যদি আমরা একটা ছিদ্র বন্ধ করে দেই তাহলে স্রেফ বলের সেই ধারাটা আটকা পড়ে যাবে, অপর ধারার উপর এর কোনো প্রভাবই পড়বে না। তাপর যদি আবার খুলে দেই, তাহলে জালের বিভিন্ন বিন্দুতে পৌঁছানো বলের সংখ্যা বাড়বে, কারণ আগের মুক্ত ধারাটা তো ছিলোই, আর এখন নতুন করে খোলা ছিদ্র দিয়েও বল আসবে জালে। তার মানে দুইটি ছিদ্র খুলে দিয়ে আমরা যা পর্যবেক্ষণ করি তা প্রতিটি ছিদ্র আলাদা আলাদা করে খুলে পাওয়া পর্যবেক্ষণদ্বয়ের যোগফলের সমান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এ ধরনের একটি বাস্তবতার সাথেই পরিচিত। কিন্তু এই অস্ট্রিয়ান গবেষকদল তাদের অণুগুলো ছুঁড়ে দিয়ে সেই একই ফলাফল পান নি।
এই অস্ট্রিয়ান পরীক্ষায়, দ্বিতীয় ছিদ্র খুলে দেওয়ার পর পর্দার কিছু কিছু অংশে পৌঁছানো অণুর সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু অন্য কিছু বিন্দুতে সংখ্যা কমেও গেছে। এমনকি, পর্দায় এমন কিছু জায়গাও পাওয়া গেছে যেখানে দুইটি ছিদ্র খোলা থাকা অবস্থায় কোনো বাকিবলই পৌঁছে নি, কিন্তু যেকোনো একটিকে বন্ধ করে অন্যটিকে খুললে ঠিকই ওখানে কিছু অণু পৌঁছায়। ব্যাপারটা অদ্ভুত। নতুন একটা ফাঁকা খুললে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছানো অণুর সংখ্যা কমে কী করে?
পুরো ব্যাপারটার খুঁটিনাটি খেয়াল করলে আমরা উত্তরের একটা আভাস পেতে পারি। আণবিক ফুটবল পরীক্ষার সময় দেখা যায় দুইটি ছিদ্রের যেকোনো একটি দিয়ে বল গেলে যেখানে পৌঁছানোর কথা তার একদম মাঝ অংশে বেশ কিছু অণু হাজির হয়। সেখান থেকে একটু দূরে সরলেই অণুর সংখ্যা কমে যায়, কিন্তু তার থেকে আরো একটু সরলে আবারো অণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ছাপটা দুইটা ছিদ্র আলাদা আলাদা ভাবে খুলে দিলে যে দুটি ছবি পাওয়া যায় তাদের যোগফলের সাথে মেলে না। বরং তৃতীয় অধ্যায়ে ব্যতিচারী তরঙ্গের চিত্রের সাথে তার মিল আছে। যে অংশে কোনো অণু পৌঁছায় না সেখানে ছিদ্রদুটি থেকে আসা তরঙ্গদুটি বিপরীত দশায় পৌঁছাচ্ছে, তাই তাদের ধ্বংসাত্বক ব্যাতিচার ঘটছে; আর যেখানে বেশি অণু পাওয়া যায় সেখানে তরঙ্গদুটি সমদশায় পৌঁছাচ্ছে, তাই তাদের গঠনমূলক ব্যাতিচার ঘটছে।
বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার শুরুতে প্রায় দুহাজার বছর সাধারণ জ্ঞান বা অন্তর্জ্ঞানই ছিলো তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার ভিত্তি। আমাদের প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমরা এই বাকিবল পরীক্ষার মত এমন অনেক পরীক্ষা করতে সক্ষম হই। এবং সেসব পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রকৃতির এমন এক রূপ দখতে পাই যেটা আমাদের দৈনিন্দিন অভিজ্ঞতা এবং তদলব্ধ অন্তর্জ্ঞানের সাথে মেলে না। এই বাকিবল পরীক্ষা হচ্ছে এ ধরনের আরো অনেক পরীক্ষার একটি বৈশিষ্ট্যসূচক পরীক্ষা যেটা ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। প্রয়োজন পড়ে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের। রিচার্ড ফাইনম্যান তো বলেছেনই, এই যে উপরে বর্ণিত দ্বিচিড় পরীক্ষা, “এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সকল রহস্য।”
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যখন নিউটনীয় তত্ত্ব পারমাণবিক এবং অতিপারমাণবিক স্তরে প্রকৃতির ঘটনাবলী ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলো তখনই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মূলনীতিগুলো উদ্ভাবিত হয়। পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্বগুলোর কাজ হচ্ছে প্রকৃতির সকল বল এবং বস্তুর সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করা। ক্লাসিক্যাল নিউটনীয় তত্ত্ব আমাদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত যে যৌক্তিককাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যে অনুযায়ী পদার্থ দিয়ে তৈরি বস্তুসমূহের একক অস্তিত্ব আছে, এদেরকে নির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক আছে, এরা চলার সময় নির্দিষ্ট পথে চলে, এবং এমন আরো কিছু। এদিকে কোটান্টাম মেকানিক্স পারমাণবিক বা অতিপারমানবিক স্তরে কণিকাসমূহের আচরণ বোঝার একটা যৌক্তিক কাঠামো দেয়। কিন্তু আমরা পরে দেখবো এর যৌক্তিক কাঠামোটা এমন, যে তাতে কোনো বস্তুর অবস্থান, পথ, এমন কি তার অতীত-ভবিষ্যতও সুক্ষ্মভাবে নির্ধারিত নয়। মহাকর্ষবল, তড়িতচৌম্বকীয় বলের মত বল সমূহের কোয়ান্টাম তত্ত্ব এধরনের একটা যৌক্তিক কাঠামোর উপর ভর করেই গঠিত।
ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাকে দারুণ সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতো। কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে তাই প্রশ্ন আসে, যে তত্ত্ব এমন আজব এক যৌক্তিক কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে গঠিত সেটা কি দৈনন্দিন ঘটনাবলিকে সেভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে? পারবে, কারণ আমাদের আশেপাশের সব বস্তুই হচ্ছে এক ধরনের মিশ্রবস্তু যেগুলো অকল্পনীয় সংখ্যক অণু-পরমাণু দ্বারা গঠিত। এ সংখ্যা এতই বেশি যে আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য মহাবিশ্বেও এত নক্ষত্র নেই। এবং যদিও এসব বস্তুর গঠনকারী উপাদান কোয়ান্টাম মেকানিক্স মেনে চলে, এটা দেখানো যায় যে অণুপরমাণুগুলো মিলে যখন ফুটবল, বা শালগম বা জাম্বো জেট- এমনকি আমাদেরও- তৈরি করে তখন এটা ক্লাসিক্যাল আচরণই করে। ফলে এসব বড় আকারের বস্তুর জন্য সেই দ্বিচিড়ের মধ্যে দিয়ে ব্যতিচারও ঘটে না। তাই যদিও দৈনন্দিন বস্তুসমূহের গঠনকারী উপাদান কোয়ান্টাম মেকানিক্স মেনে চলে, তবুও নিউটনেরতত্ত্বকে একটা কার্যকর তত্ত্ব হিসাবে নেওয়া যায় যেটা সূক্ষ্মভাবে আমাদের আশেপাশের জগৎকে বর্ণনা করছে।
এটা শুনে অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানে এমন অনেক উদাহরণই আছে যেখানে একটা বড় সন্নিবেশ তার গঠনকারী প্রতিটি উপাদানের থেকে ভিন্ন আচরণ করে থাকে। ঠিক যেমন মাত্র একটি নিউরনের বৈশিষ্ট্য থেকে পুরো মানব মস্তিষ্কের আচরণ বা মাত্র একটি পানির অণুর বৈশিষ্ট্য থেকে একটি পুরো হ্রদের আচরণ বোঝা যায় না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ক্ষেত্রে বলা যায়, বিজ্ঞানীরা এখনো এ থেকে কীভাবে নিউটনের সূত্রগুলো আসে সেটার খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করছেন। তবে এটা আমরা নিশ্চিত জানি, যে সকল বস্তুর গঠনকারী ক্ষুদ্র উপাদানগুলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স মেনে চলে এবং নিউটনের সূত্রগুলো সেসব ক্ষুদ্র উপাদানের সন্নিবেশে গঠিত বৃহদায়তন বস্তুসমূহের আচরণ বর্ণনা করে।
তাই নিউটনীয় তত্ত্বের অনুমানগুলোই আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতালব্ধ বাস্তবতার চিত্রের সাথে মেলে। কিন্তু এককভাবে একটি অণু বা পরমাণু আমাদের অভিজ্ঞতার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে কাজ করে। তাই কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যাই হচ্ছে বাস্তবতার সেই নতুন রূপায়ণ বা মডেল যার সাহায্যে মহাবিশ্বের চিত্রটা পাওয়া যাচ্ছে। এটা এমন এক চিত্র যেখানে আমাদের আগেকার বাস্তবতা সংক্রান্ত অনেক ধারণারই আর কোনো অর্থ নেই।
দ্বিচিড় পরীক্ষাটি ১৯২৭ সালে প্রথম করেন বেল ল্যাবের নিরীক্ষণ-পদার্থবিজ্ঞানী ক্লিন্টন ডেভিসন এবং লেস্টার জার্মার। তারা বাকিবলের বদলে ব্যবহার করেছিলেন আরো সরল বস্তু, ইলেক্ট্রন। যেখানে তারা নিকেল ক্রিস্টালের সাথে ইলেকট্রন রশ্মির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ইলেকট্রনের মত পদার্থের কণিকা যে পানির তরঙ্গের মত আচরণ করে সে থেকেই পরে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূচনা হয়। যেহেতু বৃহদায়দতনে এ ধরনের ঘটনা দেখা যায় না, তাই অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই কৌতূহল ছিলো যে কোনো বস্তু ঠিক কতটা বড় বা জটিল হয়ে যাওয়ার পরেও তাতে এই তরঙ্গসুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হবে। যদি কোনো আস্ত মানুষ বা জলহস্তির উপর এ ধরনের ক্রিয়া দেখা যেতো তাহলে নিশ্চয়ই তুলকালাম ঘটে যেত, কিন্তু আমরা জানি যে বস্তু যত বড় হতে থাকে তার কোয়ান্টাম আচরণত ততই হারিয়ে যেতে থাকে। তাই এটা খুবই অসম্ভব যে চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণী তরঙ্গের মত করে তার খাঁচার শিক গলে বেরিয়ে যাবে। অবশ্য ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানীরা দিনে দিনে বড় থেকে বড়তর বস্তুতে এ ধরনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছেন। বিজ্ঞানীরা একদিন বাকিবলের জায়গায় একটা ভাইরাস ব্যবহার করেও এই পরীক্ষা করতে পারবেন বলে আশাবাদী। যে ভাইরাস শুধু যে বাকিবলের চেয়ে অনেক বড় তাই-ই না, এটাকে অনেকে জীবন্ত গণ্য করে।
পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা যেসব যুক্তি দেব সেগুলো বোঝার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অল্পকিছু ধারণা থাকলেই হবে। যার অন্যতম একটা হচ্ছে তরঙ্গ/কণিকা দ্বৈতাবস্থা। পদার্থের কণিকাও যে তরঙ্গের মত আচরণ করতে পারে সেটা জেনে সবাই অবাক হয়। ওদিকে আলো যে তরঙ্গের মত আচরণ করে তাতে আমরা কেউ অবাক হই না। আলোর এই তরঙ্গসুলভ আচরণ খুবই স্বাভাবিক মনে হবার কারণ এই ধারণাটার সাথে আমরা প্রায় দুইশ বছর ধরে পরিচিত। আপনি যদি উপরে বর্ণিত পরীক্ষার চিড়দুটোতে আলো দিয়ে পরীক্ষাটা করেন তাহলে দুইটা চিড় থেকে দুইটা তরঙ্গ এসে পর্দায় পড়বে। কোথাও তাদের দুটিরই উঁচু বা নিচু অংশ পরস্পরের সাথে মিলবে সেখানে আলো হবে খুবই উজ্জ্বল আর কোথাও একটা উঁচু মিলবে একটা নিচু অংশের সাথে তারপর কাটাকাটি গিয়ে ওখানে সৃষ্টি হবে অন্ধকার এলাকা। ইংরেজ পদার্থ বিজ্ঞানী থমাস ইয়ং উনবিংশ শতাব্দীতে এই পরীক্ষা করেন, যেটা সবার কাছে এটাই প্রতীয়মান করে যে আলো তরঙ্গধর্মী, নিউটনের মত অনুযায়ী কণিকাধর্মী নয়।
অনেকে এটা ভাবতে পারেন যে নিউটন আলোকে তরঙ্গধর্মী না বলে ভুল করেছিলেন। কিন্তু এখন দেখা গেছে আলো যে কণিকাধর্মী আচরণ করে তার সেই ধারণাটা সঠিক। এখন আমরা এই কণিকাকে বলি ফোটন। আমরা নিজেরা যেমন বিপুল পরিমান পরমাণুদ্বারা গঠিত তেমনি আমাদের দেখা আলো ও বিপুল পরিমান ফোটনের সমষ্টি। এমনকি একটি এক ওয়াটের ডিমলাইটও প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন ফোটন নির্গত করে। মাত্র একটি ফোটন সহজে আলাদাভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু গবেষণাগারে আমরা ফোটনের এমন ক্ষীণ রশ্মি তৈরি করতে পারি যেখানে ফোটনগুলো একটা একটা করেই ছুটে যায়। সেই আলাদা আলাদা ফোটনকে আমরা ইলেকট্রন বা বাকিবলের মত একটা একটা করে নিরূপণ করতে পারি। এবং আমরা ইয়ং-এর পরীক্ষাটা এতটাই ক্ষীণ আলোকরশ্মি দিয়ে করতে পারি, যেন সেখানে একেকটা ফোটোন কয়েক সেকেন্ড পর পর দেয়ালে গিয়ে পৌঁছায়। আমরা যদি এ অবস্থায় বিভেদক দেয়ালের অপর পাশে পর্দায় পৌঁছানো ফোটনগুলোর ছাপ রেকর্ড করি, তাহলে একটা সময় দেখবো এই ছাপগুলো সবাই মিলে একটা ব্যতিচারী ছাপ সৃষ্টি করেছে। ঠিক এ ধরনের ছাপই দেখা যাবে যদি ফোটনের বদলে একটা একটা করে ইলেকট্রন বা বাকিবল ছুঁড়ে ডেভিসন-জার্মার পরীক্ষাটা করি। এখান থেকেই পদার্থবিজ্ঞানীরা একটি অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন: যদি একটা একক কণিকাই নিজের সাথে ব্যতিচার করতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই আলোর তরঙ্গ ঠিক অনেকগুলো কণিকার ঢেউ নয় বরং এর উপাদান প্রতিটা কণিকার নিজেরই তরঙ্গ ধর্ম আছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেকটা স্বীকার্য হচ্ছে অনিশ্চয়তার নীতি, যেটা ১৯২৪ সালে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ প্রথম বর্ণনা করেন। এই নীতি মতে কিছু কিছু চলকের মান আমাদের পক্ষে একই সঙ্গে নির্দিষ্ট করে জানা সম্ভব নয়, যেমন অবস্থান এবং গতি। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কণিকার অবস্থানের অনিশ্চয়তার সাথে তার ভরবেগের(ভর এবং বেগের গুণফল) অনিশ্চয়তা গুণ করেন তাহলে সেই গুণফল কখনোই একটা নির্দিষ্ট ধ্রুবকের কম হতে পারবে না। এই ধ্রুবকের নাম প্লাঙ্ক ধ্রুবক। ব্যাপারটা জটিল মনে হতে পারে কিন্তু এর মূল কথা হলো: আপনি যত সূক্ষ্ম ভাবে অবস্থান নির্ণয় করবেন তার গতি নির্ণয়ের সূক্ষ্মতাও ততই কমবে। আরো লক্ষণীয় যে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য এককের তুলনায় প্লাঙ্ক ধ্রুবক অতিক্ষুদ্র। এসব এককে প্রকাশ করলে প্লাঙ্ক ধ্রুবকের মান আসে ৬/১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ এর কাছাকাছি। একটি বৃহদায়তন বস্তু যেমন ফুটবলের কথাই ধরা যাক। যদি প্রায় এক কেজির এক তৃতীয়াংশ ভরের একটি ফুটবলের অবস্থান এক মিলিমিটার সূক্ষ্মতায় নির্ণয় করা হয়, তারপরও তাত্ত্বিক ভাবে আমরা তার বেগকে এক কিলোমিটার পার ঘন্টার এক বিলিয়নের বিলিয়নের বিলিয়নের এক ভাগ সূক্ষতায় নির্ণয় করতে পারবো। এর কারণ এই এককে, ফুটবলটির ওজন ১/৩ এবং এর অবস্থানের অনিশ্চয়তা ১/১০০০। এত ক্ষুদ্র মান দিয়ে প্লাঙ্ক কন্সটান্টের দশমিকের পরের এতগুলো শূন্যকে বাগে আনা যায় না। তাই সেগুলো বেগের উপর চেপে বসে। কিন্তু সেই একই এককে ইলেকট্রনের ভর ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০১, তাই ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে ঘটনা হবে পুরো আলাদা। তাই আমরা যদি একটা ইলেকট্রনের অবস্থান একটি পরমাণু আকৃতির স্থানের মধ্যে নিশ্চিত করতে পারি তাহলে তার বেগকে খুব করে হলেও প্রতি সেকেন্ডে কম-বেশি ১০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে নিশ্চিত করতে পারবো না, যেটা মোটেই সূক্ষ্ম পরিমাপ নয়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতে আমরা যতই তথ্য সংগ্রহ করি না কেন বা আমাদের গণনক্ষমতা যতই শক্তিশালী হোক না কেন আমরা কখনো কোনো ভৌত ঘটনার ফলাফল নিশ্চয়তার সাথে গণনা করতে পারবো না কারণ প্রকৃতিতেই নির্ধারিত নিশ্চিত মান বলেই কিছু নেই। বদলে, কোনো একটা ব্যবস্থার একটা আদি অবস্থা থেকে একটা শেষ অবস্থায় যাওয়ার মূলত একটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যভাবে বললে, এমনকি একদম সরলতম ঘটনাতেও প্রকৃতি তার ফলাফলকে নির্ধারণ করে না। এর বদলে সে সম্ভাব্য সব রকম ঘটনাই ঘটার কিছু নির্দিষ্ট সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করে। আইনস্টাইনের মত করে বললে দাঁড়ায়, যেন ঈশ্বর প্রতিটি ভৌত ঘটনা ঘটার আগেই ছক্কা ছুঁড়ে দেখে। এই চিন্তা আইনস্টাইনের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয় ছিলো, তাই যদিও তিনি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার অন্যতম স্থপতি, তবুও পরবর্তীতে তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনেক সমালোচনা করেছেন।
এসব শুনে মনে হতে পারে প্রকৃতি সুনির্ধারিত নিয়ম মেনে চলে না, কিন্তু সে ধারণা সত্যি নয়। বরং এটা নিশ্চয়তাবাদের এক নতুন ধারণা জন্ম দেয়: কোনো ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা দেওয়া থাকলে, প্রকৃতির নিয়মগুলো সেখান থেকে একটি নিশ্চিত পরবর্তী অবস্থা নির্ধারণ করার বদলে, সম্ভাব্য সকল পরবর্তী অবস্থার প্রতিটি ঘটার সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করে। ব্যাপারটা শুনতে যেমনই লাগুক, বিজ্ঞানীরা সে তত্ত্বটাই মেনে নেবে যেটা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের সাথে মেলে, এমনকি তাদের মন মানতে না চাইলেও।
যাচাইযোগ্যতা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের একটা আবশ্যকীয় গুণ। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার এই সম্ভ্যাব্যতা নির্ভর তত্ত্ব থেকে যদি এমন অবস্থা দাড়াতো যে এর অনুমানসমূহকে পরীক্ষা বা যাচাই করা যাচ্ছে না। তাহলে এটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মর্যাদা পেতো না। কিন্তু আমরা দেখি যে এ ধরনের সম্ভাব্যতাময় একটা রূপ থাকারপরও কোয়ান্টাম তত্ত্বকে আমরা যাচাই করতে পারি। যেমন আমরা পরীক্ষাগুলো অনেকবার করে দেখতে পারি, যে ফলাফল কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে অনুমান করা সম্ভাব্যতার সাথে মিলে যাচ্ছে। বাকিবল পরীক্ষাটার কথাই ভাবুন। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা বলছে, কোনো কিছুই একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে অবস্থিত নয়, কারণ সে ক্ষেত্রে তার ভরবেগের অনিশ্চয়তা হয়ে যাবে অসীম। এমনকি, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী, প্রতিটি কণিকাকেই মহাবিশ্বের যে কোনো অবস্থানে পাওয়া যাওয়ার কিছুটা হলেও সম্ভাব্যতা রয়েছে। তাই দ্বিচিড় পরীক্ষায় ছুঁড়ে দেওয়া ইলেকট্রন দেওয়াল পেরিয়ে পর্দায় পৌঁছানোর সম্ভাব্যতা যদিও খুব বেশি তারপরও এটা সবকিছু ছাড়িয়ে আলফা সেনচুরাই নামক নক্ষত্রের ওপারে বা আপনার অফিসের ক্যাফেটেরিয়ার আলুরদমের মধ্যে চলে যাওয়ারও কিছুটা হলেও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপনি যদি একটা কোয়ান্টাম বাকিবলকে উঠিয়ে লাথি দেন, সেটা কোথায় গিয়ে যে পড়বে তা নিশ্চিত করে বলার কোনো উপায়ই নেই। কিন্তু কোথায় পড়ার সম্ভাব্যতা কত সেটা নির্ণয় করা যায়। ফলে আপনি যদি এই পরীক্ষাটা বারবার করেন এবং কোথায় গিয়ে বাকিবলগুলো পড়ছে তার হিসাব রাখেন তাহলে দেখবেন সেই বিন্যাস আমাদের তাত্ত্বিকভাবে গণনা করা সম্ভাব্যতার সাথে মিলে যাচ্ছে।
এটা অবশ্যই বুঝতে হবে যে নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞানে বা দৈনন্দিন হিসাবে ব্যবহৃত সম্ভাব্যতার সাথে কোয়ান্টাম সম্ভাব্যতার মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ব্যাপারটা বোঝা যায় যদি আমরা আমাদের বাকিবল ছোড়ার পরীক্ষায় পর্দায় সৃষ্ট ছাপের সাথে ডার্টবোর্ডে ছুঁড়ে দেওয়া ডার্টের প্যাটার্নের তুলনা করি। খেলোয়াড়রা যদি বিয়ার খেয়ে টাল হয়ে না থাকে তাহলে সাধারণত বোর্ডের বাইরের তুলোনায় মাঝেরদিকেই বেশির ভাগ ডার্ট এসে লাগবে। বাকিবলের মতই যেকোনো ডার্ট যেকোনো যায়গাতেই পড়তে পারে। এভাবে একটা সময় পরে ডার্টবোর্ডে ডার্টের আঘাতে সৃষ্ট গর্তের ঘনত্ব দেখে বোর্ডের বিভিন্ন যায়গায় ডার্ট লাগার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। আমরা এই ডার্টবোর্ডের বিভিন্ন অংশে ডার্টের ছাপের ঘণত্ব দেখে বলতেই পারি যে কোনো একটা ডার্ট, বোর্ডের কোনো অংশে পড়ার সম্ভাব্যতা এতটুকু। কিন্তু খেয়াল করার বিষয় হলো এই সম্ভাব্যতার সৃষ্টি হচ্ছে কারণ আমরা জানিনা একটা ডার্ট ঠিক কিভাবে ছোঁড়া হয়েছে। ডার্ট ছোড়ার অবস্থাটা সঠিকভাবে জানলে সেই ডার্ট বোর্ডের কোথায় গিয়ে লাগবে সেটা আমরা ঠিকই সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করতে পারতাম। অর্থাৎ একজন খেলোয়াড় ঠিক কোন স্থান থেকে ডার্টটা ছুঁড়েছেন, কত ডিগ্রি কোনে, কত বেগে, এবং শুরুতে ডার্টটির ঘূর্ণন কত এসব জানা থাকলে ডার্টটি বোর্ডের কোথায় আঘাত করবে সেটা যতটা ইচ্ছা ততটা সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। তাই দেখা যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে ধরনের সম্ভাব্যতার সম্মুখীন হই সেগুলো, সেইসব দৈনন্দিন ঘটনার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নয়। বরং সেই ঘটনার আদি অবস্থা সম্পর্কে আমাদের পূর্ণ জ্ঞান না থাকার ফল।
কোয়ান্টাম তত্ত্বের সম্ভাব্যতা ভিন্ন ধরনের। এটা প্রকৃতির একেবারে মৌলিক এক বিক্ষিপ্ততার বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতির কোয়ান্টাম রূপায়ণের মূলনীতি গুলো এমনই যে সেগুলো শুধু আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই নয়, বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের যে সহজাত ধারণা, তারও বিরুদ্ধ। যারা এইসব মূলনীতিকে বিদঘুটে বা বিশ্বাস করা কষ্ট মনে করবে তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে তাদের দলে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক রথী-মহারথীরাও রয়েছেন। যেমন, আইনস্টাইন এবং ফাইনম্যান , তার বর্ণিত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের চিত্রটা আমরা শীঘ্রই দেখবো। ফাইনম্যান তো একবার লিখেছেনই, “আমার মনে হয় এটা বলা বেশ নিরাপদ যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে কেউই বোঝে না।” কিন্তু কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা আমাদের পর্যবেক্ষণের সাথে হুবহু মিলে যায়। এটা কখনো কোনো পরীক্ষাতেই ফেল করে নি, এবং বিজ্ঞানের অন্য যেকোনো তত্ত্বের চেয়ে এটাকে বহুগুণে বেশি বার পরীক্ষা করা হয়েছে।
১৯৪০ সালের দিকে রিচার্ড ফাইনম্যান কোয়ান্টামজগৎ আর নিউটনিয়ান জগৎ সম্পর্কে এক চমকপ্রদ অন্তর্জ্ঞান লাভ করেন। দ্বিচিড় পরীক্ষায় কীভাবে এই ব্যাতিচারি ছাপ সৃষ্টি হয় সেটা তাকে তখন খুবই চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো। পাঠকের নিশ্চয়ই খেয়াল আছে যে দ্বিচিড় পরিক্ষায় দুইটি ছিদ্র খোলা অবস্থায় আমরা যে ছাপটা পেয়েছি সেটা ছিদ্রদুটি একটি একটি করে খুলে পাওয়া আলাদা দুটি ছাপের যোগফলের সমান হয় না। বরং দুইটি চিড় খুলে দেওয়ার পরে আমরা হালকা ও গাঢ় ডোরাকাটা একটা ছাপ দেখি। যার অন্ধকার অংশে কোনো কণিকা পড়ে না। অর্থাৎ শুধু প্রথম চিড়টা খোলা থাকলে কণিকাসমূহ যেসব যায়গায় পৌঁছাতো, অপর চিড়টা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে তার বেশকিছু অংশেই আর কোনো কণিকা পৌঁছায় না। ব্যাপারটাকে এভাবেও দেখা যায় যে, দুইটি ছিড় খোলা থাকা অবস্থায় যে সব অন্ধকার অংশে কোনো কণিকা পৌঁছায় না, শুধু মাত্র একটা খোলা থাকলে সেখানে ঠিকই কণিকা গিয়ে পৌঁছাতো। তাহলে যখন দুটি চিড়ই খোলা থাকে তখন কোনো একটা দিয়ে পার হওয়া কণিকা বুঝছে কী করে, অপর চিড়টাও খোলা আছে কিনা, যে সেই অনুযায়ী নিজের গতিপথ সে পালটে নিচ্ছে? দেখে মনে হচ্ছে যেন যাত্রা পথের কোনো অংশে এসে দুইটি চিড় বা ছিদ্র সম্পর্কেই কণিকাগুলো কিছু একটা জেনে যাচ্ছে। এ ধরনের আচরণ আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ আমরা দেখি ছুঁড়ে দেওয়া কোনো বল একটা দরজা দিয়ে পার হওয়ার সময় অপর দরজা খোলা নাকি বন্ধ তা দিয়ে কোনোভাবেই প্রভাবিত হয় না।
নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী প্রতিটি কণিকা উৎস থেকে পর্দায় পৌঁছানো পর্যন্ত একটা সুনির্ধারিত যাত্রা পথ মেনে চলে। ঠিক যেমনটা হয় যখন আমরা একটা ফুটবলকে ছুঁড়ে দিই। এই চিত্রে কোনো কণিকার পক্ষে একটা দরজা দিয়ে যাওয়ার পথে অপর দরজাটাও খোলা আছে কি না, সেটা দেখে আসার কোনো উপায়ই নেই। ওদিকে কোয়ান্টাম রূপায়ণ মতে, কোনো কণিকা তার যাত্রার শুরু থেকে শেষে পৌঁছানোর মাঝে কোনো নির্দিষ্ট পথ মেনে চলে না। ফাইনম্যান বুঝেছিলেন, এর মানে এই না, যে কণিকাটি উৎস থেকে পর্দায় যেতে কোনো পথ দিয়েই যাচ্ছে না। বরং এর একটা অর্থ হতে পারে কণিকাটি ঐ দুটি বিন্দুর সংযোগকারী সম্ভাব্য সবগুলো পথ দিয়েই যাচ্ছে। ফাইনম্যানের মতে, এটাই কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের সাথে নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞানের মূল পার্থক্য। দুইটি চিড়ের অবস্থাই এখানে হিসাবে আসছে কারণ কণিকাটি যাওয়ার সময় কোনো একটি চিড় দিয়ে যাওয়ার বদলে উভয় চিড় দিয়েই একসাথে পার হচ্ছে। ব্যাপারটা শুনতে কল্পবিজ্ঞানের মত, কিন্তু এটাই সত্যি। এই সবগুলো সম্ভাব্য পথের সমষ্টিকে গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করার একটা উপায় ফাইনম্যান বের করতে সক্ষম হন, যেটার সাহায্যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সকল নিয়মই পাওয়া সম্ভব। ফাইনম্যানের তত্ত্বের গাণিতিক এবং ভৌত রূপ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মূল রূপায়ণের থেকে ভিন্ন, কিন্তু দুটো থেকে পাওয়া হিসাব ও অনুমানসমূহ একে অপরের সাথে হুবহু মিলে যায়।
ফাইনম্যানের বিবরণ অনুযায়ী, আমাদের ঐ দ্বিচিড় পরীক্ষায় কোনো কণিকা একই সঙ্গে বিভিন্ন রকম পথ দিয়ে যায়। যার কোনোটা শুধু একটা ছিদ্র দিয়েই পার হচ্ছে, কোনোটা পার হচ্ছে অপর ছিদ্র দিয়ে; কোনোটা হয়তো প্রথম ছিদ্র দিয়ে পার হয়ে ফিরে গিয়ে দ্বিতীয়টার মধ্যে দিয়ে ঘুরে আবারো প্রথমটা দিয়ে পার হচ্ছে; কোনোটা হয়তো মোড়ের চিংড়ি রেস্তোরা থেকে ঘুরে এসে নিজের যাত্রা পথের শেষে পৌঁছাচ্ছে, আবার কোনোটা হয়তো বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতি গ্রহকেও দুপাক ঘুরে আসছে; এমনকি এমন পথ দিয়েও কণিকা যাচ্ছে যেটা পুরো মহাবিশ্বকেই কয়েক পাক ঘুরে আসে। ফাইনম্যানের মতে এভাবেই কণিকারা জানতে পারে কোন ছিদ্রটি খোলা আছে। কারণ কোনো একটা ছিদ্র খোলা থাকলে অবশ্যই সেই ছিদ্রের মধ্য দিয়েও কণিকার কিছু পথ যাবে। তাই যখন উভয় ছিদ্রই খোলা থাকে তখন একটা দিয়ে পার হওয়া পথ অন্যটা দিয়ে পার হওয়া পথের সাথে উপরিপাতিত হয়ে ব্যাতিচার-এর সৃষ্টি হয়। এসব শুনে পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে, কিন্তু এখনকার মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের চর্চায় –এবং এই বইয়ের আলোচনার জন্য- ফাইনম্যানে করা সূত্রায়ণই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আদিরূপের চেয়ে বেশি কার্যকর।
একটু পরেই আমরা যে তত্ত্বসমূহ উপস্থাপন করব সেগুলো বোঝার জন্য কোয়ান্টাম বাস্তবতার ফাইনম্যানীয় রূপায়ণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই রূপায়ণটা কেমন সেটা আমরা এখন আরেকটু বিশদে দেখবো। একটা খুব সহজ-সরল ব্যবস্থা কল্পনা করুন যেখানে সকল কণিকা A বিন্দু থেকে শুরু করে মুক্তভাবে চলতে থাকে। নিউটনীয় রূপায়নে কণিকাগুলো সরল পথে চলবে। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আমরা সেই সরল রেখা বরাবর কোনো B বিন্দুতে কণিকাটিকে খুঁজে পাবো। ফাইনম্যানীয় রূপায়নে একটা কণিকা কোনো পথ দিয়ে A থেকে B তে যাওয়ার সময় ঐ পথের জন্য একটা ফেজ বা দশা লাভ করে। যে দশার নির্দিষ্ট সাংখ্যিক মান রয়েছে। আমরা আগেই দেখেছি এই রূপায়নে একটা কণিকা সম্ভাব্য সবগুলো পথ দিয়েই যায়। তাই সম্ভাব্য সবগুলো পথের জন্যই কণিকাটি একটি করে দশা লাভ করে। এই দশা থেকে বোঝা যায় কণিকাটি তার তরঙ্গ চক্রের কোন অবস্থায় আছে, অর্থাৎ কণিকাটি কি তরঙ্গশীর্ষে, নাকি তরঙ্গপাদে, নাকি এর এদের মাঝামাঝি কোনো অবস্থায়? এই দশা গণনা করার ফাইনম্যানীয় পদ্ধতিতে দেখা যায় আপনি যখন সম্ভাব্য সবগুলো পথের জন্য প্রাপ্ত দশাসমূহকে যোগ করবেন তখন কণিকাটি A থেকে শুরু করে B তে পৌঁছানোর “সম্ভাব্যতার বিস্তার” পাবেন। এই সম্ভাব্যতার বিস্তারের বর্গই হচ্ছে কোনো কণিকা A থেকে B তে পৌঁছানোর সঠিক সম্ভাব্যতা।
প্রতিটি ভিন্ন পথের জন্যই, (মানে A থেকে B তে যাওয়ার সম্ভাব্য প্রতিটি পথের জন্য) ফাইনম্যানের এই যোগফলে আনুষঙ্গিক দশা যোগ হয়। ব্যাপারটাকে এভাবে দেখুন, ধরুন আপনার কাছে একক দৈর্ঘ্যের দুইট তীর আছে যারা ভিন্ন দুটি দশা সূচিত করে। দশার মান অনুযায়ী তীরগুলো যেকোনো দিকে নির্দেশ করতে পারে। এদেরকে যোগ করতে দিক পরিবর্তন না করে একটি তীরের শেষে অপর তীটির শুরু স্থাপন করুন। এবার প্রথম তীরের শুরু থেকে দ্বিতীয় তীরের শেষ পর্যন্ত আরেকটি তীর দিয়ে সংযুক্ত করুন। তাহলে এই নতুন তীরটিই হচ্ছে আগের দুইটি দশার যোগফল সূচক তীর। এ যোগফলের সাথে নতুন আরো কিছু দশা যোগ করতে চাইলে এভাবে একটা একটা করে দশা সূচক তীরকে প্রতিবারে প্রাপ্ত যোগ ফলের সাথে যোগ করতে থাকুন। খেয়াল করুন দশাগুলো যদি একই রেখা বরাবর একই দিকে হয় তাহলে তাদের যোগফল বেশ দীর্ঘ হয়ে যায়। কিন্তু তারা যদি একেকটা একেক দিকে নির্দেশ করে তাহলে একটির প্রভাবে অন্যটির অনেক খানি কাটাকাটি পড়ে এবং প্রাপ্ত যোগফল বেশ ছোটো হয়। ব্যাপারটাকে নিচে ব্যাপারটাকে চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো।
ফাইনম্যানীয় পদ্ধতিতে যদি A থেকে শুরু করে কোনো কণিকার B তে পৌঁছানোর সম্ভাব্যতার বিস্তার নির্ণয় করতে হয় তাহলে প্রতিটি সম্ভাব্য পথের জন্য প্রাপ্ত দশাকে, বা দশাসুচক তীরকে, একসাথে যোগ করতে হবে। যেহেতু এরকম অসীম সংখ্যক পথ সম্ভব সেহেতু এই হিসাবের গাণিতিক রূপটা একটু জটিলই হয়ে যায়, কিন্তু এতে ফলাফল মেলে। এমন কিছু পথ নিম্নের চিত্রে দেখানো হলো।
যদিও কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং নিউটনীয় তত্ত্ব দেখে পরস্পর একেবারেই আলাদা মনে হয়, আমরা দেখি ফাইনম্যানীয় তত্ত্ব খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে কীভাবে কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকেই নিউটনীয় বিশ্বচিত্রের উদ্ভব ঘটে। ফাইনম্যানীয় তত্ত্ব মতে প্রতিটি সম্ভাব্য পথের জন্য প্রাপ্ত দশার মান প্লাঙ্কধ্রুবকের উপর নির্ভর করে। প্লাঙ্কধ্রুবক অতীব ক্ষুদ্র হবার কারণে যদিও কণিকার দুইটি সম্ভাব্যপথ খুবই কাছাকাছি তবুও তাদের মধ্যে ব্যাপক দশা পার্থ্যক থাকে। ফলে উপরের চিত্রানুযায়ী এ ধরনের দশাসমূহের যোগফল শূন্যের কাছাকাছি হয়ে যায়। কিন্তু এ তত্ত্ব থেকে এটাও দেখা যায় যে এমন কিছু পথও আছে যাদের দশাগুলো মোটামুটি একটা সরল রেখা বরাবর পড়ে যায়, ফলে সেগুলো বরাবর সম্ভাব্যতার বিস্তার হয় অনেক বেশি; অর্থাৎ, কণিকাটির যে আরচণ আমরা পর্যবেক্ষণ করি সেটা মূলত এই পথগুলোর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এবং আমরা আরো দেখি বড় বস্তুসমূহের জন্য নিউটনীয় তত্ত্ব যে গতিপথ হিসাব করে সেগুলোর কাছাকাছি ফাইনম্যানীয় পথের দশাগুলো অনেকটা একই রকম হয়। ফলে শুধু তাদের যোগফলই সম্ভাব্যতা বিস্তারের অনেক বড় মান দেয়। যেখানে বাকিসব পথের জন্য এই বিস্তারের মান হয় প্রায় শূন্য। যেহেতু এক্ষেত্রে নিউটনীয় গতিপথের জন্য প্রাপ্ত সম্ভাব্যতা একদম একের কাছাকাছি হয় সেহেতু, আমরা সেই বড় বস্তুদেরকে নিউটনীয় তত্ত্ব মেনে চলতেই দেখি।
এখনো পর্যন্ত আমরা দ্বিচিড় পরীক্ষার আলোকেই ফাইনম্যানীয় ধারণাসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পরীক্ষায় একটা চিড়ওয়ালা দেয়ালের দিকে কিছু কণিকা ছুঁড়ে দেওয়া হয় এবং দেয়ালের পিছনে পিছনে একটা পর্দার কোন অবস্থানে সেই কণিকাগুলো পৌঁছাচ্ছে সেটা পরিমাপ করা হয়। ব্যাপারটাকে আরো সাধারণীকরণ করে ভাবলে, ফাইনম্যানীয় তত্ত্বের সাহায্যে শুধু একটা কণিকাই না, বরং পুরো একটি ‘ভৌত ব্যবস্থা’ যেখানে অনেক কণিকা আছে, এমনকি পুরো মহাবিশ্বেরই পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে আমরা অনুমান করতে পারি। একতা ভৌত ব্যবস্থা আদি অবস্থা থেকে পরিবর্তিত হয়ে আমাদের পরিমাপকৃত নতুন অবস্থায় পৌঁছানোর পথে যেসব ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হয় তাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ব্যবস্থাটির ‘ইতিহাস’। দ্বিচিড় পরীক্ষাটিতে একটা কণিকার ইতিহাস হচ্ছে তার অতিক্রম করা পথ। এই পরীক্ষায় পর্দার কোন অবস্থানে একটা কণিকা পৌঁছানোর সম্ভাব্যতা ঐ স্থানে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সকল পথের উপর নির্ভর করে। তেমনি ভাবে, যে কোনো ভৌত ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কোনো একটা নির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার সম্ভাব্যতা, সম্ভাব্য যে সব ইতিহাস ঐ পর্যবেক্ষণ দিতে পারে তাদের সবগুলোর উপরই নির্ভর করে। এ কারণেই তার এই পদ্ধতিকে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার ‘সামষ্টিক ইতিহাস’ বা ‘বিকল্প ইতিহাস’ সূত্রায়ণ বলা হয়।
এতক্ষণে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার ফাইনম্যানীয় রূপায়ণ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেল। এখন আমরা কোয়ান্টামতত্ত্বের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি দেখবো যেটা বলে: শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ করার ফলেও একটা ভৌত ব্যবস্থার ঘটনা প্রবাহে পরিবর্তন ঘটে। অফিসের বড়কর্তার থুতনিতে সস লেগে থাকলে আমরা কি ব্যাপারটাতে কোনো রকম হস্তক্ষেপ না করে শুধুই চুপচাপ দেখে যেতে পারি না? না। কারণ কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা মতে আপনি কোনো কিছুকেই “শুধুই” দেখে যেতে পারেন না। অর্থাৎ, কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে সেটার সাথে কোনো না কোনো ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করতে হবে। যেমন, সাধারণত কোনো কিছু দেখার জন্য আমরা তার উপর আলো ফেলি। একটা মিষ্টিকুমড়ার উপর আলো ফেললে হয়তো তাতে তেমন কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু কোনো কোনো কোয়ান্টাম কণিকার উপর এমনকি খুব হালকা আলো ফেললেও –মানে ফোটন ছুঁড়ে দিলে- সেই কণিকাটি ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়। পরীক্ষা থেকে দেখা যায় এতে কণিকাটির অবস্থার পরিবর্তন ঠিক সেভাবেই হয় যেভাবে কোয়ান্টাম তত্ত্ব বর্ণনা করে।
ধরা যাক, আগের মতই, আমরা দ্বিচিড় পরীক্ষাটির দেয়ালের দিকে কণিকা ছুঁড়ে দিলাম এবং প্রথম যে এক মিলিয়ন কণিকা দেয়াল পার হলো তাদের পর্দায় পৌঁছানোর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলাম। এখন যদি পর্দার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো সব কণিকাকে আমরা এক সাথে লেখচিত্রে বসাই তাহলে একটা ব্যতিচারী ছাপ দেখতে পাবো। এরপর আমরা যদি কোনো কণিকা A থেকে শুরু করে B তে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সকল পথের ফেজ বা দশা যোগ করি এবং এ পদ্ধতিতে পর্দার বিভিন্ন বিন্দুর জন্য কণিকাটির সেখানে পৌঁছানোর সম্ভাব্যতার লেখচিত্র তৈরি করি তাহলে দেখতে পাবো সেটা আমাদের আগে পাওয়া ব্যতিচারী লেখচিত্রের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে।
এখন মনে করুন মাঝামাঝি একটা C অবস্থানে আমরা একটা বাতি জ্বালালাম। যেন দেখতে পারি কণিকাটি A থেকে B তে যাওয়ার সময় ১-নং চিড় নাকি ২-নং চিড় দিয়ে গেছে। এই যে পথের দিশা, যেটা আমরা নির্দিষ্ট করে জানলাম এটাকে বলে “কোন-পথ” তথ্য। যে তথ্য থেকে কোনো কণিকা A থেকে চিড় ১ হয়ে B তে, নাকি A থেকে চিড় ২ হয়ে B তে গেছে সেটা নির্দিষ্ট করে জানা যায়। এ তথ্য থেকে যেহেতু আমরা নির্দিষ্ট করে জানতে পারি যে প্রতিটি কণিকা ঠিক কোন পথ দিয়ে গেছে সেহেতু আমাদের সম্ভাব্যতার বিস্তারের যোগ ফলে এখন আর অন্যান্য পথগুলোর দশা যোগ হবে না। অর্থাৎ ১-নং চিড় দিয়ে যে কণিকা পার হলো তার সম্ভাব্যতার বিস্তার নির্ণিত হবে শুধু মাত্র সেই ১-নং পথের আলোকেই। তাই তখন আগে হিসাবে আসা সম্ভাব্য অন্য পথগুলোর দশা আর বিবেচ্য হবে না। ফাইনম্যান বলেছিলেন, ব্যতিচারী ছাপটা তৈরি হয় কোনো কণিকার সম্ভাব্য একটি পথ সম্ভাব্য অপর পথের সাথে ব্যতিচার ঘটার ফলে। এখন যেহেতু বাতি জ্বালিয়ে আমরা জেনে যাচ্ছি কণিকাটি ঠিক কোন চিড় দিয়ে পার হয়েছে। তাই এখন আর অপর কোনো পথ দিয়ে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। এবং এ কারণেই সম্ভাব্য পথসমূহের হিসাবে এখন অপর পথটা আর আসবে না। ফলে হবে না কোনো ব্যতিচার। এবং আমরা পিছনের পর্দায় কোনো ব্যতিচারী ছাপও দেখবো না। এবং সত্যিই যখন গবেষণাগারে এই পরীক্ষাটা করা হয় তখন বাতি নেভানো অবস্থায় যে ব্যতিচারী ছাপ পাওয়া যায়, বাতি জ্বালালে সেটা হারিয়ে যায়! আবার, আমরা এই পরীক্ষাকে অন্যভাবেও করতে পারি, যেমন আমরা যদি খুবই ক্ষীণ আলো ব্যবহার করি তাহলে সবগুলো কণিকা আর আলোর সাথে মিথস্ক্রিয়া করবে না। তখন আমরা সবগুলো কণিকার বদলে শুধু মাত্র তাদের একটা উপসেটের কোন-পথ তথ্য পাবো। এখন আমরা যদি নির্ণায়ক পর্দায় পৌঁছানো কণিকাসমূহের ছাপকে দুই ভাগে ভাগ করি যেখানে এক ভাগের জন্য আমরা কোন-পথ তথ্য জানি না এবং অন্য ভাগের জন্য জানি। তাহলে দেখতে পাবো যাদের কোন-পথ তথ্য জানা নেই তারা ঠিকই ব্যতিচারী ছাপ তৈরি করছে। কিন্তু অন্যরা করছে না।
এ ধরনের ঘটনাবলির ফলে ‘অতীত’ সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা সেটা আমূল পালটে গেছে। নিউটনীয় তত্ত্বে অতীতকে দেখা হয় ঘটে যাওয়া সুনির্দিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ হিসাবে। আপনি যদি দেখেন যে ফুলদানিটা ইটালি থেকে গত বছর কিনেছিলেন সেটা মেঝেতে টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে আছে আর আপনার পিচ্চিটা তার পাশে অপরাধীর মত মুখ করে দাঁড়িয়ে তাহলে সেখান থেকেই আপনি এই দুর্ঘটনার পিছনের ঘটনাপ্রবাহ অনুমান করতে পারবেন। অর্থাৎ, ছোটো ছোটো কিছু আঙুল হঠাৎ ছুটে গেল, তারপর ফুলদানিটা ঠাস করে পড়ল মেঝেতে, তারপর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছিটকে গেল চারদিকে… এসব। এমনকি, বর্তমান সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য থাকলে নিউটনের সূত্রগুলোর সাহায্যে সম্পূর্ণ অতীতই হিসাব করে বের করা সম্ভব। এটা আমাদের সহজাত বোধের সাথে মেলে, যে সুখকর হোক বা দুখকর, বিশ্বের একটা সুনির্ধারিত অতীত আছে। কেউ যদি নাও দেখে থাকে তবুও যেটা ঘটেছে সেটা নিশ্চিত ঘটেছেই। পুরো ঘটনাই যেন টানা ভিডিও করা আছে। কিন্তু কোয়ান্টাম বাকিবলের বেলায় সেটা যে কোনো নির্ধারিত পথে পর্দায় গিয়ে পৌঁছেছে, তা বলা যায় না। আমরা কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানে সেটাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি ঠিকই, কিন্তু এমন দুইটি পর্যবেক্ষণের মধ্যবর্তী সময়ে সেটা সম্ভাব্য সকল পথদিয়েই যায়। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা আমাদের বলছে, বর্তমানকে যত সূক্ষ্ম ভাবেই আমরা পর্যবেক্ষণ করি না কেন, অদেখা অতীত, ঠিক ভবিষ্যতের মতই অনিশ্চিত, এবং এদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র সম্ভাব্যতার একটা বিস্তৃত বর্ণালীতেই।
বাস্তবিকপক্ষে, অতীতের কোনো নির্ধারিত আকার নেই, এই কথাটার অর্থ হচ্ছে কোনো একটা ভৌত ব্যবস্থার উপর বর্তমানে করা কোনো পর্যবেক্ষণ সেই ব্যবস্থার অতীতকে পালটে দিতে পারে। এই ধারণা নাটকীয়ভাবে জোর লাভ করে পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলারের ভেবে বের করা এক ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে। এধরনের পরীক্ষাকে বলে ‘বিলম্বিত-বাছাই’ পরীক্ষা। সঙ্কল্পনামূলকভাবে বললে, একটা বিলম্বিত-বাছাই পরীক্ষা অনেকটা আমাদের আলোচিত দ্বিচিড় পরীক্ষার মতই, যেখানে কণিকাটি ঠিক কোন পথ দিয়ে গেছে সেটা নির্ণয় করার উপায় আছে। পার্থক্য হচ্ছে, এই নির্ণয় বেশ পরে করা সম্ভব, মানে কণিকাটি পর্দায় আঘাত করার আগে দিয়ে।
আমরা চিড়ের কাছে বাতি জ্বেলে পরীক্ষা করার সময় দেখেছিলাম যে, যখন আমরা ঠিক কোন চিড়টি দিয়ে কণিকা পার হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত হই তখন আর কণিকাগুলো ব্যতিচারী ছাপ তৈরি করে না। এই বিলম্বিত-বাছাই পরীক্ষার ক্ষেত্রে যদিও চিড় পার হয়ে আসার অনেক পরে আমরা নির্ণয় করছি কোন চিড় দিয়ে সেটা পার হলো, তবুও আমরা যখন পর্যবেক্ষণ করি তখন আর ব্যতিচারী ছাপ তৈরি হয় না। কিন্তু পর্যবেক্ষণ না করলেই ব্যতিচারী ছাপ পাওয়া যায়। তার মনে অনেক বিলম্বে আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত –পর্যবেক্ষণ করবো কি করবো না- কণিকাটির অতীতকে নিয়ন্ত্রন করছে। অর্থাৎ শুধু একটা চিড় দিয়ে তাকে পার হতে হবে, যেখানে ব্যতিচার হয় না; নাকি উভয় চিড় দিয়েই পার হতে হবে, যেখানে ব্যতিচার হয়, সেটা “নির্ধারণ” হচ্ছে চিড় পার হয়ে আসারও অনেক পরে আমরা পর্যবেক্ষণ করবো কী করবো না তার উপরে।
হুইলার এই পরীক্ষার একটা মহাজাগতিক ভার্শনও বিবেচনা করেছেন, যেখানে কণিকাগুলো হচ্ছে বিলিয়ন-বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের শক্তিশালী কোয়েজার থেকে ছুটে আসা ফোটন। এ ধরনের আলোকরশ্মিকে দুইটি পথে ভাগ করা যায় যেগুলো অন্তরবর্তী কোনো গ্যালাক্সির ফলে সৃষ্ট গ্রাভিটেশনাল লেন্সের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফোকাস হয়। যদিও এ পরীক্ষা বর্তমান প্রযুক্তির নাগালের বাইরে, কিন্তু আমরা যদি এই উৎস থেকে আসা যথেষ্ট পরিমাণ ফোটন সংগ্রহ করতে সক্ষম হই, তাহলে তারা অবশ্যই ব্যতিচারী ছাপ তৈরি করবে। এবং এ ক্ষেত্রেও যদি আমরা ফোটন ডিটেকটরে কণিকা পৌঁছানোর ঠিক আগে তার “কোন-পথ” তথ্য নির্ণয় করি তাহলেই আবার সেই ব্যতিচারী ছাপ হারিয়ে যাবে। ফোটনটি মধ্যবর্তী গ্যালাক্সি পার হবার সময় দুটি পথের কোনটি দিয়ে পার হয়েছে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে বিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবী, এমনকি হয়তো সূর্যেরও সৃষ্টির আগে। তবুও বর্তমানে আমাদের কোনো গবেষণাগারে করা পর্যবেক্ষণ সেই অতীতকে প্রভাবিত করবে।
এ অধ্যায়ে আমরা দ্বিচিড় পরীক্ষার সাহায্যে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের একটা চিত্র তুলে ধরেছি। এ বইয়ের বাকি অংশে আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই ফাইনম্যানীয় সূত্রায়ণই পুরো মহাবিশ্বের উপর প্রয়োগ করবো। আমরা দেখবো যে, একটা কণিকার মতো, এই মহাবিশ্বেরও কোনো একক ইতিহাস নেই, বরং সম্ভাব্য সকল ইতিহাসই রয়েছে, যে ইতিহাসগুলোর প্রতিটির নির্দিষ্ট সম্ভাব্যতা আছে। এবং মহাবিশ্বের বর্তমান অবস্থার উপর আমাদের করা পর্যবেক্ষণ, তার অতীতকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে, এই ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাসকে নির্ধারণ করে। ঠিক যেমনটা ঘটে দ্বিচিড় পরীক্ষাতে যেখানে বর্তমানের পর্যবেক্ষণ কণিকাটির অতীকেও প্রভাবিত করে। আর এসব বিশ্লেষণের মাধ্যমেই আমরা দেখতে পাবো বিগব্যাং-এর মাধ্যমে কীভাবে প্রকৃতির সূত্রগুলোর উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই নিয়মগুলোর উদ্ভব হলো, সেটা দেখার আগে আমরা একটু দেখে নেব, এই নিয়মগুলো আসলে কী, এবং এরা কী ধরনের রহস্যের উদ্রেগ করছে।
‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ < পর্ব ৩ । পর্ব ৪। পর্ব ৫>
[অনুবাদকের নোট]
শব্দার্থ-
চিড় – Slit
দশা – Phase
ভূ-আকৃতির গম্বুজ – Geodesic Dome
অন্তর্জ্ঞান – Intuition -অভিজ্ঞান
সহজাত – Intuitive
বিলম্বিত-বাছাই – Delayed-Choice
সঙ্কল্পনামূলকভাবে- Schematically
ব্যতিচারী ছাপ – Interference Pattern
নিরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানী – Experimental Physicist
বানান কৃতজ্ঞতা- তৃষিয়া নাশতারান
এই অংশটা একটু সহজ করে বুঝিয়ে দিলে ভাল হয় …
ভাই আপনি কি হারিয়ে গেলেন? অধ্যায় ৫ এর অনুবাদ কই? :-/ 🙁
@Atiqur Rahman Sumon,
আমারো একই প্রশ্ন। বিদ্যুৎ বেগে চার পর্ব প্রক্ষেপণের পর লেখক হাওয়া হয়ে গেলেন কেন? … কেনু কেনু কেনু? 😕
@অভিজিৎ, কেউ কথা রাখে না। বিশেষ করে অনুবাদের ক্ষেত্রে।
@অভিজিৎ দা,
আমার প্রিয় বই God Delusion-এর অনুবাদের অগ্রগতি কতদূর?
আপনার কাজের অগ্রগতি দেখে মুগ্ধ আমি। অর্ধেকতো হয়েই গেলো। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাকিটাও শেষ করে ফেলবেন বলে আশা রাখছি।
@লেখক সাহেব,
আমি আপনার নিকট ছবি সম্পর্কিত কপি রাইট আইনটি অথবা নিয়মাবলী জানতে চাই ? আপনার লেখায় অনেক ছবি উল্লেখ করেছেন। এভাবে কি আমরা যে কোন ছবি উল্লেখ করার অধিকার রাখি ? নাকি রেফারেন্স দিতে হবে ? ঠিক বুঝতেছি না। জানালে অনেক খুশি হইতাম।
@ফুয়াদ,
আমি ভাই মামুলি অনুবাদক। কোনো ‘লেখক সাহেব’ নই।
ছবিগুলো মূল বইয়ের।
এ বিষয়ক কপিরাইট সংগ্রহের প্রকৃয়া চলছে।
আপনার উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
আমি আসলে কিছু একটা লেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কপি রাইট আর পিকচারের কোন নিয়ামবালী জানা নেই। আবার ছবি ছাড়া কথা গুলি ভাল ভাবে আসবে না। এই সমস্যায় পড়েছি।
আগের পর্ব গুলির লিংক শুরুতে থাকা দরকার। প্লিজ। আমি পুরাটা প্রিন্ট করার ধান্দায় আছি। 🙂
@আতিক রাঢ়ী,
প্রতি পর্বের শেষেই, ডানে বামে বা একেবারে শুরুতে যাওয়ার লিঙ্ক দিয়েছি। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
উফ্,খেয়াল করি নাই। খালি উপরে খুঁজছিলাম।
আপনার একটা বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য। এর আগেও কেউ কেউ বড় সর আনুবাদের কাজে হাত দিয়েছিল। কিন্তু সেই জিহাদি জোস বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। আপনি ব্যাতিক্রম। :rose2:
নিবিড় পাঠই দরকার বটে। স্কিম করতে আইসা পুরাই ধরা ব্রাদার। আমি মানবিকের ছাত্র, আইবিএতে ফিজিক্সে আগ্রহী হইসিলাম। বেশ কিছু ইংরেজি বই টই পড়ে ভাবলাম, জানার চেষ্টা করি তো আমার সাইন্সের ক্লাসমেটরা কি পড়সে। তখন ক্লাস টেনের ফিজিক্স বই পড়তে গিয়ে যেই রিঅ্যাকশন হইসিলো এইখানে ধারেকাছে হইসে। 😉
কিন্তু কিছু মনে কইরো না, আমি নিজে বই-টই অনুবাদ করতে গিয়ে জানি খেই হারালে কি হয়। তুমি বইটার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারসো, সেইটা হল আসল কথা। 🙂
তারপরও, আরো ছোট ভাগে সোজা করে লিখলে হয়তো সুবিধা হতো। কিন্তু ওভাবে আবার হয়ও না। দিস ইজ গুড।
আসলে, মুক্তমনায় স্কিম মেন্টালিটি কাজ করবে না। বুঝছি। 🙂
@সিরাত,
শোনো তোমারে একটা জিনিস নিশ্চিত করি। যারা সাইন্সে পড়েছে তারাও নিবিড় (আগের বার বানান করসি ভুল) পাঠ করলেও একই রকম ‘ধরা খাইসি’ টাইপের অনুভুতি পাবে।
কারণ এখানে একটা টোটাল প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। আর, পুরোনো ব্যবস্থার সাথে যারা যত বেশি পরিচিত তাদের জন্য নতুন প্যারাডাইম গ্রহন করা তত বেশি কঠিন। সে হিসাবে তুমি এগিয়ে আছো। সত্যিই!
আর সমস্যা হলে হতে পারে ‘ইকুয়েশন বা সাইন্টিফিক নোটেশন’ বিষয়ে। কিন্তু হকিং এর বইতে সাধারনত এই দুই জিনিশ থাকে না। আইডিয়াটাই ম্যাটারস। তাই আগ্রহ করে যদি শুরু থেকেই পড়, আমার মনে হয়, বইটির মূল ‘ধারণা’টা অনেকের চেয়ে বেশি সহজে আত্মস্থ করতে পারবা। 🙂
@সিরাত, সিরাত ভাই কয় কি? এই জিনিস আরো টুকরা করলে বোরিং হয়ে যাবে। এমনি তে পড়তে বসলে মনে হয়, কবে পুরাটা শেষ হবে! তর সয় না। 🙁
কিছু জিনিস টুকরা না করে উপায় থাকে না। আবার টুকরা হলেও তর সয় না।
লেখাটা বেশ বড়, তাই পড়তে পড়তে মন্তব্য করব।
আমি এটা নিয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। এই অংশ পড়ে মনে হচ্ছে যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা আমাদের মাপামাপির ক্ষমতাকে সীমিত করে দিচ্ছে। কিন্তু এটি চলকের মান “আসলে” থাকতে পারে, আমরা মাপতে পারি বা নাই পারি। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে ব্যাপার সেটা নয়…
ভাল কথা, কিন্তু এখানে সমস্যা অন্য। হাইজেনাবার্গ অনিশ্চয়তার গাণিতিক ফর্মুলেশনে দেখা যাচ্ছে, ব্যাপারটি হল এরকম:
ক. একটি কোয়ান্টাম স্টেট হচ্ছে হিলবার্ট স্পেসের উপর একটি মেজার
খ. এই কোয়ান্টাম স্টেট একটা বিশেষ নিয়ম মেনে চলে যাতে একটি কণিকার গতি মেজার ও অবস্থান মেজার কখন একই সাথে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত নয়।
আরও ভাল কথা। কিন্তু এটা কোন অর্থে “অনিশ্চিত” সেটা এখন আবার বুঝতে পারছি না। বরং একে ভীষণই “নিশ্চিত” মনে হচ্ছে, বেশ জটিল হলেও। মনে হচ্ছে, “নিশ্চিত”
বলতে একটি real number আর অনিশ্চিত বলতে matrix বোঝানো হচ্ছে। কেমন যেন arbitrary। একই মন্তব্য “ফলাফল নির্ধারণ করে না-এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। Matrix আকারের ফলাফল অনির্ধারিত কোন অর্থে?
সাহায্য করুন।
@রৌরব,
হ্যা, অনিশ্চয়তার নীতি আসলে কোনো ‘পদ্ধতিগত বাধা না’। কোয়ান্টাম মেকানিক্স মতে এটা প্রকৃতির মৌলিক একটা বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য আছে বলেই আমরা ঐসব আনুসাঙ্গিক দুইটি মানকে একসাথে নির্ণয় করতে পারছি না।
আর মন্তব্যের শেষ অংশে আপনি যেটা বলেছেন, ও ধরণের উচ্চতর গণিতে না গিয়ে সহজ ভাবে অনিশ্চয়তার নীতিটা বোঝার চেষ্টা করি আসুন।
প্রথমে একদম প্রাথমিক প্রোবাবিলিটির কথায় আসি। (বোধগম্যতার স্বার্থে অনেক সরলীকরণ করবো, আইডিয়াটা ধরতে পারাই লক্ষ্য) মনে করেন আমাদের হাতে বেশ কিছু ধ্বনাত্বক সংখ্যা আছে। সংখ্যাগুলোর মান আমরা জানি না। কিন্তু আমরা জানি তাদের মান সম্পর্কে আমরা কতটুকু অনিশ্চিত। অর্থাৎ হিসাবের জন্য ধরে নিই প্রতিটি সঙ্খ্যার মান যতই হোক না কেন তার প্রতিটি সম্পর্কে আমাদের জানা মান ৫ একক কম বেশি। মানে a হলে আমাদের জানা মান a \plusminus ৫। খেয়াল করুণ এখানে অনিশ্চয়তার রেঞ্জ মোট ১০ ঘর।
এখন প্রশ্ন হলো এই সংখ্যা যে মান আমরা জানি তার গড় সর্বনিম্ন কত হতে পারবে?
একটু ভাবলেই দেখবেন তাদের গড় মান ৫ এর কম হতে পারবে না। যেহেতু শুধু ধনাত্বক সংখ্যা নেওয়া হচ্ছে সেহেতু গড় পাঁচের কম হলে প্রতিটিতে ঐ \plusminus ৫ অনিশ্চয়তা ধরে রাখা যায় না।
এই গেল একটা ব্যাপার।
এখন এ থেকে ইলেক্ট্রন কেন নিউক্লিয়াসে পতিত হয় না সেটা বোঝা সম্ভব। আমরা জানি নিউক্লিয়াস পরমানুর আকারের তুলোনায় খুবই ক্ষুদ্র। এবং আমরা জানি অবস্থান ও শক্তির পরিমান পরষ্পর অনিশ্চয়তার নীতি দ্বারা সম্পর্কিত।
এখন ইলেকট্রন যদি ঘুরতে ঘুরতে নিউক্লিয়াসে পতিত হতে থাকে তাহলে নিউক্লিয়াসের আকার অতিব ক্ষুদ্র হবার কারণে আমরা প্রতি মূহুর্তে ইলেক্ট্রনের অবস্থান সম্পর্কে আগের চেয়ে বেশি পরিমানে নিশ্চিত হতে থাকবো। মানে নিউক্লিয়াসের যত কাছে যাচ্ছে, আমরা তত ভালোভাবে জেনে যাচ্ছি যে ‘এত’ রেডিয়াসের ক্ষূদ্রো গোলকের মধ্যে ইলেক্ট্রনটা আছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই গোলকের আকার কমার সাথে ইলেকট্রনের অবস্থান বিষয়ক অনিশ্চয়তা কমছে। তাই অনিশ্চয়তার নীতি অনুযায়ী তার এনার্জির অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকবে। এখন কোনো এক রেডিয়াসের জন্য দেখা গেল এনার্জি অনিশ্চয়তা ১০০০ ঘর হয়ে যায়। (ইলাস্ট্রেটিভ কারণে সংখ্যাগুলো ইচ্ছামত বসাচ্ছি)। তাহলে খেয়াল করুণ কেসেও ইলেকট্রন টির ‘এক্সপেকটেড এনার্জি’ (যেটাকে গড় এনার্জি বলা চলে) হয়ে যাচ্ছে ৫০০। কারণ গড়ে ৫০০ এনার্জি না থাকলে ১০০০ ঘর অনিশ্চয়তা জেনারেট করা সম্ভব নয়। (আগের উদাহরণের মতো)
এভাবে রেডিয়াস যত কমবে, বা ইলেক্ট্রনটি কেন্দ্রের যত কাছে পতিত হতে থাকবে, তার এনার্জি অনিশ্চয়তা বিপরীত অনুপাতে বাড়তে থাকবে। (এদের গুণফল প্লাঙ্ক ধ্রুবকের সমান, তাই।) এই বাড়তি অনিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনগুলোর ‘এক্সপেকটেড এনার্জি’ও অনেক বাড়তে হবে। কিন্তু ইলেকট্রনটির এনার্জি তো বাড়ছে না। বরং তড়িতচৌম্বকীয় বিকিরণ করে করে এনার্জি কমছে বলেই তো সেটা কেন্দ্রে পতিত হচ্ছিলো। এভাবেই এসব ব্যাপারকে ব্যালান্স করতে গিয়ে ইলেক্ট্রনটি একটি স্টেবল অর্বিটালে থিতু হয়।
এটাই ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসে না পড়ার ‘একমাত্র’ ব্যাখ্যা।
ওদিকে খেয়াল করুণ নিউক্লিয়াসে কিন্তু একাধিক প্রোটন-নিউট্রন আছে! তারা থাকে কেমনে? তারা থাকে কারণ, তারা ওই ক্ষুদ্র যায়গায় একসাথে থাকতে হলে অনিশ্চয়তা নীতি মেনেই যতটুকু বাড়তি শক্তি লাগতো, ততটা বাড়তি শক্তি ধারণ করে। এ কারণেই নিউক্লিয় বিস্ফোরণে আমরা বিপুল শক্তি রিলিজ হতে দেখি।
যাকগিয়ে, যেটা বলতে চাচ্ছিলাম বলা হয়ে গেছে। এই যে আমি আপনি মেঝে ফূড়ে নিচের তলায় পড়ে যাচ্ছিনা এর কারণও এই অনিশ্চয়তার নীতি। তাই নীতিটাকে একটা ‘গাণিতিক নিয়ম’ না ভেবে প্রকৃতির ‘ভৌত নিয়ম’ হিসাবে মেনে নিতে হবে। অন্তত যতদিন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের চেয়ে ভারো কোনো বাস্তবতার মডেল কেউ প্রস্তাব না করছেন।
আশাকরি এই মন্তব্য কাজে লাগবে।
ধন্যবাদ। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
আমার সমস্যা “অনিশ্চয়তা” কথাটা নিয়ে। কথাটা যদি স্রেফ ঐতিহাসিক কারণে ব্যবহৃত হয়, তাহলে গোল চুকে গেল। কিন্তু যদি কথাটাকে সিরিয়াসলি নিই, তাহলে ইন্টারপ্রেটেশন আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না।
“পদ্ধতিগত বাধা” বলতে কি বোঝাচ্ছেন নিশ্চিত নই, তবে ধরে নিচ্ছি আমি যে বলেছিলাম আমাদের মাপামাপির সীমাবদ্ধতার কথা, সেদিকে ইঙ্গিত করছেন। হাইজেনবার্গের সূত্র অনুযায়ী আমরা মনুষ্যজাতি যাকে অবস্থান বা গতি বলে জানি, তার সঠিক পরিমাপ সম্ভব না, এটা বোঝা গেল। এই অর্থে “অনিশ্চয়তা” কথাটাও স্পষ্ট। কিন্তু “মৌলিক” অনিশ্চয়তাটা কোথায়? আমি তো দেখছি, হাইজেনবার্গের সূত্র বলছে যে গতি ও অবস্থান একান্তই মানবিক ধারণা, “আসলে” এগুলি উচ্চমাত্রার হিলবার্ট স্পেসে অবস্থান করে, এবং কিছু নির্দিষ্ট সূত্র মেনে চলে। সেই লেভেলে, অর্থাৎ “মৌলিক” লেভেলে তো পুরো জিনিসটি “নিশ্চিত” নিয়ম মেনে চলে বলে মনে হচ্ছে।
@রৌরব,
আবারো হিলবার্ট স্পেস বা এমন কোনো গাণিতিক আবস্ট্রাকশনে না গিয়ে আপনি যেটা বললেন সেটা প্রথমে আমি সোজা বাংলায় বলার চেষ্টা করি।
মানে আমার মনে হচ্ছে আপনি ব্যাপারটাকে লুডু খেলা মডেলে ফেলতে চাচ্ছেন। অনেকটা আমরা ছক্কা গুটি চেলে একটা র্যান্ডম সংখ্যা পাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু ছক্কাগুটীতে আসলে কী পড়বে (যেহেতু এটা ক্লাসিক্যাল অবজেক্ট) সেটা ইনিশিয়াল কন্ডিশন জানা থাকলে ঠিকই আর ‘অনিশ্চিত’ হতো না।
আপনি
এটা বলে আসলে বোঝাতে চাইছেন যে হয়তো কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার মাঝেও কোনো উচ্চতর স্পেসে কোনো নিশ্চিত প্রকৃয়াই এই ফলাফল সৃষ্টি করছে। যেখাএন উচ্চতর এই স্পেসটা হচ্ছে লুডূগুটি ছোড়ার কৌটাটা। যার মধ্যে কী হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু কিছু একটা ‘নিশ্চিত’ হচ্ছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে এই ধারণাটা ‘আইনস্টাইনীয়’ সত্যেন বোস আইনস্টাইন এর ‘ভাবশিষ্য’ টাইপ কিছু হবার কারণে বোসও তার বাকী জীবন এ ধরণের একটা মডেল খুঁজতে কাটিয়েছেন। উভয়েই ব্যর্থ হয়েছেন। এবং বর্তমান কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর আলোকে ঐ ‘লুডুগুটি’ মডেলটা আসলে ভুল।
আপনি কি আমার ইলেকট্রনের এনার্জি নিয়ে বলা ‘অনিশ্চয়তার’ ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন। এখন পড়ে মনে হচ্ছে আমি ঠিক ক্লিয়ার করে লিখতে পারিনি।
ব্যাপারটা অনেকটা এমন। আপনার কাছে ঐ ভেরিয়ে বল গুলো আছে যেগুলোর মানে \plusminus 5 ঘর পর্যন্ত ভেরি করে। তাহলে ঐ স্যাপ্লল স্পেস থেকে যেকোনো সংখ্যা তুললে আপনি সেই সংখ্যা সম্পর্কে অন্ততত ১০ ঘর অনিশ্চিত থাকবেন।
এর মানেই হলো ঐ স্যাম্পলের গড় মান অবশ্যই অন্তত ৫ হতে হবে।
ব্যাপারটা বোঝা যায়, এভাবে। যদি দেখা যেত সবগুলো মানই ০ থেকে ৩ এর মধ্যে। তাহলে কিন্তু আর সেখান থেকে ‘ড্র করে’ ১০ ঘর অনিশ্চয়তা পাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব না। অনিশ্চয়তা হবে বড় যোর ৩ ঘর। আর তখন তাদের আভারেজ মান ১.৫ এর মত হয়। যেখানে ১০ ঘর অনিশ্চয়তার জন্য আভারেজ মান ৫ ঘর (একক)।
তবে এই উদাহরণ যাস্ট অনিশ্চয়তার সাথে ‘গড় মানের’ সম্পর্কটাই বোঝাচ্ছে। যেখানে গড় মান একটা ভৌত বৈশিষ্ট্য। এভাবেই অনিশ্চয়তা একটা অবজেক্টের (কোয়ান্টাম কণিকা) ভৌত আট্রিবিউট এর উপর প্রভাব ফেলছে।
তবে শেষ কথা হলো। এ ধরনের ‘নাম্বার ড্র’ করার মডেল দিয়ে এই ধারণাটা সম্পরকে মৃদু আভাস দেওয়া গেলেও, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এভাবে কাজ করে না। কারণ ওখানে অনিশ্চয়তার উদ্ভব হবার জন্য ‘অনেকগুলো সংখ্যা থেকে ড্র করা হচ্ছে’ এ ধরণের ‘অনেকগুলো’ কিছু লাগে না।
আর হিলবার্ট স্পেস নিয়ে আপনি যেটা বলতে চাচ্ছেন। সে সম্পর্কে কি আপনার ‘স্পষ্ট ধারণা’ আছে? আমি শুনতে আগ্রহী। কারণ আপনি ঠিক কী বলতে চাচ্ছেন সেটা বুঝতে পারছি না। অনুমান করে নিয়ে উত্তর দিচ্ছি। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
তা নয়। আমার প্রশ্ন হল, কোয়ান্টাম স্টেট কি একটা সত্যিকারের ভৌত জিনিস, নাকি একটা গাণিতিক অ্যাবস্ট্রাকশন? এখান থেকেই শুরু করি।
@রৌরব,
এটা একটা সত্যিকারের ভৌত জিনিস।
আর আপনি ‘সত্যিকারের’ বলতে বোঝাচ্ছেন ‘বাস্তব কী না’। বাস্তবতার যে সংজ্ঞা এখন বিজ্ঞানীরা গ্রহন করেন সেটা হচ্ছে ‘কাঠামোনির্ভরবাস্তবতা’ বা model-dependent realism (অধ্যায় তিন)। এ মতে শুধু মাত্র যেটা ধরে নিলে কোনো ভৌত ঘটনা ব্যাখ্যা বা তার এন্ড রেজাল্ট সঠিক ভাবে প্রেডিক্ট করা যায় সেটাই বাস্তব।
যেমন দ্বিচিড় পরীক্ষায় ‘কোন-পথ’ তথ্য নির্ণয় করা না হলে, কণিকাটি একই সঙ্গে দুইটি চিড় দিয়েই পার হচ্ছে। এটাই বাস্তব। কারণ এটা হচ্ছে বলেই আমরা ব্যতিচারী প্যাটার্ন দেখতে পাচ্ছি। এই পর্যবেক্ষণ এর অস্তিত্ব আছে। এবং এই প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করতে পারছি বলেই আমরা বলছি কণিকাটি একই সঙ্গে দুইটী ছিদ্র পেরিয়ে এসে, নিজের সাথেই ব্যতিচার করছে।
যেহেতু এসব কোয়ান্টাম ঘটনার এন্ড রেজাল্ট (এখানে ব্যতিচারী প্যাটার্ণ, এবং অন্য অনেক পরীক্ষায় দেখা অন্য অনেক কিছু) আমরা অবজার্ভ করি। এবং আমাদের ধরে নেওয়া এই ‘কোয়ান্টাম মডেল’ সে অবজার্ভেশনগুলোকে খুবই সূক্ষ্মভাবে বর্ণনা, হিসাব ও অনুমান করে। তাই কোয়ান্টাম স্টেটগুলো ‘সত্যিকারের ভৌত জিনিস’।
@তানভীরুল ইসলাম,
কিন্তু তাহলে হকিং “মৌলিক ভাবে” অনিশ্চিত, এ কথা বলছেন কেন? হকিং বললেন
১) পর্যবেক্ষণগত ভাবে দেখলে অনিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে। ভাল কথা।
২) তারপর হকিং বললেন, শুধু তাই নয়, প্রকৃতি মৌলিক ভাবেই অনিশ্চিত। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণাতীত ভাবে প্রকৃতি অনিশ্চিত।
৩) এখন আপনি/হকিং আবার পর্যবেক্ষণবাদকে নিয়ে আসছেন, বলছেন, কোয়ান্টাম স্টেট পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করবার ব্যবস্থা মাত্র। তাহলে ওই দ্বিস্তরীয় অনিশ্চয়তা দাবি করবার মানে কি? বললেই হয়, পর্যবেক্ষণগত দিক থেকে পৃথিবী অনিশ্চিত।
@রৌরব,
আমরা আগেই দেখেছি ‘নৈর্বক্তিক বাস্তবতা’ বলে আসলে কিছু নেই। তাই এখানে ‘মৌলিক’ বলতে এই কাঠামোনির্ভর বাস্তবতাতে যতটুকু ‘মৌলিক’ হওয়া সম্ভব ততটুকু বোঝানো হচ্ছে।
আমার মনে হয় ‘অজ্ঞতাপ্রসূত সম্ভাব্যতা’র সাথে ‘কোয়ান্টাম সম্ভাব্যতার’ যে ‘মৌলিক’ পার্থক্য সেটাই বোঝানো হচ্ছে। আর এখানে ‘মৌলিক ভাবে অনিশ্চিত বলতে’ বলা হচ্ছে “নো ম্যাটার হাও মাচ ইনফরমেশন উই হ্যাভ” কোয়ান্টাম জগত ‘সম্ভাব্যতা নির্ভর’। কিছু অনিশ্চয়তাকে রূল আউট করা যাবে না কারণ এগুলো হচ্ছে সিস্টেমের একেবারে ‘গাঠনিক’ প্রপার্টি।
আচ্ছা সেকশনটা কি একটু পয়েন্ট আউট করবেন? তাহলে আমি নিজে অনুবাদ করতে গিয়ে আম্বিগুইটি ইন্ট্রোডিউস করলাম কিনা চেক করতাম। বা রিরাইট করতাম। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
আর শুধু ‘পর্যবেক্ষণগতভাবে অনিশ্চিত’ বললে দাঁড়ায় “যেহেতু আমরা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পরছিনা সেহেতু কিছু ব্যাপারে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে”
আর কোয়ান্টাম অনিশ্চতা বলছে।
“যেহেতু কিছু ব্যাপার মৌলিক বা গাঠনিক ভাবেই অনিশ্চিত, সেহেতু আমাদের কোনো পর্যবেক্ষণই সেটাকে নিশ্চিত করার মত তথ্য সংগ্রহ করতে ক্ষম নয়, তাই অনিশ্চতা থেকেই যাচ্ছে।”
ইম্পলিকেশনের দিকটা খেয়াল করুন।
@তানভীরুল ইসলাম,
এই মন্তব্যের শেষাংশ। প্রকৃতিতেই নির্ধারিত নিশ্চিত মান বলেই কিছু নেই বলতে হকিং যদি বুঝিয়ে থাকেন “আমাদের পক্ষে নিশ্চিত মান আহরণ করা সম্ভব নয় কোনভাবেই, কোন ধরণের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলেও তা সম্ভব নয়” তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু টোনটা অন্যরকম শোনাচ্ছে, অন্তত আমার কানে।
@রৌরব,
মূল ইংরেজী লাইনটা এমন-
According to quantum physics, no matter how much information we obtain of how powerful our computing abilities, the outcomes of physical processes cannot be predicted with certainty because they are not determined with certainty.
:no:
হকিং সাহেব কি আমাদের জানাবেন নিচের কোন বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি দৈনিন্দিন অভিজ্ঞতার সাথে মেলে:
পৃথিবী গোল
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘেরে
রোগ হয় চোখে দেখা যায়না এরকম ছোট জীবাণুর কারণে
বাতাস ৪ ভাগ নাইট্রোজেন ও ১ ভাগ অক্সিজেন দিয়ে গঠিত
…..এরকম অসংখ্য
বিংশ শতাব্দীকে যেভাবে আলাদা করে দেখছেন হকিং সেটা শুধু অপ্রয়োজনীয় ভাবে রোমান্টিকই নয়, বিপজ্জনক।
@রৌরব,
আপনি যে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো দিলেন তা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সাথে না মিললেও কিন্তু উপলব্ধি করা যায়। মানে বিষয়টা বুঝা যায়। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিষয়গুলো সাধারণের কাছে একেবারেই কল্পকাহিনী মনে হবে।
তাই
পৃথিবী গোল,
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘেরে,
রোগ হয় চোখে দেখা যায়না এরকম ছোট জীবাণুর কারণে,
বাতাস ৪ ভাগ নাইট্রোজেন ও ১ ভাগ অক্সিজেন দিয়ে গঠিত,
এগুলো দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সাথে না মিললেও অন্তর্জ্ঞানের সাহায্যে উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ধারণাগুলো অন্তর্জ্ঞানের সাহায্যে উপলব্ধি করা অসম্ভব।
হকিং সাহেব সম্ভবত সেটাই বুঝাতে চেয়েছেন।
রুদ্ধশাসে পড়ে গেলাম। পড়ে মনে হল যেন কোন science fiction পড়ছি।
আপনার অনুবাদ দারুন হয়েছে। আর হকিং এর এই বইটা খুব পাঠক friendly মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় যে বিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না, সেও এই বই পড়ে আনন্দ পাবে।
@রনবীর সরকার,
বইটার এই যে পাঠকবান্ধব হওয়ার কথা বললেন, এটার কারণেই কিন্তু বইটা অনেক বিজ্ঞানীর সমালোচনার শিকার হয়েছে। উইকিপিডিয়া থেকে-
Dwight Garner in the New York Times was critical of the book, saying: “The real news about The Grand Design is how disappointingly tinny and inelegant it is. The spare and earnest voice that Mr. Hawking employed with such appeal in A Brief History of Time has been replaced here by one that is alternately condescending, as if he were Mr. Rogers explaining rain clouds to toddlers, and impenetrable.”[8]
আসলেই চমৎকার অনুবাদ হচ্ছে তানভীরুল। কিছু বানান ভুল আছে। যেমন,
পৃথীবি বানান্টা হবে পৃথিবী। বাকিবল শব্দটা যেহেতু ইংরেজী = সেহেতু এটার পাশে ব্র্যাকেটে Buckyball লিখে দিতে পারেন।
ধীরে ধীরে জটিল অধ্যায়গুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে আমরা ক্রমশঃ।
@অভিজিৎ,
দৈর্ঘ্য এবং জটিলতা দুটোই বাড়তে থাকবে। :-X
অবশ্য সেই সাথে বাড়বে চমৎকারিত্ব! 🙂
বানান গুলো মোটামুঠি ঠিক করে নিয়েছি। আপনার যেহেতু ইংরেজীটা পড়া। সেখানকার কোনো জটিল অংশ মনে পড়লে সেটুকু আমি কেমনে অনুবাদ করলাম একটু মিলিয়ে দেখতে পারেন। 🙂
চমৎকার কাজ হচ্ছে।
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ 🙂
পাঠকের প্রতি মন্তব্য-
১। এ অধ্যায় পড়ে মনে হতে পারে পদার্থবীজ্ঞানীরা আমাদের ‘ভূগোল পড়াচ্ছেন’ :-X
২। অনুবাদের কোনো অংশে মূল লেখকবৃন্দ কী বলতে চেয়েছেন সেটা স্পষ্ট মনে না হলে অবশ্যই জানাবেন। কিন্তু মূল লেখকরা যেটা বলেছেন সেটার অর্থ কী, তা ব্যাখ্যা করার দায়-দায়িত্ব অনুবাদক নেবে না। (অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে চেষ্টা করতে পারে) 😉
৩। প্রাঞ্জলতার স্বার্থে অনেক অংশই ভিন্নভাবে লেখা হয়েছে। এর ফলে কোনো আম্বিগুইটি সৃষ্টি হলে জানাতে ভুলবেন না।
৪। কোণ্টাম মেকানিক্সএর ফাইনম্যানীয় ব্যাখ্যা সম্পর্কে আরো বিশদে জানতে এই অনুবাদকের অনুবাদ করা অন্য একটি ব্লগে প্রকাশিত দুইটি লেখা কাজে লাগতে পারে।
এসো শিখি কোয়ান্টাম মেকানিক্স! (পর্ব ১)
এসো শিখি কোয়ান্টাম মেকানিক্স! (পর্ব ২)
৫। এ অধ্যায়ে গল্প-ইতিহাসের চেয়ে মৌলিক বৈজ্ঞানিক ধারণা নিয়েই আলোচনা বেশি। যেটা পাঠকের কাছ থেকে নীবিড় পাঠের দাবিদার।
আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য।
শুভ পাঠ। 🙂
খুব ভাল অনুবাদ হচ্ছে। বাংলায় কোয়ান্টাম ফিল্ডের ওপর কোন লেখা নেই। এই লেখা সেই শুন্যস্থান পূরণ করবে।
@বিপ্লব পাল,
অনেক ধন্যবাদ। :rose:
কোনো অংশে দুর্বলতা চোখে পড়লে অবশ্যই জানাবেন। সঙ্গে কীভাবে আরো ভালো করা যায় সে বিষয়ক টীপ্স থাকলে তো কথাই নেই। 🙂