আজ (১০-১৫-২০১০) ঢাকার এক খবরের কাগজে পড়লাম যে বাংলাদেশে নাকি এ’বার গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। সরকারী পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে এ’বছর ১৬% কম বৃষ্টি হয়েছে গত বছরের চাইতে। জলবায়ু বিশারদ ডঃ আইনুন নিশাতের মতে এটা নাকি স্বাভাবিক পরিমাণের চাইতে কম এবং এর জন্য দায়ী হচ্ছে গ্লোবাল জলবায়ূ পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জ। আবহাওয়া বদল কথাটির উপর বেশ জোর দেয়া হচ্ছে ইদানীং সারা বিশ্বে। সারা বিশ্বে এখন খনিজ জ্বালানী (ফসিল ফুয়েল) বেশী পোড়ানো হচ্ছে আর সেই কারণে নাকি অঙ্গার-দ্বি-অম্লজান বা কার্বনডাইওক্সাইড মহাশূন্যে গিয়ে একটি স্বচ্ছ আস্তর তৈরী করে দিয়েছে আর সেই কারণে নাকি পৃথিবীর তাপমাত্রা খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে বা পাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আবহাওয়া বিশারদদের ওয়ার্কিং হাওপোথেসিস বা ধারণা।
প্রতি বছর গ্রীষ্মে প্রচন্ড সূর্য তাপে তিব্বতের ভূখন্ড গরম হতে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশী মাত্রায় কেননা সেই অঞ্চলটি একটি মালভূমি এবং সমুদ্রপৃষ্ট হতে অনেক উপরে। মে মাসের দিকে একটি বড় মাত্রার লঘুচাপ সেখানে তৈরী হয়। আর সেই কারণে আরব সাগর থেকে শুরু করে বঙ-উপসাগর ও ভারত মহাসগর হতে উত্থিত জলীয় বাষ্পগুলো বামাবর্তে ঘুরে ঘুরে তিব্বতের দিকে ধাবিত হয়। সেই মেঘগুলো যখন হিমালয়ের পাদদেশে এসে ধাক্কা খায় তখনই তা বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয়। আর সে’গুলোই মেঘ হয়ে বাংলাদেশ, নেপালসহ উত্তর ভারতের নানান অঞ্চলে পড়তে থাকে।
মৌসুমী বায়ু নামে জলীয় বাষ্পের এই উত্তর-পূর্ব গতি পৃথিবীতে খ্যাত। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ও বালুচিস্তান সাধারণত এই বায়ুর আওতার বাইরে তাই সেখানে বৃষ্টির অভাবে তৈরী হয়েছে মরূভূমি। পাকিস্তানের পাঞ্জাব আর ভারতের দিল্লী এই মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে বৃষ্টির জল পায়। এ’বছর জুলাই ও আগষ্ট মাসে মৌসুমী বাতাস এর মোড় খানেকটা ঘুরে গিয়ে সিন্ধু প্রদেশের দিকে ধাবিত হয়েছে আর সেই কারণে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে বন্যাও হয়েছে প্রচুর এবং সেই কারণে বেশ লোকজন ও গোবাদী পশু মারা গেছে।
আমি যখন আগষ্ট মাসে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বৃষ্টিজনিত বন্যার খবর পাই তখন আমি কয়েকজন পরিচিত লোকদের বলেছিলাম যে এবার বাংলাদেশসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে কম বৃষ্টি হতে পারে এই কারণে যে মৌসুমী বায়ু এবার উত্তর-পশ্চিম দিকে খানেকটা বেকে গেছে। আমার ধারণাটি দেখছি বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের কিছু কিছু “পন্ডিত”রা অবশ্য সিন্ধু প্রদেশের বন্যার জন্য এই ব্যাখ্যা দুয়েছেন যে ভারত সরকার নাকি আফগানিস্তান সরকারের সাথে চক্রান্ত করে কাবুল নদী হতে জল নিয়ে সিন্ধু প্রদেশে জলের ধারা বইয়ে দিয়েছে! এতবড় একটা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট ভারত কী ভাবে করতে সক্ষম হলো আর সেটি কেউ ঘুনাক্ষরে টের পেল না – সেটি একটি ভাববার বিষয় বটে!!!
মৌসুমী বায়ু যে এবার উত্তর-পশ্চিম দিকে খানিকটা বেকে গেছে এবং সেই করণে বাংলা দেশে যে খানিকটা কম বৃষ্টিপাত হয়েছে তা যদি “ফ্লুক” বা এককালীন ঘটনা হয় তা’হলে এটি নিয়ে মাথা এত ঘামাবো না, তবে এটি যদি ‘ট্রেন্ড’ হয়ে দাঁড়ায় তবে সেটি বাংলাদেশের জন্য দূ;সংবাদই বটে। আমাদেরকে অধীর আগ্রহে ২০১১ থেকে ২০১৫ সন পর্যন্ত দেখতে হবে যে মৌসুমী বায়ু সিন্ধু প্রদেশের দিকে ধাবিত হয় কি না? অবশ্য পৃথিবীর আবহাওয়া সব সময় এক ভাবে পরিচালিত হয় না। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রাজস্থান মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে আর আফ্রিকার সাহারা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
সময় আমাদেরকে অবশ্য বলে দেবে মৌসুমী বায়ুর গতিবিধি সত্যি কী পরিবর্তন হতে চলেছে কি না।
ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য।
বিভিন্ন রেকর্ডই বলে যে আমাদের দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে আসছে।
আপনি যেহেতু ইউএসডিএ তে কাজ করেন, আপনার কাছে একটু অফ টপিক প্রশ্ন রাখি। মার্কিন বাজারের গ্রোসারীতে আমরা যেসব খাদ্য সামগ্রি কিনি তার বেশীরভাগই দেখি আমদানীকৃত (মুলত উদ্ভিদজাত খাদ্য)। অথচ এত বড় একটি দেশ যার চাষযোগ্য জমি আছে অঢেল। সাধারন ভাবে শুনি যে কৃষিকাজ আমেরিকায় লাভজনক নয় বলেই এই অবস্থা। এ নিয়ে যদি কিছু বলেন।
@আদিল মাহমুদ,
গ্লোবালাইজেশন আর নেফটা (NAFTA) এই দুই এর কারণে মার্কিন মুদির দোকানে মেক্সিকো এবং অন্যান্য সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ হতে প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজী ও ফল আসে। সেই দেশগুলোয় শ্রমের দাম আমেরিকার চাইতে অনেক কম। তাই গ্রোসাররা অধিক মুনাফার জন্য সেখান হতে কৃষিজাত দ্রব্য আমদানী করে।
আরেকটা বিষয় আছে – সেটি হলো আবহাওয়া ঊষ্ণ হওয়ায় অনেক ফসল সেখানে শীতের মওসুমে ফলন করা যায়। আমেরিকার অধিকাংশ জায়গায় সেপ্টম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত কোন সবজী ফলন করা সম্ভব নয়। তাই মেক্সিকো এবং সেন্ট্রাল আমেরিকা হতে সবরকমের সবজী আমেরিকায় চলে আসে। ১৯৭০-১৯৮০ দশকে আমি বিদেশ হতে আমদানীকৃত শাক-সবজী আমেরিকান মুদির দোকানে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। এটি ভুল কথা যে মার্কিন চাষীরা সেন্ট্রাল আমেরিকার চাষীদের সাথে প্রতিযোগিতায় – অন্ততঃ দামের দিক থেকে – টেক্কা দিতে পারবে না। আমাদের লুইজিয়ানায় পারিবারিক চাষীরা মে-জুন মাসে যে বেগুন বাজারজাত করে তা মাণ ও মূল্যের দিক থেকে সেন্ট্রাল আমেরিকার বেগুনের চাইতে অধিক ভাল। তাছাড়া গালফ্ কোষ্টের চাষীরা স্ট্রোবেরী যে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ফলায় তা মেক্সিকান বা সাল্ভাডোরিয়ান চাষীরা সে রকমটি করতে পারবেনা।
বাজার ঠিক রাখার বা stabilization এর জন্য আমেরিকায় স্থানীয় ও আমদানীকৃত শাক-সবজীর দুটোরই দরকার। শীতের সময় যত আঙ্গুর, নাশপাতি, পীচ, প্লাম, এসব আমেরিকার বাজারে পাওয়া যায় তার সবই আসে দক্ষিণ আমেরিকার চিলি থেকে। দক্ষিণ গোলার্ধের জলবায়ু মার্কিনমুল্লুকের জলবায়ুর উলটা হবার জন্য চিলির চাষীরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। বিশ্বায়ন দেখছি কৃষি কাজে সবচেয়ে বেশী ফলদায়ী হয়েছে!
@এ.এইচ. জাফর উল্লাহ,
ধন্যবাদ আপনার জবাবের জন্য। ৭০/৮০ এর দশকে কি তার মানে শাক সব্জীর দাম আমেরিকার বাজারে তূলনামূলকভাবে বেশী ছিল?
বিশ্বায়নের সুফল হিসেবে হয়ত কম মূল্যে কৃষিজাত দ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এর ফলে কি স্থানীয় চাষীরা নিরুতসাহিত হচ্ছে না? আমি অনেকের কাছেই শুনেছি যে চাষীরা ক্রমশই তাদের বাপ দাদার পেশা কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।
@আদিল মাহমুদ,
শীতের সময় সব্জীর দাম বেশী ছিল কেননা গ্রীন হাউসে এসব ফলানো হতো তাই। ফলনের খরচা বেশী ছিল। এখন সারা বছরই একই দাম। থেঙ্কস্ টু গ্লোবালাইজেশন!
১৯৮০ সনে অনেক চাষী দেউলিয়া হয়ে যায় তবে সেটা অন্য কারণে। নিম্ন বিত্তের চাষীরা ব্যাঙ্ক থেকে অনেক ডলার ঋণ নিয়েছিল খামার বাড়ীর জন্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য যেটি তাদের উচিত ছিল না। ১৯৮০ দিশকে চাষীদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই কলেজে গিয়ে খামারে আর ফেরৎ আসেনি।
ইদানীং কর্ণ বা ভুট্টা থেকে ইথাইল এল্কাহোল তৈরী করার জন্য কর্ণের চাহিদা বেড়ে যায় ফলে তার দামও বাড়ে। ভুট্টা চাষীদের সরকার সাবসিডি বা ভর্তুকি (বানান?) দেয়ার ফলে ফার্ম ইনকাম বেশ বেড়ে যায় গত কয়েক বছর ধরে। আমেরিকায় কিন্তু এখনো অনেক চাষী গ্রাম অঞ্চলে আছে। সবাইতো আর দেউলিয়া হয়ে যায় নি। গত বছর কয়েক ধরে গম, ভুট্টা, সয়বীন, ধান এ’সবের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমেরিকান চাষীরা বেশ উপকৃত হয়েছে। আর সেই সাথে ডেইরী চাষীরাও। খামার বাড়ীর ব্যবসা যদি এত ক্ষতিকর হতো তাহলে আমেরিকায় এত চাষী থাকতো না । ফার্মিং কিন্তু এখন অবধি লাভ জনক এন্টারপ্রাইজ। এই ব্যাপারে কোণো সন্দেয় নেই।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার কাছে কি এই ব্যাপারে কোন লিটেরাচার রেফারেন্স আছে? জানাবেন, আমি আগ্রহী।
বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথে সাথে বর্ষার সময় বৃষ্টিপাত বাড়ার কথা, নইলে উষ্ণায়ন মডেলগুলি সঠিক নয় ধরে নিতে হবে। আমি একটা রেফারন্স দিইঃ
P. Guhathakurta & M. Rajivan: Trends in the Rainfall Pattern over India, Intl. Journal of Climatology, 2007
১৯০১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ১৪৭৬টি স্টেশনের ওপর ভিত্তি করে তাদের উপসংহারঃ
Significant increasing trend is also observed in the annual rainfall for the subdivisions Konkan and Goa, Madhya Maharashtra, North Interior Karnataka, Rayalseema, coastal Andhra Pradesh, Gangetic West Bengal, Assam, Meghalaya and Jammu and Kashmir.
গাঙ্গেও পশ্চিম বঙ্গ ও মেঘালয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ট্রেন্ড একই হবে। তবে এটা শুধু বর্ষার সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
৯০এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের ট্রেন্ড দেখতে হলে দেখুন
Mirza M.M.Q. et al. 1998, Trends and persistence in precipitation in the Ganges, Brahmaputra and Meghna basins in South Asia. Hydrological Sciences Journal, 43 (6), 845
সেখানেও ৯০এর দশক পর্যন্ত কোন দীর্ঘমেয়াদী ট্রেন্ড (হ্রাস-বৃদ্ধির) পাওয়া যায় নি।
ধন্যবাদ।
জাফর ভাই, ইন্টারেস্টিং লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। আপনি এই ব্যাপারে কিছুটা আঁচ দিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১ বছরের মধ্যেই ১৬% বৃষ্টিপাত কমে যাবে না। এটা নিশ্চয়ই একটা ব্যতিক্রম। বিভিন্ন জলবায়ু মডেল বলে বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথে সাথে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে, এর মূল কারণ হচ্ছে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে আরো বেশী পরিমাণে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে যোগ হবে। এর ফলে পূর্ব হিমালয়ের নিচের অংশে বেশী বৃষ্টি হবে, অন্যদিকে পশ্চিম ভারত, পাকিস্তান, ও তার পশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যাবে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ কমে যাবে। তবে মডেলগুলি এটাও বলে যে বৃষ্টি শুরু সময়ের কোন নিশ্চয়তা থাকবে না।
মৌসুমী বায়ু ও বৃষ্টিপাতের অস্তিত্ব গত প্রায় এক কোটি বছর ধরে এই অঞ্চলে আছে এবং প্রতি এক থেকে দুই লক্ষ বছরের শৈত্যযুগের সাথে সাথেও তার ব্যাপক ওঠা-নামা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, কিন্তু লিটেরাচার ঘাঁটলে দেখা যাবে, এই মুহূর্তে – গত ৫০ থেকে ১০০ বছরের রেকর্ডের ভিত্তিতে – কোন significant deviation দেখা যাচ্ছে না। মডেল বলে গরমের সময় বৃষ্টি বাড়বে (শীতে কমবে), সেই মডেল ঠিক কিনা সেটা ঠিক করতে কিছু সময় যাবে, আর যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গড় থেকে বিচ্যুতি ধরতে সময় লাগবে।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
দীপেন বাবু, অতি বৈজ্ঞানিকসম্মত মন্তব্য রাখার জন্য ধন্যবাদ! আমাদের এই সামান্য discourse থেকে অন্যরা যদি বুঝতে পারেন যে জলবায়ুর long-term forecasting টা একটি ঝুকিপূর্ণ ব্যাপার তা হলে আমার এই লেখার প্রয়াসটা সার্থক মনে করবো। বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো অনেক সময় না বুঝে খবরের আজগুবী বিশ্লেষণ দেয়।
জলবায়ু ও আবাহওয়ার পরিবর্তন হবেই। গ্লোবাল ওয়ার্মিং না হলেও হবে। পৃথিবীর স্পিনের ওপর একটু সামান্য উবলিং আছে-যার জন্যে তুষার যুগ থেকে উষ্ণতর যুগের মধ্যে এমনিতেই একটা ১০,০০০ ব-২০,০০০ বছরের ভারিয়েশন হয়।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর দরুন গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ অবশ্যই বাস্তব। ভারত, বাংলাদেশ চির সবুজের দেশ থাকবে না। তবে প্রযুক্তি ও উন্নত হচ্ছে। হয়ত বৃষ্টি ছারাও আমরা বেঁচে থাকার পথ পাব।
তবে পৃথিবীতে সব থেকে ভয়াবহ এখন খাদ্য সংকট। পৃথিবীর সেই সব অঞ্চলেই জন সংখ্যা খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যারা খাবার তৈরী করতে পারে না বেশী।একটা যদি মাঝারি মানের আগ্নেয়গিরি উদ্গরন শুরু হয়-পৃথিবীর উৎপাদন ৫০% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে যেমনটা হয়েছিল ইউরোপের আলু দুর্ভিক্ষের সময় [১৮৬০]
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ মন্তব্য রাখার জন্য। খাদ্য উৎপাদনের ব্যাপারে আমার একটা ব্যক্তিগর অভিমত আছে। আমি মার্কিন কৃষি দপ্তরের গবেষনা বিভাগে গত ২৫ বছর ধরে কাজ করছি কৃষি বিষয়ক ব্যাপার নিয়ে। আমার ধারনা পৃথিবীর মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতা যথেষ্ট আছে। জল ও শস্যের পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম হলে উৎপাদন অনেকগুন বাড়ানো সম্ভব। এই ব্যাপারে শুধু একটি উদাহরণ দিচ্ছি। এই গ্রীষ্মে আমি আর ৫ জন বিজ্ঞানী মিলে ৩০ x ৫০ ফিট জমিতে ৬ মাসে প্রায় ১২০০ পাউন্ড বা ৫৪৫ কেজি বেগুন, ঢেরস, স্কোয়াস, লঙ্কা, বরবটি ফলিয়েছি অভাবী মানুষদের জন্য। আর মাত্র ৫টি ঢিপিতে দেশ থেকে আনা বড় জাতের ১০টি লাউ গাছ লাগিয়ে প্রায় ১৩৫০ পাউন্ড বা ৬০০ কেজি লাউ ফলিয়েছি সমাজের দরিদ্র লোকদের জন্য। সর্বমোট ১ টনের উপর শস্য ফলিয়েছি আমরা গত ৬ মাসে। যে সব দেশে খাদ্যাভাব আছে সেখানে লাউ-কুমড়া (কিউকারবিট) জাতীয় ফসল ফলিয়ে খাদ্যাভাব উপশম করা সম্ভব। তাছাড়া ফসলের ফোটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়া জিন টেকনোলোজী দ্বারা বাড়িয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
ভাল কথা, আয়ারল্যান্ডে যে আলুর ‘ক্রপ ফেইলিউর’ হয়েছিল দু’বার (১৭৪০-৪১ এবং ১৮৪০ দশকে) তা কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ‘ফাইটপথেরা’ নামে এক ফাঙ্গাস এর দ্বারা ‘ব্লাইট’ এর কারণে তা হয়েছিল। এই তথ্যটি যে কোনো প্লান্ট প্যাথোলজী টেক্সট বই এ পাওয়া যাবে। উইকোপেডিয়াতেও সেই কারণটি কথা উল্লেখ আছে। আগ্নেয়গিরির উদ্গরন হলে সব ফসলই বিনষ্ট হবে। আমার জানামতে ইউরোপের অন্যান্য দেশে গম বা অন্য ফসল সেই সময় বিনষ্ট হয়নি।
মুক্তমনায় লেখাগুলোয় যে বৈচিত্র থাকে সেটাই পাঠকদের বার বার বাধ্য করে এই সাইটে ফিরে আসতে। আপনার লেখা পড়ে সে ধারণাই মজবুত হলো।
আবহাওয়ার এই তেলেসমাতি এ বছর খুবই আলোচিত ছিলো এই বছর। এই যে দেখুন- আপনি বৃষ্টি না হওয়া নিয়ে লিখছেন, আর এখানে দেশ অকাল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে! গত কিছুদিন সারা দেশেই তুমুল বৃষ্টি হয়েছে যা সবাইকেই অবাক করেছে। বছরের এই সময়টায় কথায় একটু ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাবে দেশের উপর দিয়ে, তা না, উলটো অতি বৃষ্টিতে এখন বন্যা হওয়ার জোগাড়!
আপনার লেখা ভালো লাগলো। আবহাওয়া নিয়ে জ্ঞান কম, তাই আরো চাই এই ধরনের লেখা। ভালো থাকুন।
@নিটোল,
ভাদ্র মাসে দেশে বৃষ্টি হতে দেখেছি ছোট বেলায় তবে এর পরিমাণ খুবই কম ছিল। যাক্, আপনার মন্তব্য পড়ে বেশ অনুধাবন করতে পারলাম যে এ’বছর বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের প্যাটার্নটা খুবই অদ্ভুত ছিল। এটি যদি ‘নর্ম’ বা প্রমিত হহে দাঁড়ায় তাহলে দেশের কৃষিকাজে এক আলোড়ন সৃষ্টি করবে। আমন ধান যেটি দেশের সর্বপ্রধান শস্য তার উৎপাদনে আবহাওয়ার পরিবর্তন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। প্রকারান্তরে হেমন্তের ফসলগুলোকে সজীব করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ যেন চীর সবুজের দেশ থাকে সেটিই কামনা করি। আবহাওয়ার এরকম পাগলাটে ব্যবহার মাঝেমধ্যে পরিলক্ষিত হয় তবে এটা যেন নয়া ট্রেন্ড না হয় সেটিই কামনা করছি। ভাল থাকবেন।