প্রতিবছর অক্টোবর মাস এলেই বিশ্বব্যাপী বড় বড় প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে তাঁরা যদি ইতোমধ্যেই বড় কিছু আবিষ্কার করে নাম করে ফেলেন- নোবেল কমিটির টেলিফোনের আশা তাঁরা করতেই পারেন। হার্ভার্ড, এম-আই-টি, স্ট্যামফোর্ড, ক্যালটেক, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড বা এরকম নোবেল-সমৃদ্ধ ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি থাকে। কারণ সারা পৃথিবীর সব ভালো ভালো গবেষক আর গবেষণাগারগুলো তো এসব ইউনিভার্সিটিরই দখলে। প্যাটেণ্ট অফিসের কেরাণীগিরি করতে করতে পৃথিবী বদলে দেয়া আইনস্টাইনের যুগে যতটা সম্ভব ছিলো এখন আর ততটা নেই। তবে আইনস্টাইনের গবেষণাগার অর্থাৎ “মস্তিষ্ক, কাগজ আর পেন্সিল” এর সাথে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক জুড়ে দিয়ে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা এখনো হয়তো কিছুটা করা যায়, কিন্তু পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য অত্যাধুনিক গবেষণাগার লাগে, উন্নত যন্ত্রপাতি লাগে, লক্ষ ডলারের পরীক্ষণ যদি অশ্বডিম্ব প্রসব করে তা সহ্য করে নিয়ে আরো লক্ষ ডলার খরচ করে পরীক্ষণ চালিয়ে যাবার সামর্থ্য ও সংস্কৃতি লাগে। তারপর প্রতিষ্ঠা, স্বীকৃতি আর প্রচার। তারপর অনেক স্নায়ুচাপ সহ্য করার পর নোবেল পুরষ্কার।
কিন্তু এত কিছুর পরেও মাঝে মাঝে আশ্চর্যজনক ব্যতিক্রম ঘটে যায়- যেমন ঘটেছে ২০১০ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারের ক্ষেত্রে। ২০০৪ সালে দ্বি-মাত্রিক পদার্থ গ্রাফিনের ওপর যুগান্তকারী কাজ, আর ছ’বছরের মাথায় একেবারে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তি। পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটেনি অনেক দিন। নোবেল পুরষ্কার প্রবর্তনের প্রথম দিকে এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছিল- যেমন রন্টগেন ১৮৯৫ সালে এক্স-রে আবিষ্কারের ছ’বছর পর ১৯০১ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, ১৮৯৮ সালে পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কা্রের পাঁচ বছর পর পিয়েরে ও মেরি কুরি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯০৩ সালে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবার কারণে এ অবস্থা বদলে যায়। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে যুগান্তকারী আবিষ্কার করলেও তার পরীক্ষামূলক প্রমাণ পাওয়া না গেলে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় না।সেজন্য অপেক্ষা করতে হয় অনির্দিষ্ট কাল। আর পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয় সেই আবিষ্কারের ব্যবহারিক প্রয়োগের ফলাফলের জন্য। যেমন ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা এম-আর-আই আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৭০ সালে। কিন্তু সেই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে চৌত্রিশ বছর পর ২০০৪ সালে- ততদিনে এম-আর-আই চিকিৎসাক্ষেত্রে একটা বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি। চার্জ-কাপল্ড ডিভাইস বা সিসিডি এবং অপটিক্যাল ফাইবার আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৭০ সালে। তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ডিভাইসে এদের ব্যাপক ব্যবহার চলছে গত তিরিশ বছর ধরে। অথচ সিসিডি ও অপটিক্যাল ফাইবার আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে মাত্র গতবছর ২০০৯ সালে। সে তুলনায় এ বছরের নোবেল প্রাপ্ত গ্রাফিনের ব্যবহার এখনো শুরুই হয়নি। তাই এ বছরের নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ৫২ বছর বয়সী আন্দ্রে গাইম ও ৩৬ বছর বয়সী কনস্টান্টিন নভোসেলভ যখন নোবেল কমিটির ফোন পেয়েছেন- অবাক হবার ভান করতে হয়নি, সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেছেন। এতটা আশা করেন নি তাঁরা নিজেরাও।
আশা করবেনই বা কীভাবে? পদার্থবিজ্ঞানের জগতে একেবারে অজ্ঞাতকুলশীল হয়তো নন, কিন্তু ততোটা বিখ্যাতও নন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আন্দ্রে গাইম ও কনস্টান্টিন নভোসেলভ। বড় কোন রিসার্চ গ্রান্টও তাঁরা পাননি কোনদিন। তাছাড়া কোন সিরিয়াস গবেষণা থেকে নয়, আক্ষরিক অর্থেই ডাস্টবিন থেকে উঠে এসেছে তাঁদের আবিষ্কার। আবিষ্কারের গবেষণাটা তাঁদের কাছে প্রায়-খেলার মত। আন্দ্রে গাইমের চরিত্রের মধ্যেই আছে স্পোর্টম্যানশিপ। একবার না পারলে হাজার বার চেষ্টা করতেও পিছপা হন না তিনি। প্রত্যেকবার ভুল থেকে শিখছেন নতুন কিছু। তাই তাঁর প্রতিটি পরীক্ষা পদ্ধতিই নতুন, পরীক্ষার ক্ষেত্রও নতুন নতুন।
১৯৫৮ সালে রাশিয়ায় জন্ম আন্দ্রে গাইমের। মস্কো ফিজিক্যাল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট পরে চেরনোগোলোভ্কা’র ইনস্টিটিউট অব সলিড স্টেট ফিজিক্স থেকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট। তারপর চলে যান নেদারল্যান্ডে। সেখানে নাইমিগান ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন অনেক বছর। নেদারল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ষোল বছর পর নিজের অজান্তেই গাইমকে অনুসরণ করলেন নভোসেলভ। কনস্টান্টিন নভোসেলভেরও জন্ম রাশিয়ায় ১৯৭৪ সালে। পড়াশোনাও প্রথমে মস্কো ফিজিক্যাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, পরে চেরনোগোলোভ্কা’র ইনস্টিটিউট অব সলিড স্টেট ফিজিক্স। সেখান থেকে পি-এইচ-ডি করার জন্য পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডের নাইমিগান ইউনিভার্সিটিতে। সেখানেই তাঁর পরিচয় হয় প্রফেসর গাইমের সাথে। নভোসেলভ যদিও গাইমের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পি-এইচ-ডি করছিলেন না, কিন্তু গাইমের বহুমুখী গবেষণার প্রতি আকৃষ্ট হলেন। গাইমও নভোসেলভের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় খুশি।
বেশির ভাগ বিজ্ঞানী সাধারণত একটা বিষয় নিয়েই গবেষণা করেন বছরের পর বছর। কিন্তু ক্ষুদ্র একটা অংশ আছে যাঁদের আগ্রহ বিভিন্ন রকম বিষয়ে। তাঁরা কয়েক বছর পর পর গবেষণার ক্ষেত্র বদল করেন সমান দক্ষতায়। আন্দ্রে গাইম তাঁদের দলে। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর একই জিনিস নিয়ে গবেষণা করা খুব ক্লান্তিকর কাজ। তাই কয়েক বছর পরেই আমি হাঁপিয়ে উঠি। তখন ভাবতে থাকি নতুন কী করা যায়”। তাঁর কাছে গবেষণা হলো খেলার মত। খেলায় যে রকম আনন্দ থাকে, নেশা থাকে, উদ্দীপনা থাকে, জয় পরাজয় থাকে- সেরকম গবেষণাতেও আনন্দ, উদ্দীপনা, সাফল্য-ব্যর্থতা থাকে। যে কোন নতুন ক্ষেত্রের প্রতিই আগ্রহ প্রফেসর গাইমের। ১৯৯৭ সালে প্রফেসর গাইম ডায়াম্যাগনেটিজম নিয়ে কাজ করতে করতে আবিষ্কার করেন যে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রে ডায়াম্যাগনেটিক পদার্থ বিকর্ষিত হয়। পানি ডায়াম্যাগনেটিক পদার্থ। তাঁর মাথায় এলো শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে পানি রাখলে পানির কণা বিকর্ষিত হয়ে শূন্যে ভাসতে থাকবে। এটাকে আরো আকর্ষণীয় করার জন্য পানির বদলে তিনি একটা জীবন্ত ব্যাঙ ব্যবহার করলেন। ব্যাঙের শরীরের জলীয় অংশ ডায়াম্যাগনেটিক। উপযুক্ত শক্তির চৌম্বক শক্তির ক্ষেত্র তৈরি করে গাইম দেখালেন যে সেই চৌম্বক ক্ষেত্রে একটা ব্যাঙ বিকর্ষণ বলের ক্রিয়ায় শূন্যে ভেসে থাকে। এরকম বিজ্ঞান মজার তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা কোন মৌলিক আবিষ্কার নয়। এরকম মজার আবিষ্কার যেগুলো দেখে ‘মানুষ শুরুতে হাসে, পরে ভাবতে বসে’- তাদের জন্য হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইগ্-নোবেল কমিটি ইগ্-নোবেল পুরষ্কার চালু করেছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। ২০০০ সালে
চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে শূন্যে ভাসমান ব্যাঙের জন্য ইগ্-নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় প্রফেসর আন্দ্রে গাইমকে। একটা ধারণা ছিল যে যাঁরা ইগ্-নোবেল পুরষ্কার পান, তাঁদের পক্ষে সত্যিকারের নোবেল পুরষ্কার পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ইগ্-নোবেল পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে একজন সত্যিকারের নোবেল বিজয়ীকে অতিথি হিসেবে আনা হয়। ইগ্-নোবেলের সেই প্রচলিত ধারণা ভেঙে গেলো এবছর। প্রফেসর আন্দ্রে গাইম হলেন প্রথম বিজ্ঞানী যিনি ইগ্-নোবেল ও নোবেল পুরষ্কার দুই-ই পেলেন।
২০০০ সালে ইগ্-নোবেল পাবার পর কিছুটা খ্যাতি পেয়েছেন আন্দ্রে গাইম। তার মধ্যে বেশ কিছু মজার ব্যাপারও ঘটেছে। ইংল্যান্ডের একজন ধর্মীয় নেতা দশ লাখ পাউন্ড দিতে চেয়েছেন প্রফেসর গাইমকে। শর্ত একটাই- ধর্মীয় সমাবেশে ভক্তদের সামনে তিনি ঐ ধর্মীয় নেতাকে শূন্যে ভাসতে সাহায্য করবেন। ধর্মীয় নেতা বলবেন যে ঈশ্বরের মহিমায় তিনি অলৌকিক শক্তি বলে শূন্যে ভাসার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। প্রফেসর গাইম সত্যিকারের বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যারা জনগণকে ভাওতা দেন- তাদের সাথে হাত মিলাতে পারেন না কিছুতেই। হোক না সে মিলিয়ন বা বিলিয়ন পাউন্ড দেবার প্রস্তাব।
২০০১ সালে ম্যান্চেস্টার ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন প্রফেসর গাইম। যোগ দিয়েই কনস্টান্টিন নভোসেলভকে পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে তাঁর ডিপার্টমেন্টে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলেন। কনস্টান্টিন নভোসেলভের পি-এইচ-ডি শেষ হয়নি তখনো। থিসিস জমা দিয়েই ম্যানচেস্টারে চলে এলেন নভোসেলভ। কাজ শুরু করলেন গ্রাফিন নিয়ে। প্রতি শুক্রবার বিকেলে সবাই যখন নানারকম সামাজিক আনন্দে মেতে ওঠে- তখন গাইম আর নভোসেলভের গ্রুপ মেতে ওঠে ‘ফ্রাইডে ইভনিং এক্সপেরিমেন্ট’-এ। বড় কোন যন্ত্রপাতি নেই। প্রায় খালি হাতে ল্যাবে যা আছে তা কাজে লাগিয়েই নানারকম পরীক্ষা। এরকম একটা ‘ফ্রাইডে ইভনিং এক্সপেরিমেন্ট’-এর ফসল ২০১০ সালের নোবেল পুরষ্কার।
গ্রাফিন নতুন কোন পদার্থ নয়। গ্রাফিনের অস্তিত্বের কথা জানা আছে অনেক দিন আগে থেকেই। কার্বনের একটা রূপ গ্রাফাইট। ষড়ভুজ আকৃতির পারমাণবিক বন্ধন যুক্ত গ্রাফাইটের গঠন সম্পর্কেও সম্যক ধারণা আছে বিজ্ঞানীদের। আমরা যে পেন্সিল দিয়ে লিখি- সে পেন্সিলের শিস মূলত গ্রাফাইট। পেন্সিলের লেখাগুলো গ্রাফাইটের অনেকগুলো আস্তরণের সমষ্টি। গ্রাফাইটের এই আস্তরণগুলোর প্রতিটি একেকটা গ্রাফিন। গ্রাফিনের একেকটা আস্তরণ এতটাই পাতলা যে এর পুরুত্ব একটা মাত্র পরমাণুর ব্যাসের সমান, অর্থাৎ এক মিলিমিটারের এক কোটি ভাগের এক ভাগ। আরো পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে বলা যায়, দশ পাতা কাগজের পুরুত্ব যদি এক মিলিমিটার হয়, তাহলে দশ লক্ষ গ্রাফিনের আস্তরণের পুরুত্ব হবে এক পাতা কাগজের পুরুত্বের সমান। ইতিপূর্বে গ্রাফিনের আরো সব গঠন আবিষ্কৃত হয়েছে। কার্বন ন্যানোটিউবের কথা আমরা জানি। C60 বা ষাটটা কার্বন-পরমাণু মিলে ফুটবল আকৃতির ফুলারিন আবিষ্কারের জন্য রসায়নে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে ১৯৯৬ সালে।
গ্রাফিনের অস্তিত্ব জানা থাকা সত্ত্বেও তাকে আলাদা করা যাচ্ছিলো না এতদিন। ফলে তার অনেক ধর্মও পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হচ্ছিলো না। আন্দ্রে গাইম ও কনস্টান্টিন নভোসেলভ শুরু করলেন নানারকম পরীক্ষা। কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছিলেন না। সিনিয়র গবেষকদের একজন গ্রাফিনের পুরু আস্তরণ তৈরি করেন আর সবাই মিলে চেষ্টা করা হয় কীভাবে তার একটা আস্তরণ আলাদা করা যায়। যে গ্রাফিনগুলো টেবিলে লেগে থাকতো তা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হতো স্কচ ট্যাপ। গ্রাফিনের ওপর টেপ লাগিয়ে পরে টান দিয়ে টেপটা তুলে ফেললে টেপের সাথে গ্রাফিনও উঠে আসে। ওই ব্যবহৃত টেপগুলো স্বাভাবিক ভাবেই ময়লার বিনে ফেলে দেয়া হয়। একদিন কী মনে করে ওরকম একটা ফেলে দেয়া টেপ ময়লার বিন থেকে তুলে নিলেন নভোসেলভ। কনফোকাল মাইক্রোস্কোপের নিচে টেপটাকে রেখে দেখলেন তাতে যে গ্রাফিন লেগে আছে তার পুরুত্ব অবিশ্বাস্য রকমের কম। একটা পথ পেয়ে গেলেন তাঁরা। ধরতে গেলে এভাবেই আলাদা হয়ে গেলো অবিশ্বাস্য রকমের পাতলা পদার্থ গ্রাফিন। এর পুরুত্ব এতই কম (এক মিলিমিটারের এক কোটি ভাগের এক ভাগ) যে নাই বললেই চলে। তাই গ্রাফিনকে বলা হচ্ছে দ্বি-মাত্রিক পদার্থ, যার শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে, কিন্তু কোন পুরুত্ব নেই।
গ্রাফিনের একটা ষড়ভুজ আকৃতির কোষে দুটো কার্বন পরমাণু থাকে যার ক্ষেত্রফল মাত্র 0.052 বর্গ ন্যানোমিটার। ঘনত্ব 0.77 mg/sq-m. অর্থাৎ এক মিটার বাই এক মিটার আকৃতির এক খন্ড গ্রাফিনের ভর হবে এক মিলিগ্রামেরও কম। গ্রাফিন এত পাতলা যে এটা মাত্র 2.3% আলো শোষণ করে। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে প্রায় সব আলোই বিনা বাধায় চলে যেতে পারে- মানে গ্রাফিন কাচের মত স্বচ্ছ। এত পাতলা, এত স্বচ্ছ, অথচ গ্রাফিন ইস্পাতের চেয়েও কমপক্ষে একশ’ গুণ শক্ত। গ্রাফিনের ভার সইবার ক্ষমতা 42.0 নিউটন/মিটার, অথচ ইস্পাতের ভার সইবার ক্ষমতা মাত্র 0.40 নিউটন/মিটার। এক মিটার দৈর্ঘ্য ও এক মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট একখন্ড গ্রাফিন দুটো খুঁটির মধ্যে বেঁধে দিলে তার ওপর চার কিলোগ্রাম ভর রাখলেও গ্রাফিন খন্ডটি ছিঁড়বে না। এটা এতই পাতলা যে খালি চোখে একে দেখাই যাবে না। এর ওপর একটা বিড়াল শুয়ে থাকলে মনে হবে বিড়ালটি শূন্যের উপর শুয়ে আছে। এই গ্রাফিন খন্ডের ওজন হবে এক মিলিগ্রামেরও কম, অথচ বিড়ালের একটা গোঁফের ওজনও এক মিলিগ্রামের বেশি হবে। গ্রাফিন খুবই বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। এর বিদ্যুৎ পরিবাহীতা তামার চেয়েও বেশি। গ্রাফিনের তাপ পরিবাহিতাও তামার চেয়ে দশ গুণ বেশি।
২০০৪ সালে গ্রাফিনের এসব গুণাবলী প্রকাশ করেন গাইম ও নভোসেলভ সায়েন্স জার্নালে [Science 306, 666 (2004)]। পরের বছর আরেকটি পেপার বিখ্যাত নেচার সাময়িকীতে [Nature 438, 197 (2005)]। দ্রুত সাড়া পড়ে যায় বিজ্ঞান জগতে। গ্রাফিনের ভবিষ্যৎ ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে পড়ে অনেক গুলো ক্ষেত্রে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর ক্ষমতা রাখে গ্রাফিন। এর অবিশ্বাস্য রকমের কম ভর, স্বচ্ছতা, বিদ্যুৎ সুপরিবাহিতার কারণে কম্পিউটার টাচ-স্ক্রিন, কম্পিউটার চিপস ইত্যাদির ক্ষেত্রে গ্রাফিন অচিরেই সিলিকনের জায়গা দখল করে নেবে। সোলার সেল, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স, গাড়ির পার্টস, আকাশ-যানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে স্যাটেলাইটেও জায়গা করে নেবে গ্রাফিন। প্রযুক্তির আগামী বিশ্ব হবে গ্রাফিন-বিশ্ব- এরকমই আশাবাদী বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎদ্রষ্টারা। সে কারণেই আগে ভাগেই গ্রাফিনের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নোবেল পুরষ্কার।
মাত্র ৩৬ বছর বয়সে কনস্টান্টিন নভোসেলভের নোবেল পুরষ্কার পেয়ে যাওয়া একদম অভূতপূর্ব না হলেও কম আশ্চর্যের নয়। [এর আগে লরেন্স ব্রাগ মাত্র ২৫ বছর বয়সে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।]। অনেকে মনে করেন নোবেল পুরষ্কার পাবার পর বিজ্ঞানীরা তেমন কিছুই করেন না আর। ব্যতিক্রম অনেক আছে। যেমন মেরি কুরি (১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাবার পর ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পান), জন বার্ডিন (১৯৫৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাবার পর ১৯৭২ সালে আবার নোবেল পুরষ্কার পান পদার্থবিজ্ঞানে)। আশা করা যায় প্রফেসর গাইম ও নভোসেলভের হাত ধরে আরো অনেক নতুন প্রযুক্তির জন্ম হবে।
গ্রাফিন সম্পর্কে দারুন অভিজ্ঞতা হল ।
সত্যি বলতে কি গ্রাফিন সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না আজই প্রথম জানলাম ,অসাধারন (Y)
প্রদীব দেব কে ধন্যবাদ গ্রাফিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ।গ্রফিন তার অফুরন্ত সম্ভবনা দিয়ে আমাদের এগিয়ে দিক অনেক দুর সে আশায় থাকলাম । :clap
মাসুদ, আপনি যে ইমেইল ব্যবহার করেছেন মন্তব্য করার সময়, সে ইমেইলে আপনাকে লগ ইন তথ্য পাঠানো হয়েছে। দয়া করে লগ ইন করে মন্তব্য করুন। কোন কারণে ইমেল না পেলে মডারেটরদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
@মুক্তমনা এডমিন, ধন্যবাদ ।
দারুণ লেখা। এই ধরনের লেখার জন্যই মুক্তমনা অনন্য, অসাধারণ। অসংখ্য ধন্যবাদ, প্রদীপ!
গ্রাফিন মনে হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক জগতে নতুন একটা বিপ্লব নিয়ে আসবে যেমন এনেছিল সিলিকন চিপ এক সময়।
@ভবঘুরে,
কোন সন্দেহ নেই।
গতকাল সার্ভার সমস্যার জন্য পড়তে পারিনি পোষ্টটা। আজ পড়ে মনে হচ্ছে, আমার আন্দ্রে গাইমের মত একজন প্রফেসর দরকার, যার সাথে কাজ করে বিজ্ঞান নিয়ে খেলতে পারবো। পোষ্টটা হৃদয় নাচিয়ে দিল, আর গ্রাফিন জয় করে নিল আশা।
@নীল রোদ্দুর,
বিজ্ঞান নিয়ে খেলা শুরু করে দিন, আন্দ্রে গাইমের জন্য অপেক্ষা করবেন না। খেলতে শুরু করলেই দেখবেন খেলার নিয়ম-কানুন শিখতে হচ্ছে, ভালো খেলার জন্য ভালো রকমের চর্চা করতে হচ্ছে। এক সময় দেখবেন নিজেই একজন আন্দ্রে গাইম বা কনস্টান্টিন নভোসেলভ বা মেরি কুরি বা আইরিন জুলিয়ট-কুরি হয়ে উঠছেন। (উপদেশ দিচ্ছি মনে করবেন না প্লিজ। কথাগুলো আসলে আপনাকে উপলক্ষ করে নিজেকেই শোনালাম।)
@প্রদীপ দেব, কেবল একটা ল্যাবরেটরীর অপেক্ষায় আছি… খেলতে যে ল্যাবরেটরী লাগে। এইবার পা বাড়িয়েছিলাম ল্যাবরেটরীর পথে। ভিসাটা ঝামেলা বাধিয়ে আমার বাড়ানো পা আহত করে দিয়েছে। ব্যাপার না, পা ভালো হয়ে গেলেই অন্য কোন ল্যাবরেটরীর পথে পা বাড়িয়ে দেব। 🙂
ব্যপারটা বুঝলাম না প্রদীপ দা। পেন্সিলের লেখার আস্তরন বলতে কি আপনি এখানে কণাকে বুঝাচ্ছেন? কণা যদি না হয় তাহলে আস্তরনের সাথে আমরা পরমানুর তুলনা করি কিভাবে?
আমি বলতে চাচ্ছি, আস্তরন হল একটা স্তর, মানে লেয়ার, আর অন্য দিকে পরমানু একটি কণা। এই দুটোর তুলনা করেছেন তাই বুঝতে পারছি না, গ্রাফিন কি কনা নাকি একটা আস্তরন।
বরাবরের মতই অসাধারন লেখা। চমৎকার!!
@সাইফুল ইসলাম,
ধরুন আপনি পেন্সিল দিয়ে কোন কিছু লিখলেন বা একটা রেখা টানলেন। ওই লেখা বা রেখাটি গ্রাফাইটের পুরু আস্তরণ বা লেয়ার। একটা রেখায় হয়তো আছে কয়েক হাজার লেয়ার। এখন এই লেয়ারগুলোর প্রতিটি আলাদা লেয়ার-ই হলো গ্রাফিন। গ্রাফাইট, হীরা, গ্রাফিন, ফুলারিন সবই কার্বন যৌগের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। গ্রাফিন একটা আস্তরণ- এতই পাতলা আস্তরণ যে এর পুরুত্ব নেই বললেই চলে (একটা পরমাণুর ব্যাসের সমান)। তাই গ্রাফিনকে দ্বি-মাত্রিক পদার্থ বলা হচ্ছে।
লিখাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ‘গ্রাফিনের’ অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। আপনকে অশেষ ধন্যবাদ।
:yes:
অসাধারন লাগল লেখাটি। চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
দারুণ লাগল লেখাটা। গ্রাফিনের ধর্মগুলো পড়ে মজা পেলাম। আশা করছি গ্রাফিন তার যথাযোগ্য জায়গা করে নেবে ব্যবহারিক জীবনে। আর পৃথিবীর সাথে একমত। পোস্টটা গ্রাফিনের মতই স্বচ্ছ। 🙂
তবে আরেকটা ব্যাপার পড়ে হাসলাম
নিজেদের বানানো ঈশ্বরের শক্তি প্রমাণ করতে বিজ্ঞানের ব্যবহার করতে চাওয়ার মত ভন্ডামিতে না গিয়ে বিজ্ঞানকে আর যুক্তিকে পূজ্য বানানোই তো শ্রেয়। তাহলে আর কোন ভন্ডামির প্রয়োজন হবেনা, বিশ্বাসের ঠুলি পরা আধো অন্ধকার পথের বদলে সত্যিকারের আলোর পথ পাওয়া যাবে। 🙂
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ লীনা।
আসলে পূজা ব্যাপারটার মধ্যেই এক ধরনের অন্ধত্ব থাকে, তা বিজ্ঞানকে হোক, কিংবা অবিজ্ঞানকে। আর মানুষের বানানো অলৌকিক ঈশ্বর মানুষের হাতেই ক্ষমতা পেয়েছে। তাই মানুষের তৈরি বিজ্ঞান ছাড়া ঈশ্বরের আর কোন উপায় নেই।
@প্রদীপ দেব, তবে বিজ্ঞানকে পূজ্য করা যায় এজন্য যে এখানে অযুক্তি এবং শেষ কথা বলে কিছু নেই। বিজ্ঞানের মানেই সামনে যাত্রা থেমে থাকা নয়। আমি এই সেন্সে বলেছিলাম 🙂
খুবি সুন্দর পোস্ট। ধন্যবাদ।
খুব ভাল লাগল। সাধারণত রসায়ন সম্পর্কিত বিষয়াদি এড়িয়ে চলি, কিন্তু এই পোষ্টটা গ্রাফিনের মতই স্বচ্ছ 😛
@পৃথিবী, অনেক ধন্যবাদ।
অসম্ভব সুন্দর লেখা। কদিন থেকেই গ্রাফিন নিয়ে লেখার জন্য হাত নিশপিশ করছিলো। নীড় পাতায় দুটো লেখা থাকায় আর লেখা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে ভাগ্যিস লিখিনি। এই লেখাটার মত এত সুন্দর করে পারতাম না। পাঠকও বঞ্চিত হতো! অসাধারণ লিখেছেন। :rose2:
এ বাক্যটা দেখে প্রথমে খটকা লেগেছিলো। পরে দেখলাম ঠিকই আছে। ব্যাপারটাকে লিমিটিং কেসে গাণিতিক আরোহ পদ্ধতিতে প্রমাণ করা যায়। 🙂
[img]http://img137.imageshack.us/img137/6778/graphen.jpg[/img]
রিং ধরে বাড়তে থাকলে প্রতি (6+6n) সংখ্যক ষড়ভুজে নোড বাড়ে (6+12n)
$latex \lim_{n \to \infty} \frac{2n+1}{n+1} = 2 $
আর মোট সংখ্যা হিসাব করলে,
$latex 2\frac{(n+1)}{(n+2)} $ এরকম এসেছে যেখানে n → $latex \infty $
এখানে n হচ্ছে একটা করে ষড়ভুজের রিং। সহজ আর কোনো প্রমাণ থাকলে আর কেউ প্রস্তাব করুন।
এখন যেমন ‘সিলিকন’ শব্দটা সবাই এক কথাতেই চেনে, ধারণা করা হয় ক’বছর পর গ্রাফিনকেও মানুষ সেভাবেই চিনবে।
আবারও অনেক ধন্যবাদ। চমৎকার এই লেখাটার জন্য। অন্যান্য বিষয়ে নোবেল প্রাইজগুলো নিয়েও লিখবেন আশাকরি। অপেক্ষায়…
@তানভীরুল ইসলাম,
অনেক ধন্যবাদ তানভীর। আমি লিখেছি বলে আপনি লিখবেন না তা কিন্তু হয় না। দর্শন-ধর্ম নিয়ে যদি একই রকমের এত লেখা থাকতে পারে- বিজ্ঞানে পারবে না কেন? আমার তো মনে হয় বিজ্ঞানের একই বিষয় নিয়ে যত বেশি লেখা আসবে- তত বেশি পরিষ্কার হবে বিষয়টা।
এ বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানে টেস্ট টিউব বেবি’র নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তিটা খুবই উৎসাহ জনক। বিশেষ করে পুরষ্কার ঘোষণার প্রায় সাথে সাথেই ভাটিকান থেকে প্রতিবাদ জানানোটা খুবই মজার। মুক্তমনার কোন বায়োলজিস্ট যদি এ সম্পর্কে লেখেন তবে খুব ভালো হয়। আর শান্তি পুরষ্কার সম্পর্কে বিপ্লব দা’র চমৎকার লেখা চলে এসেছে ইতোমধ্যেই। এবছরের রসায়নের পুরষ্কারও কার্বন যৌগ সম্পর্কিত। কিন্তু আমি যে এক প্রকার রসায়ন-অশিক্ষিত।
@তানভীরুল ইসলাম,
কোন সন্দেহ নেই। সিলিকন এখনই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করেছে। যেভাবে ট্রানজিস্টারের সাইজ ছোট হয়ে যাচ্ছে- তাতে প্রতিটা ট্রানজিস্টারে সিলিকন পরমাণুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে ইলেকট্রনিক চিপ্সে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন ফ্লো পেতে সমস্যা হচ্ছে মাঝে মাঝে। গ্রাফিনের ইলেকট্রিক কন্ডাক্টিভিটি সিলিকনের তুলনায় অনেক বেশি হবার কারণে গ্রাফিন সিলিকন থেকে এগিয়ে থাকবে এ ব্যাপারে।
অসাধারণ লেখা। প্রদীপ’দাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
@স্বাধীন,
উদার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অসম্ভব সুন্দর লেখা হয়েছে … আমি ফেসবুকে শেয়ার দিলাম।
@দিগন্ত,
অনেক ধন্যবাদ।
ফুলারিন এবং গ্রাফিনকে একই ফর্মের বহিঃপ্রকাশ বলা যায়?
আমি যদ্দুর জানি-গ্রাফিন sp^2 bonded, ফুলারিন এবং কার্বন ন্যানোটিউব sp^3 বন্ডিং এ। যার জন্যে গ্রাফিন অসাধারন তাপ এং বিদ্যুত পরিবাহি ( মুক্ত ইলেকট্রন কচ্ছের জন্যে) -কিন্ত ফুলারিন অপরিবাহী-যেহেতু সব ইলেকট্রন বন্ডেড। ফুলারিনের ব্যাবহার অপরিবাহি হিসাবে ( যদিও এলকয়ালাইন ডোপিং এ একে পরিবাহী করা যায়) সেখানে গ্রাফাইনের ব্যাবহার পরিবাহি হিসাবে।
সুতরাং এই লাইনটা বৈজ্ঞানিক ভাবে ঠিক নাঃ
কার্বন ন্যানোটিউব ফুলারিনের হয়-গ্রাফাইনের হয় বলে জানা নেই। এবং ফুলারিন সম্পূর্ন ভাবেই কার্বনের আলাদা রূপ।
অবশ্য আমার জানাতে ভুল থাকতে পারে। গত কয়েকদিন ধরে অনেক সংবাদ পত্রেই এটা দেখছি কার্বন ন্যানো টিউব এবং গ্রাফাইনকে একসাথে জড়ানো হচ্ছে। ঠিক বুঝতে পারছি না কেন-কারন কার্বন ন্যানোটিউব ফুলারিনের হয় যার ধর্ম সম্পূর্ন ভাবেই গ্রাফাইন থেকে আলাদা।
এই ব্যাপারে লেখকের মতামত জানালে ভাল হয়।
@বিপ্লব পাল, কিছুটা জেনারালাইজড করা হয়েছে ওখানে। যেমন নোবেল ওয়েব-সাইটের অফিসিয়াল পেপারে লেখা হয়েছে- “Graphite is a basic material found in nature. When taken apart graphite sheets become graphene. A rolled up layer of graphene forms a carbon nanotube, folded up it becomes a small football, fullerene.” ধর্মের ক্ষেত্রে আপনার কথাই ঠিক। গ্রাফাইট, গ্রাফিন, ফুলারিন, কার্বন ন্যানোটিউব প্রত্যেকের ধর্ম আলাদা।
@প্রদীপ দেব,
কিন্ত গ্রাফিনের ন্যানোটিউব হয় কি? আমি ত জানি কার্বন ন্যানোটিউব ফুলারিনের। এস পি থ্রি বন্ডিং ছারা ন্যানোটিউব কি সম্ভব? এস পি টু ত প্ল্যনার স্ট্রাকচার।
@বিপ্লব পাল,
দাদা আপনি ঠিক বলেছেন। কার্বন ন্যানো-টিউবের বন্ডিং এস-পি-থ্রি। কার্বন ন্যানোটিউব গ্রাফিন থেকেই তৈরি সেটা ঠিক- তবে দ্বি-মাত্রিক গ্রাফিন ত্রি-মাত্রিক ন্যানো-টিউবে রূপান্তরের সাথে সাথে সেটা এস-পি-টু বন্ডিং থেকে এস-পি-থ্রি বন্ডিং এর ফুলারিন গোত্রভুক্ত হয়ে যায়। তবে ন্যানো-টিউবের ধর্ম ফুলারিনের ধর্মের চেয়ে আলাদা, বিশেষ করে বিদ্যুৎ পরিবাহিতার ক্ষেত্রে- বায়াস ভেদে কখনো কন্ডাক্টর, কখনো সেমি-কন্ডাক্টর। ফুলারিনের পুরোপুরি ক্লোজড বন্ড, আর কার্বন ন্যানোটিউবের দু-প্রান্তে ফ্রি-বন্ডের কারণেই এরকম ঘটে।