বছর তিনেক আগের কথা। ইউনিভার্সিটি অব তাসমানিয়ার স্কুল অব হিউম্যান লাইফ সায়েন্সে সবে যোগ দিয়েছি। নিজের বিষয় নিউক্লিয়ার রেডিয়েশান ফিজিক্স হলেও ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে মাঝে মাঝে এনাটমি ল্যাবে গিয়ে সময় কাটাই। সেখানেই পরিচয় হলো এনাটমির খন্ডকালীন শিক্ষক ডাক্তার ফ্র্যাংক ম্যাডিলের সাথে। শিক্ষার্থীদের কাছে ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা তাঁর। শিক্ষার্থীরা যখন ‘ফ্র্যাংকি’ বলে ডাকে- খুশি হয়ে সাড়া দেন ছেষট্টি বছরের ‘তরুণ’ ডক্টর ম্যাডিল। ওয়েট-ল্যাবে মানব-দেহ ব্যবচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর সময় খেয়াল করেছি তাঁর জ্ঞানের গভীরতা। পরিচয়ের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমি হয়ে গেলাম তাঁর ‘ফ্রেন্ড’। হাসি-খুশি প্রাণবন্ত মানুষটাকে যতই দেখি ততই ভালো লাগে। এনাটমি-ফিজিওলজি জানার আগ্রহে ফ্র্যাঙ্কের কয়েকটি লেকচারেও চুপচাপ ঢুকে পড়েছি। অদ্ভুত তাঁর পড়ানোর স্টাইল। ক্লাসে আসার সময় বিভিন্ন রকমের হ্যাট নিয়ে আসেন তিনি- আর পড়ানোর সময় একেক রকম হ্যাটের সাথে একেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাদৃশ্য বের করে তাঁর গঠন ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন। তাতেই কত জটিল ব্যপার সহজ হয়ে যায়।

ডাক্তার ফ্র্যাংক ম্যাডিলের লেখক পরিচয়টা জানলাম আরো মাস খানেক পর। স্টাফরুমে লাঞ্চের সময় আড্ডা জমেছে। এনাটমির কো-অর্ডিনেটর জেনিনের সাথে কথা হচ্ছিল ডক্টর ম্যাডিল প্রসঙ্গে। জেনিন হঠাৎ বললেন, “তুমি কি ফ্র্যাংকের বই দুটো পড়েছো? ভীষণ মজার”। সহকর্মীদের অনেকেই ফ্র্যাংক সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো মজার মজার কথা বললেন। ক’দিন পরে ফ্র্যাংক-কে ধরে তাঁর দুটো বই আদায় করলাম। বইয়ের ব্যাক-ফ্ল্যাপের লেখক-পরিচিতি পড়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম। ফ্র্যাংক ১৯৮৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তাসমানিয়া রাজ্যের নির্বাচিত সংসদ-সদস্য ছিলেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন। আমার সহকর্মীদের কাছে ডক্টর ম্যাডিলের এই রাজনৈতিক পরিচয়টার আলাদা কোন গুরুত্ব আছে বলে মনে হলো না। তাঁরা কেউ ফ্র্যাংকের এই দিকটার কথা উল্লেখই করেননি। কয়েকজনকে জিজ্ঞেসও করলাম। তাঁরা বললেন- হ্যাঁ ফ্র্যাংক ভালোই চালিয়েছে সংসদ। আমি বাংলাদেশের মানুষ- সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা স্পিকারের ক্ষমতার দাপট দেখেছি- সে ক্ষমতায় থাকুন বা না থাকুন। ফ্র্যাংক ম্যাডিলের ব্যাপারটা দেখে অন্যরকম একটা সাংস্কৃতিক ধাক্কা খেলাম। রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার পর এখন লিখছেন আর পড়াচ্ছেন। মিশে গেছেন সাধারণের সাথে। অথবা বলা চলে জনবিচ্ছিন্ন হননি কখনো। রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখানে এরকমই। ফ্র্যাংক ম্যাডিল সম্পর্কে আরো জানা যাবে এখানে

dsc05219-web

এরপর আরো অনেক রাজনীতিককে দেখেও একই ধারণা হয়েছে। একদিন পার্লামেন্ট স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। সাথে বন্ধু ক্যামেরুন। আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন দু’জন কোট-টাই পরা মানুষ। অন্য দশ জন মানুষের চেয়ে আলাদা কিছুই নেই। ট্রেন আসতে মিনিট খানেক দেরি হচ্ছে দেখে পাশের ভদ্রলোক বললেন, “রানিং লেট এগেইন!” ক্যামেরুন বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বললো- “ইউ আর দি মিনিস্টার মার্টিন, নট মি!” বলে কি ক্যামেরুন! এই লোকটা মন্ত্রী? এরকম ঠাসাঠাসি ভিড়ে পাবলিক ট্রেনে! মেলবোর্ন সেন্ট্রালে এসে নেমে গেলাম আমরা, পেছনে আরো অনেকের সাথে ভদ্রলোক দু’জনও। ভাবলাম ক্যামেরুন নিশ্চয় ঠাট্টা করেছে। জিজ্ঞেস করলাম- “তুমি যাকে মন্ত্রী বললে তিনি কি আসলেই মন্ত্রী?” “ইয়েস। ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার মার্টিন পাকুলা। এ ব্যাড ওয়ান”। ক্যামেরুনের ভাষায় এই “খারাপ মন্ত্রী”কে দেখলাম একজন মাত্র সঙ্গী নিয়ে ভীড়ের মধ্যে স্টেশনের প্রস্থান-পথে টিকেট ঢুকিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তিনি যে ছদ্মবেশে এসেছেন তাও না, ক্যামেরুনের মত অনেকেই চেনেন তাঁকে। কিন্তু আলাদা কোন প্রটোকল নেই রাজ্যের একজন মন্ত্রীর। এটাই যেন স্বাভাবিক এখানে। তাই তো দেখা যায় নির্বাচনের পরের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড তাঁর প্রেমিকের সাথে শপিং মলের কফি শপে বসে কফি খাচ্ছেন। মিডিয়া তাঁদের ঘিরে ধরেছে ঠিকই, কিন্তু আশে পাশে একজন প্রহরীও চোখে পড়েনি।

450912-gillard-mathieson

রিপোর্ট পড়ুন এখানে


অস্ট্রেলিয়ার সংসদের পূর্ণ-মেয়াদ তিন বছর। ফলে সাধারণত তিন বছর পর পর ভোট হয়। আর কোন কারণে দায়িত্বশীল সরকার চাইলে মেয়াদ পূর্ণ হবার আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে ভোটের আয়োজন করতে পারে। পৃথিবীর আরো সব সভ্য গণতন্ত্রের সাথে অস্ট্রেলিয়ান গণতন্ত্রের মিল আছে অনেক। কিন্তু অমিল যেটা আছে সেটাই অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্রের ভীতকে শক্ত করেছে অনেক বেশি। সংসদের মেয়াদ তিন বছর। ফলে সরকারের কাজ-কর্মের উৎসাহে ভাটা পড়তে শুরু করার আগেই সরকার পুনর্গঠিত হয়। বিরোধীদলও ক্ষমতায় যাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে না। অবশ্য ‘ক্ষমতা’ না বলে এখানে বলা হয় ‘দায়িত্ব’, দৃষ্টিভঙ্গিও সেরকম। যে কোন বড় পাবলিক অনুষ্ঠান- যেমন বিশেষ রাষ্ট্রীয় দিবসে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী-দলীয় নেতা সবসময় পাশাপাশি বসেন। আর নির্বাচনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করে মন্ত্রী-পরিষদের দায়িত্ব বন্টনের একই দিনে বিরোধী দল ছায়া-সরকার গঠন করে। একই রকমের ছায়া-মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। উভয় পক্ষই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন, সংসদে এবং সংসদের বাইরে।


গত ২১ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হবার পর এটা সহ দু’বার ফেডারেল ইলেকশানে ভোট দিলাম। এদেশের ভোটারদের ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন করার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায় এদেশে। ঠিকমত ভোট দেয়াটা ছাড়া রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ মানুষ। কারণ এদেশে সরকার বদল হলেও জনগণের মৌলিক সুযোগ-সুবিধার তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। ফলে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই একজন ভোটার ভোট দেন।

আমার বাসা থেকে দেড়শো মিটার দূরত্বেই ভোট সেন্টার। অবশ্য এখানেই ভোট দিতে হবে কথা নেই। অস্ট্রেলিয়ার যে কোন জায়গা থেকে বা দেশের বাইরে থেকেও ভোট দেয়া যায়। ভোট-কেন্দ্রে গিয়ে দেখি যে যার মত করে এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরে তিন চারজন মাত্র দলীয় কর্মী নিজেদের দলের প্রার্থীদের নাম ছাপানো কার্ড বিলি করছে। নির্বাচনী প্রচারতো চোখেই পড়েনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো নির্বাচন উপলক্ষে কোন নিরাপত্তা-কর্মীর দরকার হয় না। মিলিটারি তো দূরের কথা, কোন পুলিশও চোখে পড়লো না। কেন্দ্রের বাইরে কয়েক জায়গায় বারবিকিউ হচ্ছে দেখে ভাবলাম- প্রার্থীদের পক্ষ থেকে নিশ্চয় ফ্রি-বারবিকিউর ব্যবস্থা করা হয়েছে! কিন্তু না, কাছে গিয়ে দেখলাম খেতে চাইলে কিনে খেতে হবে। কোন ভোটার আই-ডি নেই, আঙুলে অমোচনীয় কালি নেই। কেবল নাম আর ঠিকানা জিজ্ঞেস করলো। আর জানতে চাইলো আজ অন্য কোথাও ভোট দিয়েছি কিনা। ‘না’ বলতেই লিস্ট থেকে নাম বের করে পেন্সিল দিয়ে নামের পাশে দাগ কেটে দুটো ব্যালট পেপার ধরিয়ে দিলো। একই দিনে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ আর হাউজ অব সিনেটের নির্বাচন হয়। প্রতি নির্বাচনে সিনেট সদস্যদের অর্ধেক নির্বাচিত হন। তাঁদের দায়িত্ব শুরু হবে দেড় বছর পর। সারা দেশে ১৫০ জন রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচিত হন। যে পার্টি ৭৬ জন বা বেশি সিট পায় তারাই সরকারের দায়িত্ব নেয়।

ভোট দেয়ার পদ্ধতি অন্যরকম। এখানে কোন প্রার্থীর কোন প্রতীক থাকে না। দলীয় কোন প্রতীকও নেই। ভোট দেয়ার জন্য কোন সিল-ও নেই। পেন্সিল দিয়ে রিপ্রজেন্টেটিভের ব্যালট পেপারে যত জন প্রার্থী- সবাইকে পছন্দের ক্রম অনুসারে ১, ২, ৩ ইত্যাদি নম্বর দিয়ে নিজের ভোট দিতে হয়। ১ মানে এই প্রার্থীকে আমি সবচেয়ে যোগ্য মনে করি। ভোট গণনার সময় দেখা হয় কোন-প্রার্থীকে কত বেশি মানুষ প্রথম পছন্দে রেখেছে, কোন্ প্রার্থী দ্বিতীয় পছন্দের ইত্যাদি। আর সিনেটে প্রার্থী সংখ্যা থাকে অনেক বেশি- প্রায় তিরিশ চল্লিশ জন একেক এলাকায়। তাই বিশাল ব্যালট পেপার। সবাইকে পছন্দ করার ইচ্ছে না হলে পার্টি ভিত্তিক ভোট দেয়া যায় সিনেটের প্রতিনিধির জন্য। যেমন আমি যদি লেবারের ঘরে চিহ্ন দিই- তার অর্থ হলো আমি লেবার পার্টি যাঁকে সিনেটে মনোনয়ন দেবে তাঁকেই আমার সমর্থন জানাচ্ছি।


২১ আগস্ট নির্বাচন হলো। কিন্তু দেখা গেলো প্রধান দুই পার্টি লেবার এবং লিবারেল-ন্যাশনাল কেউই এককভাবে ৭৬ আসন পায়নি। সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ পর্যন্ত ঝুলে রইল সংসদ। লেবার ৭২ আর কোয়ালিশান পেলো ৭৩ সিট। গ্রিন পার্টি একটি। আর চারজন স্বতন্ত্র। দু’সপ্তাহ ধরে স্বতন্ত্র-দের সাথে দর কষাকষি চললো। স্বতন্ত্রদের দাবী-দাওয়া দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। সবারই দাবী কীভাবে পার্লামেন্টকে আরো শক্তিশালী করা যায় তা দেখতে হবে, সংসদের প্রশ্নোত্তর চলাকালীন অহেতুক সরকারের সমালোচনা বা বন্দনা করা যাবে না। প্রশ্নের উত্তর টু-দি-পয়েন্ট দিতে হবে এবং তিন মিনিটের মধ্যে উত্তর সীমাবদ্ধ থাকবে। যার যার এলাকার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে তাঁদের যাঁরা ভোট দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন সেই ভোটারদের কথা মাথায় রেখে স্বতন্ত্ররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কে কোন দলকে সরকার গঠনের জন্য সহযোগিতা করবেন। গ্রিন পার্টি নির্বাচনের কয়েকদিন পরেই লেবার পার্টিকে সমর্থন করেছে। গ্রিনের সমর্থন নিয়ে লেবার ৭৩টি আর কোয়ালিশন ৭৩টি আসন নিয়ে উভয়েই সমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকলো প্রায় দুই সপ্তাহ।

রাজনীতির এরকম টান-টান অবস্থায় খেয়াল করে দেখলাম সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে এর কোন উত্তেজনাই নেই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ফুটবল খেলা নিয়ে বা ডিপার্টমেন্টাল বার্ষিক বল-ড্যান্স নিয়ে যত উত্তেজনা দেখা গেলো তার শতাংশও দেখা গেলো না- কে সরকার গঠন করবে তা নিয়ে। এখন ডিজিটাল টিভি হয়ে যাওয়াতে বাইশ-টা ফ্রি চ্যানেল। কিন্তু দুটো চ্যানেল ছাড়া আর কোথাও তেমন কোন উত্তেজনা দেখা গেলো না। সংবাদ হিসেবে দু’একটা কথা বললো হয়তো, এর বেশি কিছু নয়।


সেপ্টেম্বরের সাত তারিখ স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে লেবার পার্টির আসন সংখ্যা ৭৬ হলো এবং জুলিয়া গিলার্ড হলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নির্বাচিত মহিলা এবং নাস্তিক প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন জুন মাসে তাঁর দলের প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাডকে দলীয় সিদ্ধান্তে সরিয়ে দিয়ে নিজেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন সেটাকে অনেকেই ভালো চোখে দেখেননি। সে কারণেই এবার লেবারের এত কষ্ট হয়েছে দায়িত্বে আসতে। অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারই আছে- সেগুলো আর এখানে উল্লেখ করছি না। যেটা আমাকে আশ্চর্য করলো তা হলো এদেশের রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা। ক্ষমতার এত কাছে পৌঁছেও কোন ধরণের অন্যায্য উত্তেজনা দেখা গেলো না কোন দলের মধ্যেই। শেষ পর্যন্ত যে তিন জন স্বতন্ত্র সদস্যের (রবার্ট ওয়েকশট, টনি উইন্ডজর, ও বব কার্টার) হাতে কিং মেকিং পাওয়ার বা সরকার গঠনের চাবিকাঠি চলে গিয়েছিলো- তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও কোন হুমকি দেখা দেয় নি, তাদের রাজনৈতিক প্রলোভন যে দেখানো হয়নি তা নয়- কিন্তু তাতেও একটা স্বচ্ছতা ছিল। এই তিন জনের মধ্যে বব কার্টার সমর্থন করেছেন লিবারেল-ন্যাশনাল পার্টিকে। অন্য দু’জন টনি উইন্ডজর ও রবার্ট ওয়েকশট সমর্থন করেছেন জুলিয়া গিলার্ডকে। জুলিয়া গিলার্ড সরকার গঠন করে রবার্ট ওয়েকশটকে মন্ত্রী হবার জন্য আহবান করলে রব সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যুক্তি দেখান- তাঁর স্ত্রী সন্তান-সম্ভবা। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের সংসারে নতুন সন্তান আসবে। পরিবারের পেছনে সময় দিতে হবে অনেক। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রী হওয়া উচিত হবে না তাঁর।


প্রধান দু’তিনটা পার্টি ছাড়া আরো কয়েকটা পার্টি আছে অস্ট্রেলিয়ায়। তাদের কয়েকটার নাম বড় বিচিত্র। যেমনঃ অস্ট্রেলিয়ান সেক্স পার্টি (অনেক ভোটও পেয়েছে তারা এবার), শুটার্স এন্ড ফিশার্স পার্টি। অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গেলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। আরো উল্লেখ্য যে এবার প্রথমবারের মত একজন মুসলমান- এড হুসিক সিডনি থেকে ফেডারেল পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে খ্রিস্টান মৌলবাদীরা অনেক বিষোদ্গার করেছিলেন। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া দেননি ভোটাররা। টিভি রিপোর্ট দেখুনঃ

First Muslim Federal MP in Australia

httpv://www.youtube.com/watch?v=_Ltf6LdvhaM

ধর্মের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া যে কতটা সহিষ্ণু তা এদেশের টেলিভিশনে প্রচারিত একটা কমেডি অনুষ্ঠানের ক্লিপ দেখলেই বোঝা যাবে।

Commonwealth Religious Games

httpv://www.youtube.com/watch?v=g-XBT2fN2Pk

অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। পৃথিবীর অনেক দেশে যেগুলোকে রাজনীতিতে বিরাট ‘দোষ’ হিসেবে দেখা হয়- জুলিয়া গিলার্ডের সেরকম অনেক দোষ-ই আছে। তিনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না, তিনি স্ব-ঘোষিত নাস্তিক। তিনি বিয়ে করেন নি অথচ প্রেমিকের সাথে একত্রে বাস করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জন্মাননি- ছোটবেলায় মা-বাবার সাথে এদেশে এসেছেন ইংল্যান্ড থেকে। এদেশের রাজনীতিতে এগুলোকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলেই মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যদি আইন মেনে চলেন, ব্যক্তিগত ভাবে সৎ হন, তাহলে এদেশে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাসে কেউ হস্তক্ষেপ করেন না। এদেশে নাস্তিক হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়।