১৯৮৮ সাল। ট্রেন ছুটে চলেছে চট্টগ্রামের পথে। রোদেলা দুপুর। মনের মধ্যে পাহাড় আর সমুদ্রের হাতছানি। সবসময় লক্ষ্য করেছি গতিশীল অবস্থায় থাকলে সবকিছু কেমন যেন বদলে যায়। ট্রেনের কু-ঝিক কু-ঝিক শব্দ যখন এক ধরনের ছন্দের রূপ ধারণ করলো — স্থান-কালের উপর একটি বই খুলে বসলাম। বইটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মির প্রকাশনার Space Time Gravitation by Yu Vladimirov, N. Mitskievich, J. Horsky| মনের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানী হবার ¯^cœ| আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব পড়ার কারণে স্থান-কালের বক্রতা, রিম্যানীয় জ্যামিতি, লবোচেভস্কির ঋণাত্মক জ্যামিতির কথা জানতাম। কিন্তু এই সমস্ত জ্যামিতির প্রকৃত অর্থ উদঘাটনে স্রষ্টাদের বা গণিতবিদদের জীবনের যেসব নাটকীয় মোড় আর মর্মান্তিক পরিণতি ঘটে তা জানতাম না, জানতাম না বোলাইপুত্রের কাছে লেখা তার বাবার সেই অসাধারণ আবেগপূর্ণ চিঠিটার কথাও। আমার সামনে পাহাড় আর সমুদ্রবেলার হাতছানিও জ্যামিতিক উত্তোরণের চড়াই উতড়াইয়ের সেই ইতিহাসের কাছে ম্লান হয়ে গেল।
এরও কয়েকবছর পর মান-ডে গ্রুপ নামে পরিচিত কয়েক বন্ধু জ্যামিতিক জ্ঞানকে আত্তস্থ করার জন্য সপ্তাহে একবার আলোচনায় বসতাম। সেই আলোচনায় দেখলাম জ্যামিতি বলতে যা আমরা ছোটবেলা থেকে বুঝে এসেছি তার সঙ্গে প্রকৃত জ্যামিতির কোনো মিল নেই। জানলাম ইউক্লিডীয় জ্যামিতির অলঙ্ঘনীয় সরলরেখাগুলোও কিছু বৈশিষ্ট্যের অভাবে দৃঢ়তা হারিয়ে জটিল সর্পিলতায়রূপ নেয়, জ্যামিতিতে ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণের সমান, কম বা বেশিও হয়। এ সমস্ত ঘটনা এতো বেশি আলোড়িত করেছিল যে তা অন্যকে জানানোর এক ধরনের আকাঙ্খা আমার ভিতর কাজ করতো। দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতার প্রথম দিনগুলোতে যারা আসতো তাদেরকে জ্যামিতির অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি কৌতুহলী করে তোলার চেষ্টা করতাম। আমার মনে আছে প্রথম বিজ্ঞান বক্তৃতা দেই ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও তার ত্রুটি নিয়ে ১৯৯২ সালে ১৯ মে সকাল ১১ টা থেকে ১টা পর্যন্ত। এইভাবে ডিসকাশন প্রজেক্ট নামে বিজ্ঞান সংস্থা গড়ে ওঠে।
শ্রোতারা আমার কাছে আসতে থাকে। বেশিরভাগ বক্তৃতার বিষয় ছিল জ্যামিতি। এছাড়াও ক্যালকুলাস, বীজগণিত এবং কীভাবে একটি কিশোর তার জীবনকে গড়ে তুলতে পারে সে-সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা নিয়ে লাইফ স্টাইল শিরোনামে বক্তৃতাও হয়েছে। দুপুর বা রাতে হাঁটার সময় অথবা চায়ের দোকানে সঙ্গী পেলে তার সামনে বিজ্ঞানের উত্তেজনাকর দিকগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে শ্রোতা সংগ্রহের চেষ্টা করতাম, তাদের কাছে সাধারণ চোখে এই অবিশ্বাস্য দিকগুলোর কথা বলতাম। জ্যামিতি বিষয়ক ডিসকাশনগুলোর পুনরাবৃত্তির আধিক্যই যেন কতোগুলো প্রশ্নকে বারবার মনের মধ্যে অনুরণিত করলো: বিন্দুর সংজ্ঞা কেন এমন, রেখার দৈর্ঘ্য আছে অথচ প্রস্থ নেই- কথাটির আসলে অর্থ কী? স্বতঃসিদ্ধ বা স্বীকার্যের ভূমিকা কী? পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ নিয়ে ঝামেলা কেন? এছাড়াও আলোচনায় এমন কিছু প্রশ্ন আসলো যেগুলো নিয়ে পূর্বেও আমি ভেবেছি কিন্তু তেমনভাবে অনুধাবনে সক্ষম হইনি, অথচ তা খুব অল্প সময়ে শ্রোতাদের স্বতঃস্ফুর্ত প্রশ্নের মুখে আমি বুঝতে পেরেছি। স্বাধীন চিন্তা মানুষকে কিভাবে যৌক্তিক অগ্রগতির পথে ঠেলে দেয় তা অনুভব করলাম। আজ যে এরকম একটি গ্রন্থের ভাষ্যসহ অনুবাদ করতে পেরেছি তা ডিসকাশন প্রজেক্টের এসব কর্মকাণ্ডের কারণেই।
ছবি: আজ যে এরকম একটি গ্রন্থের ভাষ্যসহ অনুবাদ করতে পেরেছি তা ডিসকাশন প্রজেক্টের এসব কর্মকাণ্ডের কারণেই।
মূলত চিত্র একে প্রমাণ করা জ্যামিতির কাজ নয়, যৌক্তিক শৃঙ্খলাবোধ তৈরির সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে জ্যামিতি
মূলত চিত্র একে প্রমাণ করা জ্যামিতির কাজ নয়, যৌক্তিক শৃঙ্খলাবোধ তৈরির সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে জ্যামিতি। জ্যামিতির চিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে বড়জোড় স্কেলের ব্যবহার অনুমোদন করা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়। জ্যামিতিক যুক্তিবোধের সূক্ষ্মতার কারণেই থেলিস আড়াই হাজার বছর পূর্বে একটি লাঠির ছায়ার সাহায্যে নিখুঁতভাবে পিরামিডের উচ্চতা মেপেছিলেন। দুই হাজার বছর পূর্বে আলেকজান্দ্রিয়ার ইরাতোস্থেনিস মাটিতে পতিত সূর্যকিরণের লাঠির ছায়ার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর পরিধি পরিমাপ করেছিলেন, আধুনিক পরিমাপ থেকে যা মাত্র ১ শতাংশ কম ছিল। মানবজাতির উন্নতির যৌক্তিক ধাপগুলোর সূক্ষাতিসূক্ষ পরিবর্তনসহ প্রথম দিকের চিন্তার পর্যায়গুলো অনেকটাই স্পষ্ট হতে লাগলো।
আলো-আঁধারী ভরা এক সন্ধ্যায় আমার কিছু শ্রোতাদের নিয়ে বসেছিলাম। প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি নক্ষত্র অধ্যুষিত মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে কতো সভ্যতা আছে তার হিসেব দেখানোর সময় অনুভব করলাম, একটি সভ্যতার উঠে আসাটা নির্ভর করে অসংখ্য ছোট ছোট ঘটনা প্রবাহের উপর। ২২শত বছরের অসংখ্য গণিতবিদদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদানে জ্যামিতিক নির্মাণের দিকে তাকালেও স্পষ্টত এটাই প্রতীয়মান হয় যে জ্যামিতির একেক ধাপ অগ্রগতির সঙ্গে মানবজাতির চিন্তার জগতে পরিবর্তনগুলো কী নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে মানবজাতির কোন কোন প্রবণতা তাকে এ ধরনের যৌক্তিক পথে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমার প্রায়শ মনে হয় লক্ষ বছরের জ্ঞানের সংগ্রামের ইতিহাসে ‘জ্যামিতিকে মানুষের চিন্তার দ্বিতীয় পর্যায়’ বলে অভিহিত করা যেতে পারে। জ্যামিতি জন্ম দিয়েছিল বিশুদ্ধ চিন্তার। জ্যামিতি শক্তিশালী করেছিল বিজ্ঞানকে, সহায়তা দিয়েছিল একেশ্বরবাদকেও। কিন্তু কী আশ্চর্য, এই বিশুদ্ধ চিন্তার ফলে বিজ্ঞানের সুবর্ণ অগ্রযাত্রাকে সে থামিয়েও দিয়েছিল। ১৮০০ বছর পরে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উদ্ভবের মধ্যেদিয়ে জ্যামিতি ও বিজ্ঞানের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এবং বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্রের মধ্যকার সঠিক সম্পর্ক নিরূপণ করা সম্ভব হয়।
ওইরকম একটি তন্ময় সন্ধ্যায় বক্তৃতাটি দিতে গিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতার স্বপ্ন গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। তরুণ শ্রোতাদের মনযোগ, শেখার সততা এবং প্রশ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল পৃথিবীর সভ্যতার ক্রমবিকাশকে জানতে, ধাবিত করেছিলো ভাবতে কিভাবে মানুষের ছোট ছোট অবদান সভ্যতাকে গড়ে তোলে, তার গতিধারাকে পরিবর্তন করে, কিভাবেই-বা একটি সভ্যতা আন্তঃনাক্ষত্রিক ব্যাপকতা পায় অথবা আমরা মানুষেরাই বা কেমন করে সাধারণ প্রাণী থেকে পৃথক হয়ে সমাজ তৈরি করলাম, তারপর হাত ও হাতিয়ারের ব্যবহার আমাদের পৌঁছে দিল মহাকাশ যুগে? প্রত্যেক মানুষের বিকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীন চিন্তা ও সহনশীলতার প্রয়োজন খুবই বেশি। আর এরফলেই মানুষ নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। যতক্ষণ তা না হচ্ছে ততক্ষণ সে অন্যের ক্রীড়য়নক হতে বাধ্য। সভ্যতার ক্রমবিকাশকে তুলে ধরা না গেলে মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে না কতো শ্রম, কত সময়, কত লক্ষ কোটি প্রাণের বিনিময়ে মানবজাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে।
সূত্র: ইউক্লিড ও এলিমেন্টস (আসিফ), বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ২০০৬
অনেক দিন ধরে মুক্তমনায় ঢুকতে পারছি না।
সব সাইট এ ঢুকলেও মুক্তমনায় পারা যাচ্ছে না।
কেন এমন হচ্ছে?
অন্তত পনের দিন পরে আজ সুযোগ পেলাম।
এমনিতেই আমার নেটের স্পিট কম।
বইটি পড়ার আগ্রহ বোধ করছি।ইউক্লিডের জ্যামিতি এবং এর সমস্যা উভয় বিষয়েই জানার আগ্রহ ছিল সবসময়। বিপ্লব পাল এবং অন্যরা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন আশা করছি লেখক ব্যাপারগুল পরিষ্কার করবেন। লেখককে আরেকটি বিষয়ে সাধুবাদ জানাই। তা হল মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা করা। এমন মানুষ আমি জীবনে অনেক কম দেখেছি যারা আগ্রহ সৃষ্টি করতে চায় বা পারে।এজন্যই হয়ত আমার মাঝে কৌতুহল জিনিসটা কম। আর আমি আমার এই বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি। শুভকামনা রইল সবার জন্য।
@লীনা, এই লেখাটি আপনাকে আগ্রহী করেছে। ওখানে যে বিষয়গুলো সেগুলো আমাকেও গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। এখানে অনেকগুলো প্রশ্নই অনেকে করেছেন। এগুলোর উত্তর দেওয়া সম্ভব।
জ্যামিতি কিভাবে একশ্বরবাদকে সহায়তা করেছিল, জানার আগ্রহ জন্মেছে। কেউ কি বিস্তারিত জানিয়ে আমাকে সাহায্য করবেন?
@মাহফুজ, আশা করছি পারবো। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যা এক কথায় উত্তর দেওয়া কঠিন। আপনার কৌতুহলের জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টি আরো গভীরভাবে চিন্তা করা যাবে।
বইটা তো অবশ্য পাঠ্য মনে হচ্ছে। কারন আসিফ ভাই মনে হয় আমার ব্যাবসার পেটের লাথি মারার ধান্ধা করছেন। পিলে চমকানো সব কথাবার্তা বলেছেন যাতে আমার চাকরি ও পেশা নিয়েই টানাটানি পড়বে। জ্যামিতির অতি সাধারন সব সূত্র নিয়েই আমার নিত্যদিনের কাজ কারবার। উনি এখন প্রমান করে দেবেন ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি দুই সমকোন নয়! আমি তো এর ভিত্তীতেই কাজ করে আসছি।
একজন আমাকে বহুদিন আগে (সে অংকে ছিল মারাত্মক কাঁচা) প্রশ্ন করেছিল, ১ আর ১ যোগ করলে যে ২ প্রমান করতে পার? এর নাকি কোন প্রমান নেই, তার পড়া যুক্তিবিদ্যা তাই বলে।
কে জানে, আমার মনে হয় নাপিত ডাক্তার হয়ে থাকাই ভাল। আসল ডাক্তার হতে গেলে মনে হয় সব ভজঘট লেগে যাবে।
@আদিল মাহমুদ, আপনি যে পৃথিবীতে থাকেন তাতে আপনার কাজগুলো ব্যাপকমাত্রায় ভূল হওয়ার সম্ভাবনা নাই। আর মনে রাখবেন ইউক্লিডের জ্যামিতি চিরকালের সত্য। তাকে বুঝতে সর্বকালের সেরা গণিতবিদ ও চিন্তাবিদদের ১৮শ -১৯শ বছর ভাবতে হয়েছে। তারপরই বুঝতে পেরেছিলেন ইউক্লিড ঠিকই ছিলেন। এইসব গণিতবিদদের মধ্যে নিউটনও ছিলেন। যাক সেকথা পরে বলা যাবে। আপনাকে ধন্যবাদ
@আদিল মাহমুদ,
যতদূর জানি, একথা ঠিক। এটা একটা axiom, প্রমাণ সাপেক্ষ নয়।
জ্যামিতি ভয় পাই!!! কিন্তু আমারেই এখন প্রফেশনাল লাইফে বাকি জীবন জ্যামিতি নিয়া থাকতে হইব!!!! :-X
আসিফ ভাইয়ের বইটা পড়ার ইচ্ছা সত্ত্বেও জ্যামিতির হিবিজিবির কারনে পড়ি নাই। এখন পড়ব দেখি।
@তানভী, ওই বইয়ে আমার বিশ্লষণ ও বর্ণনা ছাড়াও একটা জিনিষ আছে। ইউক্লিডের ১৩ খন্ড বইয়ের ৪ খন্ডের সরাসরি অনুবাদ হয়েছে। এগুলোতে জ্যামিতি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। তবে প্রথম খন্ডটিই আইনস্টাইন ছোটবেলা থেকে পড়া শুরু করেছিলেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তা বারবার পড়েছেন এবঙ প্রমাণের চর্চা করতেন। আর বলতেন, ’এই বই যে পড়েনি সে তত্ত্ব চর্চার জন্য জন্মগ্রহন করেনি। ভালো থাকবেন।’
আমার মনে হয় নিখুত বৃত্ত অঙ্কনের জন্য কম্পাসও ব্যবহার করতে দেয়া দরকার, বৃত্ত যত সুন্দর করে আকা যায় চিন্তা করা তত সহজ হয়।
নবম শ্রেণীতে আমি অসাধারণ একজন শিক্ষকের বাসায় গিয়ে অঙ্ক করতাম। তিনি নিজে তেমন কিছু করে দিতেন, আমাদের চিন্তা করতে দিতেন না, একান্তই না পারলে কিছু অংশ বুঝিয়ে দিয়ে আবার চিন্তা করতে দিতেন। সপ্তাহে ৪-৫ দিন ২-৩ ঘন্টা করে আমি আর আমার এক বন্ধু রীতিমত প্রতিযোগীতা করে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতাম, বইয়ের সব উপপাদ্য আমরা কোনপ্রকার গাইড বই ছাড়াই সমাধান করেছিলাম। আজ কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে বুঝি চিন্তা করার যে ক্ষমতা তখন তৈরি হয়েছে তা কতটা কাজে লাগে। কায়কোবাদ ও জাফর ইকবাল স্যারের এ ব্যাপারে অসাধারণ সব উদ্যোগগুলোও আমার মত অনেককে চিন্তা করতে শিখিয়েছে। শ্রদ্ধা সেসব মানুষের প্রতি যারা চিন্তা করতে উৎসাহ দেন,স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দেন, মুখস্থকে ‘না’ বলতে শিখান।
গণিত অবশ্যই একটি ভাষা তবে সকল ভাষার পিছনেই কিন্তু বিজ্ঞান রয়েছে।
বইটা বেশ ইন্টারেস্টিং হবে বলে মনে হচ্ছে। পড়ার আগ্রহ বোধ করছি।এখন এই প্রবাসে কিভাবে সেটা হাতে পাবো সেটাই হচ্ছে সমস্যা। :yes:
স্থবির বা চিরায়ত জ্ঞান বলে কিছু নেই, সভ্যতা যত এগুবে আমরা যত আগাবো সাথে সাথে আগাবে আমাদের জ্ঞানের পরিধি। এটাই হওয়া উচিত জ্ঞানের মূলমন্ত্র। ঠিক একই ব্যাপার দেখা যায় গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটল এবং প্লেটোর স্থির, অপরিবর্তনশীল ভাগ্যবাদী দর্শনের ক্ষেত্রেও। আমরা তার বোঝা বহন করেছি প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে। বার্ট্রন্ড রাসেল এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে এর পরে পৃথিবীতে যত বড় বড় বৌদ্ধিক অথবা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ঘটেছে তাদের প্রায় সবাইকেই কোন না কোনভাবে এরিষ্টটলের মতবাদকে উৎখাত করে এগুতে হয়েছে।
@বন্যা আহমেদ,
এই তথ্যটাই ভুল। আমি আগের কমেন্টেই সেটা জানিয়েছে। নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির চর্চা প্রায় ইউক্লিডের এলিমেন্টের প্রকাশ কালের সাথে সাথেই যা আরব গণিতজ্ঞরা বীজগণিতের উদ্ভবের সাথে সাথে প্রথম গণিতিক রূপ দেন। আর
ইউক্লিডিয় জ্যমিতি বিজ্ঞানকে আটকে রেখেছিল, এই তথ্যটা কোথা থেকে আসিফ পেলেন?
আইনস্টাইনের সাধারন আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের আগে এর কোন বাস্তব
প্রয়োগই ছিল না। নিউটন তার সমস্ত বিজ্ঞান ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি দিতেই করেছেন।
সব থেকে বড় কথা বিজ্ঞানের সাথে গণিতের সংঘাত আবার কি জিনিস?
গণিত বিজ্ঞানের ভাষা। আইনস্টাইন যখন সাধারন আপেক্ষিকতাবাদে তা দিচ্ছেন, তার ৫০ বছর আগেই রীম্যান এটাকে টেনসরের রূপ দিয়েছেন।
আসিফের অনেক বক্তব্য টেকনিক্যালি বেশ ভুল।
@বিপ্লব পাল,
আসিফ ভাই খুব সংক্ষেপে লিখেছেন। আসলে আরেকটু বিস্তারিত লেখা উচিৎ ছিল। বিপ্লব দার উপরের অভিযোগের সাথে একমত। আশাকরি আসিফ ভাই তার অবস্থান পরিস্কার করবেন।
আর বইটা পড়ার ব্যাপারে আগ্রহবোধ করছি।
@আতিক রাঢ়ী, আপনাকে ধন্যবাদ যে আমার প্রতি আপনার আস্থা দেখে। আসলে আমি জ্যামিতি বিষয়ক কোনো লেখাই এটা নয় বা একে বাখ্যা করেও কিছু বলা হয়নি। আমি লিখেছিলাম একটা কাজ করতে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি, শব্দ এবঙ ধারণা আমাকে আলোড়িত করেছিল। সেই অনুভবগুলোই লিখেছি। কীভাবে জ্যামিতিবিদরা নির্যাতিত হয়েছিল সেটাও একটা বিষয়। এখানে সাল তারিখের ব্যাপারে তেমন সমস্যা নেই। আর ২৩ শ বছরের ইতিহাসে ১শ বছর এদিক ওদিক হতে পারে। আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আপনাকে ধন্যবাদ।
@বিপ্লব, গণিত আমাকে কখনই আকর্ষণ করে না বলে এ নিয়ে আমার জ্ঞান খুব কম। তাই তোমার কথার উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার বক্তব্যটা খুবই জেনেরিক ছিল, এর সাথে তুমি যে প্রশ্ন করেছো তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে গণিতকে কোনদিন বিজ্ঞান বলে ভেবেছি তা মনে পড়েনা 🙂
তুমি বলেছ,
এটা কি, ‘বিজ্ঞান এবং নানান কোয়ান্টিটিভ এস্টিমেশনের
দরকার থেকেই গণিতের উৎপত্তি’ হবে?
@বন্যা আহমেদ,
হ্যাঁ, ওটা গণিত হবে।
@বন্যা আহমেদ, বন্যা আপনি যদি গণিতকে বিজ্ঞান বলেও ভাবেন তাহলেও কোনো অসুবিধে দেখি না। পৃথিবর অনেক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ্ও তাই ভাবতেন। আসলে এই আলোচনাগুলো এভাবে চলে না এটা ভুল বাএটা ঠিক। ওই সময়কার প্রেক্ষাপটের সাপেক্ষে বিবেচনা করতে হয়। যাহোক মহাবৃত্তের আইনস্টাইন সঙখ্যা প্রফেসর অজয় রায়ের আইনস্টাইন ো রবীন্দ্রনাথের ভেৌত বাস্তবতায় আইনস্টাইনের সুন্দর কিছু উক্তি আছে। ধন্যবাদ আপনাকে বন্যা।
খুবী প্রশংসানীয় উদ্যোগ। পড়ার ইচ্ছা রইল।
তবে গণিত শিক্ষার ব্যাপারে একটা ব্যাপার বলে রাখি। গণিত একটি ভাষা-সুতরাং এর উৎপত্তি প্রয়োজন থেকে। এই প্রয়োজনটি না বুঝলে, ভাষাটি শেখা যায়, বোঝা যায় না।
আমি প্রায় দশ বছর ছাত্রদের অঙ্ক শিখিয়েছি। সবে মাধ্যমিক পাশ করে আশা ছেলেদের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন থাকত-অঙ্কটা ভাষা না বিজ্ঞান?
অধিকাংশই গণিতকে বিজ্ঞান মনে করে-কিন্ত আসলে গণিত হচ্ছে বিজ্ঞানের ভাষা। বিজ্ঞান এবং নানান কোয়ান্টিটিভ এস্টিমেশনের
দরকার থেকেই বিজ্ঞানের উৎপত্তি।
জ্যামিতি হচ্ছে গণিতের আদি ভাষা। যখন পাটিগণিত ছিল না, চিত্র ছিল।
মিশরে ৩০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দেও জমির পরিমাপে জ্যামিতির প্রয়োগ ছিল। বলা যেতে পারে কৃষির ওপর কর আরোপ করা থেকেই জ্যামিতির উদ্ভব।
রিম্যানিয়ান জ্যামিতি কেন দরকার হল-সেটাই আসল গল্প। ১৮০০ বছর বাদে হঠাৎ করে রিম্যানিয়ান বা নন ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির উদ্ভব হয় নি।
এর পেছনে আছে দীর্ঘ ১০০০ বছরের ধারাবাহিক ইতিহাস।
ইবন আল হায়েতাম, ওমর খৈয়াম, নাসির আল দিন আল টুসি-এরা ১২০০-১৩০০ শতাব্দিতেই তৈরী করেন ল্যাম্বার্ট এবং স্যাচেরি চতুর্ভুজের সূত্রগুলি-যা অধিবৃত্তিক এবং পরাবৃত্তীয় জ্যামিতির ভিত্তিভূমি। আসলে সমস্যাছিল,
ইউক্লিডের জ্যামিতির ৫ তম লেমাটিতে-যে দুটি সরলরেখাকে আরেকটি সরলরেখা ছেদ করলে, সেই দুটি রেখা পরস্পরকে ছেদ করবে, যেদিকে
ছেদকোনের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির কম।
এই লেমাটি ইউক্লিডের এলিমেন্ট বার করার পরপরই গণিতজ্ঞরা প্রশ্ন তোলেন-যার ফলে ধারাবাহিক ভাবেই ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির পাশাপাশি নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির ও চর্চা হয়েছে। অথচ অনেকেই মনে করে এর শুরু রীম্যানের হাত দিয়ে উনবিংশ শতকে ( আসিফের লেখা পড়ে সেটাই মনে হল)।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লবের সাথে একমত। অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির সূত্রপাত ঘটেছে ইউক্লিডের এলিমেন্ট প্রকাশের সাথে সাথেই। ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ নিয়েই আসলে যত ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। ফলে, গোঁজামিল দিয়ে একে প্রমাণ করার চেষ্টার বিরোধিতা বা না প্রমাণ করতে পারা নিয়েই অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির আবির্ভাব। মজার বিষয় হচ্ছে ইউক্লিড নিজেও তাঁর পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলে, সবসময়ই চেষ্টা করেছেন যতদূর সম্ভব এটাকে এড়িয়ে চলতে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে গাউস, বোলিয়াই, লোবাচেস্কি এবং রিম্যানের কাজের মাধ্যমে অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির বিশাল এক উল্লম্ফন ঘটে। এ কারণেই হয়তো অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির সংগে রিম্যানের নাম জড়িয়ে গেছে।
আসিফ সাহেবের এই মন্তব্যেও তথ্যগত ত্রুটি রয়েছে। রিম্যানের কাজকে অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির সূত্র ধরলেও এটা ১৮০০ বছর হবে না, হবে প্রায় ২১৫০ বছর। কারণ, ইউক্লিডের এলিমেন্ট প্রকাশিত হয়েছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে, আর রিম্যান অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিত নিয়ে তাঁর প্রথম বক্তৃতা দেন ১৮৫৪ সালে।
postulate এর বাংলাতো স্বতঃসিদ্ধ হবার কথা। তুমি লেমাটি লিখছো ক্যান? এরকম কোন শব্দ বাংলায় আছে বলেতো জানি না।
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যাঁ, স্বতঃসিদ্ধ হবে। বাংলায় গণিত চর্চা নেই দীর্ঘ ২১ বছর, সব শব্দই ভুলে গেছি।
তখন স্কুলে পড়তাম। আপনার বক্তৃতার খবর পরতাম পেপার পত্রিকায়। খুব ইচ্ছা হতো যোগ দিতে। মফস্বলে থাকার কারণে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আপনার লেখাগুলো অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সেজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি এখানে।
@তানভীরুল ইসলাম, তানভীরুল তোমার কথাগুলো আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছে। তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি কোথায় থাক? ঢাকায় থাকলে যোগাযোগ কর।
@আসিফ,
এখন থাকি সিঙ্গাপুরে। শিঘ্রই দেশে আসব। আসলেই যোগাযোগ করবো। 🙂