[স্বীকারোক্তি: বিশেষ প্রয়োজনে গুগল-অনুসন্ধানেও প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যের অপর্যাপ্ততা দেখে শেষে নিজেই কিছু একটা লিখে ফেলার সিদ্ধান্ত হিসেবে এ লেখাটার জন্ম । মূল লেখাটা বেশ দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় আগ্রহী পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতির আশঙ্কা মাথায় রেখে লেখাটার গুরুত্ব বিবেচনায় (একান্তই নিজস্ব ধারণা) প্রথম অংশটাকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে সিরিজ আকারে এখানে পোস্ট করার ইচ্ছা পোষণ করলাম। তবে মূল অখণ্ড লেখাটা এখানে সংরক্ষিত আছে।]
অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ পর্ব:[*] [০২] [০৩] [০৪] [০৫] [০৬] [০৭] [০৮]
…
কলঙ্ক
খুব বেশিকাল আগের কথা নয়, একসময় সাধারণ পৌর শহরগুলোতেই কিছু কিছু ভ্রাম্যমান নারী-পুরুষ দেখা যেত যাদের কোমরে অনিবার্যভাবে বাঁধা থাকতো একটি ঝাড়ু, আর গলায় বা কোমরে ঝুলানো থাকতো একটি টিনের মগ জাতিয় পাত্র। ঝাড়ুটি হলো তার পেশাগত প্রতীক বা পরিচয়। তাদের কাজ হচ্ছে লোকালয়ের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে শহরটিকে পরিচ্ছন্ন রাখা। পেশাগতভাবে এরা পৌর-কর্তৃপক্ষের শুধু যে বেতনভুক কর্মচারী তা-ই নয়, সম্প্রদায়গতভাবেও এদের পেশাটা তা-ই। সামাজিক শ্রমবিন্যাস অনুযায়ী তাদের জন্য অন্য পেশা বরাদ্দ ছিলো না। তাই জন্মগতভাবে বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এ পেশাই তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস। আর সাথের মগটি ছিলো তাদের সামাজিক অবস্থানের এক ভয়াবহ অস্পৃশ্যতার প্রতীক। অর্থাৎ সব ধরনের ছোঁয়াছুয়ির উর্ধ্বে থেকে অন্য কাউকে যাতে কোনরূপ অশূচি হবার বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় সেজন্যেই এ ব্যবস্থা। পানির তেষ্টা পেলে কোন হোটেল বা চা-দোকানের বাইরে থেকে মগটা বাড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দোকানের কেউ হয়তো নিরাপদ অবস্থান থেকে ওই মগটিতে পানি ঢেলে দিতো। এমনকি কোন পাবলিক টিউবওয়েলে ছোঁয়ার ঝুঁকি না নিয়ে এরা অপেক্ষায় থাকতো দয়া করে কেউ যদি টিউবওয়েল চেপে কিছুটা পানি ঐ মগে ঢেলে দেয়। কিংবা টাকা দিয়ে দোকান থেকে চা খেতে চাইলেও চায়ের কাপ স্পর্শ করার অধিকার নেই বলে গরম চা ওই মগেই ঢেলে দেয়া হতো। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্য লোকজনের সাথে এক কাতারে বসার তো প্রশ্নই উঠে না! নিরাপদ দূরত্ব বাঁচিয়ে মাটিতে বসে পড়াটাই তাদের জন্য অনুমোদিত ব্যবস্থা। তারপরও তাদের ছোঁয়ায় ঐ স্থানটা নোংরা হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল থাকতো সবসময়। এরা হলো ধাঙড়, মেথর বা সুইপার। তাদের বসবাসের ব্যবস্থাও সেরকমই। ভদ্রপাড়া থেকে দূরে স্বতন্ত্র কোন বস্তি বা পল্লীতে এদের গোষ্ঠিগত বসবাস। এদের সংস্কৃতি ভিন্ন, জীবনধারা ভিন্ন, উৎসব-উদযাপন সবই ভিন্ন এবং অনিবার্যভাবে গোষ্ঠিগত।
এদেরই একটি অংশ আবার চর্মকার বলে পরিচিত, ভাষার অপভ্রংশতায় যাদেরকে চামার বলে ডাকা হয়। যারা মূলত মৃত পশুর চামড়া সংগ্রহ থেকে শুরু করে জুতো বা চামড়া জাতিয় দ্রব্যাদি তৈরির সাথে জড়িত। এরা সমাজের অনিবার্য অংশ হয়েও অস্পৃশ্য সম্প্রদায়। সমাজের যে কোন সামাজিক কর্মকাণ্ডে এদের শ্রমের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অধিকার এদের নেই। এধরনের আরো বহু সম্প্রদায় রয়েছে আমাদের সমাজে একই রকম অস্পৃশ্য। স্বভাবতই অধিকতর সভ্য ও শিক্ষিত নাগরিকদের বাসস্থান শহরের চিত্র থেকে যদি আমাদের দৃষ্টিটাকে দূরবর্তী পল্লী অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাই, তাহলে এই বাস্তবতাই আরো অনেক কঠিন ও তীব্র হয়ে দেখা দেবে। কেননা গ্রামের সামাজিক কাঠামোতে জীবিকার উৎস আরো অনেক বেশি সঙ্কুচিত বলে এসব অস্পৃষ্য সম্প্রদায়গুলোর মানবেতর জীবন-ধারণ খুবই শোচনীয় পর্যায়ে ঘুরপাক খেতে থাকে। তাদের বসবাস থাকে গ্রামের বাইরের দিকে অত্যন্ত অবহেলিতভাবে অবস্থায়। দেখতে শুনতে চেহারায় আকারে অন্য বর্ণ বা সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর মতো হয়েও কেন এরা সামাজিকভাবে এতো অস্পৃশ্য অপাঙক্তেয় ? যুগে যুগে এ প্রশ্নটা যে উত্থাপিত হয়নি তা নয়। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এদের পেশার অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ ইদানিং জীবিকার তাগিদে ভাগ বসালেও এই অস্পৃশ্যদের জন্য অন্য পেশায় জড়িত হওয়া কিছুতেই সম্ভব হয়নি আজো। কারণ অস্পৃশ্যতা এদের গা থেকে মুছে যায়নি বা মুছা হয়নি। অথচ তাদের পেশায় ভাগ বসালেও অন্য সম্প্রদায়কে কিন্তু এই অস্পৃশ্যতার দায় বইতে হয় না। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সমাজ নিয়ন্ত্রিত এই অস্পৃশ্যতার দায় আসলে পেশা বা কর্মগত নয়, সম্পূর্ণই জন্মগত একটা অভিশাপ। কর্মদোষ নয়, জন্মদোষটাই এখানে একমাত্র উপাত্ত। কিন্তু সমাজ বা সামাজিক ব্যবস্থা কি চাইলেই কোন সম্প্রদায়কে অছ্যুৎ বা অস্পৃশ্য বানিয়ে দিতে পারে ? প্রশ্নটা যত সহজে করা যায়, উত্তরটা বোধ করি তত সহজ বা সাবলীল নয়। এর পেছনে আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের হাজার বছরের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক কাঠামো তৈরিতে যে ধর্মীয় বর্ণাশ্রমগত নিপীড়নের ইতিহাস তথা মানব-দলনের যে ঐতিহ্য বা কালো অধ্যায় মিশে আছে তার শিকড় এতোটাই গভীরে প্রোথিত যে, গোটা সামাজিক সত্তাটাই বুঝি এই বর্ণবাদের সাথে একাত্ম হয়ে মিশে আছে। অর্থাৎ আচারে বিচারে জীবনে যাপনে সামাজিকতায় এই ধর্মীয় বর্ণবাদী ব্যবস্থা থেকে সমাজকে বা সমাজের কোন অংশকে পৃথক করা শরীর থেকে চামড়া আলগা করার মতোই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চামড়ার কোথাও একটু টান পড়লে গোটা শরীরটাই আৎকে ওঠে, বিগড়ে যায়। তাই বলে কি এই সভ্য জগতের তথাকথিত সভ্য মানুষদেরকেও এভাবেই হাজার বছরের কলঙ্ক বয়ে বয়ে যেতে হবে ?
সভ্য মানুষরা তা বয়ে যাচ্ছে বৈ কি ! কেননা আজো যারা এই সমাজ সংসারের অধিকর্তা হিসেবে জন্মগতভাবে মহান উত্তরাধিকার বহন করছে, সেইসব ক্ষমতাসীন উচ্চবর্ণীয়দের অনুকূল এই প্রাচীন ব্যবস্থাকে পাল্টানোর খায়েশ তাদের হবেই বা কেন ! কিন্তু সমাজের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হয়েও একটা আরোপিত ব্যবস্থায় কেবল জন্মগত কারণে নিম্নবর্ণীয় বা অস্পৃশ্য হবার অভিশাপে যাদের সমস্ত অর্জন কুক্ষিগত হয়ে চলে যায় অন্যের অধিকারে, তারা এটা মানবেন কেন ? আসলে এরা কখনোই মানেনি তা। ক্ষমতাহীন এই না-মানার প্রতিবাদ-বিদ্রোহকে তাই দমন করা হয়েছে বড় নিষ্ঠুরভাবে, নির্দয় প্রক্রিয়ায়। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস সে সাক্ষ্যই দেয় আমাদেরকে।
বৈদিক আধিপত্য
ইতিহাসের সাক্ষ্য থেকে জানতে পারি, মুঘলদেরও বহুকাল আগে প্রাচীন আর্যরা এই ভারতবর্ষে শুধু বহিরাগতই ছিলো না, এই আর্যরা আদিনিবাসী জনগোষ্ঠি ও তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির উপরও চালিয়েছিলো ব্যাপক আক্রমণ। আর এই আক্রমণেই একদিন ধ্বংস হয়ে যায় এসব আদিনিবাসী জনগোষ্ঠির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ সিন্ধু সভ্যতা। এই সিন্ধু সভ্যতাকেই কেউ কেউ হরপ্পা সভ্যতা বা দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। আক্রমণকারী আর্যরা আদিনিবাসী জনগোষ্ঠিকে দাসে পরিণত করার লক্ষে যে চতুর্বর্ণ প্রথা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করে, শেষপর্যন্ত এতে সফলও হয় তারা। ফলে এককালের সিন্ধুসভ্যতার আদিনিবাসী জনগণই হয়ে যায় তাদের কাছে অনার্য অর্থাৎ শাসিত অধম। আর্যরা হয়ে ওঠে মহান শাসক। আর তাদের প্রচলিত বৈদিক ধর্ম হয়ে ওঠে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক সত্ত্বা। এই বৈদিক ধর্মের উৎস হিসেবে স্বীকৃত হয় স্মৃতি বা বেদ নামের মহাগ্রন্থ। আর এই বেদের নির্যাস নিয়েই আরোপিত এই ধর্মটির প্রচারিত সংবিধান হয়ে ওঠলো মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা। এর মাধ্যমে যে সমাজ-কাঠামোর নির্মাণ যজ্ঞ চলতে থাকলো তার ভিত্তি এক আজব চতুর্বর্ণ প্রথা। যেখানে আদিনিবাসী অনার্যরা হয়ে যায় নিম্নবর্ণের শূদ্র, যারা কেবলই উচ্চতর অন্য তিন বর্ণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যের অনুগত সেবাদাস। কোনো সমাজ-সংগঠনে বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান যজ্ঞে অংশগ্রহণের অধিকার শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আর যারা এই ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে প্রতিবাদী-বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চাইলো, এদেরকেই সুকৌশলে করা হলো অছ্যুৎ, দস্যু, সমাজচ্যুত বা অস্পৃশ্য সম্প্রদায়। চাতুর্যপূর্ণ চতুর্বর্ণের এই অসম সমাজ ব্যবস্থার কুফল সমাজে গভীরভাবে সংক্রমিত হতে থাকলে এই মাটির সন্তান শাক্যমুণি গৌতম বুদ্ধ (৫৬৩-৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। গৌতম বুদ্ধ (Buddha) এ দেশেরই আদিনিবাসী হওয়ায় তাঁর এই সামাজিক বিদ্রোহে আদিনিবাসী অনার্য জনগোষ্ঠি তাঁকে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানায়। ফলে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে দ্রুত। এবং বুদ্ধের নির্বাণলাভ বা মৃত্যুর পর আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সাম্যবাদী বৌদ্ধধর্ম। গোটা উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বুদ্ধের অহিংসা পরম ধর্মের ডাক।
মৌর্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট মহামতি অশোকের (৩০৪-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) রাজত্বকালকেই (২৭৩-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বৌদ্ধধর্মের সুবর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে। গৌরবময় আর্যসম্রাট হয়েও মহামতি অশোক কলিঙ্গের যুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ২৬১) ভয়াবহ রক্তপাত, আহত-নিহতের বিপুল সংখ্যাধিক্য ও যুদ্ধের বীভৎসতায় বিচলিত হয়ে যান। যুদ্ধে জয়লাভ করলেও এই যুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি দেখে তিনি বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। প্রচলিত হিন্দুধর্মের মানবাধিকারহীন অসহিষ্ণুতা আর যুদ্ধের পথ ত্যাগ করে তিনি বেদবিরোধী বৌদ্ধধর্মকেই তাঁর আচরিত ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেন এবং অহিংসার পথে সাম্রাজ্য পরিচালনার নীতি গ্রহণ করেন। এরপর অশোক দেশে ও বিদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠান। জানা যায় তাঁর পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে শ্রীলংকা পাঠান। এছাড়া তিনি কাশ্মীর, গান্ধার, ভানাভাসী, কোংকন, মহারাষ্ট্র, ব্যকট্রিয়, নেপাল, থাইল্যান্ড, ব্রহ্মদেশ, লাক্ষাদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেও বৌদ্ধধর্ম প্রচার করান।
সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর আবারো ব্রাহ্মণ্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপর নেমে আসে দলন-পীড়ন। ব্রাহ্মণ্যবাদের কালো থাবার নিচে প্রকৃতই চাপা পড়ে যায় আদিনিবাসী অনার্য জনগোষ্ঠির উজ্জ্বল আগামী। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে দীর্ঘকালব্যাপী ব্রাহ্মণ্যবাদের এই অত্যাচার নির্যাতন ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের কোমরটাই ভেঙে দেয়। শেষপর্যন্ত যাঁরা বেঁচে গেলো তারাও এ দেশ থেকে বিতারিত হলো।
ইতিহাস গবেষক মনীন্দ্র মোহন বসু এ প্রসঙ্গে লিখেন-
‘অবশেষে এই তান্ত্রিক বৌদ্ধমত তিব্বত, নেপাল প্রভৃতি দেশে যাইয়া আশ্রয়লাভ করিয়াছে। বৌদ্ধধর্মের এই পরাজয় এত সম্পূর্ণ হইয়াছিল যে, ধর্মের সঙ্গে ধর্মগ্রন্থসমূহও ভারতবর্ষ হইতে বিতাড়িত হইয়াছে। থেরবাদী সম্প্রদায়ের গ্রন্থগুলো সিংহল ও ব্রহ্মদেশ হইতে আবিষ্কৃত হইয়াছে। আর মহাযান মতের শাস্ত্রসমূহ পাওয়া গিয়াছে প্রধানত চীন, জাপান প্রভৃতি দেশে। চর্যাপদের পুঁথি নেপালে আবিষ্কার হইয়াছিল। আর ইহার অনুবাদের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে তিব্বতী ভাষায়। এখন ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের সমাধির স্মৃতিচিহ্ন মাত্রই দৃষ্ট হইয়া থাকে।’
উল্লেখ্য হীনযান বা থেরবাদী মত ও মহাযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধমত বৌদ্ধধর্মেরই দুটি শাখা।
অধ্যাপক হরলাল রায় চর্যাগীতি গ্রন্থে লিখেন-
‘ধর্ম কোলাহলেই বাংলা সাহিত্যের পুষ্টি ও বিকাশ। ভারতেই আমরা দেখতে পাই, ব্রাহ্মণ্যধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পালি সাহিত্যের সৃষ্টি। হিন্দুধর্মের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণেই বৌদ্ধধর্ম ভারত হতে বিতাড়িত হয়েছিল। … বৌদ্ধধর্ম তার জন্মভূমি ভারতে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছিল। যারা সংস্কৃতকে আত্মস্থ করে নিয়েছিলেন, তাদের পক্ষে যে অন্য ভাষা সহ্য করা অসম্ভব ছিল, তা মনে করা যুক্তিযুক্ত। সর্বগ্রাসী হিন্দুধর্ম শক্তিশালী অনার্য সভ্যতাকে কুক্ষিগত করে। এ সময়ে বৌদ্ধ সমাজের বুদ্ধিজীবীরা রিক্ত সর্বস্বান্ত হয়ে ধীরে ধীরে ভারত থেকে তিব্বত ও আসামের দিকে সরে পড়েছেন।’
অর্থাৎ বৈদিক ব্রাহ্মণদের মাধ্যমে সৃষ্ট একটি জাতিভেদমূলক ব্রাহ্মণ্যবাদী চতুর্বর্ণ প্রথার নিগড়ে ভারতের মাটিবর্তি অহিংস বৌদ্ধধর্ম দীর্ঘকাল যাবৎ নিগৃহিত হতে হতে ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় পতিত হলো। যদিও চীন ও জাপান সহ অনেকগুলো দেশের কোটি কোটি মানুষ বুদ্ধের অহিংস ধর্ম গ্রহণ করে ততদিনে বৌদ্ধ হয়ে গেলেন, ভারতবর্ষ রয়ে গেলো এক বিদ্বেষপূর্ণ অমানবিক বর্ণবাদী বিষাক্ত দর্শনের নিরাপদ প্রজননভূমি হয়ে।
(চলবে…)
Are you sure Buddah was a indiginous Indian?
@ রণদীপম বসু
লেখার জন্নও ধন্যবাদ।
আমি আমার এক বন্দুর কাছে শুনেছি সনাতন ধরমের মুল গ্রন্থ হচ্ছে “বেদ”/ “শ্রুতি”/”shruti”।
মনুসংহিতা নয়। মনুসংহিতা হছছে “smriti”. আপনি অনুগ্রহ করে বেদ থেকে রেফারেন্সগুল দেন। আমি রিক, শাম, যাজুর, অথরব বেদের রেফারেন্সগুল দে্কতে interested. ধন্যবাদ।
@Truthseeker,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনি যা শুনেছেন কথিত হিসেবে তা অসত্য নয়। বেদ-ই মূল। কিন্তু বেদ-এর জটিল বিস্তার থেকে ধর্মীয় বা জীবনের আচরণবিধি ছেকে তোলা সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয় বলে বেদের নির্যাস নিয়ে মনুসংহিতার সৃষ্টি বলে স্বীকৃত। এখানে হাজার হাজার বিষয়ভিত্তিক শ্লোকের মাধ্যমে হিন্দু সমাজের গোটা আচরণবিধি নির্দেশ করা হয়েছে।
পরবর্তী পর্ব থেকেই বিষয়টা পরিষ্কার করতে পারবো বলে আশা করছি।
বাহ! এমন চমৎকার লেখা! দুঃখ হচ্ছে, এর আগের পর্বগুলো কেনো যে আগে পড়িনি…ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবই আস্তে আস্তে পড়ে ফেলবো নিশ্চয়ই। চলুক। :yes:
দারুন একটা সিরিজ হবে মনে হয়। হ্যা, বেশী ঝুলিয়ে রাখবেন না আশা করি।
এই মাত্র সেদিন তামিলনাড়ুতে একজন নিম্ন বর্ণের দলিতকে উচ্চবর্ণের সামনে পায়ে চপ্পল পরার অপরাধে বিষ্ঠা খাওয়ানো হয়েছে।
বর্ণবাদের শিকড় এত গভীরে যে এই অধুনিক যুগেও এর বিষদাঁত বজায় আছে। এর শেকড়ের সন্ধান করাটা জরূরী।
@আদিল মাহমুদ, :brokenheart:
হিন্দুদের গীতাতে দেখেছি লেখা আছে- কৃষ্ণ বলছেন আমি কর্ম ভেদে চার বর্ন তথা ব্রাহ্মণ, হ্মত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চার বর্ণে বিভক্ত করেছি। কোথাও জন্ম ভেদে বলা হয়নি।কবে থেকে এটা জন্মভেদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল সে বিষয়ে গবেষণা দরকার। যবে থেকে এটা জন্মভিত্তিক হয়ে গেছে তখন থেকেই শুরু হয়েছে বর্ণ প্রথার নিপীড়ন ও নির্যাতন। চমৎকার বিষয়বস্তুর অবতারনা করার জন্য ধন্যবাদ।
@ভবঘুরে,
এই গবেষণা করতে হলেতো বোধহয় ত্রেতাযুগেরও আগের যুগ সত্যযুগে চলে যেতে হবে। কারন, ত্রেতাযুগেও আমরা দেখতে পাই ব্রাহ্মনের ধর্ম তপস্যা করার অপরাধে রাম শম্বুক নাম্নী এক শুদ্রের শিরোচ্ছেদ করেছিল।
অবশ্য আবার দ্বাপরেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, “চতুর্বনং ময়াসৃষ্টং গুণকর্মবিভাগেশু”
@রনবীর,
বর্ণ সৃষ্টি করে কৃষ্ণ মহা অন্যায় করেছেন। আজ থেকে কত বছর আগে কী কারণে তিনি এই কূ-কাজটি করেছেন! হাজার পুরুষ ধরে বিশেষ গোত্রের লোকেরা গু-মূত পরিষ্কার করেও বাবুদের খুশী করতে পারল না। কৃষ্ণের কয়েক হাজার ফাঁসি হওয়া উচিত। তিনি বর্ণ সৃষ্টি শুধু ভারতে করেই ক্ষ্যামা দিলেন কেন? আমেরিকাতে এসে করে দিন। ত্যানাকে আমরা দেখি, কী ভাবে করেন।
এখানে আবার দ্বাপর-ত্রেতা-সত্য যুগের বিশ্লেষণ দরকার। এই যুগ গুলোকে বাস্তব সময়-কাঠিতে দিলে ভাল হয়। আজ থেকে কত (মিলিয়ন) বছর আগে, ইত্যাদি।
এটা আবার কোন রাম? অযোধ্যা থেকে খড়ম পায়ে যে রাম শ্রীলংকা গেলেন রাবণ মারতে – তিনি তো শুনেছি মহামানব। অস্টম এডওয়ার্ড প্রেমিকার জন্য সিংহাসন ছাড়লেন, আর রাম বৌ ছাড়লেন পিতৃসত্য পালনার্থে। সেই রাম ব্রাহ্মণের মত তপস্যা করার অপরাধে, শুদ্রের শিরোচ্ছেদ করলেন! গল্প মিলাতে পারলাম না।
আবার কেউ বলে ফেলবেন – ভাল কাজ করলে শুদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারে। কিভাবে হবে? রাম শিরোচ্ছেদ করবে না?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
“বর্ণ সৃষ্টি করে কৃষ্ণ মহা অন্যায় করেছেন। আজ থেকে কত বছর আগে কী কারণে তিনি এই কূ-কাজটি করেছেন! হাজার পুরুষ ধরে বিশেষ গোত্রের লোকেরা গু-মূত পরিষ্কার করেও বাবুদের খুশী করতে পারল না। কৃষ্ণের কয়েক হাজার ফাঁসি হওয়া উচিত। তিনি বর্ণ সৃষ্টি শুধু ভারতে করেই ক্ষ্যামা দিলেন কেন? আমেরিকাতে এসে করে দিন। ত্যানাকে আমরা দেখি, কী ভাবে করেন”
আসলে ভাই বর্ণবাদ কৃষ্ণ না সৃষ্টি করলেও আপনাআপনিই সৃষ্টি হত। আপনি একটু চিন্তা করেন,
ইউরোপে কালো আর সাদাদের মধ্যে পার্থক্য কে সৃষ্টি করল ভাই? আর কৃষ্ণতো সেক্ষেত্রে গুন আর কর্ম অনুসারে বর্ণ সৃষ্টি করে গেছেন। যেটা এই আধুনিক সমাজেও রয়েছে। আমেরিকার কথা বলতে পারব না। তবে এই বাংলাদেশেতো দেখতে পাই অফিসের উচ্চপদের লোকেরা নিম্নপদের লোকদের সাথে কি রকম আচরন করে? কিন্তু কৃষ্ণ বর্ণবাদ সৃষ্টি করে গেলেও কিন্তু সাম্যের কথা বলে গেছেন।
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
বিদ্যা-বিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মনে গবি হস্তিনী
শুনি চৈব চন্ডালে চ পন্ডিতা সমদর্শিণী
-জ্ঞানীরা ব্রাহ্মন,গাভী, হস্তি, কুকুর ,চন্ডালকে সমান দৃষ্টিতে দেখে।
সত্যিকার অর্থে গীতায় যে সাম্যবাদের কথা বলা হয়েছে তা শুধু মানুষের মধ্যকার নয়, এ সাম্যবাদ সকল জীবের মধ্যকার ।
সেক্ষেত্রে কৃষ্ণের সৃষ্ট বর্ণবাদের অর্থ কিন্তু উচ্চবর্ণের লোকেরা নিম্নবর্ণের লোকদের লাঞ্চিত করবে, অপমান করবে, অত্যাচার-নিপীড়ন করবে তা কিন্তু নয়। কৃষ্ণ শুধুমাত্র যোগ্যতা অনুসারে চারটি বর্ণের কথা বলে গেছেন। তা কিন্তু কখনই জন্মানুসারে নয়।
“এখানে আবার দ্বাপর-ত্রেতা-সত্য যুগের বিশ্লেষণ দরকার। এই যুগ গুলোকে বাস্তব সময়-কাঠিতে দিলে ভাল হয়। আজ থেকে কত (মিলিয়ন) বছর আগে, ইত্যাদি।”
কলিযুগের সময়কাল ৪৩২০০০, দ্বাপরযুগ কলিযুগের দ্বিগুন, ত্রেতা তিনগুন এবং সত্য চারগুন। অধিকাংশ পন্ডিতদের মতে আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে কলিযুগের শুরু।
“এটা আবার কোন রাম? অযোধ্যা থেকে খড়ম পায়ে যে রাম শ্রীলংকা গেলেন রাবণ মারতে – তিনি তো শুনেছি মহামানব।”
-এটা সেই রাম না। কারন, রামায়নের অনেক পন্ডিতের মতে রামায়নের উত্তরকান্ড প্রক্ষিপ্ত। এমনকি রবীন্দ্রনাথও রামায়নের উত্তরকান্ডকে পরবর্তীতে সংযুক্ত বলে দাবি করেছিলেন।
জয়ন্তানুজ বন্দোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে তার ‘মহাকাব্য ও মৌলবাদ’ বইয়ে বলেন:
“আদি বাল্মীকি রামায়নে বালকান্ড ও উত্তর কান্ড ছিল না। আর পরবর্তী কালে সংযোজিত এই দুই কান্ড এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রক্ষিপ্ত কথা বাদ দিলে আদি বাল্মীকি রামায়নে রামের অবতারত্বের বিশেষ চিহ্ন পাওয়া যায় না। মহাকাব্য হিসেবেও রামায়নের সাহিত্যগুন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তুলসী রামায়নে বিষ্ণুকে শ্রেষ্ট দেবতা রামকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য । যা এমনকি বালকান্ড ও উত্তরকান্ড সহ পল্লবিত বাল্মীকি রামায়নেরও প্রধান বিষয়বস্তু নয়। ”
“অস্টম এডওয়ার্ড প্রেমিকার জন্য সিংহাসন ছাড়লেন, আর রাম বৌ ছাড়লেন পিতৃসত্য পালনার্থে।”
উত্তরকান্ডে রাম নিজের স্ত্রী সীতাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। তবে সেটা পিতৃসত্য পালনের জন্য নয়, প্রজামনোরঞ্জনের জন্য। কারন, সীতা বহুদিন রাবনের নিকট থাকায় প্রজারা কানাঘুসা করিতেছিল।(যদিও সীতার প্রতি রামের বিশ্বাস কখনও হারায়নি)
@রনবীর, :laugh: হিন্দু ধর্ম পৌরাণিক কালের একটা হিসেব বাতলে দিয়েছে দেখা যাচ্ছে, যেখানে সত্য যুগ থেকে কলি যুগের শুরু পর্যন্ত ৩.৮ মিলিয়ন বছর অতিহাহিত হয়েছে। এটা একটি সমস্যা এই কারণে যে মানুষ প্রজাতির বয়সি কিন্তু মাত্র দুশো হাজার বছর। এটাকে আমরা কিকরে হিন্দু ধর্মের সাথে মিলিয়ে দিতে পারি ভাবনার বিষয়! আমার মনে হয় এ ব্যাপারে মুসলমানদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। তারা যেমন তাদের ছয় দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আজগুবি গপ্পো হালাল করতে যেই গোজামিলটি দেয় সেটি হচ্ছে- আল্লার ছয়দিন পৃথিবীর দিনের হিসেবে অনক অনক লম্বা সময়। আমরাও বোধহয় একইভাবে বলতে পারি যে, পৃথিবীর দুইশো হাজার বছর হিন্দু আল্লার ৩.৮ মিলিয়ন বছর! আপনার রাম আর কৃষ্ণের মতো ডেস্পিকেবল কুলাঙ্গারদের ডিফেন্ড করাকে আমি অভিহিত করবো শোচণীয় বলে।
আমি কিন্তু কোন উত্তর আশা করিনি। তবুও উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
অনেকদিন আগে একটি Joke শুনেছিলাম – হিমালয় পর্বতের একেবারে উচ্চতম শৃংগ থেকে Hugo Chavez এবং Fidel Crasto কে একই সাথে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে কে আগে মাটিতে পড়বে? এর উত্তর ছিল – Who cares?
হিন্দুধর্মের পুরাণ-উপনিষদ বা মনুসংহিতার কল্প কাহিনী নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। এসব বিশ্বাস করলে, বিশ্বাস করতে হবে, রাবণ নামে কেউ ছিলেন, তার দশটি মাথায় ছিল। যখন সীতাকে চুরি করলেন, তখন দশটি মাথা একটি মাথা হয়ে গেল। তিনিই আসল হ্যারি পটার। সীতাকে ধরে আকাশ দিয়ে চলে গেলেন। মুহাম্মদের বেহেস্ত ভ্রমণের কাহিনীকেও বিশ্বাস করতে হবে। যারা এই কাহিনী বানিয়েছেন তারা তখন জানতেন না মাটি থেকে মাত্র পাঁচ-সাত মাইল উপরে কী রকম ঠান্ডা।
আজ সহজেই আমরা রাম, কৃষ্ণ আর ব্রাহ্মণদের ডেস্পীকেবল কুলাঙ্গার বলতে পারি। এক সময় এটা ভাবা যেত না। কারণ ওটাই নিয়ম ছিল। রবি ঠাকুর কমুনিস্ট রাশিয়া ভ্রমণ করে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, "বিশ্ব মানবের মহাতীর্থ" এখনও ভেনিজুয়েলা আর কিউবার লোকেদেরকে মগজ ধুলাই করে শিখানো হচ্ছে কমুনিজমের উপর কোন রাস্টীয় আদর্শ নেই। একদিন এই পৃথিবীই এদেরকেও ধিক্কার দিবে। সমাজ নিয়ে মার্ক্স এক উদ্ভট ধারণা দিয়ে সারা পৃথিবীটাকে নাড়া দিয়েছিলেন। তা নিয়ে অনেকেই রাজত্ব করে গেছেন, যেমন – হুগো শাভেজ, ক্যাস্ট্রো।
@ভবঘুরে,
আমার কাছে বিষয় দু’টো কিন্তু খুবই সম্পর্কযুক্ত মনে হয়। আজ থেকে ৩-৪ হাজার বছর আগের সমাজে বর্ণ এবং জন্মের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য ছিল বলে তো মনে হয় না (আমার বিশ্লেষণ ভুলও হতে পারে)। দাসভিত্তিক বা সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় কিন্তু বর্ণ, কর্ম, ধর্ম এবং জন্ম কিন্তু একটার সাথে আরেকটা খুব ঘনিষ্টভাবে জড়িত ছিল, আমার বাপ মুচি হলে তার সামাজিক অবস্থানও সেভাবে নির্ধারিত হতো এবংতার ছেলেমেয়েও সেই গোত্রেরই অন্তর্ভুক্ত হতো।আমি যতদূর জানি, হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আসা যায় না, আপনাকে জন্মসূত্রে হিন্দু হতে হবে। এভাবে হিসেব করলে সুবিধাও অনেক, ‘নীচু’ ধরণের কাজগুলো করার জন্য সমাজপতিরা ‘রিসোর্স আ্যলোকেশন’ নিশ্চিত করতে পারছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঃ)। আমার তো মনে হয়, ‘জন্ম’ থেকে ‘বর্ণ’ বা ‘কর্ম’ -ভেদ প্রথম দূর হতে শুরু করেছে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় এসে।
@ভবঘুরে,
আপনি কি নিশ্চিত যে, কখনো জন্মভেদে বলা হয়নি? মনুসংহিতা এবং বেদে পরিস্কারভাবেই বলা আছে, মানুষের সমৃদ্ধি কামনায় পরমেশ্বর নিজের মুখ থেকে ব্রাক্ষ্মণ, বাহু থকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য, আর পা থেকে শুদ্র সৃষ্টি করেছিলেন (১:৩১)। হিন্দু ধরর্মের ঈশ্বরের চোখে যদি সবাই সমান হতো তাহলে তিনি ব্রাক্ষ্মণদের মাথা থেকে আর শুদ্রদের পা থেকে তৈরী করতেন না, কি বলেন? আর মনুসংহিতায় তো বর্ণভেদ আছে ছত্রে ছত্রে। যেমন, মনু বলেছেন- দাসত্বের কাজ নির্বাহ করার জন্যই বিধাতা শুদ্রদের সৃষ্টি করেছিলেন (৮:৪১৩)। এমন কি হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে শুদ্রদের উপার্জিত ধন সম্পত্তি তাদের ভোগের ও অধিকার নেই। সব উপার্জিত ধন দাস-মালিকেরাই গ্রহণ করবে -এই ছিল মনুর বিধান – ‘ন হি তস্যাস্তি কিঞ্চিত স্বং ভর্ত্তৃহার্যধনো হি সঃ’ (৮:৪১৬)। এ ধরণের শত শত বর্ণবিদ্বেষী শ্লোক হিন্দু ধর্মগ্রন্থে ছড়িয়ে আছে।
রণবীর ঠিকি বলেছেন যে, তপস্যা করার তথা বেদ পাঠ করার অপরাধে রাম শম্বুক নামের এক শুদ্রের শিরোচ্ছেদ করেছিল। এই ঘটনা হিন্দুদের ‘রামরাজ্যের’ প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরে। মহাভারতেও আমরা দেখি নিষাদ বালক একলব্যকে দ্রোনাচার্য ধনুর্বিদ্যা শিখাতে অস্বীকার করেছিলেন, কেবল একলব্য ছোট জাতের ছিলো বলেই। পরে একলব্য নিজে নিকেই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শি হয়ে উঠলে দ্রোন নিজের প্রিয় ছাত্র অর্জুনকে উপরে রাখতে ‘গুরু দক্ষিণা’ হিসেবে বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেন। মহাভারতের এই গল্পটায় একটা সূক্ষ উপদেশ আছে। ছোটজাতের লোকজনের বিদ্যাচর্চা করা ঠিক না। বুড়া আঙ্গুল কাটা যায় তাতে, ঠিক যেমন, ছোট জাতের লোক বেদ পাঠ করলে তার যাবে কল্লা কাটা।
আপনি হিন্দু ধর্মের ‘সুমহান নৈতিকতা’ সম্বন্ধে জানতে চাইলে মুক্তমনা থেকে এই লেখাগুলো পড়তে পারেন –
Why I Am Not a Hindu by Ramendra Nath
‘সনাতন ধর্মে’র দৃষ্টিতে নারীঃ অনন্ত বিজয়
Women in Hinduism Abul Kasem
আরো এ ধরণের লেখা সাইটে আছে, সার্চ করলেই পাবেন।
দারুণ লেখা! পরের পর্বের জন্য বেশি ঝুলিয়ে রাখবেন না 🙂
চমৎকার লাগল। এই বিষয়টা আসলেই অনেক ভাবনার খোরাক জোগায়। কেনো এই বৈষম্য?
এখনকার পটভুমিকাতেও দেখা যায়,এই বৈষম্যের খুব একটা অদলবদল হয়নি।
[…] [mukto-mona|Part:|01|02|03|04|05|06|07|08] Tags: ambedkar, অস্পৃশ্য, আম্বেদকর, ব্রাহ্মণ্যবাদ, মনুসংহিতা, মনুস্মৃতি, manu-samhita, untouchable […]