আধুনিক মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo sapiens) । অর্থাৎ, আধুনিক মানুষ ‘হোমো’ গন (genus) এর অন্তর্ভুক্ত।বিজ্ঞানীদের মতে এই গণের উদ্ভব/আবির্ভাব প্রায় ২৩ থেকে ২৪ লক্ষ বছর আগে(১)।এরা হোমিনিডিন পরিবারের একটা জেনাস অষ্ট্রালোপিথেকাস এর অন্তর্গত অষ্ট্রালোপিথেকাস গারহি নামক প্রজাতি থেকে আফ্রিকায় উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।উল্লেখ্য অষ্ট্রালোপিথেকাস জেনাসের অন্য কোন প্রজাতির অস্তিত্ব এখন আর পৃ্থিবীতে নাই বলে মনে করা হয়।আজ অবধি আবিষ্কৃত হোমো গণের অন্যান্য প্রজাতিগুলোঃ হোমো হ্যাবিলিস, হোমো ইরেক্টাস, হোমো এন্টেসেসর, হোমো এরগাষ্টার, হোমো হেইডেলবার্জেন্সিস, হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস, হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস এবং এখনো অনেক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

এই পর্যন্ত যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মানুষ ছাড়া হোমো গনের আর কোন প্রজাতির (spices) অস্তিত্ব এখন আর পৃথিবীতে নেই। এতদিন পর্যন্ত হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস কে সর্বশেষ বিলুপ্ত প্রজাতি মনে করা হত। হোমো নিয়ান্ডিরথ্যালেন্সিস ২৪ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছে বলে মনে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধারনার পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৩ সালে হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস আবিস্কৃত হয় যারা প্রায় ১২ হাজার বৎসর আগ পর্যন্ত বেঁচে ছিল বলে মনে করা হয়।এবং ২০১০ সালে প্রকাশ করা ডেনিসোভা হোমিনিন এখন পর্যন্ত এই গনের আপাততঃ সর্বশেষ সংযোজন।

আমি এখানে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া ফসিলের উপর ভিত্তি করে হোমো জেনাসের প্রজাতি গুলোর কথা বলার চেষ্টা করবো।

হোমো হ্যাবিলিস (Homo habilis): ফসিলের কার্বন ডেটিং করে পাওয়া হিসাব অনু্যায়ী এখন পর্যন্ত জানা মানুষ্য প্রজাতির মধ্যে এরা সব চেয়ে বয়স্ক। এরা হোমিনিন ফ্যামিলির জেনাস অষ্ট্রালোপিথেকাস এর একটা প্রজাতি অষ্ট্রালোপিথেকাস গারহি থেকে উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।উল্লেখ্য অষ্ট্রালোপিথেকাস গারহি ২৫ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় বাস করতো বলে মনে করা হয়।

২০০৭ এর ৯ই আগষ্ট তারিখে নিউইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত এক নিবন্ধ মতে হ্যাবিলিসরা প্রায় ২৩ থেকে ১৪ লক্ষ বছর আগে পৃ্থিবীতে বাস করতো (২)।ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ (archaeoloist) ও নৃতত্ত্ববিদ (Anthropologist) ম্যারি লীকি (Mary Leakey) এবং কেনিয়ার প্রত্নতত্ত্ববিদ ও প্রকৃ্তিবিজ্ঞানী (Naturalist) লুইস লিকী (Louis Leakey) যৌথ ভাবে ১৯৬২-৬৪ সালে পুর্ব আফ্রিকার তাঞ্জানিয়াতে এদের ফসিল খুঁজে পান।ধারনা করা হয় হোমো হ্যাবিলিসই হোমো গনের সবচেয়ে পুরাতন প্রজাতি।ফসিল থেকে ধারনা পাওয়া যায় যে হোমো হ্যাবিলিস’রা আধুনিক মানুষের তুলনায় খাট ছিল, পুর্ন বয়স্কের গড় উচ্চতা ছিল ৪ ফুট ৩ ইঞ্চির মত।এদের হাত শরীরের তুলনায় অসামঞ্জস্যা ভাবে বড় ছিল।মাথার খুলির আয়তন ছিল প্রায় ৩৬৩-৬০০ ঘন সে.মি.। মুখ মন্ডল এদের পুর্ব পুরুষ বলে ভাবা অষ্ট্রালোপিথেকাস গারহি এর চেয়ে কম সমনের দিকে বাড়ানো ছিল। এদের শারিরীক গড়ন এবং আকার আকৃতি এপ (ape) দের মত থাকা সত্বেও এরা পাথুরে যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করতো বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন। কারন আফ্রিকায় এদের ফসিলের সাথে পাথুরে যন্ত্র পাওয়া গেছে (৩)।

হোমো জেনাসের অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে হোমো হ্যাবি্লিস এর আকার আকৃ্তিতে আধুনিক মানুষের সাথে মিল কম।হোমো হ্যাবিলিসকে হোমো এরগাষ্টার এর পুর্ব পুরুষ মনে করা হয় এবং এই এরগাষ্টার থেকেই আধুনিক মানুষের সাথে আকার আকৃ্তিতে মিল সম্পন্ন প্রজাতি হোমো ইরেক্টাকাস এর উদ্ভব হয়েছে বলেও মনে করা হয়। তবে এখনও হোমো হ্যাবিলিসরা সরাসরি আধুনিক মানুষের পুর্বপুরুষ কিনা অথবা যে সব ফসিল পাওয়া গেছে তা ঠিকভাবে শ্রেনীভুক্ত করা হয়েছে কিনা এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নাই। তবে নতুন গবেষনার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ২০০৭ সালে বলা হোমো হ্যাবিলিস এবং হোমো ইরেক্টাস একই সময়ে বাস করতো এবং সম্ভবত এরা পৃ্থক লিনিয়েজে একটা কমন এন্সেষ্টর থেকে আলাদা ভাবে উদ্ভব হয়েছে। এবং আরো মনে করা হয় যে হোমো ইরেক্টাকাস হোমো হ্যাবিলিস থেকে সরাসরি উদ্ভব হয় নি (৪)।

তবে এখন পর্যন্ত এদের জেনম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির সাথে এদের জেনেটক ডিস্ট্যান্স দেখা হয়েছে কিনা তা জানা যায় নি।

হোমো রুডোলফেন্সিস (Homo rudolfensis) ১৯৭২ সালে কেনিয়ার লেক টুরকানা এলাকায় এদের জিবাষ্ম পাওয়া যায়।খুজে পান প্রত্নতত্ত্ববিদ রিচার্ড লীকি (ইনি হোমো হ্যাবিলিস এর আবিস্কারক ম্যারি এবং লুইস লীকি’র ছেলে) ও প্রানী বিজ্ঞানী মেয়াভ লীকি’র টিমের সদস্য বার্নার্ড এনগেনো (৫)। প্রথমে এদেরকে হোমো হ্যাবিলিস বলে মনে করা হয়েছিলেন।তবে এখনও এটা সবচেয়ে বিতর্কিত একটা প্রজাতি। প্রথমে ভুল করে এদের খুলিকে ৩০ লক্ষ বছরের পুরনো বলেও মনে করা হয়েছিল। পরে হোমো হ্যাবিলিস এর সাথে এর মাথার খুলির পার্থক্যের কারনে এদেরকে অন্য প্রজাতি বলে ধরে নেয়া হয় এবং মনে করা হয় যে এরা হোমো হ্যাবিলিস এর সমসাময়িক।তবে এটা এখনও নিশ্চিত নয় যে হোমো রুডোলফেন্সিস নাকি হোমো হ্যাবিলিস নাকি অন্য কোন তৃতীয় প্রাজাতি থেকে পরবর্তী হোমো প্রজাতি সমুহ এবং হোমো সেপিয়েন্স এর উদ্ভব হয়েছে!

২০০৭ সালের মার্চে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এন্থ্রপলজিষ্ট টিমোথি ব্রোম্যাজ এদের একটা খুলির রিকনস্ট্রকশন করে দেখেন যে এরা দেখতে অনেকটা এপ (ape) দের মত এবং এদের মাথার খুলির আয়তন ৫২৬ ঘন সে. মি. বলে দাবী করেন যা আগে ৭৫২ ঘন সে. মি. বলে মনে করা হয়েছিল।তবে মাথার খুলির এই আয়তন নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে টিমোথি ব্রোম্যাজ এদের মাথার খুলির আয়তন পুনরায় নতুন ভাবে হিসাব করে বলেন যে তা প্রায় ৭০০ ঘন সে. মি. (৬)।

অন্যান্য প্রজাতির সাথে সম্পর্ক নিরুপনের জন্য এদের কোন জিন সিকোয়েন্সিং হয়েছে কি না তা এখনও জানা যায় নি।

তথ্য সুত্রঃ

১।McHenry, H.M (2009). “Human Evolution”. in Michael Ruse & Joseph Travis. Evolution: The First Four Billion Years. Cambridge, Massachusetts: The Belknap Press of Harvard University Press. p. 265.

২।http://www.nytimes.com/2007/08/09/science/08cnd-fossil.html?ref=science

৩।http://en.wikipedia.org/wiki/Homo_habilis#cite_note-2

৪।F. Spoor, M. G. Leakey, P. N. Gathogo, F. H. Brown, S. C. Antón, I. McDougall, C. Kiarie, F. K. Manthi & L. N. Leakey (9 August 2007). “Implications of new early Homo fossils from Ileret, east of Lake Turkana, Kenya”. Nature 448 (448): 688–691)

৫।http://en.wikipedia.org/wiki/H._rudolfensis

৬।Bromage TG, McMahon JM, Thackeray JF, et al. (2008). “Craniofacial architectural constraints and their importance for reconstructing the early Homo skull KNM-ER 1470”. The Journal of Clinical Pediatric Dentistry 33 (1): 43–54.

চলবে…