বেশ কিছুদিন ব্যস্ত ছিলাম , লেখা হয়ে ওঠেনি। একটু ফুরসত পেলাম তাই লিখতে বসলাম। আমি খেয়াল করেছি বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে ৯৫% এর ও বেশী মানুষ কোরানকে নিজের মাতৃভাষায় কোনদিন পড়েনি, পড়ার দরকারও মনে করে না। তারা নামাজ পড়ার জন্য যে কয়টি সূরা দরকার সেগুলোই আরবীতে মুখস্ত করে চালিয়ে যায়, নিজের মাতৃভাষায় কোরান পড়াকে তারা তেমন গুরুত্বপূর্ন মনে করে না। রোজা রমজানে তারা আরবী কোরান তোতা পাখীর মত অন্ধের মত না বুঝে আউড়ে গিয়ে ছোয়াব অর্জনের প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যায়। অথচ আপনি যদি কোরানের কোন নির্দিষ্ট আয়াত উল্লেখ করে তার অসঙ্গতি সম্পর্কে কোন একজন শিক্ষিত লোককে জিজ্ঞেস করেন সে অকাতরে প্রমান করার চেষ্টা করবে যা লেখা আছে তা সঠিক ও যথার্থ। যদি জিজ্ঞেস করেন- কোরান সে নিজ ভাষায় পড়েছে কিনা বলবে- অল্প স্বল্প পড়েছে বা একেবারেই পড়েনি। তার মানে সম্পুর্নই না জেনে না বুঝে সে খুব দৃঢ়তা ও আস্থার সাথে প্রমান করার চেষ্টা করবে কোরানে যা লেখা আছে তা অভ্রান্ত। এর পরও যদি আপনি কোরানের নানা আয়াত উল্লেখ করে আপনি তার কথাকে খন্ডন করার চেষ্টা করেন ও যদি সে কুলিয়ে উঠতে না পারে, তাহলে সোজা একটা উত্তর দেবে-কোরানে বলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ও বেশী তর্ক না করতে। এবারে বুঝলেন তো মুসলিম মানসিকতা ? কোরানে কি লেখা আছে না আছে তা না জেনেই সাচ্চা মুসলমান, কোরান ও হাদিসে তাদের অগাধ বিশ্বাস। এর কারন হলো- ইসলাম, কোরান, মোহাম্মদ এদেরকে নিয়ে একশ্রেনীর মানুষের বিরামহীন গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডা। হিটলারের প্রচার মন্ত্রী গোয়েবলসের ফর্মূলা ছিল- একটা মিথ্যাকে একশ বার সত্য বলে প্রচার কর, ওটাকে মানুষ সত্য বলে বিশ্বাস করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নাজি জার্মানীতে ঘটেছিলও তাই। সেখানে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা অহর্নিশ প্রচার করা হতো- জার্মানরা হলো আর্য জাতি, পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতি, জার্মানদেরই একমাত্র অধিকার পৃথিবীকে শাসন করা। সাধারন জার্মানরা বুঝে না বুঝে তা অকাতরে বিশ্বাস করেছিল। আর তার ফলাফল কি হয়েছিল সবাই জানেন। প্রায় ৫ কোটি মানুষকে অকাতরে প্রান হারাতে হয়েছিল হিটলারের শ্রেষ্ট জাতিতত্বের বলি হয়ে। ঠিক সেরকমই ঘটনা ঘটে চলেছে মুসলিম বিশ্বে। এক শ্রেনীর মোল্লারা যাদের মধ্যে কিছু তথাকথিত পন্ডিত ও ছদ্মবিজ্ঞানী আছে, খুবই উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে বর্তমানে সৌদি পেট্রোডলারের আশির্বাদে রেডিও টিভি পত্র পত্রিকা ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদির মাধ্যমে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে- কোরান হলো ঐশি কিতাব, স্বয়ং আল্লাহর বানী, তার পাতায় পাতায় বিজ্ঞানের নানা আবিস্কার ও তত্ত্বের ছড়াছড়ি, মোহাম্মদ হলো আল্লাহ প্রেরিত পুরুষ, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মহামানব, মহাবিজ্ঞানী ইত্যাদি। এসবের মধ্যে ইদানিং কালে ডাঃ জাকির নায়েক নামের এক জোকার সদৃশ লোক খুবই অগ্রগন্য। টেলিভিশন খুললেই তার জোকার মার্কা চেহারা দেখা যায়, অনর্গল তার ফালতু পেচাল প্রচার করে চলেছে ইসলামিক টি ভি নামধারী কিছু চ্যানেল। মজার বিষয় হলো লোকটা সাধারন একজন এম বি বি এস পাশ করা ডাক্তার, বর্তমানে ইসলামী মহাপন্ডিত হিসাবে নাম লিখিয়েছে। এ লোকটা কোরানের পাতায় পাতায় বিজ্ঞানের সব তত্ত্ব খুজে পায়। সেই সাথে আছে হারুন ইয়াহিয়া নামের আর এক মহা ইসলামী পন্ডিত। আর আমাদের উপমহাদেশের মুসলমান ভাই বোনেরা তাদের কথা গোগ্রাসে গিলছে, ওরা যা বলছে তা পরীক্ষা না করেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ফেলছে আর নিজেদের চোখ, কান ও বুদ্ধিকে একেবারে অন্ধ করে ফেলছে। কোন মানব গোষ্ঠির এ ধরনের গণ অন্ধকার প্রীতি পৃথিবীর ইতিহাসে আগে কোন দিন দেখা যায় নি যা ইদানিং মুসলমান জাতি গোষ্ঠির মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এরা একবারও চিন্তা করে না যে- ওদের মুখ থেকে নয়, বরং সোজা কোরান পাঠ করলেই সব কিছু জানা যায়। কারন আল্লাহ বার বার কোরানে বলেছেন-

আমি কোরানকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্য। ৫৪ঃ১৭

এর পরেও যদি মুসলমান ভাই ও বোনেরা কোরান পাঠ না করে ধান্ধাবাজ মানুষের উদ্দেশ্যমূলক কথাবার্তা বিশ্বাস করে বসে থাকে তাহলে এর চাইতে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। আর ধান্ধাবাজ তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা বলে থাকে যে কোরানের কিছু কিছু আয়াত আছে যা মানুষের বোঝার অসাধ্য। যেখানে আল্লাহই বলছেন তিনি কোরানকে সহজ করে বর্ননা করেছেন সবাই যাতে বুঝতে পারে সেখানে তারা সম্পূর্ন তার বিপরীত কথা বলে খোদ আল্লাহ ও কোরানেরই বিরুদ্ধাচরন করছে। তারপরেও যদি কিছু আয়াত থাকে যার অর্থ মানুষ বুঝতে পারবে না তাহলে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে, তা হলো-
(১) যা মানুষের বোঝার ক্ষমতার বাইরে তা আল্লাহ খামোখা বলতে গেলেন কেন?
(২) মানুষের পক্ষে বোঝাই যদি দুঃসাধ্য হয়, তাহলে তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা তার অর্থ বোঝে কিভাবে? তারা কি তাহলে অমানুষ ? নাকি আল্লাহ প্রেরিত ফেরেস্তা বা প্রেরিত পুরুষ?

গন-অন্ধকারচ্ছনতা বলতে যা বোঝায় মুসলমানরা পন করেছে তারা তার শিকার হবেই। অর্থাৎ মুসলমানরা পন করেছে তারা অন্ধকারের মধ্যে থাকবেই , কোনকিছুই তাদেরকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারবে না। তারা আলোর চাইতে অন্ধকারকেই বেশী ভালবেসে ফেলেছে। গোট মুসলিম জাতির জন্য এর চাইতে খারাপ খবর আর কি হতে পারে। আল্লাহ কোরানে বলছেনÑ

আল্লাহ তাদের অন্তঃকরন ও কান সমূহ বন্দ করে দিয়েছেন, তাদের চোখ সমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। ২ঃ ৭

সত্যি সত্যিই আমাদের মুসলমান ভাই বোনদের অন্তঃকরন ও কান এখন বন্দ আর চোখ থাকতেও তারা অন্ধ। তারা এখন আর তাদের অন্তঃকরন খুলতে চায় না, চোখ মেলে তাকাতে চায় না। পাছে যদি তারা জাহান্নামের আগুনের মধ্যে গিয়ে পড়ে !

এবার আসল কথায় আসা যাক, কোরান যদি আল্লাহ প্রেরিত কোন ঐশি গ্রন্থ হয়ে থাকে তার মধ্যে একটিমাত্রও বা সামান্যতমও ভূল থাকবে না। একটা মাত্র ভুল বা অসঙ্গতিই যথেষ্ট কোরান ঐশি কিতাব না প্রমান করার জন্য। ইতোপূর্বে আমি বিজ্ঞানময় আসমানী কিতাব-১ম, ২য় ও ৩য় পর্বে উল্লেখ করেছি কোরানে কি পরিমান বিজ্ঞান গত অসঙ্গতি বা ভুল বিদ্যমান। আমি কোরান প্রচারকারী বিভিন্ন ওয়েব সাইটে দেখেছি তারা নিজেরাও সে অসঙ্গতি বা ভুলগুলো সম্পর্কে বেশ সচেতন ও তা খন্ডনের প্রানান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে ইদানিং। আর তা করতে গিয়ে নানা রকম হাস্যকর ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। সেটাই স্বাভাবিক। কারন কোরান হাদিস নিয়ে এতো চুল চেরা বিশ্লেষণ আগে কোনদিন হয়নি। যে কারনে তাদের এত মাথাও ঘামাতে হয়নি। নিউইয়র্কের বিশ্ব বানিজ্যকেন্দ্র ধ্বংসের পরই গোটা বিশ্ব ইসলামের ব্যাপারে খোজ খবর নেয়া শুরু করল। তাদের জানার একটাই কৌতুহল- ইসলাম ও তার কোরানে এমন কি আছে যার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ২১ টি তাজা তরুন তাদের জীবন উৎসর্গ করে এ ধ্বংস যজ্ঞ চালালো? তো চুল চেরা বিশ্লেষণে আস্তে আস্তে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে। তার ফলে বের হচ্ছে কোরানে অজস্র ব্যকারনগত ভুল, ভাষাগত ভুল, ইতিহাসগত ভুল, বিজ্ঞানগত ভুল। ভুলের মাত্রা ও পরিমান এত বেশী যে, ইসলামী পন্ডিতদের এখন মাথা খারাপ হয়ে গেছে এত সব ভুলকে তারা কিভাবে সামাল দেবে। তাই এখন তারা আবোল তাবোল বকছে সবাই। যেমন, কয়দিন আগে ইসলামিক টি ভি তে হারুন ইয়াহিয়ার একটা জলসা প্রচার হচ্ছিল। সেখানে এক ব্যাক্তি( হিন্দু হবেন মনে হয় ভদ্রলোক) প্রশ্ন করলেন, অত্যন্ত সাদা মাটা ও সহজ প্রশ্ন- ঈশ্বর কোথায় থাকেন, কোন নির্দিষ্ট স্থানে , নাকি বিশ্বের সর্বত্র? প্রশ্নের উত্তরে হারুন ইয়াহিয়া প্রায় আধা ঘন্টা বক্তৃতা দিয়ে গেলেন, কিন্তু আসল প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে বলে গেলেন- আল্লাহ শব্দের অর্থ কি, কোথা থেকে আল্লাহ শব্দ আসল, আল্লাহ নামের সাথে অন্যান্য ধর্মের ইশ্বর, গড বা ভগবান ইত্যাদির কি মৌলিক তফাৎ, কেন তাই আল্লাহ নামের মাহাত্ম অন্য সবার চাইতে অপরিসীম। এত কথা বললেও আল্লাহ কোথায় থাকেন তার কোন সদুত্তর উনি দিলেন না। কোরানে আছে আল্লাহ তার সৃষ্টি কাজের পর সাত আসমানের ওপর আল্লাহর আরশে সিংহাসনে আসীন হয়েছেন। এ উত্তর দিলে তখন পাল্টা প্রশ্ন হতে পারত- তাহলে আল্লাহর একটা আসন বা সিংহাসন আছে যার উপর তাকে বসতে হয়, তার মানে আল্লাহ সাকার, কারন একমাত্র সাকার কাউকেই তো সিংহাসনে বসতে হয়, নিরাকার হলে তো বসার জন্য সিংহাসন দরকার নাই। কিন্তু ইসলাম তো আল্লাহর সাকারত্বে বিশ্বাস করে না। খেয়াল করলাম, হারুন ইয়াহিয়া বিষয়টি সম্পর্কে বেশ ভালই অবগত ছিলেন, তাই খুব সতর্কভাবে বিষয়টি পাশ কেটে চলে গেলেন। তবে তার একটা যুক্তি বেশ হাস্যকর, তা হলো আল্লাহ শব্দকে উল্টালেও একই থাকে তাই তার এই নামের মাহাত্ম অন্য ধর্মের ঈশ্বর বা গড এর চেয়ে অনন্য। তো নানা, চাচা, দাদা, দিদি, বাবা, নতুন -ইত্যাদি শব্দও ( এরকম শব্দ বহু আছে) তো উল্টালে অবিকৃত থাকে তাহলে এসব শব্দও আল্লাহ নামের মত অনন্য মাহাত্মের অধিকারী হবে, কি বলেন? গাজাখুরি কথা বার্তার একটা সীমা থাকা উচিত। এভাবেই ইদানিং ইসলামী পন্ডিতরা গাজাখুরী ও অসংলগ্ন কথা বার্তা প্রলাপের মত বকে যাচ্ছেন, মজার ব্যপার হলো- মুসলমানদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তারা বরং তাদের এসব প্রোপাগান্ডায় যার পর নাই আনন্দিত এই ভেবে যে, ইসলাম হলো একমাত্র সত্য ধর্ম, কোরান হলো আল্লাহর কিতাব যার মধ্যে বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, সমাজনীতির সব খনি মজুত হয়ে আছে, মোহাম্মদ হলো আল্লাহর প্রেরিত নবী। আজকের আলোচনা আমি একটি ব্যকারন গত অসঙ্গতির কথা বলেই নিবন্ধ শেষ করব। এ সমস্যাটা গোটা কোরান শরিফের পাতায় পাতায় বিদ্যমান, জানিনা কেন সেটা ইসলামি চিন্তাবিদদের বা সাধারন মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়।

বিষয়টা হলো-কোরানে আল্লাহ হলেন বক্তা মানে ১ম পুরুষ বা First Person, শ্রোতা হলেন মোহাম্মদ মানে ২য় পুরুষ বা Second Person আর জিব্রাইল ফেরেস্তা হলেন বাহক মানে ৩য় পুরুষ বা Third Person । এখন কোরান কে জিব্রাইল দুই ভাবে মোহাম্মদের কাছে পেশ করতে পারে, প্রথম-আল্লাহর বক্তব্যকে আজকালকার মত একটা ডিভিডি তে কপি করে তা সে বয়ে এনে মোহাম্মদের কাছে একটা প্লেয়ার চালিয়ে শুনাতে পারে যেখানে সব কথাই হবে প্রত্যক্ষ বাক্য বা উরৎবপঃ ঝঢ়ববপয, দ্বিতীয়- আল্লাহর বক্তব্য সে শুনে মুখস্ত করে মোহাম্মদের নিকট পরোক্ষ বাক্য( ওহফরৎবপঃ ঝঢ়ববপয) ব্যবহার করে বর্ননা করতে পারে। যারা ব্যাকারন ভাল বোঝেন তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন । তার পরেও আমি একটু ব্যাখ্যা দেই।

প্রথম পদ্ধতি অনুযায়ী-

জিব্রাইল, মোহাম্মদের এর নিকট ডিভিডি রেকর্ড বাজিয়ে শোনাল, যাতে বলা হয়েছিল- ”হে মোহাম্মদ, তুমি আমার বান্দাগনকে বলে দেও, আমি আল্লাহ, সারা দুনিয়ার পালন কর্তা, আমি দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছি আবার কেয়ামতের দিন আমি সব কিছু ধ্বংস করব। আমি তোমাকে দুনিয়ায় প্রেরন করেছি শেষ নবী হিসেবে। তুমি তাদেরকে সতর্ক করে দেও। ”

সুতরাং মোহাম্মদ যে বক্তব্যটা শুনতে পাবেন তা হবে শুধুই এরকমÑ

হে মোহাম্মদ, তুমি আমার বান্দাগনকে বলে দেও, আমি আল্লাহ, সারা দুনিয়ার পালন কর্তা, আমি দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছি আবার কেয়ামতের দিন আমিই সব কিছু ধ্বংস করব। আমি তোমাকে দুনিয়ায় প্রেরন করেছি শেষ নবী হিসেবে। তুমি তাদেরকে সতর্ক করে দেও।

খেয়াল করুন এখানে আল্লাহ সব সময় নিজেকে আমি এভাবেই উল্লেখ করবেন। কোথাও যদি আল্লাহ তার নিজের নামটা উল্লেখও করেন তাহলেও তিনি বলবেন- আমি আল্লাহ। আর মোহাম্মদকে আল্লাহ সর্বদাই হয় – হে মোহাম্মদ বা তুমি এভাবেই সম্বোধন করবেন। এটাই হলো প্রত্যক্ষ বাক্য রচনার শুদ্ধ ব্যাকরনগত নীতি। যেমন – আমি রহিম সাক্ষ্য দিচ্ছি , আমি করিম সাক্ষ্য দিচ্ছি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুযায়ী-জিব্রাইল মোহাম্মদকে বললেন যে আল্লাহ তাকে (মোহাম্মদ) তার(আল্লাহ) বান্দা গনকে বলে দিতে বলেছেন যে তিনি সারা দুনিয়ার পালনকর্তা এবং তিনি দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ও তিনিই আবার কেয়ামতের দিন সব কিছু ধ্বংস করবেন। তিনি আরও বলেছেন তিনি তাকে( মোহাম্মদ) দুনিয়ায় প্রেরন করেছেন শেষ নবী হিসাবে তাদেরকে ( বান্দাগন) সতর্ক করে দিতে।

তাহলে জিব্রাইল ও মোহাম্মদের নিজস্ব কথোপথনের বক্তব্য বাদ দিলে আসল বক্তব্য দাড়াবে নিম্নরূপঃ

আল্লাহ তাকে (মোহাম্মদ) তার(আল্লাহ) বান্দা গনকে বলে দিতে বলেছেন যে তিনি সারা দুনিয়ার পালনকর্তা এবং তিনি দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ও তিনিই আবার কেয়ামতের দিন সব কিছু ধ্বংস করবেন। তিনি আরও বলেছেন তিনি তাকে( মোহাম্মদ) দুনিয়ায় প্রেরন করেছেন শেষ নবী হিসাবে তাদেরকে ( বান্দাগন) সতর্ক করে দিতে।

এটাই হবে পরোক্ষ বাক্যে প্রকাশের শুদ্ধ ব্যাকরন গত নীতি।

খেয়াল করুন, এখানে আল্লাহ সর্বদাই আল্লাহ বা তিনি বা তার এভাবে অর্থাৎ ৩য় পুরুষ হিসাবে বর্নিত হবেন। এখানে মোহাম্মদও ৩য় পুরুষ হিসাবে উল্লেখিত হবে। এটা হবে যদি আল্লাহ জিব্রাইলকে বলে দেন যে তিনি যা বলেছেন হুবহু তাই যেন পরোক্ষ বাক্যে মোহাম্মদকে বলা হয় তবেই। কিন্ত আল্লাহ যদি বলে দেন বক্তব্যের মূল অর্থ ঠিক রেখে জিব্রাইল মোহাম্মদের কাছে তার বক্তব্য নিজের মত করে বলতে পারে তাহলে জিব্রাইল নিম্ন আকারেও সে বক্তব্য পেশ করতে পারে ঃ

হে মোহাম্মদ, আল্লাহ তোমাকে তার (আল্লাহ) বান্দা গনকে বলে দিতে বলেছেন যে তিনি সারা দুনিয়ার পালনকর্তা, তিনি দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ও তিনিই আবার কেয়ামতের দিন সব কিছু ধ্বংস করবেন। তিনি আরও বলেছেন তিনি তোমাকে ( মোহাম্মদ) দুনিয়ায় প্রেরন করেছেন শেষ নবী হিসাবে তাদেরকে ( বান্দাগন) সতর্ক করে দিতে।

এখানে খেয়াল করুন , জিব্রাইল যদি উপরোক্ত আকারে আল্লাহর বক্তব্য মোহাম্মদের কাছে পেশ করে তাহলে- হে মোহাম্মদ -এ কথাটি হবে প্রত্যেকবারেই জিব্রাইলের , আল্লাহর নয়। এ ছাড়াও জিব্রাইলের আরও কিছু বক্তব্য যোগ হবে প্রত্যেকটি বাক্য চয়নে। তার অর্থ এ ফরমাটে যদি জিব্রাইল তার বক্তব্য মোহাম্মদের নিকট বর্ননা করে থাকে তাহলে গোটা কোরানে আল্লাহর কথা ছাড়াও জিব্রাইলের অনেক নিজস্ব কথা যোগ হবে যদিও তা খুব গুরুত্বপূর্ন না বা তাতে কোরানের মূল সুরেরও কোন ঘাটতি হবে না। কিন্তু প্রথম পদ্ধতি অনুযায়ী হে মোহাম্মদ- শব্দগুলি হবে সব সময়ই আল্লাহর। কিন্তু তার পরেও দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুযায়ী কোথাও আল্লাহ বুঝাতে এখানে আমি শব্দটি ব্যবহৃত হবে না । আল্লাহ এখানে সব সময় ৩য় পুরুষই থাকবেন ও তাকে বোঝাতে সব সময় আল্লাহ বা তিনি বা তার এ শব্দগুলোই ব্যবহৃত হবে। ১ম পুরুষ হবেন জিব্রাইল ও ২য় পুরুষ হবেন মোহাম্মদ। যে কারনে হে মোহাম্মদ বা তুমি এভাবেই মোহাম্মদকে চিহ্নিত করা হবে প্রত্যেকবার।

উপরোক্ত ব্যকারনগত নীতির আলোকে আমরা এবার কোরানের আয়াত কিভাবে লেখা হয়েছে দেখিঃ

সূরা ফাতিহা:

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়,অতি দয়ালু। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহতালার যিনি সকল জগতের পালন কর্তা। যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। যিনি বিচার দিনের মালিক। ১-৪

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল পথ দেখাও। সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয় যাদের ওপর তুমি গযব নাজিল করেছ ও যারা পথ ভ্রুষ্ট হয়েছে। ৫-৭

পাঠক গন, ১ থেকে ৪ পর্যন্ত আয়াতগুলো দেখুন, এখানে কে শুরু করছেন আল্লাহর নামে ? যদি জিব্রাইল নিজের মত করে বর্ননা করে তাহলে ঠিক আছে। সে মোহাম্মদকে বলছে ওভাবে বলার জন্য। কারন আল্লাহ নিশ্চয়ই নিজেই নিজের নামে শুরু করবেন না ও নিজেই নিজের ইবাদত করবেন না বা তাকে নিজেকেই পথ দেখাতে বলবেন না। এ ক্ষেত্রে দেখুন আল্লাহ ৩য় পুরুষে বর্নিত হচ্ছে যা সঠিক। তাহলে পরের বর্ননা গুলোতে আল্লাহ সর্বদাই ৩য় পুরুষে বর্নিত হবে যা পূর্বে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে ব্যখ্যা করা হয়েছে। এর পর ৫ থেকে ৭ নং পর্যন্ত আয়াতে আল্লাহ হঠাৎ করে তোমার ,তুমি হয়ে গেছে মানে ২য় পুরুষে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যদি আগের ব্যাকরন গত রীতি অনুসরন করা হতো তাহলে আয়াতগুলো হতো নিম্নরূপঃ

আমরা একমাত্র তারই ইবাদত করি ও শুধুমাত্র তারই সাহায্য প্রার্থনা করি। তিনি আমাদেরকে সরল পথ দেখাউন। সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তিনি নেয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয় যাদের ওপর তিনি গযব নাজিল করেছেন ও যারা পথ ভ্রুষ্ট হয়েছে।অথবা যদি ১- ৪ যদি এরকম হতো ঃ

শুরু করছি হে আল্লাহ তোমার নামে , তুমি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু। যাবতীয় প্রশংসা তোমার , তুমি সকল জগতের পালন কর্তা। তুমি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।তুমি বিচার দিনের কর্তা।

আর তার পর যদি ৫-৭ হতো যা আছে সেরকম অর্থাৎ

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল পথ দেখাও। সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয় যাদের ওপর তুমি গযব নাজিল করেছ ও যারা পথ ভ্রুষ্ট হয়েছে।

তাহলেই সূরাটি হতো সর্বাঙ্গ সুন্দর ও ব্যাকরনগত ত্র“টি মুক্ত। যদি ধরেও নেই যে আল্লাহ জিব্রাইলকে ঠিক ওভাবেই মোহাম্মদকে বলার জন্য বলে দিয়েছেন তাহলে কোন সমস্যা থাকে না। যদিও উপরোক্ত কথাগুলো কখনোই হুবহু আল্লাহর হতে পারে না যার কারন আগেই বলেছি যে আল্লাহ নিজেই নিজের ইবাদত করবেন না বা নিজেই নিজেকে পথ দেখাবেন না।

আলোচ্য সূরাটিতে পুরোপুরিভাবে না প্রত্যক্ষ বাক্য রীতি ব্যবহার করা হয়েছে , না পরোক্ষ বাক্য রীতি ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে ব্যাকরনগত কোন রীতিই অনুসরন করা হয়নি সূরাটিতে । যা ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো- জগাখিচুড়ি বাক্য রীতি। ইসলামি পন্ডিতরা বলতে পারেন- আরবী ভাষাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বাক্যের কোন তফাৎ নেই। ওটা কোন কথা না। মূলতঃ অর্থের দিক দিয়ে কোন ভাষাতেই তো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাষার মধ্যে পার্থক্য নেই। কিন্তু গঠনের দিক দিয়ে তো বহু তফাৎ। আরবী ভাষাতে যদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাক্য রীতি আলাদাভাবে না থাকে তাহলে তো বলতে হবে আরবী ভাষা অন্যান্য ভাষা থেকে অনেক অনুন্নত। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকে-আল্লাহ কেন সেরকম একটা অনুন্নত ভাষায় কোরান নাজিল করতে গেলেন?

এবারে অন্যান্য কয়েকটি সূরার প্রতি নজর দেয়া যাক।
সূরা বাক্কারা ঃ

আয়াত ১ থেকে ২২ পর্যন্ত মোটামুটি ভাবে সূরা ফাতিহার রীতি অনুসরন করা হয়েছে , ব্যতিক্রম শুধু ৩ নং আয়াতে যা নিম্নরূপঃ

যারা অদেখা বস্তুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ও নামাজ আদায় করে। আর আমি তাদেরকে যে রুজি দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।

এখানে আল্লাহ স্বয়ং নিজেই আবির্ভূত হলেন অবশেষে। কারন তিনি এবার আমি শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তবে ২৩ নম্বর আয়াতের পর থেকে শুরু হয়েছে আমি এর ব্যপক ব্যবহার । এতক্ষন আল্লাহ একবার ৩য় পুরুষ , একবার ২য় পুরুষ হিসাবে হাজির ছিলেন এবার ১ম পুরুষেও হাজির হলেন। দেখুন সেটা কেমনঃ
যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ন করেছি——। ২৩, তাহলে সে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর–।২৪, এর পর ২৫ থেকে সূরা বাক্কারার শেষ পর্যন্ত একবার আমি , একবার তুমি একবার সে অর্থাৎ ১ম , ২য় ও ৩য় পুরুষের ছড়াছড়ি। এরপর গোটা কোরানের মধ্যে এ সমস্যাটা বিদ্যমান। এর পর বোঝা মুসকিল কোন আয়াত স্বয়ং আল্লাহ বলছেন আর কোন আয়াত জিব্রাইল এসে বলছে আর কোনটাই বা মোহাম্মদ নিজে বলছেন। এত জগাখিচুড়ী মার্কা ব্যাকরনগত বাক্য যে কিতাবে তা কিভাবে আল্লাহর কিতাব হয় বোঝা মুশকিল। সে বিচারের ভার আমি পাঠক/পাঠিকাদের ওপরেই ছেড়ে দিলাম। দয়া করে অনলাইন এর কোরান খুলে রেখে একটু চোখ বুলিয়ে যান, সহজেই নজরে পড়বে। এত বেশী উদ্ধৃতি দেয়া সম্ভব হলো না। অনলাইন কোরান শরিফের লিঙ্ক দিয়ে দিলাম:

www.quraanshareef.org

হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। ৪ঃ ১

এখানে কে বলছেন হে মানব সমাজ? আল্লাহ নাকি মোহাম্মদ? আল্লাহ বলরে তো সূরাটা হতো এরকমঃ

হে মানব সমাজ, আমি তোমাদের পালন কর্তা, আমাকে ভয় কর। আমি তোমাকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছি ও তার দেহ থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছি।

আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন, একজন পুরুষের অংশ দুইজন নারীর সমান। ৪ঃ ১১

এখানে কে বলছেন আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পক্যে আদেশ করেন? আল্লাহ নাকি মোহাম্মদ? আল্লাহ বললে তো তা হতো নিম্ন রূপঃ

আমি তোমাদের সম্পর্কে আদেশ করছি, একজন পুরুষের অংশ দুই জন নারীর অংশের সমান হবে।

যে কেউ আল্লাহ ও রসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন । ৪ঃ ১৪

কার কথা এটা ? আল্লাহর কথা হলে হতো নিম্নরূপঃ

যে কেউ আমার ও আমার রসুলের অবাধ্যতা করে ও সীমা অতিক্রম করে আমি তাকে আগুনে প্রবেশ করাব।
এবার দেখুন নিচের আয়াত গুলো—

যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্র“টি বিচ্যুতি গুলোকে ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। ৪ঃ ৩১

এখানে আমি টা কে ? মোহাম্মদ নাকি আল্লাহ ? কোরানের বক্তা আল্লাহ হলে তা আমি টা হবে আল্লাহ।

অথচ এর পরের সূরাটাতেই লক্ষ্য করুন–
আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। ৪ঃ ৩২

দেখুন কি বিরাট তফাৎ ! এটা আল্লাহর বক্তব্য মনে হয় ? আল্লাহর বক্তব্য হলে তো হতো এরকম-

আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আমি তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছি। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আমার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আমি সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত

আবার এর পরের সূরাতেই দেখুন—

পিতা মাতা ও নিকটাত্মীয় গন যা ত্যাগ করে যান সে সবের জন্যই আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারন করে দিয়েছি। ৪ঃ ৩৩

এখানে আমি টা কে ? কোরান আল্লাহর বক্তব্য হলে আমিটা হলো আল্লাহ।

আরও কিছু উদাহরন দিলাম নিম্নেঃ

বলে দিন, যদি আখেরাতের বাসস্থান একমাত্র তোমাদের জন্যই হয়ে থাকে অন্যদের বাদ দিয়ে তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। ২ঃ ৯৪

আপনি বলে দিন , যে কেউ জিব্রাইলের শত্র“ হয় যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে আপনার কালাম আপনার অন্তরে নাজিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্থ কালামের এবং মুমিনের জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা। ২ঃ ৯৭

লক্ষ্য করুন, -আপনি বলে দিন- বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ন। কে কাকে বলছেন আপনি বলে দিন? আমরা ধরে নিলাম আল্লাহ মোহাম্মদকে বলছেন তিনি যেন কাফির মুনাফেককে বলে দেন। এখন আমরা যদি ধরে নেই কোরানের প্রতিটি বাক্যের আগেই -আপনি বলে দিন- কথাগুলো থাকবে এবং তাই ই হওয়ার কথা কারন কোরান তো আল্লাহর বানী যা তিনি মোহাম্মদকে বলছেন। এরকম হলে প্রতিটি বাক্যের ভিতর আল্লাহ ও মোহাম্মদ কোন পুরুষে(person) ব্যবহৃত হবে সেটাই আসল। শুরুতে যে পুরুষ ব্যবহৃত হবে , শেষ পর্যন্ত সেই পুরুষই ব্যবহৃত হবে তাহলে তা হবে ব্যকরনগত ভাবে শুদ্ধ।

নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুনঃ

নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্য ধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোজখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না। ২ঃ ১১৯

যদি আয়াতটির আগে -আপনি বলে দিন- শব্দ যোগ করি তাহলে আয়াতটি হবে নিম্নরূপঃ

আপনি বলে দিন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্য ধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোজখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না।

এখানে আল্লাহ নিজেকে -আমি- এ সর্বনাম অর্থাৎ 1st person এ এবং মোহাম্মদ কে –আপনি- অর্থাৎ 2nd person এ বর্নিত হচ্ছে। তাহলে আমরা ধরে নেব কোরানের সমস্ত জায়গাতেই আল্লাহ নিজে 1st person এ বর্নিত হবে আর মোহাম্মদ 2nd person এ বর্নিত হবে। তাহলেই হবে সঠিক ব্যকরন গত। কিন্তু উপরের ২ঃ ৯৭ আয়াতটি দেখেন সেখানে আল্লাহ ব্যবহৃত হয়েছে 3rd Person এ। আরও কিছু উদারহরন দেয়া যাক-

আমি যাদেরকে গ্রন্থ দান করেছি তারা তা যথাযথ ভাবে পাঠ করে। ২ঃ ১২১
হে বনী ইসরাইল আমার কথা স্মরন কর যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর ওপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি।২ঃ ১২২
আল্লাহ এখানে নিজেকে 1st person এ বর্ননা করছেন।

অথচ এর পরেই দেখুন-

যখন ইব্রাহীমকে তার পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূরন করলেন, তখন পালনকর্তা বললেন আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও। তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌছবে না ।২ ঃ ১২৪

এখানে বক্তা আল্লাহ ও শ্রোতা ইব্রাহীম। কিন্তু পুরো ঘটনাটি আল্লাহ মোহাম্মদকে বলছেন। যাহোক, তার পালনকর্তা টি এখানে কে ? নিশ্চয়ই আল্লাহ , তাই না ? এখানে আল্লাহ নিজে ৩ৎফ চবৎংড়হ এ বর্নিত হচ্ছেন। কেন ? এটা কি আল্লাহর বানী মনে হয় ? বক্তা যদি আল্লাহ হন তাহলে তিনি কি বলবেন যে তিনি তার পালনকর্তা? কারন পালনকর্তা তো তিনি নিজেই। তাহলে আয়াতটা কেমন হবে ? তা হবে নিম্নরূপঃ

আল্লাহ মোহাম্মদকে বলছেন, বলিয়া দিন (উহ্য),যখন ইব্রাহীমকে আমি কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলাম, অতঃপর তিনি তা পূরন করলেন, তখন আমি বললাম আমি,তোমাকে মানব জাতির নেতা করব। আমি বললাম , তোমার বংশধর থেকেও। আমি বললাম ,আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌছবে না ।

যারা কোরানকে ঐশি কিতাব বলে বিশ্বাস করেন, তারা যখন কোরান পড়েন তখন মনে রাখেন না যে , কোরানের বিষয় বস্তু স্বয়ং আল্লাহর নিজের মুখের বানী আর জিব্রাইল বানীর বাহক মাত্র। তারা শুধু এটুকুই মনে রাখেন যে কোরান আল্লাহ প্রেরিত, কিন্তু কিভাবে প্রেরিত, আর প্রেরিত হলে তা কোন ব্যকরন রীতি অনুসরন করে বর্নিত হবে এ বিষয়টি মনে রাখেন না। এ বিষয়টি মনে রাখলেই সর্বনাম সম্পর্কিত ব্যকরনের এ ত্র“টিটি সব সময় নজরে পড়বে। কেউ বলতে পারেন , কোরানের বক্তব্যটাই আসল। ওটা একটা ধান্ধাবাজি উত্তর। কারন যেহেতু আল্লাহ কোন ভূল করতে পারেন না , তাই তার কোরান বর্ননাতেও কোন ত্র“টি থাকতে পারে না । শুধু তাই নয়, তা এমন ভাবে বর্নিত হবে যা বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে ও তারা সেই ভাষা ও ব্যকরনরীতি অনুসরন করবে। কিন্তু কোরানের বর্ননা রীতি ব্যকরনের কোন শুদ্ধ রীতিতেই পড়ে না , পড়লে মনে হয় আনাড়ী কিছু লোক জন যাদের ব্যকরন সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিল না তাদের দ্বারাই এটা লেখা। বিষয়টি অধিকাংশ মুসলমান জানে না কারন তারা কোরান আসলে পড়ে না। যদি পড়ত তাহলে বুঝত।

পর পর সূরাগুলোতেই এ ধরনের সর্বনামগত ভুল। গোটা কোরান ব্যাপি পাতায় পাতায় এ ভুলটা শত শত । আশা করি এতোক্ষনে পাঠক/পাঠিকা বৃন্দ বুঝতে পেরেছেন, কোরান আসলে কার লেখা। মোহাম্মদের ভাষাজ্ঞান ভাল না থাকায় মাঝে মাঝে ভুলে গেছেন যে সরাসরি আল্লাহর বানী প্রকাশ করতে হলে সেখানে আল্লাহর স্থানে আমি বা আমার এ সর্বনাম পদটি বসবে। আবার যখন খেয়াল হয়েছে যে এটা তো আল্লাহর বানী তখন আবার আল্লাহকে তিনি আমি এ সর্বনাম পদে প্রকাশ করেছেন। তাহলে পরবর্তীতে কেন সংশোধন করা হয়নি? আসলে একবার বলে ফেলার পর তো তা পাল্টালে মানুষ সন্দেহ করত যে তা সত্যি সত্যি আল্লাহর বানী কিনা । এর পর মোহাম্মদ মারা যাবার অনেক পরে যখন কোরান লিখিত আকারে সংরক্ষন করা হয় তখন আর এটাকে সংশোধন করা যায় নি তার কারন তখন শত শত সাহাবী এটা মুখস্ত করে ফেলেছিল, সংশোধন করে লিখলে তাতে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হতো। তাই সংশোধন আর করা হয় নি । তাছাড়া এ ধরনের ব্যাকরনগত ভুল ধরিয়ে কোরানকে চ্যালেঞ্জ করার মত সাহসী সেখানে কেউ না থাকাতে কোরান সংরক্ষক গন এটাকে তেমন আমলে নেয়নি। পাঠক/পাঠিকা গন, আমি আপনাদেরকে একটু ইঙ্গিত দিলাম ব্যাকরনগত ভুল সম্পর্কে এখন আপনারা দয়া করে নিজেরা একটু কোরানটা খুলে চোখ বুলিয়ে যান অন লাইন থেকেই , দেখবেন কি সব ভানুমতির খেলা গোটা কোরানের মধ্যে আছে।

বাক্য রচনার ব্যাকরনগত এ ত্র“টি দৃষ্টে সহজেই বোঝা যায়, কোরান বর্ননা করতে গিয়ে মোহাম্মদ উল্টো পাল্টা করে ফেলেছেন কারন বাইবেলের বা তোরার ঘটনা শুনলেই মনে রাখা যায় কিন্তু তাই বলে ব্যাকরন ঠিক রেখে শুদ্ধ ভাবে বাক্য রচনা করা যায় না। এটা প্রাকটিসের ব্যাপার। অনেকটা গাড়ী চালানোর দক্ষতা অর্জনের মত। আর যাই হোক মোহাম্মদ তো আর লেখা পড়া তেমন শিখেন নাই । তাই বাক্য বিন্যাসটা ঠিক মতো করতে পারেন নি।

পরিশেষে আমি হিন্দু দের ধর্মীয় গ্রন্থ গীতার উল্লেখ করতে পারি যা হলো স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার শিষ্য অর্জুনের কথোপথন। সেখানে দেখা যাবে এ ধরনের কোন ব্যাকরনগত ভুল নেই। সেখানে শ্রীকৃষ্ণ সর্বদাই নিজেকে- আমি, আমার এভাবেই বর্ননা করেছেন অর্থাৎ ১ম পুরুষেই বর্ননা করেছেন।
যেমন শ্রীকৃষ্ণ বলছেন- আমি মহাকাল, আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি, আমি পালন কর্তা, আমি বিনাশ কর্তা এই সব। সব কিছুই আমি । তুমি বা সে নেই। এর কারন হিসাবে মনে হয়- গীতার রচয়িতারা উচ্চ মার্গের শিক্ষিত লোক ছিল তাই ব্যাকরনগত ভুলটা তারা করে নি, পক্ষান্তরে মরুভুমির আরবদেশে ১৪০০ বছর আগে হাতে গোনা মাত্র কয়জন শিক্ষিত লোক ছিল তাও তাদের দৌড় বেশী দুর ছিল না , অল্প জ্ঞানের ওপর পুজি করে কত আর শুদ্ধ করে লেখা যায়।