জেরি কোয়েন –এর ‘বিবর্তন কেন বাস্তব’ অবলম্বনে
(Coyne, J. Why Evolution is True, Viking, 2009)
প্রথম পর্বের পর
একশত পঞ্চাশ বছর আগে চার্লস ডারউইন লিখেছিলেন তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’। সাধারণ পূর্বসুরি থেকে জীবজগতের উৎপত্তি আর প্রজাতি-গঠনের ধারণা সেই গ্রন্থের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর তত্ত্ব যে সঠিক তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এখন আধুনিক জেনেটিক্স বা বংশগতিবিদ্যা থেকে। সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে, ফসিলের সাহায্য না নিয়ে, শুধু জেনেটিক্সের মাধ্যমেই বিবর্তন তত্ত্ব এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণাকে সুদৃঢ় বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপরে দাঁড় করানো সম্ভব।
বংশগতিবিদ্যা আসলেই আধুনিক। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে (১৮৬৬) গ্রেগ মেন্ডেলের বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্যের ওপরে গবেষণা দিয়ে এর শুরু। কিন্তু তারপর কেটে গেছে আরো প্রায় তিন দশক, মেন্ডেলের গবেষণার গুরুত্ব বুঝতেই। ১৯০০ সাল থেকে বিজ্ঞানীদের টনক নড়তে শুরু করে। তারপর একে একে রোগের সাথে জিনের সম্পর্ক, বংশানুক্রমের ক্রোমোজম থিওরি, এবং আরো অনেক তত্ত্ব-তথ্য আবিষ্কৃত হতে থাকে। ‘জেনেটিক্স’ শব্দটা প্রথম চালু করেন উইলিয়ম বেইটসন, ১৯০৫-এ (১)।
আরো প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে, ১৯৫৩ সালে ওয়াটসন আর ক্রিকের গবেষণায় ডাবল হেলিক্স আকৃতির ডিএনএ কাঠামো আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানের এই শাখার আরেক যুগান্তকারী অধ্যায়ের শুরু। আর মাত্র তেত্রিশ বছর আগে (১৯৭৭) ফ্রেড স্যাঙ্গার ডিএনএ ধারাক্রম প্রযুক্তি (DNA sequencing technology) আবিষ্কার করেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন সরাসরি বিভিন্ন প্রজাতির জিন-এর গঠন দেখা সম্ভব। ঈস্ট (yeast) নামক ছত্রাক থেকে শুরু করে মানব প্রজাতির জিনোম সংস্লেষণ করা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে (২) ।
ঊনিশশো নব্বই-এ শুরু হয়ে মানব জিনোম প্রকল্পের কাজ শেষ হলো, এই তো সেদিন, ২০০৩ সালে। এই শতককে তাই এখন ‘জিনোমোত্তর যুগ’ (post-genomic era) নামে অভিহিত করা হচ্ছে (৩)।
কথা হচ্ছে, বিবর্তনের সাথে এর সম্পর্ক কি? কি নয়? বিবর্তনের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়ে গেছে জেনেটিক কোডেই। লক্ষ-কোটি বছরের ফসিল ঘেটে যা জানা গেছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি তথ্য আর সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে ক্রোমোজোম-জিন-ডিএনএ থেকে (ছবি এক) (৪)।
ছবি এক। ক্রোমোজোম-জিন-ডিএনএ
কিভাবে? ডিএনএ-হচ্ছে ব্যাপক তথ্যের আধার – এতে রয়েছে প্রোটিন-বিন্যাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ সূত্র-নির্দেশ, যাকে বলা হয় জেনেটিক কোড। সব প্রাণীরই জেনেটিক কোড মূলতঃ সেই এক নিউক্লিক এসিড দিয়ে গড়া। তাই বলা যায়, ডিএনএ-র অস্তিত্বই তো বিবর্তনের একটা বিরাট সাক্ষ্য। এতেই প্রমাণ হয় যে সব প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে একটা সাধারণ পূর্বসুরি থেকে। দুটো প্রজাতির ডিএনএ তুলনা করে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করা যায়, জানা যায় তাদের সাধারণ পূর্বসুরির কথা। অনেকটা পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ধারণের কাজে যেমন আজকাল আকছার ডিএনএ ব্যাবহার করা হচ্ছে। পার্থক্য, বিবর্তন বিজ্ঞানীরা এক প্রজন্মের সাথে আরেক প্রজন্মের সম্পর্ক শুধু নয়, পাশাপাশি এক প্রজাতির সাথে আরেক প্রজাতির সম্পর্কও নির্ধারণের কাজে লাগাচ্ছেন ডিএনএ প্রযুক্তিকে।
এভাবেই তাঁরা জানতে পেরেছেন, আমাদের মানব প্রজাতির ডিএনএ গরিলার ডিএনএর খুব কাছাকাছি। শিম্পাঞ্জীর সাথে আমাদের ডিএনএ-র মিল রয়েছে শতকরা ৯৯.৪ ভাগ। মানব প্রজাতি ও অন্যান্য বানরজাতীয় প্রজাতির ক্রোমোজমের তুলনামূলক চিত্র দেখা যাবে এখানে। বিজ্ঞানীদেরতো বটেই, সাধারণ মানুষের চোখেও কিন্তু মিলগুলো ধরা পড়ে (ছবি দুই) (৫)।
ছবি দুই। বাঁদিক থেকে যথাক্রমে মানুষ, শিম্পঞ্জী, গরিলা আর ওরাংওটাং-এর পাঁচ আর ছয় নম্বর ক্রোমোজমের প্রতীকচিত্র।
এই ধারাক্রমগুলো পর্যবেক্ষন করেই বিজ্ঞানীরা এখন বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বিবর্তনীয় সম্পর্ক নির্ধারণ করতে পারছেন। দুটো প্রজাতির ডিএনএ ধারাক্রম একই রকমের বা কাছাকাছি হলে প্রজাতি দুটোও কাছাকাছি হবে এটাইতো স্বাভাবিক। তাদের সাধারণ পুর্বসুরির অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যাবে অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি অতীতে; এবং তাই পাওয়া যাচ্ছে।
পাখী আর সরীসৃপের কথাই ধরা যাক। তাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য এক রকমের (যেমন উভয়েই ডিম পাড়ে), আর তাদের ডিএনএ ধারাক্রমের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে বেশ মিল, তাহলে তাদের সাধারণ পূর্বসুরি কোন প্রজাতির অস্তিত্ব ফসিলে থাকাটা মোটেও বিচিত্র নয়। ঠিক তাই, তাদের সাধারণ পূর্বসুরি প্রজাতির অস্তিত্বের নিদর্শন ফসিলে পাওয়া গেছে (ছবি তিন) (৬)।
ছবি তিন। পাখীর পূর্বসুরি
ফসিলের সাক্ষ্য আর ডিএনএ বিশ্লেষণ, এ দু’য়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে আশ্চর্য রকমের মিল। ভুল বললাম, আসলে আশ্চর্যের কিছু নেই, এরকমই হওয়ার কথা। সাধারণ পূর্বসুরি আর প্রজাতি-গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগের পর্বে যা বলেছি, তার সাথেও ডিএনএ বিশ্লেষণের ফলাফল পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। এদের মধ্যে কোন দ্বন্দতো নেইই, বরং দেখা যাচ্ছে একে অপরের সম্পুরক; সামঞ্জস্য প্রশ্নাতীত। ডারউইনের ধারণা অনুযায়ী গাছের শাখার মতোই প্রজাতিরা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। আধুনিক বংশগতিবিদ্যাও সেই একই কথা বলছে। বিবর্তন যে একটা বাস্তব প্রক্রিয়া এ নিয়ে সন্দেহের আর কোন অবকাশ রইলো না (৭)।
এবারে আসা যাক বিবর্তনের পঞ্চম বিষয়, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রসঙ্গে। এখানেই ডারউইনের মুল কৃতিত্ব। প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়াই মুলতঃ বিবর্তনের জন্য দায়ী। প্রকৃতিবিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস প্রায় একই সময়ে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। তবুও ডারউইনকে এই যুগান্তকারী তত্ত্বের জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এমন কি, ওয়ালেসও এ নিয়ে লেখা তাঁর বইয়ের নাম দিয়েছিলেন, ‘ডারউইনিজম’ (৮)।
ডারউইন তাঁর ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’-এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। দিয়েছেন বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, দেখিয়েছেন এর যৌক্তিকতা। বিশ বছর ধরে চিন্তাভাবনা আর গবেষণা করার পরে তিনি বইটা লেখার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণাটা চট করে কারো মাথায় আসে না। এমন কি ডারউইনের ব্যাখ্যার পরেও অনেকেই একে সহজে মেনে নিতে পারেন নি। ঠিক যেমন সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মান্ডের ধারণা এক সময়ে মানুষের মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল।
এই তত্ত্ব সাধারণ মানুষের শুধু নয়, বিজ্ঞানীদেরও চিন্তাচেতনায় বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটাতে পারে তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই বলেছিলেন, “সূর্য স্থির এবং পৃথিবী তার চারপাশে ঘুরছে, এই কথাটা প্রথমে যখন শোনা যায়, মানুষ তার সাধারণ কান্ডজ্ঞান অনুযায়ী তা মানতে চাইলো না; কিন্তু যে কোন দার্শনিকই জানেন, সাধারণ্যে প্রচলিত আপ্তবাক্য ‘মানুষের কণ্ঠস্বরই ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর’ বিজ্ঞানে চলে না” (৯)।
আসলেই, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে এত বিচিত্র সব প্রজাতির, আর বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে তার চেয়েও বিচিত্র সব বৈশিষ্ট্যের, উদ্ভব হয়েছে যে, দেখলে মনে হয়, কেউ ইচ্ছে করে তাদেরকে এভাবে বানিয়েছে। জিরাফের গলা, হাতীর শূঁড়, পাখির পাখা – এসবের উদ্ভব কেমন করে হলো? পাতার মতো দেখতে পোকা বা পাথরের সাথে মিশে থাকা পাথরের মতোই দেখতে প্রাণীর উৎপত্তি হলো কিভাবে? যাদুকরি সব ছদ্মবেশ নিতে (camouflage) আর অবিশ্বাস্য রকমের (প্রতারণামূলক) অনুকরণ (mimicry) করতে শিখলো কি করে এই সব পোকা-মাকড়গুলো (ছবি চার) (১০)? কারো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা নাই এসবের পেছনে? মেনে নিতে কষ্ট হয় বৈ কি!
(ক)
(খ)
(গ)
ছবি চার। (ক) ধানের শীষের মতো দেখতে পোকা, (খ) মাটির সাথে মিশে যাওয়া ব্যাঙ, (গ) প্রজাপতির পাখায় নকল চোখ।
তবে একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়াটাকে আর অসম্ভব মনে হবে না। প্রকৃতিকে জীবজগতের জন্য বানানো হয় নি, সৃষ্টিবাদীদের কল্পনা অনু্যায়ী ‘সৃষ্টির সেরা’ মানুষের জন্যতো নয়ই। জীবজগতই প্রকৃতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়েছে, ধীরে ধীরে।
ব্যাখ্যাটা কঠিন কিছু নয়। জনপুঞ্জের (population) যে সদস্যরা (individuals) অন্যদের তুলনায় প্রকৃতির সাথে বেশি খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারে তারাই বেশি বেশি বংশধর রেখে যায়। তারা এটা পারে পরিবেশের সাথে মানানসই বিশেষ প্রকারণ (variation) ঘটে থাকলে। প্রাকৃতিক নির্বাচন বেছে নেয় সেই প্রকারণগুলোকে যেগুলো পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। এই খাপ খাওয়া ব্যাপারটার একটা পোষাকী নাম আছে, অভিযোজন (ইংরেজিতে adaptation)। আর তার ফলেই ঘটে বিবর্তন। দেখা যাচ্ছে প্রকারণ না ঘটলে বেশি খাপ খাইয়ে চলার মতো সুবিধা অর্জন সম্ভব হয় না। (আগের পর্বে বলা হয়েছে, প্রকারণ ঘটে মিউটেশনের ফলে।)
পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে পূর্ববর্তী প্রজন্মের যে বৈশিষ্ট্যগুলো টিকে থাকতে এবং বংশবিস্তার করতে বেশি কাজে লাগে সেগুলোকেই বেশি বেশি দেখা যায়। যে ‘ভালো’ জিন এই বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী সেগুলো আরো বেশি করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হতে থাকে। আর যে বৈশিষ্ট্য টিকে থাকতে সাহায্য করছে না, সেগুলোর জন্য দায়ী ‘অত ভালো নয়’ জিনগুলো আর পরবর্তী প্রজন্মে বিস্তার লাভ করতে পারছে না।
অপেক্ষাকৃত ভালো জিনের কারণে পাওয়া যাচ্ছে অভিযোজনের অতিরিক্ত সুবিধা, আর তা থেকে আসছে বংশবিস্তারের অতিরিক্ত সক্ষমতা। বংশবিস্তারের অতিরিক্ত সক্ষমতাকে differential reproductive success বলা হয়েছে – যাকে বাংলায় ‘ভিন্নতাজনিত প্রজনন সাফল্য’ বলা যেতে পারে। এই সাফল্য ছাড়া বিবর্তন সম্ভব নয়। আর এই প্রক্রিয়ার নামই হলো প্রাকৃতিক নির্বাচন বা natural selection।
এই কারণেই লম্বা গলাওয়ালা জিরাফের সংখ্যা বাড়তে থাকে খাটো গলাওয়ালা জিরাফের সংখ্যার তুলনায়। জিরাফের গলা কেউ টেনে লম্বা করে দেয়নি। বরং প্রকারণের কারণে যে জিরাফগুলোর ‘জিন’-এর মধ্যে গলা লম্বা হওয়ার মতো ‘সুবিধাজনক’ বৈশিষ্ট্য ছিল সেগুলোই টিকে থাকতে পেরেছে বেশি এবং খাটো গলার জিরাফের চাইতে বংশবিস্তার করতে পেরেছেও বেশি। কিছু কাল পরে দেখা গেল প্রকৃতির এহেন পক্ষপাতমুলক নির্বাচনের ফলে শুধু লম্বা গলাওয়ালা জিরাফেরাই টিকে থাকলো।
একই প্রক্রিয়ায় উত্তর আমেরিকায় এককালে বসবাসকারী বর্তমানে বিলুপ্ত হাতীর মতো দেখতে প্রানী উলি ম্যামথদের (wooly mammoth)গায়ে লোম গজিয়েছিল। প্রচন্ড শীতে যাদের শরীর একটু রোমশ ছিল তারা বেঁচেছিল একটু বেশি, বংশবিস্তারও করেছিল একটু বেশি। ধীরে ধীরে রোমশ ম্যমথদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এবারে চিন্তা করুন, এই প্রক্রিয়াটা হাজার হাজার প্রজন্ম ধরে চলতে থাকলে কি হতে পারে। ঠিকই ধরেছেন, লোমহীন ম্যামথ আর দেখা যাবে না, পরিবর্তে দেখা যাবে ভারী ফার কোটের মতো কোট পরা অত্যন্ত রোমশ ম্যমথদের। এদের নামও তাই উলি ম্যামথ।
সংক্ষেপে এই হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের প্রক্রিয়া।
কোন ডিজাইন বা নক্সা নয়, কারো সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফলশ্রুতি নয় – প্রাকৃতিক নির্বাচন একটা নিছক বস্তুবাদী প্রক্রিয়া। কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তির নির্দেশ ছাড়াই প্রকৃতি তার কাজ করে যাচ্ছে, জীবজগতে প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে চলছে রূপান্তর।
বিবর্তিত হওয়া মানেই কিন্তু উন্নততর হওয়া নয়। অনেক ‘উন্নীত’ জনপুঞ্জ নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে অবলুপ্ত হয়ে গেছে। টিকে থাকার যোগ্যতা পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত, সুচিন্তিত কিংবা সুসমন্বিত অগ্রগতির কোন নিদর্শন এতে নেই। তাই বিবর্তিত হওয়া মানে যোগ্যতর হওয়া, যোগ্যতম নয়।
ঠিক এ কারণেই কোন প্রানীই নিখুঁত ডিজাইনের ফল নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন দক্ষ কারিগর নয়। তাই একে বড়জোর ক্রমোন্নয়নের প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। যা আছে তার ওপরেই প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে, যা নেই তা বানাতে পারে না। সুবিধাজনক মিউটেশন ঘটলে অভিযোজন কাজ করতে পারে, নইলে নয়।
সামুদ্রিক কচ্ছপের কথাই ধরুন না। এদের পাখনা সাঁতার কাটতে যতটা সুবিধাজনক, বালি খোঁড়ার কাজে ততটা নয়। অথচ, ডিম পাড়ার জন্য তাদেরকে এই কাজটাও করতে হয়। কিন্তু কাজটা খুব একটা ভালোভাবে করা যায় না, উপযুক্ত পাখনার অভাবে।
এমন আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে প্রকৃতিতে, জীবজগতে। বস্তুতঃ ঠিকমতো অভিযোজন ঘটে নি বলে অনেক প্রজাতিতো বিলুপ্তই হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রজাতির পরিমাণ আনুপাতিক হারে প্রায় শতকরা নিরানব্বই ভাগ। বিধাতা কেন এত প্রজাতি বানিয়ে আবার বেশির ভাগই গায়েব করে দিলেন – সৃষ্টিবাদীদের জিগ্যেস করলে এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। পেলেও হয়তো তা হবে এই ধরনের, “বিধাতার লীলাখেলা বোঝার সাধ্য মানুষের নাই”।
আবার অনেকেই প্রাকৃতিক নির্বাচনকে র্যন্ডম প্রক্রিয়া মনে করেন। এটিও ভুল। মিউটেশনের মাধ্যমে কোন জনপুঞ্জের মধ্যে যে জেনেটিক প্রকারণ ঘটে তা র্যান্ডম প্রক্রিয়ার ফল হতে পারে, কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন এই প্রকারণের ওপরে কাজ করে নিয়ম অনুযায়ী। লম্বা গলাওয়ালা জিরাফেরা উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার যে সুবিধাটুকু পেয়ে বেশি বেশি বংশবিস্তার করতে পারলো তা কোনক্রমেই র্যান্ডম প্রক্রিয়া নয়।
প্রকারণ, ভিন্নতাজনিত প্রজনন আর বংশবিস্তার – এই হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের বস্তুবাদী প্রক্রিয়া। এর পেছেন কোন উদ্দেশ্য নেই, উন্নতির কোন আকাঙ্ক্ষা নেই, নেই ভারসাম্য রক্ষার কোন পরিকল্পনা। প্রাকৃতিক নির্বাচন কারো দরকার হচ্ছে তাই, বা কারো ইচ্ছায় ঘটে না। কোন জনপুঞ্জের বা জনপুঞ্জের কোন সদস্যের চাহিদায় বা চেষ্টায় বিবর্তন ঘটে না। প্রাকৃতিক নির্বাচন যা দরকার তা সরবরাহ করতে পারে না। প্রাকৃতিক নির্বাচন জনপুঞ্জের মধ্যে থাকা প্রকারণগুলো থেকেই বেছে নেয়, নিজে প্রকারণ তৈরি করতে পারে না।
এবারে দেখা যাক, প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়া অন্য আর কোন উপায়ে বিবর্তন হতে পারে কিনা। এটাই এই আলোচনার ষষ্ঠ এবং শেষ বিষয়।
জনপুঞ্জে পরিবর্তন ঘটার আর একটা প্রক্রিয়াকে নাম দেয়া হয়েছে ‘জেনেটিক ড্রিফট’ (genetic drift)। ধরা যাক, দৈবক্রমে দূর্ঘটনা বশতঃ একটা ছোট জনপুঞ্জের সব প্রাণী মরে গেল। একটাও বেঁচে রইলো না। ফলে এরা আর বংশবিস্তারও করতে পারলো না। অন্যদিকে এক ই কারণে আরেকটা ভিন্ন জনপুঞ্জে (হয়তো আগের জনপুঞ্জটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ফলে) বংশবিস্তারের মাত্রা বেড়ে গেল। এই উদাহরণে কিন্তু সুবিধাজনক অভিযোজনের কোন ভূমিকা নেই। এখানে প্রাকৃতিক নির্বাচন বা অভিযোজনের ফলে বিবর্তন হচ্ছে না, তবুও বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এই ধরনের ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক নির্বাচন ছাড়াও কোন জনপুঞ্জে বিশেষ ধরনের জিন-এর সংখ্যায় বাড়তি-কমতি হতে পারে। একে বলা হয় এলিল ফ্রিকোয়েন্সির (Allele frequency) বাড়া-কমা। এলিল ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে জনপুঞ্জে কোন একটা বিশেষ ধরনের জিন-এর সংখ্যানুপাত। যেমন, ‘এবি’ (AB)রক্তের টাইপে ‘এ’ একটা এলিল, ‘বি’ আরেকটা। যদি আপনার রক্তের টাইপ ‘এবি’ হয়, আপনার সন্তান আপনার কাছ থেকে হয় ‘এ’ এলিল নয়তো ‘বি’ এলিল পাবে। যে কোন একটা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। আপনার সন্তানসংখ্যা যদি হয় মাত্র একজন, যে কোন একটা এলিল হারবার সম্ভাবনা শতকরা শতভাগ – অবধারিতভাবে আপনি একটা এলিল হারাচ্ছেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একটা বিশেষ ধরনের জিন কোন জনপুঞ্জে বেড়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে, সন্তানসংখ্যায় তারতম্যের জন্য। পরিণতিতে, জনপুঞ্জের জিন প্রবাহ অভিযোজন ছাড়া অন্য কোন কারণেও প্রভাবান্বিত হতে পারে। এই তারতম্য ঘটার প্রক্রিয়া র্যান্ডম। পরিসংখ্যানের ভাষায় একে বলে ‘স্যাম্পলিং এরর’ (sampling error)। একটা ছোট স্যাম্পল বা নমুনা (নমুনা ছোট হওয়ারই কথা) পুরো জনপুঞ্জ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে। ফলে, এই নমুনায় একটা বিশেষ এলিলের প্রাধান্য থাকার সম্ভাবনাও বেশি।
আমেরিকান বা রেড ইন্ডিয়ানদের রক্তের গ্রুপে ‘বি’ টাইপ দেখা যায় না বললেই চলে। এটি জেনেটিক ড্রিফটের একটা উদাহরণ। ধারণা করা হয়, প্রায় দশ হাজার বছর আগে তাদের পূর্বপুরুষদের ছোট্ট একটা জনগোষ্ঠী এশিয়া থেকে আমেরিকায় পাড়ি দেয় (১১) – এদের মধ্যে ‘বি’ এলিলের প্রাধান্য ছিল না। ঠিক একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ওলন্দাজ বংশোদ্ভুত ‘আফ্রিকানার’ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘হান্টিংটন’ রোগের প্রকোপ দেখা যায় খুব বেশি। কারণ, তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে হান্টিংটন রোগের বাহক জিনটার প্রাধান্য ছিল (১২)।
সাধারণতঃ ছোট জনপুঞ্জে এই বাড়া-কমার জন্য বিবর্তনের প্রক্রিয়া প্রভাবান্বিত হয়। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জনপুঞ্জে জেনেটিক ড্রিফট-এর প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম (১৩)।
খেয়াল করা দরকার, ‘জেনেটিক’ প্রকারণ ছাড়া প্রাকৃতিক নির্বাচন বা জেনেটিক ড্রিফট কাজ করতে পারতো না। জনপুঞ্জে কিছু সদস্য শুরু থেকে ভিন্ন রকমের না হলে এই দুটি প্রক্রিয়া কাজ করতে পারে না।
(চলছে.. .)
তথ্যসূত্র:
(১) http://www.bio.davidson.edu/people/kahales/301Genetics/timeline.html
(২) http://www.sanger.ac.uk/about/history/hgp/
(৩) http://rarediseases.about.com/od/geneticdisorders/a/genesbasics.htm
(৪) ছবি এক। http://www.sgvworks.com/tom/TOM/pic/dna2.gif
(৫) ছবি দুই। Diagrams of late prophase chromosomes (1000-band stage) of hunan, chimpanzee, gorilla, and orangutan (left to right for each number). Courtesy of Jorge Yunis. From ‘The Origin of Man: A Chromosomical Pictorial Legacy” by J.J. Yunis and O. Prakash, in Science, 19 March 1982, vol. 215: 1525-1530.
(৬) ছবি তিন। http://en.wikipedia.org/wiki/Origin_of_birds
(৭) http://news.bbc.co.uk/2/hi/science/nature/3042781.stm
(৮) http://www.gutenberg.org/etext/14558
(৯) http://www.positiveatheism.org/hist/quotes/darwin.htm
“When it was first said that the sun stood still and world turned round, the common sense of mankind declared the doctrine false; but the old saying of Vox populi, vox Dei [the voice of the people is the voice of God], as every philosopher knows, cannot be trusted in science.” (Charles Darwin, reminding his readers that they should always treat “obvious” truths with skepticism, in the context of the apparent absurdity of evolving a complex eye through a long series of gradual steps, in the famous passage added to later editions of the Origin of Species (1872, p. 134), quoted from Stephen Jay Gould, The Structure of Evolutionary Theory (2002), chapter 1, “Defining and Revising the Structure of Evolutionary Theory,” p. 1 (the bracketed translation is Gould’s)
(১০) ছবি চার।
(ক) http://animals.howstuffworks.com/animal-facts/animal-camouflage-pictures1.htm
(খ)…pictures11.htm
(গ)…pictures8.htm
(১১) http://www.talkorigins.org/faqs/genetic-drift.html
(১২) http://evolution.berkeley.edu/evosite/evo101/IIID3Bottlenecks.shtml
(১৩) Zimmer, Carl (2002). Evolution : The Triumph of an Idea. New York, NY: Perennial. pp. 364. ISBN 0-06-095850-2.
আপ্নাদের সব ক্থা ভাল লাগে কিন্তু বিবরতন সাম্পরকে সব প্রশ্নের উত্তর পেলেও একনো দুইটা প্রশ্নের উত্তর একনো পাইনি
১. প্রথম সেক্স কি ভাবে আস্লো……………………????
২. ফসিল গুলির ডিফিরাঞ্চে আতো বেসি কেন……………????
আসা করি উত্তার পাব।
আর আপ্নার লেখা টা এখানে পোস্ট করলাম মাইন্দ কইরেনা করলে বলেন ডিলিট করে দিব।
ধন্দ্যবাদ
মূল প্রাবন্ধিক ইরতিশাদ, আলোচকবৃন্দ পৃথিবী, অভিষেক খান, অভিজিত রায়, নিদ্রালু, আদিল মাহমুদ, ব্রাইট স্মাইল,
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি এখন খুবই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি। “মাটি থেকে আদম আর আদম থেকে হাওয়া” অথবা “যাও মর্তে, সেখানে দুঃখ দেবে, দুঃখ পাবে, সেই দুঃখে ছন্দ পতন অপরাধের ক্ষয়” – যেদিন থেকে এগুলোকে গাঁজাখুড়ি গল্প হিসেবে বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকে বিবর্তনবাদের ছাত্র হয়েছি। ছাত্র হিসেবে কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়িয়েছি প্রতিনিয়ত। উত্তর গুলো মূল প্রবন্ধেই ছিল। তাড়াতাড়ি পড়তে গিয়ে ঠিকমত ধরতে পারিনি। আলোচকবৃন্দ আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর যুগিয়েছেন। আমার তো মনে হয় আমি এখন আমার চেয়েও Novice দের ঠিক বুঝাতে পারব।
Survival of the Fittest এর মর্মার্থ আগে বুঝিনি – এবারে পারছি। শুরু থেকে কত হাজার-লক্ষ প্রজাতি Discontinued হয়ে গেছে বংশানুক্রম বৈশিষ্টটি না থাকার কারনে। যে সব প্রজাতি ধ্বংশ হয়ে এদের মধ্যে নিশ্চয় সমাকামী ছিল, কমবেশী মিশ্রকামী ছিল। সেই কারনেই অধ্যাবধি টিকে যাওয়া আমাদের সমকামী ভাব এখনও বেঁচে আছে। সেজন্যেই সমকামী ব্যাক্ষ্যা বিবর্তন দিতে পারে। আর সৃস্টিবাদীরা এখানে হোচট খায়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
নিজেই নিজের জবাব দিচ্ছি!!!
“প্রিভিও” বোতাম টিপতে গিয়ে, “মন্তব্য করুন” বোতাম টিপে ফেলেছি। কিছু ভুলভ্রান্তি রয়ে গেল। লেখাটিও অসম্পূর্ণ থেকে গেল। থাকুক।
মুক্তমনা মডারেশন –
আমার gmail account এ অন্যের মন্তব্য আসে কিন্তু মন্তব্যকারীদের পরিচয় (Identity) আসে না। মন্তব্যের সাথে পরিচয় এলে আমার তো মনে হয় ভালই হত।
সৈকত চৌধুরী, আদিল মাহমুদ, পৃথিবী, তানভী, সবাইকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।
ইরতিশাদ ভাইকে আবারো ধন্যবাদ এমন একটি অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয় আমাদের মত নবিসদের জন্য সহজ সরল ভাষায় লেখার জন্য।
এবারের বিষয় আরো আকর্ষনীয় মনে হচ্ছে। প্রায়ই শুনি যে এখনকার বিজ্ঞানীরা আর ফসিল নির্ভর নন, তারা ডিএনএ ক্রমবিন্যাস থেকেই বিবর্তনের ধারা প্রমান করতে পারেন। বিষয়টি ভালভাবে জানার ইচ্ছে ছিল। ইরতিশাদ ভাই কাজটি করে দিচ্ছেন। আশা করি পরের পর্বে আরো জানতে পারব।
পৃথিবীকে অনেক ধন্যবাদ নৃপেন্দ্র সরকারের প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যে। ওনার প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি।
আমাদের মুক্তমনার আরোও যাদের এই বিষয়ে জানাশোনা আছে তারা যদি একটু আলোকপাত করতেন তাহলে হয়ত আরো ভালভাবে বোঝা যেত।
বিবর্তনবাদীদের কাছে এই যুক্তিটি খুব বেশি প্রচলিত, কিন্তু এটি কীভাবে একটিমাত্র সাধারণ পূর্বসুরির অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ হতে পারে আমি বুঝি না। নিউক্লিয়িক এসিড ছাড়া প্রোটিন সিন্থেসিসের কি আর কোন বিকল্প পদ্ধতি আছে?
@অভিষেক খান, বিকল্প আছে কিনা জানা নেই তবে আমার জানামতে এখন পর্যন্ত্য কোন প্রাণী পাওয়া যায়নি যাদের ডিএনএ ওই এক নিউক্লিক এসিড দিয়েই গড়া। ব্যাপারটা রহস্যময় নয়কি?
@পৃথিবী, মানুষ আর শিম্পাঞ্জির ক্রোমোসোমের জেনেটিক মার্কারগুলো নিশ্চিতভাবে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ বহন করে, কিন্তু প্রোটিন সংশ্লেষণের বিকল্প কৌশল পাওয়া না গেলে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে, একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে জগতের সব জীবের উদ্ভব হয়েছে। যেমন, সায়ানোব্যাক্টেরিয়া আর মানুষের নিউক্লিক এসিডে এমন কোন আহামরি সাদৃশ্য নেই যার দ্বারা নির্দ্বিধায় বলা যায় মানুষ আর সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার একটি সাধারণ পূর্বসুরি ছিল। আমি বলছি না যে, সৃষ্টিকর্তাই সব জীব সৃষ্টি করেছেন, তবে সৃষ্টিবাদীরা যদি দাবি করে যে, প্রোটিন সিন্থেসিসের জন্য এই একটি কৌশল আছে বলেই সৃষ্টিকর্তা তা সার্বজনীনভাবে চালু রেখেছেন, তাহলে এর জবাব কী হতে পারে?
@অভিষেক খান,
আমি জীববিজ্ঞানের ছাত্র নই, যদিও লেখালেখির কারণে হাল্কা পড়াশোনা করতে হয়েছে। সেই সীমিত জ্ঞানের নিরিখেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করি। যারা এ সম্পর্কে আরো ভাল জানেন তারা হয়তো আরো ভাল করে পরিস্কার করতে পারবেন।
শুধু সায়নোব্যাকটেরিয়া কিংবা মানুষ নয়, আপনি যে কোন জীবের কথাই চিন্তা করুন। আমি যতদূর জানি, প্রকৃতিতে ৩২০ রকমের এমাইনো এসিড পাওয়া গেলেও দেখা গেছে প্রতিটি জীব গঠিত হয়েছে মাত্র ২২টি এমাইনো এসিডের রকমফেরে। অর্থাৎ একই রকমের (২০টি) এমাইনো এসিড দিয়ে সকল জীবের প্রোটিন গঠিত। প্রোটিন অনুতে এমাইনো এসিডের আবশেষগুলোর পর্যায়ক্রমিক বিন্যাসকে বলে এমাইনো এসিড অনুক্রম। ঠিক একই রকমভাবে দেখা গেছে যে, সকল জীবের ডিএনএ অনুর গঠন একক বেসও একই ধরনের। মাত্র চার প্রকার বেস (এডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন ও সাইটোসিন) দিয়ে সকল জীবের ডিএনএ গঠিত। প্রতি বছরই প্রকৃতিতে প্রায় হাজার খানেক করে নতুন প্রজাতির সন্ধান পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রতিদিনই নতুন নতুন ডিএনএ এবং প্রোটিন সংশ্লেষণ করছেন তারা ল্যাবরেটরীতে বসে। একটি ক্ষেত্রেও তারা ব্যতিক্রম পাননি। জীব জগতের প্রজাতি যদি কোন ‘অতিপ্রাকৃত মহাপরাক্রমশালী’ স্রষ্টার হাতের কারসাজিতে সৃষ্ট হতো, তবে ইচ্ছে করলেই তিনি অজানা অচেনা জেনেটিক পদার্থ দিয়ে কোন প্রজাতি বা জীব তৈরী করতে পারতেন। সেরকম কোন জীবই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। আসলে সকল জীবের উৎপত্তি যদি একই উৎস থেকে বিবর্তিত না হয়ে থাকে তবে আধুনিক জীববিদ্যার এ সমস্ত তথ্য অর্থহীন হয়ে পড়ে।
আপনি ডঃ ম আখরুজ্জামান এর বিবর্তনবিদ্যা বইয়ে এনিয়ে আরো ডিটেল আলোচনা পাবেন। অন্য অনেক ইংরেজী বইয়েও আলোচনা আছে, তার মধ্যে আমি স্টিভ জোন্সের ‘জেনেটিক্স’ বইটি থেকে সামান্য অংশ উদ্ধৃত করি। এটি আছে বইটির ‘এভিডেন্স অফ ইভলুশন’ চ্যাপ্টারে (১২৫ পৃঃ) –
A remarkable uniformity exists in the molecular components of organisms – in nature of components as well as in the ways in which they are assembled and used. In all bacteria, plants animals, and humans, the DNA comprises a different sequence of the same 4 component of nucleotides, and all the various proteins are synthesized from different combinations and sequences of the same 20 amino acids, al though several hundred other amino acids exist in nature. The genetic code by which the information contained in the DNA of the cell nucleus is passed on to proteins in virtually everywhere the same. Similar metabolic pathways – sequences of biochemical reactions – are used by most diverse organisms to produce energy and to make up the cell components… This unity reveals the genetic continuity and common ancestry of all organisms. There is no other rational way to account for their molecular uniformity when numerous alternative structures are equally likely.
এছাড়া Douglas Theobald এর বিখ্যাত 29+ Evidences for Macroevolution প্রবন্ধটির The fundamental unity of life অংশেও আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে পারেন হয়তো। সেখানে কমন পলিমার, নিউক্লিয়িক এসিড, প্রোটিন ক্যাটালাইসিস থেকে শুরু করে ইউনিভার্সাল জেনেটিক কোডের উপর টেকনিকাল আলোচনা আছে। দেখে নিতে পারেন।
আর অফটপিক – আপ্নের লেখা কই, পরীক্ষার পর লেখা দিবেন বলছিলেন।
ইরতিশাদ ভাই, আপনার এই সিরিজটার ফ্যান হয়ে যাচ্ছি আমি। আচ্ছা, এটা কি পুরোপুরি জেরি কোয়েনের বইটার অবলম্বনে, নাকি এখানে বাইরের ম্যটেরিয়ালও আছে?
আরেকটা কথা,
এই তথ্যটা কি একেবারে ঠিক? আমার ধারণা ছিল ( ভুল হতে পারে) ১৮৬৬ তে মেন্ডেল তার গবেষণা প্রকাশ করলেও কেউ তার গুরুত্ব বোঝেনি, তারপর ১৯০৫ সালে তা আবার নতুন করে আবিষ্কৃত হয় বা বিজ্ঞানীরা এর মর্মার্থ বুঝতে শুরু করে।
@বন্যা আহমেদ,
এই সুযোগে সবাইকে জানিয়ে রাখি, বন্যার পরামর্শ আর তাগাদায় এই লেখাটা শুরু করি, এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। লেখাগুলো পোস্ট হওয়ার আগে বন্যা পড়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বন্যা, এবারে তোমার প্রশ্নের উত্তর –
লেখাটা জেরি কোয়েনের বই অবলম্বনে নিঃসন্দেহে। আমি তাঁর বইয়ের অধ্যায় আর বিষয়ের অনুক্রম অনুসরণ করছি। কিন্তু এটা কিছুতেই অনুবাদ, এমন কি ভাবানুবাদও নয়। আমি যথেচ্ছ স্বাধীনতা নিচ্ছি, অন্যান্য উৎস থেকে অনেক কিছু জুড়ে দিচ্ছি (তথ্যসূত্র জেরি কোয়েনের নয়, ছবিগুলোও ওই বই থেকে নয়); কিছু কিছু উদাহরণ আমি বাদ দিয়েছি (জটিল বলে), আবার কিছু রেখেছি (যেমন, কচ্ছপের বালি খুঁড়তে অসুবিধা হওয়ার ব্যাপারটা আর উলি ম্যামথদের উদাহরণটা)।
এই দুই পর্বে তাঁর বইয়ের শুধুমাত্র প্রথম অধ্যায়টা দিতে পেরেছি। দ্বিতীয় অধ্যায় ফসিলের ওপরে। ওটা করার পরেই পাততাড়ি গুটাবার ইচ্ছে।
জেনেটিক্সের ইতিহাস সম্পর্কে তোমার কথাটাই মনে হয় আমার বক্তব্যের চেয়ে সঠিকতার বেশি কাছে। যদিও দুটো কথার মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। আমি বলেছি, ‘ত্রিশ বছর কেটে গেছে গুরুত্ব বুঝতে’; তুমি বলেছ, ‘কেউ গুরুত্ব বোঝেনি’। আমি বলেছি, ‘১৯০০ সাল থেকে বিজ্ঞানীদের টনক নড়তে শুরু করে’, তুমি বলেছ,
আমার কথার ফাঁকগুলো তোমার কথায় ভরাট হয়ে গেছে বলেই আমার মনে হলো। আমার দেয়ে তথ্যসূত্র (১) এর লিঙ্ক থেকে জানতে পারছি, আধুনিক জেনেটিক্সের শুরু ধরা হয় ১৯০৫ থেকে, তাই বলছিলাম তোমার দেয়া তথ্যটাই বেশি সঠিক।
এই প্রবন্ধের লেখক একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। এটি একটি ভাল লেখা নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমি এর অনেক কিছুই বুঝলাম না।
জীববিদ্যার উপর আমার কোন জ্ঞান না থাকার কারনে বিবর্তন বিষয়ক কোন লেখাই আমি ভাল বুঝি না। খারাপ লাগে। কিন্তু করার কিছু নাই। এখন হাল ছেড়েই দিয়েছি। তবুও অনেক সময়ই নিজের কাছেই অগোছালো প্রশ্ন করি। এক-কোষী জীব থেকে এই যে আজকের আমরা – দুটো হাত, দুটো পা, চোখ, নাক, অনেক জিনিষই জোড়ায় জোড়ায় এবং সিমেট্রিক। দু-একটা চোখ পেছনে থাকলে কি অসুবিধা হত? বরং ভালই হত rear view mirrorএর মত। Rear View Mirror তো দরকারেই লাগানো হয়েছে। মাছিদের প্রতিটি চোখে প্রচুর সংখ্যক চোখ থাকে, সামান্য চিংড়ি মাছ বা কাঁকড়া প্রয়োজনে একজোড়া চোখই সামনে পেছনে ঘুরিয়ে দেখে। এক-কোষ থেকে আজকের এই আমরা পর্য্যন্ত কেনই বা পেছনে চোখের দরকার হল না? থাকলে সুন্দরবনে মানুষদের অন্তত পেছনে মুখোশ পড়তে হত না।
পুরুষদের দাড়ি গজায়। দাড়িতো কোন কাজেই লাগে না। কোন সময়ে – কোন প্রয়োজনে দাড়ি যোগ হল? শিম্পাঞ্জী বা বানর থেকে বিবর্তনের পথ ধরেই যদি আমরা মানুষেরা এসে থাকি, তা হলে নর-নারী আলাদা কখন এবং কি প্রয়োজনে হল? বংশ পরম্পরা অন্য কোন ভাবেই বা কেন হল না? শুটকী লাউয়ের বিচির মধ্যে পরের বছরের জন্য লাউ ঘুমিয়ে থাকে কেন। অন্য ভাবে কেন হল না?
এসব ভাবতে ভাবতে মনে হয় কোন এক ভগবানই আসলে তার ইচ্ছেমত আমাদেরকে এবং সবকিছু বানিয়েছেন, এবং ইচ্ছে করেই মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীদের DNAএর মিল রেখে দিয়েছে আমাদেরকে ভাবানোর জন্য।
এই প্রশ্নগলো আগেও একবার করেছিলাম। কেউ উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। দয়া করে কেউ আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন, আমি বাধিত হব।
ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আসলে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে পরিব্যক্তির কারণে প্রকৃতিতে যে প্রকারণ ঘটে, তার উপরই কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে। যেখানে কোন রসদই নেই, সেখানে কাজ হবে কেমনে? পেছন দিকে চোখ থাকার মত কোন পরিব্যক্তি ঘটলে এবং সেই পরিব্যক্তি যদি একটা মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে গুরুত্বপূ্র্ণভাবে বাড়িয়ে দেয়, তবেই কেবল তা নির্বাচিত হবে। আমাদের যেহেতু পেছন দিকে চোখ নেই, তার মানে প্রয়োজনীয় পরিব্যক্তিটা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেনি কিংবা ঘটে থাকলেও প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
পেছন দিকে চোখ থাকলে আমাদের সুবিধা হত বটে, তাই আমরা সহজেই প্রশ্ন করতে পারি তথাকথিত ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার কেন আমাদেরকে সেরকম চোখ দিলেন না? ডকিন্সের “ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার” থেকে উদ্ধৃত করছি,
মানুষ কিন্তু আফ্রিকার সাভানাতে বিবর্তিত হয়েছে, সুন্দরবনের মত জঙ্গলে বিবর্তিত হয়নি। আমার জানামতে এই দুই জায়গার পরিবেশে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
মুখে লোম সবারই থাকে, টেসটোসটেরোনের কারণে বয়ঃসন্ধিকাল থেকে পুরুষের মুখের লোমটা বড় হয়ে দাড়ির আকৃতি নেয়। আমার জানামতে মেনোপজের পর মেয়েদের এস্ট্রোজেন উৎপাদনের হার কমে যায় এবং বার্ধক্যে তাদের টেসটোসটেরোন উৎপাদন কিছুটা বেড়ে যায়। এতে করে বুড়ো মহিলাদের মুখ লোম একটু বেশিই থাকে। টেসটোসটেরোন আর এস্ট্রোজেন উৎপাদনের গ্রন্থি কিন্তু পুরুষ-নারী দু’জনের দেহেই উপস্থিত। আমার জানা মতে শ্মশ্রু কোন উপকারিতে এখনও পর্যন্ত্য আবিস্কৃত হয়নি। এটা আসলে টেসটোসটেরোনের উপজাত।
যৌনতার উৎপত্তি আসলে শিম্পঞ্জীদের বহু আগেই হয়েছে। এর কারণ নিয়েনানা মুনির নানা মত রয়েছে, তবে আমার জানামতে রেড কুইন প্রকল্প প্রতিযোগীতায় এগিয়ে আছে। অল্প কথায় বলতে গেলে, সঙ্গমের কারণে যে সন্তানটি উৎপন্ন হয়, ব্যক্তিগত স্তরে তার জিনের গঠণ তার বাবা-মার জিনের গঠণের মিশ্রণ হয়। এতে করে কোন জীবানু তার বাবা-মাকে আক্রান্ত করতে পারলেও তাকে আক্রান্ত করতে বেগ পেতে হয়। একটা ব্যাংক ভল্টের পাসওয়ার্ডের কথাই ধরেন। পাসওয়ার্ড সবসময় অপরিবর্তিত রাখলে যেকোন চোর কোন এক সময় পাসওয়ার্ডটি হ্যাক করে ফেলতে পারে। কিন্তু পাসওয়ার্ড সবসময় পরিবর্তন করলে চোরের পক্ষে পাসওয়ার্ড হ্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্সের কারণে যৌনপ্রজ প্রাণীদেরও একই অবস্থা হয়। সেক্স করার কারণে আমাদের(যৌনপ্রজ প্রাণীদের) শরীরের পাসওয়ার্ড বারংবার পরিবর্তিত হতে থাকে, একারণে জীবানুর পক্ষে আমাদের শরীর হ্যাক করার কঠিন হয়ে পড়ে।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন অযৌনপ্রজরা টিকে আছে কেমনে? অযৌনপ্রজরা আমাদের চেয়ে দ্রুত প্রজনন করে, একারণে তাদের কিছু কিছু সন্তান সবসময়ই টিকে যায়।
সেক্স আর eukaryotic কোষের উৎপত্তি একই সাথে ঘটেছে Proterozoic Eon (2.5 billion years ago to 570 million years ago) এ[সূত্র-http://jupiterscientific.org/review/life.html]।
সেক্সের সংখ্যা দু’টো কেন, সেটা আমি ঠিক বুঝি না। একটা গবেষণাপত্র অবশ্য পেয়েছি-http://www.jstor.org/pss/50723
ভগবান আসলে কোন বিকল্প না। ঈশ্বর কোন প্রশ্নের উত্তর তো দেনই না, উলটো আরও হাজারটা প্রশ্নের জন্ম দেন। সেই কুখ্যাত প্রশ্ন তো আছেই- ঈশ্বরের ঈশ্বর কে?
@পৃথিবী,
কোথায় যেন পড়েছিলাম যে, শ্মশ্রু মানুষের সেক্সুয়াল সিলেকশনে ভূমিকা রাখতে পারে।
@পৃথিবী,
:yes:
ভাবছিলাম নৃপেনদার প্রশ্নগুলোর একটা উত্তর দেই। আজকে পৃথিবীর এই চমৎকার উত্তরের পর আর নতুন কিছু বলার নেই।
আসলে আমাদের মাথার পেছনে চোখ নেই কেন কিংবা আমাদের উড়ার জন্য ডানা নেই কেন – এ প্রশ্নগুলোর সহজ ব্যাখ্যা হল – আমাদের মাথার পেছনে চোখ থাকলে কিংবা উড়ার জন্য ডানা থাকলে আমরা হয়তো বাড়তি সুবিধা পেতাম, কিন্তু সেটা ঘটার জন্য আদি মিউটেশন যে কোন কারণেই হোক ঘটেনি। মিউটেশন না ঘটলে পাখা কিংবা পেছনে চোখ তৈরির প্রকারণ জনপুঞ্জে পাওয়া যাবে না। বিবর্তন কাজ করে শুধুমাত্র ইতোমধ্যে তৈরি বা বিদ্যমান গঠনকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে, জনপুঞ্জে প্রকারণ না থাকলে সে নতুন করে রাতারাতি কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। আমাদের মনে রাখতে হবে – বিবর্তন কোন লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা পরিকল্পণা নিয়ে কাজ করে না, কাজ করে অনেকটা ‘ব্লাইন্ড ওয়াচমেকারের’ মত। কাজেই আমাদের পেছনে চোখ গজাবার লক্ষ্য নিয়ে বিবর্তনের কোন মাথাব্যথা নেই, কখনো ছিলোও না। চিন্তা করে দেখুন – অন্ধ গুহা মাছ মেক্সিকান টেট্রা কিংবা কেভ স্যালামেন্ডার কোন চোখ ছাড়াই টিকে থাকতে পেরেছে। কারণ তারা যে পরিবেশে বাস করে সেখানে চোখের খুব বেশি চাহিদা নেই। আবার উটপাখির পাখা থাকলেও উড়ার ক্ষমতা হারিয়েছে, কারণ না উড়েই যে তার চারপাশ থেকে পর্যাপ্ত খাবারের সন্ধান করতে পারছে, কাজেই উড়ার ব্যাপারটা হয়ত তার কাছে অনাবশ্যক বাহুল্যমাত্র। আবার মানুষের দুটো সামনের চোখ দিয়েই সে নানা রকমের চড়াই উৎরাই পার হয়ে চলেছে এবং সার্থকভাবে পৃথিবীতে টিকে আছে। ওই যে বললাম -বিবর্তন কোন লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা পরিকল্পণা নিয়ে কাজ করে না, কাজেই টিকে থাকার ক্ষেত্রে কোন নতুন হমকি না আসলে- হঠাৎ করেই পেছনে চোখ গজারবার দিব্যি দিয়ে বিবর্তন বসে নেই।
@অভিজিৎ,
নৃপেনদার প্রশ্নগুলি দেখে আমার মনে একটি ভাবনা এলো। বিবর্তন বিষয়ে ভাল জানেন মুক্তমনায় এমন বেশ কজনই আছেন। তাদের থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়ার একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। আমরা যারা ধীরে ধীরে এই জটিল জিনিস হজম করছি তাদের এভাবে মনে হয় বেশ সুবিধে হবে। নৃপেনদার মতন আমাদের মনেই অজস্র প্রশ্ন আসে।
আমরা সবাই বিবর্তন বিষয়ে যার যা প্রশ্ন আছে সেগুলি একটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে প্রশ্ন আকারে এডমিনের কাছে পাঠাতে পারি। এরপর এডমিন সেই প্রশ্নগুলি এক করে একটি পোষ্ট দিতে পারেন। এরপর একইভাবে যে যেই প্রশ্নেরই জবাব জানেন এডমিনের কাছে পাঠাতে পারেন, এডমিন আবার একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে উত্তর পোষ্ট করবেন।
এটা করা গেলে বিবর্তন বিষয়ে FAQ হিসেবে বেশ উপকারী একটি সংযোজন হতে পারে।
@আদিল মাহমুদ, আইডিয়া খারাপ না। তবে শুনেছি বিবর্তনের উপর আলাদা একটা পেইজ বানানোর জন্য নাকি কাজ হচ্ছে, সেটা শেষ হলে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া যেতে পারে।
@পৃথিবী,
তাহলে তো খুবই ভাল হয়। তবে প্রশ্নোত্তর পর্বটা গুরুত্বপূর্ন এবং একটু ব্যাতিক্রমি। সাধারনত কেউ বিবর্তনের কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখা দেন, অনেক সময় আমাদের অনেকের মাথার ওপর দিয়ে বেশ কিছু বিষয় গেলেও কোন সন্দেহ নেই যে আমরা ধীরে ধীরে হলেও কিছু শিখি। এসব লেখাতেও প্রশ্ন করা যায়, তবে বিবর্তনের কোন স্পেসিফিক এডভান্সড লেভেলের লেখায় প্রান্তিক বিষয়ের প্রশ্ন তুলতে একটু বেকুব বেকুব লাগে। সাধারন প্রশ্নত্তোর চালু থাকলে এ সমস্যা থাকে না। একই প্রশ্নের জবাব ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তিও দিতে পারেন।
প্রান্তিক বিষয়গুলি ভালভাবে বুঝলে সব লেখা অনুসরন করতে সুবিধে হবে।
@আদিল মাহমুদ, ইতিমধ্যে এই সাইটটাও চেক করতে পারেন। বিবর্তনের পাশাপাশি জীববিজ্ঞানের যেকোন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব সবসময়ই চলছে।
@আদিল মাহমুদ,
খুবই ভালো কথা। তবে সুখবর এই যে আমার এক বন্ধু বিবর্তন সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে কাজ করছে। আপনি একটা কাজ করবেন, আপনার নিজের ও অন্যদের যাদের যা প্রশ্ন আছে তা আমার কাছে পাঠিয়ে দেন।
আদিল মাহমুদের এই উদ্যোগের ব্যাপারে একমত পোষণ করছি। বিবর্তন নিয়ে লেখালিখির পাশাপাশি যে সমস্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় হয় মানুষের মনে, সেটার একটা তালিকা করে সেগুলোর উত্তর তৈরি করে ফেললে খুব ভাল হয়।
বিবর্তনের উপর আলাদা একটা পেইজ বানানোর জন্য কাজ শুরু হয়েছিলো, কিন্তু সময়ের অভাবে খুব বেশি এগুনো হয়নি। আর শিক্ষানবিস পুরো বিজ্ঞানের উপর একটা আর্কাইভের কাজে হাত দিয়েছে।
পাশাপাশি আমি পৃথিবী এবং সৈকতকে দায়িত্ব দিতে চাই ব্যাপারটি (অর্থাৎ বিবর্তনের প্রশ্নোত্তর) নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য। বিশেষ করে সৈকতকে বলছি – যদি প্রশ্ন- উত্তর নিয়ে তিনি কিংবা তার বন্ধু ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে থাকেন, তবে সেগুলো যেন তারা ব্লগ আকারে মুক্তমনাতেও পোস্ট করেন। সেখান থেকে গুছিয়ে মুক্তমনার আলাদা প্রশ্নোত্তর পৃষ্ঠা সহজেই তৈরি করা যাবে। আর পৃথিবীর আজকের লেখাটিতেও প্রশ্নগুলো জানানো যেতে পারে।
সৈকত এবং পৃথিবী দয়া করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে কাজটিকে এগিয়ে নিন পিজ! চাইলে তানভী, অভিষেক রায়হান এবং অন্যান্যরাও অংশ নিতে পারেন।
@অভিজিৎ,
মাছি মারা কেরানী টাইপের কোন কাজে লাগলে আমিও আছি।
@আদিল মাহমুদ,
আপ্নে মাছি মারতে থাকেন, আর পাশাপাশি আপনার অফুরন্ত প্রশ্ন দিয়ে সৈকত আর পৃথিবীকে সাহায্য করতে পারেন।
আর প্রশ্নের উত্তর ব্লগে দেয়া হলে কোনটা আপনার মনঃপুত হয়নি কিংবা পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করা হয়নি, কিংবা কোনটা টু দ্যা পয়েন্ট হয়েছে – সেগুলো্র ফীডব্যাক তো অবশ্যই দিতে পারেন পাঠক হিসেবে। ফলে সঙ্কলকেরা আরো দায়িত্ববান হবেন উত্তরের ব্যাপারে।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ ভাইয়া, যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি কাজে হাত দিয়ে দিচ্ছি।
@পৃথিবী, কালকে মুক্তমনার বিভিন্ন আর্কাইভ ঘেটেঘুটে দেখলাম যে, প্রায় ৩০ তার মত প্রশ্নের উত্তর আছে। আপনার এই ১৫ টা উত্তর, অভিজিত এবং আমার বিভিন্ন লেখা, ইরতিশাদ ভাই এনং রায়হানের লেখায়ও বেশ কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর আছে। এই উইকেন্ডে প্রশ্নগুলোর লিষ্টটা ( যদি পারি প্রশ্নোত্তরসহ নতুন পেজটারই লিঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা করবো) ব্লগে দিয়ে দিব, যাতে আপনারা নতুন প্রশ্ন-উত্তরের কাজে হাত দিতে পারেন। শুধু বিবর্তনের উপর একটা আর্কাইভ করা যায় কিনা দেখছি।
কোন সাজেশান থাকলে আমাকে [email protected] এ ইমেইল করতে পারেন।
@বন্যা আহমেদ,
আগে বিস্তারিত বলি নাই। বিবর্তন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমাদের ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল’ এর সহায়তায় ‘জৈববিবর্তনতত্ত্বঃ নানা প্রশ্ন’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে(সম্ভব হলে আগামী একুশে বই মেলায় এটি প্রকাশিত হবে)। ইতিমধ্যে ১২০ টির মতো প্রশ্ন সংগ্রহ করা হয়েছে এবং উত্তর তৈরির কাজ চলছে।
তাই এখানে সকলকে প্রশ্ন দিয়ে সহায়তা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা-
[email protected]
[email protected]
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমি যতদূর জানি, শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উৎপত্তি হয় নি। দুটি প্রজাতিই একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পর নিজ নিজ পথে বিবর্তিত হয়ে একদল হয়েছে শিম্পাঞ্জি আর আরেকদল মানুষ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমার মনে হয়, চোখ মানুষের পেছনে দিকে না থাকলেও চলে কারন মানুষের যা দরকার তার উদ্ভাবন করার ক্ষমতা তার আছে যা মাছি, চিংড়ি মাছ বা কাঁকড়ার মধ্যে নেই। বেসিক যা প্রয়োজন তাই মানুষ ধারন করে, কারন ইনিশিয়াল স্টার্ট আপের জন্য বেসিক জিনিষগুলোর দরকার হয়ে পড়ে। বাদবাকী যা প্রয়োজন বা যা মানুষের হতে ইচ্ছা করে তা উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে পুষিয়ে নেয়ার ক্ষমতা মানুষ রাখে। তারপরেও মানুষের আছে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের শক্তি, যা অন্য কোন প্রানীর মধ্যে আছে কিনা আমার জানা নেই।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
শরীরটা ভালো ছিল না, তাই উত্তর দিতে দেরী হয়ে গেল। আপনার প্রশ্নগুলো মৌলিক, তবে এর উত্তর কিন্তু আমার লেখাতেই রয়েছে। প্রাসঙ্গিক কথাগুলো আবার উদ্ধৃত করছি,
পৃথিবী আর অভিজিতের মন্তব্যেও আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন আশা করি। বন্যা আহমেদের বই ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বা জেরি কোয়েনের আলোচ্য বইটাও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়েছেন, ভেবেছেন এবং মন্তব্য করছেন তাই।
এক নিঃশ্বাসেই শেষ হয়ে গেল! দ্বিতীয় একটা নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ দেয়া দরকার ছিল!
তবে বিবর্তন সম্পর্কে ধারনা গুলো পরিস্কার হচ্ছে। চলুক……
এক নিঃশাসে পড়ে গেলাম। অসাধারণ!
গুরুত্বপূর্ণ কথা। :yes:
@সৈকত চৌধুরী,
এই যুক্তিতে একটু দ্বি-মত করতে হয়। মনে হয় আমার জীববিজ্ঞানের জ্ঞানের অভাবে যুক্তিটার গুরুত্ব বুঝছি না তাও হতে পারে।
আমি যদি বলি যে পৃথিবীর সব প্রানীরই গঠনগত মূল উপাদান সেই একই কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস- তাহলেই কি বলা যাবে যে সব প্রানীকুল একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত?
@আদিল মাহমুদ, আমার জানামতে এই সকল উপাদান দিয়েই ডিএনএ তৈরী হয় আর ডিএনএ প্রজন্মের পর প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। তাই ডিএনএকে প্রজাতিগুলোর আন্তঃসম্পর্ক নির্ণয়ের মানদন্ড ধরলে বোধহয় ভুল হবে না।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা, তাহলেই বলা যাবে এরা একে অপরের সথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন একজন লোক তার একটি সন্তান তার কিনা এ বিষয়ে সন্দেহে পড়ে গেলো। পরে ডাক্তাররা তাদের ডি,এন,এ টেস্ট করে বললেন যে হ্যা এ সন্তানটি তারই। এখন লোকটির উচিত কি এ ব্যাপারে সন্দেহ দেখানো? ঠিক তদ্রুপ আমরা ডি,এন,এ বিশ্লেষণ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে প্রাণীরা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত আর কতটা সম্পর্কিত তাও বের করতে পারি।
আর বিবর্তনের প্রমাণের কথা যদি বলেন তাহলে এটাও অনেকগুলো প্রমাণের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
@সৈকত চৌধুরী,
গঠনগত মৌল উপাদান চিন্তা করলে তো এমনকি জীব এবং জড় সবারই মূল উপাদান একই। শুধু বিন্যাস ভিন্ন। জীব এবং জড় কেও কি সম্পর্কযুক্ত করা যাবে? আমি জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নয়, সাধারন যুক্তির চোখে বলছি।
ডিএনএ এর মিল অবশ্যই খুব গুতুত্বপূর্ন। তবে ধরেন শিম্পাজী আর মানুষের ডিএনএর পার্থক্য মাত্র দশমিক ৬ ভাগ। মাত্র এই চুল পরিমান (আমার কাছে সাদা চোখে চুল পরিমানই) পার্থক্যর জন্য দুই প্রজাতির মাঝে এত তফাত?
কার লেখায় যেন পড়েছিলাম যে জবা ফুল এর সাথে মানুষের ডিএনএ এর মিল ৩৩% বা কাছাকাছি। আমার মত আনপড়াহ লোকের কাছে বড় আজব লাগে যে একটি উদ্ভিদ প্রজাতির সাথে আমার এত মিল।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা, কারণ জড় থেকেই জীবের উদ্ভব। আসলে জীবের মধ্যে এমন কোনো মৌলিক পদার্থ পাবেন না যা জড় জগতে নেই। তবে জীবের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা জড়ের মধ্যে নেই অথবা অন্যভাবে বলি- জড় যখন নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করল তখন সে জড় থেকে পৃথক হলো। জীব মরে গেলে সেই জড় পদার্থে পরিণত হয়।
ডি,এন, এ এর এই সামান্য পার্থক্যই অনেক আর এই সামান্য পার্থক্যেই এত অমিল দেখা দেয়। আপনি শুধু অমিলটা খোঁজে পেলেন, মিলটা দেখলেন না? একটা শিম্পাঞ্জী আর মানুষ পাশে রেখে হিসাব করেন। হাত, হাতের আংগুল, দাত, মাথার খুলির গঠণ ইত্যাদি তুলনা করেন।
উদ্ভিদের সাথে প্রাণীর মিল অনেক কারণ উভয়ে এক উৎস থেকেই বিবর্তিত হয়েছে। উদ্ভিদ কোষ আর প্রাণী কোষকে পাশাপাশি রেখে পর্যবেক্ষণ করেন।
@আদিল মাহমুদ,
জবা ফুলের সাথে ডি এন এ র মিলের যে হিসেব আপনি দিচ্ছেন, সেই মিল কি ভাবে গণনা করা হয়েছ, তা জানি না, তবে এই ডি এন এর মিল বিষয় টি খুবই interesting । ডি এন এ হ্ল একটি লম্বা sequence যা গঠিত হয় চার ধরণের নিউক্লিওটাইডের সরল সমন্ব্যে। এই চারটি নিউক্লিওটাইড কে চিহ্নিত করা হয় A, C, G, T – এই ৪ টি অক্ষর দিয়ে। আপনি আপনার ডি এন এ কে চিন্তা করতে পারেন একটি লম্বা শব্দ (word) হিসেবে যে শব্দে শুধু A,C,G,T এই ৪ টি অক্ষর বিদ্যমান। যেমন ATTGGCTAGTA…………… ইত্যাদি।
এখন যদি সমান দৈর্ঘের সম্পূর্ণ random দুটি ডি এন এ word নেওয়া হয়, তাহলেও সম্ভাবনা তত্ত্ব অনুসারে এদের প্রায় এক চতুর্থাংশ অক্ষর পুরোপুরি মিলে যাবে, কারণ যেকোনো একটি পজিশনে A,C,G,T এর যেকোনোটিই বসতে পারে সমান সম্ভাবনা নিয়ে। সুতরাং ২৫% মিল যেকোনো দুটি ডি এন এ সিকুয়েন্স এ থাকলে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হ্ল কতটুকু মিল থাকলে আশর্য হতে হবে ?
দেখা যায় ডি এন এর মত লম্বা সিকুয়েন্সের জন্য ২৬-২৭ % মিল থাকাও সম্ভাবনা তত্ত্ব অনুযায়ী significant। ব্যাপারটি অনেকটা মুদ্রা নিক্ষেপ পরীক্ষার মত। আপনি একটি নিরপেক্ষ মুদ্রা ৪ বার নিক্ষেপ করলে ৪ বারই হেড আসতে পারে (সম্ভাবনা যদিও কম, ৬ % এর মত), কিন্তু যদি ৪০০০ বার নিক্ষেপ করেন, দেখবেন মোটামুটি ২০০০ বারের কাছাকাছি হেড আসছে। এমন কি ২১০০ বার হেড আসার সম্ভাবনাও প্রায় শুন্যের কাছাকাছি। আর ৪০০০ বারই হেড আসবে? প্রশ্নই আসেনা।
সুতরাং জবা ও মানুষএর মধ্যে ৩৩% মিল কোন random বিষয় নয়, এটি বিবর্তনের মাধ্যমে এই দুই প্রজাতির সংযোগ কেই চিহ্নিত করছে। আবার ৩৩% মিল থাকাটি বিবর্তন বৃক্ষে এদের দুরত্ব যে প্রচুর, তাও বোঝাচ্ছে। কারণ বিবর্তন বৃক্ষে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা প্রজাতির মধ্যে মিল অনেক বেশি (> ৬০%)।
@আদিল মাহমুদ,
তাই বোধ হয় কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপযোগী।
মানুষের ডিএনএ এর সাথে কলার মিল ৫০%, বাঁধা কপি ৪০% আর কেঁচোর (Mud worms ) সাথে শুধু ডিএনএ এরই মিল নয় বরং তারা বোধ হয় মেরুদন্ডবিহীন প্রাণীর মধ্যে আমাদের সব চেয়ে নিকটতম প্রজাতি।
@আকাশ মালিক,
নিজেকে একই সাথে কলা, বাঁধা কপি, ও কেঁচোর মতন মহতী প্রজাতিদের আত্মীয় মনে করে যার পর নাই গৌরব বোধ করছি 🙂 ।