একাত্তরে জামায়াত (প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব)

একাত্তরে জামায়াত-৩: পাকিস্তানি গোপন দলিল
মুক্তিযোদ্ধা নির্মূল করতে গড়ে
তুলেছিল ঘাতক বাহিনী

secret-report

——————
একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে প্রদেশের তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে মাসে দুবার গোপন প্রতিবেদন পাঠানো হতো ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের কাছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান’। এসব প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ওই সময়ের নানা অপকর্মের বিবরণ রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ আছে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম, পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী (বর্তমানে জামায়াতের আমির), পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (বর্তমানে জমায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল), ছাত্র সংঘের রংপুরের নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের (বর্তমানে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল) নানা বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কথা।

পাকিস্তানিদের মতো জামায়াতীরাও একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের ‘বিদ্রোহী’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, ‘দুষ্কৃতকারী’, ‘ভারতীয় এজেন্ট’ বলত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে [নম্বর ৪৮২/১৫৮-পল/এস (আই)] দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট খুলনা জেলা জামায়াতের এক সভায় গোলাম আযম তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, মুজিব দেশের মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন। গোলাম আযম ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ ধ্বংস করতে জামায়াতের নের্তৃত্বে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান। স্থানীয় মিউনিসিপাল হলের ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তার। ২০০১ সালে বাগেরহাট-৪ আসন থেকে তিনি জামায়াতের মনোনয়নে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২৮-৭-১৯৭১ তারিখে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে সই করেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব এম এম কাজিম।

আরেকটি গোপন প্রতিবেদনে [নম্বর ৫৪৯ (১৫৯) পল/এস (আই)] উল্লেখ আছে, আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সম্মেলনে গোলাম আযম বলেন, ‘হিন্দুরা মুসলমানদের শত্র“। তারা সবসময় পাকিস্তানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে।’ ওই সম্মেলনে গোলাম আযম প্রতি গ্রামে শান্তি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী আখ্যা দিয়ে তাদের নির্মূল করারও নির্দেশ দেন তিনি। গোলাম আযম বলেন, খুব শিগগিরই রাজাকার, মুজাহিদ ও পুলিশ মিলে দুষ্কৃতকারীদের মোকাবিলা করতে সম হবে।

সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধের প্রতিবেদনে [নম্বর ৬০৯ (১৬৯) পল/এস (আই)] বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জামায়াতের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে গোলাম আযমসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। সভায় প্রদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ‘বিদ্রোহীদের’ (মুক্তিযোদ্ধা) নির্মূল করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

(A discussion meeting of the JI workers was held on 3-9-71 in Dacca and was addressed, among others, by Prof. Ghulam Azam. The meeting reviewed the political and law and order situation of the province and emphasised the need for restoration of normalcy by eliminating the rebels and anti-social elements.)

২৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিবের সই করা গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে গোলাম আযম ‘দুষ্কৃতকারীদের’ (মুক্তিযোদ্ধা) প্রতিহত করার নির্দেশ দেন।

অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগের গোপন প্রতিবেদনে (১৩-১১-১৯৭১ তারিখে স্বরাষ্ট্র সচিবের সই করা) উল্লেখ আছে, ১৭ অক্টোবর রংপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। এ জন্য যুবকদের সংগঠিত করে আলবদর বাহিনীতে যোগ দেওয়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।

আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ নভেম্বর বদর দিবস পালন করে জামায়াতে ইসলামী। ওই দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলের নেতারা জনগণের প্রতি আলবদর বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যারা পাকিস্তান চায় না তারা আমাদের শত্র“। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রা এবং শত্র“দের প্রতিহত করতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আরো কয়েকটি দণিপন্থী ছোট দল ছিল হানাদার বাহিনীর প।ে শান্তি কমিটিতেও ছিল তারা। তবে হানাদার-সহযোগী ঘাতক বাহিনী গড়ায় বেশি আগ্রহ ছিল জামায়াতের। মতার লড়াইয়েও জামায়াতের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছিল ওইসব দল, এমনকি পিপিপিসহ পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি দলও। এ নিয়েই হয়তোবা জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তাদের। যে কারণেই হোক না কেন, ওই দলগুলো জামায়াত কর্মী ও রাজাকারদের খুন-খারাবি, নির্যাতন, লুটতরাজের সমালোচনা করে প্রকাশ্যেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদনেও এর উল্লেখ আছে।

অক্টোবর মাসের প্রথম পরে রিপোর্টে উল্লেখ আছে, ৩ অক্টোবর ঢাকায় নূরুল আমীনের বাসায় তার সভাপতিত্বে পিডিপি নির্বাহী কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ক্রমাবনতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা শেষে আসন্ন উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের পে মত দেওয়া হয়। ওই সভায় কয়েকজন বক্তা গ্রামাঞ্চলে নিরীহ জনগণের ওপর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও রাজাকারদের নৃশংসতার বিষয়টি তুলে ধরেন। রিপোর্টটির স্মারক নং ৬৮৬ (১৭২) পল/এস (আই)। এতে বলা হয়েছে, An extended meeting (50) of the Executive Committee of East Pakistan Regional PDP was held on 3-10-71 at the Dacca residence of Mr Nurul Amin with himself in the chair. The meeting discussed the present political situation and deteriorating economic condition of the country and favoured participation in the ensuing by-elctions. Some of the speakers mentioned about the atrocities committed by the enemies as well as by the Jamaat-e-Islami workers and Razakars on innocent people in the rural areas.

একাত্তরে জামায়াত-৪: দৈনিক সংগ্রাম থেকে
মুক্তিযোদ্ধাদের খতম করার
হুকুম দিয়েছিলেন নিজামী

——

daily-sangram-21

একাত্তরে রাজাকারদের উদ্দেশ্যে নিজামী বলেছিলেন, ‘ঐ সকল ব্যক্তিকে খতম করতে হবে; যারা সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’ (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)

ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই হিংস্র পাকিস্তানি সেনারা হোটেলে আটকে রেখেছিল সব বিদেশি সাংবাদিককে। পরদিন জোর করে বিমানে তুলে দেওয়া হয়েছিল তাদের। সামরিক জান্তার অনুগত সংবাদপত্র ছাড়া ঢাকার অন্যসব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয় কোনো কোনো পত্রিকার। যে কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রকাশনা তখন অব্যাহত ছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াত এবং এর গঠন করা বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকাণ্ডের অনেক খবরই প্রকাশিত হয় পত্রিকাটিতে।

অন্য দালালদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করেই শুধু ান্ত ছিল না জামায়াতে ইসলামী। বাঙালিদের খতম করতে সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী গঠনেও উদ্যোগ নিয়েছিল তারাই। যমদূত রাজাকার বাহিনী গঠনের প্রস্তাবটি গোলাম আযম দিয়েছিলেন ২০ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে। সাাতের পরদিন অর্থাৎ ২১ জুন দৈনিক সংগ্রাম-এর খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাাৎ করে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির ‘দুষ্কৃতকারীদের মোকাবেলার জন্য দেশের আদর্শ ও সংহতিতে বিশ্বাসী লোকদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।’

একাত্তরের ২৩ নভেম্বর লাহোরে গোলাম আযম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান মুহূর্তে আক্রমণাÍক ভূমিকা গ্রহণ করাই হবে দেশের জন্য আÍরার সর্বোত্তম ব্যবস্থা।’ পরদিন তার এ বক্তব্য দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত হয়। ২৭ নভেম্বর গোলাম আযম পিন্ডি আইনজীবী সমিতির এক সভায় বলেন, ‘দেশপ্রেমিক জনগণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’ এ খবরও প্রকাশিত হয় দৈনিক সংগ্রাম-এ।

g-azam

—————-
g-azam-2

জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘই ছিল কুখ্যাত রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর নেতৃত্বে। পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটিকে তখন রূপান্তর করা হয়েছিল আলবদর হাইকমান্ডে। ছাত্রসংঘের সারা পাকিস্তানের প্রধান হিসেবে মতিউর রহমান নিজামীই ছিলেন আলবদরের সর্বেসর্বা। তার নির্দেশেই গড়ে ওঠে এ ঘাতক বাহিনী। যদিও এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠা কেন্দ্রীয়ভাবে হয়নি। একাত্তরের ২২ এপ্রিল জামালপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর পদার্পণের পরপর ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের তৎকালীন সভাপতি মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বাহিনী। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কিংবা সাধারণ মানুষকেই নয়, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে ওরা। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখে দৈনিক সংগ্রাম-এ এক নিবন্ধে বলা হয়, ‘আলবদর, একটি নাম! একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানেই তথাকথিত মুক্তিবাহিনী, আলবদর সেখানেই। যেখানে দুষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারীর কাছে আলবদর সাাৎ আজরাইল।’

daily-sangram-1

দৈনিক সংগ্রাম-এ সে বছর ১৪ নভেম্বর ‘জনতার পার্লামেন্ট’ কলামে ‘বদর দিবস : পাকিস্তান ও আলবদর’ শীর্ষক এক নিবন্ধে নিজামী লিখেছিলেন, ‘আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাক বাহিনীর সহযোগিতায় এদেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ ছাত্রসমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আল-বদর বাহিনী গঠন করেছে।’ নিবন্ধে আরো বলা হয়, ‘সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আল-বদরের তরুণ যুবকেরা হিন্দুস্তানের অস্তিত্ব খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে।’

১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম-এ মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার বিষয়ে নিজামীর নির্দেশনার কথা প্রকাশিত হয়। খবরটি এ রকমÑ ‘যশোর জেলা রেজাকার সদর দফতরে সমবেত রেজাকারদের উদ্দেশে জাতির এই সংকটজনক মুহূর্তে প্রত্যেক রেজাকারকে ঈমানদারীর সাথে তাদের উপর অর্পিত এই জাতীয় কর্তব্যে সচেতন হওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে নিজামী বলেন, ‘ঐ সকল ব্যক্তিকে খতম করতে হবে; যারা সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’

nizami-sangram

নিজামীর কাছে পাকিস্তান ছিল ‘আলাহর প্রিয় ভূমি’। একাত্তরে চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘আলাহ তার প্রিয়ভূমি পাকিস্তানকে রা করার জন্যে ঈমানদার মুসলমানদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু মুসলমানেরা যখন রাজনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা রাজনৈতিক পন্থায় করতে ব্যর্থ হল, তখন আলাহ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তার প্রিয়ভূমির হেফাজত করেছেন।’ (দৈনিক সংগ্রাম, ৪ আগস্ট ১৯৭১)

nizami

ওই সময় বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট বলে অভিহিত করেছিলেন নিজামী। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বাঙালি ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান করাচির মাসরুর বিমানঘাঁটি থেকে একটি জেটবিমান ছিনতাই করে পালিয়ে আসার সময় কো-পাইলট রশীদ মিনহাজ তাকে বাধা দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হলে একপর্যায়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। শহীদ হন মতিউর। মিনহাজও নিহত হয়। কিন্তু নিজামী তখন মিনহাজের পিতার কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ বীর মতিউরকে ভারতীয় এজেন্ট বলে উলেখ করেন। ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রাম-এ ‘মিনহাজের পিতার নিকট ছাত্রসংঘ প্রধানের তারবার্তা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ কথা জানা যায়।

জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৭১ সালে ছিলেন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি। সেই সুবাদে তিনি ছিলেন ঢাকার আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার। ‘বদর দিবস’ উপলে ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, আগামীকাল থেকে কোনো লাইব্রেরি হিন্দুদের ও হিন্দুস্তানী দালালদের লেখা বই-পুস্তক বেচাকেনা করতে পারবে না, আগামীকাল থেকে কোথাও হিন্দু বা হিন্দুস্তানী দালালদের বই-পুস্তক বেচাকিনা হতে দেখলে তা ভস্মিভূত করা হবে।’ (দৈনিক সংগ্রাম, ৮ নভেম্বর ১৯৭১)
ওই সমাবেশে আরো বক্তব্য রেখেছিলেন সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম আলী।

একাত্তরের ১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর ছাত্রসংঘের এক অনুষ্ঠানে মুজাহিদ বলেছিলেন, ‘ঘৃণ্য শত্র“ ভারতকে দখল করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের আসাম দখল করতে হবে। এজন্য আপনারা সশস্ত্র প্রস্তু‘তি গ্রহণ করুন।’ ওই দিন দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত মুজাহিদের একটি নিবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র_ যুক্তি নয়’। ২৫ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের ছাত্র-জনতার প্রতি দষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। পরদিন দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত হয় এ খবর।

razakar-training

জামায়াতে ইসলামীই যে ঘাতক রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন করে তার আরো প্রমাণ আছে দৈনিক সংগ্রাম-এর পাতায়। একাত্তরের ৬ আগস্ট পত্রিকাটিতে ‘রংপুর জেলায় ৬ হাজারেরও বেশি রেজাকার ট্রেনিং নিচ্ছে’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়, ‘পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলার সেক্রেটারী মওলানা কাজী নজমুল হুদা রেজাকার বাহিনীর সংগঠক।’ এতে আরো বলা হয়, ‘রংপুর শহর জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মুখলেসুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব জবানউদ্দিন আহমদ ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর প্রিন্সিপাল রুহুল ইসলামও তাদের উপর ন্যস্ত বিভিন্ন থানা এলাকা সফর করে রেজাকার বাহিনী গঠন করছেন এবং বিভিন্ন ট্রেনিং কেন্দ্র তদারক করছেন।’

16-aug-kamaruzzaman

সে বছর ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত এক খবরে কামরুজ্জামানের পরিচয় দেওয়া হয় ‘আল-বদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক’ হিসেবে। ওই খবরে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের ২৫তম আজাদী দিবস উপলে গত শনিবার মোমেনশাহীতে আল-বদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন আল-বদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক জনাব কামরুজ্জামান।’

———
শেষ