গেছিলাম বাজারে মাছ ও তরকারি কিনতে। কেনা কাটার পর হঠাৎ দেখলাম এক হুজুর টাইপের লোক মানে যার ছাগুলে দাড়ি আছে ও মাথায় টুপি আছে কিছু বেল নিয়ে বসে আছে। দেখলাম বেলগুলি সব গাছ পাকা। বেল আমার খুব প্রিয় ফল কারন তা খেলে পেটের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। ইদানিং স্বাস্থ্য নিয়ে বেশী চিন্তা ভাবনা করি তো তাই ভাবলাম গাছ পাকা বেল যখন তখন গোটা দুই বেল কিনলে খারাপ হয় না। দুইটা বেল বাছাই করে দাম জিজ্ঞেস করাতে সে চাইল পঞ্চাশ টাকা। আমি বল্লাম পচিশ টাকা। কারন বেলদুটি খুব বড় ছিল না , মাঝারি সাইজের। পরে সে চাইল চল্লিশ টাকা। আমি বল্লাম বেল দুটো এত বড় না যে তার দাম চল্লিশ টাকা হবে। তবে যাইহোক এর পর আমি ত্রিশ টাকা দাম উল্লেখ করে বল্লাম দিলে দেন , না হলে চলে যাই। তো কি মনে করে লোকটি বেল দুটো ত্রিশ টাকাতেই দিতে রাজি হয়ে গেল। আমি তো বহুত খূশী । আমার কাছে ভাঙতি ছিল না। এক শ’ টাকার একটা নোট বের করে দিলাম লোকটির হাতে । সে আমাকে ষাট টাকা ফেরত দিল। আমি আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলাম- ষাট টাকা ফেরত কেন? সে বলল, সে চল্লিশ টাকাই দাম বলেছে । আমি প্রতিবাদ করে বললাম , না , আপনি ত্রিশ টাকাতেই রাজি হয়ে গেছেন। কিন্তু সে আবারও বলল , না আমি চল্লিশ টাকাই দাম বলেছি। আমি আবার প্রতিবাদ করলাম যে কথাটা ঠিক না। তখন সে শুরু করল কসম কাটা। আল্লাহর কসম, খোদার কসম ইত্যাদি বলে সে জোর দিয়ে বলল – সে চল্লিশ টাকাই দাম বলেছে বেলের। আমি তো থ খেয়ে গেলাম। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না । এমন একটা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে একজন মুসলমান এমন ভাবে কিরা কসম কাটতে পারে। ভাবছিলাম বেল আমি নেব না , কিন্তু লোকটার কসমের ঠেলায় পড়ে সিদ্ধান্ত পাল্টালাম ও ষাট টাকা ফেরত নিয়ে চলে আসলাম। আসার পথে ভাবতে লাগলাম যারা আল্লাহকে এত ভয় পায়, দোজখকে এত ভয় পায়, এ ধরনের মুসলমানরা এত সহজে এরকম আল্লাহর , খোদার কসম দেয় কিভাবে? আবার নিজেই তার উত্তর খোজার চেষ্টা করতে লাগলাম। তা হলো- লোকটা নিশ্চয়ই এর পর আল্লাহর কাছে কেদে কেটে বলবে- হে আল্লাহ তুমি তো জান আমি গোনাহ করেছি মিথ্যা কথা বলে, স্রেফ পেটের দায়ে মিথ্যা কথা বলেছি। তুমি তো পরম করুনাময় । নিতান্ত দায় ঠেকে মিথ্যা কথা বলেছি। আমাকে মাফ করে দাও হে আল্লাহ। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল , নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবে। মুসলমানরা ঠিক এরকমভাবেই তাদের প্রত্যেকটা খারাপ কাজের জন্য একটা অজুহাত বের করে ফেলে সাথে সাথে, আর আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আর ভাবে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবে , কারন কোরানেই বার বার বলা হয়েছে- তওবা করলেই আল্লাহ তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। কিন্তু আমার দশ টাকা যে গচ্ছা গেল , তার কি হবে? আল্লাহ কি সেটা অন্য কোন ভাবে পুষিয়ে দেবেন ?