হজরত আয়েশার (রাঃ) সাথে এক রজনী
আকাশ মালিক
(আপডেইটেড পুরনো একটি লেখা – কোরান, হাদিস, তাফসির ও অন্যান্য ইসলামি বই থেকে নেয়া তথ্য অবলম্বনে কাল্পনিক সাক্ষাৎকার)
১ম পর্ব-
– আয়েশা, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার সাথে কিছুক্ষণ সময় দেয়ার জন্যে। অনেকের মুখে সেই কিশোরকাল থেকে আপনার রূপ, মেধা, প্রজ্ঞা ও প্রতিভার কথা শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবে কোনোদিন দেখিনি বিধায়, মনের মানসপটে আপনার অবয়ব কল্পনা করেছি কখনো দূর্গা, কখনো সীতা, কখনো পার্বতী, কখনো রাজলক্ষী, কখনো ম্যেরি মাগডিলান আবার কখনো ব্রুকশিল্ড এর রূপে। সাক্ষাৎ দর্শনের আশা নিয়ে নিদ্রা যাপন করেছি বহু রজনী। আজ নিশীতে আপনাকে পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমার কল্পনা একেবারে মিথ্যে হয়নি, আপনি সত্যিই সুন্দর। ১৫ শত বৎসর অতিবাহিত প্রায়, আজও ইসলামি জগতে মুসলিম নারীদের মধ্যে সম্ভবত আপনাকে নিয়েই সব চেয়ে বেশি জল্পনা, কল্পনা, আলোচনা সমালোচনা হয়। আজ নিশ্চয়ই আপনার কাছ থেকে আসল সত্যটা জানতে পারবো।
– আপনাকেও ধন্যবাদ। কথা হলো আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আমি চেষ্টা করবো, তবে সকলেই আমার কথা বিশ্বাস করবে এমনটা আশা করবেন না।
– কেনো?
– এই বিশ্বাস অবিশ্বাস, মানা না মানার সমস্যাটা ইসলামের প্রাথমিক যুগে যেমন ছিল, আজও তেমনই আছে। হজরত আলি আমার বাবাকে, হজরত ওমরকে, হজরত উসমানকে মানতেন না, আমি আলিকে মানতাম না, মুয়াবিয়াও আলিকে মানতেন না। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের যুগের ইসলামের তুলনায় আপনাদের যুগের ইসলাম অনেক শান্তিপূর্ণ, অনেক মানবিক।
– আচ্ছা থাক, আমরা সেদিকে যাচ্ছিনা, আপনার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো–
– আমি জানি।
– কী জানেন?
– আমার বিয়ের বয়স আর জঙ্গে জামাল।
– জানলেন কীভাবে?
– ঐ যে বললেন, মনের মানসপটে আমার অবয়ব কল্পনা করে সাক্ষাৎ দর্শনের আশায় নিদ্রা যাপন করেছেন বহু রজনী?
– হ্যাঁ, বিয়ের বয়স আর জঙ্গে জামাল আলোচনায় আসবে তবে আজ আপনার কাছ থেকে মে’রাজের কাহিনি ও অন্যান্য কিছু বিষয়ও জানতে চাইবো। আচ্ছা এবার পাঠকদের অবগতির জন্যে আপনার সংক্ষিপ্ত বংশ-পরিচয় দিয়ে শুরু করা যাক।
– আমার নাম আয়েশা বিনতে আবু বকর। বাবার আসল নাম আবুল কা’বা, ডাক নাম আবু বকর। দাদার নাম উসমান, (খলিফা উসমান নন) দাদার আরেক নাম ছিল আবু কাহাফা। আমার দাদীর নাম সালমা (উম্মে সালমা নন) লোকে তাঁকে উম্মুল কাহির বলে ডাকতো। কোরায়েশ বংশের বনি তায়িম গোত্রে ৬১৪ খৃষ্টাব্দে আমার জন্ম। লোকে আমাকে আয়েশা সিদ্দিকা বলে ডাকেনো। সিদ্দিকা (সত্যবাদী নারী) আমার উপাধি। এই উপাধি আমার স্বামী মুহাম্মদ আমাকে দিয়েছিলেন, লোকে যখন আমার উপর ব্যভিচারিণীর অপবাদ রটনা করেছিল। আমার বাবা ছিলেন আমার স্বামী মুহাম্মদের দুই বৎসরের ছোট, আর আমি ছিলাম স্বামীর চুয়াল্লিশ বৎসরের ছোট।
– অর্থাৎ মুহাম্মদ (দঃ) কর্তৃক ইসলাম ঘোষণার চার বৎসর পর আপনার জন্ম, আপনি জন্ম সুত্রে মুসলমান?
– জ্বী, আমি জন্ম সুত্রেই মুসলমান, আমার স্বামী ৬১০ খৃষ্টাব্দে ইসলাম ধর্ম ঘোষণা দিয়েছিলেন।
– আপনি কি কোনদিন তাঁর সাথে আপনার বিয়ের কথা ভেবেছিলেন?
– বিয়ের পরেও ভাবতে পারিনি যে আমার বিয়ে হয়েছে, আগে ভাববো কোত্থেকে?
– কতো ছিল বয়স?
– আট বৎসর। আসলে ওখানে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলনা।
– আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিল?
– ঠিক বয়ফ্রেন্ড নয় তবে একজন মানুষকে আমি জানতাম, তাকে আমার ভাল লাগতো। বয়সে আমার চেয়ে সামান্য বড় ছিল।
– নামটা জানতে পারি?
– জুবায়ের ইবনে মোতা’ম।
– তার সাথে বিয়ে হলোনা কেনো?
– বাবা নিজেই তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হলোনা।
– মুহাম্মদের কাছে আপনি, না আপনার বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন?
– আমি প্রস্তাব দেবো কি? আট বছরের মেয়ে একান্ন বছরের পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে শুনেছেন কোনোদিন? আমার বাবাও তাঁর কাছে যান নি, মুহাম্মদ নিজেই বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন।
– আপনার বাবা রাজী হয়ে গেলেন?
– প্রথমে রাজী হন নি। উনি তো আবার সম্পর্কে আমার চাচা ছিলেন। মুহাম্মদকে আমি চাচা ডাকতাম। প্রস্তাব শুনে হতভম্ব বাবা উনাকে যখন বললেন, ‘কিন্তু মুহাম্মদ, আমি যে তোমার ভাই হই, আয়েশা যে তোমার ভাতিজী!’! উনি বললেন, ‘আল্লাহর কিতাব ও ধর্মানুযায়ী আপনি আমার ভাই হন, কিন্তু আয়েশা আমার জন্যে বৈধ।
– ব্যস, আপনার বাবা মেনে নিলেন?
– না, তবুও মানেন নি, কিন্তু এরপর উনি (মুহাম্মদ) যে কথা বললেন তা আমার বাবার ধর্ম-বিশ্বাস, মান-সম্মান, জীবন-মরণ, আত্মমর্যাদার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
– প্রাণ নাশের হুমকি?
– আরে না, উনি বোকা নাকি, আমার বাবাকে হুমকি দেবেন? আর হুমকি দেয়ার মতো বাহুবল, জনবল তাঁর তখনও ছিলনা। তিনি বললেন, আল্লাহর নাকি আমাকে পছন্দ হয়ে গেছে, স্বয়ং আল্লাহই ঘটক হয়ে তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
– আপনার বাবার কাছে?
– ধুর ছাই। আমার বাবা কি ইব্রাহিম পয়গাম্বর ছিলেন নাকি যে, সপ্নে দেখবেন আপন ছেলে কোরবানি দিতে? একবার নয়, দুইবার নয়, পুরো তিনবার মুহাম্মদ আমাকে সপ্নে দেখেছেন। তিনি সপ্নে দেখলেন, একেবারে বেহেস্তি সিল্কী রেশমী কাপড় দিয়ে আমাকে সাজিয়ে কোলে করে নিয়ে জিব্রাইল তাঁর সামনে হাজির হয়ে বলছেন- ‘মুহাম্মদ তোমার জন্যে বেহেস্তি উপহার’। মুহাম্মদ জিব্রাইলকে বললেন, ‘কাপড় উঠাও’। অমনি দেখতে পেলেন, নববধুর সাজে ঘোমটা মাথায় আমি জিব্রাইলের কোলে বসে আছি।
– আপনার বাবা বিশ্বাস করে ফেললেন? তিনি বুঝি খুবই সরল প্রকৃতির ছিলেন?
– বাবাকে সরল প্রকৃতির বলবোনা, কারণ তিনি একাধারে একজন সফল ব্যবসায়ী, কম্যুনিটি লিডার ও সর্বোপরি একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। সরল প্রকৃতির মানুষের পক্ষে ওগুলো সম্ভব হয়না। তবে বাবা একজন অন্ধবিশ্বাসী ছিলেন।
– কী রকম?
– বাবা কেমন অন্ধবিশ্বাসী ছিলেন তার একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ইসলাম ঘোষণার তখন দশ বৎসর চলছিল, আমার বয়স তখন ছয়। দশ বৎসর পূ্র্বে অতি নীরবে মক্কায় মুহাম্মদ তাঁর নতুন ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছিলেন। এ নিয়ে উথাল পাতাল অনেক ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে ধুলি ধুসরিত মরুভুমির উপর দিয়ে। হঠাৎ একদিন প্রত্যুষে মানুষ শুনতে পেলো, মুহাম্মদ বলছেন যে, তিনি বিগত রাতে এই সীমাহীন আকাশ, অগণিত তারা-নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ, ধুমকেতু, নিহারীকা অতিক্রম করে, সাত আকাশ সাত জগত পাড়ি দিয়ে, স্বর্গ-নরক পরিদর্শন করে, আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ বৈঠক করে দুনিয়ায় ফিরে এসেছেন। অনেকেই ভাবলেন, মুহাম্মদ এবার নিজ হাতে তাঁর ধর্মের উপর কাফন পরিয়ে দিয়েছেন। কিছু লোক আমার বাবার কাছে এসে বললেন, ‘আবু বকর, এখন বুঝলেন তো আপনার বন্ধুটি যে আপাদমস্তক এক পাগল ছাড়া আর কিছু নয়, শুনেছো সে কী বলছে? তার পায়ে এবার জিঞ্জির পরাও’। বাবা বললেন, ‘মুহাম্মদ মিথ্যে বলেন নি’।
– আপনার বাবা জিজ্ঞাসাই করেন নি, মুহাম্মদ কী বলছেন?
– না, বাবা চোখ বন্ধ করে তাদেরকে বলে দিলেন যে, নবি যা বলছেন তা একশো ভাগই সত্য। লোকে বললো, বাবার ব্রেইন ওয়াশড হয়ে গেছে।
– নবি যদি বলতেন যে, তিনি আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত করতে পারেন?
– সকল আগে চাঁদের দিকে না তাকিয়েই আমার বাবা বলতেন, হ্যাঁ নবি তা পারেন।
– কিন্তু এটা তো অন্ধবিশ্বাস।
– সে কারণেই তো বাবা সেদিন হতে নবির কাছ থেকে সিদ্দিক (সত্যবাদী) উপাধি লাভ করেন। আজ আপনারা জানেন, এক সৌ্রজগত থেকে আরেক সৌ্রজগতে পৌছুতে সব চেয়ে গতিশীল আলোর তিরিশ বিলিয়ন আলোকবর্ষ সময় লাগে। আপনাদের আজিকার সময়ের মানুষের মতো সে যুগের মানুষ মহাকাশের পরিধি, এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সির দুরত্ব, শব্দ ও আলোর গতি, আলোকবর্ষ এসমস্ত জানতোনা। ঘটনা শুনার জন্যে কৌ্তুহলী মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এসে জড়ো হলো। অনেক সন্দিহান মুসলমান ভাবলেন, নবিজি হয়তো সপ্নযোগে আকাশ ভ্রমন করেছেন। কিন্তু তিনি যখন দাবী করলেন যে, তিনি স্বশরীরে মাসজিদুল আকসা হয়ে সপ্তম আকাশ ভ্রমন করে এসেছেন, লোকে প্রশ্ন করলো-‘মাসজিদুল আকসার দরজা জানালা কয়টা দেখেছেন’।
– মুহাম্মদ সঠিক বলে দিলেন?
– না, তিন দিন সময় নিয়েছিলেন।
– কেনো, এখানে সময়ের কী প্রয়োজন?
– আরে সাহেব, সেখানে বড়বড় ইহুদি খৃষ্টান ধর্মযাজকগন উপস্থিত ছিলেন। হুট করে একটা উত্তর দেয়া কি সঠিক হতো?
– আচ্ছা, শেষ পর্যন্ত নবি কি সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিলেন?
– যে আল্লাহর নিমন্ত্রণ রাখতে গিয়ে এমন সমস্যার সৃষ্টি হলো, তিন দিন পরে সেই আল্লাহই তার বন্ধুকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসলেন। জিব্রাইলকে অর্ডার দিলেন, সম্পূর্ণ জেরুজালেম শহর সহ মাসজিদুল আকসা অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাসের ছবি তার বন্ধুর চোখের সামনে তোলে ধরতে। ছবি দেখে নবি এক এক করে গুনে গুনে বলে দিলেন বায়তুল মোকাদ্দাসের কয়টা দরজা জানালা ছিল।
– আয়েশা, মাসজিদুল আকসা অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাস এর মা’নেটা কী? মাসজিদুল আকসা আর বায়তুল মোকাদ্দাস কি একই জায়গা?
– হ্যাঁ, ঐ রাতে মাসজিদুল হারাম অর্থাৎ মক্কা থেকে মাসজিদুল আকসা অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে গিয়ে নবিজি নিজে ইমাম হয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়েছিলেন। সেই রাতে তার পেছনে মুক্তাদি ছিলেন দুই লক্ষ তেইশ হাজার নয় শত নিরান্নব্বইজন পয়গাম্বর ও সাত আকাশ সাত জমিনের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ফেরেস্তা।
– কিন্তু আয়েশা, মাসজিদুল আকসা অর্থ তো বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ নয়, আর ঐ নামে তখন জেরুজালেম শহরে বা বেতলিহামে কোন মসজিদই ছিলনা।
– কোরানিক প্রমান চান? সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতটি দেখুন- ‘সকল মহিমা তাঁর যিনি তাঁর বান্দাকে ভ্রমন করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে দূরবর্তি মসজিদে, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম মঙ্গলময়, যেন আমরা তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি স্বয়ং সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’।
– আয়েশা এ একটা বাক্য হলো? ‘সকল মহিমা তাঁর যিনি তাঁর বান্দাকে ভ্রমন করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে দূরবর্তি মসজিদে, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম মঙ্গলময়’। এখানে তাঁর কে, যিনি কে, আর আমি কে? এর পরে ‘নিশ্চয়ই তিনি স্বয়ং সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’। এখানে তিনি কে, আর সমস্ত বাক্যে বক্তা কে? আল্লাহ কি নিজেই নিজের প্রশংসা করছেন, নিজেই নিজেকে বলছেন আমি, তিনি, যিনি, সে, তার? আচ্ছা যাক, আমরা আলোচনা করছিলাম মাসজিদুল আকসা অর্থ কি বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ নিয়ে। কোরান যদি ইতিহাস বিকৃত করে তাহলে একদিন ধরা পড়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে তাই বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চাই। আমরা ইতিহাসে পাই, ৭০ খৃষ্টাব্দে সুলাইমানের মন্দির রোমানগন ধ্বংস করে ফেলেছিল। এর পর থেকে সেখানে কোন গির্জা, মসজিদ, মন্দির নির্মিত হয়নি। ৬২১/২২ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মদ যখন তার মে’রাজের ঘটনা কোরানে লেখেন তখন জেরুজালেম ছিল খৃষ্টানদের করতলে। ঐ সময় সেখানে কোন মুসলমানের বসতি ছিলনা। হজরত ওমর (রাঃ) কর্তৃক জেরুজালেম দখল করার পর, আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান ৬৯১ খৃষ্টাব্দে, নবি মুহাম্মদের মৃত্যুর ৫৭ বৎসর পরে মাসজিদুল আকসা নির্মিত করেন। আচ্ছা, কোরানে কি মে’রাজের ঘটনার বিষদ বর্ণনা আছে?
– জ্বী না, বিস্তারিত নেই তবে তার উল্লেখ আছে।
– আপনি নিশ্চয়ই ঐ অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি জানেন?
– শুনবেন? রজনী ভোর হয়ে পূবাকাশের সূর্য মাথার উপরে এসে যাবে, কাহিনি শেষ হবেনা।
– আপনার কাছ থেকে ঘটনাটি শুনার লোভ সামলাতে পারছিনা।
– ওকে। ‘নক নক, হু ইজ দেয়ার? ইটস মি, জিব্রাইল—‘
– আয়েশা, প্লিজ উই হেভ নো টাইম ফর জৌক। রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে——
– একটা প্রশ্ন করি।
– অবশ্যই।
– আরব্য উপন্যাস পড়েছেন?
– জ্বী পড়েছি।
– সিন্দবাদের কাহিনি?
– হ্যাঁ পড়েছি।
– পাতালপূরী রাজকন্যার কেচ্ছা?
– জ্বী।
– শুয়োরাণী-দুয়োরাণী?
– তাও শুনেছি।
– ঠাকুর মা’র ঝুলি?
– জ্বী পড়েছি।
– কমলা রাণীর দীঘি?
– ওটা আবার কী?
– ওমা, বলেন কী, সিলেটের মানুষ হয়ে সিলেটের ইতিহাস জানেন না?
– ও আচ্ছা, সেই কমলা রাণীর দীঘি? সেটা তো ইতিহাসে থাকেনা।
– আপনাকে মে’রাজের কাহিনি শুনাবো না।
– কেনো?
– আপনি বাংলার মানুষ, ঐ সমস্ত কেচ্ছা কাহিনি জানার পর মে’রাজের কাহিনি শুনে বিশ্বাস করবেন না।
– আমার জন্যে নয় তো, নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাই।
– ওকে, ইফ ইউ ইনসিস্ট। হেয়ার উই গো-
‘কসম সেই সকল নক্ষত্রের যারা অস্তমিত হয় ——- আপনি হাসলেন কেনো?
– কাম অন আয়েশা, নক্ষত্র তো কখনও অস্তমিত হয়না। ওরা সব সময়েই আকাশে আছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় নক্ষত্র দেখা যায়না। পূর্ণ সূর্য-গ্রহণকালে দিনের বেলায়ও কিন্তু তারা দেখা যায়।
– আরে সাহেব, ওটা আমার মুখের কথা নয়, সুরা নজম পড়ে দেখুন ওটা কোরানের আয়াত। ঐ সুরায় মে’রাজের কাহিনি লেখা আছে। আমি জানি আপনাদের যুগের মানুষকে কনভিন্স করা মুশকিল।
– স্যরি, আমি আর আপনাকে ইনটারাপ্ট করবো না, প্লিজ ক্যারি অন।
– ‘কসম সেই সকল নক্ষত্রের যারা অস্তমিত হয়’
তোমাদের সাথী পথভ্রস্ট হোন নি, বিপথগামীও হোন নি
এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
ইহাই কোরান যা প্রত্যাদেশ হয়,
তাঁকে শিক্ষা দান করেন যিনি এক মহা শক্তিশালী,
সে সহজাত শক্তি সম্পন্ন, নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পায় উর্দ্ধ দিগন্তে।
তারপর সন্নিকটস্থ হয়ে অবনত হলেন।
তখন ব্যবধান ছিল দুই ধনুকের কিংবা তার চেয়েও কম।
তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা করলেন।
রাসুল মিথ্যে বলেন নি, তিনি যা দেখেছেন
তোমরা কি তর্ক করবে তাঁর সাথে, যা তিনি দেখেছেন?
নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল
সিদরাতুল মুনতাহার অতি সন্নিকটে
যার ধারে অবস্থিত স্বর্গোদ্দান।
সিদরাতুল মুনতাহা বৃক্ষটিকে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল
যা আচ্ছাদিত করার।
তাঁর দৃস্টি বিভ্রান্তি ঘটেনি, এবং সীমা লঙ্গনও করেন নি—
– আয়েশা, একটু দাঁড়ান প্লিজ। ঘটনার এই কাব্যিক বর্ণনা বুঝতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ প্রথমে তার নিজের সৃষ্টি তারকার কসম খাচ্ছেন কেনো? পরবর্তি সবগুলো বাক্যই যেন তৃতীয় কোন ব্যক্তির সাক্ষী মনে হয়। না হলে আল্লাহ কেনো বলবেন- তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা করলেন। বাক্যটা তো এভাবে হওয়া উচিৎ ছিল- তখন আমি আমার বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা করলাম। এই সুরার প্রত্যেকটা বাক্যেই দেখা যায় আল্লাহ নিজেকে তিনি, যিনি, তার, সে, বলে উল্লখ করেছেন।
– আপনি যদি এভাবে প্রশ্ন করেন তাহলে তো মে’রাজের কাহিনি বলা হবেনা।
– ওকে, আই এম স্যরি, প্লিজ গো এহেড।
– সুরা নজমে মে’রাজের কথা এইটুকুই বলা হয়েছে। আর সুরা বনি ইসরাইলে যা বলা হয়েছে তা তো আগেই উল্লেখ করেছি যেমন- ‘সকল মহিমা তাঁর যিনি তাঁর বান্দাকে ভ্রমন করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে দূরবর্তি মসজিদে, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম মঙ্গলময়’। এখানে আপনি আবার প্রশ্ন করে বসবেন না যেন, সুরা নজম মক্কায় নাজিল হওয়ার এতো বৎসর পরে সুরা বনি ইসরাইল মদিনায় নাজিল হয়ে কোরানে তা ১৭ নুম্বর, আর সুরা নজম ৫৩ হলো কীভাবে? সপ্নে যদি কোনদিন খলিফা উসমানের দেখা পান, আপনি তাকে কোরান নিয়ে প্রশ্ন করবেন।
– জ্বী আচ্ছা, কোরান নিয়ে আর আপনাকে কোন প্রশ্ন করবোনা, প্রমিজ। আপনি মে’রাজের কাহিনি বলে যান।
– জিব্রাইলকে অর্ডার দেয়া হলো- ‘হে জিব্রাইল, সত্তর হাজার ফেরেস্তা নিয়ে এক্ষুনি সোজা আমার বন্ধু মুহাম্মদের দরজার সামনে গিয়ে উপস্থিত হও। আর তুমি মিকাইল, জ্ঞানভান্ডার থেকে সকল অপ্রকাশ্য বাতিনি জ্ঞান নিয়ে সত্তর হাজার ফেরেস্তা সহ মুহাম্মদের দরজার সম্মুখে স্টান্ড-বাই থাকবে। আজরাইল আর ইসরাফিল, তোমরা দুই জন জিব্রাইল আর মিকাইলকে ফলো করবে। জিব্রাইল, চাঁদের আলো বাড়িয়ে দাও সূর্যের মতো করে, আর নিহারীকার সকল নক্ষত্রের আলো বাড়িয়ে দাও চাঁদের আলো দিয়ে।
– আয়েশা, ওয়েইট এ মিনিট প্লিজ। বিজ্ঞানের বারোটা বেজে যাচ্ছে। ‘চাঁদের আলোয় প্রজ্বলিত হবে নক্ষত্র’ এর মা’নেটা কী। চাঁদের কি আলো আছে?
– শেল আই স্টপ হেয়ার?
– নো, নো, প্লিজ ক্যারি অন।
– জিব্রাইল জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রভু কিয়ামত কি আসন্ন’? আল্লাহ বললেন ‘জিব্রাইল আজ আমি আমার বন্ধু মুহাম্মদকে সর্বকালের, সর্ববৃহৎ, সর্বশ্রেষ্ট রিসেপশন দেবো। তাঁকে আমার কছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। আমি তাঁকে অতি গোপন অন্তরদৃস্টি জ্ঞান দান করবো’। জিব্রাইল জিজ্ঞেস করলেন ‘প্রভু, জানতে পারি, গোপন জ্ঞানটা কী’? আল্লাহ বললেন ‘দাসের কাছে মনিবের গোপন কথা বলা যায়না। আর একটা বাক্য ব্যয় না করে, তোমাকে যা আদেশ দেয়া হয়েছে তুমি তা’ই করো’। আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে আকাশের কোটিকোটি ফেরেস্তা অপরূপ সাজে সেজে জিব্রাইলকে অনুসরণ করলেন। যথা সময়ে জিব্রাইল তাঁর ফেরেস্তাদল নিয়ে নবিজির দরজার সম্মুখে এসে উপস্থিত হলেন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিব্রাইল ডাক দেন- ‘কুম ইয়া সাইয়্যিদি- ওঠো হে সরদার ঘুম থেকে ওঠো। নিমন্ত্রণ এসেছে রাজাধিরাজ প্রভুর কাছ হতে। মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে বহুদূর যেতে হবে, যেথায় যাওয়ার কোন প্রাণীর সাধ্য নেই। আজ রাতে আসাধ্য সাধন হবে, আসুন মহাপ্রভুর নিমন্ত্রণ গ্রহণ করুন’। নবিজি চোখ মেলে তাকান। আকাশের সীমানায় যতদূর চোখ যায়, নবিজি তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও এক তিল পরিমান জায়গা শুন্য নেই। আকাশ থেকে ভূ-পৃষ্ঠ পর্যন্ত চতুর্দিক শুভ্রবস্ত্র পরিহিত লক্ষকোটি ফেরেস্তায় ঘেরা। দরজার সামনে জিব্রাইলের পেছনে লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন হরেক রকমের প্রেজেন্টেস হাতে ৭০ হাজার স্বর্গদূত। সামনেই অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে অত্যাশ্চর্য সাজে সজ্জিত একটি স্বর্গীয় জীব। জীবটির নাম ‘বোরাক’। দেহ তার ঘোড়ার আকৃতির, চেহারা যেন ষোলকলায় পরিপূর্ণ এক যুবতি রমণী। ঘাড়ের কেশব যেন মেঘ বরণ কন্যার রেশমী কালো চুল, হরিণীর মতো টানাটানা কাজল কালো দুটো আঁখি। ধনুকের মতো অধর দুটি আবীর রাঙ্গায় রঞ্জিত, স্ফটিকের মতো সাদা, তুলার মতো তুলতুলে নরম দুটি কান। রেশমী কাপড়ে সোনার ডোরা দিয়ে তৈরি তার পিঠের চাদর। চাদরের্ নিচে নরম গালিচা, যার চতুর্দিকে ঝুলে আছে সবুজ ঝিনুক পাথরের মালা। লেজে তার ময়ূর পুচ্ছ। সোনার চেইনের দুই দিকে হীরা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তার লাগাম। হলুদ রঙ্গের ডায়মন্ড দিয়ে তৈরি তার মাথার মুকুট যার চারিদিকে আছে চকচকে চুন্নি পাথর বা রক্তবর্ণ মাণিক। স্বর্ণালী রঙের ঝিনুক পাথর দিয়ে মুকুটে লেখা আছে- ‘দেয়ার ইজ নো গড বাট আল্লাহ, এন্ড মুহাম্মদ ইজ দ্যা মেসেঞ্জার অফ গড’। নবিজি কেঁদে উঠলেন। জিব্রাইল জিজ্ঞেস করেন ‘হে আল্লাহর রাসুল আপনি কাঁদছেন কেনো’? রাসুল বললেন ‘জিব্রাইল আমার উম্মতগণকে ছেড়ে আমি কোথায় যাচ্ছি’? জিব্রাইল সান্তনা দিয়ে বলেন ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, শুধু আপনার উম্মতদের মঙ্গলার্থেই আজ রাতের পার্লামেন্ট অধিবেশন’। শুনে নবিজি যারপর নেই খুশি হলেন। এ পর্যায়ে এসে ফেরেস্তাগণ নবিজির শানে একটি ওয়েলকাম বন্দনা গাইলেন-
স্বর্গ হতে এনেছি মালা
তব নূরে ভুবন উজালা
পরহে গলে এ ফুলমালা
হে নবিজি কামলিওয়ালা।
এই নির্দিষ্ট বোরাকটিকে চয়েস করেছিলেন জিব্রাইল নিজে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতিকল্পে জিব্রাইল বোরাক ফ্যাকটোরিতে গিয়ে দেখেন, একটি জায়গায় ১৪ কোটি বোরাক খুশি মনে আল্লাহর নাম জপ করছে। প্রতিটি বোরাকের মাথার মুকুটে লেখা- ‘দেয়ার ইজ নো গড বাট আল্লাহ, এন্ড মুহাম্মদ ইজ দ্যা মেসেঞ্জার অফ গড’। জিব্রাইল লক্ষ্য করলেন, অদূরে একটি বোরাক একাএকা বসে কাঁদছে। তিনি বোরাকটিকে জিজ্ঞেস করলেন ‘হে বোরাক, তুমি এতো বিষণ্ন মনে কাঁদছো কেনো’? বোরাক উত্তর দিল ‘ওহে জিব্রাইল, ৪০ হাজার বছর আগে এই বেহেস্তে আমি একজন মানুষের পবিত্র নাম শুনেছিলাম। সেদিন থেকে ঐ মানুষটিকে দেখার তৃষ্ণায় আমার দানা-পানি বন্ধ হয়ে গেছে, আমি কোন কিছু খাওয়ার রুচী হারিয়ে ফেলেছি’। জিব্রাইল বললেন ‘আমি তোমার প্রিয় সেই মানুষটিকে তোমার পিঠেই সওয়ার করাবো’।
জিব্রাইলের একহাতে একটি বেহেস্তি মুকুট, অন্য হাতে একটি পেয়ালা। জিব্রাইল মুকুটটি নবিজির হাতে তুলে দিলেন। নবিজি জিজ্ঞেস করেন ‘জিব্রাইল, এটা কী’?
জিব্রাইল বলেন, হুজুর, যখন এই মহাবিশ্বের কিছুই ছিলনা, তখন এই মুকুটটি তৈরি করে আল্লাহ বেহেস্তের দারোয়ান রেদওয়ান ফেরেস্তার তত্বাবধানে রেখেছিলেন বেহেস্তের একটি রুমে, একদিন আপনার মাথায় মুকুটটি পরানোর জন্যে। চল্লিশ হাজার প্রহরী ফেরেস্তা চল্লিশ হাজার বৎসর ঐ রুমকে সর্বক্ষণ পাহারা দিয়েছেন।
– কেনো, কেনো? বেহেস্তে পাহারাদারের কী দরকার? চুরি ডাকাতির ভয় ছিল বুঝি?
– আমি জানিনা। ওটা আপনি আল্লাহকে জিজ্ঞেস করবেন।
– আচ্ছা তারপর কি হলো বলুন।
– নবিজি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন ‘আর তোমার হাতের এই পেয়ালায় কী জিব্রাইল’? জিব্রাইল বললেন, ’স্বর্গীয় সুধা। রেদওয়ান ফেরেস্তা চল্লিশ হাজার বছর পাহারা দিয়েছেন এই পেয়ালা। আজ রাতে আল্লাহর অনুমতিক্রমে রেদওয়ান এই পেয়ালা থেকে এক চুমুক সুরা পান করে ইসরাফিলের হাতে দেন। ইসরাফিল এক চুমুক সুরা পান করে পেয়ালা মিকাইলের হাতে দেন, মিকাইল এক চুমুক সুরা পান করে আজরাইলের হাতে দেন। আজরাইল এক চুমুক সুরা পান করে পেয়ালা নিয়ে যান বেহেস্তের হুর-গেলেমানদের কাছে। চল্লিশ হাজার হুর-গেলেমান এই পেয়ালার সুরা দিয়ে আজ রাতে স্নান করে সুন্দর থেকে আরো সুন্দরতম হয়েছেন। তাদের শরীর বিধৌত শরাব পুনরায় পেয়ালায় ভরে নিয়ে এসেছি আপনাকে এই শরাব দিয়ে গোসল করায়ে কিছুটা শরাব পান করাবো বলে’। নবিজি ঐ স্বর্গীয় সুরা দিয়ে গোসল করে, কিছুটা সুরা পান করে যখন বোরাকে আরোহন করলেন, সঙ্গে সঙ্গে অগণিত ফেরেস্তাদের গগন বিদারী করতালিতে আকাশ থেকে মর্ত্য-পূরী ভেদ করে গর্জন-ধ্বনি ভেসে উঠলো।
বোরাকের লাগাম হাতে ড্রাইভার জিব্রাইল ইঞ্জিনে স্টার্ট দিলেন। বোরাক মহাশুন্যে পা বাড়ালো। চোখের পলকে মধ্য-মরুভুমির এক জায়গায় এসে জিব্রাইল ব্রেইক কষলেন। ‘আমরা কোথায় এলাম জিব্রাইল’? বিষ্ময়ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন মুহাম্মদ। জিব্রাইল বললেন, ‘নেমে আসুন হে সম্মানিত অথিতি। এই জায়গার নাম ইয়াতরিব। একদিন এর নাম হবে মদিনা, আর এটাই হবে ক্যাপিটাল সিটি অফ ইসলাম। এখান থেকেই সারা পৃথিবীতে আপনি ইসলাম বিস্তার করবেন’। যাত্রার সিডিউল অনুযায়ী এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে বোরাক দ্বিতীয় স্টপে এসে থামলো। নবি জিজ্ঞেস করেন, ‘এ কোন্ জায়গা জিব্রাইল’? জিব্রাইল বলেন ‘এর নাম সিনাই। আসুন, ঘুরে দেখুন সেই ঐতিহাসিক পবিত্র স্থান, যেথায় এসে আপনার প্রভু, মুসা নবির সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন’। তারপর আরো এক সেকেন্ডে বোরাক পৌছুলো তৃতীয় স্টপেজে। নবি জিজ্ঞেস করলেন ‘এবার আমরা কোথায় এলাম জিব্রাইল’? জিব্রাইল বলেন ‘এখন আমরা এসেছি ঈসা নবির জন্মভূমি জেরুজালেমের বেতলিহাম শহরে’। ঈসা নবির জন্মভূমি নবিজি খুশি মনে ঘুরে ঘুরে দেখলেন। বেহেস্তি কাপড় পরিহিত একজন যুবক আর একজন যুবতী এসে নবিজির কপালের মধ্যবর্তিস্থানে চুম্বন দিয়ে গেলো। নবিজি জিজ্ঞেস করলেন ‘ওরা কারা ছিল’? জিব্রাইল বললেন ‘আপনার দুজন বেহেস্তি উম্মত’। পরক্ষণেই উপস্থিত হলেন শারাবখানার সা’কির বেশে একটি থালায়, দুধ, পানি ও শরাব ভর্তি তিনটি পেয়ালা হাতে অপরূপ সুন্দরী এক যুবতী নারী ফেরেস্তা। মুহাম্মদ থালা থেকে দুধের পেয়ালা তুলে নিলেন। নারী ফেরেস্তা পানি ও শারাবের পেয়ালা হাতে নিয়ে নবিজির কপালে চুম্বন দিয়ে চলে যায়। তারপর একটি স্বর্গীয় থালায় তিনটি রেশমী রুমাল নিয়ে উপস্থিত হলেন আরেকজন যুবতী ফেরেস্তা। নবিজি সাদা ও সবুজ রুমাল তুলে নিলেন। যুবতী কালো রুমাল ফেরত নিয়ে নবিকে সালাম জানিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। বনি-ইসরাইলদের মাটিতে হাটতে নবির বেশ ভাল লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে তিনি জেরুজালেমের সুলাইমান মন্দিরে এসে উপস্থিত হলেন। এরই নাম মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মোকাদ্দাস। মুহাম্মদ লক্ষ্য করলেন, তাঁর পেছনে দুই লক্ষ তেইশ হাজার নয় শত নিরান্নব্বইজন পয়গাম্বর দাঁড়িয়ে আছেন। আর প্রত্যেক নবির পেছনে চল্লিশ হাজার ফেরেস্তা। এখানে উল্লেখ্য যে, হজরত নুহের (আঃ) কিসতি বা নৌকা দুই লক্ষ তেইশ হাজার নয় শত নিরান্নব্বইটি তক্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রত্যেকটি তক্তায় এক একজন পয়গাম্বরের নাম লেখা ছিল, আর গলুইয়ের উপর লেখা ছিল আমাদের নবি মুহাম্মদের নাম। যাই হউক, আগত সকল নবি ও ফেরেস্তাদের উদ্দেশ্যে জিব্রাইল এখানে একটি স্বাগতম বক্তব্য প্রদান করলেন-
‘এই সেই মহা মানব, যার জন্ম না হলে আকাশ-জমিন, স্বর্গ-নরক, গাছ-বৃক্ষ, জীব-জন্তু, জল-বায়ূ, জিন-ফেরেস্তা, নবি-পয়গাম্বর, কোন প্রকার জলীয়-বায়বীয় পদার্থের সৃষ্টি হতো না। ইনিই আখেরি নবি, রাসুলগনের সর্দার, জগতের শান্তির প্রতীক, সৃষ্টির সেরা, আল্লাহর শ্রেষ্ট বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (দঃ)। তার সম্মানে আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আপনাদেরকে জানাই উষ্ণ স্বাগতম’।
তারপর বক্তব্য নিয়ে আসেন আদি পিতা হজরত আদম (আঃ)। নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে বাবা আদম আল্লাহর আদেশ অমান্য করে গন্দম খাওয়ার কথা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, ৩৬০ বৎসর কাঁদাকাঁটি করে সেদিন আরাফাতের ময়দানে যদি নবি মুহাম্মদের দোহাই না দিতাম, আল্লাহ হয়তো আমাকে আর বিবি হাওয়াকে কোনদিনই মাফ করতেন না। তারপর পর্যায়ক্রমে কিনান শহরের মহাপ্লাবন, নমরুদের অগ্নিপরীক্ষা, নীলনদে ফেরাউনের শলীল সমাধি / পাহাড়ে প্রভু দর্শন, অন্ধের চক্ষুদান / মৃতের প্রাণ দান, এ সমস্ত বিষয়াদীর উপর সংক্ষিপ্তাকারে বক্তব্য নিয়ে আসেন যথাক্রমে হজরত নুহ (আঃ), হজরত ইব্রাহিম (আঃ), হজরত মুসা (আঃ) ও হজরত ঈসা (আঃ) । সব শেষে নবি মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর সমাপনী ভাষণে সকলের প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে, নিজে ইমাম হয়ে সকলকে নিয়ে দু’রাকাত নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে নবিজি যেই মাত্র পুনরায় বোরাকে আরোহন করলেন, মহাশুন্য থেকে এক বিকট ধ্বনি নবির কানে আসলো-
‘জান্নাত এবং জান্নাতের সকল বাগান সমুহ, দুধের নদ নদীগুলো, বৃক্ষের পাতা সমুহ, সকল ফেরেস্তা ও হুর-পরী-গেলেমানগণ, চুড়ান্ত সাজে সজ্বিত হয়ে মুহাম্মদের সম্মানে মাথা নত করো। সৃষ্টি আজ স্বার্থক হউক’।
নবিজি প্রশ্ন করেন,’জিব্রাইল এ কার কণ্ঠ’? জিব্রাইল বলেন ‘ইনি হজরত ইস্রাফিল। এই আওয়াজ-ধ্বনি যদি জগতের কোন জীব শুনতে পেতো, মানুষ সহ সকল জীব একসাথে বধীর হয়ে যেতো’। এর পরপরই মুহাম্মদ আরো একটি বিরাট আওয়াজ শুনতে পেলেন- ‘হে স্বর্গের সিড়িগুলো, জীবনে প্রথমবারের মতো মুক্তি পেয়েছো, তাড়াতাড়ি শুইয়ে পড়ো’। নবিজি জিজ্ঞেস করেন ‘এ কার কণ্ঠ জিব্রাইল’? জিব্রাইল উত্তর দেন ‘ইনি হজরত ইসমাইল’। চকচকে সোনা দিয়ে তৈরি স্বর্গের সিড়িগুলোর একপাশে লালচে আর ওপরপাশে সবুজ মুক্তা দিয়ে সাজানো। সিড়িগুলো প্রথম বেহেস্তের দরজা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাসের দরজা পর্যন্ত বিস্তৃত হলো। মোট সিড়ির সংখ্যা একশো। এক সিড়ি থেকে অপর সিড়িতে পৌছুতে সূর্যের আলোর সময় লাগে পাঁচশো হাজার বৎসর। বরণমালা হাতে প্রত্যেক সিড়িতে সত্তর হাজার করে লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন একএক রঙের কাপড় পরে একশো রঙের ফেরেস্তা। এই সিড়ির উপর আলো বিকিরণ করার জন্যে, চল্লিশ হাজার বছর আগে একটি লাইট-হাউস স্থাপন করা হয়েছিল প্রথম বেহেস্তের সদর দরজার সামনে। চল্লিশ হাজার বছর পর আজ রাতে এই প্রথম লাইটের সুইচ অন করা হলো। সাত আকাশ সাত জমিন ভেদ করে সেই লাইটের আলো এসে পড়লো বাইতুল মোকাদ্দাসের সিড়িতে—
কী হলো মালিক সাহেব? একেবারে নিশ্চুপ, কোন কথা নেই। আপনার ঘুম পেয়েছে বুঝি?
– না, না, ঘুম নয় আয়েশা। আমি একটা জায়গায় আটকা পড়ে গেছি। ঐ যে বললেন, স্বর্গীয় পেয়ালার শরাব দিয়ে চল্লিশ হাজার বেহেস্তি হুর-পরী গোসল করলো আর তাদের শরীর নির্গত শরাব দিয়ে মুহাম্মদ গোসল করলেন এবং কিছু শরাব পানও করলেন, এর মধ্যকার কেরামতিটা আমি বুঝি নাই।
– গঙ্গাস্নান করেছেন কোনোদিন?
– জ্বী না, শুনেছি মেয়েরা নাকি ওখানের জলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেশাব করেন।
– আপনি আস্ত একজন বোকা।
– জ্বী, আমারও তাই মনে হয়। আচ্ছা আয়েশা, বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে প্রথম বেহেস্তের দূরত্ব কতো মাইল জানেন?
– আমি জানবো কিসে? সে যুগে ক্যালকুলেটার, কম্পিউটার তো ছিল না, তবে হিসেবটা খুবই সহজ। আপনি কি জানেন, আলোর গতি প্রতি ঘন্টায় কতো মাইল?
– জ্বী জানি। ভকিইয়্যুমে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৮৬,২৮২,৪ মাইল কিংবা প্রতি ঘন্টায় ৫৭০৬১৬৬২৯,৩৮ মাইল।
– ব্যস। ৫৭০৬১৬৬২৯,৩৮ মাইল টাইমস ২৪ টাইমস ৩৬৫ টাইমস পাঁচশো হাজার টাইমস একশো মাইল, সমান বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে প্রথম বেহেস্তের দূরত্ব। হিসেব মিলেছে?
– জ্বী না, জলতল বর্ষা হয়ে গেছে।
– আমি জানি আপনি অংকে কাঁচা। এবার বুঝুন, বোরাকের স্পিড সেকেন্ডে কতো মাইল ছিল। সে যাই হউক, এক এক করে একশোটি সিড়ি অতিক্রম করে মুহাম্মদ প্রথম বেহেস্তের দ্বারপ্রান্থে এসে হাজির হলেন। ফেরেস্তাগন প্রত্যেক সিড়িতে দাঁড়িয়ে ফুলের তোড়া ও হাজার প্রকারের প্রেজেন্ট দিলেন। বোরাকের পিঠে, জিব্রাইলের কাঁধে পাহাড়সম উঁচু প্রেজেন্ট এর স্তুপ জমা হলো। নবিজি বললেন ‘ জিব্রাইল, এই প্রেজেন্ট গুলো আমি দুনিয়ায় ফিরে গিয়ে আমার উম্মতগণকে বিলিয়ে দেবো’। প্রথম বেহেস্তের সামনে এসে মুহাম্মদ দেখলেন, গেইটের সম্মুখে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ‘দারুস সালাম’। বেহেস্তের দরজা বন্ধ। জিব্রাইল দরজায় নক করলেন। নক, নক। ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো, ‘হু ইজ দেয়ার’? জিব্রাইল বললেন ‘ইটস মি, জিব্রাইল’। দরজা খুলে গেল। সাথে সাথে চল্লিশ হাজার বেহেস্তি যুবতী ফেরেস্তা সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে উঠলো- ‘ও নবি সা—লাম বা—রে বা—র—-‘
কী ব্যাপার, চমকে উঠলেন যে?
– কিছু না, বেদের মেয়ে জোছনা মনে পড়ে গেলো।
– আরে সাহেব, ওটা কি বাংলাদেশের বাইদানীদের সুর ছিল? সেই সুর, তাল, লয়, জগতের কোনো মানুষ পশু পক্ষী শুনতেও পারবে না, জানতেও পারবে না।
– দরকার নেই, প্লিজ ক্যারি অন।
– ‘দারুস সালাম’ বেহেস্তের দরজা ছিল দুই লক্ষ তেইশ হাজার নয় শত নিরান্নব্বইটি। প্রত্যেক দরজায় এক একজন নবির নাম লেখা। সামনেই ফুলেফলে সুসজ্বিত স্বর্গোদ্যান। পাখির কণ্ঠে সুমধুর গান, নদীর কলতান যেন নারী কণ্ঠে গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে মধুর হ্যামিং, বৃক্ষপল্লবীতে সুরের লহরী। অসংখ্য ছোটবড় সাইজের ডানাকাটা পরী নৃত্যের তালেতালে শুন্যাকাশে উড়ে বেরাচ্ছে। বাগানটির নাম ‘সামাউদ্দুনিয়া’। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বেহেস্তি শিল্পীগণ মুহাম্মদের মনোরঞ্জনে কয়েকটি গান পরিবেশন করলেন। পাঁচশো হাজার আলোকবর্ষ পথ এক সেকেন্ডে পাড়ি দিয়ে বোরাক দ্বিতীয় বেহেস্তের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। দরজা বন্ধ, জিব্রাইল দরজায় নক করলেন। নক নক। ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো, ‘হু ইজ দেয়ার’? জিব্রাইল বললেন ‘ইটস মি, জিব্রাইল’। দরজা খুলে গেল। এ ভাবে প্রত্যেকটি বেহেস্তে স্বর্গীয় রিসেপ্শন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বেহেস্তের নাম ‘দারুল কারার’ তৃতীয়টি ‘দারুল খুলদ’ চতুর্থটি ‘জান্নাতুল মাওয়া’ পঞ্চমটি ‘জান্নাতুল নাঈম’ ষষ্ঠটি ‘জান্নাতুল ঈদান’। ছয়টি বেহেস্তই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতো। নবিজি দেখলেন সকল মন্ত্রণালয়ের দফতরগুলোতে ওয়ার্কার, সেক্রেটারি সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। আমলাগণ আগেভাগেই সকল ফাইলপত্র ঠিকঠাক করে রেখেছিলেন। মুহাম্মদ সবগুলো ফাইলে চোখ বুলায়ে দেখলেন, কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। বাবা আদম থেকে আজ পর্যন্ত কতোজন মানুষ জন্ম নিল, কতোজন মারা গেল, কতোজন আগামীতে জন্ম নিবে, কোথায় ঝড়-বৃষ্টি, কলেরা-মহামারী, প্লাবন-ভুমিকম্প হবে সবকিছু পুঙ্খানুপুংখরুপে লিপিবদ্ধ করা আছে। ষষ্ঠ বেহেস্তে হুজরত মুসা (আঃ) বললেন ‘নবিজি, সংসদ অধিবেশনে আইন পাস করার সময় আপনার উম্মতের কথা স্মরণ করে বুঝেসুঝে দস্তখত দিবেন’।
বোরাক মুহাম্মদকে সপ্তম বেহেস্তে নিয়ে এলো। দরজা বন্ধ, জিব্রাইল দরজায় নক করলেন। নক নক। ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো, ‘হু ইজ দেয়ার’? জিব্রাইল বললেন ‘ইটস মি, জিব্রাইল’। দরজা খুলে গেল। এই বেহেস্ত অন্য সব বেহেস্ত থেকে আলাদা। খাঁটি মররুত মণি, পোখরাজ, চকচকে মুক্তা আর বিভিন্ন রঙের হীরা দিয়ে সাজানো তার চতুর্দিক। এখানে কতোজন ফেরেস্তা আছেন, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তবে অনুমান করে বলা যায়, মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টি, আকাশ পাতালের সকল জীবজন্তু, সকল গাছ-বৃক্ষ লতা-পাতা একত্রিত করলে যে সংখ্যা দাঁড়াবে, এই বেহেস্তের ফেরেস্তার সংখ্যা হবে তার দশগুন বেশি। প্রত্যেক ফেরেস্তার চেহারার আলো দুনিয়ার দশটি সূর্যের আলোর সমান। এরা সবসময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করেন। যখন এই ফেরেস্তাগণ আয়াতুল কুরসি পাঠ করা বন্ধ করে দিবেন তখন দুনিয়া তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি হারিয়ে ফেলবে। এ পর্যন্ত যারা বেহেস্তি হয়েছেন, সকল জিহাদি, আউলিয়া, দরবেশ, গাউস কুতুব সবাই এখানে উপস্থিত। সকলের কপালে প্রজ্বলিত আলোর চন্দ্রটিকা। বেহেস্তটির নাম ‘জান্নাতুল ফেরদাউস’। নবিজি জান্নাতুল ফেরদাউসের রূপ দেখে মুগ্ধ হলেন। আরো পাঁচশো হাজার আলোকবর্ষ পথ অতিক্রম করে বোরাক নবিজিকে নিয়ে এলো, সৃষ্টির শেষ সীমানায়, যেখানে অবস্থিত আছে এক বিরাট বৃক্ষ। বৃক্ষটির নাম ‘সিদরাতুল মোনতাহা’। গাছের পাতায় পাতায় বসা আছেন সাদা দবদবে খুবই পাতলা সিল্কের শাড়ি পরিহিত হাজার হাজার হুরপরী। গাছের সর্বোচ্চ ডালে বসা হজরত আদম ও মা হাওয়া (আঃ)। গাছটির ডেকোরেটর স্বয়ং আল্লাহ নিজে। ডালপালা পাতা-কুঁড়ি ফলফুল সবকিছু তাঁরই নূরের তৈরি। জিব্রাইল নবিজিকে নিয়ে গাছের ভিতরে ঢুকলেন। সে এক আজগুবি কান্ড। এখানেই আছে সৃষ্টির সকল মেক্যানিজম। আল্লাহর সৃষ্ট মহাবিশ্বের এমন কোনো বস্তু নেই যা এখান থেকে দেখা যায় না। বৃক্ষের ভেতর পরিদর্শন করে জিব্রাইল নবিজিকে নিয়ে বেরিয়ে এসে বললেন- ‘নবিজি, এবার আমাকে বিদায় দিতে হবে। এই বৃক্ষের অপর পাশে পাঁচশো কোটি পর্দাল আড়ালে আছে আল্লাহর সিংহাসন ‘লাওহে মাহফুজ’। অধীর আগ্রহে আল্লাহপাক, আপনার সাথে মোলাকাতের আশায় সেখানে বসে আছেন। একমাত্র আপনি ছাড়া কোনো নবি পয়গাম্বর কিংবা ফেরেস্তা কেউ সেখানে যেতে চাইলে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে’। মুহাম্মদ বোরাকের দিকে তাকান, বোরাক কথা কয়না, জিব্রাইলের দিকে তাকান, জিব্রাইল নীরব নিশ্চুপ। রাসুল ভয় পেয়ে গেলেন। নরম পায়ে ধীরে ধীরে তিনি সামনে পা বাড়ালেন। আল্লাহ তার বন্ধুর অবস্থা টের পেলেন। ভয় নিবারণের জন্যে আল্লাহ তাঁর কুদরতি হাতে নবির জিহবায় একটি আয়ূর্বেদী সঞ্জীবনী ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিলেন, যা ছিল বরফের চেয়েও বেশি ঠান্ডা, মধুর চেয়েও বেশি মিষ্ট।
– দাঁড়ান আয়েশা, আমার একটি কথা আছে।
– কী কথা?
– আপনি বলেছেন, একটি পর্দার ঘনত্ব পাঁচশো হাজার আলোকবর্ষ পথ। সেখানে পর্দা আছে পাঁচশোটি। পাঁচশো হাজার আলোকবর্ষ পথ টাইমস পাঁচশো, এতো লম্বা পথ নবিজি বোরাক ছাড়া অতিক্রম করবেন কীভাবে?
– ঐ ট্যাবলেটের কেরামতি। একই সাথে আল্লাহ মুহাম্মদের ডান কানে একটি ও বাম কানে একটি শীতল ড্রপ ঢেলে দিয়েছিলেন। এখন আর নবি রক্তমাংসের সাধারণ মানুষ নন, বরং এক মহা-শক্তি। মানুষ, জ্বিন ফেরেস্তা যা দেখতে পান না, শুনতে পান না, নবিজি তা দেখতে পান, শুনতেও পান। বোরাকের দরকার নেই শুধু ইচ্ছার প্রয়োজন। যখন যা চাইবেন তা’ই হয়ে যাবে। সপ্তম পর্দায় এসে মুহাম্মদ তাঁর ইচ্ছে ব্যক্ত করলেন-
‘খোল খোল দ্বার রাখিওনা আর,
বাহিরে আমায় দাঁড়িয়ে—-
সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিক থেকে গায়েবি আওয়াজ আসলো-
‘এসো এসো তুমি
বাহির হয়ে এসো যে আছো অন্তরে—-
নবিজি দেখলেন, তাঁর উপরে আল্লাহ, নিচে আল্লাহ, ডানে আল্লাহ, বামে আল্লাহ, পেছনে আল্লাহ, সামনে আল্লাহ, সর্বত্র আল্লাহ, তাঁর সর্বাঙ্গে আল্লাহ। মুহাম্মদ এবার অনুভব করলেন তিনি তাঁর মানবদেহ-বৈশিষ্ট হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর দেহ, মন, রুহ, আত্মা, অন্তর কিছুই খোঁজে পাচ্ছেন না। আল্লাহ নবির পঞ্চ-ইন্দ্রীয় গোপন জ্ঞান, দয়া, আশির্বাদ ও ভালবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে তাঁর দেহে সব ফিরিয়ে দিয়ে দুনিয়ায় ফিরে যেতে আদেশ করলেন।
– আয়েশা, আল্লাহ ও মুহাম্মদের মধ্যে প্রাইভেট রুমে কোন্ বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো, কী কী আইন কানুন পাস হলো, নবি স্বর্গ-নরক কখন পরিদর্শন করলেন, তা তো কিছুই বললেন না?
– সবকিছু বিস্তারিত বলতে গেলে সাতখন্ড রামায়ণেও কুলাবে না। এবার বলুন, মে’রাজের স্টোরিটা কেমন লাগলো?
– ভেরি ইন্টারেস্টিং, কিন্তু নতুন নয়।
– নতুন নয় মা’নে?
– ‘আরতা-ভিরাফ’ এর নাম শুনেছেন?
– না তো।
– মুহাম্মদের জন্মের ৩৪৮ বছর পূর্বে লেখা এক স্বর্গ-ভ্রমন কাহিনি। সেই কাহিনিতে মুহাম্মদের ভুমিকায় ছিলেন ‘আরতা-ভিরাফ’ জিব্রাইলের নাম ছিল ‘সারস’ আল্লাহর নাম ছিল ‘ওরমাজদ’ আর শয়তানের ভুমিকায় ছিলেন ‘আহরিমান’। ঐ কাহিনিতে স্বর্গ-নরক পরিদর্শন তো ছিলই, এমনকি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ বৃক্ষও ছিল, তবে গাছের নাম ছিল ‘হোমাইয়া’।
চলবে-
সাহাবীদেরকে নিয়ে এভাবে প্রবন্ধ লেখা আপনাকে কে শিখিয়েছে তাদের সাথে বেয়াদবি পূর্ণ প্রবন্ধ এটা আপনার কল্যাণ বয়ে আনবে না
প্রথম পর্ব শেষ করলাম। আরো চারটা পর্ব আছে। আপনার সব লেখা আমি প্রিন্ট আউট করে সংরক্ষণ করি এবং আপনার অনুমতি ছাড়াই অন্যকে পড়তে দেই। ভবঘুরে এবং আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এক্ষণে সেকথা স্বীকার করে নিলাম।
স্যালুট।
নামাজ কয় ওয়াক্ত? কোরান কি বলে?
আমরা এখন যে কোরান যে পড়ছি , সেটা কত প্রাচীন পাণ্ডুলিপির অনুলিপি ? এখন অবধি উদ্ধারকৃ্ত সবচেয়ে প্রাচীন কোরানের পান্ডুলিপির ( সমরকন্দ,উজবেকিস্তান ) সময়কাল নবম শতাব্দী যা ঊসমান ইব্ন আফ্ফানের তথাকথিত সংকলিত কোরানের চেয়ে অনেক পরের । এখন এক কোরানেরই যদি এ অবস্থা হয় , হাদিসের ( নবম শতাব্দিতে সংকলিত) কথা কি বলা যায় ? তাই এসব ধর্মীয় কল্প কাহিনী (কোরান-হাদিসের) আমাদের রূপবানের প্রেমকাহিনীর চেয়ে বেশি কিছু নয় । এতেও আমার আপত্তি ছিলনা , যদিনা এইসব কোরান-হাদিসের অনুসারীরা এখন মানব সভ্যতা সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি না হয়ে দাঁড়াত ।
@
@আদিল মাহমুদ,
আপনি ঠিকই ধরেছেন। মহিলা চরমভাবে ব্যঙ্গ করেছেন মুসলমানদেরকে, আর মুসলমান মনে করেছে মহিলা তো হিজাবের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। নিজের ধর্মের সত্যতা প্রমাণের জন্যে তারা ভিক্ষুকের মতো অমুসলিমদের দ্বারস্থ হয়। খৃষ্টানের গড দিয়ে তারা প্রমাণ করতে চায় তাদের আল্লাহ জীবিত আছেন। উনি পরোক্ষভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন মুসলমানদের দৃষ্টিতে নারী সম্পদ, তাদের প্রত্যেকের ঘরে ১৬টি সন্তান থাকে, ওরা বেশীর ভাগ ইল্যিগেল ইমিগ্রান্ট, পচা ভ্যজিটেবল খায়, মুসলমানরা বৈষম্যবাদী, দোকানে দুইপ্রকার দাম রাখে, আর হিজাব পরে ভন্ডামী করা যায়। মুসলমান তাতেই খুশী যে, পশ্চিমা দেশের একজন ক্লাবের নর্তকী, শ্বেতাঙ্গীনি মহিলার মুখে মুসলমানী হিজাবের নাম উচ্চারিত হয়েছে। ছি, মুসলমান ছি, লজ্বা-লজ্বা-লজ্বা।
আসলে বোরখা, নেকাব, হিজাবের জাড়ি-জুড়ি সবই এখন সবার জানা। এগুলো যে সবই ধর্মীয় শো এগুলো এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তাই ডুবন্ত লোক যেমন খড়কুটো অবলম্বন করে, তেমনি ইনারাও হাস্যকর আবোল-তাবোল বকে নিজেদের সাফাই গাইছেন।
@ব্রাইট স্মাইল্,
খুবই সত্য কথা – :yes:
তিনি বললেন, আল্লাহর নাকি আমাকে পছন্দ লেগে গেছে, স্বয়ং আল্লাহই ঘটক হয়ে তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন
is the information taken from any hadith or is it just an imagination?
@mithun,
Sahih Bukhari 7, 18
Narrated ‘Ursa:
The Prophet asked Abu Bakr for ‘Aisha’s hand in marriage. Abu Bakr said “But I am your brother.” The Prophet said, “You are my brother in Allah’s religion and His Book, but she (Aisha) is lawful for me to marry.”
Sahih Bukhari 9, 140
Narrated ‘Aisha:
Allah’s Apostle said to me, “You were shown to me twice (in my dream) before I married you. I saw an angel carrying you in a silken piece of cloth, and I said to him, ‘Uncover (her),’ and behold, it was you. I said (to myself), ‘If this is from Allah, then it must happen.
ছয় বৎসরের একটা শিশুকে কিভাবে বশ করতে হয় মুহাম্মদ ভালই জানতেন।
@আকাশ মালিক,
“ছয় বৎসরের একটা শিশুকে কিভাবে বশ করতে হয় মুহাম্মদ ভালই জানতেন।”
—আপনি মুহম্মদ সম্বন্ধে এত নিশ্চিত কিভাবে? ইমাম বুখারী যে মিথ্যা বলেননি বা তার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না এই হাদিস লেখার সময় তা কি ভাবে বুঝলেন? ইমাম বুখারী কি এই হাদিসগুলো সত্যতা যাচাই করার কোন সূত্র রেখে গেছে?
@আইভি,
এটা যদি মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক হয় তাহলে আমাদের অন্য যে মধুর হাদিসগুলো বলা হয় যেমন,
@আইভি,
প্রশ্নটি মুহাম্মদ ও কোরানের বেলায়ও করা যায়।
http://www.islamicinvitationcentre.com/articles/Introduction/women/hijab.html
অফ টপিক কিছু কথা আপনাকে বলার লোভ সামলাতে পারছিনা। উপরের লিংকটি নিশ্চয়ই পড়েছেন। মহিলার এই লেখা পড়ে এক ব্লগে শিক্ষিত মুসলমানদের লাফালাফির জবাবে আপনি যা বলেছেন তা ঠিকই আছে। আমি হলে জিজ্ঞেস করতাম, হায়রে জগতের মুসলমান, তোরা নিজেকে আর কতো বোকা বানাবে?
মহিলা লিখেছেন-
Within the hijab, Muslim women know their power and their value. One Muslim man told me: “My wife is like a beautiful diamond. Would you leave a precious diamond to get scratched or stolen in the street? No, you would wrap it in velvet. And that is how the hijab protects my wife, who is more precious to me than any jewel.”
এই মহিলা হয় চরম বোকা, না হয় ধুরন্দর মুসলিম বিদ্বেষী। হাদীসেও নারীকে সম্পদ বলা হয়ে আসছে বিগত প্রায় দেড়হাজার বছর যাবত। আই ভি, কোন মুসলমান তো প্রতিবাদ করলোনা। আমি কেন ইমাম বোখারীকে সন্দেহ করবো?
@আকাশ মালিক,
ঐ নেকাব নাকি হিজাবের (দূটার মনেও হয় পার্থক্য আছে) গুনগান সমৃদ্ধ লেখাটি আমারও আর এক যায়গায় নিজ প্রিয় মাতৃভাষায় পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে 🙂 ।
কয়েক যায়গায় আমারও সন্দেহ হয়েছিল যে ভদ্রমহিলা আসলে হিজাব প্রেমীদের ব্যাংগ করছেন নাকি।
হিজাব করলে কম দামে বাজার করা যায় নিঃসন্দেহে এই অর্থনৈতিক মন্দার যুগে আমার মত সীমিত আয়ের মানুষকে আশার আলো দেখাবে। তবে হিজাবের সাথে ১৬ জন অপেক্ষারত দরিদ্র সন্তান কেমন যেন ব্যাংগের মত শোনায়।
আরো চোর ছ্যাচ্চড়েও ধরে না শুনলে এই ক্রমবর্ধমান পাপের দুনিয়ায় উচ্চ ক্রাইম রেটের বিরুদ্ধে বেশ উপযুক্ত ঔষধ বলেও মনে হয়।
আপনাদের লন্ডন তো বেশী সুবিধার যায়গা বলে মনে হয় না, হিজাব না করলে কি দোকানদাররা সম্মান দেয় না? কোন গ্রিটিংস দেয় না???
আরব পুরুষের স্ত্রীকে অশেষ সম্মান করার বানীতে যারপরনাই পুলকিত হয়েছি।
মহিলা ক্যাথলিক বলে দাবী করেছেন, যদিও জানি না ক্যাথলিক বিশ্বাস “চটকদার মডেল” বা “নৃত্যশিল্পী” হওয়া কতটুকু সমর্থন করে।
@আকাশ মালিক ,
@একা,
ই-মেইল আইডি নয়। যে কোন একটি ঠিকানা যাতে আপনাকে আমার বইটি পাঠিয়ে দিতে পারি। আপনি পড়বেন অন্যকেও পড়তে দিবেন। যে কথা বলতে গিয়েও বলি নাই, গীতাদি তা বলে দিয়েছেন। এরকম ছবি অসহায়, দূর্বলের আকুতি, মিনতি, অধীনতা প্রণতি জ্ঞাপন করে। এরকম ছবি দেখে অহংকারী নপুংষক পুরুষেরা পুলকিত হয়।
আর চোখের জল নয়, এবার বিদ্রোহের পালা। সুলতানা রাজিয়ার ইউত্তরসুরী নারী, তুমি বিদ্রোহ করো।
[email protected]
@আকাশ মালিক । আপনার বেশ কিছু লেখা আমি ইতিপুর্বে বধু কষ্টে সংগ্রহ করে পড়েছি ।
আমি আপনার লেখার ইস্টাইল টা দেখি আর খুব অবাক হই । এত সুন্দর করে মানুষের মনে
জায়গা করে নেন । বিস্তারিত আর বলছিনা । শুধু বলবো আরো লিখুন । শুভেচ্ছা ।
@একা,
আমিও বলি, মুক্তমনায় আরো বেশী বেশী করে লিখুন। আপনার প্রফাইলে ছবিটা বড় করে দেখলাম। বড় ছবিতে চোখের জল স্পষ্ট দেখা যায়। এই চোখের ভাষা অমানুষেরা বুঝতে পারেনা। আপনার ই-মেইল এড্রেসটা দিতে পারবেন?
@আকাশ মালিক
অাপনাকে ধন্যবাদ এমন একটা লেখার জন্য। বেহেস্তের বর্ণনা “এভাটার” মুভির কথা মনে করিয়ে দিলো। চিন্তা করেন ইসলাম নিয়ে কি মজার একটা মুভি বানানো যায়, কেমেরন ভাইরে কনস্প্টেটা কেউ দিলে হয়।
“যে কথা বলা হয়নি” বই অাকারে কিন্তুু পেলাম না, সম্ভাবনাও কম এ দেশে। অাপনার প্রতি পাঠকদের দাবী কিন্তু বাড়ছে। সুপাঠ্য করে কোরানের একটা ভাবান্তর করা যায়না? যেহেতু কোরঅান বোরিং ও খুব বেশি রিপিটিটিভ, পড়তে বিরক্ত লাগে। সেজন্যে খুব কম মানুষ বোঝার মত করে কোরঅান পড়ে। অাকশ ভাই একটু সিরিয়াসলি ভাবেন ব্যপারটা।
@অাইভি অাপা
অাবার বল ছোড়া ছুড়ি শুরু করছেন। অাপনি কবে বুঝবেন যে কোরঅান পুরটাই একটা কাট-কপি-পেস্ট। কবে বুঝবেন যে নবী চরিত্র অার দশটা ভন্ড ধর্ম প্রচারকের মত ছিলো। নিজগুনে না স্বারথের জন্য মুহাম্মদ মহান হয়েছেন। ঈশ্বর নামের কোন বড়বাবু নেই।
সবাই ভাল থাকবেন – বিজয় দিয়ে বানানের জন্য লজ্জিত
সুন্দর লেখার জন্য আকাশ মালিককে অসংখ্য ধণ্যবাদ । বহুল আলোচিতা এরকম নারীদের নিয়ে আরো লেখা আশা করছি । যেদিন আমরা এধরণের লেখা মূদ্রিত আকারে বাংলাদেশে প্রকাশ করতে পারবো , সেদিন ধরে নেব যে মুক্তমনার লক্ষ্য কিছুটা হলেও অর্জিত হয়েছে ।
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের গরম কড়াই থেকে বাঁচতে গিয়ে , আমাদের দেশের মানুষ ঝাপ দিয়েছে আরব সাম্রাজ্যবাদের আগুনে । ভাগ্যের কি পরিহাস !
@বিজয়,
তবে কি আপনি বলছেন মুক্ত মনার সাম্রাজ্যে ঝাপ দিবে ?
@অনন্ত,
অসুবিধা কোথায় ? বিগত কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , বাংলার মানুয ধর্ম আর রাষ্ট্রকে কখনও এক হতে দেয়নি । এখনও দেবেনা বলেই আমার বিশ্বাস । বাংলার মানুয ঐতিহাসিকভাবেই মুক্তমনা । যে আরব সাম্রাজ্যবাদের জন্ম এদেশে ১৯৪৭-এ , তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তো ১৯৭১-এ বাংলার মানুষেই করেছে । এখন যা চারপাশে দেখছেন , তা ঐ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অবশিষ্ট ধোঁয়া বৈ কিছু নয় । সময়ের সাথে সেটাও কেটে যাবে ।
ভাই এইটা কি করলেন ? আয়েশা (রাঃ) কাছে পেয়েও তাঁর সেই কথিত অভিসার/ব্যাভিচার
নিয়া কিছুই জানতে চাইলেন না। আজব!
নারী দিবসে একটা ধন্যবাদ তাঁর অন্তত পাওনা ছিলো। কোন মুসলিম মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের আভিযোগ করতে গেলে, অভিযোগকারীকে অন্তত চার জন সাক্ষী যোগাড় করতে হবে। 🙂 মানে সাত মন ঘী ও জোগাড় হবেনা, রাধাও নাচবেনা। নারী মক্তির এই আইনের জন্য তাঁর আবদান নিয়ে কোন কথাই বললেন না। আমি কিঞ্চিৎ হতাশ।
আশাকরি, পরেরবার দেখা পেলে এই প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না। আর এই আপবাদ রটনাকারী মক্কার কবিকূল কিভাবে হুমায়ুন আজাদ হয়েছিলো তাও জানতে মঞ্চায়।
@আতিক রাঢ়ী,
এই লেখাটা আসলেই মূল লেখার অর্ধেক। গত কয়দিন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীদের উপর অত্যাচার আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাবলী দেখে মনটা বেশী ভাল নেই। তার উপর সংগ্রামী এই মার্চ মাসে আরব্য উপন্যাস পড়া বাঙ্গালীর ভাল লাগার কথা নয়। তবুও আপনার কথা মনে রইলো, চেষ্টা করবো বাকী অর্ধেক লিখে ফেলার।
@আকাশ মালিক,
বাকী অর্ধেকের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকলাম। মুসল্মানরা আজকে নীজ ধর্ম সম্পর্কে যে হারে প্রশ্ন করছে, অন্যান্ন প্রবীন ধর্মগুলো এই পর্ব আরো আগেই পার হয়ে গেছে। ফলে আপনার লেখা মুসলমানদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। যদিও পুরাতন নাস্তিকদের কাছে এই লেখার ততবেশী গুরুত্ত্ব নাই কিন্তু মুসল্মানদের মধ্যে নবীন সংশয়বাদীদের জন্য আপনার লেখার গুরুত্ত্ব অশেষ। তাই আশা করবো আপনি লিখে যাবেন।
শুনেছি ইবন ইসহাক এর সিরাতুন্নবীতে শুধুমাত্র মক্কা থেকে জেরুজালেম যাত্রার কথা বলা হয়েছে, বেহেশত যাত্রা ও আল্লাহর সাথে দেখা হবার ঘটনা নাকি পরবর্তীকালে যুক্ত হয়। এটি কতটুকু সত্য ? তাছাড়া আলোর গতি সম্পর্কে তৎকালীন মানুষের কোন ধারণা ছিল কি ? আলোক বর্ষের ধারণাটি কি আরতা ভিরাফ থেকে ধার করা, নাকি অন্য কোন সূত্র থেকে ?
যেহেতু নামাজের সাথে মে’রাজের একটা সম্পর্ক আছে তাই
এই ওয়েবসাইট থেকে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।
যরোস্ট্রিয়ানদের কাহিনী কিভাবে মুসলমানদের হাদিস বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে তা এখানে পাবেন।
http://ourbeacon.com/phpBB2/viewtopic.php?t=415&highlight=namaz
চমৎকার একটি লেখা। কিছু লেখা যতই পড়ি ততই ভালো লাগে, এটি এরকমই একটা লেখা। আমার মনে হয়, মুক্তমনায় প্রকাশিত আগের আমলের মূল্যবান লেখাগুলো এভাবে ক্রমান্বয়ে পুনরায় প্রকাশ করা উচিত কারণ নতুন অনেকেই এসব লেখার খবর জানে না। এছাড়া তখন লেখাগুলো নিয়ে আলোচনারও সুযোগ ছিল না। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে আশা করি।
আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে মুহাম্মদ ও তার আশেপাশের সবাই রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ ছিল, তাহলে চিন্তার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। ছোটবেলার ব্রেন ওয়াসের ফলে বিশ্বাসীদের মনে আগে থেকেই এদের ব্যাপারে একটা সম্ভ্রম গড়ে ওঠে ফলে তারা এদের ব্যাপারে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। একজন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ ভণ্ড, প্রতারক থেকে আরম্ভ করে ভালো-খারাপ সবই হতে পারে – বিষয়টি স্মরণ রাখা জরুরি।
@সৈকত চৌধুরী,
🙂
দুদিন আগে এক ভাই এর কথা দেখছিলাম আর এক সাইট এ। উনি পিলে চমকানো তথ্য দিলেন, ধর্মীয় জগতের নানা রকম গাল গল্প অনেক শুনেছি তাই তেমন বিস্ময় লাগে না, তবে ওনার কথা শুনে আমিও নড়ে চড়ে বসলাম।
ওনার মুখেই শুনেন।
ভদ্রলোককে আমি এমনিতে বেশ পছন্দ করি।
‘আরতা-ভিরাফ’
এই সম্পর্কে বিস্তারিত তত্থ্য জানতে চাই।
আগের সাক্ষাতকারও মনে হয় সাতরং এ পড়েছিলাম।
মহিলা ফেরেস্তার কথা তো জানা ছিল না ভাইজান। নাকি নারী দিবস উপলক্ষে এ আপনার ক্ষুদ্র সংযোজন?
আজকাল অনেকেই, বিশেষ করে কোরান অনলিরা নারী পশু বোরাকের মড়াকের পিঠে করে বেহেস্ত ভ্রমন বিশ্বাস করেন না। জামিলুল বাশার সাহেবের একটা লেখায় পড়েছিলাম যে উনি বিশ্বাস করে যে মেরাজের ব্যাপারটা অনেকটা আধ্ম্যাতিক ব্যাপার। তেমনি মানকির নাকিরের কাহিনী এ জাতীয় অনেক অতি পরিচিত কেচ্ছা কাহিনীই উনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ দর্শন কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই শুনেছি, ছাই হয়ে যাভে। হযরত মুসা নাকি আল্লাহর কড়ে আঙ্গুলের অগ্রভাগ দেখার ফলেই কোন পাহাড় জ্বলে সুরমা হয়ে যায়।
আরতা ভিরাফের কাহিনী অবশ্য আগে শুনিনি।
@আদিল মাহমুদ,
আগে কিছু হাদীস জেনে নেয়া যাক।
I was brought al-Burg who is an animal white and long, larger than a donkey but smaller than a mule, who would place his hoof at a distance equal to the range of vision. I mounted it and came to the Temple (Bait-ul Maqdis in Jerusalem), then tethered it to the ring used by the prophets. (Sahih Muslim, Vol. 1, p. 101).
Allah’s Apostle was presented with two cups, one containing wine and the other milk on the night of his night journey at Jerusalem. He looked at it and took the milk. Gabriel said, “Thanks to Allah Who guided you to the Fitra (i.e. Islam); if you had taken the wine, your followers would have gone astray”. (Sahih al-Bukhari, Vol. 6, p. 196).
Then I was made to ascend to Sidrat-ul-Muntaha (i.e. the lote-tree of the utmost boundary). Behold! Its fruits were like the jars of Hajr (i.e. a place near Medina) and its leaves were as big as the ears of elephants. Gabriel said, “This is the lote-tree of the utmost boundary”. (Sahih al-Bukhari, Vol. 5, p. 147).
Then Allah enjoined fifty prayers on my followers. When I returned with this order of Allah, I passed by Moses who asked me, “What has Allah enjoined on your followers?” I replied, “He has enjoined fifty prayers on them”. Moses said “Go back to your Lord (and appeal for reduction) for your followers will not be able to bear it”. (Sahih al-Bukhari, Vol. 1, p. 213).
আরতা-ভিরাফ সম্মন্ধে জানতে হলে, (The Original Sources of the Qur’an, p. 225, Tisdall ) এবং (Islam and its Founder, p. 141 Stobart) পড়া যেতে পারে।
কিছুটা নমুনা নীম্নরুপ-
“The story may have incorporated elements from many quarters, but it seems to have been in the main based upon the account of the ascension of Arta Viraf contained in a Pahlavi book called ‘The Book of Arta Viraf”‘ (The Original Sources of the Qur’an, p. 226), where we find remarkable coincidences. Arta Viraf was a saintly priest who had a mi’raj of his own some four hundred years before the Hijrah:
It is related that; when this young Arta Viraf was in a trance, his spirit ascended into the heavens under the guidance of an archangel named Sarosh, and passed from one storey to another, gradually ascending until he reached the presence of Ormazd himself. When Arta Viraf had thus beheld everything in the heavens and seen the happy state of their inhabitants, Ormazd commanded him to return to the earth as His messenger and to tell the Zoroastrians what he had seen. All his visions are fully related in the book which bears his name. (Tisdall, The Original Sources of the Qur’an, p. 227).
There are numerous details in the narrative which correspond to those in the Hadith. Just as Gabriel guided Muhammad through the heavens, so Sarosh, one of the great Zoroastrian archangels, guided Arta Viraf. Likewise he came into the presence of Ormazd and visited paradise and hell as well.
The Zoroastrians also teach that there is, in paradise, a marvellous tree called humaya in Pahlavi which corresponds closely to the sidrah, the lote-tree of Islam. Indeed the Zoroastrians even relate that their founder also passed through the heavens and visited hell.
In the fabulous Zerdashtnama there is also an account of Zoroaster having ages before ascended to the heavens, after having received permission to visit hell, where he found Ahriman (the devil). (Tisdall, The Sources of Islam, p. 80).
In his other book St. Clair-Tisdall comments that Ahriman, the Satan of Zoroastrianism, “closely corresponds with the Iblis of the Qur’an” (The Original Sources of the Qur’an, p. 230). It certainly seems that the whole account of the Mi’raj is a subtle adaptation done by Muslim divines sometime after the subjugation of Zoroastrian Persia during the Arab conquests in the early days of Islam.
মেরাজের সম্পূর্ণ বিস্তারিত কাহিনী নীচের লিঙ্কে পাওয়া যাবে।
http://www.meem.freeuk.com/Miraaj.html
@আকাশ মালিক,
ধণ্যবাদ। কাহিনী তো মনে হচ্ছে পুরানো। আইভিও মনে হয় সমর্থন করেছেন।
আপনার দেওয়া প্রথম হাদীস পড়ে বেশ হোচট খেলাম। যা বুঝলাম বোরাকের আকার ছিল গাধার থেকে একটু বড় কিন্তু আবার ঘোড়ার থেকে ছোট। কিন্তু তার খুরদের মাঝে দুরত্ব ছিল দৃষ্টিসীমার ভেতর যতদুর দেখা যায় ততদুর বিস্তৃত। কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেললাম। ঐ সাইজের কোন প্রানীর খুরের মাঝের দুরত্ব এত বিশাল কি করে হয়? মাকি আমারই বোঝার ভুল?
:yes: :yes: :yes: :lotpot: :lotpot: :lotpot: