গত সংখ্যার পরঃ
২২ শে ফেব্রুয়ারী। সূর্য্য উঠেছে। কিন্তু সে কত করুন কত বিষাদময় – প্রকৃতি শোকে মূহ্যমান। গতকাল যে হত্যাযজ্ঞের অনুষ্ঠান হয়ে গেল – তার আকুল ফরিয়াদ ধ্বণিত হচ্ছে মুসলিম হলের মাইকে। ওঃ সে স্বর কত করুন, কত বেদনায় ভরা!
রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম। সে আর এক শোকের দৃশ্য। দলে দলে লোক সারবন্দী হয়ে চলেছে মেডিকেল হোষ্টেলের দিকে; বীর শহিদানদের জানাজার উদ্দেশ্যে। সকলেই কালো ব্যাজ পরিহিত – কারো মুখে কথা নেই। মাঝে মাঝে অস্ফূট গুঞ্জনধ্বণি – “সইবেনা, সইবেনা খোদার প্রানে সইবেনা এ বর্বরতা। খান খান হয়ে যাবে, ভেংগে পড়বে এ জালেম শাহী।”……আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলুম সংবাদপত্রগুলোর রটনা দেখে। ‘আজাদ’ তবুও দুকুল বজায় রাখবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আর সব কাগজ নিরেট মিথ্যা দিয়ে ভর্তি হয়েছে। ‘ইনসান’ অবশ্য অনেকটা সত্যি কথা লিখেছে। সবচাইতে বেশী ধৃষ্টতা দেখিয়েছে জালেম সরকারের ধামাধরা তল্পিবাহী ‘মর্নিং নিউজ’। কাগজে দেখলুম সরকারের এ জঘন্য কার্য্যের প্রতিবাদে ৩৫ জন সদস্য গতকাল পরিষদ ভবন ত্যাগ করেছে। তবুও নুরুল আমিন অবিচলিত – অকম্পিত। ঢাকেশ্বরী কলোনীতে গিয়ে শুনলাম – গতকালকের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সেক্রেটারিয়েটের কোন কর্মচারী আজ অফিসে যাবে না। তারাও সকলে চলেছে শহিদদের জানাজায় শরিক হতে। আজাদ অফিসের সামনে দেখি হুলস্থূল কান্ড। মর্ণিং নিউজ পত্রিকা নিয়ে তাদের গাড়ী এসেছিল কিন্তু কতগুলো লোক সব পত্রিকা নামিয়ে ভস্মিভূত করে দেয়।…..
ঢাকেশ্বরী কলোনীতে ফিরে এলুম। মুসলিম হলের মাইক শোনা যাচ্ছে পরিষ্কার। মাইকে ঘোষনা করছে যে গত রাতে আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্ররা শহিদদের লাশ পাহারা দিচ্ছিল। পরে হসপিটাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট লাশগুলোর নিরাপত্তার ভার নিলে পর ছাত্ররা তারই হাতে লাশগুলো রেখে আসে। কিন্তু রাত্রি তিনটার সময় প্রায় আড়াইশো মিলিটারী এসে জোর করে লাশ নিয়ে যায় এবং বিনা জানাজায় আজিমপুর গোরস্থানে পুতে ফেলে। ধিক্কার এলো। তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্রে জানাজাহীন কবর দিতে পারে – এ কতবড় পাষন্ড হলে সম্ভব! হে নুরুল আমিন! তোমার তূলনা তোমাতেই সম্ভব। যে নজির আজ তুমি রাখলে তা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অত্যাচারী বৃটিশ সরকারকেও তুমি হার মানালে…।
আবার রাস্তায় বেরুলাম। শহরের রাস্তাঘাট অলিগলি মিলিটারীতে গীজ গীজ করছে। রাইফেল, ষ্টেনগান, ব্রেনগান, টমিগান নিয়ে লৌহ শিরস্ত্রান মাথায় দিয়ে বালুচ সৈন্যরা সমস্ত রাস্তায় টহল দিচ্ছে। একজন বালুচ সৈনিকের সাথে আলাপ হল। কথাবার্তায় বোঝা গেল, বেচারা গোলযোগের কারন সম্বন্ধে কিছুই জানে না। গোলযোগ হচ্ছে, আদেশ হবে গুলি চলবে। এই সে জানে। কেন গোলযোগ হচ্ছে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবীর কথা তাকে বললাম। মনে হলো, বেশ রেগে গেছেন খানজাদা। “কেউ, বাঙ্গালা কেউ? উর্দু হোনে সে তোমলোগ কাফের হো যায়গা? তাকে বুঝিয়ে বললাম – উর্দুর সংগে আমাদের বিরোধ নেই – উর্দুকে আমরা সম্মান করি – আর আমরা চাই পশ্চীম পাকিস্তানী ভাইরাও বাংলাকে সম্মান করুক। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও “কাওমি জবান” রূপে দেখতে চাই।….”তোমলোগ ঠিকই চাহতা হ্যায়…ইয়ে তো সাচ বাত।” খানজাদা বুঝলেও কিন্তু আমাদের লীগশাহীদের মাথায় একথা ঢুকল না।
Assembly হলের পূর্বকোনে এবং আরো কয়েক যায়গায় কয়টা মেশিন গান বসানো হয়েছে। ঢাকা শহরের ওপর দিয়ে যাচ্ছি এটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল কোন যুদ্ধের ময়দানের ওপর দিয়ে হেটে যাচ্ছি। রাস্তার দু পাশে গায় গায় লাগানো মিলিটারী। মাঝে এগিয়ে যাচ্ছে বিরাট জনসমুদ্র, মেডিকেল কলেজ হোষ্টেল প্রাংগনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে।
আজকে শহরের সর্বত্র সমস্ত দোকানপাট স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তায় কোন মোটর ট্যাক্সি নেই – বাস, রিক্সা কিছু নেই। সকলেই আজ বাংলা ভাষার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। অগণিত জনতার মাঝেও গভীর প্রশান্তি বিরাজ় করছে। কেবল মাঝে মাঝে রেডক্রশের এম্বুলেন্স ও মিলিটারী ট্রাক লরি রাস্তার মৌণতা ভংগ করছে। ইতিমধ্যে খবর পাওয়া গেল – গতকালকের আহতদের মধ্যে আর একজন রাত সাড়ে তিনটার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। ইন্নালিল্লাহ…..।
শান্তিভংগের আশংকায় হসপিটাল কতৃপক্ষ শহিদদের লাশ দিল না। তাই লক্ষ লক্ষ লোকের বিরাট জনতা গায়েবানা জানাজা পড়লেন। অনেকের চোখ ফেটেই জল পড়ল – আল্লাহর দরগায় অশ্রু গদগদ কণ্ঠে সকলেই ফরিয়াদ জানালেন। জালেম সরকারের অবসানে সকলেই বদ্ধ পরিকর। বেলা ১১ টার সময় পুনরায় শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিরাট মিছিল বেরুল। আজকের মিছিলের বিশেষত্ব হল – কেবল ছাত্র সমাজ নয়, শহরের সমস্ত চাকুরিয়া, ব্যাবসায়ী, রিক্সাওয়ালা, ঘোড়ার গাড়ীওয়ালা, আজকে সকলেই এ মিছিলের শরীক হয়েছে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উন্নিত করতে এ জালেম সরকারের উচ্ছেদ করতে সকলেই বদ্ধপরিকর; তাই প্রায় এক লক্ষ লোকের বিরাট শোভাযাত্রায় ধ্বণিত হচ্ছে বিভিন্ন বিক্ষোভকারী ধ্বণি – শহিদদের জন্য বুক ফাটা চিৎকার। তাদের সে আকুল ক্রন্দনে জালেম সরকারের সিংহাসন অকম্পিত থাকলেও খোদার আরশ হয়ত কেপেছিল।
মিছিল এগিয়ে চলেছে। এত বড় মিছিল ঢাকায় আর কেউ কোনদিন দেখেনি। মেডিকেল কলেজ হতে আরম্ভ করে কার্জন হল, হাইকোর্ট পেরিয়ে ফজলুল হক হল ও ছাড়িয়ে গিয়েছে – মিছিলের পেছনটা তখনো মেডিকেল কলেজের কাছে। রাস্তার দুপাশে পুলিশ আর মিলিটারী জীবন্ত শমনের মত টহল দিচ্ছে। আক্রমনের কোন লক্ষন তাদের মধ্যে দেখা গেল না। সকলে ধরে নিল – শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ পবিত্র মিছিলে আক্রমন করার মত দূঃসাহস সরকারের এখনও হয়নি। পুলিশ মিলিটারী দল বেশ হাসিখুশী ভাব নিয়ে মিছিল নিরিক্ষন করছেন। জনতার পূর্ণ বিশ্বাস হলো – গতকালকের ঘটনায় সরকারের উপযুক্ত শিক্ষা হয়েছে – গুলি চালাবার মত সাহস হয়তো তারা আর করবে না।
কিন্তু ভুল ভাংগল। মিছিলের দুই তৃতীয়াংশ তখন হাইকোর্ট পেরিয়ে গেছে, এমন সময় অতর্কিতে পুলিশ বিরাট জনতার মাঝখানটায় লাঠি চার্জ করে জনতাকে স্তম্ভিত করে দিল। ভীত বিক্ষুব্ধ সন্ত্রস্ত জনতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু পালাবার পথ নেই। রাস্তার দুই দিকে উচু লোহার বেড়া – কাজেই রাস্তায় ছোটাছুটি করে একজন আরেকজনের গায়ে পড়া ছাড়া দ্বিতীয় পথ নেই। তাই হাতের কাছে পেয়ে পুলিশ তাদের কুকুর পেটা করতে লাগল। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। জনতা যখন প্রানের মায়ায় এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছিল তখন পুলিশ ও মিলিটারী পলায়নপর জনতাকে লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলি ছুড়তে লাগল। দুজন নিহত আর বহু আহতকে হাসপাতালে পাঠানো হল। নিহতদের মধ্যে এমনকি একটি নবছরের বালকও আছে। পুলিশ বেচারার বুক বেয়োনেট দ্বারা বিদ্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু অগ্রবর্তী মিছিল অকম্পিত ভাবে এগিয়ে চলেছে। পথের দুপাশ হতে আরো লোকজন এসে মিছিলের দল বৃদ্ধি করছে। নওয়াবপুর রেলওয়ে ক্রসিং এর কাছে পুলিশ ও মিলিটারী আরেক দফা গুলি বর্ষন করে। কিন্তু তবুও মিছিল অবিচলিত – এগিয়েই চলেছে মিছিল। বাংলা মার ডাকে আজ তারা সাড়া দিয়েছে – প্রাণ বিসর্জন দিতেও আজ তারা রাজী। মানসী [বর্তমান নিশাত] সিনেমা হলের কাছে পুলিশ আবার বিরাট জনতার ওপর নির্দয় ভাবে গুলিবর্ষন করে। শিশু ও কিশোরদের রক্তে রাস্তার পিচ রক্তবর্ণ ধারন করল। জনতার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, তারা এগিয়ে চলে – আর রাস্তার দুধার হতে ব্যাবসায়ী আর পথচারীরা উদ্ধুদ্ধ হয়ে দলে দলে মিছিলের পুষ্টি সাধন করতে থাকে। ইসলামপুর রোডে আর এক দফা গুলি চলে, কিন্তু মিছিল চলছেই।
এদিকে সাড়ে তিনটায় Assembly হলে সিটিং হচ্ছে। পুলিশ ও মিলিটারী এসেম্বলী হলের সামনে দিয়ে কাউকে যেতে দিচ্ছে না। মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয়ংকর ভাবে ওরা ঘোরাফেরা করছে। একদিকে মুসলিম হল আর অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের মাইক শোক সন্তপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে আকুল ফরিয়াদ জানাচ্ছে। মুসলিম হল প্রাংগনে আর মেডিকেল কলেজের কোনটায় বিপুল জনসমাবেশ হয়েছে। আমরাও বারো নম্বর ফুলার হোষ্টেলের বারান্দায় ও প্রাংগনে দাঁড়িয়ে জালেম সরকারের কানে তাদের কীর্তিকলাপ তুলে দিচ্ছি।
বেলা তিনটায় আমাদের পূর্বোল্লিখিত মিছিল সমস্ত শহর পরিক্রম করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আর মুসলিম হলের কোনটায় এসে পৌছল। মুসলিম হলের মাইক হতে তাদেরকে সাদরে অভিনন্দন জানানো হল। পুলিশ ও মিলিটারী মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেল। পরিষদ ভবনের দিকে এ মিছিলকে তারা যেতে দেবে না। ছাত্ররা গো ছাড়ছে না দেখে পুলিশ আর এক দফা লাঠি চার্জ করল।….এ মিছিল আজ অনেক কিছু দেখেছে। তারা দেখেছে তাদেরই চোখের সামনে দলীয় সংগীদের রক্তাক্ত ভূলুন্ঠিত দেহ। তারা দেখেছে বুলেট – তারা সয়েছে বেয়নেটের অসহ্য জ্বালা। তারা দেখেছে কতজনের মৃত্যু পান্ডুর মুখ – তবুও তারা দমেনি; এখনও দমছে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছে। মুসলিম হলের মাইক হতে অনুরোধ জানানো হল; শুধু শুধু প্রাণ বিসর্জন না দিয়ে কম্পাউন্ডে যেন সকলে ঢুকে পড়ে। ক্লান্ত শ্রান্ত ছত্রভংগ ভগ্ন মিছিল অবশেষে মুসলিম হল কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ল।
একটু পরেই খবর পেলুম – সত্যের অপলাপকারী খাজা গোষ্ঠীর ধ্বজাধারী মর্ণিং নিউজ পত্রিকা যেখানে থেকে ছাপা হয় সে জুবিলি প্রেস একেবারে ভস্মিভূত হয়ে গেছে।
দুটো মাইক বুক ফাটা ক্রন্দন করেই চলেছে, আমাদের বুকফাটা চিৎকারও চলছে। পুলিশ আর মিলিটারী কটমট দৃষ্টিতে চাইছে; তাদের রক্ত নেশা জাগছে যেন।
পাচটার পর মুসলিম হলের ভেতরে ও বাইরে বিপুল জনসমাগম। মাইক হতে কি বলে তা শোনার জন্য সকলেই উদগ্রীব। মাইক ক্রন্দন করে চলেছে। জনতার চোখ টলমল করছে। অনেকে ফুপিয়ে কেদেও উঠছে। কিন্তু তা ক্ষনিকের জন্য – বারে বারে পুলিশ এসে লাঠি চার্জ করে জনতাকে ছত্রভংগ করে দিচ্ছে।
আজকের হত্যাযজ্ঞ চলেছে ব্যাপকভাবে। নিহত আহতদের হিসাব দেওয়া কষ্টকর। অনেকে মৃতদেহ মিলিটারীরা গুম করে ফেলেছে। মেডিকেল কলেজের এম্বুলেন্সে আহত নিহতদের তুলতে চাইলে মিলিটারী রাইফেল উচিয়ে ধরেছে। মিলিটারী এম্বুলেন্সে করে মৃতদেহগুলিকে উধাও করে ফেলা হয়েছে। আজকের হত্যাযজ্ঞে সরকারী হিসেবে চারজন মৃত ও পয়তাল্লিশজন যখম হয়। কিন্তু মেডিকেল কলেজের মাইক হতে ঘোষনা করা হয় – আজকে মোট (অষ্পষ্ট) স্বদেশপ্রেমী ও নওজোয়ান শহিদ হয়েছেন।
বিকেল পাচটার সময় আজাদের Telegraphic সংখ্যা বেরুলো। এ সংখ্যাটায় অদ্যকার শহরের তথ্য সমূহের কতক সঠিক সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। কিন্তু দুর্বল জালেম সরকার এটা সহ্য করার মত সৎসাহস দেখাতে পারল না। তাই এ সংখ্যার সমস্ত কপি সরকারের ধামাধরা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। রাস্তাঘাটে যে যেখানে আজাদের এ বিশেষ সংখ্যাটি পড়ছিল – সকলের হাত থেকেই পুলিশ তা কেড়ে নেয়।
আজকে পরিষদ ভবনে আজাদ সম্পাদক জনাব আবুল কালাম সামসুদ্দিন পদত্যাগপত্র দাখিল করে বেশ সৎসাহসের পরিচয় দিয়েছেন। পদত্যাগ করার সময় তিনি বলেছেন – “যে নুরুল আমিন সরকারের আমি একজন সমর্থক, তার সংগে আর কোন সম্পর্ক স্বীকার করতেও আমি ঘৃণা আর লজ্জা অনুভব করি।” ঘৃণ্য পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ, জনাব আলি আহমদ, মিসেস আনোয়ারা খাতুন এবং বিরোধী দলের সদস্যসহ মোট ৪২ জন সদস্য পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন। অবস্থার এমনি বেগতিক দেখে পরিষদের অধিবেশন ২৫ তাং সোমবার সাড়ের তিনটা পর্যন্ত মূলতুবী রাখা হয়।
আজকের যে রক্ত লেখার করুন কাহিনীর ইতি হল, কে জানে কাল তা কিরুপ পরিগ্রহ করে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে – অত্যাচারী নুরুল আমিনের বুলেট আরো প্রকট হয়ে উঠলেও তার অতটুকু হৃৎকম্প হবে না। কিন্তু নুরুল আমিন! গত দুদিন ধরে যে দানবীয় মূর্তিতে তুমি আত্মপ্রকাশ করেছ তাতে তোমায় নমরুদ আমিন বললেই সত্য কথা বলা হবে। তোমার জানা উচিত যে একমাঘে শীত যায় না। তুমি যে আজ ক্ষমতার চরম শিখরে আসীন, তা কাদের দৌলতে? অত সকালে অত বড় নিমকহারাম হয়ে গেলে? কান পেতে শোন, পাষান বেঈমান! মাইকগুলি হতে কিসের প্রতিধ্বণি আসছে! এ কি তোর মৃত্যু পরোয়ানার প্রতিধ্বণি নয়?
(চলবে)
আপনার বাবা কি সক্রিয় ভাষাসৈনিক ছিলেন? তাঁর প্রতি রইল শ্রদ্ধা। কিন্তু লেখার স্টাইল থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। উত্তম পুরুষে লেখা হলে আরো ভালো করে বোঝা যেত। লেখার ধরণে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা অংশগ্রহণকারী হিসেবে ভূমিকার চেয়ে স্পষ্ট। জানি না হয়তো এটাই তাঁর লেখার স্টাইল। সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিভা ছিল । তাকে নমস্কার। :rose2:
@আগন্তুক,
তার সাথে এ নিয়ে কোনদিন কথা হয়নি। তিনি অত্যন্ত লো-প্রোফাইলের লোক ছিলেন।
তবে তার লেখা থেকে যা বুঝতে পেরেছি তা হল যে তিনি ২১ তারিখ কলা ভবনে মূল সমাবেশে যাননি, তার এক্সিবিশনের দায়িত্ব পালনে যাবেন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন। তবে টাইম লাইন ও তার বর্ণনা থেকে আচ করতে পারি যে ঘটনা জানার পর সেদিন বিকেলের কিছু বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। ২১ তারিখে আছে যে শহীদদের রক্তে ভেজা জামা লগির আগায় লাগিয়ে তিনি অনেকের সাথে মিলিত ভাবে প্রাদেশিক পারিষদদের উদেশ্যে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ২২ তারিখ বিশাল মিছিলেও অংশ নেন। এতে তাকে ভাষা সৈনিক বলা যায় কিনা জানি না। তবে তিনি নিজে কোনদিন এ প্রশ্নে ভাবিত ছিলেন না।
আসলে সে আমলের লোকদের মানসিকতা মনে হয় এমনই ছিল। তারা কোন কাজ নিজের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে পালন করলে তার জন্য এই আমলের লোকদের মত কৃতিত্ত্ব দাবী বা গলাবাজী করতেন না। দায়িত্ব ছিল, যা করতে পেরেছে করেছি, এই নিয়ে গলাবাজীর কি আছে এমনই ছিল মনে হয় তাদের নীতি।
@আদিল মাহমুদ,
যিনি এত ভালো লিখেছেন তিনি প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে একজন ভাষাসৈনিক। আন্দোলনের নীরব সমর্থকদের ভূমিকাও কম নয়। :rose2:
@আগন্তুক,
ধণ্যবাদ।
@আদিল মামু!! (রামগড়ুড়ের ছানাের দুষ!!)
দারুন! সত্যিই দারুন। আমি যে কত বার কত ভাবে চেষ্টা করলাম ডায়েরী লিখতে, কোনবারই সফল হই নাই। 😥
এভাবে এত সুন্দর করে সব যদি লিখে যেতে পারতাম!! তাহলে হয়তো আমার পরের প্রজন্মও আপনার মত কোথাও না কোথাও এগুলো দিয়ে যেতে পারতো!!
ইতিহাস গুলো চোখের সামনে চলে আসছে! একদম স্পষ্ট!
আমার কাটখোট্টা লেখাদুটার পর আপনার এই লেখা গুলো একটা দারুন আবহ সৃষ্টি করে দিচ্ছে! আপনার বাবার জন্য শ্রদ্ধা রইল। :rose2:
@তানভী,
নানার লেখার মজাই আলাদা। নানাজান সারা জীবন খুব লো প্রোফাইলে থাকা পছন্দ করতেন। এমনকি এসব গল্প আমার আম্মার কাছেও তেমন করেননি। তার আরো বহু লেখা আছে বিবিধ বিষয়ে; বাংলা ইংরেজী দুই ভাষাতেই। সে সময়কার আরো কিছু ঘটনা আছে যেমন চাদে যাবার প্রস্তুতি, আইনষ্টাইনের মৃত্যু, ভাওয়ালের রাজার ঘটনা, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান টেষ্ট ম্যাচের এনালাইসিস কি নাই।
@আদিল মাহমুদ,
চমৎকার। তো এতোদিন লুকিয়ে রাখলেন কেন? এর আগে যদি মরে যেতাম আমি পড়তে পারতাম না। সবগুলো লেখা ধারাবাহিকভাবে লিখে ফেলুন, তারপর আরো কাজ আছে তা পরে বলবো। আর হ্যাঁ, ছোট্টাকারে হলেও লেখকের (আপনার বাবা) একটা পরিচিতি অবশ্যই থাকতে হবে। আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।
@আকাশ মালিক,
ধণ্যবাদ উতসাহ দেবার জন্য। ইচ্ছে আছে মাঝে মাঝে লিখে ফেলব। হ্যা, পরিচিতি শেষ পর্বে দিয়ে দেব।
পড়ছি। আপনার বাবার মুখে ঘটনাগুলো শুনে বেশ যেন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি ঘটনা প্রবাহ। ডায়রীর এই এক মজা। সিরিজ চলুক।
[…] প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব […]
আদিল,
আপনার বাবার লেখাগুলো একুশের প্রামাণ্য দলিল। আপনাকে ধন্যবাদ প্রকাশ করার জন্য। লেখকের নাম-পরিচয়ও প্রকাশিত হলে ভাল হয়, যদি কোন ব্যাক্তিগত অসুবিধা না থাকে ।
@ইরতিশাদ,
আপনার পরামর্শের জন্য ধণ্যবাদ। আমারও মনে হয় যে তার নাম পরিচয় দেবার সময় এসেছে, যদিও এতে আমারো পরিচয় জানার একটা সূত্র থাকে যা আমার তেমন পছন্দ নয়। তবে আসলেই নিজের নাম ভাড়ানোর অধিকার থাকলেও আরেকজনের ডায়েরী লিখে তার নাম গোপন করাটা মনে হচ্ছে অন্যায়। হতে পারেন তিনি আমার বাবা।
আমারো দৃঢ় বিশ্বাস এ ডায়েরী আসলেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে অনেকের গবেষনার কাজে আসতে পারে। ভাষা আন্দোলনের এরকম প্রত্যাক্ষদর্শী ও অংশ গ্রহনকারী কারো দিনপঞ্জী এমন চমতকার ভাষায় আছে বলে আমার আর জানা নেই।
বেশ ভাল লাগছে, আপনার বাবার স্মৃতিচারণগুলো পড়তে। :yes:
আমাদের স্কুলে সেই কুখ্যাত নুরুল আমীনের এক নাতি পড়তো, আমারই সহপাঠি। তখন অবশ্য তার নানার সুকীর্তিগুলো সম্বন্ধে এতো ওয়াকিবহাল ছিলাম না। আপনার এই লেখাটা দেখে তার কথা মনে পড়ে গেলো।
@অভিজিৎ,
ঐ নরাধমের সুকীর্তিগুলির প্রমান হিসেবে কিছু অমর দালিল বানী আসবে পরের সংখ্যাগুলিতে।
সেই নাতির নামটা জানতে পারি?