ইংরেজী অনুবাদসহ জীবনানন্দ দাশের দু’টো ছোট কবিতা
জাফর উল্লাহ্
এখানে নক্ষত্রে ভ’রে
[অগ্রন্থিত কবিতা]
জীবনানন্দ দাশ
এখানে নক্ষত্রে ভ’রে রয়েছে আকাশ,
সারা দিন সূর্য আর প্রান্তরের ঘাস;
ডালপালা ফাঁক ক’রে উঁচু-উঁচু গাছে
নীলিমা সিঁড়ির মতো সোজা, আঁকাবাঁকা হ’য়ে আছে
যে যাবে – যে যেতে পারে তার; নিচে রোদের ভিতরে
অনেক জলের শব্দে দিন
হৃদয়ের গ্লানি ক্ষয় কালিমা মুছায়ে
শুশ্রূষার মতো অন্তহীন।
[কবিতাটি ‘কাব্যসম্ভার’ সাহিত্য পত্রিকায় ভাদ্র ১৩৭৬ বাংলা সনে প্রথম প্রকাশিত হয়]
—————-
Star studded night sky here
Jibanananda Das
The night sky here studded with stars,
The sun shines all-day, meadow full of grass;
Through the branches of tall trees
Sky looks like meandering stairsteps.
One who wants to go – one who could go – would go,
Amidst sound of water
The day would treat endlessly
Removing fatigue and heart’s dark stain.
[Translated by: Jaffor Ullah]
——————–
কোথায় গিয়েছে
জীবনানন্দ দাশ
কোথায় গিয়েছে আজ সেইসব পাখি, – আর সেইসব ঘোড়া –
সেই শাদা দালানের নারী ?
বাবলা ফুলের গন্ধে, সোনালি রোদের রঙে ওড়া
সেইসব পাখি, আর সেইসব ঘোড়া
চ’লে গেছে আমাদের এ – পৃথিবী ছেড়ে;
হৃদয়, কোথায় বলো – কোথায় গিয়েছে আর সব !
অন্ধকারঃ মৃত নাসপাতিটির মতন নীরব
[১৩৯২ বাংলা সনে প্রথম প্রকাশিত]
—————————
Where have they all gone?
Jibanananda Das
Where have they all gone today, those birds, those horses –
The woman from that white house?
Smeared with the fragrance of Acacia, flying through the sunbeam
Those birds, and all those horses
Left our world;
Soul, where have they all gone today?
Darkness: As still as the dead pear.
—————–
[Translated by: Jaffor Ullah]
চমৎকার। প্রিয় কবির প্রতি এই সম্মানের জন্য আপনাকে সম্মান জানাচ্ছি।
:good:
দেড়বছরেরও বেশি পরে আপনার এ লেখাগুলো চোখে পড়ছে।
বোধ হয় আপনারই নানান লেখা (ইংরেজী ভাষায়) অন্তর্জালের আনাচেকানাচে চোখে পড়ে থাকবে।
জীবনানন্দের অসাধারণ ইংরেজী পাঠের জন্য অশেষ ধন্যবাদ রইলো।
কবিতা নিয়ে, জীবনানন্দ নিয়ে আরো লিখবেন কি?
মুক্তমনায় কবিতা নিয়ে খুব কমই আলাপচারিতা হয়।
‘নক্ষত্র’ শব্দটা কি জীবনানন্দের প্রিয় শব্দ নাকি? উনি দেখি সুযোগ পেলেই এই শব্দটা ব্যবহার করে ফেলতেন। আমি তাঁর অনেক কবিতায় এটা দেখেছি।
অনুবাদ ভালো লেগেছে।
@পরশ পাথর,
ঠিকই ধরেছেন আপনি! দাশ বাবুর কবিতায় কতগুলো ট্রেড-মার্ক শব্দ আছে – এর মাঝে ‘নক্ষত্র’ শব্দটি হচ্ছে একটি। তাঁর “জীবন” কবিতাগুচ্ছে ৩৪টি ছোট কবিতা আছে। ২ নম্বর কবিতাটি তুলে ধরছি। গুনে দেখুন ‘নক্ষত্র‘ শব্দটি দু’বার আছে।
” নক্ষত্রের আলো জ্বেলে পরিষ্কার আকাশের ‘পর
কখন এসেছে রাত্রি ! পশ্চিমের সাগরের জলে
তার শব্দ; – উত্তর সমুদ্র তার, – দক্ষিণ সাগর
তাহার পায়ের শব্দে – তাহার পায়ের কোলাহলে
ভ’রে উঠে; – এসেছে সে আকাশের নক্ষত্রের তলে
প্রথমে যে এসেছিলো, তারি মতো; – তাহার মতন
চোখ তার, – তাহার মতন চুল, – বুকের আঁচলে
প্রথম মেয়ের মতো; – পৃথিবীর নদী মাঠ বন
আবার পেয়েছে তারে, – সমুদ্রের পারে রাত্রি এসেছে এখন !
[“জীবন” ২ ধূসর পাণ্ডুলিপি – ১৫৪ পাতা – “জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থ-অগ্রন্থিত কবিতা সমগ্র – সাহিত্য বিকাশ প্রকাশক ISBN: 984-8320-00-8]
শুধু কি তাই-ই ? বেলা অবেলা কালবেলা গ্রন্থে তো কবিতার নাম ই দিলেন- সুর্য নক্ষত্র নারী আর সুর্য রাত্রি নক্ষত্র । (প্রকাশিত অপ্রকাশিত কবিতা সমগ্র পৃষ্ঠা ২৫১।)
অগ্রন্থিত কবিতায় রয়েছে তার কবিতা নদী নক্ষত্র মানুষ ( পৃঃ ৩৭২) , নক্ষত্রেরা অন্ধকারের পটভুমির থেকে, ( পৃঃ ৪৬০) , এখানে নক্ষত্রে ভরে (পৃঃ ৫৯৬) এসব কবিতায় একবার দুবার নক্ষত্র শব্দটি এসেছে তবে এই আসাটা কি ভীষন জরুরী করে তিনি উপস্থাপন করেছেন সেইটি ই বিস্ময়ের বিষয়। যেনো ওখানে এর আর কোন বিকল্প ছিলো না, হতে পারে না।
বরাবরের মত ভালো লেগেছে অনুবাদ।