সম্প্রতি হিমালয় পর্বতমালা-যা আমাদের নদী নালার একমাত্র উৎস স্থল, তাকে লুঠ করার সমস্ত ব্যাবস্থা তৈরী।
অজুহাত আরো বিদ্যুত চাই। কত চাই? ভারতের প্ল্যান আরো ৫০,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত-নেপালের ১৩,০০০।
বিদ্যুত অবশ্যই চাই। ভারত এখন শিল্পোন্নত দেশ-সেখানে ঘন্টায় ৪-১০ ঘন্টা গড়ে লোডশেডিং নিশ্চয় কাম্য না। কিন্ত সেটা হিমালয়ের জল সম্পদকে লুন্ঠন করে কোটি কোটি মানুষের জীবিকাকে ধ্বংশ করে কেও নিশ্চয় চাইবে না । অতি সম্প্রতি আই আই টী কানপুরের অধ্যাপকরা অনশন ধর্ণায় বসেছিলেন-উদ্দেশ্য ভারত সরকারকে চাপ দিয়ে লোহারিনাগ-পাহারপুর প্রোজেক্টকে বন্ধ করা। উত্তর প্রদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করত এই প্রোজেক্ট।
যাগগে সেটার সাথে ভারতের স্বার্থ জড়িত ছিল বলে না হয় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আন্দোলন করে থামালেন। কিন্ত কে থামাবে টিপাইমুখ বাঁধ? মনিপুরের এই বাঁধটির ১০০ মাইল দূরেই বাংলাদেশ। মণিপুরের আদিবাসিরাত বটেই-সাথে সাথে বাংলাদেশের সিলেট সহ আরো চার পাঁচটি জেলা পরিবেশ বিপর্যয়ের সামনে পড়বে।
এই বিদ্যুত কেন্দ্র ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে-স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাবে-এসব তথ্যে আমিও নিশ্চয় খুশী। সমস্যা হচ্ছে, টিপাইমুখ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হিমালয়ের বুকে এই রকম আরো ১০০ টী জলবিদ্যুত কেন্দ্র তৈরী করার পরিকল্পনা চলছে। আফটার অল, যত বেশী বাঁধ তত বেশী ঠিকাদারি। পকেট ভরবে রাজনীতিবিদদের। দুদিকে লাভ। অর্থাগম ভোটাগম। মাশুল গুনবে ভারত -বাংলাদেশের সাধারন মানুষ।যাদের অধিকাংশই আদিবাসি। নদীই একমাত্র জীবিকা কেন্দ্র।বিদ্যুতের প্রয়োজন আমি অস্বীকার করি না। দরকার, সব থেকে বেশী দরকার এই শতাব্দিতে। প্রশ্ন উঠবে, ভারত-আমেরিকা পরমানু চুক্তিটা করে তাহলে কি লাভ হল? আমেরিকা বিদ্যুত ঘাটতি ঢাকতে একাধারে যেমন ৩০টি নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট বসাচ্ছে (২০২০ সালের মধ্যে)-ঠিক তেমনই বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে প্রতিটি বাড়িতেই সোলার প্ল্যান্ট বসানো বাধ্যতা মূলক করছে। আর ভারত কি করছে?
আমাদের দেশের কোন শক্তি-সুরক্ষা রোড ম্যাপ নেই। সোলার এনার্জির ব্যাবহার বাধ্যতামূলক করে ১৫-২৫% বিদ্যুত ঘাটতি অবিলম্বে মেটানো যেতে পারে। মানছি চাহিদাটা প্রায় ২০০-৩০০% লেভেলে। তারজন্যে এখন থেকে পরমানু বিদ্যুত প্রকল্পগুলিতে হাত না দিলে উপায় নেই। ফ্রান্স বহুদিন আগে থেকে তাই করেছে। জাপান, আমেরিকা পরিবেশের অজুহাতে পরমানু প্রকল্প বন্ধ রেখে ছিল আগের দুই দশক। এখন আবার দ্রুত গতিতে পরমানু বিদ্যুতের দিকেই এগিয়ে চলেছে। কারন বর্তমান ফিফথ জেনারেশনের প্ল্যান্ট গুলোতে বিপর্যয় ঘটার সুযোগ প্রায় নেই-যা দ্বিতীয় প্রজন্মের পরমানুবিদ্যুত কেন্দ্রগুলিতে ছিল।
সত্যকে অস্বীকার করে আমরা এগোতে পারব না। সেই সত্যটা হল ভারত বা বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রকৃতি যা ধারণ করতে পারে তার তিন থেকে পাঁচ গুন বেশী। হ্যাঁ, আমরা তাদের খাওয়াতে পড়াতে পারছি বটে-কিন্তু পরিবেশকে ধ্বংশ করে। সুতরাং এই অবস্থায় জলবিদ্যুত কেন্দ্র করে, আরো বেশী সমস্যা সৃষ্টি না করাই শ্রেয়। জণ সংখ্যা নিয়ন্ত্রন না করে, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা যে ভুল করেছেন, তার মাশুল একদম শুন্য হতে পারে না। সুতরাং এই মুহুর্তে পরমানু বিদ্যুতের বিশাল আয়োজন ছাড়া কোন উপায় নেই। তার পাশাপাশি প্রচুর স্থানীয় সোলার প্ল্যান্ট তৈরী করে, বিদ্যুতের দীর্ঘস্থায়ী চাহিদাতে লাগাম পড়াতে হবে।
কিন্তু হিমালয়ের পরিবেশকে ধ্বংশ করে জলবিদ্যুত কেন্দ্র করা-শ্রেফ কিছু ঠিকাদার আর রাজনীতিবিদদের পকেট ভরার খেলা। যার ফলে জ়ীবিকা হারাবে কোটি কোটি মানুষ। এর বিরুদ্ধে বিরাট জনআন্দোলন গড়ে না উঠলে-গোটা হিমালয়টাই অচিরে ঠিকাদার-লুঠেরাদের দখলে চলে যাবে।
Please read :
Tipaimukh Dam : Hidden Facts Cause Concern
By BBC’s East India Correspondent Subir Bhaumik
” If we leave this aside as normal compulsions of domestic politics in Bangladesh, it still falls on India to take a lower-riparian neighbour like Bangladesh into confidence when we plan such huge projects like Tipaimukh. Unless we do that, we end up providing political handle to the Islamist forces who want to fish in troubled waters… ”
READ MORE AT http://www.bengalnewz.com
[…] blogger Biplob Pal says [bn]: বিদ্যুত অবশ্যই চাই। ভারত এখন […]
I feel that the Government of Bangladesh should talk to india government and tell about its concerns. I also feel that democratic india will be and should be sensitive to the concerns of bangladesh. India government should not be that bad.
@আদিল মাহমুদ
দেখুন, আপনি তিনটে জিনিসকে একসাথে লিখেছেন। একটা হল রাজনৈতিক সমস্যা, আইনি সমস্যা আর একটা বাঁধের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা।
প্রথমে আমি শেষটা দিয়ে শুরু করি। আমি আপনার দেওয়া পেপারটা পড়তে পারলাম না কিন্তু ওয়ার্ল্ড কমিশন অব ড্যামসের ভারতীয় বাঁধগুলোর ওপর রিপোর্ট পড়েছি। তাদের রিপোর্টে বাঁধের খরচা বেশী লাভ কম – এরকম কথা বলা আছে। কিন্তু কোনো বিকল্পের কথা বলা নেই। যেমন দামোদরে ফি-বছর বন্যা আটকাতে আর কি কি করা যেত – সে নিয়ে বিশেষ কিছুই বলা নেই। বাঁধের ফলে অনেক মানুষ স্থানচ্যুত হয় – কিন্তু বাঁধ না থাকলে তার চেয়েও অনেক বেশী মানুষ প্রতিবছর গৃহহীন হত। আমেরিকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩১ জন মানুষ বাস করেন, যেখানে ভারতে বাস করেন ৩৪৪ জন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যাটা ৯০০ জনের বেশী। আমেরিকায় মাথাপিছু জলের প্রাপ্যতা ১০,২৭০ ঘনমিটার সেখানে ভারতে একই অঙ্ক ১,৮০০ ঘনমিটার। সুতরাং আমেরিকার সাথে ভারতের তুলনা চলে না, বরং তুলনা চলে জাপান বা চিনের সাথে – যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভারতের থেকে ভিন্ন হলেও জলের প্রাপ্যতা কম আর জনঘনত্ব বেশী। এই দুই দেশই কিন্তু বাঁধে ভর্তি। বাংলাদেশের মাথাপিছু জলের প্রাপ্যতা ৮০৯০ ঘনমিটার – বাংলাদেশের মরুকরণ হলে ভারতের অবস্থাটা কেমন বুঝে নিন।
http://www.greenfacts.org/en/water-resources/figtableboxes/3.htm
এই একই চার্টে দেখুন ভারতে জলসম্পদের ব্যবহার হয় ৩৪%, আমেরিকায় ১৬%। ভারতে অনেক বাঁধ দিয়ে জলাধার বানানোর ফলেই জলের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এটা ভারত করতে বাধ্য হয়েছে – বিকল্পের অভাবে।
আইনি ব্যাপারটা তুলনামূলকভাবে অনেক জটিল। অববাহিকায় সব দেশের জলসম্পদ ব্যবহারের জন্য সমতার নীতি ব্যবহার হয়। এই নীতি অনুসারে অববাহিকার দেশগুলোর বিভিন্ন প্যারামিটার (জনসংখ্যা, জলের বর্তমান ব্যবহার, প্রাপ্যতা, ভূপ্রকৃতি, বিকল্পের সুযোগ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি) যাচাই করে তাদের জল ব্যবহারে অধিকার সুনির্দিষ্টকরণ করা যায়। এই অধিকার মেনে সবাই নিজের দেশে বাঁধ দিতে পারে। আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন রাখি – নেপালের মাত্র ২৫% জনগণের কাছে বিদ্যুত পৌঁছেছে। এখন নেপাল যদি বড় কিছু জলবিদ্যুত প্রকল্পে হাত দিতে চায় তাহলে ভারত ও বাংলাদেশ আপত্তি জানাতে পারে, কারণ এতে তাদের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু নেপালের জনগণ কি বিদ্যুত-বঞ্চিত থাকবে তাহলে? যেহেতু নেপালের কাছে জলবিদ্যুতের বিকল্প নেই আর নেপালের সত্যিই বিদ্যুত দরকার – তাই নেপাল বড় বাঁধ দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করতেই পারে। আইন অনুসারে কাজ শুরু করার আগে তাদের সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে ভারত ও বাংলাদেশকে অবহিত করতে হবে যাতে তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে। আপনি নদী-অববাহিকার আইন সম্পর্কে জানার জন্য বার্লিন রুলস আর আন্তর্জাতিক কোর্টের দুটো কেস দেখতে পারেন।
সবশেষে আসি রাজনৈতিক সমস্যায়। ভারত সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে। ফারাক্কায় যে বাংলাদেশের জলের ভাগে টান পড়বে তা স্পষ্টত আগে থেকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হত। একইভাবে টিপাইমুখের বাঁধে (যদিও এটা বাঁধ, ব্যারেজ নয়) কি কি সম্ভাব্য জলের প্রবাহ পরিবর্তন হতে পারে তা নিয়ে বাংলাদেশকে আগাম তথ্য দেওয়া উচিত। তার পরেও একটা বিরাট সময়জুড়ে ভারত সরকারের চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতায় একতরফাভাবে কোনো চুক্তি ছাড়াই ফারাক্কা থেকে জল নিয়ে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা টিপাইমুখ থেকে জল নেবার কোনো প্রয়োজন নেই ভারতের কারণ উত্তর-পূর্ব ভারত এমনিতেই জল যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। এখানেও যদি ভারত সরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব দেখিয়ে জল নেবার চেষ্টা চালায় তাহলে আমি সরকারের সেই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।
@দিগন্ত,
কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, দোষ আমারই। আমি গুছিয়ে লিখতে পারিনি।
আমি যা বলতে চাই তা আগেই বলেছি, “আপনারা যদি আমাদের স্বার্থ দেখে টিপাইমুখ বাধা তৈরী করেন তো আমাদের কোন আপত্তি থাকার কথা না। মুশকিল হল ফারাক্কার করা অভিজ্ঞতার ফলে আমরা সে বিশ্বাস কোন মতেই করতে পারি না।” আমরা অনেকটা ঘর পোড়া গরূ।
আমি নিজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, তাই ঢালাও ভাবে বাধ/ব্যারাজ তৈরীর বিরোধিতা আমি কোন দিন করতে পারি না। সভ্যতার প্রয়োযনেই ওগুলোর দরকার আছে। আপনাদের হাজার বার অধিকার আছে নিজের স্বার্থে বাধ দেওয়ার, খালি আমাদের যেন ক্ষতি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আমি শুধু বলতে চেয়েছি যে আগের দিনের মত আজকাল্কার দিনে বড় বড় বাধ ব্যারাজ সহজে নির্মান করা হয় না, এর একটা বড় কারন এখন মানুষ অনেক বেশী পরিবেশ সচেতন। যা আগে ছিল না। পরিবেশের অপূরনীয় ক্ষ্রতি কে কিন্তু অনেক সময় টাকার অংকে মাপা যায় না। যেমন আপনাদের ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের অপূরনীয় ক্ষতি।
সব শেষে আপনাকে আর বিপ্লব পালকে অশেষ ধণ্যবাদ জানাই নিজ দেশের সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিবাদ করায়। দয়া করে যা সত্য তা অন্য ভারতীদের সাথে শেয়ার করবেন। ভারতীয়দের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োযন।
আমার মতে ভারতের সদিচ্ছা ছাড়া কোনদিন এর সমাধান সম্ভব নয়। আমরা বহু দেন দরবার করেছি, দ্বি০পক্ষীয় চুক্তি…এমনকি জাতিসংঘেও তুলেছি। লাভ তেমন কিছই হয়নি। যা লাভ হয়েছে তা আমাদের ডান পন্থী রাজনৈতিক দলগুলির, উগ্র ভারত বিরোধীতাই যাদের পুজি। ভারত এমনকি ৯৬ সালের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনু্যায়ীও আমাদের পানি দিচ্ছে না। যা JRC (Joint River Commission) ও ভেরিফাই করেছে। দুঃখের বিষয় হল, এ ব্যাপারে আমাদের আসলে খুব বেশী কিছু করার নেই ভারতের সদিচ্ছা ছাড়া। আগের লিঙ্কের দেওয়া আসিফ নজরুল আন্তর্জাতিক পানি আইনে পি।এইচ।ডি করেছেন। তার আরেক লেখায় জানতে পেরেছি যে ভারত চুক্তি লঙ্ঘন করলেও আমরা আন্ত্রর্জাতিক আদালত বা কোথাও এ ব্যাপারে তেমন কিছুই করতে পারব না।
আমরা ছোট দেশ, তাই গায়ের জোরের প্রশ্ন আসে না, ভারত ও সেই সুবিধের ষোল আনার উপর আঠারো আনা তুলে নিচ্ছে। আমার মতে একমাত্র সমাধান যদি ভারতের সাধারণ মানুষ্কে সচেতন করা যায়, যারা আমাদের সমস্যা সম্পর্কে কিছুই জানে না। ভারতের মত গ্ণতান্ত্রিক দেশের জনমতের অবশ্যই কিছু দাম তাদের সরকার দিবে। যে ভারতের জনগ্ণ আমাদের স্বাধীন করতে অনেক মূল্য দিয়েছে তাদের সচেতন করা গেলে কি তারা আবার আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না?
ভারতকে বুঝতে হবে যে প্রতিবেশী ছোট বা দুর্ব্লল হলেই দাদাগিরি ফলানো ঠিক না। এন্টি ভারত সেন্টিমেন্ট কিন্তু ছোট দেশের হলেও ভারতের জন্য চিন্তার কারন হতে পারে। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্রের বিশাল চালান আটক হয়েছিল। এখন সুষ্ঠূ তদন্তে বের হচ্ছে যে পাকিস্তানী ISI ততকালীন সরকারের সহায়তায় সেই অস্ত্র আসামে ঊলফা গেরিলাদের পাঠাচ্ছিল। নিন্দনীয় হলেও বৈরী প্রতিবেশী দেশের নাগরিকরা এ ধরনের কাজে উতসাহ পেতেই পারে।
ভারত-বাংলাদেশ অবাধ মুক্ত বাণিজ্যই এর সমাধান।
বিপ্লব পাল যদি সমাধানটা একটু খুলে বলেন, তাহলে ভাল হয়।
হ্যা,
ভারতীয়রা বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে একদমইচিন্তিত না।
এটা খুবই সমস্যা।
বাস্তব। কারন বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটাই এমন, এটা সম্পূর্ন ভারত নির্ভর হয়ে গেছে।
ভারত-বাংলাদেশ অবাধ মুক্ত বাণিজ্যই এর সমাধান।
এ বিশয়ে আরেকটি সুন্দর লেখা পড়তে পারেন।
http://www.prothom-alo.com/archive/news_details_mcat.php?dt=2009-06-01&issue_id=1296&cat_id=3&nid=MTU4MTcz&mid=Mw==
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে ভারতীয়রা ফারাক্কা বাধের ফলে যে বাংলাদেশের কি অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে সে বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। অথচ এই ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চীম অঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিন অঞ্ছল পর্যন্ত বিস্তির্ন এলাকা মরুতে পরিনত হচ্ছে। অল্প কথায় যা বলে শেষ করা যাবে না। ভারতীয় মিডিয়া সম্ভবত এ বিষয় এড়িয়ে যায়। বাংলাদেশে সাধারণ ভাবে মানুষের মাঝে তীব্র এন্টি ভারত সেন্টিমেন্ট কাজ করে। এর ফারাক্কা তার একটা বড় কারন।
বিপ্লব পাল কি মনে করেন?
দেখুন আমি বর্ধমান শহরে বড় হয়েছি তাই আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না। বাঁধের একটা বড় গুণ হল বন্যা নিয়ন্ত্রণ, যেটা দামোদরে করে দেখানো গেছে। টিপাইমুখে বাঁধ এই একই ধরনের – মূল উদ্দেশ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ। আপনার বক্তব্য হিমালয়ের নদীগুলোর ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে কিন্তু বৃষ্টির জলের নদীর ক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এই নদীগুলোর শুখা মরসুমের সাথে বর্ষার ফ্লো-এর প্রচুর পার্থক্য। দামোদরের মত উত্তর-পূর্ব ভারতের নদীগুলোও প্রতিবছর বরাক উপত্যকায় প্রচিবছর বন্যা ঘটায়। এটা বন্ধ করার জন্য এই বাঁধ জরুরী। তবে অবশ্যই ভাটিতে বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখে নদীর আগের মত ফ্লো শুখা মরসুমে জারী রাখা উচিত। কিন্তু বর্ষায় ফ্লো কিছু কমলে তা খারাপের চেয়ে ভালই হবে বেশী।
@দিগন্ত,
আমি নিশ্চিত নই, বন্যা নিয়ন্ত্রনে বাধ না নদী সংস্কার-
কোনটা বেশী কাজের। আমাদের অনেক বাঁধ থাকা সত্ত্বেও নদী সংস্কারের অভাবে বন্যা উত্তোরোত্তর বেড়েই চলেছে।
রিসার্ভার নদীর জল আটকে করতে হবে কেন? আমরা কি ক্যালিফোর্নিয়ান-আমাদের রাজ্যে বৃষ্টি নেই? ১৫০ সেমির ওপর
বৃষ্টি হয়- একটা ১০ বর্গকিলোমিটারে ছোট রিসার্ভরেই ৪০৫ মিলিয়ান কিউসেক জলধরে (১৫০ সেমি বৃষ্টি হলে)-যা ফারাক্কা বাঁধের সারা বছর সঞ্চয়ের থেকে বেশী।
আসলে নদীবাঁধ হলে কনট্রাক্টরদের পেট ভরে। নদী সংস্কার করে বন্যা সব থেকে ভাল কমানো যায়।
@Biplab Pal, ফারাক্কায় তো ব্যারেজ, তার উদ্দেশ্য হল জল সরানো (ডাইভার্শন), জল জমিয়ে রাখা নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অর্ধেকেরও কম, জলের চাহিদা কম হতে বাধ্য। তার থেকেও বড় কথা, আমেরিকায় ঋতুভেদে জলের সরবরাহের তফাৎ অনেক কম।
নদী সংষ্কারের অভাব তো আছেই – কিন্তু সেই কারণটাও জনসংখ্যার চাপ।
@দিগন্ত,
বড় বাধা নির্মান কে আজকের দিনে কিন্তু কেউই তেমন সাপোর্ট করে না। কারন সময়ের সাথে দেখা যায় যে বড় বাধের লাভের থেকে ক্ষতির পরিমানই বেশী হয়। IEEE এই লেখা পড়তে পারেন।
http://ieeexplore.ieee.org/Xplore/login.jsp?url=http%3A%2F%2Fieeexplore.ieee.org%2Fiel5%2F6%2F20480%2F00946638.pdf%3Farnumber%3D946638&authDecision=-203
ঊন্নত দেশগুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে কয়টি ফারাক্কা সাইজ বাধ হয়েছে? উলটা আমেরিকাতে এই শতাব্দীতে ৬০০ ড্যাম ভাঙ্গা হয়েছে। ২০০০ সালের প্রেসিডন্ট ইলেকশনে ৪ টা বড় বাধ ভাঙ্গা ছিল একটা বড় ইসু। কেন জানেন?
আমি নিজে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তবে সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হিসেবে এ বিষয়ে কিছু পড়াশুনা করতে হয়েছে। যে কোন প্রজেক্টের মত ড্যাম এরও কষ্ট বেনেফিট এনালাইসিস করা হয়, যা খুব জটিল বিধায় অত্যন্ত বিতর্কিত হতে পারে। বিশেষ করে পরিবেশের উপর কুফল হতে পারে সব হিসেবের বাইরে। ৫০ বছর আগেও মানুষ যা ধারণা করতে পারেনি। বড় ড্যাম প্রজ়েক্ট অনেকটা কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।
আইনুন নিশাত বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক ভাবে একজন প্রখ্যাত পানি বিশেষজ্ঞ। তিনি আমাদের ড্যাম বিষয়ক একটা কোর্স করাতেন। তিনি সবসময় বলতেন যে বাধ দেওয়া মানেই সমস্যার শেষ কথা না। বাধ দিয়ে আপনি আপনার এলাকা হয়ত মুক্ত করলেন কিন্তু সেই পানি আল্টমেটলি আপনাকে কোথাও না কোথাও ফেলতে হবে। বিশেষ করে নদীর ভাটি অঞ্চল যদি জনবহুল হয় তবে তাদের উপর গিয়েই ল্যাঠা পড়বে।
ভারত যে সব নদীতে বাধ দিয়েছে এবং দিবে তার সব কয়টির ভাটি অঞ্চল হল আমাদের বাংলাদেশ। ফারাক্কার ফলে একদিকে আমরা শুকনো মৌসূমে পানি পাই না, আবার বর্ষায় আপনাদের দিক থেকে পানি ছাড়ার পর আমাদের বন্যা সমস্যা তীব্র হয়। শুধু তাই না, এর প্রভাবে সুন্দরবন পর্যন্ত আজ পানির লবনাক্ততা বাড়ার কারনে হুমকির মুখে।
আপনারা যদি আমাদের স্বার্থ দেখে টিপাইমুখ বাধা তৈরী করেন তো আমাদের কোন আপত্তি থাকার কথা না। মুশকিল হল ফারাক্কার করা অভিজ্ঞতার ফলে আমরা সে বিশ্বাস কোন মতেই করতে পারি না। আজকাল আপনাদের তরফ থেকে ছেলে ভুলানো কথা বলা হচ্ছে যে এর ফলে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না, উলটা নাকি লাভ ই হবে। এমন ধারা কথা ফারাক্কা বানাবার আগেও শোনানো হয়েছিল। ফারাক্কার ফলে আমাদের উত্তর পশ্চীমাঞ্চল অলরেডি প্রায় মরুতে পরিণত হয়েছে, এখন যদি আমাদের পূর্বাঞ্চল ও আপানারা শুকিয়ে মারেন তাহলে আর বাকি থাকে কি? চিন্তা করতে পারেন এককালের প্রমত্তা পদ্মা যার কুল দেখা যেত না তাতে আজ শীতকালে গরু চরে, বর্ষাকালে হাটু জল থাকে?
আপনাদের বিশষজ্ঞ্রা তাদের কষ্ট বেনেফিট হিসেবের সময় আমাদের কথা মনে রাখেন বললে অনেক দূঃখের মাঝেও হাসতে হবে। যদিও টিপাইমুখের ক্ষতির ব্যাপারে আপ্নাদেরও অনেক বিশেষজ্ঞ সরব হয়েছেন। ফারাক্কার পানি বন্টনের ব্যাপারে আপনাদের সাথে আমাদের ৭৭ সাল থেকেই কয়েকবার চুক্তি হয়েছে, আমরা কোনবারই আমাদের ন্যায্য হিস্যা পাইনি। তাই টিপাইমুখ করার পর পাব ভাবাটা হবে অত্যন্ত মুর্খের মত।
সাধারন আন্তরজাতিক আইন এবং ৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশ করা পানি চুক্তিতে পরিষ্কার আছে যে অভিন্ন যে কোন নদীর উজানে বাধা তৈরী করতে ভারতকে বাংলাদেশের অনুমতি নিতে হবে। ভারত এই চুক্তির কতটা সম্মান দেবে? শুধু বড় শক্তিশালী দেশে বলে দিনে ডাকাতি চালনো উচিত হবে?
চমতকার সময়োচিত লেখা। আশা করি কোটি কোটি ভারতবাসীর বিবেক ও একই রকম ভাবে সাড়া দিবে।
ভারত বাংলাদেশ সূষ্ঠু সম্পর্কের পথে ভারত দ্বারা পদ্মা ও অন্যান্য নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার একটা অন্যতম বড় সমস্যা। আশা করি ভারত আরেকটি দানব খুলে বসবে না।
@Adil Mahmood,
আসলে আদিল ভাই, সবাই বলে ভারত নাকি আমাদের বন্ধু ,কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার এই দেশটির যা আচরন দেখলাম তাকে আর যাই বলুন, তা কোন বন্ধুর আচরন বলা যায়না। প্রতিনিয়ত সীমান্েত বাংলাদেশের মানুষ খুন হচ্ছে বিএসফ দ্বারা। ওরা সীমান্েত ফেন্সিডিলের কারখানা খুলছে দেদারসে যাতে এদেশের তরুন/তরুনীরা নেশায় আবদ্ধ থাকে। ফারাক্কা বাধ দিয়ে, আমাদের দেশটাকে শুকিয়ে মারছে। প্রমত্তা পদ্মা মরে গেছে, সুদুর অ্যামেরিকায় বসে এসব দেখে চোখে জল আসে। এবার শুরু হয়েছে টিপাইমুখ বাধ। বাংলাদেশের অস্তীত্বের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার আয়োজন। এসব ব্যাপারে বর্তমান সরকারের ভাবটা একটু মিহিসুরো। এই সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী নাকি বলেছেন, আগে ভারত টিপাইমুখ বাধ করুন, পরে ক্ষতি হলে আমরা প্রতিবাদ করব, এই সকল দ্বায়িত্বঞ্জ্যানহীন লোকদের এখুনি ঝেটিয়ে বিদায় করা উচিত। বাংলাদেশের মাটিতে দাড়িয়ে পিনাক রঞ্জন আর বীনা সিক্রীরা যে ভাষায় কথা বলে, তা শুনে যে কোন আত্মসম্মান সম্পন্ন বাঙ্গালীর মেজাজ খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।কিন্তু সরকার থেকে কেউ কোন উচ্চবাচ্য করছেননা। সরকার এই টিপাইমুখ বাধের ব্যাপারে কোন দ্রুত সিদ্ধান্ত এখনও নিচ্ছেন না। সবাই একে অপরের কাধে দায় চাপাচ্ছেন। জাতির জনকের কন্যা এখন সরকারে, আমি দৃ•ভাবে বিশ্বাস করি, উনি টিপাইমুখ বাধের বন্ধের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন
করেছেন, ভারতের দাদাগীরি ফলানোর জন্য নয়।
@ফায়সাল,
দূঃখজনক হলেও আপনার কথার বেশীরভাগের সাথেই একমত হতে হবে। দূঃখজনক সত্য হল, ভারতের তূলনায় আমরা নিতান্তই চুনোপুটি, এর পূর্ণ সুবিধা ভারত কড়ায় গন্ডায় আদায় করছে। তাদের সাধারণ মানুষের কোন ধারনাই নেই যে তাদের সরকারের আগ্রাসী নীতির কারনে আমাদের কি অপুরণীয় ক্ষতি হয়েচে এবং হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অংগনেও আমরা প্রায় মিত্র বিহীন, ওইদিকে ভারত বড় বড় বিশ্বমোড়লদের জিগরী দোস্ত।
তবে আপনার মত আমিও আশাবাদী যে জাতির জনকের কন্যার সরকার অন্তত আমাদের জন্য কিছুটা হলেও করতে পারবে। ২ দিন আগেই দেখলাম আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।
http://www.prothom-alo.com/archive/news_details_home.php?dt=2009-06-07&issue_id=1302&nid=MjQxNTU=
মনে রাখতে হবে যে শুধু রাজপথ কাপানো জঙ্গী মিছিল করেই কিছু হবে না। ভারতেরও অধিকার আছে বাধ দিয়ে তাদের মানুষের উপকার করার। তাদের বিশেষজ্ঞ্ররা ঠিক করবেন অই বাধা আসলেই তাদের কতটা উপকার করবে। কিন্তু আমাদের সোচ্চার হতে হবে যেন তাতে আমাদের স্বার্থের হানি না হয়।