সম্প্রতি হিমালয় পর্বতমালা-যা আমাদের নদী নালার একমাত্র উৎস স্থল, তাকে লুঠ করার সমস্ত ব্যাবস্থা তৈরী।

অজুহাত আরো বিদ্যুত চাই। কত চাই? ভারতের প্ল্যান আরো ৫০,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত-নেপালের ১৩,০০০।

বিদ্যুত অবশ্যই চাই। ভারত এখন শিল্পোন্নত দেশ-সেখানে ঘন্টায় ৪-১০ ঘন্টা গড়ে লোডশেডিং নিশ্চয় কাম্য না। কিন্ত সেটা হিমালয়ের জল সম্পদকে লুন্ঠন করে কোটি কোটি মানুষের জীবিকাকে ধ্বংশ করে কেও নিশ্চয় চাইবে না । অতি সম্প্রতি আই আই টী কানপুরের অধ্যাপকরা অনশন ধর্ণায় বসেছিলেন-উদ্দেশ্য ভারত সরকারকে চাপ দিয়ে লোহারিনাগ-পাহারপুর প্রোজেক্টকে বন্ধ করা। উত্তর প্রদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করত এই প্রোজেক্ট।

যাগগে সেটার সাথে ভারতের স্বার্থ জড়িত ছিল বলে না হয় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আন্দোলন করে থামালেন। কিন্ত কে থামাবে টিপাইমুখ বাঁধ? মনিপুরের এই বাঁধটির ১০০ মাইল দূরেই বাংলাদেশ। মণিপুরের আদিবাসিরাত বটেই-সাথে সাথে বাংলাদেশের সিলেট সহ আরো চার পাঁচটি জেলা পরিবেশ বিপর্যয়ের সামনে পড়বে

এই বিদ্যুত কেন্দ্র ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে-স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাবে-এসব তথ্যে আমিও নিশ্চয় খুশী। সমস্যা হচ্ছে, টিপাইমুখ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হিমালয়ের বুকে এই রকম আরো ১০০ টী জলবিদ্যুত কেন্দ্র তৈরী করার পরিকল্পনা চলছে। আফটার অল, যত বেশী বাঁধ তত বেশী ঠিকাদারি। পকেট ভরবে রাজনীতিবিদদের। দুদিকে লাভ। অর্থাগম ভোটাগম। মাশুল গুনবে ভারত -বাংলাদেশের সাধারন মানুষ।যাদের অধিকাংশই আদিবাসি। নদীই একমাত্র জীবিকা কেন্দ্র।

বিদ্যুতের প্রয়োজন আমি অস্বীকার করি না। দরকার, সব থেকে বেশী দরকার এই শতাব্দিতে। প্রশ্ন উঠবে, ভারত-আমেরিকা পরমানু চুক্তিটা করে তাহলে কি লাভ হল? আমেরিকা বিদ্যুত ঘাটতি ঢাকতে একাধারে যেমন ৩০টি নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট বসাচ্ছে (২০২০ সালের মধ্যে)-ঠিক তেমনই বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে প্রতিটি বাড়িতেই সোলার প্ল্যান্ট বসানো বাধ্যতা মূলক করছে। আর ভারত কি করছে?

আমাদের দেশের কোন শক্তি-সুরক্ষা রোড ম্যাপ নেই। সোলার এনার্জির ব্যাবহার বাধ্যতামূলক করে ১৫-২৫% বিদ্যুত ঘাটতি অবিলম্বে মেটানো যেতে পারে। মানছি চাহিদাটা প্রায় ২০০-৩০০% লেভেলে। তারজন্যে এখন থেকে পরমানু বিদ্যুত প্রকল্পগুলিতে হাত না দিলে উপায় নেই। ফ্রান্স বহুদিন আগে থেকে তাই করেছে। জাপান, আমেরিকা পরিবেশের অজুহাতে পরমানু প্রকল্প বন্ধ রেখে ছিল আগের দুই দশক। এখন আবার দ্রুত গতিতে পরমানু বিদ্যুতের দিকেই এগিয়ে চলেছে। কারন বর্তমান ফিফথ জেনারেশনের প্ল্যান্ট গুলোতে বিপর্যয় ঘটার সুযোগ প্রায় নেই-যা দ্বিতীয় প্রজন্মের পরমানুবিদ্যুত কেন্দ্রগুলিতে ছিল।

সত্যকে অস্বীকার করে আমরা এগোতে পারব না। সেই সত্যটা হল ভারত বা বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রকৃতি যা ধারণ করতে পারে তার তিন থেকে পাঁচ গুন বেশী। হ্যাঁ, আমরা তাদের খাওয়াতে পড়াতে পারছি বটে-কিন্তু পরিবেশকে ধ্বংশ করে। সুতরাং এই অবস্থায় জলবিদ্যুত কেন্দ্র করে, আরো বেশী সমস্যা সৃষ্টি না করাই শ্রেয়। জণ সংখ্যা নিয়ন্ত্রন না করে, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা যে ভুল করেছেন, তার মাশুল একদম শুন্য হতে পারে না। সুতরাং এই মুহুর্তে পরমানু বিদ্যুতের বিশাল আয়োজন ছাড়া কোন উপায় নেই। তার পাশাপাশি প্রচুর স্থানীয় সোলার প্ল্যান্ট তৈরী করে, বিদ্যুতের দীর্ঘস্থায়ী চাহিদাতে লাগাম পড়াতে হবে।

কিন্তু হিমালয়ের পরিবেশকে ধ্বংশ করে জলবিদ্যুত কেন্দ্র করা-শ্রেফ কিছু ঠিকাদার আর রাজনীতিবিদদের পকেট ভরার খেলা। যার ফলে জ়ীবিকা হারাবে কোটি কোটি মানুষ। এর বিরুদ্ধে বিরাট জনআন্দোলন গড়ে না উঠলে-গোটা হিমালয়টাই অচিরে ঠিকাদার-লুঠেরাদের দখলে চলে যাবে।