মহাবিশ্বকেন্দ্র থেকে মানুষের ক্রমিক স্থানচ্যুতি
আসিফ
বর্তমানে কসমোলজির ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায়, বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে অনেকগুলো চমকপ্রদ তত্ত্ব এসেছে কৃষ্ণগহ্বর, মহাবিশ্বের উতপত্তি ও আকৃতি নিয়ে। তারমধ্যে বেশি নাড়া দিয়েছে মহবিশ্বের সসীমতার প্রশ্নে একটি প্রকল্প। পিয়েরি লামিনেট, ডি স্টার্কম্যান ও আর. উইকের মতো বিজ্ঞানীরা বিশ্বের এমন একটি সামগ্রিক আকারের সন্ধান করছেন যা আপাতভাবে আয়না দিয়ে মোড়ানো নাপিতের ঘরের একই বস্তুর অসংখ্য প্রতিবিম্ব দেখার মতো অর্থাত একই গ্যালাক্সির অসংখ্য গ্যালাক্সি প্রতিবিম্ব আমরা দেখতে পাই যার ফলে বিশ্বকে আমাদের অসীম বলে প্রতীয়মান হয়, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও হয়তো ব্যাতিক্রম নয় যার অসংখ্য প্রতিবিম্ব আছে। ইউকিডীয় স্থানের কিছু সসীম টপোলজি তারা তৈরি করতে পেরেছেন, গবেষণা এখনও চলছে, ১৯৯৯ সালের দিকে ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকা’ মাসিকে একথা প্রকাশিত হয়েছে।
তবে সন্দেহ নেই দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শেষার্ধে এসে নিশ্চিতভাবেই একথা জেনেছি যে আমাদের অবস্থান এই মহাবিশ্বে খুবই সাধারণ অঞ্চলে এবং আমরা হলাম ধুলিকণার চেয়েও তুচ্ছ আর আকস্মিকতার ফলাফল। এই অবস্থান জানতে গিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘাত হয়েছে, ঝরেছে অনেক রক্ত, নিভে গেছে বহু মুল্যবান প্রাণ। এই সংঘাত ও সংঘর্ষ বিজ্ঞানের পথিকেরা শুরু করেনি, করেছে ধর্মান্ধরা। কোপার্নিকাস -এর সৌরকেন্দ্রিক ধারণা প্রচার করতে গিয়ে ১৬০০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওর্ডানো ব্রুনোকে যেভাবে ক্রুসবিদ্ধ করে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তা ভবিষ্যত প্রজন্ম যতবার স্মরণ করবে ততবারই শিউরে উঠবে, গ্যালিলিওকে ইনকুইজিশনে দাঁড়াতে হয়েছিল, বৃদ্ধবয়সে লাঞ্চিত হতে হয়েছিল, যদিও তিনশ বছর পরে এই কিছুদিন আগে ভ্যাটিক্যানের পোপ এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলাবাহুল্য এটা তৃতীয় সহস্রাব্দের মানুষদের জন্য আশার কথা।
এই বিকেন্দ্রীকরণের ইতিহাসটা শুরু করেছিলন পোলিশ বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাস ১৫৪৩ সালে। তিনি বলেছিলেন যে পৃথিবী নয়, সূর্যই বিশ্বের কেন্দ্র আর পৃথিবী একটা গ্রহ যা সূর্যকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে ঘোরে। স্মর্তব্যঃ ১৮০০ বছর আগে এই ধারণাটিই আয়োনীয় বিজ্ঞানী অ্যারিস্টোকার্স বলেছিলেন যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণসহকারে। কিন্তু ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারচ্ছন্নতা আর প্লেটো ও অ্যারিস্টোলীয় প্রভাব তা বাড়তে দেয়নি এবং তাঁদের ধারণাই দৃঢ়ভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি ‘অ্যালামজেস্ট’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ডেনমার্কের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে গ্রহগুলির অবস্থান সম্পর্কে টলেমি-কল্পিত গতিপথগুলোর চমৎকার গাণিতিক ও জটিল লেখচিত্র দিতে সম হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো ছিল গ্রহগুলো গড়াতে গড়াতে কোথায় যাবে সে সম্পর্কে সহায়ক নির্দেশাবলী মাত্র। কোপার্নিকাস অবশ্য আগেই বলেছিলেন যে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে এগুলোকে না দেখে সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে দেখলে এই গতিপথগুলোকে আরো সরল করা যায়। কেপলার (১৫৭১-১৬৩০) ব্রাহের সহকারীরূপে কিছুদিন কাজ করেছিলেন। তিনি ব্রাহের নেওয়া পরিমাপসমূহের ফল এবং কোপার্নিকাসের ধারণাসমূহ ব্যবহার করে ১৬০৯ – ১৬১৯ সালের মধ্যকার কোনো এক সময়ে গ্রহগতি সংক্রান্ত তিনটি সূত্র দেন। তিনি বলেন প্রত্যেকটি গ্রহ সূর্যকে ফোকাসে রেখে, বৃত্তকার পথে নয়, উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে এবং এই ঘোরার গাণিতিক সম্পর্ক প্রকাশ করেন। পর্যবেণের প্রতি বিশ্বস্ততা ও যথার্থ যুক্তিবোধ কেপলারকে প্লেটোনিক বিশুদ্ধতার প্রতীক ও ধর্মীয় পবিত্রতা যুক্ত বৃত্তাকার ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করে। এদিকে ১৫৮৯ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন যে কোন বস্তুকে অভিকর্ষের প্রভাবে মুক্তভাবে পড়তে দিলে বায়ুশূন্য স্থানে সকল বস্তুই নিশ্চল অবস্থা হতে যাত্রা শুরু করে সমান ত্বরণে নিচে পড়ে। ভারী ও হালকা সকল ভরের বস্তুই সমান হারে বেগপ্রাপ্ত হয় অথবা সমান ত্বরণে নিচে পতিত হবে, অর্থাত ২৪ তলা ভবন থেকে বায়ুশূন্য অবস্থায় একটি মুরগীর পালক ও এক টনের একটি লোহারপিণ্ড ফেললে সেগুলি একই সময় ভুমিতে এসে আঘাত করবে। এভাবেই তিনি পড়ন্ত বস্তুর তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন। এদিকে গ্যালিলিওর দূরবীণ যন্ত্র আবিষ্কার গ্রহ-নত্র পর্যবেক্ষণের পথ আরো খুলে দেয়। গ্রহগতির নিয়মাবলী ও পড়ন্ত বস্তুর সূত্র থেকে এটা পরিষ্কার যে তখনও পর্যন্ত এসমস্ত বেগ পরিবর্তনের জন্য দু-রকমের কারণকে চিহ্নিত করা হতো: একটি পার্থিব অভিকর্ষ (পৃথিবীর পৃষ্ঠে যে কারণে কোন বস্তু পতিত হয় তাকে অভিকর্ষ বা মধ্যাকর্ষণ বলে, যেমন: আপেলের পতন), দ্বিতীয়টি মহাজাগতিক অভিকর্ষ বা মহাকর্ষ (যে কারণের জন্য পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদ ঘোরে এবং সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ও গ্রহ-নত্রগুলো ঘোরে তাকে মহাজাগতিক অভিকর্ষ বা মহাকর্ষ বলে)। গ্যালিলিওর আবিষকৃত পড়স্তু বস্তুর সূত্র এবং কেপলারের গ্রহগতি সম্বন্ধীয় সাধারণ সিদ্ধান্ত তিনটির উপর ভিত্তি করে এবং সেইসঙ্গে দেকার্তের বিশ্লেষণধর্মী জ্যামিতি ব্যবহার করে, নিউটন ও অন্যান্য সমকালীন গবেষকরা গ্রহগুলোর সঞ্চারণের এবং পড়ন্ত বস্তুসমূহের মধ্যে গভীরতর শৃঙ্খলার অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন। নিউটনই প্রথম উপরোক্ত কাজগুলোর একটিমাত্র রূপ দিলেন অদ্ভুত নিখুঁতভাবে, যা জ্যাকোব ব্রওনস্কির ভাষায়, ‘তিনি বললেন, বস্তুপিণ্ডাদির মধ্যে তা আপেলই হোক, চন্দ্র বা পৃথিবীই হোক অথবা সূর্যের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহগুলোই হোক – পারস্পরিক গতি উতপন্ন হয় তাদের মধ্যকার মহাকর্ষ বলের জন্য, যে-বল একটি বস্তুকে অন্য বস্তুর দিকে টানে। সমকালীন বিজ্ঞানীদের মধ্যে একমাত্র তাঁর হাতেই সেই গাণিতিক ক্ষমতা ছিল যার ফলে তিনি দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে ওইসকল বল যথা পার্থিব অভিকর্ষ ও মহাকর্ষকে যদি একটি সূত্রে সাজানো যায় তাহলে তাদের অধীনে গ্রহগুলো ঘুরতে থাকে ঘড়ির কাঁটার মতো নিয়মিত ছন্দে, জোয়ার-ভাটা ওঠে-নামে নিয়ন্ত্রিত ছন্দে, আর বিশ্বব্রম্মান্ড সংযুক্ত থাকে একই কারণে।’
এই সূত্রটি ছিল ‘দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষবল তাদের ভরের সমানুপাতিক এবং বস্তুদ্বয়ের দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক। একে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বলে। আমরা এই সমস্ত তত্ত্ব থেকে জেনেছিলাম যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে সেকেন্ড ১৬ মাইল বেগে ঘুরছে এবং কেন আমরা চলমান পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ি না। এদিকে হাইগেন্সের সময় থেকে তারা-নক্ষত্রের দুরত্ব নিরূপনের চেষ্টা শুরু হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও সঙ্গীতজ্ঞ উইলিয়াম হার্শেল দৃশ্যমান আকাশের অসংখ্য নক্ষত্রের অবস্থান ও দূরত্ব তালিকাভুক্ত করে যথেষ্ট যুক্তিসংগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিই হলো আমাদের বিশ্ব এবং মানুষের সান্ত্বনা ছিল যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে আবর্তমানক একটি সাধারণ গ্রহ হলেও সূর্য এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত। কিন্তু ১৯১৫ সালের দিকে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে হ্যারলো শেপলি বেশ সাহস করে প্রস্তাব করেছিলেন যে সৌরজগতের অবস্থান হলো গ্যালাক্সির প্রান্তে। আজ আমরা নির্ভূলভাবে জানি যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার আলোকবর্ষ দূর দিয়ে গ্যালাক্সিকে প্রদণি করে চলেছে সেকেন্ড ৪২ মাইল গতিতে আর সম্পূর্ণ একবার ঘুরে আবার ফিরে আসতে সময় লাগে ২৫ কোটি বছর। এও জানি যে এ গ্যালাক্সিতে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি সূর্যের মতো নক্ষত্র আছে, যার মধ্যে আরও অন্তত ১০ হাজার কোটিতে আমাদের মতো সৌরজগত থাকা সম্ভব। ১৯২৪ সালে হাবলের আবিষ্কার আর থেকে জানা গেল আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতো অসংখ্য গ্যালাক্সি মহাশুন্যে অপরিমেয় দূরত্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রোমিডাতে আলোর গতিতে ছুটে যেতেও সময় লাগবে ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ। এদিকে আইনস্টাইন তার সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্বের চতুর্মাত্রিক গোলকের প্রস্তাব করেন যার পৃষ্ঠটা ত্রিমাত্রিক – অনেকটা ত্রিমাত্রিক গোলকের দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠের মতো। ১৯২২ সালের দিকে রুশ গণিতবিদ ফ্রিডম্যান আইনস্টাইনীয় মডেলকে একটি প্রসারণশীল মহাবিশ্ব ও পরাবৃত্তিক স্থান বলে অনুমোদন দেন। এইসব ধারণা অনুযায়ী মহাবিশ্বটা এমন একটা জগত যার প্রত্যেকটা বিন্দুই প্রান্ত ও প্রত্যেকটা বিন্দু কেন্দ্র, অর্থাত প্রত্যেকটি স্থানই সাধারণ। গণিতের প্রকৃত ভূমিকা নির্ণয়
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিজ্ঞানীদের দৃশ্যমান আকাশের অসংখ্য নক্ষত্রের অবস্থান ও দূরত্ব তালিকাভুক্তির কাজ শুরু হলো, শুরু হলো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে সূর্যের অবস্থান সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া, গণিতকে পদার্থবিজ্ঞানে সদ্ব্যব্যবহার করা সম্ভব হলো। কিন্তু তারপরও গণিতের প্রকৃত ভূমিকা তখনও মানুষের উপলব্ধিতে আসেনি। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এসে মানবেতিহাসে এক অসাধারণ ঘটনা ঘটে। বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে মানুষ আরেক ধাপ এগিয়ে যায়, যৌক্তিকতার আরেক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এটি ঘটে ইউক্লিডীয় সমতল জ্যামিতির ‘পঞ্চম স্বীকার্য বা সামান্তরাল সরলরেখা’ নামের ধাঁধাটির রহস্য উদঘাটনের কল্যানে যা প্রমাণের জন্য সর্বকালের সেরা গণিতজ্ঞরা দু’হাজার বছর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালান। গণিতজ্ঞদের ২৩ শত বছর অবিরাম চেষ্টার পর বোঝা সম্ভব হয় যে ইউক্লিড আসলে ঠিকই ছিলেন। সেই থেকে জ্যামিতি তথা গণিতের প্রকৃত ভূমিকা অনুধাবন সম্ভব হয় যে, গণিতের কাজ কোন কিছুর সত্যাসত্য নির্ণয় নয়, বরং আভ্যন্তরীণ অসংগতি ছাড়া যৌক্তিক কাঠামো গড়ে তোলা। এটা বাস্তবের সাথে মিলে যেতে পারে, আবার নাও পারে। বাস্তবকে বর্ণনা করা গণিতের কাজ নয়। ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয়দের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মূল পদ্ধতি ছিল পর্যবেক্ষণ এবং সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু প্রাথমিক ধরনের সাধারণীকরণ যাকে আরোহী পদ্ধতি বলা হয়। কিন্তু ২৬০০ বছর আগে আয়োনীয় পথিক (পথপ্রদর্শক) থেলিস দেখালেন সম্পূর্ণ অন্য এক পথ। তিনি সরাসরি পিরামিডের উচ্চতা না মেপে ছায়ার দৈর্ঘ্যরে সাথে লাঠির ছায়ার তুলনা বা সম্পর্কের অনুমানের ভিত্তিতে পিরামিডের যে-উচ্চতা নির্ণয় করেছিলেন তা প্রকৃত উচ্চতার সাথে বিস্ময়করভাবে মিলে গিয়েছিল। তখন থেকেই সূত্রবদ্ধ চিন্তার শুরু, শুরু বিজ্ঞান ও জ্যামিতিক প্রমাণের। জ্যামিতিতে প্রমাণের মানে হচ্ছে সরল ও স্পষ্ট ধারণার ভিত্তিতে অপোকৃত জটিল সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠিত করা বা ভুল দেখিয়ে দেওয়া এটার শুরু থেলিসের হাত দিয়ে। চিন্তাপদ্ধতি হিসেবে একে বলা হয় অবরোহী পদ্ধতি। অবশ্য থেলিস পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয়ে যা করেছিলেন তা বিশুদ্ধ অবরোহী পদ্ধতি নয়, বরং আরোহী, অবরোহীর এক ধরনের মিশ্রণ। তারপর এলেন পিথাগোরীয়রা। তাঁরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলেন তাদের গাণিতিক কর্মকাণ্ডের ফলাফলগুলো ভালভাবে ভৌত বা প্রাকৃতিক জগতের সাথে মিলে যাচ্ছে। গণিতের এই নিশ্চিত ফলাফল তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করলো এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে, বিশুদ্ধ চিন্তাই একমাত্র সুনিশ্চিত জ্ঞান দিতে পারে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা কোন ধারণার প্রমাণকে নিষিদ্ধ করে দিলেন এবং বললেন এই প্রমাণ মনের মধ্যে হলেই চলবে। এরফলেই জন্ম হয়েছিল জ্যামিতি তথা বিশুদ্ধ গণিতের যদিও তাঁরা তা অনুধাবন করতে পারেন নি। পিথাগোরীয়রা গাণিতিক সত্যতা ও প্রাকৃতিক জগতের ঘটনাবলীকে মিশিয়ে ফেলেছিলেন।
উনবিংশ শতাব্দীতে এসে কার্ল ফ্রেডারিক গস (১৮২০), রাশিয়ার নিকোলাই লোবাচেভস্কি (১৮২৬) ও হাঙ্গেরীর জেনাস বোলাই (১৮৩২) প্রমুখের গবেষণাপত্র থেকে জ্যামিতিশাস্ত্রের প্রকৃত ব্যাপারটা বোঝা গেল। উল্লেখ্য এই কাজটির কারণে তাদের জীবনে অশেষ দূর্ভোগ পোহাতে হয়, একজন ভয়েই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন নি, একজনকে মাথানষ্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়, তৃতীয়জনকে গণকবরে কবরস্থ করা হয়। ফলাফলগুলো বাস্তবিকই সত্য কী-না তা বিবেচ্য নয়, বিষয়টা ছিল জ্যামিতিক ব্যবস্থাটির মধ্যে যৌক্তিক অসংগতি থাকতে পারবে না। গণিতের কাজ হলো ‘যদি ও তবে‘র মাধ্যমে একটি যৌক্তিক শৃঙ্খলা গড়ে তোলা আর তাতে ব্যবহৃত স্বীকার্য ও সংজ্ঞাগুলো অথবা ফলাফলগুলো সত্য বা মিথ্যা কিনা তা দাবী করা বিবেচ্য বিষয় না, এটা ছেড়ে দেওয়া উচিত বিজ্ঞানীদের (বিশেষত পদার্থবিজ্ঞানী) হাতে। এইভাবে গণিতের প্রকৃত ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে যায় এবং ফলত গণিতের মাধ্যমে প্রাচীন ও মধ্যযুগে (পরে বুদ্ধিবাদীদের সময়েও বটে) ধর্মকে শক্তিশালী করার হাতিয়ার হিসেবে গণিতের ব্যবহার বন্ধ হয় এবং গণিতের ‘বিশুদ্ধ চিন্তাই’ জগত সম্পর্কে সব ধারণা দিতে পারে বা রহস্যবাদী উপায়ে জ্ঞানলাভ সম্ভব‘ সংক্রান্ত ধারণার অবসান ঘটে। মানবজাতি নতুন এক যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মহাবিশ্বের দিকে তাকাতে সামর্থ হয়। আন্তপ্রাজাতিক সমাজের পথে
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মানুষের নিজের সম্পর্কে গড়ে ওঠা হাজার হাজার বছরে চিন্তা ও বিশ্বাসের ভিতকে কাঁপিয়ে দেয় ভূতত্ত্বের নিরিখে গড়ে ওঠা ভূতাত্ত্বিক কালপঞ্জি ও ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বেও মূলসূত্র ডারউইনের ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’। পৃথিবী বিশ্বের কেন্দ্রে নয়, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে নয় ধারণাটা সাধারণ বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিলেও বিষয়টা ততটা বোধগম্য নয় যতটা বোধগম্য হলো ‘মানুষের উদ্ভব সরাসরি ঘটেনি’ ধারণাটি মানুষ অতঃপর বুঝতে পেরেছিল সহজেই যে তার শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বলতে সে যা বোঝে তা আর থাকে না। সে প্রায় ৩৫০ কোটি বছরের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এককোষী থেকে বহুকোষী, অমেদণ্ডী থেকে মেরুদণ্ডী, মাছ, সরীসৃপ হয়ে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিবর্তনবাদের ধারণাটির শুরু আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে, অ্যানাক্সিমেন্ডার, এমপিডকলেস, ডেমোক্রিটাসের হাতে। বিবর্তনবাদ কোনো তত্ত্ব নয়, সত্য ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনাটি ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় ঘটে তা বুঝতে আমাদের চার্লস ডারউইন ও ওয়ালেসের ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ আবিষ্কার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ প্রক্রিয়াটি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে যে প্রমাণগুলো সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে তা হলো ফসিলবিদ্যা ও কৃত্রিম নির্বাচন। প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ও ভূত্বকের খাঁজে খাঁজে জীবাশ্মের আবিষ্কার নিয়ে ধর্মবিদদের সাথে বিজ্ঞানীদের যে পরিমাণ বিরোধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত তা আর ঘটেনি। কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা কুকুর, গরু, ভেড়া ও শাকসব্জিগুলোর সেইসব পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে রক্ষা ও যত্ন করেছি যেগুলো আমাদের জন্য অধিকতর উপকারী, যেজন্য কুকুর, গরু, ভেড়া ও বিভিন্ন শাকসব্জির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন আমার দক্ষ শিকারী কুকুর পেয়েছি, ভেড়ার স্বল্প পশম ২০কিলোগ্রামে পৌছেছে, গবাদি পশুর দুধের পরিমাণ কয়েকশত থেকে বেড়েছে কয়েক লক্ষ ঘন সেন্টিমিটার পর্যন্ত। মাত্র দশ হাজার বছরের কৃত্রিম নির্বাচন এত বড় পরিবর্তন ঘটাতে পারলে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’, যে প্রক্রিয়াটি কোটি কোটি বছর ধরে কাজ করে এসেছে সে কেন সামর্থ হবে না কয়েকলক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রানীর উতপত্তি ঘটাতে? প্রসঙ্গত বলা যায় মানুষ একজন মহান কারিগর হিসেবে ঈশ্বরকে দেখেছের যিনি জীবজগত সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ডারউইন ও ওয়ালেস দেখিয়েছিলেন, আরেকটি উপায়, যা সমান আবেদনপূর্ণ, সমান মানবিক এবং অধিকতর যুক্তিগ্রাহ্য তথা বিশ্বাসযোগ্য আর তাহরো প্রাকৃতিক নির্বাচন, যা যুগে যুগে জীবনগীতি (জীবনের গতিকে) আরও বাঙময় করে তোলে।
বাইবেলে বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন বিভিন্ন রাজাদের রাজত্বকাল, মুসার আমলে ইহুদিদের মিশর প্রস্থানের সময়, সুলায়মানের গীর্জা নির্মাণের আমল ইত্যাদি। ধর্মতাত্ত্বিকেরা বাইবেলের এই সকল ঘটনাবলীর নিরিখে পৃথিবীসৃষ্টির কাল নির্ধারণ করেন। এক্ষেত্রে খুব পরিচিত সিদ্ধান্তগুলোর একটি, রাজা জেমসের টীকাকৃত বাইবেলের অনেক সংস্করণে আজও ছাপার অরে লেখা রয়েছে। ১৬৩০ সালে ইংল্যান্ডের গীর্জার এক আইরিশ বিশপ জেমস আশার তাঁর গাণিতিক প্রক্রিয়ায় বাইবেলের ঘটনাবলীর ক্রমপঞ্জি থেকে সৃষ্টির তারিখ নির্ধারণ করেন ৪০০৪ খিস্টপূর্বাব্দে। অপর দিকে বাইজেন্টাইনীয় পন্ডিতদের মতে সৃষ্টির তারিখ ৫৫০৮ খিস্টপূর্বাব্দে। তবে ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে সবচেয়ে স্বাধীন যে-মতামত এসেছে, তা ৭০০০ বছরের বেশি বলে ধরা যায়নি। সুতরাং এটাঁ অত্যন্ত সত্য যে, রহস্যজনকভাবে ঈশ্বর কর্তৃক পৃথিবী সৃষ্টি না হলে, বিবর্তনের ধারায় একেকটি প্রজাতি বিকাশের জন্য ঠিক যতটা সময়ের প্রয়োজন এ-সময়টা সেজন্য যথেষ্ট নয়। উল্লেখ্য, স্কটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী জেমস হাট্টন (১৭১৬- ১৭৯৭) স্কটিশ উপকূলে একবার তাঁর বন্ধুদের শিলার গঠন দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা দেখলেন শিলার বয়স যাই হোক না কেন, এক শিলা থেকে আরেক শিলা রূপান্তরের অন্তহীন ধারাবাহিকতাই হল ল্যণীয় বিষয়। এই ভূতত্ত্ববিদই ১৭৮৫ সালে ঞযবড়ৎম ড়ভ ঃযব ঊধৎঃয নামে প্রথম ভূতত্ত্ববিদ্যার ভিত্তিপত্তনকারী একটি বই রচনা করেন। আধুনিক ভূতত্ত্ববিদ্যার এই গ্রন্থে শিলার স্বাভাবিক গঠনপদ্ধতি ও পরিবর্তন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধারণাগুলো পৃথিবীর বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টি খুলে দেয়। তিনি সেখানে ব্যক্ত করলেন যে, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো আজ পৃথিবীর রূপ যেভাবে বদলে দিচ্ছে, অতীতের পৃথিবীতেও সেই প্রক্রিয়াগুলো একইভাবে সক্রিয় ছিল। অল্প কথায় যুগ যুগ ধরে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো একইভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আরেকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখানো যায়, যেমন সাগরগুলোর লবণাক্ততা ধীরে ধীরে বাড়ছেই। কারণ, প্রতিবছর নদীগুলো লবণ বয়ে নিয়ে আসছে আর এই বৃদ্ধি চলছে প্রায় একই হারে এবং সাগরের বর্তমান লবণাক্ততা কত বছরে তৈরি হয়েছে, জেমস হাট্টনের পদ্ধতির সাহায্যে তা সহজেই হিসাব করা যায়। অবশ্য ধরে নিতে হবে যে, সাগরের পানি প্রথমে মিষ্টি পানিই ছিল। এভাবে এই হিসাব থেকে সৃষ্টির বয়স হবে প্রায় কয়েক লক্ষ বছর, যা ধর্মবেত্তাদের পূর্বোক্ত হিসাবের ধারণার মূলে কুঠারাঘাত হানে। এদিকে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যখন বিভিন্ন শিলাস্তরের ধারা অনুসারে ফসিল পাওয়া যেতে লাগলো তখন ধর্মতাত্ত্বিকেরা (সময়ের হিসাব এখানে বাদই রাখা হলো) বলতে লাগলো ঈশ্বর ভূত্বকের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে একটা বিশেষ পারস্পরিক বিন্যাস ঘটিয়ে থাকতে পারেন। ভূতাত্ত্বিকদের তখন প্রমাণ করার প্রয়োজন হয়নি যে, সে কাজ কারও পে শুধু একটা যুক্তিহীন প্রয়াসই হতো না তার পিছনে ব্যতিক্রমী খেয়ালী ইচ্ছাও থাকতো। সে-রকম কিছু হয়ে থাকলে, বলতেই হতো এভাবে বিশ্বজগত চালনা এক অযোক্তিক পন্থাই। এখন আমরা জানি উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতে আজ এত সৌন্দর্য ও বৈচিত্র তা এই ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনে’র কারণে। এর ফলত আমরা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলাম যে মানুষ ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে অতিনিচুস্তরের প্রাণী থেকে এই পর্যায়ে এসে পৌছেছি। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ডারউইন-ওয়ালেসের প্রাকৃতিক নির্বাচন আমাদের অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত করলেও মানুষ যে এই বিবর্তনের একটি শ্রেষ্ট ফসল সেই বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের সংস্কারবোধ তখন এই ভেবে শান্তি পেয়েছিলো যে আমরা হলাম প্রাণী বিবর্তনের শ্রেষ্ঠ ফসল, আর কেউ চিন্তা করতে বা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে না। কিন্তু তাও বোধহয় থাকলো না, বিংশ শতাব্দীতে যখন দেখা গেল অন্যান্য অনেক প্রাণীর, সেটা কম হতে পারে, কিন্তু তাদেরও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছে এবং ঘটছে, জিন-ম্যাপের সম্পূর্ণতা তা আরো স্বচ্ছ করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে শিম্পাঞ্জিদেরও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে চলেছে, তিমিরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান প্রাণী, পৃথিবী দুই প্রান্তে দুটো তিমিকে রেখে দিলে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, আমরা এখনও জানি না কী কথা তারা বলে পরষ্পরের মধ্যে, তবে এদেরও যে নিজস্ব সমাজ ও ভাষা আছে এটা নিশ্চিত। আর আমরা মানুষেরা এদের সকলের বিকাশকে শুধু বাধাগ্রস্তই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংসই করে ফেলেছি, অথচ এই পৃথিবীতে অধিকার তো সকল প্রাণীর জন্য সমান। মানবপ্রজাতির বিবর্তন নির্ভর করেছিল ডাইনোসরের বিলুপ্তির এবং তুষারযুগের ফলে বনভূমির পশ্চাদসরণের উপর। ডাইনোসরেরা ধূমকেতুর পতন বা মহাজাগতিক কোন বিপর্যয়ের কারণে ধ্বংস নাহলে সবুজ চামড়াবিশিষ্ট চার মিটার লম্বা মনুষ্য আকৃতির এক ধরনের ডায়নোসর ছিল, যাদেরও আমাদের মতো উন্নত সভ্যতার বিকাশ ঘটানোর সম্ভাবনা ছিল। তারাই হয়তো এক সময় বলতো আমরাই সৃষ্টির সেরাজীব। এইসমস্ত বোধ ও উপলব্ধি আমরা দ্বিতীয় সহস্রাব্দে শেষার্ধে এসে অর্জন করতে শুরু করেছি যা তৃতীয় সহস্রাব্দে আন্তপ্রাজাতিক ক্ষেত্রেই শুধু মানবিকতা প্রসারিত হবে না, বরং বর্হিজাগতিকদের সন্ধান পেলে আন্তনাত্রিক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে। কার্ল সাগান ও ফ্রাংক ড্রেকের মতো বিজ্ঞানীরা সম্ভাবনাতত্ত্ব আরোপ করে বলেছেন যে লক্ষকোটি গ্যালাক্সির মধ্যে শুধু আমাদের গ্যালাক্সিতে এক কোটি গ্রহে বেতার যোগাযোগের মতাধর প্রাণ থাকা সম্ভব। তাদের শারীরিক গঠনকাঠামো অকল্পনীয় বৈচিত্রময় হতে পারে। সেরকম উন্নত প্রাণের দেখা না পেলেও, বিভিন্ন ধমকেতু, উল্কাপিণ্ড ও মহাশূন্যে বিভিন্ন জৈববস্তু পাওয়ার মতো যদি অন্তত মঙ্গল গ্রহেও আমরা এককোষী প্রাণের কোন সন্ধান পাই তাহলে একথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে যে মহাজগতে প্রাণ একটা সাধারণ ঘটনা, অন্যান্য অনেক পরিণতির মতো পদার্থের আরেকটা সাধারণ পরিণতি মাত্র। আমাদের জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ও পর্যবেক্ষণ পৃথিবীকে বিশ্বের কেন্দ্র থেকে সরিয়েছে, সরিয়েছে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে, গণিতের ভূমিকাকে স্পষ্ট করেছে, সরিয়েছে সরাসরি প্রেরিত বিশেষ প্রাণের বিশ্বাস থেকে, জাতিগত সহাবস্থানকেই নমনীয় করেনি, প্রজাতিবৈচিত্রও যে টিকে থাকার শক্তি রাখে তা বুঝিয়েছে, অনড়তা থেকে দাঁড় করিয়েছে মহাজাগতিক পথিকে এবং বুঝিয়েছে যে লকোটি গ্রহের একটিতে আমাদের বসবাস। এই বোধ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করেছে, মানবিকতার পরিব্যাপ্ত বিকাশ ঘটিয়েছে। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলো বর্ণিত অনঢ়তা ও অনন্যতা থেকে আমরা এখন অনেক দূরে, যদিও তার ভয়াবহ উম্মাদনা থেকে আজও আমাদের মুক্তি ঘটেনি।
আসিফ, ডিসকাশন প্রজেক্ট, পেশাদার বিজ্ঞানবক্তা। তার কসমিক ক্যালেণ্ডার, সময়ের প্রহেলিকা, নত্রের জন্ম-মৃত্যু, প্রাণের উতপত্তি ও বিবর্তন, আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতা, জ্যামিতির মতো জটিল বিষয়ে দর্শনীর বিনিময়ে বক্তৃতার আয়োজনের মধ্যে আছে অভিনবত্ব ও কল্পনার দুঃসাহস। আসিফের বইয়ের সংখ্যা সাতটি।
আসিফ আপনাকে অভিনন্দন একটি জটিল বিষয়ের এমন সাবলীল উপস্হাপনার জন্য। এখানে দ্বিমত থাকার কোন কারন নেই , সত্য সবসময়ই সত্য।
বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার মত এর চেয়ে নির্ভর যোগ্য তত্ত্ব কারো কাছে আছে কি ?
আসিফের একটি খুবই চমৎকার লেখা। লেখাটি ডারউইন দিবসের জন্য পারফেকট। আসিফকে আর বেশি করে মুক্তমনায় লেখার আহবান জানাচ্ছি।