ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ এবং মন্ত্রীর কথা প্রসঙ্গ
আবুল হোসেন খোকন
বেশ অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে লিখবো। কিন্তু সে লেখার আগেই আমাদের নতুন অর্থমন্ত্রী ভিক্ষাবৃত্তির উপর ভাষণ দিয়ে ফেলেছেন। তিনি গত ৫ ফেব্র“য়ারি ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি চিরতরে শেষ করে ফেলবেন। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি খতম করতে হবে, পাঁচ বছর পর আমরা দেশে কোন ভিক্ষুক দেখতে চাই না, আশা করছি আমাদের সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালেই আমরা ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে পারবো। তিনি দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধির একটা হিসেবেও দিয়েছেন এবং বলেছেন, এখন এ সংখ্যা আরও কিছুটা বেড়েছে। এ ভিক্ষাবৃত্তির সমস্যা দূর করা তেমন কোন কঠিন কাজই নয়। একটু আন্তরিক হলেই এটি দূর করা সম্ভব। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে একটি মডেল দাঁড় করার কথাও বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী কোথায়-কাদের সামনে এসব বলেছেন সে বিষয়ে পরে আসা যাক। তার আগে ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে প্রসঙ্গ শুরু করা যাক। কথা হলো আমাদের দেশ থেকে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলো থেকে ভিক্ষাবৃত্তি সত্যিই দূর করা দরকার। আমাদের জন্য দরকার একটি ভিক্ষুকমুক্ত স্বদেশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমাদের দেশে কারা ভিক্ষুক, তারা কতো প্রকার, কি কি এবং কীভাবে তাদের খতম করা যাবে ইত্যাদি সম্পর্কে পরিস্কার থাকা আগে দরকার। আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি কিন্তু প্রধানত দুই পর্যায়ে হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে ভিক্ষুক দুই প্রকার। এক প্রকারে আছে এরা শীর্ণকায়-জীর্ণকায়। এরা রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে, রাস্তায় বা বস্তিতে থাকে। আর ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে। এদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসার কোন সুযোগ বা অধিকার নেই। এরা নিজেদের ঘরে ‘বউ-বাচ্চা-স্বামী বা নিকটজনরা না খেয়ে আছে’ বলে ভিক্ষা চায়। অবশ্য এটা ঠিক যে, এই শ্রেণীতে পেশাদার ভিক্ষুকের সংখ্যাও কম নয়। এরা ‘বউ-বাচ্চা-নিকটজনদের কষ্টের কথা’ বলে ভিক্ষা করে। এটাই ওদের আয়ের পথ বা ব্যবসায়িক পেশা। এজন্য এরা নানা ফন্দি-ফিকিরও করে থাকে। আবার পেশাদার এইসব ভিক্ষুকদের অনেকের আবার ভাল সহায়-সম্পত্তিও আছে। ভিক্ষা করেই হয়তো ওরা এসব করেছে। সহায়-সম্পদ থাকার পরেও এরা ভিক্ষা করে এবং এভাবেই চলে। যাইহোক এসব নিয়ে বিস্তারিত বিবরণে যেতে চাই না। মূল কথা হলো, ভিক্ষুকদের মধ্যে সত্যিকারের একটা শ্রেণী আছে যারা গরিব, অসহায় এবং তারা রাস্তা-ঘাটে থাকে।
দুই শ্রেণীর ভিক্ষুকের আরেকটা শ্রেণীর অবস্থা পুরো উল্টো। এরা রাস্তা-ঘাটে থাকে না, জীর্ণ-শীর্ণও নয়। এরা পাজেরো-বিএমডাব্লু গাড়িতে চড়ে, আলিশান বাড়িতে থাকে চাকর-বাকর নিয়ে রাজার হালে। এয়ার কন্ডিশন ছাড়া এরা চলতে পারে না। এদের পা কখনও মাটিতে পড়ে না। হ্যাঁ পড়ে, তবে তখন মিডিয়ার ক্যামেরা থাকতে হয়। মাটিতে পা পড়লে, রাস্তায় নামলে, বিলে-ঝিলে নামলে সঙ্গে ওইসব ক্যামেরা থাকতে হয়, নামা অবস্থায় ছবি ধারণ করতে হয়। ছবি ধারণ হওয়া শেষ কি তাদের চরণ পড়াও শেষ। এরা ভিক্ষা করে বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে গিয়ে বড় বড় ডোনারদের কাছে। ভিক্ষা করে ওই সাধারণ ভিক্ষুকদের মতোই নিজের দেশের ‘মানুষ না খেয়ে আছে, কষ্টে আছে’ ইত্যাদি বলে। বলে এরা বিশাল অঙ্কের ডলার, পাউন্ড, ইয়েন, দিনার ইত্যাদি নিয়ে আসে। এসে সেগুলোর বড় অংশ নিজেদের সেবার জন্য ব্যয় করে। আর কিছু মিটিং-ফিটিং এবং তৃণমূল নামের জায়গাগুলোতে গিয়ে নানা কায়দায় বিলি করার কাজ করে। আগেই বলেছি, এসব কাজের সময় মিডিয়ার ক্যামেরা থাকতে হয়। না থাকলে চলে না। আর যে বিলি করা, সেটার মধ্যেও রাজ্যের মারেফতি আছে। এসব বলে শেষ করা যাবে না। সৌভাগ্য যে এই ভিক্ষুকদের কিছু কৌশলের সঙ্গে নিজেও পরিচিত হতে পেরেছি একেবারে কাছে থেকে। একটা ভিক্ষাবৃত্তিতে দেখেছি যে, তারা ভিক্ষা নিয়ে এসে কমিউনিজমের প্রচার চালায়। চালায় কিন্তু নিজেরা কমিউনিজমের ক’ও বিশ্বাস করে না। বরং কমিউনিজমের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, সত্যিকারের কমিউনিজম থেকে মানুষকে সরিয়ে আনে, আর কিছু ভাল মানুষকে ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করে ফায়দার পর ফায়দা লোটে। সাম্রাজ্যবাদী নেটওয়ার্কের ডোনারদের অর্থে এ ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে! সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ কি কখনও কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র চায়? চায় না। বরং কমিউনিজম-সমাজতন্ত্র নাশ করতে মুখোশ পড়ে নানা তৎপরতা চালায়। এখানেও সেটাই করা হয়। এতো গেল একটা দিক। আমি আরও ভাল ভাল নাম ব্যবহার করে এই কারবার করতে দেখেছি। এছাড়া গরিবি দূর করা, দুর্গত মানুষকে সাহায্য করা, সচেতনায়ন করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবাসহ কতো নামে যে এসব কারবার চলছে তা একটু তাকালেই দেখা যায়। যারা এসব করছে তারা সবাই ভিক্ষাবৃত্তি করে এগুলো করছে, স্রেফ নিজস্ব স্বার্থে। এরা করছে, কিন্তু সত্যি সত্যিই মানুষ বা দেশের জন্য করছে না। করলে এতোদিনে এদেশ থেকে যেমন গরিবিও দূর হয়ে যেতো, মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ দূর হয়ে যেতো, যতোরকম সমস্যা-বিপদ-আপদ আছে সব দূর হয়ে যেতো। ভিক্ষাবৃত্তি বলে কোন কিছু আর থাকতো না। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। অর্থাৎ এদের কারণে সব ধরণের সমস্যা আরও বেড়েছে, বাড়ছে, আর বাড়ছেই। চাই কি পুরো দেশটা শুধু ঋণের জালে জড়িয়েই যাচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, দেশের মানুষের সমস্যা যতো বেড়েছে, ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তির সুযোগও ততো বেড়েছে। এই বাড়ার জন্যই তো এতোসব। এতে সাধারণ মানুষের কিছুই হয়নি, হবেও না। আসলে মানুষের কোন লাভ নেই মহা-ক্ষতি ছাড়া।
ভিক্ষাবৃত্তির ওপর যারা বেঁচে থাকে, টিকে থাকে, বা এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে চলার লক্ষ্যে থাকেÑ তাদের অনেক রকম কৌশল করেই চলতে হয়। মানুষকে ঠকাতে কৌশল ছাড়া উপায়ও নেই। যেমন যে সাধারণ শ্রেণীর ভিক্ষুকের কথা বলেছিÑ তারা অনেকে শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এদের দলে-পিশে বিকলাঙ্গ বানায়, যাতে ভবিষ্যতে একে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানো যায়। কেও কেও আবার তাজা মানুষকে কাফনের কাপড়ে ঢেকে মৃত মানুষ বলে কারবার চালায়। কেও আবার হাসাপতাল থেকে বেওয়ারিশ লাশ বাগিয়ে তা দিয়েও ফায়দা লোটে। এরকম হরেকরকম কৌশল আছে। ঠিক একইভাবে পাজেরো-বিএমডাব্লুতে চড়া, এয়ারকন্ডিশনে থাকা ভিক্ষুকরাও তাদের মতো করে কৌশল করে এবং নিজেরা রাজকীয়হালে চলে। এখানে আরেকটা কথা হলো, বিদেশি ডোনারদের কাছে যারা ভিক্ষে করে, তারা যে শুধু এদেশের একটা বিশেষ শ্রেণীর লোক তাই-ই নয়, সরকারী লোকেরাও এরমধ্যে আছেন। তারাও ডোনারদের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। করে তারাও কিন্তু দেশটার বারোটা বাজান। সুতরাং এখানে যদি সরকারী-বেসরকারী মিলে যায়Ñ তাহলে কী অবস্থা হতে পারে ভাবাই যায় না। অতএব সমস্যা বড় জটিল…………।
হ্যাঁ, এবার দেখা যাক আমাদের অর্থমন্ত্রী কোথায় গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি খতমের ভাষণ দিয়েছেন। তিনি ওইদিন রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দেশের ৫০টি এনজিওকে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এ ভাষণ দিয়েছেন। অর্থাৎ যাদের নিয়ে বলছি, সেই তাদের সঙ্গে বসেই অর্থমন্ত্রী ভিক্ষাবৃত্তি খতমের কথা বললেন! সত্যিই কী বিচিত্র…………। তিনি বিদেশি ডোনার বা দাতাদের যারা গ্রাহক, যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে দেশের বারোটা বাজাচ্ছেÑ সেই তাদেরই বললেন ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে হবে। বললেন পাঠাগার স্থাপন, বস্তি সমস্যার সমাধান করতে! মনে হয়েছে মন্ত্রী বোধহয় জানেন-ই না কিছু। জানেন না ওরা কিভাবে দেশকে ক্রমে গরিবির দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা লালে লাল হয়, কিভাবে দেশের মানুষকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যের অনৈতিক কানাগলিতে ঠেলে দেয়, কিভাবে দেশকে সাম্রাজ্যবাদের বিচরণভূমিতে পরিণত করে, মৌলবাদের বিস্তার ঘটায়, সংঘাত-সহিংস্রতার জন্মদিয়ে বাইরের শক্তিকে নাক গলানোর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় এবং দেশকে বিদেশি পণ্যবাজারে পরিণত করে, দেশের মানুষকে সস্তা শ্রমিক ও পণ্যে পরিণত করে। মন্ত্রী যদি কুমিরের কাছে গিয়ে কুমিরকে কবুতরের বাচ্চা লালন-পালনের কথা বলেন, তাহলে যে কী হবে সেটা বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না।
আসলে আমাদের যে জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার, যে ভিক্ষুকদের বিতাড়ন করা দরকারÑ সেই তাদেরই বা সেই জায়গায়ই যদি মিশে যাওয়া হয় তাহলে ভিক্ষাবৃত্তি খতমের কথা স্বপ্নই থেকে যাবে। এভাবে বরং পাঁচ বছরে পাজেরো-বিএমডাব্লু চড়া ভিক্ষুকদের উৎপাতে দেশের মানুষকে আরও বেশী সর্বনাশের শিকার হতে হবে, চিড়ে-চ্যাপটা হয়ে যেতে হবে। সুতরাং ভিক্ষাবৃত্তি সত্যিই খতম করা প্রয়োজন দেশের স্বার্থে, আত্মগৌরবের স্বার্থে, স্বনির্ভরতার স্বার্থে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্র্থে এবং অগ্রগতি-উন্নয়নের স্বার্থে। এজন্য রাঘববোয়ালদের আগে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে সুপথে ফিরিয়ে এনে মানুষ বানাতে হবে। উল্টো পথে না হেঁটে সোজা পথে হাঁটতে হবে। অর্থাৎ সত্যি সত্যিই ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে হলে আগে এই পাজেরো-বিএমডাব্লু চড়া ভিক্ষুকদের কমাতের হবে, খতম করতে হবে। তাহলে হারজিরজিরে এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকা যেসব সাধারণ ভিক্ষুক বা ভিক্ষাবৃত্তি আছে তা আপনা-আপনিই খতম বা দূর হয়ে যাবে। এরজন্য চেষ্টা করলে পাঁচ বছরও অপেক্ষা করতে হবে না।
[৬ ফেব্র“য়ারি ২০০৯ ঢাকা, বাংলাদেশ]
আবুল হোসেন খোকন : সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট।
Dear Mr. Khokon,
Thanks for ur article.
Every state is bound to to the basic needs of common people.Same for our Bangladesh.But, we failed to solve this problem. Why? This is another question.True is if Grameen Bank,BRAC,Asha,Proshika,TMSS…and more other NGO were not working to reduce Proverty then today the statictics of those people who r living in under proverty would be doubled or more.
If ASK,BLAST… and NGO r not working to protect Human Rights then todays Law n Order situation would be more Dangerous.
So, brother u should write how can we change our socio-economic system to ensure the basic needs of common people.
Thanking u again.
Zamy.
@Zamy, Thanks.
জনাব সাঈদ চাকলাদার আমাকে বিদগ্ধ পাঠক বলাতে খুবই গর্ব অনুভব করছি। এবং একজন বিদগ্ধ পাঠকের মন্তব্যের আসারতা প্রমানের মাধ্যমে তিনি নীজে যে বৈ্দগ্ধের পরিচয় দিলেন তাতে যুগপদ মুগ্ধ ও বিচলিত হয়েছি।
বিচলিত হবার কারন তিনি যেটাকে আমার সিদ্ধান্ত বলছেন সেটা মূলত তার নীজের। আমি কোথাও দারিদ্র হ্রাস বা বৃ্দ্ধিতে N.G.O র ভূমিকা নিয়ে কিছু বলিনি। বলেছি দারিদ্র বিমোচনের প্রশ্নে N.G.O র ভূমিকা নিয়ে আমার সংশয়ের কথা। কারন N.G.O র দ্বারা সর্বশান্ত হয়েছেন এমন ৫০ জনেরে নজির দেখানোতো কঠিন না।
N.G.O র কার্যক্রম না থাকলে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা ৫০% হতো সেই মর্মে কোন উপাত্ত আপনিয় কিন্তু দেননি। মুলত এটা ৫০% না ৩০% হতো সেই
ব্যাপারে নিশ্চিৎ হবার জন্য বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিতর্কের প্রয়জনীয়তার কথাই কেবল বলেছিলাম আমি।
জনাব সাঈদ চাকলাদারের বৈ্দগ্ধতা নিয়ে আমার কোন আভিযোগ নেই। আমি কেবল পাঠ্য বিষয়ে তার কাছে আরেকটু মনযোগ দাবি করবো।
@Atiq, ধন্যবাদ আতিক, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।আমি আরো মনযোগী হবার চেষ্টা করব। আপনার সাথে আমিও একমত – এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা হলে আরো ষ্পষ্ট ভাবে বোঝা যাবে। আমি যেহেতু এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, কেবল পাঠকের প্রতিক্রিয়া-ই ব্যক্ত করেছিলাম, তাই সুনির্দিষ্ট উপাত্ত দিকে পারিনি। ইচ্ছে হয়েছিল – কিছু রেফারেন্স দেখে আপনার মন্তব্য এবং মূল লেখার বিশ্লেষন করে একটি লেখা লিখতে- কিন্তু সময়ের হিসাব করে থামতে বাধ্য হচ্ছি। আবারো ধন্যবাদ আমার মন্তব্য পড়ার জন্য এবং আপনার মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন।
সাঈদ
জনাব খোকন সম্ভবত লেখাটি শেষ না করেই ছাপতে পাঠিয়েছেন। আপনার মত একজন গূনী মানূষের কাছে আমার প্রত্যাশা আরো তথ্যবহুল ও গভীর চিন্তাপ্রসুত লেখা।
আপনার লেখায় এনজিও গূলোর বিরুদ্ধে দুটি প্রধান অভিযোগ ও একটি প্রস্তাবনা দেখতে পেয়েছি। (১) এন জি ও গুলো অর্থ আত্তসাত করে। (২) এন জি ও গূলো কার্যকরীতা শুন্য এবং (৩)প্রস্তাবনাটি হল এন জিও “খতম” করলেই দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি দূর হবে।
কেউ কেউ এন জি ও র অর্থের অপব্যবহার করছেন-একথা সবাই জানি,কিন্তু সবাই তাই করছেন তা তো নয়। এহেন অবস্থায় আপনার মত গূনী মানুষ যখন বিষয়টির পেছনে সময় দিতে পেরেছেন- তখন আমাদের প্রত্যাশা থাকে আপনি সুনির্দিষ্ট তথ্য সহ তুলে ধরবেন কবে,কোন এন জি ও – কোন খাতে কত টাকা পেয়েছে এবং সে টাকা ভিন্ন কোন খাতে ব্যয় করে অন্যায় সুবিধা নিয়েছে। আপনি মূল্যবান সময় এভাবে ব্যয় করলে আমরা পাঠকেরা উপকৃত হতাম, উক্ত এন জি ও গূলো উপকৃত হত, গরীব মানুষেরা উপকৃত হত, দেশ উপকৃত হত।
দ্বি্তীয়তঃ এন জি ও গুলোর কার্যকারীতা নেই বলে আপনার মন্তব্যের সাথে একমত হতে পারছি না। রয়েছে।আমি নিজে এমন অন্তত পঞ্চাশ জন মানুষকে চিনি যারা এন জিওর কাজের ফলে উপকৃত হয়েছেন। শুধু দারিদ্র নয় , সানিটেশন, নিরাপদ পানি, পরিবার পরিকল্পনা,নিরাপদ মাতৃত্ব,স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, পরিবেশ- ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে এন জি ও রা কাজ করছেন।এসব কাজে তাদের সামগ্রিক সাফল্য প্রকাশিত হয়েছে অজস্র রিপোর্ট ও গবেষনা পত্রে। আপনার তথ্য উপাত্ত বিহীন দাবী তাই গ্রহনযোগ্য নয়।
একজন বিদগ্ধ পাঠক মন্তব্য করেছেন দেশের ৪০% জনগন দারিদ্র সীমার নীচে বাস করেন বলে মনে করা যায় এন জি ও গূলো অকার্যকর। এখানে উপাত্ত এবং সিধান্ত এর মধ্যে সমপর্ক্ টি যথাযথ নয়। এন জি ও গুলো কাজ না করলে , আজ এই হার যে ৫০% হত না তা উক্ত পাঠক কিভাবে ভাবলেন জানান নি।
সর্বশেষ আপনার প্রস্তাব টিও সুচিন্তিত মনে হচ্ছে না।দেখা যাচ্ছে আপনি আপনার বিশ্বাস্ টিকে, কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। এন জি ও গুলো খতম করা হলে কোন মেকানিজমের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র (তথা ভিক্ষাবৃত্তি) দূর হবে তা আপনি জানান নি। পৃথিবীর অন্য কোথাও এই পদ্ধতি কাজ করেছে – এমন তথ্য ও নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আপনার আমরা মেনে নেব?
আপনার আগের কিছু লেখা আমার ভাল লেগেছে বলে আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা বেশী। আমি জানি একজন লেখকের সব লেখায় উচ্চ মানের হয় না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনার পরের লেখাটি আরো সময় নিয়ে- শ্রম দিয়ে লেখা হবে ও আমাদের সবাইকে আরো বেশী উপকৃত করবে। শুভেচ্ছা সহ
সাঈদ
Pleses, Ragob boalder gorib korar buddi prosar koben na. Ora vikka na korle basbe kemon kore? Oder thikadarrao ba cholbe kivabe. Please, Oder vate marben na.
মোটেই ভাল্লাগলোনা। এন জি ও খুব ইফেকটিভ না হলেও বৃহৎ দ্রারিদ্র শ্রেণীর কিছুটা হলেও কাজে লাগছে,অন্তত না থাকার চেয়ে।
লেখাটি মিনেংলেস।
N.G.O ইস্যু, একটি বিতর্কিত ইস্যু। বহু N.G.O সরাসরি দারিদ্র বিমোচনের জন্য অনেক দিন যাবৎ কাজ করার পরেও দারিদ্র বিমোচনের হারে উল্ল্যেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% মানুষের বাস আজও দারিদ্র সীমার নীচে। তবে আনেক N.G.O র ভাগ্য বিস্ময়কর ভাবে বদলে গেছে। এই প্রতিষ্ঠান গুলোর উন্নয়ন দেশেরও এক প্রকার উন্নয়ন কিনা তাও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিতর্কের দাবি রাখে।
তবে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে আর যাই হোক এর দ্বারা জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব না।
সেই সাথে ক্ষতম শব্দটার ব্যাপারে আমার তীব্র আপত্তি আছে। ওই লাইনটা বাদ দেয়ার জন্য আমি লেখককে অনুরোধ জানাচ্ছি।
দেশের ৫০টি এনজিও প্রধানরা, যারা পাজেরো-বিএমডাব্লু গাড়িতে চড়ে ( হুম ), আলিশান বাড়িতে থাকে চাকর-বাকর নিয়ে রাজার হালে থাকে ( ওকে), মিডিয়ার ক্যামেরা সামনে থাকলে কিছু করে ( তাই !), বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে গিয়ে বড় বড় ডোনারদের কাছথেকে ভিক্ষা আনে (সমস্যাটা কই), আর সেগুলোর বড় অংশ নিজেদের সেবার জন্য ব্যয় করে (বড় অংশটা কত বড়, আরেকটু তথ্য দরকার ছিল), তারা সবাই ভিক্ষাবৃত্তি করে এগুলো করছে স্রেফ নিজস্ব স্বার্থে (তারমানে শুধু বড় অংশ না , পুরোটাই), সত্যি সত্যিই মানুষ বা দেশের জন্য করছে না (এটা কিভাবে পরিমাপ করলেন, দেশের ৫০ টা এনজিও দেশের কারো জন্য কিছু করছে না, এর সবটাই ভুয়া, হাজার হাজার রিসার্চ পেপারে সবাই যা লিখছে তার কিছুই সত্যি না??? এনজিও বিষয়ক মন্ত্রনালয় নামের কি জানি একটা আছে, ওদের কাজটা আসলে কি?? ওরাও কি এই ব্যপার গুলা জানে আপনার মতো??)
করলে এতোদিনে এদেশ থেকে যেমন গরিবিও দূর হয়ে যেতো, মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ দূর হয়ে যেতো, যতোরকম সমস্যা-বিপদ-আপদ আছে সব দূর হয়ে যেতো (সব দোষ এখন এই পাজারো ভিক্ষুকদের!! খন্দকার মোশতাকদের না??; সব সমস্যা-বিপদ-আপদ শুধু মাত্র এই এনজিও ওয়ালারা চাইলেই দূর হয়ে যেতো?? ‘জিও’ ওয়ালাদের কোন দরকারই নাই??)
চাই কি পুরো দেশটা শুধু ঋণের জালে জড়িয়েই যাচ্ছে (ভিক্ষাও কি ঋন??)
আসলে মানুষের কোন লাভ নেই মহা-ক্ষতি ছাড়া (পাজারো ভিক্ষুকরাওতো দেশেরই মানুষ,তাদের লাভ তো দেশেরও লাভ, তাই না? আর মহা-ক্ষতিটা কত বড়, মহা-খালির সমান মহা)
সত্যি সত্যিই ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে হলে আগে এই পাজেরো-বিএমডাব্লু চড়া ভিক্ষুকদের কমাতের হবে, খতম করতে হবে (খতমই করে দিবেন??)
লেখক ভাই, আপনি ‘সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট’ মানুষ, আপনি আপনার মতামত লিখেছেন। আমি সাধারন পাঠক, আমি পড়ি আর মনে মনে লেখককে প্রশ্নকরি, এবার মনে মনে করা প্রশ্ন গুলোই লিখে দিলাম। নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।