এই নিবন্ধটি জনাব মোকছেদ আলীর* স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত।
সাভার ব্যাঙ্ক টাউন থেকে মাত্র পনের মাইলের মধ্যে একটি গ্রাম। গ্রামে প্রবেশ পথ থেকে পায়ে তিন মিনিট রাস্তা। দুপাশে পামগাছের সাড়ি। তারপরই খোলামেলা জায়গা নিয়ে প্রশস্ত একখানা বাড়ী। দক্ষিন পাশে বাহির বাড়ীতে একটি ঘর। ঘরের সামনে ছাতার মত একটি সবেদা ফলের গাছ। তার সামনে থাকে হাতলওয়ালা দুটো কাঠের চেয়ার। একটি্তে বসেন কাজিম উদ্দিন আহমেদ সাহেব। দ্বিতীয় চেয়ারটিতে কেউ বসতে চায় না। তাই পাশে একটি বেঞ্চ। আমারও বসতে ভাল লাগে না। গুটি গুটি পায়ে তিনি এগিয়ে আসেন। হাত ধরে সস্নেহে টেনে নিয়ে যান। না বসে উপায় থাকে না। অস্বস্তি হয়। কিন্তু উপায় কি?
চেয়ারটি থেকে তিনি মাইল খানেক দূর পর্য্যন্ত দেখেন। কে কখন গ্রামে আসে যায়। লোকজন এসে বসে তাঁর কথা শুনার জন্য। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঘটনা, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের হত্যার বর্ণনা। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন, শেরে-বাংলা ফজলুল হক, দেশবিভাগের সময় হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী, রোয়াইলের জমিদার। সব চাক্ষুস বর্ণনা। মনে হয় সব ঘটনার সময় তিনি যেন ভিডিওগ্রাফার ছিলেন। মৃদু কন্ঠ, সুমিষ্ঠ গলা। সুরেন্দ্র সরদার বলতেন – সারা গ্রামের জন্য বরাদ্ধকৃত একসেরের তিনপোয়া মধুই পড়েছে এক কাজিম উদ্দিনের মুখে।
জানুয়ারী, ১৯৬৪। প্রচন্ড শীত পড়েছে। ছদু মাষ্টার বিকেলেও এলেন। বেরশ হাই স্কুলের হেড মাষ্টার, চান খাঁ তাঁকে লোক পাঠিয়ে সংবাদ দিয়েছেন। আজ রাতেই অপারেশন করতে হবে। গ্রামটি পুবে-পশ্চিমে লম্বা। দুই পাশে প্রায় চল্লিশটি মুসলমান পরিবার। মাঝখানে প্রায় দেড়শটি হিন্দু পরিবার। এতগুলো বাড়ি, কতগুলো ঘর। কত জমি-জমা। ছদু মাষ্টারের খাতায় সব নোট করা হয়ে গেছে। একটু খানি দাবাড় দিতে পারলেই সব নিজেদের হয়ে যাবে। সে সুযোগ না চাইতেই এসে গেছে। চান খাঁ হাই স্কুলে গোপন মিটিং করেছেন। যাদের দিয়ে কাজটি হবে গ্রামে গ্রামে তাদের কাছে লোক পাঠিয়েছেন। ছদু মাষ্টার সেই লিস্টে উঠেছেন।
ঢাকার তাঁতী বাজার, শাঁখারী বাজারে বছর বছর রায়ট হয়। টুংগী – জয়দেবপুরেও হয়। কয়েক বছর আগে কড্ডা পর্য্যন্ত হয়েছে। বিহারীরা হিন্দুদেরকে পেরেক দিয়ে গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। পোয়াতী মহিলাদের পেট কেটে বাচ্চা বের করে। এদিকে একটা বিহারীও যে কেন আসে না, ছদু মাষ্টারের আক্ষেপ হয়। একটা কিছু ঘটাতে পারলেই হিন্দুগুলা দল বেঁধে পালাবে। জমা-জমি পরে থাকবে। ভাগ বাটোয়ারা তিনিই করবেন। চান খাঁ প্রচুর বুদ্ধিওয়ালা আদমী। তিনি স্কুলে গোপন বৈঠক করেছেন। বাঁছা বাঁছা ছাত্র ঠিক করেছেন। আসে পাশের স্কুলেও ভাল(!) কিছু শিক্ষকের তালিকা তৈরী করেছেন। তারাই তাদের স্কুল থেকে সাহসী আদমী (ছাত্র) বেছে নিবেন। সেই চান খাঁ আজ তাঁকেই স্মরণ করেছেন। কত সৌভাগ্য। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
কাজিম উদ্দিন সাহেবের মাথায় কোন দিনই বুদ্ধিসুদ্ধি হল না! তাঁর সন্মতি আজও মিলল না। বিরক্ত হলেন। বললেন – চান খাঁ এই গ্রামে আমাকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে চিনেন না। আমার বদলে তোমার কাছে লোক পাঠায় কেন তুমি তা বুঝ না? আমি জীবিত থাকতে একটা হিন্দুর গায়ে হাত দিতে দিব না। ছদু মাষ্টার ক্ষুন্ন মনে চলে গেলেন।
কাজিম উদ্দিন বুঝলেন – ছদু মাষ্টার আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এত বড় সুযোগ, এতগুলো বাড়ী। জমিজমা। চান খাঁ তার নেতা। ছদু পেছনে থেকে কয়েকজন লোককে সামনে আগায়ে দেবে, এই যা। ওকে থামানোর শক্তি আজ আর তাঁর নেই। গ্রামটাকে কী ভাবে বাঁচাবেন তার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। সূর্যে ডুবে গেছে। চাকর ফৈজ্যাকে তিনি হিন্দু পাড়ায় পাঠালেন – ফৈজুদ্দিন, এই কয়জন লোককে এখনি আমার সাথে দেখা করতে বল। পথে কারও দিকে তাকাবে না। কারও সাথে কোন কথাও বলবে না। লোকগুলো এল। তিনি বললেন – আমি আজ বড়ই বিপদ দেখছি। শুধু এইটুকু বলতে পারি আমার শরীরে রক্ত থাকতে আমি কাউকে গাঁয়ে ঢুকতে দেব না। তোমরা তোমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এবং মেয়েলোকদেরকে আমার বাড়ীতে পাঠিয়ে দাও। আমি আছি তোমাদের সাথে।
রাত প্রায় দশটা। বাইনবাড়ী, চন্ডীপুর, তেরদানা, বাশকুঠা গ্রামগুলো থেকে অসহায় শিশু, নারী ও পুরুষের আর্তনাদ আর আগুনে পুড়ে যাওয়া বাঁশের খটাখট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করল। আগুনের লেলিহান শিখা গাছপালার উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। বিভীশিকা ক্রমাগত দূর থেকে কাছে আসছে। গ্রামের পুব দিক থেকে একদল লোক ধেয়ে আসছে – আল্লাহু আকবর। নিমিষে আমাদেরকে গ্রাস করবে। হাতে লাঠি, বল্লম, আর দা।
আমি অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। ক্লাশ শুরু হবে হপ্তাখানেকের মধ্যে। নম্র-ভদ্র এবং ভাল ছাত্র হিসেবে আমার একটি বিশেষ অবস্থান ছিল। ছদু মাষ্টারের কাছেও আমি স্নেহের পাত্র। তাঁর ছেলেদের পড়াশুনায় অহরহই সাহায্য করি। এই আক্রমনকারী দলের মধ্যেই কেউ হয়ত দিনের বেলায় আমার সাথে কথা বলেছেন – আমার ছেলেটা তোমার জন্যই পাশ করেছে, ইত্যাদি। সামান্য কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে রাতের অন্ধকার। অন্ধকার মানুষের শত্রু। অন্ধকারে কেউ কাউকে চিনেনা। মানুষের মনুষত্ব হ্রাস পায়, হিংস্রতা বৃদ্ধি পায়। এরা এখন মারমুখো। এদের কেউ আমাকে এখন চিনবে না। আমাদের চৌদ্দ পুরুষের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিবে, মারবে। আমার বাবাকে, মাকে, ভাই-বোনদের সবাইকে মারবে। গ্রামের প্রত্যেককে এরা মারবে। কিন্তু আমরা জানলাম না কোন দোষে আমরা দোষী।
সামনে দাঁড়ালেন কাজিম উদ্দিন আহমেদ। সাথে ফৈজ্যা। ফৈজ্যার হাতে হারিকেন আর লাঠি। দমকা বাতাসে প্রদীপের আগুন যেমন এক পলকে নিভে যায়, এখানেও তাই হল। উনাকে দেখেই লোকগুলো নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে পড়ল। বললেন – কে তোমাদেরকে এই বর্বরোচিত কাজে উস্কানী দিয়েছে, তা আমি জানি। এই বাড়ীঘরে আগুন দিলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তোমরা ছাই দিয়ে কী করবে? পাশের গ্রামের দিকে তাকিয়ে দেখ। সব ছাই হয়ে যাচ্ছে। এর পরও কি মনে কর হিন্দুরা এ দেশে থাকবে? বাড়ী, ঘর, গরু, জমিজমা সবই থাকবে। রাত পোহাক। কাল সকালে তোমরা ভাগ করে নিও। এখন বাড়ী যাও।
মন্ত্রের মত কাজ হল। কেউ টু শব্দটি করল না। মাথা নীচু করে চলে গেল। শুধু থাকলেন কাজিম উদ্দিন আর ফৈজুদ্দিন। ছদু মাষ্টার যদি আবার পাঠায়! ছদু মাষ্টারের কথায় সবাই উঠে-বসে না, এরকম অনেক আছে গাঁয়ে। তারা কাজিম উদ্দিন আর ফৈজুদ্দিনের পেছনে দাঁড়াতে পারত। কেউ আসেনি। গ্রামের ভিতর দিয়ে পুবে-পশ্চিমে রাস্তা। সারা রাত ঘুমহীন দুইটি প্রাণী এপাশ থেকে ওপাশ হেটে চলেছেন। চিৎকার করে বলছেন – তোমাদের ভয় নাই। আমি আছি। চক্করের পর চক্কর। অভয়ের একই বানী – তোমাদের ভয় নেই, আমি আছি।
বাবা-মা সারারাত ঠকঠক করে কাঁপছে। অসহনীয় চাপা যন্ত্রনা। ঠাকুরমা একটা কিছু করতে চাচ্ছে। কিন্তু কী করবে সে! মুখে একটা কিছু বলতে পারলে যন্ত্রনা লাঘব হয়। কিন্তু এই যন্ত্রনা এমনই ভয়াল যে মুখে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। এক সময় মুখ থেকে বেরিয়ে এল – রাত কেন শেষ হয় না? রাতটাকে কি কেউ একটা টান দিয়ে উল্টায়ে দিন করে ফেলতে পারে না?
একসময় দীর্ঘ রজনীর অবসান হল। যথারীতি সূর্য্য উঠল। কিন্তু সারা গ্রাম থমথমে। ভীত-সন্ত্রস্থতার ছাপ সর্বত্র। কখন কী হয়! কারও মুখে কোন কথা নেই। মাঝখানে কয়েকটি বাড়ী পেট উচু করে দক্ষিনে বেড়ে গেছে। তারই মাথায় বলরাম বাবুর বাড়ি। সকালে সব হিন্দু্রা ওখানেই গিজগিজ করছে। উত্তর ও পশ্চিম দিকে ভারত। তাঁরই মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে সব। তিনি বলবেন কখন আমরা হাটতে শুরু করব। কত সময় হাটতে হবে কারও কোন ধারণা নেই। সে চিন্তা কারও মাথায় নেই। এক দন্ড থাকা যাবে না সে বিষয়ে সবাই নিশ্চিত বুঝে গেছে। কিছুক্ষন পরে আবার রাত শুরু হবে। আবার যদি ওরা আসে?
কী হিন্দু, কী মুসলমান। বিচার-সালিসে তিনিই কথা বলেন, রায় দেন। আজ তাঁর মুখে কথা নেই। বুকের উপর জগদ্বল পাথর চেপে বসে আছে। এত গুলো লোক নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন? কিছুই জানেন না। এতদিন তিনি জানতেন সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা, ভক্তি করে, সমীহ করে। কাল রাতেই তিনি জানলেন, তাঁর কোন মূল্য নেই এই গ্রামে। কর্পূরের মত সব আকাশে মিলিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ছেলেটি একদন্ড অপেক্ষা করতে রাজী নয়। এখনই নির্দেশ চাই দেশ ছাড়ার। বাবার সামনে মুখ তুলে কথা বলার সাহস কোনদিনই ছিল না। কিন্তু আজ বাবার দেরী দেখে বাবাকে তুচ্ছজ্ঞানে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে। বলরাম বাবু মুখ খুললেন। বড় ছেলেকে ডাকলেন – ওর কানের নত্তিটা ছিড়। বকরবকর করছে। বেশী বুঝে! তারপর গ্রামবাসীকে বললেন – তোমরা যে যার বাড়ী চলে যাও। রাতে হ্যাজাক জ্বালায়ে গ্রামের দুপাশে পাহাড়ার ব্যবস্থা কর।
থমথমে দিনের অবসান হল। সূর্য ডুবতে তখনও বাকী। আমাদের বাড়ীর দক্ষিন পাশে একটি পতিত বাড়ী। ঝুপঝাড়ে আচ্ছন্ন। তার পাশ দিয়ে যাচ্ছি দক্ষিনে। একটি শেয়াল ঝুপের আড়াল থেকে মুখ বাড়িয়েছে। বুকের ভিতরটা ছ্যাত করে উঠল। ভয়ে হৃদকম্প বেড়ে গেল। আমার রক্ত, মাংস, অস্থিমজ্জা, মস্তিষ্কের কোষে কোষে ভয়। মনে হল এটি শেয়াল নয়, গত রাতেরই কোন একজন। এখনই আল্লাহু আকবর বলবে। তারপর আমাকে ধরে মারবে। পেছন ফিরে এক দৌড়ে বাড়ী ফিরে এলাম। রাতে গ্রামের দুপাশে হ্যাজাক জ্বালানো হল। বাবা বলল – তোকেও যেতে হবে পাহাড়া দিতে। শেয়াল দেখেই ভয়ে যে দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে, তাকেও লাঠি হাতে দাঁড়াতে হবে রাতের বেলা? যদি ওরা আবার আসে? আবার যদি আল্লাহু আকবর বলে? কী হবে ওর? নীচে দেখুন পাহাড়াদারটিকে। এ ছবিটি দু সপ্তাহ পরে তোলা। শেয়ালের ভয় যেদিন পেল, সেদিন সে আরও ছোট হয়ে গিয়েছিল। যখন শুনল তাকে লাঠি হাতে ছদু মাষ্টারের লোকদেরকে ঠেকাতে হবে, বুকে তার প্রানের অস্তিত্ব ছিল না।
ভারত সরকার ঘোষনা দেয়। দেশত্যাগী হিন্দুদেরকে ভারত গ্রহন করবে। দন্ডকারণ্য নাকি মধ্যভারতের কোনখানে ঘন অন্ধকার জংগলে নিয়ে যাবে। পাসপোর্ট ভিসা লাগবে। তারজন্য ছবি তোলার লোক আসে। জীবনের প্রথম তোলা এই ছবিটি বার বার মনে করিয়ে দেয় বিভীষিকাময় রাতটির কথা।
আগের মত স্কুলে যাওয়া আসা শুরু হয়। আমার পিসতুত দাদা ওর ক্লাশের একজনকে দূর থেকে দেখিয়ে বলে – ওই দ্যাখ। ও বাশকুঠা গ্রাম আক্রমনকারী দলের সাথে ছিল। সপ্তাহ দুই পরে চান খাঁ বেরশ হাই স্কুলের মাঠে একটি জনসভা করলেন। থানার ওসি সাহেবকে সংবাদ দিয়ে আনালেন। ভন্ড চান খাঁ নিরীহ হিন্দুদের দুর্দশার কথা বর্ণনা করলেন, কাঁদলেন। তিনি দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানালেন। তিনি যে একজন ভাল অভিনেতা সেটাও দেখিয়ে দিলেন।
এলাকা শান্ত। হিন্দুদের অশান্তির শুরু। ছদু মাষ্টারের অপারেশন ব্যর্থ হয়ে ভালই হয়েছে। ভীত হিন্দুরা দেশ ছাড়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। তিনি নতুন কৌশল রচনা করেন। হিন্দুদের উপর সুক্ষ্ণ বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেন দেশত্যাগে। হিন্দুরা জমি, বাড়ী বিক্রি করবে। সেই কেনাবেচার একটি নকসা তৈরী করেন। হিন্দুদের জমি বেচাকেনা এই নকসার ভিতর দিয়ে হতে থাকে। কেনাবেচা চলে একহাতে। জমি বিক্রির টাকা গোপনে তাঁর হাত দিয়ে চলাচল করে। জমির মালিকের মুখ বন্ধ। দেশ-ত্যাগ দেশ-দ্রুহিতা। একথাটি সবাইকে জানিয়ে দেন। তেড়িবেড়ি করলে দেশে আইন আছে, পুলিশ আছে। কাঁঠালও যাবে ছালাও যাবে। তিনি যা দিবেন তাই নিয়ে রাতের আঁধারে দেশ ত্যাগ করতে হবে, তক্ষনি। এক মূহুর্ত দেরী করা যাবে না। তিনি সজ্জন, সদাশয় ব্যক্তি! সবাই তাঁর মত ভাল লোক নয়। তাঁর দয়ার শরীর! তাই তিনি দয়া করে দেশত্যাগে সাহায্য করেন! কেউ যদি জানে তুমি ভারতে যাচ্ছে, তোমার সব টাকা পয়সা কেড়ে রেখে দেবে। এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি অর্থ-বিত্তে স্ফীত হয়ে উঠেন।
১৯৬৫ পাক-ভারত যুদ্ধ তাঁর সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। হিন্দুরা নতুন করে আবার খবর পায় এদেশে আর থাকা যাবে না। দেশে নতুন আইন জারী হয়। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন হিন্দু জমি বিক্রি করতে পারবে না। ছদু মাষ্টারের আরও একটি সুযোগ। এক হাতে তিনি হিন্দুদের জমি বিক্রির অনুমতি বের করেন আর বিক্রি করেন। তিনি স্ফীত থেকে স্ফীততর হন।
কী ভাবে গ্রামের ছাত্রদের কাছে পরামর্শ আসে। ক্লাব করতে হবে। সারা গ্রামের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে মাঠে জড়ো করি। একদম শেষে ছদু মাষ্টারের ঝাড়। হুকোয় তামাক খাচ্ছেন গুড়গুড় শব্দে।
– বাঁশ দিয়ে কী করবি?
– ক্লাব ঘর বানাবো, মাঠে।
– বাঁশের ঘর বেশী দিন টিকে না। টিনের ঘর হলে কেমন হয়?
আমরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠি। বললেন – কেদারী বিশ্বাস ইন্ডিয়া যাচ্ছে। ওর ঘরটা কাল নিয়ে আয়। আমরা মহা খুশী। ঘর ভেংগে নিয়ে আসি পরদিন। রাতারাতি ক্লাব ঘর উঠে যায়। আমাদের আনন্দের সীমা থাকে না। আমরা কিছুই বুঝতে পারিনা নেপথ্যে চলে ছদু মাষ্টারের টাকা বানানোর খেলা। আমরা খুশী আমাদের নতুন প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে। দেশের টাকা পয়সা নিয়ে শত্রু দেশ ভারত যাওয়া নিষিদ্ধ, দন্ডনীয় অপরাধ। পুলিশ খবর পেলেই জেল-হাজতে ঢুকিয়ে রাখবে। দেশত্যাগীদের আত্মা কেঁপে উঠে। ছদু মাষ্টার বলেন – সবকিছু চুপিচুপি এবং তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। ক্লাবের ছেলেরা জানতে পারলে সব টাকা পয়সা রেখে দিবে। তখন ভারতে যেয়ে বৌ ছেলেমেয়ে নিয়ে খাবে কী! অনেক বিলম্বে এসব জানতে পারি। তখন এটাও বুঝতে পারি ক্লাব সৃষ্টির পেছনে কার পরামর্শ ছিল।
ছদু মাষ্টারের কারসাজি চলতে থাকে ১৯৭০ সাল পর্য্যন্ত। কারো কোন অনুযোগ নেই, অভিযোগ নেই। সত্যি কথা বলতে এই ঘটনাগুলো নিয়ে কোনদিন কারো সাথে আলাপও করা হয়নি। কোনদিন কেউ করেছে, তাও শুনিনি। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। সবার সমান অধিকার। পাকিস্তানের দুঃসহ দিনগুলো নতুন উদ্দীপনার তলায় চাপা পড়ে যায়। “কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে?” ১৯৭৩ সাল। ময়মনসিংহ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের আমি ছাত্র তখন। ঢাকা নর্থ ব্রুক হল রোডে রুম-মেট ভবেশের বড়ভাইয়ের বাসায় রাতে থাকব। রাত আনুমানিক আটটা হবে। ফুলবাইরা পুরাতন রেলস্টেশন থেকে রিক্সা নবাবপুর রোড ধরে যাবে। রিক্সা শেয়ারে চলে জানা ছিল না। রিক্সাওয়ালা বলল – ইনি যেতে চান। আমি দুটি টাকা বেশী পাই। রিক্সাওয়ালার অনুনয় চাহনী। আমি বললাম – অসুবিধা কী, উঠুক।
অসুবিধাটা একটু পরেই টের পেলাম। লোকটি আমার ডান পাশে বসলেন। দুজন এক রিক্সার যাত্রী। কেউ কাউকে চিনি না। কোন কথা নেই। আমি চুপচাপ মানুষ। অপরিচিত লোকের সাথে কী কথা বলব। লোকটি উসখুস করছেন। খালি মুখে কতক্ষন বসে থাকা যায়। ডান হাতে শাঁখারী বাজার বরাবর চলে এসেছি ততক্ষনে। তিনি স্মৃতিচারণ শুরু করলেন। ১৯৬৪ সালের কথা। তিনি তখন পুলিশ বিভাগে চাকুরী করেন। তারই বীরত্ব গাঁথা! পুলিশ স্টেশনে সংবাদ এসেছে। শাঁখারী বাজারে হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালানো হবে। ঘিঞ্জি জায়গা। মূলত হিন্দুরাই বাস করে ঢাকা শহরের জন্ম লগ্ন থেকে। শংখ কেটে শাঁখা বানায়। ঘর ভর্তি ক্যাস টাকা আর সোনাদানা। ওখানেই চলবে লুটপাট, হত্যা, আর ধর্ষণের নারকীয় তান্ডব। পুলিশ যেন একটু বিলম্বেই পৌঁছায়। লোকটি পরম আনন্দে বলে গেলেন – আমরা এলাকার বাইরে দুঘন্টা অপেক্ষা করলাম। আমরা যখন এলাকায় ঢুকলাম গুন্ডারা ততক্ষনে কাজ শেষ করে চলে গেছে। কী শ্বাসরুদ্ধকারী ঘটনা! আমি যে তারই মত একজন মুসলমান লোকটির এতে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, সব মুসলমানদেরই ঘটনাটি ভাল লাগবে। এবং উনাকে বাহ্বাই দেবেন। জীবনে কত লোককে যে ঘটনাটি বলেছেন তার নিজেরও বুঝি সে হিসেব নেই।
অভাবের কারণে ফৈজ্যার ছোট ভাইটির স্কুলে যাওয়া বন্ধ হল। ভাইকেও নিয়ে এল। ফাই-ফরমাস খাটবে। পেটে খেয়ে বাঁচবে। কাজিম উদ্দিন সাহেব একদিন লক্ষ্য করলেন ছেলেটি লেখাপড়ায় ভাল ছিল। বললেন – তোমার কোন কাজ করতে হবে না, বাবা। আমার ছেলেদের সাথে থাকবে, খেলবে আর নিয়মিত স্কুলে যাবে। সব খরচ আমার। ছেলেটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে আবার ভর্তি হয়ে গেল। মূহুর্তে তার জীবন নতুন ধারায় প্রবাহিত হল। তিনি গনিত শাস্ত্রে এমএ ডিগ্রী নিয়ে এখন একটি সরকারী চাকুরীতে নিয়োজিত আছেন। (অবসরে চলে যেয়েও থাকতে পারেন।)
২০০০ সালেই কাজিম উদ্দিন সাহেবের সাথে আমার টেলিফোনে শেষ কথা হয়। দীর্ঘ সাড়ে বার বছর পরে ২০০১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশে যাই। তার কিছুদিন পূর্বেই তিনি ১০১ বছর বয়সে চার ছেলে, দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনী রেখে ইন্তেকাল করেছেন। জীবনে তিনি কোন জমিজমা কিনেন নি। পৈত্রিক জমি বিক্রী করেছেন ছেলেমেয়েদের পেছনে। বড় ছেলে কানাডা, দ্বিতীয় ছেলে বিদেশে বাংলাদেশের রাস্ট্রদূত, তৃতীয় ছেলে জাতীয় সংসদ সদস্য এবং ছোট ছেলে ইংল্যান্ডে বসবাস করেন। তৃতীয় ছেলেটি আমার ছোট বেলা থেকে বন্ধু ও সহপাঠী। কিন্তু কাজিম উদ্দিন সাহেব ছিলেন আমার আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উনার ছেলেরা আমাদের এই অসম-বয়েসী বন্ধুত্ব নিয়ে এখনও ঠাট্টা করেন।
*মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিতি। জন্মস্থান – সিরাজগঞ্জ জেলার বেলতা গ্রাম। গ্রামটি বর্তমানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। (মুক্তমনা সদস্য মাহফুজের লেখা থেকে উদ্ধৃত)
টেক্সাস। ১৬ জুলাই ২০১০।
নৃপেন্দ্র সরকার ,
কি রোমহর্ষক সব ঘটনা! ইতিহাসের এ সব না বলা কথা তুলে ধরার জন্য আপনাকে জানাই কৃতজ্ঞতা। কাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। :rose:
মাহফুজ,
তিনি আবু তাহের মিয়া। গ্রাম হাজিপুর, উপাজ়েলা , নরসিংদী সদর। মারা গেছেন ক্যান্সারে। দুই ছেলে আমেরিকায়, মেজো ছেলে মারা গেছেন ট্রাকের চাপায় যিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। এক ছেলে ঢাকায় ব্যবসায়ী, আরেক ছেলে হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে রাজনীতি করেন সাথে গ্রাম্য রাজনীতি। সব সময় ইতিবাচক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দুই মেয়ের এক মেয়ে স্বামীর সাথে আমেরিকায়। অন্য মেয়ে স্বামীর সাথে ঢাকায়। উনাকে নিয়ে লিখতে হলে আমাকে একটা দিন আমার মা জেঠিমার সাথে সময় বের করে বসতে হবে। বাড়ি যেতে হবে। চেষ্টা করব লেখাটি লিখতে।
নৃপেন্দ্র সরকারের লেখাটি মন ছুঁয়ে গেছে। ধন্যবাদ রক্ত ক্ষরণের ইতিহাস লেখার জন্যে।
@গীতা দাস,
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছুঁচা প্রকৃতির কিছু মুসলমান হিন্দু বাড়ীর উপর দিয়ে অহেতুক হাটাহাটি শুরু করে দেয়। লুটপাট শুরু হবে হবে করছে। একবার শুরু হলে সব কিছু নিঃশেষ না হওয়া পর্য্যন্ত থামত না।
ঠিক সেই সময় তৎকালীন ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান, জসিম উদ্দিন আমহমেদ, তাঁর অফিসে সব মেম্বারদেরকে ডেকে ঘোষনা করেন – “যদি কোন হিন্দুর গায়ে কোন আঁচড় লাগে আমি কাউকে ছাড়ব না। ”
স্বাধীনতার নয় মাসে কোন রাজাকারের চিহ্নও দেখা যায়নি। জসিম উদ্দিন আহমেদ একজন মুসলিম লীগার ছিলেন। কিন্তু তাঁর মানবিক মূল্যবোধ তাঁকে স্রোতের বিপরীতে ঘোষনা দিতে অনুপ্রানিত করে। এই একটি ঘোষনা রক্ষা করে সমগ্র অঞ্চলের দূর্বল হিন্দু সম্প্রদায়। ইচ্ছা আছে লিখব উনাকে নিয়ে এক সময়।
এই লেখায় মন্তব্য এত কম হবার কারণ অনেকেই তাদের মনের অবস্থা প্রকশ করার মত ভাষা খুঁজে পাননা। গত কাল পড়েছি। মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি, কিছুই লিখতে পারছিনা। যে কোন মন্তব্যকেই খুব খেলো মনে হওয়াতে চুপ করে ছিলাম।
@আতিক রাঢ়ী,
আতিক দার সাথে পুরোপুরি একমত। আসলে এসব লেখায় ভাব প্রকাশ করাটা সত্যি কঠিন। নৃপেন দাকে অনেক ধন্যবাদ এমন চমৎকার একটা লেখার জন্য।
@আতিক রাঢ়ী এবং সাইফুল ইসলাম,
আমি জানি এই লেখাটি পড়বে অনেকেই কিন্তু মন্তব্যের ছড়াছড়ি হবে না। পড়েছেন, ধন্যবাদ।
মাহফুজের মন্তব্যে আমার অভিব্যক্তি জানিয়েছি। ভাল থাকবেন।
এই লেখাগুলি যেন কিছুতেই হারিয়ে না যায়। এগুলো আমাদের ইতিহাসের ভিত্তিভূমি হয়ে থাকবে।
নৃপেন দা
মনে হয় যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম। (আর আপনার ছোট বেলার ছবিও দেখলাম। ) যদিও আমি এই ব্ছর দেখিনি বা দেখলে ও মনে নেই। দেখেছি ১৯৭১ সাল। মনে আছে ‘৭১ও ঐ রকম হয়েছিলো, ওর থেকে বেশী ভয়ানকও হয়ে ছিল। তাই আপনার এই লেখাটি জলজ্যন্ত অনূভব করলাম ও যেন দেখতে পেলাম।
হ্যাঁ সত্য কথা।ভাল মানূষ ভাল মানুষ হন।কাজিম উদ্দিন সাহেবের মত ভাল মানুষ বাংলাদেশে সব কালেই ছিলেন এবং থাকবেন।এরাঁই আমাদের সংস্কার সংস্কৃতির ধারক ও বারহক হয়ে আমাদেরকে পথ দেখাবেন।
ধন্যবাদ।
(জানি না আমার এই মন্তব্য কখন মডারেটর সাহেব ওপেন করবেন।)
@সেণ্টূ টিকাদারো এবং রৌরব,
ধন্যবাদ, সেন্টূ ও রৌরব। নিবন্ধটি আপনারা অনুভব করেছেন জেনে ভাল লাগছে।
এঁরা চুপি চুপি আসেন চুপি চলে যান। নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কথা ভাবেন না। হৃদয় থেকে ভাল কিছু করার তাগিদ পান, সাধ্যমত সেটুকু করে চলে যান।
বলা যায়- শ্বাসরুদ্ধ করে পড়লাম। নিবন্ধটি মোকছেদ আলীর স্মৃতির উদ্দেশ্য নিবেদন করেছেন। কেন যে করেছেন তা পড়েই বুঝলাম।
কাজিম উদ্দিন আহমেদ এর সাথে মোকছেদ আলীর মিল পেয়েছেন।
মোকছেদ আলী মহাত্মা গান্ধী, শেরে-বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী আরো অনেকের মৃত্যু কাহিনী লিখে রেখেছেন। এখানেও দেখছি কাজিম উদ্দিন এসব কথা মুখে মুখে শোনাতেন। মোকছেদ আলীরও ছিল সুমিষ্ঠ গলা। তিনি বাঁশিও বাজাতে পারতেন।
তবে মোকছেদ আলী কাজিম উদ্দিন-এর মত এত দীর্ঘজীবী ছিলেন না। কাজিম আলীর ছেলেরা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং দামী দামী পদে আসীন। মোকছেদ আলীর সন্তানেরা ততটা নয়।
মোকছেদ আলীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় যা বলেছিলেন এখানে কাজিম উদ্দিনও বলছেন-আমি জীবিত থাকতে একটা হিন্দুর গায়ে হাত দিতে দিব না।
গীতা দাসও একজন মোকছেদ আলীকে চেনেন বলেছিলেন। তিনি যদি তাকে তুলে ধরতেন তাহলে খুবই ভালো হতো।
আপনি যেভাবে কাজিম উদ্দিনকে আপনার কলমে তুলে এনেছেন। আমি হয়তো সেভাবে পারবো না। আমি শুধু তার লেখাগুলো পোষ্ট করতে পারি।
আচ্ছা, দাদা আপনার কাজিম উদ্দিন আহমেদ কি কোন কিছু লিখে যান নি?
খুবই ভালো লাগলো। আরো একবার পড়বো।
@মাহফুজ,
তোমার এই মন্তব্যটি আমার দারুণ ভাল লাগছে, মাহফুজ। আমি প্রায় দুদিন সময় ব্যয় করেছি লেখাটির উপর।
কেউ আনন্দ না পেলেও আমার কিছু যেত আসত না। আমার এই অকৃত্রিম বন্ধুটিকে সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছি এটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ। আমার সারাক্ষণ মনে হচ্ছে একটু হলেও আমার আবেগ আমি প্রকাশ করতে পেরেছি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা,
ফৈজ্যার ছোট ভাইটিকে যে কাজিম উদ্দিন শিক্ষিত করে তুললেন। এই বিষয়টি আমাদের জন্য শিক্ষনীয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
স্মতিতে নাড়া দিয়ে গেল লেখাটা | কারণ, একই ঘটনা মায়ের মুখ থেকেও শুনে এসেছি আবাল্য | বেরশ গ্রামের জমিদার-এর কন্যা মীনা মাসি আমার মায়ের আবাল্য বন্ধু | কানাডা আসার আগেও “নিজেরা করি” অফিসে মীনা মাসির সাথে এ সব নিয়ে আলোচনা করছিলাম সস্ত্রীক | ১৯৬৪ সনেই সদ্য বিবাহিতা আমার মাকে রেখে এক রাতের অন্ধকারে আমার দাদুর পরিবার চলে যান অজানা ভারতে | কে জানে নৃপেন্দ্র সরকারের এই লেখাতে যে সাম্প্রদায়িক দাংগার কথা বলা হয়েছে তার অব্যহিত ঘটনা পরম্পরাই এর পেছনের মূল কারণ কিনা? কিন্তু আমার দাদুর এই ভারত-পলায়ন তার নিজের পরিবারেও ডেকে আনে এক মহাবিপযয় | এক মাত্র পুত্রের সাথে ভারতে যেতে রাজি হননি দাদুর মা | তিনি থেকে যান নৃপেন সরকারের গ্রাম ৈবন্যাতে তার বোনের কাছে | সেখানেই তিনি ছিলেন আমৃত্যু | আমার মায়ের সাথেও দাদুর যোগাযোগ তেমন ছিল না কিংবা রাখা সম্ভব হয় নি যোগাযোগের অপ্রতুলতায় | তাই আমাদের বেড়ে ঊঠা দেশ-ভাগ আর সাম্প্রদায়িকতার দীঘশ্বাসের সাথেই বেড়ে উঠা | যাকে অনুসরণ করে আমার মায়ের পরিবার পাড়ি দিয়েছিল অজানায়, তৎকালীন ঢাকার সব চেয়ে অভিজাত পগোজ ইস্কুলের শিক্ষক রাধাবল্লভ বাবুকে আমি পেয়েছিলাম ভারতের পশ্চিম বংগের নদীয়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে | আমাদের সে কথোপকথনের বিস্তারিত আছে আমার সদ্য -প্রকাশিত বই ‘ বিভক্তির সাতকাহন’-এ | দুঃখিত, ধান ভানতে শিবের গীত গাইলাম | এক সম্মোহিত আবেগে পড়ে ফেললাম নৃপেন্দ্র সরকারের লেখাটি | ফেললাম এক চাপা কান্নার দীঘশ্বাস | আজীবন সংখ্যালঘুর দীঘশ্বাস ছাড়া আর কি-ই-বা থাকে অবশেষ !
( অভ্রটা এখনো রপ্ত হয়ে ঊঠলো না !! তাই সকল রেফ ছাড়াই পোস্ট করলাম মন্তব্যটা, দুঃখিত |)
@ভজন সরকার,
আমি ফনেটিক ব্যাবহার করি তাই সেটার ব্যাবহারই দেখাচ্ছি।
আপনি যদি লেখতে চান তর্ক তাহলে সেটা হবে এরকম,
ত(t) তারপরে অ(o) তারপরে পরপর দুবার র, মানে রর (rr) এবং তারপরে ক(k)।
একবারে দেখাতে গেলে, ত+অ+র+র+ক = তর্ক। মানে হল যেখানে রেফ দিতে হবে সেখানে দুবার র(রর) চাপতে হয়।
না পারলে নিঃসঙ্কোচে বলবেন।
ধন্যবাদ।