স্মৃতির পাতা থেকে
আকাশ মালিক
(উৎসর্গ- আদিল মাহমুদ)
১৯৭০ সালে কওমী মাদ্রাসার ছাফেলা চারমে (মাদ্রাসার হিসেবে নবম শ্রেণী) বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে অবসর দিন কাটাচ্ছিলাম। কওমী মাদ্রাসায় ছাফেলা দুওম (সপ্তম), ছাফেলা ছুওম (অষ্টম), ও ছাফেলা চারম (নবম) তিনটি শ্রেণীকে ঐ সকল শ্রেণীতে পাঠ্য, প্রধান কিতাবের নামানুসারে ডাকা হয়- ‘সফর’, ‘নহমীর’ ও ‘হেদায়াতুন নুহ’। উল্লেখ্য আমি মাদ্রাসা শুরু করেছিলাম তৃতীয় জামাত থেকে। ছাফেলা চারমে এসে সহপাঠী শওকত আলীর সাথে আমার গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। তার চাচা, পাঠশালা হেডমাষ্টার মোখলেস আলী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক। শওকতের সুত্রে আমিও মাষ্টার সাহেবকে চাচা ডাকতাম। তিনি আমাদেরকে নিজের সন্তানের মত দেখতেন। মাদ্রাসা ছুটির পর প্রায়ই তাদের বাড়ি যেতাম, মাষ্টার সাহেব না খেয়ে আসতে দিতেন না। দু একদিন না দেখলে তিনি আমার খোঁজ নিতেন। মাষ্টার সাহেব আমাদেরকে দেশ বিদেশের বিচিত্র গল্প শুনাতেন। ভুগোল, রাজনীতি, বিশ্ব ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতেন, আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তার টেবিলে পড়ে থাকা বাংলা পত্রিকা মাঝে মাঝে পড়তাম। মাদ্রাসায় বাংলা পত্রিকা সপ্নেও দেখি নাই। চাচার ঘরে একটা রেডিও ছিল। তিনি আমাদেরকে সাথে নিয়ে সংবাদ শুনতেন। তিনি চলে গেলে ভলিয়্যুম কমিয়ে দিয়ে আমরা রেডিওতে গান শুনতাম। একজন মাদ্রাসা ছাত্র হিসেবে ঐ একটি ঘর ছাড়া আমার জন্যে নির্ভয়ে নিরাপদে গান শুনার জায়গা পৃথিবীতে আর কোথাও ছিলনা। মাঝে মাঝে ভাবতাম মাষ্টার সাহেব এত অমায়িক বন্ধুসুলভ ব্যবহার করেন আর আমাদের হুজুররা কেন এত খিটখিটে মনের। হুজুরগন আর আমাদের মধ্যে যেন মুরগীর বাচ্চা আর চিলের সম্পর্ক। একদিন চাচা আমাদেরকে শেখ মুজিবুর রহমানের কাহিনি শুনালেন, সাথে ছয় দফা কী, কেন, তাও ব্যাখ্যা করলেন। তখন রাজনীতির কিছুই বুঝতাম না। মাদ্রাসায় সমাজ বিজ্ঞান, রাস্ট্র বিজ্ঞান, পৌরনীতি পড়ানো হয়না। তবে চাচার কাছ থেকে এতটুকু বুঝেছিলাম যে, সিলেটের ছাতকে তৈরী সিমেন্ট পাকিস্তানে সস্তায় পাওয়া যায়, আমাদের দেশে তৈ্রী কাগজ বিক্রীর অনুমোদন পেতে হলে পাকিস্তান থেকে সীল মোহর লাগাতে হয়। শেখ মুজিব পাকিস্তানের এই বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করেন। তখন আমি এও জানতাম যে আমাদের হুজুরগন ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ নামক একটি দলের সমর্থক, খেজুর গাছ ইসলামের বা ইসলামী দলের এবং নৌকা আওয়ামী লীগের প্রতীক। শওকত প্রকাশ্যেই বলতো যে, সে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের সমর্থক।
বৃত্তি পরীক্ষা শেষে কোথায় যাব কি করবো জানিনা, একদম ভবঘুরে অবস্থা। ছয়মাস গোয়ালে বন্দী, বর্ষার শেষে কার্তিক অগ্রহায়ন মাসে শুকনো মাটি পেয়ে গরুদের যে অবস্থা হয়, আমার অবস্থাও ঠিক তেমনি। লুকিয়ে লুকিয়ে হাইস্কুলের ছাত্রদের সাথে মেলামেশা, গান, নাটক, যাত্রাদল, দূর্গাপুজা, কালীপূজা সব জায়গায় আনাগোনা। পাঞ্জাবী টুপি ছেড়ে শার্ট পরার পর নিজেকে আয়নার সামনে পুরো শিক্ষিত বাবুর মত দেখে মনেমনে হাসলাম। ইতিমধ্যে মুন্ডানো মাথায় চিরুণী বসানোর মত চুলও গজায়েছে। শওকত আলী দূরে কোথাও অন্য একটি মাদ্রাসায় চলে গেল, আমি আর চাচার বাড়িতে যাইনা। আমার পরিবর্তন দেখে বড় ভাই চিন্তিত হলেন। একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখন কী করা, এভাবে তো সময় নষ্ট করা যায়না’। আমি বললাম- ‘আমি স্কুলে পড়বো’। প্রায় ২ বৎসর পর ১৯৭৩ সালে একদিন আমাকে আমাদের গ্রাম থেকে পাঁচ মাইল দূরে একটি গ্রামের হাইস্কুলে নিয়ে যাওয়া হলো। মা-বাবার ঘর ছেড়ে জীবনে এই প্রথমবারের মত পরের ঘরে বাস করার পথে পা বাড়ালাম। জায়গীর বাড়ির ভাত মুখে তুলবো, ভাবতেই ভয় লাগে। পরের বাড়ি, পরের ঘর, পরের বিছানায় শুইতে যাবো, গৃহ কর্ত্রীকে মা, না খালা, না চাচী ডাকতে হবে? এ সমস্ত ভেবে মনটা ভারী হয়ে উঠলো।
স্কুলের কাছাকাছি এসে মনে হলো, এ যেন স্কুল নয় কোন সৌখিন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি ছবি। স্কুলের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটো করে ভিটের দুই প্রান্থে কৃষ্ণচুড়ার গাছ। পাতা নেই শুধু ফুল আর ফুল। দূর থেকে মনে হয় যেন গাছ দূটোর গুড়িতে সবুজ ঘাসের উপর চকচকে লাল রঙ্গের কার্পেট বিছানো। আমি বুঝিনা এই গাছটার নাম কৃষ্ণচুড়া কেন হলো? স্কুলের ঠিক মাঝখানে রক্তজবা ফুলের ঝাড়। এর সামনে মসৃন মাঝারি ধরণের উঁচু মোড়ালি বাঁশের আগায় পতপত করে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা। ইউনিফর্ম পড়া ছাত্র ছাত্রীরা, ছেলেরা ছেলেদের সাথে, মেয়েরা মেয়েদের সাথে দল বেঁধে স্কুলে আসছে, ক্লাসে ঢুকছে, এমন দৃশ্য এত নিকট থেকে আগে কোন দিন দেখিনি। মাদ্রাসার বন্ধু শওকত আর আবুলের কথা মনে পড়ে গেলো। খুব ভাল হতো তারাও যদি আজ আমার সাথে এই স্কুলে ভর্তি হতো। নিজেকে বড় একা, অসহায় মনে হলো।
স্কুলের চৌকিদার সুব্রত হাওলাদার আমাদেরকে, প্রধান শিক্ষক সুভাস চন্দ্র দেব এর খাস কামরায় নিয়ে গেলেন। স্যার আমাদেরকে দেখে হাত তুলে বললেন- ‘আদাব’। শব্দটি আগেও শুনেছি তবে নিজে কোনদিন কারো প্রতি ব্যবহার করিনি। ভেতরে দুষ্ট হাসি চেপে রেখে মনে মনে বললাম, এখানে ছাত্ররা হিন্দু মুসলমান চিনে আদাব-সালাম বলে কীভাবে? আমি যদি না চিনে ভুলে হিন্দু স্যারকে সালাম আর মুসলমান স্যারকে আদাব বলি তা হলে কী হবে? স্যার টুকটাক আমার মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছেন, এমন সময় বাহিরে শুনা গেল জাতীয় সঙ্গীত। স্যার উঠে দাঁড়ালেন আমরাও দাঁড়ালাম। ভয় বিষ্ময়ের মিশ্র মৃদু ঝড় বুকের ভেতর বয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীত শুনলে এভাবে দাঁড়াতে হয়? রুমের দরজা বন্ধ, আমরা তিনজন মানুষকে কেউ দেখছেনা তবুও দাঁড়াতে হবে? নামাজের আজান শুনে পেছনের জীবনে কত হাজারবার আজানের দোয়া পড়লাম, কিন্তু এমন অনুভুতি তো কোনদিন টের পেলাম না, জাতীয় সঙ্গীত শুনে দাঁড়ানোর মধ্যে যা পেলাম। স্কুলের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীরা এ দেশকে এত ভালবাসেন, এই পতাকাকে তারা এত শ্রদ্ধা করেন? কওমী মাদ্রাসাগুলো কি বাংলাদেশকে ঘৃণা করে? কেন সেখানে পতাকা নেই, জাতীয় সঙ্গীত নেই? আগামীকাল আমিও সকলের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে জীবনে প্রথমবারের মত জাতীয় সঙ্গীত গাইবো। সেদিনের অভুতপূর্ব অনুভুতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায়না। জাতীয় সঙ্গীত শেষে স্যার আমাকে তার শেষ প্রশ্নটি করলেন- ‘স্কুলের পাশে একটি ফুলের বাগান আছে, বাক্যটির ইংরেজি কী হবে’? আমি উত্তর দিলাম- ‘Flower garden near school’. স্যার মুচকি হেসে বললেন- ‘কিছুটা ভুল হয়েছে, অসুবিধে নেই, বীজ গণিত আর ইংরেজীতে তোমার একটু অসুবিধে হবে, আমি সব ঠিক করে দেবো’। উল্ল্যেখ্য, কওমী মাদ্রাসায় পাটি গণিত পড়ানো হয়, বীজ গণিত পড়ানো হয়না। স্যার টেবিলের উপর রাখা পিতলের ছোট ঘণ্টার মাথায় দুটো চাপ দিলেন। ক্রিং ক্রিং করে শব্দ হলো, অমনি চৌকিদার সুব্রত হাওলাদার উপস্থিত হয়ে বললেন- ‘আজ্ঞে স্যার’। স্যার বললেন- অস্টম শ্রেনীতে গিয়ে কামালকে বলো এখানে আসতে। কামাল রুমে ঢুকে বললো ‘আদাব’ স্যার। স্যার কামালকে আদেশ করলেন, সে যেন আমাকে স্কুল ছুটির পর তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। কামাল ‘আজ্ঞে স্যার’ বলে মাথা নীচু করে চলে গেল। বুঝা গেল জায়গীরের ব্যবস্থা নিয়ে কামাল বা তার অভিভাবকের সাথে আগেই হেড স্যারের আলোচনা হয়েছে। আগামিকাল থেকে আমিও ‘ইয়েস স্যার’ ‘নো স্যার’ ‘আজ্ঞে স্যার’ আদাব, নমষ্কার বলবো, ভেবে কিছুটা চিন্তিত হলাম। কোনদিন যা বলি নাই, নাটকীয়ভাবে এ সব বলতে গিয়ে ঠোঁটে যদি হাসির উদয় হয় তখন কী হবে? স্যার আমাকে সোজা নবম শ্রেণীতে ভর্তি করে দিলেন। জীবনে ওস্তাদ, হুজু্র মাষ্টার, শিক্ষক নামের অনেক লোক দেখেছি, সুভাস চন্দ্র দেব এর মত শিক্ষক দ্বিতীয় আরেকজন দেখিনি। স্যার তাঁর নিজের লেখা একটি ইংরেজী ব্যাকরণের বই হাতে দিয়ে বললেন- ‘এক সপ্তাহের জন্যে আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত সময়টুকু আমি তোমাকে পড়াবো, তুমি আমার ঘরে আসবে তোমাকে এলজ্যাব্রা আর ইংরেজি ব্যাকরণ বুঝায়ে দিব’। সেখানে গিয়ে দেখি ঐ নির্দিষ্ট সময়ে দশম শ্রেণীর কিছু ছাত্রও স্যারের কাছে আসে। স্যারের কথার মধ্যে যাদু ছিল। যে কোন কঠিন বিষয়কে ভেঙ্গে ভেঙ্গে, এত সুন্দর, সহ্জ ধীর-শান্ত ভাষায়, উপমা, উদাহরণ দিয়ে কী ভাবে বুঝাতেন তা না দেখলে অনুমান করা মুশকিল। সকলকে অবাক করে ষান্মাসিক পরীক্ষায় ক্লাসে ৩৫জন ছাত্রের মধ্যে তৃতীয়, ও বাৎসরিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়ে গেলাম। স্পষ্ট মনে আছে, দীনিয়াত বা ধর্ম শিক্ষার মৌলুভী সাহেব কানেকানে কৌতুক করে বলেছিলেন- এবারে ৯৯ দিলাম, পরবর্তিতে তোমার ধর্ম শিক্ষার কাগজে তুমি নিজেই মার্ক করে দিও।
বাৎসরিক পরীক্ষার পর একদিন একটি গ্রামের হাইস্কুল থেকে তাদের স্কুল কর্তৃক আয়োজিত ভলিবল প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করার জন্যে নিমন্ত্রন আসলো। মোহসিন স্যারের নেতৃত্বে আমরা প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করলাম। পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একজন বক্তা ঐ গ্রামের নাম বললেন- ‘শহীদ নগর’। অথচ আমরা জানতাম যে, গ্রামের নাম ‘শ্রী রাম শ্রী’, বা শ্রীরামিশী। গ্রামটির নাম শহীদ নগর কেন, কীভাবে হলো, সংক্ষিপ্তভাবে বক্তা তাও ব্যক্ত করলেন। সেদিন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে শুনেছিলাম এক লোমহর্ষক কাহিনি আর আমাদেরকে দেখানো হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী গ্রামের কিছু জায়গা। স্মৃতির পাতা বেয়ে বেয়ে আজ সেই কাহিনিটি শুনানোর জন্যে, আপনাদেরকে মাদ্রাসা থেকে স্কুল হয়ে এই গ্রাম পর্যন্ত এতদূর কেন নিয়ে আসলাম, তার কারণটা বলে দেয়া ভাল। সেদিন স্কুলে আসার কারণে কাহিনির ঘটনাস্থল দেখার সুযোগ হয়েছিল, আর এই ঘটনার ভিল্যেন নায়কদেরকে আমি মাদ্রাসায় পড়াকালীন সময়ে বহুবার কাছে থেকে দেখেছি।
দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৩১শে আগষ্ট মঙ্গলবার, সকাল ৯টা। পূবাকাশে বর্ষাকালের অথৈ জল ভেদ করে সবেমাত্র রঙ্গীন ভোরের সূর্য উঠেছে। সিলেট জেলার, জগন্নাথপুর থানার অন্তর্গত শ্রী রাম শ্রী (শ্রীরামিশি) গ্রামের শিশু কিশোরেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুলে যাওয়ার, কৃষকেরা গরু নিয়ে গোয়ালায় ব্যস্ত, ধীরে ধীরে নতুন সুন্দর একটি দিনকে বরণ করে নিতে জেগে উঠেছে গ্রাম। এমনি সময় গ্রামবাসী জানতে পারলেন তাদের শ্রীরামিশি বাজার পাকিস্তানী আর্মী ঘেরাও করেছে। ৯টি নৌকায় ৩০জন পাকিস্তানী আর্মী, সাথে পথপ্রদর্শক কয়েকজন রাজাকার। প্রথম নৌকা থেকে বেরিয়ে আসলেন, পথপ্রদর্শক রাজাকার-প্রধান দুই ব্যক্তি, তাদের একজন হলেন হজরত মৌলানা নূরুদ্দীন সাহেব- মুহাদ্দীসে গহরপূরী, অন্যজন জগন্নাথপুর থানার হবিবপুর গ্রামের আহেমদ আলী খান। সিলেট জেলার সকল গ্রামের কওমী মাদ্রাসার সাথে মুহাদ্দীসে গহরপূরীর গভীর সম্পর্ক। তারা গ্রামবাসীকে বাজার সংলগ্ন শ্রীরামিশি হাইস্কুল মাঠ প্রাংগনে সমেবত্ হওয়ার ডাক দিলেন। ধর্মবিশ্বাসী, গ্রামের সহজ সরল মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দিলেন। সেদিন নারী ও শিশু ব্যতিত গ্রামের সকল পুরুষ স্কুলের মাঠে এসে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল অন্তত গহরপূরী মুহাদ্দীস সাহেবের উপস্থিতিতে আল্লাহর গজব নাজিল হবেনা। কিন্তু কে জানতো তিনি নিজেই যে এ গ্রামের নিরস্ত্র নিরপরাধ মানুষের জন্যে গজব হয়ে হাজির হয়েছেন। রাজাকার দলের নেতাগণ গ্রামবাসীকে বললেন যে, তারা দেশ ও গ্রামের শান্তি রক্ষার্থে একটি শান্তি কমিটি গঠন করে চলে যাবেন। ইতিমধ্যে বিশ্বাস ঘাতক আহেমদ আলী খান স্থানীয় কিছু দালালদের সহযোগীতায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বেশ কিছু মানুষের নাম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। রাজাকারগন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এই গ্রামে স্বাধীনতার পক্ষের কোন মানুষকে জীবিত রাখবেনা। শান্তি কমিটি গঠন করার ঘোষণা ছিল একটি মিথ্যে ধোকা, প্রতারণা। তারা তাদের প্রভু পাকিস্তানী কমান্ডারকে প্রস্তুত হতে ইংগিত করলো। ১০০ জন মানুষকে আলাদা করে স্কুল ও বাজারের মধ্যবর্তি ছোট্ট খাল পাড়ে নিয়ে দাঁড় করানো হলো। এ খালটি বিশ্বনাথ ও জগন্নাথপুর থানার সীমানা দিয়ে প্রবাহিত। পেছন দিক থেকে হাত বেঁধে দিয়ে সকলকে কলেমা পড়ার আদেশ দেয়া হলো। ভীত সন্ত্রস্ত অসহায় মানুষগুলোর অনেকেই সাক্ষাৎ মৃত্যুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে, আপন মাতা পিতা, ভাই বোন, স্ত্রী সন্তানদের স্মরণ করে কাঁপা কণ্ঠে অস্ফুটস্বরে কিছু কথা বলেছিল, আর অনেকেই কলেমা সম্পূর্ণ পড়তে পারেনি। ততক্ষনাৎ তাদের বক্ষ লক্ষ্যভেদ করে স্টেইনগান দিয়ে ব্রাসফায়ার করা হয়। গগণবিদারী স্টেইনগানের বিকট শব্দে টিনের চালে বসা কবুতরেরা, বৃক্ষের শাখার পাখিরা উড়ে যেতে পেরেছিল। মানুষ পালিয়ে যাওয়ার পথটুকুও রাজাকারেরা বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রায় সকলের মৃতদেহ খালের জলে অর্ধ ডুবন্ত অবস্তায় তিন দিন ভাসমান ছিল। এই নৃশংস হত্যার সংবাদ যখন ঘরে পৌছিল, তখন গ্রামের বধু তার স্বামী, মা তার সন্তানের লাশ তুলে নেয়ার আর সময় নেই। নিজ প্রাণটুকু হাতে নিয়ে যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যেই জনবহুল শ্রীরামিশি গ্রাম জনশুন্য হয়ে যায়। সেদিন শ্রীরামিশি গ্রামের কমপক্ষে ১৩০ জন নিরপরাধ মানুষকে পাকিস্তানী আর্মীরা তাদের সহযোগী রাজাকারদের পরামর্শে হত্যা করেছিল। বাজারের প্রায় সবগুলো দোকানে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি বাড়িও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। যে সকল রাজাকার এই গণহত্যা ঘটিয়ে ছিল, তারাই এক সপ্তাহ পরে জগন্নাথপুর থানার রানীগঞ্জ বাজারে অনুরূপ আরেকটি হত্যাকান্ড ঘটায়। সেখানে তারা ২৫জন মানুষকে খুন করে সম্পূর্ণ বাজার আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
৭০/৭১ সালে আমাদের সিলেট এলাকার গ্রামাঞ্চলে মৌলানা মওদুদী বা ‘জামাতে ইসলাম’ এর নাম অনেকেই জানতেন না। সিলেটের যে সমস্ত এলাকায় শান্তি কমিটি ও রাজাকারবাহিনী গঠন করা হয়েছিল, প্রায় সবই হয়েছিল দেওবন্দী সিলসিলার বা নিখিল ভারত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের উত্তসুরী ‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ নামক দলটির উদ্যোগে। এ দলটির পশ্চিম পাকিস্তান শাখার নেতৃত্বে ছিলেন মুফতী মাহমুদ ও পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতৃত্বে মৌলানা মহীউদ্দীন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৮ বছর পেরিয়ে গেল, আজও একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমি পাইনি। অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতা পর্যায়ের লোককেও প্রশ্নটি শুনে বিব্রতবোধ করতে দেখেছি। শতশত কওমী মাদ্রাসার ছাত্র, উস্তাদ এবং দেওবন্দী আলেম নামে পরিচিত রাজাকারদের নাম সিলেট জেলার রাজাকারের তালিকায় নেই কেন?, যারা শ্রীরামিশি গ্রামে ও রাণীগঞ্জ বাজারে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তারা কি যুদ্ধাপরাধী নয়? তারা আজও বহাল তবিয়তে আছে, আছে তাদের মাদ্রাসাও। যে আদর্শকে সামনে রেখে তারা সেদিন অস্ত্র হাতে নিয়েছিল, সেই আদর্শ বাস্তবায়নে ঐ সকল কওমী মাদ্রাসা থেকেই ভিন্ন ভিন্ন ইসলামী দলের নামে আজও অস্ত্রহাতে বেরিয়ে আসে আত্মঘাতী জেহাদী জংগীবাদী ইসলামী সন্ত্রাসী। আমরা কি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি?
আরো কিছু তথ্য-
চমৎকার লেখার হাত। পড়তে পড়তে যে কখন চোখে পানি চলে এসেছে টেরই পাইনি।
সুপ্রিয় আকাশ মালিক,
মুক্তমনার বাংলা ব্লগের পাতায় আপনারই কোন মন্তব্য কিংবা কোন লেখা পড়ার আশায় প্রতিদিনই এ সাইটে একটু আধটু বিচরণ করা আমার অন্যতম নিত্যনৈমিত্তিক বদভ্যাস। এ সাইটে বিচরণকালে আপনার বক্তব্য এবং এর প্রত্যুত্তরে আদিল মাহমুদের অতি প্রত্যাশিত সতর্ক প্রতিক্রিয়া আমার এ ‘বিজ্ঞান বিমুখ’ আবেগঘন মনকে ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দিত করে। আপনার লেখায় যখন আমি আমার নিজেরই তেজস্ক্রিয় ভাবনাগুলো স্বল্পমাত্রায় রূপান্তরিত হতে দেখি, সচেতন মনেই আপনার জন্য আমি গর্ব অনুভব করি। অকৃত্রিম শুভেচ্ছা রইল ।
@সংশপ্তক,
শুধু আপনি একাই নয়। আমিও চেয়ে থাকি-কখন আকাশ মালিক এই মুক্তমনার পাতায় অবতীর্ণ হয়ে তার মূল্যবান কালাম নাজিল করবেন।
@সংশপ্তক,
আপনার ব্যাতিক্রমধর্মী কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ, সাথে আমার নাম আসায় ডবল।
মুক্তমনায় সবচেয়ে ব্যতিক্রমী লেথার মধ্যে এটি অন্যতম। অনেকদিন এই লেখাটি আমাকে তাড়া করে ফিরবে। ধন্যবাদ। :rose:
ভাল লাগল!
পরিবেশই মনে হয় সবকিছু বদলে দেয়!
আপনার গল্প তাই বলে।
আপনার জীবন নিয়ে আমার ঈর্ষা হয়।
এখনও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। সরকারেরও সাধ্য নেই ওখানে নাক গলায়।
যুদ্ধাপরাধী তো বটেই এবং শ্রীরামিশি গ্রামে ও রাণীগঞ্জ বাজারে হত্যাকান্ডের মত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় আরও কত যুদ্ধাপরাধী যে রয়েছে এর হিসাব মিলাবার সময় বয়ে যাচ্ছে।
লেখাটি শুধু স্মৃতিচারণ নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আরও একটি দলিল।
ধন্যবাদ এমন একটি দলিল দিনের আলোতে নিয়ে আসার জন্য।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
:yes: :yes: :yes:
হজরত মৌলানা নূরুদ্দীন সাহেব- মুহাদ্দীসে গহরপূরীর ব্যাপারটা জানতাম না। কবর থেকে উঠিয়ে এরে পেটানো দরকার। আরেকটা বিষয় বুঝলাম না। উনারে আবাল জনতা এত শ্রদ্ধা করত কেন?
:yes: এখনো বেশির ভাগ কওমি মাদ্রাসায় উর্দুতে পাঠ দেয়া হয়। কী আশ্চর্য!!
@সৈকত চৌধুরী,
এবার বুঝুন ১৫ শো বছর পূর্বে আরবের লোকেরা মুহাম্মদকে নবী মানতো কেন। সমস্ত কোরান আর লক্ষ লক্ষ হাদিস যার বুকের ভিতরে, যার কাছে এসে জ্বীনেরা হাদিসের সবক নিত, তিনি একজন ঘাতক অন্যায়কারী। এদের একজনকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা এস্তেখারা নামাজ পড়েও কি জানতে পারলেন না যে, আল্লাহর ইচ্ছে হয়ে গেছে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাবে। আপনারা আল্লাহর ইচ্ছার বিরোদ্ধে অস্ত্র ধরলেন কেন?
হুজুর বেহায়ার মুখজোড়া দিয়েছিলেন এ ভাবে- আমরা না থাকলে পাকিস্তানিরা আরো বেশী মানুষ খুন করতো, আরো বেশী ধ্বংস করতো।
আমি বললাম, আমাদের গ্রামের ঠিকানা পাকিস্তানিরা পেল কী ভাবে, রাস্থা চিনলো কী ভাবে?
হুজুর উত্তর না দিয়ে মুখ ফিরায়ে নিলেন।
সৈকত ভাই, জীবনে কত সুফী, আউলিয়া, দরবেশ গাউছ কুতুব দেখেছি। আমি তাদের লম্বা পোষাকের পকেটে বাস করতাম। কতদিন হাটুর সাথে হাটু লাগায়ে এক সাথে বসে খানা পিনা করেছি, কোন ঐশ্বরিক অলৌ্কিক কিছু তো দেখলাম না। একটা ব্লগে দেখলাম, এই একুশ শতাব্দিতে এসে, প্রবীর ঘোষ, জেমস রান্ডী, রিচার্ড ডকিংস এর যুগে এসেও মানুষ জ্বীনের অস্থিত্ব, উপস্থিতি নিয়ে হাটু গেড়ে বসে তর্ক করে। কয়েক বছর পূর্বে দেশে গিয়েছিলাম। বন্ধুমহলের এক বৈঠকে বাংলাদেশের বিখ্যাত পীর সাহেবদের পীরাকি আর আউলিয়াদের কেরামতি্র কাহিনি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে, ঘোষণা দিয়েছিলাম, কেউ যদি আমাকে কিংবা আমার স্ত্রী সন্তানদেরকে যাদু-টোনা বাণ মারতে পারে, অথবা কোন প্রকার অলৌ্কিক কিছু দেখাতে পারে আমি তাকে এক লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দিব। তিন মাস যাবত বারবার রিমাইন্ডার দিয়েও কোন কাজ হলোনা। ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ত্যানাপেচানি তর্ক আসলেই আর ভাল লাগছেনা। কোন ধর্মগ্রন্থ মানবতা সত্যবাদীতা নৈতিকতা শেখাতে পারেনা, একমাত্র বিজ্ঞানই দিতে পারে আমাদের জাগতিক সকল সমস্যার সমাধান।
@আকাশ মালিক,
যাই বলেন; আমার ব্লগের গত সপ্তাহের জ্বীন বিষয়ক বিতর্ক কিন্তু দারউন জমেছিল।
জ্বীনের ভিডিও দেখেছিলেন তো???
@আদিল মাহমুদ,
অবশ্যই দেখেছিলাম, আর অদৃশ্য জ্বীনের মতই আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে আপনার সমর্থনে হাততালি দিচ্ছিলাম।
ওমা খালাকতুল জ্বীন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়া’বুদুন।
যেহেতু জ্বীনের কথা কোরানে উল্লেখ আছে, সুতরাং জ্বীন বিশ্বাস করা মুসলমান হওয়ার অন্যতম শর্ত।
উপরের একটি লিংক এ লক্ষ্য করবেন শে’খে কাতিয়া হুজুর ও আসাদ মদনীকে সুদূর ওয়াজ মাহফিলে অল্প সময়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কোত্থেকে যে হঠাৎ একটি হেলিকপটার নেমে আসলো তারা কেউ জানতেই পারেন নি।
১৫ শো বছর পূর্বে মুহাম্মদের জন্যে বোরাক এসেছিল, তাতে এরা সন্দেহ করবে কী ভাবে?
@আকাশ মালিক,
বোরাকের কথা কিন্তু কোরানে নেই বলে জানি, কাজেই মুসলমানদের এই বোরাকে বিশ্বাস বাধ্যতামূলক নয়।
জ্বীনের সেই ভিডিও তে ষ্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজনের পা মোবারক, তবে এই সহজ ব্যাপারটাও এত এত জ্বীন বিশেষজ্ঞ এবং সংশয়বাদী ধরতে পারেননি দেখে মজা পাচ্ছিলাম। একজনের পা, মনে হয় লম্বা কোর্তা পরিহিত ক্যামেরাম্যান এর সহকারী হবেন তার পা খুবই দেখা যাচ্ছে, অদৃশ্যও নয়।
জাকির নায়েক বিতর্কে টের পেয়েছি যে অন্ধবিশ্বাস কাহাকে বলে, এও পষ্ট বুঝেছি যে ভোগান্তির এখনো ঢের বাকি আছে।
@আকাশ মালিক,
মানুষের তৈরী হেলিকপ্টার নামার কারনে আল্লাহর কুদরতি অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। হেলিকপ্টার না হয়ে বাহন হওয়া উচিৎ ছিল এমন কিছু যা এই পৃথিবীতে ইতিপূর্বে কখনও দেখা যায়নি। তা হলে আল্লাহর কুদরতির আরও মহিমা হত।
১৫ শো বছর পূর্বেতো আর হেলিকপটার তৈরী হয় নাই তাই মুহাম্মদের জন্যে বোরাকের (বোরাক কি ধরনের সেটা আমার জানা নাই অবশ্য) ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার উল্লেখ করা জ্বীনের ভিডিওটার লিন্ক দেয়া যাবে কি? শুধু ভিডিও না, আসল জ্বীন সামনাসামনি দেখতে বড়ই মন্চায়। 🙂
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, আপনার এই কমেন্টস-এর কারণে দলিলটা আরো পাকাপোক্ত হলো।
:yes: :guli:
লেখাটা অদ্ভূত ভালো লাগলো। এতো জ্ঞ্যান লেখকের ভেবে অবাক হবার পালা শেষ হয়না। মাদ্রাসা শিক্ষা অপর দিকে দেশের উচ্চ শিক্ষা। আর লেখার বিষয়টা খুবই স্পর্শ কাতর।অভিনন্দন।
আমাকে এই বিরল সম্মানে ভূষিত করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতেই হচ্ছে।
যদিও লেখা পড়ে মনটা খারাপ হল।
এত বড় অমানবিক অপরাধ আমাদের দেশেই হয়েছে সেজন্যই শুধু নয়। তার চেয়েও বড় কারন এসব জঘন্য অপরাধীদের বিচার তো দুরের কথা, তাদের এমনকি অপরাধী পর্যন্ত বলতে আমরা পারি না। এমনই মহিমা আমাদের স্বাধীনতার। অপরাধী বলাও দূরে থাক, তারা আমাদের ধর্মগুরু, সমাজ জাতির পথপ্রদর্শক। ধর্মের এতই মহিমা, ধর্ম এতই উদার।
@আদিল মাহমুদ,
একেই বলে আল্লাহর লীলা খেলা। আল্লাহ যাকে খুশি সম্মানিত করেন।
আবার এদের যখন বিচার হবে, ফাসি হবে তখন বলা হবে- আল্লাহ যাকে খুশি সম্মান কেড়ে নেন।
@মাহফুজ,
বিচার না হলেও সমস্যা নেই। আসল বিচার পরকালেই হবে। কাজেই যেদিকেই কথা বাড়ান না কেন সুবিধে করতে পারছেন না।
@আদিল মাহমুদ,
পাপ করলো এই জগতে বইসা, আর বিচার হইবো ঐ জগতে! একেই বলে বুঝি আল্লাহর ন্যায় বিচার! ন্যায় বিচারক মহান আল্লাহর গৌরব হোক।
@আদিল মাহমুদ,
খুন, ধর্ষন এবং আরো বিভিন্ন অমানবিক কর্মকান্ডের এইরকম যৌক্তিকরন কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
যার সন্তানকে হত্যা করা হল, যে নারী ধর্ষিত হল, তাদেরকে এইরকম অমানবিক কথা সান্তনা বাক্য হিসাবে শোনানোর এইসব আচরনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
আপনার এই মন্তব্য মুছে ফেলার দাবি করি।
@আশিকুর রহমান,
দাবীর সাথে সহমত।
@আদিল মাহমুদ,
আপনাকে ধন্যবাদ। :yes:
আশা করি আপনি আমার মনের কথাগুলি ব্যাক্তিগতভাবে না নিয়ে মূল ব্যাপারটি অনুধাবন করেছেন।
কোন প্রকার ব্যাক্তি আক্রমন নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট মতবাদের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান পরিস্কার করাই ছিল আমার মূল লক্ষ।
@আশিকুর রহমান,
আপনি আমার আগের কথার সূর ধরতে পারেননি (যে কথায় দূঃখিত হয়েছিলেন)। 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ,
দূঃখিত হওয়ার জন্য এক কাপ :coffee: ও :rose2: আমার পক্ষ থেকে আশিকুর রহমানের প্রতি থাকল।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
:rose:
মুক্তমনা মডারেটরের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, রেজিস্টারের নিয়মাবলী জানতে চাই।
@সখা,
আমি একটু সাহায্য করতে পারি-
আমি এতটুকু জানি, যদি আপনি লেখায় মন্তব্য করতে থাকেন তাহলে দেখবেন এক সময় আপনি সদস্য হয়ে যাবেন। মাঝে মাঝে আপনার ই-মেইল চেক করবেন মুক্তমনা থেকে কোন মেইল এসেছে কিনা।
আরও বিস্তারিত জানার জন্য নিচের বিষয়গুলো পড়তে পারেন-
আপনি মুক্তমনা কি?
মুক্তমনা নীতিমালা।
মুক্তমনায় প্রবন্ধ পাঠানোর নিয়ম পড়ুন।
@মাহফুজ,
ধন্যবাদ আপনাকে, আমি অবশ্য রেজিস্টারের নিয়মাবলী জানতে চেয়ে পোষ্টটা দেয়ার পর পরই মুক্তমনা নীতিমালাগুলো পড়ি, পড়ে দেখলাম এই পোষ্টটা করার প্রয়োজন ছিলোনা।
@সখা,
নীতিমালা পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
@মাহফুজ
মুক্তমনায় সদস্য়পদ দেয়ার জন্যে মুক্তমনার সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শুভবোধের জয় হোক।
আমার পিসির বাড়ি হলো পাইলগাও,রানীগঞ্জের পাশেই, আমার পিসির মুখে রানীগঞ্জের গনহত্যার কাহিনী শুনেছি, উনারা ওই গনহত্যার পর নৌকা ভাড়া কুশিয়ারা নদী দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে জকিগঞ্জ বর্ডার ক্রস করেন। আমার পিসা ওই সময় ওই এলাকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন, পরে খবর পাওয়া যায় উনারা যেদিন বাড়ি ছাড়েন ওই দিনই রাজাকার সহ পাকিস্তানি আর্মীরা উনাকে বাড়ি গিয়ে খুজে আসে।
বালাগঞ্জের ভাটপাড়া গালিমপুর এবং বুরুঙ্গাতেও দুটি গনহত্যা সংগঠিত হয়, ভাটপারা গালিমপুরেও আমার আরেক পিসির বাড়ী, আমার রানীগঞ্জের পিসি, নৌকা নিয়ে গালিমপুরে থেমে উনাদেরও সাথে নিয়ে বালাগঞ্জে এসে আমার দাদা দাদী এবং বাবাকে নিয়ে এক সাথে ভারতে যান। তখন আমার বাবা নবম শ্রেনীতে পড়তেন, আমাদের পরিবার, এবং আমার রানীগঞ্জের পিসিরা দেশে ফিরে এলেও গালিমপুরের পিসি ফিরে আসেননি,উনাদের বাড়ি ঘর দখল হয়ে যায় তখন, রানীগঞ্জের পিসিরাও রানীগঞ্জে থাকতে পারেননি ৭১ এর পরে, তিন তিন বার আমার পিসাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, পরে এলাকায় রটানো হয় আক্রমনকারীরা ডাকাত ছিলো। ভাটপাড়া গালিমপুর এবং বুরুঙ্গাতে যে গনহত্যা হয়েছিলো আমার বাবার মুখে তাদের কথা শুনেছি, এও শুনেছি এই হত্যাকান্ডগুলোতেও গহরপুরির হাত ছিলো।
@সখা,
আপনার বাবার কাছ থেকে গণহত্যার ঘটনা শুনেছেন, ঐ সময় আপনার বাবা ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিলেন। আকাশ মালিকও নাইনের ছাত্র ছিলেন। এমনও হতে পারে পরস্পর পরস্পরকে চেনেন।
গণহত্যার এ চিত্র আমাদের দেশের কত জায়গায় যে হয়েছে তার খবর আমরা জানি না। সকলেই যদি এমনিভাবে ঘটনাগুলো শেয়ার করতো তাহলে আমরা জেনে উপকৃত হতাম।
আচ্ছা, হজরত মৌলানা নূরুদ্দীন সাহেব- মুহাদ্দীসে গহরপূরী কি বেঁচে আছেন? এলাকার মানুষ কেমন চোখে দেখে তাকে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে। একটু জানাবেন।
@মাহফুজ,
তিনি মারাগেছেন, তাও প্রায় বছর তিনেক হলো বোধহয়। সবচেয়ে কস্টের কথা হলো আমরা এতটাই ভুলোমনা যে উনার মৃত্যুর পর হাজার হাজার মানুষ উনার জানাজায় যায়, শুধুমাত্র ধর্মীয় নেতা এইকারনে, মানুষ উনার কৃতকর্মের ইতিহাস জানেনা। বিশেষত নতুন প্রজন্মের তরুনরা, এখনো উনার মাদ্রাসা থেকে শ’য়ে শ’য়ে ছাত্র নামক কূপমূন্ডকরা বেরিয়ে আসে প্রতি বছর। এরা উনাকে ভিন্নরুপে চেনে, উনাকে রাজাকার বলা হলে এরাই প্রতিবাদে রাস্তায় নামে,
উনি মারা গেলেও উনার মাদ্রাসা এবং কতিপয় সংগঠন উনার বিকৃত আদর্শকে এখনো প্রচার করে যাচ্ছে।এই বিশাল ধর্মভীরু জনগোষ্ঠীর এই নেতার বিচার আদৌ হবে কি হবেনা?
@ আকাশ মালিক
উনার নামে কোনও দায়েরকৃত মামলা আছে কি?
@সখা,
আমি নিশ্চিত জানি ছিল, কিন্তু এখন আছে কি না জানি না। তবে এও জানি এরা অনেকেই ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব পর্যন্ত পলাতক বা আত্মগোপনে ছিলেন।
@সখা,
আমার বাল্যকালের স্মৃতিবিজড়িত বেশ কিছু যায়গার নাম আপনি আপনার মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন। দুর্ভাগ্যবসত কোন একটি বিশেষ কারণে আমি আমার গ্রাম, মাদ্রাসা, স্কুলের নাম বলতে পারিনা, সব সময় ঘটনার স্থান-কালও উল্লেখ করতে পারিনা। এ দুঃখ, এ অন্তরজ্বালা যে কী ভীষণ জ্বালা তা একমাত্র তারাই জানেন যারা ভুক্তভোগী। আপনার পিসির বাড়ি এই পাইলগাও স্কুলে আমার বড় ভাই পড়তেন। এই স্কুল সিলেট জেলার প্রাচীনতম স্কুল। মাদ্রাসায় মক্তব পাঞ্জমে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পাইলগাও থেকে লঞ্চ ধরে শেরপুর যেতে হয়েছিল। পাইলগাও গ্রামের লঞ্চঘাটে এসে জীবনে প্রথম বারের মত কুশিয়ারা নদী দেখা ও লঞ্চ চড়ার অভিজ্ঞতা হয়। এই শেরপুর মাদ্রাসার মুহতামীম কালা মৌ্লুভীকে আমি ভালভাবেই চিনি এবং আপনার পিসিরাও নিশ্চয়ই চিনতেন। বালাগঞ্জের ভাটপাড়া গালিমপুর, বুরুঙ্গা, শ্রীরামিশি ও রানীগঞ্জের গনহত্যায় মৌলানা শেরপুরী আর মৌলানা গহরপুরী উভয়েই জড়িত ছিলেন। এই লিংকে ভক্তদের কর্তৃক সিলেটের খ্যাতনামা বিশিষ্ট বেশ কিছু আলেমের গুনগান করা হয়েছে। ৭১ সালে এরা সকলেই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে। এদেরই কোন একজনের জুতা আমি ছোট বেলায় চুরি করেছিলাম। রানীগঞ্জের পাশেই আছে কাতিয়া গ্রাম। কাতিয়ার হুজুর আমিনুদ্দিন সাহেবকে চিনেন না এমন মানুষ সিলেটে খুব কমই আছেন। মাদ্রাসায় তাকে আমরা খালিদ বিন ওলিদ এবং কুতুবে পাকিস্তান হিসেবে জানতাম। তার সম্মন্ধে এক ভক্ত লিখেছেন-
It is well known in Bangladesh especially in Sylhet the uprightness and love for Islam and Shariah that Khatiya Shaikh has. In his earlier days when there was to be a mela (unislamic gatherings where music and women gather, drugs etc) near the Shaikhs area he used to single handedly go with his stick and stop the gathering. Just this February there was supposed to be a Mela nearby and Khatiya Sab heard of it and become emotional to stop it. People tried to tell him you are old now. He told them loudly ‘ I am not dead yet, as long as i am alive i will try to stop this, do what you will after i die!
People of the mela heard of this and subsequently cancelled it.
*A Mufti told me that there are a lot of musical instruments under the bed of Khatiya Shaikh Sab. He told me that these were his ghaneemah (war booty) which he confiscated from people.
*Before Maulana Asad Madani passed away he visited Bangladesh. He had many programs set up. Khatiya Shaikh Sab went to meet him to get him to his program. Maulana Asad told him that i have such set programs which will not allow me to come to your program, which was a very long distance away. Khaitiya Shaikh Sab raised his voice to Maulana Asad and said ‘Your father used to listen to me and you disobey me!’. He then agreed to go with Khatiya Shaikh Sab. The distance was too much for them to arrive on time and somehow a helicopter was found which took them there.
বৃদ্ধ বয়সে এই শেখে কাতিয়া তার ছোট ছেলেকে একটি বৃটিশ পাসপোর্টধারী মেয়ে বিয়ে করালেন। খলিফা হজরত ওমরের সন্ত্রাসী ছেলে ওবায়দুল্লাহর নামানুসারে তার নাম রাখা হয়েছে ওবায়দুল্লাহ। লোকে তাকে ক্কারী ওবায়দুল্লাহ বিলালি বলে ডাকে। তার আরবি উচ্চারণ ও কণ্ঠের সুর নাকি ঠিক হজরত বিলালের মত সুন্দর। ইংল্যান্ডে একদিন তার সাথে দেখা হয় এক বৈশাখী মেলায়। পাঞ্জাবী দাড়ি টুপি থাকলেও আধুনিকতার ছাপ তার পোশাকে চেহারায় পরিলক্ষিত হয়। খুব অল্প সময়ের আলাপে তার ভিতরের মানুষটাকে চিনতে আমার কষ্ট হয়নি। দুই সপ্তাহ পরে শুনা গেল ক্কারী সাহেব তার বউ ও দুই বাচ্চাকে ছেড়ে ফুফু সম্পর্কিত স্থানীয় এক যুবতি মেয়েকে নিয়ে উধাও হয়েছেন। মেয়েটি যখন বুঝতে পারলো ক্কারী সাহেব তার সাথে প্রতারণা করেছে, তাকে বিয়ে করবে না, সে ঘরে ফেরার জন্যে নিজেই ফোন করে ধরা দিল। তিন দিন পরে লন্ডনের এক হোটেল থেকে মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার বছর খানেক পর ইংল্যান্ডে একদিন ঘরোয়া পরিবেশে শেখে কাতিয়া হুজুরকে পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, শরিয়তের বিধানানুযায়ী ব্যভিচারী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষের শাস্তি কী? মক্কার মানুষের প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মদ যে ভাবে সাবজেক্ট ডাইভার্ট করতেন, হুজুরও তেমনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। মনে মনে বললাম, হায়রে মানুষের ঈমান, হায়রে ধর্মের নৈতিক শিক্ষা। হুজুর, শরিয়তের আইন কায়েম করতে মানুষ খুন করার হুমকি দেয়া যত সহজ, নিজের ছেলেকে পাথর মেরে হত্যা করা তত সহজ নয়।
কাকতালীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ আজাদ ও গহর পুরের রাজাকার কালা মুহাদ্দিস একই বৎসরের একই মাসের, একই সপ্তাহে মারা যান। ৭৫ এর পরে মুহাদ্দিসে গহর পুরী শ্রীরামিশি গ্রামের পাশ দিয়ে বহুবার আনাগোনা করেছেন, কোনদিন এই গ্রামের মাটির নীচে শায়িত শহিদানদের কবর জিয়ারত করেছিলেন কি না জানিনা। আমি আমার সম বয়সী পরিচিত এক রাজাকারকে বলেছিলাম, আব্দুস সামাদ আজাদ এর জানাজায় উপস্থিত হয়ে তোমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল। সে আমার দিকে তাকিয়ে বিদ্রোপের হাসি হেসে বললো, মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখো কার জানাজায় বেশী মানুষ হয়েছিল, তখন বুঝতে পারবে আল্লাহর দৃষ্টিতে কে উত্তম। কাকতালীয় ভাবে আব্দুস সামাদ আজাদ ও গহর পুরের মুহাদ্দিস একই বৎসরের একই মাসের, একই সপ্তাহে মারা যান। ৭৫ এর পরে মুহাদ্দিসে গহপুরী শ্রীরামিশি গ্রামের পাশ দিয়ে বহুবার আনাগোনা করেছেন, কোনদিন এই গ্রামের মাটির নীচে শায়িত ৭১ এর শহিদানদের কবর জিয়ারত করেছিলেন কি না জানিনা।
প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ দূর সম্পর্কে আমার নানা। ইংল্যান্ড আসলে প্রায়ই দেখা হত। একবার শেখ হাসিনার সাথে এডিনবরাহ শহরে দেখা হল। ডাইনিং টেবিলে নানাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করলাম, শের পুরের কালা মৌলুভী আর গহর পুরের কালা মুহাদ্দিসকে কি ক্ষমা করে দিয়েছেন? আমার ডান হাতে শক্ত হাতে চেপে ধরে নানা বললেন, প্লীজ এখন না।
দুর্বৃত্বরা অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক, আপনার পিসি সহ যাদের জমি-জমা বাড়ি-ঘর সহায়-সম্পত্তি দখল করে নিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আমরা গৃহ হারাদের গৃহ ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। আমরা ভীরু-কাপুরুষ, আমরা হৃদয়হীন, অক্ষম, অপার্গ, অকৃতজ্ঞ, আমরা স্বার্থপর। এ আমাদের লজ্বা, এ আমাদের কলঙ্ক, আমরা আপনার পিসি ও তার মত যারা এ দেশের কুলাঙ্গারদের কারণে ভিটে-হারা ঘর-হারা হয়েছিলেন, তাদের কাছে নতশীরে ক্ষমা প্রার্থী।
ধর্মান্ধদের চোখে ঘাতক মুহাদ্দিসে গহর পুরী।
@আকাশ মালিক,
বিস্তারিত জানবার আগ্রহ ছিল। সেই আকাঙ্খা পূরণ হলো। ধর্মান্ধদের চোখে মুহাদ্দিসে গহরপুরী পড়লাম। কোন অন্ধকার নেই, কত পবিত্র ফকফকা একেবারে চান্দের আলোর ন্যায়! আপনি হেই মানুষটারে এমনি কইরা ডুবাইয়া দিতাছেন, আল্লাহ-ই সইবো না। সুন্নী ফোরাম জানতে পারলে বদদোয়া দিব। আল্লাহর গজব নাজিল হইবো।
ধার্মিক লোকদের জীবনী তো এভাবেই লেখা হয়। আর অধার্মিকরা ধার্মিকদের সবকিছু উন্মোচন করে দেয় পাবলিকের কাছে। এর জলন্ত প্রমাণ আপনি।
@মাহফুজ,
লক্ষ্য করেছেন হুজুরের কাছে নাকি কয়েক হাজার জ্বীন নিয়মিত ভাবে এসে হাদিস শিক্ষা নিত।
দেখউকা ভাইসাব, এবুল মনে কিতা খয়, এরারে কিতা খরলে মনর দুক যাইবো?
@আকাশ মালিক,
আন্নে সিলটের লুখ নাকি? আন্নের মনর দুক খমচে না একনো?
@আকাশ মালিক,
আরেকটু গল্প শুনুন-
“অউ দিন সূর্য তল অওয়ার পর, হাইঞ্জাবেলা মাইনষে এলাকার হকল বেমারী আর জ্বীনে ধরা অকলরে গহরপুরীর গেছে লইয়া আইলো। শহরর হকল মাইনষে ই-বাড়ীর সামনে আইয়া ভীড় করলো। তাইন বউত জাতর বেমারী অকররে ভালা করলা আর জ্বিন ছাড়াইলা। জ্বীন অকলরে মাতবার দিলা না, কারন ই-জ্বীন অকলে তানে চিনতো।”
কী মজা পাইলেন নি?
@আকাশ মালিক,
আয়ার মনোত হদ্দে- ইতা জ্যাতা থাকলি কল্লা কাডি নামাই দিতাম। যেগুন মাইনষে ইতারে পীর বানাইয়্যি, তাগোরে চেহারার উত ছ্যাপ মারি দওনর দরকার।
@আকাশ মালিক,
আমার ছেলেবেলায় সংখ্যালঘু কি জিনিস আমি বুঝতাম না, তবে এই শব্দটির প্রয়োগ ও ব্যবহার খুব পরিচিত ছিলো। আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান হলেন জামি আহমেদ, তিনি এবং উনার পূর্বপুরুষরা একসময় আওয়ামীলীগ করতেন,আগেরবার আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তিনি আরেকজন আওয়ামীলীগারের কাছে নির্বাচনে হেরে বসেন।হঠাৎ করে একদিন দেখলাম তিনি দল বদল করছেন, তিনি এখন বিএনপি করেন, সাইফুর রহমান উনার বন্ধু, উনার দল বদলের অনুষ্ঠানে সাইফুর রহমান নিজে উনার বাড়িতে আসেন, অইদিন নাকি ৩/৪ টি গরু জবাই হয়েছিল। উনি বিএনপিতে যাওয়ার পর জেলে সম্প্রদায়ের মানুষদের উস্কে দেন হিন্দুদের প্রতি, আমাদের বারান্দায় রাখা চেয়ার,টেবিল,আস্ত টিউবওয়েল, গাছের ফলমূল, নিরঞ্জন ডাক্তারদের গরু, উধাও হয়ে যেতে থাকে, আমার মা স্কুলে যাওয়ার পথে যে ছাত্ররা এতদিন সালাম আদাব দিত, হঠাৎ করে ওদের কিয়দংশ তাকে দূর থেকে গালাগালি শুরু করে, তারপর একদিন চেয়ারম্যান সাহেব আমার বাবাকে ডাকিয়ে নিয়ে যান,
তারপর আমাদের বাড়ির সামনের কুশিয়ারা নদীর পাড়ে বিশাল প্যান্ডাল বাধা হয়, সেখানে আমাদের মাননীয় সাইফুর রহমানের অতিব সুপুত্র আসেন, এসে বলেন আজ এখানে অনেক হিন্দু ভাই এসেছেন দেখা যাচ্ছে, হিন্দুরা শুধু আওয়ামীলীগ করে, সেই দিন শেষ, এখন হিন্দুরা বিএনপিও করে, আমার বাবা সহ আশেপাশের অনেক হিন্দুদের মালা পরিয়ে বিনপিতে নেওয়া হয়। এমনিতে আমি সিলেট শহরে থাকতাম, বাবা আমাদের গ্রামের এই পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে চাইতেন, দুর্ভাগ্যবশত আমি নিজেই অইদিন বাড়ি গিয়েছিলাম, এই দৃশ্য দেখে আমার ইচ্ছে হয়েছিলো, ইচ্ছে হয়েছিলো অনেক কিছু করার, ইচ্ছে হয়েছিলো প্যান্ডেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বলি “জয় বাংলা”
আমাদের ঘরে বসার একটা পিড়ি ছিলো, আমার দাদী সেই পিড়িতে বসতেন, এই পিড়ি নাকি ভারতে যখন আমাদের পরিবার ক্যাম্পে ছিলো তখনকার, তাতে খুদাই করে লেখা ছিলো “জয় বাংলা” ছেলেবেলা এই পিড়ির কোন মুল্য ছিলোনা আমার কাছে, সেদিন অই পিড়ি দিয়ে যদি অদের মেরেই দিতাম তাহলে আজ হয়ত এই মর্মজ্বালা সহ্য করতে হতো না।
গহরপুরির মত দাগী রাজাকারেরা মারা যাচ্ছে, ওদের সৃষ্টিকৃত নব্য রাজাকারদের কি করে আটকাবো আমরা?
এদের ক্ষেত্রে আমাদের করনীয় কি হতে পারে?
@সখা,
মুক্তমনার নতুন সদস্যা হওয়ায়, স্বাগতম জানাচ্ছি। :rose2:
আপনি ঘটনাকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করতে পারেন। এই ঘটনা পড়ে বুঝতে পারছি আপনার ভেতর রয়েছে বিদ্রোহী মনোভাব। পরিস্থিতির কারণে প্রকাশ করতে পারেন নি, কিন্তু মন দিয়ে তা প্রকাশ করেছেন লিখে। – এটাও অনেকে করতে পারে না। সৃষ্ট নব্য রাজাকারদের বিরূদ্ধে আপনার কলম তেজস্বী হয়ে উঠুক এই কামনা করি।
আপনাকে একটা ছোট্ট দাবী করি, সেটা হচ্ছে- শ্রদ্ধেয় গীতা দাসের ‘সংখ্যা লঘুর মানচিত্র‘ পর্বগুলো পড়ুন। এখানে মাত্র একটি পর্বের লিংক দিলাম। আস্তে আস্ত অন্যগুলোও খুজে পাবেন।
আর আগেই যদি পর্বগুলো পড়ে থাকেন, তাহলে অযাচিত পরামর্শ দেয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
@মাহফুজ,
ধন্যবাদ আপনাকে, বর্তমান জামী চেয়ারম্যানের চাচা ৭১ সালে পাক বাহিনী যখন আমাদের গ্রামে আসে তখন তাদের সাথে পাকিস্থানের সমর্থক হয়ে অনেক হিন্দুদের প্রানে বাচাঁন। আফি মাস্টার (যাকে আমরা দাদু বলে ডাকতাম) উনাকে ৭১ সালে পাকিস্থানি বাহিনী মেরে ফেলত যদি না জামি চেয়ারম্যানের চাচা ওদের আফি মাস্টার কে মুসলমান বলে পরিচয় না দিতেন, তবে তিনি আমাদের গ্রামের এক হিন্দু মহিলাকে ধর্ষনের হাত থেকে বাচাঁতে পারেননি,
আমাদের বাড়ির অনেক জিনিসপত্র ভারতে যাওয়ার আগে উনাদের বাড়িতে রেখে যাওয়া হয়েছিলো, যা দেশে প্রত্যাবর্তনের পরে উনারা ফিরিয়েও দিয়েছিলেন, উনারা সত্যিকার অর্থে রাজাকার ছিলেন না, সংখ্যালঘুর প্রতি বিরুপ আচরনও তখন ছিলোনা। উনার উত্তর পুরুষরা রাজার হয়ে উঠছে, মৌলবাদী হয়ে উঠছে, এবং ভয়ঙ্কর ভাবেই হচ্ছে,
গীতাদির লেখা আগেও পড়েছি তবে সবগুলো পড়া হয়নি,আপনি যেটা পোষ্ট করলেন সেটা আজই পড়লাম,( এখানে সংখ্যালঘুর কথা আসাটা অফ দ্যা টপিক হয়ে যাচ্ছে যদিও) ,আমি আসলে সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচার সেটা বুঝাতে চাইনি, যে পরিবার ৭১ এর মত সময়ে ভারতে থেকে যায়নি,( যেখানে আমার পাচঁ পিসির মধ্যে শুধু একজন পিসিই বাংলাদেশে আছেন আর সকলেই ভারতে থেকে যান) সেই পরিবার দেশপ্রেম কি জানে, জন্মভূমির প্রতি কি টান থাকে তাও জানে, অই পিড়িতে জয়বাংলা আমার বাবাই লিখেছিলেন, আমার বাবার জন্যেই আমাদের পরিবার দেশে ফিরে এসেছিলো, সাধারন মানুষ মৌলবাদী থাকে না, তাদের মৌলবাদী করে গড়ে তোলা হয়,আমাদের দেশ এখন মৌলবাদী গড়ে তোলার কারখানা হিসেবে কাজ করছে, যাদের পুর্বপুরুষ মৌলবাদী ছিলোনা, ৭১এ স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি ছিলো,তাদের উত্তরপুরুষরা মৌলবাদী হয়ে উঠছে, যদি গহরপুরির শাস্তির দাবি জানানো হয় তাহলে এরাই প্রতিবাদ করবে,ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে আন্দোলন করবে,হয়ত এরা এ দেশটিকে আবার পাকিস্থান বানাতে চাইলে তাতেও সমর্থন দিবে।
এরা হলো নব্য রাজাকার এদের পুর্বপুরুষ মুক্তিযোদ্ধা হলেও এরা রাজাকার, আমি আসলে এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম।
@মাহফুজ,
গীতাদির লেখায় এই লাইনটি দেখলাম – নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমানের প্রচেষ্টা তাদের টনটনে।
বিএনপি তাদের দলকে অসাম্প্রদায়িক প্রমান করার জন্যই হিন্দুদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে, দলে কিভাবে মানুষ কে নিয়ে আসছে? অত্যাচার নিপিড়ন করে। এই ঘটনাটি আসলে তারই একটি দলিল।
আওয়ামীলীগ এই মুহুর্তে ধোয়া তুলসীপাতা সেটাও বলা যাবে না, আওয়ামীলীগের মধ্যেও নব্য রাজাকাররা আছে, এবং তারা এই হিন্দুদের একটা তুরুপের তাস বৈ কিছু ভাবছেনা।
স্মৃতির পাতায় ৭০ থেকে যখন ৭৩ এর বিষয়ে বলছিলেন- তখন মনের মধ্যে এই ভাব এলো ৭১ গেলো কোথায়? কিছুক্ষণ পড়ার পরই পেলাম ৭১ এর মর্মান্তিক ঘটনা। হৃদয়স্পর্শী ঘটনা।
রাজাকারদের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন রেখেছেন-
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কী হবে এর উত্তর?
@মাহফুজ,
এই লেখা যখন পড়ছি তখন মাসুদ তারেকের ” মাটির ময়না ” ছবিটির কথা মনে পড়ে গেল।
আসলে যিনি বা যে-কেউ যদি “কি ও কেন” দিয়ে জীব ও জড়কে প্রশ্ন করেন তাহলে আজ হউক, কাল হউক তাঁর প্রশ্নের সমাধান সে পেয়ে যাবেই।তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেলে হয়ত তা তাড়াতাড়ি বিকশিত হয়,যেমন , আমাদের সামনে আশাক মালিক ভাই এক জলন্ত উদাহরন।
প্রগতি ও মানবতাবাদের জয় হয়েও যখন তা আবার প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতে লুন্ঠিত হয় তখন উল্টো যা হয় তা আমরা আজ বাংলাদেশের দিকে তাকালে তার বাস্তব চিত্রের সফলায়ন দেখতে পাই।
আমাদের দাবী হচ্ছে আজ সময় এসেছে ধর্মের ধ্বজাধারী ও পাকিস্তানের দালালদের সহ সকল দঃক্ষিনপন্থী ও ৭১ এর খুনিদের যারা ৩০ লাখ মা- বাবা,ভাই-বোনদের হত্যা ও ধর্ষন করেছিল তাদের বিচারের কাঠগোঁড়ায় দাঁড় করানোর এবং উপযুক্ত শাস্তি ও ফাসিঁ প্রদান করা।এটা আজ এবং আগামি ভবিষ্যৎ এর একমাত্র প্রানের দাবী।এছাড়া যে মানবতাবাদমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখা অমূলক ও অলীক।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
প্রশ্ন উঠাতে আজ সুন্দর জবাব পেলাম। পাঠকরাও এ জবাবে সন্তুষ্ট হবে বলেই আশা করি। আপনার মত অনেকেই এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী আজ সারা বাংলাদেশে। কোনই ক্ষমা নেই।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
তারেক মাসুদ আর আকাশ মালিক- এই দুজনের মধ্যে মিল পাই। দুজনেই মাদ্রাসা থেকে আসা মানুষ।
স্মৃতির পাতা পড়ার সময় আমারও কিন্তু তারেক মাসুদের কথা মনে পড়েছে।
@মাহফুজ,
ঠিক,তবে আরেক জন আছে সে হলো আমাদের আনাস ।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
ঠিক বলেছেন। আমি তো ভুলেই গেয়েছিলাম। মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
@মাহফুজ,
আচ্ছা, আপনার কি ঘুমটুম জীবনে নাই ,না-কি ? যদি আমার ভূল না হয় তাহলে আপনি এ মুহূ্র্তে দেশে বিরাজমান,তাই নয় কি? আর যদি তাই হয় তাহলে দেশে এখন কয়টা বাজে ? এখন বাংলাদেশে ভোর ৬ টা ৫ মি।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
তিনটা প্রশ্ন- উত্তর দিচ্ছি:
জীবন যতদিন থাকবে ঘুমটুমও ততদিন থাকবে, তবে কম আর বেশি, এই আর কি।
জ্বী দেশে বিরাজমান (?), অবস্থান করছি।
দেশে (বাংলাদেশে) ৬.৩০ এ এম।
ধন্যবাদ। আপনি এখন যেখানে, সেখানে সময় কত?
@মাহফুজ,
না বলি, না বলি, না বলি।
@আশিকুর রহমান,
আপনার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি- :yes: :yes: :yes:
@মাহফুজ,
চলুক। :yes: