আব্দুর রহমান আবিদের “দুই রাণী“-র শুরুতেই উল্লেখিত সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণটি আমাকে অহেতুক নাড়া দিয়েছে! তবুও যেহেতু কোন দলের সাথে আমার বর্তমানে কোন সংশ্রব নেই, এমনকি আপাতঃ সমর্থন বলে যেকথাটি চালুআছে, তাও নেই; সুতরাং এক্ষেত্রে সংবিধানিক ব্যাত্যয় ঘটবেনা বলে দুকলম লেখার সাহস করছি! প্রথমেই আমার প্রশ্ন, এই সংবিধিবদ্ধ বিধানটির কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে? আমার মতে এধরনের বিধানে বিপরীত ভাবে জনগনের উৎসাহ বাড়ে। অনেকটা ‘ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর’ এর মতো। আর এটি যদি চটুল বিষয় হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকে, তবে তা কতোটা যৌক্তিক বোধ হয় আলোচনার দাবী রাখে। তবে লেখকের নির্দ্দেশিত বিষয়ের প্রতি আমি আংশিকভাবে একমত পোষন করছি এখানে। এটি হতে পারে সুনাগরিকের নৈতিক গুন! দেশের যেকোন নাগরিকের যেকোন সেলিব্রেটির ভক্ত এমনকি অন্ধভক্ত হতে বাধা নেই, তবে যেকোন সুনাগরিকেরই আদর্শগত অবস্থানের ক্ষেত্রে তার যুক্তিযুক্ততার প্রশ্ন সন্দেহাতীত ভাবেই জড়িত। কোন রাজনৈতিক দলই যেহেতু দেশের আপামর জনসাধারনের ১০০ ভাগের প্রতিনিধিত্ত্ব করেনা বরং সমাজের এক বা একাধিক শ্রেণীর তথা খন্ডাংশের প্রতিনিধিত্ত্ব করে, সুতরাং সংশ্লিষ্ট জনখন্ডাংশ সংশ্লিষ্ট দলের অন্ধ সমর্থক হতেই পারে। এটি উক্ত রাজনৈতিক দলের আদর্শ এবং দেশের সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আদর্শের ঐক্য প্রকৃয়া মাত্র, কারণ এতদ্ব্যতিত সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের তো কোন অস্তিত্বই থাকে না! যেমন ধরুন একদা শক্তিশালী মুসলিমলীগের এদেশে আজ আর কার্যতঃ কোন অস্তিত্ত্ব নেই, কারন এর কোন আদর্শগত সমর্থক কিংবা ছড়াকারের ভাষায় অন্ধ সমর্থক নেই! পৃথিবীর দেশে দেশে রাজনৈতিক দল গুলোর অস্তিত্ত্ব কিছুটা হলেও এই সব অন্ধভক্তদের অন্ধসমর্থনের উপড়ে নির্ভর করে।
এবার আসি এই ছড়াটির বিষয়ে আমার উপলব্ধি সঞ্জাৎ দ্বন্দ্বে। পড়ে দারুন লেগেছে আমার, সন্দেহ নেই। গুনগতভাবে ছড়াটি কেমন হয়েছে তার বিচার বিশ্লেষন করার দায়িত্ব মূলতঃ সাহিত্যবিশারদ কিংবা ছড়াকার বা কবিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যবলে ওতে আমার আগ্রহ কম। তবে বিষয়ের ব্যাপারে সামান্য কয়েকটা কথা বলার লোভ সামলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রথমতঃ এ ছড়াটির অন্তর্নিহিত বিষয় দেশের দুই প্রধান নেত্রী এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দুই দল। আর মূল উপজিব্য হলো দেশের প্রধান দুই নেত্রীই সব অনিষ্টের মূল! আসলেই কি তাই? এটি কি কোন সুচিন্তিত মতামত? আমার কিন্তু তা মনে হয় নি কখনো। বরং আমার মনে হয়েছে দেশের এহেনো পরিস্থিতির জন্য দায়ী প্রচলিত আমলাতন্ত্র এবং সুনাগরিকত্বহীনতা। অর্থাৎ আমি এবং আমরা সবাই কিন্তু সমান ভাবে দায়ী! আসুন একটু আলোচনা করা যাক।
ছড়াকার আবিদের প্রথম অনুচ্ছেদের সাথে চলমান ঘটনায় আমার কোন সংঘর্ষ নেই, শুধু একটু ইঙ্গিত করবো। অনুচ্ছেদের শেষ লাইনের “অমানুষ” কারা? প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিবর্গতো? মহামহিম আমলাবর্গ (!)। এরা রাজনৈতিক নেতা নন, সরকারী চাকুরে, জনগনের ট্যক্সের টাকায় এদের বেতন হয়, এরা শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ ডিঙ্গোবার আগেই এরা নানান মতাদর্শের অনুসারী এবং আমলা হিসেবে কার্যতঃ সম্পাদন করেন সেই ধারনকৃত আদর্শের চর্চা (সুযোগে)! এরা জনগনের ট্যাক্সের টাকায় পেটের দানাপানি জুটালেও মনেমনে জনগনকে ভাবেন প্রজা আর নিজেরা রাজকর্মচারী! আমার জানা সরকারী কলেজের আধিকাংশ শিক্ষকবৃন্দ একই ধারনা পোষন করেন! সেই সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান-ধারনা! সেই কারনেই সরকারী কলেজের শিক্ষকবৃন্দ মানুষ তৈরীর কারিগর হওয়া সত্যেও ক্ষয়িষ্ণু পদ্ধতিতে কতিপয় অমানুষ দ্বারা নিয়তঃ শাসিত হন আপন দূর্গে! আর আত্মতুষ্টিতে ভোগেন, কারন তাঁরা রাজকর্মচারী! সুতরাং সমমনা, স্বআদর্শিক (শ্রেণী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শ নয়!) ছাত্রসংগঠন গুলোর পরোক্ষ লেজুরবৃত্তি এবং আখেরে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সংগঠনের দ্বারা কিছুটা উচ্ছিষ্টের আস্বাদগ্রহনই উদ্দেশ্য। সুতরাং তথাকথিত আমলাবর্গের ক্ষেত্রে বিষয়টি কি আরো তাৎপর্যপূর্ণ নয়? কি মনে হয়?
ছড়াটির ২য় অনুচ্ছেদ পড়িতে পড়িতে মনে হইলো, সাধুরীতিতে ইহার জবাব লিখিলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ, অধমের সাধুভাষায় অনুচ্ছেদটি উৎকীর্ণ হইলো। এই অনুচ্ছেদেও একই বক্তব্য প্রযোজ্য, তবে একটি অনুসন্ধিৎসা আমাকে যারপরনাই পীড়িত করিয়াছে। আমার মনে হয় প্রাণীকূলে তৈল মর্দন এবং সাগ্রহে গ্রহন একটি অবধারিত ব্যাপার! যেমন আপনার পোষা কুকুর কিংবা বিড়ালটির গলায় তৈলবিহীন হস্তমর্দন তাহার আরামের উদ্রেক করে! ফলে সে গলায় ঘর ঘর আওয়াজ তুলিয়া আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনপূর্বক সে যে আরাম প্রাপ্ত হইতেছে, তাহার প্রকাশ ঘটায়! গরু, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, টিয়াপাখী, মোরগ, একুইরিয়ামের মাছ, গাছ সহ যেকোন প্রানীর ক্ষেত্রেই ইহা সমানভাবে প্রযোজ্য, শুধু মর্দনের রকম ফের রহিয়াছে মাত্র! আমার মনে হয়, এটি প্রাণীকূলের বিবর্তনজনিত উপযোজনা! বিশেষজ্ঞবৃন্দ ভালো বলিতে পারিবেন। অতএব, মনুষ্যকূলেও ইহার উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী! তবে দুইটি পার্থক্য রহিয়াছে। ঐযে বলা হইয়াছে “তৈলমর্দন”, এই কটাক্ষ্য বর্ণসমষ্টি কিন্তু শুধু মাত্র মনুষ্য সমাজেই প্রচলিত! সুতরাং বলা যায় মনুষ্যকূলের সদস্যবৃন্দের বিশেষ বিবেচনাবোধের ক্ষমতার কারণেই এই কটাক্ষ্যের আবির্ভাব! সুতরাং যাহারা তৈলমর্দনে সিদ্ধহস্ত এবং গ্রহনে অবিচলিত ভাবে ‘আহ্ আরাম!’ বলিয়া স্বস্তি প্রকাশ করেন উভয়েরই যে বিবেচনাবোধ শূণ্যের কোঠায় তাহা নিশ্চিত। আর আমার বা আপনার মতো যাহারা সেই সব বিবেচনাবোধ হীনদের নিঃসংকোচে আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি লেপনপূর্বক ভোট দিয়া অবিবেচনা প্রসূতকর্মে উৎসাহিত করি তাহাদের বিবেচনা বোধ ঋনাত্মক বিধায় সম্ভবতঃ স্বমস্তিষ্কে পালিত উকুন হিসাবে কোঠরে রক্ষিত ঘিলুটুকু খাওয়াইয়া গোটা সমাজটাকেই মেধাশুণ্য করিবার সংগ্রামে ব্যস্ত হইয়া উঠি! আর অপরটি হইলো, যত্র তত্র তৈল মর্দন স্বস্তিকরও নহে! যেমন কাহারো চক্ষু কিংবা কর্ণে অঙ্গুলী লেপন এবং সেটি গোচরে কিংবা অগোচরে, একটি ব্যাপার বটে!
ছড়াটির ৩য় অনুচ্ছেদে যে অস্বস্তিকর খুনসুটির কথা বলা হয়েছে, তা মূলতঃ নীতিগত জাতীয় সংঘাত। এর সূচনা হয়েছিলো ১৯৭৫ পরবর্তীকালের, উচ্চাদালত কর্তৃক সাম্প্রতিক কালে অবৈধ ঘোষিত, সামরিক স্বৈরাচার দ্বারা! আমাদের দেশের কতিপয় বিজ্ঞজনেরা আপাতঃস্থিতিশীলতা দেখে যারপরনাই স্বস্তিবোধ করেন! কিন্তু অন্তরে যে কি দাবাদাহ তা বোধকরি টের পাওয়া যায় নির্বাচন পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে (উদাহরণ: নির্বাচন ২০০১)! শুধুমাত্র দুই নের্তৃত্ত্বকে কাদা ছিটিয়ে আপাতঃ অন্তর-ঝাল হয়তো খানিকটা মেটানো সম্ভব, কিন্তু এর পরিপূর্ণ পরিত্রান কি সম্ভব? এই ধরনের বার্তা প্রক্ষেপনে আমি কেনো যেনো পুরুষের নারী-বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ সহ অবৈধ সামরিকতন্ত্রের পক্ষের সাফাই শুনতে পাই! বিশেষতঃ যেখানে এর সুযুক্তিপূর্ণ সমাধান অনুপস্থিত থাকে। অন্ততঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অতীব গুরুত্ত্বপূর্ণ! এখানে পাঠকবৃন্দ কি এমন একজন অবিতর্কিত, সমর্থ এবং অজনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন যিনি বাংলাদেশের চলমান হাল সফল ভাবে ধরতে সক্ষম? আমি নিশ্চিত ভাবে অক্ষম, ওপরের তিনটি বিশেষত্ত্ব একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বের জন্যে জরুরী, সেক্ষেত্রে তৃতীয় বিশেষত্ত্বটি বাদ দিলে নিজেকেই যোগ্যবলে দাবী করতে পারি এবং আমার মতো আরো অনেকেই পারেন! এতোক্ষনে নিশ্চই আপনারা মুখটিপে হাসছেন! আর কল্পনা করছেন এক অতি নির্বোধ ছাগশিশু সম ভাবনা! অতএব, বিষদ ব্যাক্ষ্যা ব্যাতিরেকেই বলা যায় সাধু সাবধান!
যাই হোক যা বলছিলাম, সেই যে চুলোচুলির কথা ছড়াটিতে বলা হয়েছিলো, তা আসলে চুলোচুলি নয়! ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসক বর্গ কার্যতঃ দেশকে ঠেলে দিয়েছিলেন এক অবশ্যম্ভাবী, অনিঃশ্বেষ, হঠকারী এবং অনভিপ্রেত আদর্শিক বিতর্কের মাঝে। দেশে জন্ম নিয়েছে দুটি ধারা! একটি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধপূর্ব রাষ্ট্রশক্তির ধারক বা অনুসারী আর অপরটি হলো মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের সেকুলার শক্তির অনুসারী! রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাতীয়তাবাদীদের সাথে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দর্শনে নীতিগত তেমন পার্থক্য নেই। কারন রাজনৈতিক দর্শনগত দিক দিয়ে অর্থাৎ সমাজের যে শ্রেণীটির প্রতিনিধিত্ত্ব এরা করে, উভয়ক্ষেত্রেই তা একই। ফলে দেখবেন প্রতিবারই এরা পূর্ববর্তী সরকারের কার্যক্রমের কালো তালিকা প্রনয়ন করলেও কখনোও সেব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন না! কারন দিন শেষে একি চৌবাচ্চায় সবিশেষ নগ্নতায় অবগাহন করেন! আর অর্থনৈতিক পরিকলাপনায়ও দেখবেন এক অদ্ভূত মিল! কারন পরষ্পর পরষ্পরের স্বার্থ সংরক্ষনের দড়ি টানাটানিতে ব্যস্ত! সমাজের উচ্চবিত্ত, সামরিক বাহিনী, ব্যবসায়ী এবং বুর্জোয়া শ্রেণীকে উভয় সরকারের ক্ষেত্রেই সুবিধা পেতে দেখা যায়! এই শ্রেনীর এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দর্শন একটাই আর তা হলো মুনাফার রাজনীতি। সেই কারনেই আওয়ামীলীগের সাথে প্রায়শঃই বিভিন্ন দক্ষিন এবং চরম দক্ষিনপন্থী দল গুলোরও সক্ষ্যতা দেখাযায়, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সাথেও! এবার আসা যাক স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের দন্দ্বে। এই দন্দ্বটি জাতীয়তাবাদীদের দলে একেবারেই প্রায় অনুপস্থিত, পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগে প্রবল। সুতরাং দলটিকে ঘরে বাইরে সমানতালে লড়াই করে যেতে হয়! এবং যেহেতু পক্ষের শক্তির প্রাবল্য বেশী তাই জনসংঘের মতাদর্শিক প্রতিফলনের সঙ্গে সংগতি সম্পন্ন হলেই এরা ক্ষমতায় আরোহন করে। কিন্তু ক্ষমতা প্রাপ্তির পরে যখনি এদের মুনাফালোভী চরিত্রটির প্রকাশ ঘটে তখনি জনসঙ্ঘে উভয়দলের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের বিলুপ্তি ঘটে। ফলে জনসংঘের উদ্দ্যেশ্যহীন নির্বাচনী খেলায় অনিশ্চিত ভাবে যেকোন দলই পরবর্তীতে ক্ষমতারোহনের সিঁড়িটি পেয়ে যায়। কজেই দেখুন, যে চুলোচুলির কথা এখানে বিধৃত, তা আসলে কিন্তু সমাজের আভ্যন্তরীন দন্দ্বের উদ্গীরিত শিখা। দুই পড়শী মহিলার কোমড় বেধে আটপৌঢ়ে ঝগড়া এটি নয়। এটি জনসংঘের আদর্শিক অতি আবশ্যিক দন্দ্ব। আর এই দন্দ্বের অবসান ঘটবে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত আদর্শের যৌক্তিক পথেই। সেজন্যে দরকার সময় এবং উপযুক্ত পরিবেশ তথা মুক্তবুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা। কাজেই দেখাযাচ্ছে আপাততঃ ওয়ানম্যন পলিটিক্সের বাইরে টু-মেন বা মাল্টিমেন পলিটিক্সের কোনই সুযোগ নেই! বিগত তত্ত্বাবধায়কেরা বৈধ-অবৈধ সব ভাবেই চেষ্টা করেছিলেন, নেমেওছিলেন দেশী বিদেশী শক্তির একাধিক মিশন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে। শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে লেজেগোবড়ে হয়ে কোনক্রমে একটা সফল নির্বাচনের মাধ্যমে পাড় পেয়েছিলেন!
ছড়াটির ৪র্থ এবং ৫ম অনুচ্ছেদে লেখক কটাক্ষ করেছেন নেত্রীদ্বয়ের সেলিব্রেটি হিসেবে প্রাপ্ত উপাধি নিয়ে। আর এই উপাধি নিজেরা নিজেদের দেন নি বরং রাজনৈতিক জনসংঘ থেকে তা উৎসারিত! কাজেই কটাক্ষ যদি করতেই হয় তো তা হতে হবে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্যে প্রযোজ্য। আগেই বলেছি যেকোন সেলিব্রেটির অন্ধভক্ত হতে কোন বাধা নেই, কাজেই ভক্তকূলের দেওয়া উপাধিতেও নেই কোন দোষ। তবে সুনাগরিক হিসেবে যা বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ তা হলো রাজনৈতিক দর্শন এবং আদর্শিক অবস্থান, যা হতে হবে যুক্তিপূর্ণ এবং সহনশীল, দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর জন্যে তা হতে হবে কল্যাণকর। কাজেই জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশটিকেই সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার কোন বিকল্প নেই। বেশীদিন আগের কথা নয়, বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছিলো হিন্দু পারিবারিক আইনকে যুগপোযোগী করার। তথাকথিত হিন্দু নেতারা প্রতিবাদ করেছিলো রাস্তায়, কেনো? এই সব হিন্দু নেতাদের উদ্দ্যেশ্য কি ছিলো? তারা কি হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্ত্ব করেন? তারা জানেন না হিন্দু পারিবারিক আইনের প্রতিবন্ধকতা গুলো, হিন্দু নারীদের অসহায়ত্ত্বের বিষয় গুলো? তাদের উদ্দ্যশ্য কি এই নয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ধরে রাখা, নারীর মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং সম্পদ কুক্ষিগত করা?
৬ষ্ঠ এবং ৭ম অনুচ্ছেদে ব্যর্থতার দায় দায়িত্ত্ব সম্পূর্ণ দুই নেত্রীর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে সুখনিদ্রার সুযোগ নেই! শুধু দুই নেত্রী নন, একথা সব রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাজনৈতিক নেতারা মূলতঃ জনপ্রতিনিধি, এই জনপ্রতিনিধিদের মূল শক্তি জনগন। কিন্তু সেই জনগন যদি সচেতন না হয়, এরা যদি ২/৫ টাকায় বিক্রি হয়ে যায় তবে জনপ্রতিনিধিদের অবশিষ্ট আর কিছুই থাকেনা। গনতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী তখন হতে পারে না। অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতার পালাবদল তখন এক অনিবার্য ফল। গনতান্ত্রিক ইনস্টিটিউশন গুলো ধ্ধংস হতে থাকে একে একে। একে প্রতিরোধের উপায় হলো গনতান্ত্রিক ইনস্টিটিউশন গুলোকে ক্রমাগত শক্তিশালী করা। সেই জন্যেই দরকার রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের প্রতি আস্থা এবং এক সহনশীল পরিবেশ তৈরী করা। এখানে আদর্শিক বিতর্ক থাকতে পারে, এখানে থাকতে পারে সমাজের নানান শ্রেণী স্বার্থের টানাপোড়েন, থাকতে পারে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিতর্ক এমনকি হতে পারে রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ক্ষুরধার যুক্তির কূটতর্ক। কিন্তু রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং চলমান অগ্রগতির অভ্যাহত ধারা বজায় থাকতে হবে। এখানেই হয়তো কেউ কেউ আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন এই বলে যে আজ যদি জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতায় থাকতো তবে এই কথা আমি বলতাম কিনা, আমি নিশ্চিত যে এই অভিপ্রায়ই আমি ব্যক্ত করতাম, কারন গনতান্ত্রিক কোন বিধি ব্যবস্থায় অন্ততঃ চিৎকার করা সম্ভব যতই প্রবল হোক না কেনো শাসক চক্রের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব।
আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ তথা এর ষোলকোটি জনঅধ্যুসিত অঞ্চল ঐতিহাসিক ভাবেই এমন এক ভৌগলিক পরিবেশে পরিব্যাপ্ত, যেখানে এর স্যেকুলার চরিত্র এবং জনগনতান্ত্রিক ব্যবস্থাই একমাত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিব্যবস্থা হিসেবে চিরায়ত প্রথা হতে বাধ্য। সুতরাং রাজনৈতিক ধ্যানধারনার ক্ষেত্রে এর এক ব্যপক প্রভাব অনিবার্য। নানা ভাবে, এমনকি আজও জাতীয় এবং আন্তঃর্জাতিক শক্তি সমূহ এদেশের গনমানুষের মনোজগতে লালিত সেই সূপ্ত অভিব্যক্তির চেতনার মূলোৎপাটন করতে চেয়েছে বারবার। সেই জন্যেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে যে চেতনার উন্মেষ ঘটেছিলো, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই চেতনার মূলে অঘাত করা হয়েছিলো, লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়েছিলো সব। জাতিকে করা হয়েছে দ্বিধাবিভক্ত। আর সেই দ্বিধা বিভক্ত জাতিকে নিয়ে কোন এক ঐক্যতানে মিলিত হওয়া আজ প্রায় অসম্ভব। তাই আজ সময় এসেছে বিদগ্ধ জনেরা সামিল হবেন, স্ব স্ব অবস্থান থেকেই নেতৃত্ত্ব দেবেন, সামাজিক সচেতনতার বদ্ধ আগল আঘাতে আঘাতে খুলে দেবেন। সেই লক্ষ্যে জনসাধারনের মধ্যথেকেই গড়ে উঠতে হবে চাপ, যা প্রসাশন, সরকার এবং সকল সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক শক্তিকে তাদের আপাতঃ অসুস্থ চেতনার বাইরে প্রগতির পথে উৎপাদনশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে বাধ্য করে।
এর পরে জনাব আবিদের ছড়ায় মুলতঃ দুই নেত্রীর অন্তঃসারশূন্য মস্তিষ্কের বিবরণ দারুন! তবে তা কতোটা যৌক্তিক সে বিষয়ে তর্কের অবকাশ তো থেকেই যায়! এ প্রসঙ্গে একজন কোরিয়ান ব্যাবসায়ীর মন্তব্য প্রনীধান যোগ্য হবে বলে আশা করি। ঢাকা থেকে বেড়িয়ে দেশে ফিরে তিনি বললেন বাংলাদেশের যেকোন ড্রাইভার নাকি কোরিয়ান স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ড্রাইভারের চাইতে বেশী দক্ষ! তিনি বললেন, ঢাকার ট্রাফিক অব্যবস্থাই নাকি ওদের দক্ষকরে তুলেছে! একই কথা বোধ করি প্রযোজ্য হবে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের ক্ষেত্রে। ডজন ডজন উপদেষ্টাবৃন্দ গলদঘর্ম হয়ে অবশেষে যেভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে কেঁদে বাঁচলেন তাতে সেই সত্য আরোও প্রকট ভাবে প্রতিভাত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁদের যে স্তরেই থাকুক না কেনো, ষোলকোটি মানুষের দেশে তাঁরা যে রাজনৈতিক সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন সেই সত্যটাকে আড়াল করার অবকাশ আছে কি? বরং ঢের ঢের ডিগ্রীর তকমা কাঁধে ঝুলিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর স্কলারদের দেখেছি তাঁদের ছাঁয়ার মতো অনুসরন করতে, একটুখানি অনুকম্পা যদি তাতে জোটে! আসলে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল্য অবশ্যই আছে, আর তা ব্যক্তির অন্তর বলয়ে বহুমাত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটায়, কিন্তু উচ্চশিক্ষিত যে জন নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তথাকথিত সংস্কারের চিলে কোঠায়, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের বিপরীত মেরুতে সুপ্তবিকৃত অভিরুচীগুলোই পল্লবিত হয় দ্রুত! কারন খোলা আকাশের উদারতা, সমুদ্রের খোলা বাতাসের স্নিগ্ধ নোনা গন্ধ কিংবা নীল আকাশ চিড়ে ঝরে পড়া সোনালী রোদ্দুর ওদের হৃদয় স্পর্শ করে না। সংস্কারের অন্ধগলিতে ঘুরপাক খায় শিক্ষাহীন কিংবা অসম্পূর্ণমন। অথচ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলোকবঞ্চিত ঝাকড়া চুলের বাবরী দুলিয়ে প্রান্তিক জনের বিদ্রোহী কবিতে পরিনত হয়েছিলেন এই বাংলার কবি নজরুল! ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বিদ্রোহের আগুন সারা বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে! কাজেই কতো বড় ডিগ্রী আছে নেত্রীদ্বয়ের, সে প্রশ্ন অবান্তর যদি চেতনার জানালা তাঁদের খোলা থাকে।
এই তো সে দিন দৈনিক জনকন্ঠে (২৩শে মার্চ ২০১০) দেখলাম শিক্ষামন্ত্রী প্রাণপন চেষ্টা করছেন বহুবছরের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনটির বাস্তবায়ন ঘটাতে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সংগঠন, প্রশাসনের কতিপয় আমলা আর কিছু স্বার্থান্বেসী মহলের চাপে কিছুতেই পারছেন না এবং আশংকা প্রকাশ করেছেন, বরাবরের মতোই এই আইনটিও শেষ পর্যন্ত হিমঘরে ঠাঁই পেতে যাচ্ছে। এবং ঠাঁই শেষ পর্যন্ত পাবেই যদি না জনপূঁঞ্জের যৌক্তিক চাপ এবং শিক্ষার্থীদের দাবীর ঐক্যতানের ঝংকার নিনাদিত না হয়। আর দেখুন, এই আইনটির সাথেই কিন্তু জড়িয়ে আছে দেশের কয়েক লাখ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ। এখন আমলা এবং সংশ্লিষ্ট কতিপয় শিক্ষা ব্যবসায়ীর স্বার্থ দেখা উচিৎ নাকি দুর্বল বেসরকারী উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের সুযোগ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা উচিৎ? রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর তৎপরতায় স্পষ্ট! দরকার স্বার্থান্বেসী মহলের অতৎপরতাকে প্রতিহত করা। এর জন্যে চাই রাজনৈতিক সরকারের জনভিত্তি এবং দৃঢ়তা। এই দৃঢ়তা তখনি সম্ভব যখন সরকার তার সরকারী প্রশাসনের এবং জনভিত্তির উপরে নিঃসংকোচে আস্থাশীল হবেন। অথচ বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে রাজনৈতিক সরকারের সেই আস্থার জায়গাটি আজও নির্মিত হয় নাই। তাই রাজনীতিবিদদের নির্ভর করতে হয় তথাকথিত আমলাদের উপর। এই নির্ভরতা আমাদের রাজনৈতিক ইনস্টিটিউশন গুলোর উৎকর্ষতার প্রধান অন্তরায়।
আমরা নিঃসংকোচে রাজনীতিবিদদের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করি, অথচ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্বের পেছনে যে আমলাতান্ত্রিক জটীলতা এবং তাদের অসৌজন্যমূলক ভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনীহাকে কোন অবস্থাতেই বিবেচনায় আনতে নারাজ। বিগত দিন গুলোতে এসংক্রান্ত একাধিক সংবাদ আশাকরি মুক্তমনার বিজ্ঞপাঠকবৃন্দের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নাই। আজ দেশে যে অব্যবস্থা, যে দীনহীন বেশ এ একদিনে সৃষ্টি হয়নি, বিগত ৩৪টা বছর ধরে ক্রমে ক্রমে জমে উঠেছে। ধ্বংস করা হয়েছে দেশের গনতান্ত্রিক পরিবেশ। মানুষে মানুষে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বিভ্রান্তি। পরষ্পরের প্রতি এতো অবিশ্বাস আজ দানা বেঁধে উঠেছে এজাতির মাঝে, যা সত্যিই বিষ্ময়কর, বোধ করি গোটা বিশ্বজুড়ে এই অবস্থার দ্বিতীয় নজীর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকষ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ কোনক্রমে সার্টিফিকেট হাতে নিয়েই ঝাপিয়ে পড়েন বি.সি.এস. এর দরজায়। লক্ষ্য, পুলিশ, মেজিস্ট্রেট কিংবা কাষ্টমস্-এ যোগদান! আর হেতু হলো নিশ্চিন্ত চাকুরী সাথে উপড়ি আয়! কি অদ্ভূত চেতনা! শিক্ষা ক্যাডারেও ভীড়! মাঝারী মেধার দূরন্তপনা এখানে! এখানেও নিশ্চিন্ত চাকুরীজীবন সাথে উপরী পাওনা প্রাইভেট টিউশনী! সেশন জটফট মিলিয়ে আঠারো-বিশ বছরের টানা শ্রম! এবার নির্ঝন্ঝাট উপরী আয়! কোথাও যাবেন, ট্যাক্সির দরজায় হাত দেওয়া মাত্র, ড্রাইভার বলে উঠবেন, ”২০ টাকা বাড়াইয়া দিবেন”! বাজারে তরি-তরকারী-সবজীতে হাত দেওয়া মাত্র, “ কেজি একশ প্লাস”! কি ব্যাপার দাম এতো বেশী কেনো? কুড়ি/পঁচিশটা বছর ধরে শুনে আসা সেই একই উত্তর, ‘সাপ্লাই নাই”! অথচ বাজারের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই যে সাপ্লাই নেই! যেকোন অফিসে যেকোন প্রয়োজনে যাবেন কয়েক ঘন্টার শ্রমে আগে আপনাকে জানতে হবে টাকাটা কোথায় দিলে কাজটা হবে! কোন অবৈধ নয়, বৈধ কাজই! তবে টাকাটা কেনো? আপনি একটু বেয়াড়া হলেই আর কাজটা করতে তো পারবেনইনা বরং পাশ থেকে শুনবেন, “আইছে ক্ষ্যাত কোনানের, কাম করবার আইছে মাগার সার্বিচ লইয়া ফাল পারবার লাগছে, কামডা এমনি এমনি হয়া যাইবো!” অথচ এরা বেতন ভুক! হায়া, লজ্জা, মান-সম্মান-সম্ভ্রমের কোন বালাই নেই ! রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, ট্রাফিক পুলিশ হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে! যেনো সর্কাস! দুর্ঘটনায় দুর্ভাগ্যক্রমে যদি কোন পথচারীর বা রিক্সারোহীর জীবন নাশ হয় তো, আশে পাশে ধ্বণিত হবে, হায়াৎ মউত নাকি আল্লার হাতে! অথবা আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়েছে! যে বা যার ভুলে ঘটনাটি ঘটলো তাদের কোন দায় নেই! দায় নেই সংশ্লিষ্ট আইন রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের! সমাজের প্রভাবশালীরা যদি ঘটনার শিকার হন তখনো শুনবেন এধরনের কথা যে, যে যাবার সে তো গেলোই, আল্লাহ তারে বেহেস্ত নসীব করুক, ওকে (অভিযুক্ত) আর ফাঁসাইয়া লাভ কি! কিন্তু একবারও ভেবে দেখেনা যে, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আক্রান্ত হয় আরোও কিছু মানুষ সমাজ এবং দেশ। একজন মানুষ এদেশে সহজেই ভিক্ষুকে রূপান্তরিত হয়, পাশ্চাত্যে হয় না, কারন কিছু সামাজিক মূল্যবোধের পতন, সাথে ধর্ম নামের ব্যবসায়িক অস্ত্র! আপনি শিক্ষায় কিংবা কর্মস্থলে ক্রমান্বয়ে সাধারন নিয়মে এগিয়ে যেতে পারবেন না যদি না পেছনে বিশেষ কোন শক্তি ক্রীয়াশীল থাকে। আবার আপনার ব্যক্তিগত উৎকর্ষতার সাথে সাথে পারিবারিক উন্নয়নও ঘটে! পরিবারের কর্ত্রী আগে বাচ্চার কাপড়চোপড় নিজ হাতেই কাচতেন, এখন সহকারী দরকার! সেই জন্যে নিজ গাঁয়ের অসহায় দরীদ্র পরিবারের শিশু মেয়েটিকে কিংবা ছেলেটিকে উক্তকাজে নিয়োজিত করে আত্মতূষ্টিতে ভোগেন এই মনেকরে যে, তিনি বা তাদের মতো যে জন, তারা দেশের অন্ততঃ একটি পরিবারের একজন সদস্যের নিজালয়ের উচ্ছিষ্ট পরিবেশনের সাথে সাথে শতগুন মাত্রায় কাজের সুবন্দোবস্ত করে মহাফরজ কাজ সম্পন্ন করেছেন! সাধারনের মধ্যে এই সব সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের অপনোদন সত্যিই বিষ্ময়কর! রাস্তার বৈদ্যুতিক খুঁটি হতে বীনা অনুমতিতে সরাসরি লাইন টেনে পথের ধারের টংঘরে চা-পানীয়ের দোকান, ছোটখাট রেষ্ট্রুরেন্ট কিংবা ব্যবসাকেন্দ্র বোধ করি শুধু মাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। দোকানে কোন জিনিস কিনতে হাত দিয়েছেন কিংবা দাম জিজ্ঞাসা করেছেন, কিনবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অপদস্থ না হলে আপনি সত্যিই ভাগ্যবান। দোকানে কেনাকাটার পরে বড় অংকের নোট দিলে ভাংতি না থাকার অযুহাতে কিছু টাকা কম দেবার প্রবনতা; বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা পানির সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের যোগসাজসে সরকারী বিল চুরি করা; টেলিফোন সহ সব সরকারী সার্ভিসে ঘুষ টিপ্স এখন অতি সাধারন ঘটনা!
কাজেই দেখা যাচ্ছে, আমাদের সামনে যে সব অন্তরায় গুলো রয়েছে সেগুলো কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতার উপড়েই নির্ভরশীল নয় বরং সম্পূর্ন জাতীয় এবং দেশের সামাজিক পরিকাঠামোগত তথা শিক্ষা, অভিরুচি এবং সৌন্দর্যবোধের প্রাকারে আবদ্ধ। এই সৌন্দর্যবোধ হলো মনের সৌন্দর্যবোধ তথা অন্তঃকাঠামো। শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে এর একধরনের বিকাশ ঘটে। আবার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার সাথেও এর এক প্রত্যক্ষ্য যোগ রয়েছে। যাইহোক আমলা নির্ভর যে প্রশাসন, সেই প্রশাসনের কাছ থেকে আর যাই হোক জনকল্যানকর সিদ্ধান্ত বোধকরি খুব সহজ নয়। যদিনা প্রশাসনের কর্তাবৃন্দ তাদের অস্তিত্ত্বের সংকটে না ভোগে। সে কারনেই দেখবেন প্রচলিত অব্যবস্থা কিংবা দুর্নীতির প্রতিপক্ষ একাধিক আইন থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কার্যকর নয়, কারন এর পেছনেও ব্যবসায়ীক মনোবৃত্তি ক্রিয়াশীল। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটির পেছনে লেগে রয়েছে অশুভ শক্তির দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব। সেই থাবা থেকে আজও এর নিষ্কৃতি ঘটেনি। সাথে রয়েছে অশুভ বিতর্কিত ইসলামাইজেশনের প্রভাব। দেশের সেনাবাহিনী পর্যন্ত এই বিতর্কের ঊর্দ্ধে নয়। অথচ আমাদের সব রাজনৈতিক ইন্সটিটিউশন গুলো বিতর্কিত সেনা বেষ্টনীতে আবদ্ধ। আমাদের রাজনৈতিক দল গুলোকে এদের চোখরাঙ্গানীকে প্রত্যক্ষ্যভাবে পরোয়া করে চলতে হয়। আন্তর্জাতিক ফর্মুলায় বিগত দিনে টেকনোক্র্যাট সরকার এসেই সেকি দাপাদাপি! দেশ তারা উদ্ধার করে ছাড়বে! দুর্নীতি ধুয়ে মুছে যাবে রাতারাতি! জনগন সমর্থন দিয়েছিলো, কারন বিগত দিনের অপশাসন। কিন্তু সেনা সমর্থিত এই টেকনোক্র্যাটরাও পরাজিত হয়েছিলো। পরাজিত হয়েছিলো সেনা প্রভাবের কাছে। তাদের সেই সব আস্ফালনের ফলাফল দেশবাসী বেশ কয়েক দফায় টের পেয়েছে! অথচ সেই সব সরকারের সময়ই দেখা যায় দেশে কি সব ভয়ানক ঘটনা গুলো ঘটে ভেতরে ভেতরে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা চুপিসারে প্রশাসনের গোচরে কিংবা অগোচরে ষড়যন্ত্র করে যায়, আন্তর্জাতিক মাফিয়ারা পয়সা ঢেলে কারজাই মার্কা সরকার গঠনের পাঁয়তারা করার সুযোগ পায়, এমনি কতো কি! কারন আন্তর্জাতিক শক্তিবলয়ের চাপ, আভ্যন্তরীন চাপ এবং সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষমদদসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থান্বেসীমহল সফল ভাবে প্রভাববিস্তারে সহায়ক এখানে। আরো আছে, দেশের সুযোগ সন্ধানী অপব্যবসায়ী মহল, এরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অস্থিতিশীলতার ফাঁক ফোকর দিয়ে। যা রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কিংবা হলেও ব্যপক ঝুঁকি থাকে একমাত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলো ছাড়া। কারন আর কিছুই নয়, রাজনৈতিক সরকারের জনভিত্তিকে এখানে প্রশ্নসাপেক্ষ করে রাখা হয়। মূলতঃ সামরিক জান্তার জংলী শাসনের মাধ্যমে। এখনো আমাদের রাজনৈতিক দল গুলোর একটা বাজে অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়, ক্ষমতায় গিয়েই প্রায়সঃই তারা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগের জন্যে উন্মুখ হয়ে পরে। এক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটির দায় নেহায়েত কম নয়। আমাদের দেশে অতীতে সিভিল সোসাইটি তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যার্থতা এখনো আছে। এর অভাবেই অনেক ক্ষেত্রে দেশকে অগ্রগতির পথ থেকে সাময়িক ভাবে গতিহীন হয়ে স্থবির হতে হয়েছে। এতদ্সংক্রান্ত ব্যপারে গত ২৯শে মার্চ, ২০১০ এর দৈনিক জনকন্ঠে কলামিষ্ট এবং সুলেখক জনাব মুনতাসীর মামুনের চতুরঙ্গের প্রবন্ধটি বিশেষ বিবেচনার দাবী রাখে।
কাজেই দেখা যাচ্ছে একটা দেশের স্বাভাবিক বিকাশ এবং অগ্রযাত্রা মূলতঃ নির্ভর করে দেশের প্রশাসন, সরকারের জনভিত্তি এবং জনগনের প্রকৃত জাতীয়তাবোধের পরিস্ফূটনের মধ্যদিয়ে। প্রতিটি রাষ্ট্রের তার জন্মলগ্নেই একটি আদর্শের স্ফূরন ঘটে। কালের বিবর্তনে তা হয় বিকশিত এবং প্রস্ফূটিত। আমাদের অভাগা দেশের বেলায় তা হয় নি বা হতে দেওয়া হয়নি। শৈশবেই হত্যাকরা হয়েছে, উপড়ে ফেলা হয়েছে আদর্শিক চেতনার সেই শ্বেতশুভ্র ভ্রুন! পঙ্গুত্বনিয়ে তাই আমাদের বেড়ে ওঠা। অনেক কসড়ৎ আগামীতে করতে হবে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে, আর রাজনৈতিক সরকারের শক্তিশালী গনভিত্তি গড়ে না উঠলে।
কেশব অধিকারী,
বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার করুণচিত্র তুলে ধরেছেন
খুব সুন্দরভাবে!
ধন্যবাদ!
কেশব বাবু,
ছড়াটি পড়ে বিরক্ত হলেও কলম ধরিনি। আপনার লেখাটি পড়ে সহমত পোষণ করছি।
আমার কাছে নারী-বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশই মনে হয়েছে।
অনেক পর লিখলেন।
কেশব অধিকারী,
ধারুন ঠিক মূল্যায়ন,তবে আরো কিছু দশক আমাদের বাংগালিদের তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয়।সমাজের ভিতরে ও বাহিরে যে ঘাত-প্রতিঘাত হচ্ছে তার একটা ফলাফল তো একটা সময়ে বংগ সমাজের জন্য আসতেই হবে।আপনার লেখাটি এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য একটি চমৎকার বাহি্যক ও আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক,সামাজিক ও অথর্নৈতিক বিষয়ের উপর এক মাষ্টারপিচ কপি।
ভালো থাকবেন।
আমার কাছে কথাটা আংশিক সত্য। দেশের জনগন রাজনিতিবিদগনকে ভোট দিয়ে দেশ শাসন করবার অধিকার দেয়, সেই রাজনিতিবিদগনের অদূরদর্শিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, দু্র্নীতি, লোভ ইত্যাদি কারনগুলোই দেশের এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী, তারপর আসে আমলাতন্ত্র বা দেশের জনগনের ভুমিকা। কারন আমলাতন্ত্র বা দেশের জনগনের ভুমিকা কি হবে সেটা রাজনিতিবিদগনের কার্য্যকলাপের উপরই বেশি নির্ভরশীল।