সমাজ নামক এই কূপমুন্ডক সামাজিক সংস্কারে বাস করা নির্যাতিত মানুষ সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে ভেবে ধর্ষণের শিকার হলেও মুখ খোলেন না। বেশির ভাগ মানুষেরই এই দশা। এছাড়া ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়ার দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা ও পুরুষতান্ত্রিক হয়রানির কারণে ধর্ষণের শিকার অনেক নারীই শেষব্দি আর কোন অভিযোগ করতে ভরসা পান না।
পূর্নিমা শীলকে চেনেন তো আপনারা? ভোলার পূর্নিমা শীল! এদেশের সংখ্যাগুরুদের বিকৃত মানসিকতার শিকার হয়েছিলো এই মেয়েটি। দলবেঁধে পালাক্রমে যাকে ধর্ষন করা হয়েছিলো। যার মা সেদিন অনুনয় করে ধর্ষকদের বলেছিলো “বাবারা তোমরা একজন একজন করে করে যাও, ও ছোটতো পারবে না…”। শুধু পুর্নিমাই নয় সেবার এরকম হাজারো পূর্নিমা ধর্ষিত হয়ে দেশত্যাগ করেছিলো।
তনুকে মনে তনুকে মনে আছে আপনাদের? কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোপ থেকে এই কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সেনানিবাস চেনেন তো আপনি, কখনো গেছেন? যেখানে ব্যানেট আর বুটজুতার দাপট চলে! ওইসব জায়গাতে! পুরো এলাকাটায়ই কেমন একটা গা ছমছমে অবস্থা। একটি পর্দাশীল মেয়েকে সেখানে হত্যা করা হলো কি করে? তনু কিন্তু উশৃঙ্খল ছিলো না বরংচ হিজাব পরা, নাটক-থিয়েটার করা ভদ্র মেয়ে। আজ প্রায় তিন বছর কেটে গেল তবুও হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এমনকি এ মামলার আসামিও শনাক্ত হয়নি। আর হবেইবা কি করে, কার সে সাধ্যি আছে?
একইভাবে ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি৷ ২০১৯ এর ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত। নুসরাত এর ভাষ্য মতে সেখানে হাত মোজা, পা মোজাসহ বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে গায়ে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারই সহপাঠি আর মাদ্রাসার লোকজন। ১০ এপ্রিল ২০১৯ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু ঘটে। ফেনীর নুসরাতের পর রাজধানীর মুগদার হাসি। একজন মাদ্রাসাছাত্রী, অপরজন গৃহবধূ। দুজনই কেরোসিনের আগুনের নির্মম বলি। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে ঘটে আলোচিত এই দুই ঘটনা।
ছোট্ট শিশু। বয়স কত? সাত বছর। গত ৭ জুলাই ২০১৯ ঢাকার ওয়ারীতে শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। ছাদ দেখানোর কথা বলে সে শিশুটিকে লিফট থেকে সবচেয়ে ওপর তলায় অবিক্রীত একটি শূন্য ফ্লাটের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে শিশুটিকে প্রথমে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। তাতে ব্যর্থ হয়ে শিশুটির মাথায় আঘাত করে অচেতন করে। এরপরে সে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। কিন্তু তার পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে শিশুটিকে হত্যা করে গলায় রশি বেধে ঝুলিয়ে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
১৮ জুলাই ২০১৯ নওগাঁর মান্দায় কলা ও কাঁঠাল বিচি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে তিন সন্তানের জনক আছির উদ্দিন। গুরুতর অবস্থায় ওই শিশুকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্লেড দিয়ে যৌনাঙ্গের প্রবেশ পথ কেটে বড় করে রাতভর ধর্ষন করে দিনাজপুরের ৫ বছরের শিশু পূজাকে। সারারাত ধরে ২টা জানোয়ার টানা ধর্ষন করে সকালে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে গিয়েছিলো তাকে। বিচার হয়নিতো তাঁর, ওসব এখন ইতিহাস! আপনাদের চরিত্র আর সভ্যতার ইতিহাস।
কত ঘটনার বিবরন শুনবেন আর! প্রতিদিন এদেশে ধর্ষনের এই তালিকা দীর্ঘ্য থেকে দীর্ঘ্যতর হচ্ছে। এরকম কতইনা ঘটনা কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে তা আমাদের জানা নেই, ভয়ে-লজ্জায় যা প্রকাশ পায়নি। সম্প্রতি শুধুমাত্র সাংবাদ-মাধ্যমে প্রকাশিত অগনিত ঘটনাপ্রবাহের তথ্যানুসারে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সারাদেশে ৩ শ ৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে । এর মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু । ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬ টি শিশু। বাংলাদেশে এখন একমাত্র আলোচ্য বিষয়- ধর্ষন, যে শব্দটি আজ আড্ডা-আলোচনা-অফিস টেবিলে কিংবা পথে স্থান করে নিয়েছে। আজ এমন একটি দিনও যাচ্ছে না, যেদিন ধর্ষণ নামক যৌন আক্রমণের শিকার হচ্ছে না শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা। ঘরে-বাইরে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা, কর্মক্ষেত্র কিংবা গণ-পরিবহন কোথাও যেন শিশু বা নারীর নিরাপত্তা নেই। এ দেশটা যেন শ্বাপদের গভীর অরন্যের পরিণত হয়েছে।
কিন্তু দেশে এই যে ধর্ষনের মহামারি এর কারন কি ভেবে দেখেছেন কখনো? ধর্ষনের জন্য যারা পোষাককে দায়ী করেন; তারা বলবেন কি? তনুর পোষাক কি ছিলো? নুসরাতেই বা কি ছিলো? দুই থেকে ৭ বছরের শিশুর পোষাকইবা কতটা অশ্লীল হতে পারে! যা দেথে আপনাদের হিংস্ত্র দানবগুলো জেগে ওঠে? আসলে সমস্যাটা আপনাদের মগজে- সেই মগজে, যে মগজে আপনি আপনার ধর্ম নামের নোংরা অন্ধত্ব পুষে রেখেছেন। আর প্রায় প্রতিটি প্রথাগত ধর্মই নারীকে কৃতদাস-যৌনদাস-সন্তানোৎপাদনের শষ্যক্ষেত্র-সঙ্গী করে রেখেছে। এবং এরই প্রতিফিলন আপনারা জন্মের পর থেকেই আপনাদের পরিবারগুলোতে দেখে এসেছেন; পুরুষত্বের সীমাহীন বর্বরতায়। আর তার বাকী শিক্ষাটুকু সম্পন্ন হয়েছে আপনার জন্মগত সমাজ থেকে। ধম্ম আপনাকে মানুষ করতে না পারলেও বর্বর পুরুষ তৈরি করেছে ঠিকভাবেই। নইলে সীমাহীন ধর্ষন দেখে আপনার মাথায় আসে কি করে; এসব বন্ধ করতে পতিতালয় চাই! পতিতালয়, যার খদ্দের হবেন আপনি। সেই আপনি, যে নারীর সতীত্ব পরীক্ষায় বিশ্বাসী একজন পুরুষ- আপনার পতিতালয় চাই! কতটা নোংরা আপনার ভেতরের পুরুষত্ব যে, নিজের কন্যাও আজ আপনার কাছে নিরাপদ নয়। পিতৃত্বকে বিসর্জন দিয়ে পুরুষত্বকে আপনি লালন করছেন। তাহলে কে নিরাপদ আপনার কাছে? আপনার কন্যা-ভগ্নি-প্রতিবেশী…… কেউ নয়। কারন আপনি প্রচন্ডভাবে ধর্মবিশ্বাসী, সেই পুরুষ।
কেন বাংলাদেশে এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, সমাজবজ্ঞিানের দৃষ্টিতে তার ব্যাখ্যা খুঁজুন। গ্রামের সহজ সরল নারী-শিশু থেকে সমাজের উঁচু দালানের নারী-শিশু কারোরই ছাড় নেই। মাদ্রাসায়-স্কুলে-কলেজে-গনপরিবহনে-অফিসে-পুলিশ স্টেশনে-বাড়িতে কোথাও যৌন আক্রমণ থেকেও রেহাই নেই নারী-শিশুদের। গণ-পরিবহণেতো আজকাল ধর্ষকদের সম্মিলিতভাবে ধর্ষনের কিংবা অন্যান্য যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী যাত্রীরা। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে শিশু ধর্ষণ। মাদ্রাসায় হুজুর-মোল্লাদের বিকৃত রুচির বিকৃতি থেকে রেহাই নেই কোমলমতি শিশুদের। এদের পাশবিক প্রবৃত্তি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। একের পর এক ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা ও হত্যার ঘটনা ঘটলেও কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। কেউ যেন কোন কথাও বলতে চাইছে না এসব মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে; এটা কি দোজখের ভয় নাকি বেহেস্তের মোহ। নইলে যে নুসরাতকে মাদ্রাসায় বসে মাদ্রাসারই অধ্যক্ষ ধর্ষন করে তাঁকে হত্যা করলো সেই নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, “আমার মেয়ে আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।” খুব বেশী আশ্চর্য্য লাগার কোন কারন নেই! কারন এটাই ধ্রুব সত্য যে, এদেশের বাবা-মা- অভিভাবকেরা এই বিশ্বাসেই তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় দেন যে, তাদের সন্তান আখেরাতের জন্য কাজ করছে। আর সেই আখেরাত শুধু সন্তানদের জন্যই নয়- তাদের পথকেও করবে নিশ্চিত। তাতে যদি তাদের সেই সন্তানরা (ছেলে হোক বা মেয়ে) মাদ্রাসায় বসে যৌন নির্যাতনের শিকার বা শারিরিক অত্যাচারেরও শিকার হয় বা তাদের হত্যাও করা হয় তাতে তাদের আফসোস নেই। কারন, মূলকথা “আখেরাত”!
ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারী ও শিশুর জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনে। সম্মিলিতভাবে মানুষ যেন অসভ্যতার দিকেই হাঁটতে শুরু করেছে। কিন্তু এর পেছনে কারনও রয়েছে অনেক- শিল্প, সংস্কৃতি থেকে মানুষের সরে যাওয়া আর বিজ্ঞান বিমুখতাও এর একটা অন্যতম কারন। ছেলেবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে ছেলে এবং মেয়ে শিশুদের খেলাধুলা-চালচলন-শিক্ষা-পোষাক সহ সকলক্ষেত্রেই শুরু হয় চরম বৈষম্য। ছেলেশিশুটিকে খেলার জন্য বল-ব্যাট-প্লেন-কার দিলেও মেয়েটির জন্য সেই পরীমার্কা পুতুলই, এবং তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয় “তুমি মেয়ে এবং এই সীমানাটা তোমার জন্য নির্ধারিত”। ছেলেটির সাথে সমান তালে সে ছুটতে পারে না। শিক্ষার আধুনিকায়ন করে যখন কো-এডুকেশন চালু করার কথা ছিলো তখন আমরা করেছি মাদ্রাসা। ধর্মভিত্তিক অন্ধকারাচ্ছন্ন এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়েছে কেবলই নারীদ্বেষ আর হিংসার মত ভয়ংকর ভাইরাস। রাষ্ট্রের প্রচ্ছনান মদদে আর পৃষ্ঠপোষকতায় যা আজ দানবের আকার ধারন করেছে, সেই দানবের করাল গ্রাস থেকে এ দেশটাকে বাঁচানো কষ্টকর। তার সাথে রাষ্ট্রীয় বিচারহীনতার সাংস্কৃতি তো আছেই; সব মিলিয়ে একটা হিংস্ত্র শ্বাপদের অরন্যে আমরা কেবল বেঁচেই আছি। যেখানে বিচার চাওয়া যায় না, তবে আসামীরা জামিন পেয়ে যায় ঠিকই। এসব আপনারাও জানেন আমরাও জানি! ক্ষমতাধর আসামীকে বাঁচাতে ফাঁসানো হয় অসহায় মিন্নিদের। কেন হয় এসব? কেন ঠিকপথে শেষ হয় না এসব বিচার? কেন ধরা যাবে না অপরাধীদের? রাষ্ট্র নির্বাক হলেও এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের অজানা নয়।
পূর্নিমা-তনু-নুসরাতরাতো মরে গিয়ে বাঁচলো, এ অভিষপ্ত ভূমিতে আমরা বেঁচে আছি কেন?
মানুষ বেঁচে আছে কেন? এভাবে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে?
মানুষ কি বেঁচে থাকে, এভাবে!
ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়েও ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে এমন খবরও পত্রিকার পাতায় স্থান পেয়েছে। ধর্ষণের এমন লাগামহীন চিত্র এদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাসহ পুরো সিস্টেমের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রহসনের এসব বিচার সম্পন্ন করে ধর্ষণের কলঙ্ক থেকে বাংলাদেশ রেহাই পাবে কিনা! সে ভাবনাটা অনেকটাই অপরিষ্কার। অসুস্থ সংস্কৃতির ঘুণে ধরা এই সমাজের মগজ পরিষ্কার না করলে ধর্ষণ নির্মূল কোনো ভাবেই সম্ভব না, আশা করি সেটা নিয়ে আজ আর কারো দ্বিমত নেই।
লিখেছেন: কাজল কুমার দাস
চমৎকার যুক্তিপূর্ন লেখা। খুবই ভাল লাগল। মনে হচ্ছে আমরা দিন দিন অধঃপাতের দিকে যাচ্ছি।
প্রত্যেকে যার যার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এসব অপৃতিকর ঘটনা ঘটত না।
মানুষ যেই হোক পুরুষ কিংবা নারি, হিন্দু কিংবা মুসলি। অন্যায়ের শাস্তি সবারই পাওয়া উচিত। এখানে ধর্মাবলম্বী মানুষের দোষ বা কোন ধর্মকেদোষ দিয়ে লাভ নেই। ধার্মিকরা এই অন্যায়গুলো করেনা, করে মানুষরুপি পশুরা সেটা যেকোন ধর্মের লোক হতে পারে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
এভাবেই সমাজ দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে। হাত বাড়ালে হাহাকার ছাড়া কিছুই নেই।
সম্প্রতি ধর্ষণের হার, বিশেষত শিশু ধর্ষণের হার, খুব বেড়ে গেছে। অবশ্য এমনও হতে পারে যে আগে এসব খবর এভাবে পত্র-পত্রিকায় আসতো না। যাই হোক, এই অভিমতে দ্বিমত থাকার কথা না যে ধর্ষণের জন্য মূলত পুরুষরাই দায়ী, এবং আমাদের মানসিকতা আর সমাজ ব্যবস্থাই ধর্ষণে প্ররোচিত করে।
প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের দৈহিক মিলন একটি সাধারণ জৈবিক বৈশিষ্ট্য; কিন্তু আমাদের সমাজে সেই স্বাভাবিক বিষয়টিকেই নানা অস্বাভাবিকতার ঘেরাটোপে আড়ালে করে রাখা হয়েছে। এই সমাজে বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতা একরকম নিষিদ্ধ। একজন পুরুষ যৌন-সক্ষমতা অর্জনের পরপরই বিয়ে করেন না; অর্থনৈতিক কারণসহ আরও অন্যান্য কারণে তাকে বিয়ের আগে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া বিপত্নীক কিংবা অর্থনৈতিক কারণে পরিবার থেকে দূরে আছেন এমন পুরুষের সংখ্যাও অনেক। এদের যৌন চাহিদা পূরণের কোন ব্যবস্থাই বলতে গেলে নেই। অথচ তার যৌনানুভূতিকে উসকিয়ে দেয়ার মতো উপাদান চারিদিকে সহজলভ্য – পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে বটতলার সাহিত্য সব কিছুতেই যৌন সুড়সুড়ি। এছাড়া নারীর সম্মতি ছাড়া তাঁকে স্পর্শ করা যে অন্যায় এবং বেআইনি এই শিক্ষাটুকুও দেশের পুরুষরা পান না। আমাদের পুরুষ-শাসিত সমাজে ধর্মীয় অনুশাসনগুলোও যেন ধর্ষণে সহায়তা করতেই তৈরি। প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে ঘরে ছেড়ে বের হওয়া একাকী নারী তাই হয়ে যান পুরুষের লালসার বৈধ লক্ষ্য। সাথে প্রেমিক থাকলেও শেষ রক্ষা নেই, পরপুরুষের সাথে ঘোরাফেরাই যে নিষিদ্ধ! পুরুষদের অনেকেই এই ধারনা নিয়ে বড় হন যে নারীদেহ কেবল ভোগের জন্য, এবং এক্ষেত্রে নারীর ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। অন্যদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় নারীই দোষী এই ধারনা যে আমাদের সমাজে স্বতঃসিদ্ধ।
ধর্ষণ একটি আদি অপরাধ যা পৃথিবী সব দেশেই কমবেশি ঘটে থাকে। তবে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশে ধর্ষণের হার আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম। এইসব দেশের সাথে আমাদের দেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়তো দেশে ধর্ষকের আধিক্যের কারণ সম্পর্কে ধারণা দেবে। তারপর বাকি থাকবে কঠিন কাজটি – ধর্ষণের ঘটনার হ্রাস এবং সম্ভব হলে বিলুপ্তি ।
অসাধারণ বর্ননা বটে।